একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক পুষ্টিকর খাবার





একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির পুষ্টি চাহিদা তার দৈনিক পরিশ্রম ও দেহের ওজনের উপর নির্ভর করে। খাবার পুষ্টিকর হওয়ার জন্য মোট ক্যালরির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বিভিন্ন প্রকার কার্বোহাইড্রেট থেকে, ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ স্নেহ পদার্থ থেকে এবং ১৫ থেকে ২০ শতাংশ প্রোটিন থেকে গ্রহণ করা উচিত।প্রতিদিন সুষম ও বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করতে হবে।

একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক ২৭০ থেকে ৪৫০ গ্রাম চাল, আটা, ভুট্টা গ্রহণ করা উচিত। এর সাথে ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রাম শাকসবজি এবং ১৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম মাছ, মাংস, ডিম খেতে হবে।এ ছাড়া সুস্থ থাকার জন্য একজন মানুষকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিলি তেল ও চর্বি এবং ৩০ থেকে ৬০ গ্রাম ডাল জাতীয় খাদ্য খেতে হবে।একেক পুষ্টি উপাদান দেহে একেক কাজ করে। তাই সুস্থ থাকতে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করা জরুরি।সুষম খাদ্যাভ্যাস দেহে পর্যাপ্ত পুষ্টি যোগায় এবং কার্যকর রাখতে সহায়তা করে। পুষ্টির অভাব নানারকম স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।

একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর জন্য প্রতিদিন ৪৬ গ্রাম ও প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জন্য ৫৬ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা অবশ্যই উচিত। তবে ব্যক্তি, বয়স, লিঙ্গ, কাজের পরিধি, সার্বিক স্বাস্থ্য ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে এর পরিমানের তারতম্য হতে পারে।

সূচিপত্রঃ একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক পুষ্টিকর খাবার


মাছ

 আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। নদীমাতৃক আমাদের দেশে রয়েছে ছোট থেকে বড় প্রচুর মাছ। মাছে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের পুষ্টি বিকাশে মাছের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তৈলাক্ত মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

মাছে যথেষ্ট প্রোটিনের সঙ্গে থাকে আমিষ, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম ও আয়োডিন। মাছ হলো খনিজ পদার্থ আর ভিটামিনের খনি।সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন ৭০ থেকে ৭৫ গ্রাম করে মাছ খাওয়া প্রয়োজন। হার্টের অসুখ ও মস্তিষ্কের রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় মাছের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড।

কাঁটাসহ ছোট মাছ ক্যালসিয়ামের অনন্য উপাদান। মলা, ঢ্যালা, চাঁদা, ছোট পুঁটি, ছোট চিংড়ি, কাঁচকি ইত্যাদি জাতীয় মাছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন এ বিদ্যমান।




নিয়মিত মাছ খেলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, চোখের অসুখ, হাত-পা ব্যথা, শরীরের দুর্বলতা ইত্যাদি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

মাছের তেলে থাকা ডকসা হেক্সোনিক অ্যাসিড ও এলকোসা পেন্টাএনোইক অ্যাসিড মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায়।

স্মৃতিশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে মাছের ভূমিকা রয়েছে। মাছে ওমেগা-থ্রি নামে এক ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা হৃদযন্ত্রের ধমনিগুলো নমনীয় রাখতে সাহায্য করে এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। এ ধরনের অ্যাসিড বেশি থাকা কয়েকটি মাছ হলো ইলিশ, ভেটকি, পমফ্রেট, শিং।

রোজ মাছ খেলে বাতের ব্যথা কমে। বাতের ব্যথায় হওয়া জ্বরের উপশম ঘটায়। বায়ুশ্বাসী মাছ যেমন শিং, মাগুর ইত্যাদিতে যথেষ্ট পরিমাণে আয়রন ও তামা থাকায় এটি রক্তে হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণ করে রক্ত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

নিয়মিত মাছ খেলে মস্তিষ্কে ডিএইচএ’র পরিমাণ বাড়ে। এতে হতাশা ও
আত্মহত্যার প্রবণতা কমে, স্মৃতিশক্তি অক্ষুণ্ন থাকে।

মাছের তেল যেকোনো ধরনের ব্যথা নিরাময় করতে পারে। এমনকি ক্যানসারের মতো রোগ নিরাময় করতে পারে। প্রতিদিন ২.৫ গ্রাম করে মাছের তেল খেলে স্তন ক্যানসার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

সামুদ্রিক মাছে যথেষ্ট পরিমাণে আয়োডিন থাকে, তাই এ মাছ খেলে মানুষের গলগণ্ড রোগ হয় না।

মাংস

মাংস প্রধানত জল, প্রোটিন এবং চর্বি দিয়ে গঠিত। মাংস দেহ গঠন, বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয়পূরণে সাহায্য করে। মাংসে প্রচুর পরিমাণে খনিজ-পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম থাকে। মাংসের চর্বিহীন পেশিতে ক্লোরাইড, বাইকার্বোনেট ও অ্যাসিড ফসফেট থাকে যা দেহ সুরক্ষিত রাখে। তাছাড়া মাংসে ক্যালরি বেশি থাকায় তা শক্তি সরবারহে সহায়তা করে।

গরু-খাসির মাংসে রয়েছে উন্নত প্রথম শ্রেণির প্রোটিন যা মাংসপেশি গঠনে সহায়তা করে। শরীরের জন্য যে সব অত্যাবশকীয় এমাইনো এসিড প্রয়োজন সবগুলো এমাইনো এসিড পাওয়া যায় গরু-খাসির মাংস থেকে।

পর্যাপ্ত আয়রন যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং সেই সঙ্গে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে থাকে গরুর মাংস।

বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনে খুব ভালো উৎস গরুর মাংস। ভিটামিন বি১২, বি৬ রয়েছে গরুর মাংসে যা নার্ভ সিস্টেমকে ভালো রাখে।

আয়রনের পাশাপাশি গরুর মাংসে রয়েছে আরও কিছু প্রয়োজনীয় মিনারেলস। যেমন : জিংক, সেলেনিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। যা শরীরের মিনারেলস-এর ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি শরীরের কোষকে ভালো রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।




গরুর মাংস
প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ৬৭ শতাংশ পানি। ১০০ গ্রাম গরুর মাংসতে ১৮০ কিলো-ক্যালরি থাকে। এতে ২১ গ্রাম প্রোটিন, ১৪ গ্রাম চর্বি, ৬ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম, ২.৩ গ্রাম লৌহ, ০.০৮ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-১, ০.২৬ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-২, ৮.২ মি.গ্রা. নায়াসিন থাকে। এছাড়াও এতে কোলেস্ট্রলের মাত্রা বেশি।

খাসির মাংস
প্রতি ১০০ গ্রাম খাসির মাংসে থাকে ২৯৪ কিলোক্যালরি থাকে। এতে ২১ গ্রাম চর্বি, ৯৭ মি.গ্রা. কোলেস্টেরল, ৭২ মি.গ্রা. সোডিয়াম, ৩১০ মি.গ্রা. পটাসিয়াম ও ২৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এতে উচ্চ মাত্রায় লৌহ থাকে।

মুরগির তুলনায় গরু ও খাসির মাংসে চর্বি বেশি থাকায় এগুলো পরিমিত খাওয়া উচিত। রান্নার ক্ষেত্রেও অনেকটা সচেতন হওয়া উচিত। যে কোনো মাংসই সুসিদ্ধ হয় এমনভাবে রান্না করা উচিত।

মুরগির মাংস
প্রতি ১০০ গ্রাম মুরগিতে ৭৪ শতাংশ পানি থাকে। এতে ১২১ ক্যালরি, ২০ গ্রাম প্রোটিন, ৪ গ্রাম চর্বি, ১৪ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম, ০.৭ মি.গ্রা লৌহ, ০.১ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-১, ০.১৬ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-২, ১১.৬ মি.গ্রা. নায়াসিন থাকে।

শাক সবজি

সবুজ শাক সবজি ভিটামিন ও খনিজ লবণের উৎস। এটি অন্ত্র এবং যকৃতের জন্য খুবই উপকারী।

সবুজ শাক-সবজিতে থাকে ভিটামিন ‘এ’, যা দেহের বৃদ্ধি, দৃষ্টিশক্তি ও রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে। কচু শাক, কলমি শাক থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন ‘সি’। যা দাঁত এবং মাড়ির জন্য খুবই উপকারী।



শাক সবজির উপকারিতা

আঁশ জাতীয় সবজিতে রয়েছে পলিফেনল। এই পলিফেনল অন্ত্রে সুরক্ষার স্তর তৈরি করতে সহায়তা করে। গবেষণা বলছে, আঁশ ও পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত সবজি খেলে অন্ত্র সুস্থ থাকে।ক্যান্সারের আশঙ্কাও অনেকাংশে হ্রাস করে রাফেজ বা আঁশজাতীয় সবুজ শাক-সবজি।

শাক-সবজি যেমন পুঁইশাক,কলমি শাক, পালং শাক, বাঁধাকপি, পটল ইত্যাদি থেকে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা পাওয়া যায়। শর্করা আমাদের দেহে তাপ বা শক্তি সরবরাহ করে।

সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। খনিজ লবণের মধ্যে ক্যালসিয়াম মানবদেহের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকারি। ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড়ের গঠনকে মজবুত করে এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। মানবদেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ লেশমৌল লৌহ। সবুজ শাক-সবজি থেকে যথেষ্ট পরিমাণে লৌহ পাওয়া যায়।

পালং শাক, কপি ও লেটুস থেকে দেহে যে পরিমাণ লৌহ সরবরাহ হয় তা দৈনিক চাহিদার ১৪ থেকে ৩৬ শতাংশ পূরণ করে। পটাশিয়াম ও সোডিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় এসব সবুজ শাক-সবজি শরীরের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

যকৃতের জন্য বিশেষভাবে উপকারী সবজি ব্রকলি। নিয়মিত ব্রকলি খেলে ‘নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ’ এবং যকৃতের টিউমার দেখা দেয়ার আশঙ্কা কম থাকে।



দুধ

শিশুসহ যে কোনো মানুষের জন্যই প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদার অন্যতম উৎস হলো দুধ।পৃথিবীর সব খাদ্যের সেরা খাদ্য দুধ। সর্বোচ্চ পুষ্টিমানের জন্যই দুধের শ্রেষ্ঠ। দুধের অপরিহার্য উপাদান ল্যাকটোজ, যা দৈহিক গঠন, বিকাশ ও মেধা বৃদ্ধিতে সহায়ক। মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার মূল উপাদান দুধ। গরুর দুধে আছে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ পদার্থ যেমন ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, কোবাল্ট, কপার, জিংক, আয়োডিন ও সেলিনিয়াম। গরুর দুধের কম্পজিশনে পানি ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ল্যাকটোজ ৪ দশমিক ৮ শতাংশ, ফ্যাট ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, প্রোটিন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। গরুর দুধ সব পুষ্টির আধার ও শক্তির উৎস। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ক্যানসার ও হূদেরাগ প্রতিরোধে দুধের শক্তিশালী ভূমিকা প্রমাণিত হয়েছে।
এক কাপ বা ২৫০ গ্রাম দুধে থাকে-
ক্যালোরি- ১৫০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট- ১১ গ্রাম, প্রোটিন- ৮ গ্রাম, চর্বি- ৮ গ্রাম,ক্যালসিয়াম- ৩১%, ভিটামিন ডি, রিবোফ্লাভিন (বি২), ভিটামিন বি১২, পটাশিয়াম ৩৭৫ মি.গ্রা.,ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম ৬%,লৌহ ০.০৮ মি.গ্রা,সোডিয়াম ১০০মি.গ্রাম।


দুধের উপকারিতা

দুধ ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে। দুধের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি হাড় ও দাঁতে শোষিত হয়ে এদের গড়ন দৃঢ় করে। প্রতিদিন দুধ পান করলে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া, দাঁতে পোকা ও হলুদ ছোপ পড়া, হাড় ক্ষয়ের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।

প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পানে অন্যান্য খাবারের চাহিদা অনেকাংশে মিটে যায়। নাস্তার সময় দুধ পান করলে অনেক সময় ধরে সেটা পেটে থাকে। ফলে ক্ষুধা কম থাকে। এছাড়া দুধ পানের ফলে দেহের অনেক ধরণের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। তাই ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগলে এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কম সময়ে ওজন কমাতে চাইলে, প্রতিদিনের ডায়েটে দুধ রাখুন।

দুধে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল ফিটনেস বাড়ায় ও মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করে। দুধ পানে ঘুমের উদ্রেক হয়, যার ফলে মস্তিষ্ক শিথিল থাকে ও মানসিক চাপমুক্ত হয়। সারাদিনের মানসিক চাপ দূর করে শান্তির ঘুম নিশ্চিত করতে প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ পান করুন।

দুধ শরীর রি-হাইড্রেট করতে সাহায্য করে। ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় ভুগলে এক গ্লাস দুধ পান করে নিন। সুস্থ বোধ করবেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকলে এবং দুধজাতীয় খাবারে অ্যালার্জি না থাকলে রাতে ঘুমনোর আগে প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন।

শরীরে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক না থাকলে প্রি মেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোম হতে পারে। তাই পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা ও অ্যাসিডিটির সমস্যা হলে খেয়ে নিন এক গ্লাস দুধ।

দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা মাংশপেশির গঠনে সহায়তা করে ও মাংশপেশির আড়ষ্টতা দূর করে। নিয়মিত ব্যায়ামের ক্ষেত্রে প্রতিদিন এক থেকে দুই গ্লাস দুধ খুবই উপকারী। শিশুদের মাংশপেশির গঠন উন্নত করতেও প্রতিদিন দুধ পান করা উচিত।

প্রতিদিন আমরা এমন অনেক ধরণের খাবার খাই যার ফলে অ্যাসিডিটি হয় ও বুক জ্বালাপোড়া করে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ সমাধান, প্রতিদিন দুধ পান। দুধ পাকস্থলী ঠাণ্ডা রাখে ও বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দূর হয়।

দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে, যা দেহের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন দুধ পানে ত্বক নরম, কোমল ও মসৃণ হয়।দুধ কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখে ও রক্ত পরিষ্কারের পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে

এক কাপ বা ২৫০ গ্রাম দুধে থাকে-ক্যালোরি- ১৫০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট- ১১ গ্রাম, প্রোটিন- ৮ গ্রাম, চর্বি- ৮ গ্রাম,ক্যালসিয়াম- ৩১%, ভিটামিন ডি, রিবোফ্লাভিন (বি২), ভিটামিন বি১২, পটাশিয়াম ৩৭৫ মি.গ্রা.,ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম ৬%,লৌহ ০.০৮ মি.গ্রা,সোডিয়াম ১০০মি.গ্রাম।

ডিম 

একটি সহজলভ্য ও উন্নতমানের আমিষজাতীয় খাদ্য; যাতে রয়েছে প্রাকৃতিক ভিটামিন, যা দেহগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।একটি সাধারণ মুরগির ডিমে প্রোটিন আছে প্রায় ৬ গ্রাম,যাতে রয়েছে মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় নয়টি অ্যামিনো অ্যাসিড। মুরগির ডিমে রয়েছে অতি মূল্যবান ওমেগা-৩, যা হৃৎপিণ্ডকে কার্যকর রাখতে সাহায্য করে। কোলিন ডিমের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা গর্ভবতী মায়ের মস্তিষ্কজনিত জটিলতা দূরীকরণে সহায়তা করে, গর্ভাবস্থায় শিশুর মেধা ও স্মৃতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

 ডিমে আছে ফলিক অ্যাসিড (ফোলেট), যা ত্রুটিপূর্ণ সন্তান জন্মদানের ঝুঁকি কমায়।এ ছাড়া রয়েছে সেলেনিয়াম, যা মানুষের মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে এবং ক্যানসার, বিশেষত প্রোস্টেট ক্যানসার রোধে সহায়তা করে। ডিমে রয়েছে ৫ গ্রাম কোলেস্টেরল, যার প্রায় ৩.৫ গ্রাম উপকারী ও ভালো কোলেস্টেরল, যা মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রমে প্রয়োজন, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

 ডিমে রয়েছে লিউটিন ও জিয়াজ্যান্থিন, যা চোখের ছানি পড়া রোধে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন সুস্থ মানুষ দিনে একটি ডিম খেতে পারে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী বছরে প্রত্যেক মানুষের গড় ডিম গ্রহণ ন্যূনতম ১০৪ টি হওয়া উচিত। ডিমের সাদা অংশে ৬ গ্রাম প্রটিন ও হলুদ অংশে ৬ গ্রাম প্রটিন রয়েছে। ডিমে ক্যালসিয়াম রয়েছে।




ডিমের উপকারিতা

শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি ডিম খেলে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় এবং আরোগ্য লাভে সহায়তা করে।ডিমের কুসুম রিউম্যাটিক জ্বরকে প্রশমিত করে।ডিমে পিউরিন নেই বলে বাতের রোগীরা সহজেই ডিম খেতে পারে।

গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন একটি অথবা দুটি ডিম খাওয়া উচিত। তাহলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয় না।শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ডিম প্রয়োজন।

ডিমের সাদা অংশে আছে অবিমিশ্র প্রোটিন, যা মূলত অ্যালবুমিন। আর রক্তে যখন অ্যালবুমিন কমে যায়, তখন ডিমের অ্যালবুমিন বা সাদা অংশ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।

যেসব মহিলারা সপ্তাহে কমপক্ষে ৬টি ডিম খায় তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ কমে যায়। ডিমের কুসুমে কোলিন নামক একটি প্রোটিন থাকে, যা মস্তিষ্ক গঠনে ভূমিকা রাখে।

ডিমের একটি প্রধান খাদ্য উপাদান ভিটামিন-এ। ভিটামিন-এ রেটিনায় আলো শুষে নিতে সহায়তা করে, কর্নিয়ার পাশের মেমব্রেনকে রক্ষা করে এবং রাতকানার ঝুঁকি কমায়। মহিলাদের প্রতিদিন ৭০০ মাইক্রোগ্রাম ও পুরুষদের প্রতিদিন ৯০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-এ প্রয়োজন

ডিমে থাকা ভিটামিন-ই আমাদের কোষে আর ত্বকে থাকা ফ্রি র‌্যাডিকেল ধ্বংস করে দেয়। তাই ক্যানসার কম হয়। এছাড়াও নতুন কোষ তৈরি হতেও সাহায্য করে। অ্যাডোলেশন পিরিয়ডে নিয়মিত ডিম খেলে (যেমন সপ্তাহে ৬টি করে) ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

আমাদের শরীরের জন্য প্রোটিন খুব প্রয়োজনীয়। এই প্রোটিনের মূল উৎস হল অ্যামিনো অ্যাসিড। প্রোটিন তৈরিতে প্রায় একুশ ধরণের অ্যামাইনো অ্যাসিড লাগে। যার মধ্যে নয়টি শরীরে তৈরি হতে পারে না। এর জন্য বাইরে থেকে প্রোটিনের যোগান লাগে। সেই যোগান দেয় ডিম। তাই ডিম কত উপকারী বুঝতেই পারছেন।

ডিমে থাকে ভিটামিন-এ, যা আমাদের চোখের জন্য বেশ ভালো। আমাদের দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করে ভিটামিন-এ। তাছাড়া ডিমে থাকা কেরোটিনয়েড আর ল্যুটেন বয়স হয়ে গেলে চোখের এক বড় সমস্যা, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। ছানিও কম হওয়ার দিকে থাকে।


ডাল

ডাল উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের ভালো উৎস। এটা শরীরে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে ও দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। এছাড়াও ডাল নানা রকম খনিজ ও পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ায় তা শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করেসব রকমের ডাল মানুষের জন্য অন্ত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী। ডালে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন রয়েছে। প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ এবং অত্যধিক লাইসিন থাকায় ও দামে সস্তা হওয়ায় ডালকে প্রায়শই গরিবের আমিষ বলা হয়। প্রোটিন ছাড়াও ডালে পর্যাপ্ত শর্করা, চর্বিও খনিজ লবন থাকে। এতে গমের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ও চালের তুলনায় প্রায় তিন গুণ প্রোটিন আছে।

বিভিন্ন প্রকার ডালের উপকারতা


মুগ ডালঃ উচ্চ আঁশ ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের ভালো উৎস। এটা কোলেসেস্টোকিনিন হরমোনের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। এতে পেট ভরা অনুভূত হয় ও বিপাক বৃদ্ধি পায়। এভাবেই মুগ ডাল ওজন কমাতে সহায়তা করে।

মুসুর ডালঃ মুসুর ডাল ওজন কমাতে ও হজম ক্রিয়া বাড়াতে খুব ভালো কাজ করে। কারণ এতে প্রচুল পরিমাণে আঁশ রয়েছে। ডায়াবেটিকদের জন্য এই ডাল ভালো। এটা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রোটিন ও খনিজ উপাদান।

অড়হর ডালঃ উচ্চ আঁশ ও প্রোটিন সমৃদ্ধ যা পেটভরা রাখে, ক্ষুধা কমায়, ওজন কমায় ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। এতে আছে ভিটামিন সি, ই, কে এবং বি-কমপ্লেক্স। এছাড়াও এতে নানান রকমের খনিজ যেমন- ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও জিংক পাওয়া যায়।

ছোলাঃ ছোলায় বিশ শতাংশের কাছাকাছি প্রোটিন থাকে। এ কারণেই ক্রীড়াবিদরা সকালে খেলাধুলা করার আগে নিয়মিত ভিজিয়ে রাখা ছোলা খান। কারণ, এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। যারা নিরামিষ খাবার খান, তাদের দেহে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে পারে ছোলা।

বাদাম

পুষ্টিগুণ এবং শরীরিক উপকারিতার দিক থেকে দেখতে গেলে বাদামের কোনো বিকল্প হয় না। আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বাদাম খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ই, ফাইবার, সেলেনিয়াম, ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো অ্যাসিড, পটাশিয়াম এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডসহ আরও কত কী যে আছে, যা নানাভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।




বাদামের উপকারিতা

আমাদের দেশে চিনা, কাঠ ও কাজুবাদাম বেশি পাওয়া যায়। চিনা বাদাম সহজলভ্য হওয়াই আমরা প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারি। বাদাম সব বয়সীদের জন্য বেশ উপকারী।
ত্বকের উজ্জ্বল বাড়ায়ঃ
বাদাম স্বাস্থ্য-ত্বকের বন্ধু। বাদামে উপস্থিত মনোস্যাচুরেটেড অ্যাসিড ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে ও ত্বকে উজ্জ্বলতা নিয়ে আসে।

হার্ট ভালো রাখেঃ হার্টের জন্য বাদাম খুবই উপকারী। বাদামে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং মিনারেল থাকে। যা হার্ট অ্যাটাক এবং হৃদযন্ত্রজনিত অন্যান্য সমস্যা কমিয়ে দেয়। বাদামে ট্রিপটোফ্যানও থাকে যা ডিপ্রেশন কমাতেও সাহায্য করে।

দেহর কোষ বাড়তে সাহায্য করেঃ বাদামে প্রোটিন ভরপুর থাকে। যা কি না দেহকোষের বাড়াতে সাহায্য করে। শিশুদের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাদামের ভূমিকা অনেকটা। এর মধ্যে দুধের গুণাগুণও থাকে অনেকটা। তাই কেউ যদি দুধ খেতে না পারেন সেক্ষেত্রে বাদাম বিকল্প হতে পারে।

রোগ-প্রতিরোধঃ রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ‘সি’ বাদামেও পাওয়া যায়। যা শীতে সর্দি-কাশির মত সমস্যা প্রতিরোধ করে। প্রতিদিন বাদাম খেলে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী এবং শরীরের ভেতর থেকে শক্তিশালী হয়।

ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণেঃ বাদাম ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণেও অনেকটা সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ খনিজ দ্রব্য। এই খনিজ উপাদানটি ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, মেটাবলিজম, কোষে ক্যালসিয়াম শোষণ এবং ব্লাডসুগার কমাতে সাহায্য করে। স্টাডিতে দেখা গেছে ২১ শতাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে বাদাম।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ বাদাম নিয়মিত খেলে নিয়ন্ত্রণে থাকে ওজন। এমনই দাবি করা হয়েছে গবেষণায়। কারণ, বাদামে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট আর প্রোটিন থাকে যথেষ্ট মাত্রায়।

ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ করেঃ বাদামে ফোলিক অ্যাসিড আর ফাইটিক অ্যাসিড রয়েছে। এই দুই অ্যাসিড কোলন ক্যানসারের মতো রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

খেজুর

সুস্বাদু এবং বেশ পরিচিত একটি ফল খেজুর। এটা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। প্রচুর ভিটামিন এবং মিনারেলস যেমন কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি উপাদানসমৃদ্ধ এই খেজুর শরীরের জন্য খুব উপকারী। প্রতি ৩০ গ্রাম খেজুরে রয়েছে ৯০ গ্রাম ক্যালোরি, ১ গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ দশমিক ৮ গ্রাম ফাইবার। এছাড়াও খেজুরের রয়েছে আরও অনেক পুষ্টি উপাদান।খেজুরে আছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম যা হাড় গঠনে এবং হাড়ের ক্ষয়রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

খেজুর লহিত রক্ত কণিকা গঠনে সাহায্য করে, আয়রন রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি কমায়। খেজুরে আছে প্রচুর ভিটামিন বি। ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরকে ডিটক্সিফাই করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।নিয়মিত খেজুর খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে। খেজুরের লিউটেন এবং জিক্সাথিন নামক উপাদান চোখের রেটিনা ভালো রাখে।খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার।


খেজুরের উপকারিতাঃ


শরীরে আয়রনের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে খেজুর। একই সঙ্গে খেজুরের মিষ্টতা চিনির বিকল্প হিসেবে কাজ করে।

ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়কে মজবুত করে। সেই সঙ্গে মাড়ির স্বাস্থ্যও সুরক্ষিত রাখে।

বয়সের ছাপ প্রথমে ত্বকেই ধরা পড়ে। তাই ত্বকের যত্নে খেজুর কাজে লাগাতে পারেন। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে বাঁচায়। ত্বকের নানা সমস্যা থেকেও খেজুর মুক্তি দেয়। ত্বকের বলি রেখা নিয়ন্ত্রণ করতেও খেজুর সিদ্ধহস্ত। এ ছাড়া ত্বকের ফ্যাকাশে ভাব ও হরমোনের সমস্যা কমাতে খেজুর কার্যকর।

বয়সের সঙ্গে দেখা দেয় পেশির নানান জটিলতা। আর এই পেশি জটিলতা এড়াতে ভালো কাজ করে প্রোটিন। খেজুর প্রোটিন সমৃদ্ধ। তাই এটি আমাদের পেশি ভালো রাখতে সহায়তা করে এবং শরীরের জন্য অপরিহার্য প্রোটিন সরবরাহ করে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে বাড়ে হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও। এই ঝুঁকি কমাতে পারে খেজুর। খেজুরে রয়েছে পটাশিয়াম, যা হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুর শরীরের খারাপ ধরনের কোলেস্টেরল কমায় (এলডিএল) এবং ভালো কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

খেজুরে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। এই আয়রন শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। শরীরে রক্তাল্পতা দেখা দিলে বা হিমোগ্লোবিনের কমতি হলে খেজুর খাওয়া শুরু করুন। এর ফলে শরীরের আয়রনের মাত্রা বজায় থাকবে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক হবে এবং রক্তের কোষ উৎপন্ন হবে।

তিরিশের কোঠায় হজমশক্তি আমাদের কমতে শুরু করে। তাই এ সময় খেজুর খাওয়ার অভ্যাসে আপনার হজমশক্তি বাড়বে। কারণ, অন্ত্রের কৃমি ও ক্ষতিকারক পরজীবী প্রতিরোধে খেজুর বেশ সহায়ক। খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ, যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।

খেজুর নানা ভিটামিনে পরিপূর্ণ থাকায় এটি মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার গতি বৃদ্ধি রাখে, সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ছাত্রছাত্রী যারা নিয়মিত খেজুর খায় তাদের দক্ষতা অন্যদের তুলনায় ভালো থাকে। তাই বেশি বয়সে স্মৃতিশক্তি লোপ করতে না চাইলে বয়স ৩০ হলেই খেজুর খেতে শুরু করে দিন।

প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে খেজুর খুব দ্রুত শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বয়স বৃদ্ধির কারণে ঝিমুনি ভাব দেখা দিলে প্রতিদিন ৩টি খেজুর খান। তাহলেই আর ক্লান্তি আপনাকে ঘিরে ধরতে পারবে না।

যকৃতের সংক্রমণে খেজুর উপকারী। এ ছাড়া গলাব্যথা, বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি এবং ঠান্ডায় খেজুর উপকারী। খেজুর অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়ায় বেশ উপকারী। ভেজানো খেজুর খেলে বিষক্রিয়ায় দ্রুত কাজ করে। এ ছাড়া নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাসে বৃদ্ধি পায় শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও।

খেজুরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক। যেমন: বি১, বি২, বি৩ এবং বি৫। এ ছাড়া ভিটামিন এ১ এবং সিসহ নানা ভিটামিনের পাওয়ার হাইস বলতে পারেন খেজুরকে। এটি দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে রাতকানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাই বেশি বয়সে চোখের সমস্যা তাড়াতাড়ি আনতে না চাইলে খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।


ফলমূল

বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে নানা ধরণের ফলমূল দেখা যায়। জ্যৈষ্ঠ মাস মাস মধু মাস। কারণ এই মাসে বিভিন্ন ধরনের রসাল ও মিষ্টি, সুগন্ধি ফল উঠতে শুরু করে।নানা ফলের রয়েছে নানান পুষ্টিগুণ। বয়স, শারীরিক অবস্থা, রোগ ভেদে নিয়মিত ও সঠিক মাত্রায় ফল খেলে তা শারীরিক অনেক রোগব্যাধির ক্ষেত্রেও উপকারী।ফলের মধ্যে থাকে খাদ্যশক্তি, যা শরীরের ভেতর থেকে ক্ষতিকর চর্বি বের করে দেয়, তাই ফল সবার জন্য উপকারী। পুষ্টিমানের দিক থেকেও সব ফেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, খনিজ পদার্থ থাকে। বিশেষ করে রঙিন ফলে লাইকোপেট আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, তা শরীরের ভেতরের বিষাক্ত জিনিস দূর করে দেয় এবং ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে।



বিভিন্ন ফলের উপকারিতা

আমঃ স্বাদ, পুষ্টি ও গন্ধে অতুলনীয় জনপ্রিয় একটি ফল আম। বাংলাদেশে এপ্রিল মাস থেকেই কাঁচা আম পাওয়া যায়। তবে পাকা আম আসতে শুরু করে মে মাস থেকে। জুলাই বা অগাস্ট পর্যন্ত দেশীয় আম পাওয়া যায়। খনিজ পদার্থ আয়রনের ভালো উৎস আম। প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও সোডিয়াম বিদ্যমান। এছাড়া খনিজ লবণ, ভিটামিন বি, ই, সেলেনিয়াম, এনজাইম, ম্যালিক এসিড, সাইট্রিক এসিড, টারটারিক অ্যাসিড বিদ্যমান। এজন্যই আমকে বলা হয় ফলের রাজা। এর মধ্যে রয়েছে এমন অনেক পুষ্টিগুণ যা শরীরকে ভালো রাখে। খসখসে চামড়া, চুলপড়া, চোখের নানা রোগ, হজমের সমস্যা দূর করতে আম কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়া এই ফলটি বলকারক, মুখরোচক ও যকৃতের জন্য উপকারী।

জামঃ অরুচি ভাব ও বমি বমি ভাব নিরাময়ে জামের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অনেকে মনে করেন, জাম দেহে রক্ত তৈরি করে। যদিও সেইরকম কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য নেই, তবে জামের ভেতর খাদ্য শক্তি, শর্করা, আমিষ, চর্বি, আঁশ, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ভিটামিন-সি ও ক্যারোটিন থাকে।এটি শরীরের হাড়কে মজবুত করে, ডায়রিয়া ও আলসার নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। জাম ত্বক টানটান করতে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে আর ডিটক্সিফায়ার হিসাবেও কাজ করে। জামের নির্যাস ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র‍্যাডিকেলের কাজে এবং বিকিরণে বাধা দেয়।

লিচুঃ লিচু গ্রীষ্মকালীন একটি স্বল্পমেয়াদী ফল। এই ফলটি টিউমার রোধে বেশ ভূমিকা রাখে। রসালো এই ফলটিতে রয়েছে খাদ্য শক্তি, শর্করা, আমিষ, ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ভিটামিন-সি।

সফেদাঃ
সফেদায় প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ থাকে, যা দেহে শক্তি যোগায়। এছাড়া এই ফলে ক্যালসিয়াম ও লৌহ রয়েছে, যা হাড় ও দাঁত সুস্থ রাখে। সফেদা মানসিক চাপ কমাতে, অনিদ্রা, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা দূর করতে ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়। বিভিন্ন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান, ভিটামিন এ, সি ও ই এবং ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, কপার ও আয়রনসহ অপরিহার্য বহু পুষ্টি উপাদান রয়েছে ফলটিতে।

আমড়াঃ
 আমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ও সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, পেকটিন ও ফাইবার রয়েছে। তিনটি আপেলের চেয়ে একটি আমড়ার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। আমড়া রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, রক্তস্বল্পতা দূর করে, বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। আমড়ায় থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ত্বক, চুল ও নখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

আমলকীঃ আমলকীতে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-সি রয়েছে। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে, মৌসুমি সর্দি-কাশি কমাতে, মুখের রুচি বাড়াতে, ত্বক ও চুল সুন্দর রাখতে, রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এ ফল।

বাতাবিলেবুঃ বাতাবিলেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যারোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সোডিয়াম। বাতাবিলেবু খেলে পেশির দুর্বলতা, ব্যথা দূর হয়। ওজন ও অ্যাসিডিটি কমায়। ক্যানসার প্রতিরোধে এ ফল বেশ সহায়ক।

পেয়ারাঃ একটি পেয়ারায় চারটি কমলালেবুর চেয়েও বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে। এতে প্রচুর ভিটামিন এ, বি, সি ও কে এবং ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফাইবার রয়েছে। এতে থাকা ভিটামিন এ চোখের জন্য ভালো। পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুবই উপকারী।

তরমুজঃ তরমুজে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা স্ট্রেস কমিয়ে দেয়। এছাড়া প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারে ঝুঁকি কমায়।তরমুজে প্রচুর পানি থাকে, তাই গরমের সময় শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে তরমুজ ভূমিকা রাখে। শরীরকে সুস্থ ও সতেজ করে তোলে। এতে থাকা ক্যারোটিনয়েড চোখ ভালো রাখতে সহায়তা করে।

লটকনঃ লটকন হাড়, দাঁত মজবুত রাখে। ক্যালরি কম থাকায় ওজন কমাতে সহায়ক। চোখের জন্যেও লটকন উপকারী।

কামরাঙাঃ কামরাঙায় ভিটামিন-এ সহ নানা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে কামরাঙা সাহায্য করে। ভিটামিন সি বেশি থাকায় কামরাঙা খেলে স্কার্ভি রোগ দূর হয়।

জামরুলঃ জামরুল যকৃতের কোষ ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করে। সুগার ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

গাবঃ প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট র‌য়েছে গাবে। যাঁরা ওজনহীনতা ও নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য গাব খুবই উপকারী। এ ফল দুর্বলতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

শেষ কথা

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url