আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায়


আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায় ও আজওয়া খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে আজ আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। আজওয়া খেজুরের নাম শুনলে আমরা অনেকেই মুগ্ধ হই। এই খেজুর সাধ, পুষ্টিগুণ এবং ধর্মীয় গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু আসল আজওয়া খেজুর চেনা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।

আজওয়া খেজুর হলো একটি বিশেষ প্রকারের খেজুর যা সাধারণত সৌদি আরবের মদিনা অঞ্চলে উৎপন্ন হয়।এটি তার মিষ্টি স্বাদ, নরম টেক্চার এবং উচ্চ পুষ্টির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আজওয়া খেজুরের স্বাস্থ্য গুণ অনেক যেমন এটি ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ সরবরাহ করে।

মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এটি একটি অত্যন্ত মূল্যবান খাদ্যপণ্য এবং অনেকেই এটি রমজান মাসে ইফতারের সময় গ্রহণ করে থাকেন। তাহলে দেরি না করে চলুন জেনে নেয়া যাক  আজওয়া খেজুরের উপকারিতা ও আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায় কি-

 পেইজ সূচিপত্রঃ আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায়

আজওয়া খেজুর কী

ছোট ছোট খেজুর ওপরে কালো রঙের আস্তরণ দেখতে অনেকটা জামের মতো কিন্তু অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও মানসম্পন্ন আজওয়া নামের এ খেজুর মদিনার উৎকৃষ্টতম খেজুর। সে কারণে দামেও অন্যান্য খেজুরের তুলনায় একটু বেশি। হাদিস শরিফে খেজুরটির গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে এবং জান্নাতের ফল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আজওয়া খেজুর কী
প্রশ্ন হলো আজওয়া খেজুর কি? আজওয়া খেজুর হলো একটি বিশেষ প্রকারের খেজুর, যা সাধারণত সৌদি আরবের মদিনা অঞ্চলে উৎপন্ন হয়। আজওয়া খেজুর তার মিষ্টি স্বাদ, নরম টেক্সচার এবং উচ্চ পুষ্টিগুণের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আজওয়া খেজুরের পুষ্টিগুণ অনেক যেমন, এটি প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ সরবরাহ করে। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এটি একটি অত্যন্ত মূল্যবান খাদ্যপণ্য এবং অনেকেই আজওয়া খেজুর রমজান মাসে ইফতারের সময় গ্রহণ করে থাকেন।

আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায়

আপনারা হয়তো সবাই আজওয়া খেজুরের নাম শুনে থাকবেন। কিন্তু কথা হলো আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায় কি? আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায় হলো এতে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যেতে পারে, যেমন এর স্বাদ, গন্ধ, রং, আকার-আকৃতি ইত্যাদি। ২০২৪ সালে আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায় তার মান যাচাই করার কিছু মাধ্যম দেওয়া হলো-

আরও পড়ুনঃ পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা, মেথি খাওয়ার নিয়ম

রঙঃ আসল আজওয়া খেজুরের রঙ সাধারণত গাঢ় কালো হয়। খেজুরের রঙ যদি হালকা বা ফিকে হয় তাহলে সেটি নকল হতে পারে।

আকার ও আকৃতিঃ  আকার ও আকৃতিতে আজওয়া খেজুর সাধারণত আকারে ছোট এবং একটু গোলাকার হয়। খেজুরগুলি যদি স্বাভাবিকের থেকে বড় বা অসম হয় তবে সেগুলি আসল নাও হতে পারে।

স্বাদঃ আসল আজওয়া খেজুরের স্বাদ মিষ্টি এবং একটু মসৃণ। এর মধ্যে একটি বিশেষ ধরনের মিষ্টতা এবং তিক্ততার মিশ্রণ থাকে যা অন্য খেজুরের  তুলনায় ভিন্ন।

বাহ্যিক গঠনঃ আসল আজওয়া খেজুরের বাইরের অংশটির সাধারণত মসৃণ হয় এবং এতে কোন ফাটল বা দাগ থাকে না। যদি খেজুরের গায়ে ফাটল, দাগ বা অন্যান্য অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায় তবে সেটি নকল হতে পারে।

উৎপাদন স্থানঃ আসল আজওয়া খেজুর মদিনা থেকে আসে। তাই খেজুর কেনার সময় উৎপাদন স্থানের উপর বিশেষ নজর দিন প্যাকেজিংয়ে  মদিনার উল্ল্যেখ থাকা উচিত।

প্যাকেজিংঃ আসল আজওয়া খেজুর সাধারণত মদিনা থেকে আসে এবং এর প্যাকেজিংয়ে Made In Madinah লেখা থাকে। প্যাকেজিংয়ে প্রায়সই উৎপাদন কারীর সিল এবং QR কোড থাকে যা, স্ক্যান করে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন।

মূল্যঃ আসল আজওয়া খেজুরের দাম সাধারণত অন্যান্য খেজুরের চেয়ে বেশি হয়। যদি খুব কম দামে আজওয়া খেজুর পাওয়া যায় তাহলে সেটা সন্দেহজনক হতে পারে।

প্রমানিকরণঃ কিছু বিশ্বস্ত বিক্রেতা এবং দোকানগুলি তাদের আজওয়া খেজুর প্রমাণের জন্য বিশেষ প্রশংসা পত্র প্রদান করে থাকে, এই ধরনের প্রমাণিকরণ চেক করতে পারেন।

আজওয়া খেজুরের ইতিহাস

আজওয়া খেজুরের ইতিহাস সম্পর্কে হয়তো আমাদের মধ্যে অনেকের নাও জানা থাকতে পারে। আজ আমি আজওয়া খেজুরের ইতিহাস সম্পর্কে বর্ণনা করবো। আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম নিজ হাতে আজওয়া খেজুরের বীজ রোপন করেছিলেন। এই খেজুর বীজ রোপন ও জন্মের পেছনে রয়েছে বিশেষ কারণ যার ফলে এই খেজুরের রয়েছে বিশেষ বরকত ও ফজিলত।

হযরত সালমান ফারসির (রাঃ) মালিক ছিল এক ইহুদি। হযরত সালমান ফারসি যখন মুক্তি চাইলেন তখন ইহুদী এই শর্তে তাকে মুক্তি দিতে চাইলো যে যদি তিনি নির্দিষ্ট কয়েক দিনের মধ্যে নগদ ৬০০ দিনার দেন এবং ৩০টি খেজুর গাছ রোপন করে আর প্রত্যেকটি খেজুর গাছে খেজুর ধরলে তবে সে মুক্তি পাবে। আসলে ইহুদির মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না তাই এমন শর্ত দিয়েছিল।

কেননা সালমান ফারসি (রাঃ) পক্ষে ৬০০ দিনার জোগাড় করা কঠিন ছিল আর ৬০০ দিনার জোগাড় করলেও খেজুর গাছ রোপন করে তাতে ফল ধরা ফল পাকানো অনেক সময়ের ব্যাপার। হযরত সালমান ফারসি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে ঘটনার বর্ণনা করলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬০০ দিনার এর ব্যবস্থা করলেন। তারপর হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে সাথে নিয়ে গেলেন ইহুদীর কাছে।

ইহুদি একাধিক খেজুর দিয়ে বলল এই খেজুর থেকে চারা উৎপন্ন করে ফল ফলাতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন যে ইহুদির দেয়া খেজুরগুলো সে আগুনে পুড়িয়ে কয়লা করে ফেলেছে যাতে চারা না উঠে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুরের কাঁদি হাতে নিয়ে আলী (রাঃ) কে গর্ত করতে বললেন আর সালমান ফারসিকে বললেন পানি আনতে। আলী (রাঃ) গর্ত করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে প্রতিটি গর্তে সেই পুড়া খেজুর বীজ রোপন করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান ফারসিকে এ নির্দেশ দিলেন যে বাগানের শেষ প্রান্তে না যাওয়া পর্যন্ত তুমি পেছন ফিরে তাকাবে না। সালমান ফারসি পেছনে না তাকিয়ে পানি দিতে লাগলেন।

বাগানের শেষ প্রান্তে যাওয়ার পর তিনি তাকিয়ে দেখেন যে প্রতিটি গাছ খেজুরে পরিপূর্ণ আর খেজুর গুলো পেকে কালো বর্ণ ধারণ করেছে। এই খেজুর পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খেজুর আর স্বাদের দিক দিয়েও সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু। আর কেনই বা দামি হবে না যে খেজুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিজ হাতে রোপন করা।

আলী (রাঃ) হতে ইবনে সাদ ও তার পিতা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে কয়েকটি আজওয়া খেজুর খাবে ঐ দিন রাত পর্যন্ত কোন বিষ ও জাদু তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ বলেছেন সাতটি খুরমা- (সহি বুখারি হাদিস নং ৫৩৫৬)

আজওয়া খেজুরের উপকারিতা

আজওয়া খেজুরের উপকারিতা ও এর গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। খেজুরে রয়েছে পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ। তাই নিয়মিত খেজুর খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এছাড়াও, খেজুরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।আজওয়া খেজরকে ইসলাম ধর্মে সকল বিষের মহাঔষধ বলা হয়।
আজওয়া খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে যা পরিপাকতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি হজম প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রন করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে এবং খাবারের পুষ্টি উপাদানগুলি ভালোভাবে শোষিত হয়। নিচে আজওয়া খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো-

১। এই খেজুর আপনার ফুসফুস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখে।

২। অন্তঃসত্ত্বা নারীর সন্তান জন্মের সময় আজওয়া খেজুর খেলে জরায়ুর মাংস পেশীর দ্রুত সংকোচন প্রসারণ ঘটিয়ে প্রসব হতে সাহায্য করে।

৩। ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহবর এর ক্যান্সার রোধ করে।

৪। প্রসব পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।

৫। এতে রয়েছে ডায়েটরি ফাইবার যা আপনাকে কোলেস্টরেল থেকে মুক্তি দিবে।

৬। আজওয়া খেজুরে রয়েছে ৭৭.৫% কার্বোহাইড্রেট, যা দেহের বিকল্প শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।

৭। এতে রয়েছে ৬৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৭.৩ মিলিগ্রাম-লৌহ যা দাঁত, নখ, ত্বক, চুল ভালো রাখতে সহায়তা করে।

৮। দেহের স্নায়ুবিক শক্তি বৃদ্ধি করে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। হজম শক্তি বৃদ্ধি করে লিভার ও পাকস্থলীর শক্তিবর্ধন করে।

৯। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ এই ফল দৃষ্টিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

১০। পেটের গ্যাস কমায়, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে। শুষ্ক কাশি এবং এজমার জন্য উপকারী এই আজওয়া খেজুর।

১১। উচ্চ মাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাট সম্পন্ন খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, যৌন রোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠান্ডা জনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।

১২। নেশাগ্রস্থদের অঙ্গ ক্ষয় প্রতিরোধ করে আজওয়া খেজুর। স্বাস্থ্য ভালো করতে বাড়িতে তৈরি ঘিয়ে ভাজা খেজুর ভাতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

১৩। সবচেয়ে বড় কথা হল এ খেজুর গাছের বীজ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে বপন করেছেন সে হিসেবে অন্তরে মহব্বত নিয়ে বরকতের জন্য খেতে পারেন। আর শেফার নিয়তে তো খেতেই পারেন নিঃসন্দেহে।

১৪। এই খেজুর ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়তা করা।

১৫। দেহের স্নায়ুবিক শক্তি বৃদ্ধি করে।

১৬। আজওয়া খেজুর খেলে হৃদরোগের ঝুকি কম হয়।

আজওয়া কি জান্নাতের খেজুর

আজওয়া কি জান্নাতের খেজুর অনেকেই এ সম্পর্কে জানেন না। রাসূলউল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পছন্দের ফলের মধ্যে একটি হলো আজওয়া খেজুর। একটি ফলের গুনাগুণ সম্পর্কে নবীজি নিজে জানবেন কিন্তু তিনি তার প্রিয় উম্মতদেরকে জানাবেন না তা কি হয়। তিনি নিজে খাওয়ার পাশাপাশি আমাদেরকেও আজওয়া খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ‘আজওয়া হলো জান্নাতের ফল, এতে বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক রয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস: ২০৬৬)

সাদ (রা.) বর্ণনা করেন, একবার আমি অসুস্থ হলে রাসুল (সা.) আমাকে দেখতে আসেন। এ সময় তিনি তাঁর হাত আমার বুকের ওপর রাখেন। আমি তাঁর শীতলতা আমার হৃদয়ে অনুভব করি। এরপর তিনি বলেন, তুমি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত। কাজেই তুমি সাকিফ গোত্রের অধিবাসী হারিসা ইবনে কালদারের কাছে যাও। কেননা সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আর সে যেন মদিনার আজওয়া খেজুরের সাতটা খেজুর নিয়ে বিচিসহ চূর্ণ করে তোমার জন্য তা দিয়ে সাতটি বড়ি তৈরি করে দেয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৩৫)

সাদ (রা.) অন্য একটি বর্ণনা রয়েছে, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে সেদিন কোনো বিষ ও জাদুটোনা তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারি, হাদিস: ৫৭৬৮)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘মদিনার আলিয়া অঞ্চলের (উঁচু ভূমির) আজওয়া খেজুরে আরোগ্য রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে এর আহার করা বিষনাশক (প্রতিষেধক)। (মুসলিম, হাদিস: ৫১৬৮)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘সকালে সবার আগে আল-আলিয়ার আজওয়া খেজুর খেয়ে উপবাস ভাঙলে তা (সর্বপ্রকার) জাদু অথবা বিষক্রিয়ার আরোগ্য হিসেবে কাজ করে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৩৫৯২) এখানে আল-আলিয়া বলতে বোঝানো হয়েছে মদিনার পূর্ব দিকের কয়েক মাইল দূরের কিছু গ্রামকে।

উরওয়া (রহ.) বর্ণনা করেন, আয়েশা (রা.) পরপর সাত দিন সাতটি আজওয়া খেজুর খেয়ে সকালের উপবাস ভাঙার অথবা এই অভ্যাস তৈরি করার জন্য নির্দেশ দিতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ২৩৯৪৫)

আলি (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর প্রতিদিন আহার করে, তার পাকস্থলীর প্রতিটি রোগ নির্মূল হয়ে যায়।’ (কানজুল উম্মাল, হাদিস: ২৮৪৭২)

আজওয়া খেজুর খাওয়ার নিয়ম

আজওয়া খেজুর খাওয়ার নিয়ম হয়তো আপনার জানা নাও থাকতে পারে। খেজুর একটি প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর ফল যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যান্ত উপকারী। এটি বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর, যা শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমাদের খেজুর অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
আমরা অনেকেই জানি খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং আমাদের শরীরে কেমন প্রভাব ফেলে। কিন্তু কখন বা কি নিয়মে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে তা অনেকেই ঠিকমতো জানিনা। সাধারণত সকালে খেজুর খেলে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। এতে সারাদিন আমাদের দেহে কাজ করার শক্তির যোগান দেয়। তাছাড়া ব্যায়াম করার কমপক্ষে আধা ঘন্টা আগে খেজুর খেলে দেহে সহজে ক্লান্তি আসবে না পাশাপাশি পেট থেকে দূষিত পদার্থ বা ক্ষতিকর টক্সিন বেরিয়ে যাবে।

আজওয়া খেজুর কিনার সময় কি কি খেয়াল রাখবেন

আজওয়া খেজুর কেনার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা উচিত যাতে আপনি ভালো মানের এবং আসল আজওয়া খেজুর কিনতে পারেন। এখন আমি আপনাদের সাথে আজওয়া খেজুর কিনার সময় কি কি খেয়াল রাখবেন তা নিয়ে আলোচনা করবো। দেখে নিন নিচে আসল আজওয়া খেজুর কেনার সময় খেয়াল রাখার কিছু টিপসঃ

রঙঃ আসল আজওয়া খেজুরের রঙ দেখে কিনুন। ভালো মানের আসল আজওয়া খেজুরের রঙ সাধারণত গাঢ় কালো হয়। খেজুরের প্রকারভেদ অনুযায়ী রঙের তারতম্য হতে পারে, তবে অস্বাভাবিক ফিকে বা বিবর্ণ খেজুর এড়িয়ে চলুন।

গঠনঃ আসল আজওয়া খেজুরের বাইরের অংশ মসৃণ এবং ফাটলবিহীন হওয়া উচিত। খেজুরে ফাটল বা দাগ থাকলে সেটা কম মানের হতে পারে।

আকার এবং আকারের সঙ্গতিঃ খেজুরের আকার ও আকারের সঙ্গতি লক্ষ্য করুন। এক ধরনের খেজুরের সবগুলো খেজুর সাধারণত একই আকার ও আকৃতির হয়।

স্বাদ ও গন্ধঃ খেজুরের স্বাদ ও গন্ধ পরীক্ষা করুন যদি সম্ভব হয়। ভালো মানের খেজুরের স্বাদ মিষ্টি এবং গন্ধ তাজা হয়। বাজে গন্ধ বা তিক্ত স্বাদযুক্ত খেজুর এড়িয়ে চলুন।

মাংসল অংশঃ খেজুরের মাংসল অংশ নরম এবং রসালো হওয়া উচিত। বেশি শুষ্ক বা শক্ত খেজুর ভালো মানের নয়।

উৎপাদন তারিখ ও মেয়াদঃ প্যাকেটের উৎপাদন তারিখ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ পরীক্ষা করুন। তাজা খেজুর কেনার জন্য উৎপাদন তারিখ নতুন হওয়া উচিত।

প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণঃ খেজুর যদি প্রক্রিয়াজাতকৃত হয়, তবে প্রক্রিয়াজাতকরণের পদ্ধতি এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়া দেখে নিন। খেজুরে অতিরিক্ত প্রিজারভেটিভ বা কেমিক্যাল না থাকা ভালো।

প্যাকেজিংঃ আসল আজওয়া খেজুর সাধারণত মদিনা থেকে আসে এবং এর প্যাকেজিংয়ে ‘Made in Madinah’ লেখা থাকে। প্যাকেজিংয়ে প্রায়শই উৎপাদন সিল এবং QR কোড থাকে, যা স্ক্যান করে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন।

বিক্রেতার বিশ্বাসযোগ্যতাঃ খেজুর কেনার সময় পরিচিত এবং বিশ্বাসযোগ্য বিক্রেতা থেকে কিনুন। বিশেষ করে অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে রিভিউ এবং রেটিং দেখে সিদ্ধান্ত নিন।

মূল্যঃ খুব কম দামে খেজুর পাওয়া গেলে সেটি সন্দেহজনক হতে পারে। ভালো মানের খেজুর সাধারণত একটু বেশি দামের হয়।

এই বিষয়গুলি খেয়াল রেখে খেজুর কেনার সময় আপনি ভালো মানের এবং স্বাস্থ্যকর খেজুর কিনতে পারবেন।

আসল আজওয়া খেজুরের দাম কতো

আসল আজওয়া খেজুরের দাম আমাদের দেশে প্রতি কেজি ১২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। আজওয়া খেজুর সৌদি আরব থেকে আমদানি করা হয় এবং এই খেজুরের চাহিদা বেশি হওয়ায় এর দাম একটু বেশি হয়ে থাকে। আজওয়া খেজুর প্রতিদিন সকালে ৭টি পরিমাণ খেলে ওইদিন বিষ কিংবা জাদুটোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।

শেষ কথা

আজওয়া খেজুরের উপকারিতা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাই বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার করতে পারি। তাছাড়া অন্য এক হাদীসে হৃদরোগের জন্য এ আজওয়া খেজুর ব্যবহার করতে বলেছেন।আজওয়া খেজুর সৌদি আরবের সবচেয়ে পরিচিত খেজুর। সৌদি আরবের প্রসিদ্ধ খেজুরগুলোর মধ্যে এই আজওয়া খেজুর অন্যতম। সৌদির বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষত মদীনায় এই খেজুর বিশেষভাবে পাওয়া যায়।

সুতরাং, এই আর্টিকেলটি পড়ে নিশ্চই আজওয়া খেজুরের উপকারিতা ও আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায় কি সে সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url