কারণ এটি শক্তি এবং পৌরুষত্ব বৃদ্ধি করে বলে যৌনক্রিয়ার উন্নতি হয়। অশ্বগন্ধা
বিভিন্নভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে, যেমন পাউডার, ক্যাপসুল, বা চা হিসেবে। এর
পাউডার গরম দুধ বা পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়াও ক্যাপসুল আকারে
বাজারে পাওয়া যায়, যা প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করা যায়।
ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা বা অশ্বগন্ধা যেভাবে আমাদেরকে উপকৃত করে থাকে
তা হলো-
কামউত্তেজনা সৃষ্টিতে সহায়কঃ প্রাচীনকাল থেকে অশ্বগন্ধা একটি
আফ্রোডাইজিয়াক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিংবদন্তি শাস্ত্র কামসূত্রে
অশ্বগন্ধাকে অত্যন্ত শক্তিশালী যৌন উত্তেজক ভেষজ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এটি যৌন আকাঙ্খা কমে যাওয়া ও ইরেকটাইল ডিসফাংশনের চিকিৎসায়
কার্যকরী।
যৌনক্ষমতা বাড়ায়ঃ পুরুষদের যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অশ্বগন্ধা
বিশেষভাবে কার্যকর। অশ্বগন্ধা পুরুষ এবং নারীদের যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি করে
এবং পুরুষদের সাইকোজেনিক কারনে লিঙ্গ উচ্ছৃত না হলে (মানসিক সমস্যার
দরুণ পুরুষদের লিঙ্গ দৃঢ় না হওয়া) তার চিকিৎসা করলে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া
যায়। নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবনে শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
এটি টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যা পুরুষদের যৌন
চাহিদা ও কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও, অশ্বগন্ধা শুক্রাণুর গুণগত মান ও
সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক, যা প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। ছেলেদের জন্য
অশ্বগন্ধার উপকারিতা হলো অশ্বগন্ধা শরীরে টেস্টোস্টেরন ও প্রোজেস্টেরনের
পরিমান বাড়াতে পারে, ফলে যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে। প্রাচীন কাল
থেকেই ছেলেদের যৌন সমস্যা দূর করতে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হয়।
শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করেঃ
প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত জীবনে ছেলেদের জন্য শারীরিক শক্তি অপরিহার্য।
অশ্বগন্ধা শরীরের শক্তি বাড়াতে এবং ক্লান্তি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী।
শরীরচর্চা বা শারীরিক পরিশ্রমের পর দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে, যা
ছেলেদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অশ্বগন্ধার উপাদানগুলো শরীরের মাংসপেশি
পুনর্গঠন করে এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি থেকে মুক্তি দেয়।
রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ায়ঃ অশ্বগন্ধা রক্তে
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়াতে সাহায্য করে। টেস্টোস্টেরন
পুরুষের যৌন হরমোন যা যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করে। অশ্বগন্ধা লুটেইনিজিং
হরমোন ও টেস্টোস্টেরনের সিরামের মাত্রা বৃদ্ধি করে, ফলে পুরুষের যৌন
হরমোনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে।
সহনশীলতা বাড়ায়ঃ অশ্বগন্ধা শারীরিক পারফরম্যান্স উন্নত করতে
ও যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও কাজ করে। নিয়মিত সেবনের ফলে ধৈর্য্যশীলতা,
শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ও সহনশীলতা বাড়ে।
অনিদ্রা দূর করেঃ ক্লান্তি দূর করে স্নায়ুকে আরাম প্রদান করতে
খুবই কার্যকরী একটি ঔষধি ভেষজ হচ্ছে অশ্বগন্ধা । এর ফলে ঘুম ভালো হয়।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, অশ্বগন্ধা ব্যবহার করলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
স্ট্রেস কমায়ঃ অশ্বগন্ধায় অ্যানজাইলটিক উপাদান থাকে যা মানসিক
চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি স্নায়ুতন্ত্রের ওপর কাজ করতে সক্ষম। আপনি যদি
খুব ভয় পান কোনো কারণে, তাহলে প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই
সমস্যা এড়াতে অশ্বগন্ধা সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল দূর করেঃ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলা হয়, অশ্বগন্ধা
খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে পেশির শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
অশ্বগন্ধা একটি প্রাচীন ঔষধি গাছ, যা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বিভিন্নভাবে
ব্যবহৃত হয়। এটি শারীরিক এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে পরিচিত।
অশ্বগন্ধার মূল উপাদান উইথানলাইড, যা প্রদাহনাশক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। এটি শুধু খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় না, বরং
হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য
করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়ঃ অশ্বগন্ধা একটি প্রাচীন ভেষজ
উদ্ভিদ যা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর মধ্যে
প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়াতে সাহায্য করে।
থাইরয়েডের সমস্যা কমাতেঃ হাইপোথাইরয়েড রোগীদের জন্য অশ্বগন্ধা
প্রয়োজন, যারা থাইরয়েড হরমোনের অভাবে আক্রান্ত। এটি তাদের শরীরে থাইরক্সিন
হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
চোখের সমস্যা কমাতেঃ প্রাচীনকালে চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে
অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হত। এখনও চোখের সমস্যার জন্য অশ্বগন্ধা অনেকে ব্যবহার
করেন।
আর্থ্রাইটিস সারাতেঃ অর্থ্রাইটিসের ব্যথার মাত্রা কমাতে
অশ্বগন্ধার খুব গুরুত্বপূর্ণ। আয়ুর্বেদে অর্থ্রাইটিস সম্পূর্ণ চিকিৎসায়
অশ্বগন্ধা ব্যবহৃত হয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেঃ অশ্বগন্ধা ক্যান্সারের প্রতিরোধক
হিসেবে কার্যকর। এর পাতার ও মূলের নির্যাস টিউমার কোষ ধ্বংস করে ও সেই কোষে
রক্ত সরবারহ বন্ধ করে দেয়।
ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতেঃ অশ্বগন্ধার মূল ও পাতার নির্যাস
অ্যান্টিডায়াবেটিক উপাদান থাকে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিনের পরিমাণ
বাড়াতে ও লিপিডের পরিমান ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
স্মৃতিশক্তি উন্নত করেঃ অ্যালজাইমারস রোগীদের অবস্থার উন্নতিতে
অশ্বগন্ধা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে,
অশ্বগন্ধার বিভিন্ন সক্রিয় উপাদান মস্তিষ্কের কোষের ক্ষয় রোধ করতে এবং
নিউরোনাল সংযোগ উন্নত করতে সাহায্য করে।
পেশী মজবুত করেঃ অশ্বগন্ধা পেশী মজবুত করতে অত্যন্ত কার্যকরী।
এটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত একটি ঔষধি গাছ, যা মূলত পেশী
শক্তিশালী করতে, পেশীর আঘাত সারাতে এবং ব্যায়ামের ফলে পেশীতে সৃষ্ট চাপ
কমাতে ব্যবহৃত হয়।
ইনফেকশন থেকে বাঁচতেঃ অশ্বগন্ধার পাতা ও মূলে
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় এটি নানা ধরণের ইনফেকশন থেকে বাঁচাতে
সাহায্য করে।
হার্টেকে সুরক্ষা রাখতেঃ অশ্বগন্ধা রক্ত চলাচল সঠিক রেখে হার্টকে
স্বাস্থ্যকর করে তোলে। এটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি
গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ, যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে।
ওজন বৃদ্ধি করতেঃ অনেকে মনে করেন অশ্বগন্ধার মূলের গুঁড়ো ওজন
বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, তবে এটি এখনও প্রমাণিত হয়নি। অশ্বগন্ধা মূলত
শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নতিতে একটি ঔষধি উপাদান।
অবসাদ কমাতেঃ অশ্বগন্ধায় অ্যাড্যাপটোজেন থাকায় এর নির্যাস
অবসাদ ও মানসিক উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা মস্তিষ্কের সেরোটোনিন
এবং ডোপামিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে।
খুশকি কমাতেঃ অশ্বগন্ধার গুঁড়ো দিয়ে তৈরি তেল বা শ্যাম্পু
ব্যবহার করলে ত্বকের প্রদাহ কমাতে এবং মাথার ত্বকের কোষগুলির বৃদ্ধিকে
স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। এটি চুলের গোড়া শক্তিশালী করে এবং খুশকির আঁশের
মতো লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করে।
অকালে চুল পাকা আটকাতেঃ অশ্বগন্ধা প্রচুর পরিমাণে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা মুক্ত র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে কোষগুলিকে রক্ষা
করে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী অশ্বগন্ধার নির্যাস অকালে চুল পাকা আটকাতে
উপকারী।
চুল মজবুত করতেঃ অশ্বগন্ধা মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি
করতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে অশ্বগন্ধাকে চুল ঝলমলে ও স্বাস্থ্যকর
করতে উপযোগী করে।
বার্ধ্যকের ছাপ দূর করতেঃ অশ্বগন্ধার নির্যাস বার্ধ্যকের ছাপ
পড়তে দেয় না। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে অশ্বগন্ধা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা
উন্নত করতে এবং বলিরেখা হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে।
ক্ষত সারাতেঃ অশ্বগন্ধায় থাকা উইথানোলাইড নামক উপাদান প্রদাহ
কমাতে সাহায্য করে। প্রদাহ ক্ষত সারানোর প্রক্রিয়া ব্যাহত করে, তাই প্রদাহ
কমানো দ্রুত নিরাময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অশ্বগন্ধার অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি
উপাদান ক্ষত সারাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
কর্টিসল লেভেল কমাতেঃ কর্টিসল হলো একটি স্টেরয়েড হরমোন যা
অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। অশ্বগন্ধা অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডের
সমস্যার কারণে রক্তে কর্টিসলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতেঃ অশ্বগন্ধা করটিসল, একটি স্ট্রেস
হরমোন, এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা
শরীরকে ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। অশ্বগন্ধা মস্তিষ্কে
গামা-অ্যামিনোবুট্রিক এসিড এর মাত্রা বৃদ্ধি করে যা শান্তি ও স্থিতিশীলতা
প্রদান করে। অশ্বগন্ধা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে এবং জ্ঞানীয়
ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে অশ্বগন্ধা
মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা কমাতে সাহায্য করে।
ত্বকের ইনফেকশন ঠিক করতেঃ অশ্বগন্ধার পাতা ও মূলে
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটি ত্বকের ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে।
অশ্বগন্ধা কলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে, যা ত্বকের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন যা
ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম
অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম হলো এক কাপ চা, দুধ, বা মধুর সাথে ১ থেকে ২ চা চামচ
অশ্বগন্ধা গুড়া মিশিয়ে খাওয়া। এটি সেবনে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
পায় এবং মন ও শরীরকে প্রশান্ত করে। আরও অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম হলো
অশ্বগন্ধার গুড়া মধু বা বাদামের সাথে মিশিয়ে ঘুমের টনিক হিসেবে ব্যবহার করা
যেতে পারে, যা রাতের ঘুমকে গভীর ও প্রশান্তিময় করে তোলে।
এতে চাপ এবং দুশ্চিন্তা কমে যায়, ফলে আপনি সকালে উঠে সতেজ অনুভব করবেন।
অশ্বগন্ধা গুড়া শুধু সেবন নয়, বাহ্যিকভাবেও কার্যকর।অশ্বগন্ধার শেকড় এবং
গুঁড়া দুইভাবেই খাওয়া যায়। তবে এখন অশ্বগন্ধা গুঁড়া খাওয়ার প্রচলন
সবচেয়ে বেশি। কারণ বাজারে শেকড়ের থেকে গুঁড়া বেশি দেখা যায়। ভালো ফল পেতে
প্রতিদিন ৪-৫ গ্রাম অর্থাৎ ১ চামচ অশ্বগন্ধা গুঁড়া খেতে পারেন।
আপনি
চাইলে এটি কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে, হালকা গরম দুধে মিশিয়ে অথবা মধু
মিশিয়েও খেতে পারেন। প্রতিদিন সকালে ১ চামচ অথবা ১/২ চামচ আর রাতে ঘুমানোর
আগে ১/২ চামচ করে খেতে পারেন। তবে আপনার সমস্যার উপর ভিত্তি করে বিশেষজ্ঞ
একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অশ্বগন্ধা খাওয়া সবথেকে নিরাপদ।
এটি মলমের মতো করে ক্ষত বা প্রদাহের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়
এবং দ্রুত রিকভারিতে সাহায্য করে। এছাড়াও, অশ্বগন্ধা গুড়া রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শরীরের শক্তি ও উদ্যম বাড়িয়ে তোলে। ব্যস্ত
জীবনের মাঝে একটু সময় নিয়ে যদি আপনি অশ্বগন্ধা গুড়া সেবন করতে পারেন,
তাহলে এটি আপনার সামগ্রিক সুস্বাস্থ্য ও মনের প্রশান্তি বজায় রাখতে সাহায্য
করবে। নিয়মিত অশ্বগন্ধা গুড়া সেবন করলে আপনার দৈনন্দিন জীবনের চাপ ও
ক্লান্তি দূর হবে এবং সক্রিয় ও আনন্দময় অনুভব করবেন।
অশ্বগন্ধার উপকারিতা
অশ্বগন্ধার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। অশ্বগন্ধা একটি ভেষজ ঔষধ
হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ভেষজ উপাদান। এর মধ্যে অন্যতম
হল অ্যালকালয়েড, স্ট্রেরয়ডাল ল্যাক্টনস, ট্যানিনস, স্যাপোনিনস ইত্যাদি
উপাদান। এ সকল উপাদান ক্যান্সার ও বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত রোগের
প্রতিরোধ করতে সহায়ক। এছাড়াও যৌনক্ষমতা বিষয়ক সমস্যা ও অন্যান্য প্রদাহ
প্রতিরোধে এ সকল উপাদান বেশ কার্যকর।
অনিদ্রা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণেঃ অশ্বগন্ধা মানুষের ক্লান্তি দূর
করে খুব সহজেই। এর ফলে ঘুম আসে তাড়াতাড়ি, যা অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য
করে। অশ্বগন্ধার অ্যানজাইলটিক উপাদান মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে
মানসিক চাপ কমাতে সক্ষম। মানুষের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অশ্বগন্ধা বেশ
কার্যকর।
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, অশ্বগন্ধা ক্যান্সার
প্রতিরোধে সাহায্য করে। যাদের কেমোথেরাপি দিতে হয় তাদের শারীরিক অবস্থার
উন্নতিতে অশ্বগন্ধা কার্যকর।
ডায়বেটিস সমস্যায়ঃ অশ্বগন্ধার মূল ও পাতার রসে থাকে
অ্যান্টি-ডায়বেটিক উপাদান যা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর মূল ও
পাতার কোষে ফ্ল্যাভোনয়েডস নামক উপাদান থাকে যা ডায়বেটিস রোগীর দেহে
ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। (আরও পড়ুন – ডায়াবেটিস কি এবং
ডায়াবেটিস কমানোর উপায়)
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যঃ অশ্বগন্ধায় এমন যৌগ রয়েছে যা
শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
যৌনক্ষমতা বাড়াতেঃ মানুষের দেহে টেস্টোস্টেরন ও প্রোজেস্টেরনের
পরিমাণ বাড়াতে অশ্বগন্ধা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এই হরমোন বৃদ্ধির ফলে
মানুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা ও যৌনক্ষমতা দুটিই বৃদ্ধি পায়।
হার্টের স্বাস্থ্য উন্নতিঃ অশ্বগন্ধা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো
রাখতে সহায়ক। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোলেস্টেরলের (cholesterol)
মাত্রা হ্রাস করে, যা হার্টের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।
থাইরয়েডের সমস্যায়ঃ থাইরয়েডের সমস্যায় অশ্বগন্ধা একটি কার্যকর
প্রতিষেধক হতে পারে। যাদের শরীরে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কম তাদের
ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা হতে পারে খুবই উপকারী।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃ মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়াতে অশ্বগন্ধার জুড়ি নেই। অশ্বগন্ধায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এ
কাজে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধায় আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা মানুষের
দেহে বিভিন্ন ইনফেকশন।
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ অশ্বগন্ধা শরীরের বিপাকীয় কার্যক্রম
(metabolism) উন্নত করে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি অতিরিক্ত চর্বি
পোড়াতে সহায়ক হতে পারে।
রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণেঃ মানুষের দেহের রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণে
অশ্বগন্ধা বেশ কার্যকর। অশ্বগন্ধা দেহের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রেখে
হৃৎপিণ্ডকে রোগ থেকে রক্ষা করে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, অশ্বগন্ধা মানুষের
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং পেশির শক্তি বৃদ্ধি করে।
আর্থ্রাইটিসে ব্যথায় অশ্বগন্ধার গুঁড়া খুবই উপকারী।
চুল ও ত্বকের যত্নেঃ চুলের ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা বেশ উপকারী বলে মনে
করা হয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, চুল পড়া কমাতে ও চুলকে
মজবুত করতে অশ্বগন্ধা একটি কার্যকর ঔষধ।
অশ্বগন্ধা ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে। এতে হয়তো আপনি চিরযৌবনা
হবেন না। কিন্তু আপনার ত্বকের ভাজ পড়া কিংবা দ্রুত বার্ধক্য আসা থেকে
মুক্তি মিলবে।
সাপের কামড়েঃ সাপে কামড় দিলে অশ্বগন্ধার ব্যবহারের প্রচলন বেশ
পুরনো এবং সাপের কামড়ের চিকিৎসায় এটি বেশ কার্যকরও। তবে অতি অবশ্যই
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোমতেই ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
প্রদাহ এবং ব্যথা উপশমঃ অশ্বগন্ধা প্রদাহবিরোধী (anti-inflammatory)
বৈশিষ্ট্যের কারণে শরীরের প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এটি
আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিঃ অশ্বগন্ধা স্ট্রেস এবং উদ্বেগ (anxiety)
কমাতে সাহায্য করে। এটি কর্টিসল (cortisol) হরমোনের মাত্রা কমিয়ে মানসিক
প্রশান্তি আনে এবং উদ্বেগের মাত্রা হ্রাস করে।
শারীরিক শক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধিঃ অশ্বগন্ধা শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি
করে এবং পেশিশক্তি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যারা অ্যাথলেটিক
(athletic) কাজ করেন, তাদের জন্য এটি শক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ অশ্বগন্ধার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
(antioxidant) বৈশিষ্ট্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন
রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করাঃ অশ্বগন্ধা মেমোরি (memory) এবং
কগনিটিভ ফাংশন (cognitive function) উন্নত করে, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা
বাড়ায় এবং বয়স্কদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণঃ অশ্বগন্ধা রক্তে শর্করার (blood
sugar) মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের
জন্য।
অশ্বগন্ধা খেলে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়, অশ্বগন্ধা আলসার প্রতিরোধেও সাহায্য
করে। এতে ক্যান্সার প্রতিরোধক গুণও রয়েছে, যা ক্যান্সার কেমোথেরাপি বা
রেডিওথেরাপির সংযোজন হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। পারকিনসন্স, আলঝেইমার রোগের
মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগে আক্রান্তদের জন্যও অশ্বগন্ধার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে
বলে জানা যায়।
এছাড়াও, অশ্বগন্ধা মানসিক চাপ কমাতে এবং ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
এটি ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হৃদরোগের
ঝুঁকি কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং যৌন
স্বাস্থ্য উন্নত করতেও সাহায্য করে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম, এক আউন্স অশ্বগন্ধার গুঁড়ো হালকা করে ঘিয়ে ভেজে
খেজুর ও চিনি ২০ মিনিট পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া, ঘি বা মধুতে মিশিয়ে
দুধ দিয়েও খাওয়া যায়। অশ্বগন্ধা, কলা ও দুধ মিশিয়ে স্মুদি বানিয়ে খাওয়াও
সম্ভব। অশ্বগন্ধার অনেক গুণ রয়েছে যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি মানসিক চাপ
কমায়, শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শারীরিক সহনশীলতা উন্নত করে।
আপনি চাইলে অশ্বগন্ধার চা বানিয়ে পান করতে পারেন, যা রোজ সকালে খাওয়া যেতে
পারে। এছাড়া, অশ্বগন্ধার ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট আকারেও গ্রহণ করা যায়। যেকোনো
নতুন খাবার বা সম্পূরক গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ,
কারণ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার জন্য প্রভাব ভিন্ন হতে পারে।
অশ্বগন্ধা ক্যাপসুল, পাউডার বা তরল নির্যাস সহ বিভিন্ন আকারে খাওয়া যেতে পারে।
অশ্বগন্ধা খাওয়ার সর্বোত্তম উপায় আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ, জীবনধারা এবং আপনার
থাকতে পারে এমন কোনও নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য লক্ষ্যের উপর নির্ভর করে। প্রস্তাবিত
ডোজগুলি অনুসরণ করা এবং কোনও নতুন পরিপূরক পদ্ধতি শুরু করার আগে একজন
স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করাও গুরুত্বপূর্ণ।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url