ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা, অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম

 
অশ্বগন্ধা একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ যা এশিয়া এবং আফ্রিকা জুড়ে জন্মে। এটি একটি সুপরিচিত স্ট্রেস রিডুসার। অশ্বগন্ধার উপকারিতাগুলি বিভিন্ন স্ট্রেস-সম্পর্কিত ব্যাধিগুলির চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। অ্যাডাপ্টোজেন হলো প্রাকৃতিক যৌগ যা শরীরকে শারীরিক এবং মানসিক চাপ মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। অনিদ্রা, বার্ধক্য, উদ্বেগ, এবং অন্যান্য রোগের জন্য অশ্বগন্ধা খুবই উপকারি।
ছেলেদের-জন্য-অশ্বগন্ধার-উপকারিতা
অশ্বগন্ধা, পরিচিত একটি ঔষধি উদ্ভিদ যা আয়ুর্বেদিক ঔষধে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটির মূল, পাতা এবং শিকড় থেকে তৈরি গুঁড়ো, ক্যাপসুল এবং ট্র্যাকচার সহ বিভিন্ন রূপে পাওয়া যায়। এই ব্লগে আমরা জানবো ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা। চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম।

পেইজ সূচিপত্রঃ ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা, অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম

ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার  উপকারিতা

ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা অনেক যা বলে শেষ করা সম্ভব নয়। সমস্ত ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে অশ্বগন্ধা অন্যতম প্রধান যা পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবনে পুরুষদের মধ্যে শুধু যৌন ইচ্ছা বাড়ায় না, শুক্রাণু সংখ্যা এবং টেস্টোটেরনের হার বৃদ্ধিতে এটি কার্যকরী হয়। অশ্বগন্ধার এই যে চাঙা করার উপকারিতা আছে তা পুরুষদের যৌন স্বাস্থ্য উন্নয়নের সময় দেখা যায়।
কারণ এটি শক্তি এবং পৌরুষত্ব বৃদ্ধি করে বলে যৌনক্রিয়ার উন্নতি হয়। অশ্বগন্ধা বিভিন্নভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে, যেমন পাউডার, ক্যাপসুল, বা চা হিসেবে। এর পাউডার গরম দুধ বা পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়াও ক্যাপসুল আকারে বাজারে পাওয়া যায়, যা প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করা যায়। ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা বা অশ্বগন্ধা যেভাবে আমাদেরকে উপকৃত করে থাকে তা হলো-
 
কামউত্তেজনা সৃষ্টিতে সহায়কঃ প্রাচীনকাল থেকে অশ্বগন্ধা একটি আফ্রোডাইজিয়াক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিংবদন্তি শাস্ত্র কামসূত্রে অশ্বগন্ধাকে অত্যন্ত শক্তিশালী যৌন উত্তেজক ভেষজ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি যৌন আকাঙ্খা কমে যাওয়া ও ইরেকটাইল ডিসফাংশনের চিকিৎসায় কার্যকরী।

যৌনক্ষমতা বাড়ায়ঃ পুরুষদের যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অশ্বগন্ধা বিশেষভাবে কার্যকর। অশ্বগন্ধা পুরুষ এবং নারীদের যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং পুরুষদের সাইকোজেনিক কারনে লিঙ্গ উচ্ছৃত না হলে (মানসিক সমস্যার দরুণ পুরুষদের লিঙ্গ দৃঢ় না হওয়া) তার চিকিৎসা করলে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায়। নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবনে শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

এটি টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যা পুরুষদের যৌন চাহিদা ও কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও, অশ্বগন্ধা শুক্রাণুর গুণগত মান ও সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক, যা প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা হলো অশ্বগন্ধা শরীরে টেস্টোস্টেরন ও প্রোজেস্টেরনের পরিমান বাড়াতে পারে, ফলে যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে। প্রাচীন কাল থেকেই ছেলেদের যৌন সমস্যা দূর করতে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হয়।

শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করেঃ প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত জীবনে ছেলেদের জন্য শারীরিক শক্তি অপরিহার্য। অশ্বগন্ধা শরীরের শক্তি বাড়াতে এবং ক্লান্তি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। শরীরচর্চা বা শারীরিক পরিশ্রমের পর দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে, যা ছেলেদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অশ্বগন্ধার উপাদানগুলো শরীরের মাংসপেশি পুনর্গঠন করে এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি থেকে মুক্তি দেয়।

রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ায়ঃ অশ্বগন্ধা রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়াতে সাহায্য করে। টেস্টোস্টেরন পুরুষের যৌন হরমোন যা যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করে। অশ্বগন্ধা লুটেইনিজিং হরমোন ও টেস্টোস্টেরনের সিরামের মাত্রা বৃদ্ধি করে, ফলে পুরুষের যৌন হরমোনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে।

সহনশীলতা বাড়ায়ঃ অশ্বগন্ধা শারীরিক পারফরম্যান্স উন্নত করতে ও যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও কাজ করে। নিয়মিত সেবনের ফলে ধৈর্য্যশীলতা, শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ও সহনশীলতা বাড়ে।
 
অনিদ্রা দূর করেঃ ক্লান্তি দূর করে স্নায়ুকে আরাম প্রদান করতে খুবই কার্যকরী একটি ঔষধি ভেষজ হচ্ছে অশ্বগন্ধা । এর ফলে ঘুম ভালো হয়। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, অশ্বগন্ধা ব্যবহার করলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

স্ট্রেস কমায়ঃ অশ্বগন্ধায় অ্যানজাইলটিক উপাদান থাকে যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি স্নায়ুতন্ত্রের ওপর কাজ করতে সক্ষম। আপনি যদি খুব ভয় পান কোনো কারণে, তাহলে প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই সমস্যা এড়াতে অশ্বগন্ধা সাহায্য করে।

কোলেস্টেরল দূর করেঃ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলা হয়, অশ্বগন্ধা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে পেশির শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা একটি প্রাচীন ঔষধি গাছ, যা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি শারীরিক এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে পরিচিত। অশ্বগন্ধার মূল উপাদান উইথানলাইড, যা প্রদাহনাশক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। এটি শুধু খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় না, বরং হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়ঃ অশ্বগন্ধা একটি প্রাচীন ভেষজ উদ্ভিদ যা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

থাইরয়েডের সমস্যা কমাতেঃ হাইপোথাইরয়েড রোগীদের জন্য অশ্বগন্ধা প্রয়োজন, যারা থাইরয়েড হরমোনের অভাবে আক্রান্ত। এটি তাদের শরীরে থাইরক্সিন হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।

চোখের সমস্যা কমাতেঃ প্রাচীনকালে চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হত। এখনও চোখের সমস্যার জন্য অশ্বগন্ধা অনেকে ব্যবহার করেন।

আর্থ্রাইটিস সারাতেঃ অর্থ্রাইটিসের ব্যথার মাত্রা কমাতে অশ্বগন্ধার খুব গুরুত্বপূর্ণ। আয়ুর্বেদে অর্থ্রাইটিস সম্পূর্ণ চিকিৎসায় অশ্বগন্ধা ব্যবহৃত হয়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেঃ অশ্বগন্ধা ক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসেবে কার্যকর। এর পাতার ও মূলের নির্যাস টিউমার কোষ ধ্বংস করে ও সেই কোষে রক্ত সরবারহ বন্ধ করে দেয়।

ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতেঃ অশ্বগন্ধার মূল ও পাতার নির্যাস অ্যান্টিডায়াবেটিক উপাদান থাকে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতে ও লিপিডের পরিমান ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

স্মৃতিশক্তি উন্নত করেঃ অ্যালজাইমারস রোগীদের অবস্থার উন্নতিতে অশ্বগন্ধা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, অশ্বগন্ধার বিভিন্ন সক্রিয় উপাদান মস্তিষ্কের কোষের ক্ষয় রোধ করতে এবং নিউরোনাল সংযোগ উন্নত করতে সাহায্য করে।

পেশী মজবুত করেঃ অশ্বগন্ধা পেশী মজবুত করতে অত্যন্ত কার্যকরী। এটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত একটি ঔষধি গাছ, যা মূলত পেশী শক্তিশালী করতে, পেশীর আঘাত সারাতে এবং ব্যায়ামের ফলে পেশীতে সৃষ্ট চাপ কমাতে ব্যবহৃত হয়।

ইনফেকশন থেকে বাঁচতেঃ অশ্বগন্ধার পাতা ও মূলে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় এটি নানা ধরণের ইনফেকশন থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।

হার্টেকে সুরক্ষা রাখতেঃ অশ্বগন্ধা রক্ত চলাচল সঠিক রেখে হার্টকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে। এটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ, যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে।

ওজন বৃদ্ধি করতেঃ অনেকে মনে করেন অশ্বগন্ধার মূলের গুঁড়ো ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, তবে এটি এখনও প্রমাণিত হয়নি। অশ্বগন্ধা মূলত শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নতিতে একটি ঔষধি উপাদান।

অবসাদ কমাতেঃ অশ্বগন্ধায় অ্যাড্যাপটোজেন থাকায় এর নির্যাস অবসাদ ও মানসিক উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা মস্তিষ্কের সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

খুশকি কমাতেঃ অশ্বগন্ধার গুঁড়ো দিয়ে তৈরি তেল বা শ্যাম্পু ব্যবহার করলে ত্বকের প্রদাহ কমাতে এবং মাথার ত্বকের কোষগুলির বৃদ্ধিকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। এটি চুলের গোড়া শক্তিশালী করে এবং খুশকির আঁশের মতো লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করে।

অকালে চুল পাকা আটকাতেঃ অশ্বগন্ধা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা মুক্ত র‍্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে কোষগুলিকে রক্ষা করে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী অশ্বগন্ধার নির্যাস অকালে চুল পাকা আটকাতে উপকারী।

চুল মজবুত করতেঃ অশ্বগন্ধা মাথার ত্বকে রক্ত ​​সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে অশ্বগন্ধাকে চুল ঝলমলে ও স্বাস্থ্যকর করতে উপযোগী করে।

বার্ধ্যকের ছাপ দূর করতেঃ অশ্বগন্ধার নির্যাস বার্ধ্যকের ছাপ পড়তে দেয় না। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে অশ্বগন্ধা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করতে এবং বলিরেখা হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে।

ক্ষত সারাতেঃ অশ্বগন্ধায় থাকা উইথানোলাইড নামক উপাদান প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। প্রদাহ ক্ষত সারানোর প্রক্রিয়া ব্যাহত করে, তাই প্রদাহ কমানো দ্রুত নিরাময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অশ্বগন্ধার অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান ক্ষত সারাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

কর্টিসল লেভেল কমাতেঃ কর্টিসল হলো একটি স্টেরয়েড হরমোন যা অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। অশ্বগন্ধা অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডের সমস্যার কারণে রক্তে কর্টিসলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতেঃ অশ্বগন্ধা করটিসল, একটি স্ট্রেস হরমোন, এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা শরীরকে ফ্রি র‍্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। অশ্বগন্ধা মস্তিষ্কে গামা-অ্যামিনোবুট্রিক এসিড এর মাত্রা বৃদ্ধি করে যা শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রদান করে। অশ্বগন্ধা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে অশ্বগন্ধা মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা কমাতে সাহায্য করে।

ত্বকের ইনফেকশন ঠিক করতেঃ অশ্বগন্ধার পাতা ও মূলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটি ত্বকের ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা কলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে, যা ত্বকের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন যা ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।

অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম

অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম হলো এক কাপ চা, দুধ, বা মধুর সাথে ১ থেকে ২ চা চামচ অশ্বগন্ধা গুড়া মিশিয়ে খাওয়া। এটি সেবনে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মন ও শরীরকে প্রশান্ত করে। আরও অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম হলো অশ্বগন্ধার গুড়া মধু বা বাদামের সাথে মিশিয়ে ঘুমের টনিক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা রাতের ঘুমকে গভীর ও প্রশান্তিময় করে তোলে।

এতে চাপ এবং দুশ্চিন্তা কমে যায়, ফলে আপনি সকালে উঠে সতেজ অনুভব করবেন। অশ্বগন্ধা গুড়া শুধু সেবন নয়, বাহ্যিকভাবেও কার্যকর।অশ্বগন্ধার শেকড় এবং গুঁড়া দুইভাবেই খাওয়া যায়। তবে এখন অশ্বগন্ধা গুঁড়া খাওয়ার প্রচলন সবচেয়ে বেশি। কারণ বাজারে শেকড়ের থেকে গুঁড়া বেশি দেখা যায়। ভালো ফল পেতে প্রতিদিন ৪-৫ গ্রাম অর্থাৎ ১ চামচ অশ্বগন্ধা গুঁড়া খেতে পারেন।

আপনি চাইলে এটি কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে, হালকা গরম দুধে মিশিয়ে অথবা মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। প্রতিদিন সকালে ১ চামচ অথবা ১/২ চামচ আর রাতে ঘুমানোর আগে ১/২ চামচ করে খেতে পারেন। তবে আপনার সমস্যার উপর ভিত্তি করে বিশেষজ্ঞ একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অশ্বগন্ধা খাওয়া সবথেকে নিরাপদ।

এটি মলমের মতো করে ক্ষত বা প্রদাহের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায় এবং দ্রুত রিকভারিতে সাহায্য করে। এছাড়াও, অশ্বগন্ধা গুড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শরীরের শক্তি ও উদ্যম বাড়িয়ে তোলে। ব্যস্ত জীবনের মাঝে একটু সময় নিয়ে যদি আপনি অশ্বগন্ধা গুড়া সেবন করতে পারেন, তাহলে এটি আপনার সামগ্রিক সুস্বাস্থ্য ও মনের প্রশান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করবে। নিয়মিত অশ্বগন্ধা গুড়া সেবন করলে আপনার দৈনন্দিন জীবনের চাপ ও ক্লান্তি দূর হবে এবং সক্রিয় ও আনন্দময় অনুভব করবেন।

অশ্বগন্ধার উপকারিতা

অশ্বগন্ধার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। অশ্বগন্ধা একটি ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ভেষজ উপাদান। এর মধ্যে অন্যতম হল অ্যালকালয়েড, স্ট্রেরয়ডাল ল্যাক্টনস, ট্যানিনস, স্যাপোনিনস ইত্যাদি উপাদান। এ সকল উপাদান ক্যান্সার ও বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত রোগের প্রতিরোধ করতে সহায়ক। এছাড়াও যৌনক্ষমতা বিষয়ক সমস্যা ও অন্যান্য প্রদাহ প্রতিরোধে এ সকল উপাদান বেশ কার্যকর।

অনিদ্রা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণেঃ অশ্বগন্ধা মানুষের ক্লান্তি দূর করে খুব সহজেই। এর ফলে ঘুম আসে তাড়াতাড়ি, যা অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধার অ্যানজাইলটিক উপাদান মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে মানসিক চাপ কমাতে সক্ষম। মানুষের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অশ্বগন্ধা বেশ কার্যকর।

ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, অশ্বগন্ধা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। যাদের কেমোথেরাপি দিতে হয় তাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতিতে অশ্বগন্ধা কার্যকর।

ডায়বেটিস সমস্যায়ঃ অশ্বগন্ধার মূল ও পাতার রসে থাকে অ্যান্টি-ডায়বেটিক উপাদান যা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর মূল ও পাতার কোষে ফ্ল্যাভোনয়েডস নামক উপাদান থাকে যা ডায়বেটিস রোগীর দেহে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। (আরও পড়ুন – ডায়াবেটিস কি এবং ডায়াবেটিস কমানোর উপায়)

অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যঃ অশ্বগন্ধায় এমন যৌগ রয়েছে যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

যৌনক্ষমতা বাড়াতেঃ মানুষের দেহে টেস্টোস্টেরন ও প্রোজেস্টেরনের পরিমাণ বাড়াতে অশ্বগন্ধা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এই হরমোন বৃদ্ধির ফলে মানুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা ও যৌনক্ষমতা দুটিই বৃদ্ধি পায়।

হার্টের স্বাস্থ্য উন্নতিঃ অশ্বগন্ধা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোলেস্টেরলের (cholesterol) মাত্রা হ্রাস করে, যা হার্টের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।

থাইরয়েডের সমস্যায়ঃ থাইরয়েডের সমস্যায় অশ্বগন্ধা একটি কার্যকর প্রতিষেধক হতে পারে। যাদের শরীরে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কম তাদের ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা হতে পারে খুবই উপকারী।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃ মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অশ্বগন্ধার জুড়ি নেই। অশ্বগন্ধায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এ কাজে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধায় আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা মানুষের দেহে বিভিন্ন ইনফেকশন।

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ অশ্বগন্ধা শরীরের বিপাকীয় কার্যক্রম (metabolism) উন্নত করে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি অতিরিক্ত চর্বি পোড়াতে সহায়ক হতে পারে।

রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণেঃ মানুষের দেহের রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণে অশ্বগন্ধা বেশ কার্যকর। অশ্বগন্ধা দেহের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রেখে হৃৎপিণ্ডকে রোগ থেকে রক্ষা করে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, অশ্বগন্ধা মানুষের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং পেশির শক্তি বৃদ্ধি করে। আর্থ্রাইটিসে ব্যথায় অশ্বগন্ধার গুঁড়া খুবই উপকারী।

চুল ও ত্বকের যত্নেঃ চুলের ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা বেশ উপকারী বলে মনে করা হয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, চুল পড়া কমাতে ও চুলকে মজবুত করতে অশ্বগন্ধা একটি কার্যকর ঔষধ।

অশ্বগন্ধা ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে। এতে হয়তো আপনি চিরযৌবনা হবেন না। কিন্তু আপনার ত্বকের ভাজ পড়া কিংবা দ্রুত বার্ধক্য আসা থেকে মুক্তি মিলবে।

সাপের কামড়েঃ সাপে কামড় দিলে অশ্বগন্ধার ব্যবহারের প্রচলন বেশ পুরনো এবং সাপের কামড়ের চিকিৎসায় এটি বেশ কার্যকরও। তবে অতি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোমতেই ব্যবহার করা উচিৎ নয়।

প্রদাহ এবং ব্যথা উপশমঃ অশ্বগন্ধা প্রদাহবিরোধী (anti-inflammatory) বৈশিষ্ট্যের কারণে শরীরের প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এটি আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিঃ অশ্বগন্ধা স্ট্রেস এবং উদ্বেগ (anxiety) কমাতে সাহায্য করে। এটি কর্টিসল (cortisol) হরমোনের মাত্রা কমিয়ে মানসিক প্রশান্তি আনে এবং উদ্বেগের মাত্রা হ্রাস করে।

শারীরিক শক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধিঃ অশ্বগন্ধা শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং পেশিশক্তি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যারা অ্যাথলেটিক (athletic) কাজ করেন, তাদের জন্য এটি শক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ অশ্বগন্ধার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (antioxidant) বৈশিষ্ট্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করাঃ অশ্বগন্ধা মেমোরি (memory) এবং কগনিটিভ ফাংশন (cognitive function) উন্নত করে, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং বয়স্কদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণঃ অশ্বগন্ধা রক্তে শর্করার (blood sugar) মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য।

অশ্বগন্ধা খেলে কি হয়

অশ্বগন্ধা খেলে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়, অশ্বগন্ধা আলসার প্রতিরোধেও সাহায্য করে। এতে ক্যান্সার প্রতিরোধক গুণও রয়েছে, যা ক্যান্সার কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির সংযোজন হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। পারকিনসন্স, আলঝেইমার রোগের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগে আক্রান্তদের জন্যও অশ্বগন্ধার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে বলে জানা যায়।

আরও পড়ুনঃ

এছাড়াও, অশ্বগন্ধা মানসিক চাপ কমাতে এবং ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করতেও সাহায্য করে বলে প্রমাণিত হয়েছে।

অশ্বগন্ধা কিভাবে খাবেন

অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম, এক আউন্স অশ্বগন্ধার গুঁড়ো হালকা করে ঘিয়ে ভেজে খেজুর ও চিনি ২০ মিনিট পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া, ঘি বা মধুতে মিশিয়ে দুধ দিয়েও খাওয়া যায়। অশ্বগন্ধা, কলা ও দুধ মিশিয়ে স্মুদি বানিয়ে খাওয়াও সম্ভব। অশ্বগন্ধার অনেক গুণ রয়েছে যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি মানসিক চাপ কমায়, শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শারীরিক সহনশীলতা উন্নত করে।

আপনি চাইলে অশ্বগন্ধার চা বানিয়ে পান করতে পারেন, যা রোজ সকালে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া, অশ্বগন্ধার ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট আকারেও গ্রহণ করা যায়। যেকোনো নতুন খাবার বা সম্পূরক গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার জন্য প্রভাব ভিন্ন হতে পারে।

অশ্বগন্ধা খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় কী

অশ্বগন্ধা ক্যাপসুল, পাউডার বা তরল নির্যাস সহ বিভিন্ন আকারে খাওয়া যেতে পারে। অশ্বগন্ধা খাওয়ার সর্বোত্তম উপায় আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ, জীবনধারা এবং আপনার থাকতে পারে এমন কোনও নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য লক্ষ্যের উপর নির্ভর করে। প্রস্তাবিত ডোজগুলি অনুসরণ করা এবং কোনও নতুন পরিপূরক পদ্ধতি শুরু করার আগে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করাও গুরুত্বপূর্ণ।

অশ্বগন্ধা খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো-

ক্যাপসুল বা ট্যাবলেটঃ যারা আগে থেকে পরিমাপ করা ডোজ পছন্দ করেন এবং অশ্বগন্ধার স্বাদ পছন্দ করেন না তাদের জন্য এটি একটি সুবিধাজনক বিকল্প। প্যাকেজিং-এ প্রস্তাবিত ডোজ অনুযায়ী জল দিয়ে ক্যাপসুলটি গিলে ফেলুন এবং অশ্বগন্ধা ক্যাপসুলের উপকারিতা উপভোগ করুন।

পাউডারঃ অশ্বগন্ধা গুঁড়ো মহিলাদের জন্য বেশি উপকারী কারণ এটি স্মুদি, জুস বা পানিতে মেশানো যেতে পারে। কিছু লোক এটিকে উষ্ণ দুধ এবং মধুর সাথে মিশিয়ে একটি প্রশান্তিদায়ক পানীয় তৈরি করে। এই বিকল্পটি ডোজ সহজ কাস্টমাইজ করার অনুমতি দেয়।

তরল নির্যাসঃ অশ্বগন্ধার নির্যাস পান করার জন্য জল বা রস যোগ করা যেতে পারে। এই ফর্ম ক্যাপসুল বা গুঁড়ো তুলনায় দ্রুত শোষণ প্রস্তাব করতে পারে।

চাঃ কেউ কেউ অশ্বগন্ধা চা উপভোগ করেন, যা গরম পানিতে অশ্বগন্ধার মূল বা গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতিটি অশ্বগন্ধা খাওয়ার জন্য একটি উষ্ণ এবং আরামদায়ক উপায় প্রদান করে।

অশ্বগন্ধা পাউডার চেনার উপায়

অশ্বগন্ধা পাউডার চেনার উপায় সম্পর্কে জানার আগে, অশ্বগন্ধা গাছ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা প্রয়োজন। অশ্বগন্ধা গাছ চেনার উপায়গুলো হলো এর পাতার আকার, ফুল এবং ফলের ধরন। অশ্বগন্ধা গাছের ছবি দেখে আপনি সহজেই গাছটিকে চিহ্নিত করতে পারবেন। অশ্বগন্ধা গাছ কোথায় পাওয়া যায় জানতে চাইলে বলতেই হবে যে এটি প্রধানত ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

অশ্বগন্ধা গাছ কিভাবে চিনব সেটি জানার জন্য আপনাকে এর পাতার বৈশিষ্ট্য, ফুলের রঙ এবং ফলের আকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। অশ্বগন্ধা পাউডার সঠিকভাবে চেনার জন্য অবশ্যই বিশুদ্ধ এবং নির্ভেজাল পাউডার নির্বাচন করতে হবে।

ত্বকের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা

এমন কেউ নেই যিনি অমলিন এবং মসৃণ ত্বক পছন্দ করেন না। আপনি কি জানেন অশ্বগন্ধা ত্বকের অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। শরীরে বয়স নেমে আসার সবচেয়ে প্রধান কারণ হচ্ছে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন বিপাকীয় কার্যকলাপের দরুণ সৃষ্টি হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলীর কারণে অশ্বগন্ধা এইসব ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। 
ত্বকের-জন্য-অশ্বগন্ধার-উপকারিতা
এবং আপনার ত্বককে উজ্জ্বল এবং তাজা রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, শরীরে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের জন্য যে সমস্যা দেখা দেয় অর্থাৎ ত্বক কুঁচকে যাওয়া, ডার্ক স্পট এবং অকাল বার্ধক্যের অন্যান্য লক্ষণ, সেসব থেকে এটি বাঁচায়। অতিরিক্তভাবে, শুষ্ক এবং অমসৃণ ত্বকের জন্য দায়ী কেরাটোসিস। কেরাটোসিস-এর উপসর্গ কমাবার জন্য দৈনিক এক কাপ অশ্বগন্ধা চা সেবন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
 
আরও পড়ুনঃ 

অশ্বগন্ধা, একটি প্রাকৃতিক ভেষজ, আপনাকে দিতে পারে পরিষ্কার এবং উজ্জ্বল ত্বক। এর উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ব্রণ, বলিরেখা এবং কালো দাগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এছাড়াও, এতে এমন যৌগ রয়েছে যা আপনার স্নায়ুকে শান্ত করে এবং স্ট্রেস এবং উদ্বেগ কমায়, যা আপনার ত্বককেও সাহায্য করে।

এটি আপনার ত্বককে কীভাবে সাহায্য করে তা এখানে দেওয়া হলো

ক্লিনজিং এবং ময়শ্চারাইজিংঃ অশ্বগন্ধা অমেধ্য অপসারণ করে এবং শুষ্ক ত্বককে হাইড্রেট করে, ব্রণ এবং আটকে যাওয়া ছিদ্র প্রতিরোধ করে।

অ্যান্টি এজিংঃ এটি হরমোনের উৎপাদন বাড়ায় যা আপনার ত্বককে তারুণ্য এবং হাইড্রেটেড রাখে, বলিরেখা কমায় এবং কোলাজেন বজায় রাখে।

নিরাময়ঃ ক্রিম হিসাবে অশ্বগন্ধার তরল প্রয়োগ করা কাটা, ক্ষত এবং ত্বকের সংক্রমন নিরাময়ে সাহায্য করে।

অশ্বগন্ধা পাউডার খেলে কি লম্বা হওয়া যায়

অশ্বগন্ধা উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। প্রতিদিন এক চাচামচ অশ্বগন্ধার গুঁড়া এক গ্লাস দুধে মিশিয়ে পান করতে পারেন।উচ্চতার জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা এমন একটি বিষয় যা আজকাল বেশিরভাগ মানুষই এর সাথে পরিচিত হচ্ছে। অশ্বগন্ধা উচ্চতার সাপলিমেন্ট হিসেবে বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায়। উচ্চতার জন্য আপনি শীতকালীন চেরি দুধ বা ঘি বা এমনকি জলের সাথে চুর্ণ, ট্যাবলেট এবং গুঁড়ো আকারে খেতে পারেন।

উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য অশ্বগন্ধা পাউডার খুবই কার্যকর। যারা অশ্বগন্ধা উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য অশ্বগন্ধা পাউডার সেবন করাই সবথেকে উপকার। অশ্বগন্ধা পাউডার পানির সাথে খাওয়া হলে খুব সহজেই পরিপাক হয় এবং আমাদের শরীরে খুব দ্রুত কাজ করে।

উচ্চতা বাড়াতে অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম-
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে উচ্চতা বাড়াতে অশ্বগন্ধা দারুন উপাকারে লাগে। আসলে এতে উপস্থিত একাধিক খনিজ আমাদের হাড়ের গঠনে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে হাড়ের ঘনত্বেরও বৃদ্ধি ঘটায়। ফলে উচ্চতা বাড়তে শুরু করে। ১ গ্লাস গরম গরুর দুধে ২ চামচ অশ্বগন্ধা পাউডার মিশিয়ে খেলে দারুন ফল পাওয়া যাবে। তবে এই মিশ্রনটি টানা ৪৫ দিন, রাতে শুতে যাওয়ার আগে খেলে তবেই উপকার মিলবে।

চুলের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা

বর্তমানে আমাদের বড় সমস্যা চুল পড়া। অশ্বগন্ধা কিন্তু সুপার হেয়ার টনিক চুল পড়ার সমস্যা সমাধানে। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং হরমোন ব্যালেন্সসিং সিস্টেম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।অশ্বগন্ধা চুলে পুষ্টি জোগায়, যা চুল পড়া কমতে সাহায্য করে এবং চুল দীর্ঘ এবং উজ্জ্বল করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হওয়ার কারণে অকালে চুলে পাক ধরা এবং চুল পড়া বন্ধ হয়।

অশ্বগন্ধার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পুষ্টিকর প্রভাবের দরুণ এটি একটি আদর্শ কেশ টনিক হিসাবে কাজ করে। অশ্বগন্ধা চুলের গোড়ায় (ফলিকল) পুষ্টি জোগায় এবং চুল শক্ত করে। নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবনের ফলে শরীরের মানসিক চাপ কমে এবং চুল পড়া কমে। তাছাড়া, অশ্বগন্ধার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফ্রি র‌্যাডিক্যাল প্রতিরোধ করে এবং চুলের স্বাভাবিক রং নষ্ট হতে দেয় না। 

অশ্বগন্ধায় রয়েছে টাইরোসিন যা একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা চুল ঘন করতে এবং শিকড় মজবুত করতে সাহায্য করে। অ্যামিনো অ্যাসিড একটি প্রোটিন এবং আমরা সবাই জানি যে আমাদের চুল প্রোটিন দ্বারা গঠিত।অশ্বগন্ধা আপনার চুলকে ঘন, লম্বা এবং ঝলমলে করে তুলতে পারে। আপনি আয়ুর্বেদিক দোকান থেকে এই ভারতীয় জিনসেং ক্যাপসুল পেতে পারেন। তবে পানীয় তৈরির জন্য এর শিকড় এবং সামান্য অংশ সিদ্ধ করা ভাল। প্রতি একদিন অন্তর এটি খাওয়া হলে চুলের সব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চুলের জন্য অশ্বগন্ধা কিভাবে ব্যবহার করবেন দেখে নিন-

যা যা লাগবে 
৩চামচ অশ্বগন্ধা পাউডার, ২চামচ আমলকী পাউডার ও সামান্য পানি।

যেভাবে ব্যবহার করবেন
অশ্বগন্ধা ও আমলকী পাউডার পানি দিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ স্ক্যাল্পসহ পুরো চুলে ভালো করে লাগান। কিছুক্ষন পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে দু থেকে তিনদিন এটা ব্যবহার করুন। দেখবে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ফল পাবেন।

মহিলাদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা

অশ্বগন্ধা একটি বিশেষ ভেষজ যা অ্যাডাপ্টোজেন নামক একটি গ্রুপের অন্তর্গত। আপনি এটি সম্পূরক, গুঁড়া, চা বা প্রাকৃতিক আকারে খুঁজে পেতে পারেন। লোকেরা এটিকে সত্যিই দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহার করে আসছে, তবে বিজ্ঞানীরা এখনও অধ্যয়ন করছেন যে এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য কতটা ভাল কাজ করে। মহিলাদের জন্য, অশ্বগন্ধার কিছু উপকারী প্রভাব থাকতে পারে।

ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতার পাশাপাশি মহিলাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অশ্বগন্ধার উপকারিতা হল শরীরে হরমোনের মাত্রা ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করা। হরমোনগুলি ছোট বার্তাবাহকের মতো যা আমাদের শরীরের অনেকগুলি ফাংশন যেমন মেজাজ, শক্তি এবং প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করে। যখন আমাদের হরমোন ভারসাম্যের বাইরে থাকে, তখন এটি ক্লান্তি, মেজাজের পরিবর্তন এবং অনিয়মিত পিরিয়ডের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

অশ্বগন্ধায় এমন যৌগ রয়েছে যা হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, বিশেষ করে কর্টিসল, যাকে প্রায়ই স্ট্রেস হরমন বলা হয়। কর্টিসলের মাত্রা কমিয়ে, অশ্বগন্ধা স্ট্রেস এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে, যা ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মতো অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

মাসিক চক্র নিয়মিত করতে সাহায্য করেঃ মহিলাদের ক্ষেত্রে বিলম্বিত বা অনিয়মিত পিরিয়ড, পিরিয়ডের ব্যথা, প্রজনন সমস্যা বা মেনোপজের সময় পরিবর্তন হওয়া সাধারণ ব্যাপার। স্ট্রেস এই সমস্যাগুলি আরও খারাপ করতে পারে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সাধারণত দায়ী, যা এমনকি গর্ভাবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম মূলত দুধের সঙ্গে অশ্বগন্ধা নিয়মিত সেবন করলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলিকে শক্তিশালী করে এবং রক্ত ​​​​প্রবাহ উন্নত করে। এটি পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণ করতে, উর্বরতা উন্নত করতে এবং মাসিকের সমস্যা সহজ করতে সাহায্য করে।

যৌন উত্তেজক হিসেবে কাজ করেঃ ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতার পাশাপাশি, অশ্বগন্ধা এমন মহিলাদের সাহায্য করে, যাদের যৌন জীবনে সমস্যা রয়েছে। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে এটি চালু করা, প্রচণ্ড উত্তেজনায় পৌঁছানো এবং তেলতেলে থাকা সহজ হতে পারে। এটি মানসিক চাপের সাথেও সাহায্য করে, আপনাকে একটি ভাল মেজাজে রাখে এবং রক্ত ​​​​প্রবাহ উন্নত করে, যা যৌনতাকে আরও ভাল করতে পারে। এমনকি কামসূত্রের মতো প্রাচীন গ্রন্থেও অশ্বগন্ধা কীভাবে নারীদের যৌনতা বাড়াতে পারে সে সম্পর্কে কথা বলে। এটি এক ধরণের বুস্ট হিসাবে কাজ করে যা আপনাকে যৌনতার সময় আরও উত্তেজিত এবং সন্তুষ্ট করে তোলে।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অশ্বগন্ধা

গর্ভবতী মহিলাদের অশ্বগন্ধার মতো সম্পূরকগুলি সহ তারা কী গ্রহণ করে সে সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। যদিও এটি সাধারণত বেশিরভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচিত হয় যখন উপযুক্ত মাত্রায় নেওয়া হয়। ফলস্বরূপ, এটি প্রায়শই সুপারিশ করা হয় যে গর্ভবতী মহিলাদের অশ্বগন্ধা বা অন্য কোনও ভেষজ পরিপূরকগুলি এড়িয়ে চলুন যদি না তাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর দ্বারা বিশেষভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়।

অশ্বগন্ধা স্ট্রেস এবং উদ্বেগ কমানোর জন্য সম্ভাব্য সুবিধা থাকতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় আগ্রহের বিষয় হতে পারে, তবে মা এবং বিকাশমান ভ্রূণ উভয়ের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকির বিরুদ্ধে এই সম্ভাব্য সুবিধাগুলিকে ওজন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিশেষে, আপনি যদি গর্ভবতী হন এবং অশ্বগন্ধা বা অন্য কোন ভেষজ সম্পূরক গ্রহণ করার কথা বিবেচনা করেন, তাহলে আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য অবস্থা এবং প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং সুবিধাগুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য প্রথমে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করা ভাল।

বন্ধ্যাত্ব নারীর ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধার উপকারিতা

বন্ধ্যাত্ব হল যখন একজন মহিলা গর্ভবতী হতে পারে না বা গর্ভবতী হতে সমস্যা হয়। এটি হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, জীবনযাত্রা বা শারীরিক সমস্যার মতো বিষয়গুলির কারণে হতে পারে। অশ্বগন্ধার মতো আয়ুর্বেদিক ভেষজ ব্যবহার করা উর্বরতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু কীভাবে অশ্বগন্ধা গর্ভধারণের চেষ্টা করা মহিলাদের সাহায্য করে জেনে নিন

অশ্বগন্ধায় অনেক সক্রিয় পদার্থ রয়েছে, যেমন, অ্যাসিড এবং অ্যামিনো অ্যাসিড, যা শরীরের জন্য ভালো। এর শিকড়গুলিতে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্তঃস্রাব সিস্টেমকে উন্নত করে, এর মধ্যে গ্রন্থি রয়েছে যা প্রজনন হরমোনগুলিকে প্রভাবিত করে। সুষম হরমোন উর্বরতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

কম আয়রনের মাত্রা সহ মহিলাদের গর্ভবতী হতে বা গর্ভবতী থাকতে সমস্যা হতে পারে। অশ্বগন্ধায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, যা আয়রনের মাত্রা কম থাকায় বন্ধ্যাত্বে সাহায্য করতে পারে।ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা, অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার পর, বন্ধ্যাত্ব নারীদের ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন।

  • এই অশ্বগন্ধার কাচা মূল এর অংশ ২৫ গ্রাম মত নিতে হবে।
  • তারপর সেটা ৪ কাপ জল আর ১ কাপ দুধের মধ্যে নিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে।
  • ফুটানোর পর যখন চার ভাগের এক ভাগ হয়ে গেল তখন সেটা গাওয়া ঘি এর মধ্যে করে ঋতু স্নানের পরের দিন থেকে আবার পুনরায় ঋতুস্রাব শুরু হওয়া পর্যন্ত খেয়ে যেতে হবে। তবেই উপকারিতা পাওয়া যাবে।
  • তবে এটি শিশুদের ক্ষেত্রে খাওয়ানো যায়।
  • কিন্তু ওই একই পরিমাণ ৪-৫ গ্রাম খাওয়াতে হবে। যেসব শিশুরা খুবই দুর্বল প্রকৃতির হয়। তাদের ক্ষেত্রে, এটা খুব ভালো কাজ করে।
  • এমনকি পুরুষদের মাংসপেশি গঠনে অনেক খানি সুস্থ ও ভালো ভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
  • যেহেতু টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
  • তবে এত কিছু ভালো হওয়া সত্বেও।কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
  • যারা গর্ভবতী মহিলা তাদের ক্ষেত্রে এটা একদমই খাওয়া উচিত নয়।
  • আর যেসব মহিলাদেরকে বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়াতে হয়। তাদের ক্ষেত্রে,এই ঔষধ খাওয়া উচিত নয়।

অশ্বগন্ধা কিভাবে কাজ করে

যাদের ব্লাড সুগার আছে অর্থাৎ যাদের সুগারের মাত্রাটা অনেকখানি বেশি আছে। তাদের ক্ষেত্রে, এই অশ্বগন্ধা খুবই কার্যকরী। যার ফলে ব্লাড সুগার মাত্রাটা অনেকখানি কম করে দেয়। তবে এক্ষেত্রে, যাদের সুগারের মাত্রাটা অনেক বেশি। তারা যদি সুগারের ওষুধ খায় অথচ তার সঙ্গে সঙ্গে যদি খুব বেশি পরিমাণে এটা খায় তাহলে সুগার কিছুটা কমে যাবে। তাই ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে একটু সচেতন হতে হবে। খুব বেশিদিন টানা এই ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।

এক মাসে ১৫ দিন মত খেলে তারপরে অন্ততপক্ষে ৩-৪ মাস খাওয়া উচিত নয়। আবার ৩-৪ মাস পর ১৫ দিন মত এটা খাওয়া যায়। একবারে এই ঔষধ খেয়ে গেলে হবে না। এটা কোলেস্টেরল মাত্রাটাকে অনেকখানি কমাতে সাহায্য করে।শুধু কোলেস্টেরল না তার সঙ্গে সঙ্গে টি.জি. র মাত্রাটা কেও কমাতে সাহায্য করে।

  • যারা মানসিক চাপে ভুগছে।
  • যারা ডিপ্রেশন এর মধ্যে আছে বা ভীষণভাবে যারা চিন্তার মধ্যে আছে। তারা যদি অশ্বগন্ধা খায়। তবে তাদের ক্ষেত্রে, বেশ ভালো উপকার হবে। খাওয়ার বিধি একই রকমই।
  • কুসুম কুসুম দুধের মধ্যে ৪-৫ গ্রাম মতো দিয়ে খেতে হবে। আবার হালকা গরম জলের মধ্যে ওই একই পরিমাণ ৩-৪ গ্রাম মিলিয়ে খেতে হবে। এতে খুবই ভালো রকম ঘুম আসবে। কিন্তু যাদের ঘুমের কোন সমস্যা নেই তাদের খাওয়া উচিত নয়।

পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অশ্বগন্ধা

অশ্বগন্ধা সম্পূর্ণরূপে বলপূর্বক এবং পুরুষালী শক্তি বৃদ্ধিকারক একটা হার্বস। নানা কারণে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা কমছে। তার মধ্যে রয়েছে মানসিক চাপ, ও বিশ্রামের অভাব। এ ছাড়াও অতিরিক্ত ধূমপান এবং মদ্যপানের অভ্যাস দ্রুত হারে কমতে থাকে শুক্রাণুর উৎপাদন। ফলে কমে যায় প্রজনন ক্ষমতা। তবে ডায়েটে কিছু খাবার বেশি মাত্রায় রাখতে পারলেই পুরুষরা বন্ধ্যত্বের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা বা পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অশ্বগন্ধা কিভাবে কাজ করে তা জেনে নিন-
  • পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অশ্বগন্ধা স্পার্মের গুণ বা গুনাগুন এবং পরিমাপ দুটোই বাড়াতে সাহায্য করে।
  • টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রাটা অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়।
  • এমনকি এটা পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা টা কেউ বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
  • যেসব পুরুষের স্বপ্নদোষে ভুগছে। তাদের ক্ষেত্রে এটা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।
  • যদি এক মাস বা ১৫ দিন মত টানা খাওয়া যায়।
তাহলে এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

অশ্বগন্ধার অপকারিতা

ছেলেদের জন্য  অশ্বগন্ধার উপকারিতা থাকলেও এর বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে। এটা গ্রহণের পূর্বে অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা খুব জরুরি, যাঁদের শরীরে পিত্তের প্রভাব থাকে তাঁদের শরীর স্বভাবতই উষ্ণ থাকে, অশ্বগন্ধার উষ্ণ প্রভাবের দরুণ, ওইসব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটির দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার ভাল হয় না।
অশ্বগন্ধার-অপকারিতা
দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলে শরীরে উষ্ণতা বেড়ে যেতে পারে, যা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। নিজের খাদ্যাভ্যাসে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করতে চাইলে রেজিস্ট্রিকৃত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যে ওষুধ আপনি ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছেন তার প্রতিক্রিয়ার ওপর এটি প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন, যিনি রক্তে শর্করা কমানোর ওষুধ নিয়ে থাকেন তিনি অশ্বগন্ধা ব্যবহার করলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি নেমে যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ

গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এটির ব্যবহার নিরাপদ বলে মনে করা হয় না, বহু সময় দেখা গিয়েছে, পশুপাখিদের বেশি মাত্রার ডোজ দেওয়ার ফলে গর্ভপাত অথবা নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রসব হয়ে গিয়েছে। তাই গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

অশ্বগন্ধা রক্ত পাতলা করে এবং এটি অ্যান্টিকোঅ্যাগুলেন্ট হিসেবে কাজ করে, কাজেই আপনার শরীরে যদি সার্জারি থাকে বা আপনার শরীরে সাম্প্রতিককালে সার্জারি হয়ে থাকে তাহলে এটি ব্যবহার করা উচিত নয়। যদি আপনি রক্ত পাতলা করার ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন। তাহলে এটি ব্যবহার করা উচিত নয় কারণ এটির কারণে রক্ত বেশি পাতলা হয়ে যেতে পারে।

এটির মধ্যে ঘুমের ওষুধের কার্যকারিতা থাকে বলে এটি খেলে ঘুম ঘুম ভাব আসে। কাজেই কোনও ঘুমের ওষুধের সঙ্গে এটি গ্রহণ করা উচিত নয়।

অতিরিক্ত মাত্রায় অশ্বগন্ধা গ্রহণ করলে কিছু ক্ষেত্রে হ্যালুসিনেশন এবং বিভ্রান্তির মতো মানসিক সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও, দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে পেটের সমস্যা, ডায়রিয়া, এবং বমির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অশ্বগন্ধার মধ্যে থাকা সক্রিয় উপাদানগুলি কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। তাই প্রথমবার ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকুন এবং কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে অবিলম্বে ব্যবহার বন্ধ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা সম্পর্কে শেষ কথা

ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা, অশ্বগন্ধা চাপ কমাতে, মেজাজ এবং যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। উপরন্তু, এটি হরমোনের ভারসাম্যকে সমর্থন করতে পারে। অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম যেকোনো সম্পূরকের মতো, আপনার রুটিনে অশ্বগন্ধাকে অন্তর্ভুক্ত করার আগে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করা অপরিহার্য, বিশেষ করে যদি আপনি গর্ভবতী হন, বুকের দুধ খাওয়ান বা অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যের অবস্থা থাকে।

যদিও এটি বেশিরভাগ লোকের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়, কিছু ব্যক্তি হজমের বিপর্যয় বা তন্দ্রার মতো হালকা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারে। একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে আপনার ব্যক্তিগত চাহিদা এবং স্বাস্থ্য লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করে আপনি নির্ধারণ করতে পারেন যে অশ্বগন্ধা আপনার জন্য সঠিক কি না।

সুতরাং, আশা করছি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে, ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা, অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম ও বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ডিসক্লেইমারঃ এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url