পার্বত্য চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান



বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হলো চট্টোগ্রাম। পাহাড় সমুদ্রে ঘেরা চট্টোগ্রাম জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। তাই চট্টোগ্রাম জেলাকে প্রাচ্যের রানী হিসেবে ডাকা হয়। পার্বত্য চট্টোগ্রাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি নৈসর্গিক এলাকা, যা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা নিয়ে গঠিত। এই অঞ্চলে অনেক সুন্দর ও আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান রয়েছে।
চট্টোগ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, ফয়'স লেক, বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার, ওয়্যার সিমেট্রি, ভাটিয়ারী লেক, ডিসি হিল, চন্দ্রনাথ পাহাড়. বাঁশখালী ইকো পার্ক, মহামায়া লেক, গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত, পারকি সমুদ্র সৈকত ও সন্দীপ।

পেইজ সূচিপত্রঃ পার্বত্য চট্টোগ্রামের দর্শনীয় স্থান

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক রেল এবং আকাশপথে চট্টগ্রাম যাওয়া যায় ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সৌদিয়া ইউনিট ট্রাভেলস গ্রীন লাইন হানিফ এন্টারপ্রাইজ শ্যামলী সোহাগ এস আলম মডার্ন লাইন ইত্যাদি বিভিন্ন পরিবহনের এসি নন এসি বাস চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাই শ্রেণী ভেদে বাসগুলোর প্রতি সিটের ভাড়া ৬৫০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম ভ্রমন করতে চাইলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেল স্টেশন হতে কক্সবাজার এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা, নিশিতা, মহানগর, প্রভাতী, গোধূলি , চট্টগ্রাম মেলে যাত্রা করতে পারবেন। ট্রেনের শ্রেণী ভেদে ভাড়া লাগবে ৩৪০ থেকে ১৩৯৮ টাকা।

এছাড়া ঢাকা থেকে বেশ কিছু এয়ারলাইন্স সরাসরি চট্টোগ্রাম গামী ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।

বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার

ইরানের বিখ্যাত পারসিয়ান সুফি বায়েজিদ বোস্তামির মাজার চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের পাহাড়ের উপর অবস্থিত ৮৩১ সালে পাহাড়ের উপরের অংশে দেয়াল ঘেরা আঙ্গিনার মধ্যে সমাধিস্থল আবিষ্কৃত হয় সমাধিস্থলের নির্মাণশৈলী দেখে এটিকে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে তৈরি বলে মনে করা হয়। তৎকালীন ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য নির্জন পাহাড় কিংবা জঙ্গলে ঘেরা স্থানকে বেছে নিতেন এবং এসব জায়গায় মাজার অথবা বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করতেন। জনশ্রুতি আছে বায়েজিদ বোস্তামী তার সফর শেষ করে চট্টগ্রাম থেকে প্রস্থানের সময় ভক্তদের অনুরোধে কনিষ্ঠ আঙ্গুল কেটে কয়েক ফোঁটা রক্ত দিয়ে মাজার গড়ে তুলবার জায়গা চিহ্নিত করে যান। বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার মূলত বায়েজিদ বোস্তামী কে উৎসর্গ করে নির্মিত একটি প্রতিস্থাপনা। বিভিন্ন সময়ে বায়েজিদ বোস্তামির মাজার সংস্কার এবং আধুনিকায়ন করা হয়। 

বায়েজিদ বোস্তামির মাজার পাহাড়ের পাদদেশে মুঘল রীতিতে নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি আয়তাকার মসজিদ এবং সুবিশাল দিঘী রয়েছে। আর দিঘিতে বায়েজিদ বোস্তামীর বিখ্যাত কাছিম ও গজার মাছ রয়েছে। বোস্তামীর এই প্রজাতির কাছিমপৃথিবীতে অত্যন্ত বিরল এবং বিলুপ্ত বিপন্ন প্রাণী বর্তমানে বায়েজিদ বোস্তামের মাজারের দিঘীতে ২০০ থেকে ৩৫০ টি কচ্ছপ রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। প্রতিবছর ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অসংখ্য দর্শনার্থী বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার পরিদর্শনে আসেন।

মাতৃভক্ত
বায়েজিদ বোস্তামী সম্পর্কে একটি প্রচলিত কাহিনী রয়েছে। একদিন বায়েজিদ বোস্তামীর মা অসুস্থ ছিলেন। এক রাতে মা বায়েজিদ বোস্তামীকে পানি পান করবার জন্য পানি আনতে বলেন। বায়েজিদ ঘরে পানি না পেয়ে অন্ধকার রাতে নদী থেকে পানি আনলেন। এসে দেখেন মা ঘুমিয়ে গেছেন।তিনি ভাবলে মাকে ডাকলে মায়ের ঘুম ভেঙ্গে যাবে, তাই তিনি পানি হাতে সারারাত দাড়িয়ে থাকলেন। সকালে মায়ের ঘুম ভাঙ্গার পর দেখলেন তার ছেলে পানি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তিনি অবাক হলেন এবং খুশি হলেন। মা প্রাণ ভরে ছেলের জন্য দুয়া করলেন। আল্লাহ্ মায়ের দুয়া কবুল করলেন। পরে তার ছেলে পৃথিবী খ্যাত ওলী বায়েজিদ বোস্তামী নামে পরিচিত হলেন।
 
কিভাবে যাবেন

চট্টগ্রাম শহরের যে কোন স্থান থেকে ট্যাক্সি সিএনজি চালিত অটো রিক্সা অথবা বাসে করে বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন
চট্টগ্রামে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে বাজেট হোটেলের মধ্যে হোটেল প্যারামাউন্ট, হোটেল এশিয়ান, এসআর, হোটেল সাফিনা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের সুন্দর ও জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। চট্টগ্রাম থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকতে সহজে যাওয়া যায় বলে পর্যটকদের কাছে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এছাড়া এই সৈকতকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হয়েছে। ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে আধুনিক ও বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে কাজ চলছে। ইতিমধ্যে সম্পন্ন হওয়ার দৃষ্টিনন্দন সাজসজ্জা নজর করেছে সবার। 

কর্ণফুলী নদী ও সাগরের মোহনায় অবস্থিত পতেঙ্গায় সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের দৃশ্য খুবই মনোরম। বিশেষ করে বিকেলে সূর্যাস্ত ও সন্ধ্যার সময়টুকু অবশ্যই ভালো লাগবে। চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য অপেক্ষমান সারসারি ছোট বড় জাহাজ এখানকার পরিবেশের দৃশ্যের ভিন্নতা নিয়ে আসে। পতেঙ্গায় স্পিড-বোটে চড়ে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সমুদ্রের তীরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে সি-বাইক ও ঘোড়া। কেনাকাটার জন্য আছে বার্মিজ মার্কেট ও খাওয়া-দাওয়ার জন্য আছে হরেক রকম মজাদার স্ট্রিট ফুড।

পতেঙ্গা সী বিচের কাছেই রয়েছে শাহ্আ-মানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাটি, চট্টগ্রাম বন্দরের আরেকটি জে-টি এবং প্রজাপতি পার্ক। এই সবগুলি জায়গা কাছাকাছি হওয়ায় ঘুরে দেখতে পারবেন একসাথে।বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবারের প্রিয়োজনদের নিয়ে সুন্দর সময় কাটানোর জন্য চট্টগ্রাম জেলার এই পতেঙ্গা সৈকত আসলেই এক সুন্দর স্থান।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে আসতে হলে প্রথমে আপনাকে চট্টগ্রামে আসতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন উপায়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যায়।

চট্টগ্রাম থেকে পতেঙ্গা সী- বীচ
চট্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট থেকে পতেঙ্গা সী-বীচ ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। লোকাল বাসে করে পতেঙ্গা যেতে পারবেন। চট্টগ্রাম শহর থেকে যেতে সময় লাগবে এক ঘন্টার মতো। সিএনজি দিয়ে গেলে ভাড়া নেবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মতো। বাসে যেতে চাইলে বেশ কিছু জায়গা থেকে লোকাল বাস পাওয়া যায় তার মধ্যে নিউমার্কেট, রেলস্টেশন রোড, বদ্দারহাট, লালখান বাজার মোড়, জিইসি মোড় এবং চকবাজার মোড়।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের সামনে থেকে যেতে চাইলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে 6 নং বাস পাওয়া যায়, তবে জিজ্ঞাসা করে নিবেন সী-বীচ পর্যন্ত যাবে কিনা। যদি বাস ফ্রীপোর্ট বা কার্ড গড় পর্যন্ত যায় তাহলে যেতে পারেন। সেখান থেকে নেমে ইজি বাইকে করে বেচে যেতে পারবেন।

খাবেন কোথায়
পতেঙ্গা সী বিচে স্ট্রিট ফুডের দোকান রয়েছে সেখানে মজাদার বেশ কিছু খাবার পাওয়া যায় যেমন ভাজাপোড়া, পেঁয়াজু, কাকড়া ভাজা সহ সামুদ্রিক মাছ ভাজা খেতে পারবেন। এছাড়া ফুড কোর্ট গুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড আইটেম পাবেন খাওয়ার জন্য।

যদি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে চান তাহলে চট্টগ্রাম শহরে চলে যেতে হবে হোটেল জামান-এ। আর মেজবানি খেতে চাইলে চলে আসতে হবে চকবাজারে অবস্থিত "মেজবান হাইল্যে আইয়ুন" রেস্তোরাঁয়।এছাড়াও চট্টগ্রাম শহরে ছড়িয়ে আছে বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট এদের মধ্যে বারকোড ক্যাফে, মিলেঞ্জ রেস্টুরেন্ট, গ্রিডি গাটস, ক্যাফে৮৮, সেভেন ডেইস, ধাবা, গলফ গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, কোস্টাল মারমেইড রেস্টুরেন্ট এন্ড লাউঞ্জ বনানজা পোর্ট রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

থাকবেন কোথায়
পতেঙ্গায় থাকার জন্য বেশি অপশন নেই। সাধারণত পর্যটকগণ রাতে থাকার জন্য চট্টগ্রাম শহরে চলে আসে। সৈকতের কাছে ভালো কোথাও থাকার জন্য থাকতে পারেন বাটারফ্লাই পার্ক রিসোর্টে, এখানে থাকতে খরচ হবে চার হাজার থেকে সাত হাজার টাকার মতো। এছাড়াও কম খরচে পতেঙ্গার কাছে থাকতে হলে আপনাকে সিইপিজেড এলাকায় কোন মাঝারি মানের হোটেলে থাকতে হবে।

আপনি যদি চট্টগ্রাম চলে আসেন তাহলে এখানে বিভিন্ন মানের অনেক হোটেল পাবেন। আপনার পছন্দমত ও বাজেট অনুযায়ী কোন এক হোটেলে একটু যাচাই করে নিশ্চিন্তে রাত্রি যাপন করতে পারবেন, হোটেল প্যারামাউন্টের রুম ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত। হোটেল অবকাশ রুম ভাড়া ১২০০-২০০০ টাকা। হোটেল লর্ডস ইন ২০০০ থেকে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত। হোটেল এশিয়ান এসআর রুম ভাড়া ১৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা। আগ্রাবাদে অবস্থিত হোটেল ল্যান্ডমার্ক-এ রাত্রি যাপন করতে গেলে রুমপ্রতি ন্যূনতম ২৫০০ টাকা খরচ করতে হবে। আর হোটেল রেডিসন-ব্লু তে থাকতে গেলে এক রাতের জন্য গুনতে হবে ১৮০০০ টাকা।

ফয়'স লেক

ফয়'স লেক একটি কৃত্রিম হ্রদ। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন খুলশী এলাকায় প্রায় ৩৩৬একর জায়গা জুড়ে ফয়'স লেক এর অবস্থান। চট্টগ্রামের জিরো পয়েন্ট থেকে এই লেকের দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। ১৯২৪ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই লেকটি  খনন করেন। তৎকালীন সময়ে লেকটি পাহাড়তলী লেক নামে পরিচিতি পেলেও পরবর্তীতে ব্রিটিশ প্রকৌশলীর নাম অনুসারে লেকটির নাম করা হয় ফয়'স লেক। আর এই ব্রিটিশ প্রকৌশলী, ফয়'স লেকের নকশা তৈরি করেছিলেন।

চারিদিকে ছোট বড় পাহাড়ে ঘেরা ফয়েজ লেকের কাছে আছে চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে উচু পাহাড় বাটালী-হিল। এছাড়া এখানে গোধূলি, অরুণাময়ী, অলকানন্দ, মন্দাকিনী আকাশ মনি বিভিন্ন হ্রদ রয়েছে।
আর হ্রদের পানিতে শোভা বাড়িয়েছে সারি সারি ভাসমান নৌকা।

2005 সালে ফয়'স লেকে একটি আধুনিক এমিউসমেন্ট পার্ক এবং বেশ কিছু রিসোর্ট তৈরি করা হয়েছে। ফয়েজ লেক অ্যামিউসমেন্ট পার্কে রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা ,সার্কাস সুইমিং, রোলার কোস্টার, বাম্পার কার, জায়ান্ট ফেরিস হুইল,ড্রাই স্লাইড, ফ্যামিলি ট্রেন, প্যাডেল বোট, ফ্লোটিং ওয়াটার প্লে, পাইরেট শীপ, বোট রাইডিং, ল্যান্ডস্কেপিং সহ বেশিকছু আকর্ষনীয় রাইড।

আরও আছে পিকনিক স্পট, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এবং সী ওয়ার্ল্ড নামে একটি ওয়াটার থীম পার্ক। সেখানে সী ওয়র্ল্ডে স্প্লাশ পুল, ওয়াটার কোষ্টার রাইডারসহ আরো অনেক রোমাঞ্চকর রাইড উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে।ফয়'স লেকের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে অসংখ্য পর্যটক এখানে ছুটে আসেন।

ফয়'স লেকে প্রবেশের টিকেট মূল্য
ফয়'স লেকে প্রবেশের টিকেট মূল্য জনপ্রতি ৩০০ টাকা করে। এবং সকল রাইড ও আইসক্রিমসহ প্রবেশ টিকিটের মূল্য ৩৫০ টাকা বোট রাইড ও বাম্পার কার রাইড ব্যতীত। সী ওয়র্ল্ডে প্রবেশের জন্য ৪০০,৫০০ এবং ৬০০ টাকার ৩টি প্যাকেজ রয়েছে।

সময় সূচী
ফয়'স লেক প্রতিদিন সকাল ১০:৩০ মি: থেকে সন্ধ্যা ৬:০০ মি: পর্যন্ত সকল দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। শুক্রবার ও শনিবার সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে ফয়'স লেকে প্রবেশ পথ বন্ধ করা হয়। সম্পূর্ণ ফয়'স লেক ঘুরে দেখতে চাইলে সকাল বেলা যাওয়া উচিত।
 
ফয়'স লেক যাওয়ার উপায় 
চট্টগ্রাম জেলা শহরের যেকোন প্রান্ত থেকে সিএনজি বা রিকশায় চড়ে সহজেই ফয়'স লেক যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল এবং আকাশপথে চট্টগ্রাম যাওয়া যায়। ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে গ্রিন লাইন, লন্ড এক্সপ্রেস, সৌদিয়া, ইউনিক, টি আর ট্রাভেলস,  হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী, সোহাগ, এস. আলম, মডার্ন লাইন ইত্যাদি বিভিন্ন পরিবহনের এসি, নন-এসি বাস চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। শ্রেণী ভেদে বাসগুলোর প্রতি সীটের ভাড়া ৬৮০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম ভ্রমণ করতে চাইলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশান হতে সোনার বাংলা, সুবর্ন এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী, গোধূলী, চট্রগ্রাম মেইলে যাত্রা করতে পারেন। ট্রেনে আসনভেদে ভাড়া লাগবে ৪০৫ থেকে ১৩৯৮ টাকা।

এছাড়া ঢাকা থেকে বেশকিছু এয়ারলাইন্স সরাসরি চট্টগ্রামগামী ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।

কোথায় থাকবেন
রাত্রিযাপনের জন্য ফয়,স লেকে কর্তৃীপক্ষের ব্যবস্থাপনায় বেশকিছু বিলাসবহুল কটেজ ও রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। নবদম্পতিদের মধুচন্দ্রিমা উপভোগের জন্য আছে আলাদা হানিমুন কটেজের ব্যবস্থা। পাহাড় কিংবা হ্রদমুখী রিসোর্ট অথবা কটেজে একরাত থাকতে হলে ৪,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হবে।

এছাড়া থাকতে পারবেন চট্টগ্রাম শহরে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। আপনার বাজেটের মধ্যে পেয়ে যাবেন অনেক হোটেল।
 

 গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত

গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। স্থানীয় মানুষের কাছে এই সৈকত মুরাদপুর সি বীচ নামে পরিচিত। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালী সি বীচের দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। অনিন্দ্য সুন্দর গুলিয়াখালি সি বিচ কে সাজাতে প্রকৃতি কোন কার্পণ্য করেনি। এদিকে দিগন্ত জোড়া সাগর, জলরাশি আর অন্যদিকে কেওড়া বন এই সাগর সৈকতকে করেছে অনন্য। কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের চারিদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল লক্ষ্য করা যায়। এই বন সমুদ্রের অনেকটা ভেতর পর্যন্ত চলে গেছে। এখানে পাওয়া যাবে সোয়াম ফরেস্ট ওমেন গ্রুপ বনের মত পরিবেশ। 
গুলিয়াখালি সৈকতকে ভিন্নতা দিয়েছে সবুজ গালিচার বিস্তৃত ঘাস। সাগরের পাশে সবুজ ঘাসের উন্মুক্ত প্রান্তর নিশ্চিত ভাবে আপনার চোখ জুড়াবে। বীচের পাশে সবুজ ঘাসের এই মাঠে প্রাকৃতিকভাবে জেগে উঠেছে আঁকাবাঁকা নালা। এইসব নালায় জোয়ারের সময় পানিতে ভরে ওঠে। চারপাশে সবুজ ঘাস আর তারই মধ্যে ছোট ছোট নালায় পানি পূর্ণ এই দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। অল্প পরিচিত এই সৈকতে মানুষজনের আনাগোনা কম বলে আপনি পাবেন নিরিবিলি পরিবেশ । সাগরের এত ঢেউ বা গর্জন না থাকলেও এই নিরিবিলি পরিবেশের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত আপনার কাছে ধরা দিবে ভিন্নভাবে। চাইলে জেলেদের বোটে সমুদ্রে ঘুরে আসতে পারেন। এক্ষেত্রে বোট ঠিক করতে দরদাম করে নিতে হবে।

সীতাকুন্ডের খুব কাছের হওয়ায় গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতে যাওয়া আসা ও দেখার পরেও হাতে থাকবে অনেক সময়। এই সময়ে আপনি চাইলে সীতাকুন্ডের আশেপাশের আরো অনেক দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। গুলিয়াখালীর আশেপাশের ভ্রমণ স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম বাস বাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, চন্দ্রনাথ মন্দির ও পাহাড়, ঝিরঝিরি ঝর্ণা, কমলদহ ঝরনা, কুমিরা সন্দীপ ঘাট, মহামায়া লেক, খৈয়াছড়া ঝর্ণা, নাপিত্তা ছড়া ঝরনা, সহস্রধারা ঝর্ণা ইত্যাদি। আপনার সময় ও কি দেখার ইচ্ছা সেই অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা।
 
গুলিয়াখালি বীচে যাওয়ার উপায়
এই বিচ যেহেতু সীতাকুণ্ডে অবস্থিত তাই দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে প্রথমে আসতে হবে সীতাকুণ্ডে।তাই  বিভিন্ন উপায়ে ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ড আসতে পারবেন। 
 
চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ড 
চট্টগ্রামের এ কে খান মোড়,অলংকার মোড় ও কদমতলী থেকে সীতাকুণ্ড যাওয়ার বাস, ট্যাক্সি পাওয়া যায়। পছন্দ মতো জায়গা থেকে চলে আসতে পারেন সীতাকুণ্ড বাজার।

সীতাকুণ্ড থেকে গুলিয়াখালী
সীতাকুন্ডের বাস স্ট্যান্ড থেকে সরাসরি সিএনজি, অটো নিয়ে গুলিয়াখালী বীচের বাধ পর্যন্ত চলে যেতে পারবেন। গুলিয়াখালি বিচের বাধ পর্যন্ত জনপ্রতি অটোয় ভাড়া নিবে ৩০ টাকা। আর অটো রিজার্ভ নিয়ে যেতে চাইলে ভাড়া লাগবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। ভাড়ার পরিমাণ অবশ্যই দরদাম করে ঠিক করে নিবেন। সীতাকুণ্ড ফিরে আসার জন্য আগে থেকেই সিএনজি চালকের নাম্বার নিয়ে রাখতে পারেন অথবা যাওয়া আসা সহ রিজার্ভ করে নিতে পারেন। সন্ধ্যা হয়ে গেলে অনেক সময় ফিরে আসার জন্য সিএনজি বা অটো পাওয়া যায় না।

থাকা ও খাওয়া
গুলিয়াখালি সি বিচে থাকা ও খাবার কোন ব্যবস্থা নেই। শুধুমাত্র সি বিচে ছোট একটি দোকান আছে তাই প্রয়োজনে সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সাথে করে খাবার নিয়ে যাবেন। থাকতে চাইলে সীতাকুণ্ড বাজারে সাইমুন এবং সৌদিয়া হোটেলে থাকতে পারবেন। সাইমুন হোটেলে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায় রুম পাবেন। আর সৌদিয়ায় রুম পেতে আপনাকে গুনতে হবে ৬০০ থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত। এর থেকে ভালো কোথাও থাকতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রাম চলে যেতে হবে।

পরামর্শ
  • ভ্রমণকে নিরাপদ করতে চাইলে প্রয়োজনে টুরিস্ট পুলিশের সাহায্য নিন।
  • জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিন
  • জ্বরের সময় হলে পিছের কাছে না থাকাটাই ভালো
  • পানির ঢেউ যখন বাড়বে বিষ থেকে চলে আসবেন
  • জোয়ারের সময় পানি উঠে নালা গুলো পরিপূর্ণ হয়ে যায় তখন পারাপার হতে সমস্যা হতে পারে
  • আর যেহেতু এটা পর্যটক বান্ধবী নয় তাই সমুদ্রের নামার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন
  • সাঁতার না জানলে বেশি দূরে কখনো যাবেন না

পারকি সমুদ্র সৈকত

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানের তালিকায় কক্সবাজার বা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত শীর্ষে অবস্থান করলেও বন্দরনগরী চট্টোগ্রামের আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য কোন অংশে কম নয়। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই সাগর সৈকতের সবুজ ঝাউবন, লাল কাঁকড়া ও নীলাভ জলরাশি যেন সর্বদা ভ্রমণকারীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। পারকি সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং স্থান ভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০ ফুট। স্থানীয়দের কাছে উপকূলীয় পারকি সমুদ্র সৈকত পারকির চর নামে পরিচিত।

পর্যটকদের বিনোদনের জন্য পারকি সমুদ্র সৈকতে আছে স্পীড বোট, হর্স রাইডিং এবং সী-বাইেক আয়োজন। কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলে অবস্থিত পারকি সমুদ্র সৈকত হতে উত্তর দিকে হেঁটে গেলে বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদী মোহনার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। অপ্রচলিত ভ্রমণ গন্তব্য পারকি সমুদ্র সৈকত কে সময়ের সাথে সাথে পর্যটক বান্ধব করে গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার পাশাপাশি পর্যটকদের কেনাকাটার জন্য দোকান নির্মাণ ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

কিভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম শহর থেকে পারকি সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব প্রায় ২৮ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম শহরের যে কোন স্থান থেকে ১৫ নাম্বার জে-টি দিয়ে কর্ণফুলী নদী পার হয়ে অটো রিক্সা ভাড়া করে পারকি সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যায়। আবার চট্টগ্রাম থেকে বাসে আনোয়ারা বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে সেখান থেকে সিএনজি, অটো রিক্সা নিয়ে পারকি সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন
চট্টগ্রাম শহরের স্টেশন রোড, জি ই সি মোড় এবং আগ্রাবাদ এলাকায় বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এদের মধ্যে হোটেল স্টার পার্ক হোটেল, ডায়মন্ড পার্ক হোটেল, হিল টন সিটি, এশিয়ান এসআর হোটেল, হোটেল প্যারামাউন্ট, হোটেল সিলমন উল্লেখযোগ্য।

কোথায় খাবেন
পারকি সমুদ্র সৈকতে সাধারণ মানের কিছু খাবারের দোকান রয়েছে। চট্টগ্রাম শহরে বাঙালি চাইনিজ ও ফাস্টফুড সহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে। আর সুযোগ থাকলে অবশ্যই চট্টগ্রামের জনপ্রিয় মেজবানি খাবার ও কালা ভুনা খেয়ে দেখবেন।

সন্দ্বীপ

সন্দীপ বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ পূর্ব উপকূলে চট্টগ্রাম জেলার মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত দ্বীপ উপজেলা। প্রায় ৪ লাখ জনসংখ্যার এই দ্বীপ ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫ থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত। অবারিত সবুজ মাঠ, নদীর বুকে জেগে ওঠা চর কিংবা সহজ সরল মানুষ এক কথায় এই দ্বীপের সবকিছুই ভালো লাগার মত।
এছাড়াও দ্বীপে দেখার মত ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন স্থান রয়েছে। সাগর, নদী পরিবেষ্টিত এই দ্বীপে ভ্রমণ সারা জীবন মনে রাখার মত। আর শীতের সময় ক্যাম্পিং করার জন্য সন্দীপের পশ্চিম দিকে রহমতপুর নদী পাড় হচ্ছে আদর্শ জায়গা। এখানকার চারপাশ আপনাকে মুগ্ধ করবে।

কিভাবে যাবেন সন্দীপ
ফকিরাপুল থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোন বাসে করে ছোট কুমিরা আসতে ভাড়া লাগবে ৬৮০ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে কুমিরা
অলংকার বা এ কে খান মোড় থেকে সেইফ লাইন সার্ভিস এ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ভাড়ায় কুমিরা ঘাটঘর রোড যাওয়া যায়। আবার নিউমার্কেট থেকে ৭ নম্বর মেট্রো সার্ভিসে করে ২৭ টাকা ভাড়াতে ঘাটঘর রোড যাওয়া যায়। কুমিরাঘাট রোড থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা ভাড়ায় টমটম কিংবা রিকশায় করে কুমিরা সন্দীপ ফেরিঘাট ব্রিজে পৌঁছানো যায়।

কুমিরা ঘাট থেকে সন্দ্বীপ
কুমিরা সন্দীপ ঘাট থেকে সন্দীপ যাওয়ার জন্য স্পীডবোট ও ছোট লঞ্চ আছে। স্পিড বোটে ভাড়া জন প্রতি ৩০০ টাকা করে। সেখান থেকে সন্দীপ যেতে সময় লাগবে ৩০ মিনিটের মত। যদি হোটেলে থাকতে চান তবে সন্দীপ ঘাট থেকে সিএনজি নিয়ে চলে যাবেন টাউন কমপ্লেক্সে আর ক্যাম্পিং করার জন্য যেতে পারেন সন্দীপের পশ্চিম পাড়ে রহমতপুর। ঘাটে নেমে সিএনজি ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে চলে যেতে পারবেন রহমতপুর।

সন্দ্বীপে থাকার ব্যবস্থা
সন্দ্বীপের মূল শহর এনাম-নাহার মোড়ে কিছু হোটেল রয়েছে। যদিও এর মান খুব বেশি ভালো নয়। সেনের হাট এলাকায় রয়েছে একটি উন্নত মানের হোটেল। তাছাড়া আগে থেকে অনুমতি নিয়ে রাখলে উপজেলা পরিষদের ডাক-বাংলোতে থাকার ব্যবস্থা আছে। ক্যাম্প করে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো হয় সন্দ্বীপের একেবারে পশ্চিম প্রান্ত রহমতপুরে। 
 
নোট
  • সন্দীপের বিখ্যাত মিষ্টি খেয়ে দেখতে পারেন তবে এর জন্য আপনাকে দ্বীপের দক্ষিণে শীবের হাট যেতে হবে।
  • সাইকেল ভাড়া নিয়ে ঘুরতে পারেন আশেপাশে অল্প সময় আরামে কোন একটা এলাকা ঘুরে দেখার জন্য বেস্ট অপশন।
  • রিক্সা বা অন্যান্য বাহন এর ভাড়া একটু বেশি মনে হতে পারে দরদাম করে নিবেন।
  • খেজুরের সময় পাওয়া গেলে, না খাওয়াটা বোকামি হবে আশেপাশে খোঁজ করলেই পাবেন। গাছ থেকে সদ্য নামানো রসের মজাই আলাদা।
  • খেজুরের রসের ফিন্নি বা পায়েস যদি সম্ভব হয় কোথাও খেয়ে দেখতে পারেন, স্বাদ ভুলবেন না কখনো নিশ্চিত।
  • যদি সম্ভব হয় স্থানীয়দের প্রিয় ঘন খেজুরের মিঠাই এর সাথে কোরানো নারকেল আর খোলাজা পিঠা খেয়ে আসতে পারেন।

চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির

চন্দ্রনাথ পাহাড় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান আর সু-বিশাল সমুদ্রের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সীতাকুণ্ড কে করেছে অনন্য। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের অবস্থান সীতাকুন্ড বাজার থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পূর্বে। সীতাকুন্ড বাজার থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা রিক্সায় করে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের নিচের গেটে যাওয়া যায়। তবে পায়ে হেঁটে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাওয়ার পথে হিন্দুদের বেশ কিছু ধর্মীয় স্থাপনা ও আদিবাসীদের জীবন যাত্রার চিত্র দেখতে দেখতে যেতে পারেন। এছাড়াও পাহাড়ের একটু গভীরে গেলে চোখে পড়বে জুম ক্ষেত এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাষ করা ফুলের বাগান। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়াতেই চন্দ্রনাথ মন্দিরটি অবস্থিত।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাওয়ার পথে ছোট একটি ঝর্ণা দেখা যায় এ ঝর্ণার কাছ থেকে পাহাড়ে ওঠার পথ দুই দিকে চলে গেছে। ডান দিকের পথটি পুরোটাই পাহাড়ে ওঠার জন্য সিঁড়ি তৈরি করা আর বাম পাশের 
পথটি সম্পূর্ণই পাহাড়ী। সাধারণত পাহাড়ী পথ দিয়ে উপরে ওঠা তুলনামূলক সহজ আর সিড়ির পথে নামতে সহজ হয়। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা ১১৫২ ফুট হেঁটে উঠতে একটু পরিশ্রমের কাজ হলেও আপনার হাঁটার উপর নির্ভর করবে কতক্ষণ লাগবে। সাধারণত ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত সময় লাগবে আস্তে ধীরে উঠলে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরে চন্দ্রনাথ মন্দির অবস্থিত। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মাঝামাঝি দূরত্বে এবং চুড়াই মন্দিরের কাছে ছোট টং দোকান আছে সেগুলিতে হালকা খাবার এবং পূজা দেবার উপকরণ পাওয়া যায়। তবে ভালো হয় ওঠার সময় সাথে পর্যাপ্ত পানি ও কিছু শুকনা খাবার সাথে রাখলে। প্রতিবছর মহা শিবরাত্রি উপলক্ষে প্রচুর হিন্দু ধর্মাবলম্বী চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দিরে পুণ্য যাত্রায় আসেন।
 
চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দিরে কিভাবে যাবেন
চন্দ্রনাথ পাহাড়, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। তাই দেশের যেকোনো জায়গা থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড় দেখতে চাইলে আপনাকে প্রথমে সীতাকুণ্ড আসতে হবে। সীতাকুণ্ড থেকে জন প্রতি ৭০ টাকা করে সিএনজি ভাড়া নিয়ে চলে যেতে পারবেন চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে।
 
চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ড
চট্টগ্রাম থেকে সিএনজি বা অটো রিক্সা রিজার্ভ করে নিয়ে সীতাকুণ্ড আসতে হবে। এজন্য জন প্রতি ভাড়া লাগবে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। আর বাসে করে যেতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রাম নগরীর অলংকার,  এ কে খান অথবা কদমতলী যেতে হবে। লোকাল বাসে সীতাকুণ্ড যেতে পারবেন ৪০থেকে ৮০ টাকায়।

সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক

সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যা বর্তমানে অসাধারণ এক পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানে সহস্রধারা এবং সুপ্তধারা নামে দুইটি অপরূপ সুন্দর ঝর্ণা রয়েছে। এছাড়া সীতাকুণ্ড ইকোপার্কে রয়েছে অসংখ্য দুর্লভ প্রজাতির গাছ যা বৃক্ষ বিষয়ক জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। বোটানিক্যাল গার্ডেনে রয়েছে অর্কিড হউজ যেখানে প্রায় ৫০ ধরনের দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড সংরক্ষিত রয়েছে। 

পাহাড়, বৃক্ষরাজি, বন্যপ্রাণী, ঝরনা, পাখির কলরব ইকোপার্কটিকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। উঁচু নিচু পাহাড়, বানর, খরগোশ, এবং হনুমান সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণের সমাহার আছে অর্জুন, চাপালিশ, জারুল, তেলসুর সহ আরো অনেক ফুল, ফল ও ওষুধী গাছ। সূর্য ডোবার সময় গোধূলির রক্তিম আভায় ইকোপার্ক টিকে অপার্থিব মনে হয়।


ইকো পার্কে প্রবেশ করলে একটি বড় ডিসপ্লে চোখে পড়বে এই ডিসপ্লে তে ইকো পার্কে আসার সমস্ত পর্যটকদের ইকোপার্ক সম্পর্কে ধারনা দেয়। সিএনজি সহ ইকো পার্কে প্রবেশ করতে ৮০ টাকা ভাড়া লাগে আর সিএনজি ছাড়া প্রবেশ করলে ২০ টাকা। সীতাকুণ্ড ইকো পার্কে চাইলে পিকনিক করতে পারেন এখানে পর্যাপ্ত খাবার পানি, রেস্ট হাউস, টয়লেট ইত্যাদির সুযোগ সুবিধা সহ পিকনিকের জন্য রয়েছে যাবতীয় আয়োজন।

চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুন্ড ইকো পার্ক
চট্টগ্রামের মাদারবাড়ি ও কদমতলী বাস স্টেশন থেকে সীতাকুণ্ড যাওয়ার বাস গুলো ছাড়ে। এছাড়া অলংকার থেকে মেক্সিতে করে সীতাকুণ্ডর ফকিরহাট যাওয়া যায় সীতাকুন্ড বাস স্টপেজ থেকে ২ কিলোমিটার দূরে ফকিরহাট নামক জায়গা দিয়ে সীতাকুন্ড ইকো পার্কে যেতে পারবেন।

বাঁশখালী ইকোপার্ক

চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায় মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের নিচু পাহাড় লেকের স্বচ্ছ পানি ও বনাঞ্চল ঘিরে গড়ে উঠেছে বাঁশখালী ইকোপার্ক। ২০০৩ সালে জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়ন ও চিত্তবিনোদনের উদ্দেশ্যে প্রায় ১০০০ হেক্টর বনভূমি নিয়ে চট্টগ্রাম শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে সরকারি উদ্যোগে বাঁশখালী ইকোপার্ক নির্মাণ করা হয়। ১৯৮৬ সালে প্রায় ৭৭৬৪ হেক্টর বনভূমি নিয়ে চুনতি অভয়ারণ্য গড়ে তোলার ঘোষণা দিলে বাঁশখালীর বামের ছড়া ও ডানের ছড়া এই অভয়ারণ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 
প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন ঋতু বৈচিত্রের সাথে বাঁশখালী ইকোপার্কের সৌন্দর্য পরিবর্তিত হতে থাকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত পার্কের ৬৭৪ হেক্টর বনভূমিতে ঝাও বাগান, ভেষজ উদ্ভিদের বন ও অর্নামেন্টাল গাছ সহ প্রায় ৩১০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে ।পার্কের উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে পিকনিক স্পট দ্বিতল রেস্টহাউজ, হিলটপ কটেজ, রিফ্রেশমেন্ট কর্নার, দীর্ঘতম ঝুলন্ত ব্রিজ, ওয়াচ টাওয়ার এবং মিনি চিড়িয়াখানা। পার্কে দুটি সুবিশাল লেকে রয়েছে মাছ ধরার যাবতীয় সুব্যবস্থা। ২০১১ সালের ২১ অক্টোবর বাঁশখালী ইকো পার্কে বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের তথ্য সম্বলিত একটি তথ্য ও শিক্ষা কেন্দ্রের নির্মাণ করা হয়।

এছাড়াও এখানে মায়া হরিণ চিত্রা হরিণ চিত্রা বিড়াল বাঘ ও বাঘের প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে শীতকালে অতিথি পাখির কলরবে সরব হয়ে ওঠে এই ইকো পার্কের সবুজ প্রকৃতি ইকোপার্কের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে বঙ্গোপসাগরের অথৈ জলরাশি পাহাড়ের কোল ভেসে চলে ঝর্ণাধারা আর বিকেল বেলায় সূর্যাস্তের নয়নাভি রাম দৃশ্য পর্যটকদের মোহিত করে 

কিভাবে যাবেন
বাঁশখালী ইকোপার্ক যেতে হলে প্রথমে চট্টগ্রাম শহরে আসতে হবে চট্টগ্রাম থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে বাঁশখালী অবস্থিত। চট্টগ্রাম থেকে বাস বা সিএনজিতে করে বাঁশখালী যেতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টার মত সময় লাগে।

কোথায় খাবেন
বাঁশখালীতে সাধারণ মানের বেশকিছু হোটেল ও মন ছুড়িয়া বাজারে খুচরা চা নাস্তার দোকান আছে। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরে বাঙালি, চাইনিজ বা ফাস্টফুডের বেশ কিছু ভাল মানের রেস্টুরেন্ট আছে।

মহামায়া লেক

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম কৃত্রিম হ্রদ। মিরসরাইয়ের দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘী বাজার থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের কোলে ১১ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে মহামায়া লেক গড়ে উঠেছে। লেকের টলটলে পানি আর পাহাড়ের মিতালী ছাড়াও এখানে পাহাড়ী গুহা, রাবারডেম ও অনিন্দ্য সুন্দর ঝর্ণা রয়েছে। বোটে চড়ে লেকে ঘুরার পাশাপাশি চাইলে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণার শীতল পানিতে ভিজে শরীর ও মনকে অপার্থিব প্রশান্তি দিতে পারবেন।

মহামায়া লেকে আছে কায়াকিং করার সুবিধা এবং চাইলে তাবুতে রাতে ক্যাম্পিং করে থাকতেও পারবেন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে থাকা মহামায়া লেকটির পানির কিছু অংশ পার্শ্ববর্তী এলাকায় সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়।

মহামায়া লেগে যাওয়ার উপায়
মহামায়া লেক মিরসরাইয়ের ঠাকুর দিঘী বাজার থেকে ২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত। তাই দেশের যে কোন জায়গা থেকে আসতে চাইলে আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার ঠাকুরদীঘি বাজারে আসতে হবে।

চট্টগ্রাম থেকে মহামায়া লেক
মাদারবাড়ী ও কদমতলী বাস স্টপ থেকে মিরসরাই যাওয়ার জন্য বাস, সিএনজি, অটোরিকশা ও মাইক্রোবাস পাবেন। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের মাদারবাড়ি থেকে সরাসরি চয়েস বাসে ৮০ টাকা ভাড়ায় ঠাকুরদিঘী বাজারে আসতে পারবেন। আবার চট্টগ্রাম নগরের অলংকার সিটি গেট থেকে কিছু লোকাল বাসে করে ৪০ থেকে ৬০ টাকা ভাড়ায় মিরসরাই থানার ঠাকুরদিঘী যাওয়া যায়। ঠাকুরদীঘি থেকে জনপ্রতী ১৫ থেকে ২০ টাকা সিএনজি ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন মহামায়া ইকো পার্কের মেইনগেটে।

কায়াকিং ও নৌ ভ্রমন খরচ
লেকে কায়াকিং করতে পারবেন। একটা কায়াতে দুইজন বসতে পারবেন, প্রতি ঘন্টার কায়াকিং ভাড়া ৩০০ টাকা। ৩০ মিনিটের জন্য ভাড়া ২০০ টাকা শিক্ষার্থী হলে ডিসকাউন্ট পাবেন সেক্ষেত্রে এক ঘন্টার জন্য দিতে হবে ২০০ টাকা এবং ৩০ মিনিটের জন্য দিতে হবে ১৫০ টাকা। কায়াকিং করা যায় সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ঃ৩০ মিনিট পর্যন্ত। লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ইঞ্জিন বোট আছে। ৮ থেকে ১০ জন নিয়ে ঘুরে বেড়াতে সক্ষম নৌকা এক ঘন্টা ঘুরিয়ে দেখাবে আশেপাশের ঝরনা সহ সবকিছু, ভাড়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা।

খাওয়া দাওয়া
পার্কে খাওয়া দাওয়ার তেমন ব্যবস্থা নেই নিজ থেকে খাবার নিয়ে যেতে হবে। ঠাকুরদিঘী বাজারে ছোট হোটেল আছে দেশি খাবার খেতে পারবেন। মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড বাজারে গেলে মোটামুটি ভালো মানের আরো কিছু খাবার হোটেল পাবেন সেখান থেকে খেয়ে নিতে পারবেন। সীতাকুন্ড পৌরসভার সামনে আল আমিন হোটেলের বেশ সুনাম রয়েছে।

কোথায় থাকবেন
মিরসরাইয়ে থাকার মত তেমন ভালো কোন আবাসিক হোটেল নেই থাকতে চাইলে সীতাকুণ্ডে কিছু সাধারণ মানের হোটেল আছে সেখানে থাকতে পারবেন। হোটেল সৌদিয়ায় ৬০০ থেকে ১৬০০ টাকায় বিভিন্ন মানের রুম পাবেন এবং সাইমন ও অন্য আবাসিক হোটেলে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকায় থাকতে পারবেন। তবে আরো ভালো মানের হোটেলের থাকতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রাম শহরে চলে যেতে হবে।

 শেষ কথা

ভ্রমন করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা অতিবগুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ খাবার ও পানির ব্যবস্থা রাখুন। স্থানীয় খাবার খেয়ে দেখার সময় সতর্ক থাকুন। আপনার মূল্যবান জিনিসপত্র সবসময় নিরাপদে রাখুন। জনবহুল স্থানে সতর্ক থাকুন। ভ্রমণের জন্য একটি বাজেট তৈরি করুন এবং সেই অনুযায়ী খরচ পরিকল্পনা করুন। এতে করে অপ্রত্যাশিত খরচ এড়ানো যাবে। ভ্রমণের আগে গন্তব্যস্থলের আবহাওয়া সম্পর্কে জেনে নিন। এতে করে আপনি উপযুক্ত পোশাক ও সরঞ্জাম নিতে পারবেন।

আপনার ভ্রমণ যদি সিলেট বা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে হয়, তাহলে বিশেষ কিছু স্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাকে জানাতে পারেন।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url