চিয়া সীড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
চিয়া সিড একটি মিন্ট জাতীয় বীজ। সাধারণত এটি মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোর মরুভূমি অঞ্চলে সালভিয়া হিসপানিকা নামক উদ্ভিদ থেকে সংগ্রহ করা হয়। প্রাচীন মায়ান ও অ্যাজটেক জাতির কাছে এটি প্রধান উৎপাদিত খাদ্য ছিল। সেই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার ছিল এই চিয়া বীজ। চিয়া বীজের অনন্য পুষ্টিগুণের জন্য একে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা সুপারফুড হিসেবে বিবেচনা করে।
চিয়া সিড দেখতে বাংলাদেশে প্রচলিত তোকমা দানার মত দেখা যায়। তবে এই বীজ তোকমা দানার থেকে আকারে ছোট ও তিলের মতো সাদা, কালো ও বাদামী রঙের হয়ে থাকে। অন্যদিকে তোকমা দানা কালো এবং বাদামী বর্ণের লম্বাটে গোলাকার দানা হয়ে থাকে। তোকমা দানার চেয়ে চিয়া সিডে প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফ্যাটি এসিডের পরিমাণটাও বেশি থাকে।
তোকমা দানার মতই চিয়া সিড পানি শোষণ করে এবং ১২ গুন পর্যন্ত ফুলে ওঠে। তবে তোকমা দানার চেয়ে চিয়া সিড পানিতে কিছুটা সময় লাগে। চিয়া সিডকে সুপার ফুড বলার প্রধান কারণ হলো এতে রয়েছে মানব শরীরের জন্য সকল প্রকার পুষ্টি উপাদান।
পেইজ সূচিপত্রঃ চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
- চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
- ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
- সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খেলে কি হয়
- চিয়া সিড কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়
- চিয়া সিড মধু দিয়ে খাওয়ার নিয়ম
- চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
- শেষ কথা
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
চিয়া বিজে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। নিয়মিত চিয়া সিড গ্রহণ করলে কি কি উপকার পাওয়া যায় তা নিচে আলোচনা করা হলো
আরও পড়ুনঃ আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায়
ওজন কমাতে সাহায্য করে
চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় খাদ্য আঁশ থাকে যা হজম প্রক্রিয়া ধীরগতি করে। এতে ঘনঘন ক্ষুধা লাগে না এবং অতিরিক্ত খাওয়ার সমস্যা দূর হয়। অন্যদিকে এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার এবং প্রোটিন যা দ্রুত ওজন কমাতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এতে সুষম খাদ্যাভাস নিশ্চিত হয় এবং মুটিয়ে যাওয়ার রোধ করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
যে কোন খাবারের থাকা এই উপাদান দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রচলিত অন্যান্য খাবারের থেকে চিয়া সিডে এন্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ অনেক বেশি। যার মধ্যে ক্লোরোজেনিক এসিড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, ক্যাফেইক অ্যাসিড দেহের বিভিন্ন প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে, কোয়ারসেটিন হৃদরোগ অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়, ক্যাম্পফেরল ক্যান্সার সহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমায়, মাইরিসেটিন এলার্জির বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য সবথেকে বেশি দায়ী হলো এল ডি এল কোলেস্টরেল। রক্তে যখন এই উপাদান বৃদ্ধি পায় তখন বিভিন্ন হৃদরোগের জন্ম হয়। নিয়মিত চিয়া সিড খেলে এর ঝুকি থেকে আমাদের রক্ষা করে। কারণ চিয়া সিড আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা৩ যা হৃদপিণ্ড সুস্থ ও সবল রাখে। রক্তে থাকা ক্ষতিকর কলেস্টরেল কমিয়ে রক্তের উপকারী উপাদানের ভারসাম্য রক্ষা করে। এ কারণে চিকিৎসকগণ হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায়
রক্ত আমাদের দেহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি একাধারে দেহের কোষগুলোকে জীবিত রাখে এবং হৃদপিণ্ড সচল রাখে। রক্তে থাকা বিভিন্ন উপাদান দেহের বিভিন্ন রকম কার্যসম্পাদনা করে। তবে রক্তে যদি বেশি পরিমাণে শর্করা বৃদ্ধি পায় তবে তা ডায়াবেটিস নামক কঠিন সমস্যার সৃষ্টি করে। চিয়া সিড রক্তে থাকা অতিরিক্ত শর্করার পরিমাণ কমিয়ে আনে। এতে রক্তনালীতে জমে থাকা চর্বি কমতে থাকে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। অন্যদিকে এই বীজ দেহের গ্লুকোজ নিঃসরণ কমিয়ে রক্তে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা নিয়ন্ত্রণ করে।
হাড় মজুত করে
বোন মিনারেল ডেনসিটি হাড়ের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করে। চিয়া সিডে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম বোন মিনারেল ডেনসিটির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে হাড় মজবুত ও শক্তিশালী হয়। আর্টিফিশিয়াল ক্যালসিয়ামের চেয়ে খাদ্য থেকে পাওয়া ক্যালসিয়াম কোন প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই হাড়ের গঠন সুগঠিত করে। অন্যদিকে হাড়, অস্থি ও অস্থিমজ্জার প্রদাহ ও ক্ষত দূর করে।
কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
কোলন বা মলাশয় দেহ থেকে উচ্ছিষ্ট পদার্থ বের করে দেওয়ার কাজ করে। এই অঙ্গ যদি পরিষ্কার না থাকে তবে মলের মধ্যে থাকা জীবাণু থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিয়া সিড কোলন পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং মলাশয় ক্যান্সার থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকে।
ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে
চিয়া সিড দেহের ইমিউনিটি ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কারণ এতে আছে দেহের জন্য উপকারী সকল ধরনের পুষ্টিগুণ। নিয়মিত পরিমানমত চিয়া সিড গ্রহণ করলে তা হাড় মজবুত করার পাশাপাশি দেহের দুর্বলতা দূর করে। হৃৎপিণ্ড সচল রাখে যা পুরো শরীরের ইউনিটি ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
দেহে থাকা টক্সিন পদার্থ দূর করে
দেহের টক্সিন পদার্থ বিভিন্ন প্রকারের শারীরিক অসুবিধা সৃষ্টি করে। চিয়া সিডে থাকা ভিটামিন, মিনারেল, ও খনিজ পদার্থ এবং বিভিন্ন উপকারী এসিড দেহের টক্সিন পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। এতে শরীর সুস্থ ও সবল থাকে।
হজমের সমস্যা দূর করে
হজম প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনা না হলে তা শারীরিক অসুস্থতার সৃষ্টি হয়। যার মধ্যে ক্ষুধামন্দা, অনিদ্রা, পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি অন্যতম। চিয়া সিড হজম সমস্যা দূর করে এবং খাওয়ার রুচি বাড়ায়।
প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে
প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সিড ১৬.৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এটি অনেক প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ উৎস থেকেও বেশি, এই কারণে সঠিক মাত্রার প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে চিয়া সিড খাওয়ার প্রয়োজন।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে
ব্লাড প্রেসার আমাদের দেহের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্রেসার বেড়ে গেলে দেহ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। চিয়া সিড ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে আমাদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে রক্ষা করে।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিডের নিজস্ব কোনো স্বাদ বা টেস্ট নেই। তাই চিয়া সিড অন্য খাবারের সাথে মিক্স করে খাওয়া হয়। সাধারণত চিয়া সিড শুকনো ভাবে ছাড়াও যে কোন ভাবে খাওয়া যায় তবে এদের মধ্যে কিছু প্রচলিত পদ্ধতি আছে যা নিচে আলোচনা করা হলো
চিয়া সিড সরাসরি যেকোনো ফলের রস বা জুসের সাথে পুডিং, জ্যাম, জেলির সাথে খাওয়া যায়। শুধু পানিতে মিশিয়েও অনেকে খায়। চিয়া সিডের নিজস্ব কোনো স্বাদ না থাকার কারণে প্রায় সব ধরনের খাবারের সাথে যেমন বেক করা বিস্কুট, প্যানকেক, ওয়াফেল, স্যুপ ও সালাদের সাথে মিশিয়ে খেতে পারবেন।
এই চিয়া সীড ব্যবহার করে মজাদার এবং পুষ্টিকর পুডিং তৈরি করতে পারেন এবং আপনার পছন্দের ফল, বাদাম, এবং মশলা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে পারেন। জ্যাম, জেলি তৈরিতে চিনি বা মধুর পরিবর্তে ব্যবহার করলেও উপকার পাবেন। দই, অটমিল, স্যান্ডউইচ, র্যাপ বা সিরিয়ালের উপরে টপিং হিসেবে মাফিন ও স্যুপের সাথে ভেজানো চিয়া সিড খেলে অতিরিক্ত আর্দ্রতা এবং পুষ্টি যুক্ত হবে। ফলের জুস, দই, এবং চিয়া বীজের জেল একসাথে মিশিয়ে ঘরে বসেই স্বাস্থ্যকর এনার্জি জুস বানাতে পারবেন।
আরও যেভাবে খেতে পারবেন
স্মুদি
স্মুথির পুষ্টিগুণ বাড়ানোর জন্য তাতে চিয়া সিড মিশিয়ে খাওয়া হয়। শরবত বা জুসের সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খাওয়ার পাশাপাশি অনেক মানুষ স্মুদির সাথে এই চিয়া সিড খেতে পছন্দ করেন। আপনি শশার সাথে টক দই ও চিয়া সিড মিশিয়ে অথবা যে কোন ফলের সাথে ব্লেন্ডার ব্লেন্ড করে স্মুদি তৈরি করতে পারন।
সালাদ
সাধারণত সালাদ খাওয়া হয় অল্প খাবারের মাধ্যমে বেশি পুষ্টিগুণ পেতে। এক্ষেত্রে সালাদের অন্যান্য উপাদানের সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
ড্রিংকস
বিভিন্ন রকমের ড্রিঙ্কসের সাথে অথবা ফলের জুস এবং শরবতের সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খাওয়া যায়। বিশ্বব্যাপী চিয়া সিডের শরবত অনেক জনপ্রিয়।
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
খালি পেটে এক গ্লাস পানির সাথে দুই চামচ চিয়া সিড এবং দুই চামচ লেবুর রস মিশিয়ে সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে খেলে দ্রুত ওজন কমাতে পারবেন। চিয়া সিড পানিতে সাধারণ তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট খাওয়ার আগে ভিজিয়ে রাখলে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকায় ক্ষুধা নিবারণ হবে। এবং নিজস্ব সাধ না থাকায় চিয়া সিড যে কোন শরবত, স্মুদি, টক দই, কাস্টার্ড বা অন্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে সুস্থ থাকতে দৈনিক ১০০ গ্রাম চিয়া সিড খাওয়া উচিত।
ওজন কমানোর জন্য যেমন প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হয় ঠিক তেমনি ডায়েটেও চিয়া বীজ রাখার জন্য সবসময় পরামর্শ দিয়ে থাকেন। চিয়া সিড ডায়েটরি ফাইবারে পরিপূর্ণ থাকার ফলে আমাদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
চিয়া সিড খেলে অবশ্যই ওজন কমবে কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। চিয়া সিড ও লেবুর মিশ্রণ শরীরের অতিরিক্ত চর্বি দূর করে মেটাবলিক ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে যা আপনার শরীরের ওজন কমানোর জন্য খুবই উপকারী।
লেবু আমাদের চর্বি কাটাতে সাহায্য করে বিধায় দুটো একসাথে খেলে দ্রুত অতিরিক্ত ওজন কমানো যায়। তবে আমাদের প্রতিদিন নিয়মিতভাবে সঠিক নিয়ম অনুসারে খেতে হবে সাথে ব্যায়াম ও খাদ্যের পরিবর্তন আনতে হবে এতে করে আরো ভালো স্থায়ী সমাধান পাওয়া সম্ভব।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায়
দিনে ১-২ টেবিল চামচপরিমান চিয়া সীড ১ কাপ পানিতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট
ভিজিয়ে রেখে পানিসহ খেলে উপকার পাওয়া যাবে। ১০০ গ্রাম চিয়ি সীডে প্রায়
২০ গ্রাম পরিমাণ প্রোটিন থাকে অর্থাৎ ১ চামচে মোটামুটি ৩ গ্রাম প্রোটিন
পাওয়া যায়। ফলে এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও আয়রন গর্ভবতী মহিলাদের জন্য
স্বাস্থ্যকর। সকালের নাস্তায়, স্মুদি, ডেজার্ট, অথবা সালাদে সাথে চিয়া সীড
মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এটি একেবারে নিরাপদ।
মায়েদের
সন্তানের জন্য দুধ উৎপাদনে ৫০০ ক্যালোরি শক্তির প্রয়োজন হয়। চিয়া সীডে
প্রতি ২৮ গ্রামে প্রায় ১৩৮ ক্যালোরি শক্তি সরবরাহ করে তাই স্বাস্থ্যকর
ক্যালরি পেতে চাইলে ডায়েটে চিয়া সীড যুক্ত করতে পারেন। এটি খেলে বুকের
দুধে ডিএইচএ কন্টেন্ট বাড়াতে সাহায্য করে, যা শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক
বিকাশের জন্য খুবই উপকারী।
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খেলে কি হয়
এক
চামচ চিয়া বীজ সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে মধু ও লেবু মিশিয়ে খান।
পানীয়টি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করবে।
চিয়া সিড ভেজানো পানি পান করলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে। হজমজনিত সমস্যা থেকে শুরু করে একাধিক রোগের ঝুঁকি কমায় এই বীজ।
চিয়া
সিডের মধ্যে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায়, এটি হজমের সাহায্য করে।
দীর্ঘক্ষণ পেটকে ভর্তি রাখে এবং ওজন কমানো সহজ হয়। পাশাপাশি এই বীজ
অন্ত্রের স্বাস্থ্যকেও ভাল রাখে। এছাড়া চিয়া সিড কোষকে ক্ষতির হাত থেকে
রক্ষা করে।
ডায়াবেটিসের
রোগীরাও নিশ্চিন্তে খেতে পারেন চিয়া সিড। চিয়া সিডের মধ্যে যে
কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, যা চিনিকে ভেঙে দেয়। এটি রক্তে শর্করার মাত্রাকে
নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাছাড়া উচ্চ ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রাকে বাড়তে
দেয় না।
চিয়া সীড কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়
ঝরঝরে চিয়া সিড খেতে চাইলে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হয়। আরো নরম করে খেতে চাইলে পানি বা দুধের সাথে মিশিয়ে ১০ মিনিট চিয়া সিড ভিজিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া, জেল তৈরি করতে চাইলে পানিতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখবেন। চাইলে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পানির সাথেও খেতে পারেন। চিয়া সিড কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে তা নির্ভর করে আপনি কিভাবে খেতে চান তার উপর।
মনে রাখবেন চিয়া সিড ভেজানোর জন্য ঠান্ডা বা গরম পানি দুটোই ব্যবহার করতে পারেন। গরম পানি দ্রুত জেল তৈরি করে এবং ঠান্ডা পানি এই বীজের পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে সাহায্য করে। দুধ, ফলের রস, ইত্যাদির সাথে চিয়া সিড ভিজিয়ে খেলে এর স্বাদ বৃদ্ধি পাবে। কখনো কাঁচা চিয়া সিড খাবেন না ভেজানোর পর খেলেই ভালো এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে বিধায় আমাদের অনেক পানি পান করা প্রয়োজন হয়, নইলে হজমের সমস্যা তৈরি হবে। কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে অবশ্যই আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিবেন।
চিয়া সিড মধু দিয়ে খাওয়ার নিয়ম
এক গ্লাস পানির সাথে ১ চা চামচ চিয়া সিড ভিজিয়ে রেখে সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে সকালে কিংবা রাতে খেতে পারেন।
চাইলে ওটস, পুডিং, জুস ইত্যাদির সঙ্গে চিয়া সিড ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
চিয়া সিডকে বলা হয় সুপার ফুড এবং পবিত্র কোরআনে মধুকে বলা হয় সর্ব রোগের মহা ঔষধ। আর যখন এই দুটি উপকারী উপাদান একসাথে সেবন করা হয় তখন উপকারিতাও দ্বিগুণ পাওয়া যায় ।নানান ঔষধি গুনাগুন সমৃদ্ধ এই চিয়া সিড দিনে ১-২চা চামচ সেবনে শক্তির যোগান দেয় এবং কর্ম ক্ষমতা বাড়ায়।
চিয়া সিড ও মধুর এই মিশ্রণটি নিয়মিত সেবনের সবথেকে বড় উপকারিতা হলো একটি দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও যারা খুব অল্প পরিশ্রমে ক্লান্তি অনুভব করেন অথবা সকালে হাঁটতে যান কিংবা এক্সারসাইজ করেন তারা এক গ্লাস পানির সাথে এই মিশ্রনটি খেতে পারেন।
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
বেশি পরিমাণে চিয়া সিড খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা তৈরি হয়। চিয়া সিড বেশি খেলে স্তন ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার বাড়িয়ে দেয়। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় পরিমাণের তুলনায় বেশি চিয়া সিড খেলে পেট ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত পরিমাণে চিয়া সিড খেলে ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে যা স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। চিয়া সিড যেহেতু দেহের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, তেমনি পরিমাণমতো না খেলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
চিয়া সিড কিছু ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। যারা নিয়মিত ওষুধ খান, তারা অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে চিয়া সিড পরিমাণ অনুযায়ি খাবেন। অনেকের এই চিয়া বীজে অ্যালার্জি থাকতে পারে, যদি খাওয়ার পরে ফুসকুড়ি, চুলকানি ও শ্বাসকষ্ট হয় তাহলে বিরত থাকাই ভালো। গর্ভবতী এবং সদ্য মা হওয়া মহিলারা চিয়া সিড খেলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া জরুরী।
আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো ও সতেজ রাখতে চিকিৎসকরা বিশেষ করে ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পেটে ব্যথা, গ্যাস, হজম ও ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেশি খেলে পানির ঘাটতি দেখা দেয়, ফলে ডাক্তাররা সবসময় খাওয়ার সাথে পরিমাণমতো পানি খেতে হবে।
শেষ কথা
চিয়া সিডের যেহেতু নিজস্ব কোনো স্বাদ নেই তাই এটা সাধারণত সালাদ, কাস্টার্ড, স্মুথি, ড্রিংকস সহ যেকোনো খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারবেন। এছাড়াও সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমানোর আগে ১-২ চা চামচ চিয়া সীড পানিতে ভিজিয়ে রেখে ২০ – ৩০ মিনিট পর খেতে পারেন।
শরীরের জন্য উপকারী এমন খাদ্য আমাদের সামনে হর হামেসা পাওয়া যায় না। তবে চিয়া সিড নানান পুষ্টিগুনে ভরপুর এবং খেতেও কোন ঝামেলা নেই। তবে মাত্রাতিরিক্ত চিয়া সিড গ্রহণে রক্ত পাতলা করার পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। এই কারণে আমাদের সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করে এই বীজ খাওয়া উচিত।
শরীরের জন্য উপকারী এমন খাদ্য আমাদের সামনে হর হামেসা পাওয়া যায় না। তবে চিয়া সিড নানান পুষ্টিগুনে ভরপুর এবং খেতেও কোন ঝামেলা নেই। তবে মাত্রাতিরিক্ত চিয়া সিড গ্রহণে রক্ত পাতলা করার পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। এই কারণে আমাদের সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করে এই বীজ খাওয়া উচিত।
ডিসক্লেইমারঃ এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url