ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

 

একটি ডাব আর দুটি স্ট্র-ই হলো সত্যিকারের ভালোবাসা। সামনে নীল জল রেখে বালুকাবেলায় দুজন মানুষ একটি ডাব খাবে দুটি স্ট্র দিয়ে, তার চেয়ে রোমান্টিক দৃশ্য আর কী হতে পারে, আর এর স্বাদ ‘ডেফিনেশন অব টেস্টিং প্যারাডাইস’ বলে একটা কথা আছে ইংরেজিতে। সেটা বলা হয় ডাবের পানির স্বাদ বোঝাতে।
ডাবের-পানির-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
পৃথিবীর জনসংখ্যার এক বিশাল অংশের মানুষ ডাবের পানির স্বাদে বিমোহিত হয়ে আছে। স্বাদ বা রোমান্টিকতাই শুধু নয়। ডাবের পানির আছে বিশাল স্বাস্থ্যগুণ। নিয়মিত ডাবের পানি খেলে শরীর হবে বিষমুক্ত। আর অনেক রোগ ধীরে ধীরে সরে যাবে শরীর থেকে।

তাই আসুন দেরি না করে জেনে নিই  ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা,  ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।

পেইজ সূচিপত্রঃ ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

ডাবের পানির উপকারিতা

ডাবের পানির উপকারিতা'র কথা বলে শেষ করা যাবে না। দেহে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে ডাবের পানি পানের পরামর্শ দেওয়া হয়। ডায়রিয়া বা কলেরা রোগীদের ঘনঘন পাতলা পায়খানা ও বমি হলে দেহে প্রচুর পানি ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি দেখা যায়। ডাবের পানি যা অনেকাংশেই পূরণ করতে পারে। নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
 
 আরও পড়ুনঃ

ডাবের পানিতে যথেষ্ট পরিমাণ আয়রনও রয়েছে। রক্ত তৈরি করতে যা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।ডাবের পানিতে উচ্চমাত্রায় খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। এসব খনিজ লবণ দাঁতের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। দাঁতের মাড়িকে করে মজবুত। অনেকের দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে। মাড়ি কালচে লাল হয়ে যায়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেবে খনিজ লবণ।

প্রস্রাবের বিভিন্ন সমস্যায় ডাবের পানি বেশ উপকার করে। মুখে জলবসন্তের দাগসহ বিভিন্ন ছোট ছোট দাগের জন্য সকাল বেলা ডাবের পানি দিলে দাগ মুছে এবং মুখের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা বাড়ে। গ্লুকোজ স্যালাইন হিসেবেও ডাবের পানি ব্যবহৃত হয়। ডাবের পানিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পুষ্টি না থাকলেও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
 
ডাবের পানির উপকারিতা গুলো জেনে নিন-

ক্যালোরি কমঃ শরীরের বাড়তি ওজন ঝরাতে ক্যালোরি হিসাব করে খাবার খান। তেমনই পানীয়ের তালিকায় যোগ করতে পারেন ডাবের পানি। কারণ, এই পানীয়তে কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালোরি দুয়ের পরিমাণই প্রায় শূন্য। তা ছাড়া, এই পানীয় মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে।

খনিজে ভরপুরঃ এই একটি পানীয়তে প্রাকৃতিক ভাবে এত খনিজ রয়েছে, যা অন্য আর কিছুতেই নেই। শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে এবং ইলেকট্রলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ডাবের পানিতে থাকা সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মতো খনিজগুলো উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।

বায়ো এনজাইমঃ ডাবের পানিতে এমন একটি উৎস রয়েছে, যা হজমে সাহায্য করে। পরিপাকতন্ত্রটি ঠিকভাবে কাজ করলে মানুষ সুস্থ থাকে। বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।

অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুরঃ অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে দেহের কোষগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর ডাবের পানি খাওয়া জরুরি। তা ছাড়াও এই অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের গুণে ত্বক এবং চুলের নানা সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।

শরীর আর্দ্র রাখেঃ গরমে তৃষ্ণা মেটাতে শুধু পানি না খেয়ে ডাবের পানি খাওয়া যেতেই পারে। পিপাসা মেটানোর পাশাপাশি, এই পানীয়তে থাকা খনিজগুলো শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে। শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করতেও সাহায্য করে ডাবের পানি।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনেঃ ডাবে পর্যাপ্ত খনিজ লবণ থাকার কারণে যে কোনও বয়সের মানুষ গ্রহণ করতে পারে। ডাবে পটাসিয়াম থাকায় আমাদের ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ডাব আমাদের দেহের কোষগুলোকে সতেজ ও সজীব রাখতে সাহায্য করে, রক্ত চলাচলকে বাড়িয়ে দেয় এবং বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়। ফলে ত্বকের প্রতিটি কোষ হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত।

ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগেঃ অনেকের ধারণা ডাব ডায়াবেটিক রোগীরা খেতে পারবে না। ধারণাটি মোটেও সত্যি নয়। ডাবে কোনও চর্বি বা কোলেস্টেরল না থাকায় ডায়াবেটিক রোগীরা অতি সহজে এটি গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু উচ্চমাত্রায় পটাসিয়াম থাকার কারণে ক্রনিক কিডনি রোগী বা দীর্ঘদিন ধরে যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত, ডায়ালাইসিস চলছে, এ ধরনের রোগীরা ডাবের পানি গ্রহণ করতে পারবেন না। কারণ, পটাসিয়াম থাকায় কিডনি নেফ্রাইটিসের ওপর পটাসিয়াম জমা হয়ে চাপ বাড়াবে। ফলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থগুলো নিষ্কাশনে বাধা পাবে।

হাড় গঠনে সহায়কঃ ডাবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্যালসিয়াম। এই ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়ের গঠনকে মজবুত করে। ত্বক, চুল ও নখের সুস্থতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে। ডাবের পানির এত গুণাগুণ অনেকেই জানেন না। কোনও কারণ ছাড়াই যদি কেউ ডাবের পানি নিজের অজান্তে এক গ্লাস নিয়ে থাকেন, তাও তিনি পটাসিয়াম ও সোডিয়ামের ভারসাম্য রক্ষা করে শরীরে একটি ইলেকট্রনিক সমতা আনতে পারেন, ফলে বিভিন্ন অঙ্গ বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে সুস্থ সবল ও স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারেন।

আরও যেসব উপকার পেতে ডাবের পানি পান করবেন-
  • ডাবের পানির উপকারিতা অনেক। সংক্ষেপে বললে,ডাবের পানিতে ক্যালসিয়াম থাকে। ফলে এটি প্রাকৃতিক ভাবে ক্যালসিয়াম জোগান দেয় শরীরে।
  • ডাবের পানি শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করে।
  • এতে থাকা আঁশ শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে।
  • এটিতে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকায় কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
  • চর্বির পরিমাণ খুব কম থাকায় ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • পানিশূন্যতা দূর করে।
  • যে কোনো কোমল পানীয়ের থেকে এতে অনেক কম ক্যালরি ও চিনি থাকে।
  • পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের উপস্থিতির কারণে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।
  • এতে আঁশ থাকে বলে হজমে সহায়তা করে।
  • রোদের কারণে শরীরে তরলের ঘাটতি হয় এবং শরীর আর্দ্রতা হারায়। ডাবের পানি শরীরের তরল উপাদান ও আর্দ্রতা বজায় রাখে।

ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম

ডাবের পানিকে বলা হয় প্রাকৃতিক স্যালাইন। ডাবের পানি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান, ইলেক্ট্রোলাইট এবং খনিজ থাকে যা শরীরের জন্য উপকারী। ডাবের পানি সঠিকভাবে খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অতিরিক্ত পান করলে কিছু অসুবিধা হতে পারে। নীচে ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম হলো, কচি ডাবের পানি খাওয়া। কেননা ডাব যত বয়স্ক হয়, তাতে চিনির পরিমাণ বাড়তে থাকে। যেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়, এবং ডাব কাটার সাথে সাথেই পানি খেয়ে নিতে হবে। যেকোনো সময় ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে তবে অনেক রোদ থেকে এসে সাথে সাথে ডাবের পানি না খাওয়াটাই ভালো।

পাশাপাশি ডাবের পানিতে অন্য কোন কিছু মিশিয়ে খাওয়া যাবেনা কেননা এটি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। আশা করছি ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। এছাড়াও আরো কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলো মেনে ডাবের পানি খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী।

ডাবের পানি পানে সতর্কতা
ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম এর পাশাপাশি ডাবের পানি পানেও সতর্কতা রয়েছে। ডাবের পানির উপকারিতা বলে শেষ করা যায় না। তবে ডাবের পানিতে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে। ফলে কিডনি রোগীদের জন্য ডাবের পানি ক্ষতির কারণ হতে পারে। ঠান্ডা ও সর্দির রোগী, অ্যালার্জির রোগীদেরও ডাবের পানি পানে সতর্ক থাকতে হবে।

খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়া কি উচিত

ডাবের পানির উপকারিতা'র কথা কমবেশি সবারই জানা। শরীরে পুষ্টি জোগাতে ডাবের পানির তুলনা নেই। অনেকেরই অভ্যাস আছে সকালে উঠে খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়ার। গরমে একটু স্বস্তি এনে দিতে ডাবের পানির কোনও বিকল্প নেই। তবে শুধু তেষ্টা মেটাতেই নয়, গরমে শরীর ভাল রাখতেও ডাবের পানি অত্যন্ত উপকারী। 

ডাবের পানিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, মেঙ্গানিজ এবং জিঙ্ক নানাভাবে শরীরে গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। খালি পেটে ডাবের পানি খেলে ফল মেলে আরও বেশি। চলুন জানা যাক এই পানীয়টির আরও কত গুণ।

হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেঃ
ডাবের পানিতে ক্যালসিয়াম, হাড়কে শক্ত-পোক্ত করে তোলার পাশাপাশি হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ডাবে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়ামও এক্ষেত্রে নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।

শরীরকে বিষমুক্ত করেঃ দেহের প্রতিটি কোণায় উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দিতে এই প্রকৃতিক উপাদানটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস ডাবের পানি পান করলে নানাবিধ রোগ যেমন শরীরের ধারে কাঁছে ঘেঁষতে পারে না, তেমনি সার্বিকভাবে শরীরিক ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণে চলে আসেঃ
  ডাবের পানিতে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং ডায়াটারি ফাইবার ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এই কারণেই রোজের ডায়েটে ডাবকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

কিডনির ক্ষমতা বাড়েঃ প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে ডাবের পানি কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে শরীরে উপস্থিত টক্সিন উপাদানদের ইউরিনের সঙ্গে বের করে দিয়ে নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমায়।

পানির ঘাটতি মিটায়ঃ ডাবের পানি শরীরে প্রবেশ করা মাত্র জলের ঘাটতি মিটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে এতে থাকা ইলেকট্রোলাইট কম্পোজিশান ডায়ারিয়া, বমি এবং অতিরিক্ত ঘামের পর শরীরের ভিতরে খনিজের ঘাটতি মেটাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

শরীর এবং ত্বকের বয়স কমেঃ ডাবের পানিতে রয়েছে সাইটোকিনিস নামে নামে একটি অ্যান্টি-এজিং উপাদান, যা শরীরের উপর বয়সের ছাপ পরতে দেয় না। সেই সঙ্গে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ওজন হ্রাসে পায়ঃ ডাবের পানিতে বেশ কিছু উপকারি এনজাইম হজম ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মেটাবলিজমের উন্নতিতেও সাহায্য় করে থাকে। ফলে খাবার খাওয়া মাত্র তা এত ভালো ভাবে হজম হয়ে যায় যে শরীরে হজম না হওয়া খাবার মেদ হিসেবে জমার সুযোগই পায় না। ফলে ওজন কমতে শুরু করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটেঃ রাইবোফ্লবিন, নিয়াসিন, থিয়ামিন এবং পাইরিডোক্সিনের মতো উপকারি উপদানে ভরপুর ডাবের পানি প্রতিদিন পান করলে শরীরের শক্তি এতটা বৃদ্ধি পায় যে জীবাণুরা কোনওভাবেই ক্ষতি করার সুযোগ পায় না। সেই সঙ্গে ডাবের পানিতে অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্য়াকটেরিয়াল প্রপাটিজ নানাবিধ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেঃ শরীরে বাজে কোলেস্টেরল বা এল ডি এল-এর পরিমাণ কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ডাবের পানির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। দেহে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমাতেও ডাবের পানি বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে।

মাথা যন্ত্রণার প্রকোপ কমেঃ
ডিহাইড্রেশনের কারণে মাথা যন্ত্রণা বা মাইগ্রেনর অ্যাটাক হওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে শীঘ্র এক গ্লাস ডাবের পানি পান করবেন। এমনটা করলে দেখবেন নিমেষে কষ্ট কমে যাবে। প্রাকৃতিক উপাদানটিতে ম্যাগনেসিয়াম, এই ধরনের শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

নিয়মিত ডাবের পানি খেলে আরও যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়-

  • সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে ডায়াবেটিকদের এইচবিএ১সি নিয়ন্ত্রণে আসে। অর্থাৎ তাদের তিন মাসের গড় সুগার কমে।
  • গরমে শরীরে ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য ফেরায়।
  • নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় অত্যন্ত কার্যকরী ডাবের পানি।

ত্বকের জন্য ডাবের পানির উপকারিতা

প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর ডাবের পানি। ডাবের পানি খেলে ও তা দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করলে ত্বকের অনেক উপকার হয়। এটি ত্বকে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে এবং আর্দ্রতা ধরে রাখে। অ্যামিনো অ্যাসিড ও শর্করা থাকে বলে এটি শুষ্ক ত্বকে পুষ্টি জোগায় ও আর্দ্রতা বজায় রাখে। ডাবের পানিতে ইলেকট্রোলাইট উপাদান থাকে। ফলে এটি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করলে ত্বক মসৃণ হয়।

ডাবের পানিতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে। ফলে এটি ব্রণ হওয়ার হাত থেকে ত্বক রক্ষা করতে পারে। তবে এটিও বলা হয় যে, এর কোনো প্রমাণ নেই। বরং বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডাবের পানি দ্রুত ব্রণ দূর করতে সহায়তা করলেও করতে পারে। ডাবের পানি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সিস্টেমকে উন্নত করতে সহায়তা করে। ফলে এটি ফ্রি রেডিকেলের প্রতিক্রিয়া নিরপেক্ষ করে দিয়ে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ দূর করতে সহায়তা করে।

সংক্ষেপে
  • ডাবের পানি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়তা করে।
  • রং স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
  • কালো দাগ দূর করতে সহায়তা করে।
  • ব্ল্যাক হেডস দূর করতে সহায়তা করে।
  • বলি রেখা কমাতে সহায়তা করে।
  • আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে।
  • কোলাজেন তৈরি করে।

প্রতিদিন ডাবের পানি খেলে কি হয়

বাইরের সৌন্দর্যচর্চার পাশাপাশি শরীরের ভেতরেরও যত্নের প্রয়োজন। এ জন্য প্রয়োজন সুষম ও পুষ্টিকর খাবার। শরীরের ভেতর ও বাইরে দুটোই ভালো রাখে এমন একটি পানীয় হলো ডাবের পানি। দুপুরের খাবারের পর একটি ডাবের পানি খেলে শরীর হবে সুস্থ, ত্বক হবে সুন্দর।ডাবের পানির উপকারিতার কথা কমবেশি সবারই জানা।
প্রতিদিন-ডাবের-পানি-খেলে-কি-হয়
শরীর সুস্থ রাখতে ডাবের পানির তুলনা নেই। ত্বকের সমস্যাতেও ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এই পানি শুধু গরমে নয়, শীতেও শরীরের জন্য খুব উপকারী। 

আরও পড়ুনঃ

প্রতিদিন ডাবের পানি খেলে যে সমস্ত উপকার পাবেন-
  • এক গ্লাস সুস্বাদু ডাবের পানি শুধু দেহ-মনে প্রশান্তির ছোঁয়াই এনে দেবে না, আপনি শুনে বিস্মিত হবেন, এর এমন এক অলৌকিক গুণ আছে, যা ওজন কমিয়ে আপনাকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ডাবের পানি ইলেকট্রোলাইট ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। যে কারণে এটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে গ্রহণযোগ্য। আপনি যদি পানিশূন্যতায় ভোগেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ধীরগতিতে ক্যালরি বার্ন হবে। এ পানিশূন্যতা দূর করবে সহজলভ্য ডাবের পানি।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ডাবের পানি। এতে থাকা রাইবোফ্লবিন, নিয়াসিন, থিয়ামিন ও পাইরিডোক্সিনের মতো উপকারী উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর ফলে জীবাণুরা সহজে সংক্রমণ ঘটাতে পারে না।
  • এই লো-ফ্যাটযুক্ত স্বাস্থ্যকর পানীয় পটাশিয়ামের উৎস, যা শরীরের ফ্যাট বার্ন করে পেশি গঠনে সহায়তা করে। তাই আপনি যদি বেশি করে ডাবের পানি পান করেন, তাহলে মেটাবলিজম বেড়ে যাবে আর ওজন থাকবে স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণে।
  • ডাবের পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় শক্তিশালী করার পাশাপাশি হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ডাবে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়ামও এ ক্ষেত্রে নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।
  • ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ ও সি, যা ত্বকের জন্য ভীষণ উপকারী। এ দুই ভিটামিন চুলের গোড়া মজবুত রাখতেও সাহায্য করে।
  • এক কাপ ডাবের পানিতে তিন গ্রাম ফাইবার থাকে, যা অন্যান্য পানীয়র তুলনায় অনেক বেশি। ফাইবার পরিপাকের মাধ্যমে খাদ্য শোষণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইবার শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ নির্মূল করে শরীর সুস্থ রাখে।
  • ডায়েটেশিয়ান ও জিম ইনস্ট্রাক্টররা খাদ্যতালিকায় সব সময় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রাখার পরামর্শ দেন। এক কাপ ডাবের পানিতে রয়েছে দুই গ্রাম প্রোটিন। তাই ব্যায়ামের পরে স্পোর্টস ড্রিংক হিসেবে বেছে নিতে পারেন ডাবের পানি।

গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর অনেক কিছু প্রয়োজন হয় তাঁর নিজের ও সন্তানের জন্য। সে সময় ডাবের পানি সবকিছুর জন্য কাজ না করলেও কিছু কিছু বিষয়ে বেশ উপকারে দেবে।গর্ভবতী নারীদের নিজের ও সন্তানের স্বাস্থ্য ধরে রাখতেই মনোযোগী হতে হয়। ফলে খাওয়া দাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের খানিকটা সচেতন থাকতে হয়। গর্ভাবস্থায় নারীদের ডায়েটে একাধিক বিষয়কে শামিল করা হয়।

তারমধ্যে অন্যতম হলো ডাবের পানি। কারণ এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্লোরাইড। এটি পান করলে শরীরে ইলেকট্রোলাইটস ও তরল পদার্থের পরিমাণ তৈরি হয়। বলা হয় গর্ভবতী নারীদের গর্ভধারণের তৃতীয় মাস থেকেই উচিত ডাবের পানি পান করা। এই সময় পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। একে মা ও শিশু দুজনেই পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হয়।

ডাবের পানি পান করলে শিশুর মস্তিষ্ক ভালো থাকে। ফলে এটি গর্ভাবস্থায় থাকা মা ও শিশু দুজনের পক্ষেই ভালো। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন এক গ্লাস করে ডাবের পানিই যথেষ্ট।

গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি যা করতে পারে
  • শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে।
  • পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের উপস্থিতির কারণে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করে।
  • ডাবের পানিতে পটাশিয়াম থাকে বলে উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
  • ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে বলে ডাবের পানি ভ্রূণের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • গ্যাস্ট্রিকের হাত থেকে কোনো কোনো গর্ভবতী নারীকে স্বস্তি দিতে পারে।
  • শর্করার পরিমাণ খুবই কম বলে এটি ওজন বাড়াবে না
  • ডাবের পানি ব্লাড প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। শরীরে রক্ত বাড়ায় এছাড়াও মূত্রাশয় থেকে আসা কোনও সংক্রমণকে রুখে দেয়।
  • বুক জ্বালার সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় ডাবের পানি। বুক জ্বালা গর্ভবতী থাকাকালীন বহু নারীর ক্ষেত্রেই সমস্যা হয়ে ওঠে।
  • গর্ভাবস্থায় সকালে উঠে খানিকটা দুর্বল লাগে। তা থেকে রক্ষা পেতে ডাবের পানি খুবই উপকারী।
  • এতে থাকে ওমেগা থ্রি, ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার। ফলে তা মা ও সন্তান দুজনের স্বাস্থ্যের পক্ষেই খুব ভালো।

সকালে ডাবের পানি কেন পান করবেন

দিনের যে কোন সময় ডাবের পানি পান করা যায়। তবে সকালে খালি পেটে ডাবের পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।সকাল ডাবের পানি পান করলে তা আপনার শরীরের জন্য দারুণ কার্যকরী হতে পারে। অনেকে ভেবে থাকেন যে ডাবের পানিতে অনেক বেশি কার্ব থাকে তাই এটি ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। কিন্তু এটি তারচেয়েও বেশি উপাদেয় একটি পানীয়।

সকালে ডাবের পানি পান করার উপকারিতা-

প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করেঃ ডাবের পানি খেলে তা নানা ধরনের পুষ্টি পৌঁছে দিতে পারে। ডাবের পানি খুব সহজেই হজম হয়, সেইসঙ্গে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস এবং পটাশিয়াও সমান ভাবে সরবরাহ করে। তাই যারা শরীরচর্চা করেন তাদের ওয়ার্কআউটের পরে ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ডাবে থাকে পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়ামঃ ডাবের পানিতে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে। আপনি যদি নিয়মিত ডাবের পানি পান করেন তাহলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক থাকবে। সেইসঙ্গে কমবে ব্লাড সুগারের মাত্রা। এতে গ্লুকোজের মাত্রাও আয়ত্বে রাখা সহজ হবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, সকালে উঠে খালি পেটে ডাবের পানি কেন খাবেন।

শরীর আর্দ্র রাখেঃ আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখা খুব জরুরি। কারণ একবার শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে তা আরও অনেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। সেখান থেকে কিডনিতে পাথর হওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে। তাই নিয়মিত পানি পান করা জরুরি। আপনার শরীর আর্দ্র রাখতে সাহায্য করতে পারবে ডাবের পানিও। সকালে খালি পেটে ডাবের পানি খেয়ে নিন।

শরীরচর্চার পরেঃ শরীরচর্চার সময় আমাদের শরীর থেকে অনেকটা পানি ঘামের আকারে বের হয়ে যায়। সেই ঘাটতি পূরণের জন্য কাজ করতে পারে ডাবের পানি। এটি ইলেক্ট্রোলাইট ফিরিয়ে আনতেও সক্ষম। তাই শরীরচর্চার পর ডাবের পানি পান করবেন।

গরমে ডাবের পানির উপকারিতা

আমাদের দেশে গরমেই সাধারণত ডাবের পানি খাওয়া হয়। এর অনেক কারণ আছে। তবে বলে রাখা ভালো, ডাবের পানি শীতের দিনেও শরীরের যে উপকার করে গরমের দিনেও সেই একই উপকার করে। ফলে গরমের দিনে খাবেন বলে তুলে না রেখে শীতের দিনেও কচি ডাবের পানি খাওয়া উচিত।

শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেঃ
পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের উপস্থিতির কারণে শরীরে ইলেকট্রোলাইটে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।

এতে আঁশ থাকে বলে হজমে সহায়তা করেঃ রোদের কারণে শরীরে তরলের ঘাটতি হয় এবং শরীর আর্দ্রতা হারায়। ডাবের পানি শরীরের তরল উপাদান ও আর্দ্রতা বজায় রাখে।

ডাবের পানি খেলে কি ওজন কমে

ওজন কমানোর বিভিন্ন রকম চেষ্টা করে ক্লান্ত? এবার কি হালকা ধরনের কোনো উপায় খুঁজছেন? এক্ষেত্রে আপনার জন্য উপকারী হতে পারে ডাবের পানি। সুস্বাদু এই প্রাকৃতিক পানীয় খেলে তা আপনাকে কেবল সতেজই করবে না, সেইসঙ্গে আপনার কোমরের মাপও কমিয়ে আনবে। ডাবের পানি সবচেয়ে কার্যকরী হাইড্রেটিং ড্রিংকগুলোর মধ্যে একটি। সেইসঙ্গে এটি শরীরেরর বাড়তি মেদ ঝরাতেও সাহায্য করে।
 
আরও পড়ুনঃ 

কম ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেটঃ ডাবের পানিতে থাকে খুবই অল্প ক্যালোরি। যে কারণে এটি আমাদের পেটের জন্য বেশ হালকা ও প্রশান্তিদায়ক। এই পানীয়তে আরও থাকে পটাশিয়াম ও জৈব এনজাইম। যে কারণে ডাবের পানি খেলে হজম ভালো হয়। এতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণও থাকে খুব কম। যদিও ডাবের পানি পান করলে তা দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনার পেট ভরিয়ে রাখে।

অতিরিক্ত চিনি নেইঃ অন্যান্য ফলের রসের তুলনায় ডাবের পানিতে অনেক বেশি মিনারেল উপস্থিত থাকে। বেশিরভাগ ফলের রসেই অতিরিক্ত চিনি থাকে তবে ডাবের পানির ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। এই পানীয়তে চিনির মাত্রা থাকে খুবই কম। ডাবের পানি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রা স্থিতিশীল করে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

মেটাবলিজম বাড়াতে কাজ করেঃ ডাবের পানিতে থাকে পর্যাপ্ত পুষ্টি, পটাশিয়াম ও এনজাইম যা মেটাবলিজম বাড়াতে কাজ করে। যে কারণে অতিরিক্ত ক্যালোরি ঝরানো সহজ হয়। মেটাবলিজম প্রক্রিয়া ধীর হলে তা হজমপ্রক্রিয়াও ধীর করে। যা ওজন বাড়ানোর অন্যতম কারণ। ডাবের পানি এক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক হতে পারে। স্বাস্থ্যকর ও সঠিক হজম প্রক্রিয়ার জন্য ডাবের পানি পান করুন।

অনেকটা পান করলেও ক্ষতি নেইঃ ডাবের পানিতে থাকে লরিক এসিড যা একবারে অনেকখানি খেতে সাহায্য করে। অর্থাৎ আপনি ডাবের পানি খেতে শুরু করলে একবারে অনেকটা খেতে পারবেন। অরুচি লাগবে না। এই পানীয়তে কোনো ধরনের ফ্যাট নেই। দিনের শুরুতে ডাবের পানি পান করলে তা আপনাকে সারাদিন সতেজ রাখবে। এতে কোনো ধরনের কার্বোহাইড্রেটও নেই। তাই পেট ভরে খেলেও কোনো সমস্যা নেই। এতে থাকা পটাশিয়াম আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম বের করে দিতে কাজ করবে। যে কারণে ওজন কমানো সহজ হবে।

ডাবের পানি কাদের খাওয়া উচিত নয়

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গরমের এই সময় ডাবের পানির মতো পুষ্টিসমৃদ্ধ পানীয় আর নেই বললেই চলে। তবে কখনও কখনও এই পানীয়ই শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই আসুন জেনে নিই ডাবের পানি কাদের খাওয়া উচিত নয়-

গরমের এই সময়ে পানির চাহিদা থাকে অনেক বেশি। ডাবের পানিতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ। এছাড়া আছে ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, ক্যালশিয়াম, ফাইবার এবং ডাই-ইউরেটিক উপাদান। তবুও ক্ষেত্রবিশেষে এই পানীয় শরীরে নানা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
 
আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে যদি কেউ অ্যালার্জি, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হন তবে সে সময় ডাবের পানি পান করাটা নিরাপদ নয়। এতে শারীরিক জটিলতা কমবে না বরং বাড়বে।ডাবের পানি কিডনিকে সুরক্ষিত রাখে। তবে আপনি যদি কিডনি রোগী হন সেক্ষেত্রে এই পানীয় মোটেও নিরাপদ নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, কিডনি ভালো রাখার সেরা উপায় পানি পান করা। কিন্তু কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে এই পানি পান করার পরিমাণ আপনার কমিয়ে আনতে হবে আক্রান্ত কিডনিকে ভালো রাখার জন্য।

ঠিক তেমনি আপনি যদি কিডনি রোগী হন তবে আক্রান্ত কিডনিকে সুরক্ষিত রাখতে ডাবের পানিকে এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ ডাবের পানিতে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি। তাই এই পানীয় কিডনি রোগীদের বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।

ডাবের পানিতে থাকা পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম উপাদান শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাইট, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু শরীরে এগুলোর কোনোটার পরিমাণ বেড়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাইট, ডায়াবেটিস ইত্যাদির ভারসাম্য বজায় নাও থাকতে পারে। হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়ার কারণও হতে পারে এই পানীয়।

অতিরিক্ত ডাবের পানি পান করার অভ্যাসে শরীরে অতিরিক্ত পটাশিয়াম জমার সুযোগ পায়। যা কিডনি ও হৃদপিণ্ড দুটোই অকার্যকর করে দিতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই অবস্থায় রোগীর মৃত্যু অনিবার্য হতে পারে। তাই যাদের দেহে প্রচুর পটাশিয়াম আছে এবং বের হয় না, তাদের ডাবের পানি পান করা ঠিক নয়।

ডাবের পানিতে থাকা সোডিয়াম শরীরে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা সপ্তাহে একদিনের বেশি ডাবের পানি পান করবেন না। তাই যাদের এসব সমস্যা রয়েছে তারা ডাবের পানি পান করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।

ডাবের শাঁসের উপকারিতা

ডাবের শাঁস যা পুষ্টিগুণেও ভরপুর। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ডাবের শাঁসে যে তৈলাক্ত পদার্থ থাকে, তা হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
 
ডাবের শাঁসে ফাইবারের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। তাই পরিমিত পরিমাণ ডাবের শাঁস যদি নিয়মিত খাওয়া যায়, তা কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। অন্ত্রের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।চলুন জেনে নেওয়া যাক ডাবের শাসের উপকারিতা গুলো-

  • ডাবের শাঁসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি ঠান্ডা, কাশি, এবং অন্যান্য সংক্রমণ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
  • ডাবের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং নিয়মিত অন্ত্রের চলাচল বজায় রাখে।
  • ডাবের শাঁসে ফাইবার থাকে যা দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • ডাবের শাঁসে থাকা ফাইবার এবং ম্যাগনেসিয়াম হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • ডাবের শাঁসে থাকা ভিটামিন ই ত্বক ও চুলের জন্য ভালো। এটি ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে এবং চুলকে পুষ্ট করে।
  • ডাবের শাঁসে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটি হাড়কে শক্ত করে এবং অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • ডাবের শাঁসে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • ডাবের শাঁসে থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • ডাবের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি থাকে যা শরীরে শক্তি সরবরাহ করে।
  • ডাবের শাঁসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  • আশা করছি বুঝতে পেরেছেন ডাবের শাঁসের উপকারিতা। তাই নিয়মিত ডাবের পানি খাওয়ার পাশাপাশি ডাবের ভেতরের শাঁস খেলে উপরোক্ত ডাবের শাসের উপকারিতা পাওয়া যাবে।

dolonডাবের পানির অপকারিতা

নিয়মিত ডাব খেলে কিডনি রোগ হয় না। আবার কিডনি রোগীদের জন্য ডাবের পানি পান করা সম্পূর্ণ নিষেধ। কারণ কিডনি অকার্যকর হলে শরীরের অতিরিক্ত পটাশিয়াম দেহ থেকে বের হয় না। ফলে ডাবের পানিতে থাকা পটাশিয়াম আর দেহের পটাশিয়াম একত্রে কিডনি ও হৃদপিণ্ড দুটোই অকার্যকর করে দেয়। ফলে রোগীর মৃত্যু অনিবার্য।
ডাবের-পানির-অপকারিতা
প্রতিটি জিনিসের ভালো ও মন্দ দুটি দিকই থাকে। ডাবের পানিরও সেটা আছে। এর কিছু অপকারিতার কথা জেনে নেওয়া যাক

ক্যালরি বাড়ায়ঃ আপনি যদি ওজন কমাতে চান তবে ডাবের পানি বেশি না খাওয়াই ভালো। কারণ এটি আপনার শরীরে ক্যালোরির মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। অন্যান্য স্বাস্থ্যকর পানীয় বা ফলের রসের তুলনায় ডাবের পানিতে চিনির পরিমান কম থাকে। তবুও ডাবের পানি খেলে নিমেষে বেড়ে যায় ক্যালরি।

রক্তে শর্করা মাত্রা বাড়ায়ঃ ডাবের পানিতে চিনির পরিমান কম থাকলেও কার্বহাইড্রেট ও ক্যালরি অধিক মাত্রায় থাকার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। তাই ডাবের পানি প্রতিদিন খাওয়া উচিত নয়। ডায়বেটিস থাকলে ডাবের পানিএড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

রক্তাচাপ বাড়িয়ে দেয়ঃ রক্তাচাপ বাড়িয়ে দেয় ডাবের পানি। ডাবের পানিতে প্রচুর সোডিয়াম থাকায় তা রক্তাচাপ বাড়িয়ে দেয়। তাই যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক ভাবেই বেশি তাদের ডাবের পানি প্রতিদিন খাওয়া উচিত নয়। ডাবের পানিতে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ডায়াটারি ফাইবার ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

কিডনির রোগঃ ডাবের পানি খেলে কিডনির সমস্যা হয় না। তবে কিডনি রোগ হলে ডাবের পানি পান করা একদমই ঠিক নয়। কারণ কিডনি অকার্যকর হলে শরীরের অতিরিক্ত পটাশিয়াম দেহ থেকে বের হয় না। ফলে ডাবের পানিতে পটাশিয়াম ও দেহের পটাশিয়াম একত্রে কিডনি ও হৃদপিণ্ড দুটোই অকার্যকর করে দেয়। তাই যাদের শরীরে প্রচুর পটাশিয়াম আছে এবং বের হয় না তাদের ডাবের পানি পান করা ঠিক না।
  • নিয়ম করে ডাবের পানি খেতে হবে। উপকার করে বলে অপ্রয়োজনেও এটি খাওয়া যাবে না। তাতে বরং ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • অতিরিক্ত ডাবের পানি খেলে কারও কারও ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • ডাবের পানিতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম থাকে। এ উপাদানগুলো শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাইট, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু শরীরে এগুলোর কোনোটার পরিমাণ বেড়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাইট, ডায়াবেটিস ইত্যাদির ভারসাম্য বজায় নাও থাকতে পারে। আবার এটি রক্তচাপ কমিয়েও দিতে পারে। এ সবকিছুই স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করবে। বলা হয়ে থাকে, কিডনি সুস্থ রাখতে ডাবের পানি পান করা ভালো। কিন্তু কিডনি রোগীদের জন্য ডাবের পানি ক্ষতির কারণও হয়। কাজেই যাদের যেকোনো পর্যায়ের কিডনি রোগ আছে তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডাবের পানি পান করবেন।
  • কোনো কোনো অ্যালার্জির রোগী ডাবের পানি পানে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। কাজেই যাদের অ্যালার্জি আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শে ডাবের পানি পান করবেন।
  • ঠান্ডার রোগ আছে বা সর্দির রোগীদের বুঝেশুনে ডাবের পানি পান করা উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ

শেষ কথা

কোনো কিছু থেকে প্রাকৃতিকভাবে উপকার পেতে হলে তা দীর্ঘদিন খেতে হয় বা ব্যবহার করতে হয়। হঠাৎ এক–আধদিন ব্যবহার করে ভালো উপকার পাওয়া যায় না। তাই ডাবের পানি পান করে উপকার পেতে চাইলে নিয়মিত তা পান করতে হবে। খুব বেশি পানের দরকার নেই। পরিমাণ মতো নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে তবেই উপকার পাবেন।

অতএব, সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা, ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম সহ অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url