গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা

 

 গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকে আমি আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। গ্রিন টি আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য কতোটা উপকারী তা আপনি আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবেন। গ্রিন টি আমাদের শরীরকে সতেজ ও উৎফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। 

গ্রিন-টি-এর-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
এই চা আমাদের শরীরের ওজন ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। গ্রিন টি বা সবুজ চায়ে বিদ্যমান রাসায়নিক পদার্থ মানুষের স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায় এবং পারিপার্শ্বিক বিষয়ের স্মৃতি ও তথ্য সংরক্ষণে মস্তিষ্ককে সাহায্য করে।নিয়মিত গ্রিন টি সেবন করলে দাঁতের ক্ষয়রোগের ঝুঁকি কমে।

তবে ওজন কমাতে হলে খাবারে ক্যালরির পরিমাণ কমাতে হবে অথবা ব্যায়ামের মাধ্যমে ক্যালরি ক্ষয় বাড়াতে হবে। শুধু গ্রিন টি পান করে ওজন কমানো সম্ভব নয়। তাই জেনে নিন গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

পেইজ সুচিপত্রঃ গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা

গ্রিন টি এর উপকারিতা

গ্রিন টি এর উপকারিতা ও এর গুনের কথা বলে শেষ করা সম্ভব না। বিভিন্ন ধরনের চায়ের মধ্যে গ্রিন টি এর উপকারিতা মানবদেহের জন্য বিশেষ উপকারী। যদিও অনেকেই এর তেতো স্বাদের জন্য গ্রিন টি এড়িয়ে যান। আবার অনেকেই মনে করেন শুধু ওজন কমানোর জন্যই গ্রিন টি খাওয়া প্রয়োজন। যা মোটেও সঠিক নয়। গ্রিন টি এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, বি, বি৫, ডি, ই, সি, ই, এইচ সেলেনিয়াম, ক্রোমিয়াম, জিংক, ক্যাফেইন, মেঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান।

আরও পড়ুনঃ

এ চা নিয়মিত পান করার অভ্যাস মানবদেহের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। খালি পেটে আর কোনো কিছু খাওয়ার পরপরই গ্রিন টি পান করতে যাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। গ্রিন টি পান করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো সকালে বা বিকেলে হালকা নাশতার পর অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ১ ঘণ্টা আগে। ভালো ফলাফলের জন্য লেবু ও মধুর সঙ্গে গ্রিন টি পান করতে পারেন।

গ্রিন টি এর উপকারিতা গুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ-

১। এটি শরীরে এনার্জি এবং স্ট্যামিনা ধরে রাখে। সবুজ চা পান আমাদের হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। দেহের পানিশূন্যতা রোধ করতেও এ চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

২। নিয়মিত গ্রিন টি পানে ধমনী শিথিল হয় এবং দেহে রক্ত প্রবাহের মাত্রা ভালো থাকে। সবুজ চায়ের লিকার দাঁতের ক্ষয় রোধ এবং মাড়িকে মজবুত করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই চা অত্যন্ত উপকারী।

৩। এ ছাড়া সবুজ চা মেটাবলিজম বাড়িয়ে ফ্যাট বার্নে সহায়তা করে যা ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৪। গ্রিন টি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।

৫। কিডনি রোগের জন্যও গ্রিন টি বিশেষভাবে উপকারী। রক্তে কোলেস্টোরেলের মাত্রা কমাতে গ্রিন টি একটি জাদুকরি পানীয়।

৬। গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বকের কোলাজানকে উদ্দীপ্ত করে যা ত্বকের টানটান ভাবকে ধরে রাখে। আর এ কারণেই গ্রিন টি বার্ধক্যের গতিকে ধীর করে এবং আয়ু বাড়ায়।

৭। এতে থাকা থিয়ানিন নামের অ্যামাইনো এসিড দুশ্চিন্তা, অবসাদ ও হতাশা কমাতে পারে অনেকটাই।

৮। নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে ত্বকের রোদে পোড়াভাব কমে, চুল ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। গ্রিন টি ন্যাচারাল টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ব্যবহৃত গ্রিন টিও চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূর করতে দারুণভাবে কাজ করে।

৯। সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকেও ত্বককে রক্ষা করতে পারে এই পানীয়।

১০। বর্তমানে গ্রিন টি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এর ওজন কমানোর গুণের কারণে। এটি অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে এটি এক দিনে ৭০ ক্যালরি পর্যন্ত ফ্যাট বার্ন করে। তার মানে রেগুলার গ্রিন টি পানের মাধ্যমে বছরে ৭ পাউন্ড (Pound) পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব।

১১। খুব ভালো টোনার হিসেবে কাজ করে। এটি তৈরির জন্য ১ কাপ পানিতে ৫ চা চামচ গ্রিন টি, ১ চা চমচ পুদিনা পাতা ১০ মিনিট ফুটান। তারপর ঠান্ডা করে ছেঁকে নিয়ে একটি স্প্রে বোতলে সংরক্ষণ করুন। এই টোনারটি দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করুন। এটি ত্বকের চুলকানি ও প্রদাহ দূর করতে খুব উপকারী।

১২। এতে রয়েছে এক ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট যা বার্ধক্যের গতিকে ধীর করে এবং আয়ু বাড়ায়।

১৩। চোখের ফোলা ভাব এবং চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল কমাতে ব্যবহার করা গ্রিন টির দুটি ব্যাগ ২ ঘন্টা ফ্রিজ এ রেখে, ঠান্ডা করে চোখ বন্ধ করে এর উপর ১০ মিনিট রাখুন।

১৪। ড্রাই গ্রিন টির পাতা মধুর সাথে মিক্স করে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা যায় যা লোমকুপের ময়লা এবং মৃত কোষ দূর করে ত্বককে নরম ও মসৃণ করে।

১৫। ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে গ্রিন টি ডিওডোরেন্ট হিসেবে ভালো কাজ করে। গোসলের পর ঠান্ডা গ্রিন টি আন্ডারআর্ম (Underarm) এ লাগালে দুর্গন্ধ দূর হবে। ঠিক এমনিভাবে পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

১৬। অর্ধেক কলা, ১ চা চামচ গ্রিন টি, ১ চা চামচ মধু এবং ১ চা চামচ টক দই ভালো মতো মিশিয়ে মুখে লাগান এবং শুকালে ধুয়ে ফেলুন। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য খুব ভালো ময়েশ্চারাইজিং মাস্ক হিসেবে কাজ করে।

১৭। নিয়মিত এক কাপ গ্রিন টি পান হার্ট এর রোগের ঝুঁকি ৪৪% (44%) কমিয়ে দেয় এবং ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।

১৮। মশা মাছির উপদ্রব থেকে বাঁচতে শুকনো চা পাতা ঘরের কোনায় রেখে পোড়ালে মশা মাছি কমবে।

১৯। এটি নিয়মিত পান মুখের দুর্গন্ধ দূর করে, ওরাল ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং ডেন্টাল ক্যাভিটিস প্রতিরোধ করে।

২০। ৩-৪ টি গ্রিন টি ব্যাগ ১ লিটার পানিতে এক ঘণ্টা ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিন। এরপর চুল শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনিং করার পর সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার চুলকে শক্ত ও মজবুত করবে। চুল পড়া কমাতেও আপনি ব্যবহার করতে পারেন গ্রিন টি। এটি চুলের গোড়া শক্ত করে এবং হেয়ার ফলিকল উদ্দীপিত করে যা নতুন চুল গজাতে সহায়ক।

২১। ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে এর শুকনো পাতা একটি পাতলা কাপড়ে বেঁধে ফ্রিজের এক কোনায় রেখে দিন।

২২। গ্রিন টি ব্রণের সমস্যা ট্রিটমেন্টের জন্য খুবই কার্যকরী। এটি ত্বকে কোন রকম ইরিটেশন বা ড্রাইনেস তৈরী করা ছাড়াই ব্রণ নির্মূল করে।

২৩। গ্রিন টি মাউথওয়াশ হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। এতে আছে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিস ফলে এতে কোনো এলকোহল নেই যা রেগুলার মাউথওয়াশে থাকতে পারে।

২৪। সবুজ চা পাতা পানিতে কয়েকদিন ভিজিয়ে রেখে গাছের গোড়ায় সেই পানি দিলে তা ফারটিলাইজার হিসেবে কাজ করে।

গ্রিন টি তৈরির নিয়ম

গ্রিন টি মূলত তৈরি করা হয় ফার্মেনটেশন ছাড়া যাতে এর সবুজ রং অক্ষুণ্ণ থাকে। প্রথমে চা পাতাকে আংশিক শুকানো হয়, তারপর বাষ্পায়িত করা হয়। এরপর শুকিয়ে নেওয়া হয় এবং সবশেষে তাপ দিয়ে গ্রিন টি তৈরি করা হয়। গ্রিন টি কীভাবে খাওয়া উচিত, এতে কী কী উপকার তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা অনেকেরই নেই। অতিরিক্ত গ্রিন টি যেমন পান করা ঠিক না, তেমনই আবার খালি পেটে ঘুম থেকে উঠেই, কিংবা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে গ্রিন টি পান করা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়।

অন্যান্য চায়ের মতো গ্রিন টি আমাদের শরীরে জারিত হয় না। তাই এই চা অন্য চায়ের তুলনায় স্বাস্থ্যকর। অনেক রকম ফ্লেভার তো বটেই, বাজারে ভেষজ গ্রিন টি-ও পাওয়া যায়। গ্রিন টি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল ও ট্রাইগ্লিসারাইড জমতে দেয় না। রক্তনালিতে এই সব ফ্যাট জমলে রক্ত সঞ্চালন বাধা পায়।

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গ্রিন-টি এর ভূমিকা অপরিসীম। গ্রিন-টি তে মূলত রয়েছে ফ্লাভোনোয়েড জাতীয় উপাদান যেমন-ক্যাফেইন, থিয়োফাইলিন, থিয়ানিন, ক্যাটেকিন, থিয়ারুবিজিন, ইসেনসিয়াল অয়েল এবং ফেনল জাতীয় যৌগ। এছাড়াও এতে রয়েছে দ্রবণীয় উপাদান যেমন-অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্লুরাইড, ভিটামিন বি১,বি২, ন্যাচারাল সুগার, পেকটিন, স্যাপোনিন এবং ভিটামিন সি।

অন্যদিকে অদ্রবণীয় উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্লোরোফিল, ক্যারোটিন, সেলুলোজ এবং ভিটামিন-ই। এই উপাদানগুলো মূলত পাতায় থাকে। এছাড়াও এতে পানির পরিমাণ শতকরা ৭৫-৮০ শতাংশ। গ্রিন টি এর উপকারিতা সম্পর্কে তো জানলেন, এবার গ্রিন টি তৈরির নিয়ম দেখে নিনঃ-

সঠিকভাবে গ্রিন টি তৈরির নিয়মঃ ৫ গ্রাম বা এক চা চামচ গ্রিন টি নিতে হবে। জল গরম করে ফুটে গেলে (৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জল থাকলে ভাল।) তারপর তা সামান্য ঠান্ডা হলে স্টিল বা কাচের পাত্রে রাখতে হবে। তার পর এতে চা পাতা যোগ করে ৩ মিনিট ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। চা পাতা পুরোপুরি ভিজে গেলে পছন্দের কাপে চা ছেঁকে চুমুক দিন প্রিয় পানীয়তে।

কেউ চাইলে এর মধ্যে দারুচিনি গুঁড়া, এলাচ গুঁড়া, আমলা গুঁড়া যোগ করতে পারেন। যোগ করা যায় আদাও। এক চা চামচ আমলার রস, এক চা চামচ লেবুর রস, এক চা চামচ আদার রসে গ্রিন টি পাবে অন্য মাত্রা। তবে দিনে দু থেকে তিনবারই যথেষ্ট। অতিরিক্ত গ্রিন টি পান করা কখনওই ঠিক নয়।

গ্রিন টি বানানোর সময় যেসব নিয়ম মেনে চলবেনঃ অর্গানিক গ্রিন টি বেছে নিলে কীটনাশকের বা কোনও ক্ষতিকারক রাসায়নিকের প্রভাবমুক্ত থাকা যাবে। সতেজ গ্রিন টি কিন্তু হালকা সবুজ রঙেই হবে। টি ব্যাগ এড়িয়ে চলাই ভাল। পাতার আকার হবে বড়। মার্চ-এপ্রিল মূলত এই গ্রিন-টি চাষ করা হয়, তাই পুষ্টিগুণও সেই সময় সবচেয়ে বেশি মেলে। ৬ মাসের বেশি গ্রিন টি রাখা যায় না কোনওমতেই।

গ্রিন টি এর প্যাকেটে এপিগ্যালোক্যাটেচিন (ইজিসিজি)আছে কি না দেখতে হবে, ভাল রকমের ইজিসিজি মানে সেটাই কেনা ভাল। গ্রিন টির গন্ধ হবে হালকা, সতেজ, কচি ঘাসের মতো। গ্রিন টি রাখতে হবে কাচ বা পোর্সেলিনের বদ্ধ পাত্রে। গ্রিন টি-তে দুধ মেশানো ঠিক নয়। ওয়ার্ক আউটের আগে বা পরে গ্রিন টি খাওয়া যায়। স্ন্যাক্স খাওয়ার ইচ্ছা দমন করতে হলেও এক কাপ গ্রিন টি যথেষ্ট।

গ্রিন টি খেয়ে কখনও খালি পেটে থাকা যাবে না। কারণ এর ফলে টক্সিসিটির পরিমাণ বাড়তে পারে। এ ছাড়াও পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রিন টি পান করে ওজন কমানো একেবারেই ঠিক নয়। পেপটিক আলসারের রোগীরা গ্রিন টি না খাওয়াই ভাল। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় গ্রিন টি পান করতে চাইলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে খেতে হবে।

সারা দিনে ২ থেকে ৩ কাপ উষ্ণ গ্রিন টি পান করলে ওজন কমে এবং বিপাকক্রিয়া বাড়ে। স্বাদ এবং প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে আপনি সবুজ, কালো, সাদা এবং ওলং চা-সহ বিভিন্ন ধরনের গ্রিন টি বেছে নিতে পারেন। বিশেষ করে মনে রাখা দরকার ফ্যাট বার্ন করতে গ্রিন টি সহায়ক ঠিকই, কিন্তু তার সঙ্গে শারীরিক অনুশীলন এবং সঠিক ডায়েটও ফ্যাট কম করতে এবং আপনার সামগ্রিক ফিটনেস বজায় রাখতে সমান গুরুত্বপূর্ণ।

আসল গ্রিন টি চেনার উপায়

আসল গ্রিন টি এর উপকারিতা ভেজাল ও নকল গ্রিন টি এর থেকে অপরিহার্য। গ্রিন টি শরীরে জারিত হয় না। তাই এই চা অন্য চায়ের তুলনায় স্বাস্থ্যকর। এটি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল ও ট্রাইগ্লিসারাইড জমতে দেয় না। এছাড়াও মেটাবলিজমের মাত্রা বাড়িয়ে দ্রুত ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ভেজাল গ্রিন টি-তে পরিপূর্ণ। এর মধ্যে থেকে সঠিক গ্রিন টি চেনা বেশ মুশকিল। তবে খাঁটি গ্রিন টি তে রয়েছে বেশ কিছু বৈশিষ্ঠ্য যেগুলো জানা থাকলে খুব সহজেই আসল গ্রিন টি চিনে নিতে পারবেন আপনিও। তাই জেনে নিন আসল গ্রিন টি চেনার উপায় গুলোঃ-

পাতার আকারঃ সাধারণত গ্রিন টি টি ব্যাগ আকারে কিনতে পাওয়া যায়, যা একদমই অরিজিনাল না। খাঁটি গ্রিন টি শুকনো পাতা হিসেবেই বিক্রি হয়। টি ব্যাগের চাইতে শুকনো পাতা স্বাদে ও মানে উন্নত থাকে। পাতার আকার দেখে কিনলে বিভ্রান্তি থেকে অনেকাংশেই বাঁচা সম্ভব।

প্রচলিত গ্রিন টি ব্যাগে অত্যধিক শুকনো ছোট ছোট কালো বা কালচে সবুজ রঙের পাতার টুকরা থাকে। আসল চা টি ব্যাগ ছাড়া কিনতে পাওয়া যায়৷ বেশিরভাগ সময়ে গাছের একদম কচি পাতা থেকে গ্রিন টি আসে। মাঝে মাঝে কচি পাতার পাশাপাশি উপরের দিকের কয়েকটি পাতা ব্যবহৃত হয়।

পাতার রংঃ গ্রিন টি গ্রিন হয় অক্সিডেশন বা ফারমেন্টেশনের অভাবে। এতে চা পাতা কালচে বা বাদামি হয়ে যায় না। ব্ল্যাক টি বা কালো চা কালো দেখায় কারণ চা পাতাকে ফারমেন্টেশনের আওতায় আনা হয়। অক্সিডেশনে না থাকলে চা পাতার ক্লোরোফিল অটুট থাকে এবং গ্রিন টি সবুজ দেখায়।বাগান থেকে পাতা তুলে সরাসরি তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে শুকিয়ে গ্রিন টি করা হয়৷ আসল গ্রিন টি চিনতে চাইলে চা পাতার রং খেয়াল করুন। বাজারে গ্রিন টি বেশ চটকদার করে উপস্থাপন করা হয়। সেটি দেখতে মোটেও সবুজ লাগে না। অরিজিনাল গ্রিন টি দেখতে উজ্জ্বল, হালকা সবুজ রঙের হয়।

অনুভূতিঃ গ্রিন টি-র পাতা হাতে ধরে অরিজিনালিটি ও ফ্রেশনেস শনাক্ত করা সম্ভব। কিভাবে? চেক করে দেখুন পাতাটি আস্ত আছে কিনা এবং ধরতে মসৃণ কিনা। যদি পাতাটা ভাঙা বা কাটা থাকে, হাতের আলতো ছোঁয়ায় দুমড়ে যায় বা মুচমুচে হয়ে ভেঙে যায়, তাহলে বুঝবেন সেটি অনেক পুরনো কিংবা বেশি শুকানো হয়েছে।

চায়ের কোয়ালিটি ঠিক রাখতে হলে এমনভাবে তাপ দিতে হয় যেন শুকানোর পরেও মসৃণতা অটুট থাকে। অরিজিনাল, ফ্রেশ গ্রিন টি-র পাতায় গরম জল পড়লে আস্তে আস্তে মেলতে শুরু করে৷ যখন গ্রিন টি কিনবেন তখন হাতে কাটা চা পাতা দেখে কেনার চেষ্টা করুন। ভঙ্গুর, ছাতা পড়া পাতা কেনা বিরত থাকুন।

প্রক্রিয়াজাতকরণঃ নকল গ্রিন টি রাসায়নিক ও কীটনাশক দিয়ে মেশিনে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এতে ক্ষতিকর ধুলাবালি ও উপাদানের পরিমাণও বেশি থাকে৷ আবার টি ব্যাগে ঢোকানোর কারণে চা পাতার পুষ্টিগুণ অনেকটা নষ্ট হয়। টি ব্যাগের ফিল্টার পেপারটা অনেক সময় স্বাস্থ্যসম্মত হয় না।

আসল গ্রিন টি প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয় না বললেই চলে। করা হলেও তাতে কৃত্রিম ও ক্ষতিকর উপাদান খুব কম থাকে। খাঁটি চায়ের প্যাকেটে এপিগ্যালোক্যাটেচিন লেখা থাকে, যেটা নকল চায়ের মোড়কে থাকবে না।গন্ধের দিক থেকেও আসল গ্রিন টি সেরা৷ গরম জলের সংস্পর্শে আসলে কচি ঘাসের মতো হালকা এবং সতেজ ঘ্রাণ আসবে। আবার আসল গ্রিন টি তে বিদ্যমান এসেনশিয়াল অয়েল চা বানানোর পরে অটুট থাকে।

আসল চা যত দিন যাবে তত স্বাদ নষ্ট হতে থাকবে। কিন্তু নকল চা মাসের পর মাস গেলেও স্বাদ ও গন্ধ একইরকম থাকবে। আপনার কেনা গ্রিন টি যদি বানানোর পরে তেঁতো, পানসে, বা একঘেয়ে স্বাদ পান, গন্ধটাও যদি হয় সেরকম, বুঝে নিবেন নকল বা লো কোয়ালিটির চা কিনেছেন।

চায়ের রংঃ আগেই বলেছি আসল চা পাতার রং অসাধারণ হবে। সেটি ছিল কাঁচা অবস্থার কথা। এবারে জানুন চা ফোটানোর পরে রংয়ের পরিবর্তন কিরকম হবে সে সম্পর্কে। অরিজিনাল গ্রিন টি পাতা গরম জলে প্রথমে জলপাই সবুজ রং ধারণ করবে। কিছুক্ষণ পরে রং পরিবর্তন হয়ে হালকা সবুজ রংয়ে ফেরত আসবে, যেমনটি কাঁচা পাতার ছিল৷ যেসব গ্রিন টি-র প্রসেসিংয়ে ত্রুটি থাকে, সেগুলো ফোটানোর পরে বাদামি বা কালচে হয়ে যায়। পরবর্তীতে রংয়ের পরিবর্তন হয় না।

চা পাতার মেয়াদঃ গ্রিন টি কেনার ক্ষেত্রে মেয়াদ হচ্ছে বেশ চ্যালেঞ্জিং একটি ব্যাপার। সাধারণত এই চায়ের চাষ হয় প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে। উৎপাদনকৃত চা উৎপাদনের সময় থেকে ৬-১২ মাসের বেশি রাখা যায় না। আসল উৎপাদনকারী বা বাগানীদের কাছ থেকে সরাসরি চা কিনলে মেয়াদ ঠিক থাকে।

কিন্তু দোকানের চা-তে মেয়াদ ঠিক থাকে না। প্যাকেটের গায়ে যে মেয়াদটা লেখা থাকে সেটি আসলে রি-সেলার কবে চা প্যাকেটজাত করেছে সেই তারিখ। রি-সেলারের কাছে পৌঁছানোর আগে গ্রিন টি কয়েক হাত ঘুরে আসে। যতদিনে রি-সেলার বা খুচরা ব্যবসায়ীর হাতে আসে, ততদিনে চায়ের মেয়াদ শেষের কোঠায় চলে যায়। তখন বিক্রির জন্য বাধ্য হয়ে বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে, মেশিনে প্রসেস করে চায়ের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

স্বাদ ও গন্ধঃ স্বভাবতই আসল গ্রিন টি-র স্বাদ ও গন্ধ নকলটির চাইতে আলাদা হবে। নকল চা খেতে স্বাদ লাগবে না, কোন উপকারও হবে না। আসল গ্রিন টি-র স্বাদ একদম আলাদা, মুখে দিলে বিভিন্ন রকমের স্বাদ পাওয়া যাবে। স্মুদিনেসের সাথে আসবে সতেজতা, চনমনে ভাব।

রূপচর্চায় গ্রীন টি এর ব্যবহার

গ্রীন টি’র সাথে আমরা সবাই মোটামুটি পরিচিত। তবে একে অন্য সব সাধারণ পানীয়ের কাতারে ফেললে আপনি ভুল করবেন। নিয়মিত গ্রীন টি পানে বার্ধক্যের ছাপকে ঘুচিয়ে ত্বকের জৌলুস ফিরিয়ে আনে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। এছাড়াও গ্রীন টি তে রয়েছে আরো অসংখ্য গুনাগুণ। এমনকি গ্রীন টি তে থাকা এই উপকারী গুণ গুলোর জন্য এখন বিখ্যাত বিউটি ব্র্যান্ড গুলো তাদের পণ্যে গ্রীন টির উপাদান সংযোজন করছে। তাহলে আসুন এখন জেনে নেয়া যাক রূপচর্চায় গ্রীন টি এর ব্যবহার সম্বন্ধেঃ

০১। গ্রীন টি খুব ভালো টোনার হিসেবে কাজ করে। টোনার তৈরির জন্য ১ কাপ পানিতে ৫ চা চমচ গ্রীন টি, ১ চা চমচ পুদিনা পাতা ১০ মিনিট ফুটান। তারপর ঠান্ডা করে ছেঁকে নিয়ে একটি স্প্রে বোতলে সংরক্ষণ করূন। এই টোনার টি দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করূন। এটি ত্বকের চুলকানি ও প্রদাহ দূর করতে খুব উপকারী।

০২। গ্রীন টি তে রয়েছে এক ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট যা বার্ধক্যের গতিকে ধীর করে এবং আয়ু বাড়ায়।

০৩। চোখের ফোলা ভাব এবং চোখের নীচের ডার্ক সার্কেল কমাতে ব্যবহার করা গ্রীন টি এর দুটি ব্যাগ ২ ঘন্টা ফ্রীজ এ রেখে, ঠান্ডা করে চোখ বন্ধ করে এর উপর ১০ মিনিট রাখুন।

০৪। ড্রাই গ্রীন টির পাতা মধুর সাথে মিক্স করে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা যায় যা লোমকুপের ময়লা এবং মৃত কোষ দূর করে ত্বক কে নরম ও মসৃণ করে।

০৫। ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে গ্রীন টি ডিওডোরেন্ট হিসেবে ভালো কাজ করে। গোসলের পর ঠান্ডা গ্রীন টি আন্ডারআর্ম এ লাগালে দুর্গন্ধ দূর হবে। ঠিক এমনিভাবে পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

০৬। অর্ধেক কলা, ১ চা চমচ গ্রীন টি , ১ চা চমচ মধু এবং ১ চা চমচ টক দই ভালো মতো মিশিয়ে মুখে লাগান। শুকালে ধুয়ে ফেলুন। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য খুব ভালো ময়েশ্চারাইজিং মাস্ক হিসেবে কাজ করে।

০৭। নিয়মিত গ্রীন টি পান মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এটি ওরাল ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে ডেন্টাল ক্যাভিটিস প্রতিরোধ করে।

০৮। গ্রীন টি চুলের জন্য খুব উপকারী। ৩-৪ টি গ্রীন টি ব্যাগ ১ লিটার পানিতে এক ঘণ্টা ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিন। এরপর চুল শ্যাম্পূ এবং কন্ডিশন করার পর সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার চুলকে শক্ত ও মজবুত করে। চুল পড়া কমাতেও আপনি ব্যবহার করতে পারেন গ্রীন টি। এটি চুলের গোড়া শক্ত করে এবং হেয়ার ফলিকল উদ্দীপিত করে যা নতুন চুল গজাতে সহায়ক।

০৯। গ্রীন টি ব্রণের সমস্যা ট্রিটমেন্টের জন্য খুবই কার্যকরী। এটি ত্বকে কোন রকম ইরিটেশন বা ড্রাইনেস তৈরী করা ছাড়াই ব্রণ নির্মূল করে।

১০। গ্রীন টি মাউথওয়াশ হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। এতে আছে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিস এবং কোনো এলকোহল নেই যা রেগুলার মাউথওয়াশে থাকতে পারে।

গ্রিন টি কখন পান করবেন 

অনেকেই জানেন না গ্রিন টি কখন পান করতে হয়, সকালের নাশতায় এমন খাবার খাওয়া উচিত, যা থেকে শরীর শক্তি পায়। খালি পেটে গ্রিন টি পান করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। তাই সকালের নাশতায় স্বাস্থ্যকর কোনো খাবার খেতে হবে। এরপর গ্রিন টি পান করুন। রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে গ্রিন টি পান ওজন কমাতে সাহায্য করে। তবে অনেক সময় তা ঘুম নষ্ট করতে পারে, এ জন্য ঘুমানোর দুই ঘণ্টা আগেই গ্রিন টি পান করুন। এরপরও যদি ঘুমের সমস্যা হয়, তবে তা বাদ দিতে হবে এবং দিনের অন্য সময় তা পান করতে হবে।

ব্যায়াম করার আধা ঘণ্টা আগে গ্রিন টি পান করলে যেমন শরীরের মেটাবলিজম বাড়বে, তেমনি কর্মদক্ষতা বাড়বে। ফলে ওজন এবং মেদ কমাতে সাহায্য করবে। অনেকেই খাবার খাওয়ার পরপরই চা পান করেন। খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রিন টি পান করা উচিত নয়। খাবার খাওয়ার কমপক্ষে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা আগে অথবা পরে গ্রিন টি পান করুন।

সাবধানতা
  • সকালে খালি পেটে গ্রিন টি পান করা যাবে না।
  • খাওয়ার পরপরই গ্রিন টি পান করা যাবে না।
  • ঘুমের সমস্যা এড়াতে গভীর রাতে গ্রিন টি পান করা থেকে বিরত থাকুন।

ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম

শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রায় সবার জন্যই কঠিন হয়ে পড়ে। ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে শরীরে নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়। তাই ওজন কমাতে সঠিক ডায়েট প্ল্যান গ্রহণ করতে হবে। মেটাবলিজম বাড়িয়ে ফ্যাট বার্নে সহায়তা করে গ্রিন টি, যা ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গ্রিন টি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। কিডনি রোগের জন্য গ্রিন টি বিশেষভাবে উপকারী।

গ্রিন টির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, বি, বি৫, ডি, ই, সি, ই, এইচ সেলেনিয়াম, ক্রোমিয়াম, জিংক, ক্যাফেইন ও মেঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান৷ যা শরীরের ওজন ঝরাতে বেশ কার্যকর।

যারা মেদ ঝরাতে চান, তারা গ্রিন টিতেই ভরসা রাখেন। নিয়ম মেনে গ্রিন টি খেলে ক্যানসার, অ্যালজাইমার্স, স্ট্রোক ও ডায়াবিটিসের ঝুঁকি কমে। এমনকি, ত্বকে বয়সের ছাপ ঠেকিয়ে রাখতেও গ্রিন টি-র জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু ঠিক মতো উপকার পেতে কতটা গ্রিন টি খাওয়া জরুরি, জানেন কি? কেউ দিনে দু’ কাপ খান, কেউ কেউ আবার বেশি উপকার পেতে পাঁচ-ছ’কাপ এই চা খেয়ে ফেলেন। না জেনে বুঝেই কম বা বেশি খেয়ে ফেলছেন না তো? কিংবা দিনের এমন সময়ে খাচ্ছেন, যে সময়ে খাওয়াটা খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়।

গ্রিন টি এর সব গুণ যদি পেতে চান তাহলে বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। সকলেরই ধারণা গ্রিন টি খেলেই অতিরিক্ত মেদ ঝরবে তাড়াতাড়ি। তাই যখন তখন গ্রিন টি খাওয়া চলে। গ্রিন টি সাধারণত প্রতিদিন ২ থেকে ৫ কাপের মধ্যে খাওয়া চলে। তবে এই বিশেষ চা খাওয়ারও রয়েছে কিছু নির্দেশিকা। গ্রিন টি পান করার সময় কী কী একেবারেই করবেন না, তা জেনে নিন আগেঃ-

  • গ্রিন টি খাওয়ার সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা হল খাওয়ার ঠিক পরে এই ভেষজ চা খেলে শরীরের ক্যালোরি বার্ন হয় দ্রুত। খাবারের প্রোটিনগুলো খাওয়ার পরই তা হজম হয় না। সময় লাগে। খাবার খাওয়ার ঠিক পরেই যদি গ্রিন টি খাওয়া হয় তাহলে তা উল্টে ক্ষতি হতে পারে।
  • খালি পেটে কখনো গ্রিন টি খাবেন না। গ্রিন টি খেতে হলে দুটি ভারী খাবারের মাঝখানের বিরতিতেই খাওয়া উচিত। সবচেয়ে বেশি উপকার পেতে হলে কোনও ভারী খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা আগে কিংবা ২ ঘণ্টা পরে গ্রিন টি খেতে পারেন। এই চায়ে ক্যাফিন ও ক্যাটেচিন ভাল মাত্রায় থাকে, এই যৌগগুলি বিপাকহার বাড়াতে সাহায্য করে। তাই ওজন ঝরানোর জন্য গ্রিন টি খেতে হলে খাবারের মাঝে খাওয়াই শ্রেয়। খালি পেটে খেলে তেমন উপকার পাবেন না।
  • গ্রিন টি এর উপকারিতা পেতে হলে দিনে ৩-৫ বার গ্রিন টি খেতে পারেন, তবে তার বেশি নয়। গ্রিন টিতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যেমন থাকে, তেমনই কিন্তু ক্যাফিনও থাকে। বেশি গ্রিন টি খেলে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি, শরীরের অতি প্রয়োজনীয় পদার্থগুলিও বেরিয়ে যেতে পারে।
  • গ্রিন টি খাওয়ার সময় মাথায় রাখবেন একদম গনগনে গরম পানি নয়, হালকা গরম পানির গ্রিন টি পান করার চেষ্টা করুন। পানি যত বেশি গরম হবে, স্বাদও তত কমতে থাকবে। এছাড়া পেট ও গলায় ব্যথাও হতে পারে।
  • অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠেই গ্রিন টি খান। এটা ভুল ধারণা। সকালে হালকা ব্রেকফাস্টের পর বেশ কয়েক ঘণ্টার ফাঁকে গ্রিন টি খেতে পারেন। এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পনিফেনল, যা পাকস্থলীর অ্যাসিডের উত্‍পাদনকে আরও বাড়িয়ে তোলে। হজমের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। তাই সবসময় খাবার খাওয়ার পরই গ্রিন টি পান করুন।
  • আবার গ্রিন টি-র সঙ্গে মধু যোগ করে খান অনেকেই। চিনির বিকল্প হিসেবে স্বাদ যোগ করতে অনেকেই এই কাজ করেন। ফুটন্ত পানিতে গ্রিন টি ও মধু যোগ করলে তার পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। পানির অতিরিক্ত তাপ কমতে দিন, তারপর দারুচিনি, মধু যোগ করতে পারেন।
  • সকালে গ্রিন টি দিয়ে অনেকেই ওষুধ বা ট্যাবলেট খান। এর মতো ক্ষতিকারক কিছু হয় না। মেডিসিনের রাসায়নিক যৌগ গ্রিন টিয়ের সঙ্গে মিশে গিয়ে অ্যাসিডিটির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ট্যাবলেট যদি খেতেই হয়, তাহলে জল দিয়ে খান।
  • দ্রুত রোগা হওয়ার চক্করে দিনে ১০ থেকে ১২ বার গ্রিন টি খাওয়া স্বাস্থ্যকর বলে মনে করলে ভুল করবেন। কারণ কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। চা বা কফির মতোই গ্রিন টিতেও রয়েছে ক্যাফেইন। দিনে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করলে মাথাব্যথা, ক্লান্তিভাব, উদ্বেগ, বিরক্তিভাবের মতো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হতে পারে। দিনে ২-৩বার গ্রিন টি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
  • ফুটন্ত পানির মধ্য়ে বহুক্ষণ ধরে গ্রিন টি-র পাতা ফোটানো অধিকাংশেরই অভ্যাস। যতক্ষণ না রঙ গাঢ় হচ্ছে, ততক্ষণ ফুটিয়ে যান। প্রাকৃতিকভাবে স্বাদযুক্ত করতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চা বানিয়ে পান করতে পারেন।
  • গ্রিন টি পান করার সময় একেবারেই তাড়াহুড়ো করবেন না। অফিসের জন্য বের হওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করে চা পান করলে আজ থেকেই তা বন্ধ করুন। বিশ্রামের সময় চা পান করার গ্রিন টি খাওয়ার সর্বোত্তম উপায়।
  • একসঙ্গে ২টি গ্রিন টি ব্যাগ যোগ করবেন না। এমন অভ্যাস থাকলে আজ থেকেই সতর্ক থাকুন। অনেকেই মনে করেন, একসঙ্গে ২টি ব্যাগ ভিজিয়ে চা খেলে বেশি মাত্রায় ক্যালোরি বার্ন হবে। ওজন ঝরবে তড়তরিয়ে! প্রতিদিন ২টি করে গ্রিন টি ব্যাগ যোগ করলে হজমের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি হতে পারে।

দিনে কতবার গ্রিন টি খাওয়া উচিত

নানা উপকারের আশায় অনেকেই ঝোঁকেন গ্রিন টি এর দিকে। কিন্তু ঠিক মতো উপকার পেতে কতটা গ্রিন টি খাওয়া জরুরি, জানেন কি? কেউ দিনে দু’কাপ খান, কেউ কেউ আবার বেশি উপকার পেতে পাঁচ-ছয় কাপ এই চা খেয়ে ফেলেন। না জেনে বুঝেই কম বা বেশি খেয়ে ফেলছেন না তো? দিনে ৩-৫ বারের বেশি গ্রিন টি না খাওয়াই ভালো। বেশি গ্রিন টি খেলে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি, শরীরের অতি প্রয়োজনীয় পদার্থগুলোও বেরিয়ে যেতে পারে।

খালি পেটে গ্রিন টি খাবেন না। গ্রিন টি খেতে হলে দুটি ভারী খাবারের মাঝখানের বিরতিতেই খাওয়া উচিত। সবচেয়ে বেশি উপকার পেতে হলে কোনো ভারী খাবার খাওয়ার দু’ঘণ্টা আগে কিংবা দু’ঘণ্টা পরে গ্রিন টি খেতে পারেন। এই চায়ে ক্যাফিন ও ক্যাটেচিন ভালো মাত্রায় থাকে, এই যৌগগুলো বিপাকহার বাড়াতে সাহায্য করে। তাই ওজন ঝরানোর জন্য গ্রিন টি খেতে হলে খাবারের মাঝে খাওয়াই ভালো। খালি পেটে খেলে তেমন উপকার পাবেন না।

গ্রিন টি খেলে উল্টোপাল্টা খাওয়ার খিদে একটু কমবে, সেই সঙ্গে ওজনও কমবে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় খুব বেশি গ্রিন টি না খাওয়াই ভালো। এ ছাড়া ক্যাটেচিন নামক যৌগটি শরীরে আয়রন শোষণে বাধা দেয়। তাই রক্ত স্বল্পতার সমস্যা থাকলে এই চা এড়িয়ে চলাই ভালো।

সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার অপকারিতা

গ্রিন টি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু গ্রিন টি পান করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি সতর্কতা মেনে চলা উচিত। সকালে একদম খালি পেটে গ্রিন টি পান করবেন না। এতে বদহজম, অ্যাসিডিটির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। গ্রিন টি পান করলে ত্বকের গুণমান, মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় ও ব্যক্তি দীর্ঘ সময় সক্রিয় থাকে। গ্রিন টি-এর যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে।
সকালে-খালি-পেটে-গ্রিন-টি-খাওয়ার-অপকারিতা
মানুষ প্রায়ই ফিট থাকার জন্য সকালে ব্যায়ামের পরে খালি পেটে গ্রিন টি পান করেন, যা খুবই ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়। গ্রিন টি বিভিন্ন উপায়ে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ওজন হ্রাস থেকে রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ এবং এটি হজমে উন্নতি করে। গ্রিন টি পান করলে কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। এর উপকারের তালিকা খুবই দীর্ঘ। দিনে এক কাপ থেকে দু কাপ গ্রিন টি পান করা স্বাস্থ্যকর। তবে, কিছু লোক গ্রিন টি এত পছন্দ করে যে তারা দিন শুরু করেন এই গ্রিন টি দিয়ে।

আরও পড়ুনঃ

গ্রিন টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, নিয়মিত খেতে পারলে ত্বক, চুল সবই ভালো থাকে। কিন্তু খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়া কি ভালো, খালি পেটে গ্রিন টি পান করা শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কেননা, খালি পেটে শুধুমাত্র জল ছাড়া আর অন্য কোনও কিছুই খাওয়া উচিত নয়। কারণ খালি পেটে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার, লেবু, আদা , গোলমরিচ এই সব উপাদানই পেটকে উত্তেজিত করে তোলে। এর পর কিছু খেলে গ্যাস বা অম্বল হতে পারে। জেনে নিন সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খেলে যে সমস্যা হতে পারেঃ-

খালি পেটে গ্রিন টি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারেঃ গ্রিন টিতে ট্যানিন থাকে যা পেটে অ্যাসিড বাড়ায়। ফলে খালি পেটে খেলে পেটে ব্যথা করতে পারে। পেটে অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি হলে বমি বমি ভাব হতে পারে। খালি পেটে গ্রিন টি পান করলেও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। তাই খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়া উচিত নয়। এটি সর্বদা খাবারের পরে বা খাবার খাওয়ার সময় পান করা উচিত। পেপটিক আলসার বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য গ্রিন টি ভালো নয়।

রক্তাল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের গ্রীন টি খাওয়া উচিত নয়ঃ গ্রিন টিতে থাকা ক্যাফিন উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে। সুতরাং যারা উদ্বেগ ভুগছেন এমন লোকদের গ্রীন টি খাওয়া উচিত নয়। খালি পেটে মোটেও কিছু করা উচিত নয়। এতে উপস্থিত কেটচিন খাবার থেকে আয়রনের শোষণ কমিয়ে দেয়। জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট অনুসারে, আপনার যদি আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতা থাকে তবে আপনার খাবারের মধ্যে গ্রিন টি পান করা উচিত। এটি খাদ্য থেকে আয়রনের শোষণ বাড়ায়।

খালি পেট এই চা ক্ষতিকারকঃ আপনি যখনই খালি পেটে চা খাবেন, এতে উপস্থিত যৌগগুলি শরীর এবং রক্তকে প্রভাবিত করে। এজন্য আপনি যখন গ্রিন টি পান করবেন তখন এটির সঙ্গে অবশ্যই কিছু খান। এটি শরীরে উপস্থিত প্রোটিন হ্রাস করে। যারা খালি পেটে এটি চা খান তাদের আলসার এবং হাইপার অ্যাসিডিটির ঝুঁকি থাকে। খালি পেটে এটি গ্রহণ করে আপনার গ্যাস এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও, এর গ্রহণের ফলে পিত্তর রস গঠন এবং কার্যকারিতা প্রভাবিত হয়। এর ফলে বমি বমি ভাব হতে পারে।

হার্ট বিট এবং রক্তচাপ বাড়ায়ঃ গ্রিন টিতে ক্যাফিন থাকে, যা কর্টিসল এবং অ্যাড্রেনালিনের মতো স্ট্রেস হরমোনগুলি প্রকাশ করে যা রক্তচাপ এবং হার্টের সমস্যা বাড়ায়, তাই গ্রিন টি হৃদরোগীদের পক্ষে ভালো নয়। আপনার হার্টবিট যদি দিনে কয়েকবার বেড়ে যায় এবং রক্তচাপও ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তবে এই ধরনের লোকদের কম খাওয়া উচিত।

পেট ব্যথা হতে পারেঃ আপনি যখন একেবারে খালি পেটে গ্রিন টি খাবেন তখন এতে থাকা ট্যানিন উপাদান আপনার পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে তুলবে। যে কারণে দেখা দেবে পেট ব্যথা। সেইসঙ্গে বাড়বে কোষ্ঠকাঠিন্য। পেটে সৃষ্ট অতিরিক্ত অ্যাসিডের কারণে দেখা দিতে পারে বমিভাব বা বমির মতো সমস্যাও।

আলসার বাড়িয়ে তোলেঃ যাদের আগে থেকেই পেপটিক আলসার বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা রয়েছে তাদের সকালে গ্রিন টি না পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর কারণ হলো, সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খেলে তাদের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।

আয়রন শোষণের ক্ষমতা কমে যায়ঃ আমাদের সুস্থ থাকার জন্য শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন পৌঁছানো জরুরি। কিন্তু আপনি যদি খালে পেটে গ্রিন টি খান তবে তা আয়রন শোষণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যে কারণে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তাদের গ্রিন টি থেকে দূরে থাকাই ভালো।

রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারেঃ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে খালি পেটে গ্রিন টি খাবেন না। কারণ খালি পেটে গ্রিন টি খেলে বেড়ে যেতে পারে রক্তচাপ। এই চায়ে থাকা ক্যাফেইন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলোকে উদ্দীপিত করে। যা অ্যাড্রেনালিন এবং কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোন রিলিজ করে। যে কারণে বেড়ে যায় হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ। এটি হৃদরোগে আক্রান্তদের জন্য ক্ষতিকর।

গ্রিন টি কখন খাওয়া সবচেয়ে উপকারী

শরীরের পক্ষে গ্রিন টি বেশ উপকারী। বিশেষ করে যাঁরা মেদ ঝরাতে চান, তাঁরা গ্রিন টিতেই ভরসা রাখেন। নিয়ম মেনে গ্রিন টি খেলে ক্যানসার, অ্যালজাইমার্স, স্ট্রোক ও ডায়াবিটিসের ঝুঁকি কমে। যদি খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস থাকে। তাহলে আজই সেই অভ্যাস পাল্টে ফেলুন। এমনকি, ত্বকে বয়সের ছাপ ঠেকিয়ে রাখতেও গ্রিন টি উপকারী। কিন্তু ঠিক মতো উপকার পেতে কতটা গ্রিন টি খাওয়া জরুরি জানেন কি?

কেউ দিনে দু’কাপ খান, কেউ কেউ আবার বেশি উপকার পেতে পাঁচ-ছ’কাপ এই চা খেয়ে ফেলেন। না জেনে বুঝেই কম বা বেশি খেয়ে ফেলছেন না তো। কিংবা দিনের এমন সময়ে খাচ্ছেন, যে সময়ে খাওয়াটা খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়। আর যদি খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস থাকে। তাহলে আজই সেই অভ্যাস পাল্টে ফেলুন।

কারণ গ্রিন টি খেতে হলে দুটি ভারী খাবারের মাঝখানের বিরতিতেই খাওয়া উচিত। সবচেয়ে বেশি উপকার পেতে হলে কোনও ভারী খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা আগে কিংবা ২ ঘণ্টা পরে গ্রিন টি খেতে পারেন
এই চায়ে ক্যাফিন ও ক্যাটেচিন ভাল মাত্রায় থাকে, এই যৌগগুলি বিপাকহার বাড়াতে সাহায্য করে। তাই ওজন ঝরানোর জন্য গ্রিন টি খেতে হলে খাবারের মাঝে খাওয়াই শ্রেয়।

গ্রিন টি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে পরিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দিনে তিন কাপের বেশি খাওয়া উচিত নয়। এর বেশি গ্রিন টি খেলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যেতে পারে। বেশি পরিমাণ গ্রিন টি শরীর থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান বের করে দিতে পারে। যেহেতু সকালে মেটাবলিজমের মাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে।

তাই সকালে উঠে গ্রিন টি মোটেও উপকারী নয়। আবার সন্ধেবেলা যখন আমাদের মেটাবলিজমের মাত্রা কমে যায় তখন গ্রি টি মেটাবলিজম মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। গ্রিন টি খাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় সকাল ১০-১১টা মধ্যে বা সন্ধেবেলা।

ওজন কমাতে গ্রিন টি কখন খাওয়া উচিত

অনেকেই ভাবেন গ্রিন টি পান করলেই ওজন কমে। কিন্তু গ্রিন টি কিভাবে ও ঠিক কোন সময় পান উচিত, সে ব্যাপারে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে গ্রিন টি পান করেন। আবার অনেকে ভাবেন যে বেশি বেশি গ্রিন টি পান করলেই দ্রুত শরীরের ওজন কমানো সম্ভব। কিন্তু এসব ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ও শরীরের পক্ষেও ভালো নয়। তাই জেনে নিন ওজন কমাতে গ্রিন টি কখন খাওয়া উচিতঃ-

আরও পড়ুনঃ

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরই চা পান করলে শরীরে ডিহাইড্রেশন ও গ্যাস্ট্রিক আলসারের সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই সকালে স্বাস্থ্যকর নাস্তা খাওয়ার পর গ্রিন টি পান করা যেতে পারে। অনেকে আবার দুপুরে খাওয়ার পরই কিংবা তার আগে গ্রিন টি পান করেন। তাতে বিশেষ উপকার হয় না। গ্রিন টিয়ের উপকারিতা ভালোভাবে পেতে হলে খাওয়ার অন্তত ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর বা আগে তা পান করা উচিত।

শরীরে ওজন কমানোর জন্য রাতে ঘুমোনোর ঘণ্টা দুয়েক আগেও গ্রিন টি পান করা যেতে পারে। আবার ব্যায়াম করার আধাঘণ্টা আগে গ্রিন টি পান করলেও উপকার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ঠিক কতটা পরিমাণ খেতে হবে, তাও জানা জরুরি। ওহায়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, পানির মতো করে বেশি বেশি গ্রিন টি পান করা উচিত নয়।

গ্রিন টি বানানোর নিয়মঃ ৫ গ্রাম বা এক চা চামচ গ্রিন টি নিতে হবে। তারপর পানি গরম করে স্টিল বা কাচের পাত্রে কিছুক্ষণ রেখে সামান্য ঠান্ডা করে নেওয়া জরুরি। এরপর তাতে চা পাতা যোগ করে ৩ মিনিট ঢেকে রেখে দিতে হবে। চা পাতা পুরোপুরি ভিজে গেলে তা পান করতে হবে। কেউ চাইলে দারচিনি গুঁড়া, এলাচ গুঁড়া, আমলা গুঁড়া দিতে পারেন। এর সঙ্গে আমলার রস বা আদার রসও দেওয়া যেতে পারে।

নিয়মিত গ্রীন টি খাওয়ার উপকারিতা

গ্রিন টি আমরা অনেকেই খেয়ে থাকি। আবার অনেকেই আছেন যারা গ্রিন টি খান না কিন্তু গ্রিন টির সাথে পরিচিত। সঠিক নিয়মে গ্রিন টি খাওয়ার রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা। নিয়মিত গ্রিন টি খাওয়ার ফলে বার্ধক্যের ছাপ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে থাকে। গ্রিন টি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনে। গ্রিন টি সঠিক নিয়মে খেতে পারলে যেটি শরীরের জন্য দারুন উপকারী তা হলো বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করা সহ ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিয়মিত গ্রীন টি খাওয়ার উপকারিতা গুলো জেনে নেয়া যাকঃ-

বার্ধক্যের সমস্যা প্রতিরোধ করেঃ গ্রিন টিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের বলি রেখা দূর করে বার্ধক্যের গতিকে ধীর করে থাকে। অর্থাৎ নিয়মিত গ্রিন টি খাওয়ার ফলে বয়সের ছাপ পড়েনা।

ক্যানসার প্রতিরোধ করে থাকেঃ গ্রিন টিতে রয়েছে পলিফেনল নামের এক ধরনের উপাদান। এটি শরীরের ক্রমবর্ধমান ক্যান্সার কোষগুলোকে বৃদ্ধি করা রুখে দিয়ে থাকে। তাই নিয়মিত গ্রিন টি সেবন করার মাধ্যমে ক্যান্সারের সমস্যাটা থেকে অনেক দূরে থাকা যায়।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ নিয়মিত গ্রিন টি খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ হবার সম্ভাবনা কমে যায়। অর্থাৎ গ্রিন টি খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি হার্ট এর রোগের ঝুঁকি ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে সক্ষম। তাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য গ্রিন টি খাওয়া যেতে পারে।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করেঃ গ্রিন টি নিয়মিত পান করার ফলে মুখের ভিতরের ওরাল ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে থাকে। তাই গ্রিন টি খেলে মুখের দুর্গন্ধ খুব সহজেই দূর হয়।

ত্বকের সুরক্ষায়ঃ গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বকের কোলাজানকে উদ্দীপ্ত করে যা ত্বকের টানটান ভাবকে ধরে রাখে। আর এ কারণেই গ্রিন টি বার্ধক্যের গতিকে ধীর করে এবং আয়ু বাড়ায়। এর থিয়ানিন নামে অ্যামাইনো এসিড দুশ্চিন্তা, অবসাদ ও হতাশা কমাতে পারে অনেকটাই। নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে ত্বকের রোদে পোড়াভাব কমে, চুল ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। গ্রিন টি ন্যাচারাল টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ব্যবহৃত গ্রিন টিও চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূর করতে দারুণভাবে কাজ করে।

ব্রণের সমস্যা দূর করেঃ গ্রিন টি ব্রণ দূর করতে দারুন কার্যকর একটি উপাদান। এটিই সাধারণত ত্বকে কোনরকম ইরিটেশন বা ড্রাইনেস তৈরি করা ছাড়াই ব্রণের সমস্যা নির্মূল করে থাকে।

ত্বক নরম ও মসৃণ করে থাকেঃ গ্রিন টির পাতা ও মধুর মিক্স স্কার্ফ হিসেবে ব্যবহার করলে লোমকূপের ময়লা ও মৃত কোষ দূর করে ত্বককে নরম ও মসৃণ করে তুলতে সাহায্য করে থাকে।তাছাড়া ত্বক থেকে অবাঞ্চিত বিভিন্ন ধরনের দাগ ছোপ দূর করতেও গ্রিন টি কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।

চুলকানি ও প্রদাহ দূর করে থাকেঃ গ্রিন টি খুবই ভালো টোনার হিসেবে কাজ করে থাকে। গ্রিন টি দিয়ে টোনার তৈরি করে দিনে দুই থেকে তিন বার ব্যবহার করলে ত্বকের চুলকানি ও প্রদাহ দূর করতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।

চুল পড়া প্রতিরোধ করে থাকেঃ তিন থেকে চারটি গ্রিন টি ব্যাগ এক লিটার পানিতে এক ঘন্টা ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। তারপরে চুলে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনিং করার পর সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ব্যবহারে আপনার চুল ঘন ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তাছাড়া চুলের আগা শক্ত করে চুল পড়া প্রতিরোধ করার জন্য এই প্যাকটি দারুন ভূমিকা পালন করবে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ নিয়মিত গ্রিন টি সেবন করার ফলে শরীরের বাজে কোলেস্টেরলের সংখ্যা কমতে শুরু করে এবং শরীরের ওজন কমে। তাই যাদের শরীরে বাড়তি মেদ রয়েছে তারা চাইলে নিয়মিত গ্রিন টি খেতে পারেন। এ ছাড়া সবুজ চা মেটাবলিজম বাড়িয়ে ফ্যাট বার্নে সহায়তা করে যা ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

হার্টের সুরক্ষায়ঃ গ্রিন টি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। কিডনি রোগের জন্যও গ্রিন টি বিশেষভাবে উপকারী। রক্তে কোলেস্টোরেলের মাত্রা কমাতে গ্রিন টি একটি জাদুকরি পানীয়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ গ্রিন টি খাওয়ার মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। কেননা এর উপাদান ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। যার মাধ্যমে ডায়াবেটিস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

আদা দিয়ে গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা

আপনি কিভাবে গ্রিন টি খাবেন সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যপার। তবে আদা দিয়ে গ্রিন টি খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। গ্রিন টি আমরা যেভাবেই খাই তা আমাদের শরীরের জন্য ভালো। গ্রিন টি আদা দিয়ে খেলে আমরা যে সকল উপকার পেয়ে থাকি, যদি আমাদের অতিরিক্ত কাশি হয় তাহলে আদা দিয়ে গ্রিন টি খেলে আমাদের কাশি কমে যায়।

যাদের গলায় খুসখুস করে তাদের জন্য উপকারী এবং যাদের গলা ব্যাথার সমস্যা রয়েছে এভাবে গ্রিন টি খেলে গলা ব্যথা কমে যায়। আদা দিয়ে গ্রিন টি খেলে বা পান করলে আমাদের শরীরের নানান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গ্রিন টি আর আদা একসঙ্গে খেলে আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর হয়। যাদের শ্বাসকষ্ট সমস্যা রয়েছে তাদের শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে।

গ্রিন টি আর আদা একসঙ্গে খেলে সর্দি কমে যায়। সাথে লেবু আর গ্রিন টি একত্রে খেলে শরীরের অনেক উপকার হয়ে থাকে। ক্যান্সার রোগীর জন্য গ্রিন টি আর আদা একটি উপকারী পানীয়। যা ক্যান্সার রোগীকে আরাম প্রদান করতে সাহায্য করে।

গ্রিন টি এর সাথে মধু মিশিয়ে খেলে কি হয়

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন গ্রিন টি এর সাথে মধু মিশিয়ে খেলে কি হয়, বা খাওয়া যাবে কি? ওজন কমাতে শুধু গ্রিন টি বা গরম জলে মধু খেলে চলবে না। আপনাকে জোর দিতে হবে ওয়ার্ক আউটের উপর। ওজন কমাতে গেলে নিয়মিত যোগব্যায়াম করতে হবে। এর পাশাপাশি আপনি গ্রিন টি'তে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। গ্রিন টি ও মধু, দুটোই স্বাস্থ্যকর। সর্বোপরি এই দুই উপাদানই ওজন কমাতে সাহায্য করে।

অনেকেই গ্রিন টিয়ের কষা এড়াতে এতে মধু মিশিয়ে খান। এতে করে আদতে কোনও উপকারিতা মিলে? তার চেয়ে বড় প্রশ্ন গ্রিন টিয়ের মধ্যে মধু মিশিয়ে পান করলে কি ওজন কমানো যায়? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

সারাদিনে ৩-৪ কাপ গ্রিন টি আপনি পান করতে পারেন। তবেই আপনার কোমর পাতলা হবে। একইভাবে, অনেকেই দিনের শুরুতে মধু মেশানো গরম জল পান করেন। এই টোটকাও ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওজন কমানো ছাড়াও মধু ও গ্রিন টি আরও অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। এটি মেটাবলিজম রেট বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং মানসিক অবসাদ কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু গ্রিন টিয়ের সঙ্গে মধু মেশালে একই উপকারিতা পাওয়া যায়? এই উত্তরই অনেকের কাছে অজানা।

গ্রিন টিয়ের মধ্যে ক্যাটেচিন রয়েছে। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি এপিগালোকাটেচিন গ্যালেট (EGCG), যা বিপাকীয় হার বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া গ্রিন টিয়ের মধ্যে ক্যাফেইন রয়েছে। এটি ওয়ার্কআউট করার কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে। কফির চাইতে গ্রিন টিতে ক্যাফেইনের পরিমাণ কম, কিন্তু ওজন কমানোর জন্য উপকারী। যখনই ক্যাটেচিন ও ক্যাফেইন একসঙ্গে মিশে যায়, তখন এটি শক্তি উৎস হয়ে দাঁড়ায় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।

অন্যদিকে, দিন শুরু করার জন্য মধুর চেয়ে সেরা কিছু নেই। তাছাড়া এটি চিনির ভাল বিকল্প। এক চামচ মধু আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় না। পাশাপাশি ওবেসিটির ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া মধু স্ট্যামিনা বাড়াতে সাহায্য করে। গরম পানীয়তে মধু মেশালে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং, ওজন কমাতে আপনি গ্রিন টিয়ের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন।

কিন্তু শুধু গ্রিন টি বা গরম জলে মধু খেলে চলবে না। আপনাকে জোর দিতে হবে ওয়ার্ক আউটের উপর। ওজন কমাতে গেলে নিয়মিত যোগব্যায়াম করতে হবে। এর পাশাপাশি আপনি যদি গ্রিন টি’তে মধু মিশিয়ে খান, তাহলে এটি হতে পারে গেম গেঞ্জার। অর্থাৎ, গ্রিন টি’তে মধু মিশিয়ে খেলে আপনি চটজলদি ওজন কমাতে পারবেন।

দিনের শুরুতে এই পানীয় পান করলে, এটি আপনার দেহে জমে থাকা সমস্ত দূষিত পদার্থ বের করে দেবে। এতে যেমন ওজন কমবে, তেমনই রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়বে। পাশাপাশি ত্বকে আসবে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা।

গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক নিয়ম

বিভিন্ন ধরনের চায়ের মধ্যে গ্রিন টি এর উপকারিতা বা সবুজ চা মানবদেহের জন্য বিশেষ উপকারী। গ্রিন টির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, বি, বি৫, ডি, ই, সি, ই, এইচ সেলেনিয়াম, ক্রোমিয়াম, জিংক, ক্যাফেইন, মেঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। এ চা নিয়মিত পান করার অভ্যাস মানবদেহের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।

এটি শরীরে এনার্জি এবং স্ট্যামিনা ধরে রাখে। সবুজ চা পান আমাদের হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। দেহের পানিশূন্যতা রোধ করতেও এ চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম গুলো কি কি জেনে নিনঃ-

১। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রিন টি খাবেন না। অনেকে মনে করেন, খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রিন টি খেলে খাবারের অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রিন টি শোষণ করে নেবে। কিন্তু আদতে খাবারে যে প্রোটিন থাকে, তা হজমের আগেই গ্রিন টি খেলে হজমপ্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

২। খুব গরম অবস্থায় গ্রিন টি খাবেন না। তাতে আপনার ঠোঁট, জিহ্বা বা পাকস্থলীর ক্ষতি হতে পারে। সেরা ফল পেতে আট থেকে দশ মিনিট অপেক্ষা করে গ্রিন টি খান

৩। গ্রিন টি যেহেতু ডিটক্স অনেকে মনে করেন সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়া উচিত। কিন্তু একেবারে খালি পেটে খাওয়ার চেয়ে হালকা কিছু খেয়ে শরীরের মেটাবলিজম সিস্টেম চালু করে তারপর গ্রিন টি খেলে ভালো ফল দেবে, নতুবা অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। সবচেয়ে ভালো হলো দুবার খাবারের মাঝামাঝি খাওয়া।

৪। অনেকে গ্রিন টির সঙ্গে মধু মিশিয়ে খান। কেননা, চিনি অস্বাস্থ্যকর। ‘সাইলেন্ট হোয়াইট পয়জন’। তবে গরম অবস্থায় মধু মেশালে এর কার্যকারিতা অনেকটাই কমে যায়। তাই একান্তই মধু মেশালে পান করার আগে উষ্ণ গরম অবস্থায় গ্রিন টিতে মধু মেশাবেন।

৫। গ্রিন টির সঙ্গে ওষুধ খাবেন না। কেননা, বিভিন্ন ওষুধের উপাদান গ্রিন টির সঙ্গে মিশে জটিল উপাদান তৈরি করে। তাতে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।

৬। গ্রিন টি স্বাস্থ্যকর। তাই বলে আপনি যত খুশি তত গ্রিন টি খেতে পারেন না। চা বা কফির মতো গ্রিন টিতেও ক্যাফেইন থাকে। আর অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণে অনিদ্রা, মাথাব্যথা, উদ্বেগ, আলসেমি—এগুলো চেপে বসতে পারে। আয়রন শোষণের পরিমাণও কমিয়ে দেয় ক্যাফেইন। দিনে দুই থেকে তিন কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন।

৭। বাজারে এখন নানা ফ্লেভারের গ্রিন টি পাওয়া যায়। তবে ‘ন্যাচারাল ফ্লেভার’ গ্রিন টি খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।

৮। একটা গ্রিন টির কাপে দুটি টি-ব্যাগ মেশাবেন না। এতে অ্যাসিডিটির আশঙ্কা বাড়বে, হজমেও গোলযোগ হতে পারে।

৯। সকালে উঠেই খালি পেটে, দুপুর ১২টায়, সন্ধ্যায় খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা পর বা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগে গ্রিন টি খাবেন না। সম্ভব হলে দুবার ভারী খাবারের মাঝখানে গ্রিন টি খাবেন।

১০। গ্রিন টির সঙ্গে গুঁড়া দুধ, চিনি বা অন্য কোনো মসলা, লেবু কিছুই মেশাবেন না।

গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক সময়

আপনি কি জানেন, গ্রিন টি কখন খাওয়া উচিত আর কখন উচিত নয়? গ্রিন টি এমন একটি চা যেটি ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী। যারা স্বাস্থ্য সচেতন ডিটক্স হিসেবে নিঃসন্দেহে তাদের প্রথম পছন্দ গ্রিন টি। গ্রিন টি খেতে অনেক বেশি ভালো তা নয় বরং এই চা এর স্বাদ ভালো না বললেই চলে তারপরও যারা অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন এবং ওজন কমাতে চায় এমন মানুষের কাছে গ্রিন টি অনেক বেশিই গুরুত্বপূর্ণ।

এমনকি এই চা এর স্বাদ ভালো না হলেও আমার নিজেরও শুধুমাত্র একারণেই পছন্দ কারণ আমি আমার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে খুবই সচেতন। আর কিছু পেতে হলে তো কিছু হারাতে হবেই। তাই স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আমি স্বাদের দিকটা এতটা চিন্তা করি না।

গ্রিন টি খাচ্ছেন ঠিকই স্বাস্থ্যের কথা ভেবে কিন্তু কখন খাবেন তার ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানেন তো আপনি? যদি গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক সময়ই না জানলেন তবে খেয়ে তো আপনার তেমন উপকার হবেই না বরং ক্ষতির সম্মুখীনই হবেন আপনি। এই ভুলটা যেন কেউ না করেন সেজন্যই আজ আমার এই  আর্টিকেল টি লিখা। গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক সময় জেনে নিন-

নাস্তা করার পরঃ সকালে উঠে অবশ্যই নাস্তায় এমন খাবার খাওয়া উচিত যাতে করে সারাদিন আপনার শরীর অনেক ভাল থাকে। তাই সকালে আপনি অবশ্যই চা খাবেন না খালি পেটে। এতে দেখা যাবে আপনার ডিহাইড্রেশন এর সমস্যা হবে। আর তাছাড়া খালি পেটে গ্রিন টি খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কিংবা আলসারও হতে পারে। সুতরাং সকালের নাস্তায় হেলদি কোন খাবার খান এবং এরপর গ্রিন টি খান।

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেঃ আপনি যদি ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি খান তবে তার জন্য সঠিক সময় হল রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক ২ ঘন্টা আগে। রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে গ্রিন টি আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করবে আর এটা অনেক বেশি কাজ করবে ততক্ষন পর্যন্ত যতক্ষণ না আপনি অন্যকিছু খাবেন। রাতে তো আর আপনি অন্যকিছু খান না তাই ভালো করে কাজ করতে পারে গ্রিন টি। অনেক সময় চা আপনার ঘুম নষ্ট করে এজন্যে চা পান করার সাথে সাথে ঘুমাতে না গিয়ে ঘুমানোর ২ ঘণ্টা আগেই পান করুন।

ব্যায়াম করার পূর্বেঃ ব্যায়াম করার আধাগন্টা আগে গ্রিন টি পান করুন। যদি আপনি আধাঘন্টা আগে পান করেন তবে এতে করে আপনার কর্মক্ষমতা বাড়বে। এমন কি এটা আপনার ওজন এবং মেদ কমাতে সাহায্য করবে।

খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে অথবা পরেঃ অনেকেই খাবার খাওয়ার পরপরই চা পান করেন। খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই গ্রিন টি পান করা উচিত নয়। খাবার খাওয়ার কমপক্ষে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা পরে অথবা আগে গ্রিনটি পান করুন।
 

জানলেন তো কোন কোন সময়গুলো সঠিক গ্রিন টি পান করার জন্য? এবার আমি শেয়ার করব কোন সময়ে গ্রিন টি পান করবেন না-
  • সকালে খালি পেটে কখনোই গ্রিন টি পান করবেন না।
  • খাওয়ার সময়গুলোতে গ্রিন টি পান করবেন না। যেমন রাতের খাবার অথবা দুপুরের খাবারের সময়।
  • একদিনে ২-৩ কাপের বেশি পান করবেন না।
  • গ্রিন টি এর সাথে গুঁড়া দুধ কিংবা চিনি মেশাবেন না।
  • ঘুমের সমস্যাজনিত কারণ এড়িয়ে যেতে গভীর রাতে গ্রিন টি পান করবেন না।
  • সুতরাং জেনে নিন গ্রিন টি পান করার সঠিক সময় এবং নিজেকে করে তুলুন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।

গ্রিন টি কাদের খাওয়া উচিত নয়

স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসাবে এখন বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয় গ্রিন টি। চীনের এই হারবাল চা এশিয়া ছাড়িয়ে পশ্চিমা বিশ্বেও নাম কামিয়েছে। বিশেষ করে ক্যালোরি ও ওজন কমাতে দারুণ কার্যকর ও অতুলনীয়ের পরিচিতি পেয়েছে। এই চা সার্বিক অর্থে উপকারী। যারা গ্রিন টি পান করেন তাদের মৃত্যুঝুঁকি ৫ শতাংশ হারে কমে আসে। কিন্তু কোনো কিছুই বেশি বেশি ভালো নয়।

এই চায়েরও খারাপ দিক রয়েছে। বিশেষ কিছু রোগ ও শারীরিক অবস্থার ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকর হতে পারে। এখানে জেনে নিন, বেশি মাত্রায় গ্রিন টি কাদের খাওয়া উচিত নয়ঃ-

গর্ভবতী নারীঃ গবেষণায় বলা হয়, যারা গর্ভবতী অথবা গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন, তাদের অতিমাত্রায় গ্রিন টি পান করা উচিত নয়। এতে রয়েছে ক্যাফেইন। আর এই উপাদান খুব সহজে রক্তের মাধ্যমে ভ্রূণের রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে।

ক্যাফেইন বড়দের দেহে যত সহজে সহনীয় হয়, ভ্রুণের সঙ্গে ততটা নিশ্চয়ই হবে না। তাই এ সময় গ্রিন টি এড়িয়ে চলাই ভালো। শুধু গ্রিন টি নয়, ক্যাফেইনপূর্ণ যেকোনো কিছু এড়িয়ে চলতে হবে।

রক্তস্বল্পতা থাকলেঃ দেহে আয়রনের ঘাটতি থাকলে গ্রিন টি না খাওয়াই উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এমনিতেই এই পানীয় দেহকে আয়রন গ্রহণের সক্ষমতা কমিয়ে দেয়।কাজেই এ সময় গ্রিন টি খেলে আয়রনের আরো ঘাটতি দেখা দেবে।

ইনসমনিয়াঃ গ্রিন টি-তে থাকে ফিল্টারড ক্যাফেইন। ঘুম আতে দেহে যেসব রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়, ক্যাফেইন তাতে বাধ সাধে। কাজেই যাদের ইনসমনিয়া রয়েছে, তাদের জন্য এই চা রীতিমতো হিতে বিপরীত ঘটাবে। তাই গ্রিন টি থেকে দূরে থাকুন যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে।

ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীঃ আধুনিক যুগে অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আপনাকে গ্রিন টি পান করতে উৎসাহিত করবেন। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের রোগীদের এই চা থেকে দূরে থাকতে বলেন। কারণ গ্রিন টি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এতে ঝিমঝিম ভাব, উদ্বেগ আর অবসাদ ভাব চলে আসে।

গ্রীন টি এর অপকারিতা

চা বা গ্রিন টি জাতীয় পানীয়ের অনেক উপকারিতা বিদ্যমান থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে একটু মেনে চলতে হয়। যেমন চা হোক বা গ্রিন টি কোনটাই অতিরিক্ত পান করা ভাল না। আর খাবার খাওয়ার আগে বা পরে গ্রিন টি খাওয়া ঠিক নয়। এতে হজমের সমস্যা দেখা দেয়। আর ঘুমাতে যাওয়ার আগে তো গ্রিন টি একদমই খাওয়া ভাল না। এতে করে আরামের ঘুম হারাম হয়ে যাবে।
গ্রীন-টি-এর-অপকারিতা
সুতরাং দেখবেন চা বা গ্রিন টিতে যেমন স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে, কিছু নিয়মও মেনে খাওয়া উচিত। তাহলে দেহের ক্ষেত্রে উপকার পাবেন। তাহলে দিরি না করে জেনে নেয়া যাক গ্রিন টি এর অপকারিতা গুলো

আরও পড়ুনঃ

গ্রিন টি এর  অপকারিতাঃ
  • দেহে আয়রনের ঘাটতি থাকলে গ্রিন টি না খাওয়াই উচিত।
  • গ্রিন টি বেশি খেলে পাকস্থলীতে অ্যাসিড তৈরি হতে শুরু করে।
  • যাদের পেপটিক আলসারের সমস্যা আছে তাঁদের একেবারেই গ্রিন টি খাওয়া উচিত নয়।
  • খুব বেশি গ্রিন টি খেলে মাথা যন্ত্রণা হতে পারে।
  • হৃদরোগীদের জন্য গ্রিন টি একদম ভালো নয়।
  • ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে ডাক্তারের পরামর্শ কিংবা পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া গ্রিন টি পান করবেন না। 
  • প্রেগনেন্ট অবস্থায় গ্রিন টি পান করতে চাইলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
  • ঘুমানোর আগে গ্রিন টি পান করলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে।

উপসংহার

আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে আলোচনা করেছি। গ্রিন টিতে আছে ক্যাটাচিন নামক উপাদান, যা শরীরের বিভিন্ন উপকারে কাজ করে। গ্রিন টিতে থাকা থিয়ানিন নামক অ্যামাইনো এসিড অবসাদ বা ডিপ্রেশন কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। গ্রিন টি এর উপাদান মস্তিষ্কের জন্যও স্বাস্থ্যকর, এটি স্মৃতিশক্তির উন্নতিও ঘটায়।

আশা করছি, গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা, গ্রিন টি তৈরির নিয়ম, আসল গ্রিন টি চেনার উপায়, গ্রিন টি কখন পান করবেন, ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম, নিয়মিত গ্রীন টি খাওয়ার উপকারিতা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও বুঝতে পেরেছেন।

ডিসক্লেইমারঃ এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url