কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার উপায়



কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার উপায় সম্পর্কে সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সচেতনতা ছাড়া কোনো রোগ বা সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। সাধারণত এক-দুইদিন পর পর মলত্যাগের বেগ হওয়া এবং শুষ্ক ও কঠিন মল নিষ্কাশন কোষ্ঠকাঠিন্য বলে পরিচিত।
কোষ্ঠকাঠিন্য-চিরতরে-দূর-করার-উপায়
একদিনে বা হঠাৎ করে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। অনেকের টয়লেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়, কিন্তু পেট পরিষ্কার হয় না। অস্বাস্থ্যকর এবং বাজে খাদ্যাভ্যাস, অপুষ্টিকর খাবার ইত্যাদির কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো অস্বস্তিকর সমস্যায় পড়ে থাকেন অনেকেই। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার উপায়, কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয় সে সম্পর্কে সবার সচেতনতা প্রয়োজন।

পেইজ সূচিপত্রঃ কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার উপায় সম্পর্কে কমবেশি অনেকের জানার আগ্রহ রয়েছে। যেসব কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে সেগুলো এড়িয়ে চলার মাধ্যমে সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। খাবারে আঁশের পরিমাণ বাড়াতে হবে, ছোলা, ডাল, পূর্ণ শষ্যের খাবার, ওটস, ব্রকলি, গাজর, মটর, কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, আপেল, কমলা ও নাশপাতি নিয়মিত খেতে হবে।

পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করা আবশ্যক। যা অন্ত্রের নড়াচড়ায় ভূমিকা রাখে ও মলের শুষ্কভাব দূর করে। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করতে হলে নিয়মিত ব্যায়াম করা আবশ্যক। নিচে কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার উপায় গুলো তুলে ধরা হলোঃ-

খাবারের তালিকায় ফাইবারের পরিমাণ বাড়াতে হবেঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে এমন খাবার খেতে হবে। সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, লাল আটা ও লাল চালের মতো গোটা শস্যদানা বেশি করে খাওয়া উচিত। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে দৈনিক প্রায় ৩০ গ্রাম ফাইবার খাওয়া উচিত।

কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার উপায় হিসাবে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কীভাবে ফাইবার যোগ করবেন, জেনে নিন সহজ ৫টি টিপস-
  • ভাত বা রুটি খাওয়ার ক্ষেত্রে লাল চাল ও লাল আটা ব্যবহার করতে পারেন। এগুলোতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে।
  • প্রতিবেলার খাবারে ডাল রাখতে পারেন। ডালে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার থাকে।
  • প্রতিবেলার খাবারে কয়েক ধরনের বা সম্ভব না হলে কমপক্ষে এক ধরনের সবজি রাখতে হবে।
  • যেসব ফল বা সবজি খোসাসহ খাওয়া যায় সেগুলো খোসা না ফেলে খাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ খোসায় উচ্চ পরিমাণে ফাইবার থাকে। টমেটো, আপেল ও আলুর মতো খাবারগুলো খোসাসহ খেতে পারেন। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোমতো পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে।
  • যেকোনো ফল বা সবজি গোটা বা আস্ত খেলে ভালো ফাইবার পাওয়া যায়। জুস বা ভর্তা বানিয়ে খেলে আঁশের পরিমাণ কমে যায়।
তবে কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার উপায় হিসাবে খাবারের তালিকায় ফাইবারের পরিমাণ হুট করে বাড়ানো উচিত নয়। কারণ হঠাৎ ডায়েটে ফাইবারের পরিমাণ বাড়িয়ে ফেললে বায়ুর সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া পেট ফাঁপা, তলপেটে তীব্র ব্যথাসহ নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।

তাই খাদ্য তালিকায় ফাইবারের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। গতকাল যদি শুধু একটি ফল খেয়ে থাকেন, তাহলে আজ দুটো খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিন। সাথে কিছু বাদাম খান। রান্না করা সবজি খেতে না চাইলে ভাতের সাথে টমেটো, শসা, গাজর কেটে সালাদ খাওয়া শুরু করতে পারেন।

দিনে অন্তত দুই লিটার পানি পান করতে হবেঃ পানি পায়খানা নরম করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর কর‍তে সহায়তা করে। এ ছাড়া ফাইবারজাতীয় খাবার প্রচুর পানি শোষণ করে। তাই ডায়েটে ফাইবার বাড়ানোর সাথে সাথে পানি পান করার পরিমাণও বাড়াতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার ও পানি খেলে সাধারণত কয়েকদিনের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

ফাইবারের সাথে পর্যাপ্ত পানি পান করা না হলে পেটের ভেতরে থাকা নাড়িভুঁড়ির মুখ আটকে যেতে পারে। এমন অবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে যেতে হয়। এই পরিস্থিতি এড়াতে দিনে কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করতে হবে।

প্রতিদিন কিছুক্ষণ ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করতে হবেঃ নিয়মিত শরীরচর্চা বা হালকা ব্যায়াম করতে হবে। শরীর সচল রাখলে তা পায়খানা নরম রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। আপনার বয়স যদি ১৯ থেকে ৬৪ এর মধ্যে হলে সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘণ্টা মাঝারি ধরনের ব্যায়াম, যেমন দ্রুত হাঁটা বা সাইকেল চালানো উচিত। যদি আরেকটু বেশি পরিশ্রমের ব্যায়াম করতে চান তাহলে দৌড়ানো, ফুটবল খেলা, দড়ি লাফ, সাঁতার কাটা এগুলো বেছে নিতে পারেন।

ভারী ব্যায়ামের ক্ষেত্রে সপ্তাহে অন্তত সোয়া ১ ঘণ্টা বা ৭৫ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করতে হবে।ব্যায়ামের মধ্যে ভারী ব্যায়াম বা প্রতিদিন দৌড়ানো বেছে নিতে হবে, তা নয়। শরীরকে চলমান রাখতে হাঁটাচলা, হালকা স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম ইত্যাদির মধ্যে যেকোনোটাই বেছে নেওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে হাঁটাহাঁটি বা হালকা শরীরচর্চাও কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

অন্যকিছু করার সুযোগ না হলে প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে অল্প অল্প করে শুরু করতে পারেন। এক বেলা দিয়ে শুরু করুন, এরপর সকাল-সন্ধ্যা দুই বেলা করে হাঁটুন। প্রথমে সপ্তাহে তিন দিন এভাবে হেঁটে আস্তে আস্তে সেটা পাঁচ দিনে নিয়ে আসুন। এরপর ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে থাকুন। এতে কিছুটা হলেও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

পায়খানার বেগ আসলে তা চেপে রাখা যাবে নাঃ পায়খানা চেপে রাখলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা গুরুতর হতে থাকে। এর ফলে পাইলস ও এনালফিসার বা গেজ রোগ সহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পায়খানার বেগ আসলে যত দ্রুত সম্ভব টয়লেটে চলে যেতে হবে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তাদের জন্য মলত্যাগের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো প্যান বা লো কমোডে বসা। তাই সম্ভব হলে লো কমোড ব্যবহার করতে পারেন।

আর যদি হাই কমোড ব্যবহার করতে হয় সেক্ষেত্রে পায়ের নিচে ছোট টুল দিয়ে পা উঁচু করে বসতে পারেন, যাতে হাঁটু দুটি কোমরের উপরে থাকে। এতে মলত্যাগ সহজ হবে। হাই কমোড ব্যবহারের ক্ষেত্রে পায়ের নিচে ছোট টুল দিয়ে পা উঁচু করে বসতে পারেন।

মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করার ব্যবস্থা নিতে হবেঃ মন ভালো হয় এমন প্রশান্তিমূলক কাজ করতে পারেন। এটা হতে পারে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, গান শোনা, প্রার্থনা করা বা আপনজনের সাথে সময় কাটানো। যদি আপনি ডিপ্রেশন কিংবা উদ্বিগ্নতা রোগে ভুগে থাকেন, তাহলে সেই রোগের চিকিৎসা নিন। আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যও আস্তে আস্তে সেরে উঠবে।

ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবেঃ ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে নতুন ঔষধ শুরু করার পরে যদি মনে হয় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে গেছে, তাহলে আপনার ডাক্তারকে জানান। তিনি প্রয়োজনে ঔষধ বদলে দিতে পারেন, বা কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসার জন্য অন্য আরেকটি ঔষধ যোগ করতে পারেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে

নিচের ৯টি অবস্থায় দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন

  • ঘরোয়া উপায়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধান না হলে
  • দীর্ঘদিন যাবত নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভোগা বা পেট ফাঁপা লাগলে
  • অনেকদিন কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার পর ডায়রিয়া শুরু হলে
  • পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া বা আলকাতরার মতো কালো পায়খানা হলে
  • পায়খানার রাস্তায় ব্যথা হলে
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে পেট ব্যথা বা জ্বর আসলে
  • সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগলে
  • কোনো কারণ বা চেষ্টা ছাড়াই ওজন অনেক কমে গেলে কিংবা শুকিয়ে গেলে
  • রক্তশূন্যতায় ভুগলে

কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়

কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয় তা আমাদের মধ্যে অনেকের অজানা। এ বিষয়টি সম্পর্কে  আমাদের সঠিক ধারনা থাকল কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা সহজ হয়। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত। খাবারে আঁশের পরিমাণ কম থাকলে বৃহদান্ত্র খাবার থেকে পানি শোষণ করে। এর ফলে মল শুষ্ক ও শক্ত হয়ে যায়। বৃহদান্ত্রের চারটি অংশ আছে। এর মধ্যে সিগময়েডে সবচেয়ে বেশি ও শেষবারের মতো পানি শোষিত হয়।

তাই মল যখন বের হয়, তখন প্রথম অংশের মলটুকু তুলনামূলক বেশি শুষ্ক ও শক্ত হয়। পায়খানা কষা বা শক্ত হওয়াকেই মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এটি খুব পরিচিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেকেরই মাঝে মাঝে পায়খানা খুব শক্ত হয়ে যায়, মলত্যাগের সময় অনেকক্ষণ কসরত করতে হয়। এ ছাড়া পায়খানার পর মনে হয় পেট ঠিকমতো পরিষ্কার হয়নি। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পায়খানা শক্ত হয়, যার কারণে অনেকেই মলত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব করেন।

কারও কারও ক্ষেত্রে একটানা ৩ থেকে ৪ দিন পায়খানা নাও হতে পারে।আসলে কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের কারণ কী হতে পারে, তা বোঝার জন্য কে কী খাচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে। অ্যালকোহল, রেড মিট এবং গ্লুটেনযুক্ত খাবার (গোটা গম/ময়দা) খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করতে পারে।

তবে খাবারই যে একমাত্র সমস্যা, তা নয়। সিন্ধু যোগ করে বললেন, এমন কোনও নির্দিষ্ট খাবার নেই যেটাকে আমরা কোষ্টকাঠিন্যের কারণ হিসেবে ধরতে পারি। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না খাওয়া, প্রতিনিয়ত কোনও শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে যুক্ত না থাকাও কোষ্ঠকাঠিন্যেপ কারণ হতে পারে।
 
কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে আরও সক্রিয় হওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্ট্রেস পরিচালনা করা এবং উপসর্গগুলি কমাতে সাহায্য করার জন্য উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া। সিন্ধু বললেন, “ধীরে ঘীরে ফাইবার খাবার বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।” তিনি যোগ করেছেন যে, কোষ্ঠকাঠিন্যের কিছু উপসর্গ, যার মধ্যে ফোলাভাব এবং পেটে ব্যথা রয়েছে তা কমাতে কমপক্ষে ২০-২৫ গ্রাম ফাইবার প্রয়োজন।

প্রয়োজনীয় ফাইবার গ্রহণের জন্য দিনে অন্তত তিন ধরনের মরসুমী ফল এবং সবজি খান। খাবারকে ভালোভাবে রান্না করতে হবে। বিশেষ করে শাকসবজি খুব ভাল করে রান্না করতে হবে। কারণ, সেগুলিকে কাঁচা রাখলে পাচনতন্ত্রের উপর বোঝা চাপতে পারে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের অবস্থ্যা আরও খারাপ করে তুলতে পারে।

যদি এক সপ্তাহ পরেও উপসর্গগুলি থেকে যায়, তাহলে এমন একজন ডাক্তারের কাছে যাওয়া প্রয়োজন যিনি মলত্যাগকে সহজ করার জন্য ওষুধ দিতে পারেন। নানাবিধ কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমন ও গুরুত্বপূর্ণ ৬টি কারণ হলো-

  • খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ না থাকা
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা
  • শুয়ে-বসে থাকা ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব
  • পায়খানার বেগ আসলে তা চেপে রাখা
  • মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা
  • ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

এই কারণগুলো কিভাবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সৃষ্টি করে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে এগুলো সমাধান করা সহজ হবে।

যথেষ্ট ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার না খাওয়াঃ ফাইবার বা আঁশ হলো এক ধরনের শর্করা। পেট পরিষ্কার হওয়ার জন্য ফাইবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিপাকতন্ত্রের যে জায়গায় পায়খানা তৈরি হয় ও জমা থাকে, সেখানে ফাইবার অনেকটা স্পঞ্জের মত কাজ করে।

পানি শোষণ ও ধারণ করার মাধ্যমে ফাইবার পায়খানায় পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে পায়খানা নরম ও ভারী হয়, সহজেই শরীর থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার না থাকলে পায়খানা শক্ত হয়ে যায়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করাঃ পানি খাবারের ফাইবারের সাথে মিলে পায়খানাকে ভারী ও নরম করে। এর ফলে পরিপাকতন্ত্রের ভেতর দিয়ে পায়খানা চলাচল সহজ হয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

শুয়ে-বসে থাকা ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাবঃ নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করলে আমাদের পরিপাকতন্ত্র অর্থাৎ পেটের ভেতরে থাকা নাড়িভুঁড়ি সচল হয়। এতে স্বাভাবিকভাবে পায়খানা বেরিয়ে আসে। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের অভাব হলে তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

পায়খানার বেগ আসলে তা চেপে রাখাঃ পায়খানা শক্ত হলে অনেকে টয়লেটে যেতে চায় না, কারণ তখন মলত্যাগ করতে কিছুটা কষ্ট হয়। কিন্তু পায়খানার বেগ আসলে তা যদি আটকে রাখা হয়, তাহলে শরীর ক্রমশ সেখান থেকে পানি শুষে নিতে থাকে। পেটের ভেতর পায়খানা জমিয়ে রাখলে সেটা দিন দিন আরও শক্ত হতে থাকে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতাঃ অনেক সময় মানসিক চাপ, কোনো কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা বা বিষণ্ণতায় ভোগার ফলে শরীরের স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতির ছন্দপতন হয়, শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে -

  • ট্রামাডল বা ওপিয়েট জাতীয় ব্যথার ঔষধ
  • আইবুপ্রোফেন
  • আয়রন ট্যাবলেট
  • ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট
  • কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত কিছু ঔষধ
এ ছাড়া একসাথে পাঁচটার বেশি ঔষধ খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের কিছু কারণের মধ্যে রয়েছে স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, প্রচুর দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া, সক্রিয় না থাকা, পর্যাপ্ত পানি বা ফাইবার গ্রহণ না করা, রেচকের অত্যধিক ব্যবহার বা পাচনতন্ত্রের স্নায়ু ও পেশীর সমস্যা। কোষ্ঠকাঠিন্যের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে পেট ফুলে যাওয়া, পেট ব্যথা, শক্ত বা স্বল্প মল, পেট পরিষ্কার না হওয়া ইত্যাদি।

সবুজ শাক-সবজি, ফল, সালাদ, গমের ভুসি এবং বার্লির মতো উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। প্রচুর পানি পান করা এবং পানির সঙ্গে জোয়ান, ত্রিফলা এবং আমলকি জাতীয় ভেষজ সেবনেও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আরও কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পেট পরিষ্কার রাখতে কাজ করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো-

কমলাঃ নিয়মিত কমলা খেলে মল নরম করতে সহায়তা করে। কমলায় থাকা ভিটামিন সি, ফাইবার এবং নারিনজেনিন এই কাজে সাহায্য করে। আপনার ব্যাগে দুই-একটি কমলা রাখতে পারেন, যেকোনো সময় নাস্তা হিসেবে খেতে পারবেন। কমলার জুস না খেয়ে আস্ত কমলা খেলেই বরং বেশি উপকার পাবেন।

বেরি জাতীয় ফলঃ বেরি ফাইবার সমৃদ্ধ ফল। ইউএসডিএ অনুসারে, রাস্পবেরি এক কাপে ৮ গ্রাম ফাইবার সরবরাহ করে। ফাইবার মলের পাচনতন্ত্রের মাধ্যমে খাবারকে মসৃণভাবে চলতে সাহায্য করে। সকালের নাস্তায় ওটমিল বা এক বাটি দই দিয়ে বেরি খেতে পারেন। এটি আপনার পেটে প্রশান্তিদায়ক প্রভাব ফেলবে। তুঁত, স্ট্রবেরি, জামও এক্ষেত্রে ভালো কার্যকরী।

গমের আটাঃ গমের আটা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। গমের কার্নেলের বাইরের স্তরে প্রচুর ফাইবার থাকে। গমের আটা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার রাখতে পারেন আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়। এটি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।

কলাঃ কলায় থাকা উচ্চ ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রভাবকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। কলা মল পাস করা সহজ করে বর্জ্য ভালোভাবে বাইরে ঠেলে দিতে সাহায্য করে। কলার উচ্চ ফাইবার উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করতে কাজ করে। শরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে মল নরম হবে না বা পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে মসৃণভাবে চলাচল করবে না। ডিহাইড্রেশন কোষ্ঠকাঠিন্যের সবচেয়ে সাধারণ কারণ। তাই শরীরে যাতে পানির অভাব না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

সবুজ শাক-সবজিঃ সবুজ শাক-সবজি যেমন পালং শাক এবং মৌসুমি লাউয়ে ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামসহ অনেকগুলো পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা তরল ভারসাম্য এবং পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। যার কারণে সবুজ শাক-সবজি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে আসে অনেকটাই।

পায়খানা কষা বা শক্ত হওয়াকেই মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এটি খুব পরিচিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেকেরই মাঝে মাঝে পায়খানা খুব শক্ত হয়ে যায়, মলত্যাগের সময় অনেকক্ষণ কসরত করতে হয়। এ ছাড়া পায়খানার পর মনে হয় পেট ঠিকমতো পরিষ্কার হয়নি।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পায়খানা শক্ত হয়, যার কারণে অনেকে মলত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব করেন। কারও কারও ক্ষেত্রে একটানা তিন–চারদিন পায়খানা নাও হতে পারে। এগুলো সবই সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পাইলস বা অর্শ রোগ কিংবা এনালফিসার বা গেজ রোগ এর মতো পায়ুপথের রোগ তৈরি হতে পারে। পায়খানা কষা কেন হয় তা জেনে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে কোনো প্রকার ঔষধ ছাড়াই সম্পূর্ণ ঘরোয়া উপায়েই এই সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব।

কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ কী কী

কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ কী এটা সাধারনত অনেকেই জানেন না। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে মল ত্যাগ হ্রাস, পেট ফোলাভাব, গ্যাস ও পেটব্যথা হয়। পর্যাপ্ত পানি পান ও বাথরুমে যথেষ্ট সময় কাটানোর পরেও তেমন কোনো ফল পাওয়া যায় না।অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের কারণেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। তাই খাবার গ্রহণে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।বাথরুমে যথেষ্ট সময় কাটানোর পরেও তেমন কোনো ফল পাওয়া যায় না।

এটা সাধারণ হজমজনিত সমস্যা। ব্যক্তিভেদে এর লক্ষণগুলো আলাদা হয়ে থাকে। সাধারণত সপ্তাহে যদি তিন বারের কম পায়খানা হয়, তবে সেটাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এ ছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য হলে যেসব লক্ষণ থাকতে পারে সেগুলো হলো-
  • পায়খানা শুকনো, শক্ত চাকার মত হওয়া
  • পায়খানার আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হওয়া
  • পায়খানা করতে কষ্ট হওয়া
  • পেট পরিষ্কার হচ্ছে না এমন মনে হওয়া
  • পেটে ব্যথা হওয়া, পেট ফাঁপা লাগা, বা বমি বমি ভাব হওয়া

দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কী কী সমস্যা হয়

দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্য থাকলে মল ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পাইলস, এনালফিসার, মলদ্বার বাইরে বেরিয়ে আসার সমস্যা, মানসিক অশান্তি, প্রস্রাবের সমস্যা, খাদ্যনালিতে প্যাঁচ লাগা, খাদ্যনালিতে আলসার বা খাদ্যনালি ছিদ্র হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে এক সময় কোলন ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তাই এই সমস্যা পুষে রাখা উচিত নয় কারও।

অন্ত্রে দীর্ঘস্থায়ী কোনো মাংসল অংশের বৃদ্ধি এই রোগের অন্যতম লক্ষণ। অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান, ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাবার ইত্যাদি কারণে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।অনেকদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে ‘ফিকাল ইম্প্যাকশান’ হতে পারে। এর অর্থ আপনার মলদ্বারে পায়খানা জমা হয়ে আটকে থাকতে পারে। ফিকাল ইম্প্যাকশান এর প্রধান লক্ষণ হচ্ছে অনেকদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার পরে ডায়রিয়া হওয়া। এমনটা হলে চিকিৎসার জন্য সাধারণত নিচের ৪ টি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়—

জোলাপঃ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শক্তিশালী ল্যাক্সেটিভ বা জোলাপ সেবনের পরামর্শ দেয়া হয়।

সাপোজিটোরিঃ মলদ্বার দিয়ে পিচ্ছিলকারী ঔষধ দেওয়া হয়, যাতে পায়খানা নরম হয়ে বেরিয়ে আসে।

মিনি এনেমাঃ মলদ্বার দিয়ে তরল ঔষধ প্রবেশ করানো হয়, যাতে পায়খানা বেরিয়ে আসে। ও কিছু  কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি বা যন্ত্রপাতির সাহায্যে মলদ্বার থেকে পায়খানা অপসারণ করা হয়।

কোলন ক্যানসারের লক্ষণ-
  • দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য
  • দীর্ঘদিনের ডায়ারিয়া
  • তীব্র পেটেব্যথা
  • রক্তাল্পতা
  • হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
  • মলত্যাগে যন্ত্রণা বোধ
  • মলের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া
  • বমি বমি ভাব
  • পেটে অস্বস্তি, গ্যাস কিংবা জ্বালাপোড়া
  • খিদে কমে যাওয়া
  • শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদি।

জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খাবারে আঁশের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ছোলা, ডাল, পূর্ণ শষ্যের খাবার, ওটস, ব্রকলি, গাজর, মটর, কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, আপেল, বেরিজ, কমলা ও নাশপাতি নিয়মিত খেতে হবে।পর্যাপ্ত পানি পান করা আবশ্যক। যা অন্ত্রের নড়াচড়ায় ভূমিকা রাখে ও মলের শুষ্কভাব দূর করে। এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করাও উপকারী।

দুর্বল পাচনতন্ত্রকে কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে এর সমাধান করা যেতে পারে।তবে কিছু ক্ষেত্রে এই সমস্যা অন্য কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে। এই সমস্যায় ভোগার নানান কারণের মধ্যে রয়েছে-

  • অপর্যাপ্ত পানি পান।
  • খাদ্যাভ্যাসে আঁশের পরিমাণ কম।
  • শারীরিক কর্মকাণ্ড কম।
  • কোনো প্রকার মানসিক চাপে থাক।
  • আকস্মিক পারিপার্শিক পরিবর্তন।
  • মলত্যাগের বেগ আসলেও চেপে রাখা।
এছাড়া কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, গর্ভাবস্থা, মল নিঃসরণের কোনো ওষুধ অতিমাত্রায় ব্যবহার, কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন- পার্কিনসন’স, মানসিক চাপ, ‘মাল্টিপল সিরোসিস’, থাইরয়েড সমস্যা, হজমে সমস্যা যেমন- আইবিএস, মলাশয়ে রোগ ইত্যাদি কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

উপরের বিষয়গুলো উল্লেখ করে ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ডা. সিদ্ধার্থ গুপ্তা ফার্মইজি ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে অনেকেই আলোচনা করতে অস্বস্তি বোধ করেন। যে কারণে সময় মতো চিকিৎসা না নিলে সমস্যা আরও বাড়ে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণগুলো হল-

  • অন্ত্রের নড়াচড়ার ব্যথা অনুভব।
  • স্বাভাবিক সময়ের চাইতে বেশিক্ষণ বাথরুমে বসে থাকা।
  • মল ত্যাগের পরেও পেট খালি হয়নি মনে হওয়া।
  • শুষ্ক ও শক্ত মল নিঃসরণ।
  • তলপেটে ব্যথা।
  • পেট ফোলাভাব।
  • মল নিঃসরণে জোর দেওয়া।

অন্য কোনো রোগ থেকে সমস্যার সৃষ্টি না হলে বিভিন্ন খাবার গ্রহণের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরসন করা যায়। এরকম খাবারের মধ্যে রয়েছে-

পেয়ারাঃ পুষ্টিগুণে ভরপুর দেশি এই ফল ‘ল্যাক্সেটিভ’ বা মল নিঃসরণের জন্য রেচক হিসেবে কাজ করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা টাটকা পেয়ারা খেলে তাই উপকার পাওয়া যায়।

খেজুরঃ হজম সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনে এই ফল কার্যকর। সকালে পাঁচ-ছয়টা খেজুর অল্প ঘি ও কালো গোলমরিচের গুঁড়ার সঙ্গে খেলে ভালো কাজ করে। এরপর কুসুম গরম পানি পান করতে হবে। নিয়মিত এভাবে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।

মাসকলাইয়ের ডালঃ যাদের অনিয়মিত মল নিঃসরণ হয় তাদের জন্য এই ডাল উপকারী হতে পারে। কিছু মাসকলাইয়ের ডাল ভেজে গুঁড়া করে ঘোলের সঙ্গে গুলিয়ে পান করলে উপকার মিলবে।

পান-পাতাঃ হজম রস নিঃসরণে সাহায্য করে, তাই গ্যাস বা পেট ফোলা সমস্যায় আরাম দেয়। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য নিরসনেও কাজ করে। যে কোনো খাবার খাওয়ার পর পান চিবানো যেতে পারে।

তেজপাতাঃ প্রায় প্রতিটা রান্নাঘরেই এই পাতার দেখা মিলবে। হজমের সমস্যা কাটাতে যে কোনো তরকারিতে তেজপাতা ব্যবহার করা উপকারী। এছাড়া তেজপাতার চা বানিয়েও গ্রহণ করা যায়। এক্ষেত্রে কিছু তেজপাতা কয়েক মিনিট পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে তেজপাতার চা।

লাউপাতাঃ ল্যাক্সেটিভ’বা রেচক হিসেবে কাজ করে লাউপাতা। এটা দিয়ে চাটনি তৈরি করে যে কোনো খাবারের সাথে খাওয়া যায়।

ক্যাস্টর বা রেড়িঃ নানান আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় এটা ব্যবহার করা হয়। রেড়ি গাছের শেকড় দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারলে কোষ্ঠকাঠিন্যে উপকার পাওয়া যায়। এজন্য রেড়ি গাছের কিছু শুকনা শেকড় মিহি গুঁড়া করে এক গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে ফুটিয়ে পরিমাণে অর্ধেক বানিয়ে পান করতে হবে।

খাবারে আঁশের পরিমাণ বাড়াতে ছোলা, ডাল, পূর্ণ শষ্যের খাবার, ওটস, ব্রকলি, গাজর, মটর, কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, আপেল, বেরিজ, কমলা ও নাশপাতি নিয়মিত খেতে হবে।

পর্যাপ্ত পানি পান করা আবশ্যক। যা অন্ত্রের নড়াচড়ায় ভূমিকা রাখে ও মলের শুষ্কভাব দূর করে। এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করাও উপকারী।

যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আঁশজাতীয় খাবার খাওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি কয়েক ধরনে খাবার এড়াতেও হবে। এর মধ্যে রয়েছে- ফাস্ট ফুড, মাংস, হিমায়িত খাবার, প্রক্রিয়াজাত ও মাইক্রোওয়েভে তৈরি করা যায় এমন খাবার।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত

সবসময় পেটফোলা অনুভূত হওয়া, পেটব্যথা করা, পেটফাঁপা ও বমিভাব, মলে সাথে রক্ত যাওয়া এবং পর পর তিনদিন পেট পরিষ্কার না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে ৬ অভ্যাস

অভ্যস মানুষেব দাস, অভ্যাসের কারনে যে কোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কোষ্ঠকাঠিন্য একটি বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। অনেকের টয়লেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়, কিন্তু পেট পরিষ্কার হয় না। মলত্যাগ যদি সপ্তাহে তিনবারের কম অথবা পরিমাণে খুব কম হয়, অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করেও মলত্যাগ না হয়, অথবা মল অস্বাভাবিক রকমের শক্ত বা শুকনো হয়, তাহলে তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। 

বিভিন্ন কারণে এ সমস্যা দেখা দেয়। তবে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস কোষ্ঠকাঠিন্যের পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তাই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • প্রতিদিন প্রচুর পানি ও তরল এবং যথেষ্ট আঁশযুক্ত খাবার খান। গোটা শস্য, শাকসবজি, ফলমূল যেমন বেল, পেঁপে ইত্যাদি হলো আঁশযুক্ত খাবার।
  • পাশাপাশি দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপনের চেষ্টা করুন।
  • যত দূর সম্ভব মল চেপে না রাখার অভ্যাস করা এবং নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটাচলার অভ্যাস গড়ে তোলা।
  • ইসবগুলের ভুসি, অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর মতো ঘরোয়া টোটকাও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধানে বেশ কাজে আসে।
  • প্রতিদিন প্রচুর পানি ও তরল এবং যথেষ্ট আঁশযুক্ত খাবার খান। গোটা শস্য, শাকসবজি, ফলমূল যেমন বেল, পেঁপে ইত্যাদি হলো আঁশযুক্ত খাবার।
  • কিছু কিছু ওষুধ কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য দায়ী (যেমন নিয়মিত আইবুপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ সেবন, আয়রন বা ক্যালসিয়াম বড়ি)। এসব বিষয় খেয়াল করতে হবে। কফি, পিৎজা, ফাস্ট ফুড বা পাস্তার মতো খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। চকলেট, ভাজাপোড়া, লাল মাংস (গরু, খাসি ইত্যাদি), চিপস, প্রচুর চিনিযুক্ত বেকারি খাদ্য যেমন কেক, পেস্ট্রি কেক এবং আয়রন ক্যাপসুল, কাঁচাকলা ইত্যাদি কম খাওয়াই ভালো।
  • এতেও উপকার না পেলে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ সেবন বা ব্যবহার করা যায়। তবে এগুলো বেশি পরিমাণে বা নিয়মিত সেবন করা অনুচিত। কারণ, এতে মলদ্বারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।

জটিলতাঃ দীর্ঘ মেয়াদে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অর্শ বা পাইলস, ফিস্টুলা বা ভগন্দর, অ্যানাল ফিশার বা গেজ রোগ, প্রস্রাবের সমস্যা, রেক্টাল প্রোলাপস বা মলদ্বার বাইরে বের হয়ে আসা, ইন্টেসটাইনাল অবস্ট্রাকশন, পেটব্যথা বা ফাঁপা, অরুচি, ক্ষুধামান্দ্যের মতো জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

সমস্যার উন্নতি না হলে আক্রান্ত ব্যক্তির থাইরয়েডের সমস্যা, কলোরেক্টাল তথা মলাশয়ের ক্যানসার, ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি, পার্কিনসনস ডিজিজ, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস), অ্যানাল ফিশার, পেরিঅ্যানাল অ্যাবসেস প্রভৃতি কোনো রোগ আছে কি না, তা পরীক্ষা করা দরকার।

আফিম, মরফিন, মানসিক রোগের ওষুধ, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও অ্যালুমিনিয়াম এবং ক্যালসিয়ামযুক্ত অ্যান্টাসিড ইত্যাদি কোনো ওষুধ সেবন করছেন কি না, লক্ষ করুন। হঠাৎ কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ৫ পানীয়

অনেকেই অনেক প্রশ্ন করে থাকেন কিভাবে, কি খেলে, কোন ওষুধের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কমবেশি অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভূগে থাকেন। কারও কারও ধারণা, ওষুধ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব নয়। কিন্তু অতি পরিচিত কয়েকটি পানীয় পানে অচিরেই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন। তাই ঝটপট জেনে নিন সেগুলো কি-
কোষ্ঠকাঠিন্য-দূর-করতে-৫-পানীয়
গুড় মেশানো পানিঃ গুড় কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সহজ সমাধান। তাই বিশেষজ্ঞরা এই রোগে ভুক্তভোগীদের প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে এক চামচ গুড় ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে পান করার পরামর্শ দেন। তাদের ভাষ্য, গুড়ে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম। আর এই খনিজ বাওয়েল মুভমেন্ট বা অন্ত্রে মলের গতিবিধি বাড়ানোর কাজে সিদ্ধহস্ত। তাই কনস্টিপেশন রোগীদের ডায়েটে এই পানীয় থাকাটা আবশ্যিক।

লেবু পানিঃ সকালে উঠে পেট পরিষ্কার না হলে এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে একটা গোটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে চট করে খেয়ে নিন। এই পানীয় গলায় ঢালার কিছুক্ষণের মধ্যেই টয়লেটের বেগ চাপবে। শুধু তাই নয়, এটি বাড়বে হজমশক্তিও। এমনকী দেহে জমে থাকা টক্সিনকে দূর করে দেওয়ার কাজেও লেবু পানির জুড়ি মেলা ভার।

অ্যাপেল জুসঃ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ডায়েটরি ফাইবারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আর আপেলের জুস হলো এমন একটি পানীয়, যাতে ভরপুর পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার মজুত রয়েছে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে চাইলে প্রতিদিন এক গ্লাস ‘অ্যাপেল জুস’ অবশ্যই পান করুন।

বেকিং সোডা মেশানো পানিঃ রাতে শোয়ার আগে একগ্লাস পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে চট করে গলায় ঢেলে নিন। ব্যস, তাতেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধান। শুধু তাই নয়, এই পানীয় নিয়মিত পান করলে গ্যাস, অ্যাসিডিটির মতো জটিল সমস্যা থেকেও সহজেই রেহাই মিলবে। এমনকী পাইলস বা অর্শ রোগীদের জন্যও এই পানীয় মহৌষধির সমান।

ত্রিফলার জুসঃ​ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে, ত্রিফলার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এমনকী কোষ্ঠকাঠিন্যকে দূর করতে এই মহৌষধির জুড়ি মেলা ভার। তাই তো আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের নিয়মিত ত্রিফলা মেশানো পানি পান করার পরামর্শ দেন। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই পানীয়কে ডায়েটে জায়গা করে দিন। এতেই উপকার পাবেন হাতেনাতে।

  • কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ মানসিক চাপ, উদ্বেগ
  • অনেকক্ষণ শুয়ে-বসে থাকা, শারীরিক ব্যায়ামের অভ্যাস না থাকা
  • যথেষ্ট পরিমাণে পানি ও তরল পান না করা
  • নিয়মিত ফাইবার বা আঁশ সমৃদ্ধ শাকসবজি ও মৌসুমি ফল না খাওয়া
  • নিয়মিত সঠিক ঘুম না হওয়া
  • চা-কফি, ফাস্টফুড, ভাজাপোড়াজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে যে খাবারগুলো উপকারী

অনেকেই কমবেশি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। কারও কারও ধারণা, ওষুধ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব নয়। কিন্তু জীবনযাপনের ধরন ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যা সহজেই দূর করা যায়।কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সঠিক খাবার ব্যবস্থাপনাই প্রধান ভূমিকা পালন করে। আঁশসমৃদ্ধ যেকোনো খাবারই কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ ও প্রতিকারে প্রধান ভূমিকা পালন করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে যেসব খাবার খাবেন
  • খোসাসহ গোটা ফলে যথেষ্ট পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার থাকে। যেমন আপেল, পেয়ারা, নাসপাতি, আঙুর ইত্যাদি।
  • পাকা পেঁপে, পাকা বেলের শরবত, অ্যালোভেরা জুস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ওষুধের মতো কাজ করে।
  • সব ধরনের শাক বেশি বেশি খেতে হবে। যেমন পুঁইশাক, পালংশাক, লালশাক, কচুশাক ইত্যাদি।
  • সবজির মধ্যে ঢ্যাঁড়স, পেঁপে, ফুলকপি, পাতা কপি, কচুর লতি বেশ উপকারী।
  • বৃহদন্ত্রে মলের চলাচল বাড়াতে হবে। সে জন্য নন স্টার্চ আঁশসমৃদ্ধ শাকসবজি ও বিভিন্ন ফল পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে।
  • দিনে দু-তিনবার তোকমাদানা, ইসবগুলের ভুসি বা চিয়া সিড অথবা অ্যালোভেরা খাওয়া খুব উপকারী।
  • ঘনঘন পরিমিত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে পানির চেয়ে গাঢ়, যেমন মধু, টকদই, বেলের শরবত, পেঁপের শরবত, অ্যালোভেরা জুস, আখের রস ইত্যাদির মতো তরল পান করতে হবে।
  • এর ফলে বৃহদন্ত্রে অন্তঃঅভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় মল শরীর থেকে পানি শোষণ করে নিজে নরম থাকবে।
  • আয়রন ও ক্যালসিয়াম-জাতীয় ওষুধ সেবন বন্ধ করে আয়রন ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে যেসব খাবার বাদ দেবেন
সঠিক খাদ্যাভ্যাসই যেহেতু কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে প্রধান চিকিৎসা, তাই খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। যে খাবারগুলো বাদ দেবেন—কম আঁশযুক্ত খাবার যেমন কাচাকলা, ময়দার তৈরি খাবার ইত্যাদি।

  • চা-কফি, পিৎজা, ফাস্ট ফুড, চিপস, চকলেট, তেলে ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া যাবে না।
  • গরু বা খাসির মাংস এড়িয়ে চলতে হবে।
  • রান্নায় মসলার পরিমাণ কমাতে হবে। ভাজি বা ভুনা খাবারের বদলে কম মসলাযুক্ত খাবার খেতে হবে।
  • কিছু শুকনো খাবার বাদ দিতে হবে। যেমন, মুড়ি, চিড়া, গুঁড়ো দুধ, বিস্কুট ইত্যাদি।
  • নুডলস-পাস্তা জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।

কিভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করবেন

সাধারণত মল যদি দেহ থেকে ঠিকমতো নিষ্কাশন না হয়, তাহলে জিভের উপর আস্তরণ, পেটব্যথা বা পেটফাঁপা প্রভৃতি সমস্যা হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য কিন্তু কখনওই এক দিনে হয় না। বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। যদি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার না থাকে, তবে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। বাড়িতে অবিলম্বে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করবেন-
  • দিনে দুই থেকে চার গ্লাস অতিরিক্ত পানি পান করুন। ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন, যা ডিহাইড্রেশন হতে পারে। এছাড়াও, জুস এবং উচ্চ-মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে চলুন।
  • প্রক্রিয়াজাত মাংস, ভাজা খাবার এবং সাদা রুটি, পাস্তা এবং আলুর মতো পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলুন। হাঁস-মুরগি এবং কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবারের মতো চর্বিহীন মাংস খাওয়া ঠিক।
  • আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং অন্যান্য উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার যোগ করুন। কম উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার খান, যেমন মাংস, ডিম এবং পনির।
  • প্রুন, ব্রান সিরিয়াল এবং অন্যান্য উচ্চ আঁশযুক্ত ফল যেমন কমলা, আনারস, বেরি, আম, অ্যাভোকাডো এবং পেঁপে খান।
  • একটি খাদ্য ডায়েরি রাখুন এবং আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্য করে এমন খাবারগুলিকে আলাদা করে রাখুন।
  • চলুন - ব্যায়াম.
  • আপনি কিভাবে টয়লেটে বসছেন তা পরীক্ষা করুন। আপনার পা উত্থাপন করা, পিছনে ঝুঁকে থাকা বা স্কোয়াট করা মলত্যাগকে সহজ করে তুলতে পারে।
  • আপনার ডায়েটে একটি ওভার-দ্য-কাউন্টার পরিপূরক ফাইবার যোগ করুন (যেমন Metamucil® ,MiraLax®  , Citrucel® বা Benefiber®)। এগুলো দিয়ে ধীরে ধীরে শুরু করা ভালো।
  • প্রয়োজনে, খুব হালকা ওভার-দ্য-কাউন্টার স্টুল সফ্টনার বা রেচক (যেমন ডকুসেট ) নিন। খনিজ তেল এনিমা এবং উদ্দীপক জোলাপ অন্যান্য বিকল্প। অনেক রেচক পছন্দ আছে. একটি পছন্দ করতে সাহায্যের জন্য আপনার ফার্মাসিস্ট বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীকে জিজ্ঞাসা করুন। আপনার সরবরাহকারীকে কল না করে দুই সপ্তাহের বেশি জোলাপ ব্যবহার করবেন না। জোলাপগুলির অত্যধিক ব্যবহার আপনার লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করতে পারে।
  • আপনার অন্ত্র সরানোর চেষ্টা করার সময় আপনার ফোন বা অন্যান্য ডিভাইস পড়ুন বা ব্যবহার করবেন না।
  • বাথরুম ব্যবহার করার তাগিদ ধরে রাখা এড়িয়ে চলুন। অবশেষে, এটি আপনার কোলন থেকে আপনার মস্তিষ্কে সংকেতকে অবরুদ্ধ করে শিথিল করতে এবং মলত্যাগ করতে দেয়।

কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকির কারণগুলি কী কী

খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয় খাবারের ঘাটতি ও অপর্যাপ্ত পানি পান করার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এ ছাড়া মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়েডিজম, অন্ত্রের কোনো গুরুতর সমস্যা যেমন: টিউমার বা বাধার কারণে এমন হয়। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মধ্যে এ সমস্যা খুব বেশি দেখা যায়। বিষণ্নতা এবং মাদক সেবনের কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য একটা যন্ত্রণাদায়ক ও বিরক্তিকর সমস্যা, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মলত্যাগের সময় রক্তপাত এবং পাইলস ও এনাল ফিশারের মতো জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। আসুন জেনে নিই কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়, আর এর লক্ষন গুলি-

সব বয়সের মানুষের মাঝে মাঝে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কিন্তু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কারণের কারণে মানুষের ক্রমাগত কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই কারণগুলির মধ্যে রয়েছে-

  • বয়স। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী লোকেরা প্রায়শই কম সক্রিয় থাকে, তাদের বিপাক ধীর হয় এবং তাদের পাচনতন্ত্রে পেশী সংকোচনের শক্তি কম থাকে।
  • জন্মের সময় মহিলাকে বরাদ্দ করা, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পরে কোষ্ঠকাঠিন্য। আপনার হরমোনের পরিবর্তন আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণ করে তুলতে পারে। আপনার জরায়ুর অভ্যন্তরে থাকা ভ্রূণটি আপনার অন্ত্রকে স্কুইশ করতে পারে, মল যাওয়ার গতি কমিয়ে দিতে পারে।
  • পর্যাপ্ত পরিমানে উচ্চ আশযুক্ত খবার না খাওয়া । ফাইবার আপনার পাচনতন্ত্রের মাধ্যমে খাবারকে সচল রাখে।
  • নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণ।
  • কিছু স্নায়বিক (মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডের রোগ) এবং হযম জনিত রোগ ।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসির গুরুত্ব অপরিসীম। পাইলস বা অর্শ রোগ কিংবা গেজ রোগ চিকিৎসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা। পায়খানা নরম হলে এসব রোগের সমস্যা অনেকটাই কমে আসে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পায়খানা নরম করার একটি কার্যকর ঔষধ হলো ইসবগুলের ভুসি। পাইলস রোগীদের সারা বছর ইসবগুলের শরবত খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। কারণ এটি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

বাজারে খোলা বা প্যাকেটজাত অবস্থায় ইসবগুলের ভুসি পাওয়া যায়। প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশনা অনুযায়ী পরিমাণমত পানি নিয়ে তাতে ইসবগুলের ভুসি ভালোভাবে গুলে নিয়ে এরপর এটি খেতে হবে, যাতে শরবতটি পরিষ্কার বা হালকা ঘোলা ঘনত্বের দেখায়।

এতে অতিরিক্ত চিনি মিশিয়ে খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এছাড়া এটি বানানোর পর রেখে দিয়ে খাওয়াও ঠিক নয়, শরবত তৈরির সাথে সাথেই খেয়ে ফেলা উচিত।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে দিনে দুইবার ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। যেকোনো দুইবেলা খাবার খাওয়ার পর ইসবগুলের ভুসি খাওয়া সবচেয়ে উত্তম। মনে রাখা জরুরি, ইসবগুলের ভুসি খেলে সারাদিনে অন্তত দুই লিটার পানি পান করতে হবে। ইসবগুলের ভুসি খেয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না খাওয়ার ফলে গলনালি এবং অন্ত্রের মুখ আটকে যায়, অর্থাৎ পরিপাকতন্ত্রে খাবারের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে।

এ সমস্যা হলে ৫-১০ গ্রাম ইসবগুল নিয়ে ১ কাপ ঠাণ্ডা বা গরম পানিতে আধাঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তাতে ২-৩ চামচ চিনি মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে বা রাতে শোয়ার আগে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের পেটের পীড়া, কোষ্ঠকঠিন্যতায় উপকারী। যারা দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকঠিন্যতায় ভুগছেন তারা ২ মাস নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকঠিন্য দূর হবে। পেট স্বাভাবিক হলে সপ্তাহে ১-২ দিনের বেশি না খাওয়াই ভালো। বেশি মাত্রায় খেলে ডায়রিয়ার সমস্যা হতে পারে।

পেট পরিষ্কারে ওষুধের চেয়ে ইসবগুল অনেকগুণে উপকারী। সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অর্শ্বরোগের সৃষ্টি হয়। অর্শ্বরোগ অনেক সময় ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিতেও রূপান্তরিত হতে পারে। এসব সমস্যার শুরু থেকে সমাধান করতে ইসবগুলের ভুসি উপকারী। ওষুধ পেটকে কেমিক্যালাইস করে; ইসবগুলের ভুসি প্রাকৃতিকভাবে আমাদের সুস্থ রাখে। প্রতি রাতে ভুসি খেয়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস করলে আমাশয় থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

ইসবগুলের ভুসি কখন খাওয়া যাবে না

কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। এমন ৭টি বিশেষ সময়ের কথা নিচে তুলে ধরা হলো—

১. ঘুমানোর ঠিক আগে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া ঠিক নয়। এতে করে ঘুমের সময় বৃহদান্ত্রের (শরীরের যে অংশে মল তৈরি হয়) মুখ ভুসি জমে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে অবস্ট্রাকশন বলা হয়।

অবস্ট্রাকশন একটি ইমারজেন্সি স্বাস্থ্য জটিলতা, এমনটা হলে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে যেতে হয়। আপনার আগে কখনও এমনটা হয়ে থাকলে ইসবগুলের ভুসি খাবেন না।

২. কোনো কারণে পেটেব্যথা, বমিবমি ভাব বা বমি হয়

৩. আগে কখনও ইসবগুলের ভুসি খেয়ে শরীরে কোনো ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়

৪. দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পায়খানা জমে পায়ুপথের মুখে আটকে যায়

৫. মলত্যাগের ধরণ বা অভ্যাসে যদি হঠাৎ কোনো লক্ষণীয় পরিবর্তন আসে এবং তা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়

৬. আগে থেকেই পায়ুপথ দিয়ে রক্ত যায়, যার কারণ এখনও পরিষ্কার নয়

৭. বৃহদান্ত্রের মাংসপেশির দুর্বলতা বা ধীরগতি জনিত কোনো রোগ থাকে

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয় এই  প্রশ্নটা অনেকেই করে থাকেন । গর্ভাবস্থায় মহিলাদের শরীরের নানা পরিবর্তন দেখা দেয়। এই কারণে অনেক সময় কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় গর্ভবতী মহিলাদের। তার মধ্যে একটি হল কোষ্ঠকাঠিন্য। গর্ভাবস্থায় কষা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা খুবই কমন। গর্ভধারণের আগে আপনি এই সমস্যায় না ভুগে থাকলেও গর্ভধারণের পর আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা শুরু হতে পারে।

আর আপনার আগে থেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে গর্ভাবস্থায় তা বেড়েও যেতে পারে। তবে গর্ভকালীন সময়ে সবাই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন না। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য হলেও জীবনধারায় সহজ কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে আপনি অনেকাংশেই কোষ্ঠকাঠিন্য সমাধান করতে পারেন। এতে আপনার গর্ভকালীন সময় কিছুটা হলেও সহজ হয়ে আসবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পেট ফাঁপা, গ্যাস ও অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা হতে পারে। এমনকি খুব চাপ দিয়ে মলত্যাগ করার জন্য মলদ্বারের ভিতরের অংশ কেটে গিয়ে ব্লিডিং হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়। যা থেকে পাইলসের মতো রোগের আশঙ্কা থাকে। এই অসুখে আক্রান্তরা নিয়মিত স্টুল সফটনার খেয়ে থাকেন। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এই ওষুধ নিয়মিত খাওয়া উচিত নয়। তাই গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকঠিন্য দূর করতে চাইলে ঘরোয়া কিছু টোটকা মেনে চলুন। আসুন জেনে যাক সে উপায়গুলো।

গর্ভাবস্থায় শরীরে কিছু হরমোনের মাত্রা ওঠানামা করে। গর্ভকালীন সময়ে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে পরিপাক নালীতে খাবার তুলনামূলকভাবে বেশি সময় ধরে অবস্থান করে। অর্থাৎ খাবার হজম হয়ে মল তৈরি হতে বেশি সময় লাগে। যার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এ ছাড়াও গর্ভাবস্থার শেষের দিকে গর্ভের শিশু অনেকটা বড় হয়ে যাওয়ায়, গর্ভবতী নারীদের জরায়ুও আকারে বেড়ে যায় এবং এটি পরিপাক নালীতে বাইরে থেকে চাপ দেয়। ফলে গর্ভধারণের শেষের দিকে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। তবে হরমোনজনিত কারণ ছাড়াও আরও যেসব কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়তে পারে সেগুলো হলো—

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশসমৃদ্ধ খাবার(যেমন: ফল ও শাকসবজি) না খেলে
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে
  • সারাদিন শুয়ে-বসে থাকলে অথবা হাঁটাহাঁটি না করলে
  • পায়খানার চাপ আসার পরেও সেটি আটকে রাখলে
  • মানসিক চাপ, আতঙ্ক ও ডিপ্রেশনে থাকলে
  • কোনো ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়

গর্ভাবস্থায় নারীরা অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হন। যারা প্রথমবার সন্তান ধারণ করেন, তাদের সমস্যাটা একটু বেশিই হয়। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। সন্তান পেটে আসার পর কোষ্ঠকাঠিন্যের যন্ত্রণা বিষিয়ে দেয় জীবন।এমতাবস্থায় অনেকে ঝুঁকির মধ্যেও পড়েন। পায়ুপথের পাশাপাশি পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। মল ঠিকমতো বের না হওয়ায় সারাক্ষণ অস্বস্তি কাজ করে।

একটু সতর্ক থাকলে গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি থেকে বাঁচা যায়। ঘরোয়া উপায়েও গর্ভকালীন এ সমস্যা থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে প্রতিকারের কিছু উপায় আসুন জেনে নিই-

দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবারঃ অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নারীদের দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। অনেকে দুধ খেতে পারেন না। তাদের দুগ্ধজাতীয় খাবার যেমন-পায়েশ, দধি খেতে বলেন ডাক্তাররা। দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে থাকে।

আঁশযুক্ত খাবারঃ শাকসবজি, ফলমূল কোষ্ঠকাঠিন্যের শত্রু। আঁশযুক্ত খাবার খেলে মল বাড়ে। কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হয়। চিকিৎসকরা বলেন, গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য কমানোর প্রথম ধাপ হল বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া। লালশাক-পালংশাক, লাউশাক, গাজর, আলু, আঙুর, আপেল, কমলা, বেদানা, কলা-এসব খাবার খেলে গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে না। তবে পেঁপে খাওয়া যাবে না।

হালকা ব্যায়ামঃ যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস, ফিস্টুলা হয় না। অন্তঃসত্ত্বাদেরও কিছু হালকা ব্যায়াম আছে। এগুলো অনুসরণ করলে এ সমস্যা কেটে যাবে।

দানাদার খাবারঃ বাদামসহ বিচিজাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে আঁশ পাওয়া যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলো রাখতে পারেন। দানাদার খাবার খাওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকরাও দিয়ে থাকেন। এটি সন্তানের পুষ্টি জোগায়।

তরল খাবারঃ কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় প্রচুর পরিমাণে পানি ও শরবত পান করুন। এটি পায়খানা নরম করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে কিছু দিনের মধ্যেই আপনি ভালো ফল পাবেন।

ইসবগুলঃ কোষ্ঠকাঠিন্যের সঙ্গে ইসবগুলোর সম্পর্ক সাপে নেউলে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় যারা এ সমস্যায় ভোগেন, তারা কোনো ধরনের ভাবনা-চিন্তা ছাড়াই ইসবগুল খেতে পারেন।

লেবু পানিঃ লেবু পানি কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে আরেকটি চমৎকার উপায়। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় লেবু পানি গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে। লেবুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন-সি। এটি শিশুর বৃদ্ধিতেও কাজ করে। এক গ্লাস গরম পানিতে চার চা চামচ লেবুর রস দিন। এর মধ্যে সামান্য মধু যোগ করুন। দিনে দুবার পান করুন।

হাই ফাইবার ডায়েটঃ এখন আমাদের খাবারের মধ্যে প্রসেসড ফুডের পরিমাণই বেশি। মিলে ছাঁটা চাল, ময়দার তৈরি খাবারেই আমরা বেশি খেয়ে থাকি। এই ধরনের খাবার কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করতে মূল ভূমিকা রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এ ধরনের খাবার ছেড়ে হাই ফাইবার যুক্ত হোল গ্রেইন খাবার খান।

এক্ষেত্রে ওটস, ঢেঁকি ছাঁটা চাল, এবং লাল আটার রুটি খাওয়া উচিত। কারণ এই ধরনের খাবারে রয়েছে অনেকটা পরিমাণে ফাইবার। এছাড়া শাক, সবজিতেও এই উপাদান ভরপুর পরিমাণে থাকে। তাই নিয়মিত এই ধরনের খাবার খাদ্য তালিকায় রাখুন।

রোজ ফল খেতে হবেঃ গর্ভাবস্থায় অনেক সময়ে দেহে ভিটামিনের ঘাটতি তৈরি হয়ে থাকে। তাই এই সময়ে নিয়মিত ফল খাওয়া উচিত। ফলে উপস্থিত ভিটামিন ও খনিজের ভাণ্ডার দেহে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যকে তাড়াতেও এটা কাজ দিবে। মনে রাখবেন, ফল হল ফাইবারের ভাণ্ডার। তাই ফল খেলে পেট পরিষ্কার করতে বেশি বেগ পেতে হয় না। রোজ এক থেকে দুটি গোটা ফল খান। এতেই উপকার পাবেন।

নিয়মিত টক দই খানঃ দইতে রয়েছে অসংখ্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। তাই সহজেই পেট পরিষ্কার হয়। এছাড়া দইতে রয়েছে ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম। এই দুই উপাদান কিন্তু হবু মায়ের শরীরের জন্য উপকারী। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত দই খেতে হবে। তবে কেনা দইয়ের পরিবর্তে চেষ্টা করুন বাড়িতে টক দই বানিয়ে খাওয়ার। বাড়িতে পাতা টক দই স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

পর্যাপ্ত পানি পানঃ শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে স্বাভাবিকভাবে শরীর কষে যায়। তাই পানি পানের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় পর্যাপ্ত পানি পান করতেই হবে। তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছ থেকে পানি খাওয়ার পরিমাণটা জেনে নেয়াই ভালো। এছাড়া ডাবের পানি, প্রয়োজনে স্যালাইন পান করতে পারেন। এতেই কোষ্ঠকাঠিন্যের উপদ্রব ও কষ্ট অনেকটাই কমবে।

গর্ভাবস্থায় কখন কোষ্ঠকাঠিন্য হয়

গর্ভধারণের একেবারে প্রথম দিকের সময় থেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য শুরু হতে পারে। অনেকেরই পুরো গর্ভকালীন সময় জুড়েই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকতে পারে। এমনকি সন্তান জন্ম দেওয়ার তিন মাস পর পর্যন্তও আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগতে পারেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে কি না তা কীভাবে বুঝবেন

একবার কষা পায়খানা হলেই আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে গিয়েছে—এমনটা ভেবে দুশ্চিন্তা করবেন না। সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য হলে—
  • এক সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানা হয়
  • পায়খানা শুকনো ও শক্ত হয়
  • পায়খানার দলার আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয়
  • পায়খানা করতে কষ্ট অথবা ব্যথা হয়
  • পেট পরিষ্কার হচ্ছে না এমন মনে হয়
  • পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা লাগা অথবা বমি বমি ভাব হয়
এসব লক্ষণ থাকলে দ্রুত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে পাইলস অথবা গেজ রোগ হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে যেসব খাবার

অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের কারণেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। তাই খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ডায়েট বা খাদ্য পরিকল্পনা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত। এটা পাচন তন্ত্রের সাথেও সম্পর্কিত। ভাজাপোড়া খাবার সাময়িকভাবে ভালো লাগলেও এসব খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য অন্যতম কারণ।
কোষ্ঠকাঠিন্য-সৃষ্টি-করে-যেসব-খাবার
শুধু শাকসবজি খেলেই হবে না। মল শক্ত করে দেয় এমন কিছু খাবারও এড়াতে হবে। নিচে যে সমস্ত খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে যেসব খাবার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-

মিল্ক চকলেটঃ যদি মিষ্টি প্রেমে বা ‘সুইট টুথ’ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকেন তাহলে এখনি দুধের তৈরি চকলেট খাওয়া বাদ দিতে হবে। কেননা এটা কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম প্রধান কারণ। চকলেট উচ্চ চর্বি সমৃদ্ধ যা হজম হতে এবং হজম নালী পর্যন্ত যেতে অনেক সময় লাগে। ফলে দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্য।

শস্যসহ কোকো-বিন খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি কমায়। অনেক বেশি চকলেট বা চকলেটের তৈরি খাবার খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে বলে জানা যায় ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল’য়ে প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে।

ক্যাফিনঃ পছন্দের পানীয়র শীর্ষ তালিকায় থাকা কফি কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ। ক্যাফিন সমৃদ্ধ পানীয় যেমন- শক্তি বর্ধক পানীয়, ব্ল্যাক কফি, ডি ক্যাফ, চা, ক্রিমসহ চা, হট চকলেট, সোডা ইত্যাদি গ্রহণে বাধা নেই।

অতিরিক্ত ক্যাফিন গ্রহণ কোলন থেকে তরল শুষে নেয়। তাই সীমিত পরিমাণে ক্যাফিন গ্রহণ করা হলে মলত্যাগকে উদ্দীপিত করে বলে জানায় ভারতের নদিয়া’তে অবস্থিত ‘ফোর্টিস হাস্পাতাল’য়ের গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট ডা. সুশ্রুত সিং।

প্রক্রিয়াজাত ও হিমায়িত খাবারঃ প্রক্রিয়াজাত ও হিমায়িত খাবার অস্বাস্থ্যকর। এতে বাড়তি স্বাদ, রং, উচ্চ সোডিয়াম ও চিনি যোগ করা থাকে। সংরক্ষক সমৃদ্ধ খাবার যেমন- সালামি, সসেজ, হিমায়িত খাবার এবং ‘রেডি টু কুক’ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। এসব কৃত্রিম উপাদান সমৃদ্ধ খাবার প্রক্রিয়াজাত করতে হজমনালীর ওপর অনেক বেশি চাপ পড়ে।

কোষ্ঠকাঠিন্য হজম সমস্যার মধ্যে অন্যতম। এটা হজম তন্ত্রকে দুর্বল করে দেয়, বলে জানা যায় ‘আমেরিকান জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি’তে প্রকাশিত গবেষণা থেকে।

রেড মিটঃ রেডমিট বা লাল মাংসে প্রোটিন আঁশগুলো হজম করা কঠিন। চর্বি এবং লৌহ বেশি এবং যখন রেড মিট সমৃদ্ধ উচ্চ প্রোটিন ধরনের খাবার খাওয়া হয় তখন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই রেড মিট যেমন- ভেড়া, খাসি, গরু ইত্যাদি মাংস খাওয়া থেকে দূরে থাকাই ভালো।

ক্র্যাকার্সঃ ক্র্যাকার্স হল ময়দা বিশিষ্ট বেইক করা বিস্কুট যা খেতে মচমচে। এটাকে আদর্শ নাস্তা মনে হলেও কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ। বেইক করা ময়দার তৈরির খাবার মল ত্যাগের গতি হ্রাস করে। তাই এগুলো না খাওয়াই ভালো।

গ্লুটেনঃ গ্লুটেন হল এমন এক ধরনের প্রোটিন যা গম, সুজি, রাই ও বার্লিকে একত্রে আবদ্ধ করে। এটি খাবারকে আবদ্ধ করে রেখে একটি আকার দেয়। অধিকাংশ মানুষেরই গ্লুটেন সংবেদনশীলতা থাকে। আর সেটা গ্রহণের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য গ্লুটেইন সংবেদনশীলতার কোনো সাধারণ লক্ষণ নয়। তবে যে ব্যক্তিরা ‘সেলিয়াক’ রোগে আক্রান্ত তাদের গ্লুটেইন ধরনের খাবার থেকে দূরে থাকা উচিত বলে জানা যায়, স্ট্যাটপার্লস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে।

ভাজা বা ফাস্ট ফুডঃ নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাথমিক কারণ হল ভাজা খাবার বা ফাস্টফুড। এর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হল- হৃদরোগ ও স্থূলতা। উচ্চমাত্রার সোডিয়াম এবং কৃত্রিম খাদ্য সংরক্ষক মলাশয়ের মধ্য দিয়ে খাবারের প্রবাহকে ধীর করে দেয়। ফলে দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্য। ফাস্টফুড বা ভাজা ধরনের খাবার দিনে একবার খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকির পাশাপাশি নানান স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।

শেষ কথা

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়, কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ কী কী, দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কী কী সমস্যা হয়, ও জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে উপরে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি।

আশা করছি এই আর্টিকেলটি পড়ে কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে দূর করার উপায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন।

ডিসক্লেইমারঃ এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url