পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা, মেথি খাওয়ার নিয়ম

 পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা ও এর পুষ্টি গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। ভেষজ উপাদান মেথি অনেকেই চিনেন। কিন্তু আপনি কি জানেন নিয়মিত মেথি খেলে অনেক কঠিন রোগও ভালো হয়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে শরীরের রোগ-জীবাণু বের হয়ে যায়।

পুরুষের-জন্য-মেথির-উপকারিতা
রক্তে চিনির মাত্রা কমে ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমে যায়। ডায়াবেটিসের রোগী থেকে শুরু করে হৃদ্‌রোগের রোগী পর্যন্ত সবাইকে তাঁদের খাবারে মেথি রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। নিচে পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা ও পুরুষের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম বর্ণনা করা হলোঃ

পেইজ সূচিপত্রঃ মেথির উপকারিতা ও মেথি খাওয়ার নিয়ম

পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা 

পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা অপরিসীম। পুরুষ দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়াতে মেথি দারুণ কার্যকরী। বুঝতেই পারছেন পুরুষের জন্য মেথি কতোটা উপকারি। পুরুষ যৌন স্বাস্থ্যের জন্য মেথি অত্যন্ত উপকারী। পুরুষদের যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে মেথি এক মহাঔষধ। প্রতিদিন নিয়ম করে মেথি খেলে পুরুষের যৌনক্ষমতা পর্যাপ্ত পরিমানে বেড়ে যায়। মেথি পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম।


মেথি কীভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে, টেস্টোস্টেরন হল সেক্স হরমোন। পুরুষ এবং মহিলা– উভয়ের দেহেই এই হরমোনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তাহলে বুঝতেই পারছেন মহিলা ও পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।

যৌন ক্রিয়ায় সাহায্য করার পাশাপাশি এনার্জির মাত্রা বাড়াতে, দেহের হাড় মজবুত করতে এবং মন-মেজাজ ভালো রাখতে এই হরমোন দারুণ সহায়তা করে।তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং ওবেসিটি ও ডায়াবেটিসের মতো কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমতে শুরু করে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পঁয়তাল্লিশের উর্ধ্বে যেসব পুরুষের বয়স, তাঁদের ৩৯ শতাংশের মধ্যেই টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি রয়েছে।

এই ধরনের সমস্যা যাতে না-তৈরি হয়, তার জন্য নানা ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি।আবার অনেকেই এই ধরনের চিকিৎসার রাস্তায় হাঁটেন না। তাঁরা সাধারণত বিকল্প পথ অবলম্বন করেন। তাঁরা সাধারণত প্রাকৃতিক উপায়ে বা ঘরোয়া টোটকার মাধ্যমেই টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করেন। আর এক্ষেত্রে অনেকেই ব্যবহার করেন হার্বাল সাপ্লিমেন্ট, যা মেথি থেকেই তৈরি করা হয়। যা পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা অপরিহার্য।

একটি গবেষনায়, আনুমানিক ৩০টি দেশের ২৫ হাজার পুরুষের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। যেসব পুরুষ তাদের যৌনশক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের মেথির রস দিনে দু’বার পরিমাণ মতো সেবন করতে দেওয়া হয় ওই পরীক্ষায়। এতে আশ্চর্য রকম সুফল পাওয়া যায়। প্রতিদিন পরিমিত মেথির রস সেবনে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখময় হয়ে উঠে।

মেথি খাওয়ার নিয়ম

মেথি খাওয়ার নিয়ম হলো মেথি সাধারণত রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও আপনি আলাদা করে এই মেথি নিয়ম করে খেতে পারবেন। মেথি খাওয়ার নিয়ম হিসেবে আপনাকে কিছু নিয়ম মানতে হবে, যাতে ফল ভালো পান। মেথি খাওয়ার নিয়ম গুলো জেনে নিন-

  • প্রথমে এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানি নিয়ে নিন।
  • এরপর সারারাত সেই পানিতে এক চামচ মেথি ভিজিয়ে রাখুন। সারারাত ধরে ভিজিয়ে রাখার পর সকাল বেলা খালি পেটে সেই মেথি মেশানো পানি পান করুন।
  • সকাল বেলা উঠার পর মেথি ভেজানো পানির সাথে একটু লেবুর রস ও মধু মিশিয়েও পান করতে পারবেন।
  • শুধু মেথি চাইলে সকালে চিবিয়েও খেতে পারবেন। এর পাশাপাশি রুটি, ঝোল, পরোটা, তরকারি, সালাদ বা মাছের সাথে মেথি ব্যবহার করতে পারবেন।
  • একটি বাটিতে পানি নেয়ার পর তাতে ২ চামচ মেথি দানা দিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে ঘুম থেকে উঠে শুধু পানিটুকু ছেঁকে পান করলে কয়েকদিনে ভালো ফলাফল পাবেন।
  • মেথির পেস্ট গোলাপজল দিয়ে তৈরি করে নিতে পারবেন। এই পেস্ট ব্যবহারের ফলে ব্রণ, দাগ, চোখের নিচের কালো দাগ ও ত্বকের বলিরেখা সেরে যাবে।
  • তাৎক্ষনিক খাওয়ার জন্য গরম পানিতে ভিজিয়েও খেতে পারেন।
  • তাছাড়া পানির সঙ্গে মেথি গুড়া মিশিয়েও খাওয়া যায়।

পুরুষের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম

পুরুষের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম এবং এর উপকারিতা জানাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরাসরি বা পানিতে ভিজিয়ে মেথি খেলে শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়। মেথি টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি করে পুরুষদের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি শুক্রাণুর সংখ্যা ও গতিশীলতা বৃদ্ধি করে। মেথি পুরুষদেহের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। এটি পেশী বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

খেলাধুলা ও ব্যায়ামের জন্য দেহকে শারীরিকভাবে প্রস্তুত করে মেথি। মেথি খাওয়ার ফলে পুরুষের সেক্স পাওয়ার বেড়ে যায় এছাড়াও পুরুষের বীর্যের শুক্রাণু বাড়ানোর ক্ষেত্রে ও অনেক কার্যকরী এই মেথি। রাতে ১ গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে তারপরে সেটা সকালে খালি পেটে মেথি সহ পানি খেতে হবে এতে করে পুরুষের বীর্যের শুক্রানু বাড়ে এটা তিন মাস একই ভাবে খেতে হবে। যাদের বাচ্চা হচ্ছে না তারা তাদের শুক্রাণু বাড়ানোর জন্য তিন মাস গোটা মেথি অথবা মেথি গুড়া রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপরে সেটা সকালে খালি পেটে খাতে পারেন এতে শুক্রাণু বাড়বে।

একটি পরীক্ষাটি করা হয় ২০১৭ সালে, আনুমানিক ৩০টি দেশের ২৫ হাজার পুরুষের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। যেসব পুরুষ তাদের যৌনশক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের মেথির পানি দিনে দু’বার, পরিমাণ মতো সেবন করতে দেওয়া হয় ওই পরীক্ষায়। এতে আশ্চর্য রকম সুফল পাওয়া যায়। প্রতিদিন পরিমিত মেথির পানি সেবনে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখময় হয়ে উঠে। যারা বন্ধ্যাত্ব রোগে ভুগছিলো এ সকল পুরুষেরা তিন মাস মেথির পানি খাওয়ার পরে দেখা যায় যে ৮৫% পুরুষের শুক্রাণু সংখ্যা বেড়ে যায়।

এছাড়া মেথিতে আছে সেপোনিন এবং সেপোজেনিন নামের এই দুইটি উপাদান যা সেক্স ভিটামিন আর এই দুইটি উপাদান আপনারা পর্যাপ্ত পরিমাণে পেতে পারেন মেথি গুড়াতে। যা আপনাদের সেক্স পাওয়ার অথবা হরমোন বাড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক কার্যকরী। আর যদি পুরুষের সেক্স হরমোন কম থাকে তাহলে তাদের সেক্স করার ইচ্ছা অনেক কম হয় আর এটা বাড়ানোর জন্য মেথি খান। মেথি গুড়া আপনারা বাজার থেকে কিনতে পারেন কিন্তু বাজার থেকে কেনা এই গুড়াতে ভেজাল থাকতে পারে এজন্য আপনারা বাড়িতেই ব্লেন্ডারের মেথি গুড়া করতে পারেন।

এতে কি আছে যাতে সেক্স হরমোন বাড়ে

সেপোনিন ও সেপোজেনিন এই দুই উপাদান হচ্ছে সেক্স ভিটামিন। যা পর্যাপ্ত পরিমানে পাবেন মেথী গুড়াতে। বাজার থেকে মেথি গুড়া কিনতে পারেন কিন্তু সবচেয়ে ভালো হয় গোটা মেথি নিজেই ব্লেন্ডারে গুড়া করে নেয়া। বাজারের গুড়া মেথি ভেজাল হতে পারে। তাই গোটা মেথি কিনে গুড়া করে মেথির পানি খান ৩ মাস নিয়মিত। ভালো রেজাল্ট পাবেন। তাহলে পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা ও মেথি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারলেন মেথি কতোটা উপকারি ।

খালি পেটে মেথি ভেজানো জল খেলে কি হয়

খালি পেটে মেথি ভেজানো জল খেলে কি হয় জেনে নিন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে শরীরের রোগ জীবাণু দূর হয়। বিশেষত কৃমি মরে যায় এবং রক্তে চিনির মাত্রা কমে, রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমে যায়। বার্ধক্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে তারুণ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে মেথি। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা হজম ক্ষমতা বাড়ায়।

সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো জল খেলে কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যাও দূর হয়। প্রতিদিন সারারাত ভেজানো মেথির জল খালি পেটে খেলে খিদে ও হজমশক্তি বাড়বে। এ ছাড়াও যে কোনও খাবারের সঙ্গেই রাখতে পারেন মেথি। রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে ভীষণ সাহায্য করে মেথি। তাই রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সমস্যা থাকলে মেথি খাওয়ার পরামর্শ দেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা। এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে, যা হার্ট ভালো রাখতে ভীষণভাবে সাহায্য করে। তাই নিয়ম করে সকালে মেথি ভেজানো পানি পান করলে হার্টের সমস্যা ধারেকাছে ঘেঁষতে পারে না।

মেথি খাওয়ার উপকারিতা

মেথির খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন। মেথির রসে সাপোনিস ও ডায়োজেনিন নামে যৌগ পদার্থ আছে। মানুষের শরীরে হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। প্রতিদিন পরিমিত মেথির রস খেলে পুরুষের যৌনক্ষমতা বাড়ে। মেথিতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি ও নিয়াসিন। ত্বককে রাখে সতেজ, টানটান বার্ধক্য দূরে ঠেলে তারুণ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করে। 

ভেজা পরিষ্কার কাপড়ে মেথিদানা গুঁড়ো করে ফোড়া, পোড়া ও বিভিন্ন চর্মরোগে ব্যবহার করলে উপকার মেলে। মুখের ব্রণ, কালো দাগ, ফুসকুড়ি উধাও হয়। মেথি খেলে স্ট্রোকের প্রবণতা অনেকটা কমে যায়। সকালে খালি পেটে মেথিদানা চিবিয়ে খেলে ওজন কমে। লেবু ও মধুর সঙ্গে মেথিদানা গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে গলাব্যথা ও কাশি কমে। দেহের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।

মেথি বেঁটে চুলে লাগালে চুল পড়া কমে, চুল ঘন হয়। খুসকি কমে, চুল হয় আরও উজ্জ্বল। তবে মেথি ভিজিয়ে পিষলে পুষ্টি নষ্ট হয়ে যায়। রোদে শুকিয়ে নিয়ে খেলে মচমচে লাগবে।

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে বা একগ্লাস পানিতে মেথি মিশিয়ে খান। ৬ মাসের বেশি মেথি খাওয়া যাবে না। কারণ, বেশি মেথি খেলে কিছু সাইড এফেক্ট হতে পারে। ডায়ারিয়া, গ্যাস বা পেটের গন্ডগোল। অন্ত:সন্তা নারী ও শিশুদের মেথি না খাওয়াই ভালো। মেথির খাওয়ার উপকারিতা গুলো নীচে আলোচনা করা হলো-

ওজন কমাতে সহায়তা করেঃ শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন মেথি চিবিয়ে খেতে পারেন। দুই সপ্তাহের মতো খেলে বুঝতে পারবেন, শরীরের উপকার পাচ্ছেন। শরীরের স্থূলতা কমাতে প্রতিদিন সকালে মেথির জল খেতে পারেন। এক গ্লাস পানিতে ১ টেবিল চামচ মেথি রাতে ভিজিয়ে দিন পরদিন সকালে মেথির পানি পান করুন এতে আপনার গ্যাসের সমস্যার সমাধান মিলবে যা আপনি দুই সপ্তাহ ছেলেই বুঝতে পারবেন। কিন্তু বেশি মেথি সেবন করলে হিতে বিপরীত হতে পারে তাই পরিমাণমতো খাবেন।

পুরুষদের যৌন শক্তি বৃদ্ধি করেঃ পুরুষদের যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে মেথি এক মহাঔষধ। প্রতিদিন নিয়মিত মেথি খেলে পুরুষের যৌনক্ষমতা পর্যাপ্ত পরিমানে বেড়ে যায়। নারী ও পুরুষ উভয়েই যৌনতার জন্য মেথি ব্যবহার করে।তবে উষ্ণ প্রকৃতির লোকদের জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় মেথি সেবন করলে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে মেথি দৈনিক ৫ থেকে ১০গ্রাম পর্যন্ত সেবন করা যায়।

হজমপ্রক্রিয়া উন্নত করেঃ দীর্ঘদিন ধরে যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য মেথি (Fenugreek)এক ধরনের প্রাকৃতিক আশীর্বাদ স্বরুপ।এটাকে এজন্য পাওয়ারহাউজও বলা হয়ে থাকে।এটাতে থাকা বায়োএকটিভ উপাদান যেমন স্যাপোনিনস,মিউসিলেজ ইত্যাদি ছাড়াও এলকালয়েডস যৌগ রয়েছে যা খাবার ভালোভাবে ভেঙ্গে যেতে সহায়তা করে।আর হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইমগুলো নিঃসরিত হতে সাহায্য করে যা হজম প্রক্রিয়া ভালোভাবে হওয়ায়।তাছাড়াও মেথি পেঁট ফাপ এবং অস্বস্তিকর অনুভূতি দূর করতেও দারুন কার্যকর।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ অনেকেই আছেন যাদের এই কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা রয়েছে।সেক্ষেত্রে মেথির উপকারিতা দেখার মত।মেথি(Fenugreek) পাচনতন্ত্রের পেশীর রিফ্লেক্স ঘটিয়ে পাচনতন্ত্রের কার্যকারীরতা বাড়ায়।এছাড়াও মেথিতে বিদ্যমান ফাইবার পানি শোষণ করে স্ফীত হয়।

প্রসূতির জন্য সহায়ক এবং মাতৃদুগ্ধ বাড়ায়ঃ প্রসূতির নানা সমস্যা বিশেষ করে প্রসব পরবর্তি ব্যথা,পিরিয়ডিকাল পেইন,মহিলাদের প্রাইভেট পার্টস সম্পর্কিত নানা সমস্যায় মেথির উপকারিতা চমৎকার।মেথিতে ফাইটোস্ট্রেজেনিক উপাদান রয়েছে যা সদ্য মা হওয়া প্রসূতির দুগ্ধ উৎপাদন বাড়াতে দূর্দান্ত উপকারী।

রক্তে চিনির মাত্রা কমায়ঃ মেথির উপকারিতা বলতে যেয়ে যেটা না বল্লেই নয় যে এটি ডায়বেটিস বা বহুমূত্র রোগীদের জন্য আদর্শ একটি পথ্যস্বরুপ। এটা রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়,ইনসুলিন এর কার্যকারিতা বাড়িয়ে ইনসুলিন রেসিসট্যান্স কমিয়ে আনে যেটা অত্যন্ত জরুরি ডায়রেটিক রোগীর জন্য।এভাবে রক্তে শর্করার বা চিনির মাত্রা কমাতে মেথি(Fenugreek) সুপার্ব।

এসিডিটির সমস্যা, আমাশয় দূর করতে সাহায্য করেঃ মেথিতে (Fenugreek) বিদ্যমান মিউসিলেজ গ্যাসট্রোইনটেসটিনাল ট্র্যাক্ট এর ওপর কাজ করে,অতিমাত্রায় এসিড নিংসরণের প্রকোপ কমিয়ে অস্বস্তির মাত্রা কমায়,ডাইজেস্টিভ সাপোর্ট দেয়,মিউকাস উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে যেন এসিড প্রতিরোধ করতে পারে।এভাবে মেথির উপকারিতা (Fenugreek) পুরো গ্যাস্ট্রোলজিকাল ব্যপারটাতে প্রভাব ফেলে।

এন্টিঅক্সিডেন্টাল একটিভিটিঃ ফ্ল্যাভিনয়েডস,পলিফেনল ছাড়াও আরো অন্যান্য এন্টিঅক্সিডেন্টস ধারন করে বিধায় স্বাস্থ্য রক্ষায় মেথির উপকারিতা(Fenugreek) অকল্পনীয়।এন্টিঅক্সিডেন্টাল গুণাবলির কারণে মেথি ফ্রি রেডিক্যালস এর জন্য হওয়া ক্ষয়ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়,অক্সিডেটিভ ড্যামেজে থেকে কোষসমুহকে সুরক্ষ দেয়।

নারীদেহকে সুগঠিত করে ও সৌন্দর্য ধরে রাখেঃ নারীদেহে মেথির উপকারীতার(Fenugreek) শেষ নেই।বিশেষ করে ডিয়োসজেনিন নামক একটি ফাইটোস্টোজেন রয়েছে যা নারীদেহকে সুগঠিত করে এবং সৌন্দর্যময় অবয়বে নিয়ে আসতে চমৎকার কাজ করে।এছাড়াও মেনোপজাল সিম্পটম যেমন সাদাস্রাব,নাইট সোয়েটস,মুড সুইং ইত্যাদি ব্যাপারগুলো কন্ট্রোলিংয়ে মেথি দূর্দান্ত। এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়,হরমোনাল ইমব্যালেন্স দূর করতে সহায়তা করে।এভাবে মেথি নারীদেহের সৌন্দর্য দীর্ঘদিন ধরে রাখতে এবং সেটা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

রক্তস্বল্পতা কমায়ঃ এনিমিয়া বা রক্তসল্পতার সমস্যায় মেথির উপকারিতার শেষ নেই।এটাতে থাকা প্রচুর আয়রন লাল রক্তকনিকার উৎপাদন বাড়ায়,হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে তোলে,পুস্টি শোষণ ক্ষমতা ইমপ্রুভ করে। এভাবে করে রক্তস্বল্পতা কমিয়ে আনে।

তারুণ্য ধরে রাখেঃ প্রচুর পরিমান পটাশিয়াম,ভিটামিন সি,নিয়াসিন,প্রটিন,ফাইবার থাকায় দীর্ঘস্থায়ী তারুণ্যতা বজায় রাখতে মেথির উপকারিতা অসাধারণ। এন্টিঅক্সিডেন্টাল একটিভিটি,হরমোনাল ইমপ্রুভমেন্ট,স্কিন ও হেয়ার বেনিফিটস সমন্বিত হয়ে মেথি হয়ে উঠেছে তারুণ্যময়তা ধরে রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী।

জ্বর ও খুসখুসে গলার জন্যঃ ১টেবিল চামচ মেথি সাথে লেবু ও মধু মিশিয়ে চিবিয়ে খেলে জ্বর থেকে মুক্তি মেলে। মেথিতে রয়েছে লুসিলেস নামের এক ধরনের যৌগ যা আপনার গলার খুসখুসে ভাব দূর করে।

চুল পড়া রোধেঃ আপনার চুলের সমস্যা, মেথি সমাধান দিতে পারে। আপনার চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে দেবে। মেথি চুল পাকা রোধে মেথির ব্যবহার বহুকাল ধরেই হয়ে আসছে। এছাড়াও চুল পড়া, চুল মসৃণ করে মেথি। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন। রাতে ঘুমানোর আগে পরিমাণমতো মেথি নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে, পরদিন গোসল করার আগে মেথি বেটে পেস্ট করে মাথায় ভালোভাবে মেসেজ করে লাগাতে হবে। আধাঘন্টা বা ১ ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলবেন দুই থেকে তিন সপ্তাহ ব্যবহারের পর নিজেই বুঝতে পারবেন কিরকম ফিডব্যাক পাচ্ছেন।

হজমে সহায়কঃ পেট ও বুকের উপরের দিকে এসিডের প্রদাহ থেকে মুক্তি দেয় মেথি। সেইসঙ্গে হজমের যাবতীয় সমস্যার সমাধানে মেথি কাজ করে। মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের বিষাক্ত উপাদানগুলোকে দেহ থেকে বের করে দেয়। তাই প্রতিদিন সকালে মেথি ভেজানো পানি খেতে ভুলবেনা।

রক্তে গ্লুকোজ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ আমাদের দেহে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে মেথি। এর অ্যামাইনো এসিড অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন ক্ষরণে সহায়তা করে ফলে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

উজ্জ্বল ত্বকের জন্যঃ রূপচর্চা করতে মেথিকে সবার শীর্ষে রাখা যায়। আমাদের দেহে বয়ে বেড়ানো ক্ষতিকর উপাদান চেহারায় বলিরেখা ফেলে দেয়। মেথি দেহের শরীরের জন্য ক্ষতিকর উপাদানগুলোকে ফিল্টারিং করে বিদায় করে দেন।

খুশকি দূর করেঃ আমরা অনেকেই চুলে খুশকির জ্বালায় ভুগে থাকি। মাথার মৃত ও শুষ্ক ত্বক থেকে খুশকি সৃষ্টি হয়। পরিমান মত মেথি নিয়ে রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন পরদিন ভেজানো মেথি গুলো বেটে পেস্ট করে চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন আধাঘন্টা রাখার পর ধুয়ে ফেলুন এতে আপনার খুশকি দূর হবে।

নারীদের জন্য মেথির উপকারিতাঃ নারীদের স্বাস্থ্যগত বিষয়ও এর আনান উপকারিতা রয়েছে। এতে রয়েছে সাইটো-ইস্ট্রোজেন যা নারীদের প্রোলাকটিন নামের হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটায়। এই হরমোন নারী দেহকে সুগঠিত করে। মেয়েদের জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারণ এর যন্ত্রণা কমাতে মেথি উপকার করে।

মেয়েদের জন্য মেথির উপকারিতা

মেথি এমন একটি উপাদান যা ছেলে মেয়ে সবার জন্যই উপকারি। মেথিতে থাকা প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুন সব বয়সের মানুষের শরীরে সহনীয়। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে একটু বেশি উপকারি। মেয়েদের যদি মাসিকের সমস্যা হয়ে থাকে বা নিয়মিত না হয়। তার প্রতিকার হিসেবে মেথি খাওয়া যেতে পারে। নিম্নে মেয়েদের জন্য মেথির উপকারিতা আলোচনা করা হলো-

আরও পড়ুনঃ

মেথিতে রয়েছে ফাইটো-এস্ট্রোজেন হরমনের সমস্যা ‍দূর করে, মাসিকের সমস্যা দূর করে এবং মাসিক নিয়মিত করে। মেথি খেলে মেয়েদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত কমায় এবং ব্যথা কমাতে কার্যকারি। কিছু কিছু মা রয়েছেন, যাদের স্তনে দুধের পরিমান কম হওয়ার কারনে বাচ্চাকে পরিমিত দুধ পান করাতে পারেন না। তারা নিয়মিত মেথি খেতে পারেন। মেথিতে খেলে মেথিতে থাকা গ্যাল্যাক্টোগুগ মায়েদের স্তনে অধিক পরিমান দুগ্ধ উৎপন্ন হয়, ফলে বাচ্চা পরিমিত দুধ পান করতে পারে।

মেয়েরা সন্তান প্রসবের পর শারীরিক ভাবে অনেকটা দূর্বল হয়ে পড়েন। এই দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে অনেক দিন সময় লাগে। সেই মায়েদের নিয়মিত খাদ্য গ্রহনে সাথে নিয়মিত মেথি খাওয়া উচিত। কারন মেথিতে থাকা প্রয়োজনীয় উপাদান শরীরের রিকভারি এবং স্ট্যামিনা বাড়াতে সাহায্য করে। যার ফল স্বরুপ প্রসবের ঝুঁকি থেকে দূত বের হয়ে আসতে পারেন।

মেয়েরা বাধ্যকের কারনে হোক বা সাংসারিক কারনে হোক চুলের যত্ন নিতে ভুলে যান বা সময় পান না। ফলে আপনাদের চুল পড়া শুরু করে, খুশকি হয়। এই সমস্যা সমাধানে নিয়মিত মেথি খেতে পারেন। মেথি চুলে জন্য অপরিহার্য । নিয়মিত মেথি খেলে আপনার চুলে খুশকি দূর হবে। চুল পড়া রোধ করে নতুন চুল গজাবে।

তবে গর্ভবতী মেয়েদের অতিরিক্ত মেথি খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত মেথি খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মেয়েদের রক্ত ক্ষরনের সমস্যা হতে পারে এবং অকাল প্রসবের ঝুঁকি থাকে। তাই গর্ভবতী মেয়েদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া মেথি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

মেথি চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

মেথি সাধারনত আমাদের রান্নার কাজে ব্যবহিত হয়ে থাকে। তবে এর কিছু ঔষধি গুনও রয়েছে। যা আমাদের শারীরিক উন্নতিতে সাহায্য করে।আপনি যদি অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত হয়ে থাকেন, তাহলে মেথি চিবিয়ে খেতে পারেন। কারণ মেথি রয়েছে প্রয়োজনীয় ফাইবার। যা আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে আমাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে এবং স্বাভাবিক চলাচলে সাহায্য করে।
মেথি-চিবিয়ে-খাওয়ার-উপকারিতা
টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এক কার্যকারী উপায় হল মেথি চিবিয়ে খাওয়া। কারণ মেসি তো থাকা ডায়ানির নামক উপাদান, যা আমাদের রক্তে থাকা সরকারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে। হলে ফলে আমাদের ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে। মেথি চিবিয়ে খেলে তা আমাদের শরীরে ইনসুলিনের মত কাজ করে।

আরও পড়ুনঃ

আপনার কি হার্টের সমস্যা বা আপনার শরীরে অপ্রয়োজনীয় কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি? সেক্ষেত্রে আপনি মেথি চিবিয়ে খেতে পারেন, কারণ নীতিতে থাকা ফাইবার আমাদের শরীরে থাকা অপ্রয়োজনীয় কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে, প্রয়োজনীয় কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। যা আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

আপনি কি শারীরিকভাবে অসুস্থ বা আপনার শরীরে নানান রোগের বাসা? তাহলে আপনি মেথি চিবিয়ে খেতে পারেন কারণ মেথিতে রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-কে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আমাদের ঠান্ডা লাগা সর্দি এবং অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

আপনার ত্বকে কি অতিরিক্ত দাগ? বা আপনার ত্বক মলিন হয়ে গেছে? সেক্ষেত্রে আপনি মেথি চিবিয়ে খেতে পারেন। কারন মেথিতে থাকা ভিটামিন এ,সি এবং ই আমাদের ত্বকে থাকা দাগ, ব্রণ দূর করার পাশাপাশি আমাদের ত্বক উজ্জ্বল করে এবং ত্বকে থাকা অন্যান্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

আপনার কি অনেক বেশি চুল পড়ছে? চুল পড়া রোধে কিছুই করতে পারছেন না? তাহলে আজ থেকেই নিয়মিত মেথি চিবিয়ে খেতে পারেন। কারন মেথিতে থাকা প্রয়োজনীয় উপাদান আপনার চুল পড়া রোধে ভূমিকা রাখবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।

চুলের জন্য মেথির উপকারিতা

বর্ষাকালে চুল পড়ার সমস্যা নতুন নয়। নারী, পুরুষ নির্বিশেষে কমবেশি সকলেই এই সমস্যায় ভোগেন। বর্ষাকাল কাটতে না কাটতেই আবার পুজোর মরসুম এসে যায়। মাথার বেশির ভাগ চুল যদি ঝরে পড়ে যায়, তা হলে পুজোর দিনগুলিতে চাইলেও চুলে কায়দা করতে পারবেন না। অবশ্য চুলের সমস্যা তো একটা নয়।চুল বড় না হওয়া, খুশকি, চুল নিষ্প্রাণ হয়ে পড়া এমন হাজার সমস্যা রয়েছে চুল নিয়ে।

এত সব সমস্যা মেটাতে গুচ্ছ গুচ্ছ টাকা খরচ না করে ভরসা রাখতে পারেন মেথির উপর। ভিটামিন এ, বি, সি, কে, প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, ফসফেট, ফলিক অ্যাসিড, স্যাপোনিন্‌স এবং ফ্ল্যাভনয়েডের মতো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ মেথি চুলের কোন কোন উপকারে লাগে।

চুলের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে কী ভাবে ব্যবহার করবেন মেথি

১। মেথির তেলঃ ১ কাপ নারকেল তেলে ১ টেবিল চামচ মেথি দানা ভাল করে ফুটিয়ে নিন। মেথির রং লালচে হয়ে গেলে গ্যাস বন্ধ করে দিন। ঠান্ডা করে ছেঁকে কাচের শিশিতে ভরে রাখুন মেথির তেল। সপ্তাহে তিন দিন মাথায় লাগান এই তেল।

২। মেথি দিয়ে তৈরি মাস্কঃ আগের রাতে ১-২ টেবিল চামচ মেথি জলে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন মিক্সিতে ভাল করে বেটে নিন। এর সঙ্গে মেশাতে পারেন ১ টেবিল চামচ লেবুর রস। ভাল করে মিশিয়ে মাথায় মেখে রাখুন। আধ ঘণ্টা পর হালকা গরম জল দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন।

৩। মেথি ভেজানো জলঃ২-৩ টেবিল চামচ মেথি দানা ১ লিটার জলে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন চুলে শ্যাম্পু করার পর, মেথি ভেজানো জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুলের জন্য এই টোটকা করলে কন্ডিশনার ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে না।

চুলের সমস্যা সমাধানে মেথি

চুল আভিজাত্য, সামাজিক অবস্থান ও সৌখিনতার প্রতীক। রমনীর কেশ বাঙালীর এক অবসেশন। কিন্তু তার উপর রয়েছে চুলের নানা রকম সমস্যা যেমন- চুল পড়া, খুশকী, চুলের অকালপক্কতা, মাথার ছত্রাক সমস্যা এবং আরো অনেক। সঠিকভাবে চুলের প্রকার ও সমস্যা চিহ্নিত করে উপযুক্ত সমাধান বেছে নিতে পারলে এই সমস্যা দ্রুত কাটিয়ে উঠা সম্ভব। চলুন তবে চুলের যত্নে মেথির ব্যবহারগুলো জেনে নেই!

চুল পড়া কমায়ঃ চুল পড়া সত্যিই একটি বিব্রতকর সমস্যা। বহুবিধ কারণেই চুল পড়তে পারে। তবে দৈনিক গড়ে ৫০ থেকে ১০০টি পর্যন্ত চুল পড়াকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে বেশী করে চুল পড়া শুরু করলে তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে এর জন্য চিন্তার ভারটা মেথির উপর ছেড়ে দেয়াই শ্রেয়। চুল পড়া সমস্যায় এবং চুলের যত্নে মেথির ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী।

৫০ গ্রাম মেথি ২০০-৩০০ মিলি পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানিটুকু ছেঁকে নিন। এ থেকে এক গ্লাস পানি খালি পেটে পান করুন।

মেথিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও নিকোটিনিক এসিড রয়েছে যা চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায় এবং চুলকে মজবুত করে। এই পানি প্রতিদিন পান করলে পেটের যাবতীয় পীড়াজনিত ও পরিপাকজনিত সমস্যা দূর হয়। দেহের অতিরিক্ত ওজন ও কমে। বাকী পানিটুকু একটি স্প্রে বোতলে নিয়ে নিন। এবার মাথার ত্বকে এবং চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত এই পানি স্প্রে করুন। এবার আঙুলের ডগার সাহায্যে সারা মাথা ৭-১০ মিনিট ম্যাসাজ করুন। ১ ঘন্টা অপেক্ষা করে চুল ধুয়ে ফেলুন। চাইলে সারারাত এটা মাথায় রাখা যেতে পারে। চুল পড়া কমাতে এবং চুলের ভিত্তিকে মজবুত করতে এর জুড়ি নেই।

চুলের খুশকি দূর করেঃ খুশকি চুলের অন্যতম প্রধান সমস্যা যা সাধারণত বয়:সন্ধিকালের পূর্বে দেখা যায় না। খুশকি হলে মোটামুটি সবাই লক্ষণ দেখে সহজেই বুঝতে পারে যে মাথায় খুশকি হয়েছে। একটু সচেতনতা ও যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে সহজেই খুশকি মুক্ত ঘন দীর্ঘ চুল পাওয়া যায় এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিস্কৃতি লাভ করা যায়। ২-৩ চা চামচ মেথি ১ কাপ পানিতে ১০-১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এবার মেথিসহ কিছুটা পানি ব্লেন্ড করে পেস্ট করে নিন। এতে ২-৩ চা চামচ টক দই যোগ করুন।

এবার এই প্যাকটি মাথার ত্বকে ভালভাবে লাগিয়ে নিন। ৩০-৪০ মিনিট অপেক্ষা করে তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। খুব বেশী খুশকি সমস্যা হলে সপ্তাহে অন্তত ১ দিন আর কম হলে ১৫ দিনে একবার এই প্যাকটি ব্যবহার করা যেতে পারে। খুশকি সাধারণত শুষ্ক ত্বক এবং ছত্রাক সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। মেথি মাথার পুষ্টি যোগায় এবং ছত্রাক সংক্রমণ রোধ করে।

চুলের অকালপক্কতা রোধ করেঃ চুল পাকা নিয়ে অনেকেই হতাশায় ভোগেন। বিশেষ করে অল্প বয়সেই যাদের চুল পাকা শুরু হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অপুষ্টি ও অযত্নের জন্যও চুলে অকালপক্কতা দেখা দিতে পারে। শরীরে আয়োডিন ও ভিটামিনের অভাবে চুলের যে স্তরে রঙের কোষ তৈরী হয়, সেই স্তরের রঞ্জক কোষ তৈরী বন্ধ হয়ে যায় এবং চুল সাদা হতে শুরু করে। অনেক সময় তীব্র মানসিক আঘাতে, জটিল অসুখেও কম বয়সে চুল সাদা হয়ে যেতে পারে। নারিকেল তেলে কমপক্ষে ২দিন মেথি ডুবিয়ে রাখুন।

এবার এই তেল কুসুম গরম করে মাথায় ত্বকে ম্যাসাজ করুন। চুলের ফলিকলের যেকোন সমস্যা সমাধানে এই তেল যাদুর মতো কাজ করে। এটি চুলে টনিকের মতো কাজ করে চুলের হারানো রঙ ফিরিয়ে আনে। চুলকে গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পুষ্টি যুগিয়ে চুলের অকালপক্কতারোধে এটি মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে কাজ করে। এটি চুলের বৃদ্ধিতেও সমানভাবে কাজ করে।

চুলের বৃদ্ধি এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করেঃ মেথিতে প্রচুর পরিমাণে লেসিথিন রয়েছে যা চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগায় এবং চুলের বৃদ্ধিতে ও নতুন চুল কার্যকরী। ১ টেবিল চামচ মেথি এবং ১ চা চামচ সরিষা দানা পাউডার করে নিন। ২-৩ টেবিল চামচ কুসুম গরম পানিতে এই পাউডার ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এতে ১ চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে মিহি পেস্ট তৈরী করুন।

এবার এই পেস্ট ভালোভাবে মাথায় ত্বকে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি মাসে একবার ব্যবহার করা যেতে পারে। নিয়মিত ব্যবহারে চুলের রুক্ষভাব দূর হয়। সরিষাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ রয়েছে যা চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে উদ্দীপকের কাজ করে। এই প্যাকটি নতুন চুল গজাতে খুবই কার্যকরী। মেথি মাথার ত্বককে ঠান্ডা রাখতেও বিশেষভাবে উপযোগী।

ময়েশ্চারাইজার ও কন্ডিশনার হিসেবেঃ ৩ টেবিল চামচ মেথি ১ কাপ পানিতে সারারাত ভিজিয়ে সকালে পানিটুকু ছেঁকে নিন। চুল শ্যাম্পু করার পর এই পানিটুকু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। মেথির এরূপ ব্যবহার চুলকে কন্ডিশন করে এবং চুলে ময়েশ্চারাইজিং-এর কাজ করে। এটি চুলকে নরম এবং ম্যানেজেবল করে চুলকে সিল্কি এবং চকচকে করে তুলতেও সাহায্য করে।

এভাবেই মেথি চুলকে সমস্যামুক্ত রাখতে যুগের পর যুগ রেখে চলেছে স্বতঃস্ফূর্ত ভূমিকা। তাই চুল থাকুক সুন্দর, মসৃণ ও নমনীয়।

গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম

গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম হলো প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে বা ১ গ্লাস পানির সাথে মেথি ভিজিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে যাবে। প্রথমে একটি গ্লাসে পানি নিয়ে তাতে এক চামচ মেথি ভিজিয়ে রেখে ১০ মিনিট পর সেই পানি পান করলে গ্যাস্ট্রিক কমার সম্ভাবনা বাড়ে। স্বাদ বাড়াতে পরিমাণমতো মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে পানিটি পান করলে গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি মিলবে।

মেথি ভেজানো পানি সকালে খালি পেটে খেলে প্রায় ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত দিনে ২ বার মেথি পানি পান করলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে যায়। আস্ত মেথি খেতে না চাইলে পেস্ট করে ভাতের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।

মেথি মশলা বা আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির জন্য অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়। মেথি ভেজানো পানি খেলে রক্তে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস সংক্রান্ত অসুখগুলো কমাতে সাহায্য করে। কচি পাতা, মশলা এবং ডগা শাক হিসেবে এই মেথি খুবই জনপ্রিয়। মেথির গুঁড়ো প্রতিদিন ১ চা চামচ থেকে ২ চা চামচ প্রায় ৩ মাস খেলে ভালো উপকার পাবেন। প্রতি সকালে ও রাতে আধা চা চামচ করে দিনে ১ বার মেথি খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

ডায়াবেটিসে মেথি খাওয়ার নিয়ম

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ঘরেই ডায়াবেটিসের রোগী রয়েছে। সাধারণত এই রোগের শিকার হলে রোগীকে সারা জীবন এ অসুখ বয়ে বেড়াতে হয়। রোগীকে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয়। পাশাপাশি সেবন করতে হয় ওষুধও।কিন্তু ওষুধের মাত্রা কমিয়ে লাইফস্টাইলে পরিবর্তন এনে আর ডায়েটে ভেষজ উপাদান মেথিকে যুক্ত করে সহজেই এ সমস্যা থেকে কার্যকরী সমাধান পেতে পারেন আপনি।

মেথিতে রয়েছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ। এছাড়াও রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্টস এবং অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরির মতো উপাদান। মেথি নিঃসন্দেহে উপকারী। তবে মেথি খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। রোজ সকালে মেথি ভেজানো পানি পান করতে পারেন। উপকার পাবেন। আবার মেথি চাও পান করতে পারেন।

কিভাবে বানাবেন মেথি চাঃ কেটলিতে পানি গরম করতে বসান। ফুটে উঠলে তাতে এক চামচ মেথি গুঁড়া দিন। এর সাথে মেশাতে পারেন তুলসী পাতা ও কালিজিরা। সব উপকরণ একসাথে দিয়ে মিনিট পাঁচেক ফুটিয়ে নিন। ছেঁকে নিয়ে সামান্য ঠাণ্ডা করে চুমুক দিন মেথি চায়ে। ডায়াবেটিস থাকবে হাতের মুঠোয়।

যাদের ‘বডি ইনডেক্স’ বেশি ও খাবারে কম ক্যালরি গ্রহণের অনুশীলন করেন তাদের শর্করারা মাত্রা বা ইন্সুলিন প্রতিরোধের জন্য মেথি বীজের গুঁড়া বা মেথি ভেজানো পানি পানের পরামর্শ দেওয়া হয়।

চার থেকে ছয় মাস দৈনিক ১০ গ্রাম মেথি খাওয়া এইচবিএ১সি এবং রক্তের শর্করার মাত্রা কমানো প্রক্রিয়া সহায়তা করে।

খাদ্যাভ্যাসে দৈনিক ১০ গ্রাম মেথি বীজ খাওয়ার সঙ্গে ‘প্রিডায়াবেটিস’ হওয়া থেকে দূরে রাখতে পারে।

মেথির বীজ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যেও খুব ভাল। ভেজানো মেথির যদি অঙ্কুর বেরোয় তাহলে আরও ভাল। কারণ ভেজানো মেথিতে প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ বেশি পুষ্টি থাকে। রোজ সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো জল খেলে তার উপকারিতা অনেক।

রক্তের শর্করার মাত্রা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কারণ ভেষজ উপাদান ধীরে কাজ করে। এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মেথি খাওয়া উচিত। কারণ ওষুধ ও খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ।

মেথি খেলে কি কিডনির ক্ষতি করে

কিডনির সমস্যা দূর করতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর আরও কিছু উপকারিতাÑ কিডনির জন্য মেথি দানার চেয়ে এর তেল বেশি উপকারী। এটি কিডনি এবং অগ্ন্যাশয়ের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই, আপনি যদি কিডনির কোনো সমস্যায় পড়ে থাকেন, তবে আপনি মেথির তেল ব্যবহার করতে পারেন।
 
ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য মেথি তেল ব্যবহার করা ভালো। মেথি রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে। এছাড়া মেথি তেল বিটা কোষের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করতে পারে।

মেথি বীজ কিডনির স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে। তথ্য সূত্রে জানা গেছে, উত্তর আফ্রিকায় মেথির বীজ কিডনির পাথর প্রতিরোধে এবং চিকিৎসায় বহুকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে মেথি বীজে থাকা পুষ্টি উপাদান কিডনিতে বিদ্যমান ক্যালসিফিকেশন হ্রাস করতে পারে। ফলে কিডনিতে পাথর জমতে পারে না।

তাই আপনার মনে যদি এই প্রশ্ন থেকে থাকে যে মেথি কি কিডনির ক্ষতি করে তাহলে জেনে রাখুন মেথি তো কিডনির ক্ষতি করেই না বর মেথি ভেজানো পানি খাওয়া আপনার কিডনির জন্য অত্যন্ত উপকারী।

মেথি কিভাবে খেলে আলসার ভালো হয়

মেথিতে এক ধরণের আয়ুর্বেদিক ঔষধি রয়েছে যা পেটের আলসার নিরাময়ে সহায়তা করে। এর ঔষধি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পেটের আস্তরণের স্তর গঠনে সহায়তা করে। মেথি ব্যবহার করতে মেথি বীজের গুঁড়ো মিশিয়ে এক গ্লাস দুধ পান করুন। এ ছাড়া মেথি পাতা সিদ্ধ করে, স্বাদে কিছুটা মধু মিশিয়ে দিনে দুবার খেয়ে নিন।

আরও পড়ুনঃ

মেথির চা হজম ও আলসারের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া মেথির মধ্যে থাকা ফাইবার পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

পাকস্থলীর আলসার বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটি হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি দ্বারা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে বা অতিরিক্ত অ্যাসিড উত্পাদনের কারণে ঘটতে পারে। এটি প্রধানত ঘটে যখন পাকস্থলীর অ্যাসিড যা খাদ্য হজমে সাহায্য করে তা পাকস্থলীর আস্তরণের ক্ষয় ঘটায়। পেটের আলসার আপনার অনেক ব্যথা এবং অস্বস্তির কারণ হতে পারে। গবেষকরা একটি সাধারণভাবে ব্যবহৃত অ্যান্টাসিড এবং মেথি বীজের তুলনা করেছেন, দেখতে পাকস্থলীর আলসার প্রতিরোধে কোনটি ভাল। ফলাফলে দেখা গেছে মেথি বীজ আরও ভালো। দেখা গেল মেথির বীজ অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসরণ রোধ করে। এছাড়াও, এটি পাকস্থলীর কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলি দেখায়। এটি ব্যাখ্যা করে কেননা এটি অ্যান্টাসিডের চেয়ে পেটের আলসার প্রতিরোধে ভাল ছিল।

মেথি গুঁড়া খাওয়ার নিয়ম

শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়ম করে সেবন করুন মেথি অথবা মেথি গুঁড়া। রান্নায় ব্যবহার হলেও ভেষজ ওষুধ হিসেবেও ‘মেথি’ চমৎকার কাজ করে। মেথিতে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, আয়রন, কপার, ভিটামিন ‘সি’, নিয়াসিন ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও এতে রয়েছে ডায়োজেনিন এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হরমোন। নিচে মেথি গুঁড়া খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

  • এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানির সাথে এক চামচ মেথি গুঁড়ো কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেয়ে নিতে পারেন। আবার শুধু মেথি চিবিয়েও খেতে পারেন।
  • চাইলে মেথির গুঁড়ো ভেজানো পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন।
  • ঝোল তরকারি, সালাদ এবং মাছের রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন এটি।
  • পরিমাণ মত মেথি গুঁড়োর সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন এতে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন এতেও উপকার পাবেন।
  • নিয়মিত চায়ের পরিবর্তে মেথি গুঁড়োর চা খেতে পারেন।
  • প্রতিদিন সকালে মেথি গুঁড়োর চা পান করলে কোলেস্টে'ল নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রক্ত চলাচল ভালো থাকে।
  • ২ থেকে ৩ চা চামচ মেথি গুঁড়া দিনে দুবার আহারের পূর্বে সেবন করলে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে।
  • মেথি গুঁড়া মধুসহ সেবনে ডায়ারিয়া ও আমাশয় রোগে উপকার পাওয়া যায়।
  • নিয়মিত এক চা চামচ করে মেথির গুঁড়া সকালে ও রাতে খাওয়ার পরে খেলে গ্যাসের সমস্যা দূর হবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে।
  • আপনি যদি কোনো ঔষধ সেবন করেন তাহলে ঔষধ সেবন করার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে বা পরে মেথি সেবন করা উচিৎ।

মেথি ভেজানো পানির উপকারিতা

মেথির মধ্যে ভিটামিন কে, থায়ামিন, ফলিক অ্যাসিড, রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ভিটামিন এ, বি ৬ আছে। আর খনিজের মধ্যে রয়েছে কপার, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, আয়রন, সেলেনিয়াম, জিংক, ম্যাংগানিজ ও ম্যাগনেশিয়াম।
মেথি ভেজানো পানির উপকারিতা গুলো নিচে আলোচনা করা হলো-
  • মেথি ভেজানো পানি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে থাকা উপাদান ফাইবার এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট মানব দেহের হজম সংক্রান্ত সমস্যা দূর করতে কার্যকরী। মেথি বীজ সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে পান করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
  • মেথি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা হজম ক্ষমতা বাড়ায়।
  • মেথিতে থাকে প্রোটিন ও নিকোটিনিকের মতো পুষ্টি উপাদান। যা খুশকি, টাক পড়া, চুল পড়া ও মাথার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
  • স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য মেথির ব্যবহার অনেক প্রচলিত। এটি চুল পড়া কমিয়ে নতুন চুল জন্মাতে সাহায্য করে। পানিতে মেথি ভাল করে ফুটিয়ে সেই পানি ঠান্ডা করে তা দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এই পানি চুলের খুশকি দূর করতেও কার্যকরি।
  • মেথির মধ্যে দ্রবণীয় ফাইবার থাকে, যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে মেথির বীজ ভেজানো পানি খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • মাতৃদুগ্ধ বাড়াতে ওষুধের বিকল্প হলো মেথি। সদ্য মা হওয়া নারীর জন্য মেথি ভেজানো পানি অনেক উপকারী।
  • কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, বুকে কফ জমা ইত্যাদি ঠান্ডাজনিত সমস্যাও সারায় মেথিতে থাকা পুষ্টি উপাদানসমূহ।
  • মেথি ভেজানো পানিতে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই তো ডায়াবেটিক রোগীদের মেথি ভেজানো পানি খেতে বলা হয়।
  • এ ছাড়া প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি খেলে শরীরে ফাইবারের মাত্রা বাড়ে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুধা কমে যায়। এতে করে ওজন কমানো সহজ হয়।

মেথি খাওয়ার অপকারিতা

মেথি স্বাদ এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। কিন্তু অতিরিক্ত এবং অপব্যবহার করা উচিৎ নয়। কারণ এর ফলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে বা কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে যেমন-
মেথি-খাওয়ার-অপকারিতা
  • বেশি মাত্রায় খেলে মেথি তার টেরাটোজেনিক সম্ভাবনার কারণে জন্ম দোষ সৃষ্টি করতে পারে।তাই আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই এর ব্যবহার শুরু করুন।
  • মেথি একটি জরায়ুজ উদ্দীপক তাই অতিরিক্ত পরিমাণে মেথি খেলে এটি গর্ভাশয়ে সংকোচনের কারণ হতে পারে যা প্রারম্ভিক প্রসববেদনার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • যখন বেশি পরিমাণে মুখের মাধ্যমে মেথি নেওয়া হয় তখন তা গ্যাস, পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া হতে পারে।
  • মেথি থেকে হওয়া এলার্জি প্রতিক্রিয়ার সাধারণ লক্ষণ হল ফুসকুড়ি, বাত, শ্বাস এবং অজ্ঞানহয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
  • আপনি যদি কোনো ওষুধ সেবন করেন তাহলে ওষুধগুলি গ্রহন করার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে বা পরে মেথির ব্যবহার করা উচিত।

মেথি কীভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে

টেস্টোস্টেরন হল সেক্স হরমোন। পুরুষদের দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়াতে মেথি দারুণ কার্যকরী। পুরুষ এবং মহিলা- উভয়ের দেহেই এই হরমোনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। যৌন ক্রিয়ায় সাহায্য করার পাশাপাশি এনার্জির মাবাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং ওবেসিটি ও ডায়াবেটিসের মতো কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমতে শুরু করে। পঁয়তাল্লিশ বছরের উর্ধ্বে যে সব পুরুষের বয়স, তাঁদের ৩৯ শতাংশের মধ্যেই টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি রয়েছে।

সেক্স পাওয়ার বাড়ানো মানে টেস্টেটোরেন হরমোন বাড়ানোর ক্ষেত্রে মেথী কার্যকরী। এই হরমোন কম থাকলে পুরুষের সেক্স করার ইচ্ছে কমে যায়, বউকে রাতে আদর করতে ইচ্ছে করে না। তাই এই হরমোন বাড়াতে মেথী বেশ কার্যকরী। যাদের সেক্স হরমোন কম বা ইচ্ছে করে না তাদের উচিত নিয়মিত মেথী পানি খাওয়া। সাধারণত প্রাকৃতিক উপায়ে বা ঘরোয়া টোটকার মাধ্যমেই টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করেন। আর এক্ষেত্রে অনেকেই ব্যবহার করেন হার্বাল সাপ্লিমেন্ট, যা মেথি থেকেই তৈরি করা হয়।

সেক্স পাওয়ার বাড়ানোর ক্ষেত্রে ও পুরুষের বীর্যের শুক্রানু বাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশ উপকারী মেথী। মেথী রাতে পানিতে ভিজিয়ে সকালে মেথীসহ পানি খালি পেটে খেলে পুরুষের বীর্যের শুক্রানু বাড়ে। তবে ৩ মাস লাগাতার খেতে হবে। যাদের বাচ্চা কাচ্চা হচ্ছে না পুরুষের সমস্যার কারনে তারা তাদের শুক্রানু বাড়াতে ৩ মাস মেথী গোটা বা গুড়া পানিতে রাতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খান। শুক্রানু বেড়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ।

পুরুষত্বের জন্য দায়ী মূল হরমোন হচ্ছে টেস্টোস্টেরন। পুরুষদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমতে থাকে। টেস্টোস্টেরন শরীরে কমে যাওয়ার কারণে অ্যান্ড্রোপজ হয়। টেস্টোস্টেরন হরমোনের অভাবে পুরুষের যৌন চাহিদা, মানসিক শক্তি ইত্যাদি ক্রমশ পরিবর্তিত হতে থাকে। গড়ে ৩০ বছর বয়স হওয়ার পরে এর মাত্রা প্রতিবছর ১% করে কমে; সাধারণত ৭০ বছর বয়স্ক পুরুষের শরীরে এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক কমে যায়। কারও কারও এ মাত্রা আরও কমে যেতে পারে।

টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে বিভিন্ন রকম লক্ষণ উপসর্গ দেখা যায়। পুরুষের স্বাভাবিক যৌনাচরণের পরিবর্তন হয়। অনেকের অণ্ডকোষ দুটি আকারে-আকৃতিতে ছোট হয়ে যায় এবং যৌন দুর্বলতা দেখা দেয়। মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়, কর্মস্পৃহা অনেক কমে যায়। কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলার পাশাপাশি অনেকে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। 

যৌবনের যে উৎসাহ-উদ্দীপনা, মনের জোর, সব জয় করার এক উদগ্র বাসনা টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমার ফলে তা কোথায় যেন উবে যায়। অনেকে কোনো কাজে একভাবে মনঃসংযোগ করতে পারেন না, স্মৃতিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসে; এমনকি অনেকে বিভিন্ন মাত্রার বিষণ্ণতায় ভুগতে পারেন। ফলে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের পাশাপাশি কামবাসনা কমে যাওয়া, লিঙ্গোত্থানে সমস্যা, খারাপ মেজাজসহ মনোযোগের অভাব দেখা দেয়।

শেষ কথা

মেথি যেহেতু অনেক রোগের ক্ষেত্রে উপকারী তাই এটিকে সুপারফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রায় সব বয়সী মানুষের জন্য মেথিকে নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে কিছু মানুষের জন্য মেথি ক্ষতিকর হতে পারে এবং আমরা আজকের আর্টিকেলে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা, পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা ও মেথি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য জানতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url