সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
সজনে পাতার বৈজ্ঞানিক নাম হল মরিঙ্গা। এটি একটি বৃক্ষ জাতীয় গাছ। এটি সাধারনত গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলে হয়ে থাকে। সজনে গাছের সবজি দেখতে সবুজ এবং লম্বা হয়। বীজ এবং ডালের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়। এটি রোপন করার উপযুক্ত সময় হল গ্রীষ্মকালে বা এপ্রিল মাসের দিকে।
বাংলাদেশে সাধারণত দুই থেকে তিন প্রকারের সজনে পাওয়া যায। কিছু সজনে সিজনভিত্তিক হয় আবার কিছু বারোমাসি রয়েছে।এটি সবজি এবং এর পাতা শাক হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। গবেষকরা সজনে পাতাকে nutrition superfood বলেন এবং সজনে গাছকে বলেন miracle tree. এছাড়াও সজনে পাতাকে অলৌকিক পাতা বলা হয়। নিচে সজনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো
পেইজ সূচিপত্রঃ সাজনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
- সজনে পাতার পুষ্টিগুণ
- সজনে পাতার উপকারিতা
- সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম
- ডায়াবেটিস রোগীর সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম
- ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় সজনে পাতার উপকারিতা
- ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা
- সজনে পাতা গুড়া খাওয়ার নিয়ম
- সজনে পাতা খেলে কি ডায়াবেটিস কমে
- সজনে পাতার অপকারিতা
- শেষ কথা
সজনে পাতার পুষ্টিগুণ
সজনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে ইন্টারনেটে অনেক তথ্য রয়েছে যেখানে প্রায়ই বাড়িয়ে বলা হয়েছে। যেমন- আপনি হয়তো দেখে থাকবেন অথবা শুনেছেন যে ১০০ গ্রাম সজনে পাতা থেকে যে পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায় তা ৭ টি কমলার সমান।
আবার সজনে পাতায় এতো বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা কলার তুলনায় ১৫ গুণ বেশি এবং দুধের চেয়ে ৪ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে সজনে পাতার মধ্যে। তো চলুন সজনে পাতার উপকারিতা ও এই তথ্যগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করা যাক।
আরও পড়ুনঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম সজনে পাতায় মাত্র ৫১.৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে। অপরদিকে ১০০ গ্রাম ওজনের একটি কমলার মধ্যে ৫৩.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে যা সজনে পাতার চেয়ে ৭ গুণ কম নয়, বরং কমলার মধ্যে থাকা ভিটামিন সি নষ্ট হয় না কারণ তা আগুনের তাপে রান্না করে খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। অপরদিকে সজনে পাতা রান্না করে খেলে আগুনের তাপে ভিটামিন সি কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়। আর তাই সজনে পাতার অতিরঞ্জিত গুণাগুণ শুনে কমলা খাওয়া বাদ দিবেন না।
একইভাবে সজনে পাতার মধ্যে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে যথাক্রমে ১৮৫ মিলিগ্রাম ও ৩৩৭ মিলিগ্রাম। পক্ষান্তরে ১০০ গ্রাম (অথবা ১০০ মিলিলিটার) দুধ থেকে ১২৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় যা সজনের তুলনায় সামান্য কম তবে তা ৪ গুণ নয়। আর ১০০ গ্রাম কলা থেকে পটাশিয়াম পাওয়া যায় ৩৫৮ মিলিগ্রাম যা সজনে পাতার চেয়ে বেশি।
সজনে পাতা নিঃসন্দেহে একটি পুষ্টিকর খাবার তবে তা অন্যান্য সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার ছাড়িয়ে যাবে এমনটি নয়। পথ্য বা পুষ্টিকর খাবার হিসেবে মাঝে মধ্যেই এটি খেতে পারেন তবে অতিরিক্ত পরিমাণে নয়। সজনে পাতায় রয়েছে ১২৫ পার্সেন্ট ক্যালসিয়াম, ৬১% ম্যাগনেসিয়াম, ৭১% লোহ, ৪১% পটাশিয়াম, ৪২ % আমিষ, ২২% ভিটামিন সি সহ অন্যান্য অনেক উপাদান।
এছাড়াও শিশুদের জন্য এক টেবিল চামচ সজনে পাতার গুড়া হতে ৪০% ক্যালসিয়াম, ১৪ পার্সেন্ট আমিষ, ২৩% লৌহ এবং ভিটামিন এ পাওয়া যাবে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য দিনে ছয় চামচ সজনে পাতার গুড়া তার প্রয়োজনীয় আইরন ও ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে সক্ষম হবে।
- এতে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে এবং পালংশাকের চেয়ে তিন গুণ বেশি আয়রণ বিদ্যমান, যা এ্যানেমিয়া দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- সজনে শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও অন্যতম অবদান রাখে।
- মানুষের শরীরের প্রায় ২০% প্রোটিন যার গাঠনিক একক হলো এমাইনো এসিড। শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মেটাবোলিজম এবং অন্যান্য শারীরবৃত্ত্বীয় কার্যাবলী পরিপূর্ণরূপে সম্পাদনে এমাইনো এসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মানুষের শরীরের যে ৯ টি এমাইনো এসিড খাদ্যের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হয়, তার সবগুলোই এই মরিঙ্গার মধ্যে বিদ্যমান।
- এটি শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের মত কঠিন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।
- নিয়মিত দৈনিক সেবন শরীরের ডিফেন্স মেকানিজমকে আরো শক্তিশালী করে এবং ‘ইমিউনিটি স্টিমুল্যান্ট’ হওয়ার দরুন এটি ‘এইডস’ আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
- এটি শরীরের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে পুষ্টিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
- শরীরের ওজন কমাতেও ব্যায়ামের পাশাপাশি এটি বেশ কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থাকে।
- এটি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। পাতা থেকে তৈরি এক টেবিল চামচ পাউডারে ১৪% প্রোটিন, ৪০% ক্যালসিয়াম, ২৩% আয়রণ বিদ্যমান, যা ১ থেকে তিন বছরের শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় এবং বুকের দুধ খাওয়ানোকালীন সময়ে ৬ টেবিল চামচ পাউডার একজন মায়ের প্রতিদিনের আয়রণ এবং ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে থাকে।
- এটির এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এটি যকৃত ও কিডনী সুস্থ্য রাখতে এবং রূপের সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবেও কাজ করে থাকে।
- সজনে-তে প্রায় ৯০টিরও বেশি এবং ৪৬ রকমের এন্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান।
- এতে ৩৬ টির মত এন্টি-ইনফ্ল্যামমেটরি বৈশিষ্ট্য আছে। এছাড়াও এটি অকাল বার্ধক্যজনিত সমস্যা দূর করে এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে
সজনে পাতার উপকারিতা
সজনে পাতাকে সুপাড় ফুডের সাথে তুলনা করলে ভুল হবে না। এর কারণ সুপার ফুডে যেসব পুষ্টি উপাদান থাকার প্রয়োজন সজনে পাতায় সেসব পুষ্টি উপদান বিদ্যমান রয়েছে। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক সজনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে
প্রদাহ নাশক এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
সজনে পাতার মধ্যে Quercetin এবং Chlorogenic acid নামক দুইটি বিশেষ উপাদান রয়েছে যা শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন ১ চা চামচ (৭ গ্রাম পরিমাণ) সজনে পাতার গুঁড়া ৩ মাস পর্যন্ত খাওয়ার ফলে শরীরে এন্টি অক্সিডেন্ট এর মাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল এর সংখ্যা অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। আর ফ্রি রেডিক্যাল বেড়ে যাওয়ার ফলে প্রদাহ হয় এবং হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সেই সাথে এন্টি অক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন এবং প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এর উপস্থিতি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। আর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া মানেই সহজেই রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ
ডায়াবেটিস এর প্রধান সমস্যা হলো রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় সুগারের উপস্থিতি যার ফলে শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন হার্ট, চোখ, কিডনি, স্নায়ুতন্ত্র ইত্যাদির কার্যক্ষমতা এবং যৌন সক্ষমতা কমে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে সাজনা পাতা সরাসরি অথবা গুড়ো করে নিয়মিত খাওয়ার ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এর কারণ হিসেবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করে থাকেন যে সাজনা পাতার মধ্যে isothiocyanates নামক একটি বিশেষ উপাদান রয়েছে যার প্রভাবে এমনটি হয়ে থাকে।
তাই বলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ওষুধ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সজনে পাতার উপকারিতা'র উপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। কারণ এই বিষয়ে যে গবেষণা হয়েছে সেগুলো যথেষ্ট নয় আর তাছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য সাজনা পাতা খাওয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। তবে ওষুধ সেবনের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সহায়ক উপাদান হিসেবে সাজনা পাতা খাওয়া যেতে পারে।
লিভারকে সুস্থ রাখেঃ
লিভার মানুষের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যেখানে শরীরের নানাবিধ জৈব রাসায়নিক কার্যক্রম ঘটে থাকে। আমরা প্রতিনিয়ত যে সমস্ত ওষুধ খেয়ে থাকি তার বেশিরভাগই লিভার ও কিডনির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে থাকে। বিশেষত যক্ষা বা টিবি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য নির্দেশিত anti-tubercular ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় লিভারের কোষ মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর সজনে পাতা লিভারের এই ক্ষতিগ্রস্ততা কমানোর মাধ্যমে লিভারকে ভালো রাখতে সহায়তা করে।
রক্তে কোলেস্টেরল কমায়ঃ
রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বা LDL বেড়ে যাওয়ার সাথে হার্টের রোগ যেমন উচ্চ রক্তচাপ, করোনারি আর্টারি ডিজিজ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়তে থাকে। উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন খাবার যেমন কাঠবাদাম, তিসি, অ্যাভোকাডো ইত্যাদির মতো সাজনা পাতাও রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন সময়ে প্রাণি ও মানুষের উপর আলাদা আলাদাভাবে নানাবিধ গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে যে সাজনা পাতার মধ্যে খারাপ কোলেস্টেরল কমানোর সক্ষমতা রয়েছে।
হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখেঃ
সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে যা দাঁত ও হাড়ের গঠনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। দৈনিক একজন মানুষের শরীরে যে পরিমাণ এই উপাদানগুলো প্রয়োজন পড়ে তার ১৯ শতাংশ ক্যালসিয়াম এবং ১৬ শতাংশ ফসফরাস ১০০ গ্রাম সজনে পাতা থেকে পাওয়া সম্ভব হয়। আর তাই যারা নিরামিষাশী ব্যক্তি অর্থাৎ প্রাণিজ আমিষ জাতীয় খাবার বর্জন করে চলেন তাঁদের জন্য ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের উৎস হিসেবে সজনে পাতা একটি ভালো খাবার হতে পারে।
আর্সেনিক পয়জনিং কমায়ঃ
আমাদের দেশের অনেক জায়গায় নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায় যা একপ্রকার বিষ। দীর্ঘদিন যাবত মানুষের শরীরে আর্সেনিক প্রবেশ করতে থাকলে তা একসময়ে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে থাকে এমনকি তা বিভিন্ন জটিল রোগ যেমন হার্টের রোগ এবং ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যে সাজনা পাতা ও সজনের বীজে থাকা কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আর্সেনিক বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করতে পারে। তবে এই ব্যাপারে একদম নিশ্চিত হওয়ার জন্য মানুষের উপর গবেষণা করা প্রয়োজন।
রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করেঃ
প্রতিদিন ১০০ গ্রাম পরিমাণ সজনে পাতা খাওয়ার মাধ্যমে যে পরিমাণ ভিটামিন-এ পাওয়া যায় তাতে শরীরের অর্ধেক চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। আর ভিটামিন এ রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করা সহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর (হার্ট, ফুসফুস, কিডনি) স্বাভাবিক কার্যক্রমে সহায়তা করে থাকে।
প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করেঃ
আমাদের দেশে দরিদ্র পরিবারগুলোতে ছেলেমেয়েরা প্রোটিনের অভাবে ভোগে যার ফলে তাদের শরীরে যথাযথ বৃদ্ধি হয় না। এর কারণ হলো প্রোটিনের প্রধান উৎস মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি বেশ ব্যয়বহুল যা সবার পক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণে কেনা সম্ভব হয় না। আবার শাকসবজি ও ফলমূল থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া গেলেও তা থেকে খুব বেশি প্রোটিন পাওয়া যায় না। তবে সাজনা পাতার মধ্যে ১৮ ধরনের এমিনো এসিড রয়েছে যা প্রোটিন গঠনের মূল উপাদান। সেই সাথে সাজনা পাতা খুবই সহজলভ্য একটি খাবার। আর তাই প্রোটিনের একটি ভালো উৎস হিসেবে সজনে পাতা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
খুশকি দূর করে এবং চুল পড়া কমায়ঃ
সজনে পাতা বেটে অথবা ব্লেন্ডারে পিষে ঘন পেস্ট তৈরি করে মাথার ত্বকে লাগানোর ফলে খুশকির সমস্যা দূর হয়ে যায়। সেই সাথে খুশকির দরুন চুল পড়ার সমস্যা থাকলে তা ঠিক হয়। এছাড়াও চুলের গোড়া মজবুত করে থাকে যা চুল পড়া ঠেকানোর আরেকটি কার্যকরী উপায়।
সজনে পাতার ঔষধি গুণঃ
সজনে গাছকে মিরাকেল ট্রি বলা হয় কারণ এর সমস্ত অংশ যেমন ডাঁটা, পাতা, বাকল, শিকড় ইত্যাদি জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এবং ভেষজ গুণাবলী।
যাদের পরিপাকতন্ত্রে বিভিন্ন ডাইজেস্ট সমস্যা রয়েছে যেমন খাবার সহজে হজম না হওয়া, পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমে, বুকজ্বালা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে নিয়মিত সজনে পাতার গুঁড়া সেবনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
হারবাল ও ভেষজ চিকিৎসকেরা সজনে পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে তা ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগীদের জন্য ব্যবহার করেন। কারণ সজনে পাতার গুণাগুণ রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে চিকিৎসার জন্য ওষুধের বিকল্প হিসেবে সজনে পাতার গুঁড়া ব্যবহার করা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান দ্বারা স্বীকৃত নয়।
সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম
সজনে পাতার উপকারিতা জানার পর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খাওয়ার নিয়ম ও পরিমাণ জানা। যদিও এটি প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত নিরাপদ প্রকৃতির একটি খাবার তবে বেশি পরিমাণে খেলে তাতে নানাবিধ অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন:বমি বমি ভাব অথবা বমি,পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া ইত্যাদি।
সজনে পাতা খাওয়ার পরিমাণ বিষয়ে একটি নির্দেশনা হলো শরীরের ওজন অনুযায়ী প্রতি কেজিতে ১ গ্রাম। অর্থাৎ আপনার শরীরের ওজন যদি ৬০ কেজি হয়ে থাকে তবে আপনার জন্য ৬০ গ্রাম পরিমাণ সাজনা পাতা খাওয়া যেতে পারে। কোনো অবস্থাতেই এই মাত্রা শরীরের ওজন অনুযায়ী প্রতি কেজিতে ৩ গ্রামের বেশি অতিক্রম করা উচিত হবে না।
উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড ও ডায়াবেটিসের ওষুধ চলাকালীন সময়ে সজনে পাতা অথবা পাতার গুঁড়া খাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। কারণ এই সমস্ত রোগের জন্য নির্দেশিত কিছু কিছু ওষুধের সাথে সজনে পাতার মিথস্ক্রিয়া হতে পারে। যার ফলে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যাওয়া বা অন্য যে কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
সজনে পাতা বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে। সজনে পাতা কিভাবে খেতে হয় তার কিছু জনপ্রিয় কয়েকটি রেসিপি সম্পর্কে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
সজনে পাতার ভর্তাঃ
সবচেয়ে সহজ একটি উপায় হলো সজনে পাতার ভর্তা বানানো। প্রথমে গাছ থেকে কচি পাতা সংগ্রহ করে ময়লা দূর করার জন্য ভালো ভাবে ধুয়ে নিতে হবে। অতঃপর একটি পাতিলে অল্প পরিমাণে পানি দিয়ে তার মধ্যে সাজনা পাতা সিদ্ধ হতে দিন। সিদ্ধ হয়ে গেলে কুচি কুচি করে কাটা পেঁয়াজ, মরিচ এবং সামান্য একটু তেল ও লবণ মিশিয়ে ভর্তা করে ফেলুন। গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে খেতে বেশ মজাদার লাগবে।
সজনে পাতা রান্নাঃ
যে কোনো মাছের তরকারি অথবা শুধু সবজি রান্না করার সময় শাক হিসেবে সজনে পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে সাজনা পাতা আলাদা ভাবে অল্প পানিতে কিছুক্ষণ সিদ্ধ করে নিতে পারেন। পরে অন্যান্য সবজির সাথে মিশিয়ে রান্না করে ফেলুন। একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি আর তা হলো রান্নায় যেনো অতিরিক্ত পরিমাণে মশলা ব্যবহার করা না হয়। কারণ অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
সজনে পাতা ভাজিঃ
সজনে পাতা শাক ভাজির মতো করে খেতে পারেন। প্রথমে অল্প পানিতে সিদ্ধ করে নিন। অতঃপর পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, কালোজিরা (ঐচ্ছিক), তেল, লবণ ইত্যাদি সহযোগে কড়াইতে ভাজতে থাকুন। স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য খুব বেশি পরিমাণে তেল ব্যবহার করা যাবে না। বরং পরিমাণ মতো তেল ও লবণের ব্যবহার করুন।
সজনে পাতার বড়াঃ
সজনে পাতা দিয়ে বড়া বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমেই সজনে পাতা বেটে অথবা ব্লেন্ডারে পিষে নিতে হবে। বড়া তৈরির জন্য সহযোগী উপাদান হিসেবে প্রয়োজন হবে ডাল যা পিষে সজনের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। অতঃপর তাতে লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যোগ করে তেলে ভেজে নিতে হবে। মচমচে গরম বড়া খাবার হিসেবে বেশ সুস্বাদু লাগবে।
সজনে পাতার চাঃ
সজনে পাতার চা দুইভাবে তৈরি করা যেতে পারে। এক. সরাসরি কাঁচা সজনে পাতা লাল চায়ের মধ্যে মিশিয়ে খাওয়ার মাধ্যমে উপকারিতা পাওয়া যায়। দুই. এক্ষেত্রে প্রথমে সাজনা পাতা শুকিয়ে নিতে হবে। অতঃপর তা হাতের মুঠোয় নিয়ে যতটুকু সম্ভব গুঁড়া করতে হবে। এবার তা গরম পানিতে মিশিয়ে চা বানাতে হবে। এই চায়ের সাথে পরিমাণ মতো চিনি, কুচি কুচি করে কাটা আদা ও লেবু ব্যবহার করা যেতে পারে।
সজনে পাতার গুঁড়াঃ
সজনে পাতা গুঁড়া করে দীর্ঘদিন ঘরে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এক্ষেত্রে প্রথমে পাতা সংগ্রহ করে ধুয়ে নিতে হবে। অতঃপর রোদে দিয়ে ভালো ভাবে শুকিয়ে নেওয়ার পর শক্ত কিছুর উপর রেখে পিষে অথবা গ্রিন্ডার (Grinder) মেশিনের সহায়তায় গুঁড়া করতে হবে। প্লাস্টিকের বোতল অথবা বাটিতে না রেখে কাঁচের পাত্রে রাখুন। তাতে গুনাগুণ সবচেয়ে ভালো থাকবে।
সজনে ডাঁটা বেশি পুষ্টিকর নাকি পাতা
সজনে ডাঁটা খেতে বেশ সুস্বাদু ও জনপ্রিয় একটি সবজি। তবে পুষ্টিগুণ বিবেচনায় সজনে পাতা আর সজনে ডাঁটা দুটোই মুল্যবান। এই দুই ধরনের খাবারের মধ্যেই কিছু বিশেষ গুণাগুণ রয়েছে যা শরীরের জন্য নানাবিধ উপকারিতা বয়ে আনে। আর তাই আপনার পছন্দমতো যে কোনো একটি খেতে পারেন।
তবে সজনে ডাঁটার মধ্যে পাতার তুলনায় বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি ও ফাইবার রয়েছে। এছাড়াও সবজি হিসেবে সজনে ডাঁটা খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের জন্য যে সমস্ত উপকার পাওয়া যেতে পারে তা হলোঃ
- ওজন কমাতে সহায়তা করে
- লিভারকে সুস্থ রাখে
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়
- হাড়ের গঠন মজবুত করে
- ক্ষত সারাতে সহায়তা করে
- দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে
- রক্তস্বল্পতা দূর করে ইত্যাদি
ডায়াবেটিস রোগীর সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম
- সজনে পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে সংরক্ষণ করা যায়। পরে চায়ের পাতার মতো ব্যবহার করা যায় অথবা শুকনা পাতা ফুটানো পানিতে দিয়েও চা বানানো যায়।
- তাজা সজনে পাতা পানিতে ফুটিয়ে চায়ের মতো করে খাওয়া যায়।
- সজনে পাতায় আইসো থায়োসায়ানেট থাকে। ফলে নিয়মিত সজিনা পাতা খাওয়া হলে তা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সজিনা পাতার চা বেশ উপকারী।
- নিয়মিত সজনে পাতা খাওয়ার মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে তার পাশাপাশি ডায়াবেটিকস রোগীকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে। কারণ নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে না চললে শুধু সজনে খেয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা
কাঁচা সজনে পাতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রচণ্ড উপকারী। এটা ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়। সজনে পাতায় বিদ্যমান ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে। এছাড়া এর মধ্যের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যাপক সাহায্য করে।
শুধুমাত্র এই নয়, কাঁচা সজনে পাতায় থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড যা শরীরে ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়। এতে উপস্থিত বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন ও খনিজ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন ঔষধ না খেয়ে ঔষধের পরিবর্তে কাঁচা সজনে পাতা খাওয়া উচিত। কাঁচা সজনে পাতা খেলে যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে এর অনেক দৃষ্টান্ত আছে।
গর্ভাবস্থায় সজনে পাতা খেলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ফলেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ আয়রন গর্ভবতী মহিলাদের রক্তস্বল্পতা দূর করে আর ফলেট গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। সজনে পাতা আয়রন ও ফলেটের ভালো উৎস হলেও গর্ভাবস্থায় তা সেবন করা নিরাপদ হবে কিনা সেই বিষয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণে গবেষণা হয়নি বলে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনাও নেই। তবে সাজনার শিকড় ও বাকল সেবন করা হলে তা জরায়ুর অস্বাভাবিক সংকোচন ঘটানোর মাধ্যমে গর্ভপাতের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। সুতরাং পাতা খাওয়ার ফলেও এমন কোনো জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। আর তাই গর্ভবতী মহিলা ও শিশুকে বুকের দুধ পান করান এমন মহিলাদের ক্ষেত্রে সজনে পাতা খাওয়ার পূর্বে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা
ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা, এক অসাধারণ টোটকা। সজনে পাতায় বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, খনিজ পদার্থ, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বককে উজ্জ্বল করে, ত্বকের দাগ বা ছোপ দূর করে, ত্বকের বলিরেখা কমায়, ত্বকের লোমকূপ ছিদ্র হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে এবং ত্বকের ব্রণ দূর করে ত্বককে যাবতীয় সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
এখন দেখে নিন কিভাবে সজনে পাতা ত্বকে ব্যবহার করবেন।
ত্বকে সজনের পাতা ব্যবহারে যত উপকারিতা
১। সজনের তেল এবং সজনে পাতার গুঁড়ো ত্বকের বলিরেখা, ক্ষত , ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি, কুঁচকানো ভাব, বলিরেখা ও বিভিন্ন দাগ ছোপ দূর করে।
২। সজনের তেল ঠোঁটের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন। এ তেল ঠোঁটের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
৩। ত্বকের বলিরেখা, দাগ ছোপ এবং অন্যান্য সমস্যা দূর করে। ফলে আমাদের ত্বকের রঙ উজ্জ্বল হয়।
৪। সজনের তেলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটা ব্যবহার করলে ব্রণর সমস্যা দূর হয়। তবে ব্যবহারের আগে একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া অবশ্যই প্রয়োজন।
৫। টক্সিনের ফলেই ত্বকে ব্রণ এবং বিভিন্ন দাগ ছোপের সমস্যা দেখা যায়। সজনের গুঁড়ো কিংবা সজনের বীজ গ্রহণ করলে রক্ত পরিশ্রুত হয় যার ফলে ত্বক পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর হয়।
৬।. সজনে ত্বকের বিভিন্ন ছিদ্র বন্ধ করতে সাহায্য করে। এটা ত্বকের প্রয়োজনীয় কলিজেন প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে যা ছিদ্র বন্ধ হতে সাহায্য করে।
ত্বকে যেভাবে ব্যবহার করবেন
আধ টেবিল চামচ সজনে পাতা গুঁড়ো করে সঙ্গে এক টেবিল চামচ মধু, এক টেবিল চামচ গোলাপ জল এবং আধ টেবিল চামচ লেবুর রস যোগ করুন। ঘনত্ব বুঝে প্রয়োজনে পানি যোগ করুন। ঘন এবং মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। সকালে এটা মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক উজ্জ্বল, নরম ও মসৃণ হবে।
ত্বকের যত্নে সজনে পাতা ব্যবহার করতে সজনে পাতা দিয়ে একটি ফেসপ্যাক বানিয়ে ফেলতে পারেন। আর এই ফেসপ্যাক বানাতে ১ চা চামচ সজনে পাতা গুড়োর সাথে ১ চা চামচ মধু ও গোলাপজল মিশিয়ে আধা চা চামচ লেবুর রস যোগ করুন। তারপর মিশ্রণটি পেস্টের মত বানিয়ে ফেলুন। তৈরি হয়ে গেল সজনে পাতার ফেসপ্যাক। এখন এই প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ১৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিন এই প্যাক ব্যবহারের ফলে আপনার মুখের ত্বক হবে উজ্জ্বল ও কোমল।
সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম
সজনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানার পর সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।চা এর সাথে মিশিয়েঃ
সজনে পাতা খাওয়ার সব থেকে সহজ এবং প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে একে চায়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া। কারণ যখন মরিঙ্গা গুঁড়া চায়ের সাথে মেশানো হয় তখন তা গলে সব পুষ্টিগুণ পানির সাথে মিশে যায়। যখন সেই পানীয় গ্রহণ করা হয় তখন তা দেহের জন্য উপকারী কাজে লাগে।
শরবত বানিয়েঃ
সজনে পাতার গুঁড়ার সঙ্গে খাঁটি মধু ও লেবুর পানি মিশিয়ে অনেক স্বাস্থ্যকর শরবত তৈরি করা যায়। নিয়মিত এই শরবত খেলে শরীরের ওজন ঠিক থাকে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে মরিঙ্গা পাউডারের শরবত অনেক প্রচলিত খাদ্য।
স্মুদি হিসেবেঃ
স্মুদি আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। এই খাবারের সাথে যখন এক বা দুই চামচ সজনে পাতার গুঁড়া মেশানো হয় তখন তা আরও বেশি পুষ্টিকর হয়। এই কারণে সকালের স্মুথিতে মরিঙ্গা মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
সালাদ হিসেবেঃ
সালাদ একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট যা দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে এবং বায়োলজিক্যাল প্রপার্টিজ নিয়ন্ত্রণ করে। সচরাচর সালাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য এতে মেয়নিজ ব্যবহার করা হয়। মরিঙ্গা পাউডার মেয়নিজ হিসেবে অনেক ভালো কাজ করে। উপর্যুপরি এই গুঁড়া সালাদের মান বৃদ্ধি করে।
ওটমিল বা সিরিয়ালের সাথেঃ
ওটমিলের সাথে মরিঙ্গা পাউডার মিশিয়ে খাওয়া অনেক উপকারী। কারণ যখন সজনে পাতার পাউডার মেশানো হয় তখন ওটমিলের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায় এবং তা থেকে স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া সম্ভব হয়।
মশলা হিসেবেঃ
খাবার রান্না করার সময় মশলা হিসেবে ব্যবহার করার জন্য সজনে পাতার পাউডার একটি ভালো অপশন হতে পারে। বিশেষ করে কোন ভাজি, পপকর্ন ইত্যাদির সাথে মশলা হিসেবে মরিঙ্গা পাউডার খাওয়া যেতে পারে।
স্যুপের সাথে মিশিয়েঃ
সচরাচর সুপের সাথে বিভিন্ন উপাদান যোগ করে এর পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করা হয়। সে দিক থেকে সুপের সাথে মরিঙ্গা পাওয়ার গ্রহণ করা একটি উপকারী সিদ্ধান্ত। এই কারণে রেস্টুরেন্টে সুপের সাথে সজনে পাতার পাউডার ব্যবহার করার একটি সুবর্ণ সুযোগ আছে। এতে একাধারে যেমন স্যুপের স্বাদ বৃদ্ধি পায় তেমনি এর পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়।
ভাতের সাথেঃ
আমরা বাঙ্গালিরা ভাতের সাথে ঝোল সহ সজনের ডাটা খেতে অনেক পছন্দ করি। তাছাড়া সজনে পাতার গুঁড়া দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার ভাতের সাথে মিশিয়ে খাওয়া আমাদের কাছে একটি সাধারণ খাবার। বিশেষ করে গরম ভাতের সাথে সজনে পাতার গুঁড়া মেশানো তরকারি যেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর হয় তেমনি স্বাদে হয় অনন্য।
সজনে পাতা খেলে কি ডায়াবেটিস কমে
সজনে পাতার এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং আইসোথিয়োকাইনেটস নামের উপাদানগুলো রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিদিন মাত্র ৫০ গ্রাম সজিনার পাতা খেলে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য আদর্শ সজনে পাতার চা।
এই পাতার মধ্যে ফাইটোকেমিক্যাল নামের একটি যৌগ রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এই পাতার চা পান করলে কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অক্সিডেটিভ চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সজনে পাতার অপকারিতা
সজনে পাতার গুড়ো বা মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার বা গ্রহণ করার সেরকম কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সজনে পাতার গুড়ো না খাওয়াই ভালো যেমন,
আমাদের ব্লাড প্রেসার কে কম করতে সজনে পাতার গুড়া বা মরিঙ্গা পাউডার বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তবে যদি আপনি প্রথম থেকে রক্ত চাপ বা ব্লাড প্রেসার কম করার ঔষধ খেয়ে থাকেন তবে সজনে পাতার গুড়ো না খাওয়াই ভালো। তার কারণ সজনে পাতার গুড়া খেলে বা গ্রহণ করলে আপনার ব্লাড প্রেসার লেভেল আরো কমে যাবে যা আপনার শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
সজনে পাতার গুড়তে প্রচুর পরিমাণ মিনারেলস ভিটামিনস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে তাই খুব বেশি পরিমাণ সজনে পাতার গুঁড়ো বা মরিঙ্গা পাউডার গ্রহণ করলে আমাদের খিদে কম হতে পারে এবং পেটে গ্যাস বা ডায়রিয়ার সমস্যা হতে পারে।
সজনে পাতাতে কিছু প্লান্ট কেমিক্যাল থাকে যার জন্য সজনে পাতা একদম ছোট বাচ্চা এবং গর্ভবতী মায়েদের না খাওয়া উচিত।
শেষ কথা
আজকাল আমরা সুপার ফুডের সাথে কম বেশি সবাই পরিচিত। সজনে পাতাকে সুপাড় ফুডের সাথে তুলনা করলে ভুল হবে না। এর কারণ সুপার ফুডে যেসব পুষ্টি উপাদান থাকার প্রয়োজন সজনে পাতায় সেসব পুষ্টি উপদান রয়েছে। শুধু তাই নয় উপরে সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং আরও বিভিন্ন বষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো পড়ার মাধ্যমে আনেক কিছু জানতে পারবেন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url