রাজশাহী থেকে কিভাবে সিলেট যাবেন
রুট-১রাজশাহী থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলি পরবহন, রাইস পরিবহন, ভাই ভাই ও আর পি এলিগ্যান্স পরিবহন মোট ৫টি বাস প্রতিদিন শিরোইল বাসস্টান্ড থেকে সরাসরি সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। নন এসি এসব বাসের টিকিট প্রতি মূল্য ১১০০-১২০০ টাকার মধ্যে
রুট-২
আপনি চাইলে প্রথমে রাজশাহী হতে ঢাকা যেতে পারেন। রাজশাহী থেকে বাস, ট্রেন ও আকাশপথে ঢাকা যাওয়া যায়। রাজশাহী থেকে ট্রেনে করে ঢাকা যেতে চাইলে আন্তঃনগর বনলতা এক্সপ্রেস, ধুমকেতু এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস, সিল্ক সিটিতে করে যেতে পারবেন। ট্রেনে যেতে আসনভেদে ভাড়া লাগবে ৭৭১ থেকে ১৩৮৬ টাকা।
প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ রাজশাহী থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনে ঢাকার উদ্দেশ্যে যান। তাদের এই যাত্রাতে অনেকেই বেছে নেন সড়কপথ। আর রাজশাহী থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য রয়েছে অনেক ধরনের এসি, নন এসি বাস যেমন- দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, গ্রামীন ট্রাভেলস, একতা পরিবহন শ্যামলী পরিবহন। এসকল বাস প্রতিদিন শিরোইল বাসস্টান্ড থেকে ভোর ৫ঃ৩০মি- রাত ১২ঃ৩০মি পর্যন্ত ঢাকা উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়ার পরিমান ৭১০ থেকে ১৪০০ টাকা।
রুট-৩
এছাড়াও আপনি রাজশাহী থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ও সাচ্ছন্দে যেতে চাইলে আকাশ পথকে বেছে নিতে পারেন। শাহ্-মুখদুম বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স, ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বীমানে করে ঢাকা যেতে সময় লাগবে প্রায় ১ ঘন্টা।
সময়ের সাথে এবং তারিখ অনুযায়ী বীমান ভাড়া সব সময় পরিবর্তিত হয়। ভ্রমণ তারিখের নূন্যতম মাসখানেক আগে বিমানের টিকেট কাটলে সাধারণত ভাড়া কিছুটা কমে। আবার ভ্রমণের তারিখের খুব কাছাকাছি সময়ে টিকেট কাটলে অনেক ক্ষেত্রে টিকেটের স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ অর্থ ব্যয় করতে হয়।
বীমানে করে রাজশাহী থেকে ঢাকা যেতে সর্বনিম্ন ভাড়া ৩৫০০-৪০০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ভাড়া ৮০০০-৯৫০০ টাকা পর্যন্ত লাগবে।
প্রত্যেক ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী ২০ কেজি পরিমাণ চেক কৃত এবং ৭ কেজি কেবিন লাগেজ হিসাবে মালামাল বহন করতে পারবেন। আর বিজনেস ক্লাসের যাত্রীগণ বহন করতে পারবেন ৩০ কেজি এবং ৭ কেজি কেবিন লাগেজ।
ঢাকা থেকে কিভাবে সিলেট যাবেন
ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে গ্রীন লাইন,লন্ডন এক্সপ্রেস, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি ও এনা পরিবহন ইত্যাদি এসি, নন-এসি বাস ঢাকা টু সিলেট রুটে চলাচল করে। সিলেটগামী এসি বাসে ভাড়া ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং নন-এসি বাসের ভাড়া ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।
ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সিলেট যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে। ট্রেনে যেতে আসনভেদে ভাড়া লাগবে ৩৭৫ থেকে ১২৮৮ টাকা।
ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ও সাচ্ছন্দে যেতে চাইলে আকাশ পথকে বেছে নিতে পারেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজার শরীফ
৩৬০ আউলিয়ার শহর সিলেট নগরী ‘পূন্যভূমি’ হিসাবে খ্যাত। সিলেটের মাটিতে যেসব পীর, দরবেশ শায়িত আছেন এদের মধ্যে হযরত শাহজালাল (রঃ) অন্যতম একজন। আর এজন্য তাঁকে ওলিকুল শিরোমণি বলা হয়। হযরত শাহ জালাল (রঃ) সকল ধর্মের মানুষের কাছে সমাদৃত ছিলেন। প্রতি বছর হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার জিয়ারতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অনেক মানুষের ঢল দেখা যায়।
মাজারে কি দেখবেন
হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজারের উত্তরদিকে একটি পুকুর রয়েছে। এই পুকুরের শোভা বর্ধন করে আছে অসংখ্য গজাড় মাছ। কথিত আছে হযরত শাহ্জালাল (রঃ) ৩৬০ আউওলিয়া নিয়ে সিলেট আসার সময় গজাড় মাছ নিয়ে এসেছিলেন। এসব মাছকে পুকুরে ভেসে বেড়াতে দেখে দর্শনার্থীরা আনন্দ লাভ করেন ও মাছেদের খাবার খেতে দেন। শাহজালাল (রঃ) এর মাজারের পাশে একটি কূপ রয়েছে। এই কূপে সোনালী ও রুপালী রঙের মাছ দেখা যায়।
জনশ্রুতি আছে, হযরত শাহ্জালাল (র:) এর আধ্যাত্মিক ক্ষমতার কথা জানতে পেরে হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া (র:) তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং নিদর্শন স্বরূপ তাঁকে একজোড়া সুরমা রঙের কবুতর উপহার দেন। সেই কবুতরই বর্তমানে জালালী কবুতর নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত। মাজারের ঝাঁকেঝাঁকে কবুতর বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত দর্শনার্থীদের বিনোদিত করে।
মাজারের দক্ষিণে গ্রীলঘেরা তারকা খচিত মাত্র দুই ফুট চওড়া একটি ঘর রয়েছে। এটি হযরত শাহজালাল (রঃ) চিল্লাখানা হিসাবে ব্যবহার করতেন। লোকমুখে শুনা যায়, হযরত শাহজালাল (রঃ) এখানে প্রায় ২৩ বছর আরাধনা করে কাটিয়েছেন।
দরগাহ মাদ্রাসা বিল্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে বাঁ দিকে মুফতি নাজিমুদ্দিন আহমদের বাড়িতে হযরত শাহজালাল (রঃ) এর ব্যবহৃত তলোয়ার, খড়ম, প্লেট, বাটি ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিস দর্শনার্থীদের দেখার ব্যবস্থা রয়েছে।
হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মূল দরগা শরীফ একটি পবিত্র স্থান, চারপাশ ঘুরে দেখার সময় দরগার পবিত্রতার দিকে লক্ষ্য রাখবেন।
সিলেট থেকে শাহজালাল মাজার
সিলেট রেল স্টেশন অথবা কদমতলী বাস স্ট্যান্ড হতে সিএনজি, রিকশা বা অটোরিকশা দিয়ে সহজেই মাজারে যাওয়া যায়। রিকশায় গেলে সাধারণত ভাড়া লাগে ২০-২৫ টাকা আর সিএনজিতে গেলে ৮০-১০০ টাকা। এছাড়াও শহরের যে কোন জায়গা থেকে মাজারে যাওয়ার জন্য অটো রিক্সা পেয়ে যাবেন।
কোথায় থাকবেন
লালা বাজার এলাকায় ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ সেখানে এসি রুম ৪০০০ থেকে শুরু করে নন এসি ৬০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাবেন। এছাড়াও হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা ভিউ, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী থাকতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
সিলেটর জিন্দাবাজার এলাকার পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টে সুলভ মূল্যে পছন্দমত নানা রকম দেশী খাবার খেতে পারবেন। এইসব রেস্টুরেন্টের বাহারী খাবার পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়া সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট আছে যা আপনার পছন্দ মত যে কোন জায়গায় খেয়ে নিতে পারবেন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
হযরত শাহজালালের দরগাহ ছাড়াও সিলেট শহর এবং সিলেটের আশেপাশে যে সকল দর্শনীয় স্থান রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান হলো, হযরত শাহপরাণ মাজার, লাক্কাতুরা চা বাগান, মালনীছড়া চা বাগান, জাফলং, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, লালাখাল, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, পান্থুমাই ঝর্ণা, ক্বীন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি, হাকালুকি হাওর, ডিবির হাওর, ড্রিমল্যান্ড পার্ক ইত্যাদি।
হযরত শাহপরাণ (রাঃ) এর মাজার শরীফ
হযরত শাহ্পরাণ (রঃ) এর মাজার সিলেট শহরের অন্যতম একটি আধ্যাতিক স্থাপনা। হযরত শাহ পরাণ (রঃ) ছিলেন মধ্যপ্রাচ্য হতে বাংলাদেশে আসা ইসলাম প্রচারক শাহ জালাল (রঃ) এর ভাগ্নে এবং প্রধান অনুসারী। হযরত শাহ্জালাল (রঃ) এর দরগাহ থেকে শাহ পরাণ (রঃ) এর মাজারের দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিম নগর এলাকায় বড় একটি টিলার উপর হযরত শাহ পরাণ (রঃ) এর মাজারের অবস্থান।
লোক মুখে প্রচলিত আছে হযরত শাহ পরাণ (রঃ) এর মাজার টিলায় উঠা-নামার জন্য তৈরী সিঁড়িটি মোগল আমলে নির্মিত। মাজারের পশ্চিম দিকে রয়েছে মোগল স্থাপত্বরীতিতে নির্মিত একটি মসজিদ। মূল মাজার টিলা থেকে অল্প দূরত্বেই রয়েছে নারী পর্যটকদের জন্য একটি ঘর, বিদেশী পর্যটকদের বিশ্রামাগার এবং অজু গোসলের জন্য একটি পুকুর।
১৩০৩ সালে হযরত শাহ্জালাল (রঃ) এর সাথে হযরত শাহ্পরাণ (রঃ) এর সিলেট আগমন সম্পর্কে তথ্য থাকলেও কিভাবে এবং কখন হযরত শাহপরাণ (রঃ) মৃত্যুবরণ করেন তা জানা যায়নি। প্রতিদিন শত শত ভ্রমণকারী দ্বারা মাজার দর্শন সিলেট অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামের প্রচারে হযরত শাহ্জালাল (রঃ) এর অবদানকেই স্পষ্ট করে তোলে।
কিভাবে যাবেন
সিলেট শহরের যেকোন প্রান্ত থেকে রিকশা, অটোরিক্সা কিংবা সিএনজি ভাড়া করে সহজেই হযরত শাহ পরাণ (রঃ) এর মাজার দর্শনে যেতে পারবেন। এছাড়াও হযরত শাহ্জালাল (রঃ) এর মাজার হতে রিকশা, সিএনজি, লেগুনা ১৫০-২০০ টাকা ভাড়ায় পেয়ে যাবেন।
জাফলং জিরো পয়েন্ট
জাফলং প্রকৃতি কন্যা হিসাবে পরিচিত। সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে জাফলং সবার পছন্দ। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা প্রকৃতির দানে রুপের পসরা সাজিয়ে আছে জাফলং। পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘের খেলা জাফলংকে করেছে অনন্যা। একেক ঋতুতে জাফলং একেক রকম রুপের প্রকাশ ঘটায়, যা পর্যটকদেরকে ভ্রমণের জন্য সারাবছরই আগ্রহী করে রাখে।
জাফলং যেতে আপনাকে আসতে হবে চায়ের দেশ সিলেটে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে নানান উপায়ে সিলেট আসা যায়। ঢাকা হতে বাস, ট্রেন ও আকাশপথে সিলেট যাওয়া যায়।
সিলেট থেকে জাফলং যেভাবে যাবেন
সিলেট থেকে জাফলং এর দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। সিলেট থেকে সরাসরি জাফলং যেতে সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘন্টা থেকে ২ ঘন্টা। বাস, সিএনজি, লেগুনা কিংবা মাইক্রোবাসে জাফলং যেতে পারবেন। জাফলংগামী বাস ছাড়ে কদমতলী থেকে। লোকাল বাস ভাড়া জনপ্রতি ৭০ টাকা এবং গেইটলক বিরতীহীন বাস ভাড়া ১০০ টাকা। আপনার সুবিধামত চাইলে সিলেট শহরের সোবহানীঘাট থেকেও বাসে উঠতে পারবেন। বাস ছাড়াও জাফলং যাওয়ার লোকাল লেগুনা সার্ভিস রয়েছে।
রিজার্ভ গাড়িতে যেতে চাইলে সিএনজি, লেগুনা বা মাইক্রোবাস পাবেন বন্দরবাজার শিশুপার্কের সামনে থেকে। এছাড়াও সিলেটের প্রায় সব জায়গা থেকেই রিজার্ভ যাওয়ার গাড়ি পাবেন। সিএনজিতে সর্বোচ্চ ৫ জন, লেগুনাতে ১০ জন এবং মাইক্রোবাসের আসন অনুযায়ী বসে যেতে পারবেন।
জাফলং যাওয়া-আসা সহ সারাদিনের জন্যে সিএনজি ভাড়া লাগবে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, লেগুনা ২০০০-২৫০০ টাকা এবং মাইক্রোবাস রিজার্ভ নিলে ভাড়া লাগবে ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা। কয়েকজন একসাথে ঘুরতে গেলে গাড়ি রিজার্ভ করে নেওয়া ভাল হবে এবং যাওয়ার পথে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান সহজে ঘুরে দেখতে পারবেন। গাড়ি ঠিক করার আগে কি কি দেখতে চান তা জানিয়ে দরদাম করে নিন।
আর পিকনিক কিংবা পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসলে বাস বা প্রাইভেট কার নিয়ে সরাসরি জাফলং পর্যন্ত যেতে পারবেন। বর্তমানে জাফলং যাবার রোড বেশ ভালো। মামার বাজার না গিয়ে গুচ্ছগ্রাম বিজিবি ক্যাম্প হয়ে জাফলং জিরো পয়েন্ট যাওয়ার রাস্তাটি অধিক জনপ্রিয়।
কোথায় থাকবেন
সাধারণত জাফলং ভ্রমণকারী পর্যটকরা রাত্রিযাপনের জন্য সিলেট শহরেই ফিরে আসেন। তাছাড়া সিলেট থেকে অন্যান্য ভ্রমণস্থানে যাওয়া সুবিধাজনক। সিলেটের বেশিরভাগ হোটেলগুলো শাহজালাল মাজারের আশেপাশকে ঘিরে অবস্থিত। দরগা গেট হতে আম্বরখানা, তালতলা, লামাবাজার, কদমতলী পর্যন্ত বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। কম খরচে থাকতে চাইলে দরগা গেট এলাকায় ৫০০-১০০০ টাকা মানের অনেক হোটেল পাবেন।
ভালমানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে আছে হোটেল হলি গেইট, হলি ইন, লা ভিস্তা হোটেল, পানসি ইন, হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল, ব্রিটানিয়া হোটেল ইত্যাদি। এসব হোটেলে থাকতে খরচ হবে ২,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। লাক্সারী হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে আছে নিরভানা ইন, হোটেল নূরজাহান গ্র্যান্ড, রোজ ভিউ হোটেল, নাজিমগর রিসোর্ট, গ্র্যান্ড প্যালেস সহ আরও কিছু হোটেল। প্রতি রাতের জন্যে খরচ হবে ৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত।
আর জাফলং যদি থাকতেই হয় তাহলে জিরো পয়েন্টের কাছে জাফলং গ্রিন রিসোর্ট অথবা মামার বাজার এলাকায় জাফলং ইন হোটেল ও হোটেল প্যারিস সহ আরো কিছু রেস্ট হাউজ আছে। এছাড়া জাফলংয়ের কাছে সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ ভিউ সহ জৈন্তা হীল রির্সোটে যোগাযোগ করতে পারেন। আর সরকারী রেস্ট হাউজে থাকতে পূর্ব অনুমতির প্রয়োজন হবে।
কি খাবেন-কোথায় খাবেনজাফলংয়ে অবস্থিত রেস্টুরেন্টের মধ্যে জাফলং ভিউ রেস্টুরেন্ট, সীমান্ত ভিউ রেস্টুরেন্ট এবং জাফলং পর্যটক রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। যে কোন সময় খাবার পাওয়া যায়। তবে একসাথে অনেকজন গ্রুপে গেলে আগেই খাবার অর্ডার করে রাখলে ভালো হবে।
সিলেট শহরে খেতে চাইলে জিন্দাবাজার এলাকায় অবস্থিত পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টের সুলভ মূল্যে পছন্দমত খাবার খেতে পারবেন। এই রেস্টুরেন্টগুলো অনেক রকম ভর্তা, খিচুড়ি এবং মাংসের পদের জন্য সবার কাছে সমাদৃত। সকালের নাস্তা করতে পারবেন জনপ্রতি ৫০-১০০ টাকায় এবং দুপুর বা রাতের খাবার খেতে খরচ হবে ১৫০-৩০০ টাকা।
মায়াবী ঝর্ণা
জাফলং জিরোপয়েন্ট থেকে ঠিক পূর্ব পাশে একটি অপরুপ ঝর্ণা রয়েছে যেটা মায়াবী ঝর্ণা নামে পরিচিত। জাফলং যাবেন আর ঝর্ণাতে গোসল করবেন না তা হলো। ঝর্ণার শীতল পানি আপনার শরীর ও মনকে ফুরফুরে করে তুলবে।
জাফলং ভ্রমণ টিপস
- গ্রুপ করে গেলে খরচ কম হবে।
- কিছু কিনতে বা খেতে চাইলে দরদাম করে নিন।
- বাহারী রকম পন্য পাওয়া যায়, নকল ও ভেজাল পন্য কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিন।
- যেহেতু জাফলং সীমান্তবর্তী এলাকা, তাই সীমান্ত এলাকার নির্দেশনা মেনে চলুন।
- নৌকা বা গাড়ি ঠিক করার সময় দরদাম করুন।
- পানিতে নামার সময় সতর্ক থাকুন, পাথর উত্তোলনের ফলে অনেক জায়গা বেশ গভীর।
- স্থানীয়দের সাথে সুন্দর ব্যবহার করুন।
- যে কোন প্রয়োজনে টুরিস্ট পুলিশের সাহায্য নিন
- এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন যা প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্যে ক্ষতিকর।
ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর
সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত প্রকৃতির মায়ায় মোড়ানো ভোলাগঞ্জ দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারির অঞ্চল। ভোলাগঞ্জ সীমান্তে প্রাকৃতিক দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উঁচু উঁচু পাহাড়। সেই পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণাধারা একদিকে ধলাই নদের পানির যোগানদাতা অন্যদিকে এই পানি প্রবাহই ভোলাগঞ্জের রূপের উৎস। সবুজ পাহাড়, মেঘের হাতছানি আর বর্ষার পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা সাদা সাদা পাথর ধলাই নদের বুকে মিলে মিশে ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।
ধলাই নদের উৎস মুখের পাথর পরিবেষ্টিত জায়গাটুকু ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট বা সাদাপাথর নামে পরিচিত। সাদাপাথর এলাকাটি দেখতে অনেকটা ব-দ্বীপের মত। ধলাই নদী বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে চারপাশ ঘুরে আবার মিলিত হয়েছে। ধলাই নদীর পানির সাথে ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে প্রচুর পাথর নেমে আসে। পাথর উত্তোলনকে সহজ করতে ১৯৬৪-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে নির্মাণ করা হয়। ভোলাগঞ্জ থেকে সোয়া ১১ মাইল দীর্ঘ এই রোপওয়ে চলে গেছে ছাতক পর্যন্ত, যা ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হত। বর্তমানে রোপওয়ের টাওয়ারগুলো কালের স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে। রোপওয়ে বন্ধ হলেও থেমে নেই পাথর উত্তোলন। এখনো অনেক স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকার উৎস এই পাথর উত্তোলন। ১০ নং ঘাট থেকে সাদাপাথর যাওয়ার পথে পাথর তোলা কিংবা ছোট নৌকায় পাথর বহন করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়বে।
ভোলাগঞ্জে সীমান্তে একটি ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন রয়েছে। এই স্টেশন দিয়ে প্রধানত চুনাপাথর আমদানী করা হয়। প্রতিদিন শত শত ট্রাক চুনাপাথর নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সাদাপাথর এলাকার কাছেই আছে উৎমাছড়া, তুরুংছড়ার মত আরও দুইটি সুন্দর স্থান। যদিও বর্ষাকাল ছাড়া এই দুই স্থানে যাওয়ার পরিকল্পনা এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।
উপযুক্ত সময়
ভোলাগঞ্জ যাবার সবচেয়ে ভাল সময় হচ্ছে বর্ষাকাল ও তার পরবর্তী কিছু মাস। অর্থাৎ জুন থেকে ডিসেম্বর মাসের যেকোন সময় ঘুরে আসতে পারেন ভোলাগঞ্জ থেকে। অন্যসময় গেলে পাথরময় সৌন্দর্য দেখতে পেলেও নদীতে পানি প্রবাহ তুলনামুলক কম পরিমাণে থাকে।
সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। দেশের যেখান থেকেই ভোলাগঞ্জ যেতে চান আপনাকে প্রথমে সিলেট শহরে আসতে হবে। সিলেট থেকে বাস, সিএনজি, লেগুনা বা প্রাইভেট কারে করে যাওয়া যায় ভোলাগঞ্জ। বর্তমানে ভোলাগঞ্জ যাওয়ার জন্য রাস্তার অবস্থা অনেকটা ভালো।
সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ
সিলেটের আম্বরখানা থেকে সিএনজি এবং মজুমদারী এলাকা থেকে ভোলাগঞ্জ যাবার বিআরটিসি, লোকাল ও টুরিস্ট বাস পাওয়া যায়। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রতি ২০ মিনিট পর পর এসব বাস চলাচল করে। জনপ্রতি ৭০ টাকা ভাড়ায় ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন সাদাপাথর যেতে পারবেন। লোকাল সিএনজিতে জনপ্রতি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা ভাড়ায় ভোলাগঞ্জ যেতে পারবেন। সিএনজি রিজার্ভ নিলে যাওয়া আসার ভাড়া লাগবে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা। এক সিএনজিতে ৫ জন বসা যায়। আম্বরখানা থেকে ভোলাগঞ্জ যেতে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত সময় লাগবে। ভোলাগঞ্জ নেমে দশ নম্বর নৌকা ঘাট থেকে সাদাপাথর যাওয়া ও আসা সহ নৌকা ভাড়া করতে খরচ হবে ৮০০ টাকা। প্রতি নৌকায় সর্বোচ্চ ১০ জন যেতে পারবেন, যদিও কতৃপক্ষ ৮ জনের বেশি এক নৌকায় যেতে দিতে চায় না। এক্ষেত্রে বুঝিয়ে বললে সমস্যা হয় না। আপনি যদি একা বা কম মানুষ নিয়ে ঘুরতে যান তাহলে কম খরচে নৌকা ভাড়া করতে চাইলে অনেক নৌকা আছে যারা ১ জন ২ জন করে ৮-১০ জন মিলিয়ে নিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ভাড়া ভাগ করে দিলে নৌকা ভাড়ারে খরচ কমে যাবে। সাদাপাথর এলাকায় গিয়ে আপনাদের যতক্ষন ইচ্ছা সময় কাটাতে পারবেন। এক্ষেত্রে মাঝির সাথে কথা বলে মাঝির ফোন নাম্বার নিয়ে নিন।
চাইলে মাইক্রো কিংবা প্রাইভেট কার রিজার্ভ করে সরাসরি ভোলাগঞ্জ দশ নম্বর ঘাট যেতে পারবেন। খরচ হবে ২৫০০-৩০০০ টাকা।
এছাড়া সিএনজি, লেগুনা বা প্রাইভেট কারে কোম্পানীগঞ্জের টুকের বাজার হয়ে ভোলাগঞ্জ যেতে পারবেন। সিলেট শহর হতে টুকের বাজার যাওয়ার অটোরিক্সার ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা। টুকের বাজার থেকে ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট সাদাপাথর যাওয়ার ট্রলার পাওয়া যায়। এমনকি বর্ষাকালে ছাতক হয়ে নৌকাযোগে ভোলাগঞ্জ যাওয়া যায়।
উৎমাছড়া ও তুরংছড়া
ভোলাগঞ্জের
কাছেই আরও দুইটি পর্যটন স্থান উৎমাছড়া ও তুরংছড়া। অনেকেই সাদা পাথর ভ্রমণ
করে উৎমাছড়া ও তুরংছড়া ঘুরতে যান। ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর ঘুরে উৎমাছড়ায়
যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে দয়ারবাজার। আপনি যেই নৌকায় ভোলাগঞ্জ
যাবেন সেই নৌকার মাঝিকে বললেই তিনি দয়ারবাজার ঘাটে নামিয়ে দিবে।
সেক্ষেত্রে অল্প কিছু টাকা বেশি দিতে হতে পারে। অথবা আগেই নৌকা ঠিক করার
সময় বলে দিবেন।
দয়ারবাজার
গিয়ে সেখান থেকে সিএনজি/বাইক নিয়ে জনপ্রতি ৩০-৫০ টাকা ভাড়ায় চলে যান চরার
বাজার। চরার বাজার নেমে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই উৎমাছড়ার পথ দেখিয়ে দিবে।
সেখান থেকে ১০-১৫ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন উৎমাছড়া পয়েন্টে। আর
চরারবাজার থেকে তুরংছড়া হেঁটে যেতে সময় লাগে ৩০-৪০ মিনিট। চাইলে চরারবাজার
থেকে বাইক নিয়েও যেতে পারবেন।
সিলেটে
ফিরে আসার সময় আপনার অবস্থান অনুযায়ী চরারবাজার, দয়ারবাজার, ভোলাগঞ্জ থেকে
সরাসরি সিএনজি নিয়ে চলে আসতে পারেন সিলেটের আম্বরখানায়।
কোথায় খাবেন
ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর কিংবা ১০ নং ঘাটে ভালমানের খাবার হোটেল বা রেস্টুরেন্ট নেই। ভাত মাছ ও দেশীয় খাবার খাওয়ার মত সাধারন মানের কিছু হোটেল আছে। ভোলাগঞ্জ যাবার রাস্তায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরে দেশবন্ধু রেস্টুরেন্ট, আলম হোটেল এবং টুকের বাজারে নবীন রেস্তোরাঁ, মায়া রেস্টুরেন্ট সহ কয়েকটি মাঝারি মানের খাবার হোটেল আছে। ভোলাগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হবার আগে সিলেট থেকে নাস্তা করে নিলে সারাদিন ঘুরে সিলেটে ফিরে এসে রাতের খাবার খেতে পারবেন। তবে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য স্থানীয় হোটেলেই একমাত্র ভরসা।
কোথায় থাকবেন
ভোলাগঞ্জ বা কোম্পানীগঞ্জ থাকার মত খুব ভাল আবাসিক হোটেল নেই। যদি কোন কারণে ভোলাগঞ্জে থাকার প্রয়োজন হয় তাহলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরে যেতে হবে। কোম্পানীগঞ্জে হোটেল আল ছাদিক, হালিমা বোর্ডিং, বাদশা বোর্ডিং, হোটেল আল হাসান প্রভৃতি সাধারণ মানের নন-এসি আবাসিক হোটেল ও জেলা পরিষদের একটি ডাক বাংলো রয়েছে।
সকালে রওনা হলে ভোলাগঞ্জ ঘুরে বিকেল/সন্ধ্যার মধ্যেই সিলেট শহরে ফিরে আসা যায়। তাই রাতে থাকার জন্যে সিলেট শহরে ফিরে আসাই ভাল। লালাবাজার এলাকা ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউস আছে৷ যেখানে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাবেন। এছাড়া হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী থাকতে পারবেন।
- চেষ্টা করবেন ঘুরে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে, যাতে সন্ধ্যা না হয়ে যায়।
- সাদা পাথর কতক্ষণ থাকবেন সেটা নৌকার মাঝিকে আগেই জানিয়ে রাখুন। আপনাদের ইচ্ছে মত সময় অবস্থান করতে পারবেন।
- সীমান্তবর্তী জায়গা, তাই সাবধানে থাকবেন।
- নদী পথে ভোলাগঞ্জ শুধু মাত্র বর্ষাকালে যাওয়া যায়।
- খেতে চাইলে সেখানের স্থানীয় হোটেল গুলো থেকেই খেতে হবে।
- বর্ষাকালে নদীর পানিতে অনেক স্রোত থাকে, সাঁতার না জানলে বেশি পানিতে নামা দরকার নাই।
- যানবাহন ভাড়া করার সময় অবশ্যই দরদাম করে নিবেন।
- কম খরচে ঘুরতে চাইলে গ্রুপ করে ঘুরতে পারেন।
- একদিনে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, উৎমাছড়া ও তুরংছড়া ঘুরতে চাইলে অবশ্যই খুব সকাল সকাল রওয়ানা হতে হবে।
- চাইলে
সিলেটের আম্বরখানা থেকে সিএনজি যাওয়া আসা এবং সেখানের স্পট গুলোতে ঘুরার
জন্যে সারা দিনের জন্য ভাড়া করে নিতে পারেন। এইক্ষেত্রে খরচ একটু বেশি হতে
পারে।
বিছানাকান্দি
বিছানাকান্দি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। বিছানাকান্দি মূলত জাফলং ও ভোলাগঞ্জের মতই একটি পাথর কোয়ারী। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের খাসিয়া পাহাড়ের অনেকগুলো ধাপ দুই পাশ থেকে এসে বিছানাকান্দিতে মিলিত হয়েছে। সেই সাথে মেঘালয় পাহাড়ের খাঁজে থাকা সুউচ্চ ঝর্ণা বিছনাকান্দির প্রকৃতিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
পর্যটকদের কাছে বিছানাকান্দির মূল আকর্ষন হচ্ছে পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলধারা আর পাহাড়ে পাহাড়ে শুভ্র মেঘের উড়াউড়ি। প্রথম দেখায় আপনার মনে হবে এ যেন এক পাথরের বিছানা, আর স্বচ্ছ পানিতে গা এলিয়ে দিতেই যে মানসিক প্রশান্তি পাবেন এই প্রশান্তি আপনাকে বিছানাকান্দি টেনে নিয়ে যাবে বারবার। এ যেন পাহাড়, নদী, ঝর্ণা আর পাথর মিলিয়ে প্রাকৃতিক মায়াজাল বিছিয়ে রেখেছে বিছানাকান্দি।
বিছানাকান্দি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
বিছনাকান্দি যে কোন সময় ভ্রমণের জন্যে উপযুক্ত। তবে বর্ষাকাল বিছানাকান্দি ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। চারদিকে প্রচুর পানি প্রবাহ থাকার কারণে এ সময় বিছানাকান্দির প্রকৃত সৌন্দর্য্য দেখতে পাওয়া যায়। বছরে অন্য সময় এখানে পাথর উত্তোলনের কারণে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সাময়িক অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
বিছানাকান্দি যাওয়ার উপায়
দেশের যেখানেই থাকেন আপনাকে প্রথমে সিলেট জেলা শহরে আসতে হবে বিছানাকান্দি যাবার জন্যে। তারপর সিলেট থেকে বিছানাকান্দি যেতে হবে।
সিলেট থেকে বিছানাকান্দি
বিছানাকান্দি যেতে সিলেটের আম্বরখানার সিএনজি স্টেশন থেকে জনপ্রতি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় লোকাল সিএনজিতে চড়ে হাদারপার নামক জায়গায় যেতে হবে। সারাদিনের জন্য সিএনজি রিজার্ভ নিলে সাধারণত ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকার মত লাগবে। হাদারপার এসে নৌকা ঘাট থেকে নৌকা ঠিক করে বিছানাকান্দির মেইন পয়েন্টে যেতে পারবেন। বর্ষাকালে বিছানাকান্দি ভ্রমণে গেলে বিছানাকান্দি ও পান্থুমাইয়ের জন্য একত্রে নৌকা ভাড়া করতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী নৌকার মাঝির সাথে কথা বলে নিন। শুধু বিছানাকান্দি যাওয়ার জন্য নৌকা ভাড়া লাগবে ৮০০-১৫০০ টাকা। আর পান্থুমাই সহ নৌকা ভাড়া লাগবে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। আর অবশ্যই দামাদামি করে নৌকা ভাড়া ঠিক করে নিবেন। বড় ট্রলার ভাড়া করতে কোন কোন ক্ষেত্রে ২৫০০ পর্যন্ত টাকা লাগতে পারে। শীতকালে ও বর্ষার আগে নদীতে পানি কম থাকে সেসময় আপনি চাইলে হাদারপাড় থেকে হেটে বা বাইকে চড়ে বিছানাকান্দি যেতে পারবেন। জনপ্রতি মটরবাইক ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
যেকোন ভাড়ার জন্যে ভালো মত দরদাম করে নিন। আর সিজন ও পর্যটক উপস্থিতি বেশি থাকলে ভাড়া কম বেশি হতে পারে। কোন সমস্যায় পড়লে প্রয়োজনে ফোন করতে পারেন – উপজেলা নির্বাহী অফিসার (01730-331036) এবং উপজেলা পরিষদ – (01919-515960)।
বিছানাকান্দিতে গোসল করলে পোষাক পরিবর্তনের প্রয়োজনে অর্থের বিনিময়ে ওয়াশরুম ব্যবহার করা যায়।
কোথায় থাকবেন
বিছানাকান্দি যাওয়া আসার সময় কম লাগার কারণে থাকার জন্য সিলেট শহরকে বেছে নিতে পারেন। হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী থাকতে পারবেন। এছাড়া লালা বাজার এলাকায় ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ যেখানে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাবেন।
ভাল মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে আছে হোটেল হলি গেইট, হলি ইন, লা ভিস্তা হোটেল, পানসি ইন, হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল, ব্রিটানিয়া হোটেল ইত্যাদি। এসব হোটেলে থাকতে খরচ হবে ২,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। লাক্সারী হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে আছে নিরভানা ইন, হোটেল নূরজাহান গ্র্যান্ড, রোজ ভিউ হোটেল, নাজিমগর রিসোর্ট, গ্র্যান্ড প্যালেস সহ আরও কিছু হোটেল। প্রতি রাতের জন্যে খরচ হবে ৮,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত।
কি খাবেন
বিছানাকান্দিতে কিছু অস্থায়ী খাবারের হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে বিভিন্ন প্যাকেজে আনলিমিটেড ভাত ডাল খেতে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ হবে। প্রয়োজনে সাথে কিছু শুকনো খাবার, পানি ইত্যাদি কিনে নিয়ে যেতে পারেন। হাদারপার বাজারে গনি মিয়ার ভূনা খিচুড়ি খেতে পারেন। এছাড়া সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট আছে, আপনার চাহিদামত সবকিছুই পাবেন। সিলেটের জিন্দাবাজার এলাকার পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টের সুলভ মূল্যে পছন্দমত দেশী খাবার খেতে পারেন, এই রেস্টুরেন্ট গুলো অনেক রকম ভর্তা ভাজি, খিচুড়ি ও মাংসের পদের জন্য খুবই জনপ্রিয়।
বিছানাকান্দি ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
- খরচ কমাতে দলগত ভাবে ভ্রমণ করুন।
- চাইলে একদিনেই রাতারগুল দেখে বিছানাকান্দি ভ্রমণ করতে পারেবেন।
- নৌকা ও সিএনজি ভাড়া করতে ভালো মত দামাদামি করুন।
- বিছানাকান্দি পানিতে নামার সময় সতর্ক থাকুন।
- বর্ষাকালে অল্প পানির স্রোতের গতিও অনেক বেশি থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
- বিছানাকান্দি একটি পাথর কোয়ারী, চারাপাশে পাথর, পানির নিচেও পাথর, তাই হাঁটা চলায় অতিরিক্ত সাবধান থাকুন।
- দয়া করে পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
- স্থানীয়দের সাথে বিনয়ী থাকুন।
- সন্ধ্যার আগেই সিলেট শহরে ফিরে আসুন।
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট
রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট। এটি সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। রাতারগুল বনটি প্রায় ৩০.৩২৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এই বিস্তৃর্ণ এলাকার ৫০৪ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে বন আর বাকি জায়গা ছোট বড় জলাশয়ে পূর্ণ। তবে বর্ষায় পুরো এলাকাটিকেই দেখতে একই রকম মনে হয়।
রাতারগুল সিলেটের সুন্দরবন’ নামে খ্যাত। রাতারগুল জলাবন বছরে চার থেকে পাঁচ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে। তখন জলে ডুবে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমায়। অনেক পর্যটক রাতারগুলকে ‘বাংলাদেশের আমাজন’ হিসাবে অভিহিত করেন। বর্ষায় গাছের ডালে দেখা মিলে নানান প্রজাতির পাখি, আবার তখন কিছু বন্যপ্রাণীও আশ্রয় নেয় গাছের ডালে। এছাড়া শীতকালে রাতারগুলের জলাশয়ে বসে হাজারো অতিথি পাখির মেলা। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর (বর্ষার শেষের দিকে) পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
রাতারগুল একটি প্রাকৃতিক বন, স্থানীয় বন বিভাগ এখানে হিজল, বরুণ, করচ সহ বেশ কিছু গাছ রোপণ করেন। এছাড়াও এখানে চোখে পড়ে কদম, জালিবেত, অর্জুনসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির জলসহিষ্ণু গাছপালা। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ রাতারগুল বনের ৫০৪ একর জায়গাকে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে।
সিলেট থেকে রাতারগুল যাওয়ার উপায়
সিলেট শহর থেকে রাতারগুলের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। তাই সিলেট থেকে সকালে রাতারগুল গিয়ে বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসা যায়। একসাথে কয়েকজন হলে সারাদিনের জন্য সিএনজি কিংবা লেগুনা ভাড়া করে নিতে পারেন। সারাদিনের জন্যে ভাড়া ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা লাগবে। আপনি চাইলে রাতারগুলের সাথে ভোলাগঞ্জ অথবা বিছনাকান্দি ঘুরে দেখতে পারেন। সিএনজি রিজার্ভ করতে অবশ্যই দামাদামি করে নিন। রাতারগুল ঢুকার জন্যে সরকারি ফি দিতে হয় এবং জঙ্গলে ঢুকার জন্য জেলেদের ছোট ছোট নৌকা পাবেন। একটি ছোট নৌকায় ৪-৫ জন বসা যায়। নৌকার ভাড়া ৭৫০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
লালা বাজার এলাকায় ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউস আছে৷ যেখানে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাবেন। এছাড়া হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী থাকতে পারবেন।
ভালো সার্ভিসের আবাসিক হোটেলের মধ্যে আছে হোটেল হলি গেইট, হলি ইন, লা ভিস্তা হোটেল, পানসি ইন, হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল, ব্রিটানিয়া হোটেল, ইত্যাদি। এসব হোটেলে থাকতে খরচ হবে ২,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। লাক্সারী হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে আছে নিরভানা ইন, হোটেল নূরজাহান গ্র্যান্ড, রোজ ভিউ হোটেল, নাজিমগর রিসোর্ট, গ্র্যান্ড প্যালেস সহ আরও কিছু হোটেল। প্রতি রাতের জন্যে খরচ হবে ৮,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত।
রাতারগুল ভ্রমণে সাবধানতা
বর্ষায় বন ডুবে যাওয়ার পর সাপ সাধারণত বিভিন্ন গাছের ডালে আশ্রয় নেয়, এই বিষয়ে সতর্ক থাকুন। এছাড়া এখানে জোঁকের উপদ্রবও আছে। যদি সাঁতার জানা না থাকে তবে লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখুন। প্রয়োজনে ছাতা ও রেইনকোট নিয়ে নিন।
নীলাদ্রি লেক
নীলাদ্রি লেক খ্যাত পর্যটন স্থানটি চুনাপাথরের পরিত্যাক্ত খনির লাইম স্টোন লেক। সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টেকেরঘাট নামক গ্রামে নীলাদ্রি লেকের অবস্থান। এই লেকের প্রকৃত নাম শহীদ সিরাজ লেক। কিন্তু ভ্রমণ কমিউনিটিতে এই লেক নীলাদ্রি নামেই অধিক পরিচিত। অবশ্য স্থানীয় লোকজন একে টেকেরঘাট পাথর কোয়ারি নামে চেনে।
লেকের চমৎকার নীল পানি, ছোট বড় টিলা আর পাহাড়ের সমন্বয় নীলাদ্রি লেককে করেছে অপার্থিব সৌন্দর্য্যের অধিকারী। স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের জন্য নিলাদ্রি লেক দেখে অনেক পর্যটক একে বাংলার কাশ্মীর হিসাবে অভিহিত করেন।
নীলাদ্রি লেক কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে দুই রুটে নীলাদ্রি লেক দেখতে যেতে পারেন। নিজের সুবিধা মত যেকোন রুটে নীলাদ্রি লেকে যেতে পারেন।
রুট প্ল্যান –১
প্রতিদিন ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে মামুন ও শ্যামলী পরিবহণের বাস সরাসরি সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং মহাখালী থেকে ছেড়ে যায় এনা পরিবহণের বাস। এসব নন-এসি বাসে জনপ্রতি টিকেট কাটতে ৮২০-৮৫০ টাকা লাগে আর সুনামগঞ্জ পৌঁছাতে প্রায় ছয় ঘন্টা সময় লাগে। সুনামগঞ্জ শহরের নতুন ব্রীজ এলাকায় টেকেরঘাট যাবার জন্য মোটর সাইকেল ভাড়া পাবেন। রিজার্ভ নিলে মোটরসাইকেল ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে.৪০০ টাকা পর্যন্ত। যাত্রা পথে যাদুকাটা নদী পার হওয়ার সময় জনপ্রতি ৫ টাকা এবং মোটর সাইকেলের জন্য ১০ টাকা ভাড়া দিতে হবে।
সুনামগঞ্জ থেকে মোটর সাইকেলে লাউড়ের গড় পর্যন্ত আসতে ভাড়া লাগবে ২০০ টাকা। সেখান থেকে যাদুকাটা নদী পাড় হয়ে বারিক্কা টিলা থেকে ১২০ টাকা ভাড়ায় টেকেরঘাট যাবার মোটর সাইকেল পাবেন। উল্লেখ্য, মোটরসাইকেল রিজার্ভ কিংবা ভাড়ার ক্ষেত্রে দুইজন ধরা হয়েছে।
রুট প্ল্যান – ২ঢাকা থেকে হাওর এক্সপ্রেস ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামক দুইটি আন্তঃনগর ট্রেন যথাক্রমে রাত ১০ টা ১৫ মিনিটে ও দুপুর ১ টা ১৫ মিনিটে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের অভিমুখে যাত্রা করে। এই ট্রেনে ২০৫-৮৫১ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যায়। মোহনগঞ্জ থেকে মধ্যনগর যেতে ১ ঘন্টা সময় লাগে। মধ্যনগর (পিপরা কান্দা ঘাট) থেকে বর্ষাকালে ট্রলার, স্পিডবোট বা নৌকা দিয়ে টেকেরঘাট যাওয়া যায়। আবার নেত্রকোনা থেকেও সরাসরি নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করে টেকেরঘাট যাওয়া যায়। তবে শীতকালে নেত্রকোনা থেকে টেকেরঘাট যেতে মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয়।
রুট প্ল্যান – ৩
বর্ষাকালে আপনি ভিন্ন পথেও যেতে পারবেন। সুনামগঞ্জ থেকে টাংগুয়ার হাওর হয়ে টেকেরঘাট যেতে পারবেন নৌকা নিয়ে। সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা নদীর উপর নির্মিত বড় ব্রীজের কাছে লেগুনা, সিএনজি, বাইকে করে তাহিরপুরে সহজেই যাওয়া যায়। তাহিরপুরে নৌকা ঘাট থেকে সাইজ এবং সামর্থ অনুযায়ী নৌকা ভাড়া করে নিন। নৌকা ভাড়া করুন এইভাবে যে টাংগুয়ার হাওর দেখে টেকেরঘাট যাবেন।
এছাড়া শুকনা মৌসুমে কিংবা একদিনে নীলাদ্রী লেক, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, বারেক টিলা দেখতে চাইলে সুনামগঞ্জ শহর থেকে মোটর বাইক রিজার্ভ নিয়ে বারেক টিলা, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান হয়ে নীলাদ্রী লেক ঘুরে আবার সুনামগঞ্জ ফিরে আসতে পারবেন। এক্ষেত্রে সিজনভেদে মোটরবাইক ভাড়া লাগবে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং প্রতিটি বাইকে দুইজন ভ্রমণ করতে পারবেন।
অথবা আপনি যদি আলাদাভাবে উল্লেখিত স্থানগুলো ভ্রমণ করতে চান তবে সুনামগঞ্জ থেকে বাইকে ২০০ টাকা ভাড়ায় ১ ঘন্টা ২০ মিনিটে লাউড়ের গড় পৌঁছে ছোট নৌকায় যাদুকাটা নদী পাড় হয়ে সহজেই বারেক/বারিক্কা টিলায় যেতে পারবেন। আর বারেক টিলা থেকেই যাদুকাটা নদীর অপরুপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। বারেক টিলা থেকে শিমুল বাগান ও নীলাদ্রী লেক যাওয়ার বাইক ভাড়া করতে পারবেন। শিমুল বাগান ও নীলাদ্রী লেক একসাথে ভ্রমণের জন্য বাইক রিজার্ভ করতে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা লাগবে। উল্লেখ্য শিমুল বাগান ও নীলাদ্রী লেক দেখে সুনামগঞ্জ শহরে ফিরে যেতে হলে আবার আপনাকে আবার একই পথে যাত্রা করতে হবে তাই দিনের শুরুতেই ভ্রমণে বের হলে স্বাচ্ছন্দে সবগুলো জায়গা দেখতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
বড়ছড়া বাজারে বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউজ। এই সব গেস্ট হাউজে ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে রুম পাবেন। তাহিরপুর বাজারেও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে আর যদি খালি থাকে তবে নীলাদ্রী লেকের কাছে পুরাতন চুনা পাথরের কারখানার গেস্ট হাউজে রাত কাটাতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
বারিক্কা টিলাতে সাধারন মানের দেশীয় খাবারের হোটেল রয়েছে। এছাড়া বড়ছড়া বাজার কিংবা যাদুকাটার পাশের টেকেরঘাটের ছোট বাজারে খাবার জন্য মোটামুটি মানের রেস্টুরেন্ট পাবেন। তবে ভাল মানের খাবার হোটেলের জন্য আপনাকে সুনামগঞ্জ শহরে আসতে হবে।
নীলাদ্রি লেক ভ্রমণে জরুরী পরামর্শ* নীলাদ্রি লেকের গভীরতা অনেক বেশী হওয়ায় লেকের পানিতে নামতে বা সাতার কাটতে লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন।
* একদিনে সবগুলো জায়গা দেখতে সময়ের প্রতি যত্নবান হোন।
* কেনাকাটার ক্ষেত্রে দরদাম করে নিন।
* স্থানীয়দের সাথে ভাল ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনে তাদের সাহায্য নিন।
নীলাদ্রি লেকের কাছাকাছি আরো কিছু ভ্রমণের স্থানটেকের ঘাট- বারিক টিলা
- টাঙ্গুয়ার হাওড়
- যাদুকাটা নদী
- শিমুল বাগান
- লাকমা ছড়া
- মেঘালয় পাহাড়
লালাখাল
লালাখাল বিভাগীয় শহর সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত। সিলেট থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই লালাখাল নদী ভারতের চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদী, পাহাড়ী বন, চাবাগান এবং নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি লালাখালের ভূপ্রকৃতিকে দিয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। ভরা পূর্ণিমায় জ্যোৎস্না ধোয়া নদী কিংবা মেঘ, পাহাড় আর নদীর মিতালী দেখতে আপনাকে লালাখাল ঘুরে আসতে হবে। বর্ষাকালে লালাখালের পানি খুব ঘোলা থাকে তাই নভেম্বর থেকে মার্চ অর্থাৎ শীতকাল হচ্ছে লালাখাল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
লালাখালের বিভিন্ন অংশে নীল, সবুজ এবং স্বচ্ছ পানির দেখা মিলে। চাইলে তামাবিল অংশের স্বচ্ছ পানির সারি নদীর উপর দিয়ে স্পীডবোট বা নৌকায় লালাখালে যেতে পারেন। ৪৫ মিনিটের এ যাত্রা আপনাকে লালাখালের সৌন্দর্য্যে বাকরুদ্ধ করে রাখবে। সন্ধ্যার পর নদীতে নৌকা থাকে না, তাই সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে যাওয়া উত্তম। রাতে লালাখালের রুপে মোহিত হতে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে আসা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
সিলেট থেকে লালাখাল যেভাবে যাবেনসিলেট থেকে লালাখালে যেতে হলে নগরীর ধোপাদিধীর ওসমানী শিশু উদ্যানের বা শিশু পার্কের সামনে থেকে লেগুনা, মাইক্রবাস অথবা জাফলংগামী বাসে চড়ে সারিঘাট আসতে পারেন। সারিঘাট সিলেট এবং জাফলং এর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। সারিঘাট থেকে লালাখালে যাওয়ার সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাবেন। যদি নদীপথে লালাখালে যেতে চান তবে এখানে ইঞ্জিন চালিত বিভিন্ন ট্রলার ও নৌকা ভাড়ায় পাবেন। লালাখাল থেকে সিলেট ফিরতে রাত ৮ টা পর্যন্ত বাস ও লেগুনা পাবেন।
সিলেট থেকে লালাখাল যেতে মাইক্রোবাসে ভাড়া লাগবে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা। বাস কিংবা লেগুনায় সারিঘাট যেতে ৪০ থেকে ৬০ টাকা খরচ হবে। সারিঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় লালাখালে যেতে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং স্পিডবোটে যেতে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা লাগবে। কম খরচে লালাখাল যেতে চাইলে সারিঘাট ব্রিজ পার হয়ে উত্তর দিকে মসজিদ থেকে একটু এগিয়ে ডান দিকে লালাখালের রাস্তায় সারি সারি অটো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবেন। সিরিয়ালের ভিত্তিতে চলা এসব অটোতে জনপ্রতি ভাড়া লাগে ১৫ টাকা। অটো থেকে নেমে লালাখাল ঘাটে গেলেই সবুজ পানির অপার্থিব দৃশ্য দেখতে পারবেন।
খানে ছাউনি দেয়া রঙিন নৌকায় ঘুরতে চাইলে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা লাগবে আর আরো কম টাকায় নৌকা ভাড়া করতে খেয়া পার হয়ে নদীর অপর পাড়ে ছাউনি ছাড়া নৌকা গুলোর কাছে চলে যান। এখানে নৌকাগুলোর সিরিয়াল আছে একটু দরদাম করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় ইচ্ছেমত সময়ের জন্য ভাড়া করতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
লালাখালের পাড়ে রাত কাটাতে নর্দার্ন রিসোর্টে বুকিং দিতে পারেন। অতিথিদের সিলেট যাওয়া আসার জন্য এদের নিজেদের পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া লালাখালের কাছে খাদিমনগরে অবস্থিত নাজিমগড় রিসোর্টে আগেই যোগাযোগ করে নিতে পারেন। কারণ সিজনে রিসোর্টের সব রুম বুক থাকতে পারে। নাজিমগড় রিসোর্টে টেরেস, ছোট বাংলো এবং বড় ভিলায় রাত্রি যাপনের সুযোগ রয়েছে। এই রিসোর্টটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় ভরপুর। প্রতি রাতের জন্য নাজিমগড় রিসোর্টের প্রিমিয়ার কক্ষের ভাড়া ৭০০০ টাকা এবং প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইটের ভাড়া ১৫,০০০ টাকা।
তবে থাকার জন্য সিলেট ফিরে আসাই সুবিধাজনক। সিলেটের লালা বাজার ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ যেখানে ৪০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাবেন। এছাড়াও হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা, কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী থাকতে পারবেন।
কি খাবেন
সিলেটর জিন্দাবাজার এলাকার পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টের সুলভ মূল্যে পছন্দমত নানা রকম দেশী খাবার খেতে পারেন। এইসব রেস্টুরেন্টের বাহারী খাবার পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়া সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট আছে, আপনার পছন্দ মত যে কোন জায়গায় খেয়ে নিতে পারেন।
জৈন্তা হিল রিসোর্ট
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার আলু বাগান নামক স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে জৈন্তা হিল রিসোর্ট। প্রকৃতির অপূর্ব নিস্বর্গ দেখার পাশাপাশি মেঘালয় পাহাড়ের জলপ্রপাত দেখার জন্য পর্যটকরা ছুটে আসেন এই পাহাড়ি অবকাশ কেন্দ্রে। তাই জৈন্তা হিল রিসোর্টে থাকা-খাওয়ার সুবিধার সাথে সাথে রয়েছে পাহাড়ের সৌন্দর্য্য অবলোকন করার ব্যবস্থা। পাহাড়, ঝর্ণা, নদী ও সুনীল আকাশ ছাড়াও জৈন্তা হিল রিসোর্ট থেকে আরো চোখে পড়ে স্বচ্ছ পানির গভীর থেকে শ্রমিকদের পাথর তুলে আনার অসাধারণ দৃশ্য।
রিসোর্টে না থাকতে চাইলে কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এই স্বপ্নপুরী হতে।জৈন্তিয়া হিল রিসোর্ট থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে জৈন্তা রাজবাড়ি এবং ৫ কিলোমিটার দূরত্বে জাফলংয়ের অবস্থান। এছাড়া জৈন্তা হিল রিসোর্ট থেকে ১ কিলোমিটার দূরে তামাবিল স্থল বন্দর।
খরচ
জৈন্তা হিল রিসোর্টে থাকার বেশ ভাল ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে ২,৫০০ থেকে ৮,০০০ টাকায় এসি-নন এসি রুম ও কটেজে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
যোগাযোগের ঠিকানা:
আলু বাগান, জৈন্তাপুর, জাফলং রোড, সিলেট – ৩১৫৬
কিভাবে যাবেন
জৈন্তা হিল রিসোর্ট যেতে আপনাকে আসতে হবে চায়ের দেশ সিলেটে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিলেট আসা যায়। ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন ও আকাশপথে সিলেট যেতে পারবেন।
সিলেট থেকে জৈন্তা হিল রিসোর্ট
সিলেটে যেকোন স্থান থেকে জাফলংগামী অটোরিকশা বা সিএনজি ভাড়া করে জৈন্তা হিল রিসোর্ট যেতে পারবেন। লোকাল বাসে করে শিবগঞ্জ এসে জনপ্রতি ৮০ টাকা ভাড়ায় জৈন্তা হিল রিসোর্টে যাওয়া যায়। সিএনজি বা অটোরিকশায় যেতে ভাড়া লাগে ১,২০০ থেকে ২,০০০ টাকা। মাইক্রোবাস যাওয়া-আসা সহ সারাদিনের জন্যে রিজার্ভ নিলে ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা ভাড়া লাগবে। দলগত ভাবে গেলে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে গেলেই ভালো, তাহলে আশেপাশের অন্যান্য যায়গা নেমে ঘুরে দেখতে পারবেন। গাড়ি ঠিক করার সময় চালকের সাথে ভাল মত দরদাম করে নিন এবং কি কি দেখতে চান সে সম্পর্কে জানিয়ে রাখুন।
কোথায় থাকবেন
জৈন্তা হিল রিসোর্টে থাকতে না চাইলে চলে যেতে পারেন জাফলংস্থ জেলা পরিষদের বাংলোয়। অবশ্য এই বাংলোতে থাকতে হলে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখতে হবে। সাধারণত পর্যটকরা রাতে থাকার জন্য সিলেটেই ফিরে আসেন। লালা বাজার এলাকায় ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ যেখানে ৪০০ থেকে ২৫০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাবেন। এছাড়াও হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী থাকতে পারবেন।
কি খাবেন
জৈন্তা হিল রিসোর্টে প্রায় সকল ধরনের বাংলা খাবার পাওয়া যায়। জৈন্তা হিল রিসোর্টে খাবার না খেতে চাইলে সিলেটের জিন্দাবাজার এলাকার পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টের সুলভ মূল্যে পছন্দমত দেশী খাবার খেতে পারবেন।
জৈন্তা হিল রিসোর্টের সুযোগ-সুবিধাসমূহ
* সার্বক্ষনিক টেলিফোনের ব্যবস্থা
* ২৪ ঘন্টা রুম সার্ভিস
* সার্বক্ষনিক সিকিউরিটির ব্যবস্থা
* সুপরিসর রেস্টুরেন্ট
* গিফট শপ
* নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা
* কার পার্কিং
* নামাজের ব্যবস্থা
* রেন্ট এ কার
* ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে সহায়তা
তামাবিল বোর্ডার
সবুজ পাহাড় আর টিলায় ঘেরা সিলেট জেলা প্রকৃতির রূপে অনন্য। সিলেটের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেটকে সুন্দরী শ্রীভূমি আখ্যা দিয়েছিলেন। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত তেমনি এক স্থানের নাম তামাবিল। সিলেট-জাফলং রোড ধরে এগিয়ে যেতে থাকলে জাফলংয়ের ৫ কিলোমিটার পুর্বে তামাবিলের দেখা মিলবে। সিলেট জেলা থেকে তামাবিলের দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। তামাবিল মূলত বাংলাদেশের সিলেট এবং ভারতের শিলংয়ের মধ্যকার সীমান্ত সড়কের একটি চৌকি।
তামাবিল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়, ঝর্ণা সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখা যায়। তাই অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্যে বিমোহিত হতে প্রচুর দর্শনার্থী তামাবিল ঘুরতে আসেন। তামাবিলে যাবার পথের বাকেবাকে বিশাল পাহাড় ও ঝর্ণার এক পলক দর্শন তামাবিল ভ্রমণের আগ্রহ বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। প্রকৃতির আয়োজন এছাড়াও তামাবিলের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আছে স্বচ্ছ পানির লেক, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং জৈন্তা হিল রিসোর্ট।
কিভাবে যাবেন
তামাবিল যেতে চাইলে প্রথমে চায়ের দেশ সিলেটে আসতে হবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিলেটে আসা যায়। রাজধানী ঢাকা হতে বাস, ট্রেন কিংবা আকাশপথে সিলেট যাওয়া যায়।
সিলেট থেকে তামাবিল
লোকাল বাসে তামাবিল যেতে চাইলে সিলেট শহরের শিবগঞ্জে আসুন সেখান থেকে জনপ্রতি ৮০ টাকা ভাড়ায় তামাবিল যেতে পারবেন। সিএনজি বা অটোরিকশায় তামাবিল যেতে ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা ভাড়া লাগবে। আর মাইক্রোবাস সারাদিনের জন্যে রিজার্ভ নিতে ভাড়া লাগবে ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা। এছাড়া সিলেট নগরীর যেকোন স্থান থেকে জাফলংগামী যানবাহনে তামাবিল যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
তামাবিলে জৈন্তিয়া হিল রিসোর্ট নামে একটি ভাল মানের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া জাফলংয়ের গেস্ট হাউজ ও জেলা পরিষদের বাংলোতে আগেই বুকিং দিয়ে থাকতে পারবেন। এছাড়া সিলেটের লালাবাজার ও দরগা রোডে কম খরচে থাকার বেশকিছু মানসম্মত রেস্ট হাউস রয়েছে৷
লাক্কাতুরা চা বাগান
দুইটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ হিসেবে পরিচিত সিলেট জেলার চৌকিদেখি উপজেলার ওসমানী বিমান বন্দরের উত্তর প্রান্তে টিলার উপর লাক্কাতুরা চা বাগান অবস্থিত। ন্যাশনাল টি বোর্ডের অধীনস্ত এই সরকারী চা বাগান প্রায় ১২৯৩ হেক্টর বা প্রায় ৩২০০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। অসংখ্য চা গাছ ও উঁচু নিচু পাহাড়ে ঘেরা লাক্কাতুরা চা বাগান দেশের বৃহত্তম চা বাগানগুলোর মধ্যে অন্যতম। বছরে এই চা বাগান থেকে উৎপাদিত প্রায় ৫,০০,০০০ কেজি চা দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হয়।ওসমানী এয়ারপোর্ট রোড থেকে ডানদিকে আগালেই লাক্কাতুরা বাগানের মূল প্রবেশদ্বার নজরে পডড়ে। বামদিকে রয়েছে চা ফ্যাক্টরি ও রাবার বাগান। ফ্যাক্টরি থেকে সামনে চলে গেছে আঁকাবাঁকা রাস্তা। রাস্তার পাশে চা বাগানের ম্যানেজার ও সহকারী ম্যানেজারের বাংলো। চা বাগানে আরও আছে কমলা, সুপারি, ট্যাং ফল, আগর, আতর সহ অনেক ধরণের গাছ। লাক্কাতুরা চা বাগানের কাছে আছে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত মালনীছড়া চা বাগান ও সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন ও বিমানে সিলেট যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে গ্রীণলাইন, সৌদিয়া, এস আলম, এনা, শ্যামলী পরিবহনের বাসে সিলেট যেতে পারবেন। নন-এসি বাসের জনপ্রতি ভাড়া ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আর কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে উপবন, কালনী, জয়ন্তিকা ও পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন সিলেট যায়। ট্রেনের জনপ্রতি টিকেটের মূল্য শ্রেণিভেদে ৩৭৫ থেকে ১২৮৮ টাকা। এছাড়া শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে নভোএয়ার, ইউএস বাংলা কিংবা বিমান বাংলাদেশের মতো ডোমেস্টিক এয়ারলাইন্সে সিলেটে যেতে পারবেন। সিলেট থেকে স্থানীয় পরিবহনে সহজে লাক্কাতুরা চা বাগান পৌঁছানো যায়।
কোথায় থাকবেন
সিলেটে হোটেল স্টার প্যাসিফিক, নির্ভানা ইন, হোটেল সুপ্রিম, রোজ ভিউ হোটেল, হোটেল ভ্যালি গার্ডেন, হোটেল ফরচুন গার্ডেন, হোটেল নুরজাহান গ্র্যান্ড, হোটেল ভ্যালি গার্ডেন প্রভৃতি আবাসিক হোটেল রয়েছে।
কোথায় খাবেন
সিলেটের জিন্দাবাজার এলাকায় পানসী, বিগ বাইট রেস্টুরেন্ট, রেইনবো চাইনিজ, আড্ডা রেস্টুরেন্ট, স্পাইস কিচেন, হাংরী ষ্টেশন, প্রেসিডেন্ট রেস্টুরেন্ট, পালকি ও ট্রিট গ্যালারী সহ অসংখ্য ফাস্টফুড, চাইনিজ ও বাঙ্গালী খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে। আর সুযোগ হলে সিলেটের জনপ্রিয় সাতকড়ার আচার এবং আখনি বিরিয়ানির স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
ভ্রমণ পরামর্শ- বাংলো ও ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখতে হলে আগেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
- শুধু বাগান ঘুরে দেখার জন্য সাধারণত বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তবে অনুমতি নিলে গাইড নিয়ে পুরো বাগান ও চারপাশ ভালভাবে ঘুরে দেখতে পারবেন।
- নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলুন।
- চা বাগানে জোঁক ও পোকামাকড়ের উপদ্রব রয়েছে এক্ষেত্রে সতর্ক।
মালনীছড়া চা বাগান
বাংলাদেশের সিলেট জেলায় অবস্থিত মালনীছড়া চা বাগান উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত চা বাগান। ১৮৪৯ সালে লর্ড হার্ডসনের হাত ধরে ১৫০০ একর জায়গার উপর এই বাগানটির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে চা বাগানটি বেসরকারী তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হলেও সুন্দর সময় কাটানোর জন্য পর্যটকদের কাছে পছন্দের স্থান হিসাবে সুপরিচিতি পেয়েছে।চা বাগানের আদিম, অপূর্ব সৌন্দর্য্য দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্বল্প দূরত্বে অবস্থিত মালনীছড়া চা বাগানে। তবে বাগানে প্রবেশের পূর্বে অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা এড়াতে কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নেয়া ভাল। বর্তমানে এখানে চা-এর পাশাপাশি কমলা এবং রাবারের চাষ করা হয়।
কিভাবে যাবেন
সিলেট শহরের যেকোন প্রান্ত থেকে সহজেই রিকশা, অটোরিক্সা কিংবা সিএনজি ভাড়া করে মালনীছড়া চা বাগানে যেতে পারবেন। আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজিতে চড়ে যেতে ১০ মিনিট এবং রিকশায় ২৫ মিনিট সময় লাগে।
কোথায় খাবেন
মালনীছড়া চা বাগান এলাকায় খাবারের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তবে জিন্দাবাজার এলাকায় বেশকিছু জনপ্রিয় রেস্তোরা রয়েছে। যার মধ্যে পানশী, পাঁচভাই, ভোজনবাড়ি, প্রীতিরাজ, স্পাইসি এবং রয়েলশেফ রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সিলেটে তুমুল জনপ্রিয় সাতকরা (হাতকরা) এবং আথনী পোলাও খেয়ে দেখতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
মালনীছড়া চা বাগান এলাকায় কোনো আবাসিক হোটেল নেই। ভালো মানের হোটেলে থাকতে হলে চলে যেতে পারেন হযরত শাহজালাল (রঃ) এর দরগা এলাকায়। এখানে ৬০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির এসি, নন-এসি রুম পাবেন।
সিলেটের উল্লেখযোগ্য আবাসিক হোটেলের মধ্যে রয়েছে- হোটেল রোজভিউ ইন্টারন্যাশনাল (০৮২১-৭২১৮৩৫, ২৮৩১-২১৫০৮-১৪, ২৮৩১৫১৬-২১), নাজিমগড় রিসোর্ট (০৮২১-২৮৭০৩৩৮-৯), হোটেল ফরচুন গার্ডেন (০৮২১-৭১৫৫৯০, ৭২২৪৯৯), হোটেল ডালাস (০৮২১-৭২০৯৪৫, ৭২০৯২৯), হোটেল সুপ্রিম (০৮২১-৮১৩১৬৯, ৭২০৭৫১, ৮১৩১৭২, ৮১৩১৭৩, ০১৭১১-১৯৭০১২, ০১৬৭৪-০৭৪১৫৭), হোটেল হিলটাউন (০৮২১-৭১৮২৬৩, ০১৭১১-৩৩২৩৭১, ৭১৬০৭৭)।
পান্থুমাই ঝর্ণা
পান্থুমাই’ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত মেঘালয় পাহাড়ের কোল ঘেঁষা একটি অপূর্ব গ্রামের নাম। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের এই গ্রাম বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর মধ্যে অন্যতম। মেঘালয় পাহাড় আর পিয়াইন নদীর পাড়ে অবস্থিত এই গ্রামেই আছে প্রকৃতির আরেক অপরূপ নিদর্শন পান্থুমাই ঝর্ণা। স্থানীয় মানুষের কাছে পান্থুমাই ঝর্ণা বিভিন্ন নামে পরিচিত। কেউ একে বলেন ‘ফাটাছড়ির ঝর্ণা’ আবার কেউবা ডাকেন ,বড়হিল ঝর্ণা, আর কারো চোখে এটি ‘মায়াবতী ঝর্ণা নামেও পরিচিত।
উঁচু পাহাড় থেকে পাথর বেয়ে নেমে আসা আগ্রাসী জলের ধারা কিংবা চারপাশের প্রকৃতির দিকে শুধু তাকিয়ে থাকলেও নিরাশ হবেন না কোন মতেই। মূল অবস্থান ভারতে হওয়া পরও ১০০ টাকায় ছোট ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া করে ঝর্ণার বেশ কাছে যাওয়া যায়। স্থানীয় মাঝিদের কথা মত নিরাপদ দূরত্বে থেকে অন্যোন্য এই ঝর্ণার সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি ছবি তোলা ও ভিডিও করতে পারবেন। আর চাইলে বাংলাদেশ অংশে থেকে জলপ্রপাত দিয়ে নেমে আসা জলে গা জুড়িয়ে নিতে পারবেন।
পান্থুমাই ঝর্ণা দেখার উপযুক্ত সময়
পান্থুমাই ঝর্ণা দেখতে যেকোন সময় যেতে পারেন। তবে বর্ষাকাল ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। তখন চারদিকে প্রচুর পানি প্রবাহ থাকে।
পান্থুমাই ঝর্ণা দেখতে কিভাবে যাবেন
বলে রাখা ভাল, সাধারণত সকল ভ্রমণকারী এই রুটে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিছনাকান্দি, পান্থুমাই ঝর্ণা এবং লক্ষনছড়া একসাথে ঘুরতে আসে। শুধুমাত্র পান্থুমাই ঝর্ণা দেখতে চাইলে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে সেই একই পরিমাণ অর্থ দিয়ে তিনটি জায়গা একত্রে ঘুরে দেখতে পারবেন। তাই একসাথে এই তিনটি জায়গা দেখার পরিকল্পনা করলেই সবচেয়ে ভাল হবে।
অপনার অবস্থান বাংলাদেশের যে প্রান্তেই হোক না কেন এই ভ্রমণে আপনাকে প্রথমে সিলেট জেলা শহরে আসতে হবে। আর ঢাকা থেকে বাসে, ট্রেনে এবং প্লেনে চড়ে আপনি সিলেট যেতে পারবেন।
সিলেট থেকে পান্থুমাই ঝর্ণাতে যাওয়ার উপায়
সিলেটের আম্বরখানার সিএনজি স্টেশন থেকে জনপ্রতি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় লোকাল সিএনজিতে চড়ে হাদারপার নামক স্থানে আসতে হবে। সারাদিনের জন্য সিএনজি রিজার্ভ নিতে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা খরচ হবে। হাদারপার নৌকা ঘাট থেকে বিছানাকান্দি, পান্থুমাই ঝর্ণা ও লক্ষণছড়া একসাথে ঘুরে দেখার জন্য মাঝির সাথে আলোচনা করে নৌকা ঠিক করুন। নৌকা ভাড়া নিতে ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা লাগতে পারে। বড় ট্রলার ভাড়া করতে কোন কোন ক্ষেত্রে ২৫০০ পর্যন্ত টাকা লাগতে পারে। শীতকালে ও বর্ষার শুরুতে যখন নদীতে পানি কম থাকে তখন পায়ে হেটেই হাদারপাড় থেকে বিছনাকান্দি যাওয়া যায়। তখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা ভাড়ায় এই রুটে মটরবাইক চলাচল করে।
যেকোন ভাড়ার জন্যে ভালো মত দরদাম করে নিন। আর সিজন ও পর্যটক উপস্থিতি বেশি থাকলে ভাড়া কম বেশি হতে পারে।
কোথায় থাকবেন
যাওয়া আসার সময় কম লাগার কারণে থাকার জন্য সিলেট শহরকে বেছে নিতে পারেন। হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী থাকতে পারবেন। এছাড়া লালা বাজার এলাকায় ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ যেখানে ৪০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাবেন।
এছাড়া সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট আছে, আপনার চাহিদামত সবকিছুই পাবেন। সিলেটের জিন্দাবাজার এলাকার পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টের পছন্দমত দেশী খাবার খেতে পারেন। এই রেস্টুরেন্ট গুলোতে অনেক রকম ভর্তা ভাজি সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়।
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা- খরচ কমাতে দলগত ভাবে ভ্রমণ করুন।
- নৌকা ও সিএনজি ভাড়া করতে ভালো মত দামাদামি করুন।
- পানিতে নামার সময় সতর্ক থাকুন।
- বর্ষাকালে অল্প পানির স্রোতের গতিও অনেক বেশি থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
- বিছানাকান্দিতে পানিতে অনেক পাথর তাই হাঁটা চলায় অতিরিক্ত সাবধান থাকুন।
- দয়া করে পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
- স্থানীয়দের সাথে বিনয়ী থাকুন।
- সন্ধ্যার আগেই সিলেট শহরে ফিরে আসুন।
হাকালুকি হাওড়
হাকালুকি হাওর সিলেট ও মৌলভীবাজারের ৫টি উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ মিঠা পানির জলাভূমি। হাকালুকি হাওর প্রায় ২৩৮ টি বিল ও ১০ টি নদীর সমন্বয়ে গঠিত এবং বর্ষাকালে এই হাওরের আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর। মাছের জন্য প্রসিদ্ধ হাকালুকি হাওরে শীতকালে অতিথি পাখিদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে।
এছাড়াও এখানে প্রায় ১০০ প্রজাতির স্থানীয় পাখি দেখা মিলে। হাওরের বিস্তির্ন ভূমি, বিল নির্ভর মানুষের জীবনযাত্রা এবং অথিতি পাখির আহ্বানে ভ্রমন পিয়াসীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাকালুকি হাওড় দেখতে ছুটে আসে।
হাকালুকি হাওর ভ্রমণের সময়
অতিথি পাখি দেখতে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস হচ্ছে হাকালুকি হাওর ভ্রমণের আদর্শ সময়। এ সময় হাওরের চারপাশ অতিথি পাখির কোলাহলে মুখর হয়ে থাকে। আর বর্ষাকালে হাওর সমুদ্রের রূপ ধারণ করে। তাই বর্ষাকালে হাওরের মজা নিতে চাইলে জুন-আগস্ট এই সময় আসতে হবে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে হাকালুকি হাওরে যেতে আপনাকে প্রথমে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া আসতে হবে। কুলাউড়া থেকে অটোরিক্সা বা রিক্সা ভাড়া করে সরাসরি হাওরে যাওয়া যায়। কুলাউড়া থেকে হাকালুকি হাওরে যেতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা অটোরিক্সা ভাড়া লাগে এবং রিকশা ভাড়া লাগে ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকার।
ঢাকা থেকে কুলাউড়া
রুট প্ল্যান-১
ঢাকা থেকে সিলেটগামী যে কোন বাসে চলে আসতে পারেন কুলাউড়াতে। ঢাকার ফকিরাপুল, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালি ও আবদুল্লাপুর বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটের বাসগুলো ছেড়ে যায়৷ গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি ও এনা পরিবহনের এসি বাস যাতায়াত করে, এগুলোর কুলাউড়া পর্যন্ত ভাড়া সাধারণত ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও ঢাকা থেকে সিলেট যেতে শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এনা পরিবহনের এসি/নন-এসি বাস জনপ্রতি ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকা ভাড়ায় পাবেন।
রুট প্ল্যান-২
ঢাকা থেকে ট্রেনে করে কুলাউড়া যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে। শ্রেণী ভেদে জনপ্রতি ট্রেনে যেতে ভাড়া ৩২০ থেকে ৭৩১ টাকা।
কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেল স্টেশান হতে রাতে সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা উপবন এক্সপ্রেসে চড়ে সিলেটের ঠিক আগের ষ্টেশন মাইজগাও এ নামতে হবে। মাইজগাও থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার পথ হেটে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার পর্যন্ত আসতে হবে। চাইলে অটোরিক্সা দিয়েও ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার আসতে পারবেন। ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে আল মুমিন রেষ্টুরেন্টে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে নৌকাঘাটে এসে দরদাম করে (প্রায় ১০ থেকে ১৫ জনের) দিনপ্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকায় কুশিয়ারা নদী পাড় হয়ে হাকালুকি হাওড়ে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
হাওরে বিল ইজারাদারদের কুটিরগুলোতে বিল মালিকের অনুমতি নিয়ে ২-৪ জন অনায়াসেই রাত্রিযাপন করতে পারবেন। তবে বিল এলাকায় জোছনা রাতে তাঁবু ফেলে ক্যাম্পিং করার মুহুর্তগুলো আপনাকে আজীবন আনন্দ দেবে। এছাড়া পার্শবর্তী উপজেলা শহর বড়লেখায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন। তবে রাত্রি থাকতে চাইলে নিজেদের নিরাপত্তার কথাও ভেবে নিতে হবে।
কোথায় খাবেন
হাকালুকি হাওর ভ্রমণের সময় নৌকার মাঝির সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় বাজার করে নিলে মাঝিই আপনাদের রান্না করে খাওয়াবে। এছাড়া নৌকায় উঠার সময় বিস্কুট, চা, পাউরুটি, খাবার পানি ইত্যাদি হালকা খাবার নিয়ে ভ্রমণ করতে পারেন। যদি কোন হাওরের কর্মজীবী মানুষদের ম্যানেজ করতে পারেন তবে অল্প টাকায় তাদের সাথে ভাত আর মাছের ঝোল দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারবেন। হাওরে বেশ অল্পমূল্যে গরু মহিষের দুধ পাওয়া যায়।
হাকালুকি ভ্রমণে সঙ্গে নিন
ক্যাম্পিং করার জন্যে তাবু, রেইন কোট, বড় ব্যাকপ্যাক, শীতের সময়ে গেলে জ্যাকেট, কাদা-পানিতে চলন উপযোগী জুতা, গামছা, বাইনোকুলার, ক্যামেরা, প্রয়োজনীয় ব্যাটারি, পাওয়ার ব্যাংক, শুকনো খাবার, টর্চ এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম।
ডিবির হাওর শাপলা বিল
ডিবির হাওর সিলেটের জৈন্তাপুরে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত।সিলেট শহর থেকে ডিবির হাওরের দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার। ইয়াম, ডিবি, হরফকাটা, কেন্দ্রী বিল নামে এখানে মোট চারটি বিল রয়েছে। বর্ষাকালের পর বিলগুলো শাপলার রাজ্যে পরিণত হয়। তখন সমস্ত বিল জুড়ে হাজার হাজার লাল শাপলা ছড়িয়ে থাকে। ভোরে হাজারো লাল শাপলা আলোকিত করে রাখে চারপাশ।
প্রকৃতি যেন আপন ইচ্ছের মাধুরীতে লাল শাপলার হাসিতে বিলগুলোকে সাজিয়ে দেয় পরম মমতায়। যেকোনো ভ্রমণপিপাসুদের সারাজীবন মনে রাখার জন্য শাপলা বিলে একটি সকালই যথেষ্ট। ডিবির হাওর তাই শাপলা বিল নামেও সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। এছাড়া এখানে প্রায় দুইশত বছরের পুরাতন একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দির রয়েছে। কথিত আছে, জৈন্তা রাজ্যের কোন এক রাজাকে ডিবির হাওড়ের কোথাও পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। ধারণা করা হয় তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এ মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে। এছাড়া হরফকাটা ও ডিবির বিলের মধ্যস্থলে রাজা রাম সিংহের সমাধিস্থল রয়েছে। শীতকালে এই হাওর জুড়ে অথিতি পাখিদের রাজত্ব শুরু হয়। তখন সাদাবক, জলময়ুরী ও পানকৌড়ি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির কলরবে মুখর হয়ে থাকে ডিবির হাওরের চারপাশ।
কখন যাবেন
ডিবির হাওরের লাল শাপলা ফুল সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে দেখতে পাওয়া যায়। নভেম্বর মাস সবচেয়ে ভাল সময়। আর শাপলার রুপ দেখতে হলে সূর্যের আলো ফোটার আগে পৌঁছাতে হবে। খুব ভোরে হাজার হাজার শাপলা বিলের জলে নিজেদের মেলে ধরে আপন সৌন্দর্য্যের ঝলকানিতে।
সিলেট থেকে ডিবির হাওড়
সিলেট থেকে বাস, সিএনজি অটোরিকশা কিংবা প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়ে জৈন্তাপুরে আসতে হবে। সারা দিনের জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করতে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। জৈন্তাপুর বাজার থেকে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ডিবির হাওর ক্যাম্প চোখে পড়বে। এই ক্যাম্পের পাশ দিয়ে ১ কিলোমিটার দূরত্বে শাপলা বিলের অবস্থান। বাসে করে সিলেটের কদমতলী থেকে ডিবির হাওরে আসতে চাইলে জৈন্তাপুর বাজারে বাস থেকে না নেমে ২ কিলোমিটার সামনে ডিবির হাওর ক্যাম্পের সামনে নামলে গ্রামের রাস্তা ধরে মাত্র ১ কিলোমিটার হাটলেই ডিবির বিলে পৌঁছে যাবেন। শাপলা বিলে নৌকায় ঘুরতে চাইলে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়া লাগতে পারে।
যেখানে থাকবেন
তামাবিল জৈন্তাপুর রোডে বেশ কিছু রিসোর্ট গড়ে উঠেছে, চাইলে সেইসব রিসোর্টে থাকতে পারবেন অথবা থাকার জন্য সিলেটে ফিরে আসতে পারেন। সিলেট শহরে প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের হোটেল পাওয়া যায়। সিলেটে উল্লেখযোগ্য আবাসিক হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি। এছাড়া শহরের লালবাজার এলাকায় বেশ কিছু মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ এগুলোতে ৪০০ থেকে ৩০০০ টাকায় সহজেই রাত্রি যাপন করতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
শাপলা বিলের কাছাকাছি কোনো রেস্টুরেন্ট নেই তাই প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার সাথে নিয়ে যেতে পারেন।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্দ্যান
সাতছড়ি জাতীয় উদ্দ্যান টি ২০০৫ সালে প্রায় ২৪৩ হেক্টর জায়গা নিয়ে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠা সাতছড়ি জাতীয় উদ্দ্যানে অবস্থিত ৭টি পাহাড়ী ছড়া বা ঝর্ণা থেকে এই স্থানের নামকরন করা হয়। এর আগে সাতছড়ি জাতীয় উদ্দ্যান রঘুনন্দন হীল রিজার্ভ ফরেস্ট নামে পরিচিত ছিলো।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১৪৫ প্রজাতির নানা জাতের গাছপালা। এছাড়া এই বনভূমিতে ৬ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী এবং প্রায় ১৪৯ প্রজাতির পাখি রয়েছে। প্রাণীর মধ্যে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে দেখা মিলে মেছোবাঘ, উল্লুক, মুখপোড়া হনুমান, শুকুর, লজ্জাবতী বানর, চশমা হনুমান এবং নানা প্রজাতির সাপ। পাখিদের মধ্যে রয়েছে লাল মাথা ট্রগন, ধনেশ, ঘুঘু, টিয়া, ঈগল, ময়না ইত্যাদি। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের চারপাশে ৯ টি চা বাগান, আদিবাসী ও স্থানীয় গ্রাম এবং ফসলি জমি রয়েছে। ফলে উদ্যানের আশেপাশে বসবাসকারী পরিবারগুলোর জীবনযাত্রা অনেকাংশেই বনের সম্পদের ওপর নির্ভরশীল।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে যা যা দেখবেন
পর্যটকদের ভ্রমণের সুবিধার জন্য নিসর্গ কর্মসূচীর আওতায় বনের মধ্যে ৩টি ট্রেইল তৈরি করা হয়েছে। আধা ঘন্টার ট্রেইল
১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই ট্রেইল ধরে যাত্রা করলে বনের মধ্যে অবস্থিত একমাত্র আধিবাসী গ্রাম টিপরাপাড়াতে যেতে পারবেন।
এক ঘন্টার ট্রেইল
সাতছড়ি উদ্যানের বৈচিত্রপূর্ণ প্রাণী ও উদ্ভিদের সাথে পরিচিত হতে চাইলে এই ট্রেইলের বিকল্প নেই।
তিন ঘন্টার ট্রেইল
প্রায় ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই ট্রেইল পাখি প্রেমী পর্যটকদের জন্য আদর্শ। এই ট্রেইলের প্রান্তে রয়েছে আগরের বন।
গাইড
বনের মধ্যে ট্র্যাকিং করতে চাইলে সাতছড়ি উদ্যান এর অনুসন্ধান বা তথ্য কেন্দ্র থেকে ট্রেইল অনুযায়ী ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় গাইড পাবেন। অফিস চত্বরে ম্যাপ দেয়া থাকলেও গভীর বনে প্রবেশের ইচ্ছা থাকলে ঝুঁকি এড়াতে সাথে গাইড নিন।
ট্রি অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটি
ভ্রমণ পাগল পর্যটকদের ভ্রমণে ভিন্নমাত্রা যোগ করতে অতি সম্প্রতি সাতছড়া জাতীয় উদ্যানে চালু করা হয়েছে ট্রি এক্টিভিটি বা ট্রি এডভেঞ্চার। এখানে ১০০ টাকায় গাছের উপরে বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারাস এক্টিভিটি করার সুযোগ রয়েছে।
উদ্যানে প্রবেশ খরচ
সাতছরি উদ্যানে প্রবেশ করতে প্রাপ্ত বয়স্ক যেকোন পুরুষ বা নারীকে জনপ্রতি ২০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ে ও শিক্ষার্থীদের জনপ্রতি ১০ টাকা এবং বিদেশীদের প্রবেশে জনপ্রতি ৫ ডলারের সমমূল্যের অর্থ প্রদান করতে হয়। এছাড়া সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বনভোজন করতে চাইলে জনপ্রতি ১০ টাকা হারে উদ্যানে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। আর উদ্যানে গাড়ি পার্কিয়ের জন্য গাড়িপ্রতি ২৫ টাকা ফি দিতে হয়।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে যেতে চাইলে সিলেটগামী লন্ডন, হানিফ, গ্রীন লাইন, এনা, শ্যামলী, মিতালী, মামুন, মডার্ন, আল মোবারাকা, অগ্রদূত, দিগন্ত এবং বিসমিল্লাহ ইত্যাদি যেকোন পরিবহনের বাসে চড়ে মাধবপুরের পর তেলিয়াপাড়া বিশ্বরোড মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে নেমে সেখান থেকে সিএনজি করে সরাসরি সাতছড়ি যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক মাধ্যম। তবে চাইলে ঢাকা থেকে বাসে করে আপনার সুবিধামত মুক্তিযোদ্ধা চত্বর অথবা শায়েস্তাগঞ্জ নেমেও সেখান থেকে সিএনজি যোগে সাতছড়ি যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত এসি ও নন-এসি বাসের জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ৫৩০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বাস ভাড়া সাধারণত সময় সাপেক্ষ্যে কমবেশি হতে পারে।
ঢাকা থেকে ট্রেনে
ঢাকা থেকে ট্রেনে সাতছড়ি আসতে হলে ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে পারাবত, জয়ন্তিকা, কালনি অথবা উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন নামতে হবে। ঢাকা থেকে পারাবত এক্সপ্রেস মঙ্গলবার, উপবন এক্সপ্রেস বুধবার, কালনি এক্সপ্রেস শুক্রবার এবং জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন যথাক্রমে সকাল ৬টা ৩০ মিনিট, বেলা ১১ টা ১৫ মিনিটে, দুপুর ২ টা ৫৫ মিনিটে এবং রাত ১০ টায় সিলেটের উদ্দেশ্যে স্টেশন ত্যাগ করে। শ্রেণীভেদে ট্রেনে জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ২৩৫ থেকে ৮১১ টাকা।
শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
শায়েস্তাগঞ্জ থেকে লোকাল সিএনজিতে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায় চুনারুঘাট পৌঁছে সেখান থেকে অন্য সিএনজিতে সাতছড়ি যেতেও জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া লাগবে। এছাড়া চাইলে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সরাসরি সাতছড়ি পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া করতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে খাওয়া দাওয়ার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তবে কয়েকটা মুদি দোকান রয়েছে তাই পছন্দ ও প্রয়োজন মতো খাবার এবং পানি সাথে পরিবহন করুন।
কোথায় থাকবেন
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রাতে থাকার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তবে বন বিভাগের রেস্ট হাউজে থাকা অথবা বনে ক্যাম্পিং করতে চাইলে বন বিভাগের পূর্বানুমতি লাগবে। হবিগঞ্জ শহরে হোটেল জামিল, হোটেল সোনারতরী, হোটেল আমাদ এবং অন্যান্য সাধারণ মানের আবাসিক হোটেলে ৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা ভাড়ায় রাত্রিযাপনের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রমের প্রবেশ পথের নিকট অবস্থিত নিসর্গ তরফ হিল কটেজে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন। আর বাহুবল উপজেলার ৫ তারকা মানের দ্যা প্যালেস-এ থাকতে হলে গুনতে হবে ৭ থেকে ২০ হাজার টাকা।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ভ্রমণে পরামর্শ- সাতছড়ি উদ্যানে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই তাই বনে প্রবেশের আগে আপনার পরিবার কিংবা প্রিয়জনকে আপনার অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য জানিয়ে রাখুন।
- গাইড ছাড়া বনের গভীরে প্রবেশ থেকে বিরত থাকুন।
- বন্যপ্রানীদের বিরক্ত করবেন না।
- ময়লা ফেলে উদ্যানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
- নিরাপত্তার স্বার্থে এবং খরচ কমাতে ১ বা ২ জন ভ্রমণে না এসে গ্রুপ করে আসুন।
- বর্ষাকালে বনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে জোঁকের বেপারে সতর্ক থাকুন।
- সন্ধ্যার সাথে সাথে উদ্যান ত্যাগ করুন।
উপসংহারঃ
সিলেটের ইতিহাস প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ। এটি একসময় আসাম রাজ্যের অংশ ছিল এবং এর ইতিহাসে বিভিন্ন শাসক ও সংস্কৃতির প্রভাব রয়েছে। সিলেট বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থান এবং আধ্যাত্মিক শহর নামেও খ্যাত। সিলেট শহরটি সুরমা নদীর তীরে অবস্থিত এবং এটি সিলেট বিভাগের প্রধান শহর। সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলি পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আপনি যদি কখনও সিলেটে যান, এই স্থানগুলি অবশ্যই ঘুরে দেখার চেষ্টা করবেন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url