তোকমা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
তোকমা হলো Ocimum Sanctum ঘরানার উদ্ভিজ্জ উপাদান। যা বিভিন্ন ধরণের পানীয় ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দেখতে একেবারেই সাদামাটা এই উপাদানটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন, আঁশ এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালোরি।
পেইজ সূচিপত্রঃ তোকমা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
তোকমা খাওয়ার উপকারিতা
তোকমা বীজে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, প্রোটিন, আয়রন ও ক্যালরি রয়েছে। যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তোকমা শরীরের নানা রকম সমস্যা প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর।যেমন-
আরও পড়ুনঃ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ তোকমা বীজে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্ল্যাভনয়েড এবং ফেনোলিক উপাদান সমূহ। একইসাথে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান সমূহ থাকার ফলে তোকমা গ্রহণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পায়। একইসাথে, ফ্রি-রেডিক্যাল ড্যামেজ থেকে রক্ষা করতেও বেশ উপকারী তোকমা।
ওমেগা-৩ফ্যাটি অ্যাসিডঃ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। উদ্ভিদ ভিত্তিক ওমেগা অ্যাসিডের সবচেয়ে ভালো একটি উৎস হচ্ছে তোকমা দানা। তাই তোকমা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
ওজন কমাতে সহায়তা করেঃ দেহের ওজন কমাতে এ বীজের জুড়ি নেই। তোকমার ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ ছাড়া এর নানা উপাদান দেহের চর্বি কমাতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, যা বাড়তি ক্ষুধা দূর করে এবং পেট দীর্ঘক্ষণ পরিপূর্ণ থাকার অনুভূতি দেয়।
এসিডিটি দূর করেঃ তোকমা এসিডিটি দূর করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে তোকমা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর খেতে হবে। এছাড়াও তোকমার বীজ পানিতে পরিপূর্ণ থাকে, যা দেহের ক্ষতিকর পদার্থও দূর করতে সহায়ক।
হজম ক্রিয়াঃ তোকমা বীজে রয়েছে মিউসিলেজ। এটি একধরনের জেলজাতীয় পদার্থ, যা পানিতে ভেজালে ফুলে ওঠে। এই জেলজাতীয় পদার্থ অন্ত্রের কার্যক্রম নিয়মিত করে খাবার হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করেঃ রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর তোকমা। মূলত দেহের বিপাকক্রিয়া ধীর করে দেয় তোকমা। ফলে কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুুকোজে রূপান্তরের পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এ কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিস যাঁদের রয়েছে, তারা এটি নিয়মিত খেতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ তোকমা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। সামান্য তোকমা অল্প পানিতে ভিজিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর তা দুধে মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়াও এটি হজমের সমস্যাও দূর করতে সহায়তা করে।
সুস্থ ত্বক ও চুলের সমস্যায়ঃ তোকমার তেলে অ্যান্টিব্যক্টেরিয়াল উপাদান রয়েছে, যা ত্বক ভালো রাখে ও চর্মরোগ নিরাময় করে।ত্বকের নানা সমস্যায় তোকমা ব্যবহার করা যায়। এ জন্য কিছু তোকমা বীজ গুঁড়ো করে তা নারিকেল তেলের সঙ্গে মাখিয়ে ত্বকে লাগাতে হয়। এটি নানা চর্মরোগ নিরাময়ে কাজ করে। এটি একজিমা ও সোরিয়াসিস নিরাময়ে কার্যকর। সুস্থ চুলের জন্য এটি নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।
ঠান্ডার সমস্যায়ঃ তোকমা বীজে রয়েছে ঠান্ডা প্রতিরোধী উপাদান। এটি আপনার দেহকে ঠান্ডার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়তে সহায়তা করবে। সর্দি-কাশি থেকে দূরে থাকতে চাইলে তাই নিয়মিত তোকমা খাওয়া যেতে পারে।
মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করেঃ প্রদাহ-বিরোধী উপাদান সমূহ থাকার ফলে মুখের ভেতরের প্রদাহ, ইনফেকশন, আলসারসহ বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় তোকমা দারুণ কাজ করে থাকে। তোকমাতে থাকা অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ফাংগাল উপাদান সমূহ থাকার ফলে মুখের ভেতর একদম ফ্রশ থাকে। বিশেষ করে মুখের ভেতর কোন ইনফেকশন, দাঁতের ক্ষয় রোগ (ক্যাভিটিজ) এবং মুখের দুর্গন্ধ তৈরি হতে পারে না।
তোকমা খাওয়ার নিয়ম
অনেকেই আছেন যারা তোকমা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালো করে জানেন না।
তোকমা সাধারণত বীজ বা দানা জাতীয় খাদ্য হয়ে থাকে। এই তোকমা দানাগুলোকে আপনারা পানির সাথে মিশিয়ে সুন্দরভাবে খেতে পারেন।এছাড়াও তোকমা দানা গুলোকে পানিতে ভিজিয়ে তারপর যখন এগুলো ফুলে উঠবে বা এগুলোর মধ্যে পানি ঢুকে যাবে তখনও খাওয়া যাবে।
এক গ্লাস পানি অথবা একগ্লাস কুসুম দুধের সাথে তোকমা ভিজিয়ে রেখে ১০-১৫মিঃ অপেক্ষা করার পর এটি সেবন করতে পারেন।
তোকমা দানা গুলো বাদামের সাথে ব্লেন্ডার করে ও খাওয়া যায় এতে শরীরের অনেক উপকার হয়।তোকমা দানা ভালোমতো পিষে নেওয়ার পরে পানির সাথে মিশিয়ে সেখানে দুধ এবং মধু দিয়েও খাওয়া যেতে পারে।এগুলো ছাড়াও যদি আপনারা শুধুমাত্র পানির সাথে মিশিয়ে খেতে চান তাও খেতে পারবেন এবং সাথে চিনি দিতে চাইলে সেটাও দিতে পারবেন।উপরে বর্ণিত পদ্ধতি গুলো বাদেও আপনারা ইসবগুলের ভুষি এবং পানির সাথে মিক্সার করে তোকমা বীজ সেবন করতে পারবেন।
তোকমার শরবত বানিয়েও খেতে পারেনতোকমা দানার পুষ্টিগুণ
পুষ্টিগুণে ভরা তোকমায় রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট এবং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। পাশাপাশি ওমেগা-৩, ফ্যাটি এসিডের অন্যতম একটি ভালো উৎস এটি। এছাড়াও তোকমা বীজে আছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, ম্যাগনেসিয়াম ও সামান্য ভিটামিন সি।
গর্ভাবস্থায় তোকমা খাওয়া যাবে কি
তোকমা দানা কখনোই গর্ভবতী নারীর উপযোগী খাবার নয়। অনেকেই হয়তো ভেবে বসে আছেন যে, যেহেতু তোকমা দানা কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে রাখে, সেহেতু এটি বুঝি গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজেও আসবে। যারা এমনটা ভাবছেন তারা পুরোপুরি ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে ক্ষতি ডেকে আনছেন।মনে রাখবেন, যেসব গর্ভবতী নারীর শরীর উচ্চ-মানের ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে উঠতে পারে না, সেসব নারী কোনোভাবেই তোকমা দানার পুষ্টিমান বজায় রাখতে পারবে না বা এটি তাদের কোনো সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার কাজে আসবে না। উল্টো ক্ষতি সাধন করবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, কি করতে হবে!
আর হ্যাঁ! যারা নিজের শরীর সম্পর্কে আঁচ করতে পারছেন না মানে উচ্চ-মানের ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত কিনা বুঝতে পারছেন না, তারা তোকমা দানা খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। নতুবা এটি পুরোপুরি এড়িয়ে যাবে।
তোকমা খাওয়ার সময়
তোকমা বীজ প্রতিদিন রাতে পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খাওয়া ভালো। ১-২ চামচ তোকমা ২৫০গ্রাম পানি বা ১ গ্লাস পানির মধ্যে মিশিয়ে খাবেন। চিনি ছাড়া খাবেন। এটি চাইলে প্রতিদিন খেতে পারেন শরীরের জন্য উপকার কারণ এটি শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে, পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
সকালে খালি পেটে তোকমা খেলে কি হয়
তোকমা বীজ সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে খালি পেটে সে পানি পান করুন। ভালো ফলাফলের জন্য নিয়মিত খান। এতে গ্যাস্ট্রিক ও পেটের যেকোনো সমস্যা সহজেই দূর হয়ে যাবে। তবে তোকমা পানিতে ভেজানোর ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরই তা খাওয়া যায়। চাইলে জুস ও প্রিয় যেকোনো পানীয়তে ব্যবহার করতে পারেন নানা গুণের অধিকারী এ ভেষজ উপাদানটি।
তোকমা খাওয়ার অপকারিতা
যেহেতু প্রায় প্রতিটা বিষয়ের খারাপ দিক এবং ভালো দিক রয়েছে তাই তোকমা খাওয়ার উপকারিতা থাকার পাশাপাশি তোকমা খাওয়ার অপকারিতা ও রয়েছে।
তোকমা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। এর কারণ এই বিজটির ক্ষতিকর দিক খুবই কম। এরপরও যদি কোন গর্ভবতী মহিলাকে বেশি তোকমা প্রদান করা হয় তাহলে তার অনেক সমস্যা হতে পারে।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url