৩রা নভেম্বর ঐতিহাসিক জেল হত্যা দিবসের ইতিহাস


৩রা নভেম্বর ঐতিহাসিক জেল হত্যা দিবসের ইতিহাস প্রায় ৪৯ বছর আগে ১৯৭৫ সালে ৩রা নভেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় জাতীয় ৪ নেতাকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমরা যারা নতুন প্রজন্ম আছি আমাদের মধ্যে অনেকেই ঐতিহাসিক ৩রা নভেম্বর জেল হত্যা দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে জানিনা।
নিহত-জাতীয়-৪-নেতা
তাই আমি আজকে আপনাদের ৩রা নভেম্বর ঐতিহাসিক জেল হত্যা দিবস সম্পর্কে সঠিক ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করবো। আসুন জেনে নেওয়া যাক ১৯৭৫ সালে ৩রা নভেম্বর রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় ৪ নেতাদের সাথে কি ঘটেছিলঃ-

পেইজ সুচিপত্রঃ ৩রা নভেম্বর ঐতিহাসিক জেল হত্যা দিবসের ইতিহাস

৩রা নভেম্বর ঐতিহাসিক জেল হত্যা দিবসের ইতিহাস

জেল হত্যা দিবস আওয়ামী লীগসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রতি বছর ৩রা নভেম্বর পালিত হয়। ৩রা নভেম্বর ঐতিহাসিক জেল হত্যা দিবসের ইতিহাস ১৯৭৫ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগের চারজন জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মুহাম্মদ মনসুর আলী এবং আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি স্মরণার্থে এ দিবস পালন করা হয়।
ঐতিহাসিক ৩রা নভেম্বর জেল হত্যা দিবসের ইতিহাস ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সেনাবাহিনীর দ্বারা ধানমন্ডির তার নিজস্ব বাসভবনে সপরিবারে হত্যার পর তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোস্তাক আহমেদ নিজেকে রাষ্টপতির পদে আসীন করে সামরিক শাসন জারি করেন। ২২শে আগস্ট মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে গ্রেফতার করে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

২ মাস ১৯ দিন পর একই বছরের ৩ নভেম্বর গভীর রাতে সেনাসদস্যরা দেশত্যাগ করার পূর্বে খন্দকার মোস্তাক আহমেদ এর অনুমতি নিয়ে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং সেখানে বন্দি অবস্থায় থাকা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী তৎকালীন জাতীয় চার নেতা - সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

জেনে নেয়া যাক ১৯৭৫ সালে ৩রা নভেম্বর ঐতিহাসিক জেল হত্যাকান্ডে যারা শিকার হয়েছিলেন তাদের সম্পর্কে কিছু কথা

১। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের প্রথম সরকার, মুজিবনগর সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি বাকশালের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।

২। তাজউদ্দীন আহমদ একজন আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যও ছিলেন।

৩। আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান একজন সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন গঠিত অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র,কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন।

৪। মুহাম্মদ মনসুর আলী মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

পরিণতিঃ এই হত্যাকাণ্ড ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কময় অধ্যায়। এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্য ও সমস্ত জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই ঘটনা খন্দকার মোশতাক আহমেদ এর পতন ত্বরান্বিত করে। খুনিরা দেশত্যাগে বাধ্য হয়।

এই হত্যাকান্ড ছিল ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত স্বাধীনতাবিরোধী দেশী ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সম্মিলিত যড়যন্ত্র ও নীল নকশার বাস্তবায়ন। ১৫ই আগস্ট ও ৩রা নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড একই গোষ্ঠী সংঘটিত করে। উভয় হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের অর্জনসমূহ ধ্বংস ও দেশকে নেতৃত্ব শূন্য করে পাকিস্তানি ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা করা।

সচরাচর প্রশ্ন উত্তর

১. প্রশ্নঃ জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করেন কে?

উত্তরঃ উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও ক্যাপ্টেন (অব.) মনসুর আলী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামানকে পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে সেনা কর্মকর্তারা গুলি করে বেয়নেট দিয়ে নির্মম ভাবে খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে।

২. প্রশ্নঃ জাতীয় চার নেতার কবর কোথায় অবস্থিত?

উত্তরঃ তিন নেতার মাজার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দোয়েল চত্বর এর উত্তর পাশে অবস্থিত, বাংলার তিন বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতা হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন ও শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক এর কবরের উপর নির্মিত ঢাকার অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন।

আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে রাজশাহীতে দাফন করার ব্যাপারে প্রথমে অনুমতি দেয়া হচ্ছিল না। পরে তাঁর মায়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহীতে হেলিকপ্টারে করে এ এইচ এম কামারুজ্জামানের মৃতদেহ পাঠানো হয় ৫ই নভেস্বর। সেদিন রাজশাহীতে তাঁকে দাফন করা হয়।

৩. প্রশ্নঃ জেলহত্যা কখন সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ঐতিহাসিক জেল হত্যা দিবসের ইতিহাস প্রায় ৪৯ বছর আগে ১৯৭৫ সালে ৩রা নভেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় রাতে জাতীয় ৪ নেতাকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।

৪. প্রশ্নঃ বাংলাদেশের বড় চার নেতার নাম কি?

উত্তরঃ জেল হত্যা দিবস আওয়ামী লীগসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রতি বছর ৩রা নভেম্বর পালিত হয়। ১৯৭৫ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগের চারজন জাতীয় নেতাঃ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মুহাম্মদ মনসুর আলী এবং আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি স্মরণার্থে এ দিবস পালন করা হয়।

৫. প্রশ্নঃ জেল হত্যার সময় জেলার কে ছিলেন?

উত্তরঃ 
৩রা নভেম্বর যখন জাতীয় ৪ নেতাকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয় সে সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার হিসেবে কর্মরত ছিলেন আমিনুর রহমান।

জাতীয় চার নেতাকে জেল হত্যার পরিকল্পনা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি ছিলেন তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোস্তাক আহমেদ এবং এর সাথে ছিল আরো দুইজন এরা হলো ক্যাপ্টেন সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশিদ। আর এই দুইজন ছিল বহিষ্কৃত আর্মি অফিসার। আর তাদের ঘৃণিত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো তাদের বিশ্বাসঘাতকতা। এরা তিনজন মিলে ১৯৭৫ সালের তিন ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।তাই জেল হত্যা দিবস – জাতীয় চার নেতা কেন জেলে ছিলেন সঠিক ভাবে জানুন।

বহিস্কৃত কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান এর সবচেয়ে আস্থাভাজন রিসালদার মসলে উদ্দিনকে দলের প্রধান করে ঘাতক দল আগে থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি দল গঠন করেছিল। রিসালদার মসলে উদ্দিন নেতৃত্ব দিয়ে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এছাড়া ও রিসালদার সালেহ উদ্দিন ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্ট মনির বাসভবনে ঘাতক দল যে হত্যাযজ্ঞ চালায় তারও নেতৃত্ব দিয়েছিল।

১৯৭৫ সালে ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। আর এই হত্যাযোগ্য চালানোর জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি ঘাতক দল গঠন করা হয়। আর তারা এই দলটি এমনভাবে গঠন করেছিল যে হত্যাকাণ্ড চালানোর পরে কোন অভ্যুত্থান ঘটলে যেন তা আপনা আপনি কার্যকর করতে পারে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি জঘণ্যতম অধ্যায় ৩রা নভেম্বর

৩রা নভেম্বর ঐতিহাসিক জেল হত্যা দিবসের ইতিহাস যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি জঘণ্যতম কালো অধ্যায়। যে কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশকে কাঙ্খিত অর্জনের পথে বাধা তৈরি করেছে, তার মধ্যে এই দিনটি অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি এবং এ দেশের তৎকালীন একটি কুচক্রীমহল বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।

এরপর ষড়যন্ত্রকে চূড়ান্ত রূপ দিতে এবং স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার অভিপ্রায়ে হত্যা করা হয় চার নেতাকে। বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে ৪৯ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অভ্যন্তরীণ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল রাজনীতিতে বিশ্বাসী এই চার নেতা বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

এই জাতীয় চার নেতাই বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখেন। প্রতি বছর এই দিনে বাংলাদেশের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মনসুর আলী এবং খাদ্য ও ত্রাণমন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামানকে। জাতীয় চার নেতার মৃত্যুদিনে তাঁদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

৩রা নভেম্বর ঐতিহাসিক জেল হত্যার বিচারকার্য

ঐতিহাসিক ৩রা নভেম্বর জেল হত্যা দিবসের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়ের নাম। জেলখানায় ঐ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরের দিন ৪ঠা নভেম্বর তৎকালীন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উপমহাপরিদর্শক কাজী আব্দুল আউয়াল লালবাগ থানায় বাদী হয়ে চার নেতার হত্যাকাণ্ডের মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয় যে, রিসালদার মোসলেম উদ্দিন এর নেতৃত্বে চার পাঁচ জন সেনাসদস্য কারাগারে ঢুকে চার নেতাকে হত্যা করেন। হত্যার পর বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

ঘটনার পরদিন মামলা করা হলেও এই মামলার তদন্ত থেমেছিল ২১ বছর। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেলহত্যা মামলার বিচার কাজ শুরু করা হয়। টানা আট বছর বিচার চলার পর ২০০৪ সালের ৩ জানুয়ারি এর বিচার কাজ শেষ হয়। ৯ মাস পর ২০০৪ সালের ২০শে অক্টোবর রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে আদালত তিনজন পলাতক সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড, ১২ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচজনকে খালাস প্রদান করে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ওরফে হিরন খান, দফাদার মারফত আলী শাহ এবং এলডি দফাদার মো. আবুল হাসেম মৃধা। খালাসপ্রাপ্তরা হচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মরহুম তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, নূরুল ইসলাম মঞ্জুর ও মেজর (অব.) খায়রুজ্জামান। ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্টের রায়ে কেবল রিসালদার মোসলেমউদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি দফাদার মো. আবুল হাসেম মৃধা।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য চার আসামি লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল (অব.) শাহরিয়ার রশীদ খান, মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও লে. কর্নেল (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়। তবে জাতীয় নেতাদের পরিবারের সদস্যরাসহ বিভিন্ন মহল থেকে এই হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত ও পুনর্বিচার দাবি করা হয়। এরই মধ্যে জেল হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল (অব.) শাহরিয়ার রশীদ খান, মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও লে. কর্নেল (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ—এই চার জন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়।

২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি ফাঁসির রায় কার্যকর হয় তাদের। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতাসীন হওয়ায় জেল হত্যাকাণ্ডের পুনর্বিচারের সুযোগ আসে। ২০১৩ সালের ১ নভেম্বর সরকারপক্ষ জেল হত্যা মামলার আপিল বিষয়ে সারসংক্ষেপ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জমা দিলে পুনর্বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল আপিল বিভাগের চূড়ান্ত সংক্ষিপ্ত রায়ে ২০০৮ সালের হাইকোর্টের রায় বাতিল করে ২০০৪ সালের নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখা হয়। অর্থাৎ, পলাতক তিন আসামি রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ওরফে হিরন খান, দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি দফাদার মো. আবুল হাসেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

২০০৮ সালের ২৮শে আগস্ট বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ জেলহত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছয়জন সামরিক কর্মকর্তাকে খালাস দেয়। খালাসীদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা এবং এ কে এম মহিউদ্দীন আহমেদকে ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষ খালাসীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।

১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিচক্রকে ক্ষমতার আসন থেকে উৎখাত করার জন্য একটি রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত করেন।

কখন এবং কেন জাতীয় চার নেতাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়

বাংলাদেশের সাবেক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ৩রা নভেম্বর জেল হত্যা দিবস পালন করে। ৩রা নভেম্বর ঐতিহাসিক জেল হত্যা দিবসের ইতিহাস ১৯৭৫ সালের এই দিনে তৎকালীন আওয়ামী লীগের চারজন সিনিয়র নেতা - সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে ঢাকার কারাগারে হত্যা করা হয়।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের পরেই তখন এ চারজন নেতা ছিলেন দলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চারজন সিনিয়র নেতাসহ অনেকেই কারাগারে এবং অনেকে আত্ন গোপনে ছিলেন। বাকি নেতারা প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্যে নতুন রাস্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের সাথে সমঝোতা করেন। অনেকে আবার রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান।

তৎকালীন রাজনীতির বিশ্লেষক এবং গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন জেল হত্যাকাণ্ডের সাথে ৩রা নভেম্বর মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কিত। কারণ মুজিব হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা ভেবেছিলেন খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে সে অভ্যুত্থান আওয়ামী লীগ বা বাকশালের পক্ষে হচ্ছে।

কিন্তু খালেদ মোশাররফ এবং তার সমর্থকদের কার্যকলাপ থেকে এ ধরনের কোন প্রমান পাওয়া যায়নি বলে মি: আহমেদ উল্লেখ করেন। মি: আহমেদ বলেন ক্ষমতাসীন মোশতাক বা তার সমর্থকরা চাননি যে তাদের বিরোধী আরেকটি শক্তি শাসন ক্ষমতায় পুনর্বহাল হোক। ঐ ধরনের একটা সরকার যদি হতো তাহলে জেলে থাকা সে চারজন ছিলেন সম্ভাব্য নেতা।" তিনি বলেন এ সম্ভাবনা থেকে জেল হত্যাকাণ্ড হতে পারে।

শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর থেকেই হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা পাল্টা আরেকটি অভ্যুত্থানের আশংকায় ছিল। সেনাবাহিনীর মধ্যে ছিল এক ধরনের বিশৃঙ্খলা। সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। একদিকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং অন্যদিকে মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ।

তখন ঢাকা সেনানিবাসে মেজর পদমর্যাদায় কর্মরত ছিলেন বর্তমানে বিগ্রেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি এসব ঘটনা প্রবাহ বেশ কাছ থেকে দেখেছেন। শেখ মুজিবকে হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা তখন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহেমদকে পরিচালনা করছিলেন। বঙ্গভবনে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের সাথে একটা সংঘাত চলছিল সেনানিবাসের উর্ধ্বতন কিছু সেনা কর্মকর্তাদের সাথে।খন্দকার মোশতাক যে বেশিদিন ওখানে টিকবেন না, এটাও ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে একটা ধারণা জন্মেছিল। তখন আবার সিনিয়র অফিসারদের মধ্যেও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছিল।

শেখ মুজিবকে হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা ধারনা করেছিলেন যে কোন পাল্টা অভ্যুত্থান হলে সেটি আওয়ামী লীগের সমর্থন পাবে। সে ধরনের পরিস্থিতি হলে কী করতে হবে সে বিষয়ে মুজিব হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা কিছুটা ভেবেও রেখেছিলেন। ঐ ধরনের ক্যু হলে তখনকার আওয়ামী লীগে যাতে কোন ধরনের লিডারশিপ না থাকে সেটাই তারা বোধ হয় নিশ্চিত করেছিল।

হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা ভেবেছিল যদি সে চারজন রাজনীতিবিদকে যদি হত্যা করা হয় তাহলে পাল্টা অভ্যুত্থান হলেও সেটি রাজনৈতিক সমর্থন পাবেনা। খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান যে আওয়ামী লীগের সমর্থনে হবে এমন ধারনা সঠিক ছিলনা বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।

কিন্তু তারপরেও সে ধারনার ভিত্তিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় চারজন নেতাদের হত্যা করা হয়। খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে যে অভ্যুত্থান হয়েছিল সেটির সাথে আওয়ামী লীগের কোন সম্পর্ক বা সমর্থনের বিষয়টি পরিষ্কার নয়।

ঐতিহাসিক জেল হত্যার পটভূমি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐতিহাসিক ৩রা নভেম্বর জেল হত্যা দিবসের ইতিহাস একটি কলঙ্কময় ঘটনা। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সৈয়দ ফারুক রহমানের নেতৃত্বে কতিপয় অসন্তুষ্ট ও উচ্চাভিলাষী জুনিয়র অফিসারদের সংঘটিত অভ্যুত্থানে নিহত হন। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ঐতিহাসিক-জেল-হত্যার-পটভূমি
তিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি ও মুজিবনগর সরকারপ্রধান ছিলেন।১৯৭২ সালে জাতীয় রক্ষীবাহিনী প্রতিষ্ঠা, ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও ৭ জুন ১৯৭৫ বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) প্রতিষ্ঠা করে একদলীয় গণতন্ত্র প্রথা চালু করেন। শেখ মুজিবুর রহমানের এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশে সমাদৃত হয়নি। খন্দকার মোশতাক আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রীসভার বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর তিনি ১৫ই আগস্ট অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত অফিসারদের সমর্থন করেন এবং নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন।

ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন বাঙালি অফিসার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি মুজিবনগর সরকার কর্তৃক মুক্তিবাহিনীর ২ নং সেক্টর কমাণ্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। যুদ্ধে তিনি মাথায় বুলেটের আঘাত পান এবং ভারতের লখনউতে চিকিৎসা নেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৭৫ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চীফ অফ জেনারেল স্টাফের দায়িত্ব পালন করেন।

৩রা নভেম্বরে নিহত জাতীয় চার নেতার পরিচয়

আওয়ামী লীগের চারজন সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা হত্যার ৪৯ বছর পেরিয়ে গেছে। ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল ঢাকার কারাগারে। তৎকালীন আওয়ামী লীগের চারজন সিনিয়র নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হয়েছিল।দিনটি এখন জেল হত্যা দিবস হিসাবে পালিত হয়।

শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব যখন অনেকটা দিশেহারা, সে সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ এই চার নেতাসহ অনেককে বন্দি করা হয়েছিল। চলুন জেনে নেওয়া যাক ৩রা নভেম্বরে নিহত জাতীয় চার নেতার পরিচয়

১। সৈয়দ নজরুল ইসলামঃ বাংলাদেশের প্রথম সরকার, মুজিবনগর সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি বাকশালের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশের একজন ইতিহাসের প্রধানতম পুরুষ এবং একজন রাজনীতিবিদ। এবং তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের জম্ম হয় ১৯২৫ সালে।

তখনকার সময় ময়মনসিংহ জেলা আর বর্তমানের হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলায় জসোদল বীরদামপাড়ায় জন্ম গ্রহন করেন। ১৯৭১সালের ১০ই এপ্রিল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির এই দায়িত্ব পালন করেছেন। সৈয়দ নজরুল ইসলামের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার মধ্য দিয়ে পাকিস্থানের হাত থেকে বাংলাদেশ কে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের স্বাধীন ভুখন্ড উপহার দেয়। এই ঘটনাটিই বাঙালি জাতিসত্বাকে বিশ্ববাসীর সামনে গর্বিত পূনরূত্থানের সুযোগ করে দেন।

২। তাজউদ্দীন আহমদঃ তাজউদ্দীন আহমদ একজন আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যও ছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদ ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। (২৩ জুলাই ১৯২৫-৩ নভেম্বর ১৯৭৫)বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

তাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন যা মুজিবনগর সরকার নামে অধিক পরিচিত। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তিনি বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসাবে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হবার পর আরও তিনজন জাতীয় নেতাসহ তাকে বন্দী করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর বন্দী অবস্থায় তাকে হত্যা করা হয়।

৩। আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানঃ আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান একজন সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান(২৬ জুন, ১৯২৬ - নভেম্বর ৩, ১৯৭৫) বাংলাদেশে প্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গঠিত অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। একজন নির্লোভ, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতা হিসাবে তিনি পরিচিত ছিলেন।

তিনি বঙ্গীয় মুসলিম ছাত্রলীগের রাজশাহী জেলা শাখার সম্পাদক হন ১৯৪২ সালে। বঙ্গীয় মুসলিম ছাত্রলীগের নির্বাচিত সহ-সভাপতি ছিলেন ১৯৪৩-৪৫ সাল পর্যন্ত। ১৯৫৬ সালে কামারুজ্জামান আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৬২ ও ১৯৬৬ সালে পরপর দু’বার এএইচএম কামারুজ্জামান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬-দফার সময় তিনি ৬-দফা আন্দোলনে আত্মনিয়োগ করেন। পরের বছর ১৯৬৭ সালে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বিরোধীদলীয় উপনেতা নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি মাসের ১৮ তারিখে তিনি মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে নতুন মন্ত্রিসভায় তিনি শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

৪। মুহাম্মদ মনসুর আলীঃ মুহাম্মদ মনসুর আলী মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মোহাম্মদ মনসুর আলী সিরাজগঞ্জ জেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের ‘কুড়িপাড়া’ গ্রামে ১৯১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম ছিল হরফ আলী সরকার। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ছিলেন পাবনা জেলা মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি।

১৯৪৮ সালে তিনি যশোর ক্যান্টনমেন্টে প্রশিক্ষণ নেন এবং পিএলজির ক্যাপ্টেন পদে অধিষ্ঠিত হন। এ সময় থেকেই তিনি ক্যাপ্টেন মনসুর নামে পরিচিত হতে থাকেন। ১৯৫১ সালে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন। জড়িয়ে পড়েন সক্রিয় রাজনীতিতে। আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন এবং দলের পাবনা জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।

ঐতিহাসিক জেলহত্যা দিবস কত তারিখ

শোকাবহ ঐতিহাসিক জেল হত্যা দিবস ৩রা নভেম্বর। ঘাতকেরা মিশন শুরু করেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ককে হারানোর শোকে জাতি যখন মুহ্যমান, তখনই আবার আঘাত আসে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ভোরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা বঙ্গবন্ধুর সহচর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে ঘাতক চক্র।

সেদিন কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে চার জাতীয় নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। একাত্তরের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা সেদিন দেশমাতৃকার সেরা সন্তান জাতীয় এই চার নেতাকে শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, কাপুরুষের মতো গুলিবিদ্ধ দেহকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে একাত্তরের পরাজয়ের জ্বালা মিটিয়েছিল।

ইতিহাসের এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল সমগ্র বিশ্ব। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় বর্বরোচিত এ ধরনের হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। প্রতি বছরের মতো আজ শুক্রবারও জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে জাতীয় চার নেতাকে।

জেল হত্যার পরদিন তৎকালীন উপ-কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তবে দীর্ঘ ২১ বছর এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার জেল হত্যা মামলার প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করে। এরপর দীর্ঘ আট বছরের বেশি সময় বিচারকাজ চলার পর ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলাটির রায় ঘোষণা করে। রায়ে ২০ আসামির মধ্যে ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তার শাস্তি এবং অন্য পাঁচ জনকে খালাস দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক তিন জনের মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

৩রা নভেম্বর যেভাবে খুন করা হয় জাতীয় চার নেতাকে

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে একটি পিকআপ এসে থামে। তখন রাত আনুমানিক দেড়টা থেকে দুইটা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় সে গাড়িতে কয়েকজন সেনা সদস্য ছিল। ঢাকা তখন অস্থিরতার নগরী। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে অভ্যুত্থান এবং পাল্টা অভ্যুত্থান নিয়ে নানা রকম কথা শোনা যাচ্ছে তখন। সে সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার হিসেবে কর্মরত ছিলেন আমিনুর রহমান।

রাত দেড়টার দিকে কারা মহাপরিদর্শক টেলিফোন করে জেলার মি. রহমানকে তাৎক্ষনিকভাবে আসতে বলেন। দ্রুত কারাগারের মূল ফটকে গিয়ে মি. রহমান দেখলেন, একটি পিকআপে কয়েকজন সেনা সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় আছে। মূল ফটকের সামনে সেনা সদস্যরা কারা মহাপরিদর্শককে একটি কাগজ দিলেন। সেখানে কী লেখা ছিল সেটি অবশ্য জানতে পারেননি মি. রহমান। মূল ফটক দিয়ে ঢুকে বাম দিকেই ছিল জেলার আমিনুর রহমানের কক্ষ। তখন সেখানকার টেলিফোনটি বেজে উঠে। মি. রহমান যখন টেলিফোনের রিসিভারটি তুললেন, তখন অপর প্রান্ত থেকে বলা হলো প্রেসিডেন্ট কথা বলবেন।

২০১০ মি. রহমান বলেন, টেলিফোনে বলা হলো প্রেসিডেন্ট কথা বলবে আইজি সাহেবের সাথে। তখন আমি দৌড়ে গিয়ে আইজি সাহেবকে খবর দিলাম। কথা শেষে আইজি সাহেব বললেন যে প্রেসিডেন্ট সাহেব ফোনে বলছে আর্মি অফিসাররা যা চায়, সেটা তোমরা কর। মূল ফটকের সামনে কথাবার্তার চলতে থাকে। এক সময় রাত তিনটা বেজে যায়। আমিনুর রহমান বলেন, এক পর্যায়ে কারাগারে থাকা তৎকালীন আওয়ামী লীগের চার জন নেতাকে একত্রিত করার আদেশ আসে। কারা মহাপরিদর্শক একটি কাগজে চার ব্যক্তির নাম লিখে জেলার আমিনুর রহমানকে দিলেন।

সে চারজন নতারা হলেন – সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামান। আমিনুর রহমানের বর্ণনা অনুযায়ী সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন আহমদ কারাগারের একটি কক্ষে ছিলেন। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে অপর কক্ষ থেকে এখানে নিয়ে আসা হয়।

সেখানে আসার আগে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী কাপড় পাল্টে নিলেন। মি. রহমানের বর্ণনা করেন, “তাজউদ্দীন সাহেব তখন কোরআন শরীফ পড়ছিলেন। ওনারা কেউ আমাদের জিজ্ঞেস করলেন না আমাদের কোথায় নেয়া হচ্ছে? সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব হাত-মুখ ধুলেন। আমি বললাম আর্মি আসছে। চারজনকে যখন একটি কক্ষে একত্রিত করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগার কারণে সেনাসদস্যরা কারা কর্মকর্তাদের নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করছিল, বলছিলেন মি. রহমান। মনসুর আলি সাহেব বসা ছিল সর্ব দক্ষিণে। যতদূর আমার মনে পড়ে। আমি মনসুর আলীর ‘ম’ কথাটা উচ্চারণ করতে পারি নাই, সঙ্গে সঙ্গে গুলি,” বলেন মি. রহমান।

কারাগারের ভেতর এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর চার নেতার পরিবার সেদিন জানতে পারেননি। তাজউদ্দীন আহমদের পরিবার কারাগারের খোঁজ নেবার জন্য সারাদিন চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। পরের দিন অর্থাৎ ৪ নভেম্বর পুরনো ঢাকার এক বাসিন্দা তাজউদ্দীন আহমদের বাসায় এসে জানান যে তিনি আগের দিন ভোরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গুলির শব্দ শুনেছেন।

প্রয়াত তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি ২০১০ সালে বিবিসি বাংলাকে বলেন, ৪ নভেম্বর বিকেল চারটার দিকে খবর আসতে শুরু করলো তাজউদ্দীন আহমদসহ চারজন নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমানকে প্রায় সপরিবারে হত্যার ঘটনার সাথে জেল হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র আছে বলে মনে করা হয়।

জাতীয় চার নেতাকে হত্যার কারণ কী ছিল

৩রা নভেম্বর ঐতিহাসিক জেল হত্যা দিবসের ইতিহাস বাঙালি জাতির জীবনে এক কলঙ্কময় দিন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের প্রবীণ চার রাজনৈতিক নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যা বঙ্গবন্ধু হত্যা-ষড়যন্ত্রের সম্প্রসারিত একটি অংশ ছিল নৃশংস এ জেল হত্যাকাণ্ড।

কারাগারে নিহত চার নেতা হলেন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকারী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী এবং খাদ্য ও ত্রাণমন্ত্রী এএইচএম কামারুজ্জামান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিচক্র এ চার নেতাকে গ্রেফতার এবং কারাবন্দি করে।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন জাতীয় চার নেতা। আর সেটাই ভয়ের কারণ ছিল, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির কাছে। যে কারণে ১৫ আগস্টের পর আড়াই মাসের মাথায় কারাবন্দি জাতীয়ে এ চার নেতাকে হত্যা করে ঘাতকের দল।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া সেনা কর্মকর্তাদের শঙ্কা ছিল ১৫ আগস্টের কারণে সেনাবাহিনীতে কোনো পাল্টা অভ্যুত্থান হলে, সেটি আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে পারে। আর সেক্ষেত্রে এ চার নেতাই নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু তাদেরকে হত্যা করলে পাল্টা অভ্যুত্থান হলেও সেটি রাজনৈতিক সমর্থন পাবে না।

এ চিন্তা থেকেই ঘটে জেল হত্যাকাণ্ড। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যে আদর্শিক যাত্রা, সেটিকে থামিয়ে দিতেই ঘটানো হয় ৩ নভেম্বর। বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হলো কারাগার।

ব্রাশ ফায়ার করে তাদেরকে হত্যা করে চলে যায় খুনিরা। তারা চলে যাওয়ার পর একজন জীবিত ছিলেন। পানি পানি বলে চিৎকার করছিলেন। পরে খুনিরা আবার ফিরে এসে হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত করে চলে যায়।

জাতীয় এ চার নেতা হলেন সেই চারজন, যারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানের জেলে বন্দি, সেই সময়টাতে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আদর্শভিত্তিক এবং সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করেন। বিশ্ব জনমতকে পক্ষে এনে তারা বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে ধাপে ধাপে সাফল্যের পথে নিয়ে যান।

জাতীয় চার নেতা কেন জেলে ছিলেন

৩রা নভেম্বর ঐতিহাসিক জেল হত্যা দিবসের ইতিহাস ১৯৭৫ সালে ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির ৩২ নং বাসায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। খন্দকার মোস্তাক আহমেদ ছিলেন তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী এবং তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত করেন এবং সামরিক শাসন জারি করেছিলেন। খন্দকার মোস্তাক ক্ষমতা দখলের পরে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী চার নেতাকে ২২ শে আগস্ট গ্রেফতার করে এবং পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
জাতীয়-চার-নেতা-কেন-জেলে-ছিলেন
খন্দকার মোস্তাক বুঝতে পেরেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় করা হয়েছে তিনিও একই অবস্থার মুখোমুখি হতে পারেন। তাই ২২ শে আগস্ট জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় বন্দি করা হয় এবং বন্দী করার দুই মাস ১৫ দিন পর অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর তাদের হত্যা করা হয়। মোস্তাক বুঝতে পেরেছিলেন জাতীয় এই চার নেতা ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দানকারী কোন নেতা নেই আর এই চার নেতার যে কেউ একজন যে কোন সময়।

অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারে তাই তাদের বন্দি করা এবং হত্যা করার কোন বিকল্প নেই। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার পরিকল্পনা তাৎক্ষণিক করা হয় এবং পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট ঘাতক দল গঠন করা হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর খন্দকার মোস্তাক চাননি যে আরেকটা ক্ষমতাশীল দল এদেশে থাক এবং এই চার জন ছিলেন সম্ভাব্য নেতা। আর যদি আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তাহলে।

জেলে থাকা এই চারজন প্রধান নেতা হবেন। আবার তখন সেনা সদস্যদের মধ্যেও ক্ষমতার দ্বন্দ চলছিল যার কারণে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। সেনা কর্মকর্তারা ভালো করে জানতেন যে, অভ্যুত্থান হলে আওয়ামী লীগ সমর্থন পাবে এবং তারা সরকার গঠন করতে পারবে। তাই এই চার নেতাকে ১৯৭৫ সালের ২২ আগস্ট জেলে বন্দী করা হয় এবং ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানাতে তাদের হত্যা করা হয়।

উপসংহার

আজকে আমি আপনাদের সাথে ঐতিহাসিক জেলহত্যা দিবস কত তারিখ, ৩রা নভেম্বরে নিহত জাতীয় চার নেতার পরিচয়, জাতীয় চার নেতাকে হত্যার কারণ কী ছিল, ৩রা নভেম্বর ঐতিহাসিক জেল হত্যা দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযু্দ্ধে পরাজিত শত্রুরা এদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি বিধায় পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে দেশি-বিদেশি এই চক্রটি জঘন্য হত্যাকান্ড চালায়। আশা করছি ঐতিহাসিক ৩রা নভেম্বর জেল হত্যা দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url