কুরআন হাদিসের আলোকে হজ্জ্বের গুরুত্ব ও ফজিলত
কুরআন হাদিসের আলোকে হজ্জ্বের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ন আর্টিকেলটি পড়তে হবে। হজ্জ্ব আরবি শব্দ, এর অর্থ হলো নিয়ত করা, দর্শন করা, সঙ্কল্প করা, গমন করা, ইচ্ছা বা প্রতিজ্ঞা করা।
জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখে ইহরাম বেঁধে আরাফাতের মাঠে অবস্থান করাসহ কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত কয়েকটি আমল যথাযথভাবে আদায় করে কাবা ঘর তাওয়াফ করাকে হজ্জ্ব বলে। ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহের মধ্যে পঞ্চমটি হলো হজ্জ্বে বায়তুল্লাহ।
নিচে কুরআন হাদিসের আলোকে হজ্জ্বের গুরুত্ব ও ফজিলত সহ আরও কয়েকটি বিষয় যেমন- হজ্জ্ব কতো প্রকার ও কি কি, ফরজ হজ্জ্ব না করার পরিণাম, হজ্জ্বের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত কয়টি ও কি কি, হজ্জ্বের নিবন্ধন কিভাবে করতে হয়, হজ্জ্ব নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
পেইজ সূচিপত্রঃ কুরআন ও হাদিসের আলোকে হজ্জ্বের গুরুত্ব ও ফজিলত
- কুরআন হাদিসের আলোকে হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত
- হজ্জ কতো প্রকার ও কি কি
- ফরজ হজ্জ না করার পরিণাম
- হজ্জের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত কয়টি ও কি কি
- যে কাজ হজ্জ ও উমরাহকে বাতিল করে দেয়
- হজ্জের ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কার্যাবলী
- ইহরাম ও হজ্জের মাকরুহ বিষয়াবলী
- হজ্জের দোয়া ও দোয়া কবুলের পুণ্যময় স্থানসমূহ
- হজ্জ্ব ও উমরাহ হজ্জের সকল দোয়া সমূহ
- হজ্জের নিবন্ধন কিভাবে করতে হয়
- বিদায় হজ্জের ভাষন
- বিদায় হজ্জের ভাষন
- উপসংহার
কুরআন হাদিসের আলোকে হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত
কুরআন হাদিসের আলোকে হজ্জ্বের গুরুত্ব ও ফজিলত কি এই আর্টিকেলটি পড়ে তা জানতে পারবেন। ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহের পঞ্চমটি হলো হজ্জে বায়তুল্লাহ। ঈমান, নামায, যাকাত ও রোযার পরই হজ্বের অবস্থান। হজ্ব মূলত কায়িক ও আর্থিক উভয়ের সমন্বিত একটি ইবাদত। তাই উভয় দিক থেকে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের উপর আল্লাহ তাআলা হজ্জ্ব পালন করা ফরয করে দিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ
অর্থাৎ হজ্ব আদায়ে সক্ষম এমন শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচাপাতি ও হজ্বে যাওয়া-আসার ব্যয় এবং হজ্ব আদায়কালীন সাংসারিক ব্যয় নির্বাহে সক্ষম এমন সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্ব আদায় করা ফরয। হজ্ব প্রত্যেক মুসলমানের উপর সারা জীবনে একবারই ফরয হয়। একবার ফরয হজ্ব আদায়ের পর পরবর্তী হজ্বগুলো নফল হিসেবে গণ্য হবে।
এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা ( রাঃ) বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন-
يا أيها الناس! إن الله كتب عليكم الحج، فحجوا، فقال رجل : أكل عام يا رسول الله؟ فكست حتى قالها ثلاثا، ثم قال : لو قلت نعم لوجبت ولما استطعتم.
হে মানবসকল আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ্ব ফরয করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্ব করো। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! প্রতি বছর কি হজ্ব করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করল। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তা (প্রতি বছর হজ্ব করা) ফরয হয়ে যেতো, কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হতো না।-সহীহ মুসলিম, হাদীসঃ ১৩৩৭ (৪১২), মুসনাদে আহমদ, হাদীসঃ ১০৬০৭,
ইবনে আববাস ( রাঃ) হতে বর্ণিত অনুরূপ হাদীসে আরো বলা হয়েছে, হজ্ব (ফরয) হলো একবার, এরপরে যে অতিরিক্ত আদায় করবে তা নফল হিসেবে গণ্য। মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩০৪; সুনানে দারিমী, হাদীস : ১৭৮৮,। হজ্ব যেহেতু একবারই ফরয তাই যার উপর হজ্ব ফরয হয়েছে সে যদি মৃত্যুর আগে যে কোনো বছর হজ্ব আদায় করে, তবে তার ফরয আদায় হয়ে যাবে।
কিন্তু হজ্ব বিধানের মৌলিক তাৎপর্য, তার যথার্থ দাবি ও আসল হুকুম হচ্ছে হজ্ব ফরয হওয়ার সাথে সাথে আদায় করা। বিনা ওজরে বিলম্ব না করা। কারণ বিনা ওজরে বিলম্ব করাও গুনাহ। আল্লাহ তাআলা ও তার রাসূল ফরয হজ্ব আদায়ের প্রতি এমনভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন যে, কেউ যদি এই হজ্বকে অস্বীকার করে বা এ বিষয়ে কোনো ধরনের অবহেলা প্রদর্শন করে তবে সে আল্লাহর জিম্মা থেকে মুক্ত ও হতভাগ্যরূপে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا، ومن كفر فان الله غنى عن العلمين.
(তরজমা) মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্ব করা ফরয। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন। সূরা আলে ইমরান (৩) : ৯৭
তাছাড়া যে কোনো ধরনের বিপদ-আপদ, অসুখ-বিসুখের সম্মুখীন হওয়া বা মৃত্যুর ডাক এসে যাওয়া তো অস্বাভাবিক নয়। তাই হজ্ব ফরয হওয়ার পর বিলম্ব করলে পরে সামর্থ্য হারিয়ে ফেললে বা মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তাআলার নিকট অপরাধী হিসেবেই তাকে হাজির হতে হবে। এজন্যই হাদীস শরীফে হজ্ব ফরয হওয়ামাত্র আদায় করার তাগিদ ও হুকুম দেওয়া হয়েছে। ইবনে আববাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
من أراد الحج فليتعجل، فإنه قد يمرض المريض وتضل الضالة وتعرض الحاجة.
যে ব্যক্তি হজ্ব করার ইচ্ছে করে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা আদায় করে নেয়। কারণ যে কোনো সময় সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা বাহনের ব্যবস্থাও না থাকতে পারে অথবা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৮৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৮৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৭৩২; সুনানে দারিমী, হাদীস : ১৭৮৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৬৮৭; তবারানী, হাদীস : ৭৩৮ অন্য বর্ণনায় ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
تعجلوا إلى الحج، يعني الفريضة، فإن أحدكم لا يدري ما يعرض له.
ফরয হজ্ব আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না। কারণ তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৮৬৭; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৪/৩৪০
উপরন্তু একটি হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা যে স্বচ্ছল সামর্থ্যবান ব্যক্তি সত্ত্বর হজ্ব আদায় করে না তাকে হতভাগা ও বঞ্চিত আখ্যায়িত করেছেন। হজ্ব করার শক্তি-সামর্থ্য ও অর্থ-বিত্ত থাকার পরও যে ব্যক্তি হজ্ব করে না তার সম্পর্কে হাদীস শরীফে কঠোর হুমকি প্রদান করা হয়েছে। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন-
من أطاق الحج فلم يحج فسواء عليه مات يهوديا أو نصرانيا.
যে ব্যক্তি হজ্ব করার সামর্থ্য রাখে, তবুও হজ্ব করে না সে ইহুদী হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খৃস্টান হয়ে তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই।-তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৫৭৮
কুরআনের আলোকে হজ্জ্বের গুরুত্ব
কুরআনের আলোকে হজ্জের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ ‘আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্জ করা ঐ ব্যক্তির উপর ফরয করা হলো, যার এখানে আসার সামর্থ্য রয়েছে। আর যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করে (সে জেনে রাখুক যে,) আল্লাহ জগদ্বাসী থেকে মুখাপেক্ষীহীন’ (আলে ইমরান ৩/৯৭)। এটিই হজ্জ ফরয হওয়ার মূল দলীল। অর্থাৎ সালাত, সিয়াম ও যাকাতের মতো হজ্জ্ব পালন করা সকল সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের উপর ফরয।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ ‘আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরাহ পূর্ণ কর। কিন্তু যদি তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হও, তাহলে যা সহজলভ্য হয়, তাই কুরবানী কর’ (বাক্বারাহ ২/১৯৬)। এ আয়াতটি হজ্জ ফরয হওয়ার পাশাপাশি ওমরাহ ফরয হওয়ারও দাবী রাখে, যে ব্যাপারে অধিকাংশ সাহাবী ও ওলামায়ে কেরাম অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অন্যত্র তিনি বলেন,
وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالاً وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ، لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ-
আর তুমি মানুষের মাঝে হজ্জ্বের ঘোষণা প্রচার করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সকল প্রকার (পথশ্রান্ত) কৃশকায় উটের উপর সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত হতে। যাতে তারা তাদের (দুনিয়া ও আখেরাতের) কল্যাণের জন্য সেখানে উপস্থিত হতে পারে এবং রিযিক হিসাবে তাদের দেওয়া গবাদিপশুসমূহ যবেহ করার সময় নির্দিষ্ট দিনগুলিতে তাদের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। অত্র আয়াতসমূহে হজ্জ্ব ফরয হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়েছে।
হাদীসের আলোকে হজ্জ্বের গুরুত্ব
হাদীসের আলোকে হজ্জের গুরুত্ব, হজ্জের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি হাদীছ নিম্নে পেশ করা হলো।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بُنِىَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ. متفق عليه-
ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপরে প্রতিষ্ঠিত
(১) তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করা এ মর্মে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল
(২) সালাত কায়েম করা
(৩) যাকাত প্রদান করা
(৪) হজ্জ সম্পাদন করা ও
(৫) রামাযানের সিয়াম পালন করা।
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ: خَطَبَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ فَرَضَ اللهُ عَلَيْكُمُ الْحَجَّ فَحُجُّوا، فَقَالَ رَجُلٌ أَكُلَّ عَامٍ يَا رَسُولَ اللهِ؟ فَسَكَتَ حَتَّى قَالَهَا ثَلاَثًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَوْ قُلْتُ نَعَمْ لَوَجَبَتْ وَلَمَا اسْتَطَعْتُمْ، ثُمَّ قَالَ : ذَرُونِى مَا تَرَكْتُكُمْ فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِهِمْ وَاخْتِلاَفِهِمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ، فَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَىْءٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَىْءٍ فَدَعُوهُ-
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণে বললেন, হে জনগণ! তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করা হয়েছে। অতএব তোমরা হজ্জ সম্পাদন কর। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! তা কি প্রতি বছর? তিনি নীরব থাকলেন এবং সে তিনবার কথাটি বলল। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, আমি হ্যাঁ বললে তা ওয়াজিব হয়ে যাবে (প্রতি বছরের জন্য) অথচ তোমরা তা পালন করতে সক্ষম হবে না।
তিনি পুনরায় বললেন, তোমরা আমাকে ততটুকু কথার উপর থাকতে দাও যতটুকু আমি তোমাদের জন্য বলি। কারণ তোমাদের পুর্বেকার লোকেরা তাদের অধিক প্রশ্নের কারণে এবং তাদের নবীদের সাথে বিরোধিতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অতএব আমি তোমাদের যখন কোন কিছু করার নির্দেশ দেই, তোমরা তা যথাসাধ্য পালন কর এবং যখন তোমাদের কোন কিছু করতে নিষেধ করি তখন তা পরিত্যাগ কর। এ হাদীছটি স্পষ্টভাবে জীবনে একবার হজ্জ ফরয হওয়ার প্রমাণ বহন করে।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ الأَقْرَعَ بْنَ حَابِسٍ سَأَلَ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ! الْحَجُّ فِىْ كُلِّ سَنَةٍ أَوْ مَرَّةً وَاحِدَةً قَالَ : بَلْ مَرَّةً وَاحِدَةً فَمَنْ زَادَ فَهُوَ تَطَوُّعٌ-
ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আকরা‘ বিন হাবেস নবী করীম (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! হজ্জ কি প্রতি বছর ফরয না জীবনে একবারই ফরয? তিনি বললেন, না বরং হজ্জ জীবনে একবার ফরয। যে অধিক করবে তা তার জন্য নফল হবে।
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَيُحَجَّنَّ الْبَيْتُ وَلَيُعْتَمَرَنَّ بَعْدَ خُرُوْجِ يَأْجُوْجَ وَمَأْجُوْجَ ু
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াজূজ ও মাজূজ বের হওয়ার পরও বায়তুল্লাহর হজ্জ ও ওমরাহ পালিত হবে। হজ্জ এমন গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যে, পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতেও তা সম্পাদন করতে হয়। অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূল (সাঃ) বলেন, لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لاَ يُحَجَّ الْبَيْتُ ‘বায়তুল্লাহর হজ্জ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: مَنْ أَرَادَ الْحَجَّ فَلْيَتَعَجَّلْ، فَإِنَّهُ قَدْ يَمْرَضُ الْمَرِيْضُ وَتَضِلُّ الضَّالَّةُ وَتَعْرِضُ الْحَاجَةُ-
ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ্জের সংকল্প করে সে যেন অবিলম্বে তা আদায় করে। কারণ মানুষ কখনও অসুস্থ হয়ে যায়, কখনও প্রয়োজনীয় জিনিস বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং কখনও অপরিহার্য প্রয়োজন সামনে এসে যায়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, تَعْجَّلُوا إِلَى الْحَجِّ يَعْنِى الْفَرِيْضَةَ فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لاَ يَدْرِى مَا يَعْرِضُ لَهُ ‘তোমরা দ্রুত ফরয হজ্জ সম্পাদন কর।
কারণ তোমাদের কেউ জানে না কখন অপরিহার্য প্রয়োজন সামনে এসে যায়। ইবাদত হিসাবে হজ্জ অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় রাসূল (সাঃ) তা দ্রুত সম্পাদন করার নির্দেশ দিয়েছেন। ওমর (রাঃ) বলেন, যাদের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ সম্পাদন করবে না তারা ইহূদী ও নাছারা অবস্থায় মারা যাবে। এর দ্বারা হজ্জের গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে এবং ফরয ত্যাগকারীদেরকে হুমকী দেওয়া হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, তারা অমুসলিম হয়ে যাবে।
হজ্জ্বের ফযীলাত
আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম মিল্লাতের উপর হজ্জ ফরয করেছেন। উদ্দেশ্য স্বীয় বান্দাদের ক্ষমা করে তাদেরকে জান্নাতের সুখময় স্থান দান করা। আর তিনি হজ্জের প্রতিটি কর্ম সম্পাদনের জন্য পৃথক পৃথক ফযীলতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। রাসূল (সাঃ) বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে হজ্জের ফযীলত ও মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। সেগুলো নিম্নে পেশ করা হলো-
হজ্জ পালনকারী নবজাতকের ন্যায় গুনাহমুক্তঃ عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : مَنْ حَجَّ لِلَّهِ، فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَمَا وَلَدَتْهُ أُمُّهُ- আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করেছে। যার মধ্যে সে অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কার্য করেনি, সে হজ্জ হ’তে ফিরবে সেদিনের ন্যায় (নিষ্পাপ অবস্থায়) যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিলেন। অর্থাৎ সে কাবীরা-ছাগীরা, প্রকাশ্য-গোপনীয় সকল গুনাহ থেকে ঐরূপ মুক্ত হয়ে ফিরে আসে। যেরূপ একজন শিশু গুনাহ মুক্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করে।
হজ্জ্বের একমাত্র প্রতিদান জান্নাত
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, এক ওমরাহ অপর ওমরাহ পর্যন্ত সময়ের (ছগীরা গুনাহের) কাফফারা স্বরূপ। আর জান্নাতই হলো কবুল হজ্জের একমাত্র প্রতিদান। হজ্জে মাবরূর’ বা কবুল হজ্জ বলতে ঐ হজ্জকে বুঝায়, যে হজ্জে কোন গোনাহ করা হয়নি এবং যে হজ্জের আরকান-আহকাম সবকিছু (ছহীহ সুন্নাহ মোতাবেক) পরিপূর্ণভাবে আদায় করা হয়েছে।
হজ্জ থেকে ফিরে আসার পরে পূর্বের চেয়ে উত্তম হওয়া এবং পূর্বের গোনাহে পুনরায় লিপ্ত না হওয়া কবুল হজ্জের বাহ্যিক নিদর্শন হিসাবে গণ্য হয়। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছিলেন, سَتَلْقَوْنَ رَبَّكُمْ، فَسَيَسْأَلُكُمْ عَنْ أَعْمَالِكُمْ، أَلاَ فَلاَ تَرْجِعُوا بَعْدِى ضُلاَّلاً، ‘হে লোকসকল সত্বর তোমরা তোমাদের প্রভুর সঙ্গে মিলিত হবে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। অতএব সাবধান তোমরা আজকের দিনের পর যেন পুনরায় পথভ্রষ্ট হয়ো না।
হজ্জ পূর্ববর্তী গুনাহকে ধ্বংস করে দেয়
عَنِ ابْنِ شَمَاسَةَ الْمَهْرِىِّ، قَالَ حَضَرْنَا عَمْرَو بْنَ الْعَاصِ، وَهُوَ فِي سِيَاقَةِ الْمَوْتِ، فَبَكَى طَوِيلاً وَحَوَّلَ وَجْهَهُ إِلَى الْجِدَار، وَقَالَ : فَلَمَّا جَعَلَ اللهُ الإِِسْلاَمَ فِيْ قَلْبِيْ أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ ابْسُطْ يَمِيْنَكَ لأُبَايِعَكَ، فَبَسَطَ يَدَهُ، فَقَبَضْتُ يَدِيْ، فَقَالَ : مَا لَكَ يَا عَمْرُو؟ قَالَ : أَرَدْتُ أَنْ أَشْتَرِطَ، قَالَ : تَشْتَرِطُ مَاذَا؟ قَالَ : أَنْ يُغْفَرَ لِيْ، قَالَ : أَمَا عَلِمْتَ يَا عَمْرُو أَنَّ الإِسْلاَمَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ، وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهَدَّمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا، وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ-
ইবনু শামাসা আল-মাহরী (রহঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা আমর ইবনুল আছ (রাঃ)-এর মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে দেখতে উপস্থিত হ’লাম। তখন তিনি দীর্ঘ সময় ধরে কাঁদলেন এবং দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে রাখলেন। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামের অনুরাগ সৃষ্টি করে দিলেন, তখন আমি রাসূল (সাঃ)-এর নিকটে উপস্থিত হয়ে অনুরোধ জানালাম যে, আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দিন, যাতে আমি বায়‘আত করতে পারি।
রাসূল (সাঃ) তাঁর ডান হাত বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু আমি আমার হাত গুটিয়ে নিলাম। তখন রাসূল ((সাঃ) বললেন, কি ব্যাপার হে আমর? আমি বললাম, আমি শর্ত করতে চাই। তিনি বললেন, কি শর্ত করতে চাও? আমি বললাম, আল্লাহ যেন আমার (পিছনের সব) গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি বললেন, হে আমর! তুমি কি জান না, ‘ইসলাম’ তার পূর্বেকার সকল পাপ বিদূরিত করে দেয় এবং ‘হিজরত’ তার পূর্বেকার সকল কিছুকে বিনাশ করে দেয়। একইভাবে ‘হজ্জ’ তার পূর্বের সবকিছুকে বিনষ্ট করে দেয়?
হাজীর সম্মানে পাথর, বৃক্ষরাজি, মাটি সবকিছুই তার সাথে তালবিয়া পাঠ করে
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُلَبِّى إِلاَّ لَبَّى مَنْ عَنْ يَمِينِهِ أَوْ عَنْ شِمَالِهِ مِنْ حَجَرٍ أَوْ شَجَرٍ أَوْ مَدَرٍ حَتَّى تَنْقَطِعَ الأَرْضُ مِنْ هَا هُنَا وَهَا هُنَا-
সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন কোন মুসলিম তালবিয়া পাঠ করে তখন তার ডান ও বামে পাথর, বৃক্ষরাজি, মাটি সবকিছুই তার সাথে তালবিয়া পাঠ করে। এমনকি পৃথিবীর এ প্রান্ত হতে ঐ প্রান্ত পর্যন্ত (তালবিয়া পাঠকারীদের দ্বারা) পূর্ণ হয়ে যায়’।
হজ্জ দরিদ্রতা ও গোনাহ সমূহ বিদূরিত করে
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: تَابِعُوْا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوْبَ كَمَا يَنْفِى الْكِيْرُ خَبَثَ الْحَدِيْدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُوْرَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةُু
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা হজ্জ ও ওমরাহর মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখো (অর্থাৎ সাথে সাথে কর)। কেননা এ দু’টি মুমিনের দরিদ্রতা ও গোনাহ সমূহ দূর করে দেয়, যেমন (কামারের আগুনের) হাপর লোহা, স্বর্ণ ও রৌপ্যের ময়লা দূর করে দেয়। আর কবুল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত কিছুই নয়।
শ্রেষ্ঠ জিহাদ হজ্জ
عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ رضى الله عنها قَالَتْ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ! أَلاَ نَغْزُوْا وَنُجَاهِدُ مَعَكُمْ؟ فَقَالَ : لَكُنَّ أَحْسَنُ الْجِهَادِ وَأَجْمَلُهُ الْحَجُّ، حَجٌّ مَبْرُوْرٌ. فَقَالَتْ عَائِشَةُ فَلاَ أَدَعُ الْحَجَّ بَعْدَ إِذْ سَمِعْتُ هَذَا مِنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم-
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কি আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ ও জিহাদে অংশগ্রহণ করব না? তিনি বললেন, তোমাদের জন্য উত্তম ও উৎকৃষ্ট জিহাদ হ’ল হজ্জ, কবূল হজ্জ। আয়েশা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) হতে এ কথা শোনার পর আমি আর কখনো হজ্জ ছাড়ব না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আয়েশা (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, মহিলাদের উপরে ‘জিহাদ’ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ আছে।
তবে সেখানে যুদ্ধ নেই। সেটি হ’ল হজ্জ ও ওমরাহ’ অপর এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (সাঃ) বলেন, جِهَادُ الْكَبِيْرِ وَالصَّغِيْرِ وَالضَّعِيْفِ وَالْمَرْأَةِ الْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ ‘বড়, ছোট, দুর্বল ও মহিলা সকলের জন্য জিহাদ হ’ল হজ্জ ও ওমরাহ’। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল إِنِّي جَبَانٌ، وَإِنِّيْ ضَعِيفٌ، فَقَالَ: هَلُمَّ إِلَى جِهَادٍ لَا شَوْكَةَ فِيْهِ: الْحَجِّ ‘আমি তো ভীতু এবং দুর্বল (আর আমার উপর জিহাদ ফরয)। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, ছুটে এসো এমন এক জিহাদের দিকে যেখানে কোন কষ্ট নেই। আর তা হ’ল হজ্জ।
অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল হজ্জ
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ سُئِلَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ : إِيْمَانٌ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ. قِيْلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ: جِهَادٌ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ. قِيْلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ : حَجٌّ مَبْرُوْرٌ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন আমলটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন, শ্রেষ্ঠ আমল হ’ল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরে ঈমান আনা। বলা হলো, তারপর কি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। জিজ্ঞেস করা হ’ল, তারপর কি? তিনি বললেন, কবুল হজ্জ। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল(সাঃ)বলেন, الإِيْمَانُ بِاللهِ وَحْدَهُ ثُمَّ الْجِهَادُ ثُمَّ حَجَّةٌ بَرَّةٌ تَفْضُلُ سَائِرَ الْعَمَلِ كَمَا بَيْنَ مَطْلَعِ الشَّمْسِ إِلَى مَغْرِبِهَا ‘শ্রেষ্ঠ আমল হলো এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা। অতঃপর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। অতঃপর কবুল হজ্জ। যা সকল আমলের উপর এমন মর্যাদাবান যেমন পূর্ব দিগন্ত ও পশ্চিম দিগন্তের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে।
হাজীগণ আল্লাহর মেহমান
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : وَفْدُ اللهِ ثَلَاثَةٌ: الْغَازِيْ، وَالْحَاجُّ، وَالْمُعْتَمِرُ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর মেহমান হলো তিনটি দল- আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধকারী, হজ্জকারী ও ওমরাহ্কারী। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (সাঃ) বলেন, الْحُجَّاجُ وَالْعُمَّارُ وَفْدُ اللهِ إِنْ دَعَوْهُ أَجَابَهُمْ وَإِنِ اسْتَغْفَرُوهُ غَفَرَ لَهُمْ ‘হজ্জ ও ওমরাহ পালনকারীগণ আল্লাহর মেহমান। তারা দো‘আ করলে তিনি কবুল করেন। তারা ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন। অপর বর্ণনায় রয়েছে, তারা কোন কিছু চাইলে তিনি তা দেন।
ফেরেশতাদের সামনে হাজীদের প্রশংসা
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يَعْتِقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِيْهِ عَبْدًا أَوْ أَمَةً مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِىْ بِهِمُ الْمَلاَئِكَةَ وَيَقُوْلُ مَا أَرَادَ هَؤُلاَءِ؟
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘আরাফার দিন ব্যতীত অন্য কোন দিন আল্লাহ এত অধিক পরিমাণ লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন না। ঐদিন আল্লাহ নিকটবর্তী হন। অতঃপর আরাফাহ ময়দানের হাজীদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন ও বলেন, দেখ ঐ লোকেরা কি চায়, অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘ওরা আল্লাহর মেহমান। আল্লাহ ওদের ডেকেছেন তাই ওরা এসেছে। এখন ওরা চাইবে আর আল্লাহ তা দিয়ে দিবেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ ‘শ্রেষ্ঠ দোআ হলো আরাফাহ দিবসের দোআ।
হজ্জের নিয়তকারীগণ কোন কারণে হজ্জ করতে সক্ষম না হলেও নেকী পাবে
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ خَرَجَ حَاجًّا أَوْ مُعْتَمِرًا أَوْ غَازِيًا ثُمَّ مَاتَ فِيْ طَرِيْقِهِ كَتَبَ اللهُ لَهُ أَجْرَ الْغَازِيْ وَالْحَاجِّ وَالْمُعْتَمِرِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজ্জ, ওমরাহ কিংবা জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হলো এবং রাস্তায় মৃত্যুবরণ করল, আল্লাহ তার জন্য পূর্ণ নেকী লিখে দিবেন।
হজ্জে মৃত্যুবরণকারীগণ ক্বিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠবে
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما قَالَ بَيْنَمَا رَجُلٌ وَاقِفٌ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِعَرَفَةَ، إِذْ وَقَعَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَأَقْصَعَتْهُ أَوْ قَالَ فَأَقْعَصَتْهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: اغْسِلُوْهُ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ، وَكَفِّنُوهُ فِىْ ثَوْبَيْنِ، وَلاَ تُحَنِّطُوْهُ وَلاَ تُخَمِّرُوْا رَأْسَهُ، فَإِنَّ اللهَ يَبْعَثُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُلَبِّيًا-
ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর সঙ্গে আরাফাতে অবস্থান কালে অকস্মাৎ সে তার সওয়ারী হতে পড়ে যান। এতে তাঁর ঘাড় মটকে গেল অথবা রাবী বলেন, ঘাড় মটকে দিল। (যাতে তিনি মারা গেলেন)। তখন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বললেন, তাঁকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও এবং দু’কাপড়ে তাঁকে কাফন দাও; তাঁকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মস্তক আবৃত করবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তাঁকে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উত্থিত করবেন।
হাজীদের প্রতিটি পদচারণায় নেকী অর্জিত হয় ও গুনাহ বিদূরীত হয়
عن اِبْنِ عُمَرَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ طَافَ بِالْبَيْتِ أُسْبُوْعًا لاَ يَضَعُ قَدَمًا، وَلاَ يَرْفَعُ أُخْرَى، إِلاَّ حَطَّ اللهُ عَنْهُ بِهَا خَطِيْئَةً، وَكَتَبَ لَهُ بها حسنة، وَرَفَعَ لَهُ بِهَا دَرَجَةً-
ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর সাতটি ত্বাওয়াফ করবে, এই সময় প্রতি পদক্ষেপে আল্লাহ তার জন্য একটি করে নেকী লিখেন এবং একটি গুনাহ বিদূরীত করেন এবং একগুণ মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।
বায়তুল্লাহ তাওয়াফের ফযীলত
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ مَنْ طَافَ بِالْبَيْتِ وَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَ كَعِتْقِ رَقَبَةٍ-
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে ও শেষে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, সে যেন একটি গোলাম আযাদ করল। তিনি বলেন, তাওয়াফ হলো ছালাতের ন্যায়। তবে এই সময় প্রয়োজনে যৎসামান্য নেকীর কথা বলা যাবে।
হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করার ফযীলত
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مَسْحَ الْحَجَرِ الْأَسْوَدِ، وَالرُّكْنِ الْيَمَانِيِّ يَحُطَّانِ الْخَطَايَا حَطًّا-
ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রুক্নে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদ (কালো পাথর) স্পর্শ করবে, এ দু’টি তার সমস্ত গোনাহ ঝরিয়ে দিবে। তিনি হাজারে আসওয়াদের ব্যাপারে আরো বলেন, وَاللهِ لَيَبْعَثَنَّهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَهُ عَيْنَانِ يُبْصِرُ بِهِمَا وَلِسَانٌ يَنْطِقُ بِهِ يَشْهَدُ عَلَى مَنِ اسْتَلَمَهُ بِحَقٍّ ‘আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন হাজারে আসওয়াদকে উঠাবেন এমন অবস্থায় যে, তার দু’টি চোখ থাকবে, যা দিয়ে সে দেখবে ও একটি যবান থাকবে, যা দিয়ে সে কথা বলবে এবং ঐ ব্যক্তির জন্য সাক্ষ্য দিবে, যে ব্যক্তি খালেছ অন্তরে তাকে স্পর্শ করেছে। রাসূল (সাঃ) আরো বলেন, نَزَلَ الْحَجَرُ الأَسْوَدُ مِنَ الْجَنَّةِ وَهُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ فَسَوَّدَتْهُ خَطَايَا بَنِى آدَمَ ‘হাজারে আসওয়াদ’ প্রথমে দুধের চেয়েও সাদা অবস্থায় জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয়। অতঃপর বনু আদমের পাপ সমূহ তাকে কালো করে দেয়।
রুকনে ইয়ামানী ও মাকামে ইবরাহীম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, إِنَّ الرُّكْنَ وَالْمَقَامَ يَاقُوتَتَانِ مِنْ يَاقُوْتِ الْجَنَّةِ طَمَسَ اللهُ نُوْرَهُمَا وَلَوْ لَمْ يَطْمِسْ نُوْرَهُمَا لأَضَاءَتَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ- ‘রুক্নে ইয়ামানী ও মাকামে ইবরাহীম দু’টি জান্নাতী ইয়াকূত পাথর। আল্লাহ এ দু’টির আলোকে নির্বাপিত করেছেন। যদি তিনি নির্বাপিত না করতেন তাহ’লে এ দু’টির মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী স্থান (পৃথিবী) আলোকিত হয়ে যেত।
অন্যত্র রয়েছে, রাসূল (সাঃ) বলেন, إِنَّ الرُّكْنَ وَالْمَقَامَ مِنْ يَاقُوتِ الْجَنَّةِ، وَلَوْلاَ مَا مَسَّهُما مِنْ خَطَايَا بَنِيْ آدَمَ لَأَضَاءَ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَمَا مَسَّهُما مِنْ ذِي عَاهَةٍ وَلاَ سَقِيمٍ إِلاَّ شُفِيَ ‘রুক্নে ইয়ামানী ও মাকামে ইবরাহীম দু’টি জান্নাতের ইয়াকূত পাথর। যদি আদম সন্তানের গুনাহ এ দু’টিকে স্পর্শ না করত, তাহলে এ দু’টির মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী স্থান (পৃথিবী) আলোকিত হয়ে যেত। আর যদি কোন দৈহিক বা মানসিক রোগী এ দু’টিকে স্পর্শ করে তাহলে তাকে সুস্থতা দান করা হবে।
উল্লেখ্য, পাথরের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। আমরা কেবলমাত্র রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাতের উপর আমল করব। যেমন ওমর ফারূক (রাঃ) উক্ত পাথরে চুমু দেওয়ার সময় বলেছিলেন,
إِنِّىْ لَأَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ مَا تَنْفَعُ وَلاَ تَضُرُّ، وَلَوْلاَ أَنِّيْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عليه وسَلَّمَ يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ،
‘আমি জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র। তুমি কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারো না। তবে আমি যদি আল্লাহর রাসূলকে না দেখতাম তোমাকে চুমু দিতে, তাহলে আমি তোমাকে চুমু দিতাম না। ওমর ফারূক (রাঃ) উক্ত পাথরে চুমু খেয়েছেন ও কেঁদেছেন।
যমযমের পানি পান করার ফযীলত
ত্বাওয়াফ শেষে দু’রাক‘আত ছালাতান্তে মাত্বাফ থেকে বেরিয়ে পাশেই যমযম কুয়া। সেখানে গিয়ে যমযমের পানি বিসমিল্লাহ বলে দাঁড়িয়ে পান করবে ও কিছুটা মাথায় দিবে। যমযমের পানি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, خَيْرُ مَاءٍ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ مَاءُ زَمْزَمَ، وَفِيهِ طَعَامٌ مِنَ الطُّعْمِ، وَشِفَاءٌ مِنَ السُّقْمِ-
ভূপৃষ্ঠে সেরা পানি হলো যমযমের পানি। এর মধ্যে রয়েছে পুষ্টিকর খাদ্য এবং রোগ মুক্তি অন্য বর্ণনায় এসেছে, إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ ‘এটি বরকত মন্ডিত। রাসূল (সাঃ) আরো বলেন, এই পানি কোন রোগ থেকে আরোগ্যের উদ্দেশ্যে পান করলে তোমাকে আল্লাহ আরোগ্য দান করবেন। এটি পানের মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আল্লাহ তোমাকে আশ্রয় দিবেন। আর তুমি এটা পরিতৃপ্তি বা পিপাসা মিটানোর জন্য পান করলে আল্লাহ সেটিই করবেন। রাসূল (সাঃ) যমযমের পানি বহন করে নিয়ে যেতেন। অতঃপর রোগীদের মাথায় ঢালতেন এবং তাদের পান করাতেন। যমযম হলো আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে সৃষ্ট এক অলৌকিক কুয়া। যা শিশু ইসমাঈল ও তাঁর মা হাজেরার জীবন রক্ষার্থে এবং পরবর্তীতে মক্কার আবাদ ও শেষনবী (সাঃ)-এর আগমন স্থল হিসাবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট হয়েছিল।
বায়তুল্লায় ছালাত আদায়ের ফযীলত
عَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : صَلاَةٌ فِى مَسْجِدِى أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيْمَا سِوَاهُ إِلاَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ وَصَلاَةٌ فِى الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَفْضَلُ مِنْ مِائَةِ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيْمَا سِوَاهُ-
জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, অন্যত্র ছালাত আদায়ের চেয়ে আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) ছালাত আদায় করা এক হাযার গুণ উত্তম এবং মসজিদুল হারামে ছালাত আদায় করা অন্য মসজিদে ছালাত অপেক্ষা এক লক্ষ গুণ উত্তম।
হজ্জ্ব কতো প্রকার ও কি কি
হজ্জ্ব কতো প্রকার ও কি কি আপনাদের মধ্যে অধিকাংশই লোক তা জানেন না। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম হলো হজ্জ্ব। আরবি হজ্জ্ব শব্দের অর্থ সংকল্প করা বা ইচ্ছা করা। কুরআনুল কারিমে ১০২ বার হজ শব্দটি উল্লেখ রয়েছে। হজ্জ্ব আর্থিক এবং শারীরিক ইবাদত। তাই আল্লাহ তাআলা আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক ব্যক্তিকে পরিপূর্ণভাবে হজ সম্পাদন করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে হজ্জ্ব অনুষ্ঠিত হয়।
পবিত্র হজ্জ্ব তিন প্রকার যথা তামাত্তু, ইফরাদ ও কিরান। এর মধ্যে সওয়াবের দিক দিয়ে সর্বাধিক উত্তম হলো কিরান, এরপর তামাত্তু, এরপর ইফরাদ। তবে আদায় সহজ হওয়ার দিক থেকে প্রথমে তামাত্তু, এরপর ইফরাদ, এরপর কিরান।
তামাত্তু হজ্জ্ব পালন করা সবচেয়ে সহজ, তাই অধিকাংশ বাংলাদেশি তামাত্তু হজ্জ্ব আদায় করে থাকেন। আর যারা অন্যের বদলি হজ্জ্ব করতে যান বা যাদের অবস্থান মিকাতের মধ্যে, তারা সাধারণত ইফরাদ হজ করেন। এছাড়া কিছুসংখ্যক হাজি কিরান হজ করেন, যাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য।
হজ্জ্বে কিরানঃ মিকাত থেকে একসঙ্গে উমরাহ ও হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধাকে কিরান হজ্জ্ব বলা হয়। কিরান হাজিগণকে মক্কায় পৌঁছে প্রথমে উমরাহ করতে হবে। অতঃপর ইহরাম অবস্থায় হজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকবেন এবং ১০ জিলহজ দমে শুকরিয়া তথা কোরবানি না করা পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায়ই থাকতে হবে। কিরান হজ্জ্বের ক্ষেত্রে তাওয়াফে কুদুম করা সুন্নত। তাই উমরাহ ও হজ্জ্বের মধ্যবর্তী যেকোনো সময় একজন হাজী তাওয়াফে কুদুম করবেন; সম্ভব হলে সায়ীও করে নেবেন।
মনে রাখতে হবে, যদি কোনো কিরান হাজি তাওয়াফের সঙ্গে সায়ী করেন, তবে তাকে ১০ জিলহজ ফরজ তাওয়াফের পর আর সায়ী করতে হবে না। কেননা, উমরাহ ও হজের বিধানে একবার করে সায়ী করা ওয়াজিব। এ ছাড়া ৮ জিলহাজ্জ্ব থেকে ১২ জিলহাজ্জ্ব পর্যন্ত হজ্জ্বের আহকামসমূহ সব হাজির জন্য এক ও অভিন্ন।
কিরান হজ্জ্ব দু’ভাবে আদায় করা যায়
ক) মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধার সময় একই সাথে হজ ও উমরার ইহরাম বাঁধার জন্য لَبَّيْكَ عُمْرَةً وَحَجًّا (লাব্বাইকা উমরাতান ওয়া হজ্জান) বলে তালবিয়া পাঠ শুরু করা। তারপর মক্কায় পৌঁছে প্রথমে উমরা আদায় করা এবং ইহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করা। অতঃপর হাজ্জ্বের সময় ৮ যিলহজ ইহরামসহ মিনা-আরাফা-মুযদালিফায় গমন এবং হজের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।
খ) মীকাত থেকে শুধু উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা। পবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর উমরার তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে হজের নিয়ত উমরার সাথে যুক্ত করে নেয়া। উমরার তাওয়াফ-সাঈ শেষ করে ইহরাম অবস্থায় হাজ্জ্বের অপেক্ষায় থাকা এবং ৮ যিলহজ ইহরামসহ মিনায় গমন ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পাদন করা।
হজ্জ্বে ইফরাদঃ মিকাত থেকে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধাকে ইফরাদ হজ্জ্ব বলে। ইফরাদ হাজিগণ পবিত্র মক্কায় পৌঁছে ইহরাম অবস্থায় হাজ্জ্বে জন্য অপেক্ষা করতে থাকবেন। অতঃপর মূল হজ শুরু হওয়ার আগে যেকোনো একদিন সুন্নত তাওয়াফ তাওয়াফে কুদুম করবেন, সম্ভব হলে সায়ীও করে নেবেন। কিরান হজের মতো এ ক্ষেত্রেও তাওয়াফে কুদুমের সঙ্গে সায়ী করে নিলে ১০ জিলহজ ফরজ তাওয়াফের পর আর সায়ী করতে হবে না।
আর ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত হজ্জ্ব বাকি আহকাম সবার জন্য এক ও অভিন্ন। শুধু পার্থক্য হলো, ১০ জিলহজ কঙ্কর নিক্ষেপের পর কিরান ও তামাত্তু হাজিগণকে হজের ওয়াজিব অঙ্গ দমে শুকরিয়া তথা কোরবানি করতে হবে, কিন্তু ইফরাদ হাজিগণকে কোরবানি করতে হবে না।
হজ্জ্বে তামাত্তুঃ মিকাত থেকে শুধু উমরাহর নিয়তে ইহরাম বেঁধে পবিত্র মক্কায় পৌঁছে উমরাহ করার পর ইহরাম খুলে স্বাভাবিক অবস্থায় হজের জন্য অপেক্ষা করা এবং ৮ জিলহজ ইহরাম বেঁধে হজ সম্পন্ন করাকে তামাত্তু হজ্জ্ব বলে। ৮ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত কিরান ও ইফরাদ হজ্জ্বে মতো তামাত্তু হজের সব বিধান এক ও অভিন্ন। তবে পার্থক্য হলো, তামাত্তু হজ্জ্বে কিরান, ইফরাদের মতো তাওয়াফে কুদুম নেই।
তামাত্তু হজ্জ্ব তিনভাবে আদায় করা যায়
ক) মীকাত থেকে উমরার ইহরাম বেঁধে মক্কায় গিয়ে তাওয়াফ সাঈ করে মাথা মুণ্ডন অথবা চুল ছোট করে হালাল হয়ে যাওয়া এবং হজ্জ্ব পর্যন্ত মক্কাতেই অবস্থান করা। ৮ যিলহজ হজের ইহরাম বেঁধে হজ্জ্বের কার্যক্রম সম্পন্ন করা।
খ) মীকাত থেকে উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কা গমন করা। উমরার কার্যক্রম তথা তাওয়াফ, সাঈ করার পর কসর-হলক সম্পাদন করে হালাল হয়ে যাওয়া। হজ্জ্বের পূর্বেই যিয়ারতে মদীনা সেরে নেয়া এবং মদীনা থেকে মক্কায় আসার পথে যুল-হুলাইফা বা আবইয়ারে আলী থেকে উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কায় আসা। অতপর উমরা আদায় করে কসর করে হালাল হয়ে যাওয়া; তারপর ৮ যিলহজ হজের জন্য নতুনভাবে ইহরাম বেঁধে হজ্জ্ব আদায় করা।
গ) ইহরাম না বেঁধে সরাসরি মদীনা গমন করা। যিয়ারতে মদীনা শেষ করে মক্কায় আসার পথে যুল-হুলাইফা বা আবইয়ারে আলী থেকে উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা অতপর মক্কায় এসে তাওয়াফ, সাঈ ও কসর-হলক করে হালাল হয়ে যাওয়া। এরপর ৮ যিলহজ হজ্জ্বের ইহরাম বাঁধা।
ফরজ হজ্জ্ব না করার পরিণাম
সামর্থ্য থাকার পরও হজ্জ্ব না করার পরিণাম ভয়াবহ। ফরজ হজ্জ্ব ত্যাগ করলে ইহুদি-নাসারার মতো মৃত্যু হবে বলে হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন- من أطاق الحج فلم يحج فسواء عليه مات يهوديا أو نصرانيا ‘যে ব্যক্তি হজ করার সামর্থ্য রাখে, তবুও হজ করে না, সে ইহুদি হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খ্রিস্টান হয়ে, তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই।’ (ইবনে কাসির: ১/৫৭৮)
আর কেউ যদি হজ্জ্ব অস্বীকার করে বা কোনো ধরনের অবহেলা প্রদর্শন করে তবে সে আল্লাহর জিম্মার বাইরে বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا، ومن كفر فان الله غنى عن العلمين ‘মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের ওপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে, তাহলে জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)
এছাড়াও হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তাআলা হজ্জ্ব না করার পরিণতি সম্পর্কে বলেছেন, ‘যে বান্দাকে আমি দৈহিক সুস্থতা দিয়েছি এবং আর্থিক প্রাচুর্য দান করেছি, অতঃপর (গড়িমসি করে) তার পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে যায় অথচ আমার দিকে (হজব্রত পালন করতে) আগমন করে না, সে অবশ্যই বঞ্চিত।
হজ্জ্বের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত গুলো কী কী
হজ্জ্বের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতগুলো কী কী সে সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক। হজ্জ্ব হলো ইসলামের মৌলিক পাঁচ ভিত্তির অন্যতম। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের ওপর হজ ফরজ। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর তরফ থেকে সেসব মানুষের জন্য হজ ফরজ, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে। হজ পালনের জন্য ৮ জিলহজ থেকে শুরু করে ১২ জিলহজ পর্যন্ত বেশ কিছু আমল করতে হয়, যার কিছু সুন্নত, কিছু ওয়াজিব এবং কিছু ফরজ।
হজ্জ্বের ফরজ সমূহঃ
১. ইরামের নিয়ত বা ইচ্ছা করা, যে ব্যক্তি হজের নিয়ত করবে না তার হজ হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى
নিশ্চয় আমলসমূহ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেকের জন্য তাই হবে, যা সে নিয়ত করে।
২. অকুফে আরাফা করা, ৯ জিলহজ জোহর থেকে ১০ জিলহজ ফজরের আগপর্যন্ত যেকোনো সময় আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা
৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা, ১০ জিলহজ ভোর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো সময় কাবাঘর তাওয়াফ বা সাতবার প্রদক্ষিণ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلْيَطَّوَّفُوا بِالْبَيْتِ الْعَتِيقِ আর তারা যেন প্রাচীন ঘরের তাওয়াফ করে।
হজ্জ্বের ওয়াজিব সমুহঃ
১. আরাফা থেকে মিনায় ফেরার পথে মুজদালিফা নামের স্থানে ১০ জিলহজ ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কিছু সময় অবস্থান করা।
২. সাফা ও মারওয়া সায়ি করা বা দৌড়ানো
৩. রমিয়ে জিমার বা ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ জামারায় শয়তানকে পাথর মারা। ১০ যিলহজ জামরাতুল আকাবায় (বড় জমারায়) কঙ্কর নিক্ষেপ করা। তাশরীকের দিনসমূহ যথা, ১২, ১২ এবং যারা ১৩ তারিখ মিনায় থাকবেন, তাদের জন্য ১৩ তারিখেও। যথাক্রমে ছোট, মধ্য ও বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে জামরাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন। জাবের রা. বলেন,
رَأَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَرْمِى عَلَى رَاحِلَتِهِ يَوْمَ النَّحْرِ وَيَقُولُ «لِتَأْخُذُوا مَنَاسِكَكُمْ فَإِنِّى لاَ أَدْرِى لَعَلِّى لاَ أَحُجُّ بَعْدَ حَجَّتِى هَذِهِ
আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি কুরবানীর দিন তিনি তাঁর বাহনের ওপর বসে কঙ্কর নিক্ষেপ করছেন এবং বলেছেন, তোমরা তোমাদের হজের বিধান জেনে নাও। কারণ আমি জানি না, সম্ভবত আমার এ হজের পর আমি আর হজ করতে পারব না।
৪. তামাত্তু ও কিরান হজে দমে শোকর করা তথা হজের কোরবানি করা।
৫. মাথার চুল মুণ্ডানো বা কেটে ইহরাম সমাপ্ত করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করার আদেশ দিয়ে বলেন, وَلْيُقْصِرْ ، وَلْيُحِلل অর্থাৎ সে যেন মাথার চুল ছোট করে এবং হালাল হয়ে যায়। আর তিনি মাথা মুণ্ডনকারিদের জন্য তিনবার মাগফিরাতের দো‘আ করেছেন এবং চুল ছোটকারিদের জন্য একবার মাগফিরাতের দো‘আ করেছেন।
৬. বিদায়ী তাওয়াফ করা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায়ী তাওয়াফের আদেশ দিয়ে বলেন, لاَ يَنْفِرَنَّ أَحَدٌ حَتَّى يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِ بِالْبَيْت বাইতুল্লাহ্র সাথে তার শেষ সাক্ষাত না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন না যায়।
ইবন আব্বাস রা. বলেন, أُمِرَ النَّاسُ أَنْ يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِمْ بِالْبَيْتِ إِلاَّ أَنَّهُ خُفِّفَ عَنِ الْمَرْأَةِ الْحَائِضِ লোকদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তাদের শেষ কাজ যেন হয় বাইতুল্লাহ্র সাক্ষাত। তবে তিনি ঋতুবতী মহিলার জন্য ছাড় দিয়েছেন। উল্লেখ্য, যে এসবের একটিও ছেড়ে দেবে, তার ওপর দম ওয়াজিব হবে অর্থাৎ একটি পশু যবেহ করতে হবে।ইবন আব্বাস রা. বলেন, مَنْ نَسِىَ شَيْئًا مِنْ نُسُكِهِ أَوْ تَرَكَهُ فَلْيُهْرِقْ دَمًا যে ব্যক্তি তার হজের কোন কাজ করতে ভুলে যায় অথবা ছেড়ে দেয় সে যেন একটি পশু যবেহ করে।
৭. মদিনা শরিফ রওজাতুন নবী (সাঃ) জিয়ারত করা।
হজ্জ্বের সুন্নত সমুহঃ
১. তাওয়াফে কুদুম বা প্রথম তাওয়াফ করা (ইফরাদ ও কিরান হজকারীর জন্য)
২. তাওয়াফের সময় রমল করা (প্রথম তিন চক্কর সৈনিকের মতো বীরদর্পে চলা)
৩. খলিফা অথবা তাঁর প্রতিনিধি তিন দিন তিন স্থানে খুতবা প্রদান করা বা ভাষণ দেওয়া। (৭ জিলহজ কাবা শরিফের হারাম শরিফে, ৯ জিলহজ আরাফায় মসজিদে নামিরাতে, ১১ জিলহজ মিনাতে।)
৪. আট জিলহজ মক্কা শরিফ থেকে মিনাতে গিয়ে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা এবং রাতে সেখানে অবস্থান করা
৫. ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফাতের দিকে রওনা হওয়া
৬. অকুফে আরাফা বা আরাফাতে অবস্থানের জন্য সকালে (দুপুরের পূর্বে) গোসল করা
৭. ৯ জিলহজ আরাফাতে অবস্থান করে সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার দিকে রওনা করা। ৯. ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ মিনাতে রাত যাপন করা।
৮. মিনা থেকে মক্কা শরিফ প্রত্যাবর্তনের সময় ‘মুহাচ্ছার’ নামের জায়গায় কিছু সময় অবস্থান করা।
যে কাজ হজ্জ ও উমহরাহকে বাতিল করে দেয়
মুহরিম যদি তার আরাফায় অবস্থান শেষ হওয়ার আগে যৌন সহবাস করেন, এ সহবাস তার ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত হোক, জেনে হোক, না জেনে হোক, তবে তার হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। শরী'আতে যার কোনো ক্ষতিপূরণ দানের ব্যবস্থা নেই। এমতাবস্থায় তার কর্তব্য হলো, অন্যান্য হাজীগণ যেভাবে হজ্জের বাকী কাজগুলো আঞ্জাম দেয়, তিনিও সেসব কাজ সেভাবে আঞ্জাম দিবেন।
উপরন্তু একটি বক্রী জবেহ করবেন। অতঃপর পরবর্তী বছর তিনি বাধ্যতামূলকভাবে উক্ত হজ্জের কাজ আদায় করবেন। অবশ্য কেউ যদি আরাফায় অবস্থানের পর সহবাস করে, তবে তার হজ্জ বিনাশ হবে না কিন্তু তার উপর একটি উট কোরবানী ওয়াজিব হবে। আর যদি কেউ কসরের পর এবং তাওয়াফে বিদার পূর্বে সহবাস করেন তার উপর একটি বকরী ওয়াজিব হবে। উমরার ক্ষেত্রে কাবাগৃহ তাওয়াফের চার প্রদক্ষিণ পূর্ণ হওয়ার পরে সহবাস করেন তাহলে উমরা নষ্ট হবে না কিন্তু তার উপর একটি দম ওয়াজিব হবে।
হজ্জ একটি সামষ্টিক ইবাদতের নাম। আসলে ইসলামের প্রতিটি ইবাদতই সামষ্টিক অর্থাৎ কতকগুলো আদেশ ও নিষেধের সমষ্টি মাত্র। এ কথা নামায ও রোযার ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য, হজ্জের ক্ষেত্রেও তেমন। আর ইসলামের প্রতিটি ইবাদতে আদেশ পালন করা যেমন পর গুরুত্বপূর্ণ নিষেধগুলো থেকে বেঁচে থাকাও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ । ইহ্রাম অবস্থায় যে কাজগুলো থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব তা নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ
১। পুরুষের জন্য সেলাই করা কোনো পোষাক পরিধান করা এবং তাদের মাথা আবৃত করা। মহিলাগণ সেলাই করা পোষাক পরিধান করতে পারবেন, কিন্তু মুখমণ্ডল এমন কিছু দিয়ে ঢাকতে পারবেন না যা চামড়ার সাথে লেগে থাকে। সকলের জন্যই সুগন্ধিযুক্ত কাপড় ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং লাল কিংবা কালো রংয়ের কাপড় ব্যবহার করা ঠিক নয়। তবে মহিলার কালো রংয়ের বোরখা পরিধান করতে পারবেন।
২। সৌন্দর্য চর্চা করা, যে কোনো রকমের সুগন্ধি ও প্রসাধনী ব্যবহার করা, তেল ব্যবহার করা এবং খিযাব লাগানো। এছাড়া মাথা ও দাড়ি সাবান প্রভৃতি দিয়ে ধৌত করা। -(আসান ফিকাহ)
৩। শরীরের যেকোন স্থানের চুল উঠানো, কাটা বা মুন্ডন করা এবং হাত ও পায়ের নখ কাটা। অযু ও গোসলের সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, যাতে মর্দনের কারণে চুল উঠে না যায়।
৪। যে কোনো ধরনের যৌন সহবাস কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। সহবাস হজ্জকে বিনষ্ট করে দিতে পারে। এছাড়া স্ত্রী-পুরুষের আলিঙ্গন, চুম্বন, যৌন বিষয়ক বাক্যালাপ কিংবা অন্য যে কোনো রকমের যৌন আচরণ নিষিদ্ধ। ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর মতে ইহ্রাম অবস্থায় বিবাহ করা অথবা কাউকে বিবাহ দেয়া জায়েয, কিন্তু সহবাস করা জায়েয নয়। ইমাম মালিক (রহ)-এর মতে ইহরাম অবস্থায় বিবাহ নিষিদ্ধ, করলে উক্ত বিবাহ শুদ্ধ হবে না।
৫। শিকারের উপযোগী এবং ডাঙ্গায় বিচরণকারী পশু-পক্ষী শিকার করা ও জবেহ্ করা এবং শিকারের উদ্দেশ্যে কোনো প্রাণী কাউকে দেখিয়ে দেয়া বা শিকারে কোনো প্রকার সহযোগিতা করা। শিকারে সহযোগিতা করার অর্থ হলোঃ শিকার কোথায় পাওয়া যাবে তা বলে দেয়া বা শিকার কোনো দিকে গিয়েছে তা দেখিয়ে দেয়া বা শিকারীকে তীর, তলোয়ার, লাঠি, ছুরি, চাকু, বন্দুক, গুলী ইত্যাদি বা অন্য কোনো শিকার করার উপকরণ দিয়ে সাহায্য করা।
এছাড়া শিকারকে তাড়ানো, উহার ডিম ভাঙ্গা, পালক ও ডানা ছিড়ে ফেলা, ডিম অথবা শিকার, বেচা-কোনো করা, শিকারের দুধ দোহন করা শিকারের ডিম অথবা গোস্ত রান্না করা ইত্যাদি সবই নিষিদ্ধ। এমনকি মুর্রিম যদি কোনো প্রাণী শিকার করে তাহলে তা রান্না করা ও খাওয়া সকলের জন্য হারাম। তবে যদি গায়ের মুর্রিম কোনো ব্যক্তি হিল্ল এলাকায় কোনো প্রাণী শিকার করে এবং তাতে মুর্রিম ব্যক্তির কোনো ভূমিকা না থাকে, তাহলে উহার গোত রান্না করা ও ভক্ষণ করা মুরিমের জন্য জায়েয। অবশ্য মুর্রিম গৃহপালিত পশু-পাখি জবেহ্ ও রান্না করতে পারবেন। এ ছাড়া মুরিম হিংস্র জীব-জন্তু যার থেকে আক্রমণের ভয় থাকে তাতে হত্যা করতে পারবেন। তবে যদি আক্রমণের ভয় না থাকে তাহলে এগুলোকেও হত্যা করা নিষেধ। এছাড়া মুহরিমের জন্য নিজের শরীর বা কাপড় থেকে উকুন মারা নিষিদ্ধ।
৬। মক্কার হারাম এলাকায় জন্মানো তৃণ-ঘাস, গাছ-পাতা ইত্যাদি উপড়ে ফেলা, কর্তন করা, ছিন্ন করা বা এগুলো যে কোনো ধরনের ক্ষতিসাধন করা মুহরিম এবং মুরিম নয় এমন সকলের জন্যই হারাম
৭। কোনোরূপ অশ্লীল কথা, অন্যায় কাজ এবং কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ করা নিষেধ। এমনকি, সামান্য কথা কাটাকাটি করাও উচিত নয়। এমনকি হজ্জযাত্রীর সামান্য পরিমাণ কষ্ট হতে পারে এরূপ সম্ভাবনা থাকলে, মুস্তাহাব আমলও ছেড়ে দেয়া উত্তম।
হজ্জের ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কার্যাবলী
হজ্জের ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কার্যাবলী সম্পর্কে মহা পবিত্র গ্রন্থ কোরআনুল হাকীমে ইরশাদ হয়েছে :
الحد اشهر معلومات فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الحَج فَلا رَفَتْ ولا فسوق ولا جدال في الحج হজ্জ হয় নির্ধারিত মাসে। অতঃপর যে কেউ এই মাসগুলোতে হজ্জ করা স্থির করে, তার জন্য হজ্জের সময়ে রাফাস, অন্যায় আচরণ ও কলহ বিবাদ বিধেয় নয়। (সূরা বাকারা। ইরামকারীদের জন্য নিষিদ্ধ কাজ-কর্মের বর্ণনা দিতে গিয়ে পবিত্র কোরআনের উক্ত আয়াতে যে তিনটি শব্দ বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে সেগুলো হলোঃ
১. রাফাস
২. ফুসূক ও
৩. জিদাল
ইহরাম অবস্থায় এসব বিষয় থেকে বিরত থাকা একান্ত কর্তব্য অর্থাৎ ওয়াজিব।
১. রাফাসঃ রাফাস একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ, যাতে সহবাস ও তার আনুষাঙ্গিক কর্ম নারী-পুরুষের ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা, এমনকি খোলাখুলিভাবে সহবাস সংক্রান্ত আলাপ- আলোচনাও অন্তর্ভুক্ত। ইহরাম অবস্থায় এর সবকয়টিই হারাম।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে আলী ইবনে আবূ তালহা বর্ণনা করেন, ‘রাফাস’ হল স্ত্রীদের সঙ্গে মাখামাখি করা, চুম্বন দেয়া, আলিঙ্গন করা এবং যেসব প্রকাশ্য অশ্লীল বাক্য দ্বারা যৌন মিলনের আবেদন প্রকাশ পায় তা বলা। আউস (রহ) বলেন, ‘রাফাস' হল স্ত্রীকে এরূপ বলা যে, ইহরাম গেলেই তোমার সঙ্গে সহবাস করব।
২. ফুসুকঃ কতকগুলো কাজ সাধারণ অবস্থায় না-জায়েয ও নিষিদ্ধ নয় কিন্তু ইরামের কারণে সেগুলো না-জায়েয ও নিষিদ্ধ। এগুলোর সংখ্যা হলো ছয়টি। নিম্নে তা দেয়া হলঃ
ক। সহবাস ও এর আনুষাঙ্গিক যাবতীয় আচরণ। এমনকি, খোলাখুলিভাবে সহবাস সংক্রান্ত আলোচনা করা।
খ। স্থলের জীবজন্তু শিকার করা বা শিকারীকে দেখিয়ে দেয়া।
গ। নখ বা চুল কাটা।
ঘ। সুগন্ধি ব্যবহার করা। এই চারটি বিষয় স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্যই ইহরাম অবস্থায় হারাম বা নিষিদ্ধ। অবশিষ্ট দু'টি বিষয় পুরুষের সাথে সম্পৃক্ত।
ঙ। সেলাই করা কাপড় পরিধান করা এবং
চ। মাথা মুখমন্ডল আবৃত করা পুরুষদের জন্য জায়েয নয়। আলোচ্য ছয়টি বিষয়ের মধ্যে সহবাস যদিও ‘ফুসুক’ শব্দের অন্তর্ভুক্ত, তথাপি পবিত্র কোরআনে একে ‘রাফাস' শব্দের দ্বারা আলাদাভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। এটা এজন্য যে, ইরাম অবস্থায় এই কাজ থেকে বিরত থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৩. জিদালঃ ‘জিদাল' শব্দের অর্থ ‘একে অপরকে পরাস্ত করার চেষ্টা করা' অর্থাৎ সাধারণভাবে কলহ-বিবাদ করাকে ‘জিদাল' বলা হয়। এ শব্দটিও অতি ব্যাপক। কোনো কোনো মুফাসীর এ শব্দের ব্যাপক অর্থই গ্রহণ করেছেন। হযরত ইবনে ওমর (রা) বলেন,-এর মর্মার্থ হলো, পরস্পর ঝগড়া ও গালাগালি করা।
তাই কেউ কেউ ‘ফুসূক’ ও ‘জিদাল' শব্দদ্বয়কে সাধারণ অর্থে ব্যবহার করে এই অর্থ নিয়েছেন যে, ‘ফুসুক’ ও ‘জিদাল’ সর্বক্ষেত্রেই পাপ ও নিষিদ্ধ; কিন্তু ইহ্রাম অবস্থায় এর পাপ আরো অধিক। পবিত্র দিনগুলোতে এবং পবিত্র স্থানে, যেখানে কেবল আল্লাহ্ ইবাদতের জন্য আগমন করা হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত ‘লাব্বাইকা' অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ্! উপস্থিত' বলা হচ্ছে।
উপরন্তু ইরামের পোশাক যাদেরকে সর্বদা এ কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, তোমরা এখন নিরবচ্ছিন্ন ইবাদতে নিয়োজিত। এমতাবস্তায় ঝগড়া-বিবাদ করা নিশ্চয়ই গুরুতর অন্যায়, যা আল্লাহ তা'আলার চরমতম অবাধ্যতার বহিঃপ্রকাশ।
সুতরাং আগের যাবতীয় গুনাহ্ মাফ করানোই যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে ঝগড়া-বিবাদ সহ সকল অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে আজ এবং আগামী দিনগুলোতে অবশ্যই সকলকে বিরত থাকতে হবে। হাদীসের অর্থ অনুযায়ী এর জন্য কোনো বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। আর যত গর্হিত কাজের নাম উল্লেখ আছে তার প্রায় সব কয়টি দিয়েই কাউকে কষ্ট না দেয়া হয়।
ইহরাম ও হজ্জের মাকরূহ বিষয়াবলী
ইহরাম ও হজ্জেের মাকরুহ কতকগুলো নিষিদ্ধ বিষয় আছে যেগুলো থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুহরিমের জন্য ওয়াজিব। এসব নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর বর্ণনা পরবর্তীতে 'ইহরাম অবস্থায় ও হজ্জে নিষিদ্ধ কার্যাবলী' অধ্যায়ে করা হয়েছে । শরীয়াতের হুকুম মুতাবিক ঐ সকল নিষিদ্ধ কাজের যে কোনো একটি করা হলে 'দম; বা বিনিময় প্রদান করা ওয়াজিব হয়। এছাড়াও কতকগুলো বিষয় রয়েছে যা সাধারণ অবস্থায় জায়েয বা মুবাহ, কিন্তু ইহরাম অবস্থায় মাকরূহ।
অবশ্য এসব মাকরূহ কাজ করলে কোনো কিছু ওয়াজিব হয় না। কিন্তু এগুলো থেকে বেঁচে থাকা উত্তম। মকবূল হজ্জ করতে চাইলে সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতিও সকলের লক্ষ্য রাখতে হবে এবং মাকরূহ বিষয় থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। এমন কতগুলো মাকরূহ বিষয় যা নিম্নে আলোচনা করা হলো। যথাঃ
১। অযু বা গোসল ছাড়া ইহরাম বাঁধা।
২। ইহরামে তালবিয়া পাঠ না করা।
৩। তালবিয়া পাঠরত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া।
৪। খাদ্যে সুগন্ধিদ্রব্য মিশানোর পর সে খাদ্য রান্না করা না হলে এবং এমতাবস্থায় তাতে সুগন্ধির প্রাধান্য না থাকলেও তা খাওয়া।
৫। পানের সাথে লং, এলাচি, সাদাপাতা ও যেকোন রকমের জর্দা তাতে সুগন্ধির প্রাধান্য থাকলেও তা খাওয়া।
৬। মাথায় আঠা বা অন্য কোনো বস্তু হালকাভাবে বা অল্প পরিমাণে হলেও লাগানো।
৭। চপ্পল না থাকলে বিশেষভাবে মোজাকে কেটে পরিধান করা যায়, কিন্তু চপ্পল থাকা অবস্থায় তা পরিধান করা।
৮। তাওয়াফে কুদূম না করা।
৯ । শরীর থেকে ময়লা দূর করা এবং মাথা বা দাঁড়ি বা শরীর সাবান ইত্যাদি দ্বারা ধৌত করা।
১০ । মাথা বা দাঁড়ি চিরুনী দ্বারা আচঁড়ানো।
১১ । দাঁড়ি খিলাল করা।
১২। চাদর গিরা দিয়ে কাঁধের উপর বাঁধা বা চাদর ও লুঙ্গিতে গিরা বা রশি ইত্যাদি দ্বারা বাঁধা।
১৩। চাদর বা লুঙ্গিতে সূই বা আলপিন বা ক্লিপ ইত্যাদি লাগানো অথবা সূতা বা দড়ি দিয়ে বাঁধা।
১৪ । সুগন্ধি বিক্রেতার দোকানে ঘ্রাণ নেয়ার উদ্দেশ্যে বসা।
১৫। সুগন্ধযুক্ত ফল বা ঘাসের ঘ্রাণ নেয়া বা তা স্পর্শ করা।
১৬। কা'বা শরীফের গিলাফের নীচে এমনভাবে দাঁড়ানো যাতে তা মুখে বা
মাথায় লেগে যায়।
১৭। নাক, থুতনী ও গাল কাপড় দিয়ে আবৃত করা, তবে হাত দিয়ে ঢাকা যায়।
১৮ । বালিশের উপর মুখ রেখে উপুড় হয়ে শয়ন করা।
১৯ । নিজের স্ত্রীর লজ্জাস্থান কামভাব নিয়ে দেখা।
২০ । জুব্বা, চোগা ইত্যাদি কাঁধের উপর মেলে রাখা।
২১ । ধুপ-ধুনা দেয়া কাপড় পরিধান করা।
২২। খুতবা বা ফরয নামাযের জামায়াতের সময় তওয়াফ করা।
২৩ । তাওয়াফের ওয়াজিব নামায তাওয়াফের পরপর আদায় না করে বিলম্ব করা।
২৪ । ধূমপান করা বা কারো ধূমপান নাকে আসতে পারে এমন জায়গায় যাওয়া বা বসা।
২৫। দাঁতের গোড়ায় বা মাড়িতে কিংবা মুখের ভিতরে গুল ইত্যাদি দেয়া।
হজ্জ্বের দোয়া ও দোয়া কবুলের পুণ্যময় স্থানসমূহ
হজ্জ্বের সফর পুরোটাই দোয়া কবুলের সময়। হজ্জ্ব বা ওমরাহর জন্য ইহরাম নিয়ত করা থেকে শুরু করে হজ ও ওমরাহ সম্পন্ন করে বাড়িতে ফিরে আসার পরও ৪০ দিন ধরে হাজির দোয়া কবুল হতে থাকে। হজ্জ্বের সফরে এমন কিছু সময় ও স্থান রয়েছে, যে সময় ও স্থানে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
হজ্জ্বের দোয়াঃ لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ ، إِنَّ الْحَمْدَ والنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكُ ، لَا شَرِيكَ لَكَ লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক্, লা শারিকা লাক।
অর্থাৎ হাজির, আমি আপনার দরবারে, হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির, আপনার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির; নিশ্চয় সব প্রশংসা আপনার জন্য, সব নিয়ামত আপনার প্রদত্ত, আপনার রাজত্বে আপনার কোনো শরিক নেই।
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)। দোয়া ইবাদতের সার। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ইবাদতের মগজ। তিনি আরও বলেছেন, দোয়াই ইবাদত (বুখারি ও মুসলিম)।’ নবী করিম (সাঃ) আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দোয়া করে না, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন (তিরমিজি, খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ৪৫৬, হাদিস: ৩৩৭৩)।
দোয়া কবুলের পুণ্যময় স্থানসমূহঃ আল–কোরআনের সূচনাতেই দোয়া শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে: ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাইন (আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য চাই। সুরা-১ ফাতিহা, আয়াত: ৪।)’ হজের সফর পুরোটাই দোয়া কবুলের সময়। হজ বা ওমরাহর জন্য ইহরাম নিয়ত করা থেকে শুরু করে হজ ও ওমরাহ সম্পন্ন করে বাড়িতে ফিরে আসার পরও ৪০ দিন ধরে হাজির দোয়া কবুল হতে থাকে।
হজের সফরে এমন কিছু সময় ও স্থান রয়েছে, যে সময় ও স্থানে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যে স্থানগুলোতে আগেকার নবী-রাসুলদের দোয়া কবুল হয়েছিল বলে বর্ণিত আছে, সেখানে নবী করিম (সাঃ), সাহাবায়ে কেরাম ও অলি-আউলিয়াদের দোয়া কবুল হয়েছিল। সেসব জায়গায় দোয়া করা বাঞ্ছনীয়। মক্কা শরিফের সব স্থানে দোয়া কবুল হয়।
কাবা ও তার সংলগ্ন দোয়া কবুলের স্থানগুলো হলোঃ হারাম শরিফ, মসজিদুল হারাম, কাবা শরিফ, হাতিমে কাবা, মিজাবে রহমত, হাজরে আসওয়াদ, রোকনে হাজরে আসওয়াদ, রোকনে ইরাকি, রোকনে শামি, রোকনে ইয়ামনি ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান, মুলতাজিম, কাবার দরজা, মুস্তাজার, মাকামে ইব্রাহিম, জমজম কূপ ও মাতাফ।
তাওয়াফের প্রতি চক্করের শেষে পড়তে হয়ঃ রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাসানা, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানা ওয়া ক্বি না আজাবান নার। অর্থাৎ হে আল্লাহ, ‘আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখিরাতেও কল্যাণ দিন ও দোজখের আগুন থেকে আমাদের রক্ষা করুন। সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২০১।
আরাফাত, জাবালে রহমত ও মসজিদে নামিরায় দোয়া কবুল হয়ঃ আরাফাত ময়দানে হজরত আদম (আ.)-এর সঙ্গে হজরত হাওয়া (আঃ)-এর পুনর্মিলন হয় এবং তাঁরা নিজেদের ভুলের জন্য সেখানে আল্লাহ তাআলার দরবারে মোনাজাত করেন এবং তা কবুল হয়। সে জন্য হাজিরা এ স্থানে সমবেত হয়ে দোয়া করেন: রাব্বানা জালামনা আনফুছানা, ওয়া ইন লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা; লানাকুনান্না মিনাল খসিরিন।
অর্থাৎ, হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নফসের প্রতি জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন ও দয়া না করেন, অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ২৩।
মুজদালিফা, মিনা ও মসজিদে খায়েফ দোয়া কবুলের ঐতিহাসিক স্থানঃ মসজিদে খায়েফ মিনা প্রান্তরে অবস্থিত। এখানে আদিকাল থেকে আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত ৭০ জন পয়গাম্বর (আ.) আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করেছেন। জামরাত বা পাথর মারার স্থান মিনার পাশেই অবস্থিত। এগুলো ছোট শয়তান (জোমরায়ে উলা), মেজ শয়তান (জোমরায়ে উস্তা), বড় শয়তান (জোমরায়ে আকাবা) নামে পরিচিত।
হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানির পথে এ স্থানে শয়তান বাধা সৃষ্টি করলে তিনি পাথর ছুড়ে তাকে বিতাড়িত করেন। এখানেও দোয়া কবুল হয়। মুমিনের সব দোয়া সব সময় কবুল হয়। হজের পর হাজি যত দিন গুনাহমুক্ত থাকবেন, তত দিন তাঁর দোয়া কবুল হতে থাকবে, ইনশা আল্লাহ।
হজ্জ্ব ও উমরাহ হজ্জ্বের সকল দোয়া সমূহ
একজন মুমিন মাত্রই দিদারে বাইতুল্লাহ ও জিয়ারতে মদিনার স্বপ্ন লালন করে থাকেন। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ঘরের পবিত্র স্পর্শ ও প্রিয় নবীজীর রওজা শরিফে সালাম জানানোর পবিত্র বাসনায় ঝড় ওঠে মুমিন বান্দার হৃদয়রাজ্যে। অবশেষে প্রতীক্ষার প্রহর কাটিয়ে একসময় ডাক আসে আল্লাহর ঘরে হাজিরা দেওয়ার। সেই ডাকে লাব্বাইক বলে আমরা হাজিরা দিই পবিত্র কাবার সামনে। কিন্তু বিভিন্ন জায়গার গুরুত্বপূর্ণ দোয়া মুখস্থ না থাকায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে না প্রেম ও পুণ্যে ভরা আমাদের পবিত্র হজ। হজ্জ ও উমরাহর সকল দোয়া
হজ্জ্ব ও উমরাহর সকল দোয়া
১. পরিবার ও আত্মীয়দের থেকে বিদায় নিয়ে ঘর হতে বের হওয়ার সময় এই দোয়া পড়ুন-
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি, লা-হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি।
অর্থঃ আল্লাহতায়ালার ওপর ভরসা করে তাঁর নামেই শুরু করছি। তাঁর সাহায্য ছাড়া নেক কাজ করা ও অন্যায় কাজ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
২. বিসমিল্লাহ বলে গাড়িতে উঠে এই দোয়া পড়ুন-
উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাজি সাখখারা লানা হাজিহি ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনীন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনকালিবুন।
অর্থঃ পবিত্র সেই সত্তা, যিনি আমাদের জন্য এই বাহনকে বশীভূত করে দিয়েছেন। তাঁর সাহায্য ছাড়া একে বশীভূত করার ক্ষমতা আমাদের ছিল না। আমরা সকলে তাঁরই কাছে ফিরে যাব।
৩. বাসা বা বিমানবন্দর থেকে ইহরামের কাপড় পরুন এবং এই নিয়ত করুন-
হে আল্লাহ আমি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হজ্জ্ব বা ওমরার নিয়ত করেছি। তা সহজ করুন এবং কবুল করুন।’
৪. নিয়তের পর অধিক হারে তালবিয়া পড়তে থাকুন-
উচ্চরণঃ লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা। লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাকা।
অর্থঃ আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির। আপনার কোনো শরিক নেই। আমি হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নেয়ামত আপনারই এবং সকল রাজত্ব আপনার। আপনার কোনো শরিক নেই। (বুখারী, ১৫৪৯)
৫. বিমানে ওঠার সময় উপরোল্লিখিত সফরের দোয়া পড়ুন এবং বিমান থেকে জেদ্দা বিমানবন্দর নজরে এলে এই দোয়া পড়ুন-
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খায়রা হাজিহিল কারয়াতি ওয়া খায়রা মা ফিহা, ওয়া আউজুবিকা শারবাহা ওযা শাররা মা ফীহা।
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এই শহরের এবং এর অভ্যন্তরস্থ সব জিনিসের মঙ্গল কামনা করছি। এবং এর ও এর অভ্যন্তরস্থ সব অকল্যাণ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
৬. জেদ্দায় অবতরণের সময় এই দোয়া পড়ুন-
উচ্চারণঃ রাব্বি আদখিলনী মুদখালা সিদকিউঁ ওয়া আখরিজনি মুখরাজা সিদকিউঁ ওয়াজাআললী মিললাদুনকা সুলতানান নাসীরা
অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক, যেখানে যাওয়া শুভ ও সন্তোষজনক, আপনি আমাকে সেখানে নিয়ে যান এবং যে স্থান হতে বের হয়ে আসা শুভ ও সন্তোষজনক, আপনি আমাকে সেখান থেকে বের করে আনুন এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাকে সাহায্যকারী শক্তিদান করুন।
৭. হারাম শরিফে প্রবেশের সময় এ দোয়া পড়ুন-
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা হাজা আমনুকা ওয়া হারামুকা। ওয়ামান দাখালাহু কানা আ-মিনা ফাহাররিম লাহমি ওয়া দামি ওয়া আজামি ওয়া বাশারি আলান্নার।
অর্থঃ হে আল্লাহ, এটা আপনার সুরক্ষিত পবিত্র স্থান। এখানে প্রবেশকারী যে কেউ আপনার নিরাপত্তা পায়। সুতরাং আমার গোশত, রক্ত, অস্থি ও চর্মকে আগুনের জন্য হারাম করে দিন।
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগফির লী যুনূবী, ওয়াফতাহ লী আবওয়াবা রাহমাতিকা।
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমার গোনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আপনার রহমতের দরজাসমূহ আমার জন্য খুলে দিন।
৯. কাবা শরিফ দেখে নিম্নোক্ত দোয়া পড়ুন-
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা যিদ হাযাল বাইতি তাশরীফান ওয়া তাযীমান ওয়া তাকরিমান ওয়া মাহাবাতান। ওয়া যিদ মান শাররাফাহু ওয়া কাররামাহু মিমমান হাজ্জাহু আও ই’তামারাহু তাশরীফান ওয়া তাকরীমান ওয়া তাযীমান ওয়া বিরবান। আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালাম। ফাহায়্যিনা রাব্বানা বিসসালাম।
অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনার এই ঘরের বড়ত্ব, সম্মান ও মর্যাদা এবং শান শওকত বাড়িয়ে দিন। এবং হজ ও ওমরাকারীদের মধ্যে যে এ ঘরের সম্মান ও ইহতিরাম করবে, তার সম্মান, মর্যাদা, মহত্ব ও নেকি বাড়িয়ে দিন। হে আল্লাহ আপনি শান্তির মালিক, সকল শান্তি আপনার পক্ষ থেকেই। হে আমাদের রব, শান্তির সঙ্গে আমাদের বাঁচিয়ে রাখুন। (আল কিরা, ২৫৫)
হজ্জ্ব ও ওমরাকালীন দোয়াসমূহ
১. তাওয়াফ শুরু করার আগে হাজরে আসওয়াদের কোনায় এসে এভাবে নিয়ত করুন-
হে আল্লাহ, আমি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব বা ওমরার তাওয়াফ করছি। আমার জন্য তা সহজ করুন এবং কবুল করুন।’
২. এরপর হাত দ্বারা হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে পড়ুন-
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলুল্লাহ্।
অর্থঃ আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি মহান। আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক আল্লাহর রসুল মোহাম্মদ (সা.)-এর ওপর।
৩. তাওয়াফ শুরু করার আগে সম্ভব হলে এই দোয়া পড়ুন-
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ঈমানান বিকা, ওয়া তাসদীকান বিকিতাবিকা ওয়া ইত্তিবায়ান লিসুন্নাতি নাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন (সা.)।
অর্থঃ হে আল্লাহ (আমি তাওয়াফ শুরু করছি) আপনার প্রতি ঈমান এনে আপনার কিতাবকে সত্যায়ন করে এবং আপনার নবী মোহাম্মদ (সা.)-এর অনুসরণ করে। (মাজমউয যাওয়াইদ, ৫৪৭০)। বি.দ্র. তাওয়াফে এমন কোনো নির্দিষ্ট দোয়া নেই, যা ছাড়া তাওয়াফ সহি হবে না। অতএব, যেকোনো দোয়া পড়া যাবে। তবে এখানে হাদিস ও আসার থেকে কিছু দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো পড়া উত্তম।
৪. রসুলুল্লাহ (সা.) রুকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মাঝে এ দোয়া পড়তেন-
উচ্চারণঃ রব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাহ ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ। ওয়াকিনা আজাবান্নারি।
অর্থঃ হে আমাদের রব, আপনি আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন ও আখিরাতে কল্যাণ দান করুন এবং আমাদের জাহান্নামের আজাব হতে রক্ষা করুন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা)।
৫. রসুল (সা.) হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহিমের মধ্যে এই দোয়া পড়তেন-
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা কান্নি’নী বিমা রাজাকতানী ওয়া বারিকলী ফীহি। ওয়াখলুফ আলা কুল্লি গাইবাতিন লী বিখাইর।
অর্থঃ হে আল্লাহ, যে রিজিক আপনি আমাকে দান করেছেন, তাতেই আমাকে তুষ্ট রাখুন ও এতে বরকত দান করুন এবং আমার থেকে যেসব নেয়ামত দূর হয়ে গেছে এর উত্তম বদলা আমাকে দান করুন। (মুসতাদরাকে হাকেম)।
৬.পূর্ণ তাওয়াফে এই দোয়া পড়ুন-
উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু। ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরিক নেই। বিশ্বময় তাঁর রাজত্ব আধিপত্য। সব প্রশংসা তাঁরই। আর তিনিই সর্বশক্তিমান। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা)।
৭. জমজমের পানি পানের শুরুতে বিসমিল্লাহ ও শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলুন এবং পান করার আগে-পরে এই দোয়া পড়ুন-
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়া, ওয়া রিজকান ওয়াসিয়া, ওয়া শিফাআম মিন কুল্লি দা-য়ি।
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে উপকারী ইলম, প্রশস্ত রিজিক ও সব রোগ থেকে শেফা প্রার্থনা করছি। (মানাসিক ১৩৯)।
৮. সাঈ শুরু করার আগে এভাবে নিয়ত করুন-
হে আল্লাহ, আমি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ওমরা বা হজ্জ্বের সাঈ করছি। আমার জন্য তা সহজ করুন এবং কবুল করুন।’
৯. সাফা পাহাড়ে ওঠার সময় এ দোয়া পড়ুন-
উচ্চারণঃ ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শা’আ ইরিল্লাহ, ফামান হাজ্জাল বাইতা আও ইতামারা ফালা জুনাহা আলাইহি আই ইয়াত্তাওওয়াফা বিহিমা। ওয়ামান তাতাওওয়াআ খাইরান, ফাইন্নাল্লাহা শা-কিরুন আলীম।
অর্থঃ নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি বায়তুল্লায় হজ কিংবা ওমরা করবে, এই দুটির তাওয়াফে (সাঈতে) তার জন্য দোষ নেই। কেউ স্বেচ্ছায় ভালো কাজ করলে নিশ্চয় আল্লাহ পুরস্কারদাতা সর্বজ্ঞ।
১০. সাফা পাহাড়ে উঠে বায়তুল্লাহর দিকে ফিরে তিনবার ‘আল্লাহু আকবর’ বলে এই দোয়া পড়ুন-
উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, লা-শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, য়ুহয়ী ওয়ায়ুমীত বিয়াদিহিল খায়রু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরিক নেই। বিশ্বময় তাঁর রাজত্ব আধিপত্য। সকল প্রশংসা তাঁরই। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান, সব কল্যাণ তাঁর হাতে। আর তিনি সর্বশক্তিমান। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১২১৮)
১১. সাফা-মারওয়ায় সাঈ করার সময় সবুজ পিলারদ্বয়ের মধ্যে দ্রুত চলার সময় এই দোয়া পড়ুন-
উচ্চারণঃ রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতাল আ আযযুল আকরাম।
অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করুন এবং দয়া করুন। আপনি মহাপরাক্রমশালী। মহাসম্মানী। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস-১৫৮০৭)
১২. সাঈর প্রত্যেক চক্করে কোরআন হাদিসে বর্ণিত যেকোনো দোয়া পড়তে থাকুন।
১৩. আরাফার ময়দানে বিশেষ কোনো দোয়া বা জিকির পড়া জরুরি নয়
সুবাহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবারসহ যেকোনো দোয়া ও জিকির নিজ ভাষায় করা যেতে পারে। তবে হাদিস ও আছারে এক্ষেত্রে কিছু দোয়া পড়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমনঃ
ক) উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদির। -জামে তরিমিযি, হাদিস-৩৫৮৫।
অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরিক নেই। বিশ্বময় তাঁর রাজত্ব আধিপত্য। সকল প্রশংসা তাঁরই। আর তিনিই সর্বশক্তিমান।
খ) বর্ণিত আছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) উকুফের সময় দোয়ার জন্য হাত তুলে তিনবার ‘আল্লাহু আকবার ওলিল্লাহিল হামদ’ বলতেন। এরপর এ দোয়া পড়তেন-
উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওলাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদির। আল্লাহুম্মাহদিনী বিল হুদা ওয়া নাক্কিনী বিত তাকওয়া, ওয়াগফিরলি ফিল আ-খিরাতি ওয়াল উলা। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদিস-১৪৯২৩
অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি অদ্বিতীয় তাঁর কোনো শরিক নেই। বিশ্বময় তাঁর রাজত্ব আধিপত্য। সকল প্রশংসা তাঁরই। আর তিনিই সর্বশক্তিমান। হে আল্লাহ, আপনি আমাকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করুন। আমাকে তাকওয়ার মাধ্যমে পবিত্র করে দিন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে আমাকে ক্ষমা করে দিন।
১৪. রমি (শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ) করার সময় এ দোয়া পড়ুন-
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর, রাগামান লিশ শায়াতিন, ওয়া রিদাআন লিররাহমান, আল্লাহুম্মাজ আলহু হাজ্জাম মাবরূরান, ওয়া যানবান মাগফুরান ওয়া সা’ইয়াম মাশকুরান। ওয়া তিজারাতান লান তাবূরা।
অর্থঃ সেই আল্লাহর নামে, যিনি মহান। শয়তানকে অপদস্থ করার উদ্দেশ্যে এবং মেহেরবান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমি এ কঙ্কর মারছি। হে আল্লাহ আমার হজ কবুল করুন, গোনাহরাজি ক্ষমা করুন। প্রচেষ্টাকে ফলবতী করুন এবং এই ব্যবসায়কে এমন ব্যবসায় পরিণত করুন যাতে ক্ষয় নেই।
জিয়ারতে মদিনার দোয়াসমূহ
১. সবুজ গম্বুজ নজরে পড়ামাত্র গাড়ি হতে নেমে দরুদ পড়ুন এবং এ দোয়াটি পড়ুন-
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি মাশাআল্লাহু লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, রাব্বি আদখিলনী মুদখালা সিদকিউঁ ওয়া আখরিজনি মুখরাজা সিদকিউঁ। আল্লাহুম্মাফতাহ লি আবওয়াবা রাহমাতিকা।
অর্থঃ আল্লাহর নামে (এ শহরে প্রবেশ করছি) আল্লাহ যা কবুল করেছেন। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া নেক কাজ করা এবং গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। হে আল্লাহ, আপনি আমাকে সত্য পথে প্রবেশ করান এবং সত্য পথেই বের করে আনুন। হে আল্লাহ আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন।
২. রওজা শরিফের কাছে এসে এভাবে সালাম পেশ করুন-
উচ্চারণঃ আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
অর্থঃ হে আল্লাহর রসুল, আপনার প্রতি সালাম বর্ষিত হোক এবং বর্ষিত হোক আল্লাহর রহমত ও বরকত।
৩. অধিক হারে দরুদ ও কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করুন এবং নবীজীর সামনে আল্লাহর নিকট তাওবা ইস্তেগফার পাঠ করুন।
ইস্তেগফারঃ আস্তাগফিরুল্লাহা মিন কুল্লি যানবিও ওয়া আতুবু ইলাইহি, লা-হাওলা ওয়ালা-কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।
অর্থঃ আমি আল্লাহর নিকট সব গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী হই। মহান পরাক্রমশালী আল্লাহর সাহায্য ছাড়া নেক কাজ করা ও অন্যায় কাজ হতে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
৪. অতঃপর রসুলের (সা.) শাফায়াত কামনা করুন। এভাবে বলুন-
উচ্চারণঃ ইয়া রসুলুল্লাহ, সামি’তুল্লাহা ইয়াকুলু-“ওয়ালাও আন্নাহুম ইয যালামু আনফুসাহুম, জা-উকা, ফাস্তাগফারুল্লাহা ওয়াস্তাগফারা লাহুমুর রসুলু-লাওয়াজাদুল্লাহা তাওওয়াবার রাহীমা।” কাদ জি’তুকা মুস্তাগফিরান মিন যুনূবী। মুস্তাশফিআন বিকা ইলা রাব্বি।
অর্থঃ ইয়া রসুলুল্লাহ আমি শুনেছি আল্লাহতায়ালা বলেন, আর যদি তারা নিজেদের ওপর জুলুম করার পর আপনার নিকট উপস্থিত হতো এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইত এবং রসুল ও তাদের জন্য ক্ষমা চাইতেন, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী, করুণাময় পেত। তাই আপনার কাছে আমি এসেছি, আল্লাহর নিকট তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনাকারী হয়ে এবং আমার রবের কাছে আপনার সুপারিশ কামনাকারী হয়ে।
৫. হজরত আবু বকর (রা.)-এর মাজারের সামনে এসে সালাম পেশ করুন-
উচ্চারণঃ আস সালামু আলাইকা ইয়া খলিফাতা রাসুলিল্লাহ। ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। জাযাকাল্লাহু আন্না খায়রাল জাযা।
অর্থঃ হে আল্লাহর রসুলের খলিফা, আপনার প্রতি সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক। এবং বর্ষিত হোক আল্লাহর রহমত ও বরকত। এবং আমাদের পক্ষ থেকে আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
৬. হজরত উমর ফারুক (রা.)-এর মাজারের সামনে এসে সালাম পেশ করুন-
উচ্চারণঃ আসসালামু আলাইকা ইয়া আমীরাল মুমিনীন, ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। জাযাকাল্লাহু আন্না খায়রাল জাযা।
অর্থঃ হে আমিরুল মুমিনীন, আপনার প্রতি সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক। এবং বর্ষিত হোক আল্লাহর রহমত ও বরকত। এবং আমাদের পক্ষ থেকে আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
৭. আল্লাহ তায়ালার ফেরেশতাদের ওপর সালাম দিয়ে বলুন-
উচ্চারণঃ আসসালামু আলাইকা ইয়া সায়্যিদানা জিবরাঈল, আসসালামু আলাইকা ইয়া সায়্যিদানা মিকাঈল, আসসালামু আলাইকা ইয়া সায়্যিদানা ইসরাফিল, আসসালামু আলাইকা ইয়া সায়্যিদানা আজরাঈল, আসসালামু আলাইকুম ইয়া মালায়িকাতাল মুকারবাবিনা, মিন আহলিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদিনা কাফফাতান, আ-ম্মাতান আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
অর্থঃ হে আমাদের সরদার জিবরাইল, আপনার প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। হে আমাদের সরদার মিকাঈল, আপনার প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। হে আমাদের সরদার ইসরাফিল, আপনার প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। হে আমাদের সরদার আজরাইল, আপনার প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। আসমান ও জমিনে বসবাসকারী আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত হে ফেরেশতাগণ, আপনাদের সবার প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। এবং বর্ষিত হোক আল্লাহর রহমত ও বরকত।
৮. জান্নাতুল বাকিতে গিয়ে সাহাবিদের নাম নিয়ে সালাম পেশ করুন। এরপর সকলকে উদ্দেশ করে বলুন-
উচ্চারণঃ আসসালামু আলাইকুম আহলাদ দিয়ারি মিনাল মুমীনিন ওয়াল মুসলিমীন। ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন। নাসআলুল্লাহা লানা ওয়া লাকুম আফিয়া। জাযাকুমুল্লাহু আন্না খায়রাল জাযা।
অর্থঃ হে পবিত্র স্থানের মুমিন ও মুসলমান অধিবাসীগণ, আপনাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হব। আমরা আল্লাহর কাছে আপনাদের ও আমাদের সকলের জন্য মাগফিরাত কামনা করছি। আমাদের পক্ষ হতে আল্লাহ তায়ালা আপনাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন।
৯. হজ্জ্ব-ওমরা থেকে ফেরার সময় এ দোয়া পড়ুন-
উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু। লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু। ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। আ-য়িবুনা, তা-ইবুনা সাজিদুনা লিরাব্বিনা হামিদুনা। সাদাকাল্লাহু ওয়াদাহু ওয়া নাসারা আবদাহু ওয়া হাযামা আহযাবা ওয়াহদাহু।
অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তাঁর কোনো শরিক নেই। তাঁরই জন্য সকল রাজত্ব ও প্রশংসা এবং তিনি সব কিছুর ওপর সামর্থ্যবান। আমাদের পালনকর্তার কাছে আমরা আবার ফিরে আসব, তাঁরই কাছে আমরা অভিমুখী হই এবং তাঁর প্রতি সিজদা আদায় করি। আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন এবং বান্দাকে সাহায্য করেছেন। -সহীহ বুখারী, হাদিস-১৭৯৭
হজ্জ্বের সময় মক্কা-মদিনায় দোয়া কবুলের বিশেষ স্থানসমূহ
১. মাতাফ-তাওয়াফের জায়গা।
২. মুলতাযাম-কাবা ঘরের দরজা ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান।
৩. মীযাবে রহমতের নিচে।
৪. জমজম কুয়ার কাছে।
৫. মাকামে ইবরাহিমের পেছনে।
৬. সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের উপরে।
৭. রুকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে।
৮. মিনার মসজিদসমূহে ও মিনার ময়দানে।
৯. মুজদালিফা ও আরাফাতের ময়দানে।
১০. জাবালে রহমত, জাবালে নূর ও জাবালে সাওরে।
১১. কংকর মারার স্থানে।
১২. রিয়াযুল জান্নাতে।
হজ্জ ও উমরাহ’র জন্য কেনাকাটা করুন
- ইহরাম
- ইহরাম বেল্ট ও ব্যাগ
- হালাল কসমেটিক্স
- এক্সেসরিজ
হজ্জ্বের নিবন্ধন কিভাবে করতে হয়
আগামী বছরের (২০২৫ সালের) হজ্জ্বের প্রাথমিক নিবন্ধন আজ রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি উভ মাধ্যমেই এই নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় মাধ্যমের প্রাক-নিবন্ধন ফি ৩০ হাজার টাকা। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জারি করা পত্রে বলা হয়েছে, আগের কিংবা নতুন প্রাক-নিবন্ধিত যে কোনো ব্যক্তি ৩ লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করতে পারবেন।
নহজ প্যাকেজ মূল্যের অবশিষ্ট টাকা প্যাকেজে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ বছরের হজ প্যাকেজ মূল্য সৌদি পর্বের ব্যয় ও বিমান ভাড়া নির্ধারণ সাপেক্ষে ঘোষণা করা হবে।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের জন্য হজযাত্রীর কোটা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এই কোটা পূর্ণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাথমিক নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
হজ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রাথমিকভাবে যোগ্য এজেন্সির তালিকা www.hajj.gov.bd ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। ১৬১৩৬ নম্বরে ফোন করেও জানা যাবে হজ-সংক্রান্ত তথ্য।
ই-হজ্জ্ব সিস্টেম (www.hajj.gov.bd), e-Hajj BD মোবাইল অ্যাপ থেকে সরকারি মাধ্যমে হজে গমনেচ্ছু ব্যক্তিরা সব ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বায়তুল মোকাররম মসজিদ এবং ঢাকার আশকোনার হজ অফিস থেকে প্রাক-নিবন্ধন ও প্রাথমিক নিবন্ধন করতে পারবেন। বেসরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীদের অনুমোদিত এজেন্সি কর্তৃক প্রাথমিক নিবন্ধন করতে হবে।
প্রাথমিক নিবন্ধনের সময় প্রাক-নিবন্ধন সনদ ও পাসপোর্ট প্রয়োজন হবে।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্জ্ব নিবন্ধনের শর্তাবলী
- নিবন্ধনের জন্য হজযাত্রীর পাসপোর্টের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে হবে।
- নিবন্ধনের পর হজে যেতে না পারলে ইতোমধ্যে ব্যয়িত অর্থ ব্যতীত অবশিষ্ট অর্থ ফেরত যোগ্য হবে।
- হজের খরচ কোনো কারণে বৃদ্ধি পেলে তা প্যাকেজ মূল্য হিসেবে গণ্য হবে এবং হজযাত্রীকে পরিশোধ করতে হবে। কোনো অর্থ উদ্বৃত্ত থাকলে তা হজযাত্রীকে ফেরত দেওয়া হবে।
- হজযাত্রীরা মাহরামসহ একইসঙ্গে পৃথকভাবে হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন ফরম পূরণ করে (ইউডিসি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ডিসি অফিস এবং হজ অফিস, আশকোনা, ঢাকার মাধ্যমে) নিবন্ধন ভাউচার তৈরি করতে পারবেন।
- সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের ভিসার জন্য নিবন্ধনের তিন দিনের মধ্যে পাসপোর্ট ও কোভিড ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট নিজ দায়িত্বে হজ অফিস, আশকোনা, ঢাকায় জমা দিতে হবে।
- হজ ফ্লাইট ঢাকা-জেদ্দা, ঢাকা-মদিনা, জেদ্দা-ঢাকা ও মদিনা-ঢাকা রুটের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটে হজে গমন ও প্রত্যাগমন করতে হবে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকেও গমনাগমন করা যাবে।
- শূন্য কোটা পূরণের জন্য প্রাক-নিবন্ধিতদের মধ্য থেকে প্রাক-নিবন্ধনের ক্রমানুসারে নিবন্ধনের আহ্বান করা হবে।
- নিবন্ধন সংক্রান্ত নিয়মের কোনো পরিবর্তন হলে তা যথাসময়ে বিজ্ঞপ্তি/এসএমএসের মাধ্যমে অবহিত করা হবে।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রদেয় টাকার পরিমাণ
প্রাক-নিবন্ধনকালে গৃহীত ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ১ হাজার টাকা প্রসেস ফি কাটার পর অবশিষ্ট ২৯ হাজার টাকা সমন্বয় করে হজযাত্রীকে অবশিষ্ট ৬ লাখ ৫৪ হাজার ১৫ টাকা সোনালী ব্যাংক লি. স্থানীয় কার্যালয় শাখা, মতিঝিল, ঢাকার হিসাব নং ০০০২৬৩৩০০০৯০৮ এ নিবন্ধন ভাউচারের মাধ্যমে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে জমা প্রদান করে হজযাত্রী নিবন্ধন সনদ গ্রহণ করবেন।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ্জ্ব নিবন্ধনের শর্তাবলী
- এজেন্সিগুলো সরকারি ব্যবস্থাপনার হজ প্যাকেজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবে এবং হজযাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে। এজেন্সি কর্তৃক ঘোষিত হজ প্যাকেজ www.hajj.gov.bd, www.haabbd.com এবং এজেন্সির নিজস্ব ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে এবং এর কপি হজ-১ শাখায় প্রেরণ করতে হবে।
- হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২২ এর বিধি ১১ (২) অনুযায়ী এজেন্সিকে হজযাত্রীর সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন এবং ব্যাংকের মাধ্যমে সব লেনদেন করতে হবে।
- প্রসেস ফি বাবদ ১ হাজার টাকা, জমজম পানি বাবদ ৪২৫.৮৫ টাকা, মক্কায় ১ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বাবদ ২ হাজার ২৪.২০ টাকা, স্থানীয় সার্ভিস চার্জ বাবদ ৮০০ টাকা, আপদকালীন ফান্ড বাবদ ২০০ টাকা, প্রশিক্ষণ ফি বাবদ ৩০০ টাকাসহ মোট ৪ হাজার ৭৫০.০৫ ঢাকা প্রাক-নিবন্ধনকালে গৃহীত ৩০ হাজার ৭৫২ টাকা থেকে কাটার পর অবশিষ্ট ২৬ হাহার ১.৯৫ টাকা সমন্বয়যোগ্য।
- জেদ্দা-মক্কা-মদিনা ও মাশায়ের আল-হারামের পরিবহন ফি ৩৫ হাজার ১৬২.৪৩ টাকা এবং বিমান ভাড়া ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকাসহ মোট ২ লাখ ৩২ হাজার ৯৫৯.৪৩ টাকা। তার মধ্যে সমন্বয়যোগ্য ২৬ হাজার ১.৯৫ টাকা বাদে অবশিষ্ট ২ লাখ ৬ হাজার ৯৫৮ টাকা নিবন্ধনকারী হজ এজেন্সির নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আগামী ২৮ মার্চ ২০২৩ তারিখের মধ্যে জমা দিতে হবে।
- হজের পাঁচ দিন মিনা-আরাফাহ ও মুজদালিফায় মোয়াল্লেম কর্তৃক প্রদত্ত সেবার ভিত্তিতে ৪ ক্যাটাগরির তাঁবু থাকবে (ক্যাটাগরি এ, বি, সি, ডি)। এজেন্সি যে ক্যাটাগরির তাঁবু গ্রহণ করবে অর্থাৎ ‘ডি’ ক্যাটাগরি এর জন্য ১ লাখ ৩৬ হাজার ১৩০.০৫ টাকা; ‘সি’ এর জন্য ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৩০.৬২ টাকা; ‘বি’ এর জন্য ২ লাখ ২৪ হাজার ৬২১.৬৮ টাকা; এবং ‘এ’ এর জন্য ২ লাখ ৯০ হাজার ৯৩০.৭৮ টাকা সার্ভিস চার্জ হজযাত্রীর কাছ থেকে আদায় করতে পারবে।
- হজযাত্রীর কাছ থেকে প্যাকেজে ঘোষিত অর্থ প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট এজেন্সি হজযাত্রীকে পিলগ্রিম আইডি প্রদান করবেন।
- হজ চুক্তি অনুযায়ী হজ এজেন্সির ন্যূনতম ১৭ জন নিবন্ধিত হজযাত্রী না থাকলে হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২২ এর বিধি ২৬ অনুসারে লিড এজেন্সি নির্ধারণ করতে হবে। অতঃপর সমঝোতাকারী এজেন্সিকে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের অনলাইনে লিড এজেন্সির অনুকূলে স্থানান্তরসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে হবে। স্থানান্তরিত হজযাত্রীদের সব দায়-দায়িত্ব লিড এজেন্সি (নিবন্ধনকারী) গ্রহণ করবে। মোনাজ্জেম লিড এজেন্সি থেকে নিয়োগ হবে। প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে/অভিযুক্ত হওয়ার কারণে কোনো এজেন্সি হজযাত্রী প্রেরণে যোগ্য না হলে ওই এজেন্সি বিধিমালায় বর্ণিত পদ্ধতিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার এজেন্সির হজযাত্রীর স্থানান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।
- হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২২ এর বিধি ১১ (২) অনুযায়ী হজ এজেন্সি হজযাত্রীর সঙ্গে পরস্পর চুক্তি সম্পাদন করবে। চুক্তিপত্রে হজযাত্রীকে প্রদত্ত সুবিধার কথা উল্লেখ করতে হবে। চুক্তির কপি হজযাত্রীকে এবং হজ অফিস, ঢাকা বরাবর প্রেরণ করবে।
- হজযাত্রী চুক্তিবদ্ধ এজেন্সির হজ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ‘ব্যাংক হিসাব’ এর মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করবেন। আর্থিক লেনদেন করার পূর্বে হজ এজেন্সি ২০২৩ সালে হজযাত্রী প্রেরণের জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত কি না তা www.hajj.gov.bd ওয়েব সাইট থেকে জেনে নেবেন।
- হজযাত্রী হজে গমনকালে কোনো পচনশীল খাদ্যদ্রব্য তামাক পান-সুপারি, জর্দা অর্থাৎ নেশা জাতীয় দ্রব্য বহন করতে পারবেন না।
- নিয়মিত সেবন করতে হয় এমন ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী (ব্লাড সুগার টেস্টের স্টিপ নিডিল, ইনসুলিন, ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ) অবশ্যই (কমপক্ষে ৪৫ দিনের জন্য) সঙ্গে নিতে হবে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ এরকম ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী বহন করতে হবে।
- হজযাত্রী সরাসরি হজ এজেন্সি থেকে বিমানের টিকিট সংগ্রহ করবেন। প্যাকেজে উল্লেখিত মূল্যের অতিরিক্ত মূল্য গ্রহণ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে অবহিত হতে হবে। ২০২৫ সালের হজ কার্যক্রম পরিচালনায় যোগ্য হজ এজেন্সির তালিকা www.hajj.gov.bd তে প্রকাশ করা হয়েছে। এ তালিকাভুক্ত এজেন্সি এককভাবে/লিড এজেন্সির মাধ্যমে নিবন্ধনকার্য সম্পন্ন এবং সৌদি আরবে হজযাত্রী প্রেরণ করতে পারবে।
- সৌদি আরবে এজেন্সিভিত্তিক হজযাত্রীর তথ্য প্রেরণের পর মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতার কারণে হজে যেতে অপারগ ব্যক্তিদের প্রতিস্থাপন কার্যক্রম শুরু হবে। হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২২ এর বিধি ১৩ অনুসারে প্রতিস্থাপন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এক্ষেত্রে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদনের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে। এজেন্সি সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ হজযাত্রী প্রতিস্থাপন করার সুযোগ পাবে।
- হজ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ব্যাংক হজ এজেন্সিকে কোনোভাবেই হজ নিবন্ধন কাজে লোন প্রদান করবে না।
সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য অনুসরণীয়
- প্রাক-নিবন্ধনের ক্রমানুসারে নিবন্ধনের জন্য আহ্বান (কল) পাওয়া সত্ত্বেও যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধন করবেন না তারা ২০২৩ সালের হজে গমনে আগ্রহী নন বলে বিবেচিত হবেন।
- মক্কা ও মদিনায় হুইল চেয়ার ব্যবহারের প্রয়োজন হলে কাউন্সেলর (হজ)/সহকারী মৌসুমী হজ অফিসারের কাছে ৩০০ সৌদি রিয়াল জামানত হিসেবে জমা রেখে হুইল চেয়ার সংগ্রহ করা যাবে।
- হুইল চেয়ার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহারের পর হইল চেয়ার ফেরত প্রদানকালে জামানত হিসেবে প্রদত্ত ৩০০ সৌদি রিয়াল ফেরত প্রদান করা হবে।
- মিনা, আরাফাহ ও মুযদালিফায় হুইল চেয়ার ও সাহায্যকারী প্রয়োজন হলে মোয়াল্লেম অফিসে অফেরৎযোগ্য ৩৫০০ সৌদি রিয়াল জমাপূর্বক সেবা গ্রহণ করা যাবে।
- হজযাত্রীকে আনুমানিক ১ হাজার সৌদি রিয়াল কুরবানি বাবদ সঙ্গে নিতে হবে।
হজ্জ্ব নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম
হজ্জ্ব নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম হজ্জ্বে যেতে প্রথম ধাপে আপনাকে প্রাক-নিবন্ধন (Hajj Pre Registration) করতে হয়। যাঁরা হজে যেতে চান, তাঁদের প্রথম ধাপে প্রাক-নিবন্ধন করতে হয়। অনলাইনে এই প্রাক নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে কিনা তা যাচাই করা যায়। এখানে আমি দেখাবো কিভাবে অনলাইনে আপনি আপনার হজ প্রাক নিবন্ধন যাচাই করবেন।
- হজ্জ্ব নিবন্ধন কি
- হজ্জ্ব নিবন্ধন যাচাই করতে প্রয়োজনীয় তথ্য
- হজ্জ্ব নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম
- হজ্জ্ব নিবন্ধন ফি
- হজ্জ্ব নিবন্ধন যাচাই করার গুরুত্ব
হজ্জ্ব নিবন্ধন কিঃ
হজ্জ্ব নিবন্ধন বলতে সৌদি আরব সরকার কতৃক নির্দেশিত নিয়মানুযায়ী হজ যাত্রার জন্য আবেদন করাকে বুঝায়।এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সাধারণত হজ যাত্রার কয়েক মাস আগে থেকে শুরু হয় এবং আগ্রহী মুসলিমরা নিজ নিজ দেশের হজ ট্রাভেল এজেন্সির (Haj Travel Agency) মাধ্যমে নিবন্ধন করে থাকে।
হজ্জ্ব নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আগ্রহী যাত্রীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করে নিজেদের হজ যাত্রা নিশ্চিত করতে হয়।
হজ্জ্ব নিবন্ধন যাচাই করতে প্রয়োজনীয় তথ্যঃ
হজ্জ্ব নিবন্ধন যাচাই করার জন্য যেসকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে তা হলো:
- হজ্জ্ব ট্র্যাকিং নম্বর
- পাসপোর্ট নম্বর
- জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর;
- হজ্জ্ব যাত্রার লাইসেন্স নম্বর।
- এই গুলোর মধ্যে যেকোনো একটি তথ্য দিয়ে আপনি হজ নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন।
হজ্জ্ব নিবন্ধন যাচাই করার নিয়মঃ হজ্জ্ব নিবন্ধন যাচাই করার জন্য প্রথমে ভিজিট করুন https://prp.pilgrimdb.org এই ওয়েবসাইটে। এখানে অনুসন্ধান অপশনে যান। সার্চ বক্সে আপনার Tracking Number অথবা Passport Number লিখে সার্চ করলে হজ নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন।
হজ্জ্ব নিবন্ধন ফিঃ হজ্জ্ব নিবন্ধন ফি হিসেবে প্রায় ৩০ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। সরকারি ভাবে হজ নিবন্ধন করলে এই ফি প্রযোজ্য হবে কিন্তু আপনি যদি বেসরকারি ভাবে নিবন্ধন করেন তাহলে ফি বাবদ আপনাকে প্রায় ৩০,৭৫২ টাকা প্রদান করতে হবে।
এই হজ নিবন্ধন ফি এর মধ্যেই প্রসেস ফি, জমজম পানি, বাড়ি ভাড়া, প্রশিক্ষণ ফি, স্থানীয় সার্ভিস চার্জ ইত্যাদি বিভিন্ন খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
হজ্জ্ব নিবন্ধন যাচাই করার গুরুত্বঃ
- বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবছর অনেক মানুষ হজ যাত্রার উদ্দেশ্যে আবেদন করে এবং সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করার মাধ্যমে নিবন্ধন নিশ্চিত করে।
- নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে অনেকেই নিজ নিজ দেশের বিভিন্ন বেসরকারি এজেন্সি বেছে নেয় যা সবসময় ট্রাস্টেড হয় না।
- আজকাল হজ নিবন্ধন নিয়েও প্রতারণার মতো ঘটনা বেড়েই চলছে। এক্ষেত্রে যাত্রার পূর্বে নিজ দায়িত্বে হজ নিবন্ধন যাচাই করে নিলে এধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
- আপনার নিবন্ধনটি আসল নাকি নকল তা হজ নিবন্ধন যাচাই করার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়।
- যদি আপনার করা নিবন্ধন আসল হয় তাহলে নিবন্ধন যাচাই করার সাথে সাথে আপনার সকল তথ্য সঠিক ভাবে দেখতে পারবেন এবং নিশ্চিত হতে পারবেন।
বিদায় হজ্জ্বের ভাষন
বিদায় হজ্জ্বের ভাষন বলতে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের শেষ হজ্জ্বকে বিদায় হজ্জ্ব ববলা হয়। এই হজ্জ্বে আল্লাহর রাসূল সা. এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, যা বিদায় হজের ভাষণ হিসেবে পরিচিত মুসলিম বিশ্বের কাছে। এই ভাষণে তিনি মুসলিম উম্মাহর করণীয় সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। এতো বছর পরও বিদায় হজের ভাষণ মুসলিম উম্মাহর জন্য শিক্ষণীয়, স্মরণীয়।
বিদায় হজ্জ্বঃ দশম হিজরির জিলহজ মাসে বিদায় হজ পালন করেছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।এই মাসের ৯ তারিখ বিকেলে আরাফাতের ময়দানে এবং পরদিন ১০ জিলহজ কোরবানির দিন লক্ষাধিক সাহাবির সামনে বক্তব্য পেশ করেছিলেন রাসূল সা.। এই দুই দিনে দেওয়া তাঁর বক্তব্য বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ হিসেবে পরিচিত।
নবী সা.-এর দৃঢ় আশঙ্কা ছিল যে এটাই তাঁর জীবনের সর্বশেষ হজ ও সর্বশেষ বিশ্ব সম্মেলন। জীবনের সর্বশেষ সম্মেলন হিসেবে তিনি পুরো দ্বিন-ইসলামের সারাংশ তুলে ধরেছেন এই ভাষণে। এটিই ছিল তাঁর নবুয়তিজীবনের উপসংহার। ভাষণ শেষে ভাবের আতিশয্যে নবী (সা.) নীরব হন। জান্নাতি নূরে তাঁর চেহারা আলোকদীপ্ত হয়ে ওঠে। এই মুহূর্তে নাজিল হয়—‘আজকের এই দিনে তোমাদের দ্বিনকে পূর্ণ করে দিলাম।
তোমাদের ওপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করে দিলাম। ইসলামকেই তোমাদের ওপর দ্বিন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৩)
১. জুবায়ের বিন মুত্ব‘ইম (রাঃ) বলেন, আরাফার দিন বিদায় হজ্জের ভাষণে সমবেত জনগণের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
أَيُّهَا النَّاسُ، فَإِنِّى وَاللهِ لاَ أَدْرِى لَعَلِّى لاَ أَلْقَاكُمْ بَعْدَ يَوْمِى هَذَا بِمَكَانِى هَذَا، فَرَحِمَ اللهُ مَنْ سَمِعَ مَقَالَتِى الْيَوْمَ فَوَعَاهَا، فَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ وَلاَ فِقْهَ لَهُ، وَلَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ إِلَى مَنْ هُوَ أَفْقَهُ مِنْهُ، وَاعْلَمُوا أَنَّ أَمْوَالَكُمْ وَدِمَاءَكُمْ حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ هَذَا الْيَوْمِ فِى هَذَا الشَّهْرِ فِى هَذَا الْبَلَدِ، وَاعْلَمُوا أَنَّ الْقُلُوبَ لاَ تَغِلُّ عَلَى ثَلاَثٍ: إِخْلاَصِ الْعَمَلِ للهِ، وَمُنَاصَحَةِ أُولِى الأَمْرِ، وَعَلَى لُزُومِ جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِينَ، فَإِنَّ دَعْوَتَهُمْ تُحِيطُ مِنْ وَرَائِهِمْ- رواه الدارمىُّ-
(ক) হে জনগণ! আল্লাহর কসম, আমি জানিনা আজকের পরে আর কোনদিন তোমাদের সঙ্গে এই স্থানে মিলিত হ’তে পারব কি-না। অতএব আল্লাহ রহম করুন ঐ ব্যক্তির উপরে যে ব্যক্তি আজকে আমার কথা শুনবে ও তা স্মরণ রাখবে। কেননা অনেক জ্ঞানের বাহক নিজে জ্ঞানী নয় (সে অন্যের নিকট জ্ঞান বহন করে নিয়ে যায়) এবং অনেক জ্ঞানের বাহক তার চাইতে অধিকতর জ্ঞানীর নিকটে জ্ঞান বহন করে নিয়ে যায়।
(খ) জেনে রেখ, নিশ্চয়ই তোমাদের মাল-সম্পদ ও তোমাদের রক্ত তোমাদের পরস্পরের উপরে হারাম, যেমন আজকের এই দিন, এই মাস, এই শহর তোমাদের জন্য হারাম’ (অর্থাৎ এর সম্মান বিনষ্ট করা হারাম)।
(গ) জেনে রেখ, তিনটি বিষয়ে মুমিনের অন্তর খিয়ানত করে নাঃ (১) আল্লাহর উদ্দেশ্যে এখলাছের সাথে কাজ করা।
(২) শাসকদের জন্য কল্যাণ কামনা করা
(৩) মুসলমানদের জামা‘আতকে আঁকড়ে ধরা। কেননা তাদের দো‘আ তাদেরকে পিছন থেকে (শয়তানের প্রতারণা হতে) রক্ষা করে’ (দারেমী হা ২২৭, সনদ ছহীহ)। অর্থাৎ মুমিন যতক্ষণ উক্ত তিনটি স্বভাবের উপরে দৃঢ় থাকবে, ততক্ষণ তার অন্তরে খিয়ানত বা বিদ্বেষ প্রবেশ করবে না। যা তাকে ইলম প্রচারের কাজে বাধা দেয়। আর তিনিই হবেন কামেল মুমিন’ (মির‘আত হা-২২৯-এর ব্যাখ্যা)।
ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, لُزُومِ جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِينَ অর্থ আক্বীদা ও সৎকর্মে সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং জুম‘আ, জামা‘আত ও অন্যান্য বিষয়ে সকলে অংশগ্রহণ করা। فَإِنَّ دَعْوَتَهُمْ تُحِيطُ مِنْ وَرَائِهِمْ অর্থ তাদের দো‘আ তাদেরকে শয়তানী প্রতারণা এবং পথভ্রষ্টতা হতে পিছন থেকে তাদের রক্ষা করে। এর মধ্যে ধমকি রয়েছে, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বেরিয়ে যাবে, সে ব্যক্তি জামা‘আতের বরকত ও মানুষের দো‘আ থেকে বঞ্চিত হবে।
এছাড়াও এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন করা অধিক উত্তম বিচ্ছিন্ন থাকার চাইতে। কোন কোন বর্ণনায় مَنْ وَرَائَهُمْ এসেছে। অর্থাৎ তাদের পিছনে যারা আছে, তারা তাকে রক্ষা করে। ত্বীবী বলেন, এর দ্বারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতকে বুঝানো হয়েছে। যাদের দো‘আ তাদের পরবর্তী বংশধরগণকেও পথভ্রষ্টতা হতে রক্ষা করে’ (মিরক্বাত, শরহ মিশকাত হা-২২৮-এর ব্যাখ্যা)।
২. জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, বিদায় হজ্জের দিন সূর্য ঢলে যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ক্বাছওয়া (الْقَصْوَاءُ) উটনীর পিঠে সওয়ার হয়ে বাত্বনুল ওয়াদীতে আরাফাহ ময়দানে আসেন। অতঃপর লোকদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে তিনি বলেন,
أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، فِيْ شَهْرِكُمْ هَذَا، فِيْ بَلَدِكُمْ هَذَا- أَلاَ كُلُّ شَىْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَىَّ مَوْضُوْعٌ وَدِمَاءُ الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوْعَةٌ وَإِنَّ أَوَّلَ دَمٍ أَضَعُ مِنْ دِمَائِنَا دَمُ ابْنِ رَبِيعَةَ بْنِ الْحَارِثِ كَانَ مُسْتَرْضِعًا فِى بَنِى سَعْدٍ فَقَتَلَتْهُ هُذَيْلٌ- وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوْعٌ وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُ رِبَانَا رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَإِنَّهُ مَوْضُوْعٌ كُلُّهُ- فَاتَّقُوا اللهَ فِى النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوْهُنَّ بِأَمَانِ اللهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوْجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللهِ وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لاَّ يُوْطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُوْنَهُ. فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوْهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ- وَقَدْ تَرَكْتُ فِيْكُمْ مَا لَنْ تَضِلُّوْا بَعْدَهُ إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ كِتَابَ اللهِ، وَأَنْتُمْ تُسْأَلُوْنَ عَنِّىْ فَمَا أَنْتُمْ قَائِلُوْنَ- قَالُوْا نَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ وَأَدَّيْتَ وَنَصَحْتَ. فَقَالَ بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ يَرْفَعُهَا إِلىَ السَّمَاءِ وَيَنْكُتُهَا إِلَى النَّاسِ، اللهُمَّ اشْهَدْ، اللهُمَّ اشْهَدْ- ثَلاَثَ مَرَّاتٍ- رواه مسلم-
হে জনগণ! নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত ও মাল-সম্পদ তোমাদের পরস্পরের উপরে হারাম, যেমন আজকের এই দিন, এই মাস, এই শহর তোমাদের জন্য হারাম’ (অর্থাৎ এর সম্মান বিনষ্ট করা হারাম)।
(ঘ) শুনে রাখ, জাহেলী যুগের সকল কিছু আমার পায়ের তলে পিষ্ট হ’ল। জাহেলী যুগের সকল রক্তের দাবী পরিত্যক্ত হ’ল। আমাদের রক্ত সমূহের প্রথম যে রক্তের দাবী আমি পরিত্যাগ করছি, তা হ’ল রাবী‘আহ ইবনুল হারেছ বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব-এর শিশু পুত্রের রক্ত। যে তখন বনু সাদ গোত্রে দুগ্ধ পান করছিল, আর হোযাইল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করেছিল’।
(ঙ) জাহেলী যুগের সকল সূদ পরিত্যক্ত হলো। আমাদের সূদ সমূহের প্রথম যে সূদ আমি শেষ করে দিচ্ছি সেটি হলো (আমার চাচা) আববাস বিন আব্দুল মুত্ত্বালিবের পাওনা সূদ। যার সবটুকুই বাতিল করা হল।
(চ) তোমরা নারীদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসাবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালেমার মাধ্যমে তাদেরকে হালাল করেছ। তাদের উপরে তোমাদের প্রাপ্য হক হ’ল এই যে, তারা তোমাদের বিছানা এমন কাউকে মাড়াতে দেবে না, যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা সেটা করে, তবে তোমরা তাদের প্রহার করবে যা গুরুতর হবে না। আর তোমাদের উপরে তাদের প্রাপ্য হক হ’ল উত্তমরূপে খাদ্য ও পরিধেয় প্রদান করা’।
(ছ) আর জেনে রাখ, আমি তোমাদের মাঝে ছেড়ে যাচ্ছি এমন এক বস্ত্ত, যা মযবুতভাবে ধারণ করলে তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। সেটি হ’ল আল্লাহর কিতাব।
(জ) আর তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। তখন তোমরা কি বলবে? লোকেরা বলল, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি সবকিছু পৌঁছে দিয়েছেন, (রিসালাতের আমানত) আদায় করেছেন এবং উপদেশ দিয়েছেন’। অতঃপর তিনি শাহাদাত অঙ্গুলী আসমানের দিকে উঁচু করে অতঃপর সমবেত জনমন্ডলীর দিকে নীচু করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক’ (তিনবার)।
৩. ফাযালাহ বিন ওবায়েদ (রাঃ) বলেন, বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِالْمُؤْمِنِ؟ مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَالْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ النَّاسُ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ وَالْمُجَاهِدُ مَنْ جَاهَدَ نَفْسَهُ فِى طَاعَةِ اللهِ وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ الْخَطَايَا وَالذُّنُوبَ
(ঝ) আমি কি তোমাদেরকে মুমিন সম্পর্কে খবর দিব না? সে ঐ ব্যক্তি যার হাত থেকে অন্যদের মাল ও জান নিরাপদ থাকে। আর মুসলিম সেই, যার যবান ও হাত থেকে অন্যেরা নিরাপদ থাকে। আর মুজাহিদ সেই, যে আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সর্বাত্মকভাবে নিয়োজিত করে এবং মুহাজির সেই, যে সকল প্রকার অন্যায় ও পাপকর্ম সমূহ পরিত্যাগ করে’।
উক্ত কথাটি আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (রাঃ)-এর বর্ণনায় অন্যভাবে এসেছে,الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللهُ عَنْهُ ‘মুসলিম সেই, যার যবান ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে এবং মুহাজির সেই, যে আল্লাহর নিষেধ সমূহ পরিত্যাগ করে’।
৪. আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আরাফাতের ময়দানে উটনীর পিঠে সওয়ার অবস্থায় প্রদত্ত ভাষণে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
أَلاَ وَإِنِّى فَرَطُكُمْ عَلَى الْحَوْضِ وَأُكَاثِرُ بِكُمُ الأُمَمَ فَلاَ تُسَوِّدُوا وَجْهِى أَلاَ وَإِنِّى مُسْتَنْقِذٌ أُنَاسًا وَمُسْتَنْقَذٌ مِنِّى أُنَاسٌ فَأَقُولُ يَا رَبِّ أُصَيْحَابِى. فَيَقُولُ إِنَّكَ لاَ تَدْرِى مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ-
(ঞ) মনে রেখ! আমি তোমাদের সকলের আগেই হাউয কাউছারে পৌঁছে যাব। আর আমি অন্য সকল উম্মতের মধ্যে তোমাদের আধিক্য নিয়ে গর্ব করব। অতএব তোমরা আমার চেহারাকে কালেমালিপ্ত করো না।
(ট) মনে রেখ! আমি অনেককে সেদিন মুক্ত করব এবং অনেকে সেদিন আমার থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তখন আমি বলব, ‘হে আমার প্রতিপালক! এরা তো আমার সাথী। তিনি বলবেন, তুমি জানো না তোমার পরে এরা (ইসলামের মধ্যে) কত বিদ‘আত সৃষ্টি করেছিল’ (ইবনু মাজাহ হা-৩০৫৭)।
সাহল বিন সা‘দ (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, এ জওয়াব পাওয়ার পর রাসূল (ছাঃ) বলবেন,سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ غَيَّرَ بَعْدِى ‘দূর হও দূর হও! যে ব্যক্তি আমার পরে আমার দ্বীনকে পরিবর্তন করেছ।
৫. মিখনাফ বিন সুলায়েম (রাঃ) বলেন,
كُنَّا وُقُوفًا مَعَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم بِعَرَفَاتٍ فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ : يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ عَلَى كُلِّ أَهْلِ بَيْتٍ فِى كُلِّ عَامٍ أُضْحِيَةً وَعَتِيرَةً- رواه الترمذى وأبو داؤد وابن ماجه-
(ঠ) আমরা আরাফাতের ময়দানে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে দাঁড়িয়েছিলাম। অতঃপর আমি তাঁকে বলতে শুনলাম যে, হে জনগণ! নিশ্চয় প্রত্যেক পরিবারের উপর প্রতি বছর একটি করে কুরবানী ও ‘আতীরাহ’।
৬. সুলায়মান বিন আমর ইবনুল আহওয়াছ তার পিতা হ’তে বর্ণনা করেন যে, এদিন রাসূল (ছাঃ) আরও বলেন,
أَىُّ يَوْمٍ هَذَا؟ قَالُوا يَوْمُ الْحَجِّ الأَكْبَرِ. قَالَ: فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ بَيْنَكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِى بَلَدِكُمْ هَذَا، أَلاَ لاَ يَجْنِى جَانٍ إِلاَّ عَلَى نَفْسِهِ لاَ يَجْنِى وَالِدٌ عَلَى وَلَدِهِ وَلاَ مَوْلُوْدٌ عَلَى وَالِدِهِ- أَلاَ وَإِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ أَيِسَ مِنْ أَنْ يُعْبَدَ فِى بِلاَدِكُمْ هَذِهِ أَبَدًا وَلَكِنْ سَتَكُونُ لَهُ طَاعَةٌ فِيمَا تَحْتَقِرُونَ مِنْ أَعْمَالِكُمْ فَسَيَرْضَى بِهِ-
(ড) আজকে কোন দিন? লোকেরা বলল, হাজ্জে আকবারের দিন। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান পরস্পরের জন্য হারাম। যেমন এই দিন ও এই শহর তোমাদের জন্য হারাম। ‘মনে রেখ, অপরাধের শাস্তি অপরাধী ব্যতীত অন্যের উপরে বর্তাবে না। পিতার অপরাধের শাস্তি পুত্রের উপর এবং পুত্রের অপরাধের শাস্তি পিতার উপর বর্তাবে না’।
(ঢ) মনে রেখ, শয়তান তোমাদের এই শহরে পূজা পাওয়া থেকে (অর্থাৎ তোমাদের কাফের হওয়া থেকে) চিরদিনের মত নিরাশ হয়ে গেছে। তবে যেসব কাজগুলিকে তোমরা তুচ্ছ মনে কর, সেসব কাজে তার আনুগত্য করা হবে, আর তাতেই সে খুশী থাকবে’। যেমন মিথ্যা, প্রতারণা, আপোষে ঝগড়া-মারামারি ইত্যাদি। যা পরবর্তীদের মধ্যে ঘটেছিল (মির‘আত)। জাবের (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছেوَلَكِنْ فِى التَّحْرِيشِ بَيْنَهُمْ ‘কিন্তু শয়তানী প্ররোচনা বাকী থাকবে।
(ণ) একই রাবী কর্তৃক অন্য বর্ণনায় এসেছে, أَلاَ إِنَّ الْمُسْلِمَ أَخُو الْمُسْلِمِ فَلَيْسَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ مِنْ أَخِيهِ شَىْءٌ إِلاَّ مَا أَحَلَّ مِنْ نَفْسِهِ ‘মনে রেখ! এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। অতএব কোন মুসলমানের জন্য তার ভাই-এর কোন বস্ত্ত হালাল নয় কেবল অতটুকু ব্যতীত যতটুকু সে তার জন্য হালাল করে’ (তিরমিযী হা-৩০৮৭)।
ইবনু আববাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে,لاَ يَحِلُّ لاِمْرِئٍ مِنْ مَالِ أَخِيهِ إِلاَّ مَا أَعْطَاهُ مِنْ طِيبِ نَفْسٍ وَلاَ تَظْلِمُوا ‘কোন ব্যক্তির মাল তার ভাই-এর জন্য হালাল নয়। যতক্ষণ না সে তাকে খুশী মনে তা দেয়। আর তোমরা যুলুম করো না। এদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সওয়ারীর পিঠে বসে একটি খুৎবা দিয়েছিলেন, দু’টি খুৎবা নয়। এতে প্রমাণিত হয় যে, মুসফিরের জন্য জুম‘আর ছালাত অপরিহার্য নয় (যাদুল মা‘আদ ২-২১৬)।
উপসংহার
আজকের আর্টিকেলে আলোচনার মূল বিষয় ছিলো কুরআন হাদিসের আলোকে হজ্জ্বের গুরুত্ব ও ফজিলত। হজ্জ্ব একটি ইবাদত, যা আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও বিশেষ মর্যাদা লাভ করা যায়। তাই প্রত্যেক সমর্থবান মুসলমানদের হজ্জ্ব পালন করা ফরজ। আয়েশা (রাঃ) হজ্জের বিধান জানার পর কখনো হজ্জ্ব ত্যাগ করেননি। হজ্জ্বের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে এর কার্যাবলী সম্পাদন করে বাড়ি ফিরা পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে পৃথক পৃথক ফযীলত ও মর্যাদা রয়েছে।
রাসূল (সাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন, إِنَّ لَكِ مِنَ الأَجْرِ عَلَى قَدْرِ نَصَبِكِ وَنَفَقَتِكِ ‘তোমার কষ্ট ও খরচের পরিমাণের উপর তোমার ছওয়াব প্রাপ্তি নির্ভর করবে। সুতরাং আমাদের উচিত হজ্জ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি সম্পন্ন করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে এর গুরুত্ব ও ফযীলত বুঝে তদানুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন- আমীন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url