শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও দোয়া

শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও দোয়া সহ এই রাতের কিছু আমল ও ফজিলত সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। ২৬ রমজান দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের রাত। মুসলমানদের কাছে এই রাত অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি রাত। ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ রাত কাটান।
শবে-কদরের-নামাজের-নিয়ম-ও-দোয়া
শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। মহান আল্লাহ তায়ালা অন্যান্য রাতের তুলনায় লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে এ রাতের ইবাদত অধিক উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়।
 
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, লাইলাতুল কদরে যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে কিয়াম করবে তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করা হবে। তাই এই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হওয়া চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়। রমজান মাসের আগমন ঘটলে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবিদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের নিকট এই মাস সমাগত হয়েছে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে প্রকৃতপক্ষে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়।

পেইজ সূচিপত্রঃ শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও দোয়াসমুহ

শবে কদরের নামাজের নিয়ম

শবে কদরের নামাজের নিয়ম জানার জন্য আপনারা অনেকেই আগ্রহী। শবে কদরের নামাজ মুলত নফল নামাজ, এটা নিজের ইবাদত। রমজান মাসের ২১ তারিখ হতে ২৯ তারিখের মধ্যে বিজোড় সংখ্যার রাত-ই পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাত নামে পরিচিত। তবে ২৭ রমজান অর্থাৎ ২৬ রমজান দিবাগত রাতকেই শবে কদরের রাত হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এই রাতে মূলত দুই রাকাত করে যত বেশি নামাজ পড়া যায় ততো বেশি ছওয়াব পাওয়া যায়। 
নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াব। এই ভাবে কমপক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি যে যত রাকাত সালাত আদায় করবে তার জন্য তত ভালো। এ রাতে নফল নামাজর পাশাপাশি দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত, ইস্তিগফার, জিকির বেশি বেশি আদায় করা উত্তম।

কেউ যদি উপরে উল্লেখিত সূরাগুলো না পারেন তাহলে সূরা ফাতিহা পড়ার পর যে সূরাগুলো আপনি পারেন তার মধ্য থেকে প্রতি রাকাতে একটি করে সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে। এছাড়া সালাতুল তাওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুল তাসবিহ নামাজও আপনি পড়তে পারেন। পাশাপাশি রাতের শেষভাগে কমপক্ষে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া অবশ্যই চেষ্টা করবেন। তাহলে শবে কদরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিলেন, এবার জেনে নিন নিয়ত সম্পর্কে।

শবে কদরের নামাজের নিয়ত

শবে কদরের নামাজের নিয়ত যেটা আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো, মনের ইচ্ছা, সংকল্প বা প্রতিজ্ঞা করা। এটি অন্তরের কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোনো কাজের শুরুতে মনের মধ্যে যে ইচ্ছাপোষণ করা হয়, সেটাকেই নিয়ত বলা হয়। ইসলামে নিয়ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সকল কিছুই নিয়তের উপর নির্ভরশীল। হোক সেটা ছোট কিংবা বড় কোনো কাজ। প্রত্যেক কাজে নিয়ত বিশুদ্ধ হতে হবে।
আরও পড়ুনঃ
শবে কদরের নামাজের নিয়ত বাংলা ও আরবি দু-ভাবেই করা যায়। শবে কদরের নামাজ পড়ার সময় আপনি যদি আরবি নিয়ত জেনে থাকেন তাহলে আপনি আরবিতে নিয়ত করবেন এবং আপনার যদি আরবি নিয়ত না জানা থাকে তাহলে আপনি বাংলাতে শবে কদরের নামাজের নিয়ত করতে পারেন। তাহলে চলুন আমরা এখন শবে কদরের নামাজের বাংলা এবং আরবি নিয়ত দুটাই জেনে নিই।

শবে কদরের নামাজের আরবি নিয়ত

نَوَيُتْ اَنْ اصَّلي لِلهِ تَعَالَى رَكْعَتيْ صَلّاه ليله القدر سَنُّهُ رَسول اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا الى جهَه اَلْكَعْبه الشَّريفُه اللَّهُ اكَّبِرْ

উচ্চারণঃ নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকয়াতাই সালাতিল লাইলাতিল ক্বাদরি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহ আকবার।

শবে কদরের নামাজের বাংলা নিয়ত

আমি ক্বেবলামূখী হয়ে আল্লাহ্ এর উদ্দেশ্যে শবে কদরের দু‘রাকআত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার।

শবে কদরের রাতের দোয়া

এ রাত ভাগ্য নির্ধারণের রাত, এ রাত পূর্বের গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের রাত, এ রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত। অতএব এ রাতে আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দোয়া করবেন এবং ইবাদতে মশগুল থাকবেন।হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে:- اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল ক্ষমা করতে ভালোবাসেন অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। 

এ ছাড়াও আল্লাহ তাআলার ক্ষমা লাভে কুরআনুল কারিমে তিনি বান্দার জন্য অনেক দোয়া তুলে ধরেছেন। যা নামাজের সেজদা, তাশাহহুদসহ সব ইবাদত-বন্দেগিতে পড়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। আর তাহলো- رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ

উচ্চারণ: রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।

অর্থ: হে আমার প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী। (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১১৮)

رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ

উচ্চারণ: রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।

অর্থ: 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।' (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১০৯)

رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ

উচ্চারণ: 'রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি।

অর্থ: হে আমার প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। (সুরা কাসাস : আয়াত ১৬)

رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ: রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান নার

অর্থ: হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬)

رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ

উচ্চারণ: রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।

অর্থ: হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো। (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)

رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ

উচ্চারণ: রাব্বানাগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।

অর্থ: হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর। (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)

سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ

উচ্চারণ: সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির।

অর্থ: ‘আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আল-বাকারাহ : আয়াত ২৮৫)

رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا

উচ্চারণ: ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।

অর্থ: হে আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের পাপ মোচন করুন। আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। তুমিই আমাদের প্রভু। (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২৮৬)

رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ

উচ্চারণ: রাব্বানাগফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি।

অর্থ: হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন। (সুরা হাশর: আয়াত ১০)

رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ

উচ্চারণ: রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়াংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।

অর্থ: হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪৭)

رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ

উচ্চারণ: রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সায়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মাআল আবরার।

অর্থ: হে আমাদের প্রভু! সুতরাং আমাদের গোনাহগুলো ক্ষম করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৩)

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং অশেষ নেকি হাসিল এর জন্য মুমিন মুসলমানের উচিত, সেজদায় গিয়ে তাসবিহ পড়ে কিংবা শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ ও দরূদ পড়ার পর নিজেদের গোনাহ থেকে মুক্তির জন্য কুরআনে বর্ণিত এ দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়া।

সূরা কদর বাংলা উচ্চারণ

সূরা আল-কদরঃ মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ আল কুরআনের ৯৭ তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৫ টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ১ টি। আল কদর সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। কদরের অর্থ মাহাত্ম্য ও সম্মান। এর মাহাত্ম্য ও সম্মানের কারণে একে লায়লাতুল-কদর তথা মহিম্মান্বিত রাত বলা হয়। এই সূরাতে পবিত্র কোরআন নাজিলের কথা এবং হাজার রাতের থেকে উত্তম শবে কদরের কথা আলোচনা করা হয়েছে।

উচচারণঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
ইন্না আনযালনাহু ফী লাইলাতিল কদর। অমা আদরা কামা লাইলাতুল কাদর। লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর। তানাযযালুল মালায়িকাতু অররূহু ফীহা বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমরি। সালামুন হিয়া হাত্তামাত্ব লাই’ল ফাজ্বর।

( بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ )


اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃِ الۡقَدۡرِ

وَ مَاۤ اَدۡرٰىكَ مَا لَیۡلَۃُ الۡقَدۡرِ

لَیۡلَۃُ الۡقَدۡرِ ۬ۙ خَیۡرٌ مِّنۡ اَلۡفِ شَهۡرٍ

تَنَزَّلُ الۡمَلٰٓئِكَۃُ وَ الرُّوۡحُ فِیۡهَا بِاِذۡنِ رَبِّهِمۡ ۚ مِنۡ كُلِّ اَمۡرٍ

سَلٰمٌ ۟ۛ هِیَ حَتّٰی مَطۡلَعِ الۡفَجۡرِ

অর্থঃ শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। নিশ্চয় আমি এটা (কুরআন) কদর রাতে নাযিল করলাম। আর আপনি কি জানেন, মহিমান্বিত রাত কি? কদর (মহিমান্বিত) রাত, হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে প্রত্যেক বরকত পূর্ণ বিষয় নিয়ে ফেরেশতা ও রূহ (জিবরাঈল) (দুনিয়াতে) অবতীর্ণ হয়, স্বীয় রবের নির্দেশে। সে রাতে সম্পূর্ণ শান্তি, ফজর পর্যন্ত বিরাজিত থাকে।

শবে কদর কতো তারিখ

শবে কদর কতো তারিখ এ সম্পর্কে নবী করীম (সাঃ) হতে যা কিছু বর্ণিত আছে, তার মাধ্যমে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছা মুশকিল। যেমন তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর হাদীসে বলেছেন, তোমরা শবে কদর অন্বেষণ কর, রমজানের শেষ ১০ রাতে ৯ দিন থাকতে, ৭দিন থাকতে। অর্থাৎ ২১,২৩,২৫। বোখারী শরীফের এক হাদীসে ২৭ এবং ২৯ অন্বেষণের নির্দেশ রয়েছে।

এই বিভিন্ন তারিখ সম্বন্ধে আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী (রহ) বলেছেন, আমার মতে এ ব্যাপারে আসল কথা হলো শবে-কদরের সময় সম্বন্ধে নবী করীম (সাঃ) কে যেরূপ প্রশ্ন করা হতো, তিনি সেই প্রশ্নের অনুকূল উত্তর প্রদান করতেন। তাঁকে বলা হতো, যে, নবী! তারিখে শবে কদরের অনুসন্ধান করবো কী? তিনি উত্তর দিতেন, হ্যাঁ ঐ অমুক তারিখেই অনুসন্ধান কর। (তিরমিযী শরীফ)

হযরত ইমাম মালেক (রহ) বলেছেন, রমজানের শেষ দশকের রাতে সমানভাবে ‘শবে-কদর' অনুসন্ধান করা উচিত। তাফসীরে ইবনে কাসীরে উল্লেখ আছে: হযরত সুফিয়ান সাওরী, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, আবূ সাওরী মুযানী, আবূ বকর ইবনে কুজাইমা (রহ) প্রমুখ উক্ত বর্ণনাকে দুরস্ত বলে মত পোষণ করেছেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪র্থ খণ্ড)

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) শবে কদর শেষের ১০ দিনের ৭ দিন অতিবাহিত হলে অথবা ৭ দিন বাকী থাকতে হয়ে থাকে। তিনি এ জন্য বলেছেন যে, আসমান ৭টি, যমীনও ৭টি, সপ্তাহের দিনও ৭টি, বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ ৭ বার, শয়তানকে পাথরও ৭ বার নিক্ষেপ করা হয়। এর উত্তরে হযরত ওমর (রা) ইরশাদ করেছেন, তোমার প্রজ্ঞা ঐ পর্যন্ত পৌঁছেছে, যে পর্যন্ত আমাদের জন্য পৌঁছা সম্ভব
নয়।

এ ব্যাপারে যেসব মতামত উল্লেখ করা হয়েছে, তা থেকে ২৭ তারিখ রাতের মতটি বিশেষত অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম গ্রহণ করেছেন। এমনকি হযরত উবাই (রা) দৃঢ়ভাবে এর স্বপক্ষে মত পেশ করেছেন এবং তিনি শপথও করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। ইমাম আহমদ (রহ)-এর মতও এ সম্পর্কে ইহাই
প্রমাণিত। 

শবে কদরের রাতে যে সমস্ত আমল করবেন

উন্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা:) একবার নবী করীম (সা) কে জিজ্ঞেস করলেন, যদি আমি শবে কদর পাই কী দোয়া করব ? তিনি উত্তরে বললেন, এই দোয়া করো- اللهم إنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنّى
হে আল্লাহ! আপনি অত্যন্ত ক্ষমতাশীল। ক্ষমা আপনার পছন্দনীয়। অতএব আমার গুনাহসমূহ আপনি মাফ করে দিন।
শবে-কদরের-রাতে-যে-সমস্ত-আমল-করবেন
রমজান মাস আমাদের আত্মশুদ্ধির একটি বিশিষ্ট মাস, তেমনি শবে কদরও। শবে কদরের শুভাগমন একমাত্র আমাদের কল্যাণের জন্য ঘটে থাকে। অতএব উক্ত রাতের বরকতসমূহ হতে সৌভাগ্যশীল হয়ে আপন প্রতিপালকের সন্তুষ্টিলাভের একান্ত প্রয়োজন রয়েছে: কিন্তু কোনো কাজই মেহনত বা সাধনা ছাড়া সাধিত হয় না। তাই এই রাতের বরকত লাভে সৌভাগ্যশীল হতে হলে অনেক কিছু ত্যাগ ও কোরবানী স্বীকার করতে হবে এবং অনেক কিছু অর্জন ও বর্জন করতে হবে ।

এ রাতে যে সমস্ত আমল করতে হবে

লাইলাতুল কদরে পবিত্র হয়ে সুরা ইখলাসের সঙ্গে যত বেশি ইবাদত করা যায় ততই ভালো। যেকোনো গুনাহ ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে বেঁচে থাকাও ইবাদত কবুল হওয়ার মাধ্যম। নিচে লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের রাতে যে সমস্ত আমল বেশি বেশি করে করতে হবে তার গুরুত্তবপূর্ণ কয়েকটি আমল আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো।

১। যেহেতু এই রাতে কোরআন নাযিল হয়েছে। তাই কোরআন মাজীদের সাথে এই রাতের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং এ রাতে বেশী করে কোরআন তেলাওয়াত করা চাই। কদরের রাতের মর্যাদার সঙ্গে যেহেতু কোরআন নাজিলের বিষয়টি সম্পর্কিত, তাই বুজুর্গ আলেমদের মতে, কদরের রাতে কোরআন তেলাওয়াত করা তাৎপর্যপূর্ণ। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে; আর মহিমান্বিত রজনী সম্বন্ধে তুমি কী জান? মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
২। নিজে রাত জেগে ইবাদত করা এবং নিজের অধীনস্ত ও অন্যদেরকেও জাগিয়ে ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করা।
৩। বেশী বেশী দুরূদ পাঠ করতে হবে। নবীজির প্রতি দরুদ পাঠ দোয়া কবুলে সহায়ক। এক হাদিসে নবীজি বলেছেন, যখন কেউ দোয়া করবে, সে যেন তার পবিত্র প্রতিপালকের প্রশংসা বর্ণনাযোগে ও আমার প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করে দোয়া আরম্ভ করে, তারপর যা ইচ্ছা প্রার্থনা করে। আরেক হাদিসে এসেছে, ‘নবী (স.)-এর ওপর দরুদ না পড়া পর্যন্ত যেকোনো দোয়া আটকে থাকে।
৪। বেশী পরিমাণে যিকির-সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদু লিল্লাহ, ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার পড়া।
৫। কদরের রাতে জামাতের সঙ্গে মাগরিব, এশা ও ফজর নামাজ আদায় করা খুব জরুরি বিষয়। কেননা হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে।
এরপর যত পারেন নফল নামাজ পড়বেন। কিয়ামুল্লাইল করবেন। তারাবি কিয়ামুল্লাইলের অংশ। শবে কদরে কিয়ামুল্লাইলের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে- مَنْ قَامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمانًا واحْتِسَابًا، غُفِر لَهُ مَا تقدَّم مِنْ ذنْبِهِ - متفقٌ عَلَيْهِ ‘কদরের রাতে যে কিয়ামুল্লাইল করে বিশ্বাস নিয়ে এবং নাজাতের প্রত্যাশায়, আল্লাহ তাআলা তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। 
৬। নফল নামায বিশেষ করে সালাতুত তাসবীহ পড়া।
৭। ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব ঠিকমত আদায় করা।
৮। আল্লাহ তা'আলার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা, তওবা করা।
৯। নফল নামাজ, তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলিল মাসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবিহ, তাওবার নামাজ, সালাতুল হাজাত,  সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া। 
১০। নামাজে কিরাত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা।
১১। সিজদার মধ্যে তাসবীহ পাঠ শেষে দুআ করা। কেননা সিজদাবনত অবস্থায় মানুষ তার রবের সবচেয়ে নিকটে চলে যায়। ফলে তখন দুআ কবুল হয়।
১২। কোরআন শরিফ, সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুয্যাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, ইয়া-সিন, সুরা ত্ব-হা, সুরা আর রহমান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা।
১৩। তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা।
১৪।  দোয়া-কালাম, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদি করা।
১৫। কবর জিয়ারত করা। যাদের বাবা, মা, আত্নী-স্বজন মারা গেছে তারা এই দিনে কবর জিয়ারত করবেন। কেননা কবর জিয়ারতের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির কবরের আযাব মাফ করে দেওয়া হয়।
১৬। জীবিত মৃত সকল মুসলমানের জন্য দোয়া করা অনেক বড় নেক আমল। এতে কোটি কোটি নেকি যোগ হয় আমলনায়। শবে কদরের মতো রাতে এই দোয়া না পড়া উচিত হবে না। এরকম একটি দোয়া হলো-رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ উচ্চারণ: ‘রব্বানাগ-ফিরলী ওয়ালি ওয়ালি-দাইয়্যা ওয়ালিল মু’মিনীনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিছা-ব। ’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব! আমাকে, আমার মাতা-পিতাকে এবং সব ঈমানদারকে আপনি সেই দিন ক্ষমা করে দিন, যেদিন হিসাব কায়েম করা হবে। ’ (সুরা ইবরাহিম: ৪১) এছাড়াও মা-বাবার জন্য কোরআনে বর্ণিত দোয়াগুলো করতে পারেন। নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করা।
১৭। মৃতদের জন্য পবিত্র কোরআনের এই দোয়াটিও করা যায়- رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ ‘রাব্বানাগফিরলানা ওয়া লি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা ছাবকুনা বিল ইমানি ওয়া লা তাঝআল ফি কুলুবিনা গিল্লাল লিল্লাজিনা আমানু রাব্বানা ইন্নাকা রাউফুর রাহিম।অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা কর এবং আমাদের সেসব ভাইকেও ক্ষমা কর যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে আর মুমিনদের প্রতি আমাদের হৃদয়ে কোনো বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় তুমি অতি স্নেহশীল ও পরম করুণাময়।
১৮। দান সদকা আল্লাহর রাগ প্রশমিত করে। দানশীল ব্যক্তিকে আল্লাহ বিশেষভাবে দয়া করেন। সর্বোপরি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার অন্যতম কার্যকর আমল হলো দান সদকা করা। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বিভিন্নভাবে দান-সদকার প্রতি উৎসাহিত করেছেন, এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করো।
১৯। ইতেকাফ কদরের রাতের বরকত লাভে সহায়ক। কেননা ইতেকাফকারী জাগতিক সব ব্যস্ততা পেছনে ফেলে মহান আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন হতে পারে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন।
২০। কদরের রাতে বুদ্ধিমানের মতো একটি আমল হলো কাজা নামাজ আদায় করা। রমজানের শেষ ১০ দিন কদর তালাশে প্রতিদিন ১৭ রাকাত ফরজ নামাজের কাজা আদায় করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন আলেমরা। কেননা লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাসের চেয়েও বেশি বরকতময়। এমন রাতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ কাজা পড়তে পারলে কমপক্ষে হাজার মাস তথা ৮৩ বছর ৪ মাস কাজা নামাজ আদায়ের মতোই হবে ইনশাআল্লাহ।

শবে কদরের ফজিলত

শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় কদরের রাতে নফল সালাত আদায় ও রাত জেগে ইবাদত করে আল্লাহ তার ইতঃপূর্বের যাবতীয় সগিরা গোনাহ ক্ষমা করে দেন। এছাড়াও, এ রাতে তওবা কবুল হয়। লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির উত্তম মাধ্যম হচ্ছে রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। মহানবী (সাঃ) প্রতি রমজানে ১০ দিন নিয়মিত ইতেকাফ করতেন।

১। এ রাতে আল্লাহ তা‘আলা পুরা কুরআন কারীমকে লাউহে মাহফুয থেকে প্রথম আসমানে নাযিল করেন। তাছাড়া অন্য আরেকটি মত আছে যে, এ রাতেই কুরআন নাযিল শুরু হয়। পরবর্তী ২৩ বছরে বিভিন্ন সূরা বা সূরার অংশবিশেষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনা ও অবস্থার প্রেক্ষিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র উপর অবতীর্ণ হয়।
২। এ রাতের ফজিলাত বর্ণনা করে এ রাতেই একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা অবতীর্ণ হয়েছে, যার নাম সূরাতুল কদর।
৩। এ এক রজনীর ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।
৪। এ রাতে পৃথিবীতে অসংখ্য ফেরেশতা নেমে আসে এবং তারা তখন দুনিয়ার কল্যাণ, বরকত ও রহমাত বর্ষণ করতে থাকে।
৫। এটা শান্তি বর্ষণের রাত। এ রাতে ইবাদত গুজার বান্দাদেরকে ফেরেশতারা জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তির বাণী শুনায়।
৬। এ রাতের ফাযীলত বর্ণনা করে এ রাতেই একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল হয়। যার নাম সূরা কদর।
৭। এ রাতে নফল সালাত আদায় করলে মুমিনদের অতীতের সগীরা গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হয়।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ قَامَ لَيْلَةُ الْقَدْرِ إِيْمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ


অর্থঃ যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব লাভের আশায় কদরের রাতে নফল সালাত আদায় ও রাত জেগে ইবাদত করবে আল্লাহ তার ইতোপূর্বের সকল সগীরা (ছোট) গুনাহ ক্ষমা করেদেন। (বুখারী : ১৯০১; মুসলিম : ৭৬০)

শবে কদরের রাতের গুরুত্ত্ব ও বৈশিষ্ট্য

এ রাতে ইবাদত মগ্ন মানুষ অধ:পতনের নিকৃষ্ট স্থান হতে মুক্তি লাভ করে সম্মানের উচ্চ আসন লাভ করতে সক্ষম হয় বলে এই রাত মহিয়সী, মহিমাময় এবং অতি সম্মানী। এ রাতে পবিত্র ফেরেশতাগণের শুভাগমন ঘটে, যেহেতু এই রাতে মানুষের ভাগ্য নির্ণয় করা হয়। এই রাতে পাপীদেরকে আপন কৃত পাপ কাজ হতে মুক্তির লাভের সুযোগ দেয়া হয় ইত্যাদি। এ জন্য এই রাতকে শবে-কদর অর্থাৎ সম্মানিত রাত বলা হয়।

কুরআন নাযিলের রাতঃ মুসলমানদের কাছে শবে কদর মহিমান্বিত বরকতময় এবং বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এই জন্য যে এ রজনীতে পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ কোরআনে ঘোষণা করেছেনঃ

নিশ্চয়ই আমি তা কোরআন অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল-কদর, আয়াত ১-৫)

কদরের রাত্রের যাবতীয় কাজের ইঙ্গিত দিয়ে এই রজনীর অপার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনের অন্যত্র ঘোষণা করেছেনঃ হা-মীম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা কোরআন এক মুবারকময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। (সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ১-৪)

ফেরেশতাদের অবতরণঃ ইসলাম ধর্ম মতে শবে কদরের রাতে ফেরেশতারা ও তাঁদের নেতা জিবরাঈল পৃথিবীতে অবতরণ করে উপাসনারত সব মানুষের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করতে থাকেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, শবে কদরে হজরত জিবরাঈল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট একদল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকে তাঁদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (মাযহারি)

লাইলাতুল কদরে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, সবকিছুর পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাদেরকে লিখে দেয়া হয়, এমনকি কে হজ্জ করবে, তা ও লিখে দেয়া হয়। মুসলমানদের কাছে কদরের রাতের গুরুত্ব অপরিসীম। কোরআনের সুরা কদরে উল্লেখ আছে, হাজার মাস উপাসনায় যে পূন্য হয়, কদরের এক রাতের উপাসনা তার চেয়ে উত্তম।

গুনাহ থেকে মুক্তিঃ লাইলাতুল কদরের রাতে সৎ এবং ধার্মিক মুসলমানদের ওপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। লাইলাতুল কদরে মুসলিমরা আল্লাহর কাছে মাগফিরাত, নাজাত ও ক্ষমা পাওয়ার পরম সুযোগ লাভ করে। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে ইসলামের মহানবী বলেন, যে ব্যক্তি এ রাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তাঁর পূর্বেকৃত সব গুনাহখাতা মাফ করে দেবেন। (বুখারি)

হাদীসের বর্ননা অনুযায়ী, লাইলাতুল কদরের রজনীতে যে বা যারা আল্লাহর আরাধনায় মুহ্যমান থাকবে, স্রষ্টা তাঁর ওপর থেকে দোজখের আগুন হারাম করে দেবেন। এ সম্পর্কিত হাদীসটি হল, সমস্ত রজনী আল্লাহ তাআলা লাইলাতুল কদর দ্বারাই সৌন্দর্য ও মোহনীয় করে দিয়েছেন, অতএব তোমরা এ বরকতময় রজনীতে বেশি বেশি তাসবিহ-তাহলিল ও ইবাদত বন্দেগিতে রত থাকো। অন্য হাদিসে তিনি বলেছেন, তোমরা তোমাদের কবরকে আলোকিত পেতে চাইলে মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর রাতে জেগে রাতব্যাপী ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দাও।

হাদিস অনুযায়ী ২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাতে কদর হতে পারে। তবে ২৬ রমজান দিবাগত রাতেই লাইলাতুল কদর আসে বলে আলেমদের অভিমত। আয়েশা থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে, মুহাম্মদ রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে শবে কদর সন্ধান করো। (বুখারি ও মুসলিম) আরেকটি হাদিসে মুহাম্মদ বলেছেন, মাহে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তোমরা শবে কদর সন্ধান করো। (সহীহ বুখারী)।

মহানবী (সাঃ) কে তার স্ত্রী আয়েশা শবে কদর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, হে রাসুলুল্লাহ! আমি যদি লাইলাতুল কদর পাই তখন কী করব? তখন নবী মত দেন, তুমি বলবে, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসেন অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। (তিরমিযি) লাইলাতুল কদর গোটা মানবজাতির জন্য অত্যন্ত পুণ্যময় রজনী এবং এই রাত বিশ্ববাসীর জন্য স্রষ্টার অশেষ রহমত, বরকত ও ক্ষমা লাভের অপার সুযোগ এনে দেয়। এ রাতে কোরান শরীফ নাজিল হয় যার অনুপম শিক্ষাই ইসলামের অনুসারীদের সার্বিক কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি, ইহকালীন শান্তি ও পারলৌকিক মুক্তির পথ দেখায়।

শবে কদরের বৈশিষ্ট নিম্মে উল্লেখ করা হলো

১। এ রাতের ইবাদত মানুষের কল্যাণময়ী কিতাব সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী কোরআন মাজীদে অবতীর্ণ হয়েছে।
২। হযরত ইবনে আবী হাতেম (রা)-এর রেওয়ায়েতে আছে: রাসূলুল্লাহ (সা) একবার বনী ইসরাঈলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। সে এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জিহাদে মশগুল থাকে এবং কখনও অস্ত্র সংবরণ করেনি। মুসলমানগণ এ কথা শুনে বিস্মিত হলে এ সূরা কদর অবতীর্ণ হয়। এতে এ উম্মতের জন্য শুধু এক রাতের ইবাদতই সে মুজাহিদের এক হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করা হয়েছে।

ইবনে জারীর (রহ:) অপর একটি ঘটনা এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, বনী-ইসরাঈলের জনৈক ইবাদতকারী ব্যক্তি রাতে ইবাদতে মশগুল থাকত ও সকাল হলেই জিহাদের জন্য বের হয়ে যেত এবং সারাদিন জিহাদে লিপ্ত থাকত। সে এক হাজার মাস এভাবে কাটিয়ে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তা'আলা ‘সূরা কদর' নাযিল করে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। এ থেকে আরো প্রমাণিত হয় যে, শবে-কদর শ্রেষ্ঠত্ব উম্মতে মোহাম্মদীরই বৈশিষ্ট্য। (তফসীরে মাযহারী)
৩। এ রাতে হযরত জিব্রাঈল (আ:) এবং আরও অসংখ্য ফেরেশতা সমগ্র বিশ্ব জুড়ে মানুষের কল্যাণার্থে তাশরীফ আনেন।
৪। অসংখ্যা ফেরেশতা মু'মিনদের জন্য (এবাদতকারী মু'মিন) মাগফিরাত
কামনা করেন।
৫। অসংখ্য ফেরেশতা ইবাদতে নিমগ্ন মু'মিনদের উপর শান্তি বর্ষিত হওয়ার প্রার্থনা করেন।
৬। হাদীস শরীফের মধ্যে রয়েছে রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের নিকট এমন একটি মাস এসেছে, যাতে এমন একটি রাত আছে, যার মূল্য হাজার মাস হতেও বেশী। যে ব্যক্তি রাতের ফজীলত ও বরকত হাসিল না করবে সে সমস্ত খায়ের বরকত হতে বঞ্চিত হবে। বস্তুত যে ব্যক্তি এ রাতে কিছু মাত্র ইবাদত বন্দেগীও করে না তার চেয়ে নিকৃষ্ট আর কেউ নেই।
৭। শবে কদরে হযরত জিব্রাঈল (আ:) অগণিত ফেরেশতার সাথে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। অত:পর যে মু'মিনকে যেখানে যে অবস্থায় আল্লাহর ইবাদতেও নিমগ্ন পেয়ে থাকেন, তাকে সেই অবস্থায় সালাম জানান।
৮। এ রাতে হযরত জিব্রাঈল (আ:) অসংখ্যা ফেরেশতার সঙ্গে যমীনে অবতরণ করেন এবং কা'বা শরীফে, মসজিদে নববীতে, বায়তুল মুকাদ্দিসে ও তুর পাহাড়ে একটি ঝান্ডা প্রোথিত করেন। অতঃপর সমস্ত ফেরেশতা মু'মিনদের ঘরে প্রবেশ করে তাঁদের জন্য মাগফিরাত এবং শান্তির দোয়া করতে থাকেন। তবে যে গৃহে কুকুর বা কোনো জীবন্ত প্রানীর ফটো থাকে, ফেরেশতারা ঐ ঘরে প্রবেশ
করেন না।
৯। ঐ রাতে সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় হতে প্রভাত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর তাজাল্লিয়াত (নূরের জ্যোতিসমূহ) বর্ষিত হয়। ঐ রাতে ফেরেশতা এবং জিব্রাঈল (আ:)-এর আগমন ঘটে, ঐ রাতে পবিত্র কোরআন নাযিল হয়েছে। ঐ রাতেই ফেরেশতাদের জন্ম হয়েছে। ঐ রাতে হযরত আদম (আ:)-এর সৃষ্টির সূচনা হয় এবং ঐ রাতে প্রার্থনা কবুল করা হয়।
১০। শবে কদর দু'টি। একটিতে বিশ্ব প্রশাসনের বিধি ব্যবস্থা নির্ধারিত হয়, এই শবে-কদর অনির্দিষ্ট । এক এক বছর এক এক রাতে অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয়টি হলো কল্যাণ, ফয়েজ ও বারাকাত, সওয়াব বৃদ্ধি এবং ফেরেশতাদের অবতরণ ইত্যাদির জন্য। ঘটনাক্রমে কোরআনমাজীদ অবতরণের সময় উভয়রাত রমজান মাসে একত্রিত হয় ।

শবে কদর ও ইতেকাফ এর গুরুত্ত্ব

ইতেকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শবে কদর প্রাপ্তি। রমজানের শেষ দশক ইতেকাফ করলে শবে কদর প্রাপ্তি প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। ইতেকাফের মূল কথা হলো সবকিছু ছেড়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যাওয়া। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত জেগে ইবাদত করবে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

ইতেকাফের সময়

নফল অথবা মুস্তাহাব ইতেকাফের জন্য মসজিদে কতো সময় অবস্থান জরুরী এ সম্পর্কে তানবীরুল আবসার কিতাবে রয়েছে, নফল ইতেকাফ সামান্য সময়ের জন্যও হতে পারে। অর্থাৎ যদি কেউ এক মিনিট, আধা মিনিটের জন্য মসজিদে ইতেকাফের নিয়তে অবস্থান, দাঁড়িয়ে বা বসে থাকে, তাহলে ঐ সময়টুকু ইতেকাফে পরিগণিত হবে। এ জন্যই আলেমগণ লিখেছেন যে, নামাযের জন্য মসজিদে প্রবেশের সাথে সাথে ইতেকাফের নিয়ত করে নিবে, তাহলে নামাযের সাথে সাথে নফল ইতেকাফের সওয়াবের অধিকারী হয়ে যাবে।

ইতেকাফের অধিক সময়ের কোনো সীমা নেই। কোনো ব্যক্তির ইচ্ছা হলে সারা জীবন ইতেকাফে কাটাতে পারে। কিন্তু যেমন ছাওমে বেছাল ইফতার না করে অনবরত রোযা রাখা এবং সওমে দাহর অর্থাৎ সারা বছর রোযা রাখা ইসলামের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয়। তেমনিভাবে জাগতিক সবকিছু বর্জন করে পরিবার-পরিজনের দায়-দায়িত্ব ছেড়ে সারা বছর ইতেকাফ করতে থাকাও ইসলামে দৃষ্টিতে পছন্দনীয় নয় বরং ইসলামের মৌলিক চাহিদারও বিরোধী।

তবে জীবনের যে কোনো অংশে যদি কোনো ব্যক্তি একাধারে কিছু অধিক সময় ইতেকাফ পালন করতে চায়, আর এতে পরিবার-পরিজনের অথবা অন্যান্যদের হক এবং প্রয়োজনীয় কাজকর্মের অসুবিধা না হয় তাহলে এর অবকাশ আছে। সুন্নাতে কেফায়া ইতেকাফের বেলায় শুধু রমজানের শেষ ১০ দিন নির্দিষ্ট। অন্য সময় এটা হয় না। হযরত আল্লামা ইউসুফ বিনূরী (রহ:) বলেন, তিন প্রকারের দ্বিতীয় প্রকার হলো সুন্নাতে কেফায়া, রমজানের শেষ দশকে আদায় করতে হয়। (মা'আরিফুস সুনান ফতোয়ায়ে শামী)

এই ইতেকাফ ৯ দিনেও হতে পারে। কারণ, অনেক সময় ২৯ দিনেই রমজানের মাস হয়। সুন্নাতে কেফায়া-ইতেকাফের সময় এর চেয়ে কম-বেশী হতে পারে না। ওয়াজিব ইতেকাফের জন্য নূন্যতম সময় হলো একদিন, এর চেয়ে কম সময়ের জন্য ইতেকাফের মান্নত হয় না। অধিক যত দিনের মন চায় তত দিনের মান্নত করা যায়। কিন্তু যেসব দিনে রোযা রাখা নিষেধ ঐ সকল দিনে ইতেকাফের মান্নত করা জায়েয না। কারণ, মান্নতের ইতিকাফের সময় রোযাও রাখতে হয়। কোনো না, রোযা ছাড়া ইতেকাফ আদায় হয় না।

ইতেকাফের গুরুত্ব

বছরে ১২ মাসের মধ্যে পবিত্র কোরআনে পৃথকভাবে একমাত্র রমজান মাসে কথা উল্লেখ রয়েছে। এর প্রতিটি দিন, রাত প্রতিটি মুহূর্ত বরকতময় ও বৈশিষ্ট্য মন্ডিত। পূর্ণ মাসটি যেন পুণ্যের সাধারণ সমাবেশ, মালায়ে আ'লার রহমাত, রূহানিয়াত, ও নূরের অপূর্ব প্রদর্শনী। বিশেষ করে, শেষ ১০ দিনে আল্লাহর অসংখ্যা বরকত ও রহমত উম্মতে মোহাম্মদীর উপর জোয়ার আসে আত্মার উন্নতি ঘটে।

এই দশকেই সাধারণত শবে-কদর আসন্ন প্রায় হয়। তাই এই দশকের ই'তেকাফের বিশেষ ফযীলত বয়েছে। রাসূলে করীম (সা) নিজেও এ দশকে ই'তেকাফ করেছেন এবং ই'তেকাফকারীদেরকে অগণিত সওয়াবের শুভ সংবাদ দিয়েছেন। তিনি এক হাদীসে ঘোষণা করেছেন-

মু’তাকিফ ব্যক্তি যাবতীয় গুনাহ হতে নিজেকে মুক্ত রাখে এবং তার জন্য এরূপ পুণ্যসমূহ জারী রাখা হয়, যেরূপ পুণ্যে অংশগ্রহণকারীর জন্য জারী রাখা। হয়।” অন্য আরেক হাদীসে রয়েছে “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের বাসনায়। একদিন ই'তেকাফ করবে, আল্লাহ তার এবং জাহান্নামের মধ্যে তিনটি গহ্বর সৃষ্টি করবেন, যার দূরত্ব আসমান ও যমীনের দূরত্ব অপেক্ষা অধিক হবে।

লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আমাদের যে ভুল ধারনা

লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আমাদের যে ভুল ধারনা আমরা অনেকেই মনে করি রমজান মাসের ২৬শে রমজান দিন পার হয়ে যে রাত্রী আছে সেটা লাইলাতুল কাদর বা শবে কদরের রাত্রী। আসলে এ ধারনাটি আমাদের ভুল। মূল বিষয় হচ্ছে রমজানের শেষ দশ ভাগের বা শেষের দশদিনের ভিতরে যে কোন একটি বিজোড়া রাত্রীতে এই লাইলাতুল কদরের রাত হতে পারে।
লাইলাতুল-কদর-সম্পর্কে-আমাদের-যে-ভুল-ধারনা
আর ২৬শে রমজান রাত্রীতে আমাদের দেশের মসজিদগুতে কুরআন খতম দেয়া হয় তাই এই রাত্রীতে প্রতিটি মসজিদে বিশেষ দোআর আয়োজন করা হয়। তাই বলে এটাই যে লাইলাতুল কদরের রাত্রী সেটাও পরিপূর্ণ বলা যাবে না। হয়ত ধারনা করা যেতে পারে।

শবে কদর কে আরবিতে লাইলাতুল কদর বলে। এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। লাইলাতুন অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং কদর শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। তাছাড়াও এর অন্য অর্থ হলো ভাগ্য, পরিমাণ এবং তাকদির নির্ধারণ করা। এ রাতে মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর অনুসারীদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়।

তাই এই রাত অত্যন্ত পুণ্যময় এবং মহাসম্মানিত হিসেবে পরিগণিত। কুরানের বর্ননা অনুসারে আল্লাহ এই রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই একটি মাত্র রজনীর উপাসনা হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। প্রতিবছর মাহে রমজানে এই মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর মুসলিমদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে ।

ইতিহাস পড়ে যতদূর জানা যায় ৬১০ হিজরীতে শবে কদরের রাতে মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত নবী মুহাম্মদ (সাঃ)এর নিকট সর্বপ্রথম কোরআন নাজিল হয়। কোন কোন মুসলমানের ধারণা তার নিকট প্রথম সূরা আলাক্বের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়। অনেকের মতে এই রাতে ফেরেশতা জীবরাইল এর নিকট সম্পূর্ন কোরআন অবতীর্ন হয় যা পরবর্তিতে ২৩ বছর ধরে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) নিকট তার বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে নাজিল করা হয়।

তবে মুসলমানদের জন্য এই রাতটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি রাত ।এই রাত সর্ম্পকে হাদিস শরীফে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। এমনকি আল কোরআনে সূরা ক্বদর নামেও একটি পূর্ণ সুরা নাজিল হয়েছে। এই সুরায় শবে কদরের রাত্রিকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মুহাম্মদ (সাঃ)এর পূর্ববর্তী নবী এবং তাদের উম্মতগণ দীর্ঘায়ু লাভ করার কারনে বহু বছর আল্লাহর ইবাদাত করার সুযোগ পেতেন।

কোরান ও হাদীসের বর্ননায় জানা যায় ইসলামের চার জন নবী যথা আইয়ুব, জাকরিয়া , হিযকীল ও ইউশা ইবনে নূন প্রত্যেকেই আশি বছর স্রষ্টার উপাসনা করেন এবং তারা তাদের জীবনে কোন প্রকার পাপ কাজ করেননি। কিন্তু মুহাম্মদ থেকে শুরু করে তার পরবর্তী অনুসারীগণের আয়ু অনেক কম হওয়ায় তাদের পক্ষে স্রষ্টার আরাধনা করে পূর্ববর্তীতের সমকক্ষ হওয়া কিছুতেই সম্ভপর নয় বলে তাদের মাঝে আক্ষেপের সৃষ্টি হয়। তাদের এই আক্ষেপের প্রেক্ষিতে তাদের চিন্তা দুর করার জন্য সুরা ক্বদর নাজিল করা হয় বলে হাদিসের বর্ননায় জানা যায়

শবে কদরের নামাজ সম্পর্কে শেষ কথা

মুমিন বান্দাদের জন্য লাইলাতুল কদর অত্যন্ত মঙ্গলময় এবং বরকতময় একটি রাত। এক রাত ইবাদত করে এক হাজার মাসেরও অধিক সময়ের ইবাদতের সাওয়াব পাওয়া যাবে। এর চেয়ে বড় সুবর্ণ সুযোগ আর কী হতে পারে। এ রাতের ইবাদত হতে বিমুখ ব্যক্তি সত্যিই হতভাগা। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি শবে কদর থেকে বঞ্চিত হয়েছে, সে ব্যক্তি সর্ব প্রকার মঙ্গল ও কল্যান থেকেই বঞ্চিত হলো।

তাই আসুন, পবিত্র লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও বরকতের অমিয় সুধা পান করে আল্লাহর কাছে উত্তম বান্দা হিসেবে ফিরে যাই। আশা করছি আপনি শবে কদরের নামাজের নিয়ম, শবে কদরের নামাজের নিয়ত ও শবে কদরের রাতের দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এ রাতের পুরস্কার লাভের আশায় কে কত বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এবং কত বেশি সচেষ্ট হয়, আর কে নাফরমান ও অলসে ঘুমিয়ে রাত কাটায়, সম্ভবত এটা পরখ করার জন্যই আল্লাহ তা‘আলা এ রাতকে গোপন ও অস্পষ্ট করে রেখেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url