ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে জেনে নিন ১২ টি উপায়


ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে জেনে নিন ১২ টি প্রাকৃতিক উপায়ের মাধ্যমে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানের নির্যাস কিভাবে আপনার  তৈলাক্ত, শুষ্ক ও মিশ্র ত্বকের জন্য উপকারী তা আজ আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো।
ঘরোয়া-পদ্ধতিতে-ত্বকের-যত্ন-নিবেন-কিভাবে-জেনে-নিন
ত্বকের যত্নে ক্লিনজিং, টোনিং আর ময়েশ্চারাইজিংয়ের জন্য ঘরোয়া উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। সবসময় বাইরের প্রডাক্টে নির্ভর নাই বা করলেন। ত্বকের যত্নে ফেসমাস্ক, স্ক্রাব, প্যাক ইত্যাদি ঘরে তৈরি করে নিতে পারেন। আর এই ঘরোয়া প্রডাক্টের কার্যকারিতাও অনেক বেশি। তাহলে জেনে নিন ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে ত্বকের যত্ন নিবেন প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে-

পেইজ সুচিপত্রঃ  ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্নে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান

ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার

ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে জেনে নিন নিম পাতা ব্যবহারের মাধ্যমে। ত্বক ভালো রাখতে নিমপাতা কতটা উপকারী তা বেশিরভাগ সবারই জানা। ত্বক ভালো রাখতে নিমপাতার ব্যবহার বহু ‍পুরোনো। নিমপাতা আপনার ত্বককে ভালো রাখতে নানা ধরনের জীবাণুকেই দূর করে না, সেইসঙ্গে ত্বকে ফিরিয়ে দেয় হারানো উজ্জ্বলতা। তবে ত্বকে নিমপাতা শুধু ব্যবহার করলেই হবে না,
জানতে হবে তার সঠিক ব্যবহারের নিয়ম। এটি সব ঋতুতেই ত্বকে ব্যবহার করতে পারবেন। তাহলে জেনে নিন ত্বকের যত্নে নিমপাতার ব্যবহার সম্পর্কে-

  • নিমপাতা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল। তাই খুব সহজেই ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে।
  • নিমপাতা ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
  • ত্বকের দাগছোপ কমাতে সাহায্য করে নিমপাতা।
  • নিমপাতা বলিরেখা প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
  • ত্বক কোমল রাখতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের জেল্লা বাড়ায়।
  • অ্যাকনে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
প্রশ্নঃ নিম পাতা ত্বকে দিলে কি হয়?

উত্তরঃ নিম পাতাতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় ত্বকের অনেকগুলো সমস্যা দূর করে। ব্রণ, ব্ল্যাকহেডসের মতো ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে এটি বেশ কার্যকরী। সেইসঙ্গে পরিষ্কার করে ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব। লোমকূপে লুকিয়ে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতেও সাহায্য করে এই উপকারী নিমের পাতা।

ক্ষত এবং ফুসকুড়ি নিরাময়ে নিম পাতার ব্যবহারঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে জেনে নিন ব্যবহারের মাধ্যমে। আমরা জানি ত্বকের পরিচর্যায় প্রাচীন কাল থেকেই নিম পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম তেলের মাধ্যমে তৈরি বিভিন্ন উপাদানগুলি দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের সমস্যাগুলির চিকিৎসা করে থাকে। নিম এবং হলুদের মিশ্রণ ত্বকের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী রোগের লক্ষ্যণগুলি নির্মূল করে। আলসার কিংবা ত্বকের যেকোনো দাগ-এর চিকিৎসা নিম দিয়ে করা হয়ে থাকে।

তবে এটি কেবল মাত্র বড়দের জন্যই। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা ঠিক হবে না। নিমের মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি ত্বকের যেকোনো জীবাণুর সংক্রমণ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে পারে। এবার জেনে নিন কিভাবে নিম পাতা ব্যবহার করে ক্ষত এবং ফুসকুড়ি নিরাময় করবেন

কিভাবে ব্যবহার করবেন
  • জল ভালো করে ফোটাতে হবে।
  • তারমধ্যে ১০-১৫ টি নিম পাতা দিয়ে দেবেন।
  • পাতাটি বিবর্ণ হওয়া পর্যন্ত ফুটিয়ে যাবেন।
  • জলের পরিমাণ যখন অর্ধেক হয়ে আসবে তখন গ্যাস নিভিয়ে দেবেন।
  • এবার এই জলটি ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করবেন।
  • প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে তুলোয় ভিজিয়ে নিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে শুয়ে পড়বেন।
  • এছাড়াও আপনার স্নানের জলে কয়েক ফোঁটা নিম তেল মিশিয়ে স্নান হয়ে গেলে জলটা সারা শরীরে ঢেলে দিন এর ফলে শরীর জীবাণুমুক্ত থাকবে।
ব্রণ নিরাময়ে নিমে পাতার ব্যবহারঃ তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী যারা তাদের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হল ব্রণ। তবে এক্ষেত্রে এটি নিরাময়ের জন্য হাতের কাছেই রয়েছে নিমপাতা। পাশাপাশি যে সমস্ত ব্রনর কারনে ব্রেকআউট ত্বকে দেখা যায় সে গুলির সমাধানেও নিমপাতা ব্যাবহার করতে পারে। নিম পাতা এবং হলুদের পেস্ট নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে মুখে ব্রনর দাগ কমে যেতে সহায়তা করে এবং এটি ত্বককে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং উজ্জ্বল করে তোলে। 
 
প্রয়োজনে নিম পাতা হলুদ একসাথে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করবে। এর পাশাপাশি নিমের মধ্যে রয়েছে অন্যতম ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্যসমূহ। যা ত্বককে খুব বেশি তৈলাক্ত না করে শুষ্কতা থেকে মুক্তি দেয় এবং ত্বকের ভারসাম্য রক্ষা করে। ত্বকে যেকোনো ধরনের চুলকানির ক্ষেত্রে নিম পাতার ব্যবহার করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি চোখের ডার্ক সার্কেল দেখা দিলেও সেক্ষেত্রেও নিমপাতার ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। চোখের ডার্ক সার্কেল কমাতে ও নিম গুরুত্বপূর্ন ভূৃমিকা নিয়ে থাকে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন
  • নিম পাতা জলে ফুটিয়ে নিয়ে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
  • ব্রণের দাগ এবং পিগমেন্টেশন নিরাময়ের জন্য নিম পাতার পাউডার জলের সাথে মিশিয়ে ব্রণের দাগের ওপর ব্যবহার করতে পারেন।
  • ত্বকে অত্যধিক ব্রণর সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিমের তেল ব্যবহার করতে পারেন।
  • নিম পাতা, তুলসী এবং চন্দন কাঠের গুঁড়ো ভালো করে পেস্ট করে নিয়ে গোলাপজল দিয়ে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
  • এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণর সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
  • ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস এর সমস্যা থাকলে ২ থেকে ৩ ফোটা নিম তেল জলের সাথে মিশিয়ে মুখে মেখে ১৫ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
  • নিম পাতা সিদ্ধ করে নিয়ে তারমধ্যে কমলালেবুর খোসা এবং বিট দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন কমলালেবুর খোসা এবং নরম হয়ে এলে সেটা প্যাক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন এবং অপেক্ষা করুন সমস্যার পাশাপাশি দাগ দূর হবে।
  • এই প্যাকটি ব্রণ পরিষ্কার করতে সহায়তা করবে। ব্রণ দূর করতে নিয়মিত নিম পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।
  • নিম পাতার গুড়া গোলাপজলে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে মুখে লাগান এবং আপনার ত্বক যদি খুব শুষ্ক হয় সেক্ষেত্রে এই প্যাকটিতে সামান্য পরিমাণে মধু এবং দই যোগ করতে পারেন।
  • এছাড়া স্নানের সময় সারা গায়ে মাখার জন্য নিম সাবান ব্যবহার করতে পারেন কিংবা নিমপাতা ভিজানো জল স্নানের পর গায়ে ঢালতে পারেন এতে যেকোনো ধরণের ত্বকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
নিমপাতার ক্লিনজারঃ অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় নিমপাতা ত্বকের অনেকগুলো সমস্যা দূর করে। ব্রণ, ব্ল্যাকহেডসের মতো ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে এটি বেশ কার্যকরী। সেইসঙ্গে পরিষ্কার করে ত্বকের অতিরিক্ত তেল। লোমকূপে লুকিয়ে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতেও সাহায্য করে এই উপকারী পাতা।

ক্লিনজার তৈরির জন্য কয়েকটি নিমপাতা নিন। এরপর একটি পরিষ্কার হাঁড়িতে পানি ফুটিয়ে নিন। তার ভেতরে নিমপাতা দিয়ে আরেকবার ফোটান। যতক্ষণ পর্যন্ত পানি সবুজ না হয়ে যায়, ততক্ষণ ধরে ফোটাতে থাকুন। এরপর পানি ছেঁকে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এই মিশ্রণ একটি পরিষ্কার ও শুকনো বোতলে সংরক্ষণ করুন। এটি টোনার হিসেবে ব্যবহার করুন। পরিষ্কার তুলোর সাহায্যে মুখে ও গলায় লাগিয়ে নেবেন। এতে আপনার ত্বক নানাভাবে উপকৃত হবে।

নিমপাতার ফেসপ্যাকঃ ত্বকের সাধারণ সমস্যা হোক কিংবা বড় কোনো ক্ষত, সবকিছুতেই একইভাবে কার্যকরী নিমপাতা। ত্বকে ইনফেকশন কিংবা জ্বালাপোড়া অনুভব করলে নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন। আবার রুক্ষ ত্বক ময়েশ্চারাইজ করতেও সাহায্য করে এই পাতা।

নিম পাতার ফেসপ্যাক তৈরির জন্য প্রথমে পাতা শুকনো করে গুঁড়া করে নিন। এরপর দুই টেবিল চামচ নিমপাতা গুঁড়া ও দুই টেবিল চামচ চন্দন পাউডার মিশিয়ে নিন। এবার তার সঙ্গে মেশান সামান্য পানি ও এক টেবিল চামচ গোলাপ জল। সবকিছু দিয়ে ভালোভাবে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এটি ফেসপ্যাক হিসেবে মুখে ব্যবহার করুন। এভাবে অপেক্ষা করুন অন্তত বিশ মিনিট। এরপ ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন। এই মাস্ক ত্বকে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনবে।

নিম পাতা ত্বকের অন্দরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে এবং ক্ষত সারিয়ে তুলতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এমনকী ত্বকের দাগছোপ মলিন করতেও নিমের ভূমিকা অপরিসীম।

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতা

ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে, শরীরের যত্নে ও ত্বকের সৌন্দর্য চর্চায় নিম পাতার উপকারিতা আমরা কমবেশি সবাই জানি। আমাদের দেশে একটি কথা প্রচলিত আছে- যে বাড়িতে নিম গাছ থাকে সেই বাড়িতে একজন ডাক্তার বাস করে। মানুষের চুল, শরীর ও ত্বক সমস্ত কিছু সুন্দর ও সুস্থ রাখতে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কিন্তু এতো কিছু জানা সত্ত্বেও নিম পাতার তেতো স্বাদ আর উটকো গন্ধের জন্য অনেকেই একে সহ্য করতে পারে না। আর তাছাড়া এই শীতে মুখে বা দেহে কোন প্যাক লাগানোর কথা চিন্তাও করা যায় না। তাই বলে কি এই পুরো শীতটা কাটবে শরীরের কোন যত্নআত্তি ছাড়াই? নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ দিয়ে বাড়িতে আপনি খুব সহজে এমন একটি বড়ি বানাতে পারেন যেটা কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যায় এবং এটি খেতে একটুও বিস্বাদ লাগবে না।

এই বড়িটি বানাতে যা যা লাগবে –

  • নিম পাতা ১ আঁটি 
  • কাঁচা হলুদ ২৫০ গ্রাম
  • পানি প্রয়োজন মত
এবার প্রথমে নিমের পাতাগুলো আঁটি থেকে ছিঁড়ে নিয়ে ভাল করে পানি দিয়ে ধুতে হবে। কাঁচা হলুদ ও খোসা কেটে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এবার নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ আলাদা আলাদা বা একত্রে শীল পাটায় খুব মিহি করে বেটে নিবেন।

এবার এই মিশ্রণটি থেকে অল্প অল্প করে মিশ্রণ নিয়ে দুই হাতের তালুর সাহায্যে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করুন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে খুব বেশি ছোট যেন না হয়। কারণ রোদে শুকালে এগুলো আরও ছোট হয়ে যাবে। এবার সবগুলো বড়ি একটি ট্রে’তে বিছিয়ে নিয়ে রোদে শুকাতে দিতে হবে। মাঝে মধ্যে ২-১ বার এপাশ ওপাশ করে উলটে দিতে হবে যেন কোন পাশ ভেজা না থাকে। এভাবে ৩-৪ দিন রোদে শুকালে বড়িগুলো থেকে সব পানি শুকিয়ে যাবে। এখন একটি পরিষ্কার বায়ুরোধী পাত্রে বড়িগুলো আপনি অনেকদিন ধরে সংরক্ষণ করতে পারবেন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে বা রাতে ঘুমানোর আগে একটি করে বড়ি পানি দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলুন।

উপকারিতা
  • নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ এর উপকারিতা বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না। নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ এর এই বড়িটি যেহেতু আপনি খাচ্ছেন সেহেতু এটি আপনার শরীরে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয়ভাবে কাজ করবে। মুখের ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের মত কার্যকরী বন্ধু আপনি আর পাবেন না।
  • এই বড়িটি শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ত্বকের রঙ উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে সেই প্রাচীনকাল থেকে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা হয়। কাঁচা হলুদ এ আছে anti-oxygen যা ত্বকের বলি রেখা দূর করে ও বার্ধক্য জনিত নানাবিধ সমস্যা প্রতিরোধ করে কোন প্রকার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই। 
  • নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ শরীরের পরিপাক যন্ত্রকে সচল রেখে সঠিক বিপাক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে। নিম পাতা শরীরের অ্যালার্জি জনিত সমস্যা, চুলকানি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী।
  • এই শীতে পাবেন সুস্থ ও সুন্দর ত্বক যা আপনার সবসময়ের কাম্য। তাহলে আজই তৈরি করে ফেলুন নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ দিয়ে সহজ ও কার্যকরী এই বড়িটি। আর নিয়মিত খাওয়ার একমাসের মধ্যে পার্থক্যটা আপনি নিজেই অনুভব করতে পারবেন।
  • নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের এই ব্যাবহার আমার নিজস্ব একটি উদ্ভাবনী। আমি নিজে এতে অত্যন্ত উপকৃত হয়েছি। আশা করছি আপনারাও খুব উপকৃত হবেন। নিজে ভালো থাকুন, ভালো রাখুন আপনার প্রিয়জনদেরও।

ত্বকের যত্নে নিম পাতার উপকারিতা

রুপচর্চার রুটিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি হলো নিম পাতা। ব্রণ, ব্ল্যাকহেড, বলিরেখা বিভিন্ন সমস্যাতে নিঃসন্দেহে নিম পাতা ব্যবহার করা যায়। নিমপাতা আপনার ত্বককে ভালো রাখতে নানা ধরনের জীবাণুকেই দূর করে না, সেইসঙ্গে ত্বকে ফিরিয়ে দেয় হারানো উজ্জ্বলতা। তবে ত্বকে নিমপাতা শুধু ব্যবহার করলেই হবে না, জানতে হবে এর সঠিক নিয়ম। চলুন জেনে আসি ত্বকের যত্নে নিম পাতার উপকারিতা

ত্বকের ইনফেকশন দূর করেঃ নিম পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাংগাল এবং অ্যান্টিভাইরাল উপাদান থাকায় এটি ত্বকের ইনফেকশন সারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর জন্য কয়েকটি নিম পাতা নরম হওয়া পর্যন্ত সেদ্ধ করতে হবে। পানি ছেঁকে গোসলের পানির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলুন। প্রতিদিন এ পানিতে গোসল করলে ত্বকের ইনফেকশন ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।

ব্রণ দূর করেঃ ত্বকের সিবাকাস গ্রন্থিতে অতিরিক্ত এবং ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া থেকে ব্রণের সৃষ্টি হয়। নিমপাতা এগুলো সারিয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিমপাতা সেদ্ধ করে সে পানিতে একটি তুলার বল ডুবিয়ে পুরো মুখটা মুছে ফেলুন। আপনি মুখের অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব কমাতে চাইলে শশা-নিমের ফেসপ্যাক কিংবা নিম-টক দইয়ের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।

টোনার হিসেবেঃ প্রত্যহ ব্যবহার করলে নিম বলিরেখা এবং মুখের দাগ দূর করতে বেশ কার্যকরী। এটি মুখের কালচে ভাবও কমিয়ে আনে। ছেঁকে নেওয়া নিম পাতার পানি ব্রণের দাগ হালকা করে ত্বককে সুন্দর করতে সাহায্য করে। এর জন্য নিমপাতা সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিন। ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং প্রতি রাতে মুখের ত্বকে লাগান। তৈলাক্ত ত্বক হলে এর সঙ্গে গোলাপ জল মেশাতে পারেন। পরের দিন সুন্দরভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

শুষ্ক ত্বকের যত্নেঃ এটি ত্বককে নরম ও কোমল করে ত্বককে সুস্থ রাখে। অল্প পরিমাণ নিমপাতার গুঁড়ো নিয়ে এতে কয়েক ফোঁটা জলপাই তেল যোগ করুন। এটি পুরো মুখে ভালোমতো লাগান এবং কিছুক্ষণ রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন বা দু’দিন এ ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন। এছাড়া তিন টেবিল-চামচ নিম পাউডারের সঙ্গে সমপরিমাণ হলুদ গুঁড়া নিয়ে পরিমাণ মতো দুধ মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করতে হবে। মুখে মেখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

ব্ল্যাকহেড এবং মুখের গর্ত কমাতেঃ নিম মুখের ব্ল্যাকহেড, হোয়াইটহেড এবং বড় লোমকূপের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে আপনাকে নিম পাতা গুঁড়োর সঙ্গে কমলালেবু খোসার গুঁড়ো মেশাতে হবে। দুই ধরনের গুঁড়ো মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে এর সঙ্গে অল্প মধু, দুধ এবং টক দই মেশান। সপ্তাহে অন্তত তিনবার ব্যবহার করুন ভালো ফলাফলের জন্যে। আপনার শুধু ব্ল্যাকহেডের সমস্যা থাকলে আক্রান্ত স্থানে নিম তেল মালিশ করুন।

মুখের উজ্জ্বলতাঃ নানা কারণে চেহারা অনুজ্জ্বল হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিমপাতার পাউডার বেশ কার্যকর। কিছু নিমপাতা রোদে শুকিয়ে পাউডার বানিয়ে নিন। পরে এগুলো ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এতে চেহারার ক্লান্তিভাব ও অনুজ্জ্বলতা দূর হবে এবং আরও সতেজ দেখাবে।
 
ত্বকের দাগ কমাতেঃ নিম ত্বকের তেলের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, ক্ষত সারায়, কোলাজেন বৃদ্ধি করে এবং ব্রণের কারণে হওয়া দাগ কমাতেও সহায়তা করে। এটা ত্বকের কোষের আরোগ্যলাভ করতে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। নিম প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের হাইপার পিগমেন্টেইশন ও দাগ কমাতে সহায়তা করে। ভালো ফলাফল পেতে নিমপানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন।

জ্বালাভাব কমাতেঃ কয়েক ফোঁট নিমতেল ও নারিকেল-তেল সমপরিমাণে মিশিয়ে ত্বকে লাল হয়ে যাওয়া বা জ্বালা করা স্থানে হালকা হাতে মালিশ করুন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন যেন তেল ত্বকের সঙ্গে মিশে যায়। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ত্বকের ক্লান্তিভাব দূর করতেঃ
তাজা নিমপাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে যেন পাতা নরম হয়ে যায়। ওই পেস্ট ত্বকে মেখে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
 
নিমের তেলঃ ব্রণ সারাতে নিম তেলও ব্যবহার করতে পারেন। এক কাপ তাজা নিম পাতা সামান্য জল দিয়ে বেটে নিন। একটি পাত্রে এক কাপ নারকেল তেল নিয়ে গ্যাসে বসান। এতে নিমের পেস্ট দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। আঁচ কম রাখবেন। বেশ কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। তেল ঠান্ডা করে ছেঁকে নিয়ে বোতলে ভরে রাখুন। ব্রণ নিরাময়ের জন্য এটি ব্যবহার করতে পারেন। এই তেলে তুলো ডুবিয়ে ব্রণর জায়গায় লাগান। ২০ মিনিট এভাবেই রেখে দিন। তারপর হালকা গরম জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
 

ত্বকের যত্নে নিম পাতার ফেসপ্যাক

ত্বককে ব্রণমুক্ত রাখতে, রুক্ষতা দূর করতে, উজ্জ্বল করতে, সতেজ ও দাগমুক্ত রাখতে নিমপাতার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। নিমপাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে, যা ত্বকের সব ধরনের সমস্যার সমাধান করে। বিশেষ করে, ব্রণের সমস্যা সমাধানে এটি বেশ কার্যকর। আর প্রাকৃতিক এই উপাদানের সঙ্গে অন্য উপাদান ব্যবহার করলে এর কার্যক্ষমতা কয়েক গুণ বেড়ে যায়
 
এই গরমে চাঁদিফাটা রোদে যাঁদের নিত্যদিন বেরোতে হচ্ছে, তাঁদের ত্বকের যত্নে নিম একাই একশো! সারা সপ্তাহের খাটনির পর উইকেন্ডের রূপচর্চায় নিমকে রাখুন সঙ্গে। ত্বকে চুলকানি হোক দাগছোপ, সব দিক থেকেই মিলবে মুক্তি। এছাড়াও গরমের ক্লান্তির মাঝে ত্বকে জেল্লা ফেরাতে নিমের খুব সহজ কিছু প্যাক তৈরির উপায় দেখে নিন।

নিমপাতার ফেসপ্যাকঃ প্রথমে একমুঠো পরিষ্কার নিমপাতা নিন। এরপর তা ভালো করে বেটে নিন বা পেস্ট করে নিন। এবার সেই পেস্টের সঙ্গে মেশান সামান্য লেবুর রস। আর মেশাতে পারেন অল্প গোলাপ জল। পেস্ট খুব বেশি পাতলা করবেন না। এবার সেই মিশ্রণ মুখে ভালো করে লাগিয়ে নিন। মুখের পাশাপাশি ঘাড়ে, বগলে, কনুইতেও লাগিয়ে নিতে পারেন। এভাবে রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ব্যবহার করলে দ্রুতই ব্রণের সমস্যা দূর হবে।

নিমপাতা ও অ্যালোভেরার ফেসপ্যাকঃ ত্বকের যত্নের জন্য উপকারী একটি উপাদান হলো অ্যালোভেরা। এর সঙ্গে নিমপাতা মিশিয়ে ব্যবহার করলে আরও বেশি উপকার পাবেন। ব্রণ ও এর দাগছোপ দূর করার জন্য নিম পাতা শুকিয়ে নিন গুঁড়া করে নিতে হবে। এবার সেই গুঁড়া অ্যালেভেরার পাতার ভেতরের জেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। এবার পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এরপর সামান্য লেবু আর মধু মিশিয়ে তা মুখে মাখুন। পরে ভালো করে ধুয়ে নিন।

নিমপাতা, চন্দন ও হলুদের ফেসপ্যাকঃ ব্রণ দূর করার জন্য আপনি নিমপাতার সঙ্গে চন্দন মিশিয়েও একটি প্যাক তৈরি করতে পারেন। যাদের ঠান্ডালাগার ভয় রয়েছে তারা চন্দনের বদলে হলুদ বাটাও মেশাতে পারেন এই প্যাক তৈরিতে। তবে ব্রণের সমস্যার ক্ষেত্রে চন্দনই বেশি কার্যকরী। এই দুই উপাদান মিশিয়ে নিন। এরপর সেই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন মিনিট দশেক। এরপর মুখ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। শুকনো তোয়ালে দিয়ে আলতো হাতে মুখ মুছে মুখে গোলাপজল লাগিয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলেই উপকার পাবেন।

নিম ও চন্দনের ফেসপ্যাকঃ
নিম ও চন্দন, উভয় উপাদানই ত্বকে পুষ্টি জোগায়। ব্রণ, র‍্যাশ এবং জ্বালা নিরাময়ে সহায়তা করে। ২ টেবিল চামচ নিম পাউডারের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ চন্দন পাউডার, ১ টেবিল চামচ গোলাপ জল এবং পরিমাণমতো জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন এই ফেসপ্যাক। তারপর ঠান্ডা জলে মুখ ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলুন।

নিম, বেসন এবং হলুদের ফেসপ্যাকঃ তৈলাক্ত এবং ব্রণ হওয়া ত্বকের জন্য এই স্ক্রাব দারুণ উপকারী। এটি ব্রণ নিরাময় করে এবং ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ করে তোলে। ১ টেবিল চামচ নিম পাউডারের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ বেসন, আধা টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ো এবং আধা টেবিল চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। ঘরে তৈরি এই স্ক্রাব দিয়ে মুখে মিনিট পাঁচেক ম্যাসাজ করুন এবং আরও ১৫ মিনিট মুখে রেখে দিন। তারপর ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন।

নিম ও শসার ফেসপ্যাকঃ
নিম ও শসার এই ফেসপ্যাকও ব্রণ, পিম্পল, জ্বালাপোড়া কমায়। শসা পেস্ট করে নিয়ে এর সঙ্গে ১ চা চামচ নিম পাতা গুঁড়ো এবং ১ চা চামচ অরগান অয়েল মিশিয়ে মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।

নিম ও লেবুর ফেসপ্যাকঃ ব্রণ কমাতে সাহায্য করে এই ফেসপ্যাক। লেবু ব্রণের দাগছোপ হালকা করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। ২ টেবিল চামচ নিম পাউডারের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মুখে সমানভাবে এই ফেসপ্যাক লাগান। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

নিম ও দইয়ের ফেসপ্যাকঃ নিম ও দই উভয়ই ত্বকের জন্য ভীষণ জরুরি। নিম ও দইয়ের ফেসপ্যাক ত্বকের কালচে দাগছোপ দূর করবে। এছাড়াও ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে এই ফেস প্যাক। কয়েকটি নিম পাতা ধুয়ে নিয়ে পেস্ট করে নিন। এক টেবিল চামচ নিম পাতার পেস্টের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে মুখে লাগান। ১০-১৫ মিনিট রেখে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পরিষ্কার জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল

ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে জেনে নিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করে। ত্বকের সুস্থতায় অলিভ অয়েল জাদুর মত কাজ করে। শীতকালে অনেকের ত্বক অতিরিক্ত রুক্ষ হয়ে গেলেও শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় অনেকে বারো মাসই ভুগে থাকেন। শরীর তার চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পানি না পেলে বা জেনেটিক কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, যা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। 

শুষ্ক ত্বকের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে শরীরকে ভিতর থেকে হাইড্রেট রাখার পাশাপাশি ব্যবহার করা যেতে পারে অলিভ অয়েল। অলিভ অয়েল বাইরে থেকে ত্বককে আদ্রতা দেয় ও শুষ্কতা অনেক অংশে কমিয়ে দেয়। সরাসরি অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা মশ্চারাইজারের সাথে মিশেও অলিভ অয়েল তেল ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। তবে ঋতুভেদের নির্ভর করছে কতটুকু পরিমাণ অলিভ অয়েল ত্বকে ব্যবহার করবেন। শীতের সময় পানি সংস্পর্শে গেলে অলিভ অয়েল মেখে নেয়া যেতে পারে।
 
কারণ শীতের সময় আবহাওয়াতে আর্দ্রতার পরিমাণ সবচেয়ে কম থাকে তাই শুষ্কতার প্রবণতা অনেক বেশি বেড়ে যায়। অনেকে মনে করেন অলিভ অয়েল শুধু শুষ্ক ত্বকের জন্য কিন্তু তৈলাক্ত ত্বকেও পরিমাণ বুঝে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে৷ কারণ অলিভ অয়েল ত্বককে শুষ্কতা দূর করার পাশাপাশি আরো অনেক উপকার দিয়ে থাকে।

প্রশ্নঃ অলিভ অয়েল কিভাবে চুলে ব্যবহার করে?

উত্তরঃ প্রথমে অলিভ অয়েল কুসুম গরম করে নিতে হবে। এরপর আপনার চুলকে কয়েকভাগে ভাগ করে মাথার ত্বকে আলতোভাবে অলিভ অয়েল মালিশ করতে হবে। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়তে সহায়তা করে। সারা রাত রেখে পরদিন সকালে শ্যাম্পু করে নিতে হবে।

রোদে পুড়ে কিংবা নানা কারণে অনেকের অকালে বলি রেখা বা বয়সে ছাপ মুখে পরে যায়। মুখের বলিরেখা ও পোরস কমাতে অলিভ অয়েল সাহায্য করে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের প্রবণতা অনেক বেশি থাকে। অলিভ অয়েল ব্রণের ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে। তবে তৈলাক্ত ত্বকে খুব বেশি পরিমাণে অলিভ অয়েল ব্যবহার না করাই ভালো, তাদের ত্বক তেল চিটচিটে তারা সরাসরি অলিভ অয়েল ব্যবহার না করে মশ্চারাইজারের সাথে মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করতে পারে৷
 
অনেকের দেহের বিভিন্ন অংশে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের সমস্যা থাকে ফাঙ্গালের মধ্যে অলিভ অয়েল লাগালে ফাঙ্গালের ব্যাকটেরিয়া অনেকটা কমে আসে। শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন হাটু, কোনুই, কাঁধ এসব জায়গায় কালো দাগ পড়ে যায় সেসব স্থানেও অলিভ অয়েল ভালো করে মাসাজ করা যেতে পারে। মাসাজের ফলে সেসব স্থানের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পেয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় ও নানা ধরনের সমস্যা দূর হয়।

অনেকের পায়ের গোড়ালি ফেটে গিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যা থাকে সে সমস্যা দূর করতে নিয়মিত অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। অলিভ অয়েল ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে ত্বকের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফিরে আসে ও মলিনতা কমে যায়। অলিভ অয়েল এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এর ভিটামিন ডি ও ভিটামিন কে, যা ত্বকের নানা ধরনের ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

রোজ টুকটাক মেকআপ সবারই করা হয়, ঘরে ফিরে সেই মেকআপ ভালো করে তুলে ফেলা অনেক বেশি জরুরী। তা না হলে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে গিয়ে ব্রনের মত নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মেকআপ তুলে ত্বকে পরিষ্কার করতেও অলিভ অয়েল সাহায্য করতে পারে। সুতির কাপড় কিংবা তুলোর মধ্যে কয়েক ফোটা অলিভ অয়েল নিয়ে সম্পূর্ণ মুখে মাসাজ করলে পুরো মেকআপ উঠে আসে।

অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। ত্বকের নিয়মিত যত্নে তেলটি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। নানান ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ এই তেল আমাদের মুখে বয়সের ছাপ দূর করতেও কাজ করে।

ত্বকে অলিভ ওয়েল ব্যবহারের উপকারিতা

ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েলের ব্যবহার বেশ পুরোনো। রূপচর্চার একটি অপরিহার্য অংশ এটি। এতে থাকে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্টস, ভিটামিন ই ও সি। এসব উপাদান আমাদের ত্বক ভালো রাখার পক্ষে যথেষ্ট সহায়ক। এটি পুষ্টি জোগায় ত্বকের ভেতর থেকে। যে কারণে ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল। ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে জেনে নিন ত্বকে অলিভ ওয়েল ব্যবহারের মাধ্যমে-

ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষাঃ আমাদের ত্বকে পানির পরিমাণ কমে গেলে ত্বক রুক্ষ হতে শুরু করে। নিয়মিত অলিভ ওয়েলের ব্যবহার এই ঘাটতির আশঙ্কা দূর করে। প্রচুর ভিটামিন এ ও ই-এর পাশাপাশি এই তেলে ভিটামিন ডি ও কে থাকে, যা ত্বকের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশকেও সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেয়। তাই এটিকে সরাসরি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে বা ক্রিমের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু ঠিক করতেঃ কনুই বা হাঁটুর ছিলে যাওয়া চামড়া অথবা কোনো হালকা আঘাতে অলিভ ওয়েল ব্যবহার বেশ কার্যকরী। পাশাপাশি মুখের ব্রণ রোধেও ভূমিকা রাখে এটি। ব্রণের জন্য দায়ী বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টিতে বাধা দেয় তেলটির বিভিন্ন উপাদান। রোজাসিয়া ও সোরিয়াসিসের মতো রোগগুলোকেও বেশি বাড়তে দেয় না এটি।

মুখের সজীবতায়ঃ আমাদের ত্বকের অন্যতম উপাদান কোলাজেনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে অলিভ ওয়েল। তাছাড়া এতে থাকা অলিক এসিড ত্বকের নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে, মুখের ত্বককে করে তোলে আরও নরম, এনে দেয় মুখের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা।

বয়সের ছাপ দূর করতেঃ সময়ের সঙ্গে মুখে-শরীরে বয়সের ছাপ পড়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তার সঙ্গে যদি যুক্ত হয় দূষিত পরিবেশ, মানসিক চাপ বা অন্য কোনো কারণ, তাহলে তো কথাই নেই। আর এর সমাধানেও আছে অলিভ ওয়েলে। এই তেলে পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা বয়স্ক হওয়ার জন্য দায়ী ফ্রি র‍্যাডিকেল তৈরি হতে দেয় না। পাশাপাশি সূর্যের আলো থেকেও মুখকে সুরক্ষা দেয়।

ত্বক পরিষ্কার রাখতেঃ প্রতিনিয়তই আমাদের ত্বককে পরিষ্কার রাখতে হয়। অলিভ ওয়েল সেই নিয়মিত কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মুখ থেকে মেকআপ বা সানস্ক্রিন ক্রিম তোলার ক্ষেত্রে তেলটি কাজে দেবে। মেকআপ তোলার জন্য বিভিন্ন সামগ্রী বাজারে পাওয়া গেলেও, এগুলোতে মুখের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু অলিভ ওয়েল সরাসরি বা প্যাডে মেখে মুখে লাগালে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই থাকে না।

অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টঃ অলিভ অয়েলে আছে Oleic acid এবং Squalene নামক উপাদান। যা অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে। এই ধরনের উপাদান আপনার ত্বককে নানা ক্ষতিকারক উপাদানের থেকে রক্ষা করে। ফলে ত্বক ভালো থাকে। বজায় থাকে প্রাকৃতিক জেল্লা।

এছাড়া সহজেই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। ৪০ পেরলেও আপনার ত্বকের জেল্লা থাকে একদম তরুণীদের মতোই। ‘অল্টারনেটিভ মেডিসিন রিভিউ: আ জার্নাল অফ ক্লিনিকাল থেরাপটিক’ জার্নালে প্রকাশিত ২০০৭ সালের একটি গবেষণায় অলিভ অয়েলের এই গুণের উল্লেখ করা হয়েছে।

ময়শ্চারাইজারঃ প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার হিসেবে এই তেলকে ব্যবহাল করতে পারেন আপনি। এর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড। যা ত্বকের টানটানভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে। ত্বক থাকে মসৃণ। প্রাকৃতিক জেল্লাও হয় দেখার মতো। এই শীতে নিয়মিত অলিভ অয়েল মাখতে পারলে আপনার ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতাও বজায় থাকবে। জেল্লাও হবে দেখার মতো।

ত্বক নরম ও কোমল রাখতেঃ অলিভ অয়েলে থাকে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড। এই তেল দিয়ে ত্বকে মাসাজ করলে তা ত্বককে আরও নরম ও কোমল করে। সেইসঙ্গে বজায় রাখে ত্বকের আর্দ্রতা। এটি শুধু রক্ত সঞ্চালনই বাড়ায় না, সেইসঙ্গে পুষ্টিও পৌঁছে দিতে কাজ করে। এই শীতে ত্বকের বাড়তি যত্ন হিসেবে অলিভ অয়েলের ব্যবহার করুন।

ত্বক উজ্জ্বল করতেঃ আপনার প্রতিদিনের রূপচর্চার অংশ হিসেবে অলিভ অয়েল রাখুন। এটি ত্বকের পোরসে জমে থাকা তেল ও ময়লা বের করে আনতে কাজ করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে চাইলে অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন।

স্ট্রেচ মার্ক দূর করতেঃ স্ট্রেচ মার্ক নিয়ে সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। মোটা থেকে চিকন হলে কিংবা মাতৃত্বের পর এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। স্ট্রেচ মার্ক বা শরীরের ফাটা দাগ দূর করতে বেশ কার্যকরী একটি উপাদান হলো অলিভ অয়েল। এই তেল স্ট্রেচ মার্কের জায়গায় নিয়মিত মাসাজ করলে দাগ দূর হবে দ্রুতই।

কোমল ত্বক পেতেঃ আমাদের অনেকেরই দেখা যায় ময়েশ্চারাইজার বা ক্রিম ইউজ করার পরও ত্বক ড্রাই লাগে। সেক্ষেত্রে স্কিন ক্যাফে অরগানিক এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে লং টাইম পর্যন্ত স্কিন থাকবে সফট ও নারিশড। স্কিনকে ডিপলি ময়েশ্চারাইজড করতে অলিভ অয়েল কয়েক ফোঁটা নিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে নিন। তারপর ৩০-৪০ মিনিট পরে মাইল্ড কোন ফেইস ওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
 
স্কিন ড্যামেজ কমাতেঃ অলিভ অয়েলে আছে ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে। সবগুলো ভিটামিনের আলাদা আলাদা কিছু বেনিফিট আছে। অলিভ অয়েলে সবচেয়ে বেশি অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হল ভিটামিন ই, যা একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফ্রি রেডিকেলসের কারনে স্কিনে যে ড্যামেজ হয়, তা কমাতে অলিভ অয়েল হেল্প করে। ভিটামিন ই একজিমা, সোরিয়াসিস-এর মত স্কিন ডিজিস থাকলে স্কিনে সুথিং ইফেক্ট দেয় এবং এগুলো কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

অ্যান্টি এজিংয়ের উপাদান হিসাবেঃ এ অয়েল ব্যবহারে এজিং প্রসেস স্লো হয় এবং স্কিনের ফাইন লাইন্স, রিঙ্কেল অনেকটাই কমে আসে। স্কিনে যদি রেডনেসের প্রবলেম থাকে, তবে তা অলিভ অয়েল ব্যবহারে কমে যায়। স্মুথ স্কিন পেতে ১ টেবিল চামক অলিভ অয়েলের সাথে ১ টেবিল চামক মধু এবং ডিমের কুসুম মিক্স করে তা ফেইস এবং গলায় লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ত্বকের কুঁচকানো ভাব অনেকটাই কমে যাবে, সেই সাথে স্কিন হবে তারুণ্যদীপ্ত।

রোদে পোড়াভাব দূর করতেঃ
প্রখর রোদের আলোতে বের হলেই ত্বকে রোদে পোড়াভাব দেখা দেয়। এই সমস্যাটি থেকে নিস্তার দেবে অলিভ অয়েলের ব্যবহার। ব্যবহারের জন্য সমপরিমাণ অলিভ অয়েল ও হোয়াইট ভিনেগার একসাথে মিশিয়ে রোদে পোড়াভাবযুক্ত স্থানে ম্যাসাজ করে আধা ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। অলিভ অয়েলের প্রদাহবিরোধী উপাদান রোদে পোড়াভাবযুক্ত ত্বকের প্রদাহ ও জ্বালাপোড়াভাব কমাতে কাজ করবে।
 
ডার্ক সার্কেল দূর করতেঃ চোখের নিচে কালি পড়লে রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে নিন। পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে দূর হবে চোখের নিচের কালো দাগ।
 
ঠোঁট ফাটাভাব দূর করতেঃ আর্দ্রতার অভাবে ঠোঁটের চামড়া ফেটে যায়। এর উপরে কোন ধরনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। তাই ঠোঁটের ফাটাভাব দূর করতে প্রথমেই ঠোঁটের মরা চামড়া দূর করতে হবে। এর জন্য প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি লিপ স্ক্রাব তৈরি করতে হবে। লেবুর রস, অলিভ অয়েল ও চিনির মিশ্রণের সাহায্যে স্ক্রাব তৈরি করতে হবে। এই স্ক্রাবটি ঠোঁটের মরা চামড়া দূর করার পাশাপাশি আর্দ্রতা রক্ষাতেও কাজ করবে।
 
ইনগ্রোন হেয়ার রিমুভারঃ মুখের অবাঞ্ছিত লোম বা ইনগ্রোন হেয়ার দূর করতেও কাজ করে অলিভ অয়েল। প্রথমে এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল নিন। এরপর তার সঙ্গে মেশান দশ ফোঁটার মতো টি ট্রি অয়েল। সবশেষে এতে মিশিয়ে নিন ব্রাউন সুগার। পুরো মিশ্রণটি মুখে স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করুন। এটি মুখ থেকে অবাঞ্ছিত লোম দূর করবে।
 
মেকআপ রিমুভারঃ মেকআপ রিমুভার হিসেবে অলিভ অয়েল দুর্দান্ত কাজ করে। এটি ত্বক নরম রাখে এবং সেইসঙ্গে ত্বক থেকে মেকআপের উপাদান তুলে ফেলতে কাজ করে। এক টুকরো পরিষ্কার তুলো নিয়ে সেটি অলিভ অয়েলে ডুবিয়ে নিন। এরপর ধীরে ধীরে ঘষে মেকআপ তুলে নিন। মেকআপ পুরোপুরি তোলা হয়ে গেলে ফেসওয়াশের সাহায্যে মুখ ‍ধুয়ে নিন।

অলিভ অয়েল বাথঃ
শীতকালে যাদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে পড়ে তাদের জন্য খুবই কার্যকরী অলিভ অয়েল বাথ। গোসলের পানিতে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। বডি লোশন ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না।

নখ ও চারপাশের ত্বকের যত্নেঃ
প্রায়শ নখের চারপাশের ত্বক শুষ্ক হয়ে চামড়া ওঠে। এতে করে সে অংশে জ্বালাপোড়ার সমস্যা তৈরি হয় এবং চামড়া উঠে রক্তপাতও হয়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য এক বাটি পরিমাণ কুসুম গরম পানিতে এক চা চামচ অলিভ অয়েল ও আধা চা চামচ হোয়াইট ভিনেগার মিশিয়ে এই মিশ্রণে নখের অংশ ডুবিয়ে রাখতে হবে। এতে করে নখ পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি নখের চারপাশের চামড়াও নরম হয়ে যাবে।
 
গোড়ালি ফাটার সমস্যায়ঃ সঠিক পরিচর্যা ও পেডিকিউর গোড়ালি ফাটার সমস্যা দূরে রাখতে ও দ্রুত ভালো করতে কাজ করবে। তবে এই সমস্যায় অলিভ অয়েলও খুব ভালো কাজ করবে। পায়ের গোড়ালি এক্সফলিয়েট করে শুকিয়ে নিতে হবে। এবারে গোড়ালিতে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে মোজা পরে সারারাত রেখে সকালে পা ধুয়ে ফেলতে হবে।

অলিভ অয়েল কীভাবে ব্যবহার করবেন

ত্বকের জেল্লা ফেরানোর পাশাপাশি নানা দাগছোপ মলিন করতেও সাহায্য করে এই তেল। এছাড়া ত্বকের ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইট হেডস পরিষ্কার করতেও সাহায্য করে। অলিভ অয়েলে আছে ভিটামিন ই-এর মতো উপকারী উপাদান। যা আপনার ত্বকের জন্যে খুবই ভালো। অলিভ অয়েলে পলিফেনলের মতো উপাদানও আছে যা আপনার ত্বকের জন্য ভালো।

অলিভ অয়েল আপনি নানা ভাবেই ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন যেমন-
  • ফেস সিরামের মতো ব্যবহার করতে পারেন এই তেল।
  • ফেসপ্যাকেও অলিভ অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
  • তবে সরাসরিও ত্বকে লাগাতে পারেন অলিভ অয়েল। কীভাবে ব্যবহার করবেন?
  • আপনার প্রয়োজন ১ টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল নিন। একটি মুখ মোছার কাপড় নিন। সামান্য গরম জল নিন।
  • এই তেল হাতের তালুতে নিয়ে আঙুলের সাহায্য়ে সারা মুখে ভালো করে লাগিয়ে নিন। আপনার হাতের সাহায্যেই সারা মুখে ভালো করে মাসাজ করে নিন এই তেল। গালে, কপালে লাগাতে ভুলবেন না। এবার ওই কাপড়টি গরম জলে ভিজিয়ে নিতে হবে। জল নিংড়ে নিয়ে সেই কাপড় মুখে দিন। এই পদ্ধতি দুই থেকে তিনবার করুন। কিছুদিন পরে আপনার ত্বকের জেল্লা হবে দেখার মতো।
  • সংবেদনশীল ত্বকে বা ত্বকের কোনও চিকিৎসা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও উপাদান মুখে ব্যবহার করবেন না।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে মসুর ডালের উপকারিতা

মসুর ডাল দিয়ে মজার সব খাবার তৈরি করা যায় একথা তো সবারই জানা। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী একথাও জানা। কিন্তু এটি আমাদের ত্বকের জন্য কতটা উপকারী তা কি জানা আছে? মসুর ডালে আছে প্রোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, কার্বোহাইড্রেট, ডায়াটারি ফাইবার, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ, সি, ই, কে এবং থায়ামিন। এই ডাল আমাদের ত্বক থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে। ফলে ত্বক দ্রুত সুন্দর হয়ে ওঠে।

নিয়মিত ত্বকের যত্নে মসুর ডাল ব্যবহার করলে ত্বকের প্রোটিনের ঘাটতি অনেকটাই দূর হয়। এর ফলে ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ পড়ে না। ত্বকের বয়স কমতে শুরু করে। সেইসঙ্গে উজ্জ্বলতা এবং কোমলতাও বাড়তে থাকে। আজ চলুন জেনে নেওয়া যাক ত্বকের যত্নে মসুর ডালের ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে-
 
ত্বককে উজ্জল করে তোলেঃ অল্প সময়ে ত্বক উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক, এমনটা চান কি? তাহলে ত্বকের পরিচর্যায় মসুর ডালকে কাজে লাগাতে ভুলবেন না যেন! এক্ষেত্রে ৫০ গ্রাম মসুর ডালকে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন সকালে উঠে পানিটা ছেঁকে নিয়ে ডালটা বেঁটে নিতে হবে। তারপর ডালের পেস্টটির সঙ্গে ১ চামচ কাঁচা দুধ এবং পরিমাণমত বাদাম তেল মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর পেস্টটি ভাল করে মুখে লাগিয়ে কম করে হলেও ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা। এই ভাবে প্রতিদিন ত্বকের পরিচর্যা করলে দেখবেন ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে সময় লাগবে না।

ত্বককে উজ্জল করেঃ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কে না চায়! এক্ষেত্রে ব্যবহার করুন মসুর ডাল। প্রথমে পঞ্চাশ গ্রামের মতো মসুর ডাল পানিতে ভিজিয়ে সারারাত রেখে দিতে হবে। এরপর সকালে পানি ছেঁকে ডালটুকু বেটে নিতে হবে। সেই ডালের পেস্টের সঙ্গে মেশাবেন সামান্য বাদাম তেল ও এক চা চামচ কাঁচা দুধ। এবার এই পেস্ট ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন অন্তত পনের মিনিট। এরপর হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে প্রতিদিন যত্ন নিলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে চোখে পড়ার মতো।
 
ফেইস হেয়ার পরিষ্কার করেঃ অনেক মহিলাই আছেন যাদের মুখে অযাচিত লোম থাকে। এমন সমস্যা থেকে নিস্তার পেতে ১ চামচ মসুর ডালের পাউডারের সঙ্গে ১ চামচ চালের গুঁড়া মিশিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে এবং তার সঙ্গে যোগ করতে হবে ১ চামচ দুধ ও বাদাম তেল। সবকটি উপাদান মেশানোর পর মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। সময় হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে।

ফেস হেয়ার পরিষ্কার করতেঃ নারীর মুখে অবাঞ্ছিত লোম থাকলে দেখতে খারাপ লাগে। এই সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকেই। মুখে অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করুন মসুর ডালের ফেসপ্যাক। সেজন্য নিতে হবে এক চা চামচ মসুর ডালের গুঁড়া, এক চা চামচ চালের গুঁড়া, এক চা চামচ দুধ ও এক চা চামচ বাদাম তেল। সবগুলো উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণটি মুখে রেখে দিতে হবে মিনিট পাঁচেক। এরপর ধুয়ে ফেলতে হবে।

ড্রাই ত্বকের যত্নে মসুরের ডালঃ পরিমাণমত মসুর ডালের পেস্ট-এর সঙ্গে সমপরিমাণ গাঁদা ফুল মিশিয়ে ভাল করে বেটে নিয়ে এই পেস্টটি বানাতে হবে। তারপর সেটি কম করে হলেও ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে। ড্রাই স্কিনের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি ব্রণের প্রকোপ কমাতে এবং ত্বককে নরম তুলতুলে করে তুলতেও এই ফেইস মাস্কটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

মৃত কোষের স্তর সরিয়ে ফেলেঃ
ত্বকের উপরি অংশে জমে থাকা মৃত কোষের স্তর সরিয়ে স্কিনকে প্রাণবন্ত করে তুলতে এই ফেইস প্যাকটির কোন বিকল্প হয় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে সপ্তাহে দু’বার পরিমাণমত মসুর ডালের পেস্টের সঙ্গে অল্প করে দুধ মিশিয়ে যদি মুখে লাগানো যায়, তাহলে ত্বকের সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলা বা স্কিন বুড়িয়ে যাওয়ার মতে দুশ্চিন্তা একেবারে দূরে পালায়।

ত্বকের আদ্রতার ঘাটতি দূর করেঃ আপনার ত্বক কি বেজায় শুষ্ক? সেই সঙ্গে বলিরেখা দেখা দিতে শুরু করেছে? তাহলে আর সময় নষ্ট না করে মসুর ডালের পেস্টের সঙ্গে পরিমাণমত মধু মিশিয়ে নিয়ে নিয়মিত মুখে লাগাতে শুরু করুন। তাহলেই দেখবেন ধীরে ধীরে বলিরেখা কমতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে ত্বকের ড্রাইনেসও কমে যাবে। এক্ষেত্রে প্রথমে ১ চা চামচ মসুর ডালের পেস্টের সঙ্গে ১ চা চামচ মধু মেশাতে হবে। এরপর ভাল করে দুটি উপাদান মিশিয়ে নিয়ে মিশ্রণটি মুখে লাগাতে হবে। ১৫ মিনিট পেস্টটি মুখে ঘষার পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে নিলেই হবে।

ত্বককে নিমেষে সুন্দর করে তোলেঃ ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে বেসন এবং দইয়ের কোন বিকল্প নেই বললেই চলে। তার উপর যদি এই মিশ্রণে অল্প করে মসুর ডাল মিশিয়ে দিতে পারেন, তাহলে তে কথাই নেই! কারণ এই তিনটি উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে বানানো পেস্টটি এত মাত্রায় পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর হয় যে ত্বক সুন্দর হয়ে উঠতে সময়ই লাগে না।

শুষ্ক ত্বকের যত্নেঃ ত্বকের শুষ্কতা নিয়ে সমস্যায় ভুগলে উপকার করবে মসুর ডাল। সেজন্য সমপরিমাণ মসুর ডাল ও গাঁদা ফুল একসঙ্গে বেটে একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এরপর মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে অন্তত পনের মিনিট। শুকিয়ে এলে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ত্বকের শুষ্কতার পাশাপাশি ত্বককে কোমল করতে ও ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।

ত্বকের মৃত কোষ দূর করেঃ ত্বকের উপরের অংশে জমে থাকা মৃত কোষের স্তর সরিয়ে ত্বককে প্রাণবন্ত করে তুলতে সাহায্য করে মসুর ডাল। সপ্তাহে দুইদিন পরিমাণমতো মসুর ডাল ও দুধের পেস্ট তৈরি করে মুখে ব্যবহার করবেন। এতে ত্বকের মৃত কোষ দূর হবে এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। ত্বকের অকালে বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করতেও সাহায্য করে মসুর ডাল। ত্বকের সমস্যার সমাধানে ভরসা রাখতে পারেন মুসুর ডালে। অকালেই মুখে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করলে সপ্তাহে দু’-তিন দিন ডাল বাটা মেখে দেখতে পারেন। ত্বক টানটান রাখতে এই ফেসপ্যাক দারুন কাজ করে।

অবাঞ্ছিত লোম থেকে মুক্তিঃ ঠোঁটের ওপরে বা গালে অতিরিক্ত রোম? ওয়্যাক্সিংয়ের যন্ত্রণা সহ্য করতে না চাইলে মুসুর ডাল ব্যবহার করতে পারেন। ১ চা চামচ মুসুর ডাল বাটার সঙ্গে এক চা চামচ বেসন, এক চা চামচ চালের গুঁড়ো আর কয়েক ফোঁটা আমন্ড অয়েল ভালো করে মিশিয়ে মুখে মাখুন। ফেসপ্যাকটি শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করলে মুক্তি পাবেন অবাঞ্ছিত রোমের সমস্যা থেকে।

ত্বকের মৃত কোষ দূর করতেঃ মুসুর ডাল বাটার সঙ্গে ২ চা চামচ দুধ মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে মুখে লাগান। তার পর ২ মিনিট ঘষে ঘষে মালিশ করুন। এরপর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিলেই ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক কোমল ও নরম থাকবে।

দাগ-ছোপ কমাতেঃ
নিয়মিত রোদে বা বাইরের দূষণে মুখে কিংবা হাতে-পায়ে কালো দাগ হয়ে যায়। এই সমস্যার সমাধানে ৩ টেবিল চামচ মুসুর ডাল বাটা, ৩ টেবিল চামচ টক দই আর একই পরিমাণ বেসন ভালো বেশ করে মিশিয়ে নিন। ওই মিশ্রণে যুক্ত করুন ১ চিমটে হলুদ গুঁড়ো। এবার ত্বকে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও মসৃণ।

ফেইসওয়াশ হিসেবে কাজে লাগানে যায়ঃ নানা কাজে সারাদিন আমাদের বাসার বাইরে কাটাতে হয়। ফলে পরিবেশ দূষণের কারণে ত্বকের বারোটা বেজে যেতে সময় লাগে না। এমন পরিস্থিতিতে দিনের শেষে মসুর ডাল দিয়ে ত্বককে পরিষ্কার করলে স্কিনটোনের উন্নতির পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের কারণে ত্বকের কোন ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।

ত্বকের যত্নে মসুর ডালের ফেসপ্যাক

ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্যে আপনি নানা ঘরোয়া উপাদানে ভরসা রাখতেই পারেন। তেমনি একটা ঘরোয়া উপাদান হলো মসুর ডাল। ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে, পোড়া ভাব দূর করতে, আর্দ্রতা বজায় রাখতে, অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে মসুর ডালের জুড়ি নেই। এতে ভিটামিন এ, সি, কে, থায়ামিন, প্রোটিন, বিভিন্ন ফ্যাটি অ্যাসিডসহ অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে। ফলে এর নিয়মিত ব্যবহার ত্বকের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে।

মসুর ডাল ও দুধের ফেসপ্যাকঃ মসুর ডাল ২ টেবিল চামচ সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে পানি ঝরিয়ে ভালো করে বেটে নিন। এবার ১ টেবিল চামচ কাঁচা দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট ভালো করে পুরো মুখে মেখে প্রায় ২০ মিনিট রাখুন। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে আলতো হাতে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পাওয়ার জন্য সপ্তাহে অন্তত তিনবার ব্যবহার করুন এটি। এতে ধীরে ধীরে পোড়া ভাব দূর হয়ে ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল হয়ে উঠবে।
 
মসুর ডাল মধু ও হলুদগুঁড়াঃ মসুরের ডালের গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, মধু ১ টেবিল চামচ, আধা চা-চামচ হলুদগুঁড়া এবং ৩-৪ ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, তাঁদের নারকেল তেল ব্যবহার করা ঠিক হবে না। তারপর এই পেস্ট ভালো করে পুরো মুখে মেখে ২-৩ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। যেহেতু এটি ত্বক গভীরভাবে পরিষ্কার করে, তাই প্রতিদিনের ফেসওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকে নিয়মিত কৃত্রিম ফেসওয়াশ ব্যবহারের বিরূপ প্রভাব থাকবে না।

মসুর ডাল ও গাঁদা ফুলের পাপড়িঃ মসুর ডাল ২ টেবিল চামচ সারা রাত দুধে ভিজিয়ে রেখে সকালে দুটি গাঁদা ফুলের পাপড়ির সঙ্গে বেটে নিন। তাতে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে মাখুন। ২০ মিনিটের মতো রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাক ব্রণের সমস্যা দূর করে ত্বক মসৃণ করে তোলে। এ ফেসপ্যাক ত্বকে বলিরেখা কমিয়ে বয়সের ছাপ কমায়। এ ছাড়া শুষ্ক ত্বকে এটি আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। সপ্তাহে অন্তত দুবার এই ফেসপ্যাক ব্যবহারের চেষ্টা করুন।

মসুর ডাল ও চন্দন পাউডারঃ মসুরের ডাল ১০০ গ্রাম সারা রাত দুধে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ভালো করে বেটে নিয়ে তার সঙ্গে ৫০ গ্রাম চন্দন পাউডার ও ৫০ গ্রাম কমলালেবুর খোসার পাউডার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে মাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে আলতো হাতে ঘষে তুলে ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করুন। এতে মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর হবে।

মসুর ডাল ও মধুর প্যাকঃ যাদের ত্বক শুকনো তাদের জন্য এই প্যাক। মসুর ডাল আর মধু মৃতকোষ দূর করে ত্বককে কোমল রাখে, এটা খুব ভালো ত্বকের জন্য। উভয় উপাদান ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে দারুন কাজ করে। এক চা চামচ মধু আর এক চা চামচ মসুর ডাল বাটা মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। তারপর ১৫-২০ মিনিটের মতো রেখে পানি দিয়ে তুলে ফেলতে হবে।

মসুর ডাল, টক দই আর বেসনের প্যাকঃ ত্বকের জেল্লা বাড়িয়ে ত্বককে ভীষনভাবে উজ্জ্বল করতে এটা খুবই কার্যকর। ব্রণ ও রোদে পোড়া ভাব দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন এটি। সমপরিমান মসুর ডাল বাটা, টক দই আর বেসন এক সঙ্গে মিশাতে হবে।
এর সঙ্গে নিতে হবে এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো। ভাল করে মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। একদম শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে তুলে ফেলুন। এই প্যাকটি সারা শরীরেও লাগাতে পারেন। তবে ধুয়ে ফেলার পরে ময়েশ্চারাইজার লাগানো দরকার।

দুধ ও মসুর ডালের এক্সফলিয়েটরঃ মুখের মৃতকোষ সরিয়ে মুখের ত্বককে উজ্জ্বল আর মসৃণ করতে মসুর ডাল কার্যকরী। মসুর ডাল বেটে এর সঙ্গে এক চা চামচ দুধ মিশিয়ে মুখে ম্যাসাজ করতে হবে এক মিনিট। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ভাল করে। 

মুসুর ডাল এবং দুধঃ এই মুসুর ডালের ফেসপ্যাকটি খুব ভালো এক্সফোলিয়েশনের কাজ করে। এছাড়াও আপনার ত্বকের ট্যান সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। এটি আপনার ত্বকও পরিষ্কার রাখে। ত্বকে আর্দ্রতার জোগান দিতে সাহায্য করে। এছাড়া তেল নিয়ন্ত্রণ করে। তাই সহজেই অ্যাকনে হয় না।
একটি পাত্রে মুসুর ডাল ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত। সকালে তা গ্রাইন্ডারে বেটে নিন। একটি পেস্ট তৈরি হবে। এর মধ্য়ে আপনাকে ১/৩ কাপ কাঁচা দুধ মিশিয়ে দিন। এবার দুই মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি হবে। এই পেস্ট আপনার মুখে লাগিয়ে নিন। ভালো করে মাসাজ করুন। ২০ মিনিট এভাবেই রেখে দিন। তারপর ধীরে ধীরে মুখ মুছে নিন।

মুসুর ডাল, হলুদ এবং নারকেল তেলঃ এই ফেসপ্যাক কিন্তু আপনার ত্বকের জন্য খুবই ভালো। শুষ্ক ত্বকের পাশাপাশি সাধারণ ত্বকেও এই ধরনের ফেসপ্যাক আপনি ব্যবহার করতেই পারেন। ত্বক ভালো থাকে। এমনকী প্রতিদিন ফেসওয়াশ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।

একটি পাত্রে এক টেবিল চামচ মুসুর ডালের গুঁড়ো নিন। ২ টেবিল চামচ দুধ নিন। এক চিমটে হলুদ নিন। শেষে ৩ ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে দিন। প্রতিটি উপকরণ খুব ভালো করে মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। এই পেস্ট ভালো করে আপনার মুখে লাগিয়ে নিন। হাতের তালু দিয়ে হালকা চাপ দিয়ে মাসাজ করতে পারেন। ২ মিনিট রেখে স্ক্রাব করে ধুয়ে ফেলুন। আপনার ত্বকের ধরন শুষ্ক হলেই একমাত্র নারকেল তেল ব্যবহার করুন নাহলে প্রয়োজন নেই।

মুসুর ডাল এবং আমন্ড অয়েলঃ এই ফেসপ্যাক আপনার ত্বকে জেল্লা যোগ করে। ত্বকের কালো দাগ-ছোপ সরিয়ে প্রাকৃতিক জেল্লা ফিরিয়ে আনে। এদিকে শুষ্ক ত্বকের সমস্যাও সমাধান করে। অ্যাকনের সমস্যা সমাধান করে। ৫০ গ্রাম মুসুর ডাল ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত। একটি পাত্রে রাখতে হবে। সকালে এই মুসুর ডাল বেটে নিন। এর মধ্য়ে ১ টেবিল চামচ কাঁচা দুধ মেশাতে হবে। তার সঙ্গে ১ টেবিল চামচ আমন্ড অয়েল মেশান। এই পেস্ট তৈরি। এই মিশ্রণ ভালো করে মুখে লাগিয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১-২ দিন এই ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন আপনি।

মসুর ডাল ও কমলালেবুর খোসাঃ কমলালেবুতে আছে ভিটামিন সি। তাই এই উপাদান আপনার ত্বকের জেল্লা ফেরায় স্বাভাবিকভাবেই।পরিমাণ মতো মুসুর ডাল নিন। সেটি শুকনো কড়াইতে রোস্ট করে নিন। সম পরিমাণে কমলা লেবুর খোসা নিন। এই দুই উপাদান গ্রাইন্ডারে ভালো করে গুঁড়ো করে নিন। এবার এর মধ্য়ে পরিমাণ মতো দুধ মিশিয়ে দিন। প্রতিটি উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। সম্পূর্ণ মুখে মেখে ১৫-২০ মিনিট রেখে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক উজ্জ্বল করতে সপ্তাহে ২-৩ বার এই ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের মলিনতা দূর হয়ে উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।

ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের উপকারিতা

রূপচর্চার জন্য কত কৃত্রিম জিনিসই না আমরা ব্যবহার করি। কিন্তু আমাদের আশেপাশেই রয়েছে অনেক প্রাকৃতিক উপাদান, যা ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা যায় ও ত্বককে ভালো রাখতে সাহায্য করে। আবার আমাদের হাতের পাশে কত জিনিসই তো আমরা অপ্রয়োজনীয় ভেবে ফেলে দেই। অথচ একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে এসব জিনিসের মধ্যে রয়েছে অসাধারণ সব কার্যকরী ক্ষমতা। এই যেমন ধরুন ভাতের মাড়।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেঃ দুচামচ ভাতের মাড়ের সঙ্গে এক চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে রাখুন। আধ ঘণ্টা পরে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে, ত্বককে মসৃণ ও কোমল রাখতে এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।

ব্রণ দূর করতেঃ ১ টেবিল চামচ ভাতের মাড়ের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও ৫ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মেশান। দ্রবণে তুলার বল ভিজিয়ে ত্বকে লাগান। শুকিয়ে টানটান হয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ থেকে মুক্তি পাবেন।

বলিরেখা দূর করতেঃ ১ টেবিল চামচ ভাতের বাসি মাড়ের সঙ্গে ১ চিমটি হলুদ গুঁড়া, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও ১ টেবিল চামচ বেসন মেশান। পেস্টটি মুখ ও গলার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এটি ব্যবহার করলে বলিরেখা দূর হবে।

ত্বকের দাগ দূর করতেঃ ভাতের মাড় সংগ্রহ করে ৪৮ ঘণ্টা রেখে দিন। ১ কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে ৫ মিনিট গরম করুন মিশ্রণটি। ঠাণ্ডা হলে ত্বকে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের কালচে দাগ দূর হবে।

রোদে পোড়া দাগ দূর করতেঃ ১ টেবিল চামচ আলুর রসের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ ভাতের মাড় মেশান। মিশ্রণটি ত্বকে ম্যাসাজ করুন ১৫ মিনিট। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ত্বক। দূর হবে ত্বকের রোদে পোড়া দাগ।

বয়সের ছাপ কমাতে সহায়তা করেঃ এরজন্য প্রথমেই ঘন ভাতের মাড় পরিষ্কার রেখে ভালোভাবে ছেঁকে নিন৷ এরপর এটিকে ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে নরম তুলার সাহায্যে বেশি করে নিয়ে মুখে মিনিট পাঁচেক মালিশ করুন। তারপরে শুকনো সিট মাস্ক মাড়ের উপর দিয়ে বসিয়ে রেখে দিন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা ও উজ্জ্বলতা বাড়ে, ছোপ ছোপ দাগ, মেসতা, ত্বকের রুক্ষতার মত সমস্যাও দূর হয়৷। শুকিয়ে গেলে টেনে তুলে নিন। এতে আপনার মুখের ত্বক টানটান হবে৷

ত্বকের শুষ্কতা দূর করেঃ শুষ্ক ত্বকের জন্যও ভাতের মাড় খুব উপকারী। এক্ষেত্রে মাড়ের সঙ্গে সামান্য অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এরপর এটি মুখে ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের চাকচিক্য বাড়বে ও ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করবে। ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদানের বিকল্প নেই। তাই ত্বকের যত্নে ব্যবহার করে দেখতে পারেন ভাতের মাড়।

ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করেঃ ভাত ঘন মিশ্রণ করে মুখে ব্যবহার করলে ত্বকের ছিদ্র ছোট হওয়া, টানটান হওয়া, বলিরেখা কমে, মরা চামড়া কমে। তবে শুকানো পর্যন্ত কথা বলা যাবে না। তবে ভাতের সঙ্গে সামান্য হলুদবাটা, টমেটোর রস বা দুধের রসের যেকোনো একটি মিশিয়ে নিতে পারেন।

সেনজিটিভ ত্বকের জন্য উপকারীঃ যারা ব্রণ সমস্যায় ভোগেন তাতে লালচে হয়ে গিয়ে জ্বালা করে। এই অবস্থায় যদি ভাতের ফ্যান ব্যবহার করেন তাহলে আরাম মিলবে। ফ্যানের হাই স্টার্চ কনটেন্ট ব্রণ, ফুসকুড়ি কমাতে সাহায্য করে।

সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষ্মা করেঃ
ভাতের ফ্যান কিন্তু প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন। সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রা-ভায়োলেট রে-র প্রকোপ থেকে ত্বককে বাঁচাতে হলে মুখে তুলোয় করে ফ্যান লাগাতেই পারেন। শুধু তাই নয়, সানবার্ন সারাতেও ফ্যান খুবই কাজের।

ত্বকে বাড়তি জৌলুস আনেঃ
ভাতের ফ্যানের অন্যতম গুণ হল ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনা। একদিনের পুরোনো ভাতের ফ্যান তুলো ডুবিয়ে মুখে লাগিয়ে দেখুন। কিছুদিন ব্যবহার করলেই দাগছোপ ফিকে হয়ে যাবে, উজ্জ্বলতাও ফিরে পাবে।

ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের ব্যবহার

ভাত রান্নার পর সাধারণত সকলেই ভাতের মাড় ফেলে দিয়ে থাকেন। কিন্তু এই ভাতের মাড়ের উপকারীতা সম্পর্কে জানলে আর কখনোই তা ফেলে দেবেন না। এই মাড়ের হাজারো ব্যবহারগুণ রয়েছে, যা হয়তো বলে শেষ করা যাবে না। রূপচর্চায় অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে ভাতের মাড়। সামান্য কিছু উপাদানের সঙ্গে ভাতের মাড় মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করা যায়। এটি ত্বকের ক্লান্তিভাব, বলিরেখা ও দাগ ছোপ কমাতে সহায়তা করে।

টোনার হিসেবেঃ টোনার হিসেবে চমৎকার কাজ করে ভাতের মাড়। মাড়ে তুলার বল ডুবিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর হবে।

ক্লিনজার হিসেবেঃ ত্বকে জমে থাকা ময়লা প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার করে ভাতের মাড়। ভাত রান্না করার পর মাড় সংগ্রহ করে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল ও আধা কাপ পানি মেশান। কুসুম গরম থাকতে থাকতে মিশ্রণটি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে শুকনা তোয়ালে চেপে নিন ত্বকে।

স্ক্রাব হিসেবেঃ
১ টেবিল চামচ চালের গুঁড়ার সঙ্গে ১ টেবিল চামচ দই ও কয়েক ফোঁটা আমন্ড অয়েল মেশান। মিশ্রণে ভাতের মাড় মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। পেস্ট ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পর স্ক্রাব করে ধুয়ে ফেলুন। দূর হবে ত্বকে জমে থাকা মরা চামড়া।

কোকো পাউডার ও ভাতের মাড়ের স্ক্রাবঃ এক টেবিল চামচ মাড়ে দুই চা চামচ কোকো পাউডার ভালভাবে মেশান। এটি দিয়ে ত্বকে স্ক্রাব করুন। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্ক্রাব ত্বককে উজ্জ্বল করবে 
 
রাইস জেল ক্রিম মাস্কঃ একটি ছোট বাটিতে ২ টেবিল চামচ চাল পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ৫-১০ মিনিট পর চালগুলো ভালো করে ধুয়ে নিন। এবার একটি প্যানে সামান্য পানি দিয়ে চালগুলো সেদ্ধ করে নিতে হবে। ভাতগুলো যেন অনেকটা নরম হয়; তাহলে চামচ দিয়েই ব্লেন্ড করে নিতে পারবেন। তা না হলে ব্লেন্ডার ব্যবহার করতে হবে। ভাত ব্লেন্ড করার পর অ্যালোভেরা জেলে মিশিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেল রাইস জেল ক্রিম মাস্ক।এবার একটি কটন প্যাড দিয়ে মুখে ব্যবহার করুন এ ক্রিম। ১০-১৫ মিনিট মুখে রেখে এরপর ধুয়ে ফেলুন। এ রাইস জেল ক্রিম ব্যবহারের ফলে ত্বকের মৃত কোষ দূর হবে। ফলে প্রাকৃতিকভাবেই ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল। 

স্প্রে হিসেবে ব্যবহার করুনঃ
চাল ভেজানো পানি বা ভাতের মাড়, উভয়ই স্প্রে বোতলে ভরে সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। মুখে ভাতের মাড় বা চালের পানি স্প্রে করে ৩০ মিনিট রাখুন, তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। 

ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের ফেসপ্যাক

প্রতিদিন ত্বকের যত্নে আমরা কতো কিছুই না করে থাকি। ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিংসহ আরো কতো কি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। ধীরে ধীরে আপনার ত্বক হারাচ্ছে উজ্জ্বলতা। বয়সের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠছে চেহারায়। তবে আপনি চাইলেই নিমিষে এ সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারেন। ত্বক থেকে বয়সের ছাপ মুছে ফেলতে ব্যবহার করতে পারেন ভাতের জাদুকরী ফেস প্যাক।

এটি বয়সের ছাপ মুছে ফিরিয়ে দেবে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা।সামান্য কিছু উপাদানের সঙ্গে ভাতের মাড় মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করা ত্বকের ক্লান্তিভাব, বলিরেখা ও দাগ ছোপ কমাতে সহায়তা করে।

ভাতের মাড় ও বেসনের প্যাকঃ
দু্ই টেবিল চামচ ভাতের মাড়ে এক টেবিল চামচ বেসন এবং এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন ভাল করে। এবার পুরো মুখে ও গলায় লাগান। ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সান ট্যান দূর করে এবং মুখের ধুলো-ময়লা পরিষ্কার করে।

দই ও ভাতের মাড়ের প্যাকঃ আধা কাপ দইতে দুই চা চামচ ভ্যাতের মাড় মিশিয়ে দশ মিনিট একপাশে রেখে দিন। তারপর পুরো মুখ এবং গলায় লাগিয়ে ১০ মিনিট রাখুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি অ্যান্টি-এজিং হিসেবে কাজ করে এবং ত্বককে টানটান করবে।

ভাতের মাড় ও মধুঃ
দুই চামচ ভাতের মাড়ের সঙ্গে এক চামচ মধু ভাল করে মিশিয়ে গোটা মুখে লাগিয়ে নিন। আধা ঘণ্টা পরে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে, ত্বককে মসৃণ ও কোমল রাখতে এই ফেস প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।

অ্যালোভেরা ও ভাতের মাড়ঃ চার চামচ ভাতের মাড়, এক চামচ অ্যালোভেরা জেল ও রিঠার পানির সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে ফ্রিজে রাখুন। সারা দিনে দুই-তিন বার এটি দিয়ে মুখ ধুতে পারেন। এটি খুব ভাল ফেসওয়াশের কাজ করে।

আরও উপকার পেতে ভাতের মাড় যেভাবে ব্যবহার করবেন

ধবধবে পরিষ্কার ত্বক পেতে প্রসাধনী নয়, বরং ঘরোয়া উপায়ে এইভাবে তৈরি করুন ক্লিনজার , টোনার। এতে ফিরবে ত্বকের হারানো জেল্লা। ত্বক হবে উজ্জ্বল।

  • ত্বকের যত্নে অনেকেই নানান ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকেন। ত্বকের দাগ ছোপ সরিয়ে আরও উজ্জ্বলতা বাড়াতে কে না পছন্দ করেন! এজন্য বহু মহিলাই বাজারে আসা নানান স্কিন কেয়ার প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকেন। তবে প্রসাধনী অনেক সময়ই ত্বকের যত্নে সেভাবে কার্যকরী ফল দেয় না। আর এখানেই ঘরোয়া টোটকা ত্বকের যত্নে হিট! ধবধবে ফর্সা ত্বক পেতে এক বিশেষ ঘরোয়া টোটকা দেখে নিন।
  • জাপানে মহিলারা ত্বকের যত্নে ভাতকে খুবই গুরুত্ব দেন। চালের ধোয়া জল বা ভাতের মাড় বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেন। আর ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে তা খুবই উপকারি বলে বিবেচিত হয়। তবে গরম গরম ভাতের মাড় কিন্তু ত্বকে দেবেন না। এতে ত্বকে বিরূপ প্রভাব পড়বে। জেনে নিন কীভাবে ভাতের মাড় ব্যবহার করলে ত্বক পায় ধবধবে রঙ।
  • কীভাবে ব্যবহার করবেন ত্বকের জন্য ভাতের মাড়? কাঁচা চাল ধুয়ে নেওয়ার জল বা ভাতের মাড় ত্বকের জন্য ভাল। ফলে ভাত ঝরিয়ে নেওয়া জল বা ভাতের মাড় ঠাণ্ডা হলে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর তা লাগিয়ে নিন মুখে। যাতে এর সমস্ত গুণ ত্বকে যায় ভাল করে তার জন্য এমন প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে পারেন।
  • ৪ চামচ ভাতের মাড়, এক চামচ অ্যালোভেরা জেল, রিঠার জলের সঙ্গে মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে ভরে ফ্রিজে রাখুন। সারা দিনে দু-তিন বার এটি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি খুব ভালো ফেসওয়াশের কাজ করে।
  • চুলের যত্ন নিতেও ভাতের মাড় ব্যবহার করতে পারেন। মাড়ের মধ্যে একটি গোটা লেবুর রস মিশিয়ে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত মালিশ করুন। বেশ কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখার পরে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুলের রুক্ষতা দূর করতে এই উপায় মেনে চলতে পারেন। চুলের ডগা ফেটে যাওয়ার মতো সমস্যার মোকাবিলায় এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর।
  • ব্রণের সমস্যা কি কিছুতেই কমছে না? মাতের মাড় ঠান্ডা করে তুলো দিয়ে ত্বকের ব্রণ আক্রান্ত অংশে লাগান। দিনে অন্তত ২-৩ বার এইভাবে ত্বকের যত্ন নিতে পারলে ব্রণ-ফুসকুড়ির মতো সমস্যা দ্রুত সেরে যাবে।
  • ভাতের মাড় ঠান্ডা করে তুলো দিয়ে মুখের ও হাত-পায়ের রোদে পোড়া অংশে নিয়মিত মাখতে পারলে বাড়বে ত্বকের জেল্লা। এই পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিতে পারলে ত্বক থাকবে সতেজ, বজায় থাকবে ত্বকের আর্দ্রতা। এ ছাড়াও ত্বকের হাইপার পিগমেন্টেশন আর ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া ঠেকাতে ভাতের মাড় অত্যন্ত কার্যকরী!
  • পদ্ধতি-১ ২ টেবিল চামচ ভাতের মাড়ের সঙ্গে এক টেবিল চামচ বেসন দিয়ে সহজেই বানিয়ে নিতে পারেন ফেস প্যাক। এ ফেস প্যাক সারামুখে মেখে ১৫ মিনিট রেখে দিন। শুঁকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এ প্যাক ত্বকের রোদের পোড়াভাব দূর করতে সাহায্য করে।
  • পদ্ধতি-২ ২ টেবিল চামচ ভাতের মাড়ের সাথে ১ টেবিল চামচ মধু, অথবা অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। ফেশওয়াশের বিকল্প হিসেবে এই প্যাক বেশ কার্যকরী। সেই সাথে এটি ত্বকে মসৃণ ও কোমল রাখতে সাহায্য করবে।
  • পদ্ধতি-৩ ১ টেবিল চামচ ভাতের সাথে ২ চা চামচ কোকো পাউডার মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন ফেস প্যাক হিসেবে। ভালো উপকার পেতে এই প্যাক অন্তত সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন। প্যাক ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ভালোভাবে মিনিট স্ক্রাবিং করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে কোমল রাখতে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
  • প্রতিদিন ভাত রান্না শেষে মাড়টুকু কিন্তু আমরা ফেলেই দেই, কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন এই মাড় হতে পারে আপনার রূপসৌন্দর্য্যে কার্যকরী উপাদান? কিভাবে, সেটিই ভাবছেন তো? আসুন তবে জেনে নেই কিভাবে ভাতের মাড় দিয়ে আপনি করতে পারেন রূপচর্চা।
  • ভাতের মাড় ব্যবহার করতে পারেন ব্রণের সমস্যা দূর করার ওষুধ হিসেবেও। সেজন্য মাড় ছেঁকে নিয়ে ভালোভাবে জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিতে হবে। ঘন মাড়ে কয়েক ফোটা লেবুর রস দিয়ে নিন। এতে ব্রণের সঙ্গে দাগও দূর করবে। এছাড়া এই ঘন প্যাকটি তুলার সাহায্যে চোখের চারপাশে মালিশ করে টিস্যু দিয়ে ঢেকে রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এতে বলিরেখা ও চোখের চারপাশের কালো দাগ দূর হবে।
  • দুধের সঙ্গে মাড় মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক খুব টানটান হয় এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা

সজনে পাতায় রয়েছে ভিটামিন-এ, বি, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই, আয়রন এবং জিঙ্কসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদান। ত্বক ও চুলের যত্নে সজনে পাতা বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। বভিন্ন স্বাস্থ্যগুণের কারণে সজনেকে বলা হয় সুপারফুড। আপনি জানেন কী সজনে পাতা বা পাতার গুঁড়া ত্বকের জন্য উপকারী? ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে এই পাতা। সজনে পাতার গুঁড়া বা সজনে পাতা পেস্ট ব্যবহারে ত্বকের যেসব উপকার হয়-

বয়সের ছাপ রোধ হয়ঃ বয়সের আগেই অনেকের ত্বকে বয়সের ছাপ দেখা দেয় ও ত্বক ঝুলে যায়। সজনেতে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের জন্য উপকারী । এতে কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা মুখের মেছতা, দাগ, বয়সের ছাপ ও ত্বক ঝুলে যাওয়া রোধ করে।

ব্রণ দূর করেঃ অতিরিক্ত তেল ও মরা চামড়ার জন্য ত্বকে ব্রণ দেখা দেয়। সজনেতে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টি-এজিং উপাদান ত্বকে ব্রণ হতে বাধা দেয়। এছাড়া অতিরিক্ত তেল দূর করে ত্বককে সতেজ করে তোলে।

ত্বকের ছিদ্রের আকৃতি ছোট করেঃ মুখের বড় ছিদ্র থাকলে ত্বক খসখসে এবং রুক্ষ দেখায়। অতিরিক্ত তেল উৎপাদনের কারণে ত্বকে বড় ছিদ্র হয়। দীর্ঘক্ষণ সূর্যালোকে থাকার কারণেও এই সমস্যা হতে পারে। সজনে পাতায় থাকা ভিটামিন এ ও সি ত্বকের কোলাজেনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং ত্বকের ছিদ্র ছোট করতে সাহায্য করে।

ত্বকের মলিনতা দূর করেঃ ধুলাবালি, দূষণ ও কাজের চাপে ত্বক নিস্তেজ হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, সজনে গুঁড়া, তেল ত্বকের ভেতর থেকে ময়লা বের করে ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।ত্বকের যত্নে সজনে গুঁড়ার সাথে মধু ও গোলাপ জল কিংবা অ্যালোভেরা জেলও ব্যবহার করতে পারেন।

টক্সিন দূর করতে সাহায্য করেঃ টক্সিনের ফলেই ত্বকে ব্রণ এবং বিভিন্ন দাগ ছোপের সমস্যা দেখা যায়। সজনের গুঁড়া কিংবা সজনের বীজ গ্রহণ করলে রক্ত পরিশ্রুত হয় যার ফলে ত্বক পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর হয়।

বয়সের ছাপ পড়া কমায়ঃ প্রতিদিন আমাদের স্কিন বিভিন্ন দূষণ এবং ইউভি রশ্মির মধ্য দিয়ে যায়, যা স্কিনের জন্য ক্ষতিকর। এটি ত্বকের বিভিন্ন কোষের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে আক্রমণ করে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার কারণে অল্প বয়সে স্কিনে রিংকেলস দেখা দেয়। মরিঙ্গা বা সজনে পাতার গুঁড়াতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং ভিটামিনি বি রয়েছে যা ত্বকের রিংকেলস দূর করে। সাথে ত্বকে এনে দেয় তারুণ্যদীপ্ত উজ্জ্বলতা।

প্রাকৃতিকভাবে স্কিনে কোলাজেন তৈরি করেঃ কমলালেবুর তুলনায় সাত গুণ বেশি পরিমাণের ভিটামিন সি রয়েছে সজনে পাতায়। ভিটামিন সি প্রাকৃতিকভাবে ত্বকে কোলাজেন তৈরি করে। কোলাজেন স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে। সজনে পাতার নির্যাস থেকে তৈরি ক্রিম ত্বকের গভীরে যেয়ে ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের ইলাস্টিসিটি বৃদ্ধি করে।

ঠোঁটের ময়েশ্চারাইজারঃ মরিঙ্গা অয়েল ঠোঁট ময়েশ্চারাইজার করতে বেশ কার্যকর। বিভিন্ন লিপ বাম এবং লিপ কেয়ার প্রোডাক্টে এখন মরিঙ্গা অয়েল ব্যবহৃত হয়। এটি ঠোঁট নরম ও কোমল করে তোলে।আপনিও যদি সবসময় শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ ঠোঁট নিয়ে বিরক্ত হন, তাহলে সজনের তেল খুবই কার্যকরী হতে পারে। ঘুমানোর আগে ঠোঁটে লাগান।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিঃ সজনে পাতা ত্বকের বিভিন্ন কালো দাগ দূর করে ত্বক ব্রাইট করতে সাহায্য করে। সজনে পাতার পেস্ট ব্রণের দাগ, বিভিন্ন কালো দাগ দূর করতেও বেশ কার্যকর।

ব্রণ হ্রাস করেঃ
মরিঙ্গা অয়েলের অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, ব্রণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে মরিঙ্গা পাতার পেস্ট ব্যবহার করলে তা দ্রুত সেরে উঠে।

স্কিনের পোরস হ্রাস করেঃ স্কিনের অন্যতম একটি সমস্যা হলো লার্জ পোরস। সজনে পাতা কোলাজেন বৃদ্ধি করে পোরস হ্রাস করে।

বার্ধক্য দূর করতেঃ
মরিঙ্গা বা সজনে তেল এবং পাতার গুঁড়া ব্যবহার করলে ত্বকের সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা দূর হয়। এর পাশাপাশি এটি ত্বকে উজ্জ্বলতা আনে এবং বিভিন্ন দাগ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।

বলিরেখা থেকে মুক্তি পেতেঃ সজনে পাতার এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ত্বকে কোলাজেনের পরিমাণ বাড়ায়। যা ত্বকের খোলা ছিদ্র কমাতে সাহায্য করে। উপরন্তু, এটি সূক্ষ্ম বা ছোটো ছোটো রেখা এবং বলিরেখা কমায়।

ব্রণ থেকে মুক্তি পেতেঃ
ত্বকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণের কারণে বা মরা চামড়ার কারণে ত্বকের ছিদ্রগুলো আটকে যায় এবং এর ফলে ব্রণ তৈরি হতে পারে। সজনে পাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আপনার ব্রণ কমাতে পারে। এটি মুখের অতিরিক্ত তেল শুষে নেয় এবং ত্বককে ব্রণমুক্ত করে। এর অ্যান্টিসেপটিক গুণও ত্বককে সংক্রমণ থেকে দূরে রাখে। আপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয়, তাহলে সেই ক্ষেত্রেওসজনে পাতার ব্যবহার আপনার জন্য খুব উপকারী হতে পারে।

ত্বকের স্তর উন্নত করতেঃ
আজকাল ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপ, দূষণ এবং ভুল খাবারের কারণে ত্বকের স্তর খারাপ হতে শুরু করে। ত্বকের শিথিলতা এবং শুষ্কতা থাকতে পারে। এতে পাওয়া ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ত্বককে আরও পরিষ্কার দেখায়। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজড এবং নরম রাখে।

ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করতেঃ অনেক সময় ত্বকের উপরিভাগে ময়লা জমে যা মুখ পরিষ্কার করার পরেও যায় না। অনেকে মেকআপের সাহায্যে এটি লুকিয়ে রাখলেও এটি বিশেষ কোনো সুবিধা দেয় না, বরং আপনার সমস্যা আরও বাড়তে পারে। এটি সিবামের উৎপাদন বাড়াতে পারে এবং ত্বককে তৈলাক্ত দেখায়। অনেকের মুখে বড়ো বড়ো ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রগুলি আপনার ত্বককে শুষ্ক এবং রুক্ষ করে তোলে। আসলে, আমাদের মুখ সিবাম তৈরি করে, যার কারণে মুখে অতিরিক্ত তেল জমতে পারে। সজনে পাতাতে ভিটামিন এ এবং সি রয়েছে, যা ছিদ্র সঙ্কুচিত করতে সাহায্য করে। এটি তেলের উৎপাদনও সীমিত করতে পারে। এটি আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করে

ত্বকের যত্নে সজনে পাতার ফেসপ্যাক

এতক্ষণে আমরা জেনে গিয়েছি সজনে পাতার নানা অজানা গুনাগুণ সম্পর্কে। তাহলে এবার জেনে নেয়া যাক কীভাবে ব্যবহার করলে এই সজনে পাতা আমাদের ত্বকে ভালোভাবে কাজ করবে। বিশেষ করে যাদের স্কিন রুক্ষ-শুষ্ক, ব্যস্ত জীবনে সহজ সমাধান হতে পারে এই ফেইস মাস্ক বা প্যাক!

প্রথমেই ১ টেবিল চামচ মরিঙ্গা বা সজনে পাতার পাউডার নিয়ে নিন। এতে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। সাথে ১ টেবিল চামচ রোজ ওয়াটার দিয়ে ভালোভাবে মিক্স করে নিন। চাইলে সামান্য লেবুর রস দিয়ে নিতে পারে। কখনই লেবুর রস সরাসরি ত্বকে অ্যাপ্লাই করবেন না। কন্সিসটেন্সি বুঝে প্রয়োজনে একটু পানি এড করে নিন।

এবার মুখে লাগিয়ে রাখুন, ১০ থেকে ১৫ মিনিট হয়ে গেলে যখন প্যাকটি শুকিয়ে আসবে তখন হালকা কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে প্যাকটি উঠিয়ে নিন। সবশেষে একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার মুখে লাগিয়ে নিন। এতে মুখের শুষ্কভাব দূর হবে। এই প্যাকটি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করতে চেষ্টা করুন। এতে বলিরেখা, ছোপ ছোপ দাগ এবং মলিনতা অনেকাংশেই কমে আসবে। 

ত্বকের যত্নে কীভাবে মরিঙ্গা গুঁড়া বা সজনে পাতা ব্যবহার করবেন

গাছ থেকে সরাসরি পাতা নিয়ে ব্যবহার করা বেশ সময়সাপেক্ষ। হাতের কাছে যদি মরিঙ্গা গুঁড়া থাকে তাহলে ব্যবহার করা সহজ হবে। ত্বকে ও চুলে ব্যবহারের আগে অবশ্যই মরিঙ্গা গুঁড়া দিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তাহলে এবার জেনে নেয়া যাক কীভাবে ব্যবহার করলে এই সজনে পাতা আমাদের ত্বকে ভালোভাবে কাজ করবে। বিশেষ করে যাদের স্কিন রুক্ষ-শুষ্ক, ব্যস্ত জীবনে সহজ সমাধান হতে পারে এই পেস্ট

মধু ও মরিঙ্গা গুঁড়ার পেস্ট

যা যা লাগবে-
  • ১/২ টেবিল চামচ মরিঙ্গা গুঁড়া
  • ১ টেবিল চামচ মধু
  • ১ টেবিল চামচ গোলাপজল
  • ১/২ টেবিল চামচ লেবুর রস
যেভাবে বানাবেন-
মরিঙ্গা গুঁড়া, মধু, গোলাপজল এবং লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে আসলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। প্যাক ব্যবহারের পর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।

দুধ ও মরিঙ্গা গুঁড়ার পেস্ট


যা যা লাগবে-
  • ১/২ চা চামচ মরিঙ্গা গুঁড়া
  • ১ টেবিল চামচ দুধ
  • ১/২ টেবিল চামচ লেবুর রস
যেভাবে বানাবেন-
সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে দশ মিনিট অপেক্ষা করুন। ১০ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এরপর স্কিনে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

মরিঙ্গা গুঁড়া ও অ্যাভোকাডোর পেস্ট


যা যা লাগবে-
  • ১ টেবিল চামচ মরিঙ্গা পাতার গুঁড়া
  • অর্ধেক অ্যাভোকাডো পেস্ট
  • ১ টেবিল চামচ মধু
  • ১ টেবিল চামচ লেবুর রস
যেভাবে বানাবেন-
একটি পাত্রে সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

মরিঙ্গা গুঁড়া ও কলার পেস্ট

যা যা লাগবে
অর্ধেক কলা
  • ১ টেবিল চামচ সজনে পাতার গুঁড়া
  • ১ টেবিল চামচ মধু
  • ২ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল
যেভাবে বানাবেন-
সজনে পাতার গুঁড়া, মধু, কলা এবং টি ট্রি অয়েল একসাথে মিশিয়ে প্যাক করে নিন। এই প্যাকটি ত্বকের কালো দাগের উপর লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর শুকিয়ে আসলে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সজনে পাতার গুঁড়াতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। 

ত্বকের যত্নে মধু ব্যবহারের নিয়ম

মধু শুধু স্বাস্থ্যের জন্যই নয় ত্বকের জন্যও খুবই উপকারী। বহুদিন ধরে খাবারের পাশাপাশি রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে মধু। ত্বক ও চুলের যত্নে মধু অতুলনীয়। তবে অনেকেরই জানা নেই মধু ব্যবহারের সঠিক নিয়ম। মধু রোদে পড়া ট্যান থেকে শুরু করে নিস্তেজ ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।তাই আপনি আপনার রূপচর্চার নিয়মিত রুটিনের অংশ করতে পারেন মধু।

প্রশ্নঃ মধু কি ত্বকের জন্য ভালো?

উত্তরঃ ব্রণ কিংবা ব্রণের দাগ সারাতে সাহায্য করে মধু। প্রাকৃতিক এ উপাদান ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে এবং প্রদাহ, ত্বকের লালচে ভাব ও দাগ নিরাময়ে সহায়তা করে। ত্বকে মধু ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এর সাথে অন্যান্য উপাদান যেমন- মুলতানি মাটি, বেসন কিংবা উপটানের সঙ্গে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।

এটি এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ত্বক নরম রাখে, বলিরেখা ও কালচে ভাব দূর করে। এ ছাড়া ব্রণের জীবাণুও ধংস করতে মধু বেশ কার্যকর। খুব কম সময়েই উজ্জ্বল ত্বক পেতে চাইলে মধুর কোনো বিকল্প নেই। আপনি চাইলে মাত্র পাঁচদিনেই মধু দিয়ে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে পারেন। তাই চলুন জেনে নিই যেভাবে মধু ব্যবহার করলে আপনাকে আর পার্লারে যেতে হবে না, বাড়িতে অনায়াসেই করতে পারবেন।

ক্লিনজার হিসাবে মধুর ব্যবহারঃ মধুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং হিউমেক্ট্যান্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি আপনার ত্বকে জমে থাকা ময়লা দূর করতে সাহায্য করে। এটি ব্রণ এবং ত্বকের জ্বালাভাব প্রতিরোধ করে। এটিতে ময়শ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। এর জন্য মুখে, গলায় ও ঘাড়ে মধু লাগান। ২০ মিনিটের জন্য এটি রেখে দিন। এর পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মধু ত্বকের ওপেন পোরস বন্ধ করতে এবং ত্বক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

ফেসিয়াল টোনার হিসেবে মধুর ব্যবহারঃ মধু আপনার ত্বকের ওপেন পোরস বন্ধ করতে এবং ত্বক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আপনি মাত্র দুটি উপাদান ব্যবহার করে এই ফেস টোনারটি তৈরি করতে পারেন। এর জন্য আপনার প্রয়োজন শসা এবং মধু। শসা খোসা ছাড়িয়ে তার পিউরি বানিয়ে নিন। শসার রসের জন্য পিউরি ছেঁকে নিন। এবার ওই শসার রসে মধু মিশিয়ে নিন। একটি বোতলে মিশ্রণটি ঢেলে ভালো করে ঝাকিয়ে নিন। শেষে একটি তুলার প্যাডের সাহায্যে এই ফেসিয়াল টোনারটি আপনার ত্বকে লাগান।

মধু ও কলার প্যাকঃ এক টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে সামান্য কলা চটকে নিয়ে প্যাক তৈরি করুন। ২০ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের কালচে ভাব দূর করে।

মধু, গোলাপজল ও হলুদের গুঁড়োঃ এক টেবির চামচ মধু, কয়েক ফোঁটা গোলাপজল ও সামান্য হলুদের গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে এক নিমিষেই উজ্জ্বল করবে।

মধু ও লেবুর রসঃ এক চা চামচ মধুর সঙ্গে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ২০ মিনিট মুখ ম্যাসাজ করুন। এরপর ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে। ২০ মিনিট পরে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার ত্বক নিমিষেই উজ্জ্বল হয়ে যাবে।

মধু ও টকদইঃ এক টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে এক টেবিল চামচ টকদই মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেশ কার্যকর। এ ছাড়া ত্বকের ব্রণ দূর করতেও এই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। মধু ও টকদই ত্বকের ব্রণ দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

মধু ও পেঁপেঃ দুই টুকরো পেঁপে চটকে নিয়ে এর সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে ঘন প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাক মুখে লাগিয়ে হালকাভাবে ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট পর মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য বেশি উপকারী। এ ছাড়া বয়সের ছাপ দূর করতেও এই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।

মধুর তৈরি স্ক্রাবঃ মধুতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য এটি ত্বকের জন্য একটি দুর্দান্ত এক্সফোলিয়েটর হিসাবে কাজ করে। এটি আপনার ত্বকের ছিদ্রগুলিকে গভীরভাবে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর করে। এর জন্য একটি পাত্রে মধু ও চিনি দিন। ভালো করে মিশিয়ে নিন। মুখ ভিজিয়ে তারপর সারা মুখে লাগান। আপনার মুখ এবং ঘাড় আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন। ৫-১০ মিনিটের জন্য এটি রেখে দিন। এর পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

তৈলাক্ত, মিশ্র ও শুষ্ক ত্বকের যত্নে মধু ব্যবহারের নিয়ম

ভেতর থেকে ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে প্রতিদিন মধু খাওয়া যেতে পারে। ১ গ্লাস গরম দুধে ২ চা-চামচ মধু আর ৩-৪ টি জাফরান গুলে খেয়ে নিন। তিন মাসের মধ্যে ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল। মধু এক ধরনের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। এটি বাতাস থেকে জলীয়কণা ত্বকের ভিতরে টেনে নেয় যা ত্বকের গভীরে নমনীয়তা ধরে রাখতে সাহায্য করে। দীর্ঘসময় ত্বকের নমনীয়তা ধরে রাখতে মধু দারুণ উপকারী।
 
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নেঃ ত্বক তৈলাক্ত হলেই যে তা আর্দ্র হবে, এমনটা কিন্তু নয়। তৈলাক্ত ত্বকও আর্দ্রতার অভাবে নিষ্প্রাণ হয়ে পড়তে পারে। তৈলাক্ত ত্বকে তুলসী পাতা আর মধু প্রয়োগ করতে পারেন। ১ কাপ তুলসী পাতা নিন। তা থেকে রস বের করুন। মোটামুটি ১ টেবিল চামচ পরিমাণ রস হবে। রস ছেঁকে নিন। রস ছেঁকে নিয়ে পাতার বাকি অংশটুকু ফেলে দেবেন না।

তুলার সাহায্যে রসটুকু মুখে লাগিয়ে নিন টোনারের মতো। ৫-৭ মিনিট পর রস শুকিয়ে এলে এবার পাতার সেই বাকি অংশের সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন ১ চা-চামচ পরিমাণ। এই মিশ্রণই হয়ে গেল একটি ফেসপ্যাক। ফেসপ্যাকটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১ দিন এভাবে মধু দিয়ে রূপচর্চা করতে পারেন। তবে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেশি হলে সপ্তাহে ২-৩ দিনও ব্যবহার করতে পারেন।

মিশ্র ত্বকের জন্যঃ
ত্বক মিশ্র প্রকৃতির হলে একেক মৌসুমে একেক রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তবে সঠিক নিয়মে ভালো মানের মধু ত্বকে প্রয়োগ করলে তা স্বাভাবিক ত্বকের মতোই স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠতে পারে। মিশ্র ত্বকের জন্য দুইভাবে কাজে লাগাতে পারেন মধু। সপ্তাহে ১ দিন করে ব্যবহার করতে পারেন নিচের যেকোনো একটি উপায়ে। ১ কাপ পুদিনা পাতা (ডাল নয়) ধুয়ে চটকে নিন।

এই রস তুলার সাহায্যে মুখের ত্বকে লাগিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার ১ চা-চামচ মধুর সঙ্গে আধা চা-চামচ গোলাপজল মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি তুলার সাহায্যে একইভাবে মুখে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। পুদিনা পাতা নিন ১ টেবিল চামচ। পাতা পিষে নিয়ে এর সঙ্গে মেশান ১ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি এবং ১ চা-চামচ মধু। কোনো পানি মেশাবেন না। মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।

শুষ্ক ত্বকে যত্নেঃ শুষ্ক ত্বকেও ২টি আলাদা পদ্ধতিতে মধু প্রয়োগ করতে পারেন। চন্দনগুঁড়া নিন ১ চা-চামচ। গরুর দুধ গরম করে এর সঙ্গে মিশিয়ে নিন। চন্দন ভালোভাবে মিশে যেতে যে পরিমাণ দুধের প্রয়োজন হবে, ততটাই নিন। চন্দন ভালোভাবে মিশে যাওয়ার পর এই মিশ্রণে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে নিন। এরপর ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। সপ্তাহে ২ দিন এভাবে ব্যবহার করতে পারেন মধুর প্যাক।

চাইলে চন্দনগুঁড়ার পরিবর্তে সামান্য একটু চন্দন কাঠ দিয়েও একই নিয়মে প্যাকটি তৈরি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দুধে চন্দন ভিজিয়ে রাখতে হবে কিছুক্ষণ। এরপর শিল–পাটায় ঘষে নিতে হবে। এই প্যাক ত্বকে উজ্জ্বলতা আনে, কালচে ছোপ দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকে বলিরেখা পড়তে দেয় না। কাঁচা হলুদের রস ভালোভাবে জ্বাল দিয়ে ফুটিয়ে নিন। রস ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিন। এবার ১ চা-চামচ রস নিয়ে এর সঙ্গে মিশিয়ে নিন ১টি ডিমের কুসুম ও আধা চা-চামচ মধু।

মিশ্রণটি সপ্তাহে ১ বার মুখে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিটের জন্য। ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হলে, ঠোঁটের আশপাশের বা নাকের চামড়া শুষ্ক হলে সপ্তাহে ২-৩ দিন প্রয়োগ করতে পারেন। ভালোভাবে জ্বাল দেওয়া হলুদের রস ঠান্ডা করে কাচের মুখবন্ধ বয়ামে পুরে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন দিন পনেরোর জন্য। ত্বককে আর্দ্র রাখতে এই প্যাক দারুণ কার্যকর।

ত্বকের যত্নে মধুর উপকারিতা

ত্বকের যত্নে মধুর ব্যবহার অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। মধুর বিশেষ আরামদায়ক ক্ষমতা রয়েছে যা দ্রুত ত্বকের ক্ষতি সারিয়ে নিতে পারে।এছাড়াও এর প্রোবায়োটিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পুষ্টি উপাদান এবং নির্যাস একসঙ্গে কাজ করে ত্বককে মসৃণ, টানটান ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। মধু ত্বককে তৈলাক্ত না করে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাতে ভুমিকা রাখে।

ত্বকের দাগ কমাতে মধুঃ মধু প্রাকৃতিক ‘হিউমেকটেন্ট’ সমৃদ্ধ যা ত্বক পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। এছাড়াও রয়েছে ব্যাক্টেরিয়া ও প্রদাহনাশক উপাদান যা ত্বকের দাগ কমাতে চমৎকার কাজ করে। মুখে সরাসরি মধু ব্যবহার ব্যাক্টেরিয়া দূর করে, ত্বক আর্দ্র রাখে, প্রদাহ কমায় এবং মুখের দাগ কমাতে সহায়তা করে।

অ্যান্টি-এজিং উপকারিতাঃ যদিও পুরুষ এবং মহিলা উভয়েই বার্ধক্যজনিত প্রভাব অনুভব করে, মধুর কিছু বৈশিষ্ট্য এটিকে পুরুষ ত্বকের জন্য বিশেষভাবে উপকারী করে তোলে। মধুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যেমন ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফেনোলিক অ্যাসিড, যা অকাল বার্ধক্যের জন্য দায়ী ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ত্বকে মধুর নিয়মিত ব্যবহার সূক্ষ্ম রেখার উপস্থিতি কমাতে পারে এবং তারুণ্য এবং পুনরুজ্জীবিত বর্ণকে উন্নীত করতে পারে।

ক্ষত নিরাময়ঃ পুরুষদের বিভিন্ন কার্যকলাপের কারণে কাটা বা অন্যান্য ছোটখাটো আঘাতের প্রবণতা বেশি হয়। ক্ষত নিরাময় ত্বরান্বিত করার জন্য মধুর ক্ষমতা এই ধরনের ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে। হাইড্রোজেন পারক্সাইডের উৎপাদন, মধুতে পাওয়া এনজাইম গ্লুকোজ অক্সিডেস দ্বারা সহজতর, একটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করে যা সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং ক্ষত দ্রুত নিরাময়কে উৎসাহিত করে।

দৈনিক ত্বক পরিষ্কারক হিসেবে মধুঃ মধুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিসেপ্টিক এবং ব্যাক্টেরিয়ারোধী উপাদান ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। এটা লোমকূপ উন্মুক্ত করে এবং বিরক্তিকর ব্ল্যাকহেডস থেকে দূরে রাখার পাশাপাশি সারাদিন ত্বক আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। মুখ কুসুম গরম পানি দিয়ে ভিজিয়ে আধ চা-চামচ মধু মুখে গোলাকারভাবে মালিশ করুন। ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন এবং ত্বকের স্বাভাবিক যত্ন নিন।

প্রাকৃতিক এক্সফলিয়েটরঃ মধু খুব ভালো এক্সফলিয়েটর। এটা ব্যবহারে ত্বকের অস্বস্তিকর জ্বালাভাব দূর হয়। মধু মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন অথবা এর সঙ্গে অ্যাভোকাডো, লেবু বা অ্যাপল সাইডার মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। প্রথমে ত্বক ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নিন। এরপর ত্বকে পাতলা করে মধুর প্রলাপ লাগান এবং ৮ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং আলতো চাপ দিয়ে মুখের পানি মুছে নিন। সপ্তাহে দুএকবার ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

ব্রণের জন্য উপকারীঃ মধু ত্বকের ব্রণ দূর করতে কার্যকার ভূমিকা পালন করে। দ্রুততম সময়ে উজ্জ্বল ত্বক পেতে মধুর কোনো বিকল্প নেই। এক চা চামচ মধুর সঙ্গে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ২০ মিনিট ধরে মুখে ম্যাসাজ করতে হবে। এর পর ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এটি ব্রণ দুরীকরনে সহায়ক হবে।এর প্রদাহরোধী উপাদান ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে এবং প্রতিদিন ব্যবহারে ত্বকের ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়াও ত্বকের কড়া দাগ ও ‘ব্রেক আউট’ দূর করতে এমনকি ত্বকের খারাপ অবস্থা- একজিমা বা সিরোসিস উপশমেও মধু সহায়তা করে। মধুর আরামদায়ক ক্ষমতা দ্রুত ত্বকের ক্ষতি সারিয়ে নিতে পারে।

বয়সের ছাপ দূর করেঃ এর প্রোবায়োটিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পুষ্টি উপাদান এবং নির্যাস একসঙ্গে কাজ করে ত্বককে মসৃণ, টানটান ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। মধু ত্বককে তৈলাক্ত না করেই ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। মধু সম্পূর্ণভাবে বলিরেখা কমাতে না পারলেও এর দৃশ্যতা কমাতে সহায়তা করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের ক্ষয় পূরণ করে। ফলে ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ দেখা দেয় না।

ত্বকের দাগ দূর করতেঃ মধু ত্বকের ব্রণ দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ত্বকের দাগ দূর করতে মধু সহায়তা করে। মধুর আরামদায়ক ক্ষমতা দ্রুত ত্বকের ক্ষতি সারিয়ে নিতে পারে।

উজ্জ্বল ত্বক পেতেঃ তিন চামচ গোলাপজলের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করুন। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর ঠাণ্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। ত্বকে মধু ব্যবহারের পর অবশ্যই মুখ ঠিকমতো ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। কারণ লোমকূপে মধু আটকে থাকলে তা থেকে ব্রণ দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে মধুর ব্যবহার বেশ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই ব্যবহারের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ত্বকের যত্নে মধুর ফেসপ্যাক

প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের যত্নে মধু অত্যন্ত কার্যকর। ত্বকের যত্নে মধু ব্যবহারে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।খুব সহজেই ঘরোয়া ভাবে ত্বকের যত্নে মধু ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এই ক্ষেত্রে খাটি এবং ভেজাল্মুক্ত মধু ব্যবহার করা উচিৎ। ভালোমানের সকল রকমের মধু যা আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক হবে। জেনে নিন ত্বকের যত্নে মধুর ফেসপ্যাক ব্যবহার

মধু দিয়ে ফেসিয়ালঃ রোদে টান পড়া থেকে শুরু করে নিস্তেজ ত্বকে উজ্জ্বলতা আনা পর্যন্ত অনেক সমস্যার সমাধান করে মধু। আপনি মধুকে আপনার সৌন্দর্যের রুটিনের একটি অংশ করে তুলতে পারেন। ফেসিয়াল হিসেবে মধু কে সহজেই নিয়মিত ব্যবহার করা যেতে পারে। এটিকে রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করার একটি সহজ উপায় হল এটি ফেসিয়াল হিসেবে ব্যবহার করা।

বেসন ও মধুর ফেসপ্যাকঃ
দুই চামচ বেসন, দুই চামচ মধু, এক চামচ মিনারেল ওয়াটার,আধা চামচ লেবুর রস একসাথে একটি বাটি তে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করতে হবে। পেস্ট তৈরী করার পর মুখ ভাল করে পরিষ্কার করে এটি মুখে প্রয়োগ করতে হবে। এরপর ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মুখ মুছে ফেলতে হবে। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। 

মধু ও লেবুফেস প্যাকঃ কটি লেবুর অর্ধেক অংশ কেটে তার রস বের করে এর সাথে ২ টেবিলচামচ মধু মিশিয়ে মিশ্রণটি ত্বকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ত্বক কে উজ্জ্বল করবে এবং ত্বককে আরও ফর্সা করে তুলবে। মধু ও লেবুর রস ত্বকে প্রয়োগ করলে ত্বক সুন্দর হয়। মধু ও লেবু তে যে উপকরন রয়েছে তা আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য্য রক্ষায় অত্যন্ত প্রয়োজন। মধু ও লেবু ব্যবহার করে ত্বক পরিষ্কর এবং ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করা যায়। 
 
মধু ও অলিভ অয়েলেফেস প্যাকঃ এক চামচ মধু ও অলিভ অয়েল নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করে মুখে লাগাতে হবে। ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ব্রণ দূর হবে এবং ত্বক উজ্জ্বল হবে।

 মধু ও হলুদেফেস প্যাকঃ প্রথমে একটা বাটিতে এক চামচ মধু নিতে হবে। এর ভিতর এক টেবিল চামচ হলুদ গুড়ো মিশিয়ে নিতে হবে। এবার এই দুটি উপাদানকে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরী করে নিতে হবে। এই প্যাকটি মুখের ত্বকে আলতো হাতে লাগিয়ে নিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর আপনার প্যাকটি শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে কমপক্ষে দুই দিন ব্যবহার করতে হবে। 
 
মধু ও দুধের ফেস প্যাকঃ ফেস প্যাক তৈরি করার জন্য একটি পাত্রে ১ টেবিল চামচ দুধ এবং মধু ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। এখন এই মিশ্রণটিকে ত্বকে লাগিয়ে অপেক্ষা ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। ২০ মিনিট পর হালকা কুসুম গরম পানিতে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। ত্বকের উজ্জ্বলতা ঠিক রাখতে মধু এবং দুধের এই ফেস প্যাক সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার ব্যবহার করতে হবে।

মধু ও নিম পাতাফেস প্যাকঃ ত্বকের যত্নে মধু ও নিম পাতার উপকারিতা অনেক। এর জন্য ৩-৪টি নিমপাতা ও ১ টেবিল চামচ মধু নিতে হবে। প্রথমে নিমপাতা ২০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রেখে নিম পাতা ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করতে হবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ত্বক কে নরম এবং মসৃণ রাখে। 
 
মধু ও চন্দনগুঁড়াফেস প্যাকঃ একটি কাপে ১/২ চামচ মধু নিয়ে তার সাথে ৪ চামচ চন্দনগুঁড়ো মিশিয়ে ভারী পেস্ট তৈরী করতে হবে। তারপর এই পেস্টটি পুরো মুখে লাগিয়ে নিতে হবে। এটি গলায় এবং ঘাড়েও ব্যবহার করা যেতে পারে।এটি না শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাক আপনার ত্বক নরম ও উজ্জ্বল করবে।

মুখে মধু মাখার নিয়ম

কিভাবে মুখে মধু মাখতে হয় অনেকেই সে নিয়ম সম্পর্কে জানেন না। প্রথমে ত্বক ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর ত্বকে পাতলা করে মধুর প্রলেপ লাগাতে হবে এবং ৮ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর আলতো চাপ দিয়ে মুখের পানি মুছে নিতে হবে। সপ্তাহে দুএকবার এভাবে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

মধু নির্বাচনঃ
ত্বকের যত্নের জন্য কাঁচা, প্রক্রিয়াবিহীন মধু বেছে নিন, কারণ এটি প্রক্রিয়াজাত মধুর তুলনায় বেশি উপকারী বৈশিষ্ট্য ধরে রাখে।

ত্বক পরিষ্কার করাঃ

মধু প্রয়োগ করার আগে, নিশ্চিত করুন যে আপনার ত্বক পরিষ্কার এবং মেকআপ, ময়লা বা অন্যান্য স্কিন কেয়ার পণ্য থেকে মুক্ত। আলতো করে একটি হালকা ক্লিনজার দিয়ে আপনার মুখ ধুয়ে নিন এবং একটি পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে শুকিয়ে নিন।

প্রয়োগঃ
অল্প পরিমাণে মধু নিন এবং ত্বকের পছন্দসই স্থানে সমানভাবে লাগান। আপনি প্রয়োগের জন্য পরিষ্কার আঙ্গুল, একটি তুলো প্যাড, বা একটি প্রসাধনী ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন।

সময়কালঃ
মধু আপনার ত্বকে প্রয়োগ করে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন যাতে এটি কাজ করার পর্যাপ্ত সময় পায়। আপনার যদি সংবেদনশীল ত্বক থাকে, কোন প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া নেই তা নিশ্চিত করার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত সময় ব্যাবহার করুন। হালকা গরম জল ব্যবহার করে মধু ধুয়ে ফেলুন এবং একটি নরম তোয়ালে দিয়ে আলতো করে আপনার ত্বক শুকিয়ে নিন। সাধারণত প্রতি সপ্তাহে ১-২ বার ত্বকে মধু ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

সংরক্ষনঃ
সরাসরি সূর্যালোক থেকে দূরে একটি শীতল, শুষ্ক জায়গায় আপনার মধু সংরক্ষণ করুন। তাপ এবং সূর্যালোকের এক্সপোজার সময়ের সাথে সাথে এর উপকারী যৌগগুলিকে হ্রাস করতে পারে। সঠিক স্টোরেজ মধুর গুণমান এবং কার্যকারিতা রক্ষা করতে সাহায্য করবে।

ত্বকের যত্নে মধু ব্যবহারের আরো কিছু পদ্ধতি

অনেকেই মধু ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান। কারণ মধুতে রয়েছে ভিটাইন বি, জিংক, ক্যালসিয়াম, লৌহ এবং পটাশিয়ামের মতো অনেক উপাদান। এছাড়াও উচ্চ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক কার্যকর নির্যাস রয়েছে যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। মধুতে রয়েছে এমন সব উপাদান, যা শুষ্ক ও তৈলাক্ত দুই ধরনের ত্বকের জন্যই উপকারী।

১. মধুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে, এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে ত্বকে জ্বালাপোড়া-ভাব দূর হয়ে যাবে এবং তা আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করবে।

২. সামান্য হলুদ বাটা, সাথে কয়েক ফোঁটা গোলাপজল আর এক টেবিল চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন এবং এর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে সতেজ করে।

৩. দুই টেবিল চামচ মধুর সাথে এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার পুরো ত্বকে আলতো করে মেখে নিন ও হালকাভাবে ম্যাসাজ করতে থাকুন। কিছুক্ষণ পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে আপনার ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার হবে ও কোমল হয়ে উঠবে।

৪. মুখ হালকা কুসুম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন এবং মধুর হালকা প্রলেপ লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ধুয়ে ফেলুন, ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে যাবে।

৫. এক চা চামচ চন্দন পাউডার সাথে আধা চা চামচ কফির গুঁড়ো এবং খুব ঘন নয় এমন একটি মিশ্রণ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মধু মিশিয়ে প্যাক বানাতে হবে। ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে এর প্রলেপ লাগাতে হবে এবং ৩০ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে ত্বকের কালচে ভাব কমে যাবে।

৬. এক টেবিল চামচ টকদই আর এক টেবিল চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণ ধীরে ধীরে কমে যাবে।

৭. মুখের ব্রণ দূর করতে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধূয়ে নিন। তারপর আধা চা চামচ মধু মুখে গোলাকার করে মালিশ করে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। এটা মুখের ব্রণ দূর করার সাথে সাথে লোমকূপ উন্মুক্ত করবে এবং বিরক্তি কর ব্ল্যাক হেডস থেকে মুক্তি দেবে। এছাড়াও সারাদিন ত্বক আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।

৮. ত্বকের অস্বস্তিকর জ্বালাভাব দূর করতে ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। এরপর ত্বকে পাতলা করে মধুর প্রলেপ লাগিয়ে ৮ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করেন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং আলতো করে চাপ দিয়ে দিয়ে মুখের পানি মুছে নিন। এভাবে সপ্তাহে দুই একবার ব্যবহার করুণ।

৯. ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে আধা চা চামচ মধুর সাথে এক টেবিল চামচ টক দই একটি মিশ্রন তৈরি করে নিন। তারপর এটি ত্বকে ম্যাসাজ করুন। কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করার পর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

১০. রোদে পোড়া দাগ দূর করতে মধুর সথে পাকা পেঁপে ও চন্দনের গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকে লাগাল। তারপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে এভাবে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন ব্যবহার করুণ।

এছাড়াও শুধু মধু মুখে লাগিয়ে নিন। এরপর শুকিয়ে টানটান হয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধূয়ে ফেলুন। নিয়মিত এভাবে ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।

ত্বকের যত্নে এলোভেরার উপকারিতা

শুধু তৈলাক্ত ও স্বাভাবিক ত্বক নয়, শুষ্ক ত্বকের যত্নেও অ্যালোভেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্ষতিগ্রস্ত ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর, মসৃণ ও মোলায়েম করে তোলে। অ্যালোভেরাতে অনেক ধরণের ঔষধি উপাদান আছে বিধায় সৌন্দর্য জগতে অ্যালোভেরার ব্যবহারও অনেক বেশী। তাই সৌন্দর্য চর্চায় ঘৃতকুমারী বা সহজ কিছু অ্যালোভেরা ব্যবহার নিয়ে আজ আমি আলোচনা করবো
ত্বকের-যত্নে-এলোভেরার-উপকারিতা
প্রাকৃতিক ক্লিনজারঃ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে শশার রস মিশিয়ে প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। শশাতে ঠাণ্ডা এক ধরনের উপাদান আছে যা পেট এবং ত্বক উভয়ই পরিষ্কার রাখে। এর মাধ্যমে ত্বক লাবণ্যময়, সতেজ ও সুস্থ হয়ে ওঠে।
ত্বককে মোলায়েম করে তোলেঃ শুষ্ক ত্বক রুক্ষ হয়ে যায় চটজলদি। তাই আপনাকে ত্বককে রোজ ময়েশ্চারাইজ করে যেতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুষ্ক তবক্র ব্যক্তিরা ভারী ময়েশ্চারাইজার বেছে নেন। অ্যালোভেরা জেল এই কাজটা অনেক সহজেই করতে পারে। অ্যালোভেরা জেলের মধ্যে হাইড্রেটেডিং উপাদান রয়েছে, যা ত্বকে কোমল ও নরম করে তোলে। ত্বকের কোষকে হাইড্রেটেড রাখে।

প্রশ্নঃ অ্যালোভেরা ত্বকে দিলে কি হয়?

উত্তরঃ অ্যালোভেরার জেল ত্বকের র‍্যাশ, চুলকানি, রোদে পড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এই জেল ত্বকে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ থাকে এবং বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। ত্বকের শুষ্ক ভাব এবং ত্বকের চুলকানি দূর করার জন্যঅ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান চুল পড়া, চুল শুষ্কতা রোধ ও খুশকি দূর করে।

ত্বকের সমস্যা কমায়ঃ
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে শুষ্ক ত্বকের সমস্যা বাড়ে। তাপমাত্রা বা আর্দ্রতার পরিবর্তন হলে শুষ্ক ত্বকে আরও বেশি সমস্যা দেখা দেয়। ত্বকের উপর চুলকানি, জ্বালাভাব, র‍্যাশ, লালচেভাব দেখা দেয়। এসব সমস্যা থেকে রেহাই দিতে সক্ষম অ্যালোভেরা জেল। অ্যালোভেরা জেল মাখলে ত্বকের সমস্যা ধীরে-ধীরে কমে যাবে।

ব্রণ প্রতিরোধ করেঃ শুষ্ক ত্বকের খুব বেশি ব্রণর সমস্যা দেখা দেয় না। কিন্তু আপনি যদি ভুল পণ্য বা মেকআপ ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে ব্রণর সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত মুখে অ্যালোভেরা জেল মাখেন, তাহলে ব্রণর সমস্যাকে সহজেই প্রতিরোধ করতে পারবেন। অ্যালোভেরা জেলের মধ্যে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা ব্রণ উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে।

ত্বককে বার্ধক্যের হাত থেকে বাঁচায়ঃ শুষ্ক ত্বকে সবার আগে বার্ধক্য দেখা দেয়। কপালে ভাঁজ পড়তে থাকে, চোখের কোণের চামড়া কুঁচকে যায়। এসব সমস্যাকে মুক্তি দেয় অ্যালোভেরা জেল। অ্যালোভেরা জেলের মধ্যে ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই রয়েছে, যা বলিরেখা, ঝুলে যাওয়া চামড়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই শুষ্ক ত্বকের যত্নে নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল মাখুন।

ময়েশ্চারাইজার হিসেবেঃ অ্যালোভেরাতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাংগাল উপাদান আছে যার দরুণ অ্যালোভেরা জেল শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বককে খুব দারুণভাবে সারিয়ে তোলে। এছাড়া এ জেলের আরো আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন, এনজাইম এবং মিনারেল যা ত্বককে দীর্ঘসময় কোমল ও মোলায়েম রাখে। যদিও এই জেলটি একটু আঠালো তবুও ত্বকে লাগালে মোটেও আঠালো ভাবটা থাকে না। ত্বকের যাবতীয় কাটাছেঁড়া, প্রদাহ, ব্রণ এবং পোড়াভাব দূর করতে আ্যলোভেরা জেল ভীষণ কার্যকরী।

ত্বক উজ্জ্বল করতেঃ
অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে টক দই মিশিয়ে মুখের ত্বকে লাগান। এতে করে ধীরে ধীরে আপনার ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হতে শুরু করবে। টক দইয়ে ল্যাকটিক এসিড থাকে যার মাধ্যমে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়ে ত্বককে দারুণভাবে প্রাণবন্ত করে তোলে। টক দই দিয়ে ম্যাসাজ করলে ত্বকের অবাঞ্চিত দাগ এবং রোমকূপ দারুণভাবে পরিষ্কার হয়ে যায়।

ন্যাচারাল এক্সফোলিয়েটরঃ ত্বকের জেল্লা বজায় রাখার জন্য মরা কোষ ঝরানো প্রয়োজন। অর্থাৎ ডেড স্কিন সেল ঝরানোর প্রয়োজন রয়েছে। এর ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। তার পাশাপাশি ত্বকের বিভিন্ন পোরস খুলে যায়। ময়লা দূর হয় এবং এর পাশাপাশি ব্রনর সমস্যা দূর হয়। ব্রনর ফলে যে ত্বকে দাগছোপ হয় সেই দাগও দূর হয়।

লিপ বামঃ গরমকালেও ঠোঁটে রুক্ষ এবং শুষ্ক ভাব দেখা যায়। সেক্ষেত্রে ঠোঁটে অ্যালোভেরা জেল লিপবাম হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। গরমের দিনে সূর্যের ক্ষতিকারক আলট্রা ভায়োলেট রে থেকে ঠোঁটকে রক্ষা করতে সাহায্য করে এই উপকরণ। ঠোঁট আর্দ্র রাখে। অর্থাৎ বজায় থাকে ময়শ্চারাইজড ভাব। এছাড়াও ত্বকে ট্যান দেখা দিলে সেটাও দূর করে অ্যালোভেরা জেল।

ক্ষত শুকাতে সাহায্য করেঃ অ্যালোভেরার সাহায্যে যেকোনও ক্ষতস্থান দ্রুত শুকিয়ে যায়। এই অ্যালোভেরার মধ্যে এমন উপকরণ রয়েছে যা নিমেষে ক্ষতস্থান শুকোতে সাহায্য করে। তাই কেটেছড়ে গেলে অ্যালোভেরা লাগাতে পারেন। 

ত্বক উজ্জ্বল করতে অ্যালোভেরার ফেসপ্যাক

অ্যালোভেরাকে বলা হয় জাদুকরী ভেষজ। এটি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ভালো, তেমনি উপকারী ত্বকের জন্যও। এই গরমে ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে ঠান্ডা থাকবে ত্বক। এছাড়া ত্বক উজ্জ্বল করার পাশাপাশি ব্রণের দাগ ও অন্যান্য কালচে দাগ দূর করতেও অ্যালোভেরার জুড়ি নেই। জেনে নিন কীভাবে ত্বকের যত্নে ব্যবহার করবেন ভেষজটি।

অ্যালোভেরা ও নিমপাতাঃ
ত্বকের প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি স্কিনের শুষ্কতা দূর করতে এবং ত্বককে প্রাণোচ্ছল বানাতে অ্যালোভেরার উপকারিতা অসীম। অ্যালোভেরা ও নিম পাতা– এই ২টি উপাদান মিলিয়ে বানিয়ে ফেলুন একটি পেস্ট। তরপর সেটি মুখে লাগিয়ে নিন। প্রসঙ্গত, ভালো করে মুখটা ধুয়ে নিয়ে ফেইস মাস্কটি লাগাবেন। নচেৎ ভাল ফল পাবেন না।
 
অ্যালোভেরা ও হলুদঃ দুধ, হলুদ এবং অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে বানানো এই ফেইস মাস্কটি উজ্জ্বল এবং নরম ত্বক পেতে আপনাকে সাহায্য করবে। প্রসঙ্গত, হলুদে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা ব্রণের প্রকোপ কমায়। অপরদিকে, অ্যালোভেরা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। আর দুধ কী কাজে লাগে? কাঁচা দুধ ত্বকের পিএইচ লেভেল ঠিক রাখে। ফলে ত্বক নরম হয়।

গোলাপজল ও অ্যালোভেরাঃ
শুষ্ক ত্বককে স্বাভাবিক করতে এই ফেইস মাস্কটি দারুণ কাজে আসে। সেই সঙ্গে বলি রেখা, ব্রণ এবং কালো ছোপ আটকাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। প্রসঙ্গত, অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে কয়েক ড্রপ গোলাপ জল মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। তারপর সেটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন মুখটা।

শসা ও অ্যালোভেরাঃ যাদের ত্বক খুব স্পর্শকাতর, তারা এই ফেইস মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেন। আপনার ত্বকের অতিরিক্ত তেল ময়লা দূর করে ত্বককে পরিষ্কার করে তুলতে এই ফেইস প্যাকটি অত্যন্ত কার্যকরী। ফলে আপনার মুখও অনেক সতেজ দেখাবে।এটি বানাতে একটা অ্যালোভেরা পাতা থেকে সংগ্রহীত জেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা শসার রস মেশাতে হবে। যখন দেখবেন দুটি উপাদান ভালো মতন মিশে গেছে, তখন সেটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। প্রসঙ্গত, তৈলাক্ত ত্বক, ময়লা এবং ত্বকে জমতে থাকা নানা ক্ষতিকর উপাদানকে পরিষ্কার করে ফেলতে এই ফেইস মাস্কটি দারুণ কাজে দেয়।

অ্যালোভেরা দিয়ে রূপচর্চা করতে এই ফেইস প্যাকটি আপনি প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ ধুয়ে নিয়ে ভালকরে ঘষে মুখে লাগিয়ে নিন ও পনেরো মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর মিশ্রণটি শুকিয়ে গেলে পরিস্কার নরমাল পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

লেবু ও অ্যালোভেরাঃ লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যাসিডিক উপাদান। এই দুই উপাদান ত্বক প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে সক্ষম। এর সঙ্গে অ্যালোভেরা মেশালে তৈরি হয় চমৎকার ফেস প্যাক। ২ চা চামচ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে ১/৪ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করুন মিনিট পাঁচেক। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে ফল পাবেন দ্রুত। লেবু ও অ্যালোভেরার এই প্যাক ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর করতেও ভীষণ কার্যকর।

অ্যালোভেরা ও মুলতানি মাটিঃ
১ চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে ১ চামচ অ্যালোভেরা জেল এবং পরিমাণমতো গোলাপজল মিশিয়ে বানানো পেস্ট মুখে লাগাতে শুরু করলে উজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতে সময় লাগে না। কারণ মুলতানি মাটি এবং অ্যালোভেরা জেল, এই দুটিতেই এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা ত্বকে প্রবেশ করে বিষাক্ত উপাদানদের বার করে দেয় ফলে ফর্সা এবং উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারী হয়ে ওঠার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে সময় লাগে না।

মধু ও অ্যালোভেরাঃ যাদের তৈলাক্ত ত্বক তাদের জন্য এই ফেইস মাস্কটি দারুণ কার্যকরী। কারণ মধু এবং অ্যালোভেরা, উভয়ই ত্বকের অতিরিক্ত তেলাভাব কমায়, শুধু তাই নয় স্কিনের বন্ধ হয়ে যাওয়া ছিদ্রগুলোকেও খুলে দেয়। ফলে ময়লা ধুয়ে গিয়ে ত্বক সুন্দর হতে শুরু করে। এক্ষেত্রে এক চামচ মধুর সঙ্গে পরিমাণমতো অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ফেলুন। তারপর সেই ফেইস মাস্কটি ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন ত্বকে। প্রসঙ্গত, প্রতিদিন যদি এই ফেইস মাস্কটি মুখে লাগাতে পারেন তাহলে অল্পদিনেই দেখবেন ত্বক উজ্জ্বল হতে শুরু করেছে।

অ্যালোভেরা, হলুদ ও মধুঃ ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল, ১ চা চামচ মধু, ১ চিমটি হলুদের গুঁড়া ও কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে বানিয়ে নিন প্যাক। মিশ্রণটি ত্বকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক হবে মোলায়েম ও উজ্জ্বল।

টক দই ও অ্যালোভেরাঃ
প্রাকৃতিকভাবে ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে টক দই। ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল ও ১ চা চামচ টক দই একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। ত্বক শুষ্ক হলে ১ চা চামচ মধু মেশাবেন এই প্যাকে। ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় হবে মধুর বদলে সমপরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ১৫ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।
 
অ্যালোভেরা এবং নিমপাতাঃ অ্যালোভেরার মতো, নিমও স্কিন কেয়ারের জন্য একটি মিরাকল উপাদান যা আপনি আপনার ত্বকের যত্নে খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরা ও নিমপাতা দিয়ে তৈরী ফেইস মাস্ক মাস্কটি আপনার স্কিন থেকে ডার্টস, টক্সিন ও ইম্পিউরিটিজ দূর করবে। একই সাথে স্কিনে একনি ও পিম্পল ওঠা বন্ধ করতে ও স্কিন থেকে একনি ব্যাক্টেরিয়া দূর করে ব্রণকে ফিরে আসা বন্ধ করতেও এই ফেইস মাস্কটি বেশ কার্যকর। 

এই মাস্কটি তৈরি করতে একটি পাত্রে এক চা চামচ নিমপাতা গুঁড়োর সঙ্গে দুই টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিন। প্রথমে কিছু রোজ মিস্ট টোনার দিয়ে আপনার ত্বক ভালোভাবে মুছে নিন এবং তারপর এই পেস্টটি আপনার ত্বকে এপ্লাই করে ম্যাসাজ করুন। ১৫-২০ মিনিট পরে, এটি ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন এবং একটি পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে আপনার মুখ মুছুন।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে টক দই

টক দই স্বাস্থ্যের পক্ষে যেমন উপকারী, তেমনি ত্বকে নানা রকম সমস্যা থেকে মুক্তি দিতেও সক্ষম। বলিউডের বহু তারকা ঘরোয়া উপকরণের সঙ্গে দই মিশিয়ে পেস্ট (Face mask) বানান। বাড়িতে তৈরি দই বা দোকান থেকে কেনা টকদই ব্যবহার করাই যায়। গরমকালে দইয়ের ব্যবহার বেশি হলেও, যে কোনও ঋতুতেই দই সবসময় ভাল।

প্রশ্নঃ টক দইয়ের উপকারিতা কি কি?

উত্তরঃ নিয়মিত টক দই খেলে পেটের সমস্যা দূর হয়, শরীর ঠাণ্ডা থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।টক দইয়ে আছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি-৬, ১২, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি। টক দই প্রো-বায়োটিক সমৃদ্ধ যা পেটের নানান সমস্যা দূর করে।

পেটে ভাল রাখতে টক দইয়ের কোনও ঘরোয়া টোটকা রয়েছে। শরীর ভাল রাখতে দইয়ের পুষ্টিগুণ বেশ কার্যকরী। এছাড়া ত্বকের যত্ন নিতে ও যে কোনও সমস্যা থেকে রক্ষা করতে ম্যাজিকের মত কাজ করে এই সুস্বাদু টক দই। জেনে নিন ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে ত্বকের যত্ন নিবেন টকদই দিয়ে

ত্বকের যত্নে টক দইয়ের উপকারিতা

  • গ্রীষ্মকালে রোদে বেরোলেই ট্যান পড়া তো অনিবার্য । বিশেষত আপনার যদি সেনসিটিভ স্কিন থেকে থাকে তাহলে তো ত্বকের দফারফা। অনেকেরই রোদে বাইরে বেরোলে ত্বকে জ্বালা ভাব দেখা যায়। এক্ষেত্রে এক চামচ টক দইয়ের সাথে কয়েক ফোঁটা এসেন্সিয়াল অয়েল মিশিয়ে তা তোকে ভালো করে ত্বকে লাগিয়ে দিন। দেখবেন নিমেষেই কমে যাবে জ্বালা। সেই সঙ্গে নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে নরম এবং দই এর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বককে দেবে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে সুরক্ষা।
  • ত্বক সংবেদনশীল হয়ে থাকলে র‌্যাশ, ব্রণ অনুভব করতে পারেন। এই ধরনের ত্বকে অভ্যাসের বাইরে কিছু ব্যবহার করলেই সমস্যা বাড়ে। তাই এই জাতীয় ত্বকের লোকেরা কিছু মাখতে পারেন না। কিন্তু ত্বকে টক দই মাখলে সমস্যাটি হওয়ার কথা না। এক টেবিল চামচ দই এবং দুই টেবিল চামচ ওটমিল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। আপনার ত্বক সুন্দর হবে।
  • রুক্ষ ত্বক মসৃণ করতে দই ব্যবহার করা যেতে পারে। মধু ও দই মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করতে পারেন। গোসলের ৩০ মিনিট আগে এই মিশ্রণ ব্যবহার করুন। পরে এটি শুকানোর পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করলে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হবে।
  • তৈলাক্ত ত্বক ব্রণের জন্য একটি সূতিকাগার। তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা বেশি। তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া খুবই জরুরি। বেসনের সঙ্গে দই মিশিয়ে মাখতে পারেন। বেসন ত্বকের কোষে কোষে জমে থাকা ময়লা দূর করতে সাহায্য করে। সপ্তাহে দুই বার ব্যবহার করলে কাজ হবে।
  • তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের সমস্যা বারো মাস লেগে থাকে। বিশেষত গ্রীষ্মকালে যেন ব্রণের উপদ্রব আর ও বেড়ে যায় । এই ব্রণের সমস্যায় দই কিন্তু খুব ভালো কাজ করে। সরাসরি দই ব্রনের উপরে লাগাতে পারেন বা এক চামচ মধুর সাথে তা মিশ্রিত করে ত্বকে ভালভাবে লাগিয়ে নিয়ে ১৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলতে পারেন। কয়েকদিন টানা এটি ব্যবহার করলে দেখবেন ব্রণ ও একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে।
  • দই যে কেবল ব্রণের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে তাই নয় এমনকি ব্রণের দাগ ও ত্বকের বিভিন্ন অসমান রং ইত্যাদিও ঠিক করতে খুবই ভালো কাজ করে। তিন টেবিল চামচ দই এবং এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ওই ফেসপ্যাক মুখে লাগিয়ে রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন মুখের ছোপ ছোপ দাগ বা ব্রণের দাগ খুব শীঘ্রই ঠিক হয়ে যাবে।
  • ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতেও এর জুড়ি মেলা ভার। ডিমের সাদা অংশ ভালো করে ফেটিয়ে নিয়ে তার সাথে এক চা চামচ দই মিশিয়ে ত্বকে লাগান। কিছুক্ষণ পরে ঠান্ডা জল দিয়ে ভালো করে মুখটা ধুয়ে ফেলুন দেখবেন ত্বকের তৈলাক্ত ভাব একদম উধাও হয়ে যাবে।
  • দই ত্বকের মরা চামড়া দূর করে মুখকে করে তোলে উজ্জ্বল। ১ চা-চামচ দই এর সাথে ১ চা চামচ ওটমিল ভালো করে মিশিয়ে নিন। তাহলেই তৈরি হয়ে যাবে আপনার ঘরোয়া ফেস স্ক্রাব। এবার মিশ্রণটি কে ভালো করে ত্বকে ঘষতে থাকুন। ৫ মিনিট অপেক্ষা করে এরপর ঠান্ডা জল দিয়ে উঠিয়ে ফেলুন ফেস স্ক্রাব। দেখবেন মুখ একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে।
  • বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্রমাগত মেকআপ ব্যবহার করলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে ওঠে । এক্ষেত্রে ত্বকের উজ্জলতা ফিরিয়ে আনার জন্য দই দিয়ে একটি ফেস প্যাক তৈরি করে নিতে পারেন। দই এর সাথে মধু ও টমেটোর পেস্ট ও ১ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন ভালো করে। এবার তা মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন দেখবেন নিমেষে ঝলমলে ত্বক হাজির।
  • সারাদিনের যত খাটনি যেন পায়ের ওপর দিয়েই যায়। অথচ শরীরের এই অংশটির যত্ন সবচেয়ে কম নেওয়া হয় আমাদের।আর তা থেকেই পায়ের নানা অংশে কালো ছোপ দেখা যায় । পায়ের আদ্রতা ফিরিয়ে আনতে ও কালো ছোপ দূর করতে দই ও আধ কাপ ওয়ালনাট গুড়ো মিশিয়ে এক ন্যাচারাল স্ক্রাব তৈরি করে নিতে পারেন। নিয়মিত তা ব্যবহারেই পেয়ে যাবেন কমল পদ যুগল।
  • রোদে পোড়া দাগ দূর করার জন্য ৫ চামচ টকদই, ১ চামচ চন্দন গুঁড়া, ১ চামচ মসুর ডাল বাটা মিশিয়ে মুখ, হাত, পায়ে লাগিয়ে রাখুন। শুকালে ধুয়ে ফেলুন। ১ মাস এ মাস্কটি লাগিয়ে ফলাফল দেখুন। যাদের ত্বক শুষ্ক তারা মধু নিতে পারেন।
  • ৩ চামচ টকদই, আধা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, ১ চামচ বেসন মিশিয়ে মাস্ক হিসেবে লাগান, ত্বক ফর্সা হবে।
  •  স্ট্রবেরি ফল ২টি এবং ৫ চামচ টকদই ব্লেন্ড করে মুখে মাস্ক হিসেবে লাগান। ত্বক অনেক ফ্রেশ হবে। ত্বকের কোলাজেনের সমতা রাখবে, ব্রণ এবং ত্বকের দাগ দূর করবে, বলিরেখা কমবে।
  • যাদের অমসৃণ ও রুক্ষ ত্বক তাদের মন খারাপ করার কিছু নেই। কারণ সেসব ত্বকের জন্য টকদই খুব উপকার। এক কাপ টক দই ও দুটি কলা চটকে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে গোসলের আগে পুরো শরীরে লাগিয়ে নিতে পারেন। এরপর ২০ মিনিট অপেক্ষা করে গোসল করে ফেলতে হবে।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে টকদইয়ের জুড়ি নেই। টকদই, বেসন ও মধু মিশিয়ে নিতে হবে ভালো করে। মুখসহ পুরো শরীরে ব্যবহার করতে পারেন। আধা ঘণ্টা পর ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের রং হবে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত।

দইয়ের সঙ্গে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন ফেসপ্যাক

সুন্দর ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য ব্যবহার করতে পারেন দইয়ের ফেসপ্যাক। দইয়ে রয়েছে ভিটামিন বি২, বি১২, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক ও ল্যাকটিক অ্যাসিড যা বলিরেখা এবং কালচে দাগ দূর করে ত্বক টানটান করে।দই যে শুধুমাত্র শরীরেরই উপকার করে তা নয়, ত্বকের পরিচর্যাতেও দই ব্যবহার করা যায়। ত্বকের নানা সমস্যায় খুব ভালো কাজ করে টক দই। দইয়ের সঙ্গে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন ফেসপ্যাক।

টক দই এবং মধুঃ এই ফেসপ্যাক নর্মাল এবং শুষ্ক ত্বকের জন্য উপযুক্ত। এক টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে ২ টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মধুতে রয়েছে ময়েশ্চারাইজিং এবং থেরাপিউটিক বৈশিষ্ট্য। এই ফেসপ্যাক ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করে, পাশাপাশি ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে।

টমেটো এবং টক দইঃ
টমেটো ও টক দই উভয়ই ট্যান এবং ছিদ্র কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে ত্বক শক্ত হয়। যেকোনো ধরনের ত্বকের মানুষ এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। একটি পাত্রে টক দই এবং টমেটোর রস একত্রিত করুন যতক্ষণ না আপনি একটি মসৃণ এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ মিশ্রণ পান। এই মিশ্রণটি আপনার মুখে লাগান এবং শুকিয়ে গেলে তা ধুয়ে ফেলুন।

টক দই এবং আলুঃ
দই এবং আলুর ফেসপ্যাকটি আপনার ত্বকের টোনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে, ট্যান কমাতে এবং প্রাকৃতিক বর্ণ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এই ফেসপ্যাকটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী। কাঁচা আলুর রস করে এতে কিছু পরিমান টক দই একত্রিত করে মুখে লাগান। এটি শুকিয়ে নিন এবং তারপর ধুয়ে ফেলুন।

টক দই এবং বেসনঃ বেসন হল ঘরে তৈরি ফেস প্যাকগুলির একটি সাধারণ উপাদান। এটি ত্বকের এক্সফোলিয়েশন, পরিষ্কার এবং ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। এই ফেস প্যাকটি স্বাভাবিক থেকে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপযুক্ত। এক টেবিল চামচ বেসন এবং ২ টেবিল চামচ দই মিশিয়ে নিন। টক দই এবং বেসন একত্রিত করুন। যতক্ষণ না আপনি একটি মসৃণ এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ মিশ্রণ পান ততক্ষন নাড়তে থাকুন। এই মিশ্রণটি আপনার মুখে লাগান। তারপর শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।

টক টক দই এবং হলুদঃ হলুদে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আপনার ত্বক পরিষ্কার করার পাশাপাশি, এই ফেস প্যাকটি আপনার মুখকে উজ্জ্বল করে। এই ফেসপ্যাকটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযুক্ত। এই ফেসপ্যাকটি তৈরী করতে, আধা চা চামচ হলুদের সাথে দই মেশাতে হবে এবং এই মিশ্রণটি আপনার মুখে লাগাতে হবে। তারপর প্রায় ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিয়ে এটি ধুয়ে ফেলুন।

টক দই এবং শসাঃ এই ফেসপ্যাকটি সব ধরনের ত্বকের জন্যই উপযুক্ত। শসার রসের সঙ্গে টক দই মিশিয়ে মুখে ম্যাসাজ করুন খানিকক্ষণ। ফেসিয়াল মাস্কের মতো শুকাতে দিন। তারপর ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দই-শসার এই প্যাকটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে। ত্বকের জ্বালাপোড়া, লালচেভাব কমায়। এমনকি ত্বকের ট্যান হালকা করতেও সাহায্য করে।

টক দই এবং মুলতানি মাটিঃ যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত এবং সংবেদনশীল, তাঁদের জন্য এই ফেসপ্যাকটি খুব উপকারী। সম পরিমাণ টক দই এবং মুলতানি মাটি মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। মুলতানি মাটি ত্বকের মরা চামড়া অপসারণ করে ত্বক মসৃণ করে তোলে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ফেরায়।

টক দই ও ডিমঃ ১ টেবিল চামচ দইয়ের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ ডিমের সাদা অংশ মেশান। ভালো করে ফেটিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

টক দই ও ওটমিলঃ ১ টেবিল চামচ দইয়ের সঙ্গে ১ চা চামচ ওটমিল গুঁড়া মেশান। মিশ্রণটি ত্বকে চক্রাকারে ঘষুন। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন ঠাণ্ডা পানি দিয়ে।

অ্যালোভেরা ও টক দইঃ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে টক দই মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ভালো করে ম্যাসাজ করুন। ভেজা কাপড় দিয়ে ঘষে উঠিয়ে ফেলুন। চামড়ার কুঁচকে যাওয়া ভাব দূর করবে এই প্যাক।

বেকিং সোডা ও টক দইঃ আধা চা চামচ বেকিং সোডা ও ১ টেবিল চামচ দই একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ত্বকে ঘষে ঘষে লাগান। ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।  

টক  দই ও লেবুঃএক কাপ টক দইয়ের সঙ্গে এক টেবিল চামচ পাতিলেবুর রস মিশিয়ে মুখে মাখতে পারেন। এটি খুব ভাল ক্লিনজারের কাজ করে। এছাড়াও আধ কাপ দইয়ে আধ চা চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে মুখ, কপাল ও গলায় লাগিয়ে নিন। ভাল করে ঘষে ২ থেকে ৩ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। দেখবেন আপনার ত্বক অনেক বেশি পরিষ্কার দেখাবে।

টক দই, লেবুর রস ও চিনিঃ একটি পাত্র এক চামচ টক দই, এক চামচ লেবুর রস আর এক চামচ চিনি নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর সেই মিশ্রণটিকে মুখে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। ম্যাসাজ করারপর কিছুক্ষন শুকনো হবার জন্য অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেল ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

টক দই ও কফিঃ এক চামচ টক দইয়ের সাথে অল্প একটু কফি পাউডার ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে নিতে হবে। এরপর সেই মিশ্রয়টিকে সারা মুখে ভালো ভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। তারপর ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে শুকনো হবার জন্য। এরপরে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

তৈলাক্ত ত্বকে টকদই  মাখার উপকারিতা

তেলতেলে ত্বকে ব্রণের প্রকোপ দেখা যায় বেশি। এছাড়া ধুলাবালি জমে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যায়ও বেশি পড়েন তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা। ঘরোয়া উপায়ে দূর করতে পারেন ত্বকের অতিরিক্ত তেল। নিয়মিত দইয়ের ফেসপ্যাক ব্যবহার করলে ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর হয়ে ফ্রেশ দেখাবে ত্বক। দইয়ে রয়েছে জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ল্যাকটিক অ্যাসিড ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ভিটামিন। এগুলো ত্বক উজ্জ্বল ও টানটান করে।

তাহলে জেনে নিন ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে ত্বকের যত্ন নিবেন টকদই দিয়ে

ময়শ্চারাইজ করেঃ আপনার ত্বকের জন্য টক দই প্রয়োগ প্রাকৃতিকভাবে এটিকে ময়শ্চারাইজ করতে সাহায্য করে। টক দইয়ে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড শুধু ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে না, ময়েশ্চারাইজও করে।

হাইড্রেটর হিসাবে কাজ করেঃ টক দই চর্বিযুক্ত উপাদানে ভরপুর। ত্বকে প্রয়োগ করা হলে, টক দই একটি প্রাকৃতিক হাইড্রেটরের মতো কাজ করে এবং আপনার ত্বকের স্তরগুলিতে আর্দ্রতা বন্ধ করতে সাহায্য করে।

ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়ঃ টক দই এর সমৃদ্ধ ময়শ্চারাইজিং এবং হাইড্রেটিং বৈশিষ্ট্যের কারণে, এটি আপনার ত্বকের কোলাজেন এবং ইলাস্টিনের মাত্রা বাড়াতেও সাহায্য করে। এটি আপনার ত্বককে মোটা এবং তারুণ্য রাখে।

ত্বকে পুষ্টি যোগায়ঃ আপনি কি জানেন যে টক দই আসলে ভিটামিন ডি, প্রোটিন এবং অবশ্যই প্রোবায়োটিক রয়েছে। এই সমস্ত পুষ্টি আপনার ত্বককে সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেয়।

ব্রণের চিকিৎসয়ঃ
যেহেতু টক দই ল্যাকটিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ, তাই এটি ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে এবং বিদ্যমান ব্রণের চিকিত্সা করতে সহায়তা করে। এছাড়াও, দই অনেক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যও পরিচালনা করে। যা আপনার ছিদ্রগুলিকে বন্ধ করে দেয় এবং যে কোনও ধরণের ব্যাকটেরিয়াকে চিকিত্সা করে, ব্রণকে দূর করে। টক দই অতিরিক্ত সিবাম উৎপাদনও নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে ত্বকের ব্রণ ওঠে না।

ত্বকের টোন দূর করেঃ
টক দইয়ে রয়েছে উচ্চ মাত্রার জিঙ্ক, যা ত্বকের কোষের পুনর্নবীকরণকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকে উপস্থিত যেকোন ধরণের কালো দাগ বা হাইপারপিগমেন্টেশন দূর করতে সাহায্য করে এটি আপনাকে আরও সমান ও মসৃন ত্বকের টোন দেয়।

ত্বকের বয়স কমায়ঃ যেহেতু টক দই আপনার ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, এর মানে এটি ত্বকের বয়স কমাতে সাহায্য করে। সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা কমাতে, দইতে উপস্থিত ল্যাকটিক অ্যাসিড চোখের চারপাশে কালো দাগ এবং ফোলা ভাবের ঘরোয়া প্রতিকারে সহায়ক হয়ে আপনাকে আরও তারুণ্যের আভা এনে দেয়।

ছিদ্র শক্ত করেঃ
টক দইতে উপস্থিত ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে এবং ত্বকের কোষ পুনর্নবীকরণকে ত্বরান্বিত করে। এটি মসৃণ ত্বক প্রকাশ করে এবং বড় ছিদ্রের উপস্থিতি হ্রাস করে। এছাড়াও তেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকায় আপনার ছিদ্রগুলি আর বড় হয় না।

ত্বক উজ্জ্বল করেঃ
ত্বকের অনেক উপকারিতা সহ, এটা স্পষ্ট যে টক দই আপনার ত্বকের সামগ্রিক উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং আপনাকে আরও উজ্জ্বল এবং আরও সমান-টোনযুক্ত বর্ণ নিয়ে আসতে সাহায্য করে। দইয়ের হাইড্রেশন, ময়েশ্চারাইজেশন এবং এক্সফোলিয়েশন বৈশিষ্ট্যগুলি আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য বাড়াতে এবং আপনাকে উজ্জ্বল দেখাতে সাহায্য করে।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে টকদই এর ফেসমাস্ক

স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন এক বাটি করে টক দই খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। এদিকে উপকারী এই খাবার যে আপনার রূপচর্চার কাজেও সমান কার্যকরী তা কি জানতেন? এই যে শীত এলে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায় আর তার প্রভাব পড়ে আমাদের ত্বকে, সুন্দর আর কোমল ত্বক চোখের সামনে হয়ে ওঠে রুক্ষ। এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে টক দই।

আপনি যদি ফেসপ্যাক বা ক্লিনজার হিসেবে টক দই ব্যবহার করেন, তবে পরিবর্তনটা নিজেই বুঝতে পারবেন। বহুকাল আগে থেকেই উপমহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় রূপচর্চার একটি জরুরী উপাদান হিসেবে টকদই ব্যবহৃত হচ্ছে। চলুন জেনে নেই টকদই এর কার্যকরী মাস্কগুলো সম্পর্কে

শুধু টকদইঃ যারা রূপচর্চার পেছনে খুব বেশি সময় ব্যয় করতে চান না, অথচ সুস্থ ও সুন্দর ত্বক চান তারা নিশ্চিন্তে নির্ভর করতে পারেন টকদই এর উপর। এটি ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করে এবং সেই সাথে ত্বকের গভীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করে। শুধু তাই নয়, এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজও করে। প্রত্যেকদিন মুখে ও গলায় টকদই লাগান এবং অপেক্ষা করুন ২০ থেকে ২৫ মিনিট।

এরপর একটি ভেজা কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুখ ও গলা মুছে নিন। যদি আপনার বাইরে যাবার তাড়া থাকে তবে ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন কারণ টকদই দেয়ার পর আপনার মুখ থেকে বেশ কিছুক্ষণ এর গন্ধ বের হবে। তবে দ্রুত ফল পেতে হলে টকদই দেবার পর এক থেকে দেড় ঘণ্টা রোদে বের না হলেই ভালো। যেহেতু রূপচর্চার এই পদ্ধতিটি অনেক সহজ, আপনি শরীরের অন্যান্য খোলা অংশ যেমন হাত, পায়ের পাতা, ঘাড় ও পিঠের খোলা অংশে এটি ব্যবহার করতে পারেন।

টকদই, চন্দন ও গোলাপজলঃ ত্বক ফর্সাকারী উপাদান হিসেবে চন্দনের কথা আমরা বহু আগে থেকেই শুনে আসছি। রাজা মহারাজার সময় থেকেই এর কদর নারীমহলে চলে আসছে। এই চন্দন ও টকদই এর মিশ্রণ আমাদের মুখের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। দুই চা চামচ চন্দন গুঁড়ার সাথে পরিমাণমতো টকদই মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করতে হবে।

এই প্যাক মুখে ও গলায় লাগিয়ে কমপক্ষে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ভালো মতো ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাকটি মুলত শুষ্ক ও মিশ্র ত্বকের জন্য। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা এই প্যাকে সাথে সামান্য গোলাপজল মিশিয়ে নেবেন যা আপনাকে দিনভর ফ্রেশ রাখবে।

দই ও শসার আই মাস্কঃ একটা শসা কুচি করে এক টেবিল-চামচ টক দই মেশাতে হবে। মিশ্রণটি চোখের চারপাশে মেখে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মাস্ক চোখের ফোলাভাব ও কালচে দাগ দূর করতে সহায়তা করে।

টকদই, ওটস ও মধুঃ টকদই এর সাথে ওটস এবং মধু মিশিয়েও চমৎকার প্যাক তৈরি করা যায়। সমপরিমাণ ওটস, মধু এবং টকদই নিয়ে একসাথে একটি পেস্ট তৈরি করুন। আপনার মুখে ও গলায় লাগিয়ে অপেক্ষা করুন ২০ মিনিট। তারপর ভালো করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে দুইদিন ব্যবহার করুন।

টকদই ও টমেটোঃ যদি আপনার ত্বকে রোদেপোড়া ভাব থাকে, তবে এই প্যাকটি আপনার জন্য ম্যাজিকের মত কাজ করবে। সমপরিমাণ টমেটোর রস ও টকদই মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে নিয়মিত লাগান। কিছুদিন পর আপনি নিজেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন। চাইলে অ্যালোভেরা জেলও মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে দ্রুত রোদেপোড়া ভাব কমে আসবে।

জেনে নিলেন ত্বকের যত্নে টকদই কতোটা উপকারী। এই প্যাকগুলো ব্যবহার করলে আপনি নিজের ত্বকের সঠিক যত্ন নিতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন, আপনার স্কিনে যদি অ্যালার্জির সমস্যা হয়, তাহলে সেই নির্দিষ্ট উপকরণটি ব্যবহার করা বাদ দিতে হবে। নিয়মিত নিজের যত্ন নিন ভালো থাকুন সুস্থ ও সুন্দর থাকুন।

ত্বকের যত্নে আলুর রস ব্যবহার

আলু কমবেশি সবারই পছন্দ। খাবারের পাশাপাশি ত্বকের যত্নে এই আলুর অনেক রকম ব্যবহার রয়েছে। ত্বক থেকে কালো দাগ, চোখের নিচের কালো দাগ সরাতে আলুর রস খুব উপকারী। আলুতে যে ভিটামিন সি রয়েছে তা রোদে পোড়া কালো দাগ দূর করে, স্কিনের ডেড সেল দূর করতেও সাহায্য করে। আলুতে যে ক্যাটেকোলেস নামক যে এনজাইম রয়েছে তা হাইপারপিগমেন্টেশনের সমস্যা দূর করে।
খাবারের স্বাদ যেমন আলু বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে, তেমনি আমাদের প্রতিদিনের রূপচর্চায়ও আলুর গুনাগুণ ব্যাপক। চলুন জেনে আসি ত্বকচর্চার ক্ষেত্রে আলু কিভাবে ব্যবহার করবেন

ফেইস মাস্কঃ ফেইস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন এই আলু। আলু সহজে বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। সেক্ষেত্রে এক চা চামচ আলুর রস, এক চা চামচ বেসন ও এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলবেন। এতে বেশ ভালো উপকার পাবেন।

ফেস স্ক্রাবারঃ
স্ক্রাব হিসেবে আলুর ব্যবহার খুবই কমন। তাই একটা আলু গ্রেড করে নিয়ে এতে এক চা চামচ ওটস দিন এবং এক চা চামচ তরল দুধ দিয়ে পেস্ট বানিয়ে স্ক্রাব করে নিন ফেইস। আলতো করে ফেইস স্ক্রাব করবেন। ৫-১০ মিনিট আলতো হাতে স্ক্রাব করে নিবেন। এর পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিবেন। এতে ফেইস কোমল এবং প্রাণবন্ত হবে।

আলু এবং ডিমের মাস্কঃ
ডিমে উপস্থিত বৈশিষ্ট্য হাইপারপিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে। যার কারণে ত্বক হয় চকচকে ও স্বাস্থ্যকর। এতে ভিটামিন-ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। এটি বার্ধক্যের লক্ষণ কমাতে এবং ডার্ক সার্কেল কমাতে সহায়ক।

এই প্যাকটি তৈরি করার জন্য আলু গুলিয়ে নিন। এতে ডিমের সাদা অংশ যোগ করুন এবং এতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল যোগ করুন। এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে প্রায় ১৫-২০ মিনিট পরে এটি পরিষ্কার করুন।

ত্বকের যত্নে আলুর রসের উপকারিতা

প্রচুর পরিমাণের প্রোট্রিন, ভিটামিন এবং মিনারেল থাকায় নারীদের ত্বকের যত্নে আলু হতে পারে অপরিহার্য উপাদান। ত্বকের ব্রন থেকে শুরু করে ব্লাক হেডস পর্যন্ত সবকিছু দূর হবে এই আলু দিয়ে। ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-এর অন্যতম উৎস হলো আলু। ভিটামিন সি ত্বকের কোলজেন বৃদ্ধি করে যা তাপ, সূর্যের আলোর কারণে সৃষ্টি হওয়া কালো দাগ দূর করে দেয়। ভিটামিন বি ত্বকের কোষ ট্রান্সফরমেশন করে ত্বকের কালো দাগ এবং পিম্পলের দাগ দূর করে থাকে।

ব্রণ ও দাগ সারাতেঃ ব্রণ ও এর দাগ সারাতে বেশ ভালো কাজ করে এই আলু। আলুর রস এক চা চামচ, এক চা চামচ টমেটোর রস এবং হাফ চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এটি চাইলে আপনি ফ্রিজেও রাখতে পারেন। এই প্যাক ফেইসে দিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যবহারে ত্বক অনেক বেশি সতেজ ও সুন্দর লাগবে এবং ব্রণ ও ব্রণের দাগ ও আস্তে আস্তে হালকা হয়ে চলে যাবে।

ডার্ক সার্কেলঃ এটা তো আমরা সবাই ই জানি যে, আলু চোখের চারপাশের কালো দাগ দূর করতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে আলুর দুইটা স্লাইস করে নিন। আপনি চাইলে আলু গ্রেড করেও অ্যালোভেরার সাথে মিশিয়ে করে চোখে দিতে পারেন। চোখের কালো দাগ চলে যাবে কিছু দিনের মধ্যেই।
 
বলিরেখা কমতে থাকেঃ স্ট্রেস এবং পরিবেশ দূষণের কারণে অনেকেরই কম বয়সেই বলিরেখা পরতে শুরু করে দেয়। সেই সঙ্গে ত্বক কুঁচকে যাওয়া এবং সৌন্দর্য কমে যাওয়ার মতো সমস্যা তো রয়েছেই। এক্ষেত্রে আলুর রস দারুণ উপকারে আসে। দেখা গেছে প্রতিদিন এই প্রাকৃতিক উপাদনটিকে যদি কাজে লাগাতে পারা যায়, তাহলে ত্বকের বয়স কমতে শুরু করে। ফলে বলিরেখা নিমেষে উধাও হয়ে যায়। আসলে আলুতে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, আলুর রসের পরবর্তে যদি আলুর পেস্ট বানিয়ে কম করে ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখতে পারেন, তাহলেও সমান উপকার পাওয়া যায়।

ডার্ক স্পট কমেঃ অল্প পরিমাণ আলু নিয়ে মিক্সিতে ব্লেন্ড করে সেই পেস্ট মুখে লাগিয়ে কম করে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভাল করে মুখটা ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রতিদিন এমনটা করলে ত্বকের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হবে। সেই সঙ্গে স্কিনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা টক্সিক উপাদানও বেরিয়ে যাবে। ফলে ডার্ক স্পট তো কমবেই। সেই সঙ্গে ব্রণর মতো ত্বকের রোগের প্রকোপও কমতে থাকবে।

আলুকে ক্লিন্সার হিসেবে ব্যবহার করলেও সমান উপকার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে দুটো মাঝারি মাপের আলুর টুকরো নিয়ে ২০ সেকেন্ড ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তারপর তাতে ১ চামচ বেকিং সোডা এবং অল্প পরিমাণ পানি মিশিয়ে ভাল করে সবকটি উপাদান মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর মিশ্রনটি ভাল করে মুখে লাগিয়ে, কিছু সময় রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।

পুড়ে যাওয়া চামড়াকে স্বাভাবিক করেঃ ত্বককে স্বাভাবিক করতে আলুর যে কোনও বিকল্প নেই, সে কথা বলা যেতেই পারে। এক্ষেত্রে কয়েকটি আলুর টুকরোকে কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে দিন। তারপর সেই ঠান্ডা আলু ত্বকে লাগালে দেখবেন দারুন উপকার পাবেন। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে আলুর রস লাগালেও সমান উপকার পাওয়া যায়।

ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়ঃ নিয়মিত আলুকে কাজে লাগিয়ে ত্বকের পরিচর্যা করলে স্কিন টোনের দারুন উন্নতি ঘটে। আসলে এই সবজিটির অন্দরে থাকা ভিটামিন এবং মিনারেল এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখন প্রশ্ন হল ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে কীভাবে কাজে লাগাতে হবে আলুকে? এক্ষেত্রে আলুর খোসা সারা মুখে কম করে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। সময় হয়ে গেলে ধুয়ে ফলতে হবে ঠান্ডা পানি দিয়ে। নিয়মিত এই ঘরোয়া পদ্ধতিটিকে কাজে লাগালে ত্বক তো পরিষ্কার হবেই, সেই সঙ্গে স্কিন টোনেরও উন্নতি ঘটবে।

ড্রাই স্কিনের সমস্যা কমবেঃ শীত মানেই ত্বকের আদ্রতা কমে যাওযা এবং অবশ্যই সৌন্দর্য কমতে থাকা। সেই সঙ্গে আশঙ্কা বাড়া নানা ত্বকের রোগের। কারণ স্কিন ফেটে গেলে সেখান দিয়ে নানা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্কিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে। এমন পরিস্থিতিতে ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার তো শুরু করতেই হবে। সেই সঙ্গে নিয়মিত যদি আলুর সাহায্যে যদি ত্বকের পরিচর্যা করতে পারেন, তাহলে কিন্তু দারুণ উপকার মেলে। এক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে আলু নিয়ে দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে সেই পেস্ট মুখে লাগাতে হবে। তারপর কম করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখ। এমনটা প্রতিদিন করতে পারলে ত্বকের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য তো ফিরবেই। সেই সঙ্গে নানাবিধ ত্বকের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পাবে।

কোলাজেনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়ঃ
কারও ত্বক কতটা সুন্দর এবং মসৃণ হবে তা অনেকাংশেই নির্ভর করে কোলেজেনের উৎপাদনের উপর। যার কোলেজেনের উৎপাদন বেশি, তার ত্বক তত সুন্দর। এই কারণেই তো ডার্মাটোলজিস্টরা নিয়মিত আলুর সাহায্যে ত্বকের পরিচর্যা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ এমনটা করলে স্কিনের অন্দরে ভিটামিন সি-এর মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যা কোলাজেনের উৎপাদন এতটা বাড়িয়ে দেয় যে ত্বক সুন্দর হয়ে উঠতে একেবারেই সময় লাগে না।

উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করেঃ আলুর মধ্যে এনজাইম, ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে, যা ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে। কয়েক টুকরো আলু দিয়ে ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিন। এবার আলুর রস ছেঁকে নিন। এই আলুর রস ত্বকের ওপর লাগিয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট রাখুন। এরপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই আলুর রস হাইপারপিগমেন্টেশনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

ডার্ক সার্কেল দূর করেঃ
আলুর মধ্যে ব্লিচিং এজেন্ট রয়েছে, যা ডার্ক সার্কেলকে হালকা করতে সাহায্য করে। এছাড়া চোখের নিচে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন আলুকে। প্রথমে পাতলা স্লাইস করে আলু কেটে নিন। এবার এই আলুর টুকরো ফ্রিজে রেখে দিন। ঠাণ্ডা আলুর স্লাইস চোখের নিচে ১০-১৫ মিনিট রাখুন। এটি রক্তনালিকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমায়।

সানবার্ন থেকে মুক্তি দেয়ঃ আলুর মধ্যে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা ব্রণ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। আলুর পেস্টের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে নিন। ফেসপ্যাকটি ১৫-২০ মিনিট ত্বকে রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাক ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করে, প্রদাহ কমায় এবং ক্ষয় নিরাময় করে।

ব্রণ কমাতে সাহায্য করেঃ আলুর মধ্যে এনজাই ও ভিটামিন রয়েছে যা সানবার্ন থেকে মুক্তি দেয় এবং ত্বকের ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। যে অংশ রোদে পুড়ে গেছে তার ওপর ঠাণ্ডা আলুর রস লাগান। আলুর স্লাইসও কিছু রেখে দিতে পারেন। এটি ত্বকের কোষ পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ত্বকের প্রদাহ কমায়।

বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না আলুর রসঃ মুখে বয়সের দাগ প্রতিরোধ করতে বিশেষ সাহায্য করে আলু। ৩০-এর পেরোলেই মুখে বলিরেখা দেখা দেয় অনেকের। এই সমস্যায় সুফল আনবে আলুর রস। আলুর রসের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি রয়েছে। আলুর খোসা ছাড়িয়ে থেঁতো করে নিন, এরপর সেই পেস্টটা ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। এরপর ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত আলুর পেস্ট ব্যবহার করলে বয়সের ছাপ আর মুখে পড়বে না।

রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে ব্যবহার করুন আলুর রসঃ রোদে বেরিয়ে বেরিয়ে ত্বক পুড়ে যায়। এতে অনেক সময় জ্বালাভাব দেখা দেয়। সময়মতো যত্ন না নিলে ত্বক কালো হয়ে বিশ্রী দেখায়। এই ক্ষেত্রে আলু আপনাকে সাহায্য করতে পারে। ত্বকের যে যে অংশ রোদে পুড়ে গিয়েছে, সেখানে আলুকে পাতলা পাতলা করে কেটে ওই অংশের লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট রাখার পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে আপনি একই ভাবে আলুর রসও ব্যবহার করতে পারেন ত্বকের জ্বালাপোড়াভাব দূর করতে। এতে ত্বকের দাগও দূর হয়ে যাবে।

শুষ্ক ত্বকের জন্য আদর্শ আলুঃ দীর্ঘক্ষণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে আপনি আলুর সাহায্য নিতে পারেন। আলুকে থেঁতো করে পেস্ট বানিয়ে নিন। এতে আধ চামচ টক দই মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি ত্বকের উপর লাগান। ৩০ মিনিট রাখার পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের হারানো আর্দ্রতা ফিরে আসতে দ্রুত। আপনার ত্বকের প্রকৃতি যদি শুষ্ক হয় তাহলেও ব্যবহার করতে পারেন এই ফেসপ্যাক।

উজ্জ্বল ত্বকের রহস্য লুকিয়ে আলুর মধ্যেঃ উজ্জ্বল ত্বক পেতে আলুর তৈরি ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন। একটি ছোট বাটিতে ৩ চা চামচ আলুর রস ও ২ চা চামচ মধু নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এই আলুর রসের ফেস প্যাক গোটা মুখে, গলায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ মাসাজ করুন। ১০-১৫ মিনিট রেখে অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সেরা ফলাফলের জন্য এই ফেস প্যাক প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন।

ব্রণ ও দাগ সারাতেঃ আলু যে ক্যাটোকোলেস থাকে তা স্কিন থেকে ব্রণ এবং ব্রণের দাগ দূর করতে পারে। আপনি চাইলে বাড়িতে আলু দিয়ে অয়েন্টমেন্ট তৈরি করতে পারেন। হাফ চা চামচ আলুর রস, এক কোয়াটার চামচ টমেটোর রস আর হাফ চা চামচ মধু ভালোভাবে মেশান। এই অয়েনমেন্ট ত্বকে দিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে একদিন এই প্যাক ব্যবহার করুন। ব্রণ থেকে যে দাগের সৃষ্টি হয় তা দূর করবে এই অয়েন্টমেন্ট।

চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতেঃ
চোখের নিচের কালো দাগ থাকলে সবসময় চেহারার মধ্যে ক্লান্তির ছাপ ফুটে ওঠে। দুই স্লাইস আলুর সাথে অ্যালোভেরা জেল দিয়ে চোখের উপরে ২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক আপনার চোখের কালো দাগ সরাবে সেই সাথে চোখের ফোলাভাবও কমাবে।

সানবার্ন থেকে মুক্তি দেয়ঃ আলুর মধ্যে এনজাই ও ভিটামিন রয়েছে যা সানবার্ন থেকে মুক্তি দেয় এবং ত্বকের ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। যে অংশ রোদে পুড়ে গেছে তার ওপর ঠান্ডা আলুর রস লাগান। আলুর স্লাইসও কিছু রেখে দিতে পারেন। এটি ত্বকের কোষ পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ত্বকের প্রদাহ কমায়।

সব ধরনের ত্বকের যত্ন নেবে আলুর ফেসপ্যাক

ত্বকে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা নিয়ে আসতে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন আলুর ফেসপ্যাক। বলিরেখা দূর করার পাশাপাশি ত্বক মসৃণ করে আলু। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে ত্বক ব্লিচ করতে আলুর জুড়ি নেই। ফলে দূর হয় কালচে দাগ। আলু ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বকে জমে থাকা ময়লা, নিস্তেজতা ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

আপনি এটি ব্যবহার করে অনেক ধরনের ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন। জেনে নিন আলুর কয়েকটি ফেসপ্যাক সম্পর্কে

আলু ও মধুঃ একটি মাঝারি সাইজের আলু বেটে রস বের করে নিন। ২ চা চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে মুখ ও গলার ত্বকে ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। উজ্জ্বল ত্বক পেতে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করুন প্যাকটি।

আলু ও হলুদঃ ত্বক ব্রণমুক্ত রাখতে ব্যবহার করুন এই প্যাক। আলুর রসের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন এটি।

আলু ও পাকা পেঁপেঃ
১/৪ কাপ পাকা পেঁপে ব্লেন্ড করে ১ টেবিল চামচ আলুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে কয়েকবার প্যাকটি ব্যবহার করলে কালচে দাগ দূর হবে ত্বকের।

অলিভ অয়েল ও আলুঃ একটি মাঝারি সাইজের আলুর রসের সঙ্গে খানিকটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন ত্বকে। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ত্বকে প্রাণ ফেরাবে প্যাকটি।

টক দই ও আলুঃ
একটি আলু ছোট টুকরা করে কেটে ব্লেন্ডারে পেস্ট বানিয়ে নিন। আলুর পেস্টের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক টানটান থাকবে নিয়মিত ব্যবহার করলে।

আলু, লেবু এবং মধুর প্যাকঃ লেবুর রসে ভিটামিন সি পাওয়া যায় যা কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ায় এবং ত্বককে মসৃণ করে। মধু প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। আপনি যদি উজ্জ্বল ত্বক চান, তাহলে অবশ্যই এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করুন। এটি তৈরি করতে আলু পেষ্ট করুন৷ এতে এক চা চামচ মধু এবং লেবুর রস যোগ করুন। এই মিশ্রণটি ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এবার এটি মুখে ও ঘাড়ে লাগান। প্রায় ১৫ মিনিট পরে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

আলু, গোলাপ জল এবং হলুদ গুঁড়াঃ হলুদে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। যা ব্রণ, ত্বকের প্রদাহ এবং অন্যান্য অনেক সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এই ফেসপ্যাকটি তৈরি করতে একটি পাত্রে গ্রেট করা আলু নিয়ে তাতে আধা চা চামচ হলুদ, এক টেবিল চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ভালো করে ব্লেন্ড করে মুখে লাগান। কিছুক্ষণ পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

আলু এবং চন্দন ফেসপ্যাকঃ
চন্দনের গুঁড়োয় আলুর রস মিশিয়ে নিন। আপনি চাইলে এতে লেবুর রসও যোগ করতে পারেন। এটি দিয়ে মুখ ম্যাসাজ করুন এবং ১৫ মিনিট পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

দই আলু ফেস প্যাকঃ ত্বকের জন্য দই কতটা উপকারি তা সকলেই জানেন। এটি ত্বককে হাইড্রেটট রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও ত্বংকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করতেও সহায়তা করে। প্রথমে আলু মিক্সারে পেস্ট করে নিন। তারপর এতে দই ও এক চামচ হলুদ মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ভাল করে গুবে ব্রাশ বা হাতের সাহায্যে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।

অ্যালোভেরা আলু ফেস প্যাকঃ ত্বকের জন্য অ্যালোভেরার ব্যবহার কারও অজানা নয়। আর এই বাড়ির উঠোনে গজানো অ্যালোভেরার সঙ্গে আলু মেশালেই কেল্লাফতে। এই মিশ্রণ ত্বককে পরিষ্কার করে এবং আর্দ্রতা দেয়। এই দুটি উপাদান দিয়ে কীভাবে বানাবেন ফেসপ্যাক, প্রথমেই আলু সেদ্ধ করে ম্যাশ করুন। ম্যাশ করা আলুতে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিন। এবার এই পেস্টটি মুখে লাগান। কমপক্ষে ১৫ মিনিটের জন্য রাখুন। এরপর জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

চাল আলু ফেস প্যাকঃ এক বাটি চাল নিয়ে তা ব্লেন্ডারে পিষে নিন। খুব বেশি মিহি করবেন না। এর সাথে ম্যাশ করা আলু বা এর রস মেশান। আপনি চাইলে কিছু দইও যোগ করুন। এই পেস্ট দিয়ে মুখ স্ক্রাব করুন। এতে ত্বকের মরা কোষ দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বক টানটানও হয়।

আলুর খোসাঃ
আলুর খোসা ত্বকের জন্য দারুণ উপকারি। এতে ত্বকের কালো দাগছোপ দূর হয়। চোখের তলার কালো দাগও দূর হয় আলুর খোসার গুণে। এর জন্য বিশেষ কিছু করতে হবে না। আলুর খোসা নিয়ে দাগযুক্ত স্থানে ঘষে নিলেই কাজ শেষ। ফলাফল নিজের চোখেই দেখতে পাবেন।

আলু ও লেবুর রসঃ এক চা চামচ কুচি করা আলুর সঙ্গে আধা চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট। এবার ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

আলু ও শসাঃ সমপরিমাণ কুচি করা আলু ও কুচি করা শসা মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। মুখ ধোয়ার পর অনেক বেশি ফ্রেশ দেখাবে।

আলু, টমেটো ও দুধের সরঃ এক চা চামচ কুচি করা আলু,এক চা চামচ টমেটো পেস্ট এবং আধা চা চামচ দুধের সর একসঙ্গে মিশিয়ে গলা ও মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।

আলু, কাঁচা দুধ ও মধুঃ
এ ছাড়া আপনি মধু ব্যবহার করতে পারেন। এক টেবিল চামচ কুচি আলু,এক চা চামচ কাঁচা দুধ এবং আধা চা চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি শুষ্ক ত্বকের জন্য খুব উপকারী।

আলু, টমেটো ও টকদইঃ
এক চা চামচ কুচি করা আলু, এক চা চামচ টমেটো পেস্ট এবং এক চা চামচ টকদই ভালো করে মিশিয়ে গলা ও মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।

আলু, টকদই ও হলুদঃ
এক চা চামচ কুচি আলু, এক চা চামচ টকদই এবং এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে ত্বকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে বেসনের ব্যবহার

গরমে সবচেয়ে অস্বস্তিকর বিষয় হল ঘাম আর অয়েলি স্কিন। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব বেড়ে যায় একটু গরম পড়লেই। বার বার ফেসওয়াশ করলেও যেন তেলতেলে ভাব থেকে নিস্তার মিলে না। আর এই তৈলাক্ত ত্বকের কারণে লোমকূপগুলোয় ময়লা, ঘাম জমে। দেখা দেয় ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডসের মতো অনেক সমস্যা। মূলত, ত্বকের লোমকূপ থেকে অত্যধিক পরিমাণে সিবাম নিঃসৃত হয়, যে কারণে মুখে তেলতেলে ভাবটা বেড়ে যায়।

জেনে নিন ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে ত্বকের যত্ন নিবেন বেসন ব্যবহর করে-

বেসন ও হলুদঃ হলুদের মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। বেসনের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে মাখলে ব্রণ, লালচে ভাব, র‍্যাশের হাত থেকে মুক্তি পাবেন।

বেসন ও গোলাপ জলঃ গোলাপ জলের মধ্যে হাইড্রেটিং উপাদান রয়েছে। এটি ত্বককে পরিষ্কার করতে এবং ত্বকের পিএইচ স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। বেসনের সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে নিন। এটি গরমকালে ত্বকে সতেজতা এনে দেবে।

বেসন ও লেবুর রসঃ লেবুর রসের মধ্যে সাইট্রিক অ্যাসিড রয়েছে, যা ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে সাহায্য করে এবং দাগছোপ দূর করে দেয়। ব্রণ-প্রবণ ত্বকের উপর বেসন ও লেবুর রসের ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন।

বেসন ও টক দইঃ টক দইয়ের মধ্যে ল্যাকটিক অ্যাসিড রয়েছে, যা ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের টেক্সচার উন্নত করার পাশাপাশি কোলাজেন উৎপাদনেও সাহায্য করে। বেসনের সঙ্গে টক দই মিশিয়ে বানিয়ে ফেলুন হাইড্রেটিং ফেস মাস্ক। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেলতেলে ভাবকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং ত্বকের অস্বস্তি কমাবে।

বেসন ও অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরা ময়েশ্চারাইজিং ও হিলিং উপাদানের জন্য পরিচিত। বেসনের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মুখে মাখলে জ্বালাভাব, লালচে ভাব থেকে মুক্তি পাবেন। এটি ত্বককে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে।
 
বেসন, পেঁপে এবং কমলালেবুর রসঃ এক টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে দুই চা চামচ কমলালেবুর রস এবং তিন-চার টুকরো পাকা পেঁপে ভাল করে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটা যেন খুব ঘন না হয়। প্রয়োজনে একটু জল মিশিয়ে নিতে পারেন। ৩০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখার পর জল দিয়ে ধুলে ফেলুন।

বেসন, টমেটো এবং হলুদঃ এক চা চামচ বেসনের সঙ্গে কিছুটা হলুদ গুঁড়ো এবং এক চামচ টোম্যাটোর রস মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। ২০-২৫ মিনিট লাগিয়ে মুখে মেখে রাখুন। তার পর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

বেসন, দই এবং মধুঃ ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে দুই টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে এক চা চামচ মধু এবং অর্ধেক চামচ টক দই ভাল করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন ভাল করে। 

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে বেসনের উপকারিতা

যারা তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের জন্যও বেসন হতে পারে বেশ উপকারী। বেসন ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল টেনে নিতে পারে। ত্বকের বর্ণ উজ্জ্বল করতেও বেসন দারুণ উপকারী। এতে থাকা বিভিন্ন উপাদান ত্বকের দাগছোপ দূর করে ত্বককে ভিতর থেকে জেল্লাদার করে তুলতে সাহায্য করে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে জেনে নিন তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে বেসনের উপকারিতা-

ব্রণ দূর করেঃ ব্রণের সমস্যা হলে বেসন ব্যবহার করুন। এতে আছে প্রাকৃতিক খনিজ জিঙ্ক যা ব্রণ দূর করতে কার্যকরী। সেজন্য সমপরিমাণ বেসন ও হলুদের গুঁড়া নিন। এরপর তার সঙ্গে এক চা চামচ মধু ও এক চা চামচ লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ভেজা মুখে মিশ্রণটি ব্যবহার করুন। এভাবেই রেখে দিন মিনিট দশেক। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার এটি করতে পারেন।

রোদে পোড়াভাব দূর করেঃ
নিয়মিত রোদে বের হলে ত্বকে সৃষ্টি হয় পোড়াভাবের। এই দাগ দূর করতে সাহায্য করে বেসন। সেজন্য প্রথমে ৪ চা চামচ বেসন, এক চা চামচ লেবুর রস আর ১ টেবিল চামচ টক দই নিন। এবার একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। ত্বকের যেসব স্থানে পোড়াভাব রয়েছে সেখানে মিশ্রণটি ব্যবহার করুন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিন। প্রতিদিন গোসলের আগে ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।

ফেসিয়াল হেয়ার দূরে করে বেসনঃ ফেসিয়াল হেয়ার নিয়ে সমস্যায় ভোগেন অনেকে। এর ঘরোয়া সমাধান দিতে পারে বেসন। সেজন্য সম পরিমাণ বেসন ও মেথি গুঁড়া নিন। এবার তার সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি মুখে মেখে রেখে দিন আধা ঘণ্টা। এরপর ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে দূর হবে ফেসিয়াল হেয়ার।

শুষ্ক ত্বকে পুষ্টি জোগায়ঃ বেসন শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা বাড়ায়। দুধের সাথে বেসন মিশিয়ে লাগালে ত্বক আর্দ্রতা ফিরে পাবে।

ক্সফোলিয়েশনঃ ত্বককে শ্বাস নিতে দেওয়ার জন্য মাঝে মধ্যে এক্সফোলিয়েট করতে হয়। ত্বকে রাসায়নিক ব্যবহারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক স্ক্রাবার হিসাবে বেসন ব্যবহার করুন।

তারুণ্য ধরে রাখেঃ
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে বলিরেখা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ কমাতে নিয়মিত বেসন ব্যবহার করুন। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। সেই সঙ্গে ত্বক এবং চুলকে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে।
 
ত্বকের কালচেভাব দূর করেঃ মুখের কালচে ভাব দূর করতে ৪ চা চামচ বেসন, ১ চা চামচ লেবুর রস, ১ চা চামচ টক দই মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মুখে এবং ঘাড়ে লাগিয়ে শুকান পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকালে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বক কে নরম এবং উজ্জ্বল করে। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে ৪-৫ বার ব্যবহার করুন।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধ করেঃ
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে লেবু এবং বেসনের ফেইস প্যাক খুব কার্যকর। ৪ চা চামচ বেসন, ১ চা চামচ লেবুর রস এবং এক চামচ কাঁচা দুধ ভালো মতো মিশিয়ে পেস্ট করে মুখে সারকুলার মোশনে স্ক্রাবের মতো মাখুন। শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

তৈলাক্ত ভাব কমায়ঃ যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা ৩ চা চামচ বেসন এর সাথে ২ চা চামচ কাঁচা দুধ অথবা ২ চা চামচ টক দই মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল কমানোর সাথে সাথে ত্বকের ময়লা দূর করে। ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করুন এন্টি পিম্পল বেসন মাস্ক। ২ চা চামচ বেসন, ২ চা চামচ স্যানডালউড পাউডার, এক চা চামচ দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে শুকালে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ঘাড় ও আন্ডারআর্মের কালো দাগ দূর করেঃ
ঘাড় এবং আন্ডারআর্মের কালো দাগ নিয়ে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয় অনেককেই। এসব জায়গার কালো দাগ দূর করতে বেসনের একটি প্যাক খুব কার্যকর। বেসন, টক দই এবং কাঁচা হলুদ পরিমাণ মতো নিয়ে ঘাড়ে এবং আন্ডারআর্মের কালো জায়গায় লাগান। ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এরপর মুছে সেখানে তিলের তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ বার ব্যবহার করুন।

মুখের অবাঞ্ছিত লোমকুপ দূর করেঃ মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে অনেক আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে বেসন। মেথি গুঁড়ো এবং বেসনের সাথে পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মুখের যেসব জায়গায় লোম রয়েছে সেখানে এই মিশ্রণটি লাগান। শুকালে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফলের জন্য প্রতিদিন এই ফেইস প্যাকটি ব্যবহার করুন।

ব্রণের কালো দাগ দূর করেঃ ব্রণের কালো দাগ দূর করতে বেসনের সাথে শশা এবং লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের দাগ হালকা হয়ে যাবে।

চেহারায় উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনেঃ
চেহারায় মুহূর্তের মধ্যে উজ্জ্বলতা আনতে ২ চা চামচ বেসন, ১ চা চামচ শুকনো কমলার খোসার গুঁড়ো এবং আধা চা চামচ দুধ মিশিয়ে মুখে এবং ঘাড়ে লাগান। লাগানোর সময় মুখে হালকা ভাবে সারকুলার মোশনে ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ত্বককে উজ্জ্বল এবং মসৃণ করে।

ট্যান দূর করেঃ বেসন, পাকা পেঁপে আর কমলালেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। এবার মুখ আর ঘাড়ে ভালো করে লাগিয়ে নিয়ে অন্তত ৩০ মিনিট রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে বেসনের স্ক্রাব

ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে জেনে নিন তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে বেসনের স্ক্রাবের ব্যবহর।ত্বকের যত্নেও আদিযুগ থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে বেসন। ত্বকের জন্য বেসন ব্যবহারে মুখে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আসে। বেসন ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে সাহায্য করে। এছাড়া ত্বকের মৃত কোষ দূর করতেও ভীষণভাবে সাহায্য করে হেঁশেলের এই উপাদান। গভীরভাবে ত্বকের ছিদ্রে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে এর জুড়ি নেই।

নিয়মিত বেসন ব্যবহার ত্বক কোমল ও উজ্জ্বল হয়। বেসন দিয়ে অনেক ধরনের স্ক্রাব তৈরি করতে পারেন। যা ত্বকে উজ্জ্বলতা আনার পাশাপাশি একাধিক সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে। বেসন দিয়ে তৈরি স্ক্রাব, ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। এটি আপনার ত্বককে সতেজ করে তোলে। আসুন এখানে জেনে নেওয়া যাক কী কী উপায়ে আপনি মুখের জন্য বেসন স্ক্রাব তৈরি করতে পারেন।

বেসন এবং গোলাপ জলের স্ক্রাবঃ
একটি পাত্রে ২ চামচ বেসন নিন। এতে কিছুটা গোলাপ জল মেশান। এবার স্ক্রাবটি মুখে এবং ঘাড়ে লাগিয়ে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করুন। এই স্ক্রাব ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। তারপর পরিষ্কার করুন। সপ্তাহে দু’বার বেসন এবং গোলাপ জলের স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন।

বেসন এবং কাঁচা দুধ ফেস স্ক্রাবঃ একটি পাত্রে 2 চামচ বেসন নিন। এতে কাঁচা দুধ মেশান। দুধ ও বেসন দিয়ে স্ক্রাব দিয়ে ত্বকে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। অন্তত দশ মিনিট রেখে দিন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। এই স্ক্রাব আপনার ত্বককে নরম, উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করবে।

বেসন এবং লেবুর রসঃ ত্বকের জন্য বেশ প্রয়োজনীয় এই স্ক্রাব। এটি বানাতে একটি পাত্রে ২ চামচ বেসন নিন। এতে কিছুটা লেবুর রস যোগ করুন। এবার এতে সামান্য জল দিন। মিশ্রণটি ভাল করে মিশিয়ে নিন, তাহলেই স্ক্রাব তৈরি হয়ে যাবে। এই স্ক্রাব দিয়ে ত্বক ম্যাসাজ করে নিন। কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করলেই হবে। মুখে প্রাকৃতিক আভা আনতে সপ্তাহে দুইবার এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।

বেসন এবং শসার রস স্ক্রাবঃ একটি শসা গ্রেট করুন। এতে ১ চামচ বেসন মেশান। এবার মিশ্রণটি দিয়ে মুখ ও ঘাড়ে ম্যাসাজ করুন। ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। কোমল এবং স্বাস্থ্যকর ত্বকের পেতে, সপ্তাহে দুইবার ঘরে তৈরি এই ফেস স্ক্রাবটি ব্যবহার করতে পারেন।

বেসন এবং হলুদের স্ক্রাবঃ ২ টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে আধ চা চামচ হলুদের গুঁড়ো এবং টক দই ভাল করে মিশিয়ে নিন। স্নানের আগে সারা গায়ে মেখে নিন এই মিশ্রণ। কিছুক্ষণ রেখে উষ্ণ গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। 

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে বেসনের ফেসপ্যাক

ত্বকে বেসন লাগানো খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। এটি কেবল ত্বক উজ্জ্বল করে না, মুখের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণও করে। বেসন প্রায়ই ফেসপ্যাকের জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে তখনই এর উপকার পাবেন যখন আপনি এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করবেন। উজ্জ্বল ত্বক কে না চায় দাগ-ছোপমুক্ত উজ্জ্বল ত্বকের জন্য অনেকেই পার্লারে যান ফেস মাস্ক, স্ক্রাব, টোনারের মতো জিনিস ব্যবহার করেন।

তবে এগুলি আবার অনেকে বাড়িতে বসেই তৈরি করতে পারেন। ঘরোয়া জিনিস, চন্দন এবং রান্নাঘরে ব্যবহৃত হলুদ আর বেসন দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে ত্বক উজ্জ্বল করে তুলতে পারেন। তবে বেসন ব্যবহার করার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। তাহলে জেনে নিন ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে ত্বকের যত্ন নিবেন বেসনের ফেসপ্যাক ব্যবহার করে-

অ্যালোভেরা ও বেসনের ফেসপ্যাকঃ অ্যালোভেরা পাতার জেলে থাকা পলিস্যাকারাইড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের জন্য খুবই উপকারী উপাদান। বেসনের সাথে অ্যালোভেরা মিশিয়ে ব্যবহার করলে তার উপকারিতা পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ। শুষ্ক, তৈলাক্ত, মিশ্র কিংবা স্বাভাবিক- সকল ধরনের ত্বকের সাথেই মানিয়ে যাবে এই ফেস প্যাকটি। ব্যবহারের জন্য এক চা চামচ বেসন ও এক চা চামচ অ্যালোভেরা পাতার জেল প্রয়োজন হবে।

এই দুইটি উপাদান একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখের ত্বকে এপ্লাই করতে হবে। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ত্বক ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ম্যাসাজ করে নিতে হবে।

মুলতানি মাটি ও বেসনের ফেসপ্যাকঃ ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদান মুলতানি মাটির ব্যবহার বহু পুরনো। মুলতানি মাটি ত্বকের বাড়তি তেল ও ময়লা দূর করতে খুবই ভালো কাজ করে এবং লোমকূপকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে। মিশ্র ও তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মুলতানি মাটি ব্যবহার করলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হবে দুই চা চামচ মুলতানি মাটি, এক চা চামচ বেসন ও এক চা চামচ গোলাপজল।

সকল উপাদান মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে ত্বকে আলতোভাবে ম্যাসাজ করে ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিতে হবে। এরপর মুখ ধুয়ে ৭ থেকে ৮ ফোঁটা নারিকেল তেল মুখে ম্যাসাজ করে নিতে হবে।

কলা ও বেসনের ফেসপ্যাকঃ
পুষ্টি সমৃদ্ধ মিষ্টি এই ফলটি ত্বককে ভেতর থেকে আর্দ্রতা যোগাতে এবং ত্বককে কোমল রাখতে কাজ করে। যাদের ত্বক শুষ্ক, তাদের জন্য এই ফেস প্যাকটি ব্যবহার করা হবে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হবে ৪-৫ টুকরা পাকা কলার টুকরা, দুই চা চামচ বেসন ও দুই চা চামচ দুধ।

সকল উপাদান মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।

বেসন, পেঁপে এবং কমলালেবুর ফেসপ্যাকঃ এক টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে দুই চা চামচ কমলালেবুর রস এবং তিন-চার টুকরো পাকা পেঁপে ভাল করে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটা যেন খুব ঘন না হয়। প্রয়োজনে একটু জল মিশিয়ে নিতে পারেন। ৩০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখার পর জল দিয়ে ধুলে ফেলুন।

বেসন, টমেটো এবং হলুদের ফেসপ্যাকঃ এক চা চামচ বেসনের সঙ্গে কিছুটা হলুদ গুঁড়ো এবং এক চামচ টোম্যটোর রস মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। ২০-২৫ মিনিট লাগিয়ে মুখে মেখে রাখুন। তার পর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

বেসন, মধু ও দইয়ের ফেসপ্যাকঃ বেসন ত্বক উজ্জ্বল করতে ও ত্বক টানটান করতে সয়াহায়তা করে। এছাড়াও এটা ব্রণ ও ব্রণের দাগ কমাতে এবং তৈলাক্তভাব কমাতে সহায়তা করে। মধু ও দইয়ের সঙ্গে বেসন মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এক টেবিল-চামচ বেসনের সঙ্গে মধু ও টক দই মেশান। প্যাকটি ত্বকে মেখে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুবার ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাবেন।

আলুর, ভিটামিন ই এবং বেসনের ফেসপ্যাকঃ প্রথমে একটি মাঝারি সাইজের আলু নিয়ে এর খোসা ছাড়িয়ে এটিকে টুকরো টুকরো করে কেটে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এটি ব্লেন্ড করার পর ঝাঁকুনির সাহায্যে থেকে রস বের করে নিতে হবে। আলুর রস বের করার পর একটি পরিষ্কার বাটিতে হাফ কাপ আলুর রস নিন।

এরপর এর সাথে এড করে নিন বেসন এবং ভিটামিন-ই। এবারও সবগুলো উপাদানকে খুব ভালোভাবে মিশিয়ে স্মুথ পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে।

সবগুলো উপাদান খুব ভালো করে মিশে যাবার পর এটিকে ত্বকের মধ্যে এপ্লাই করে নিন। এপ্লাই করার জন্য আপনারা ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন। আর যদি না থাকে তাহলে হাতের সাহায্যে এপ্লাই করে নিতে পারেন। তবে হাতের সাহায্যে যদি আপনারা এপ্লাই করেন তাহলে হাত ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

এটি এপ্লাই করার পর ত্বকের মধ্যে পুরোপুরি শুকিয়ে যাবার জন্য অপেক্ষা করুন। যখন প্যাকটি পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে তখন পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। মুখ ধুয়ে নেবার পর আপনারা আপনাদের ব্যবহারের ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করে নিন।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে কফির ব্যবহার

প্রচণ্ড গরমে কাজের প্রয়োজনে অনেকের বাইরে বের হতে হয়। ফলে রোদের তাপে ত্বক হারাচ্ছে উজ্জ্বলতা। তাই এসময় ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন কফি। কফির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা ত্বকে তারুণ্য বজায় রাখতে সাহায্য করেকফি ত্বককে আলতোভাবে এক্সফলিয়েট করে মৃত কোষ ও ময়লা দূর করে সতেজভাব আনে।

এছাড়াও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও টানটানভাব আনতে কফি উপকারী। কফি ত্বকের কোষের পুনঃবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে, কোলাজেন টিসুর সংখ্যা বাড়ায় ও ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে। জেনে নিন ত্বকের যত্নে কফি কীভাবে ব্যবহার করবেন-

কফি ও অলিভ অয়েলঃ শুষ্ক ত্বকের যত্নে অতুলনীয় এই ফেসপ্যাকটি। ২ চা চামচ কফি ও ২ চা চামচ অলিভ অয়েল একসঙ্গে মেশান। মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করবে এটি।

কফি ও কোকোঃ কফি ও কোকোতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শুষ্ক ত্বকের ব্রণ দূর করে। সমপরিমাণ কফি ও কোকো দুধের সাহায্যে মেশান। ফেসপ্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। শুকাতে শুরু করলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের বলিরেখা দূর করতেও সাহায্য করবে।

কফি ও ওটমিলঃ সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এই ফেসপ্যাকটি। ত্বকের মরা চামড়া দূর করার পাশাপাশি ত্বকের একদম ভেতরের ময়লা দূর করে কফি ও ওটমিলের ফেসপ্যাক। ১ চা চামচ ওটমিলের সঙ্গে ১ চা চামচ কফি মেশান। এই দুই উপাদানের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি ত্বকে ২ মিনিট ম্যাসাজ করুন। কিছুক্ষণ রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

কফি ও মধুঃ সব ধরনের ত্বকের জন্য উপকারি ফেসপ্যাকটি ত্বক প্রাকৃতিকভাবে ময়েশ্চারাইজ করে ও দূর করে ব্রণসহ অন্যান্য দাগ। ২ চা চামচ কফির সঙ্গে পরিমাণ মতো মধু ও ১ চিমটি হলুদ মেশান। পেস্টটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন না শুকানো পর্যন্ত। এই ফেসপ্যাক প্রতিদিন ব্যবহার করলে দ্রুত ফল পাবেন।

কফি ও দুধঃ ২ থেকে ৩ চা চামচ কফির সঙ্গে ৪ চা চামচ দুধ মেশান। কয়েক ফোঁটা ঘি দিয়ে ভালো করে পেস্ট তৈরি করুন। ফেসপ্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। সামান্য শুকালে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল হবে।

কফি ও লেবুঃ ত্বক উজ্জ্বল এবং টানটান করে কফি ও লেবুর ফেসপ্যাক। ২ থেকে ৩ চা চামচ কফির সঙ্গে লেবুর রস মেশান। মিশ্রণটি ত্বকে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রেখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটায় ধুয়ে ফেলুন। উজ্জ্বল ও সুন্দর ত্বকের জন্য প্রতিদিন ব্যবহার করুন এই ফেসপ্যাক।

কফি ও দারুচিনি গুঁড়াঃ প্রাণহীন ও ক্লান্ত ত্বকে জৌলুস ফিরিয়ে আনতে এই ফেসপ্যাকের জুড়ি নেই। ২ চা চামচ কফি ও ২ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ার সঙ্গে দুধ ও মধু মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন না শুকানো পর্যন্ত। সপ্তাহে দুইদিন ব্যবহার করুন এটি।

কফি ও অ্যালোভেরাঃ উজ্জ্বল ত্বকের জন্য, কফি পাউডারে অ্যালোভেরা জেল যোগ করে একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং আপনার মুখে লাগান । কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন, এতে আপনার মুখে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আসবে।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে কফির উপকারিতা

কফি আপনার ত্বকের যত্নে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি অবিশ্বাস্য উপাদান, বিশেষ করে যদি আপনার তৈলাক্ত ত্বক হয়ে থাকে। কারণ এটি ত্বকের ছিদ্র থেকে ময়লা, তেল এবং আটকে থাকা সিবাম থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে। এটি আপনার ত্বককে পুষ্ট অনুভব করে তা নিশ্চিত করার সাথে সাথে এটি ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করে এবং এক্সফোলিয়েট করে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে জেনে নিন তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে কফির উপকারিতা

ডার্ক সার্কেল দূর করেঃ ডার্ক সার্কেল দূর করতে কফির ব্যবহার অসাধারণ। কারণ এটা চোখের চারপাশের ফোলাভাব কমায় এবং এই অংশের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এজন্য আপনার লাগবে: ১ চামচ কফি গুঁড়া, ১ চামচ এলোভেরা জেলএই দুটি উপাদান একত্রে মিশিয়ে চোখের নিচের ভারী করে লাগান। চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বিশ মিনিট শুয়ে থাকুন এবং আরাম করুন কিছুক্ষন পর আলতো হাতে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করুন।

চোখের নিচে কালো দাগ দূর করেঃ পান করার পর কফির দানাগুলো ফেলে না দিয়ে ঠান্ডা করে চোখের চারপাশে লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এ ছাড়া ১ চা-চামচ কফিগুঁড়া, ১ চা-চামচ মধু ও কয়েক ফোঁটা ভিটামিন ই তেল (ক্যাপসুল আকারে কিনতে পাওয়া যায়) মিশিয়ে চোখের চারপাশে ঘষুন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

এক্সফলিয়েটরঃ কফি খুব ভালো এক্সফলিয়েটর হিসেবে কাজ করে। এটা ত্বককে আলতোভাবে এক্সফলিয়েট করে মৃত কোষ ও ময়লা দূর করে সতেজভাব আনে। এছাড়াও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও টানটানভাব আনতে কফি উপকারী।

উজ্জ্বলতা বাড়ায়ঃ কফির মাস্ক ত্বকের প্রদাহ কমায়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও টান টান লাগে। সহজেই ত্বকের ক্লান্তি কমাতে কফির মাস্ক কার্যকর।

বয়সের ছাপ কমায়ঃ কফি উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন- ফেনল যা উন্মুক্ত রেডিকেলের কারণে হওয়া ত্বকের ক্ষতি কমাতে কাজ করে। এর ফলে বলিরেখা, বয়সের ছাপ, ত্বকের ভাঁজ, ঝুলে পড়ার প্রবণতা কমায়। এছাড়াও ত্বকে কোলাজেনের মাত্রা বাড়াতে এবং পিগমেন্টেইশনের সমস্যা কমাতে কফি উপকারী।

ত্বকের কালচেভাব কমায়ঃ কফি ত্বক আর্দ্র রাখে, আরোগ্য লাভে সহায়তা করে এবং ত্বকের দৃঢ়তা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। ফলে চোখের চারপাশের কালো দাগ, ফোলাভাব ইত্যাদি কমাতে কফি উপকারী।

ত্বকের প্রদাহ কমায়ঃ কফির স্ক্রাব ত্বকের স্ট্রেইচ মার্ক এবং সেলুলাইট সাময়িকভাবে কমিয়ে ত্বকে মসৃণভাব আনতে সাহায্য করে।ত্বকে রোদের কারণে হওয়া লালচেভাব কমাতে সদ্য গুঁড়া করা কফির সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি মিশিয়ে পাতলা মিশ্রণ তৈরি করে নিন। পাতলা কাপড় এতে ডুবিয়ে নিংড়ে নিয়ে তা দিয়ে শরীর আলতোভাবে মুছে নিন। এতে ত্বকের ফোলা ও লালচেভাব কমবে।

ত্বক ফর্সা করতেঃ আমন্ড অয়েলের সঙ্গে কফি মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল হয়। এর জন্য একটি পাত্রে কফি গুঁড়ো নিন। তাতে আমন্ড অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করুন উপকার পাবেন।

ট্যান তুলতেঃ নারকেল তেল, লেবু ও কফির স্ক্রাব ট্যান তুলতে দারুণভাবে সাহায্য করে এই স্ক্রাব। একটি বাটিতে কফি গুঁড়ো নিন। তাতে কয়েক চামচ নারকেল তেল দিন। আর দেবেন লেবুর রস। পেস্টটি ভাল করে গুলে মুখে লাগিয়ে নিন। কাজ হবে।

ব্ল্যাকহেডস দূর করেঃ কফিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে। ফলে কফি মাস্কে আপনার ব্ল্যাকহেডস দূর হবে। আপনি যদি ব্রণ বা র‍্যাশ ইত্যাদির সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে এটি ব্যবহার করবেন না। যেভাবে তৈরি করবেন- দুই চামচ কফি পাউডার, ফ্রেস অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মুখে লাগান। ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

ত্বক ফর্সা করতে চাইলেঃ এটি সূর্যের অতি বেগুনে রশ্মির হাত থেকে আমাদের ত্বককে বাঁচায়। মেলানিন পিগমেন্ট কমাতে সাহায্য করে। যেভাবে তৈরি করবেন- এক চামচ কফি গুঁড়ো, এক চামচ দই, এক চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে মুখে লাগান। মিনিট ১৫ রেখে ধুয়ে ফেলুন।

শুষ্ক ত্বকের সমস্যাঃ কফি আছে এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। যেভাবে তৈরি করবেন এক চামচ কফির সঙ্গে এক চামচ নারকেল তেল বা আমন্ড অয়েল নিন। এবার মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

ডার্ক সার্কেলঃ ডার্ক সার্কেল দূর করতে চাইলে এক চামচ কফি এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক বানান। সেটা চোখের নিচে লাগিয়ে ১০-১৫ থাকুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।

বলিরেখাঃ বলিরেখা দূর করতে চাইলে কফি পাউডার, কোকো এবং দুধ মিশিয়ে প্যাক বানান। মিশ্রণটিতে অল্প লেবুর রস দিন। এবার মুখে লাগিয়ে মিনিট ২০ রেখে ধুয়ে ফেলুন।
 
ব্রণ কমায়ঃ কফি ব্যাক্টেরিয়া-রোধী উপাদান সমৃদ্ধ যা ত্বক এক্সফলিয়েট করে ব্যাক্টেরিয়া কমাতে পারে। ফলে ব্রণের সমস্যা দূর হয়। কফির গুঁড়া আলতোভাবে ত্বকে মালিশ করে নিতে হবে। এতে মৃতকোষ দূর হবে ও ব্রণ কমবে। কফির প্যাক তৈরি করতে তিন চা-চামচ কফির সঙ্গে এক টেবিল-চামচ বেসন, তিন চা-চামচ মধু, দুই চা-চামচ অ্যালো ভেরার জেল এবং দুতিন ফোঁটা ল্যাভেন্ডার এসেনশল তেল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। প্যাকটি মেখে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে কফির ফেসমাস্ক ও স্ক্রাব

ত্বকের যত্নে আমরা কত কিছুই না ব্যবহার করি। ভালো ফেসওয়াশ থেকে শুরু করে ময়েশ্চারাইজার, ফেস মাস্ক আরো কত কি। সুন্দর, দীপ্তিময় ত্বক কে না চায়। কফি আপনাকে চাঙা রাখার পাশাপাশি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়াতে পারে। কফিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ব্রণ ও মেছতার দাগ দূর করে। এছাড়া ত্বকের মরা চামড়া, বলিরেখা ও ডার্ক সার্কেল দূর করে কফির ফেসপ্যাক ও স্ক্রাব।

কফি, মধু এবং ইয়োগার্টঃ মধুতে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। ময়শ্চারাইজিং উপাদানও। যা আপনার ত্বককে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট উপাদান মুখের জেল্লা ফেরায়। ত্বককে রাখে টানটান। সহজেই বলিরেখা আসতে দেয় না। প্রয়োজন ১ টেবিল চামচ কফি। ১ টেবিল চামচ অরগ্যানিক মধু। ২ টেবিল চামচ ইয়োগার্ট।

প্রথমে একটি পাত্র নিন। এই পাত্রে প্রতিটি উপাদান ভালো করে মিশিয়ে দিন। সেই মিশ্রণ আপনার মুখে লাগিয়ে নিন। ধীরে ধীরে মালিশ করতে পারেন। খুব জোরে ঘষবেন না। চোখে যেন না লাগে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্তত ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলুন।

কফি এবং কোকোয়া ফেসমাস্কঃ কফি এবং কোকোয়ার ফেসমাস্ক আপনার মুখের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও আপনার ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখে। ত্বক থাকে মসৃণ। আপনাকে দেখতেও খুব সুন্দর লাগে। কোকোয়ায় উপস্থিত পলিফেনল আপনার ত্বককে অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে। ২ টেবিল চামচ কফি পাউডার নিন। ২ টেবিল চামচ কোকোয়া পাউডার, ৩ টেবিল চামচ ইয়োগার্ট এবং ১ টেবিল চামচ মধু নিতে হবে।

একটি পাত্রে এই প্রতিটি উপাদান ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই উপাদান আপনার মুখে লাগিয়ে নিন। চোখের আশপাশে লাগানোর প্রয়োজন নেই। এবার ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলুন। ফেসমাস্ক ধুয়ে ফেলার পরে অবশ্যই টোনার এবং ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নেবেন। এতে উপকার পাবেন। আপনার ত্বক সংবেদনশীল হলে এবং ত্বকের কোনও চিকিৎসা চললে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও উপাদান মুখে ব্যবহার করবেন না।

কফি এবং দুধের ফেসমাস্কঃ কফির এই ফেসমাস্ক আপনার ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে ত্বককে রাখে মসৃণ। দুধের গুণে আপনার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে। এই ফেসমাস্ক আপনি সপ্তাহে অন্তত ২ বার ব্যবহার করতে পারেন। আপনার প্রয়োজন এক টেবিল চামচ গ্রাউন্ড কফি। এক থেকে দুই টেবিল চামচ দুধ।

প্রথমে এই দুই উপাদান একটি পাত্রে নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই মিশ্রণ আপনার মুখে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

কফি ও বেন্টোনাইট ক্লেঃ একটা বাটিতে দুটেবিল চামচ কফির গুঁড়ো নিন। অথবা কফি বিন গুঁড়ো করেও ব্যবহার করতে পারেন। সঙ্গে মেশান চার চামচ বেন্টোনাইট ক্লে। যে কোনও বড়ো কসমেটিক্সের দোকানে বা অনলাইনে পেতে পারেন। সেই সঙ্গে মিশিয়ে নিন তিন চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার।

একটা বাটিতে বেন্টোনাইট ক্লে আর কফি পাউডার মিশিয়ে নিন। এবার তাতে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মেশান। বেশ ঘন করে মিশ্রণ তৈরি করুন। প্রয়োজনে সামান্য জলও মেশাতে পারেন। এবার ওই মিশ্রণ মুখে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট রাখুন। যদি ভালো করে না শুকোয় তাহলে আরও বেশিক্ষণ রাখুন। এবার গরম জলে তুলো ভিজিয়ে মুখ মুছে নিন। সব হয়ে গেলে মুখে ময়েশ্চারাইজার বা অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে নিন।

কফির স্ক্রাবঃ ত্বকের যত্নে কফির ব্যবহার হয়ে থাকে অনেক। বিভিন্ন পণ্যের মূল উপাদান হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে এটি। এতে থাকা ক্যাফেইন ত্বককে জাগিয়ে তুলতে এবং প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে অনেক কার্যকরী। এর জন্য এক চামচ কফি নিয়ে এর সঙ্গে এক চামচ টকদই ভালো করে মিশিয়ে নিন। এর পর এটি ত্বকে কিছুক্ষণ ঘষে ৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতেই দূর হবে আপনার ত্বকের তৈলাক্তভাব।

এক টেবিল-চামচ জলপাইয়ের তেল এবং দুই টেবিল-চামচ কফির গুঁড়া মিশিয়ে তা দিয়ে মুখ, গলা, ঘাড় ইত্যাদি গোলাকারভাবে পাঁচ মিনিট স্ক্রাব করে নিতে হবে। এর পর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

কফি ও নারিকেল তেলের স্ক্রাবঃ প্রধান উপাদান কফি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। একইসাথে এই স্ক্রাব তৈরিতে ব্যবহৃত নারিকেল তেল ত্বকে পুষ্টি জোগাতে এবং ত্বককে নমনীয় করতে সাহায্য করে থাকে। একটি বাটিতে দুই চা চামচ পরিমাণ কফি গুঁড়া নিতে হবে। এর সাথে দুই টেবিল চামচ পরিমাণ নারিকেল তেল মিশিয়ে নিতে হবে। একটি চামচের সাহায্যে ভালোভাবে উপাদান দুইটি মিশিয়ে ফেলতে হবে। স্ক্রাব তৈরি হয়ে গেলে পুরো মুখে সমানভাবে লাগিয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে।

কফি ও দইয়ের স্ক্রাবঃ শুধুমাত্র শরীরের জন্য নয়, চুল ও ত্বকের যত্নেও সমানভাবে উপকারী দই। দইয়ে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রোবায়োটিক সমূহ ত্বকের ক্ষেত্রে উপকারী ভূমিকা রাখে। এছাড়াও, দই যেকোন ধরণের ইনফেকশন সারাতে খুব দ্রুত কাজ করে।

একটি বাটিতে এক টেবিল চামচ পরিমাণ কফি গুঁড়া নিতে হবে। এর সাথে এক টেবিল চামচ পরিমাণ দই মেশাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, দইয়ে যেন কোন বাড়তি পানি না থাকে। অর্থাৎ, একদম শক্ত দইয়ের এক টেবিল চামচ পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে। এবার উপাদান দুইটি খুব ভালোভাবে একসাথে মেশাতে হবে যেন কোন গুঁড়া অবশিষ্ট না থাকে। স্ক্রাব তৈরি হয়ে গেলে মুখের ত্বকে ব্যবহার করা যাবে।

কফি ও নারিকেল দুধের স্ক্রাবঃ নারিকেল তেলের মতোই নারিকেল দুধে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ, যা ত্বকের জন্য দারুণ উপকারী। বিশেষ করে কফির সাথে মিশিয়ে ত্বকে নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বকের চামড়া ঝুলে যাওয়া, বয়সের ছাপ পড়া ইত্যাদি প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে।

একটি বাটিতে ২-৩ চা চামচ পরিমাণ কফি গুঁড়া নিতে হবে। এর সাথে ২-৩ চা চামচ নারিকেলের দুধ মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর মিশ্রণটি ভালোভাবে মিশিয়ে ঘন পেষ্ট তৈরি করলেই ব্যবহার উপযোগী স্ক্রাব তৈরি হয়ে যাবে

কফির আই মাস্কঃ চোখের চারপাশের ফোলাভাব কমাতে আধা চা-চামচ কফির গুঁড়ার সঙ্গে আধা চা-চামচ জলপাইয়ের তেল মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে মেখে রাখতে হবে। দশ মিনিট পরে আলতোভাবে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। পরিবর্তন সঙ্গে সঙ্গেই চোখে পড়বে।

কফির বডি স্ক্রাবঃ দেহের ত্বক এক্সফলিয়েট করতে ১/৪ কাপ তাজা কফি গুঁড়া, ১/৪ কাপ বাদামি চিনি এবং কিছুটা লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। প্রয়োজনে এতে কয়েক ফোঁটা পানি যোগ করে ঘনত্ব পাতলা করে নিতে পারেন। মিশ্রণটি ত্বকে মেখে গোলাকারভাবে মালিশ করে স্ক্রাব করে নিতে হবে। পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। আর আর্দ্রতা রক্ষা করতে ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার করতে হবে।

কফি চালের গুঁড়ার স্ক্রাবঃ যাদের ত্বক খুবই তৈলাক্ত তাঁদের জন্য এই স্ক্রাব। এই স্ক্রাব সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করবেন। একটা বাটিতে কফি পাউডার ২ চামচ, চালের গুঁড়া ২ চামচ, কাঁচা হলুদ, চিনি এক চামচ, লেবুর রস দু চামচ আর সামান্য জল দিয়ে স্ক্রাব বানিয়ে নিন। এবার স্নানের আগে মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর ভালো করে ধুয়ে নিন।

ত্বকের যত্নে তিসির তেল ব্যবহারের উপকারিতা

অলিভ অয়েল, ল্যাভেন্ডার অয়েল, জোজোবা অয়েল ত্বকের পরিচর্যায় কিন্তু দারুণ ভাবে কাজে লাগে এই তিন ধরনের এসেন্সিয়াল অয়েল। তবে এই তালিকায় রয়েছে আর এক ধরনের তেল যাকে বলা হয় তিসির তেল বা flaxseed oil। ত্বকের পরিচর্যার পাশাপাশি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতেও সাহায্যে করে এই তিসির তেল।
ত্বকের-যত্নে-তিসির-তেল-ব্যবহারের-উপকারিতা
শুধু মুখের ত্বকের নয়, সারা শরীরের ত্বকের যত্নেই আপনি ব্যবহার করতে পারেন তিসির তেল। এই তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে ত্বক খুবই নরম, মসৃণ এবং মোলায়েম থাকে। এবার দেখে নেওয়া যাক তিসির তেল বা flaxseed oil কীভাবে ত্বকের পরিচর্যায় কাজে লাগে

র‍্যাশ ও আলার্জি দূর করেঃ ত্বকে যদি কোনও র‍্যাশ বা অ্যালার্জি হয় তাহলে সেটা নিরাময়ে সাহায্যে করে এই তিসির তেল। এই তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ইনফ্লেমেটরি উপকরণ, যার সাহায্যে ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব কিংবা চুলকানি ও অন্যান্য অস্বস্তিকর সমস্যা, লাল হয়ে যাওয়া- এইসব কমে যায়। বিশেষ করে যাঁদের রুক্ষ-শুষ্ক ত্বক, তাদের এই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তখন তিসির তেল ব্যবহার করলে নিমেষে দূর হয় দাগ-র‍্যাশ-চুলকানি। ব্রনের সমস্যাও দূর হয়ে এই তেলের সাহায্যে। আঙুলে করে নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে দিলেই পাওয়া যাবে সমাধান।

ত্বক আর্দ্র রাখেঃ তিসির তেলে রয়েছে এসেন্সিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড। এর প্রভাবে ত্বকের রুক্ষ-শুষ্ক ভাব দূর হয়। ত্বক থাকে মসৃণ এবং মোলায়েম। হাল্কা কোনও ময়শ্চারাইজারের সঙ্গে এই তেল মিশিয়ে মুখে মাখলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। জেল্লা বাড়ার পাশাপাশি দূর হয় ত্বকের কালচে দাগছোপ। রাত্রিবেলা ঘুমানোর আগে হাতের তালুতে দু’ফোঁটা তিসির তেল নিন। তারপর হাতেই ঘষে সেটা সামান্য গরম করে নিন।

এবার ওই তেল দিয়ে মুখে ম্যাসাজ করুন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট ম্যাসাজ করে তারপর ৫ মিনিট তেল মুখে রেখে পরিষ্কার এবং সামান্য উষ্ণ জলে মুখে ধুয়ে নরম কাপড় বা গামছা কিংবা তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন। সকালে উঠেই ত্বকের ফারাকটা চোখে পড়বে আপনার।

ডার্ক সার্কেল দূর করেঃ চোখের তলায় কালি বা কালচে ছোপ পড়ে গিয়েছে, গোলাকারে চোখের চারপাশেই দেখা দিয়েছে কালচে দাগছোপ, এই সমস্যার সমাধানে খুবই ভালভাবে কাজ করে তিসির তেল। তানা এক সপ্তাহ চোখের চারপাশের কালচে দাগে এই flaxseed oil মাখলে তফাতটা আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। এছাড়াও ত্বকের বলিরেখা রুখতে, চামড়ার কুঁচকে যাওয়া রুখতে সাহায্য করে তিসির তেল।

ত্বকের বলিরেখা দূর করতেঃ ত্বকের বলিরেখা সাধারণ একটি বিষয় কিন্তু এই সামান্য একটি সমস্যা আপনাকে বয়সের আগে বুড়ো করতে যথেষ্ট। তিসির তেলের নিয়মিত ব্যবহারে এই সমস্যা সমাধান করবে। প্রতিদিন মুখ পরিষ্কার করে সামান্য তেল নিয়ে মুখে ম্যাসেজ করুন। এভাবে ৩০ মিনিট ম্যাসেজ করুন এবং পরে ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ দিয়ে ফেলুন।

শুষ্ক ত্বককে ময়েশ্চারাইজার করেঃ শুষ্ক ত্বককে দারুণভাবে ময়েশ্চারাইজার করে তিসির তেল। কারন তিসির তেলে থাকা এন্টি-ফালামেটরি শুষ্ক ত্বককে গভীর থেকে ময়েশ্চারাইজার করে। এক্ষেত্রে আপনি শুধু তিসির তেল বা আপনার ব্যবহৃত ফেস প্যাকের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

ত্বকের সংক্রমণ ও ফোলা ভাব প্রতিরোধ করেঃ
 তিসির তেলে থাকা alpha linolenic acid ত্বককে যে কোন প্রকার সংক্রমণ হাত থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের অস্বাভাবিক ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের র‍্যাশ, লালচে ভাব ও ঘাম জনিত সমস্যা থেকে ত্বকে রক্ষা করে।

শুষ্ক ত্বকের টিস্যু নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ ত্বকের সুস্থ্যতা,কিন্তু শরীরের ভিতরকার টিস্যু গুলোর উপর নির্ভরশীল।আপনার টিস্যু যতটা সুস্থ, আপনার ত্বক ততটা ফ্রেশ। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেএে টিস্যু গুলোকে ময়েশ্চারাইজার করে এবং ত্বকের পানি শূন্যতা ভাব দূর করে। এতে টিস্যু গুলোর মধ্যে একটা ভারসাম্য তৈরি হয়।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ ত্বকের ডেড সেল গুলো পরিষ্কার কর এবং অতিরিক্ত তেল বাহির করে। তাছাড়া ত্বকের রঙের অসামঞ্জস্যতা দূর করে। ছোপ ছোপ কালো দাগ গুলো তুলে ফেলে। এতে করে সহজেই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

রোদে পোড়া দাগ ও কালো ভাব দূর করেঃ তিসির তেলে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এতে ত্বকের সংক্রমণ এবং ইরিটেশন গুলো তিসির তেল সমাধান করে।

ব্রণ ও ব্লাকহেডস দূর করেঃ
 তিসির তেলে থাকা ওমেগা ফ্যাটি -৩ এসিড এবং উচ্চ মানের এন্টি- ফালামেট্ররি প্রোপার্টিজ ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিয়ে ব্রণের সমস্যা দূর করে। ব্যাল্ক হেডস মতো জিদি সমস্যাটা ও দূর করে তিসির তেল। সপ্তাহে নিয়মিত ৫ দিন ব্যবহারে অনেকটা সুফল মিলবে।

ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ বর্তমান সময়ে ত্বকের অন্যতম মারাত্মক সমস্যা ত্বকের ক্যান্সার। নানা রকম ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার মতো ত্বকের ক্যান্সারও বেড়ে চলেছে। তিসির তেলের ব্যবহার আপনাকে এই মহা বিপদ থেকে দূরে রাখে। কারণ এতে আছে এন্টি -অক্সিডেটিভ প্রোপার্টিজ যা ক্যান্সারের সেল তৈরি হতে বাধা সৃষ্টি করে।

ত্বককে তরতাজা রাখেঃ তিসির বীজে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এই ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে রোজ এই জেল মুখে মেখে ঘুমোলে ত্বক থাকবে একেবারে তরতাজা।

ত্বকের যত্নে কীভাবে তিসি ব্যবহার করবেন

তিসির বীজে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা ত্বকের আর্দ্রতা ফেরানোর পাশাপাশি একাধিক সমস্যা দূর করে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ ফ্ল্যাক্স সিডে ত্বকের যে কোনও ধরনের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও ত্বকের অস্বস্তি, জ্বালাভাব, চুলকানি কমাতেও সহায়তা করে ফ্ল্যাক্স সিড। ব্রণ বা ব্রেকআউটের সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে পারে এই বিশেষ বীজ।

তিসির বীজ ও জলঃ একটি পাত্রে জল নিন। তাতে ১-৩ কাপ ফ্ল্যাক্স সিড মেশান। এবার জলটি ভাল করে ফুটিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ ঠান্ডা করে নিন। এবং একটি পাত্রে ঢেলে তাকে ভাব করে ব্লেন্ড করে নিয়ে গোটা মুখে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

তিসির বীজ ও টক-দইঃ ত্বকের যত্নে টক-দইয়ের ব্যবহার নতুন নয়। এর সঙ্গে ফ্ল্যাক্স সিড মেশালো আরও ভাল কাজ হয়। একটি পাত্রে দুই চামচ টক-দই নিন। এবার তাতে মিশিয়ে নিন ১ টেবিল চামচ ফ্ল্যাক্স সিড গুঁড়ো। এবার পুরো মিশ্রণটি ভাল করে গুলে নিয়ে গোটা মুখে লাগিয়ে নিন। স্নানের আগে এই ফেস প্যাক লাগানোই ভাল। এরপর ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন।

তিসি জেলের ফেসপ্যাকঃ ফ্ল্যাক্সসিড জেল-১ চামচ, চালের গুঁড়ো-১ চামচ, মধু-১ চামচ, অলিভ অয়েল-১/২ চামচ।প্রথমে সবকটি উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে মুখে ও গলায় ভাল করে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট পর জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এই ফেস প্যাক লাগালে ত্বক টানটান হয় এবং রঙ উজ্জ্বল হয়। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে কিংবা ত্বক উজ্জ্বল করে তুলতে বাড়িতে এই জেল ব্যবহার করতে পারেন।

কিভাবে তিসি বীজ দিয়ে জেল বানাবেনঃ প্রথমে ১/২ কাপ ফ্ল্যাক্স সিড ২ কাপ জলে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে তিসির বীজ সমেত জল ৩ থেকে ৪ মিনিট পর্যন্ত অল্প আঁচে ফুটিয়ে নিন। এই মিশ্রণ ঠাণ্ডা হওয়ার পর সুতির কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিন। এবার এই মিশ্রণ এয়ার টাইট কন্টেনারে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। এই ভাবে অন্তত ১ মাস পর্যন্ত এই জেল ফ্রিজে রাখতে পারেন।

উপসংহার

সপ্তাহে এক দিন ত্বকের মৃত কোষ পরিষ্কার করতে বাড়িতেই তৈরি করে নিতে পারেন প্রাকৃতিক স্ক্রাব। ত্বকের সুস্থতার প্রতিও বাড়তি খেয়াল রাখুন। নইলে ত্বক হয়ে পড়বে নিষ্প্রাণ। গরমে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে পর্যাপ্ত। তাতে ত্বকের কোষও থাকবে সতেজ। ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া পানির ঘাটতি যেমন পূরণ করতে হবে, তেমনি ঘামে চিটচিটে হয়ে যাওয়া ত্বক পরিষ্কারও রাখতে হবে ঠিকঠাক। তবেই ত্বক থাকবে সুস্থ, উজ্জ্বল।

দাগ ছোপহীন উজ্জ্বল ত্বক আমাদের সবারই পছন্দ। কিন্তু এই কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই আলাদা করে ত্বকের যত্ন নিতে পারেন না। এতে অনেক সময় রোদে পুড়ে ও ধূলা ময়লায় ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। আর তখনই মাথায় হাজারটা চিন্তা আসে কীভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা যায়। তাই উপরে আলোচিত এই সব প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে জেনে নিন। আশা করছি এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে ত্বকের পরিচর্চায় ক্ষেত্রে উপকৃত হবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url