বিটরুটের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
বিটরুটের উপকারিতা ও এর পুষ্টিগুণের কারনে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে নিস্তার পেতে
নিয়মিত বিটরুট খেতে পারেন। কারন বিটরুটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট,
ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন সি। যা আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ
প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে।
বিটরুটে বিটেইন ও ট্রিপটোফোন নামক উপাদান রয়েছে যা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।
যারা ডিপ্রেশন বা দুশ্চিন্তায় ভোগেন তারা ডায়েট লিস্টে বিটের রস নিশ্চিন্তে রাখতে
পারেন। এতে রয়েছে ভিটামিন এ ও ক্যারোটিন যেটি চোখ ও রেটিনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে
কার্যকরী ভূমিকা রাখে। যাদের নিম্ন রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, গলব্লাডারে পাথর কিংবা
অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের এই রস গ্রহণ না করাটাই ভালো।
পেইজ সূচিপত্রঃ বিটরুটের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
- বিটরুটের উপকারিতা
- বিটরুট খাওয়ার নিয়ম
- বিট রুটের পুষ্টিগুণ সংক্রান্ত তথ্য
- ত্বকের যত্নে বিটরুটের উপকারিতা
- রূপচর্চাায় বিটরুটের ব্যবহার
- গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
- ত্বকের যত্নে বিটরুটের ফেসমাস্ক
- অতিরিক্ত বিটের রস পান করলে যেসব ক্ষতি হতে পারে
- ডায়াবেটিক রোগীদের বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
- বিটরুটের উপকারিতা সম্পর্কে শেষকথা
বিটরুটের উপকারিতা
বিটরুটের উপকারিতা ও বিভিন্ন ঔষধি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এ সবজিটিকে সুপারফুডও বলা
হয়ে থাকে। বিটরুট ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর। আয়রন, জিংক, আয়োডিন,
ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফোলেট, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন
সি ইত্যাদি উপাদান আছে এতে। এতে আরও রয়েছে প্রচুর ফাইবার ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।
চলুন বিটের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
১. উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেঃ বিটরুটে থাকে
প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট। এই উপাদান শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে। যে কারণে
রক্তনালী প্রসারিত হয়, কমে আসে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। একটা বয়সের পর নারীদের
মনোপোজ হয়। শরীর তখন যেমন বেশি পরিমাণে লবণ শোষণ করে খাবার থেকে। যা রক্তচাপ
বাড়িয়ে দেয়। যেখান থেকে শুরু হবে বুক ধড়ফড় করা, মাথাব্যাথা এবং উদ্বেগ। চিকিৎসা
না করলেই পড়বেন বিপদে। বিটরুট কিন্তু এইক্ষেত্রে বেশ উপকারি।গবেষণায় জানা গেছে
বিটে রয়েছে নাইট্রেটস, যা রক্তনালী প্রসারিত করে ও রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।
২. যকৃতের উপকারে বিটঃ যকৃত দেহের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঙ্গ। শরীরের বিভিন্ন
কার্যক্রম, যেমন পাচক এবং চর্বির বিপাক ক্রিয়ার দায়িত্ব হল যকৃতের। তবে যকৃতের
প্রাথমিক দায়িত্ব হল পরিপাক নালী থেকে আসা রক্ত অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পরার আগে
সেই রক্তের পরিশোধন করা। খাদ্য এবং ঔষধের মাধ্যমে যে সব রাসায়নিক এবং ড্রাগ
আমাদের দেয়ে প্রবেশ করে সেই অধিবিষগুলিকে দেহ থেকে বার করে দেওয়াও যকৃতের
দায়িত্ব। যকৃতের কোন ক্ষতি হলে এই অধিবিষগুলি আমাদের দেহে জমে গিয়ে আমাদের দেহের
কার্যক্রমের অবনতি ঘটবে।
যদিও আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন-শৈলী যকৃতের অসুখ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, দেখা
গিয়েছে যে অক্সিডেটিভ চাপ যকৃতের এই ক্ষতির গতি বৃদ্ধি করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
সমৃদ্ধ বিট একটি চমৎকার হেপাটোপ্রোটেকটিভ এজেন্ট হতে পারে। বিটালাইন, বিটের
অন্তর্গত একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, এই অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।
এন-নাইট্রোসোডাইথাইল এমিন, ডিএনএ এবং যকৃতের ক্ষতি করে। বিটের রসের সম্পূরক গ্রহণ
করলে ডিএনএ এবং যকৃতের এই ক্ষতি হ্রাস করা যায়। এছাড়াও বিটের নির্যাস যকৃতের
কর্কট রোগাক্রান্ত কোষের বৃদ্ধি এবং ছড়িয়ে পরাকে হ্রাস করতে পারে।
৩. জ্বালা পোড়া বা প্রদাহ কমায়ঃ বিটরুটে থাকা নাইট্রেট রক্তনালীর প্রদাহ
কমিয়ে দেয়। নাইট্রেট ছাড়াও বিটে পাবেন বেটালাইনস। এটি এক ধরনের পিগমেন্ট।
বেটালাইনসও রক্তনালীর প্রদাহ কমিয়ে দেয়।এই দুটো উপাদান মিলেই আপনার শরীরে রোগের
ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
৪. হজম শক্তি বাড়ায়ঃ হজমের সমস্যায় ভুগলে বিট খাওয়া শুরু করে দিন। কারণ,
আপনার হজম সংক্রান্ত সকল সমস্যা দূর করবে বিট। বিট আঁশ জাতীয় খাবার। আঁশ জাতীয়
খাবার হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য, ডাইভার্টিকুলাইটিস এমনকি কোলন
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
৫. শারীরিক শক্তি বাড়ায়ঃ বয়সের সাথে সাথে শরীরের শক্তি কমে যায়। শরীরের
শক্তি বাড়াতে চাইলে আপনাকে সাহায্য করবে বিট। বিট এমনই একটি সবজি যার বহু গুণ।
বুড়ো বয়সে নাতি-নাতনির সাথে দৌঁড়াতে চাইলে খাদ্য তালিকায় বিটরুট যোগ করুন।
৬. যৌন স্বাস্থ্যের জন্যঃ বীট পুরুষদের যোনি স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা
করে। বীট পুরুষদের কামশক্তি বৃদ্ধি করে। বীট গ্রহণের ফলে মহিলার মধ্যেও
কামইচ্ছা বেড়ে যায়। প্রাচীন যুগে বিটরুট যৌন স্বাস্থ্যের শক্তির জন্য গ্রাস
করা হত। এতে নাইট্রেডের ভালো পরিমাণ রয়েছে যা রক্তনালীর গতি বাড়িয়ে তোলে।
পুরুষরা প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে বীট ব্যবহার করলে পুরুষত্বহীনতা নিরাময় হয়।
৭. মাসিকের ক্ষেত্রে উপকারীঃ মাসিকের কারণে মহিলারা প্রতি মাসে রক্ত
হ্রাস পান। এই কারণে মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতা সৃষ্টি হয়, এটি নিরাময় করতে
প্রতিদিন বীট সেবন করা উচিত। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা লোহিত
রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং রক্ত পুনরায় পূরণ করে। প্রায়শই মহিলারা
মাসিকের সময় বেশি দুর্বল ও অলস বোধ করেন। তাই মহিলাদের এমন অবস্থায় বীট
খাওয়া উচিত। এটি আপনার শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে এবং অলসতা দূর করে।
৮. মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়ঃ যত দিন যাবে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা
কমতে থাকবে। ভুলে যাবেন সবকিছু। এক কাপ বিট খেলেই কিন্তু বেঁচে যাবেন এই অবস্থা
থেকে। বিট মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয় এবং ব্লাড সুগার ঠিক রাখে।
৯. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়ঃ কোলন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে বিট খুব
ভালো কাজ করে এবং এর ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও
পিগমেন্টের কারণে ধারণা করা হয় লাল বিট কার্সিনোজেনের বিরুদ্ধে কাজ করে যেটি
কোলন ক্যন্সারের জন্য দায়ী।
১০. চোঁখের যত্নেঃ বিট চোঁখের জন্য খুবই উপকারি। সবুজ বিট কাঁচা
অবস্থায় খাওয়া যায়। সিদ্ধ বা পরিপক্ক অবস্থায় এটিতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
যা লুটেইন নামে পরিচিত। লুটেইন বয়স সম্পর্কিত চোঁখের রোগের ঝুঁকি কমাতে
সাহায্য করে। এটিতে উদ্ভিদ উৎপাদিত ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যা চোঁখের স্বাস্থ্য
এবং চারপাশের স্নায়ু টিস্যুগুলির শক্তি এবং সুস্থতা বাড়ায়।
১১. বাতের ব্যথা কমায়ঃ অনেকেই আছেন যারা দীর্ঘ দিন বাতের ব্যথায় ভুগছেন।
এক্ষেত্রে তাদের জন্য সহায়ক একটি খাবার হতে পারে বিটরুট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
বাতের ব্যথায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিট খুবই উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে,
নিয়মিত বিটরুট খাওয়ার ফলে প্রায় ৩৩ শতাংশ বাতের সমস্যা দূর হয়েছে। তাই একে
হেলাফেলা করার সুযোগ নেই।
১২. ওজন কমায়ঃ যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন তাদের জন্য একটি উপকারী খাবার হতে
পারে বিটরুট। কারণ এতে ক্যালোরি থাকে খুবই কম। আর ফ্যাট নেই বলতে গেলে।
প্রতিদিন সকালে আপনি যদি এক কাপ বিটের রসের সঙ্গে ২ মিলি অ্যাপেল সাইডার
ভিনেগার মিশিয়ে খান তবে দ্রুতই সুফল টের পাবেন। মাত্র এক মাসেই ওজন নিয়ন্ত্রণে
চলে আসবে।
১৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ ডায়াবেটিস টাইপ 2 রোগীদের জন্য, বীট
সানজিভানি হার্বের মতো কাজ করে। এতে উপস্থিত পুষ্টি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে
এবং ইনসুলিনে পরিণত হতে সহায়তা করে। আপনি কাঁচা খেতে পারেন বা এটি সিদ্ধ করতে
পারেন। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ এবং নিম্ন রক্তচাপের সমস্যার জন্যও বীট উপকারী।
১৪. রক্ত পরিষ্কার করেঃ আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে
বিটরুট। তাই আপনিও সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিত বিটরুট খাওয়ার অভ্যাস করুন। এটি
খেলে তা শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে, রক্তে বৃদ্ধি করে
আরবিসি-র সংখ্যা, সেইসঙ্গে দূরে রাখে রক্তস্বল্পতাও।
১৫. ত্বক ভালো রাখেঃ ত্বক ভালো রাখতে আপনার নানা প্রাচেষ্টা রয়েছে
নিশ্চয়ই? এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে বিটরুট। কারণ আপনি যদি নিয়মিত
বিটরুট খান তবে তা আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়াও
বিটরুট দিয়ে করতে পারেন রূপচর্চা। সেজন্য বিটরুসের রস বের করে তা পুরো মুখে
লাগিয়ে অপেক্ষা করুন মিনিট দশেক। এরপর শুকিয়ে এলে ভালো করে পরিষ্কার পানি দিয়ে
ধুয়ে নিন। এতে ত্বকে বলিরেখা থাকলে তাও দূর হবে। সেইসঙ্গে বিটের অ্যান্টিসেপটিক
উপাদান ব্রণ দূর করতেও সাহায্য করবে। চোখের নিচে কালো দাগ থাকলে তাও দূর করবে
বিটরুট।
১৬. ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করেঃ বিটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং ভিটামিন সি। ত্বকের দাগ-ছোপ, বলিরেখার মতো সাধারণ
সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করে এই বিট। বিটে থাকা বেটালেন্স নামক যৌগটি শরীরে রক্ত
সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে। ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ভাল হলে ভিতর থেকে ত্বক জেল্লাদার
হয়ে ওঠে। গালের দু’দিকে লালচে আভা আনতে আর প্রসাধনীর সাহায্য নিতে হবে না।
১৭. মধুমেহ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ মধুমেহ একটি দীর্ঘস্থায়ী পরিস্থিতি
যেখানে দেহ চিনির বিপাকে ব্যর্থ হয়, ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
যদিও এই পরিস্থিতিকে বিপরীত মুখী করা যায় না, তবে খাদ্যে পরিবর্তন এনে একে
নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। 30 জন রোগী নিয়ে একটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা দেখাচ্ছে যে
প্রতি দিন নিয়মিত ভাবে বিটের রস পান করলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কম হয়। বিটে
থাকে উচ্চপরিমানে পলিফেনলস, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং অ্যান্থোসাইনিনস। এই যৌগগুলি কোন
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই মধুমেহকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
বিটরুট খাওয়ার নিয়ম
বিটরুট খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম ও পদ্ধতি রয়েছে। বিটরুট প্রায় সারা বছরই পাওয়া
যায়। এটি সালাদ, সবজি এবং জুস আকারে খাওয়া হয়। অনেকে আবার সবজি হিসেবে রান্না
করে খেয়ে থাকেন। তবে বিভিন্ন ফলের সাথে মিশিয়ে জুস হিসেবে বেশি খেয়ে থাকেন
স্বাস্থ্য সচেতনরা। প্রতিদিন এক গ্লাস বিটের জুস ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
এতে থাকা অ্যান্টি-এজিং উপাদান ব্রণ, বলিরেখা, মেছতা দূর করে ত্বকের তারুণ্য ধরে
রাখে।
বেশিরভাগ মানুষ বিটের জুস খেতেই বেশি পছন্দ করেন। অনেকে আবার এরসাথে স্বাদ ও
পুষ্টি বাড়াতে গাজরের ব্যবহার করে থাকেন। শীতকালীন সবজি হিসেবে অনায়াসে এটিকে
যেকোনো খাবারের সাথে মিশিয়ে রান্না করা যায়। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া
যাক কি কি নিয়মে বিটরুট খাওয়া যায়ঃ
১। বিট রুটের জুসঃ যারা নিয়মিত বিট খান তাদের মধ্যে অধিকাংশই শুধু এটির
জুস খেতে পছন্দ করেন। আলাদা আলাদা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কয়েক রকমের জুস
বানিয়ে ফেলা সম্ভব। নীচে বিটরুটের কয়েকটি জুস বানানোর নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা
করা হলোঃ
বিট ও আপেলের জুসঃ আপেল ও বিট দুটোই সুস্বাস্থ্য রক্ষায় দারুণ উপকারী।
আপেল মিষ্টি হওয়া সত্ত্বেও এতে খুব অল্প পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। তাই পুষ্টিগুণ
ও স্বাদ বাড়াতে এটিকে বিটের জুসে মিশিয়ে নিতে পারেন।
-
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- ১ কাপ আপেল
- ২ কাপ বিট
- দারুচিনির, লবণ ও গোলমরিচের গুঁড়ো
এবারে সকল উপাদানকে একত্রে পরিমাণ মতো ব্লেন্ড করে তৈরি করে ফেলুন আপেল ও বিটের
জুস। স্বাদ বাড়াতে পরিমিত পরিমাণে বিটলবণ ও লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন।
বিট ও গাজরের জুসঃ গাজর ও বিটে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফলে এসব হজম
হতে স্বাভাবিকের তুলনায় সামান্য বেশি সময় লাগে তাই বার বার খেতে ইচ্ছে হয়
না। তাই নিজের ওজন কমাতে চাইলে এই দু’টোকে একত্রে জুস বানিয়ে পান করুন।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- ২ কাপ গাজর
- ২ কাপ বিট
- ১-২ কাপ পানি
- লেবুর রস ৫ টেবিল চামচ
- পুদিনা পাতা পরিমাণমতো
- লবণ পরিমাণমতো
প্রথমে বিট, গাজর ও পুদিনা পাতাকে একত্রে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে ঘন করে নিন। এবার এতে পানি, লেবুর রস ও লবণ মিশিয়ে ভালো করে নেড়ে নিতে হবে। খাওয়ার মতো তরল হয়ে গেলে তৃপ্তি নিয়ে এটিকে পান করুন।
বিট ও টমেটোর জুসঃ টমেটো ও বিট দুটোতেই প্রচুর পরিমাণে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এদের খেলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার দারুণ
উন্নতি ঘটে।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- টমেটো দেড় কাপ
- ২ কাপ বিট
- লেবুর রস ৩ টেবিল চামচ
- পরিমাণমতো লবণ
প্রথমে বিট, টমেটো ও লেবুর রস একসাথে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর পরিমাণমতো লবণ
দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিন।
বিট ও ডালিমের জুসঃ ডালিম ও বিট দেহে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা
করে। এছাড়াও ডালিমে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকার ফলে এটি হজমে সাহায্য করে।
একইসাথে এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার রয়েছে।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- ডালিমের বীজ ১ কাপ
- ২ কাপ বিট
- লেবুর রস ৩ টেবিল চামচ
- বিটলবণ
প্রথমতো বিট ও ডালিম একত্রে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এবার এতে লেবুর রস ও
বিটলবণ মিশিয়ে ভালো করে নাড়িয়ে নিন। প্রয়োজনে পুদিনা পাতা মিশিয়ে একে আরো
সুস্বাদু করে তোলা যায়।
২। বিটরুটের মিল্কসেকঃ শীতেও অনেকে মিল্কসেক খেতে কোন অনিহা করেননা।
পুষ্টির কথা চিন্তা করলে তাদের জন্য বিটরুট মিল্কসেক বেস্ট।
উপকরণঃ
- একটি মাঝারি বিটরুটের ছোট ছোট টুকরা।
- দুই কাপ ঘন তরল দুধ।
- ১-২ কাপ মধু
তৈরির নিয়মঃ বিটরুটের টুকরাগুলো সামান্য পানি তেল ভাপ দিয়ে নিতে হবে আর
ঐ পানিও রাখতে হবে। দুধ জাল দিয়ে ক্রিমের মতো ঘন করে নিয়ে ঠান্ডা করে
ব্লেন্ডারে মধু সহ এক সাথে ব্লেন্ড করতে হবে। এবারে ভাপ দেয়া বিটরুট গুলোও
ব্লেন্ড করে নিতে হবে। বিটরুট এর রস টা আলাদা করে নিয়ে আবারো ব্লেন্ডারে দুধ ও
মধুর মিশ্রণ এর সাথে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এবারে সব ঠিক মতো ব্লেন্ড
হলে নামিয়ে গ্লাসে ঢেলে পছন্দ মতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন দারুন স্বাদের বিটরুট
মিল্কসেক।
৩। বিটরুটের সন্দেশঃ একাধিক ভিটামিন, খনিজ উপাদান এবং
অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী গুণের কারণে বিটরুটকে বলা হয় ‘সুপারফুড’।
জুস, সালাদ বা সেদ্ধ বিটরুট খেতে না চাইলে চেষ্টা করতে পারেন মজাদার বিটরুটের
সন্দেশ।
উপকরণঃ ছানা ৫০০ গ্রাম, দুধ ৫০০ গ্রাম, (২ লিটার দুধকে জ্বাল দিয়ে ঘন
করে নিতে হবে ৩ কাপ), কনডেন্সড মিল্ক আধা কাপ + ৩ টেবিল চামচ, চিনি ১ কাপ,
জাফরান দেড় চা-চামচ, ডিম ৬টি, মাওয়া আধা কাপ, গুঁড়ো দুধ আধা কাপ, ময়দা ১
টেবিল চামচ, তবক (ঐচ্ছিক), সাজানোর জন্য ঘি/মাখন আধা কাপ।
তৈরির নিয়মঃ বিটরুট ধুয়ে ছিলে ঝুরি করে নিন। দুধ ঘন করে ২ কাপ দুধ আলাদা
উঠিয়ে রাখুন। বাকি ১ কাপ দুধের সঙ্গে ঝুরি করা বিটরুট সিদ্ধ করে ব্লেন্ডারে
ব্লেন্ড করে নিন। ছানা হাত দিয়ে ভালো করে ছেনে নিন। ১ কাপ ঘন দুধে ৬টি ডিম
ফেটে নিন। বাকি ১ কাপ দুধে ৩ টেবিল চামচ কনডেন্সড মিল্ক মিশিয়ে ভালো করে নেড়ে
আলাদা রাখুন। এই মিশ্রণে আধা চা-চামচ জাফরান মিশিয়ে রাখুন।
প্যানে ঘি বা মাখন গলিয়ে ১ চা-চামচ জাফরানের ফোড়ন দিয়ে তাতে ব্লেন্ড করা বিটরুট
দিয়ে বেশ খানিকক্ষণ ভেজে নিয়ে চিনি ও ছানা দিয়ে মিশিয়ে ঘন ঘন নাড়ুন। এবার
গুঁড়ো দুধ দিয়ে অনবরত নাড়ুন। এদিকে একটি ট্রে বা পাত্রে ঘি মেখে রাখুন।
বিটরুট ও ছানার মিশ্রণ আঠালো হয়ে এলে ঘি ব্রাশ করা ট্রেতে ঢেলে চারপাশ ও
উপরিভাগ খুন্তি দিয়ে চেপে চেপে সমান করুন। খুন্তিতে একটু ঘি মেখে নেবেন।
এবার অন্য একটি প্যানে বাকি ১ কাপ দুধ ও কনডেন্সড মিল্কের মিশ্রণ ঢেলে কিছুক্ষণ
জ্বাল দিন। তারপর ময়দা দিয়ে অনবরত নাড়ুন যেন ময়দা দলা না পাকায়। ঘন হয়ে এলে
মাওয়া দিয়ে দ্রুত নেড়ে নামিয়ে ট্রেতে রাখা বিটরুটের মিশ্রণের ওপর ঢেলে চারপাশ
ও উপরিভাগ সমান করে ঠান্ডা হলে চারকোনা করে কেটে ইচ্ছে হলে তবক দিয়ে সাজিয়ে
পরিবেশন করুন।
৪। বিটরুটের হালুয়াঃ শীতের এই সময়টাতে ভালো মানের টাটকা খেজুর গুড় পাওয়া
যাচ্ছে। আর এই গুড় দিয়েই তৈরি করতে পারেন মজাদার বিটরুট হালুয়া। এর জন্য লাগছে-
বিটরুট কুচি ২ কাপ, দুধ ২ কাপ, ঘি ২ চা চামচ, চিনি দেড় চা চামচ, কাঠবাদাম বা
পেস্তা বাদাম, নারকেল এবং খেঁজুরের গুড়।
তৈরির নিয়মঃ প্যানে কুচি করা বিটরুট মাঝারি আঁচে রেখে তাতে ২ কাপ দুধ
দিয়ে ভালো করে নাড়াতে থাকুন। দুধ ও বিট পুরোপুরি মিশে না যাওয়া পর্যন্ত নাড়তে
থাকুন। এরপর অল্প করে চিনি ও ঘি মিশিয়ে নিন, আবারও নাড়তে থাকুন। কিছুক্ষণ পর
খেঁজুরের গুড় ও নারকেল কুড়িয়ে দিতে হবে। এই হালুয়ার স্বাদ জিভে লেগে থাকার
মত। হালুয়া তৈরি হয়ে গেলে পছন্দ মত সেইপ করে উপরে কাঠবাদাম/পেস্তা বাদাম কুচি
ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
৫। বিটরুটের সালাদঃ উপকরন- ১টি বিট (সেদ্ধ করে গ্রেট করা), ১ কাপ টক দই
ফেটানো, এক চিমটি গোলমরিচ, ১ চা চামচ চাট মশলা, ধনেপাতা কুচি অল্প, ১/৪
টেবিলচামচ অলিভ অয়েল, কালো আস্ত সরিষা অল্প, আস্ত জিরে, হিং এবং কারিপাতা।
তৈরির নিয়মঃ সেদ্ধ করে গ্রেট করা বিট একটি পাত্রে নিয়ে এতে ফেটানো দই
দিয়ে ভালো করে মেশিয়ে তাতে গোলমরিচ, চাট মশলা, ধনেপাতা কুচি দিয়ে চামচ দিয়ে
নেড়ে নিতে হবে। একটা প্যানে তেল গরম করে তাতে আস্ত সরিষা, জিরে ফোড়ন দিয়ে আঁচ
কমিয়ে প্রথমে হিং তারপর কারিপাতা দিয়ে ভালো করে নাড়তে হবে। প্যানের তেল দই আর
বিটের মিশ্রণে দিয়ে আবার ভালো করে মেশান। তৈরি এই বিটরুট সালাদ খেতে দারুণ।
বিট রুটের পুষ্টিগুণ সংক্রান্ত তথ্য
বিটরুট একটি প্রাণবন্ত এবং বহুমুখী মূল উদ্ভিজ্জ, সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং
সুস্থতায় অবদান রাখে এমন অত্যাবশ্যক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের সরবরাহ করে।
কাঁচা বিটের প্রায় ৮৮%ই জল। বিভিন্ন খনিজের, যেমন ক্যালশিয়াম, ফসফোরাস,
পটাশিয়াম এবং ভিটামিন- এ, বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৯ এবং ভিটামি-সি এর খুব ভাল
উৎস হচ্ছে বিট। প্রতি ১০০ গ্রাম বিটে নিম্ন লিখিত পুষ্টিগুলি পাওয়া যায়:
পুষ্টি উপাদান | পরিমান |
---|---|
জল | ৮৭.৫৮ গ্রাম |
শক্তি | ৪৩ গ্রাম |
প্রোটিন | ১.৬১ গ্রাম |
চর্বি | ০.১৭ গ্রাম |
শ্বেতসার | ৯.৫৬ গ্রাম |
তন্তু | ২.৮ গ্রাম |
চিনি | ৬.৭৬ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১৬ মিলিগ্রাম |
লোহা | ০.৮ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ২৩ মিলিগ্রাম |
ফসফোরাস | ৪০ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ৩২৫ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ৭৮ মিলিগ্রাম |
দস্তা | ০.৩৫ মিলিগ্রাম |
ভিটামি-এ | ২ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন-বি১ | ০.০৩১মিলিগ্রাম |
ভিটামিন-বি২ | ০.০৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন-বি৩ | ০.৩৩৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন-বি৬ | ০.০৬৭ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন-বি৯ | ১০৯ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন-সি | ৪.৯ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন-ই | ০.০৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন-কে | ০.২ মাইক্রোগ্রাম |
সুসিক্ত | ০.০২৭ গ্রাম |
মোনো আনস্যাচুরেটেড | ০.০৩২ গ্রাম |
পলি আনস্যাচুরেটেড | ০.০৬ গ্রাম |
ত্বকের যত্নে বিটরুটের উপকারিতা
ত্বকের যত্নেও বিটরুট বেশ উপকারি। বিটরুটে ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম,
আয়রন এবং ভিটামিন সি সহ বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে, যা আপনার
ত্বকের হাইপার পিগমেন্টেশনের সমস্যা কমাতে পারে। এই ভিটামিন কোলাজেন
সিনথেসিসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিটরুটের অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট উপাদান ত্বকের
প্রাকৃতিক জেল্লা ফেরাতে সাহায্য করে। বিটের রস পান করলেও ত্বকের নানা সমস্যা
সমাধান হয়। নিয়মিত বিটের রস পান করলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ বিটরুট ত্বকের উজ্জ্বলতা
বাড়ায়। এটি টক্সিন অপসারণের মাধ্যমে রক্ত পরিষ্কার করে। বিটরুট সেবনের
ফলে আমাদের ত্বককে মোটা, স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল দেখায়। বিটরুটে প্রচুর
পরিমাণে আয়রন রয়েছে। এগুলো ক্ষতিগ্রস্থ কোষগুলিকে ভিতর থেকে পুনরুজ্জীবিত
করে। নিস্তেজ ত্বককে একটি উজ্জ্বল চেহারা দেয়।
ত্বকের বয়সের ছাপ পড়তে দেয় নাঃ বিটরুটে আছে ভিটামিন সি। যা ত্বকে
অসময়ে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। একাধিক গবেষণায় এর উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে।
সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ত্বকের কোষকেও সুরক্ষিত রাখে এই বিট। এছাড়াও এর
মধ্য়ে আছে প্রচুর উপকারী উপাদান। যেমন, ফোলেট, পটাশিয়াম, ফাইবার ও অ্যান্টি
অক্সিড্যান্ট। যা আপনার রক্ত পরিষ্কার রাখে। ফলে ত্বকেও রক্ত সঞ্চালন ভালো
হয়। সহজেই মুখে বয়সের ছাপ পড়ে না। মুখ থাকে উজ্জ্বল।
ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখেঃ শীত পড়তেই ত্বক তার প্রাকৃতিক আর্দ্রতা
হারাতে শুরু করে। এই সময়ে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা প্রয়োজন। নাহলে নানা
সমস্যা শুরু হয়। বিটরুট আপনার ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। এছাড়া ত্বকে
চুলকানি ও জ্বালার মতো সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। ত্বক রাখে নরম। আপনার ত্বকে
কোথাও চুলকানি-জ্বালার মতো সমস্যা শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গে সেখনে বিটের রস
লাগাতে পারেন। উপকার পাবেন। দৈনিক বিউটি রুটিনেও যোগ করতে পারেন।
মুখের কালো দাগছোপ দূর করেঃ প্রায় সবারই ডার্ক সার্কেলের সমস্যা
রয়েছে। কারও মুখে এই সমস্যা বেশি, কারও কম। তাই এই কালো দাগছোপ কমাতে আপনি
বিটরুটের রস ব্যবহার করতে পারেন। প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনি এই বিটের
রস কয়েকফোঁটা চোখের তলায় লাগিয়ে মালিশ করতে পারেন। এমনকী চোখের ফোলা ভাব
কমাতেও সাহায্য করে।
ব্রণের বিরুদ্ধে লড়াইঃ বিটরুট ব্রণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই
সবজিটিতে রয়েছে ভরপুর ভিটামিন সি, যা ত্বকের অতিরিক্ত তেল কমিয়ে ব্রণ
প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। বিট জুস বা রস ত্বকের ব্রণের দাগ, বলিরেখা ও
কালো ছোপ দূর করতে কাজে লাগে।
পিগমেন্টেশন কমায়ঃ বিটরুট ত্বকে পিগমেন্টেশন কমায়। এতে প্রচুর
পরিমানে ভিটামিন সি রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিটামিন সি মেলানিন
উৎপাদন কমায়। হাইপারপিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ট্যান অপসারণ করেঃ রোদে পোড়া কালো দাগ কমাতে বিটরুট বেশ কার্যকরী।
ট্যান ত্বককে নিস্তেজ এবং অস্বাস্থ্যকর করে তোলে। বিটরুটের রস হল একটি
‘পাওয়ার হাউস’। এটি বিবর্ণ ত্বককে একটি উজ্জ্বল রঙ দেয়।
অ্যান্টি-এজিংঃ বিটরুটে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার রয়েছে । সেই সাথে
বিটেইন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। যার ফলে এর রস ত্বকের প্রদাহ কমাতে
পারে। বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
রূপচর্চায় বিটরুটের ব্যবহার
রূপচর্চার বিটরুটের ব্যবহারের কথা উঠলে কেউ হেসে উড়িয়ে দেবেন না। এখনকার
দিনে প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে রুপচর্চাকে সারা বিশ্বেই প্রাধান্য দেওয়া
হচ্ছে। এক গাদা মেকআপের আবরণে নিজেকে ঢেকে না রেখে সুস্থ, সুন্দর, সজীব
ত্বকের জয়জয়কার এখন সারা বিশ্বে। আর সঙ্গে বাড়তি পাওনা হিসেবে যদি ঘন,
ঝলমলে এক ঢাল চুল থাকে, তবে তো আর কথাই নাই।
রূপচর্চায় বিটের ব্যবহার হচ্ছে প্রাকৃতিক স্কিন কেয়ার ও হেয়ার কেয়ারের
পণ্যগুলোয়। আবার বিটে প্রাকৃতিক লাল রঞ্জক পদার্থ থাকায় ত্বক ও ঠোঁট
রাঙাতেও অনেক মেকআপ কোম্পানি বিট চূর্ণ ব্যবহার করছে। আমাদের স্বাভাবিক
ত্বক, রূপলাবণ্য আর চুলের বাহারকে আরও সুন্দর ও মোহনীয় করে তুলতে বিটের
ব্যবহারগুলো দেখে নেওয়া যাক।
ত্বক ও চুলের যত্নেঃ ভেতর থেকে পরিচ্ছন্ন, সুস্থ,
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও নীরোগ ত্বক আর চুলই সুন্দর দেখায়। নয়তো শুধু
সৌন্দর্যবর্ধকসামগ্রী আর প্রসাধনী কোনো কাজে আসে না। এই নাগরিক জীবনে
পরিবেশদূষণ, খাদ্যে ভেজাল, অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ
ইত্যাদি কারণে আমাদের ভেতরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন টক্সিন ও ফ্রি র্যাডিক্যাল
তৈরি হচ্ছে। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়ে দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া, ত্বক ও চুলের
রূপলাবণ্য হারিয়ে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়া—সবকিছুর জন্য এসব বিষাক্ত অবস্থা
অনেকাংশে দায়ী বলে ধরা হয়।
তাই ভেতর থেকে আমাদের দেহমনকে বিশুদ্ধীকরণের জন্য প্রচুর
অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও ডিটক্সিফিকেশন করতে পারে এমন খাদ্য উপকরণ গ্রহণ করা
এখন খুবই প্রয়োজন। এই নিরিখে, বিটালাইন নামক ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসের খনি
বিটরুট আমাদের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখা উচিত। এ ছাড়া এর আঁশ ও পানি হজমে
সহায়তা করে বলে ত্বকে ব্রণ বা ফুসকুড়ি খুব কম ওঠে। এর ভিটামিন সি ত্বকের
এবং ফলিক অ্যাসিড চুলের যত্নে অনন্য। আবার বিটের গ্লুটাথিওন নামের
অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট লিভারের কার্যকারিতা ভালো রাখে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
বিটের এই অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট লিভারের সমস্ত ক্ষতিকর বাই প্রোডাক্টকে দূর
করতে সহায়তা করে। এতে ত্বকও ভালো থাকে।
বিট রুটের তেলঃ নারকেল তেলে বিটের নির্যাস মিশিয়ে তৈরি হয় বিট
এসেনশিয়াল ওয়েল। এই তেল চুলের গোড়া ও ত্বকে মেসেজ করে অনেক উপকার পাওয়া
যায়। এই তেল ব্যবহার করে প্রাকৃতিক সাবানও বানানো হয়।
বিটের স্কিন সিরামঃ বর্তমান যুগে স্কিন সিরাম রূপচর্চায় এক নতুন
দিগন্ত খুলে দিয়েছে। সিরামে প্রয়োজনীয় উপাদানটিকে বেশি পরিমাণে অবিকৃতভাবে
ত্বকে বা চুলে লাগানো হয়। বিটরুট দিয়ে বানানো স্কিন সিরাম বিশ্বব্যাপী এখন
খুবই জনপ্রিয়। বিটে আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন ও মিনারেল এত
ভালোভাবে আছে যে একে সিরাম তৈরি করার জন্য রূপবিশেষজ্ঞরা খুবই উপযোগী মনে
করেন। উজ্জ্বল ত্বক এবং বলিরেখা প্রতিরোধ করার জন্য বিটের সিরাম ব্যবহার
করা হয়। এতে ত্বকের দাগও দূর হয় বলে এই সিরাম ব্যবহারকারীরা মনে করেন।
বিটের ফেসপ্যাকঃ বিটের সঙ্গে চালের গুঁড়ো, দুধের সর, দই, গোলাপ জল
অথবা মুলতানি মাটির মতো ক্লে মাস্ক মিলিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকে টানটান ভাব ও
লাবণ্যময় আভা ফুটে ওঠে। বিটের ভিটামিন সি কোলাজেনের আধিপত্য বাড়িয়ে ত্বককে
সুস্থ-সুন্দর করে তোলে।
চুলের যত্নে বিটের রসঃ সরাসরি চুলের গোড়ায় নারকেল তেলে মিশিয়ে বিট
জুস মেসেজ করতে হয়। খুশকিমুক্ত, মজবুত গোড়াযুক্ত চুল পেতে এই মেসেজ অনেক
কার্যকর বলে অনেক স্যালন এক্সপার্ট মত দিয়ে থাকেন। চুল পড়াও কমে আসে বিট
ব্যবহারে।
টোনার হিসেবে ঠান্ডা বিট জুসঃ মেকআপ তোলার পর বা মুখ ধুয়ে একেবারে
রোমকূপ পর্যন্ত পরিষ্কার করতে ত্বকের জন্য টোনার ব্যবহার করা খুব উপকারী।
এই টোনার হিসেবে ঠান্ডা, ফ্রিজে রাখা বিট জুস তুলায় নিয়ে মুখ ও গলা–ঘাড়ে
লাগানো যায়। এতে ত্বক পরিষ্কার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোমকূপ পর্যন্ত প্রয়োজনীয়
ভিটামিনও পৌঁছে যায়।
ত্বক ও ঠোঁট রাঙাতে বিটঃ বিটের রং অপূর্ব! কার না মন চাইবে সেই রঙে
নিজেকে সাজাতে? বহু বছর ধরে বিখ্যাত ব্রিটিশ হারবাল স্কিন কেয়ার ও প্রসাধনী
কোম্পানি ‘দ্য বডি শপ’সহ আরও অনেকে বিটচূর্ণ ব্যবহার করে ব্লাশার, রোজ, লিপ
কালার, আইশ্যাডো বানায়। এমনকি আমরা নিজেরাই বিটের রস, গ্লিসারিন, শিয়া
বাটার ইত্যাদির সমন্বয়ে লিপবাম বানাতে পারি। শীতের এই শুষ্ক আবহাওয়ায় ঠোঁট
বিটের লিপবামের রঙে রাঙিয়ে বিটরঙা শাল জড়িয়ে বেরিয়ে পড়াই যায় কুয়াশাঘেরা
প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
বিটরুটের ফোলেট উপাদান উপকারী হতে পারে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য। কারণ এটির স্বাভাবিক লাল রক্ত কোষ এবং নির্দিষ্ট অ্যামিনো অ্যাসিডের জন্য অপরিহার্য। গর্ভাবস্থায় ফোলেট গ্রহণের একটি স্বাস্থ্যকর মাত্রা বজায় রাখা শিশুর স্নায়বিক জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি কমাতে পারে। বীটরুট বহু পুষ্টিকর উপাদান এবং এমন আরও কিছু উপাদানে ভরপুর যেগুলি ক্রমবর্ধিত ভ্রূণের জন্য সহায়ক। গর্ভাবস্থায় বীটরুট খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতাগুলির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হলঃ
১। বীটেরুটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ, যা গর্ভাবস্থায় লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে এবং অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে।
২। বীটরুটে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি আপনার অনাক্রম্যতার উন্নতি ঘটায় এবং গর্ভাবস্থায় সংক্রমণগুলি থেকে রক্ষা করে।
৩। গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি উচ্চ মাত্রায় থাকতে পারে বলে জানা যায়– যেটি হল এমন একটি অবস্থা যা আপনার হাড়কে দুর্বল এবং ভঙ্গুর করে দেয়।বীটের মধ্যে একটা ভাল অংশে সিলিকা এবং ক্যালসিয়াম আছে,যা আপনার হাড় এবং দাঁতকে শক্ত রাখে।
৪। বীট হল পটাসিয়ামে সমৃদ্ধ,সুতরাং আপনার ইলেক্ট্রোলাইটে ভারসাম্য আনতে এবং বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সেগুলি ভোজন করুন।এগুলি আবার গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ মাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবেও পরিচিত।
বিটরুটের ফোলেট, উপকারী হতে পারে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য, কারণ এটি স্বাভাবিক লাল রক্ত কোষ এবং নির্দিষ্ট অ্যামিনো অ্যাসিডের জন্য অপরিহার্য। গর্ভাবস্থায় ফোলেট গ্রহণের একটি স্বাস্থ্যকর মাত্রা বজায় রাখা শিশুর স্নায়বিক জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি কমাতে পারে।
যেহেতু বিটে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড থাকে, তাই এটি শিশুর স্নায়বিক ত্রুটি এবং বিকাশজনিত সমস্যাগুলির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তাই বিট ভ্রূণের সঠিক বিকাশ ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৫। বীটরুটের মধ্যে বিটেন নামক এক প্রকার প্রদাহ বিরোধী এজেন্ট উপস্থিত থাকে,যা গর্ভাবস্থায় জয়েন্ট বা সন্ধিগুলিতে প্রদাহ,ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
৬। বীট কম গ্লাইসেমিকযুক্ত খাদ্য হওয়ায় সেটি গ্লুকোজে রূপান্তরিত হতে এবং রক্তের মধ্যে শোষিত হতে বেশি সময় নেয়।এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৭। ফোলিক অ্যাসিডে সমৃদ্ধ বীটগুলি আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি এবং বিকাশকে উন্নীত করে।এটি আবার আপনার ছোট্টটির মেরুদণ্ডের উন্নতিতেও সহায়তা করে।
৮। বীটে উপস্থিত বিটাসায়ানিন আপনার যকৃৎ এবং রক্তকে বিষমুক্ত করে। এছাড়াও এটি আবার আপনার দেহ থেকে ফ্যাটি অ্যাসিড এবং বিষাক্ত পদার্থগুলিকে দূর করে একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করে।
৯। বীটরুটে থাকা ভিটামিন C উপাদানটি আয়রণ শোষণে সহায়তা করে এবং একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা ও প্রসবের পথ প্রস্তুত করে।
১০। ফোলিক অ্যাসিড স্বাস্থ্যকর কলার বৃদ্ধি এবং ভ্রূণের বিকাশকে প্ররোচিত করে।এটি আবার পিঠের মেরুদণ্ডের সর্বোত্তম বিকাশ সুনিশ্চিত করার দ্বারা স্পাইনা বিফিডার মত জন্মগত ত্রুটিগুলি প্রতিরোধও করে।
১১। গর্ভাবস্থায় শরীরে প্রচুর ফোলাভাব এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। বিটের ফাইবার শরীরকে কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে এবং নিয়মিত পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে
১২। বিট আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরের ক্লান্তি ও দুর্বলতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি নিরামিষাশীদের জন্য আয়রনের একটি দুর্দান্ত উৎস।
১৩। বিট রক্তচাপ কমানোর জন্য খুব ভালো কাজ করে এবং তার ফলে, গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে প্রি-ইক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি কমায়।
১৪। গর্ভাবস্থায় ওজন কমানো এবং ওজন বজায় রাখা উভয়ের জন্যই, ডায়েটে কাঁচা বা রান্না করা বিট অন্তর্ভুক্ত করা ভাল।
ত্বকের যত্নে বিটরুটের ফেসমাস্ক
ত্বকের যত্নে বিটরুটের ফেসমাস্ক শীতকালে ত্বকের একটু বাড়তি যত্ন নিতে ব্যবহার
করতে পারেন। কারণ তাপমাত্রা যত কমে যায় ত্বকের আর্দ্রতা তত বাড়ে। ফলে ভেতর থেকে
নিষ্প্রাণ আর নিস্তেজ হয়ে যায় ত্বক, হারায় লাবণ্য। শীতে ত্বকের যত্নে অনেকে
ভরসা রাখেন বাজারচলিত বিভিন্ন প্রসাধনীর ওপর। হাতের কাছে থাকা একটি উপাদান
দিয়েই কিন্তু ঘরোয়া উপায়ে রূপচর্চা করতে পারেন আপনি। বলছিলাম শীতের সবজি
বিটরুটের কথা। ত্বকের হারানো লাবণ্য ফেরাতে ভরসা রাখতে পারেন এই সবজিতে। কীভাবে
ব্যবহার করবেন চলুন জানা যাক-
বিট ও দইঃ ত্বক ভিতর থেকে আর্দ্র রাখতে বিট ও দই, দুটো উপাদানই বেশ
কার্যকর। ত্বক সুস্থ রাখতে এই দুটো উপাদান ব্যবহার করতে পারেন। বিট বেটে নিয়ে
এর সঙ্গে মিশিয়ে নিন অল্প টক দই আর কাঠবাদাম তেল। এই মিশ্রণ ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০
মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দ্রুত ত্বকে পরিবর্তন
আসবে।
বিট ও কমলালেবুর খোসাঃ ত্বকে চটজলদি জেল্লা আনতে ব্যবহার করুন বিট। এর
সঙ্গে কমলালেবুর খোসা মিশিয়ে বানিয়ে নিন ফেসপ্যাক। কমলালেবুর খোসা শুকিয়ে
গুঁড়ো করে বিটের রসের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এরপর সেটি ত্বকে মাখুন। শুকিয়ে এলে
ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ দিন এই ফেসপ্যাক মাখতে পারেন।
বিট ও গাজরঃ ত্বককে ভেতর থেকে ফর্সা করতে বিট ও গাজরের জুড়ি মেলা ভার।
সমপরিমাণ বিট ও গাজরের রস নিয়ে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ তুলোয় ভিজিয়ে সারা
মুখে মাখুন। ১০-১৫ মিনিট রাখুন। শুকিয়ে এলে ধুয়ে ফেলুন। কয়েক দিনেই নজরকাড়া
পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
বিটের রস, দুধ ও অলিভ অয়েলঃ ১ টেবিল চামচ বিটের রস, ২ টেবিল চামচ দুধ ও
২-৩ ফোঁটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে নিন। বিটের মাস্কটি ১০ মিনিট রেখে
ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ত্বককে উজ্জ্বল করার পাশাপাশি
আর্দ্রতাও জোগাবে।
বিটের রস ও মুলতানি মাটিঃ গরম বা বর্ষার সময় উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায়
কারও কারও ত্বক তেলতেলে হয়ে যায়। কারও আবার ত্বক তৈলাক্ত হয়। ২ টেবিল চামচ
মুলতানি মাটির সঙ্গে ৩ টেবিল চামচ বিটের রস ভাল করে মিশিয়ে মুখে মাখতে হবে।
মিশ্রণটি শুকিয়ে গেলে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে হালকা হাতে মাসাজ করে মাস্কটি তুলে ফেলতে
হবে। ত্বক শুষ্ক লাগলে ময়েশ্চারাইজ়ার মেখে নিতে পারেন।
বিটের রস ও টক দইঃ ৩ টেবিল চামচ টক দইয়ের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ বিটের রস
মিশিয়ে মুখে মাখতে হবে। ১০-১৫ মিনিট পর জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। শুষ্ক
ত্বক বা সাধারণ ত্বকে এই মাস্ক ভাল কাজ করবে। রুক্ষতা দূর করতে, সূর্যের
ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাবে মুখ কালো হয়ে গেলে, এই ফেস মাস্ক বিশেষ কার্যকর।
বিটের রস ও চালের গুঁড়োঃ ২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়োর সঙ্গে ৩ চামচ
বিটের রস ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। ত্বকের জন্য বিটের রস যেমন উপকারী তেমন
চালের গুঁড়োরও অনেক গুণ। দুই উপাদানের মিশ্রণ ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ফেরাতে
সাহায্য করবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২ মিনিট হালকা হাতে মাসাজ করে রেখে দিতে
হবে। মিনিট দশেক পরে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
কমলালেবুর খোসার গুঁড়োঃ ২ চা চামচ কমলালেবুর খোসার গুঁড়োর সঙ্গে ২
টেবিল চামচ বিটের রস মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে ফেলুন। মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে
ধুয়ে ফেলুন। তবে ত্বকের জেল্লা ধরে রাখতে শুধু রূপচর্চা নয়, পুষ্টিকর
খাদ্যগ্রহণও জরুরি। বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে,
বলিরেখা কমাতে ও ত্বক টান টান করে তুলতে সাহায্য করে। বিটের রস মাখার পাশাপাশি,
সেই রসে চুমুক দিলে শরীরও ভাল থাকবে।
অতিরিক্ত বিটের রস পান করলে যেসব ক্ষতি হতে পারে
অতিরিক্ত বিটের রস পান করলে যেসব ক্ষতি হতে পারে বলে আপনারা অনেকেই জানতে
অগ্রহী।স্বাস্থ্যকর সবজির মধ্যে অন্যতম হলো বিট। সালাদের সঙ্গে বিট খাওয়া খুব
ভালো। অনেকে আবার মিহি করে কুচিয়ে রান্না করে খেতে ভালোবাসেন। বিটরুটের রস
ভিটামিন, আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিডের চমৎকার উৎস, যা লাল রক্তকণিকার উৎপাদন
বাড়ায়, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ও কোষে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়।
বিটে আয়রন থাকায় চিকিৎসকেরা শরীরে রক্তের অভাব মেটাতে বিট খাওয়ার পরামর্শ
দেন। অনেকে বিটের জুস করে খান। অতিরিক্ত বিটরুটের রস পান করা শরীরের পক্ষে
মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিটের অনেক উপকারিতা থাকলেও এর
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, যার জন্য অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। পরিমিত
খেতে হবে এবং কিছু ক্ষেত্রে পরিহার করতে হবে। এটা জেনে নেওয়া ভালো, কাদের জন্য
বিট খারাপ।
বিটুরিয়াঃ খাবারে বিট বা বিটযুক্ত রঙিন খাবার খাওয়ার পরে অনেকের লাল বা
গোলাপি রঙের প্রস্রাব হয়ে থাকে, এমন প্রস্রাব হওয়াকে বলা হয় বিটুরিয়া। যাঁদের
শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে, তাঁদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা গিয়েছে। তাই
আয়রনঘাটতির সমস্যা থাকলে বিট খাওয়ার পরে যদি প্রস্রাবের রং লাল বা গোলাপি হয়,
তাহলে বিট খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
কিডনিতে পাথরঃ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে বিট অক্সালেটসমৃদ্ধ এবং
কিডনিতে পাথর হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। বিট ইউরিনারি অক্সালেট নিঃসরণ
বাড়ায়, যা শরীরে ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথরের বিকাশ ঘটাতে পারে। তাই যাঁরা
কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের বিট বা বিটের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে
হবে।
অ্যানাফিল্যাক্সিসঃ অতিরিক্ত বিটরুট খাওয়ার ফলে অ্যানাফিল্যাক্সিস হতে
পারে। যার ফলে শরীরে তীব্র অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। ত্বকে লাল র্যাশ,
চুলকানি, ফুলে যাওয়া, হাঁপানি, আমবাত, গলা শক্ত হওয়া এবং ব্রঙ্কোস্পাজম হতে
পারে। তাই যাঁদের অতিরিক্ত অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে, তাঁরা বিট পরিহার করতে
পারেন, পরিমিত বিট খেয়ে দেখতে পারেন।
পেটের সমস্যাঃ বিট খেলে মলের রং পরিবর্তন হতে পারে, এটা স্বাভাবিক বিষয়।
অনেকের বিট খাওয়ার পরে কালো ও ট্যারি মলও বিটুরিয়ার লক্ষণ হতে পারে। অনেকের
পেট খারাপ হয়ে যায়। পেট খারাপ হওয়ার কারণ বিটরুটে নাইট্রেট থাকে। ইউএস
ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেসের একটি প্রকাশনা অনুসারে,
শরীরে উচ্চমাত্রার নাইট্রেটের কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে। তা ছাড়া, বিটের
জুসপানের ফলে কেউ কেউ পেটের রোগে ভুগতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় বিট খাওয়া উচিত নয়ঃ বিটে নাইট্রেট থাকে। এ উপাদান গর্ভবতী
মহিলাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক হতে পারে। গর্ভাবস্থায় অত্যধিক নাইট্রেট
গ্রহণের ফলে এনার্জির অভাব দেখা দিতে পারে, সেই সঙ্গে মাথাব্যথা ও মাথাঘোরাতে
পারে এবং অনেকের চোখ, মুখ, ঠোঁট, হাত ও পায়ের চারপাশের ত্বকের রং নীল বা ধূসর
হয়ে যেতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় বিট না খাওয়া উত্তম।
ভোজনরসিকদের লিভারের ক্ষতি হতে পারেঃ যাঁরা ভোজনরসিক, লিভার দুর্বল করে
ফেলেছেন, যার দরুন সমস্যা দেখা দিয়েছে, তাঁদের পরিমিত বিট খেতে হবে। গবেষকদের
মতে, অত্যধিক বিটরুট ভোজনের ফলে লিভারে ধাতব আয়রন জমা হতে পারে, যা লিভারের
মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। অথচ লিভারের জন্য বিট ভালো কিছু, যদি পরিমাণ ঠিক
থাকে।
ক্যালসিয়াম ঘাটতি রয়েছে যাঁদেরঃ ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত গবেষণার রিপোর্ট
অনুসারে, অত্যধিক বিটরুটের রস শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা হ্রাস করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব মহিলার শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কম থাকে, তাঁদের
অত্যধিক বিটরুটের রস বা বিট না খাওয়া ভালো।
ভালো খাবারের পরিমাণগত বিষয়টি না মানা হলে ক্ষতির কারণ হতে পারে। এসব বিষয় জানা
থাকলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। মানুষ অনেক সময় বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
ফলে সচেতনতা জরুরি।
ডায়াবেটিক রোগীদের বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
ডায়াবেটিস রোগীদের বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ব্যপক এবং দুর্দান্তভাবে কাজ করে।
কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য
প্রতিদিন বিটরুট খাওয়ার সুপারিশ করা হয় না। তবে প্রাকৃতিক শর্করার কারণে
পরিমিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, সপ্তাহে কয়েকবার প্রায় আধা কাপ থেকে এক
কাপ রান্না করা বা কাঁচা বিটরুট যুক্ত করা উপকারী হতে পারে। ডায়াবেটিসের জন্য
বিটরুটের উপকারিতা নিচে দেওয়া হলোঃ
১. ব্লাড সুগার কমায়ঃ যদিও বিটরুটে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে, তবে তারা
দ্রুত গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয় না। সবজিটি ফাইবার, পটাসিয়াম এবং ফোলেট সমৃদ্ধ
যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো। এর ফাইটোকেমিক্যাল গুলি রক্তের গ্লুকোজ এবং
ইনসুলিনের উপর একটি নিয়ন্ত্রণকারী প্রভাব ফেলে। এই সবজির জুস ডায়াবেটিসের
জন্য অত্যান্ত উপকারী কারণ এতে রয়েছে বেটালাইন এবং নিও বেটানিন পুষ্টি যা
গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
২. ডায়াবেটিসের জটিলতা কমায়ঃ ডায়াবেটিস, কিডনি ফেইলিওর এবং হার্ট
অ্যাটাকের মতো স্বাস্থ্যগত জটিলতার কারণ হতে পারে। বিটরুটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ডায়াবেটিস থেকে জটিলতার ঝুঁকি কমাতে পারে
যার মধ্যে রয়েছেঃ
- নিউরোপ্যাথি
- হৃদরোগের
- রেটিনোপ্যাথি
- কিডনি রোগ
- অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে
বিটরুটে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা সেলুলার ক্ষতির কারণ ফ্রি
র্যাডিক্যাল কমাতে সাহায্য করে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ঘটে যখন ফ্রি র্যাডিকেল
এই ধরনের ক্ষতি করে। বিটরুট অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের ঝুঁকি কমায় এবং এইভাবে রোগ
প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ক্যান্সারের মতো অবস্থার দিকে
পরিচালিত করে হৃদরোগ.মধ্যে কিছু যৌগবীটরুটবিভিন্ন স্বাস্থ্য অবস্থার কারণ হতে
পারে যে প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে
৩. রক্তচাপ কমায়ঃ বিশেষ করে বেশিরভাগ মানুষ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই মূল সবজি বা এর
রস আপনার রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। বীটরুটে রয়েছে নাইট্রেট যা রক্তনালীগুলি প্রশস্ত করে এবং রক্ত প্রবাহকে উন্নীত করে।
সুতরাং, আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তবে এটি রক্তচাপ হ্রাস করে। এই মূল
সবজির রস আপনার সিস্টোলিক রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে।
৪. রক্ত সঞ্চালন উন্নত করেঃ ডায়াবেটিস রক্তনালীর ক্ষতি হতে পারে। এটি রক্ত জমাট বাঁধতে পারে এবং রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত করতে পারে। এই কারণেই এর মূল ও শাক ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত সুপারিশ করা হয়। এটি শরীরে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে। মধ্যে নাইট্রেটবীটরুটরক্তনালীকে সাহায্য করে এবং রক্ত প্রবাহকে উন্নীত করে
৫. স্নায়ু ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাসঃ নার্ভ ড্যামেজ ডায়াবেটিসের অন্যতম
লক্ষণ। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ এন্ডোক্রিনোলজিতে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনা
থেকে জানা যায় যে বিটরুটে পাওয়া আলফা-লাইপোইক অ্যাসিড নামে এক ধরনের
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্নায়ুর ক্ষতি কমিয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের সাহায্য করে।
বীটরুটে উচ্চ নাইট্রেট উপাদান ডায়াবেটিস রোগীদের জ্ঞানীয় কার্যকারিতা উন্নত
করতে পারে।
৬. ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধিঃ বিটরুট জুস ডায়াবেটিসে আক্রান্ত
ব্যক্তিদের মধ্যে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে। এটি রক্তে গ্লুকোজের
মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। বিটরুটে উপস্থিত কিছু বিপাক ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা
কমাতে পারে। একটি গবেষণা অনুযায়ী, সেবনকারী বীটরুট কার্বোহাইড্রেটের সাথে যারা
স্থূল ছিল তাদের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আরেকটি সমীক্ষা যে থাকার
রিপোর্ট বীটরুট খাওয়ার সময় জুস স্বাস্থ্যকর ব্যক্তিদের খাবারের পরে কম
গ্লুকোজ এবং ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া ছিল।
৭. ব্যায়াম করার ক্ষমতা উন্নত করেঃ শারীরিক কার্যকলাপ আপনার
শরীরকে ইনসুলিনের প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে। এটি আপনাকে ডায়াবেটিস আরও
ভালভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করে। এটি রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা
করে এবং স্নায়ুর ক্ষতি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য
ব্যায়াম করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ঝুঁকিতে বেশি।
মদ্যপানবীটরুটরস আপনার পেশীর অক্সিজেন ব্যবহার করার ক্ষমতা উন্নত করে
ব্যায়ামের সহনশীলতা বাড়ায়৷
বিটরুটের উপকারিতা সম্পর্কে শেষকথা
বিট হলো বহুমুখী এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সবজি যা বিস্তৃত পরিসরে স্বাস্থ্য
উপকারিতা প্রদান করে। হার্টের স্বাস্থ্য এবং অ্যাথলেটিক পারফরম্যান্সের উন্নতি
থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং হজমকে সমর্থন করা পর্যন্ত, বীট যে
কোনও ডায়েটে একটি মূল্যবান সংযোজন। আপনি লাল বা সোনালি বীট বেছে নিন না কেন,
আপনার খাবারে এগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা আপনার সামগ্রিক সুস্থতাকে
উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এই রস দারুণ কাজ করে। এছাড়া যাদের কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের
সমস্যা রয়েছে, হাড়ে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি রয়েছে তাদের নিয়মিতই বিটরুটের রস খাওয়া
প্রয়োজন। তাই যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তারা বিটরুট খাদ্যতালিকায় রাখতে চাইলে অবশ্যই
চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেবেন। আশা করছি বিটের উপকারিতা, খাওয়ার
নিয়ম ও এর পুষ্টিগুন জানতে সক্ষম হয়েছেন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url