শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা
আজকের এই আর্টিকেলে আমি চেষ্টা করবো শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, কারণ এবং
প্রতিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করতে। এতে সঠিক
সময়ে আপনি ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন। সাধারণভাবে ডেঙ্গু
জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের লক্ষণ বড়দের মতোই হয়ে থাকে।
প্রথমেই আমাদের জানা প্রয়োজন এডিস মশা কামড়ালেই কি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়
কিনা। সাধারণত ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার কামড়ে একজন সুস্থ ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গুর
ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এবং এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নানা
ধরণের উপসর্গ দেখা দেয়।
স্ত্রী এডিস মশা ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে। সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে সুস্থ
ব্যক্তিতে এই ভাইরাস ছড়াতে থাকে। তবে শিশুর জ্বর মানেই যে সেটা ডেঙ্গু এমনটা
ভাবার কোন কারণ নেই। অবশ্য চারিদিকে যেহেতু ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, তাই এই সময়ে
শিশুর জ্বর এলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। ডেঙ্গু রোগের
লক্ষণ আগের চাইতে এখন অনেকটাই বদলে গেছে।
পেইজ সূচিপত্রঃ শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা
- শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
- ডেঙ্গুজ্বরের প্রকারভেদ ও ধরণ
- শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
- ডেঙ্গু জ্বর যেভাবে ছড়ায়
- শিশুর ডেঙ্গু হয়েছে নাকি সাধারণ সর্দিজ্বর কীভাবে বুঝবো
- শিশুদের ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয়
- ডেঙ্গুজ্বর শনাক্ত করন পরীক্ষা
- ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে সচরাচর প্রশ্ন
- শিশুর হঠাৎ জ্বর হলে করনীয়
- ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া চিকিৎসা
- শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে শেষকথা
শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলি সাধারণত মশার কামড়ের ৪ থেকে ১০ দিন পরে
দেখা যায়। শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চ জ্বর,
মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা এবং ফুসকুড়ি। এই লক্ষণগুলি ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর
নির্দেশ করতে পারে, যা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে সেকেন্ডারি
ইনফেকশনের সময়। গুরুতর ডেঙ্গু প্রায় ৫% ক্ষেত্রে প্রভাবিত করে এবং অবিলম্বে
চিকিৎসা না করলে শক, অভ্যন্তরীণ রক্তপাত, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের প্রাথমিক কিছু লক্ষণের কথা তুলে ধরা হলোঃ
আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ
১. ডেঙ্গু যেহেতু ভাইরাসজনিত রোগ, তাই এই রোগে জ্বরের তাপমাত্রা
সাধারণত ১০১, ১০২ ও ১০৩ ডিগ্রী ফারেনহাইট হতে পারে। তবে ডেঙ্গু হলেই যে তীব্র
জ্বর থাকবে, এমনটা নয়। জ্বর ১০০ এর নীচে থাকা অবস্থাতেও অনেক শিশুর ডেঙ্গু
শনাক্ত হয়েছে।
২. জ্বর নেমে গেলে শরীরের তাপমাত্রা অনেক কমে যাবে (৯৬.৮° ফারেনহাইট বা
তারও কম)
৩. শিশুর মধ্যে স্বাভাবিক চঞ্চলতা থাকে না, শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়ে,
অযথা কান্নাকাটি করে।
৪. শিশু অতিরিক্ত ঘুমাবে এবং খুব খিটখিটে মেজাজে থাকবে, খেতে চাইবে না।
৫. ঝিমুনি ভাব, অসংলগ্ন কথাবার্তা, খিঁচুনি।
৬. শোয়া বা বসা থেকে উঠতে গেলে মাথা ঘুরানো কিংবা ঝিমঝিম ভাব।
৭. শিশুর মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, কিছুই খেতে চায় না।
বমি বমি ভাব হয় বা কিছু খেলেই বমি করে দেয়।
৮. ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে শিশুর প্রস্রাব না হওয়া ডেঙ্গুর মারাত্মক
লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি।
৯. শরীরে লালচে র্যাশ দেখা দিতে পারে।
১০. মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, পেটে ব্যথা হতে পারে।
১১. হতে পারে পানি শূন্যতা এবং পাতলা পায়খানাও।
১২. চোখ লাল হয়ে যাওয়া, কাশি বা শ্বাসকষ্ট হওয়া। এটা মূলত
অ্যাফেব্রাইল স্তরে বেশি হয়ে থাকে।
১৩. পরিস্থিতি গুরুতর হলে অর্থাৎ ডেঙ্গুর কারণে শিশুর শকে যাওয়ার
অবস্থা হলে তার পেট ফুলে যেতে পারে, শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে
পারে। যেমন রক্তবমি, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি।
ডেঙ্গুজ্বরের প্রকারভেদ ও ধরণ
ডেঙ্গুজ্বরকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথমটি হলো ফেব্রাইল, অর্থাৎ জ্বরের
ফেইস, যা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হয়। এ ক্ষেত্রে তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায়। ২
থেকে ৫ দিনের মধ্যে শরীরের বেশিরভাগ অংশে লাল ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।
দ্বিতীয়টি হলো ক্রিটিক্যাল ফেইস, যা ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা স্থায়ী থাকে। এ সময়টাতে
জ্বর খুব একটা থাকে না, কিন্তু রোগী ক্লান্ত হয়ে যায়। রক্তকণিকার মধ্যে
শ্বেতকণিকা ও অনুচক্রিকা কমে যায়। হেমাটোক্রিট (রক্তের হিমোগ্লোবিনের ঘনত্ব)
বেড়ে যায়। তৃতীয় ও শেষটি হলো কনভালোসেন্ট বা রোগ থেকে উন্নতি হওয়ার পর্যায়।
ফেব্রিল ফেজঃ প্রাথমিক পর্যায়ে উচ্চ জ্বর (প্রায় ৪০ ডিগ্রি
সেলসিয়াস) এবং ফ্লুর মতো উপসর্গ অন্তর্ভুক্ত থাকে। শিশুরা গুরুতর মাথাব্যথা,
গলা ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, জয়েন্ট এবং পেশী ব্যথা, ফুসকুড়ি, বমি বমি
ভাব এবং বমি অনুভব করতে পারে। জ্বর শুরু হওয়ার ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে একটি
সাধারণ ব্লাঞ্চেবল ম্যাকুলার ফুসকুড়ি বা ত্বকের ইরিথেমা দেখা দেয়।
ক্রিটিক্যাল ফেজঃ ক্রিটিক্যাল ফেজ চলাকালীন, সাধারণত ৩ থেকে ৭
দিনের মধ্যে তাপমাত্রা ৩৭.৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়। এই
পর্যায়টি বর্ধিত কৈশিক ব্যাপ্তিযোগ্যতা হিসাবে প্রকাশ পায়, যা ৩ থেকে ৭ দিন
স্থায়ী হয়। পিতামাতার উচিত প্লেটলেট সংখ্যার দ্রুত হ্রাস এবং হেমাটোক্রিটের
মাত্রা বৃদ্ধির দিকে নজর রাখা উচিত।
কনভালোসেন্ট বা পুনরুদ্ধারঃ এই পর্যায়টি শুরু হয় যখন জ্বর কমে
যায় এবং প্রায় ২-৩ দিন স্থায়ী হয়। এই চূড়ান্ত পর্যায়ে ফাঁস হওয়া
তরলগুলির ধীরে ধীরে পুনঃশোষণ জড়িত, যা লক্ষণগুলির উন্নতির দিকে পরিচালিত
করে। যাইহোক, শিশুর যাতে জটিলতা না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য সতর্ক
পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
*ডেঙ্গুজ্বরের ধরণ
মানুষের মধ্যে সাধারণত তিন ধরনের ডেঙ্গু জ্বর হয়- ক্ল্যাসিকাল হেমোরেজিক এবং
শক সিন্ড্রোম। আক্রান্ত ব্যক্তি এ সময় মাত্রাতিরিক্ত ঘামা শুরু করে। এতে তার
মধ্যে এক ধরনের ছটফটানিও আরম্ভ হয়। কেউ কেউ বমি করে বা তাদের বমি বমি ভাব
হয়। এই সময়টায় কোনো কোনো রোগীর হোয়াইট ব্লাড সেল স্বল্পতা,
ইলেক্ট্রোলাইটের অসমতা, লিভারে সমস্যা, অথবা ব্রেনে রক্তক্ষরণের মতো ঘটনা
ঘটে। এতে তাদের শকে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। দুঃখজনক হলো, এর ফলে অনেক রোগীর
মৃত্যুও হতে পারে।
১। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরঃ ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত
তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত
হয়। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা
হয়। এ ছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়। অনেক সময় ব্যথা এত তীব্র হয় যে
মনে হয় হাঁড় ভেঙে যাচ্ছে। তাই এই জ্বরের আরেক নাম 'ব্রেক বোন ফিভার'। জ্বর
হওয়ার চার বা পাঁচদিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়। যাকে বলা হয়
স্কিন র্যাশ, অনেকটা অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব এমনকি
বমি হতে পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং রুচি কমে যায়।
২। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরঃ এই অবস্থাটা সবচেয়ে জটিল। এই জ্বরে
ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরো যে সমস্যাগুলো হয়
শরীরে বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। অনেক সময় বুকে ও পেটে পানি আসার
মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস এবং কিডনি
আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউরের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।
৩। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমঃ ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হলো ডেঙ্গু শক
সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সঙ্গে সার্কুলেটরি ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক
সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণ হলো রক্তচাপ হঠাৎ কমে যায়, শরীর, হাত-পা ও অন্যান্য
অংশ ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।। হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে, এমনকি মৃত্যু
পর্যন্ত হতে পারে।
শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা অনেকটা ডেঙ্গুজ্বরের ধরনের উপর নির্ভর করে।
কেউ এ জ্বরে আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে অনেকটা দুর্বল হয়ে যায়। আর তাই জ্বর
আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরে
বাড়িতেই বিশ্রামের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে জ্বর কমানোর জন্য বয়স ও
ওজন অনুযায়ী প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। আর শিশুদের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে তরল
খাবার খাওয়ানোর কথা বলা হয়।
- ডেঙ্গু জ্বরের সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। ২ থেকে ৭ দিনের মাঝে সাধারণ ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে। প্রায় ৮৫ শতাংশ ডেঙ্গু জ্বর থাকে সাধারণ মাত্রার, যা বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানো সম্ভব। যেমন–জ্বর লাঘবে প্যারাসিটামল। এসপিরিন বা এই জাতীয় ওষুধ কখনোই জ্বর নিবারণে ব্যবহার না করা। পরিপূর্ণ বিশ্রাম। বেশি বেশি তরল খাবার ও পানীয় পান।
- শিশুর জ্বর হওয়ার প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রথম দিককার সাধারণ উপসর্গাদি দেখে ‘মৌসুমি জ্বর’ ভেবে অভিভাবকেরা সময়ক্ষেপণ করেন।
- জ্বর সম্পূর্ণ চলে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার পরে রোগী বেশি অসুস্থতা অনুভব করলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
- পর্যাপ্ত চিকিৎসায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার ১ শতাংশ। কিন্তু শক দেখা দিলে তা বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হয়।
- রোগের জটিলতা থেকে পরে চুল পড়ে যাওয়া, হতাশা, ট্রান্সভার্স মাইলাইটিস ও গিয়েন-বারির মতো স্নায়ুরোগের ঝুঁকি থাকে।
- এখনো বৈশ্বিকভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায় ডেঙ্গু মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে পদক্ষেপ নেওয়া। শিশুকে ফুল শার্ট, ফুল প্যান্ট ও মোজা পরানো। দিনের বেলায়ও মশারি খাটিয়ে ঘুমানো উচিত।
ডেঙ্গু জ্বর যেভাবে ছড়ায়
ডেঙ্গু জ্বর কিভাবে ছড়ায় এ সম্পর্কে আমরা অনেকেই ভালো করে জানিনা। ডেঙ্গু
একটি মশাবাহিত রোগ, ডেঙ্গু মূলত এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত এই মশা
ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ালে সেটিও ডেঙ্গু ভাইরাসে
আক্রান্ত হয়। পরবর্তীতে ভাইরাসবাহী মশা অপর কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে
সেই ব্যক্তির রক্তেও ডেঙ্গুর জীবাণু প্রবেশ করে। ডেঙ্গু জ্বর হলো এক
ধরনের ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ।
উল্লেখ্য, ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী নারী থেকে তার গর্ভের শিশুতে
এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। এক্ষেত্রে শিশু গর্ভে থাকা অবস্থাতে অথবা জন্মের
সময়ে আক্রান্ত হতে পারে। এই ভাইরাস গর্ভের শিশুর ওপর নানান ধরনের বিরূপ
প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্মগ্রহণ করা,
স্বাভাবিকের তুলনায় কম ওজন নিয়ে জন্মানো এবং গর্ভাবস্থাতেই শিশুর মৃত্যু
হওয়া।
জেনে রাখা ভালো, ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করলে ভাইরাসগুলো রক্তের
অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেট ধ্বংস করতে পারে। প্লাটিলেটের অভাব হলে শরীরের
বিভিন্ন জায়গায় রক্তপাত শুরু হতে পারে। এর পাশাপাশি ভাইরাসের কারণে
রক্তনালী থেকে রক্তরস বা প্লাজমা বাইরে বেরিয়ে যায়। ফলে শরীরে মোট রক্তের
পরিমাণ কমে যায় এবং রক্ত ঘন হয়ে যায়। সেই সাথে শরীরের প্রতিরক্ষা
ব্যবস্থায় খুব অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে।
ডেঙ্গু হলে মূলত এসব কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি
হয়। ফলে খুব অল্প সময়েই রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এই অবস্থায় অতি
দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।
শিশুর ডেঙ্গু হয়েছে নাকি সাধারণ সর্দিজ্বর কীভাবে বুঝবো
শিশুর ডেঙ্গু হয়েছে নাকি সাধারণ সর্দিজ্বর কীভাবে বুঝবো এই প্রশ্নটা
অনেকেই করেছেন। এখন শিশুরা দুই ধরনের জ্বরে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
ডেঙ্গু তো আছেই সঙ্গে বাচ্চাদের ঠান্ডা, কাশি, সর্দিজ্বর যেটাকে আমরা
'ফ্লু' বলি। সাধারণত ডেঙ্গুতে আগে জ্বর আসে, শিশুর শরীর দুর্বল হয়ে
যায়, খেতে পারে না, গা,হাত-পা ব্যথা করে। ডেঙ্গু হলে শুরুতেই
ঠান্ডা-সর্দি-কাশি থাকে না। প্রথমে প্রচণ্ড জ্বর হবে, ১০২-১০৩ ডিগ্রির
মতো। জ্বর নামতে চাইবে না তার সঙ্গে দুর্বলতা, চোখে ব্যথা, হাত পা
ব্যথা হয়।
অন্যদিকে মৌসুমী জ্বরে আগে হাঁচি-কাশি-সর্দি শুরু হয়। তারপর জ্বর আসে।
সর্দি-জ্বর হলেও শিশুর হাত-পা ব্যথা করে কিন্তু সেটা হয় মূলত জ্বরের
কারণে। জ্বর মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে এলে শিশুও সুস্থবোধ করতে থাকে। সর্দি
জ্বর হলে জ্বরটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। কিন্তু ডেঙ্গু হলে শিশু অসুস্থবোধ
করে অনেক বেশি। ফ্লু হলে শিশুর চোখ খুব একটা লাল হয় না। কিন্তু
ডেঙ্গুতে শিশুর চোখ লাল হয়ে যায়। সাধারণত ফ্লু হলে বাসার সবার একসাথে
হয়
সাধারণ জ্বরের লক্ষণ
- শরীরের তাপমাত্রায় হালকা থেকে মাঝারি বৃদ্ধি
- মাথা ব্যথা এবং শরীর ব্যথা
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
- ঠান্ডা এবং ঘাম
- গলা ব্যথা এবং কাশি
- সর্দি বা নাক বন্ধ
- হালকা বমি বমি ভাব বা বমি
- ক্ষুধামান্দ্য
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
- উচ্চ জ্বর (সাধারণত ২-৭ দিন স্থায়ী)
- গুরুতর মাথাব্যথা, বিশেষ করে চোখের পিছনে
- জয়েন্ট এবং পেশী ব্যথা
- ত্বকের ফুসকুড়ি (সাধারণত চতুর্থ বা পঞ্চম দিনে দেখা যায়)
- নাক বা মাড়ি থেকে হালকা রক্তপাত
- সহজ কালশিরা
- পেটে ব্যথা এবং বমি
- ক্লান্তি ও অস্থিরতা
শিশুদের ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয়
শিশুদের ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ সম্পূর্ণ নির্ভর করে জীবাণুবাহী মশা নিয়ন্ত্রণ
এবং তার কামড় থেকে সুরক্ষার উপর। মূলত এডিস মশার কামড় এড়িয়ে চলাই ডেঙ্গু
প্রতিরোধের প্রধান উপায়। ডেঙ্গু মশাবাহিত রোগ। সাধারণত বর্ষাকালে এর প্রকোপ
বেড়ে যায়। তবে কয়েক বছর ধরে শুধু বর্ষাকালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই এডিস মশার
আক্রমণ। বছরের অনেকটা সময় জুড়েই থাকছে ডেঙ্গু জ্বর।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা অনেক বেশি। শিশুদের
ডেঙ্গু সুরক্ষা মূলত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার উপর নির্ভরশীল। তাই আপনার
শিশুকে প্রাণঘাতী এই রোগ থেকে রক্ষা করতে হলে মেনে চলতে হবে কিছু বিষয়। তাই
মশার আবাসস্থল ধ্বংস করে মশার বংশবিস্তার প্রতিরোধ করতে হবে। চলুন জেনে নয়া
যাক শিশুদের ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয় কিছু বিষয় সম্পর্কে।
১। প্রথমেই এডিস মশার উৎসস্থান ধ্বংস করতে হবে। এডিস মশা সাধারণত গৃহস্থালির
পরিষ্কার স্থির পানি যেমন ফুলের টব, গাড়ির টায়ার বা ডাবের খোলে বৃষ্টির জমা
পানি ইত্যাদি জায়গায় থাকে। তাই এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিতে পারে এমন
স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নষ্ট করে ফেলতে হবে। বাড়ির আশেপাশে
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
২। মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু প্রায় সময়েই বেশ গুরুতর হয়ে ওঠে, বিশেষ করে শিশুদের
ক্ষেত্রে। এক সময় বর্ষাজুড়ে এই রোগের প্রকোপ দেখা গেলেও আজকাল বর্ষার আগে
থেকে শুরু করে সারা বছরই ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালগুলোতে আসতে থাকে। শিশুদের
ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং অভিভাবকদের থাকতে
হবে খুব সচেতন।
৩। বড়দের চাইতে শিশুদের জ্বর বেশ হুটহাটই হয়। ঠান্ডা লাগা জ্বরের প্রকোপ
তাদের মধ্যে দেখা দেয় বেশি। আবার একেবারে ছোট শিশুরা উপসর্গের বিষয়টিও সেভাবে
বোঝাতে পারে না বাবা-মাকে। ফলে শিশুর ডেঙ্গুজ্বর হয়েছে কিনা সেটা বুঝতে হলে
বাবা-মায়ের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।
৪। শিশুদের দিনে ও রাতে মশারির ভেতরে রাখতে হবে। বিশেষ করে নবজাতক শিশুকে
সার্বক্ষণিক মশারির ভেতরে রাখা জরুরি। কেননা ডেঙ্গু আক্রান্ত কাউকে এডিস মশা
কামড়ানোর পর যদি কোন শিশুকে কামড়ায় তাহলে তার শরীরেও ডেঙ্গুর ভাইরাস
ছড়িয়েপড়তে পারে। হাসপাতালে কোন শিশু যদি অন্য রোগের চিকিৎসাও নিতে আসে,
তাহলে তাকেও মশারির ভেতরে রাখতে হবে।
৫। শিশুদের শরীরে কয়েক ঘণ্টা অন্তর অন্তর মসকুইটো রেপেলেন্ট অর্থাৎ মশা
নিরোধীকরণ স্প্রে, ক্রিম বা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। শিশুদের এমন পোশাক
পড়াতে হবে যাতে করে হাত ও পা সম্পূর্ণ ঢাকা থাকে।
৬। শিশু ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় তাদের যথাসম্ভব গা ঢাকা পোশাক পরান। এ
ক্ষেত্রে ফুলহাতা শার্ট ও টি-শার্ট, ফুল প্যান্ট, লম্বা ঝুলের ফ্রক, মোজা ও
জুতা পরান।
৭। শরীরের উন্মুক্ত স্থানে মশা ও অন্যান্য পোকামাকড় প্রতিরোধক ক্রিম বা
স্প্রে ব্যবহার করুন। তবে এগুলো ব্যবহারের সময় শিশুর বয়স ও শিশুর ত্বকের জন্য
ক্ষতিকর কি-না সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন। প্রতিরোধক কেনার সময় প্যাকেটের গায়ে
থাকা নির্দেশনা ভালোভাবে পড়ুন।
৮। পরিবারের কেউ একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে, অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি
বেড়ে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য মশারির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ, যাতে করে
অসুস্থ ব্যক্তিকে কামড়িয়ে মশকী আবার সুস্থ কাউকে না কামড়াতে পারে। ডেঙ্গু
কিন্তু ছোঁয়াচে রোগ না, বা এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিকে সংক্রমিত করে না।
৯। মশার কামড় থেকে বাঁচতে ঘুমানোর সময় শিশুর বিছানায় মশারি ব্যবহার করুন।
বিশেষ করে ভোর ও রাতে ডেঙ্গু মশা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে, এই সময় যাতে
আপনার বাড়িতে মশা ঢুকতে না পারে তা নিশ্চিত করতে এ সময়গুলোতে অবশ্যই
জানালা-দরজা বন্ধ রাখুন।
১০। মশা প্রতিরোধক অ্যারোসল, মশার কয়েল বা ফাস্ট কার্ড শিশু থেকে শুরু করে
সবার জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। এর পরিবর্তে মসকুইটো কিলার বাল্ব, ইলেকট্রিক
কিলার ল্যাম্প, ইলেকট্রিক কয়েল, মসকুইটো কিলার ব্যাট, মসকুইটো রেপেলার
মেশিন, মসকুইটো কিলার ট্র্যাপ ইত্যাদির সাহায্যে নিরাপদে মশা ঠেকানো যেতে
পারে। তবে এক্ষেত্রে এই সরঞ্জামগুলো যেন শিশুর নাগালের বাইরে থাকে, সে বিষয়ে
খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
১১। যদি শিশুর মা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে সেই ভাইরাসের কোন প্রভাব
মায়ের বুকেরদুধে পড়ে না। কাজেই আক্রান্ত অবস্থায় মা তার বাচ্চাকে বুকের
দুধ খাওয়াতে পারবেন।
১২। প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনকে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন করুন। তাদের
বাড়ি-ঘর ও আশেপাশের এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে উদ্বুদ্ধ করুন। স্থানীয়
স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন এবং শিশুর জ্বর হলে দেরি না করে যত
দ্রুত সম্ভব ডেঙ্গু পরীক্ষা করুন।
ডেঙ্গুজ্বর শনাক্ত করন পরীক্ষা
ডেঙ্গু শনাক্ত করে দ্রুত ট্রিটমেন্ট শুরু না করলে প্রতি মুহূর্তে ঝুঁকি বাড়তে
থাকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম হয়ে অরগান ফেইলার, এমনকি মৃত্যু
পর্যন্ত হতে পারে। তাই জ্বর হলেই দ্রুত ডেঙ্গু টেস্ট করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
নিন। ডেঙ্গু হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত হওয়া এবং রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থা
সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য সাধারণত বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
সেগুলো হলোঃ
১. এনএস১ অ্যান্টিজেন পরীক্ষাঃ এটি একটি রক্ত পরীক্ষা যার
সাহায্যে খুব দ্রুত (প্রায় ২০ মিনিটের মধ্যে) ফলাফল পাওয়া যায়। ডেঙ্গু
ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত জ্বর আসার প্রথম দিন থেকেই এই পরীক্ষার ফলাফল
পজিটিভ হয়। তবে জ্বর আসার চার–পাঁচ দিন পর থেকে এই টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ
আসে। অর্থাৎ জ্বর আসার চার–পাঁচ দিন পরে এই টেস্ট করলে শরীরে আদৌ ডেঙ্গু
ভাইরাস আছে কি না সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।
২. ডেঙ্গু ইমিউনোগ্লোবিউলিন পরীক্ষাঃ আইজিএম ও আইজিজি
অ্যান্টিবডি টেস্ট এক প্রকার রক্ত পরীক্ষা। এই পরীক্ষা দুটির সাহায্যে রোগী
ডেঙ্গু আক্রান্ত কি না সেটা নির্ণয় করা যায়।
- Anti Dengue IgM: আইজিএম অ্যান্টিবডি টেস্ট সাধারণত জ্বর আসার পাঁচ দিন পর থেকেই করা যায়। তবে জ্বর আসার প্রায় সাত দিনের দিকে এই পরীক্ষা সবচেয়ে ভালো ফলাফল দিতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু হলে এ পরীক্ষা পজিটিভ আসে।প্রাইমারি ডেঙ্গু ইনফেকশনের প্রাথমিক পর্যায়ে IgG এর চেয়ে IgM লেভেল বেশি থাকে, তবে ৯ম-১০ম দিনে IgG এর চেয়ে IgM কমে যায়। কিন্ত সেকেন্ডারি ডেঙ্গ ইনফেকশনে ব্লাডে IgM এর চেয়ে IgG লেভেল অনেক বেড়ে যায়।
- Anti Dengue IgG: অন্যদিকে শরীরে আইজিজি অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে পূর্বে কেউ কখনো ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল কি না সেটি নির্ণয় করা যায়। এটির সঙ্গে বর্তমান রোগের সম্পর্ক নেই। তবে IgG পজিটিভ হলে বুঝা যায়, বর্তমান ডেঙ্গু জ্বরের প্রকটতা এবং জটিলতা হবার ঝুঁকি আছে। অর্থাৎ ৩য় থেকে ৫ম দিন পর্যন্ত NS1 Antigen, IgM দুইটাই নেগেটিভ হতে পারে, তার অর্থ এই নয় যে তা ডেঙ্গু নয়।
৩. সিবিসি পরীক্ষাঃ এই পরীক্ষার মাধ্যমে মূলত রক্তে লোহিত রক্ত
কণিকা, শ্বেত রক্ত কণিকা, প্লাটিলেট ও হেমাটোক্রিটের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।
ডেঙ্গু হলে এসব রক্ত কণিকার পরিমাণ সাময়িকভাবে কমে যেতে পারে।
এ ছাড়া রক্ত থেকে পানি বেরিয়ে যেতে শুরু করলে হেমাটোক্রিট অনেক বেড়ে যায়।
তাই ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করেছে কি না সেটি নির্ধারণ করার একটি অন্যতম
উপায় হলো হেমাটোক্রিটের পরিমাণ নির্ণয় করা। এই টেস্টটির মূল্য প্রায় ১৫০–৪০০
টাকা।
ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে সচরাচর প্রশ্ন
আপনারা যারা ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কিত সচোরাচর যে প্রশ্নগুলা গুগলে কিংবা কোনো
ওয়েব সাইটে এসে সার্চ করে থাকেন তার সংক্ষেপে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর নিচে
তুলে ধরা হলো। যা ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে আশা করছি আপনারা সংক্ষিপ্ত কিছু ধারনা
লাভ করতে পারবেনঃ
১। প্রশ্নঃ বাচ্চাদের ডেঙ্গু হলে কিভাবে বুঝব?
উত্তরঃ জ্বর, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, হাড়ে ব্যথা, চোখের
পেছনে ব্যথা, র্যাশ ইত্যাদি। তবে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর উপসর্গ হতে
পারে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের মতো (কাশি, সর্দি, জ্বর ইত্যাদি)। এ ছাড়া ছোট
বাচ্চারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে ডায়রিয়া, বমি নিয়েও আসতে পারে। জ্বর হঠাৎ
করে আসতে পারে।
২। প্রশ্নঃ কোন মশা কামড়ালে ডেঙ্গু রোগ হয়?
উত্তরঃ এডিস মশা। এই মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে বংশ বিস্তার
করে। ফুলের টব, এসি বা ফ্রিজের নিচের মতো স্থানে জমা পানি থেকে ডেঙ্গু মশার
উৎপত্তি।
৩। প্রশ্নঃ এডিস মশা কীভাবে চিনবেন?
উত্তরঃ একটু লক্ষ্য করলেই যে কেউ ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস
মশাকে খালি চোখেই চিনতে পারবেন। মাঝারি আকারের সাদা-কালো ডোরাকাটা এই মশার
শুঁড় থাকে লোমযুক্ত। এদের মাথার পেছনের উপরের দিকেও একটি সাদা দাগ থাকে, তাই
সাধারণ মশা থেকে খুব সহজেই আলাদা করা যায়।
৪। প্রশ্নঃ এডিস মশা কখন কামড়ায়?
উত্তরঃ জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এডিস মশার বিস্তার ঘটে
বলে এ সময়টাতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এডিস মশা যে শুধু
দিনেরবেলাতেই কামড়ায়, এটাও কম-বেশি এখন সবাই-ই জানে। তবে দিন বলতে শুধু
সকালবেলা নয়; সকাল-থেকে সন্ধ্যা, সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত সময়কেই এডিস মশার
কামড়ের সময় বোঝানো হয়ে থাকে। আরেকটু নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, সাধারণত
সকালের প্রথম দিকে এবং সন্ধ্যার ঠিক কিছুটা আগে এডিস মশা তৎপর থাকে।
চিকিৎসকদের মতামত অনুযায়ী, রাতের অন্ধকারে এরা কামড়ায় না। অনেকেরই দুপুরে
খাবারের পর হালকা ঘুমানোর অভ্যাস আছে। এ সময় ঘুমানোর সময়ও সতর্ক থাকা উচিত।
বিশেষত, শিশুদের ব্যাপারে একদমই অবহেলা করা যাবে না।
৫। প্রশ্নঃ এডিস মশা কোথায় কামড়ায়?
উত্তরঃ অনেকেই আবার ভাবেন, এডিস মশা বোধহয় শুধু পায়েই
কামড়ায়। এটাও এক ধরনের ভুল ধারণা। পায়ের অংশ শরীরের অন্যান্য অংশের
তুলনায় উন্মুক্ত থাকে বলে, ওই জায়গাকেই এরা কামড়ানোর জন্য বেছে নেয়। তবে
সুযোগ পেলে, শরীরের যেকোনো অংশতেই কামড়ে দিতে পারে এই ভয়ংকর মশা! এই মৌসুমে
কোনো জ্বরকেই তাই সাধারণ জ্বর হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া হবে নিছকই বোকামি।
৬। প্রশ্নঃ মশা কামড়ানোর কতদিন পর ডেঙ্গু হয়?
উত্তরঃ এডিস মশা কামড়ানোর প্রায় ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে
ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেয়।
৭। প্রশ্নঃ এডিস মশা কামড়ালেই কি ডেঙ্গু হয়?
উত্তরঃ না, পরিবেশে উপস্থিত কোনো ভাইরাস যদি কোনো এডিস মশার
মধ্যে সংক্রমিত হয়, শুধুমাত্র তখনই ওই মশার কামড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে।
৮। প্রশ্নঃ ডেঙ্গু কি ছোঁয়াচে রোগ?
উত্তরঃ ডেঙ্গু ছোঁয়াচে নয়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে
স্পর্শ করলে অথবা এক বিছানায় ঘুমালে কিংবা তার ব্যবহৃত কিছু ব্যবহার করলে,
অন্য কারো এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির
সংস্পর্শে আসায় কোনো বাধা নেই, কিংবা তাকে আলাদা রাখার কোনো প্রয়োজনও নেই।
শিশুর হঠাৎ জ্বর হলে করনীয়
শিশুর হঠাৎ জ্বর হলে তা মা-বাবার জন্যও সমান কষ্টের। শিশুর মাথার কাছে বসে
ভয় এবং উদ্বিগ্নতায় সময় কাটে মা-বাবার। জ্বর কোনো অস্বাভাবিক অসুখ নয়, এটি
হতে পারে অন্য কোনো অসুখের সতর্কবার্তা। তাই শিশুর জ্বর হলে ঘাবড়ে না গিয়ে
জ্বর কমানোর চেষ্টা করতে হবে। মা-বাবা কিংবা অভিভাবককে উদ্বিগ্ন দেখলে শিশু
আরও বেশি ভয় পেয়ে যেতে পারে। তাই তার সামনে কান্নাকাটি করা বা উৎকণ্ঠা
প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন।
জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গ
শিশুর শরীর যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম হয়ে যায়, তার চোখ-মুখ লাল হয়ে
যায় এবং শিশু যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘামতে থাকে তবে সতর্ক হোন। এসবই
হলো শিশুর জ্বর আসার প্রাথমিক লক্ষণ। এসময় শিশুর বারবার তৃষ্ণা লাগতে পারে।
জ্বর হলেও অনেক সময় শিশু সেটি অনুভব করতে পারে না। সেক্ষেত্রে লক্ষণগুলো
দেখা দিলে বুঝবেন শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এসময় শিশুর কানের ব্যথা, গলা
ব্যথা, ফুসকুড়ি বা পেটে ব্যথা ইত্যাদিও হতে পারে।
শিশুর জ্বরের সাধারণ কারণ
প্রায় সবসময় ইনফেকশনের দ্বারা জ্বর হয়ে থাকে। বিশেষভাবে বলতে হয়, ভাইরাস
শিশুকে ব্যাকটেরিয়ার চেয়ে ১০ গুণেরও বেশি আক্রমণ করে।
ভাইরাল ইনফেকশনঃ কোল্ড বা ঠান্ডা, ফ্লু এবং অন্যান্য কমন
ভাইরাল ইনফেকশন হচ্ছে, অল্পবয়সী শিশুদের মধ্যে জ্বর হওয়ার
স্বাতন্ত্র্যসূচক কারণ। প্রকৃতপক্ষে, অল্পবয়সি শিশুদের প্রতিবছর ৭ থেকে
১১টি জ্বরসহ ভাইরাল রোগ হতে পারে। প্রায়ক্ষেত্রে, জ্বর হচ্ছে প্রাথমিক
উপসর্গ যা পিতামাতারা প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লক্ষ্য করে। এরপর শিশুর কাশি
বা রানি নোজ (ঠান্ডা বা অ্যালার্জির কারণে নাক থেকে তরল আসা) হতে পারে।
ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশনঃ শিশুদের জ্বর হওয়ার দ্বিতীয় কমন কারণ
হচ্ছে ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন। এ কারণে মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে ব্লাডার
ইনফেকশন হতে পারে। আনেক্সপ্লেনড ফিভার বা অজ্ঞাত জ্বরও কমন ব্যাক্টেরিয়াল
ইনফেকশনের উপসর্গ হতে পারে।
নাকের সাইনাস ইনফেকশনঃ নাকের সাইনাস ইনফেকশন হচ্ছে, কোল্ড বা
ঠান্ডাজনিত সমস্যা। এর সঙ্গে জ্বর ফিরে আসার সম্পর্ক রয়েছে (সঙ্গে সাইনাস
পেইন থাকবে)।
ভ্যাকসিনেশনঃ ভ্যাকসিনেশন বা টিকা প্রদানের পর অনেক শিশুর
জ্বর আসে। সাধারণত প্রথম ১২ ঘণ্টার মধ্যে জ্বর উদ্ভুত হতে পারে এবং জ্বর
২/৩ ঘণ্টা থাকতে পারে। এ জ্বর সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক, জ্বর নির্দেশ করে
যে ভ্যাকসিন বা টিকা কাজ করছে।
ওভারহিটিংঃ ওভারহিটিং বা অতিরিক্ত তাপ অথবা ওভারলোডিং বা
অতিরিক্ত ভার কিংবা ওভারড্রেসিং বা অতিরিক্ত কাপড় পরার কারণে শিশুদের
তাপমাত্রাজনিত সমস্যা বা জ্বর হতে পারে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে
শিশুকে শীতল জায়গায় নিতে পারেন কিংবা অতিরিক্ত জামাকাপড় খুলে ফেলতে
পারেন। স্বাভাবিক তাপমাত্রা পুনরুদ্ধারে তরল সাহায্য করতে পারে।
শিশুর হঠাৎ জ্বর হলে যা করবেন
১। শিশু যে ঘরে থাকে চেষ্টা করুন সেটি ঠান্ডা রাখতে। অনেকে দরজা-জানালা
আটকে শিশুকে কাঁথা-কম্বল মুড়িয়ে রাখেন। এটি একেবারেই ঠিক নয়। এতে শিশুর
জ্বর ও অস্বস্তি আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই শিশুর জ্বর হলে তাকে খোলামেলা
কক্ষে রাখুন। কক্ষে যেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে, সেদিকে খেয়াল
রাখুন।
২। জ্বর হলে শিশুকে গা মুছে দেবেন, একটু একটু করে প্রচুর পানি, তরল, ডাবের
পানি, স্যুপ, শরবত বেশি করে খাওয়াবেন। বিশ্রামে রাখার চেষ্টা করবেন, দৌড়ঝাপ
যেন না করে খেয়াল রাখতে হবে। ভেজা গামছা বা পাতলা কাপড় দিয়ে গা বারবার মুছে
দেবেন। স্বাভাবিক গোছল বন্ধ করবেন না, প্রয়োজনে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোছল
করাবেন।
৩। জ্বর যদি একশ বা তার বেশি হয় তাহলে প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়াবেন ছয়
ঘণ্টা পর পর, তবে অপ্রয়োজনে বা জ্বর না মেপেই ওষুধ খাওয়াবেন না। ভুলেও
অপ্রয়োজনে প্যারাসিটামল বা ক্লোফেনাক জাতীয় বা অন্য কোন নন-স্টেরিওডাল
অ্যান্টি-ইনফ্লেম্যাটরি ড্রাগস (এনএসএআইডি) জাতীয় ব্যথার ঔষধ, আবারও বলছি,
ভুলেও খাওয়াবেন না। এগুলো শরীরের প্লেটলেটের উপর বিরূপ প্রভাব (প্লেটলেট
এগ্রিগেশনে বাধা দেওয়া) ফেলে এবং হঠাৎ ব্লিডিং শুরু হতে পারে। কিডনি বিকল
করে দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
৪। শিশুকে মোটা মোটা পোশাক পরিয়ে রাখবেন না। তাকে যতটা সম্ভব হালকা পোশাক
পরিয়ে রাখুন। সম্ভব হলে জামা খুলে খোলা বাতাসে রাখুন। এতে জ্বর দ্রুত কমবে।
শিশুকে পোশাক পরালে সেটি যেন সুতির ও হালকা রঙের হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
৫। জ্বর এলে শরীরকে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখা জরুরি। কোনোভাবেই যেন শরীরে
পানিশূন্যতা দেখা না দেয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। শিশুকে বারবার তরল খাবার
খেতে দিন। শুধু পানি খেতে না চাইলে ফলের রস, ডাবের পানি, স্যুপ ইত্যাদি
খেতে দিন।
৬। শিশুরা চঞ্চল হয়। তাই অসুস্থ হলেও তারা বিশ্রাম করতে বা শুয়ে-বসে থাকতে
চায় না। অনেক সময় দেখা যায় অসুস্থতা নিয়েই তারা দৌড়ঝাঁপ করে। এতে আরও বেশি
ক্লান্ত হয়ে পড়ার ভয় থাকে। তাই শিশুর জ্বর এলে তাকে বিশ্রাম করতে দিন।
যা করবেন না
১। শিশুর জ্বর হলে অনেকেই এ ভুলটি করে থাকেন। ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছলেও
শিশুকে গোসল করা বন্ধ করে দেন। অথচ চিকিৎসকরা বলছেন, যেকোনো রোগের
ক্ষেত্রেই পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি।
২। সামান্য জ্বরে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই শিশুকে প্যারাসিটামল ওষুধ
খাওয়ান। এতে ক্ষেত্রবিশেষে হিতে বিপরীত হতে পারে। বড়রা নিজেদের ক্ষেত্রে
প্রায়ই এমন ঝুঁকি নিয়ে থাকেন। তবে শিশুদের জন্য এমন ভুল প্রাণ সংশয়ের কারণ
হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
৩। হাত দিয়ে শরীর গরম অনুভূত হলেই তা জ্বর নয়। অনেক অভিভাবকই এ ভুলটি করেন।
জ্বরের ওষুধ খাওয়ানোর অবশ্যই থার্মোমিটার ব্যবহার করে শরীরের তাপমাত্রা
পরীক্ষা করে ওষুধ খাওয়াতে হবে।
৪। জ্বর হলেই শিশুকে চাদর কিংবা ভারী কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা যাবে না।
চিকিৎসকরা বলেন, একাধিক ভারী পোশাক পরলেই জ্বরে শিশু আরাম পাবে, কিংবা ঘাম
হয়ে জ্বর সেরে যাবে এমনটা কিন্তু নয়। বরং জ্বরের সময় ভারী পোশাকে শিশুর
কষ্ট বাড়তে পারে।
৫। অনেকে জ্বর কমাতে স্পঞ্জিং করেন। শিশুর জ্বর হলে তার জ্বর কমাতে
স্পঞ্জিং ব্যবহার করবেন না। ঠান্ডা পানিতে শিশুর কাঁপুনি বাড়তে পারে এবং
সেইসঙ্গে বেড়ে যেতে পারে তার শরীরের তাপমাত্রাও।
৬। জ্বর হলে শিশুর শরীরে কখনোই অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য প্রয়োগ করবেন না।
অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য প্রয়োগ করলে সেটি ত্বকের মধ্যে প্রবেশ করে কোমার
মতো মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৭। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে কোনো ধরনের ওষুধ দেবেন না। কারণ সেটি
পরবর্তীতে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই ঘরোয়া প্রচেষ্টায় যদি শিশুর
জ্বর না কমে তবে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া চিকিৎসা
ডেঙ্গুর জীবাণুকে নিষ্ক্রিয় করে দ্রুত ডেঙ্গু সারিয়ে ফেলার মতো নির্দিষ্ট
কোনো চিকিৎসা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তবে সাধারণত ঘরোয়া কিছু পরামর্শ মেনে চলার
মাধ্যমেই ডেঙ্গুর বিভিন্ন লক্ষণ উপশম করা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শরীরের
নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
তবে মারাত্মক ডেঙ্গু এবং কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি
করে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। সাধারণ ডেঙ্গু হলে নিচের বিষয়গুলো মেনে চললে তা
রোগীর লক্ষণ উপশমে সাহায্য করতে পারেঃ
১. তরল খাবারঃ ডেঙ্গু হলে শরীরের রক্তনালী থেকে রক্তের জলীয় অংশ বাইরে
বেরিয়ে যায়। তাই এই রোগে শরীরে পানিশূন্যতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
পানিশূন্যতা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
এই সমস্যা প্রতিরোধের জন্য শুরু থেকেই প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে।
যেমন: পানি, ডাবের পানি, স্যুপ, লেবু-পানি, দুধ, ফলের রস ও খাবার স্যালাইন।
সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক কমপক্ষে ৬–৮ গ্লাস পানি ও তরল
খাবার খাওয়া প্রয়োজন। পানির পাশাপাশি পানিতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইট
বা লবণের চাহিদা মেটাতে পানির পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইন পান
করতে পারেন।
২. পুষ্টিকর খাবারঃ রোগের বিরুদ্ধে ভালো লড়াই করে এমন পুষ্টিকর খাবার
বেশি করে খান, যেমন- সাইট্রাস ফল, কাঠবাদাম, দই, সূর্যমুখীর বীজ, গ্রিন টি,
ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, পালংশাক, আদা, রসুন ও হলুদ। তুলসি পাতাকে গোল মরিচের
সঙ্গে পানিতে সিদ্ধ করে পানীয়টিকে ঠান্ডা করে পান করতে পারেন। এটি সংক্রমণের
বিরুদ্ধে ভালো লড়াই করতে পারে। তুলসি পাতা চাবালেও রোগদমনতন্ত্র শক্তিশালী
হবে। শক্তিশালী রোগদমনতন্ত্রের কাছে সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ সহজেই পরাস্ত
হয়।
৩. বিশ্রামঃ ডেঙ্গু রোগে শরীর বেশ দুর্বল হয়ে যায়। এজন্য এই সময়ে যতটা
সম্ভব বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই কাজকর্ম থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে
বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আর নিয়মিত ঘরের কাজ করলে আপনি বিশ্রামে থেকে
বাড়ির অন্য কোনো সদস্য অথবা বন্ধুর সহযোগিতা নিবেন। সেই সাথে ডেঙ্গু ছড়িয়ে
পড়া প্রতিরোধ করতে অবশ্যই শোয়ার সময়ে মশারি টানিয়ে রাখবেন।
৪. ঔষধঃ ডেঙ্গুর কারণে সৃষ্ট ব্যথা ও জ্বর কমানোর একমাত্র নিরাপদ ঔষধ
হলো প্যারাসিটামল। জ্বর ও ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন।
শিশুদের ক্ষেত্রে বয়স অনুযায়ী উপযুক্ত ডোজে প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে।
৫. জেনে রাখা ভালোঃ ডেঙ্গু হলে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য যেকোনো ধরনের
এনএসএআইডি জাতীয় ব্যথার ঔষধ (যেমন: অ্যাসপিরিন ও আইবুপ্রোফেন) সেবন করা থেকে
বিরত থাকতে হবে। কেননা এসব ঔষধ খেলে শরীরে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা
রোগীর জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে
শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে শেষকথা
শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে শেষকথা হলো সময়মত চিকিৎসা হস্তক্ষেপ
নিশ্চিত করতে পিতামাতাদের অবশ্যই শিশুদের ডেঙ্গু জ্বর চিনতে হবে। উচ্চ জ্বর,
তীব্র মাথাব্যথা এবং শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের ফুসকুড়ি হওয়ার মতো
স্বতন্ত্র লক্ষণগুলি বোঝার মাধ্যমে, পিতামাতারা তাদের সন্তানের স্বাস্থ্য
রক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারেন। সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ
প্রভাব ফেলে পোকামাকড় প্রতিরোধক ব্যবহার করা এবং দাঁড়িয়ে থাকা জল নির্মূল
করার মতো সহজ ব্যবস্থাগুলির সাথে প্রতিরোধের গুরুত্বকে বাড়াবাড়ি করা যায়
না।
ডেঙ্গু জ্বর থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য ভালভাবে অবগত এবং সতর্ক থাকা
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও অসুস্থতা গুরুতর হতে পারে, অবিলম্বে লক্ষণগুলি
সনাক্ত করা এবং উপযুক্ত চিকিৎসা যত্ন ইতিবাচক ফলাফলের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
অভিভাবকদের মনে রাখা উচিত যে তাদের সচেতনতা এবং দ্রুত পদক্ষেপ এই রোগ
পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নির্দেশিকা অনুসরণ করে, পরিবারগুলি
ডেঙ্গু জ্বরের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এবং তাদের সন্তানদের সুস্থতা নিশ্চিত
করার জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুত হতে পারে।
অতএব, আশা করা যাচ্ছে শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা, ডেঙ্গুজ্বরের
প্রকারভেদ ও ধরণ, শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা, শিশুদের ডেঙ্গু জ্বর
প্রতিরোধে করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে মোটামুটি কিছু ধারনা ও জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম
হয়েছেন। শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা অনেকটা ডেঙ্গুজ্বরের ধরনের উপর নির্ভর
করে। কেউ এ জ্বরে আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে অনেকটা দুর্বল হয়ে যায়। আর তাই
জ্বর আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url