অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ

অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে এটা জানা অবশ্যই আপনার জন্য অত্যান্ত জরুরী। গরমে ঘাম হবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু জানেন কি অতিরিক্ত ঘাম অসুস্থতার লক্ষণ। আর গরম ছাড়াই যদি আপনি ঘামেন তাহলেও তা কিন্তু বড়সড়ো রোগের ইঙ্গিত। থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য ও হার্টের কোনো সমস্যা হলে অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা দেখা দেয়।
অতিরিক্ত-ঘাম-কোন-রোগের-লক্ষণ
খেয়াল করবেন মুখের থেকে হাতের তালু এবং পায়ের পাতায় ঘাম বেশি হয়। একে হাইপার হাইড্রোসিস বলে। স্বাভাবিক মাত্রায় ঘাম কোনো অসুখ নয়। ঘামের সঙ্গে দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়। আর ঘাম হলে শরীরের অতিরিক্ত জল ও লবনও বেরিয়ে যায়। ফলে শরীরের তাপমাত্রা নেমে যায়।

কেউ অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে, নার্ভাস হলে কিংবা রোদে গেলে শরীর অতিরিক্ত ঘামাতে পারে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকেও কিন্তু বেশি ঘাম হতে পারে। মশলাযুক্ত ঝাল বা তৈলাক্ত খাবার অতিরিক্ত খেলেও বেশি ঘাম হতে পারে। হাইপারহাইড্রোসিসের বা ঘামের মূল কারণ শরীরে ভিটামিন বি-১২-এর অভাব। এই ভিটামিনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে মাছ, দুধ, ডিম ইত্যাদি খেতে পারেন।

পেইজ সূচিপত্রঃ  অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ

অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ

অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ তা জানতে হলে কন্টেন্টটি আপনাকে মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। গরমের এ সময়টাতে ঘামের পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তাই অনেকেই অতিরিক্ত ঘাম হওয়াটাকে তেমন গুরুত্ব সহকারে দেখেন না। কিন্তু এই অতিরিক্ত ঘামের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের না করলে আপনি পড়তে পারেন মারাত্মক বিপদের মুখে। কেননা অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে জটিল কিছু রোগের।
অতিরিক্ত ঘামের কারণে হতে পারে বেশকিছু বড়সড়ো মারাত্মক রোগের পূর্বলক্ষণ। তাই অতিরিক্ত ঘামের লক্ষণটিকে গুরুত্ব না দিলে পরিবারের কোনো সদস্যের অনাকাঙ্ক্ষিত আকস্মিক দুঃসংবাদ পেতে পারেন। নিজেও পড়তে পারেন বিপাকে। তাই আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ঘামের সঙ্গে কোন কোন জটিল রোগগুলোর সম্পর্ক রয়েছে। 

হৃদরোগঃ হার্টের কোনো সমস্যা হলে আপনার অবশ্যই অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা দেখা দেবে। ঘামের সঙ্গে উপসর্গ হিসেবে থাকতে পারে বুক ধড়ফড়, বুকে ব্যথা, কিছুক্ষণের জন্য অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং বুকে চাপ অনুভব ও শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। হার্টের গতি কম বা বেশি হলে কিংবা হার্টে ব্লক থাকলে আপনার শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ঘাম হবে।

সংক্রমণঃ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ সবসময় প্রাণঘাতী হয় না। হলেও অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের নিরাময় করে। সংক্রমণের ধরন অনুযায়ী কিছু মানুষ আবার জ্বর, শীত লাগা, অতিরিক্ত ঘামাম এবং আরো অনেক কিছুতে আক্রান্ত হতে পারেন। মারাত্মক সংক্রমণে সেপসিস হতে পারে। সময়মতো শুশ্রূষা না হলে তা সেপটিক শকে চলে যেতে পারে। কাজেই বেশি ঘামলে সংক্রমণের চিন্তা মাথায় রেখে চিকিৎসকের কাছে যান।
 
ডায়াবেটিসঃ অতিরিক্ত ঘামের সঙ্গে ডায়াবেটিস রোগটিরও সম্পর্ক আছে। ডায়াবেটিস রোগীদের হঠাৎ ব্লাডসুগার কমে গেলে শরীরে অস্বস্তির সঙ্গে প্রচুর ঘামের সৃষ্টি হয়। তখন শরীর খারাপ ও মাথা ঘোরানো ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। এ ছাড়া অজ্ঞান হয়ে যান অনেকে।

থাইরয়েডঃ থাইরয়েডের ভারসাম্যহীনতার কারণে বেশি ঘাম হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। হাইপার থাইরয়েডের জন্য মানুষের শরীরে থাইরয়েড হরমোনের ক্ষরণ বেশি হয়, ফলে রোগীর খিদে বেড়ে যায়। কিন্তু ওজন কমতে থাকে। সেইসঙ্গে বেড়ে যায় মাত্রারিক্ত ঘামের প্রবণতাও। 

ব্রেন স্ট্রোকঃ হঠাৎ মাথার যন্ত্রণা, শরীরে প্যারালাইসিসের মতো অনুভূতি কিংবা স্ট্রোকের পূর্বে বেশ কয়েকদিন আপনার প্রচুর ঘাম হতে পারে।

নিউরোলজিক্যাল সমস্যাঃ মাথায় টিউমার, খিচুঁনির মতো যেকোনো নিউরোলজিক্যাল সমস্যার প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে আপনার। তাই সঠিক সময়ে অতিরিক্ত ঘামের কারণ খুঁজে বের করতে পারলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে গুরুতর শারীরিক ক্ষতির থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।

টেনশন ও ভয়ঃ শরীরে কোনও স্ট্রেস, টেনশন বা ভয়ের কারণ হলে অ্যান্ড্রিনালিন ও নন্-অ্যান্ড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গিয়ে অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হয়ে যায় এবং ঘামের সৃষ্টি করে। অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হয়, তাতে ঘাম সৃষ্টি করে। ফলে শরীর খারাপ লাগতে পারে। অনেকে অজ্ঞান হয়ে যান।

রক্তে ইনফেকশনঃ যদি আপনার রক্তে ইনফেকশনের সমস্যা থাকে, তবে তা আপনার শরীরকে প্রায়ই উত্তপ্ত করে তুলবে। এ সমস্যায় আপনার ব্লাড প্রেশার অনেকটাই কমে যাবে। এ সমস্যায় হার্ট চাহিদা অনুযায়ী পরিমিত রক্ত পাম্প করে শরীরকে প্রদান করতে ব্যর্থ হয়। এক্ষেত্রে রোগীর দেহ ঠান্ডা হয়ে প্রচণ্ডমাত্রায় ঘাম বা শীতল ঘাম নির্গত হয়, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। এছাড়া অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি টিউমার, মেনোপজ নারী, ম্যালেরিয়া, হাইপারহাইড্রোসিস ( প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্টেজে) রোগীর ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা দেখা যায়। 

অতিরিক্ত ঘাম থেকে বাঁচার উপায়

যাদের ঘাম বেশি হয়, তাদের নিজেকে সতেজ রাখার চেষ্টা করতে হবে। বেশি ঘামের কারণে কোনো ধরনের পোশাক পরেই বেশিক্ষণ থাকতে পারেন না তারা। দেখা গেল, ঘেমে জবুথবু অবস্থা। শুধু কি পোশাক ভিজে যাওয়া সেইসঙ্গে ঘামের কারণে সৃষ্ট উৎকট গন্ধ তো রয়েছেই। কিছু কাজ আপনাকে এই অতিরিক্ত ঘাম থেকে মুক্তি দেবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই কাজগুলো কী-

পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ তীব্র গরমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। লবণ ও পানি বেরিয়ে যায় বলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। তখন অনেক অ্যাসিডিটি হয়ে হাতের তালু, পায়ের পাতায় বেশি করে ঘাম হয়ে থাকে। তাই এই গরমে বেশি করে নিরাপদ খাবার পানি পান করা জরুরি। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে আপনার শরীর ঠান্ডা ও হাইড্রেট থাকবে। আর শরীর হাইড্রেট থাকলে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ওজন নিয়ন্ত্রেন রাখুনঃ অনেক সময় স্থূলতা অতিরিক্ত ঘামের কারণ হতে পারে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম এবং একটি সুষম ডায়েট মেনে চলার মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখলে এই পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।লাইফস্টাইল পরিবর্তন করেও যদি হাইপার হাইড্রোসিস বা অতিরিক্ত ঘাম থেকে মুক্তি না মেলে সে ক্ষেত্রে কোনো মেডিকেল কন্ডিশন বা রোগ আছে কি না তা খুঁজে বের করতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

বিভিন্ন ধরনের পানীয় পান করুনঃ সারা দিন নানা ভাবে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায় তখন পানি শূন্যতা তৈরি হয়। পানি শূন্যতা দূর করতে পানির পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের মৌসুমী ফলের জুস খেতে পারেন। এ ছাড়া ডাবের পানি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

উপযুক্ত পোশাক পরুনঃ তুলা, লিনেন, সুতি বা প্রাকৃতিক তন্তু দিয়ে তৈরি ঢিলেঢালা পোশাক বেছে নিন যাতে ভালোভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং আর্দ্রতা শোষণ করতে পারে। পরিষ্কার ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান ঘামের গন্ধকে কমিয়ে দিতে পারে। গরমকালে ত্বকের স্বস্তির জন্য পোশাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিনথেটিক কাপড় ত্বকের জন্য স্বচ্ছন্দ নয়, ঘাম বেশি শুষে নেয় যা আপনাকে শুধু অস্বস্তিতেই ফেলে না, বগলকে আরও ঘর্মাক্ত করে। তাই এ সময় সুতির কাপড় পরুন এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত। তাহলে আপনি কম ঘর্মাক্ত হবেন।

স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করাঃ স্ট্রেস ও উদ্বেগ অত্যধিক ঘামের কারণ হতে পারে, তাই গভীর শ্বাসের ব্যায়াম, যোগব্যায়াম বা ধ্যানের মতো মন শিথিলকরণ কৌশলগুলি অনুশীলন করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।

হাইড্রেটেড থাকাঃ প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়া শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখে।

উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খানঃ নিয়মিত খাবার তালিকায় শাক সবজি ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন ওটস ও শস্যাজাতীয় খাবার রাখবেন। এতে হজম ভালো হয়। আর হজম ঠিকমতো হলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অত্যাধিক ঘাম হয় না।

ফলঃ বাজারে বিভিন্ন ধরণের মৌসুমী ফল পাওয়া যায়। এর মধ্যে কিছু কিছু ফলে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। যেমন আপেল, আঙুর, তরমুজ, আনারস, কমলায় পানির পরিমাণ বেশি থাকে। এ ফলগুলো বেশি বেশি খাবেন। এতে পানি শূন্যতা যেমন দূর হয়, তেমনি শরীরে বাজে গন্ধ তৈরি হয় না।

অলিভ অয়েলঃ রান্নার কাজে অনেকে অলিভ অয়েল ব্যবহার করে থাকেন। অলিভ অয়েল শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে হজম ভালো রাখে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ঘাম কম হয়।

মেথি ভেজানো পানিঃ অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা দূর করতে মেথি ভেজানো পানি হতে পারে কার্যকরী উপাদান। এক চা চামচ মেথি এক গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন, পরদিন সকালে উঠে সেই পানিটুকু ছেঁকে খালি পেটে পান করুন। এতে অতিরিক্ত ঘামসহ আরও অনেক সমস্যা দূর হবে।

অ্যাপল সাইডার ভিনেগারঃ ঘাম নিয়ন্ত্রণ করতে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার বেশ কার্যকরী। ত্বকে ব্যবহার করে ঘাম নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি অ্যাপল সাইডার ভিনেগার নিয়মিত খাওয়ার ফলে ত্বকের পিএইচ স্তর ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

টমেটোর রসঃ এক সপ্তাহ টানা প্রতিদিন এক কাপ করে তাজা টমেটোর রস খেতে হবে। টমেটোতে আছে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট যা ঘাম গ্রন্থিকে সংকুচিত করে। তাছাড়া এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ঘাম নিয়ন্ত্রণ করে অতিরিক্ত ঘামানোর প্রবণতা কমিয়ে আনে।

মিশ্রণ ব্যবহারঃ ঘাম অতিরিক্ত হলে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন একটি বিশেষ মিশ্রণ। সারিভা, চন্দন, আমলকির গুঁড়া এবং গোলাপ জল একসঙ্গে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এরপর এটি ভালোভাবে গায়ে লাগিয়ে রাখুন, মিনিট বিশেক পর ধুয়ে ফেলুন।

চন্দনের ব্যবহারঃ চন্দন ব্যবহারের রয়েছে অনেক উপকারিতা। এটি ত্বকের যত্নে অনেকভাবে উপকার করে। সেইসঙ্গে অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা কমাতেও কাজ করে চন্দন। চন্দন বেটে নিন। এরপর শরীরের যে স্থানে ঘাম বেশি হয় সেখানে লাগিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টার মতো। এতে অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।

বেকিং সোডাঃ বেকিং সোডাও শরীরকে অতিরিক্ত ঘামের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। বেকিং সোডা প্রাকৃতিক ভাবে শরীরের ঘাম শোষণ করে ও দুর্গন্ধ কমায়। এছাড়া শরীরের যে অংশ বেশি ঘামে সেখানের পিএইচ লেভেলের মাত্রা কমাতেও বেকিং সোডা সাহায্য করে। পরিমাণমতো পানির সঙ্গে ১ টেবিল-চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। তারপর এই পেস্টের সঙ্গে পছন্দমতো তিন থেকে চার ফোঁটা সুগন্ধী তেল মিশিয়ে নিয়ে বগলে এবং যে সব জায়গা বেশি ঘামে সেসব জায়গায় লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে উপকার পাওয়া যাবে।

প্রাকৃতিক উপায়ে অতিরিক্ত ঘাম থেকে বাচার উপায়

বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ অতিরিক্ত ঘামের যন্ত্রণায় ভুগে থাকেন। হাত, পা, মুখ, বগল ঘামাকে ডাক্তারি ভাষায় হাইপারহাইড্রোসিস বা মাত্রাতিরিক্ত ঘাম বলা হয়। এটি এমন এক রোগ যা অনিয়ন্ত্রিত স্নায়ুপদ্ধতির জন্য হয়ে থাকে। প্রতিদিনের কাজকর্ম যেমন কম্পিউটার ব্যবহার, সঙ্গীতের যন্ত্রপাতি ব্যবহার, গাড়ি চালানো ইত্যাদি কাজ করতে গিয়ে বেশ বিপত্তি ঘটে। প্রাকৃতিক উপায়ে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আসুন প্রাকৃতিক উপায়ে অতিরিক্ত ঘাম থেকে বাচার উপায়গুলো জেনে নিই।

  • ভিটামিন বি-১২র অভাবে এই রোগ হয়। তাই ভিটামিন বি-১২ যেসব খাদ্যে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় সেসব খাদ্য গ্রহণ করুন ।ভিটামিন বি পরিবার যেমন, বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৫যুক্ত খাদ্য অথবা ভিটামিন বি ট্যাবলেট গ্রহণ করুন।
  • আয়োডিনযুক্ত খাবার যেমন, এসপারাগাস, ব্রকোলি, টারকি, গরুর মাংস, যকৃৎ, সাদা পেয়াজ, খাবার লবণ প্রভৃতি থেকে এটি হয়ে থাকে । তাই এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • বেশি বেশি পানি পান করুন। পানি দিয়ে মুখ, হাত, পা বারবার ধুয়ে ফেলুন।
  • শারীরিক দুর্বলতা থেকে এটি হয়ে থাকে। তাই পুষ্টিকর খাবার, শাকসবজি, ফলমূল বেশি পরিমাণে খান। 
  • চায়ের মধ্যকার টনিক এসিড প্রাকৃতিক ঘামবিরোধী ওষুধ হিসেবে কাজ করে। তাই দেড় লিটার পানির মধ্যে পাঁচটি চায়ের ব্যাগ মিশিয়ে সেটার মধ্যে ১০-১৫ মিনিট হাত-পা ভিজিয়ে রাখুন। তাছাড়া সবুজ চা পান করুন। এতেও উপকার পাবেন।
  • হাতে-পায়ে কোনও ধরনের পাউডার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন । কারণ এটি ঘাম দূর করার পরিবর্তে আরো বাড়িয়ে দেবে।
  • ক্যাফেইন পান, ধূমপান প্রভৃতি পান থেকে বিরত থাকুন কারণ এগুলো অতিরিক্ত ঘাম উৎপন্ন করে।
  • এভাবেও যদি কাজ না হয় তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের যে কোনও একটি পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।

ঘামের বিরক্তিকর অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসাবিজ্ঞান মেডিসিনিক্যেল এবং সারজিক্যেল দু উপায়েই চেষ্টা করে কিছু ঘামবিরোধী ক্রিম, ইনজেকশন, ইলেকট্রিক থেরাপি ও ড্রাইসল বের করেছে। সারজিকল চিকিৎসা হিসেবে অতিরিক্ত ঘাম উৎপাদনকারী স্নায়ুর বিশেষ অংশ কেটে ফেলে দেওয়া হয়। স্থায়ীভাবে ঘাম দূরীকারক এই পদ্ধতিটি তেমন সুবিধার নয়।
 
কারণ অপারেশনের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত এবং অপারেশন-পরবর্তী ওষুধে যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তাদের জীবনের ঝুঁকি থেকে যায়। তাই অতিরিক্ত ঘাম থেকে রক্ষা পেতে সাময়িক উপশমকারী ড্রাইসল বা অ্যালুমিনিয়াম কোরাইড হেক্সাড্রেট এলকোহোলিক সলুশনজাতীয় (ড্রাইসল) ওষুধ অনেক কার্যকর।

অতিরিক্ত মুখ ও মাথা ঘামার কারণ

অতিরিক্ত মুখ ও মাথা ঘামার কারণ হলো উদ্বেগ। মুখ এবং মাথায় ঘাম হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা এবং অন্যান্য অত্যধিক ঘামের ধরণের তুলনায় এটি আরও বেশি চাপ এবং বিব্রতকর হতে পারে। মুখ এবং মাথার অতিরিক্ত ঘাম ক্র্যানিওফেসিয়াল হাইপারহাইড্রোসিস নামে পরিচিত। এ সমস্যা যাঁদের রয়েছে, তাঁদের উদ্বেগ কমানোর ওষুধ বা সাইকোথেরাপি প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া হাইপার থাইরয়েডিজম রোগে ঘাম বেশি হয়, খুব গরম লাগে।
 
  • চরম মানসিক চাপ এবং উদ্বেগজনিত ব্যাধি।
  • নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণ।
  • হাইপারথাইরয়েডিজম (হরমোন)।
  • হাইপারহাইড্রোসিস আপনার পুরো শরীর বা নির্দিষ্ট কিছু অংশকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে আপনার হাতের তালু, তল, আন্ডারআর্ম বা মুখ।

 অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণ

অতিরিক্ত ঘাম (হাইপারহাইড্রোসিস) অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ মাত্রার ঘাম সৃষ্টি করে। এটি তাপ বা শারীরিক পরিশ্রমের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ঘটে। হাইপারহাইড্রোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত করা প্রয়োজন। আসুন অতিরিক্ত ঘামের কারণগুলি এবং সমাধানগুলি অন্বেষণ করি। হাইপার হাইড্রোসিস কে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়, প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। 

প্রাইমারিঃ প্রাইমারি হাইপার হাইড্রোসিস সাধারণত অতিরিক্ত তাপমাত্রা, কোন ক্লিনিক্যাল কন্ডিশন বা রোগ ছাড়াই হতে পারে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কিছু স্থানে হয়, যেমন হাতের তালু, পায়ের পাতা, মুখমন্ডল, আন্ডারআর্ম ইত্যাদি স্থানে হতে পারে। প্রাইমারি হাইপার হাইড্রোসিস এর সঠিক কারণ এখনো স্পষ্ট নয়, তবে ধারণা করা হয় যে এটি ঘাম গ্রন্থির অতিরিক্ত সক্রিয়তার ফলে হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি বংশগতও হতে পারে।

সেকেন্ডারিঃ অপরদিকে সেকেন্ডারি হাইপার হাইড্রোসিস সাধারণত কোন রোগ বা বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল কন্ডিশন বা কোন ঔষধ সেবনের কারণেও হতে পারে। এমন একটি ক্লিনিক্যাল কন্ডিশন হলো অ্যাক্রোমেগালি। এটি একটি বিরল কিন্তু গুরুতর এক রোগ। সাধারণত পিটুইটারি গ্রন্থি তে টিউমারের ফলে অতিরিক্ত গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ হয়ে এই রোগ দেখা দেয়। এর ফলে মানবদেহের নির্দিষ্ট কিছু অংশের অতিরিক্ত বৃদ্ধি ঘটে যেমন হাত, পা, কপাল, চোয়াল এবং নাক।

অন্যান্য কারণগুলো হলোঃ
  • ডায়াবেটিক হাইপোগ্লাইসেমিয়া
  • হাইপোথাইরয়েডিজম
  • লিউকেমিয়া
  • ম্যালেরিয়া
  • নানা রকম ইনফেকশন
  • কিছু বিটা ব্লকার এবং এন্টি ডিপ্রেসান্ট জাতীয় ঔষধ সেবন
  • মেনোপজ
  • নিউরোলজিক রোগ
  • ফিওক্রোমোসাইটোমা (একটি বিরল অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি টিউমার)
  • যক্ষ্মা
  • লিম্ফোমা (হাইপার হাইড্রোসিস এর একটি লক্ষণ লিম্ফোমা)

মুখের অতিরিক্ত ঘাম দূর করার উপায়

মুখের অতিরিক্ত ঘাম দূর করার উপায় সম্পর্কে আপনারা অনেকেই গুগল ও ইউটিউবে সার্চ করে থাকেন। শরীর ততোটা না ঘামলেও অতিরিক্ত মুখ ঘামার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। আর রোদে বের হলে তো কথাই নেই, ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা হয় অনেকেরই। আর মুখ ঘামার কারণে সানস্ক্রিন ও মেকআপও গলতে শুরু করে। অতিরিক্ত মুখ ঘামার নেপথ্যে একাধিক কারণ থাকে, যেমন জিনগত সমস্যা, হরমোনের ওঠাপড়া, দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠা থেকেও ঘামতে পারে আপনার মুখ।
মুখের-অতিরিক্ত-ঘাম-দূর-করার-উপায়
পাশাপাশি হাইপারথাইরয়েডিজম আছে যাদের, স্নায়ুঘটিত রোগ আছে, তাদেরও অতিরিক্ত মুখ ঘামে। এছাড়া স্থূলতার সমস্যা আছে যাদের, মুখ ঘামে তাদেরও। তবে মুখে ঘাম হওয়ার কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। এতে ত্বক ঠান্ডা থাকে, ক্ষতিকারক উপাদানগুলি বেরিয়ে যায়, রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে, দুশ্চিন্তা দূর হয়। আবার ঘামের কারণে মুখ চুলকাতে পারে, জলশূন্যতার সমস্যা বাড়তে পারে, অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। আসুন তাহলে জেনে নিন মুখের অতিরিক্ত ঘাম দূর করার উপায়।

বরফের টুকরোঃ পরিষ্কার একটা কাপড়ে কয়েক টুকরো বরফ নিয়ে নিন। তারপর সেই কাপড় বেঁধে নিয়ে মুখের উপর কিছুক্ষণ রেখে দিন। এমনটা করলে ত্বকের ছিদ্রগুলি বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে ঘাম আর হবে না।

ঠাণ্ডা পানিঃ মুখে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন। ঠান্ডা পানি লোমকূপের ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দেবে। যা অতিরিক্ত ঘাম হওয়া রোধ করবে। যখনই মুখে ঘাম হবে, তখন ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। বিশেষ করে গরমকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার অভ্যাস করুন। আপনি চাইলে বরফ কুচি মেশানো পানি দিয়ে মুখ ধুতে পারেন।

 শসার রসঃ শসা কুচি করে রস বের করুন। এটি ত্বকে ব্যবহার করুন। সারারাত এভাবে রাখুন। সকালে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যবহার করুন। শসার রস ঘাম হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে।এরসাথে ত্বকের কালো দাগ দূর করে থাকে।

পাউডারঃ ট্যালকম পাউডার মুখের অতিরিক্ত ঘাম শুষে নেয়। হাতের তালুতে কিছু পরিমাণ পাউডার নিয়ে সেটি ত্বকে ব্যবহার করুন। ট্যালকম পাউডার ব্যাগে রাখুন। যখন ত্বক অতিরিক্ত ঘেমে যাবে, তখন পাউডার ব্যবহার করুন। দেখবেন ঘাম হওয়া অনেকখানি কমে গেছে।

অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারঃ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারে অ্যালকালাইন উপাদান রয়েছে। এটি ঘাম নিয়ন্ত্রণে জাদুর মতো কাজ করে। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এবং পানি মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ত্বকে ব্যবহার করুন। সপ্তাহে একবার এটি ব্যবহার করুন।

অয়েল বেইজড প্রসাধনী এড়িয়ে চলুনঃ যে মেকআপ সামগ্রীগুলোতে অয়েল থাকে সেগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। ওয়াটার বেইজড মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণে এমনই মুখ তেলতেলে হয়ে থাকে। তার উপরে যদি তৈলাক্ত কোনও ক্রিম মুখ লাগান তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

মেকআপ কমঃ গরমকালে যতদূর পারেন মেকআপ এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে ক্রিম লাগানো থেকে বিরত থাকুন। গরমে ক্রিম ত্বককে আরও বেশি তৈলাক্ত করে তোলে। তাই গরমকাল যতদূর সম্ভব মেকআপ থেকে দূরে থাকুন।

অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায়

শরীরে কোনো রোগ না থাকার পরেও যদি অতিরিক্ত ঘাম হতে থাকে তবে বুঝবেন, স্নায়ুগ্রন্থির প্রভাবে ঘর্মগ্রন্থি অতিরিক্ত মাত্রায় সক্রিয় থাকার কারণেই এই অত্যাধিক ঘামের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, মেনোপোজ কিংবা উদ্বেগের কারণেও ঘাম বাড়তে পারে। এ জন্য আমাদের সচেতন থাকতে হবে। অস্বাভাবিক ঘাম কখনো কখনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে। অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায় হলোঃ

ব্যায়াম করাঃ ঘামের কারণে অনেকেই ব্যায়াম করতে ভয় পান। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর ঝরঝরে থাকে। সামান্য হাঁটাচলা করে বা বাসার কাজ করার মধ্য দিয়েও ব্যায়াম করা যায়। তাই বসে না থেকে ছোট ছোট কাজ নিজেই করে ফেলুন। প্রচুর পানি খান। সম্ভব হলে পাতলা সুতির জামা পরার চেষ্টা করুন।

সুতির পোশাক পরুনঃ গরমকালে ত্বকের স্বস্তির জন্য পোশাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিনথেটিক কাপড় ত্বকের জন্য স্বচ্ছন্দ নয়, ঘাম বেশি শুষে নেয়; যা আপনাকে শুধু অস্বস্তিতেই ফেলে না, বগলকে আরও ঘর্মাক্ত করে। তাই এ সময় সুতির কাপড় পরুন এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত। তাহলে আপনি কম ঘর্মাক্ত হবেন।

লেবুর রসঃ লেবু প্রাকৃতিক ডিওডরেন্ট হিসেবে কাজ করে। যা ঘাম থেকে তৈরি দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। এক গ্লাস পানিতে পরিমাণমতো লেবুর রস মিশিয়ে সেটা দিয়ে তোয়ালে ভিজিয়ে সারা শরীর ভালোভাবে স্পঞ্জ করে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করে ফেলতে হবে। এভাবে প্রতিদিনই গোসলের আগে গায়ে লেবুর রস মিশ্রিত পানি স্পঞ্জ করে নিতে হবে।

টমেটোর রসঃ টমেটোতে আছে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট যা ঘাম গ্রন্থিকে সংকুচিত করে। তাছাড়া এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ঘাম নিয়ন্ত্রণ করে অতিরিক্ত ঘামানোর প্রবণতা কমিয়ে আনে।এক সপ্তাহ টানা প্রতিদিন এক কাপ করে তাজা টমেটোর রস খেতে হবে। পরের সপ্তাহ থেকে এক দিন পরপর এককাপ করে টমেটোর রস পান করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তাছাড়া বেশি ঘাম হয় এমন স্থানগুলোতে টমেটোর রস লাগিয়ে ১০ বা ১৫ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করে নিলেই ঘাম কম হবে। ঘাম নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন এভাবে গোসল করলে উপকার পাওয়া যাবে।

অ্যাপল সাইডার ভিনেগারঃ ঘাম নিয়ন্ত্রণ করতে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার বেশ কার্যকরী। প্রথমে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া স্থানগুলো ভালো মতো পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর তুলার বলে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার নিয়ে ওই স্থানগুলোতে লাগিয়ে সারা রাত রেখে দিতে হবে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে গোসল করে পাউডার বা ডিউডরেন্ট লাগাতে হবে। এছাড়া চাইলে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস করলেও অতিরিক্ত ঘাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে এক গ্লাস পানিতে ২ টেবিল-চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনিগার ও ২ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিয়ে প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ তীব্র গরমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। লবণ ও পানি বেরিয়ে যায় বলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। তখন অনেক অ্যাসিডিটি হয়ে হাতের তালু, পায়ের পাতায় বেশি করে ঘাম হয়ে থাকে। তাই এই গরমে বেশি করে নিরাপদ খাবার পানি পান করা জরুরি। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে আপনার শরীর ঠান্ডা ও হাইড্রেট থাকবে। আর শরীর হাইড্রেট থাকলে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

মেথি ভেজানো পানিঃ অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা দূর করতে মেথি ভেজানো পানি হতে পারে কার্যকরী উপাদান। এক চা চামচ মেথি এক গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন, পরদিন সকালে উঠে সেই পানিটুকু ছেঁকে খালি পেটে পান করুন। এতে অতিরিক্ত ঘামসহ আরও অনেক সমস্যা দূর হবে।

মিশ্রণ ব্যবহারঃ ঘাম অতিরিক্ত হলে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন একটি বিশেষ মিশ্রণ। সারিভা, চন্দন, আমলকির গুঁড়া এবং গোলাপ জল একসঙ্গে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এরপর এটি ভালোভাবে গায়ে লাগিয়ে রাখুন, মিনিট বিশেক পর ধুয়ে ফেলুন।

খাবারে পরিবর্তনঃ অতিরিক্ত ঝাল এবং টক জাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। এর বদলে অল্প তেল-মসলায় তৈরি খাবার খান। খুব বেশি গরম খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। স্বাভাবিক তাপমাত্রার খাবার খান। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কয়েকটি কিশমিশ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই পানিটুকু খেয়ে নিন। তেতো এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার সম্ভব হলে একটু বেশি খাবেন। এতে ঘাম কম হবে।

উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খানঃ নিয়মিত খাবার তালিকায় শাক সবজি ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন ওটস ও শস্যাজাতীয় খাবার রাখবেন। এতে হজম ভালো হয়। আর হজম ঠিকমতো হলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অত্যাধিক ঘাম হয় না।

লাল চাঃ অতিরিক্ত ঘাম কমাতে লাল চা বেশ কার্যকারী। লাল চা’য়ে থাকা ট্যানিক অ্যাসিড ঘাম প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়া লাল চা ঘাম গ্রন্থি সংকোচন করে অতিরিক্ত ঘামানোর হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। তিন থেকে চার কাপ গরম পানিতে একটি বা দুইটি টি-ব্যাগ ভিজিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। তারপর ওই পানিতে পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে বগল ও গলায় লাগাতে হবে। তাছাড়া হাত ও পায়ের ঘাম নিয়ন্ত্রণ করতে একই পদ্ধতিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাত ও পা চা মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।

কোন ভিটামিনের অভাবে গা ঘামে

কোন ভিটামিনের অভাবে গা ঘামে হয়তো অনেকেই জানেন না। আজকে আমি আপনাকে জানাবো কোন ভিটামিনের অভাবে অতিরিক্ত গা ঘামে। আমাদের শরীরকে সুস্থ ও অতিরিক্ত ঘামা থেকে রক্ষা করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে ভিটামিন বি-১২। ভিটামিন বি-১২ এর অভাবে এনিমিয়া, ডায়রিয়া, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, বিষন্নতা ,বিরক্তি, স্মৃতিশক্তিরলোপ, পাওয়ার মতো অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। শতকরা ৪৭ ভাগ মানুষ ভিটামিন বি-১২ এর অভাবে ভোগেন। সাধারণত যে সকল লোক নিরামিষ ভোজি তাদের মধ্যে ভিটামিন বি-১২ এর অভাব অনেকবেশি

অতিরিক্ত গা ঘামলে খুবই অস্বস্তিকর মনে হয়। বিভিন্ন জায়গায় যে অতিরিক্ত শরীর ঘামলে মানুষ এটা নিয়ে অনেক হাসাহাসি করে। স্বাভাবিকের চেয়ে যদি আপনার অতিরিক্ত গা ঘামে তাহলে আপনার বিভিন্ন রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন স্নায়ু রোগ, ক্যান্সারজনিত সমস্যা ইত্যাদি। গা ঘামা খুবই বিরক্তকর একটি অবস্থা। অতিরিক্ত গা ঘামার কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ভিটামিনের অভাবেই গা ঘমার কারণ বলা সম্ভব নয়।

বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতি এবং অন্যান্য অনেক কারণে গা ঘামতে পারে। ভিটামিন ডি এর কারণেও গা ঘামাতে পারে। কারণ ভিটামিন ডি এর অভাবে বেশি ব্যাথা এবং দুর্বলতা সৃষ্টি হতে পারে যা শারীরিক পরিশ্রমের সময় ঘাম অনেক বৃদ্ধি করতে পারে। তবে যদি আপনি ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি পূরণ করতে পারেন তাহলে আপনার গা ঘামা থেকে মুক্তি পাবেন। তাই বেশি বেশি ভিটামিন বি-২ যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন মাছ, সবুজ শাক, দুধ, ডিম, কলা, তরমুজ, কামরাঙ্গা, পেঁপে, আম ইত্যাদি।

যদি আপনি এই সকল খাবার খেতে পারেন তাহলে আপনার ভিটামিন বি-১২ এর অভাব পূরণ হবে। এছাড়াও যাদের শরীর দুর্বল তারা আয়োডিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে পারেন। যেমন মাছ, মাংস ইত্যাদি। তাছাড়া পরিষ্কার পানি পর্যাপ্ত পরিমাণ খেতে পারেন। এতে করেও আপনার ঠান্ডা থাকবে এবং গা ঘামা থেকে মুক্তি পাবেন। আপনার যদি অতিরিক্ত ঘাম হয় তাহলে কারণ নির্ণয় করার জন্য অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। আশা করি কোন ভিটামিনের অভাবে গা ঘামে সেই বিষয়ে একটি সঠিক ধারণা পেয়েছেন।

অতিরিক্ত ঘাম দূর করার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

অতিরিক্ত ঘাম দূর করার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বেশ দীর্ঘস্থায়ী এবং ধৈর্য ধরে কমপ্লিট করতে হয়। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার কিছু ঔষধ আছে সেগুলো আপনি খেলে আপনার হাত পা ঘামা কমে আসবে, তবে দীর্ঘদিন ধরে এটি খেতে হবে আপনাকে। আপনার হাত- পা যত বেশী ঘামাক না কেনো এর একমাত্র চিকিৎসা হলো হোমিওপ্যাথ মেডিসিন। আজই দ্রুত কোনো ভালো হোমিও ডাক্তারের চিকিৎসা নিন, ১ সাপ্তাহ থেকে ৪ সাপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ন রোগ মুক্ত হবেন ইনশাআল্লাহ।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ঔষধ হিসেবে আপনি r32 dr.reckeweg এর হাইপারহাইড্রোসিস ড্রপটি সেবন করতে পারেন। এটি খুবই কার্যকারী একটি জার্মানি অতিরিক্ত ঘাম কমানোর ঔষধ। এটি আপনাকে প্রতিদিন ১০-১৫ ফোটা ৩ বেলা খেতে হবে এবং ১-২ মাস সেবন করলে আপনি অবশ্যই ফলাফল পাবেন। তবে মনে রাখবেন হোমিওপ্যাথি ঔষধ ধৈর্য ধরে কমপ্লিট করতে হয় নয়তো উপকার পাবেন না।

অতিরিক্ত ঘামের জন্য যাদের পায়ে বা শরীরের বিভিন্ন অংশে দুর্গন্ধ হয়, হোমিওপ্যাথি ওষুধ দ্বারা সেটা সহজেই নির্মূল করা যায়। অতিরিক্ত ঘামের জন্য বাচ্চাদের সর্দি, কাশির সমস্যা সহজেই সারানো যায় হোমিওপ্যাথি ওষুধ দ্বারা। তবে রোগ সারাতে গেলে অবশ্যই রোগীর রোগ লক্ষণ বিবেচনা করে তবেই ওষুধ নির্বাচন করতে হবে, কারণ হোমিওপ্যাথিতে রোগের নয়, রোগীর চিকিৎসা করা হয়। যে সমস্ত ওষুধ সাধারণত ব্যবহার করা হয় সেগুলি হল—

ক্যালকেরিয়া কার্ব ২০০ঃ মাথার ত্বকের অতিরিক্ত ঘামের জন্য কার্যকরী, এমনকি ঘুমের ও দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিত্সা করে।

Silicea ২০০ঃ হাত, পা এবং বগলে দুর্গন্ধযুক্ত ঘামের জন্য সর্বোত্তম, ঘর্মাক্ত হাতের কারণে লিখতে এবং ধরতে অসুবিধা সহ।

মার্কিউরিয়াস সল ৩০ঃ সারা শরীরে ঘাম হয় যা খারাপ আপত্তিকর বা টক গন্ধ দ্বারা চিহ্নিত, দুর্বলতা, তৃষ্ণা বৃদ্ধি এবং অত্যধিক লালা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

সোরিনাম ২০০ এবং সালফার ২০০ঃ উভয় প্রতিকারই প্রচুর, অত্যন্ত আপত্তিকর ঘামের জন্য উপযুক্ত। সোরিনাম উষ্ণ আবহাওয়াতেও ঠান্ডা অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে কার্যকর, অন্যদিকে সালফার যারা তাপের প্রতি সংবেদনশীল, তাদের হাতের তালু, তলায় এবং মাথায় অতিরিক্ত তাপ এবং ঘাম হয়।

বোভিস্টা ৩০ঃ বগল থেকে পেঁয়াজের মতো আপত্তিকর ঘাম নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

হিপার সাল্প ৩০ঃ দুর্গন্ধযুক্ত বগলের ঘামের চিকিৎসা করে যা কাপড়ে হলুদ দাগ ফেলে।

পেট্রোলিয়াম ৩০ঃ আপত্তিকর ঘামের চিকিত্সা করে, বিশেষ করে একটি ঘরে প্রবেশ করার সময় লক্ষণীয়।

বেনজোয়িক অ্যাসিড ৩০ঃ ঘোড়ার প্রস্রাবের মতো উচ্চ রঙের, আপত্তিকর প্রস্রাবের সাথে প্রচুর ঘামের জন্য কার্যকর।

পালসেটিলা নিগ ৩০ঃ শরীরের এক অংশ গরম এবং অন্যটি ঠান্ডা সহ স্থানীয় ঘামের জন্য উপযুক্ত।

স্যানিকুলা ৩০ঃ শিশুদের মাথায রাতে ঘামের জন্য আদর্শ চিকিৎসা, পায়ের আপত্তিকর ঘাম এবং শুধুমাত্র আবৃত শরীরের অংশে ঘাম।

জাবোরান্ডি ৩০ঃ মুখ এবং মাথা থেকে শুরু করে ব্যাপক ঘাম, তারপরে ঠান্ডা এবং টক শ্লেষ্মা বমি ভাব দূর করে।

ক্যালাডিয়াম ৩০ঃ মিষ্টি-গন্ধযুক্ত ঘামের জন্য উল্লেখযোগ্য যা মাছিকে আকর্ষণ করে।

থুজা ওসিডেন্টালিস ২০০ঃ শরীরের অনাবৃত অংশে ঘামের জন্য সর্বোত্তম, তৈলাক্ত, মিষ্টি গন্ধ সহ, বিশেষত যৌনাঙ্গের চারপাশে এবং শুধুমাত্র শরীরের একপাশে।

এই প্রতিকারগুলি বিভিন্ন ধরণের অত্যধিক এবং সমস্যাযুক্ত ঘামের জন্য লক্ষ্যযুক্ত সমাধান সরবরাহ করে।

ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায়

ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায় বা প্রথম শর্তই হল নিজেকে পরিষ্কার রাখা। রোজ স্নান করতে হবে, তাও সাবান মেখে। তার সঙ্গে যদি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল কিছু জলে মেশানো যায় তাহলে তো কথাই নেই। এর ফলে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের সম্ভাবনা কমবে। স্নান করে পরিষ্কার হয়ে তবেই ডিও বা পাউডার ব্যবহার করবেন। মনে রাখবেন ঘামের কিন্তু নিজের কোনও গন্ধ হয় না। এটার সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া মিশলে তবেই গন্ধ ছড়ায়।
ঘামের-দুর্গন্ধ-দূর-করার-ঘরোয়া-উপায়
অনেকেই ঘামের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ডিও ব্যবহার করেন। ঘামের গন্ধ তো দূর হয়ই না, বরং দুটো মিশে গিয়ে একটা অদ্ভুত গন্ধ বের হতে থাকে। তাই যদি আপনি ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে চান তাহলে আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। এতে আপনাকে যেমন নিয়ম মেনে বগল পরিষ্কার করতে হবে, তেমনই ঘামের গন্ধ কমার সঙ্গে নিজেকে ফ্রেশ এবং কনফিডেন্ট থাকতে হবে। একই সঙ্গে কমবে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। তাই কী করে এই সমস্যা দূর করবেন দেখে নিন।

০১। আর্ম পিট বা বগলে এপোক্রাইন গ্ল্যান্ড অনেক বেশি থাকে। ফলে ঘামের উৎপত্তি ও দূর্গন্ধ এখান থেকেই অনেক বেশি লক্ষ করা যায়।
  • আর্ম পিট পরিষ্কার রাখুন – প্রতিদিন anti-bacterial সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন। এতে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমন কম হবে আর ঘামও কম হবে। ফাইনাল ফলাফল শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ কম হবে।
  • আর্ম পিটের লোম পরিষ্কার করুন – বগলের লোম জমে থাকা ঘামকে বাষ্পীভূত হতে দেয় না, ব্যাকটেরিয়া অনেক সময় ধরে দূর্গন্ধ তৈরি করে। তাই নিয়মিত আর্ম পিট ওয়াক্স করুন।
  • Deodarant ব্যবহার – Deodarant ত্বককে আরও বেশি এসিডিক করে তোলে, যা ব্যাকটেরিয়ার জন্য অগ্রহণযোগ্য অবস্থা। Antiperspirant গ্লান্ডের sweating কার্যকারিতাকে বন্ধ করে দেয় ফলে শরীরে কম ঘাম হয়।
০২। প্রতিদিন অন্তত একবার গোসল করুন। মনে রাখবেন গরম পানি শরীরে থাকা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে আর যদি আবহাওয়া গরম থাকে তাহলে চেষ্টা করবেন কয়েকবার গোসল করে নিতে।

০৩। ন্যাচারাল ফাইবার যুক্ত কাপড় পরিধান করুন সিল্ক, সুতি জাতীয় কাপড় ত্বককে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দেয়। ফলে ঘাম সহজে বাস্পায়িত হতে পারে।

০৪। পায়ে ঘামের দুর্গন্ধ থাকলে জুতা খোলার সঙ্গে সঙ্গে সবার সামনে নিজেকে কি বিব্রতকর অবস্থাতেই না পড়তে হয়।

  • পায়ের তালুতে গরম পানির ছোঁয়াঃ আগেই বলেছি গরম পানি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। তাই প্রতিদিন অন্তত একবার হালকা গরম পানি দিয়ে পা ধুয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন।
  • মোজাঃ  মোজার কাপড়টা এমন হওয়া উচিত যেন বাতাস এর ভেতর দিয়ে আসা যাওয়া করতে পারে। উল আর ম্যানমেড ফাইবারের সংমিশ্রণে তৈরি মোজাই উৎকৃষ্ট। প্রতিদিন পরিষ্কারভাবে ধোয়া মোজা পরবেন।
  • জুতাঃ চামড়ার জুতা পায়ের ঘাম বাষ্পীভূত হতে সাহায্য করে। পর পর দুইদিন একই জুতা পরবেন না, কারণ জুতার ভেতরের ঘাম শুকানোর জন্য এক রাত যথেষ্ট না।
০৫। লেবুর সাথে মধুর সংমিশ্রণ ঘামের দুর্গন্ধ প্রতিরোধের অন্যতম প্রধান ঘরোয়া উপায়। খুবই সিম্পল একটি বাটিতে হালকা গরম পানি নিন, তাতে ২ টেবিল চামচ মধু আর ৩ টেবিল চামচ লেবুর রস নিন। তারপর আপনার যেসব স্থান ঘামে সে সব জায়গায় এই সলিউশন দিয়ে রিন্স করে নিন। তারপর শুকনো তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলুন। লেবু শরীরে ঘামের পরিমান কমিয়ে আনে।

০৬। ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে বেকিং সোডা অনেক উপকারী। একে ট্যালকম পাউডারের মতো ব্যবহার করা যেতে পারে। পায়ে বা আন্ডারআর্ম থেকে দুর্গন্ধ হলে তা লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। তারপর ভেজা ওয়াইপের সাহায্যে মুছে ফেলুন। ১ কাপ পানিতে ১ চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। এবার পারফিউমের মতো তা স্প্রে করুন। চাইলে এটি পায়েও স্প্রে করা যেতে পারে। এতে দুর্গন্ধের সমস্যা দূর হবে।

০৭। আপনি শুনে হয়ত অবাক হবেন যে ভিনেগার অতিরিক্ত ঘামের পরিমাণ অনেক কমিয়ে আনে। রাতে ঘুমানোর আগে ভিনেগার আপনার আর্ম পিটে লাগিয়ে ঘুমান আর সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত করতে থাকলে আস্তে আস্তে আপনি ঘামের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।

০৮। টমেটো ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে খুবই উপযোগী। দুই থেকে তিনটি টমেটোর রস বের করে একটি বালতির মধ্যে ঢেলে নিন। এবার ওই পানি গোসলের জন্য ব্যবহার করুন। যদি হাত-পা থেকেও দুর্গন্ধ হয়, তাহলে এ পানিতে হাত-পা ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা কোনো দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সহায়তা করে।

০৯। নিম এক্সট্রাকট একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী যা শরীরের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। একটি বাটিতে ফুটন্ত গরম পানি নিয়ে তাতে কিছু নিমের পাতা ছেড়ে দিন। তারপর অপেক্ষা করুন ২০ মিনিট। এই কয় মিনিটে নিম পাতা থেকে সমস্ত নির্যাস বের হয়ে যাবে আর পানিও একটু ঠাণ্ডা হয়ে আসবে। এবার শুকনো তোয়ালে এই পানিতে ডুবিয়ে আপনার যেসব স্থান ঘামে সেসব স্থান মুছে নিন।

১০। ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে গ্রিন-টিও দারুণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একটি প্যানে পানি বসিয়ে গরম করে নিন। এবার এতে গ্রিন-টির পাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। ফুটে উঠলে গ্যাস বন্ধ করে ঠান্ডা হতে দিন। এবার এ চা পাতার পানিতে একটি তুলোর বল ডুবিয়ে শরীরে লাগান। যেখানে অতিরিক্ত ঘাম হয়, সেখানে ঘষে দিন। ম্যাজিকের মতো কাজ করবে।

১১। যদিও এটা আমাদের দেশে সহজলভ্য নয় তবুও কেউ যদি পেয়ে থাকেন তবে ঘামের দুর্গন্ধ সারাবার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। টি ট্রি অয়েলও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার জন্য উপকারী। একটি স্প্রে বোতলে পানি ভরুন তারপর এর সাথে ৩ ফোটা অয়েল মিশান। প্রতিদিন গোসল করার আগে ব্যবহার করুন।

১২। গোসল করার আগে বালতিতে কিছু পুদিনা পাতা বা কয়েক ফোঁটা গোলাপ পানি দিন। তারপর ঐ পানি দিয়ে গোসল করুন। এতে তাৎক্ষনিকভাবে আপনার শরীর deoderize হবে।

১৩। সব সময় নিজেকে শুকনো রাখার চেষ্টা করুন। গোসল করার পর ভালোভাবে শরীর শুকিয়ে ভালো মানের deodarant ব্যবহার করুন।

১৪। শশাতে পানির ভাগ বেশি থাকে যা শরীরের গন্ধ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন একটি করে শশা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

১৫। ডায়টেশিয়ানের মতে সালফিউরিক সম্মৃধ খাবার যেমন ব্রকলি, বাধাকপি, ফুলকপি পরিমাণে কম খেতে হবে। কারণ এগুলোতে মিনারেল সালফার থাকে যা গন্ধযুক্ত গ্যাস আমাদের ত্বকের সাহায্যে নির্গত করে।

আমাদের ত্বকে কিছু ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে যখন তারা এপোক্রাইন গ্ল্যান্ড ও ইকক্রাইন গ্ল্যান্ড থেকে নির্গত ঘাম ভেঙ্গে প্রপানয়িক এবং ভ্যালেরিক এসিডে রূপান্তরিত করে তখন ঘামের দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। অনেকে বলে থাকেন, ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে গেলে এমনটি হয় কিন্তু আসলে যখন ব্যাকটেরিয়া প্রোটিনকে এসিডে পরিণত করছে তখনি এমনটি হয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়া তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ বা আবহাওয়া না পেলে প্রোটিন ভাঙতে থাকে। এমনকি সোডিয়ামযুক্ত খাবার বেশি খেলেও এমনটি হয়।

তাহলে কিভাবে শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করবেন এই ব্যাপারে আর কোন সংশয় থাকার কথা না। কারণ উপরের সাধারন প্রাকৃতিক উপায় আর টিপস আপনাকে মুক্তি দিবে সকল বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে আর আপনিও থাকবেন প্রতিনিয়ত ক্লিন আর ফ্রেশ।

অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ সে সম্পর্কে শেষ কথা

অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ, অতিরিক্ত ঘাম থেকে বাঁচার উপায়, কোন ভিটামিনের অভাবে গা ঘামে, অতিরিক্ত ঘাম দূর করার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি। আশা করছি অতিরিক্ত ঘাম থেকে কি কি সমস্যা সৃষ্টি হয় ও অতিরিক্ত ঘামের কারনে কোন কোন রোগের লক্ষণ দেখা দেয় বা কি রোগ দেখা দেয় তা ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন।

অত্যধিক ঘাম শারীরিক অস্বস্তি, মানসিক কষ্ট এবং সামাজিক বিব্রতকর পরিস্থিতির কারণ হতে পারে। শরীরের পোশাকে দৃশ্যমান ঘামের দাগ এবং শরীরের ব্যাড স্মেলের কারণে ব্যক্তি আত্মসম্মানবোধ হীনতায় ভোগেন। এছাড়া আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে পারে। এটি ব্যক্তিগত ও পেশাদার সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া সীমিত করতে পারে এবং দৈনন্দিন কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাছাড়াও, ক্রমাগত ঘাম ত্বকের ইনফেকশন এবং অন্যান্য জটিলতার কারণ হতে পারে।

যদিও অত্যধিক ঘামের কারণে অনেকরকম চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে, তারপরেও শরীরের জন্য ঘামের উপকারিতাও রয়েছে। ঘাম বাষ্পীভবনের মাধ্যমে ত্বক ঠান্ডা করে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ব্যায়ামের সময় ঘাম শরীরকে অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। ত্বকের সূক্ষ্ম ছিদ্র গুলো দিয়ে ঘামের মাধ্যমে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ নির্গমন করে ত্বক ব্রণ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url