পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়



পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় জানা থাকলে প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি থেকে নিরাময় পাওয়া সম্ভব। অন্যথায় জটিল হয়ে গেলে এটি থেকে পরিত্রাণ পেতে অপারেশন করতে হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে পাইলস খুবই পরিচিত একটি রোগের নাম। যে কোনো বয়সের নারী ও পুরুষের এ রোগ হতে পারে।
পাইলস-থেকে-চিরতরে-মুক্তির-উপায়
সঠিক সময়ে পাইলসের সঠিক চিকিৎসা করতে হলে জানতে হবে পাইলস কী, পাইলসের লক্ষণ, এ রোগ হলে কী কী সমস্যা হয় ও এর প্রতিকারগুলো কী। আজকের এই আর্টিকেলে এসমস্ত বিষয় সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

পেইজ সুচিপত্রঃ কিভাবে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পাবেন জেনে নিন

পাইলস এর লক্ষণগুলো কী কী

পাইলস এর লক্ষণগুলো কী কী এই বিষয় জানা আপনার জন্য অত্যান্ত জরুরী, কেননা এটি জানার মাধ্যমে আপনি পাইলসের প্রথমিক লক্ষনগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন। পাইলস রোগে যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হচ্ছে- পায়ুপথের অন্ত্র বা ভেতরের পাইলস রোগে সাধারণত তেমন কোনো ব্যথা বেদনা, অস্বস্তি থাকে না। অন্যদিকে পায়ুপথের বহিঃঅর্শরোগে পায়ুপথ চুলকায়, বসলে ব্যথা করে, পায়খানার সঙ্গে টকটকে লাল রক্ত দেখা যায়।

শৌচ করার টিস্যুতে তাজা রক্ত লেগে থাকে, মলত্যাগে ব্যথা লাগা, পায়ুর চারপাশে এক বা একের অধিক থোকা থোকা ফোলা থাকে। পাইলস বা অর্শ রোগের লক্ষনগুলোর মধ্যে অন্যতম  চারটি লক্ষণ নিচে তুলে ধরা হলো। এসব লক্ষণ দেখা দিলে আপনার জন্য চিকিৎসা শুরু করা অত্যান্ত জরুরি।

১। পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়াঃ পাইলস হলে পায়খানার সাথে উজ্জ্বল লাল বর্ণের অর্থাৎ তাজা রক্ত যেতে পারে। সাধারণত পায়খানার পরে টয়লেট পেপার ব্যবহার করলে সেখানে রক্তের ফোটা লেগে থাকতে পারে। অথবা কমোডে বা প্যানের গায়ে টকটকে লাল রক্তের ছোপ দেখা যেতে পারে।। পাইলস হলে পায়ুপথের মুখে থাকা অ্যানাল কুশনগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হয়। এই রক্ত বেরিয়ে গিয়ে জমাট বাধার সুযোগ পায় না। এ কারণে এক্ষেত্রে তাজা লাল রঙের রক্ত দেখা যায়।

কিন্তু যদি কোনো কারণে পায়খানার সাথে গাঢ় খয়েরী রঙের রক্ত যায়, বা আলকাতরার মতো কালো ও নরম পায়খানা হয়, তবে তা সাধারণত পাইলস এর কারণে নয়। পরিপাকতন্ত্রের কোনো অংশে রক্তপাতের কারণে পায়খানার সাথে এমন গাঢ় রক্ত যেতে পারে, তাই এমনটা হলে রক্তপাতের কারণ জানার জন্য দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

২। পায়ুপথের মুখের অংশগুলো বেরিয়ে আসাঃ পাইলস হলে সাধারণত মলত্যাগের পরে অ্যানাল কুশনগুলো নরম গোটার মতো বের হয়ে আসে। এগুলো কিছু সময় পর নিজে নিজেই ভেতরে ঢুকে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে এগুলো আঙ্গুল দিয়ে ভেতরে ঢোকানোর প্রয়োজন হতে পারে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে পাইলস এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে আঙ্গুল দিয়েও গোটাগুলো ভেতরে ঢোকানো যায় না।

৩। পায়খানার রাস্তায় ব্যথা হওয়াঃ পাইলস রোগে সাধারণত তীব্র ব্যথা হয় না। তবে যদি পায়ুপথের গোটা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে সেগুলো আঙুল দিয়ে ঠেলেও ভেতরে ঢোকানো না যায়, এবং সেগুলোতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে অনেক সময় তীক্ষ্ণ বা তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত ১-২ দিন স্থায়ী হয়। ব্যথা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া বিশেষ প্রয়োজনে ঘরোয়া উপায়ে ব্যথার চিকিৎসা করা যায়।

৪। পায়খানার রাস্তায় চুলকানিঃ
 পাইলস হলে কখনো কখনো পায়ুপথে বা এর মুখের আশেপাশে চুলকানি হতে পারে। এছাড়া পায়ুপথ দিয়ে মিউকাস বা শ্লেষ্মা-জাতীয় পিচ্ছিল ও আঠালো পদার্থ বের হতে পারে। অনেক সময় মলত্যাগ করে ফেলার পরও বারবার মনে হতে পারে যে পেট পরিষ্কার হয় নি, আবার মলত্যাগ করা প্রয়োজন।

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় হলো খাদ্যাভ্যাস ও জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন। নিয়মিত ব্যায়াম ও প্রচুর পানি পান করাও জরুরি। পাইলস বা হেমোরয়েডের সমস্যা অনেকের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। এটি মূলত মলদ্বারের শিরাগুলোর ফোলাভাব ও প্রদাহজনিত একটি সমস্যা। এই পোস্টের মাধ্যমে আমি আপনাকে জানাবো পাইলস থেকে কিভাবে চিরতরে মুক্তি পাবেন এই বিষয়ে।

প্রাথমিক অবস্থায় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও পর্যাপ্ত পানি পান করলে উপকার পাওয়া যায়। আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া ও প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করাও পাইলস প্রতিরোধে সাহায্য করে। তীব্র অবস্থায় সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। পাইলসের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চলা অপরিহার্য।

পাইলস প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি সঠিক জীবনযাপন ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। পাইলসের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে প্রয়োজন কিছু নিয়ম মেনে চলা। নিচে পাইলস প্রতিরোধের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় উল্লেখ করা হলো।

জীবনযাত্রার ভূমিকাঃ জীবনযাত্রার ধরন পাইলসের একটি বড় কারণ। দীর্ঘ সময় বসে থাকলে পাইলস হতে পারে। কাজের চাপ বেশি হলে সময়মতো মলত্যাগ করা কঠিন হয়। এ ধরনের জীবনযাত্রা পাইলসকে বাড়াতে পারে।

খাদ্যাভ্যাসের প্রভাবঃ খাদ্যাভ্যাসও পাইলসের একটি বড় কারণ। ফাইবার কম থাকা খাবার পাইলসের ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন, ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার। জল কম পান করলে পাইলসের সম্ভাবনা বাড়ে। নিয়মিত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে পাইলসের ঝুঁকি কমে।

  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া পাইলস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • প্রচুর জল পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

প্রাথমিক প্রতিকারঃ
 পাইলস রোগ থেকে মুক্তি পেতে প্রাথমিক প্রতিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ঘরোয়া উপায় ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা অনুসরণ করলে পাইলসের উপশম সম্ভব। নিচে এই বিষয়গুলো বিশদভাবে আলোচনা করা হলো।

০১.ঘরোয়া উপায়
  • আলুর রসঃ আলুর রস পাইলসের ব্যথা ও ফোলাভাব কমায়। আলুর রস ব্যথার স্থানে লাগান।
  • তুলসী পাতাঃ তুলসী পাতার রস পাইলসের উপশমে কার্যকর। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি চামচ তুলসী পাতার রস খান।
  • দুধ ও মধুঃ দুধ ও মধুর মিশ্রণ পাইলসের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস দুধের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন।
০২.প্রাকৃতিক চিকিৎসা
  • পানি পানঃ প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। এটি পাইলসের উপশমে সহায়ক।
  • আঁশযুক্ত খাবারঃ আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাক-সবজি, ফলমূল বেশি করে খান। এটি পাইলস কমাতে সাহায্য করে।
  • ব্যায়ামঃ নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে এবং পাইলসের ঝুঁকি কমায়।
 
ঔষধ ও মেডিকেশনঃ পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির জন্য ঔষধ ও মেডিকেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাইলসের চিকিৎসায় ঔষধ ও মেডিকেশন বিভিন্ন ধরণের হতে পারে।

অপারেশনের প্রয়োজনীয়তাঃ প্রথমে ডাক্তারকে দেখান। যদি ঔষধ কাজ না করে, অপারেশন লাগতে পারে। পাইলসের অপারেশন অনেক সময় অত্যন্ত কার্যকর হয়। কিন্তু সবক্ষেত্রে এটি প্রয়োজন হয় না।

ঔষধের ব্যবহারঃ পাইলসের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরণের ঔষধ ব্যবহার হয়। চলুন দেখে নিই কোন ঔষধগুলি কার্যকর হতে পারে।

  • প্রতিবন্ধক ঔষধঃ ব্যথা এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
  • স্টেরয়েড ক্রিমঃ এটি স্থানীয়ভাবে প্রয়োগ করা হয়। এটি ফোলাভাব কমায়।
  • ফাইবার সাপ্লিমেন্টঃ এটি মলকে নরম করে।

মলমঃ এটি স্থানীয়ভাবে প্রয়োগ করা হয়। এটি ব্যথা কমায়। ঔষধ ব্যবহারের সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।
  • প্রতিবন্ধক ঔষধ ব্যথা এবং ফোলাভাব কমাতে
  • স্টেরয়েড ক্রিম ফোলাভাব কমাতে স্থানীয়ভাবে প্রয়োগ
  • ফাইবার সাপ্লিমেন্ট মলকে নরম করতে
  • মলম স্থানীয়ভাবে প্রয়োগ করে ব্যথা কমাতে

জীবনযাপনে পরিবর্তনঃ পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে জীবনযাপনে পরিবর্তন অপরিহার্য। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম পাইলস প্রতিরোধে সহায়ক। নিচে আমরা খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক ব্যায়ামের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করব।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনঃ খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন করলে পাইলস থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য পাওয়া যায়। নিচে কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হলো:

  • আঁশযুক্ত খাবারঃ প্রতিদিন আঁশযুক্ত খাবার খান। যেমন, শাকসবজি, ফলমূল, এবং গোটা শস্য।
  • পানি পানঃ পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এটি মল নরম রাখতে সাহায্য করে।
  • মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুনঃ মশলাযুক্ত খাবার পাইলসের সমস্যা বাড়ায়।
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুনঃ প্রক্রিয়াজাত খাবার পাইলসের উপসর্গ বাড়ায়।

শারীরিক ব্যায়ামঃ শারীরিক ব্যায়াম পাইলস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে কিছু কার্যকর শারীরিক ব্যায়াম উল্লেখ করা হলো:

  • হাঁটাঃ প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।
  • যোগব্যায়ামঃ যোগব্যায়াম করলে পাইলসের উপসর্গ লাঘব হয়।
  • কেগেল ব্যায়ামঃ এই ব্যায়াম পাইলসের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • তলপেটের ব্যায়ামঃ তলপেটের ব্যায়াম করলে পাইলসের উপসর্গ কমে।

সার্জারি ও অপারেশনঃ পাইলস থেকে মুক্তি পেতে সার্জারি একটি কার্যকর উপায়। বিভিন্ন ধরণের সার্জারি পদ্ধতি রয়েছে যা রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে প্রয়োগ করা হয়। এই পর্বে আমরা আলোচনা করবো সার্জারি ও অপারেশনের ধরণ এবং পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সম্পর্কে।

সার্জারির ধরণঃ পাইলস সার্জারির বিভিন্ন ধরণ আছে। প্রতিটি ধরণের সার্জারি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে করা হয়। কিছু সাধারণ সার্জারি ধরণের নাম ও বিবরণ নিচে দেওয়া হল:

  • হেমোরয়েডেকটমিঃ সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি। আক্রান্ত টিস্যু সরিয়ে ফেলা হয়।
  • স্ট্যাপলড হেমোরয়েডেকটমিঃ টিস্যু সরানোর পরিবর্তে, পাইলস অংশকে স্ট্যাপল করা হয়।
  • লেজার সার্জারিঃ লেজারের সাহায্যে পাইলস টিস্যু ধ্বংস করা হয়।
  • রাবার ব্যান্ড লিগেশনঃ পাইলস টিস্যুর চারপাশে রাবার ব্যান্ড লাগানো হয়।

পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াঃ সার্জারির পর পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ। এটি রোগীর সার্জারি পরবর্তী স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার কিছু ধাপ নিচে দেওয়া হল:

  • প্রাথমিক বিশ্রামঃ সার্জারির পর প্রথম কয়েক দিন বিশ্রাম জরুরি।
  • ব্যথানাশক ওষুধঃ ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
  • পুষ্টিকর খাদ্যঃ পুষ্টিকর এবং হালকা খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
  • নিয়মিত চেকআপঃ ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চেকআপ করা জরুরি। সঠিক যত্ন এবং পরামর্শ মেনে চললে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

পুনরুদ্ধার ও পরিচর্যাঃ পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, পুনরুদ্ধার ও পরিচর্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় সঠিক পরিচর্যা ও যত্ন নিলে পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব।

পুনরুদ্ধারের টিপসঃ

  • পর্যাপ্ত জল পানঃ প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন। এটি মল নরম রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।
  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারঃ আপনার খাদ্যতালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। শাকসবজি, ফলমূল ও গোটা শস্য খান।
  • ব্যায়াম করুনঃ প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং মলত্যাগ সহজ করে।
  • সিটজ বাথঃ প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট সিটজ বাথ নিন। এটি ব্যথা ও অস্বস্তি কমায়।
  • মলত্যাগের সময় চাপ দেয়া এড়িয়ে চলুনঃ মলত্যাগের সময় চাপ দেয়া এড়িয়ে চলুন। এটি পাইলস সমস্যা বাড়াতে পারে।
পুনরাবৃত্তি এড়ানোঃ
  • প্রচুর জল পানঃ প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস জল পান করুন।
  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারঃ দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ফাইবার যুক্ত করুন।
  • নিয়মিত ব্যায়ামঃ প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন।
  • অতিরিক্ত ওজন এড়িয়ে চলুনঃ অতিরিক্ত ওজন পাইলস সমস্যা বাড়ায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • মলত্যাগের সময় দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এড়িয়ে চলুনঃ দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা পাইলসের ঝুঁকি বাড়ায়।
সুস্থ জীবনযাত্রাঃ সুস্থ জীবনযাত্রা পাইলস প্রতিরোধে সহায়ক। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ
  • সবজি
  • ফলমূল
  • সম্পূর্ণ শস্য
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাও জরুরি। পানির অভাবে মল কঠিন হয়ে যেতে পারে। এতে পাইলসের আশঙ্কা বাড়ে। নিয়মিত ব্যায়াম করাও জরুরি। ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।

নিয়মিত চেকআপঃ নিয়মিত চেকআপ পাইলস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় সমস্যা শনাক্ত করা যায়। প্রথম থেকেই চিকিৎসা শুরু করলে পাইলসের সমস্যা বাড়তে পারে না। প্রায়ই ডাক্তারদের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান।স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর সময় কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাইলসের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকুন। প্রাথমিক অবস্থায় সমস্যা শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসা সহজ হয়।

পাইলস দূর করার ঘরোয়া উপায়

পাইলস দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো হলো খাদ্যাভাসে ব্যপক পরিবর্তন, ব্যায়াম, জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন ইত্যাদির মাধ্যমে পাইলস দূর করা সম্ভব। এই রোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ হল মলদ্বারের চারপাশে রক্ত জমাট বাঁধে এবং মলত্যাগ করার সময় রক্তপাত ঘটে, মল না থাকলেও মলদ্বারের আশেপাশে ব্যথা এবং জ্বালা হতে থাকে। অর্শ্বরোগ খুবই সাধারণ একটি সমস্যা।

যদি দীর্ঘ সময় ধরে এর চিকিৎসা না করা হয় তাহলে এটি রক্ত ক্ষয়, টিস্যু মৃত্যু এবং এমনকি পায়ুছিদ্রে বা কলোরেকটাল ক্যান্সারের মতো রোগে পরিণত হতে পারে। পাইলসের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। পাইলস বিভিন্ন কারণে হয়, যেমন বংশগত, কোষ্ঠকাঠিন্য, কম ফাইবার ডায়েট, ভার উত্তোলন, স্থূলতা, খাদ্য এলার্জি, শারীরিক কার্যকলাপের অভাব, গর্ভাবস্থা, এবং দীর্ঘক্ষন বসে থাকা বা দাঁড়ানো ইত্যাদি কারণ। এই সমস্যা একবার দেখা দিলে পুরোপুরি দূর করা মুশকিল। তাই পাইলসের সমস্যায় শুরুতেই সচেতন হওয়া জরুরি।

নয়তো পরবর্তীতে তা আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে। পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া কিছু উপায় বেছে নিতে পারেন। সৌভাগ্যবশত এর অনেক ঘরোয়া প্রতিকার পাওয়া যায়, যা কার্যকর এবং দ্রুত আরাম দিতে সহায়ক। কিছু নিয়ম মেনে চললে আর খাবারের ক্ষেত্রে সতর্ক হলেই পাইলসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক পাইলস দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে-

নারিকেল তেল ব্যবহারঃ পাইলসে আক্রান্ত হলে ব্যথা এমনকী থাকতে পারে চুলকানিও। এটি আরও কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়ায়। তবে হাতের কাছে থাকা নারিকেল তেল ব্যবহার করেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। মূলত প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন নারিকেল তেল ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। তাই আক্রান্ত স্থানে এই তেল ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। এতে দ্রুত ব্যথা, জ্বালা, যন্ত্রণার প্রকোপ কমবে।

​ইপসম সল্ট এবং গ্লিসারিনঃ একটি ছোট বাটিতে, ২ টেবিল চামচ গ্লিসারিনের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ ইপসম লবণ মেশান যতক্ষণ না এটি একটি পেস্ট তৈরি করে। পেস্টটি প্যাডের উপর রাখুন এবং সরাসরি আক্রান্ত স্থানে লাগান। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য প্যাডটি আক্রান্ত জায়গায় রেখে দিন। ব্যথা কম না হওয়া পর্যন্ত প্রতি চার থেকে ছয় ঘন্টা পরপর ব্যবহার করুন।

অ্যালোভেরা জেলঃ অর্শ্বরোগের চিকিৎসার জন্য অ্যালোভেরা হল প্রকৃতির সেরা উপাদান। অ্যালোভেরার রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা এবং থেরাপিউটিক বৈশিষ্ট্য অর্শ্বরোগের জ্বালা কমাতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা উভয় অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত উভয় অর্শ্বরোগের জন্যই ব্যবহার করা যেতে পারে। বহিরাগত অর্শ্বরোগ চিকিৎসার জন্য, আপনার মলদ্বার উপর অ্যালোভেরা জেল একটু একটু করে প্রয়োগ করুনএবং ম্যাসাজ করুন। অভ্যন্তরীণ অর্শ্বরোগের চিকিৎসার জন্য অ্যালো ভেরার পাতা কেটে নিন। এই বার একটি পাত্রে রেখে ফ্রিজে রেখে দিন। ব্যথা, পোড়া এবং চুলকানির ব্যথা এবং জ্বালা কমাতে, প্রভাবিত জায়গার ওপর শীতল অ্যালোভেরা প্রয়োগ করুন।

আইস প্যাক ব্যবহারঃ
 পাইলসের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা মলত্যাগের পরে আরও বেশি ব্যথায় ভোগেন। এমনকী সেসময় তাদের জন্য ঠিকভাবে বসে থাকাটাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব মলদ্বারে আইস প্যাক দিলে উপকার পাওয়া যায়। এতে দ্রুতই ব্যথা কমে আসবে। কারণ ব্যথার জায়গায় বরফ সেক দিলে সেখানে রক্ত চলাচল কমে আসে। যে কারণে ব্যথার অনুভূতি কম হয়।

পর্যাপ্ত পানি পান করাঃ মল শক্ত হলে পাইলসের সমস্যা আরও বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞরা তাই পাইলসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত পানি পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। দিনে ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করলে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা যায় অনেকটাই। তবে শুধু পানি নয়, এর পাশাপাশি ডাল, স্যুপ, ডাবের পানির মতো পানীয়ও খেতে পারেন।

ফাইবার যুক্ত খাবারঃ পাইলসের সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে খাবারের ক্ষেত্রে আনতে হবে বড়সড় পরিবর্তন। এক্ষেত্রে বেশি বেশি আঁশ বা ফাইবারযুক্ত খাবার খতে হবে। যেমন শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, লাল চাল ও লাল আটার তৈরি খাবার। প্রচুর পানি পান করতে হবে, এতে করে ফাইবার পানি শোষণ করার মাধ্যমে পায়খানা নরম করে, তাই ফাইবারকে কাজ করতে হলে সারাদিনে অন্তত চার লিটার পানি পান করতে হবে। যে কারণে পরোক্ষভাবে পাইলসের সমস্যা কমে আসবে।
 
ব্যায়ামঃ নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করতে হবে। ব্যায়ামের মধ্যে ভারী ব্যায়াম বা প্রতিদিন দৌড়ানো বেছে নিতে হবে, তা নয়। শরীরকে চলমান রাখতে হাঁটাচলা, হালকা স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম ইত্যাদির মধ্যে যেকোনোটাই বেছে নেওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে হাঁটাহাঁটি বা হালকা শরীরচর্চাও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। প্রয়োজনে অল্প অল্প করে শুরু করতে পারেন। দিনে ২০ মিনিট হাঁটুন। এক বেলা দিয়ে শুরু করুন, এরপর সকাল-সন্ধ্যা দুই বেলা করে হাঁটুন। প্রথমে সপ্তাহে তিন দিন এভাবে হেঁটে আস্তে আস্তে সেটা পাঁচ দিনে নিয়ে আসুন।

আইস প্যাকঃ পাইলসের ওপর বরফ কিংবা আইস প্যাক দিলে যন্ত্রণা ও ফোলা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।বরফ রক্তনালীকে সুস্থ করে, ফোলা কমায় এবং দ্রুত ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। চামড়া ও ত্বকের ক্ষতি আটকাতে হলে বরফটাকে ছোট তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে নিতে হবে। টানা ১৫ মিনিট আইস প্যাক নেওয়া যায়। এই প্রক্রিয়াটি প্রতি ঘণ্টায় চালিয়ে যেতে হবে।

আপেল সিডার ভিনেগারঃ কষা বৈশিষ্ট্যর কারণে আপেল সিডার ভিনেগার, সেমোলিনা রক্তনালী সঙ্কুচিত করে এবং অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত উভয় পাইলসের জ্বালা এবং ব্যথা থেকে আরাম প্রদান করে। বহিরাগত পাইলসের জন্য, প্রভাবিত এলাকাটি আপেল সিডার ভিনিগারে ভিজিয়ে রাখুন এবং একটি তুলোর বল দিয়ে চাপ দিন। শুরুর দিকে অসুবিধা হলেও কিন্তু শীঘ্রই আপনি চুলকানি এবং জ্বালা থেকে মুক্তি পাবেন। অভ্যন্তরীণ পাইলসের জন্য, এক গ্লাস জলে এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে দিনে দু'বার করে খেতে পারেন।

লেবুর রসঃ
 লেবুর মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই অবস্থার চিকিৎসা করতে সাহায্য করে। এটি সরাসরি প্রভাবিত জায়গায় প্রয়োগ করুন কিংবা আদা এবং মধুর সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খান।

জলপাইয়ের তেলঃ জলপাইয়ের তেলের মধ্যে রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আছে যা প্রধানত বহিরাগত অর্শ্বরোগ চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং পায়ুছিদ্রের মধ্যে রক্তনালীর আকার হ্রাস করতে সাহায্য করে।

হাল্কা গরম জলঃ
 বাড়িতেই পাইলস চিকিৎসার উপায় হলো গামলায় গরম জল ঢেলে নিয়ে তার ওপর বসা। এতে ফোলা কমতে পারে এবং অর্শের জ্বালা ভাবটাও কমতে পারে। কেউ কেউ গরম জলে আরও অনেক কিছু মেশান যাতে অর্শের লক্ষণগুলি আরও কমে। এই সব উপকরণের মধ্যে থাকতে পারে এক কাপ অ্যাপসাম সল্ট কিংবা আপেল সিডার ভিনেগার। পায়ুছিদ্রে দিনে দুই থেকে তিনবার ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে সাধারণ গরম জল দিন।

অভ্যন্তরীণ বা বহিরাগত অর্শ্বরোগে আক্রান্ত হলে আপনার জল খাওয়ার পরিমাণ বাড়ান। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস জল পান করার চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণ জল আপনার অভ্যন্তরীণ সিস্টেমকে পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে এবং আপনার সমগ্র শরীরকে হাইড্রেট করে রাখে।

ইসুপগুলের ভূষিঃ পাইলসের চিকিৎসায় একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করা। এর জন্য একটা ভালো ঔষধ হলো ইসুপগুলের ভূষি। আমরা সবাই এ ঔষধ কম বেশি চিনি। তবে এর সঠিক ব্যবহার ও সাবধানতা অনেকের অজানা। ইসুপগুলের ভূষি কিভাবে খাবেন কখন খাবেন কখন খাওয়া উচিত না সেটা অল্প করে বলে দিচ্ছি।

পরিমান মতো পানি নিয়ে তাতে ইসুপগুলের ভুষি ভালো করে গুলিয়ে নিবেন যাতে শরবতটি দেখতে পরিষ্কার বা হালকা ঘোলা দেখায়। বানানোর পর রেখে দিবেন না সাথে সাথে খেয়ে ফেলবেন। সাধারণত দিনে দুই বেলা খেতে হয়। খাবার খাওয়ার পরে খেলে সবচেয়ে ভালো। ইসুপগুলের ভূষি খেলে দিনে অন্তত ২ লিটার করে পানি পান করবেন।

অল্প কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ইসুপগুলের ভুষি খেয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না খাওয়ার ফলে গলনালী ও অন্ত্রের মুখ আটকে যায়। পানিশূন্যতার কারণেও পাইলসের সমস্যা বাড়তে পারে। তাই দৈনিক পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এর পাশাপাশি আদাকুঁচি, লেবু ও মধু মিশিয়ে দিনে অন্তত ২ বার খেলে অর্শরোগ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে।

পেপেঃ
 পেপে ভিট‍‍ামিন আর খনিজের এক যৌগ যার দ্বারা এক শক্তিশালী পাঁচন এনজাইম পাপেন হয় যেটি অর্শ এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি উপকারী চিকিৎসা । প্রাতঃরাশ কিংবা শৌচে যাওয়ার আগে গ্রহন করুন, স্যালাড হিসাবেও পেপে খেতে পারেন।

বেশী পরেমাণে শাক-সব্জি খাওয়া, এবং তৈলাক্ত খাবার কম খাওয়া সহ এমন খাদ্যাভ্যাস তৈরী করতে হবে যাতে, পায়খানার সমস্যাগুলো এড়ানো যায়। নিয়মিত মল ত্যাগ করার অভ্যাস করতে হবে।পায়খানা যাতে শক্ত না হয়। পায়াখানা শক্ত হলে, অথবা নিয়মিত পায়খানা না হলে, সেটির ব্যবস্থা নিতে হবে। 

পাইলস থেকে মুক্তির ব্যায়াম, যোগব্যায়াম

পাইলস থেকে মুক্তির ব্যায়াম, যোগব্যায়াম হলো পাইলসের চিকিৎসায় অপারেশনের বিকল্প পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ব্যায়াম ও যোগ পাইলসের উপশমে সহায়ক হতে পারে এবং পাইলস প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের রক্তচলাচল বৃদ্ধি পায়। এই রক্তচলাচল পাইলস প্রতিরোধে সহায়ক। প্রতিদিনের ব্যায়াম পেটের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। নিচে কিছু কার্যকর ব্যায়ামের কথা উল্ল্যেখ করা হলোঃ

১.মালাসানা (মালা পোজ)
মালাসানা নিতম্ব খোলার সময় নীচের পিঠ এবং কুঁচকি প্রসারিত করতে সাহায্য করে। এটি পাচনতন্ত্রকে উদ্দীপিত করার জন্য বিশেষভাবে উপকারী।

যেভাবে মালাসানা করবেনঃ
  • আপনার পা একসাথে বন্ধ করে স্কোয়াট করুন।
  • সম্ভব হলে আপনার হিল মেঝেতে রাখুন।
  • প্রার্থনা অবস্থানে আপনার হাত একত্রিত করুন এবং আপনার অভ্যন্তরীণ হাঁটুতে আপনার কনুই টিপুন।
  • ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিটের জন্য ভঙ্গিটি ধরে রাখুন।

২.পবনমুক্তাসন (বাতাস-মুক্ত ভঙ্গি)
পবনমুক্তাসন গ্যাসের উপশম এবং হজমের উন্নতিতে সহায়তা করে, যা পাইলস এবং ফিসার গঠন প্রতিরোধ করতে পারে।

কীভাবে পবনমুক্তাসন করবেনঃ
  • আপনার পা প্রসারিত করে আপনার পিঠের উপর শুয়ে থাকুন।
  • শ্বাস নিন এবং আপনার ডান হাঁটু আপনার বুকের দিকে আনুন।
  • আপনার হাঁটুর চারপাশে আপনার হাত আলিঙ্গন করুন এবং আপনার পেটের দিকে এটি টিপুন।
  • ২০-৩০ সেকেন্ডের জন্য অবস্থানটি ধরে রাখুন এবং তারপরে বাম পায়ে স্যুইচ করুন।
  • উভয় হাঁটু একসাথে রেখে ভঙ্গিটি পুনরাবৃত্তি করুন।

৩.ভিপারিতা করানি (পা-উপর-দ্য-ওয়াল পোজ) 
অর্শ্বরোগের ফোলাভাব কমাতে এবং রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত করতে ভিপারিতা করনি চমৎকার।

কিভাবে ভিপারিতা করানি সম্পাদন করবেনঃ
  • একটি দেয়ালের কাছাকাছি বসুন এবং আপনার পিঠের উপর শুয়ে পড়ুন।
  • আপনার শরীরকে ৯০-ডিগ্রি কোণে রেখে আপনার পা প্রাচীরের উপরে প্রসারিত করুন।
  • হাতের তালু উপরের দিকে রেখে আপনার বাহুগুলিকে আপনার পাশ দিয়ে শিথিল করুন।
  • ৫-১০ মিনিটের জন্য এই অবস্থানটি ধরে রাখুন।

৪.বাদ্ধ কোনাসন (প্রজাপতি ভঙ্গি)
বাদ্ধ কোনাসন ভিতরের উরু এবং কুঁচকি প্রসারিত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

কীভাবে বাদ্ধ কোনাসন করবেনঃ
  • আপনার সামনে আপনার পা প্রসারিত করে বসুন।
  • আপনার হাঁটু বাঁকুন এবং আপনার পায়ের তলগুলি একসাথে আনুন।
  • আপনার হাত দিয়ে আপনার পা ধরে রাখুন এবং আপনার হাঁটু মেঝেতে চাপুন।
  • ভঙ্গিটি ১-২ মিনিট ধরে রাখুন।
৫.অশ্বিনী মুদ্রা (ঘোড়ার অঙ্গভঙ্গি)
অশ্বিনী মুদ্রা পেলভিক ফ্লোরের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে এবং যারা পাইলস এ ভুগছেন তাদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে।

কীভাবে অশ্বিনী মুদ্রা সম্পাদন করবেনঃ
  • আড়াআড়ি পায়ের অবস্থানে আরামে বসুন।
  • মলদ্বারের পেশীগুলিকে সংকুচিত করুন এবং শিথিল করুন, যেমন একটি অন্ত্রের আন্দোলনকে ধরে রাখা এবং ছেড়ে দেওয়া।
  • সংকোচন এবং শিথিলকরণ চক্র ১০-১৫ বার পুনরাবৃত্তি করুন।

যেভাবে যোগব্যায়াম করবেন

পাইলস এর জন্য যোগব্যায়ামের সুবিধাগুলি কাটাতে, ধারাবাহিকতা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার দৈনন্দিন রুটিনে যোগব্যায়ামকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এখানে কিছু টিপস রয়েছে:

ধীরে ধীরে শুরু করুনঃ আপনি যদি যোগব্যায়ামে নতুন হন তবে কয়েকটি ভঙ্গি দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে আপনার অনুশীলনের সময়কাল এবং তীব্রতা বাড়ান।

নিঃশ্বাসে ফোকাস করুনঃ যোগব্যায়ামে সঠিক শ্বাস-প্রশ্বাস অপরিহার্য। প্রতিটি ভঙ্গির কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য গভীর, নিয়ন্ত্রিত শ্বাসের উপর ফোকাস করুন।

অন্যান্য চিকিত্সার সাথে একত্রিত করুনঃ যোগব্যায়াম পাইলস এবং ফিসারের অন্যান্য চিকিত্সার পরিপূরক হওয়া উচিত, প্রতিস্থাপন নয়। আপনার ডাক্তারের সুপারিশ অনুসরণ করা চালিয়ে যান।

জলয়োজিত থাকাঃ প্রচুর পানি পান কর সারা দিন হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।

অভ্যাস অনুশীলনঃ মানসিক চাপ কমাতে এবং সামগ্রিক সুস্থতা উন্নত করতে মননশীলতা এবং শিথিলকরণ কৌশলগুলি অন্তর্ভুক্ত করুন।

পাইলস এর ব্যথা সারানোর উপায়

পাইলস এর ব্যথা সারানোর উপায় বা ব্যথা উপশম করতে প্যারাসিটামল ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। এই ব্যথায় কার্যকরী অন্যান্য ঔষধ ও মলম পাওয়া যায়, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। জীবনযাত্রায় অনিয়ম ও অপুষ্টিকর খাবার খাওয়া এই রোগের অন্যতম কারণ। ঘরোয়া পদ্ধতিতে পাইলস রোগের ব্যথা কমানোর ৪টি উপায় নিচে তুলে ধরা হলোঃ
পাইলস-এর-ব্যথা-সারানোর-উপায়
১. ব্যথার জায়গাটি কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখা যায়। ছোট বাচ্চাদের গোসল করানো হয় এমন আকারের একটি বোলে কুসুম গরম পানি নিয়ে সেখানে বসতে পারেন। দিনে ৩ বার পর্যন্ত এটি করা যায়। অন্য সময়ে কোথাও বসতে গেলে একটি বালিশ ব্যবহার করে সেটার ওপর বসা যেতে পারে।

২. একটা প্যাকেটে কিছু বরফ নিয়ে সেটা তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে পায়ুপথে গোটাগুলোর ওপরে লাগানো যায়। এতে আরাম পাওয়া যাবে।

৩. বিছানায় শুয়ে পা উঁচু করে রাখলে পাইলস এর গোটাগুলোতে রক্ত চলাচল সহজ হবে ও ব্যথা উপশম হবে। শোবার সময় পায়ের নিচে বালিশ দিতে পারেন। এছাড়া খাটের পায়ার নিচে কোন কিছু দিয়ে খাটের এক পাশ উঁচু করে সেদিকে পা দেওয়া যেতে পারে।

৪. পায়ুপথ সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও শুকনো রাখতে হবে। মলত্যাগের পর জোরে ঘষাঘষি না করে আলতোভাবে জায়গাটি পরিষ্কার করে নিতে হবে। টয়লেট পেপার হালকা ভিজিয়ে তারপর সেটা দিয়ে মুছতে পারেন।

৫. একটি তুলোর বলে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যথার স্থানে লাগিয়ে নিন। শুরুতে কিছুটা জ্বালাপোড়া হলেও কিছুক্ষণ পর কমে যাবে। নিয়মিত এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খালি পেটে পান করুন। এটি অনেক রোগের দাওয়াই হিসেবে কাজ করে।

৬. পানিশূন্যতার কারণেও পাইলসের সমস্যা বাড়তে পারে। তাই দৈনিক পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এর পাশাপাশি আদাকুঁচি, লেবু ও মধু মিশিয়ে দিনে অন্তত ২ বার খেলে অর্শরোগ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে।

৭. এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। প্রতিদিন এক চা চামচ অলিভ ওয়েল রাখলে পাইলসের সামস্যা কাটিয়ে উঠবেন ধীরে ধীরে।

পাইলস এর প্রাথমিক লক্ষণ

পাইলস এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখে বোঝা যায় কারো যদি পাইলস হয়ে থাকে তাহলে চিন্তার কিছু নেই। শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই বিনা অপারেশনে হারবাল উপায়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। তবে সেটি নির্ভর করে কোন ধরনের পাইলস হয়েছে তার ওপর। পাইলস বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। পাইলসের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।

মলদ্বারের অভ্যন্তরে হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারেঃ

অভ্যান্তরীণ পাইলস মলদ্বারের অভ্যান্তরে আস্তরণে বিকাশ লাভ করে। এগুলি সাধারণত ব্যথাহীন এবং বড় না হলে স্পষ্ট হয় না। তারা নীরবে রক্তপাত করে এবং আপনি টয়লেট পেপারে রক্তের দাগ বা টয়লেটের সময় ফোঁটা ফোঁটা রক্ত দেখতে পাবেন। অভ্যন্তরীণ পাইলস প্রল্যাপস হতে পারে এবং মলদ্বারের বাইরে প্রসারিত হতে পারে, যা সংবেদনশীল এলাকায় বেদনাদায়ক। এর লক্ষনগুলো হলোঃ

১. পায়খানার সময় অত্যধিক বা অল্প পরিমাণে রক্তপাত হওয়া।
২. মলদ্বারের ফোলা বাইরে বের হয়ে আসতে পারে, নাও পারে। যদি বের হয় তবে তা নিজেই ভেতরে চলে যায় অথবা হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া যায়। কখনও কখনও এমনও হতে পারে যে, বাইরে বের হওয়ার পর তা আর ভেতরে প্রবেশ করানো যায় না বা ভেতরে প্রবেশ করানো গেলেও তা আবার বের হয়ে আসে।
৩. মল অতিক্রম করার সময় অতিরিক্ত চাপ বা জ্বালা হতে পারে।
৪. মলদ্বারে জ্বালাপোড়া, যন্ত্রণা, চুলকানি হওয়া এবং ফুলে যাওয়া।
৫. কোন কোন ক্ষেত্রে মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।
৬. টাটানি ও যন্ত্রণা, কাঁটাবিদ্ধ অনুভূতি।
৭. মাথা ধরা ও মাথা ভার বোধ হওয়া। উরুদেশ, বক্ষ, নাভির চারপাশে ব্যথা ও মলদ্বারে ভার বোধ, কোমর ধরা ও কোষ্ঠবদ্ধতা।

মলদ্বারের বাইরে হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারেঃ

বাহ্যিক পাইলস হলো সবচেয়ে সাধারণ এবং অস্বস্তিকর ধরনের হতে পারে। সাধারণত, এগুলি মলদ্বারের চারপাশের ত্বকের নীচে পাওয়া যায়। ফোলা পাইলসের কারণে এবং এর আশেপাশে চুলকানি এবং ব্যথা হয়। অবশেষে, তারা রক্তপাত শুরু করে এবং জমাট বাঁধে। রক্ত জমাট বেঁধে পাইলস হলে হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা, চুলকানি অনুভূত হয়। এ কিছু লক্ষন হলোঃ

১. মলদ্বারের বাইরে ফুলে যাওয়া যা হাত দিয়ে স্পর্শ ও অনুভব করা যায়।
২. কখনও কখনও রক্তপাত বা মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।
৩. মাটিতে বা শক্ত জায়গায় বসতে গেলে ব্যাথা অনুভূত।পায়ু অঞ্চলে চুলকানি বা জ্বালা।
৪. পায়ুদ্বারে ব্যথা বা অস্বস্তি।
৫. মলদ্বারের চারপাশে ফোলাভাব।
৬. পায়খানা করার সময় রক্তপাত।

পাইলস হওয়ার কারন

পাইলস হওয়ার সঠিক কারণ জানা না গেলেও নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ পাইলস হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। তবে যে কারণেই পাইলস হোক না কেন শুরুতেই কিছু সাবধানতা মেনে চললে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে, জটিল আকার ধারণ করলে অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে। পাইলস হওয়ার পিছনে একমাত্র এই কারণগুলো থাকতে পারে।

১. দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে মল শক্ত হয়ে যায়। শক্ত মল ত্যাগ করার সময় মলদ্বার ও পায়ুপথের শিরা গুলো তে অনেক চাপ পড়ে। এই চাপের ফলে শিরাগুলো ফুলে ওঠে এবং পাইলসের সৃষ্টি হয়।
২. শাকসবজি ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার এবং পানি কম খাওয়া।
৩. অতিরিক্ত ওজনের ফলে মলত্যাগ করার সময় মলদ্বার ও পায়ুপথের শিরা গুলোতে চাপ পড়ে। এই চাপের ফলে শিরাগুলো ফুলে ওঠে এবং পাইলসের সৃষ্টি হয়।
৪. লিভারের প্রাচীন রোগ বা সিরোসিস প্রভৃতি।
৫. মলত্যাগের সময় জোরে চাপ দেওয়ার ফলে মলদ্বার ও পায়ুপথের শিরা গুলোতে চাপ পড়ে। যে চাপের ফলে শিরা গুলো ফুলে ওঠে এবং পাইলসের সৃষ্টি হয়।
৬. অতিরিক্ত মাত্রায় লেকজেটিভ (মল নরমকারক ওষুধ)ব্যবহার করা বা এনেমা (শক্ত মল বের করার জন্য বিশেষ তরল মিশ্রণ ব্যবহার করা) গ্রহণ করা।
৭. দীর্ঘসময় টয়লেটে বসে থাকা।
৮. বৃদ্ধ বয়স।
৯.পরিবারে কারও পাইলস থাকা।
১০. ভার উত্তোলন, দীর্ঘ সময় বসে থাকা ইত্যাদি।
১১. কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া।
১২. স্থূলতা।
১৩. বেশি সময় বসে থাকা।
১৪. হেমোরয়েড শিরায় কপাটিকার অনুপস্থিতি ও বার্ধক্য।
১৫. পুষ্টিকর খাবার খাওয়ায় ঘাটতি।
১৬. ব্যায়াম না করা।
১৭. শারীরিক পরিশ্রম না করলে মলত্যাগের ক্রিয়া নিয়মিত হয় না। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় এবং মল শক্ত হয়ে যায়। আর এই শক্ত মল ত্যাগ করার সময় মলদ্বার ও পায়ুপথের শিরা গুলোতে চাপ পড়ে। যে চাপের ফলে শিরা গুলো ফুলে ওঠে এবং পাইলসের সৃষ্টি হয়।
১৮. ভারি মালপত্র বহন করা ও কায়িক শ্রম কম করা
১৯. পেটের ভিতরে চাপ বৃদ্ধি।
২০. বংশগত রোগ বা পূর্ব পুরুষের ধারা।
২১. গর্ভাবস্থায় জরায়ু বড় হতে থাকে। ফলে, কোলনের শিরায় চাপ পড়ে বলে শিরা স্ফীত হয়।
২২. প্রস্টেট গ্রন্থির বেশি বৃদ্ধি।
২৩. বহুদিন জ্বর, আমাশয় রোগে আক্রান্ত থাকার জন্য কোলাইটিস বা পেটব্যথা সমস্যায় জর্জরিত থাকা।

পাইলস এর প্রাথমিক চিকিৎসা

পাইলস এর প্রাথমিক চিকিৎসা হলো আপনি যদি পাইলসের ক্রমাগত বা গুরুতর লক্ষণগুলি অনুভব করেন তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী একটি সঠিক রোগ নির্ণয় প্রদান করতে পারেন এবং আপনার ব্যক্তিগত চাহিদা এবং স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর ভিত্তি করে সবচেয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকল্পনার সুপারিশ করতে পারেন। পাইলসের চিকিৎসা লক্ষণগুলির তীব্রতার উপর নির্ভর করে এবং নিম্নলিখিতগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনঃ

খাদ্যতালিকা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনঃ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং হাইড্রেটেড থাকা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে এবং মলত্যাগের সময় মলদ্বারের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। দীর্ঘক্ষণ বসা বা দাঁড়ানো এড়িয়ে চলা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করাও লক্ষণগুলিকে উন্নত করতে পারে।

ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধঃ ওভার-দ্য-কাউন্টার ক্রিম, মলম, এবং হাইড্রোকোর্টিসোন বা উইচ হ্যাজেলযুক্ত সাপোজিটরিগুলি ব্যথা এবং চুলকানি থেকে সাময়িক উপশম দিতে পারে। ব্যথা উপশমকারী যেমন অ্যাসিটামিনোফেন বা আইবুপ্রোফেনও ব্যবহার করা যেতে পারে।

সিটজ বাথঃ দিনে কয়েকবার ১০-১৫ মিনিটের জন্য মলদ্বারের জায়গাটি গরম জলে ভিজিয়ে রাখলে তা ফোলা কমাতে এবং অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করতে পারে।

পদ্ধতিঃ কিছু ক্ষেত্রে, একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী হেমোরয়েডের চিকিত্সার জন্য একটি ন্যূনতম আক্রমণাত্মক পদ্ধতির সুপারিশ করতে পারে। এর মধ্যে রাবার ব্যান্ড লাইগেশন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, যেখানে একটি রাবার ব্যান্ড হেমোরয়েডের রক্ত ​​​​সরবরাহ বন্ধ করার জন্য তার গোড়ার চারপাশে স্থাপন করা হয়, বা স্ক্লেরোথেরাপি, যেখানে একটি রাসায়নিক দ্রবণ হেমোরয়েডকে সংকুচিত করার জন্য ইনজেকশন দেওয়া হয়।

সার্জারিঃ বিরল ক্ষেত্রে, গুরুতর বা পুনরাবৃত্ত হেমোরয়েডগুলি অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। এর মধ্যে হেমোরয়েডেক্টমি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, যেখানে হেমোরয়েড অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়, বা স্ট্যাপলিং, যেখানে হেমোরয়েডকে স্ট্যাপল করা হয় যাতে রক্ত ​​প্রবাহে বাধা দেওয়া হয় এবং এটি সঙ্কুচিত হয়।

অপারেশন ছাড়া পাইলস এর চিকিৎসা

অপারেশন ছাড়া পাইলস এর চিকিৎসা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আজকের দিনে অনেক মানুষের জন্য প্রাসঙ্গিক। পাইলস বা হেমোরয়েডস একটি প্রচলিত সমস্যা যা অনেকের জন্য অস্বস্তিকর আবস্থা সৃষ্টি করে। এখন আমি আলোচনা করব কীভাবে অপারেশন ছাড়া পাইলসের কার্যকরী চিকিৎসা করা যায় এবং এটি কিভাবে আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

মলাশয়ের রোগগুলো হলো এনাল ফিসার, পাইলস, রেকটাল পলিপ, রেকটাল ক্যানসার, আইবিএস, পাইলোনিডাল-সাইনাস, এনাল আবসেস, রেকটাল প্রলাপস, এনাল ওয়াট ইত্যাদি। এই রোগগুলোর মধ্যে সাধারণত রোগীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় পাইলস রোগে। পাইলস রোগটির কিছু বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা রয়েছে এবং নিয়ম অনুসরণ করে রোগটির যথাযথ চিকিৎসা করলে সহজেই পাইলস নিরাময় হয়। দীর্ঘদিন ধরে বাসা বেঁধে থাকা পাইলসও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা নিলে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব।

পাইলস হলে বা হয়ে গেলে বেশি চিন্তার প্রয়োজন নেই। সাধারণত মলাশয়ের একটি সাধারণ রোগ হলো পাইলস রোগ। এ রোগটি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এবং এর ধরনও আলাদা হয়। উপসর্গ অনুযায়ী শতকরা ৯০ ভাগ পাইলসের রোগী সার্জারি ছাড়াই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কারণে ভালো হয়ে যায়। সাধারণত যে পাইলসগুলো ভেতরে থাকে তা হলো ইন্টারনাল পাইলস। আর যে পাইলস থাকে বাইরের দিকে, তা হলো এক্সটারনাল পাইলস বা এক্সটারনাল হেমোরেয়ডেকটমি।

উপসর্গঃ মলত্যাগের পর রক্ত যাবে এবং রক্ত যাওয়ার সঙ্গে সাধারণত কোনো ব্যথা হয় না। অনেক সময় বেশি রক্তও যায়। পাইলস যদি প্রথম ধাপে হয়, সে ক্ষেত্রে মলদ্বারে বাড়তি মাংসের মতো কোনো কিছুই থাকে না। শুধু মলত্যাগের পর তাজা রক্ত যায়।

আর যদি দ্বিতীয় গ্রেডের হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে মলত্যাগের পর তাজা রক্ত যায়, সাধারণত ব্যথা হয় না এবং মলত্যাগের পর মনে হয় ভেতর থেকে কি যেন বাইরের দিকে বের হয়ে আসে এবং সেটি এমনিতেই ভেতরে ঢুকে যায়। কারও যদি তৃতীয় ধাপের পাইলস হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে মলত্যাগের পর বাড়তি মাংসের মতো বের হয়, আগে এমনিতেই ঢুকে যেত এখন চাপ দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হয়।

যদি চতুর্থ ধাপের পাইলস হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে আগে মলত্যাগের পর বাড়তি যে মাংসটি বের হতো সেটি এমনিতেই ঢুকে যেত, এখন আর ঢুকছে না এ রকম সমস্যা নিয়ে অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। অনেক সময় পাইলসের ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে, এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। একে বলা হয় থ্রবোসড পাইলস। পাইলসের চিকিৎসা তার ধরনের বা উপসর্গের ওপর নির্ভর করে এবং সার্জারি করতে হবে কি না তা পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা নির্ধারণ করে থাকেন।

চিকিৎসাঃ যদি প্রথম ধাপের পাইলস হয়ে থাকে এবং রোগীরা শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে আসেন, সে ক্ষেত্রে কিন্তু কোনো অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। এ ধরনের রোগীকে ওষুধ দেওয়া হয় এবং পায়খানা স্বাভাবিক করার জন্য নরম খাবারসহ প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, পানি পান করতে হবে। যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে, তাহলে মল নরম করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে হয়। যদি ওষুধে কাজ না হয় তখন বিনা অপারেশনের মাধ্যমে বেন্ডিং বা সেক্লরো থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। 

যেমনঃ রিং লাইগেশন ও ইনজেকশন। কারও যদি দ্বিতীয় ধাপের পাইলস হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রেও অপারেশন করতে হয় না। এ ক্ষেত্রে কিছু আধুনিক চিকিৎসার সহায়তা নেওয়া হয়। তবে কারও যদি তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের পাইলস হয়ে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হয়, তবে কিছু পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের যে সার্জারি করতে হয় তা অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে করলে তেমন কষ্টদায়ক হয় না। এই পদ্ধতিগুলো হলো স্টেপলড।

হেমোরেয়ডেকটমির মাধ্যমে বাইরে কোনো কাটাছেঁড়া না করে মলদ্বারের ভেতর থেকে একটু বাড়তি মাংসের মতো জিনিস কেটে ফেলা হয়। রোগীদের সাধারণত মলত্যাগের পর তেমন ড্রেসিংয়ের প্রয়োজন হয় না। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন এবং সাত দিন পর থেকেই স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে যেতে পারেন।

তবে কারও যদি মলদ্বারটি একদম বাইরে বের হয়ে আসে এবং ইনফেকশন হয়; সে ক্ষেত্রে কেটে অপারেশন করতে হয়। সেটিকে বলা হয় ওপেন হেমোরেয়ডেকটমি বা ক্লোজ হেমোরেয়ডেকটমি। কাজেই মলদ্বারে পাইলস হলে সর্বক্ষেত্রে যে অপারেশন লাগবে তা কিন্তু নয়। চিকিৎসক নির্ণয় করবেন পাইলসটি কোন পর্যায়ে আছে, এটির কোন ধরনের চিকিৎসা লাগবে। কাজেই মলদ্বারে পাইলসজনিত যদি কোনো সমস্যা হয়, প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে কোনো সার্জারির দরকার নেই।

পাইলস এর চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি

পাইলস এর চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি কোনো রোগের চিকিৎসা করে না, রোগীর চিকিৎসা করে। এই কথা আপনাদের মধ্যে অনেকেই জানেন। সুতরাং লক্ষন অনুয়ায়ী চিকিৎসা নিলে রোগী আরোগ্য লাভ করবে এটা নিশ্চিত। অনেক হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানী পাইলসের রোগীদেরকে সকালে Sulphur এবং সন্ধ্যায় Nux vomica ঔষধ দুইটি খেতে দিতেন। সাধারণত ৩০ শক্তিতে কয়েক মাস খেলে অধিকাংশ পাইলস ভালো হয়ে যায়।

অন্য কোন ঔষধের প্রয়োজন হয় না। এই ঔষধ দুটি সরাসরি পাইলস নিরাময় করে না বরং কোষ্টকাঠিন্য সারানোর মাধ্যমে এরা পাইলস নির্মূল করে থাকে। এমনকি কোন কোন চিকিৎসাবিজ্ঞানী এমনও বলেছেন যে, সালফার, নাক্স ভমিকা এবং থুজা মাত্র এই তিনটি ঔষধ দিয়ে পৃথিবীর এমন কোন রোগ নাই যা সারানো যায় না (সুবহানাল্লাহ )।

এই কথার রহস্য হলো আমাদের শরীরে যত রকমের বিষ তৈরী হয় এবং যত রকমের বিষ বাইরে থেকে ঢুকে, তাদের শরীর থেকে বের করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো পায়খানা। ঢাকা শহরের সমস্ত ড্রেন এবং সোয়ারেজ লাইনগুলি সাতদিনের জন্য বন্ধ করে দিলে যেমন সমস্ত শহরের পরিবেশ দূষিত-বিষাক্ত হয়ে অগণিত মারাত্মক মারাত্মক রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে।
 
তেমনি যে-সব মানুষের নিয়মিত পায়খানা না হলে তাদেরও ধীরে ধীরে শরীর বিষাক্ত হয়ে হৃদরোগ, কিডনীরোগ, স্নায়ুরোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি মারাত্মক মারাত্মক রোগের জন্ম হতে থাকে। আর এই তিনটি ঔষধই মোটামুটি কোষ্টকাঠিন্যের শ্রেষ্ট ঔষধ। যে কোন হোমিও ফার্মেসী থেকে ঔষদটি সংগ্রহ করে ব্যবহার করুন আশানুরুপ ফল পাবেন।  তাছাড়াও লক্ষন ভেদে নিচের ঔষদ গুলো ব্যাবহার করতে পারেনঃ

নাক্স ভমঃ নাক্স ভম কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়তা করে। খাওয়ার এক ঘন্টা পরে পেটের ভারী ভারী অবস্থা দেখা দেয়। মল জন্য অকার্যকর বাসনা সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য। গলায় খাদ্যদ্রব্য জমে যাওয়ার অনুভূতি সহ বুক জ্বলন। ব্যক্তিটি নার্ভাস ইরিটেটেবল হাইপোকন্ড্রিয়াক এবং রোষাক্রান্ত প্রকৃতির। তৈলাক্ত সমৃদ্ধ খাবার বা জাঙ্ক ফাস্ট ফুড খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে যা তাদের সমস্ত লক্ষণ বিকাশের কারণ হয়। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস বা ত্রুটিযুক্ত জীবনযাত্রার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য বা অনিয়মিত অন্ত্র অভ্যাস নিরাময়ের জন্য পাইলস বা অর্শ এর মধ্যে এটি অন্যতম কার্যকর ওষুধ।

ব্রায়োনিয়াঃ কোষ্ঠকাঠিন্যে পরামর্শ দেওয়া হয় যদি মল খুব শক্ত হয় এবং মল পাস করার সময় ব্যক্তি আরও স্ট্রেন দেয়। মল কঠোর পাশাপাশি কালো রঙ এবং পাস করা শক্ত। বেশি জল নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে কারণ ব্যক্তিটি সর্বদা তৃষ্ণার্ত বোধ করে।

লাইকোপোডিয়ামঃ অতিরিক্ত পেট ফাঁপা সমস্যাযুক্ত ব্যক্তি। পেটে গুড়গুড় বা কাঁপুনি দিয়ে শব্দে পেটে ফুলে উঠা সংবেদন রয়েছে। পেটের ভারী ভারী অবস্থা সাধারণত বিকেলে হয়। ভাল খিদে আছে তবে অল্প খাবারই তাকে পেট ভরে দেয়। মুখের মধ্যে একটি টক স্বাদ সহ বুক এবং টক জাতীয় জ্বলন রয়েছে

কার্বো ভেজিঃ পেটের ফোলা সংবেদন সহ পেট ফাঁপা আছে। আরও অনেক বেশি বিড়বিড় হয় এবং তার পরে ব্যক্তি স্বস্তি বোধ করে। এত বেশি পেট ফাঁপা হওয়ার প্রবণতা যে সে খায় তা সবকিছুই গ্যাসে রূপান্তরিত করে। সাধারণত পেটের উপরের পেটের ভারী ভারী অবস্থা থাকে।

অ্যানাকার্ডিয়ামঃ খালি পেটে ব্যথার সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা রয়েছে। যখন ব্যক্তি খালি পেটে থাকে তখন মাথাব্যথার অনুভূতি হয়। খাবার গ্রহণ মাথা ব্যথা এবং পেটের ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। ব্যক্তির ভুলে যাওয়া এবং স্বল্প আত্মবিশ্বাসের প্রবণতা রয়েছে। এই লক্ষণগুলি যদি কোনও ব্যক্তির মধ্যে উপস্থিত থাকে তবে অ্যানাকার্ডিয়াম একটি উপযুক্ত প্রতিকার

সালফারঃ মলের পরে মলদ্বারের জ্বলন সংবেদন হয়। সবসময় মলদ্বার চুলকানি থাকে। বিছানা থেকে উঠার ঠিক পরে লোকটির খুব ভোরে মলের ঝোঁক থাকে। অল্প আওয়াজে ঘুম ভাঙার অভ্যাস রয়েছে। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিয়ে ব্যক্তি প্রকৃতি সম্পর্কে ঘাবড়ে যায়।

ক্যালেন্ডুলা অফিসিনালিসঃ পায়খানার রাস্তা যদি মাত্রাতিরিক্ত ফোলে যায়, ইনফেকশান হয়ে যায়, ঘায়ের মতো হয়ে যায়, ব্যথায় টনটন করতে থাকে, তবে ক্যালেন্ডুলা ঔষধটি নিম্নশক্তিতে (মাদার টিংচার) কিছু পানির সাথে মিশিয়ে তাতে তুলা ভিজিয়ে সেখানে দু’চার ঘন্টা পরপর প্রয়োগ করুন। দু’চার ঘণ্টা পরপর বা অথবা আরো ঘনঘন প্রয়োগ করুন। যত মারাত্মক ইনফেকশান বা ফোলা-ব্যথা-আলসার হোক না কেন, দেখবেন দুয়েক দিনের মধ্যে সব চলে গেছে।

এলোপ্যাথিতে যেমন ডেটল, স্যাভলন, হেক্সিসল ইত্যাদি আছে, তেমনি হোমিওপ্যাথিতে আছে ক্যালেন্ডুলা। তবে ক্যালেন্ডুলার ক্ষমতা তুলনাবিহীন। আক্রান্ত স্থানে লাগানোর পাশাপাশি ১০-২০ ফোটা করে খেতেও পারেন। অথবা লক্ষণ মতে অন্য কোন ঔষধ খান। পাশাপাশি যে-কোন ধরনের কাটা-ছেড়া-ঘা-ইনফেকশানে ক্যালেন্ডুলার সাহায্য নিতে ভুলবেন না।

মিলেফোলিয়ামঃ পাইলস থেকে উজ্জল লাল রঙের রক্তপাত হলে Millefolium ঔষধটি ১০-২০ মিনিট পরপর খেতে থাকুন যতক্ষণ না রক্তপাত বন্ধ হয়। অন্যদিকে কালো বা কালচে রক্তপাত হলে Hamamelis Virginica ঔষধটি ১০-২০ মিনিট পরপর খেতে থাকুন। পায়খানার রাস্তা থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে শরীর দুরবল হয়ে পড়লে, রক্তশূণ্যতা দেখা দিলে China officinalis অথবা Acidum Phosphoricum ঔষধটি খান। পাশাপাশি ভিটামিন জাতীয় অন্যান্য ঔষধগুলিও খেতে পারেন।

এস্কুলাস হিপপোকাস্টেনামঃ এস্কুলাসকে বলা যায় সবচেয়ে সেরা পাইলসের ঔষধ। এই ঔষধের কাজের মূল কেন্দ্র হইল তলপেটের যন্ত্রপাতি। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো কোষ্টকাঠিন্য (পায়খানার সাইজ বড় বড় এবং শক্ত), রক্তক্ষরণযুক্ত অথবা রক্তক্ষরণবিহীন পাইলস, পায়খানার রাস্তায় কেহ আলপিন দিয়ে খোচা মারছে এমন ব্যথা, পায়খানার রাস্তা শুকনা শুকনা লাগা, তলপেটে দুরবলতা, পায়ে অবশ অবশ ভাব, হাটঁলে রোগের মাত্রা বেড়ে যায়, রোগী খুবই বদমেজাজি ইত্যাদি। ঔষধ নিম্নশক্তিতে খেলে রোজ ২-৩ বার করে খাবেন আর উচ্চ শক্তিতে খেলে দশ/পনের/বিশ দিন পরপর এক মাত্রা করে।

কলিনসোনিয়া ক্যানাডেনসিসঃ ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ পেট এবং পায়খানার রাস্তার অসুখের সাথে মাথাব্যথা, নাভী এবং তলপেটে ব্যথা, কোষ্টকাঠিন্য, কোথানি, অবসন্নতা, আম ও রক্তযুক্ত পায়খানা, মাসিকের সময় পাইলস, পায়খানার রাস্তার মাংস বেরিয়ে পড়া (Prolapse of the rectum), রোগের লক্ষণ শরীরের ওপর থেকে নীচের দিকে যায়, হার্টের সমস্যা এবং পাইলসের রক্তক্ষরণ ঘুরেফিরে আসে, বিভিন্ন জয়েন্টের বাতের ব্যথা, বুকে ব্যথা ইত্যাদি ইত্যাদি।

এলু সকোট্রিনাঃ এলু সকোট্রিনার প্রধান প্রধান লক্ষণ কোষ্টকাঠিন্য, পেট, তলপেট এবং মাথায় রক্তসঞ্চয়, অদল-বদল করে মাথাব্যথা এবং কোমরের বাত, শীতকালে পাইলসের উৎপাত বৃদ্ধি পায়, দুরবলতা, খাওয়ার পরপরই পায়খানার বেগ হওয়া, শক্ত পায়খানা (ঘুমের মধ্যে) নিজের অজান্তেই বিছানায় পড়ে থাকে, পাইলেসের চেহারা দেখতে আঙুরের থোকার মতো, সারাক্ষণ নীচের দিকে ঠেলামারা ব্যথা, রক্তক্ষরণ, টনটনে ব্যথা, স্পর্শ করা যায় না, গরম, ঠান্ডা পানিতে আরাম লাগে ইত্যাদি ইত্যাদি।

পিওনিয়া অফিসিয়ালিসঃ পিওনিয়ার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো পায়খানার রাস্তায় জ্বালাপোড়া, চুলকানি, ফোলে যাওয়া, (বিছানা-জুতার) চাপ থেকে ঘা হওয়া, পায়খানার রাস্তার ফোড়া, ফেটে যাওয়া(fissure), ভগন্দর (fistula), রক্তনালী ফোলে যাওয়া (varicose veins), ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখা (nightmare), নড়াচড়া-হাঁটা-স্পর্শে রোগের কষ্ট বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।

নাইট্রিসিয়াম এসিডঃ নাইট্রিক এসিডের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো কোষ্টকাঠিন্য, (শক্ত হউক বা নরম) পায়খানার পরে ব্যথা, মেজ (wart), প্রস্রাবের গন্ধ গরুর প্রস্রাবের মতো (খুবই কড়া), আবহাওয়া পরিবর্তন হলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে, শরীরের ছিদ্রযুক্ত স্থানের ক্ষত,খিটখিটে মেজাজ, ঘনঘন ডায়েরিয়ায় ভোগে, চোখের নালী ক্ষত, রাতের বেলা হাড়ের ব্যথা, হাড়ের ক্ষত, যে-কোন ঘা/ক্ষত সহজে সারতে চায় না, শরীরে পানির পরিমাণ বেশী ইত্যাদি ইত্যাদি।

মিউরিয়েটিসিয়াম এসিডঃ মিউরিয়েটিক এসিডের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো কান্ডজ্ঞান লোপকারী মাথাব্যথা, চোখে অন্ধকার এবং উল্টাপাল্টা দেখা, অনিচ্ছাকৃতভাবে পায়খানা-প্রস্রাব বেরিয়ে যাওয়া, প্যারালাইসিস, পাইলসে বা পায়খানার রাস্তায় জ্বালাপোড়া, মাঝারি বা মারাত্মক ধরনের ইনফেকশান, পূজঁ-নিঃশ্বাস-শরীরের গন্ধ সবই দূর্গন্ধযুক্ত, পাইলস দেখতে আঙুরের থোকার মতো, পিঙল বর্ণের, স্পর্শ করলে জ্বালা করে, কোথানি দিলে আলিশ বেরিয়ে যায়, জিহ্বায় ইনফেকশান, কানপচাঁ ইত্যাদী।

গর্ভাবস্থায় পাইলস হলে করণীয়

গর্ভাবস্থায় পাইলস হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জিজ্ঞাসা করে থাকেন। গর্রভাবস্থার সময় অনেক মা পাইলসের সমস্যায় ভুগে থাকেন। পাইলস যদিও কষ্টদায়ক তবে এটা খুবই সাধারণ একটি রোগ। প্রেগনেন্সির সময় অর্ধেকেরও বেশি নারী পাইলসের সমস্যায় ভোগে থাকেন। তবে ভয়ের কিছু নেই, এই রোগে গর্ভের শিশুর কোনো ক্ষতি হয় না। আপনি জেনে খুশি হবেন ঘরোয়া উপায়েও এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব। এবং অধিকাংশ মেয়ের সন্তান হবার পরে পাইলস আপনাআপনি সেরে যায়। গর্রভাবস্থায় পাইলসের কয়েকটি নিরাপদ ও কার্যকরী চিকিৎসা সম্পর্কে আপনারা এই আর্টিকেলে জানতে পারবেন।

নিয়ম মেনে চলুনঃ গর্ভবস্থায় পাইলসের সবথেকে ভালো চিকিৎসা হলো নিয়ম মেনে চলা। যেমন—প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, অনেক বেশি ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। ফলমূল ও শাকসবজি আঁশের চাহিদা পূরণ করে। এর ফলে পায়খানা নরম হয়। তখন মলত্যাগের সময় চাপ কম পড়ে।

প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করার চেষ্টা করুনঃ এতে শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। গর্ভাবস্থায় কেগেল ব্যায়াম খুব উপকারী। এই ব্যায়াম মলদ্বারের আশেপাশের পেশীগুলোকে মজবুত করে এবং এসব স্থানে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে যেটা পাইলস প্রতিরোধে সাহায্য করে। এমনকি এই কেগেল ব্যায়াম প্রাকৃতিকভাবে সন্তান প্রসবের জন্য আপনাকে প্রস্তুত করবে। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করবেন।

কাঁত হয়ে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুনঃ বেশি সময় ধরে বসে থাকবেন না, এতে পাইলসের ওপর চাপ বেশি পড়বে। তাছাড়া প্রথম ত্রৈমাসিকের পর পিঠে চাপ দিয়ে বেশিক্ষণ বসে থাকাও উচিত না। মলদ্বারের শিরাগুলোর ওপর চাপ কমাতে দিনে কয়েকবার বাম কাত হয়ে শুয়ে থাকার চেষ্টা করুন। এতে আক্রান্ত স্থানে চাপ কম পড়বে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।

একটানা অনেকক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকবেন নাঃ কিছুটা চলাচল বা নাড়াচাড়ার মধ্যে থাকুন। মলদ্বারের শিরাগুলোতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ৫ মিনিট করে হাঁটার চেষ্টা করুন। তবে আপনার ডাক্তার যদি অনুমতি দেয় তাহলে প্রসবের আগ পর্যন্ত আপনার গর্ভাবস্থার নিরাপদ ব্যায়াম চালিয়ে যেতে পারেন।

পায়খানার চাপ আসলে চেপে রাখবেন নাঃ পায়খানা করার সময় অতিরিক্ত চাপ দেবেন না। তাতে পাইলসের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। টয়লেটে দীর্ঘ সময় বসে থাকবেন না।

নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুনঃ পায়খানা করার পর অতিরিক্ত জোরে মুছবেন না। গরম পানি বা সাদা টিস্যু পেপার দিয়ে হালকাভাবে পরিষ্কার করুন। পাইলস হলে পরিষ্কার থাকা জরুরি। যদি টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে চান তবে ভেজা টিস্যু ব্যবহার করা ভালো।

বসতে খুব বেশি সমস্যা হলে বালিশ ব্যবহার করুনঃ পাইলসের রোগীদের জন্য বিশেষ ধরনের বালিশ কিনতে পাওয়া যায়। এগুলিকে ‘ডোনাট পিলো’ বলে। বসে কাজ করার জন‍্য এরকম বালিশ ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।

উইচ হ‍্যাজেল প‍্যাড বা বরফ দিনঃ পায়খানা করার পরে উইচ হ‍্যাজেল প‍্যাড দিয়ে মলদ্বার পরিস্কার করুন। উইচ হ‍্যাজেল একটি উদ্ভিদ, অ‍্যালোভেরার মত এরও ভেষজ গুণ অনেক।এর ঠাণ্ডা রস পাইলসের জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায‍্য করে। বিদেশে যে কোনো ফার্মেসিতে উইচ হ‍্যাজেল প‍্যাড পাবেন।

হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করবেনঃ প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট হালকা গরম পানিতে বসে থাকলে অনেকটা আরাম পাবেন। পাশাপাশি আপনি পরিষ্কারও থাকতে পারবেন।

পাইলসের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যানঃ ডাক্তার চুলকানি ও ব্যথা কমানোর ওষুধ দেবেন। এছাড়া পায়খানা নরম করার ওষুধ এবং ক্রিম বা মলমও দিতে পারেন। পায়খানা নরম করার একটি ঘরোয়া পদ্ধতি হলো ইসবগুলের ভুষি। এক গ্লাস পানিতে এক চামচ ইসবগুলের ভুসি গুলিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে ফেলুন।

হেমোরয়েড বা পাইলস এর জটিলতা

হেমোরয়েড যেটা পাইলস নামে পরিচিত, সঠিকভাবে পরিচালনা ও চিকিৎসা না করা হয় তাহলে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। আপনি যদি পাইলস থেকে জটিলতার সন্দেহ করে থাকেন, তাহলে উপযুক্ত রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসার জন্য একজন পেশাদার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। হেমোরয়েডের কিছু সম্ভাব্য জটিলতার মধ্যে রয়েছে, যেমনঃ
হেমোরয়েড-বা-পাইলস-এর-জটিলতা
থ্রম্বোসিসঃ বাহ্যিক হেমোরয়েডগুলি রক্ত ​​জমাট বাঁধতে পারে, যার ফলে তীব্র ব্যথা, ফোলাভাব এবং প্রদাহ হতে পারে। এই অবস্থা, থ্রম্বোজড হেমোরয়েডস নামে পরিচিত, উপসর্গগুলি উপশম করতে এবং আরও জটিলতা রোধ করতে চিকিৎসার হস্তক্ষেপের প্রয়োজন।

রক্তপাতঃ হেমোরয়েড রক্তপাত হতে পারে, বিশেষ করে মলত্যাগের সময়। যদিও ছোটখাট রক্তপাত এবং সাধারণত নিজে থেকেই সমাধান হয়ে যায়, তবে দীর্ঘদিন ধরে রক্তপাতের জন্য রক্তশূন্যতা হতে পারে।

প্রল্যাপসঃ কিছু ক্ষেত্রে, অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েড মলদ্বারের বাইরে বের হতে পারে, এই অবস্থাটি প্রল্যাপসড হেমোরয়েডস নামে পরিচিত। প্রল্যাপ্সড হেমোরয়েড অস্বস্তি, জ্বালা এবং অসুবিধার কারণ হতে পারে। গুরুতর প্রল্যাপসের জন্য রাবার ব্যান্ড লাইগেশন বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।

শ্বাসরোধঃ প্রল্যাপ্সড হেমোরয়েড মলদ্বারের বাইরে আটকে যেতে পারে, যার ফলে শ্বাসরোধ হতে পারে এবং রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এটি গুরুতর ব্যথা, ফুলে যাওয়া এবং টিস্যুর ক্ষতির কারণ হতে পারে, লক্ষণগুলি উপশম করতে এবং জটিলতা রোধ করতে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

দীর্ঘস্থায়ী ব্যথাঃ ক্রমাগত উপসর্গ যেমন চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং অস্বস্তি জীবনযাত্রার মান এবং দৈনন্দিন কাজকর্মকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে।

সংক্রমণঃ ঘামাচি, ঘষা বা বিরক্তিকর হেমোরয়েডগুলি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণ হতে পারে, যার ফলে লালভাব, ফোলাভাব, উষ্ণতা এবং পুঁজ নিষ্কাশনের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
ফিস্টুলাঃ দীর্ঘস্থায়ী পাইলস বা হেমোরয়েড এনাল ফিস্টুলাসের বিকাশ ঘটাতে পারে, যা পায়ুপথ এবং ত্বকের মধ্যে অস্বাভাবিক সংযোগ।

অ্যানিমিয়াঃ হেমোরয়েডস থেকে দীর্ঘস্থায়ী রক্তপাতের ফলে আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতা হতে পারে, এমন একটি অবস্থা যা লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কম এবং টিস্যুতে অক্সিজেন সরবরাহ হ্রাস করে। অ্যানিমিয়া ক্লান্তি, দুর্বলতা, ফ্যাকাশে ত্বক এবং শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।

দৈনন্দিন জীবনের উপর প্রভাবঃ দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা বা পাইলস থেকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতী সৃষ্টি করে যা কাজ এবং শারীরিক ব্যায়াম সহ দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপকে প্রভাবিত করে। যার ফলে জীবন যাত্রার মান হ্রাস পায়।

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় সম্পর্কে শেষ কথা

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আমার শেষ কথা হলো পায়ুপথের যেকোনো রোগকেই অধিকাংশ মানুষ পাইলস বলে মনে করেন। কিন্তু পায়ুপথের রোগ মানেই পাইলস নয়। পায়ুপথে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। বেশির ভাগ রোগী, বিশেষত নারীরা, এসব সমস্যার কথা গোপন করে রাখেন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করতে দেরি করে ফেলেন। পায়ুপথে সাধারণত ফিসার, ফিস্টুলা, হেমোরয়েড, ফোড়া, প্রোলাপস, রক্ত জমাট, পলিপ বা টিউমার ইত্যাদি রোগ হতে পারে।

সব সমস্যার অন্যতম কারণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। তাই এ বিষয়ে আগে থেকে সচেতন ও সতর্ক থাকতেই হবে। চিকিৎসা না নিলে এ থেকে কখনো কখনো ক্যানসার বা বড় সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই যথাসময়ে এর চিকিৎসা ও সতর্কতা জরুরি। সমীক্ষা বলছে, ৪৫-৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এই রোগের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। তবে কমবয়সীদের মধ্যেও এখন এই রোগ বাড়ছে। জীবনযাত্রায় অনিয়ম ও অপুষ্টিকর খাবার খাওয়া এই রোগের অন্যতম কারণ।

সতরাং, আশা করছি আমি আপনাকে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়, পাইলস এর প্রাথমিক লক্ষণ, পাইলস এর চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি, অপারেশন ছাড়া পাইলস এর চিকিৎসা,পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক তথ্য ও ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যা আপনার দৈন্দিন জীবনকে প্রভাবিত ও সুন্দর করবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url