ঋতু পরিবর্তনের সময় ভাইরাল জ্বর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়

ঋতু পরিবর্তনের সময় ভাইরাল জ্বর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় জানতে হলে বিডি টেকল্যান্ডের আজকের এই আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন। আজকে আমি ঋতু পরিবর্তনের সময় ভাইরাল জ্বর এর কারন, লক্ষন ও এর প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো।
ঋতু-পরিবর্তনের-সময়-ভাইরাল-জ্বর-থেকে-রক্ষা-পাওয়ার-উপায়
বর্তমান সময়ে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ভাইরাল ইনফেকশনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ঋতু পরিবর্তনের কারণে কমবেশি সবাই ভাইরাল জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। আসলে ভাইরাল ইনফেকশন একজনের থেকে আরেক জনে খুব দ্রুত ছড়ায়। জেনে নিন ঋতু পরিবর্তনের সময় কিভাবে ভাইরাল জ্বর থেকে রক্ষা পাবেন তার উপায়ঃ

পেইজ সূচিপত্রঃ ঋতু পরিবর্তনের সময় কিভাবে ভাইরাল জ্বর থেকে রক্ষা পাবেন জেনে নিন

ঋতু পরিবর্তনের সময় ভাইরাল জ্বর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়

ঋতু পরিবর্তনের সময় ভাইরাল জ্বর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় জানতে আজকের আর্টিকেলের এই অংশ থেকে পড়তে থাকুন। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঋতু পরিবর্তনের সময় বাতাসে দানা বাঁধে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া। ভ্যাপসা গরমে জ্বর, সর্দি, গলাব্যথা, কাশি শরীরে বাসা বাধে। ডাক্তারের কাছে গেলেই কড়া অ্যান্টিবায়োটিক হাতে ধরিয়ে দেয়। তবে জ্বর সর্দি থেকে সুস্থ হতে প্রথমেই অ্যান্টিবায়োটিক না খেয়ে ঘরোয়া উপায়ে জ্বার সর্দির মোকাবেলা করুন।

আদাঃ সর্দি-কাশি, জ্বর কিংবা গলাব্যথা রোধে আদার ব্যবহার অনেকেরই জানা। এ ধরনের সমস্যায় আদা ভীষণ উপকারী। আদা চায়ের সঙ্গে যোগ করতে পারেন কিছুটা মধু। এভাবে পান করলে তা আপনার শরীর উষ্ণ রাখার পাশাপাশি সর্দি-কাশি দূর করতে সাহায্য করবে। এক চা চামচ আদার রস সামান্য লবণ যোগ করে খেলেও উপকার পাবেন।

ভেপার ব্যবহারঃ প্রথমে পরিষ্কার চাদর বা তোয়ালে দিয়ে কান, গলা, মাথা ঢেকে নিন। এর পর গরম পানি ভাপ নিন। গরম পানিতে ব্যাকটেরিয়া নিরোধক ওষুধ মিশিয়ে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে সেটি মেশাতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে। অথবা মেশাতে পারেন ক্যামোমাইল বা ইউক্যালিপটাস তেল। ভাপ নিলে কমবে পোস্ট নেজাল ড্রিপিং। ফলে কমবে কাশি। ভাপ নেওয়ার সময় ফ্যান বন্ধ রাখবেন। ভাপ নেওয়া শেষ হওয়ার পর মিনিট দশেক ফ্যানের নিচে থাকবেন না।

আপেল সাইডার ভিনেগারঃ আপেল সাইডার ভিনেগারের অনেক রকম গুণ রয়েছে। তার মধ্যে গলার মিউকাসকে ভাঙতে এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধে কার্যকরী। সর্দি-কাশির সমস্যায় প্রতিদিন খালি পেটে হালকা গরম পানিতে ২ চা চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার যোগ করে খাবেন। এতে ঠান্ডার সমস্যা দূর হবে অনেকটাই।

ভিটামিন সিঃ আমরা সবাই জানি যে ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। লেবু, কমলা, সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল ইত্যাদি ভিটামিন সি এর সহজলভ্য কযেকটি উৎস। হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে তা সর্দি-কাশি কমাতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত ভিটামিন সি শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং অন্যান্য অসুস্থতা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

মধুঃ বর্ষায় ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত অসুখ থেকে বাঁচতে রাতে ঘুমানোর আগে মধু খেতে পারেন। হালকা গরম পানি বা দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাবেন। এটি ঠান্ডার প্রকোপ ও কাশি কমাতে দারুণ কার্যকরী। তবে মধু যেন খাঁটি হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে।

ডাবের পানিঃ যেহেতু গরম বাড়ছে, এখন শরীরকে হাইড্রেট রাখা দরকার। রোজ একটা করে ডাবের জল পান করুন। এটি দেহে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখবে। পাশাপাশি হজমজনিত সমস্যা থেকেও আপনাকে দূরে রাখবে।

লেবুর রসঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন সি। তাই এই মরশুমে লেবুর রস, কিউই, পেয়ারার মতো ফল বেশি করে খেতে হবে। ভিটামিন সি বসন্তে সংক্রমণ ও ভাইরাসের আক্রমণ থেকে আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে।

তুলসী পাতাঃ ছেলেবেলা থেকেই জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা, ব্রঙ্কাইটিস, ম্যালেরিয়া এবং আরও অনেক রোগের উপশমকারী উপাদান হিসেবে তুলসী পাতার রসের কথা আমরা জেনে এসেছি। এতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিবায়োটিক এবং আরও অনেক উপাদান রয়েছে। ৮ থেকে ১০টি তুলসী পাতা ভালো করে জলে ধুয়ে নিন। তারপর গরম জলে বেশ কিছুক্ষণ ধরে পাতাগুলি ফোটান। সেই ফোটানো জল ১ কাপ করে রোজ খান।

দারুচিনি চাঃ চায়ের মধ্যে দারুচিনি ও মধু মিশিয়ে খান। এতে যেমন ওজন কমবে, তেমনই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এছাড়া কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবে। দারুচিনি ও মধুর চা দেহে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বের করে দেবে।

আদা ও আমলকিঃ পেস্ট করে এর রস ছেঁকে নিন। আদা ও আমলকির রস আপনাকে রোগের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখবে। পাশাপাশি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী।

হাইড্রেশনঃ নিশ্চিত করুন যাতে আপনার শিশু ভালোভাবে হাইড্রেটেড থাকে। বিশেষ করে যদি জ্বর, ডায়রিয়া বা বমির মতো লক্ষণগুলি অনুভব করে। জল, পরিষ্কার স্যুপ এবং ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন তরল ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

প্রোটিনঃ আমরা সকলেই জানি, ইমিউন ফাংশনের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। আপনার শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তার খাদ্যে চর্বিহীন মাংস, ডিম, মটরশুটি এবং বাদাম অন্তর্ভুক্ত করুন।

সিজনাল ফ্লু ভ্যাকসিনঃ শিশুদের ভাইরাল ইনফেকশন, বিশেষ করে ফ্লু থেকে রক্ষা করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল টিকা। মরশুমের ফ্লু ভ্যাকসিন বার্ষিক সুপারিশ করা হয়, কারণ এটি ভাইরাসের সবচেয়ে সাধারণ স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

রোটাভাইরাস ভ্যাকসিনঃ রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন শিশু এবং ছোট শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে।

স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনঃ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন, শিশুদের অসুস্থ ব্যক্তিদের থেকে দূরে রাখুন এবং তাদের মুখ, বিশেষ করে তাদের চোখ, নাক এবং মুখ স্পর্শ এড়াতে উৎসাহিত করুন।

পর্যাপ্ত বিশ্রামঃ বিশ্রাম পুনরুদ্ধারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিশ্চিত করুন যে আপনার শিশু পর্যাপ্ত ঘুম পায়। কারণ বিশ্রামই শরীর মেরামত করে এবং এই সময় তার প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করে।

বাড়ির পরিবেশঃ এছাড়াও আপনার বাড়ি নিয়মিত পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করুন। সঙ্গেই নজর রাখুন, যাতে আপনার বাড়িতে ভালোভাবে বায়ুচলাচল হয়।

ভাইরাল জ্বর কি ভাইরাল জ্বর কিভাবে হয়

ভাইরাল জ্বর কী ভাইরাল জ্বর কিভাবে হয় তা বোঝার মাধ্যমে, আপনি আরও ভাল এবং আরও সামগ্রিক পদ্ধতিতে এর ঘটনা মোকাবেলা করতে পারেন। যদি আপনার শরীরের তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট অতিক্রম করে, তবে তাকে স্বাভাবিক জ্বর বলা হয়। যখন আপনার শরীর একটি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সাথে যুদ্ধ করে, তখন জ্বর হওয়া সাধারণ ব্যাপার। কোনো ভাইরাল ইনফেকশনের কারণে এই জ্বর হলে তা ভাইরাল ফিভার নামে পরিচিত।

ভাইরাল জ্বর সাধারণত তীব্র, অন্তর্নিহিত ভাইরাল সংক্রমণ এবং ঋতু পরিবর্তনের সময় সাধারণত বর্ষাকালে ৩-৫ দিন স্থায়ী হয়। কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে এ জ্বর ১৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। বাচ্চাদের এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। অনেক সময় জ্বর নির্ণয় করা যায় না এবং এটি গুরুতর জটিলতায় বিকশিত হতে পারে। আপনার জ্বর থাকলে তা উপেক্ষা করা উচিত নয়। সংক্রমণ নির্ণয় ও শনাক্ত করার জন্য আপনার চিকিৎসা সেবা নেওয়া উচিত। ঋতু পরিবর্তনের সময় ভাইরাল জ্বরের লক্ষন গুলো-
  • ঘন মাথাব্যাথা
  • চোখে জ্বলছে
  • শরীরে সাধারণ দুর্বলতা
  • মাত্রাতিরিক্ত জ্বর
  • শরীরে ব্যাথা।
  • ক্ষিদে কমে যাওয়া।
  • ওজন কমে যাওয়া।
  • অবসাদ।
  • বমি বমি ভাব।
  • শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়।
  • কাঁপুনি।
 কিভাবে হয়

ভাইরাল জ্বর সংক্রমণ ও সংক্রামক, তাই এই সংক্রমণ সহজেই একজনের থেকে অন্য জনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমিত ব্যক্তি যখন হাঁচি দেয়, কথা বলে বা কাশি দেয়, তখন ছোট ছোট তরল ফোঁটা বাতাসে নির্গত হয়। যদি কোনও সুস্থ ব্যক্তি এই ফোঁটারগুলির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসে, তবে সেই ব্যক্তি তখন ভাইরাল সংক্রমণে আক্রান্ত হয়৷

ভাইরাসটি আপনার রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করার পরে, ভাইরাল জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয় যা আপনার শরীরে প্রায় ১৬-৪৮ ঘন্টা সময় লাগে। একটা সময়ের পরে, সংক্রমণ গুরুতর হয় এবং ভাইরাল জ্বরের প্রভাব বাড়তে থাকে। তাপমাত্রার হঠাৎ বৃদ্ধি আপনার রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা, রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার ইঙ্গিত দেয়৷

ভাইরাল জ্বরের প্রকারভেদ

ভাইরাল জ্বরের প্রকারভেদ বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে যেমন সংক্রমণের ধরণ, রোগের তীব্রতা, শরীরের অঙ্গ প্রভাবিত ইত্যাদি। ব্যাপকভাবে, ভাইরাল জ্বরকে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে। ডাক্তাররা রোগীর ভাইরাল জ্বরকে শরীরের যে অঞ্চলে প্রভাবিত করে তার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকারে শ্রেণীবদ্ধ করে। এখানে কয়েক ধরনের ভাইরাল জ্বর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাল জ্বরঃ যদি প্যাথোজেন আপনার শ্বাসযন্ত্রের ট্র্যাক্টকে প্রভাবিত করে তবে এটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাল জ্বর হিসাবে পরিচিত। নিম্ন বা উপরের শ্বাসতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এমন কয়েকটি সংক্রমণের মধ্যে রয়েছে ব্রঙ্কাইটিস, ঠান্ডা, ফ্লু, অ্যাডেনোভাইরাস সংক্রমণ, পোলিও, শ্বাসযন্ত্রের সিনসাইটিয়াল ভাইরাস সংক্রমণ, গুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সিনড্রোম (এসএআরএস) ভাইরাস, কোভিড -১৯ ভাইরাস এবং প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট ভাইরাল জ্বর এবং হাম। আপনি এই ধরনের সবচেয়ে সাধারণ ভাইরাল জ্বরের লক্ষণগুলি অনুভব করতে পারেন
  • শরীরের ব্যাথা
  • সর্দি
  • কাশি
  • জ্বর
  • গলা ব্যাথা
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ভাইরাল জ্বরঃ যদি ভাইরাসটি আপনার পরিপাকতন্ত্রকে আক্রমণ করে তবে এটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ভাইরাল সংক্রমণের কারণ হয়। সংক্রামক প্যাথোজেন পেট ফ্লু নামে একটি অবস্থার সৃষ্টি করে। এই ভাইরাসগুলি মলত্যাগের সময় মল দিয়ে নির্গত হয়। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ভাইরাল জ্বরের কয়েকটি উদাহরণের মধ্যে রয়েছে রোটাভাইরাস সংক্রমণ, নোরোভাইরাস রোগ এবং অ্যাস্ট্রোভাইরাস সংক্রমণ। এই ভাইরাল সংক্রমণ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্যাঘাতের সাথে যুক্ত যেমন ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, বমি ইত্যাদি। এর উদাহরণের মধ্যে রয়েছে রোটাভাইরাস, নোরোভাইরাস, অ্যাস্ট্রোভাইরাস এবং কয়েকটি অ্যাডেনোভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট ভাইরাল জ্বর।

হেমোরেজিক ভাইরাল ফিভারঃ কিছু পরিস্থিতিতে, ভাইরাসটি অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের মতো জীবন-হুমকির সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এই ধরনের জ্বর হেমোরেজিক ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা আপনার শরীরের তাপমাত্রা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি করতে পারে। এই ভাইরাল জ্বর আপনার রক্তের প্লেটলেট এবং জাহাজগুলিকে প্রভাবিত করে এবং অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হতে পারে। এই ভাইরাল জ্বরের কয়েকটি উদাহরণ হল হলুদ জ্বর এবং ডেঙ্গু।

এক্সানথেমেটাস ভাইরাল জ্বরঃ এই ভাইরাল জ্বরের কারণে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দেয় এবং এর মধ্যে রয়েছে গুটিবসন্ত, রুবেলা, হাম, চিকেনপক্স এবং চিকুনগুনিয়ার মতো উদাহরণ। কিছু exanthematous ভাইরাস অত্যন্ত সংক্রামক এবং ত্বকে ছোট ছোট বিস্ফোরণ তৈরি করে, যেমন হাম এবং চিকেন পক্স। যদিও কিছু ভাইরাস ফোঁটার মাধ্যমে ছড়ায়, কিছু অন্যান্য ভাঙ্গা ক্ষত থেকে তরলের মাধ্যমে ছড়ায়।

নিউরোলজিক ভাইরাল জ্বরঃ এটি ঘটে যখন ভাইরাস কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং নিউরোলজিক ভাইরাল জ্বর সৃষ্টি করে। কয়েকটি উদাহরণের মধ্যে রয়েছে জলাতঙ্ক, পোলিও, এইচআইভি, ভাইরাল মেনিনজাইটিস এবং এনসেফালাইটিস। এই ভাইরাল জ্বরের কিছু সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছেসমন্বয় করতে অসুবিধা

  • তন্দ্রা
  • জ্বর
  • আকস্মিক খিঁচুনি

ভাইরাল জ্বর সিপ্রভাবঃ সাধারণত, ভাইরাল জ্বর এক সপ্তাহ বা দশ দিন স্থায়ী হয়। আপনার ভাইরাল জ্বরের চিকিৎসায় দেরি হলে তা অনেক গুরুতর জটিলতার কারণ হতে পারে। প্রধান জটিলতাগুলির মধ্যে একটি হল নিউমোনিয়া, যা ভাইরাসের জন্য আপনার শ্বাসযন্ত্রকে আক্রমণ করা সহজ করে তোলে। আরেকটি ভাইরাল জ্বরের জটিলতা হল ল্যারিঞ্জাইটিস, যাতে আপনার স্বরযন্ত্র সরু হয়ে যায় এবং ফুলে যায়। ল্যারিঞ্জাইটিসের কারণে শ্বাসকষ্ট হয়

যদি ভাইরাল জ্বরের চিকিৎসা সময়মতো না করা হয়, তাহলে এটি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মতো প্রাণঘাতী অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। এগুলি ছাড়াও, এখানে ভাইরাল জ্বরের আরও কয়েকটি জটিলতা রয়েছে।

  • খিঁচুনি
  • কোমা
  • লিভার এবং কিডনি ব্যর্থতা
  • একাধিক অঙ্গ ব্যর্থতা
  • রক্তের সংক্রমণ
  • শ্বাসযন্ত্রের জ্বর

মারবার্গ ভাইরাল জ্বরঃ একটি জুনোটিক রোগ যা উচ্চ জ্বর, অস্বস্তি, বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, ত্বকের ফুসকুড়ি এবং রক্তক্ষরণ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এ জ্বরে আক্রান্তের মৃত্যুর হার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত। মারবার্গ ভাইরাস ত্বকের ক্ষত এবং মিউকোসাল মেমব্রেনের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। লিভার, লিম্ফ নোড এবং প্লীহা হল প্রাথমিক সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষ্য, যদিও ভাইরাস দ্রুত অন্যান্য টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে।
 
মারবার্গ ভাইরাস বিশেষভাবে ইমিউন সিস্টেমের কোষগুলিকে সংক্রামিত করে, যার মধ্যে রয়েছে মনোসাইট এবং ডেনড্রাইটিক কোষ, যার ফলে ইমিউন অ্যাক্টিভেশনকে দমন করে এবং অনিয়ন্ত্রিত ভাইরাল প্রতিলিপির অনুমতি দেয়। যদিও লিম্ফোসাইট সরাসরি সংক্রামিত হয় না, তবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোষ অ্যাপোপটোসিসের মধ্য দিয়ে যায় , এটি একটি প্রভাব যা MVD প্যাথলজির একটি বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচিত হয়।

ভাইরাল জ্বরের কারণ কী

ভাইরাল জ্বরের কারণ হলো ভাইরাস সংক্রমণ, যেমন কোনো সংক্রমিত ব্যক্তির আশেপাশে গেলে হাঁচি ও কাশি মাধ্যমে একজনের থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত কারো দ্বারা স্পর্শ করা হতে পারে এমন পৃষ্ঠ বা বস্তুর সাথে যোগাযোগ করা। এই সংক্রমণগুলি ভাইরাল জ্বরের কারণ। ভাইরাসগুলি মাইক্রোস্কোপিক সংক্রামক এজেন্ট।

ভাইরাল জ্বর আপনার শরীরের কোষের মধ্যে সংক্রামিত এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করে। জ্বর হলো ভাইরাসের বিরুদ্ধে আপনার শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যেহেতু অনেক ভাইরাস তাপমাত্রা সংবেদনশীল, আপনার শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধি আপনাকে ভাইরাসের প্রতি কম অতিথিপরায়ণ করে তোলে। ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার অনেক উপায় রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেঃ

  • যখন একজন ব্যক্তি হাঁচি, কাশি, কথা বলেন বা হাই তোলেন, তখন তিনি তার শরীর থেকে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার কিছু ক্ষুদ্র কণা স্প্রে করেন। আপনি যদি তার কাছাকাছি বসে থাকেন তবে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া মুখ বা নাক দিয়ে আপনার শরীরে প্রবেশ করে এবং আপনাকে সংক্রমিত করে। শরীর সম্পূর্ণরূপে সংক্রামিত হতে প্রায় ১৬-৪৮ঘন্টা সময় লাগতে পারে। মনে রাখবেন যে ভাইরাল জ্বরের কোন উপসর্গ অনুভব করছেন না এমন কেউ ভাইরাস বহন করতে পারে এবং অন্যদের সংক্রামিত করতে পারে।
  • শিশুরা, বিশেষ করে নবজাতক, গরম প্রাকৃতিক পরিবেশে বেশি পোশাক পরলে জ্বর হতে পারে কারণ তারা তাদের পুরো শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
  • দূষিত পানি পানের ফলেও ভাইরাসজনিত জ্বর হতে পারে।যেকোনো খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
  • সংক্রামিত ব্যক্তির কাছ থেকে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে শ্বাস নেওয়ার সময় ভাইরাল জ্বরের কারণ হতে পারে।
  • ভাইরাল জ্বরে সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে পানীয় বা খাবার ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমেও সংক্রমণ হতে পারে।
  • সিজনাল ফ্লু ভাইরাল জ্বর সৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে।
  • ভাইরাল সংক্রমণ পোকামাকড় এবং প্রাণীদের দ্বারাও ছড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, জিকা ভাইরাস এবং হলুদ জ্বর হল ভাইরাল সংক্রমণ যা পোকামাকড় এবং প্রাণীর কারণে ছড়িয়ে পড়ে।
  • সঠিকভাবে না ধুয়ে আপনার হাত দিয়ে নাক এবং মুখ স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন।
  • আপনি যদি ঠাণ্ডায় ভুগে থাকেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই ভিড়ের জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে এবং হাঁচি, কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় আপনার মুখ ঢেকে রাখতে হবে।

ভাইরাল জ্বর সম্পর্কিত সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর

আপনারা যারা ভাইরাল জ্বর সম্পর্কিত সচোরাচর যে প্রশ্নগুলা গুগলে কিংবা কোনো ওয়েব সাইটে এসে সার্চ করে থাকেন তার সংক্ষেপে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর নিচে তুলে ধরা হলো। যা ঋতু পরিবর্তনের সময় ভাইরাল জ্বর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে আশা করছি আপনারা সংক্ষিপ্ত ধারনা লাভ করতে পারবেনঃ

প্রশ্নঃ ভাইরাল জ্বর কত দিন থাকে?

উত্তরঃ ভাইরাল জ্বরের সময়কাল সাধারণত ১ থেকে ৪ দিনের মধ্যে থাকে, কিছু ক্ষেত্রে মাত্র এক দিন স্থায়ী হয়। আর ডেঙ্গুর মতো নির্দিষ্ট ভাইরাল জ্বর ১০ দিন বা তারও বেশি সময় ধরে চলতে পারে।

প্রশ্নঃ ভাইরাস জ্বরের সবচেয়ে ভালো ঔষধ কোনটি?

উত্তরঃ ভাইরাস জ্বরের সবচেয়ে ভালো ঔষধ হলো অ্যাসিটামিনোফেন বা আইবুপ্রোফেন। এই ওষুধ জ্বর এবং শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। প্রশান্তিদায়ক লজেঞ্জ বা কাশির ড্রপস এগুলি গলা ব্যথা এবং কাশির জন্য উপশম দিতে পারে। আপনার তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করার জন্য উপযুক্ত মাত্রায় প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন নিন। প্রচুর তরল পান করুন, বিশেষ করে পানি। অ্যালকোহল, চা এবং কফি এড়িয়ে চলুন কারণ এই পানীয়গুলিতে সামান্য ডিহাইড্রেশন হতে পারে।

প্রশ্নঃ ভাইরাল জ্বর ও ব্যাকটেরিয়া জ্বর চেনার উপায়?

উত্তরঃ ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়া হলে আপনি কিভাবে বুঝবেন? ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া একই ধরনের উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে, যেমন জ্বর, কাশি এবং ফুসকুড়ি। আপনার কী ধরনের সংক্রমণ হয়েছে তা জানার একমাত্র উপায় হল একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীকে আপনার মূল্যায়ন করা। যদি আপনার লক্ষণ থাকে যা কয়েক দিনের বেশি স্থায়ী হয় বা এটি আপনাকে উদ্বিগ্ন করে সেক্ষেত্রে বুঝবেন এটি ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত জ্বর।

প্রশ্নঃ ভাইরাল জ্বরের জন্য কোন এন্টিবায়োটিক ভালো?

উত্তরঃ অ্যান্টিবায়োটিকগুলি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিপরীতে ভাইরাল জ্বরের বিরুদ্ধে অকার্যকর। কোন নির্দিষ্ট চিকিত্সা নেই, এবং যত্নের ফোকাস প্রায়শই লক্ষণ ব্যবস্থাপনার উপর থাকে। আপনি নীচের বিষয়গুলি বিবেচনা করে বাড়িতে ভাইরাল জ্বরের চিকিত্সা করতে পারেন: আইবুপ্রোফেন বা প্যারাসিটামলের মতো ওষুধগুলি সাধারণ ভাইরাল জ্বরের ওষুধ।

প্রশ্নঃ ভাইরাল জ্বর কি সংক্রামক?

উত্তরঃ ভাইরাল জ্বর ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পাড়ে। অতএব, যখন প্রাপ্তবয়স্কদের ভাইরাল জ্বরের লক্ষণ থাকে, তখন বিশেষ করে শিশুদের সাথে যোগাযোগ করা উচিত নয়। ভাইরাল জ্বর একটি মাঝারি বা উচ্চ জ্বর সৃষ্টি করবে, ৩৮-৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে, অনেক ক্ষেত্রে এটি ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে; সর্দি, চোখ জল, হাঁচি, শুকনো লাল গলার মতো উপসর্গগুলি সহ। ঘাড়ের অংশটি ফুলে যেতে পারে, যার ফলে মাথাব্যথা, পেশী ক্লান্তি, অলসতা এবং অস্বস্তি হতে পারে।

ভাইরাল জ্বরের লক্ষণ

ভাইরাল জ্বরের লক্ষন হলো এ জ্বর হলে শরীরে নানা ধরনের লক্ষণ এবং উপসর্গ দেখা দেয়। তার মধ্যে রয়েছে শরীরে ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা,মানসিক অবসাদ। এ ছাড়া ওজন কমে যাওয়া, গলা ব্যাথা, বমি বমি ভাব ও বমি হতে হওয়া। পাশাপাশি ফুসকুড়ি, মাথাব্যথা, কাঁপুনিসহ শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। ভাইরাসের আক্রমণে ভাইরাল জ্বর হয়।
ভাইরাল-জ্বরের-লক্ষণ
ডেঙ্গু জ্বর, রেস্পিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস সংক্রমণ, এইচআইভি, কানের মাঝখানে সংক্রমণ থেকে ভাইরাল জ্বর হয়ে থাকে। এ ছাড়া সোয়াইন ফ্লু, চিকেন পক্স, হাম, হারপিস সিমপ্লেক্স, হেপাটাইটিস সিমপ্লেক্স, হেপাটাইটিস ও শিঙ্গল্স ভাইরাল ফিভারের জন্য দায়ী। আপনার যদি জ্বর থাকে তবে আপনি নিম্নলিখিত কিছু ভাইরাল জ্বরের লক্ষণগুলি অনুভব করতে পারেনঃ

  • সাধারণত ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বরও উঠতে পারে। ভাইরাল জ্বরের বৈশিষ্ট্য হলো শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। এটি মাঝারি থেকে গুরুতর হতে পারে।
  • গলার স্বর ভেঙ্গ যাওয়া।
  • পেশী বা জয়েন্টে ব্যথা যা হালকা থেকে গুরুতর হতে থাকে।
  • অতিসার।
  • অবসাদ।
  • শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
  • মুখ ফুলে যাওয়া।
  • ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া।
  • ভাইরাল জ্বরে মাথাব্যথা সাধারণ এবং মাঝারি থেকে গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে।
  • নাক বন্ধ হওয়া, হাঁচি এবং নাক দিয়ে জল পড়া ঘন ঘন লক্ষণ, বিশেষ করে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ক্ষেত্রে।
  • অনেক ভাইরাল সংক্রমণের কারণে গলা ব্যথা এবং ক্রমাগত কাশি হতে থাকে।
  • বমি বমি ভাব।
  • মাথা ঘোরা।
  • চোখ লাল হওয়া সেই সাথে জ্বালা করা।
  • চামড়ায় লাল লাল ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।
ভাইরাস জ্বর হলে তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিকেও জ্বর তিন-চার দিনে না কমলে রক্ত পরীক্ষাও করতে হবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

ভাইরাল জ্বর প্রতিরোধের উপায়

ভাইরাল জ্বর প্রতিরোধের উপায় হলো জ্বর প্রতিরোধে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন এবং জীবনধারা পরিবর্তন করা। রোগ প্রতিরোকরার ক্ষমতার কারণে, বেশিরভাগ দুর্বল মানুষ সহজেই ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই এ ভাইরাল জ্বরে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হয় ৷ আপনি কিছু সহজ টিপস অনুসরণ করে ভাইরাল জ্বর এড়াতে পারেন, যেমনঃ

মশার কামড় প্রতিরোধ করুনঃ মশা ভাইরাস বহন করতে পারে যা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ইত্যাদি রোগের কারণ হতে পারে। তাই মশারি ও মশা নিরোধক ব্যবহার করুন এবং মশার কামড় ঠেকাতে লম্বা হাতের কাপড় পরুন।

শ্বাস প্রশ্বাসের শিষ্টাচারঃ ফোঁটা ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় আপনার মুখ এবং নাক টিস্যু বা কনুই দিয়ে ঢেকে রাখুন। হাঁচি, কাশির সময় মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তরল বিন্দু। এই তরল বিন্দুর নাম হলো ড্রপলেট। জানলে অবাক হবেন, এই ড্রপলেটে কিন্তু অসংখ্য ভাইরাস থাকে। তাই চেষ্টা করুন হাঁচি-কাশির সময় নাকে ও মুখে হাত দিয়ে রাখার। সম্ভব হলে নিয়মিত মাস্ক পরুন।

ভ্যাক্সিন নিনঃ ভাইরাল সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ফ্লু ভ্যাকসিনের মতো সুপারিশকৃত ভ্যাকসিন সম্পর্কে আপ-টু-ডেট থাকুন। যে কোনো রোগ প্রতিরোধের অন্যতম উপায় ভ্যাক্সিন। ঋতু পরিবর্তনের সময় হরহামেশা অসুখ হয়ে থাকে। এসব রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আগে থেকে যদি ভ্যাক্সিন নেয়া থাকে তাহলে মৌসুম পরিবর্তনের সময় রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। ছোট থেকে বড় সবারই উচিত এখন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের টিকা নেওয়া। এই টিকা নিলে ভাইরাল ইনফেকশন গুরুতর হয় না।

কুলকুচি করুনঃ যারা গরম পানির মাধ্যমে কুলকুচি করেন তারা রোগ প্রতিরোধ করতে পারেন। কিন্তু যারা কুলকুচি করেন না ঋতু পরিবর্তনের সময় তারাই রোগাক্রান্ত হন। সবসময় কুলকুচি করা জরুরি। কুলকুচির মাধ্যমে মুখ ও ঠোঁট থেকে ব্যাকটেরিয়া দূর হয়ে যায়। কুলকুচি করার সময় মুখে অন্তত ৬০ সেকেন্ড পানি রেখে দিতে হয়।

ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলুনঃ প্রাদুর্ভাবের সময় অসুস্থ ব্যক্তি এবং জনাকীর্ণ স্থানের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিন।এ সময় পরিবারে কারও হাঁচি, কাশি, জ্বর হলে তাঁকে আলাদা রাখার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যঃ এ সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে। বিশেষ করে লেবু খান। পাশাপাশি প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলেও ইমিউনিটি বাড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ফলমূল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য খান।

হাত পরিষ্কার রাখাঃ হাতকে জীবাণুমুক্ত রাখতে সবসময় হাত ধোঁয়া জরুরি। ভাইরাল ইনফেকশন থেকে বাঁচতে হলে নিয়মিত হাত ধুতে হবে। কারণ হাতের থেকে মুখ হয়ে বেশিরভাগ ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে। তাই হাত ধুয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। সময় পেলেই ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। ছোটদেরও এই শিক্ষা দিন। তবেই রোগ থেকে মুক্তি পাবেন সহজে।

কারো ব্যবহৃত জিনিষ ব্যবহার না করাঃ পরিবারের কারও ভাইরাল ইনফেকশন হোক বা না হোক ব্রাশ, তোয়ালে ইত্যাদি একেজনেরটা অন্যজন ব্যবহার করবেন না। হয়তো শরীরে ভাইরাস থাকার পরও কোনো লক্ষণ আপনার দেখা দেয়নি। আপনি অ্যাসিম্পটোমেটিক। তাই সতর্ক থাকুন।

পর্যাপ্ত ঘুমঃ আপনার ইমিউন সিস্টেমকে সমর্থন করার জন্য মানসম্পন্ন ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন। শরীরকে সুস্থ রাখার অন্যতম নিয়ামক ঘুম। প্রতিদিন রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুম মানুষকে কাজে মনোযোগী করে তোলে। গবেষকরা বলছেন, যারা ৮ ঘণ্টা বা তার কম সময় ঘুমান তাদের ঋতু পরিবর্তনের সময় তাদের রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমালে শরীরকে সুস্থ রাখা যায়।

জলয়োজনঃ হাইড্রেটেড থাকার জন্য প্রচুর পানি পান করুন এবং আপনার শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করুন। যদিও শরীরকে সবসময় হাইড্রেটেড রাখতে হবে৷ কিন্তু পরিবর্তিত আবহাওয়ায় বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত যে আমাদের সর্বাধিক পরিমাণে তরল গ্রহণ করা উচিত। এতে যতটা সম্ভব ডাবের জল, ঘরে তৈরি ফলের রস এবং জল খান।

নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃ সামগ্রিক অনাক্রম্যতা বাড়াতে মাঝারি ব্যায়ামে নিযুক্ত হন। এসময় ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলেও ইমিউনিটি বাড়ে। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ব্যায়াম করা আবশ্যক। নিয়মিত হাঁটলেও শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও পেশী নড়াচড়া করে। হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়ামের অভ্যাস থাকলে ঋতু পরিবর্তনের সময় রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। ঋতু পরিবর্তনের সময় বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ব্যায়াম করতে হবে।

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টঃ স্ট্রেস-কমানোর কৌশলগুলি অনুশীলন করুন, কারণ দীর্ঘস্থায়ী চাপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে।

পরিচ্ছন্ন পরিবেশঃ আপনার চারপাশ পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখুন। আবহাওয়ার পরিবর্তন বা যেকোনও ধরনের সংক্রমণের কারণে ভাইরাল জ্বর হয়৷ তাই আপনার বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখা জরুরি। ঘরের কোনও কোণায় জল জমে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করুন। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ মশার বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে ।

ঋতু পরিবর্তনের সময় যেসব রোগব্যাধি হয়

ঋতু পরিবর্তনের সময় যেসব রোগব্যাধি হয় তার মধ্যে বিশেষ কয়কটি রোগ নিয়ে আলোচনা করবো। সধারণত শীত কমতে থাকলে শুরু হয়ে যাবে ঋতু পরিবর্তন, আর ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টা কিছু রোগের প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই ঋতু পরিবর্তনের আগে আমাদের সচেতনতা অবলম্বন করা অনেক বেশি প্রয়োজন। এই সময় কিছু অসুখ বাড়তে পারে। জেনে নেয়া যাক ঋতু পরিবর্তনের সময় কিভাবে নিজের বাড়তি যত্ন নেওয়া উচিত যাতে করে আমরা রোগ আক্রান্ত

১। টনসিলঃ আমাদের গলার দুইপাশে দুটি গ্রন্থিকে টনসিল বলা হয়৷ এই গ্রন্থি আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমের অংশ৷ বছরের যেকোনো সময় টনসিলের প্রদাহ দেখা দিতে পারে৷ যাদের টনসিলের প্রদাহ সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় বার বার এই সমস্যা হয়ে থাকে। তবে ঋতু পরিবর্তনের সময় সবচেয়ে বেশী টনসিলের সমস্যা দেখা দেয়৷ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে টনসিলে সমস্যা দেখা দেয়।

শীতের দিনে মৌসুমি ফ্লু হওয়ায় টনসিলাইটিসের প্রকোপ বাড়ে। টনসিলে সমস্যা দেখা দিলে সাধারণত মাঝারি থেকে তীব্র জ্বর থাকতে পারে, গলাব্যথা, খাবার গিলতে কষ্ট, মুখে দুর্গন্ধ, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ইত্যাদি৷ টনসিলে সমস্যা হলে দুদিকের লাল হয়ে ফুলে গেছে। টনসিলে সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত৷ ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে সমস্যা হলে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকে।

অনেকে মনে করেন টনসিলে সমস্যা হলে অপারেশন করতেই হবে কিন্তু তা নয়। কিছুক্ষেত্রে টনসিলে বার বার ইনফেকশন হতে থাকে, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয় ও বছরে পাঁচ থেকে সাত বার ইনফেকশন দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে টনসিল অপারেশন করে ফেলে দিতে হয়৷ রোগীর অবস্থা বুঝে চিকিৎসক পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ সঠিক সময় টনসিলের চিকিৎসা না করালে বড় ধরণের জটিলতা হতে পারে।
 
২। হাঁপানি বা এ্যাজমাঃ দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ এবং সংবেদনশীলতায় স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় যাকে বলে হাঁপানি বা অ্যাজমা। হাঁপানি রোগ হলে শ্বাসকষ্ট সাথে শুকনো কাশি থাকে, হঠাৎ দমবন্ধ ভাব অনুভব করে থাকে৷ ঋতু পরিবর্তনের সময় হাঁপানির টান উঠার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায়৷ এছাড়া বছরের যেকোনো সময়ই হাঁপানির সমস্যা দেখা দিতে হবে।

হাঁপানি থেকে দূরে থাকতে হলে এলার্জিজনিত সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে৷ এলার্জি টেষ্টের মাধ্যমে জেনে নিতে হবে রোগির কিসে এলার্জি তা থেকে দূরে থাকতে হবে৷ হাঁপানি রোগিদের ঘর থেকে বের হওয়ার আগে মাস্ক পরিধান করতে হবে৷ ঘরে কার্পেট রাখা যাবে না। এমনকি ফুলের রেণু থেকেও হাঁপানির টান উঠতে পারে।

কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা বা মানসিক অশান্তির মধ্যে থাকলে অনেক সময় হাঁপানির সমস্যা বেড়ে যায়। তাই নিজের মনকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখতে হবে৷ হাঁপানি কখনো পুরোপুরি ভালো হয়ে যায় না, তবে জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করে ও কিছু ঔষধ পত্রের মাধ্যমে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব।

৩। নিউমোনিয়াঃ নিউমোনিয়া হলে ফুসফুস ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়৷ ফুসফুসের ভিতরে বাতাসের থলিগুলো ফুলে যায়৷ তখন রোগীর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়৷ নিউমোনিয়া হলে সাধারণ লক্ষন হিসেবে জ্বর আসে ও কফযুক্ত কাশি হয়৷ এছাড়া শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে৷ আরো দেখা যায় বমি বমি ভাব, খাবারের প্রতি অনিহা, মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা ইত্যাদি৷ 

নিউমোনিয়াকে অবহেলা করলে অনেক সময় এটি তীব্র আকার ধারণ করতে পারে৷ অনেক সময় নিউমোনিয়ার লক্ষন দেখা দিলে সাধারণত ঠান্ডা কাশি মনে করে অনেকে এড়িয়ে চলে। কিন্তু শীতের আবহাওয়ায় ঠান্ডা কাশির মতো লক্ষন দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসক এর কাছে গিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে নিউমোনিয়া হয়েছে কি না। সঠিক সময় চিকিৎসা শুরু হলে নিউমোনিয়া গুরুতর আকার ধারণ করতে পারবে না৷

সকল ধরনের রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য ঋতু পরিবর্তনের সময় ধুলোবালি সহ ঠান্ডা জাতীয় সকল খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। এসময় আবহাওয়া অনেক বেশি আদ্র হবার কারণে খুব সহজে ঠান্ডা কাশি লেগে যায়। যেকোনো ধরনের ইনফেকশন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে। জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন আনলে ও সাবধান থাকলে সহজে রোগ আক্রান্ত হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা কমে যাবে।

৪। জ্বর-সর্দি-কাশিঃ ভাইরাল ফ্লু, এ সময়ের খুব প্রচলিত অসুখ। এ সময় শীত-গরমের তারতম্যে শরীর নাজুক হয়ে ওঠে। এই সুযোগ কাজে লাগায় ভাইরাস। জ্বরের সঙ্গে শুরু হয় সর্দি-কাশি। গলাব্যথাও হয়। ৭ থেকে ১০ দিনে এমনিতেই সেরে যায়। তবে কখনো কখনো এর সঙ্গে জেঁকে বসতে পারে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও। তখন অ্যান্টিবায়োটিক লাগতে পারে। গলাব্যথায় টোটকা হিসেবে গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করে নিলে ভালো।

৫। অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টঃ এ সময়ে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। কারণ ওই একই বাতাসের ধুলা, ফুলের রেণু। এখান থেকে অ্যালার্জির প্রবণতা বাড়ে। অতঃপর শ্বাসকষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। স্যালবুটামল, মন্টিলুকাস্ট জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হয়। প্রয়োজনে ইনহেলার ব্যবহার করবেন।

৬। সাইনুসাইটিসঃ যাদের সাইনুসাইটিস রয়েছে, তাদের এ সময়ে রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। গরম পানির ভাপ, মেন্থলের ভাপ নিলে উপকার পাবেন। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে খোলা বাতাসে হাঁটলে ভালো থাকা যায়।

৭। জলবসন্তঃ এ সময়ের একটি বিশেষ সংক্রামক অসুখ হলো জলবসন্ত। জলবসন্ত ভাইরাসজনিত। এমনিতে খুব ক্ষতিকর নয়। তবে অল্প কিছু ক্ষেত্রে এটা জটিলতা তৈরি করতে পারে। জলবসন্ত দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। নিজে নিজে ফোস্কা গালবেন না। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল খাবেন। গা চুলকাতে পারে। সে জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন খেতে পারেন। ক্ষেত্রবিশেষ অ্যান্টিবায়োটিকেরও প্রয়োজন হতে পারে। জলবসন্তের টিকা পাওয়া যায়। নিয়ে নিতে পারেন। আক্রান্ত ব্যক্তিকে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে দূরে রাখবেন।

৮। ডায়রিয়াঃ এ সময়ে পানিবাহিত রোগগুলো খুব বেশি হয়। ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগ থেকে সাবধান থাকতে হবে। ফুটানো পানি পান করবেন। বাইরের পানি, রাস্তার পাশে বানানো শরবত খাবেন না।

৯। ত্বকের অসুখঃ যাদের ত্বক ফাটার সমস্যা আছে, তাদের জন্য এই সময়টা খারাপ। শুষ্ক বাতাসের এ সময়ে ত্বক ফাটে বেশি। নিয়মিত পেট্রোলিয়াম জেলি, অলিভ অয়েল ব্যবহার করবেন। ত্বক ভেজা রাখবেন।

ঋতু পরিবর্তনের সময় শিশুর ঠাণ্ডা জ্বর

ঋতু পরিবর্তনের সময় শিশুর ঠাণ্ডা জ্বর হলে আপনারা অনেক সময় ঘাবড়ে যান কিভাবে এ জ্বর থেকে আপনার শিশুকে রক্ষা করবেন সে নিয়ে। ঋতু পরিবর্তনে শিশুদের শরীরে নানা ধরনের প্রভাব পড়ে। এখন আবহাওয়ার পরিবর্তনও দেখা যাচ্ছে। এই বৃষ্টি তো এই রোদ। এ সময় শিশুদের শরীরে আক্রমণ করে বসতে পারে ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া। তা থেকে সাধারণ ঠাণ্ডা বা জ্বর হতে পারে। এরকম হলে ভয় না পেয়ে কী করণীয় সেটা আগে জানতে হবে।

এই সময় হাঁচি ও কাশি হতে পারে। সঙ্গে অল্প জ্বর থাকতে পারে। এ সময় ভয় না পেয়ে সাধারণ সর্দি কাশিতে যা করণীয় সেগুলো খেয়াল রাখতে হবে। কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত রোগ সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।

  • আবহাওয়া অনুযায়ী শিশুকে গরম রাখতে হবে। তবে বেশি ভারী কাপড় না পরানো ভালো। এতে শিশু ঘেমে ঠাণ্ডা বেশি লেগে যেতে পারে।
  • সর্দি বা কাশি থাকলে শিশুকে গরম পানির সঙ্গে লেবু ও চিনি, লবঙ্গ ও মধু মিশিয়ে ৫-৬ চা-চামচ করে দিনে ৪-৫ বার খাওয়ালে আরামবোধ হবে।
  • অনেক সময় সর্দি হয়ে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সাধারণ স্যালাইন (খাওয়ার স্যালাইন) ড্রপারের সাহায্যে শিশুর দুই নাকের ছিদ্রে একফোটা করে দিনে দুই থেকে তিন বার দিলে ভালো। পাশাপাশি কটনবাড দিয়ে নাক ভালোভাবে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
  • শিশুরা সহজেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। সঠিক সময়ে চিকিত্‍সা না করালে নিউমোনিয়া মারাত্মক রুপ নিতে পারে। তাই শিশুর এ রোগের লক্ষণ দেখা দেবার সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ভালো।
  • এ সময় শিশুকে কুসুম গরম পানিতে গোসল করালে উপকার পাওয়া যায়। গোসলের আগে অলিভঅয়েল ব্যবহার করা উপকারী। রাতে ঘুমানোর আগে গ্লিসারিনের সঙ্গে পানি মিশিয়ে শিশুর হাত-পায়ে লাগাতে পারেন। এতে শীতে ত্বক ভালো থাকবে।
  • এই আবহাওয়ায় শিশুদের খাবারের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, ঋতু পরিবর্তনের ফলে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিতে পারে। সেই সাথে ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাস ইনফেকশন থেকে জ্বর হতে পারে। তাই বাইরের ও বাসি খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। ঘরে তৈরি হালকা ধরনের খাবার খাওয়াতে হবে।
  • বেশি বেশি পানি এবং তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। তবে কোনোভাবেই যেন ঠাণ্ডা না লেগে যায়। আর ছয় মাসের কম বসসী শিশুদের মায়ের দুধের বিকল্প নেই।
  • শিশুর অভিভাবককে অবশ্যই আবহাওয়ার পরিবর্তন বুঝতে হবে। শিশুকে সরাসরি ফ্যানের নিচে রাখা যাবে না। যেকোনো সমস্যা গুরুতর মনে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেক শিশুর অ্যালার্জি দেখা দেয়। এর ফলে তারা হাঁচি, চোখে পানি আসা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সমস্যায় ভোগে।
  • শীতকালে বাচ্চাদের মধ্যে যাদের হাঁপানির সমস্যা আছে, তাদের জন্য ঋতু পরিবর্তনের সময় বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। ঠান্ডা আবহাওয়া ও ধুলোবালির কারণে শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা বেড়ে যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ভাইরাল জ্বর হলে করনীয়

গর্ভাবস্থায় ভাইরাল জ্বর হলে করনীয় কি এ বিষয়ে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। যেকোনো ধরনের জ্বরই গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ডেঙ্গু সংক্রমণ হলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। এ সময় ডেঙ্গুর জটিলতা যেমন রক্তপাত, রক্ত ঘন হয়ে যাওয়া, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পেটে, ফুসফুসে পানি জমা হওয়া এবং গর্ভপাত হওয়ার মতো বিষয়গুলো বেড়ে যায়। ভাইরাল জ্বরে গর্ভবতী নারীদের রোগের তীব্রতা অনেক বেশি হতে পারে।

প্রকৃতির এই পরিবর্তনে সক্রিয় হয়ে গেছে কিছু রোগ সংক্রমণকারী ভাইরাস। বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা জন্মের কারণে ডেঙ্গু যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে বায়ুবাহিত রোগ ইনফ্লুয়েঞ্জা। সাধারণ মানুষের তুলনায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ভাইরাল জ্বর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। একদিকে যেমন গর্ভের সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, অন্যদিকে অনেক ওষুধের নিষেধাজ্ঞা। যেকোনো ধরনের জ্বরই গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর হয়ে থাকে। তাই এ সময়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

হেপাটাইটিস এ, বি ও ই এই সময় বেশি দেখা যায়। এর মধ্যে হেপাটাইটিস ই–তে আক্রান্ত হলে রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সাধারণ বিষয় হলেও এর জটিলতায় মা মারা যেতে পারেন। হেপাটাইটিস বি–তে আক্রান্ত হলে গর্ভের শিশুও সংক্রমিত হয়।

  • রুবেলা অনেকটা হামের মতো। গর্ভবতী নারীদের রুবেলা হলে গর্ভপাত ও শিশুর জন্মগত ত্রুটির হার অনেক বেশি হয়।
  • করোনার প্রকোপ কমে এলেও গর্ভাবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হলে মা ও সন্তানের ক্ষেত্রে জটিলতা বেশি হয়।
  • গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ শিশুকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। শিশুর জন্মগত ত্রুটি সৃষ্টি করে। আমাদের দেশে জিকা ভাইরাস এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
  • ভেরিসিলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মায়ের ঝুঁকি অনেক বেশি হয়। এ ছাড়া শিশু সংক্রমিত হয়। দেখা দেয় শিশুর জন্মগত ত্রুটি।

ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভের শিশুর কী ক্ষতি হতে পারে

  • গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
  • গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের মধ্যে জ্বর হলে গর্ভপাত বা মিসক্যারেজের আশঙ্কা থাকে। যেমন রুবেলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৬৫ থেকে ৮৫ ভাগ আশঙ্কা থাকে।
  • কিছু কিছু ভাইরাল জ্বরে শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দেয়। যেমন হাম, রুবেলা, সাইটোমেগালো ভাইরাস, হারপিস সিমপেক্স ভাইরাস, ভেরিসিলা, পারভো ভাইরাস ইত্যাদি। এই ত্রুটিগুলোর মধ্যে হার্টে ছিদ্র থাকা, ব্রেন ও স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা, বধির হয়ে যাওয়া, মানসিক প্রতিবন্ধকতা, অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার হয়ে থাকে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন

তাপমাত্রা যদি ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বরের সঙ্গে যদি কাশি, গায়ে কোনো র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি থাকে, মাথাব্যথা বা শরীরে ব্যথা থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় জ্বর এমনিতেই চলে যায়, তার পরও স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।

ওষুধ কী

গর্ভাবস্থায় প্যারাসিটামল নিরাপদ ওষুধ। কিন্তু প্যারাসিটামলের সঙ্গে অনেক সময় ক্যাফেইন, কোডেইন বা অন্য কোনো উপাদান যোগ করা থাকে, তাই এগুলো বেশি খাওয়া যাবে না। কোনোভাবেই অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন–জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। গর্ভাবস্থায় অনেক ওষুধ শিশুর জন্মগত ত্রুটি তৈরি করে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা উচিত হবে না।

প্রতিরোধে করণীয়

  • প্রতিরোধই সবচেয়ে ভালো নিরাময়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ভাইরাল জ্বর প্রতিরোধ করতে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।
  • পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। এ সময় বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। প্রতিদিন গোসল করতে হবে ও পরিষ্কার কাপড় পরতে হবে।
  • অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। গর্ভাবস্থায় রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। এ সময় ভিড়, জনসমাগমপূর্ণ জায়গা ও অসুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে।
  • গর্ভাবস্থায় ভাইরাল জ্বরের ঝুঁকি কমাতে গর্ভধারণের আগেই কিছু ভ্যাকসিন নেওয়া প্রয়োজন। যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, রুবেলা, হেপাটাইটিস, করোনার ইত্যাদি। আগে নেওয়া না থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভ্যাকসিন নিতে হবে।
  • প্রচুর পানীয় পান করুন। সেই সঙ্গে ভিটামিন সি খেতে হবে। ফলের রস, গরম চা, স্যুপ এই সময় আপনাকে আরাম দেবে, আবার ভাইরাসও বাড়তে দেবে না।
  • বাসায় তৈরি খাবার খান। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • ভাইরাল জ্বর শরীরকে দুর্বল করে দেয়, তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।

ভাইরাল জ্বর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে শেষ মন্তব্য

ভাইরাস প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যোগাযোগের মাধ্যমে সমগ্র জনসংখ্যা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা হোস্ট কোষে আক্রমণ করে প্রতিলিপি তৈরি করে। বেশিরভাগ ভাইরাল সংক্রমণ নির্দিষ্ট চিকিত্সার প্রয়োজন ছাড়াই নিজেরাই সমাধান করে। সাধারণ সর্দি-কাশির মতো ভাইরাল শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কার্যকরভাবে চিকিৎসার জন্য সীমিত ওষুধ পাওয়া গেলেও, এইচআইভি এবং কোভিড-১৯-এর মতো ভাইরাল সংক্রমণ পরিচালনার জন্য ওষুধ পাওয়া যায়না।

ভাল স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন এবং টিকা ভাইরাল অসুস্থতার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা হিসাবে কাজ করে। উপরন্তু, এটা গুরুত্বপূর্ণ একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এবং শরীরের আরও ক্ষতি না করে তা নিশ্চিত করতে। ঋতু পরিবর্তনের সময় ভাইরাল জ্বর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url