হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ ও রোপন পদ্ধতি

হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি হলো মাটির পরিবর্তে পানিতে গাছের প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করে লাভজনকভাবে অর্থকরী ফসল উৎপাদনের কৌশল। ঘরের ছাদ, আঙ্গিনা, নেট বা গ্লাসহাউজ ইত্যাদিতে Hydroponics পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করা হয়। এই পদ্ধতিতে সারা বছরই সবজি উৎপাদন করা সম্ভব।
হাইড্রোপনিক-পদ্ধতিতে-ক্যাপসিকাম-চাষ
উৎপাদিত সবজিতে কোন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না বিধায় এ সবজি নিরাপদ। Hydroponics পদ্ধতিতে মাটিবিহীন বড় স্টিলের বা প্লাস্টিকের ট্রেতে পানির মধ্যে গাছের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যোপাদান সমূহ সরবরাহ করে ক্যাপসিকাম, লেটুস, টমেটো, শসা, ক্ষীরা এবং স্ট্রবেরি উৎপাদন করা সম্ভব।

পেইজ সূচিপত্রঃ হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ

হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ ও রোপন পদ্ধতি

হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি হলো নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় মাটির পরিবর্তে পানিতে গাছের প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করে লাভজনকভাবে ও অর্থকরী ফসল উৎপাদনের কৌশল। Hydroponics পদ্ধতিতে মাটিবিহীন বড় স্টিলের বা প্লাস্টিকের ট্রেতে পানির মধ্যে গাছের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যোপাদান সমূহ সরবরাহ করে সাফল্যজনকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ করা হয়।

চারা উৎপাদন পদ্ধতিঃ হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চারা উৎপাদনের জন্য প্রথমে একটি প্লেটে খবরের কাগজ বা টিস্যু পেপার বিছিয়ে তার উপর বীজ ঘন করে ছিটিয়ে দিতে হবে। এর পর বীজের উপর হালকা জল দিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে উপরে আরেকটি খবরের কাগজ বা টিস্যু পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। একদম শুকিয়ে যেন না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে হালকা জল ছিটিয়ে দিতে হবে।

বীজ অঙ্কুরিত (গজানো) হওয়া শুরু করলে বীজকে স্পঞ্জ ব্লকের (Sponge block) গর্তে স্থাপন করতে হবে। এরপর ব্লক গুলোকে পানির ট্রেতে ভাসিয়ে রাখতে হবে। যখন চারায় ২-৩টি পাতা আসবে তখন থেকে প্রতিদিন ট্রেতে ২০-৩০ মিলিলিটার খাদ্য উপাদান দ্রবণ A এবং B যোগ করতে হবে। EC এর মান ০.৫-০.৮ ds/m এর মধ্যে রাখতে হবে। চারার বয়স ২০-২৫ দিন হলে চারাগুলো কর্কসিটের মাঝে ছিদ্র করে রোপণ করতে হবে।

চারা রোপণ পদ্ধতিঃ ট্রের আকার অনুযায়ী পরিমাণে মতো পানি ভরতে হবে। পানির গভীরতা ৬-৮ সেমি হতে হবে। প্রতি ১০০ লিটার পানির জন্য ১ লিটার ক্যাপসিকাম নিউট্রিয়েন্ট সলিউশন A ও B যোগ করতে হবে। দ্রবণ যোগ করার সময় প্রথমে নিউট্রিয়ন্ট A যোগ করে পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে এবং পরে খাদ্য নিউট্রিয়েন্ট সলিউশান B যোগ করে ভালোভাবে মিশাতে হবে।

দ্রবণের মিশ্রণ তৈরির পর ট্রের উপর কর্কসিট স্থাপন করতে হবে। প্রতিটি গাছ থেকে গাছ এবং সারি থেকে সারির মধ্যে ৩০ সেমি দূরত্ব রাখতে হবে। কর্কসিটের উপর এই দূরত্ব অনুযায়ী ছোট ছিদ্র করতে হবে। তারপর প্রতিটি ছিদ্রে ১টি করে চারা রোপণ করতে হবে। সাধারণত ২০-২৫ দিন পর পর ট্রেতে ১০% খাদ্য উপাদান সম্বলিত জলীয় দ্রবণ যোগ করতে হয়।

হাইড্রোপনিক ব্যবহার পদ্ধতি

হাইড্রোপনিক ব্যবহার পদ্ধতি একটি অত্যাধুনিক ফসল উৎপাদন পদ্ধতি। অতি লাভজনক ফসলের ক্ষেত্রে এই হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাটির পরিবর্তে পানিতে গাছের প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করে ফসল উৎপাদন করা হয়। যেখানে স্বাভাবিক চাষের জমি কম কিংবা নাই সেখানে ঘরের ছাদে বা আঙ্গিনায়, পলি টানেল, নেট হাউজে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি ও ফল উৎপাদন সম্ভব। সাধারণত দুটি উপায়ে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয় যেমনঃ সঞ্চালন পদ্ধতি ও সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতি।

সঞ্চালন পদ্ধতিঃ এ পদ্ধতিতে গাছের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদানসমূহ যথাযথ মাত্রায় মিশ্রিত করে একটি ট্যাংকিতে নেয়া হয় এবং পাম্পের সাহায্যে পাইপের মাধ্যমে ট্রেতে পুষ্টি দ্রবণ সঞ্চালন করে ফসল উৎপাদন করা হয়। প্রতিদিন অন্ততঃপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা পাম্পের সাহায্যে এই সঞ্চালন প্রক্রিয়া চালু রাখা দরকার। এই পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে প্রথম বছর ট্রে, পাম্প এবঙ পাইপের আনুসঙ্গিক খরচ একটু বেশি হলেও পরবর্তী বছর থেকে শুধু রাসায়নিক খাদ্য উপাদানের খরচ প্রয়োজন হয়। ফলে দ্বিতীয় বছর থেকে খরচ অনেকাংশে কমে যাবে।

সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতিতে একটি ট্রেতে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানসমূহ পরিমিত মাত্রায় সরবরাহ করে সরাসরি ফসল উৎপাদন করা হয়। এই পদ্ধতিতে খাদ্য উপাদান সরবরাহের জন্য কোন পাম্প বা পানি সঞ্চালনের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে খাদ্য উপাদান মিশ্রিত দ্রবণ ও উহার উপর স্থাপিত কর্কশীটের মাঝে ৫-৭ সেমি পরিমান জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে এবং কর্কশীটের উপরে ৪-৫টি ছোট ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে।

যাতে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে এবং গাছ তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন কর্কশীটের ফাঁকা জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে পারে। ফসলের প্রকারভেদে সাধারণত ২-৩ বার এই খাদ্য উপাদান ট্রেতে যোগ করতে হয়। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ সহজেই এই পদ্ধতি অনুসরন করে প্লাস্টিক বালতি, পানির বোতল, মাটির পাতিল ইত্যাদি ব্যবহার করেও বাড়ির ছাদ, বারান্দা এবং খোলা জায়গায় সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করতে পারে। এতে খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হবে।

হাইড্রোপনিক চাষ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা

হাইড্রোপনিক চাষ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা জানতে হলে পড়তে থাকুন। হাইড্রোপনিক পদ্ধতি নিয়ে আজকাল খুব আলোচনা হচ্ছে। যেমনটি শোনা যাচ্ছে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের কথা। বিশেষ করে শহরে যারা বাস করেন এবং ফসল উৎপাদনে আগ্রহী তারা এই পদ্ধতির বিষয়ে খুব উৎসাহী। কিন্তু দেশে এখনো এ পদ্ধতির সফল কোনো দৃষ্টান্ত নেই। তাছাড়া এমন কোনো ইনস্টিটিউটও নেই যেখানে যথাযথ প্রশিক্ষণ নেয়া যেতে পারে।

আমাদের জন্য এ পদ্ধতিটি অনেকটা উচ্চাভিলাসী হলেও দক্ষতার সঙ্গে করতে পারলে যে লাভজনক হবে তাতে সন্দেহ নেই। তাই যারা হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ করার চিন্তাভাবনা করছেন তাদের আগে এ পদ্ধতির সুবিধা অসুবিধাগুলো জেনে নেয়া দরকার। তার আগে এ পদ্ধতির একটি সংজ্ঞা দেয়া যাকঃ হাইড্রোপনিক্স হলো মাটি ছাড়া ফসল উৎপাদনের একটি কৌশল। পানির মধ্যে পুষ্টি উপাদানগুলো নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করা হয়।

মাটি ছাড়া চাষাবাদঃ এই পদ্ধতিতে আক্ষরিক অর্থেই মাটি ছাড়া প্রায় সব ধরনের ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে জনসংখ্যার তুলনায় আবাদযোগ্য জমির পরিমান কম এবং যা আছে দিন দিন সেগুলোও দখল হয়ে উঠছে ঘরবাড়ি, সেখানে হাইড্রোপনিক চমৎকার বিকল্প হতে পারে। তাছাড়া শিল্প কারখানার কারণে যেসব এলাকার মাটি এরই মধ্যে দূষিত হয়ে গেছে সেখানেও এ পদ্ধতি উপযুক্ত। চাইলে শহরেও ছাদের উপর এই পদ্ধতি শাকসবজি চাষ করে অন্তত পরিবারের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। গভীর সমুদ্রের অনাবাদি দ্বীপে সামরিক ঘাঁটিতে খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র সেই ১৯৪০ এর দশক থেকেই এ পদ্ধতি ব্যবহার করে। এছাড়া মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাও দীর্ঘ মহাকাশ যাত্রা বা আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে মহাকাশচারীদের খাদ্যের জোগান দিতে এ পদ্ধতি অবলম্বনের চেষ্টা করছে।

জায়গার সর্বোচ্চ ব্যবহারঃ এই পদ্ধতিতে যেহেতু ফসল ফলানো হয় খুবই নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যবস্থার মধ্যে সেহেতু খুব ছোট জায়গাতেও উল্লেখযোগ্য পরিমানে ফসল আবাদ করা সম্ভব। একটি অ্যাপার্টমেন্টে ছোট্ট বারান্দা এমনকি শোয়ার ঘরের ফাঁকা জায়গাটাতেও চাইলে হাইড্রোপনিক উপায়ে শাকসবজি আবাদ করা সম্ভব।

এর কারণ মাটি থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করতে গাছের শিকড় অনেক দূর অবধি বিস্তৃত হতে হয়। কিন্তু হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে একটি ট্যাঙ্কের ভেতর যথেষ্ট পরিমানে পানি ও পুষ্টি উপাদান দেয়া থাকে, ফলে সেই ট্যাঙ্কের ভেতর শিকড়গুলো জড়াজড়ি থাকলে থাকলেই চলে। তাছাড়া এভাবে গাছ তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো সরাসরি নিতে পারে। ফলে পুষ্টি অপচয় হয় না। অর্থাৎ ছোট জায়গাতেই বেশি পরিমানে গাছ লাগিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিজে হিসাব করে প্রয়োগ করা যায়।

পরিবেশ নিয়ন্ত্রণঃ গ্রিন হাউসের মতোই হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতেও পরিবেশের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, আলোর তীব্রতা এবং বাতাসের মান সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর অর্থ হলো, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে যে কোনো ফসলই আপনি সারা বছর আবাদ করতে পারবেন। জমিতে আবাদের মতো মৌসুমের ওপর আর নির্ভরকরতে হবে না। কৃষকরা সাধারণত নির্দিষ্ট মৌসুমে নির্দিষ্ট ফসল আবাদ করে এতে ফলন বাড়ে তার লাভ বেশি হয়। কিন্তু হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে আপনি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের মধ্যে বছরের যেকোনো সময় যেকোনো শাকসবজি চাষ করতে পারবেন এবং সর্বোচ্চ ফলন পাবেন। ফলে ব্যবসায়িকভাবে আরো লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ অসময়ের শাকসবজির দাম বেশি পাওয়া যায়।

পানি সংরক্ষণঃ হাইড্রোপনিক পদ্ধতি ফসলে পানি লাগে তুলনামূলক কম। সাধারণ জমিতে একটা ফসল ফলাতে যে পরিমান পানি লাগে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে তার মাত্র ১০ শতাংশ পানিই যথেষ্ট। কারণ এতে একই পানি ঘুরে ফিরে ব্যবহার করার ব্যবস্থা থাকে। গাছ তার প্রয়োজনীয় পানি শোষণ করে বাকিটা আবার সিস্টেমের ভেতর দিয়ে ঘুরে আসে। এ ব্যবস্থায় পানির অপচয় হয় মাত্র দুটি উপায়ে: জলীয়বাষ্প আকারে কিছু উড়ে যায়, আবার সিস্টেম কোথাও লিক (ছিদ্র) থাকলে। অবশ্য পুরো সিস্টেমটাকে ঠিকমতো সেট করতে পারলে এই অপচয়ও অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়।

এক হিসাবে দেখা গেছে, ভূগর্ভস্থ পানির ৮০ শতাংশই খরচ হয় কৃষিকাজে। যেখানে সারা দুনিয়াতেই স্বাদু পানির সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে। যে হারে মানুষ বাড়ছে তাতে আরো বেশি খাদ্য উৎপাদন করার দরকার হবে। তার মানে পানির চাহিদাও ব্যাপকভাবে বাড়বে। সেক্ষেত্রে হাইড্রোপনিক হতে পারে সবচেয়ে কাযকর বিকল্প।

পুষ্টি যথার্থ ও কাযকর ব্যবহারঃ হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ শতভাগ নিয়ন্ত্রণই খামারির হাতে। নির্দিষ্ট বয়সী একটি ফসলের চারার কো পুষ্টি কতোখানি দরকার সেটি হিসাব করে দেয়া যায়। এই ব্যবস্থায় পুষ্টি দেয়া হয় পানিতে মিশিয়ে। আর সেই দ্রবণ থাকে একটি ট্যাঙ্কে ফলে পুষ্টির অপচয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

দ্রবণের পিএইচ নিয়ন্ত্রণেঃ এ ব্যবস্থায় সব খনিজ (মিনারেল) থাকে ট্যাঙ্কের পানিতে। ফলে খুব সহজেই দ্রবণের পিএইচ মাত্রা পরিমাপ করা যায়। এই মাত্রা মাটির পিএইচের সঙ্গে তুলনা করা যায়। ফলে ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি একেবারে নিখুঁতভাবে সরবরাহ করা যায়।

ফসলের বৃদ্ধিঃ মাটির চেয়ে হাইড্রোপনিক ব্যবস্থায় ফসলের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। এখানে খামারিই সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, আলো, বাতাস এবং বিশেষ করে পুষ্টির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রথ তার হাতে। ফলে ফসলকে একটি আদর্শ পরিবেশের মধ্যে রাখা যায়। সব কিছুই থাকে পরিমিত। ফলে এখানে উদ্ভিদকে মাটিতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান খুঁজে বের করতে মূল্যবান শক্তিক্ষয় করতে হয় না। সব কিছু পানিতে দ্রবীভূত থাকায় সহজেই তা পেয়ে যায়। ফলে শরীর বৃদ্ধি ও ফল উৎপাদনই হয় উদ্ভিদের প্রধান কাজ।

আগাছামুক্তঃ মাটিতে ফসল আবাদ করলে আগাছাদমন অনেক বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের দেশের কৃষকরা প্রযুক্তিতে অদক্ষ হওয়ার কারনে তারা আগাছাদমনের সহজ উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন আগাছানাশক বিষ। এতে আগাছা থেকে মুক্তি মিললেও ক্ষতি হয়ে গেছে বিশাল। আমরা হারিয়ে কয়েক প্রজাতির দেশী মাছ, শামুক, কাঁকড়া, ব্যাঙ, প্রকৃতির লাঙ্গল কেঁচো, অনেক প্রজাতির উপকারী পোকা। এই বিষ মিশ্রিত পানি পার্শ্ববর্তী জলাশয়ে গিয়ে নষ্ট করে দিয়েছে আমাদের পানির আধারগুলোও। দেশের পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনেও এই আগাছানাশকের ভূমিকা রয়েছে।

হাইড্রোপনিকে যেহেতু মাটির কারবার নেই, তাই আগাছা নিয়ে চিন্তা নেই। অবশ্য এর মানে এই নয় যে, আমাদের ফসল আবাদের সম্পূর্ণ বিকল্প হতে হাইড্রোপনিক। সেটি সম্ভব নয়। কিন্তু এই পদ্ধতির একটি সুবিধা বড় সুবিধা এটি।

পোকামাকড় ও রোগবালাই কমঃ মাটি না থাকার কারণে যেমন আগাছা থেকে মুক্ত থাকা যায় তেমনি মাটিবাহিত রোগ থেকেও নিরাপদ থাকা যায়। তাছাড়া যেহেতু আবদ্ধ একটি ব্যবস্থার মধ্যে ফসল চাষ করা হয় সে কারণ পাখি, পোকামাকড় অন্যান্য জীবাণু যেমন ফুসারিয়াম, পাইথিয়াম, রাইজোকটনিয়াসহ কয়েক প্রজাতির ক্ষতিকর ছত্রাক থেকে বেঁচে থাকা যায়। তাছাড়া নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা হওয়ার কারণে ক্ষতিকর অনেক কিছু থেকে ফসল রক্ষা করা সহজ হয়।

কীটনাশক ও আগানাশকের ব্যবহার হ্রাসঃ মাটি ব্যবহার না করার কারণে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ফসলের আগাছা, পোকামাকড় ও রোগবালাই খুবই কম হয়। ফলে কীটনাশক বা আগাছানাশকের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারও প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনা যায়। ফলে স্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করা যায়। আর কীটনাশক ছাড়া উৎপাদিত ফসলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বাজারে এ ধরনের শাকসবজি বেশি দামে বিক্রি হয়।

শ্রম ও সময় বাঁচেঃ শ্রমিক সঙ্কট আজকাল কৃষি অন্যতম সমস্যায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে জমি চাষ, পানি সেচ, আগাছা পরিষ্কার, সার ও কীটনাশক ছিটানো ইত্যাদি কাজগুলো যেহেতু করতে হয় না তাই শ্রমিকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমানে কমিয়ে আনা যায়। শুধু ফসল রোপণ ও সংগ্রহের সময় শ্রমিক নিতে হতে পারে, অবশ্য যদি আপনার প্রজেক্ট হয় অনেক বড়।

আবার আগেই বলা হয়েছে হাইড্রোপনিক ব্যবস্থায় মাটির চেয়ে দ্রুত ফসলের বৃদ্ধি ঘটে। বিশেষ করে শাকসবজি চাষ করলে অত্যন্ত কম সময়ে ফসল তোলা যায়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সময়ও অনেক লাগছে। বিশেষ করে পুরোপুরি প্রযুক্তি ভিত্তিক একটি কৃষিখামার করতে চাইলে হাইড্রোপনিক হতে পারে উত্তম পছন্দ।

হাইড্রোপনিক পদ্ধতির কিছু অসুবিধা

সময় ও ধৈর্যঃ হাইড্রোপনিক পদ্ধতির কৃষি কিন্তু সবার জন্য নয়। মাটিতে যেমন সহজেই যেকোনো ফসল ফলানো যায়, এর জন্য পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও চলে। হাইড্রোপনিক কিন্তু অতোটা সহজ নয়। ধৈর্য ধরে সময় নিয়ে এ পদ্ধতি শিখতে হয়। এর জন্য কিছু প্রাথমিক জ্ঞান থাকাটা জরুরি। যেমন: মাটিতে সাধারণত গাছের পুষ্টি উপাদান প্রাকৃতিকভাবেই পরিমিত পরিমানে থাকে। হাইড্রোপনিকে এই পুষ্টি ভারসাম্য সম্পূর্ণ খামারির হাতে। তার হাতেই ফসলের প্রাণ ও ফলন নির্ভরশীল। তাকেই বুঝতে কোন ফসলে, কোন পর্যায়ে কী পরিমানে কোন পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন। ফলে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ফসলের যত্ন নেয়াটা বেশ কঠিন কাজ। এ সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান না থাকলে প্রজেক্টে লোকসানের সম্ভাবনাই বেশি।

জৈব বিতর্কঃ হাইপড্রোপনিক পদ্ধতিকে জৈব কৃষি বলা যাবে কিনা এ নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। এমনকি অনেকে বলেন, মাটিতে যেরকম উদ্ভিদের জন্য উপকারী অণুজীব থাকে সেটি কি হাইড্রোপনিক ব্যবস্থার মধ্যেও উৎপাদন করা সম্ভব? যদি না হয় তাহলে এটিকে কোনোভাবে জৈব কৃষি বলা যাবে না।

তবে যাই হোক অনেক উন্নত দেশ অন্তত এক দশক ধরে এ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করে জাতীয় চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য পূরণ করছে। এ তালিকায় আছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নেদারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র। এসব দেশে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমানে লেটুস, টমেটো, স্ট্রবেরি ইত্যাদি সবজি ও ফল উৎপাদন করা হয়। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে কীটনাশক ব্যবহার খুব কম হয় বলে এভাবে উৎপাদিত ফসলের চাহিদাও বাজারে দিন দিন বাড়ছে। যেখানে সাধারণ কৃষিতে আজকাল কীটনাশক, আগাছানাশক হিসেবে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার কর হচ্ছে।

অবশ্য হাইড্রোপনিক পদ্ধতিকে জৈব পদ্ধতির আরো কাছাকাছি নিতে অনেকে বেশ কয়েকটি পদ্ধতির কথা বলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অনেকে হাইড্রোপনিক ব্যবস্থার মধ্যে মাটির অণুজীব তৈরি করতে কোকো কয়ের বা এই সিস্টেমের মধ্যে বাঁচতে পারে এমন কীট ব্যবহার করে। আবার পুষ্টি হিসেবে রাসায়নিক ব্যবহারের পরিবর্তে মাছ ও হাঁস পালন প্রজেক্টের পানির ব্যবহার, হাড়-কাঁটা, আলফালফা, তুলাবীজ, নিম ইত্যাদির নিযাস ব্যবহার করেন অনেকে।

প্রাথমিক বিনিয়োগ একটু বেশিঃ পুরো হাইড্রোপনিক সিস্টেম তৈরি করতে প্রাথমিকভাবে বেশ মোটা অংকের বিনিয়োগ দরকার পড়ে। কন্টেইনার, লাইট, পাম্প, টাইমার, গ্রোয়িং মিডিয়া, পুষ্টি উপাদান ইত্যাদি কেনারা পাশাপাশি সিস্টেম সেটআপে ভালো টাকা বেরিয়ে যাবে। তবে একবার সেটআপ হয়ে গেলে কিন্তু খরচ অনেকখানি কমে আসবে। এরপর শুধু মেইটেন্যান্স। পরবর্তীতে শুধু পুষ্টি আর আলো ও পানি সচল রাখার পাম্প চালাতে বিদ্যুৎ বিলের বাইরে আর খরচ নেই বললেই চলে। তাছাড়া এই বিনিয়োগ হতে হয় দীর্ঘমেয়াদে। সিস্টেম সেটআপের খরচ তুলতে হয়তো কয়েকটা ফসল তোলার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

টবে ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি

ক্যাপসিকাম কম বেশি প্রায় সকলেই খেতে পছন্দ করেন। এর গুণ কিন্তু অপরিসীম। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে হোক বা রান্না অথবা স্যালাড, সবক্ষেত্রেই এর ভূমিকা অপরিসীম। রসুন, আদার মতো এই ক্যাপসিকামও কিন্তু সহজেই বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় টবে চাষ করতে পারবেন। চাইলে বিক্রিও করতে পারেন। জেনে নিন টবে ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতিঃ

চারা রোপণঃ টবে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে উপযুক্ত মাটি ও ৩০-৪০দিন বয়সের চারা প্রয়োজন। যে কোনো সাইজের টবে এই গাছ রোপণ করা যায়। তবে একটি টবে একটি গাছ রোপণ করাই উত্তম। ঝুরঝুরে বেলে দোআঁশ মাটি ক্যাপসিকাম চাষের জন্য উপযুক্ত। যদিও সব মৌসুমেই ক্যাপসিকাম চাষ সম্ভব, তবে ভাদ্র ও মাঘ মাসে বীজ বপন করলে ভালো ফলনের সম্ভাবনা বেশি থাকে। বীজ বা চারা সংগ্রহ করে, তলানী ছিদ্রযুক্ত একটি টব বাছাই করতে হবে, যেন অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনে সুবিধা হয়। চারা বসানোর প্রায় দুই মাস পর থেকে অর্থাৎ চারা গাছ তিন মাস হলেই ফল দিতে শুরু করে, যা পরবর্তী এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত ফল দিতে থাকবে।

সার প্রয়োগঃ মাটি বাছাই করে তার সঙ্গে ১ থেকে ৩ অংশ গোবর, ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম এবং জিংক অক্সাইড ভালো করে মেশানোর পর টবে প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের পর ইউরিয়া ও এমওপি দু’ভাগে ২০ ও ৩০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। সূর্যের তাপে চারা রোপণ করলে চারার ক্ষতি হয়। তাই বিকালে চারা রোপণ করাই ভালো।

পরিচর্যাঃ গাছের গোড়ায় আগাছা জন্মাতে দেয়া যাবে না। আগাছা দেখলেই নিড়ানি দিয়ে ফেলে দিতে হবে। ক্যাপসিকাম গাছের সহ্যশক্তি কম থাকায় খরা বা জলাবদ্ধতা কোনোটাই সহ্য করতে পারে না। তাই প্রয়োজন মতো পানি দিতে হবে এবং জলাবদ্ধতা রোধে সুষ্ঠু নিষ্কাশন ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ হেলে পড়া রোধে খুঁটির ব্যবস্থা করতে হবে।

বালাই ব্যবস্থাপনাঃ ক্যাপসিকাম গাছে সাধারণত কিছু পোকামাকড়, ছত্রাক ও ভাইরাসজনিত রোগের আক্রমণ হয়ে থাকে। পোকার মধ্যে জাবপোকা, এফিড, থ্রিপস, লালমাকড় ও মাইট আক্রমণ করে। ছত্রাকজনিত সাধারণত এনথ্রাকনোজ, উইল্কল্ট রোগে আক্রান্ত হয়।

ভাইরাসজনিত রোগে পাতায় হলদে দাগ পড়ে এবং পাতা কুঁকড়ে আসে। এ রোগে গাছ তুলে মাটিতে পুঁতে ফেলা বা পুড়িয়ে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। ভাইরাসজনিত রোগের জন্য তেমন কোনো কীটনাশক পাওয়া যায় না। এছাড়া পোকা বা ছত্রাকজনিত রোগের আক্রমণ হলে কৃষিকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

ফসল সংগ্রহঃ ক্যাপসিকাম সাধারণত সবুজ অবস্থায় খাওয়া হয়। তাই ক্যাপসিকামের রঙ লালচে হওয়ার আগে পরিপক্ক সবুজ অবস্থা সংগ্রহ করতে হবে। সপ্তাহে একবার ক্যাপসিকাম সংগ্রহই উত্তম। বেশিরভাগ গাছে প্রথমবার প্রায় ৪ থেকে ৫ টি ক্যাপসিকাম আসে। একবার গাছ ভালো করে বিকশিত হয়ে গেলে প্রথম যখন ফল আসবে তখন তা সংগ্রহ না করাই ভালো। এতে গাছ দৃঢ় হয়। দ্বিতীয়বার থেকে ফল সংগ্রহ করাই ভালো। ক্যাপসিকাম ফলগুলি আকারে বড় এবং বোঁটাগুলি মোটা হওয়ার ফসল সংগ্রহের সময় গাছের ডাল ভেঙ্গে যেতে পারে বা আঘাত পেতে পারে তাই সাবধানে সংগ্রহ করা উচিৎ।

ক্যাপসিকাম এর বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার

হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ করলে সাধারনত রোগ এবং পোকার আক্রমণ কম হয় তবে মাঝে মাঝে লাল মাকড়, সাদা মাছি, থ্রিপস, লিফ মাইনার বা জাব পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতি ১ লিটার ভার্টিমেক (লাল মাকড়ের জন্য), ১ মিলি লিটার এডমায়ার (লিফ মাইনরি, থ্রিপস এবং জাব পোকার জন্য) এবং সবিক্রন ২ মিলি লিটার (সাদা মাছির জন্য) ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর স্প্রে করলে এদের দমন করা যায়।

১। আলফা মোজাইক রোগঃ এ রোগ হলে গাছের পাতা সাদাটে হয়ে যায় এবং পাতায় সাদাটে হলুদ-সবুজের মোজাইকের মত ছোপ ছোপ দেখা যায়।

প্রতিকারঃ
  • ক্ষেত থেকে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা।
  • ভাইরাসমুক্ত বীজ বা চারা ব্যবহার করা ৩. জাব পোকা ও সাদা মাছি এ রোগের বাহক, তাই এদের দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
  • স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেইমিস্টি মরিচ খাবেন না বা বিক্রি করবেন না
  • সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
  • সুষম সার ব্যবহার করা।

২। সুটিমোল্ড রোগঃ এ রোগের আক্রমনে পাতায় , ফলে ও কান্ডে কাল ময়লা জমে । জাব পোকা বা সাদা মাছির আক্রমন এ রোগ ডেকে আনে।

প্রতিকারঃ
  • জাব পোকা বা সাদা মাছি দমণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
  • আকান্ত পাতা ও ডগা ছাটাই করে ধ্বংস করা।
  • টিল্ট ২৫০ ইসি ১০ লি. পানিতে ৫ মি.লি. মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করা।
  • স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাবেন না বা বিক্রি করবেন না।
  • আগাম বীজ বপন করা।
  • সুষম সার ব্যবহার করা।

৩। জেমিনিভাইরাস রোগঃ সাদা মাছি দ্বারা ভাইরাস ছড়ায় । কচি পাতার গায়ে টেউয়ের মত ভাজের সৃষ্টি হয় ।

প্রতিকারঃ
  • আক্রান্ত গাছ সংগ্রহ করে ধ্বংস করা।
  • রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা।
  • ভাইরাসের বাহক পোকা দমনেহার জন্য ডায়ামেথেয়ট, এসাটাফ, এডমেয়ার, টিডো, ইত্যাদি যে কোন একটি ১ মিলি /লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
  • স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাবেন না বা বিক্রি করবেন না।
  • আগাম বীজ বপন করা।
  • সুষম সার ব্যবহার করা।
  • সঠিক দুরত্বে চারা রোপন করুন।

৪। গোড়া পঁচা রোগঃ ছত্রাকের আক্রমণে ক্যাপসিকাম চারার গোড়া পঁচে যায়। চারা নেতিয়ে পড়ে।

প্রতিকারঃ
  • বেডে চারা উৎপাদন করা বা সবজি বীজ বপন করা।
  • পানি নিস্কাসনের ব্যবস্থা করা।
  • শতাংশ প্রতি ৭- ১০ কেজি ট্রাইকো- কম্পোস্ট ব্যবহার করা।
  • স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাবেন না বা বিক্রি করবেন না।
  • আগাম বীজ বপন করা।
  • সুষম সার ব্যবহার করা।
  • সঠিক দুরত্বে চারা রোপন করুন।

৫। আগা মরা রোগঃ এ রোগে আকান্ত হলে প্রথমে গাছ আগা থেকে মরা শুরু হয় এবং ক্রমশ তা নিচের দিকে অগ্রসর হয় এবং এক সময় পুরো গাছ মারা যায় ।

প্রতিকারঃ
  • আক্রান্ত পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট করা।
  • রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি ১০-১২ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করা।
  • স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই মরিচ খাবেন না বা বিক্রি করবেন না।
  • সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
  • সুষম সার ব্যবহার করা।
  • প্রোভেক্স বা হোমাই বা বেনলেট ১% দ্বারা বীজ শোধন করা।

৬। ঢলেপড়া রোগঃ এ রোগ হলে গাছের পাতা হলদে হয়ে শুকিয়ে যায়, ধীরে ধীরে গাছ ঢলে পড়ে এবং মারা যায়।

প্রতিকারঃ
  • আক্রান্ত গাছ তুলে ক্ষেত পরিষ্কার করা।
  • চ্যাম্পিয়ন ২ গ্রাম / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
  • আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
  • একই জমিতে পর পর বার বার মরিচ চাষ করবেন না।
  • চাষের পূর্বে জমিতে শতাংশ প্রতি ১ কেজি ডলোচুন প্রয়োগ করে জমি তৈরী করুন।
  • প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডি মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট ধরে চারা শোধন করে নিন।

৭। ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগঃ এ রোগ হলে গাছের পাতা সবুজ থাকা অবস্থায় গাছ শুকিয়ে যায়। গাছ ঢলে পড়ে এবং মারা যায়।

প্রতিকারঃ
  • আক্রান্ত গাছ তুলে ক্ষেত পরিষ্কার করা।
  • চ্যাম্পিয়ন ২ গ্রাম / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
  • আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
  • একই জমিতে পর পর বার বার মরিচ চাষ করবেন না।
  • চাষের পূর্বে জমিতে শতাংশ প্রতি ১ কেজি ডলোচুন প্রয়োগ করে জমি তৈরী করুন।
  • প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডি মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট ধরে চারা শোধন করে নিন।

৮। এনথ্রাকনোজ রোগঃ এ রোগে আক্রান্ত পাতা, কান্ড ও ফলে বাদামী কলো দাগ দেখা যায়। পরে দাগগুলো বড় হয় এবং মরিচ পচে যায়।

প্রতিকারঃ
  • আক্রান্ত পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট করা ।
  • রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি ১০-১২ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করা।
  • স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই মরিচ খাবেন না বা বিক্রি করবেন না।
  • সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
  • সুষম সার ব্যবহার করা।
  • প্রোভেক্স বা হোমাই বা বেনলেট ১% দ্বারা বীজ শোধন করা।

হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনে স্থাপনা নির্মান কৌশল

হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনে স্থাপনা নির্মান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারনত স্থাপনার মধ্যে রয়েছে গ্রীন-হাউজ, প্লাস্টিক-হাউজ, ভিনাইল-হাউজ, পলি-টানেল, ইত্যাদি। গ্রীন হাউজের মাধ্যমে আমরা সারা বছর যে কোন সময় ফসল উৎপাদন করতে পারি। এ ছাড়া আমরা প্লাস্টিক-হাউজ অথবা ভিনাইল-হাউজের বা পলি-টানেলেও চাষাবাদ করতে পারি। স্বল্প পরিসরে দালান বাড়ীর ছাদ, বারান্দা বা অন্যান্য খোলা জায়গায় এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়।
হাইড্রোপনিক-পদ্ধতিতে-ফসল-উৎপাদনে-স্থাপনা-নির্মান-কৌশল
তবে গ্রীন-হাউজ বা গ্লাস-হাউজে খরচ তুলনামূলক বেশি। তবে উৎপাদিত ফসলের গুণগতমান মাঠ ফসলের তুলনায় অনেক ভাল। আমাদের দেশের আগ্রহী প্রগতিশীল কৃষক প্লাস্টিক-হাউজ তৈরি করে কম খরচে এ পদ্ধতিতে চাষা বাদ করতে পারে। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের জন্য স্টিলের ট্রে, প্লাস্টিকের বালতি, অব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল, ইত্যাদি ব্যবহার করা য়ায়।
 
তবে কোন পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করা হবে তার উপর নির্ভর করে স্থাপনা তৈরি করতে হবে। সঞ্চালন ও সঞ্চালনবিহীন উভয় পদ্ধতিতে স্টিলের ট্রে ব্যবহার করা যায়। স্টিলের ট্রে ব্যবহারের পূর্বে ট্রে এর মাঝে সাদা রঙ দিয়ে প্রলেপ দিলে ভাল হয়। ফলে রাসায়নিক দ্রবণ সরাসরি ধাতব পদার্থের সংস্পর্শে আসতে পারোনা। কোন অবস্থাতেই মরিচা পড়া স্টিলের ট্রে ব্যবহার করা যাবে না। 

একটি কাঠের অথবা লোহার বেঞ্চের উপর ট্রে স্থাপন করা যেতে পারে। অনেক সময় কাঠের বেঞ্চের উপর তাক করে ২-৩ টি ট্রে বসানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্নে তাকের গাছের আকার অনুযায়ী ফসল যেমন স্ট্রবেরী, লেটুস, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি গাছ নিচে ও মাঝের তাকে এবং উপরের তাকে শসা বা টমেটো গাছ লাগানো যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে Vertical চাষাবাদের জন্য অল্প জায়গায় অধিক ফসল উৎপাদন করা যাবে।

সাধারনত Non-circulating এবং Circulating উভয় পদ্ধতিতে ট্রে স্থাপন করে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। স্টিলের ট্রে সাধারনত ১৮-২৪ গেজ গ্যালভানাইজিং সিট দ্বারা তৈরি করতে হয় যার দৈর্ঘ্য ৩ মিঃ ও প্রস্থ ৯০ সেমি এবং উচ্চতা ২০-২৫ সেমি হতে হবে। সঞ্চালন পদ্ধতিতে কর্কশীট স্থাপনের জন্য কোন প্রকার লোহার পাত ট্রের মাঝে ব্যবহার করতে হয় না।

 কিন্তু সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতিতে ট্রের উপর থেকে ৫ সেমি বাদ রেখে লোহার পাত স্থাপন করতে হবে। এই পাতের উপর কর্কসীট থাকবে এবং জলীয় দ্রবণ এই দণ্ডের উপর স্থাপিত কর্কসিটের ৫ সেমি নিচে থাকবে। অতঃপর ট্রে টিকে একটি লোহা অথবা কাঠের ফ্রেমের উপর সমানভাবে বসাতে হবে।

হাইড্রোপনিক পদ্ধতির লক্ষণীয় বিষয়সমূহ

হাইড্রোপনিক পদ্ধতির সাফল্য নির্ভর করে এর উপযুক্ত এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনার উপর। সাফল্যজনকভাবে এ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের জন্য নিম্নের কতিপয় বিষয়ের উপর বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে, বিষয় গুলি হলো-

  • EC এবং pH এর মাত্রা- সাধারণত pH এর মাত্রা ৫.৮-৬.৫ এবং EC এর মাত্রা ১.৫-২.৫ dS/m এর মধ্যে রাখতে হবে। উল্লেখিত মাত্রার কম বা বেশি হলে গাছের শিকড় মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
  • মনে রাখতে হবে আকস্মিকভাবে জলীয় খাদ্য দ্রবণের pH এবং EC পরিবর্তন করা যাবে না।
  • গাছের খাদ্য উপাদানের প্রয়োজনীয়তা, স্বল্পতা কিংবা আধিক্য গাছের স্বাস্থ্য ও পাতার রং দেখে বুঝা যায়। খাদ্য উপাদানের অভাবের লক্ষণ দেখে বুঝা এবং প্রয়োজন অনুসারে তা যোগ করে অভাব দূর করতে হবে। এ জন্য প্রতিটি উপাদানের অভাব জনিত লক্ষণ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে।
  • দ্রবণের আদর্শ তাপমাত্রা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। সাধারণতঃ দ্রবণের তাপমাত্রা 25-30° C এর মধ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয়। যদি দ্রবণের তাপমাত্রা বেড়ে যায় তবে শ্বসনের হার (Respiratory rate) বেড়ে যায় ফলে অক্সিজেনের চাহিদাও দারুনভাবে বাড়ে যাবে। ফলে দ্রবণে অক্সিজেন এর পরিমাণ কমে যায়। সাধারণতঃ দুপুরে তাপমাত্রা বেড়ে যায় কাজেই এ সময় তাপমাত্রা কমানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • জলীয় খাদ্য দ্রবণে অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক সময় বাইরে থেকে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হয়। কারণ অক্সিজেন এর অভাবে গাছের শিকড় নষ্ট হয়ে যায় ফলে ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
  • চাষের স্থানে পর্যাপ্ত আলোর সুব্যবস্থা করতে হবে এবং রোগমুক্ত চারা ব্যবহার করতে হবে। কোন রোগাক্রান্ত গাছ দেখা গেলে তা সাথে সাথে তুলে ফেলতে হবে।
  • চাষকৃত ফসলে বিভিন্ন পোকা-মাকড়ের আক্রমণ দেখা দিতে পারে। এদের মধ্যে এফিড, লিফ মাইনার, থ্রিপস এবং লাল মাকড় অন্যতম। প্রতি দিনের তদারকির মাধ্যমে এদের দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

হাইড্রোপনিক পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা

  • যেহেতু হাইড্রোপনিক একটি আধুনিক চাষ পদ্ধতি তাই দ্রবণ প্রস্তুতি, দ্রবণের অম্লত্ব, ক্ষারত্ব, ইসি ও পিএইচ মান বিভিন্ন খাদ্যোপাদানের অভাব জনিত লক্ষণসমূহ সনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দক্ষতা প্রয়োজন।
  • এ পদ্ধতির চাষে কখনও কখনও পলিটানেল, নেটহাউস বা গ্লাসহাউজের প্রয়োজন হতে পারে এবং সে কারণে প্রাথমিক খরচ কিছুটা বেশি হয়ে থাকে।
  • নেটহাউস বা গ্লাসহাউজের ভিতরের তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে কখনও কখনও ফলন কমে যেতে পারে। তাই অধিক তাপমাত্রা কমাতে এক্সোষ্ট-ফ্যান বা এসি ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে।
  • সব ধরনের ফসল বিশেষ করে গাছ ফসল (Tree plant) এ পদ্ধতিতে চাষ করা যায় না এবং
  • এ পদ্ধতির ফসল চাষে কারিগরি জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার বিশেষ প্রয়োজন।

ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকারিতা

ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন। আমিষ হোক বা নিরামিষ, মোটামুটি সমস্ত ধরনের রান্নাতেই ক্যাপসিকাম ব্যবহার করা যায়। বাজারে সবসময় পাওয়া যায় না এই সবজি। পাওয়া গেলেও তার দাম অনেকটাই বেশি থাকে। আর তাছাড়া বাড়িতে চাষ করা টাটকা সবজি খাওয়ার মজাই আলাদা। এটা রাসায়নিক বর্জিত ও স্বাস্থ্যকর। তাই আসুন আজ জেনে নিই ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকারিতাগুলো সম্পর্কে।

হার্ট ভালো রাখেঃ আপনার হার্টকে সুস্থ সবল রাখার কাজে সাহায্য করতে পারে ক্যাপসিকাম। আসলে এই সবজিতে রয়েছে লাইকোপেন নামক একটি ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট। আর এই উপাদান কিন্তু হার্টের অসুখকে দূরে রাখার কাজে একাই একশো। তাই হৃৎপিণ্ডের হাল ফেরাতে পাতে থাক ক্যাপসিকাম।

চোখ ভালো রাখেঃ উচ্চ পরিমান ভিটামিন-এ থাকার কারনে এটি চোখের জন্য খুব উপকারী। বিশেষ কর নাইট ভিশনের জন্য৷এটি লুটেইন নামক ক্যারোটিন সমৃদ্ধ যা চোখের মাস্কুলার ডিজেনারেশন এর ঝুকি কমায়। এটি সাধারনত বয়স জনিত দৃষ্টিশক্তি কমাকে বুঝায়।

অধিক ক্যালোরি ক্ষয় করেঃ লাল ক্যাপসিকাম থার্মোজেনেসিসকে কার্যকরী করে মেটাবোলিজম হার বৃদ্ধি করে। এরা অন্যান্য মরিচের মতো হার্ট ও ব্লাড প্রেশার বৃদ্ধি না করেই মেটাবোলিজম হার বাড়াতে পারে। এভাবে এটি বাড়তি ওজন কমাতে পারে।

কার্ডিওভাসকুলারের উপকারেঃ লাইকোপিন সমৃদ্ধ লাল ক্যাপসিকাম হার্টের জন্য খুবই উপকারী। অন্যদিকে সবুজ ক্যাপসিকাম কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। হোমোসিস্টেইন বেড়ে হার্টের মারাত্বক ক্ষতি হয়। কিন্তু ক্যাপসিকাম এর ভিটামিন-বি৬ এবং ফলেট এর মাত্রা কমিয়ে এনে হার্টকে ভালো রাখে। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি৬ হার্টের ফ্রি রেডিক্যালকে দমন করে। এতে রয়েছে ১৬২ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ কমিয়ে হার্টকে ভালো রাখে।

আয়রনের ঘাটতি পূরন করেঃ যাদের আয়রনের ঘাটতি রয়েছে,তাদের প্রতিদিন লাল ক্যাপসিকাম খাওয়া উচিত। এটি প্রায় ৩০০% ভিটামিন-সি সরবারহ করে যা আয়রন তৈরিতে ভূমিকা রাখে ৷

​বিপাকের হার বাড়বেঃ​ দেহের ভালো-খারাপের অনেকটাই নির্ভর করে মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়ার উপর। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সবসময়ই মেটাবলিজমকে স্বাভাবিক রাখার পরামর্শ দেন। একমাত্র বিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক গতিতে নিজের কাজ করে যেতে পারলেই বিভিন্ন ক্রনিক অসুখের ফাঁদ এড়িয়ে চলা যাবে। আর জানলে অবাক হবেন, আপনার বিপাকের গতিকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করতে পারে ক্যাপসিকাম। আসলে এই সবজিতে এমন কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা এই কাজে আপনাকে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত এই সবজি পাতে রাখা মাস্ট।

ক্যানসারের ঝুঁকি​ কমায়ঃ ক্যানসার একটি প্রাণঘাতী অসুখ। তাই যেন তেন প্রকারেণ এই অসুখের ফাঁদ এড়িয়ে চলতে হবে। আর এই কাজেও আপনাকে সাহায্য করতে পারে ক্যাপসিকাম। আসলে এই সবজিতে রয়েছে বেশকিছুটা পরিমাণে লাইকোপেন। আর এই উপাদানই দেহে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি আটকে দিতে পারে। তাই কর্কটরোগের কবল থেকে বাঁচতে চাইলে এই সবজিকে রোজের ডায়েটে জায়গা করে দিন।

ইমিউনিটি​ বাড়বেঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা চাঙ্গা থাকলে একাধিক ছোট-বড় সংক্রামক অসুখের ফাঁদ এড়িয়ে চলা যাবে। তাই যাঁরা নিয়মিত জ্বর, সর্দি, কাশির মতো ভাইরাল ডিজিজে আক্রান্ত হন, তাদের ডায়েটে ক্যাপশিকাম থাকাটা মাস্ট। আর সুস্থ-সবল ব্যক্তিরাও ইমিউনিটিকে চাঙ্গা রাখতে নিয়মিত ক্যাপশিকাম খেতেই পারেন। এতেই দেখবেন উপকার মিলবে হাতেনাতে।

ব্যথার প্রকোপ​ কমবেঃ আর্থ্রাইটিসের ব্যথা, যন্ত্রণায় ভুগছেন নাকি? তাহলে যে আজ থেকেই ডায়েটে ক্যাপশিকামকে জায়গা করে দিতে হবে। আসলে এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কিনা ব্যথা এবং প্রদাহ দূর করার কাজে একাই একশো। তাই ব্যথা বিহীন নীরোগ জীবন কাটাতে চাইলে অবশ্যই পাতে ক্যাপশিকাম রাখুন। এতেই আপনার সুস্থ থাকার পথ প্রশস্থ হবে।

ওজন কমবেঃ ক্যাপসিকাম আমাদের শরীরের থার্মোজেনেসিস সক্রিয় করে এবং মেটাবলিযম বৃদ্ধি করে, কিন্তু ঝাল মরিচের মত ব্লাড প্রেশার ও হার্ট রেইট বৃদ্ধি করে না। ফলে এটা ওজন কমানোর একটি নিরাপদ খাবার। এছাড়া এতে আছে খুবই কম ক্যালরি।

হাড় সারাতে সাহায্য করেঃ কলাজেন নামক প্রোটিন আমাদের হাড়কে মজবুত করে। কলাজেন সিন্থেসাইজ হতে প্রয়োজন ভিটামিন সি। ক্যাপসিকামে আছে প্রচুর ভিটামিন সি। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন এর মতে লাল এবং হলুদ ক্যাপসিকামে কমলা ক্যাপসিকামের তুলনায় চার গুণ বেশী ভিটামিন সি আছে।

রক্তাল্পতা (এনিমিয়া) রোধ করেঃ এনিমিয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে রক্তে আয়রনের অভাব। ক্যাপসিকামে শুধু পর্যাপ্ত আয়রনই নেই, এতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি যা আয়রন শুষে নিতে সাহায্য করে। গবেষকদের মতে নিয়মিত কাচা ক্যাপসিকাম খাওয়ার সাথে সাথে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন গরুর মাংস ও পালং শাক খেলে এনিমিয়া থেকে শরীর রক্ষা পাবে।

দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয়ঃ ক্যাপসিকামে আছে প্রচুর পরিমাণে লুটিন এবং যিয়ায্যানথিন নামক ক্যারটিনয়েড। তাই বেশী বেশী ক্যাপসিকাম খেলে দৃষ্টিশক্তির উন্নয়ন হয়। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত এসব ক্যারটিনয়েড সমৃদ্ধ খাবার খেলে ক্যাটারেক্ট এবং মাকুলার ডিজেনারেশন-এর ঝুঁকি কমে।

ত্বক সুস্থ রাখেঃ ক্যাপসিকাম ত্বক সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা এতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন সি ও কলাজেন নামক উপাদান বিদ্যমান। ভিটামিন সি ত্বকের চামড়া টানটান রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বককে সতেজ রাখে। এছাড়াও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে। তাই নিয়মিত ক্যাপসিকাম খাওয়ার ফলে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ দেরিতে পড়ে।

চুলের উজ্জলতা বৃদ্ধি করেঃ সুন্দর, মসৃন লম্বা চুল কার না কাম্য। খাদ্য গ্রহনে একটু সচেতন হলে আপনিও পেতে পারেন কাঙ্খিত উজ্জল, মসৃন ও খুশকি মুক্ত চুল। ক্যাপসিকামে রয়েছে এমন সব উপাদান যা আপনার মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করবে৷নিচে বিশদ বিবরন দেয়া হলো।

চুলের বৃদ্ধিতেঃ চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে৷লাল ক্যাপসিকাম গ্রোথ স্টিমুলেটর হিসেবে কাজ করে। একই সাথে চুলের পড়া থেকেও রক্ষা করে থাকে। ডিহাইড্রো টেসটোসস্টেরন এর প্রভাবে এটি চুল ঝরে পড়া থেকে রক্ষা করে।

চুলের গোড়া মজবুত করতেঃ ক্যাপসিকাম গাছ ও ক্যাপসিকাম চুলের জন্য উপকারী হওয়ার অন্যতম একটা কারন হলো এরা ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ছাল চুলের জন্য ভিটামিন-সি খুবই জরুরী কেননা এটি আয়রন শোষনের জন্য কাজে লাগে। আর লোহিত রক্ত কনিকাতে যত বেশি আয়রন থাকে চুলের গোড়ায় তত বেশি অক্সিজেন সরবারহ হয়। ভিটামিন-সি কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে, এটি চুলের গোড়া, রক্ত শিরা এবং ত্বক ভালো রাখে।

ক্যাপসিকামের পুষ্টিউপাদান ও পুষ্টিগুণ

ক্যাপসিকামে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, সুগার, ডায়াটারি ফাইবার, পানি, ভিটামিন এ, বেটা-ক্যারোটিন, ফলেট, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পানি, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাসসহ আরও অনেক উপকারী উপাদান। তাই নিয়মিত ক্যাপসিকাম খেলে থাকতে পারবেন সুস্থ। আসুন জেনে নেই ক্যাপসিকামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।

( প্রতি ১০০ গ্রাম ক্যাপসিকামে )

  উপাদান     -     পরিমান

১) কার্বোহাইড্রেট – ৪.৬৪ গ্রাম
২) শ্যুগার – ২.৪ গ্রাম
৩) ডায়েটারি ফাইবার – ১.৭ গ্রাম
৪) ফ্যাট – ০.১৭ গ্রাম
৫) প্রোটিন – ০.৮৬ গ্রাম
৬) ভিটামিন এ -.১৮ মাইক্রোগ্রাম
৭) বিটা ক্যারোটিন – ২০৮ মিলিগ্রাম
৮) থায়ামিন – ০.০৫ মিলিগ্রাম
৯) রিবোফ্লাভিন –  ০.০২৮ মিলিগ্রাম
১০) নিয়াসিন – ০.৪৮ মিলিগ্রাম
১১) প্যানটোথ্যানিক এসিড – ০.০৯৯ মিলিগ্রাম
১২) ভিটামিন বি ৬ – ০.২২৪ মিলিগ্রাম
১৩) ফোলেট – ১০ মাইক্রোগ্রাম
১৪) ভিটামিন সি –৮০.৪ মিলিগ্রাম
১৫) ভিটামিন কে – ৭.৪ মাইক্রো গ্রাম
১৬) ভিটামিন ই –  ০.৩৭ মিলিগ্রাম
১৭) ক্যালসিয়াম – ১০ মিলিগ্রাম
১৮) আয়রন –  ০.৩ মিলিগ্রাম
১৯) ম্যাগনেশিয়াম – ১০ মিলিগ্রাম
২০) ম্যাঙ্গানিজ –  ০.১২২ মিলিগ্রাম
২১) ফসফরাস – ২০ মিলিগ্রাম
২২) পটাশিয়াম – ১৭৫ মিলিগ্রাম
২৩) সোডিয়াম – ০৩ মিলিগ্রাম
২৪) জিংক – ০.১৩ মিলিগ্রাম
২৫) ফ্লোরাইড – ০২ মাইক্রোগ্রাম

পুষ্টিগুণ
কাঁচা ক্যাপসিকামের ৯২%ই পানি এবং বাকিটা শর্করা ও সামান্য পরিমাণে প্রোটিন ও ফ্যাট। ১০০ গ্রাম কাঁচা ক্যাপসিকামে রয়েছে: ক্যালরি ৩১, পানি ৯২%, প্রোটিন ১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা ৬ গ্রাম, চিনি ৪.২ গ্রাম, ফাইবার ২.১ গ্রাম, ফ্যাট ০.৩ গ্রাম। ক্যাপসিকামে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল। ভিটামিন সি. একটি মাঝারি আকারের ক্যাপসিকাম আপনাকে দিবে প্রতিদিনের চাহিদার ১৬৯% ভিটামিন সি। ফলে ক্যাপসিকাম ভিটামিন সি এর সবচেয়ে বড় উৎসগুলির অন্যতম।

ভিটামিন বি-৬. পাইরিডক্সিন হচ্ছে খুব কমন ধরণের ভিটামিন বি-৬। এটা লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে খুবই দরকারি।

ভিটামিন কে১. এই ভিটামিনটি রক্ত জমাট বাঁধতে এবং হাঁড় ভাল রাখতে সাহায্য করে।

পটাশিয়াম. এই খনিজটি হার্ট ভাল রাখতে সাহায্য করে।

ফোলেট. ভিটামিন বি-৯ নামেও পরিচিত এই ভিটামিনটি শরীরের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে। গর্ভবতী মায়েদের দরকার পর্যাপ্ত ফোলেট।

ভিটামিন ই. এটা একটা শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট যা নার্ভ ও মাংসপেশীর কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

ভিটামিন এ. লাল ক্যাপসিকামে আছে প্রচুর প্রো-ভিটামিন এ (বেটা ক্যারোটিন), যা আমাদের শরীর ভিটামিন এ-তে রূপান্তর করে।

ক্যাপসিকাম অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। বিশেষ করে ক্যারটিনয়েড যা পাকা ক্যাপসিকামে বেশী পরিমাণে পাওয়া যায়। লাল রঙের ক্যাপসিকামে ক্যাপস্যানথিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। এটা ক্যাপসিকামকে এর লাল রঙ দেয়। হলুদ ক্যাপসিকামে ভায়োলায্যানথিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। কাঁচা ক্যাপসিকামে লুটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। কিন্তু পাকা ক্যাপসিকামে এটা নেই। পর্যাপ্ত লুটিন খেলে দৃষ্টি শক্তির উন্নয়ন হয়।

ক্যাপসিকামের মজাদার কয়েকটি রেসিপি

ক্যাপসিকামের মজাদার কয়েকটি রেসিপি নিয়ে এই পর্বে আলোচনা করবো। চিলি চিকেন থেকে চাউমিন, কড়াই পনির থেকে স্যালাড। বেশ কিছু রেসিপি ক্যাপসিকাম ছাড়া ভাবাই যায় না। দৈনন্দিন সব্জিতেও অনেকে ক্যাপসিকাম ব্যবহার করেন। সবজি হিসেবে ক্যাপসিকাম এখন প্রায় সবারই পরিচিত। আর সবজিটি পাওয়া যায় সারাবছর জুড়েই হাতের নাগালে। নিচে ক্যাপসিকামের মজাদার কয়েকটি রেসিপি সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
ক্যাপসিকামের-মজাদার-কয়েকটি-রেসিপি
১। স্টাফড্ ক্যাপসিকাম

উপকরণঃ

  • ক্যাপসিকাম- তিন চারটি (নানা রঙের নিতে পারেন)
  • গাজর গ্রেট করা
  • কর্ন
  • কড়াইশুঁটি
  • পেঁয়াজ- একটি বড়
  • রসুন বাটা
  • ছানা
  • গ্রেট করা চিজ
  • অলিভ অয়েল বা সাদা তেল
  • লবন
  • রেড চিলি সস

প্রস্তুত প্রণালীঃ ক্যাপসিকামগুলি খুব ভালো করে ধুয়ে প্রত্যেকটি অর্ধেক করে কেটে নিন। ভিতরের বীজের অংশ কেটে ফেলে দিন। বোঁটাটি ফেলবেন না। ক্যাপসিকামের ভিতরে সামান্য তেল মাখিয়ে নিন। পেঁয়াজ খুব ছোটো করে কুঁচিয়ে নিন।

একটি পাত্রে তেল গরম করে তাতে প্রথমে পেঁয়াজ দিয়ে সঁতে করুন। তাতে দিন রসুন বাটা। এবার এতে এক এক করে গ্রেট করা গাজর, সিদ্ধ করা কর্নের দানা এবং কড়াইশুঁটি নুন দিয়ে খুব ভালো করে ভাজতে থাকুন। সবজিগুলি সিদ্ধ হয়ে গেলে তাতে রেড চিলি সস দিন। ঝাল খেতে ভালোবাসলে শেজুয়ান সস্-ও দিতে পারেন। ভালো করে নাড়াচাড়া করে তাতে দিন ছানাগুলি। খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন। চাইলে অল্প চিনি দিতে পারে। স্টাফ তৈরি হয়ে গেলে চামচে করে অর্ধেক করা ক্যাপসিকামে সেগুলি ভরে ফেলুন। পুর যত বেশি হবে ততই খেতে ভালো লাগবে।

এবার প্যান গরম করে ক্যাপসিকামগুলি একে একে বসিয়ে দিন। পুরের দিকটি উপরে থাকবে আর ক্যাপসিকামের গায়ের দিকটা তেলের উপর ভাজা হবে। আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন। মিনিট পাঁচেক পর ঢাকনা খুলে ক্যাপসিকামের পুরের উপরের অংশে ছড়িয়ে দিন গ্রেট করা চিজ। ফের ঢাকনা বন্ধ করে দিন। খেয়াল রাখবেন ক্যাপসিকাম যেন পুড়ে না যায়। ক্যাপসিকাম ভালোমতো সিদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে নিন। সার্ভ করুন গরম গরম।

২। ক্যাপসিকামের চপ

উপকরণঃ

  • ক্যাপসিকাম
  • আলু সিদ্ধ
  • পেঁয়াজ
  • আদা-রসুন বাটা
  • কাঁচালঙ্কা কুঁচি
  • হলুদ গুঁড়ো
  • লঙ্কা গুঁড়ো
  • জিরে গুঁড়ো
  • ধনে গুঁড়ো
  • সরষের তেল
  • লবন
  • বেসন
  • চালের গুঁড়ো
  • বেকিং সোডা
  • চিনি
  • সাদা তেল

প্রস্তুত প্রণালীঃ ক্যাপসিকামগুলি লম্বালম্বি চার টুকরো করে কেটে নিন। বীজ এবং বোঁটার অংশ ফেলে দিন। কড়াইয়ে সর্ষের তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজকুটি, আদা-রসুন বাটা, লঙ্কা কুচি, দিয়ে ভাজতে থাকুন। তাতে দিন হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো এবং নুন। ভালো করে মিশিয়ে নিন। শেষে তাতে দিন আলু সিদ্ধ মাখা। খুব ভালো করে পুর তৈরি করে ফেলুন।

এবার একটি ক্যাপসিকামের টুকরো নিয়ে তার উপরে আলুর পুরটি বেশি করে দিয়ে লম্বালম্বি চপের আকারে গড়ে ফেলুন। আলুর পুরের ভিতরে ক্যাপসিকামের টুকরোটি থাকবে। আলুর পুরু কোটিং থাকবে ক্যাপসিকামের বাইরে। এবার অন্য একটি পাত্রে বেসন, চালের গুঁড়ো, লঙ্কার গুঁড়ো, নুন, চিনি, বেকিং সোডা নিয়ে ঘন করে ব্যাটার তৈরি করুন। খেয়াল রাখবেন যতটা বেসন নেবেন চালের গুঁড়ো নেবেন তার অর্ধেক। এবার চপগুলি ব্যাটারে ডুবিয়ে ডুবো তেলে ভেজে নিন।

৩। ক্যাপসিকাম-পনির রাইস

উপকরণঃ

  • বাসমতি চাল
  • ক্যাপসিকাম
  • পনির
  • পেঁয়াজ
  • কাঁচালঙ্কা লম্বালম্বি করে চেরা
  • তেজপাতা
  • শুকনো লঙ্কা
  • গোটা জিরা
  • দারচিনি
  • এলাচ, লবঙ্গ
  • গোলাপ জল, কেওড়ার জল
  • লবন, চিনি
  • সাদা তেল বা ঘি

প্রস্তুত প্রণালীঃ বাসমতি চাল ধুয়ে কয়েক ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর জল ঝরিয়ে ভাত করে নিন। ভাত যেন ঝরঝরে হয়। ক্যাপসিকাম চিকন করে লম্বালম্বিভাবে কাটুন পেঁয়াজও কাটুন ঝিরিঝিরি করে। পনির খুব ছোটো ছোটো চৌকো টুকরো করে নিন। পাত্রে সাদা তেল বা ঘি গরম করে তাতে তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা ফোঁড়ন দিন। এবার এতে মেশান দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ এবং গোটা জিরে। মশলার গন্ধ উঠলে তাতে পেঁয়াজ দিয়ে সঁতে করুন। তারপর তাতে দিন ক্যাপসিকাম। ক্যাপসিকাম সামান্য নরম হলেই তাতে পনিরের ছোটো টুকরোগুলি দিয়ে দিন।

এতে দিন নুন, চিনি। ভালো মতো ভাজা হলে তাতে একটু একটু করে ভাত দিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকুন। একবারে সব ভাত দিয়ে দিলে মশলা মিশবে না। ভাত মশলায় ভালোমতো মিশে গেলে তাতে একচামচ গোলাপ জল এবং এক চামচ কেওড়ার জল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। মিনিট পাঁচেক ঢাকা দিয়ে রেখে দিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিন। আমিষ নিরামিষ যে কোনও পদ দিয়েই খাওয়া যাবে এই ক্যাপসিকাম-পনির রাইস।

৪। ক্যাপসিকাম চিকেন


উপকরণঃ

  • চিকেন টুকরো করা
  • ক্যাপসিকাম
  • পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা
  • আদা-রসুন বাটা
  • নুন
  • জিরে গুঁড়ো
  • টম্যাটো কেচাপ
  • সাদা তেল

প্রস্তুত প্রণালীঃ ক্যাপসিকাম এবং পেঁয়াজ লম্বালম্বি করে ঝিরিঝিরি করে কাটুন। কাঁচা লঙ্কা লম্বালম্বি করে চিঁরে নিন। চিকেনের টুকরো সামান্য ভিনিগারে কয়েক ঘণ্টা ম্যারিনেট করে রেখে দিন। কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে আদা-রসুন বাটা খুব ভালো করে ভেজে নিন। বার এর মধ্যে চিকেনের টুকরো, জিরে এবং গুঁড়ো, নুন দিয়ে খুব ভালো করে ভাজুন।

এবার এতে দিন পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম এবং কাঁচালঙ্কা ভাজা ভাজা করুন। শেষে টোম্যাটো কেচাপ দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। জল না দিলেই ভালো। তবে মাংস সিদ্ধ হতে সময় লাগলে সামান্য জল দিতে পারেন। পুরো পদটি কিন্তু একেবারে মাখা মাখা হবে।

ক্যাপসিকাম সম্পর্কে শেষকথা

হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ ও ফসল উৎপাদন একটি আধুনিক ও সময়োপযোগী পদ্ধতি যা পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহে সফল ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে যে কোন পতিত জায়গায় এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রকার সবজি, ফল ও ফুলের চাষ করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে রাসায়নিক সার, বাড়তি সেচ এবং সাধারনত কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না বিধায় উৎপাদিত ফসল হয় নিরাপদ।

যে সকল ফসলের উচ্চ বাজারমূল্য রয়েছে সেসব ফসল এ পদ্ধতিতে চাষ অধিক লাভজনক। আমেরিকা, ইউরোপের দেশসমূহ, জাপান, তাইওয়ান, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং মধ্য-প্রাচ্যের দেশসমূহে বাণিজ্যিকভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতির মাধ্যমে সবজি, ফল ও ফুল উৎপাদন করছে। এই পদ্ধতিতে সারাবছরই পলিটানেল, নেট হাউজে বা গ্রীনহাউজে সবজি, ফল ও ফুল উৎপাদন করা সম্ভব।

হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ করে পারিবারিক ও সামগ্রিকভাবে সবজির উৎপাদন ও পুষ্টির চাহিদা মেটানো বহুলাংশে সম্ভব হবে। আশা করি, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ ও রোপন পদ্ধতি, টবে ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি, ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকারিতা, ক্যাপসিকামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url