তীব্র কুয়াশা ও ঠান্ডায় আলুর রোগ, প্রতিকার ও পরিচর্যা

তীব্র কুয়াশা ও ঠান্ডায় আলুর রোগ ও প্রতিকার হলো আজকের আর্টিকেলে আলোচনার মূল বিষয়। শীতকালে বাংলাদেশের সবগুলি জেলায় ব্যাপকভাবে আলু চাষ করা হয়। মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতাসহ ভালভাবে সার প্রয়োগকৃত রৌদ্রোজ্জ্বল জমি আলু লাগানোর জন্য যথোপযুক্ত।
আলুর-রোগ,-প্রতিকার-ও-পরিচর্যা
আলু চাষের উপযুক্ত সময় হচ্ছে নভেম্বরের প্রথম পক্ষ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে কৃষকগণ আগাম ফসল তোলার জন্য অক্টোবরে আলু লাগায়। প্রকৃতপক্ষে, দেশের চাষকৃত আলুর পুরোটাই হাতে লাগানো হয়। নিচে  আলুর বিভিন্ন রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

পেইজ সূচিপত্রঃ তীব্র কুয়াশা ও ঠান্ডায় আলুর রোগ, প্রতিকার ও পরিচর্যা

আলু চাষের উপযুক্ত সময় ও চাষ পদ্ধতি

আলু চাষের উপযুক্ত সময় হলো বাংলা কার্তিক-অগ্রহায়ণ ঋতুচক্রে হেমন্তকাল আলুর চাষে জমি তৈরি ও বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ মধ্য-কার্তিক থেকে মধ্য-অগ্রহায়ণ (নভেম্বর) মাসে আলু লাগানোর উপযুক্ত সময়। তাই কার্তিক মাসের শুরুতেই শীতকালীন ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো শুরু করতে হয়। তার মধ্যে এ মাস আলু চাষের উপযুক্ত সময়। ফলে এখনই জেনে নিন আলু চাষের নিয়ম-পদ্ধতিগুলো-

আলু চাষের পদ্ধতি

জমি তৈরি ও বীজ বপনঃ আলুর জন্য জমি তৈরি ও বীজ বপনের উপযুক্ত সময় কার্তিক মাস। হালকা প্রকৃতির মাটি অর্থাৎ বেলে দো-আঁশ মাটি আলু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এটেল-দোআঁশ মাটিতেও আলুর চাষ করা যায়, তবে এই রকম মাটিতে আলু খুব একটা ভালো হয় না। আলুর মাটি সুনিষ্কাশনযুক্ত, গভীর ও কিছুটা অম্লাত্মক হওয়া চাই। PH ৫.৫-৬০ এর মধ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়, এতে আলুর জন্য ক্ষতিকর রোগ স্কেভিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

জাত ও বীজঃ ভালো ফলনের জন্য বীজ আলু হিসেবে ডায়মন্ড, মুল্টা, কার্ডিনাল, প্যাট্রেনিজ, হীরা, মরিন, অরিগো, আইলশা, ক্লিওপেট্রা, গ্রানোলা, বিনেলা, কুফরিসুন্দরী উল্লেখযোগ্য। প্রতি হেক্টর জমি আবাদ করতে ১৫০০ থেকে ২০০০ কেজি বীজ আলু দরকার।

মাটি নির্বাচনঃ আলু চাষের জন্য সূর্যের আলো প্রচুর পড়ে এমন উঁচু বা মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করা উচিত। পানি সেচ দেওয়া এবং পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা সহিত জমি সমতল করা প্রয়োজন।

সার প্রয়োগঃ এক হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করতে ৩২৫ কেজি ইউরিয়া, ২২০ কেজি টিএসপি, ২৫০ কেজি এমওপি, ১৫০ কেজি জিপসাম এবং ১৪ কেজি দস্তা সার প্রয়োজন। তবে এ সারের পরিমাণ জমির অবস্থাভেদে কম-বেশি হতে পারে। তাছাড়া হেক্টরপ্রতি ১০-১২ টন জৈব সার ব্যবহার করলে ফলন অনেক বেশি হয়।

পরিচর্যাঃ আলু উৎপাদনে আগাছা পরিষ্কার, সেচ, সারের উপরি প্রয়োগ, মাটি আলগাকরণ বা কেলিতে মাটি তুলে দেওয়া, বালাই দমন, মালচিং করা আবশ্যক। সময়মতো সবগুলো কাজ করতে পারলে খরচ কমে আসে, ফলন বেশি হয়। চারা গাছের উচ্চতা ১০-১৫ সেন্টিমিটার হলে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। দুই সারির মাঝে সার দিয়ে কোদালের সাহায্যে মাটি কুপিয়ে গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে। ১০-১২ দিন পরপর এভাবে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে না দিলে ভালো হয়।

রোগ দমনঃ আলু ফসলে নাবি ধসা রোগ দেখা দিতে পারে। মড়ক রোগ দমনে ২ গ্রাম ডায়থেন এম ৪৫ অথবা সিকিউর অথবা ইন্ডোফিল প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ৭ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে। মড়ক লাগা জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। তাছাড়া আলু ফসলে মালচিং, সেচ প্রয়োগ, আগাছা দমনের কাজগুলোও করতে হবে। গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটির সমান করে গাছ কেটে ১০ দিন পর আলু তুলে ফেলতে হবে। আলু তোলার পর ভালো করে শুকিয়ে বাছাই করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

তীব্র কুয়াশা ও ঠান্ডায় আলুর রোগ ও তার প্রতিকার

তীব্র কুয়াশা ও ঠান্ডায় আলুর রোগ, প্রতিকার সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলের এই অংশ পড়তে থাকুন। বর্তমানে আমাদের দেশের চাষীরা আলু চাষ করে ব্যপকহারে লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু এই আলু চাষ করার ক্ষেত্রে আলু বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়। যদি আলু গাছ বা আলুকে এই সমস্ত রোগবালাই থেকে দূরে না রাখা যায় তাহলে আলুর কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যাবে না। আসুন জেনে নেই আলুর বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার।

১। আলুর পাউডারী মিলডিউ রোগ

রোগের লক্ষণঃ পাতা ও গাছের গায়ে সাদা পাউডারের মত দাগ দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত বেশী হলে পাতা হলুদ বা কালো হয়ে মারা যায় ।

প্রতিকারঃ
  • সম্ভব হলে গাছের আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে ধ্বংস করুন।
  • ক্ষত পরিষ্কার রাখুন এবং পানি নিষ্কাষনের ভাল ব্যবস্থা রাখুন।
  • (ম্যানকোজেব+মটোলোক্সিল) গ্রুপের ছত্রাকনাশক রিডোমিল গোল্ড ২ গ্রাম বা লিটার হারে অথবা সালফার ছত্রাক নাশক যেমন কুমুলাস ৪ গ্রাম বা গেইভেট বা মনোভিট বা থিওভিট ২ গ্রাম অথবা কার্বেণ্ডাজমি গ্রুপের ছত্রাক নাশক গোল্ডাজমি ০.৫ মি.লি. বা এমকোজমি বা কিউবি বা চ্যামপিয়ন ২ গ্রাম বা লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা ।
  • আগাম বীজ বপন করুন।
  • সুষম সার ব্যবহার করুন।
  • রোগ প্রতরিোধী জাত যেমন বারি উদ্ভাবিত/ অন্যান্য উন্নত জাতের চাষ করুন।
  • আগাছা পরিষ্কার রাখুন।

২। আলুর ব্ল্যাক লেগ রোগ

রোগের কারণঃ Erwinia carotovora নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।

রোগের লক্ষণঃ
  • আলুর ব্ল্যাক লেগ বীজ আলুর একটি প্রধান রোগ।
  • মাঠে ও সংরক্ষিত আলুতে এ রোগ দেখা যায়। মাঠে গাছের গোড়ায় কালো দাগ পড়ে বলে কারো পা এবং সংরক্ষণাগারে টিউবার আক্রান্ত হলে নরম পচা রোগ বলে।
  • আক্রান্ত গাছের কান্ডের গোড়ার দিকে বাদামী থেকে কারো রঙের দাগ পড়ে এবং যা সহজেই সুস্থ্য অংশ থেকে আলাদা করা যায়।
  • আক্রান্ত ডাল তুলে নাকের কাছে ধরলে এক ধরণের পঁচা আলুর মত গন্ধ পাওয়া যায়। আক্রান্ত গাছের আলু পচে যায়।
  • উচ্চ তাপমাত্রা এবং জমির উচ্চ আর্দ্রতা এ রোগ বিস্তারে সহায়ক।
  • এ রোগটি বীজ ও মাটিবাহিত।

প্রতিকারঃ
  • প্রত্যায়িত অথবা রোগমুক্ত বীজ সংগ্রহ করা।
  • অতিরিক্ত সেচ পরিহার করা।
  • উচ্চ তাপ এড়ানোর জন্য আগাম চাষ করা।
  • ভালভাবে বাছাই করে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা।
  • আলু লাগানোর সময় জমিতে সর্বশেষ চাষের পূর্বে প্রতি হেক্টরে ২০-২৫ কেজি হারে ষ্ট্যাবল ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করা।
  • বপনের পর যত শীঘ্র সম্ভব গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেওয়া।
  • ষ্ট্যাবল ব্লিচিং পাউডার প্রতি লিটার পানিতে ৩ গ্রাম অথবা বোরিক এসিড প্রতি লিটার হালকা গরম পানিতে ৩০ গ্রাম দ্রবণে টিউবার শোধন করে বীজ আলু সংরক্ষণ করা।
  • রোগ দেখা মাত্র পানি সেচ বন্ধ করা। সেচের প্রয়োজন হলে আক্রান্ত অংশ বাদ দিয়ে সেচ দেওয়া।
  • আলুর ব্ল্যাক লেগ রোগে আক্রান্ত গাছ আলুসহ আশেপাশের মাটি দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নষ্ট করে ফেলা এবং আক্রান্ত জায়গায় ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করা।

৩। আলুর শুকনো পচা রোগ

আলুর শুকনো পচা রোগ মুলত ছত্রাক রোগ। ফিউজেরিয়াম প্রজাতির ছত্রাকের আক্রমণে আলুর শুকনো পচা রোগ হয়ে থাকে। আলুর গায়ে গভীর কালো দাগ পড়ে। আলুর ভিতরে গর্ত হয়ে যায়। প্রথম পচন যদিও ভিজা থাকে পরে তা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়। আক্রান্ত অংশে গোলাকার ভাঁজ এবং কখনো কখনো ঘোলাটে সাদা ছত্রাক জালিকা দেখা যায়।

রোগের লক্ষণঃ
  • আলুর গায়ে কিছুটা গভীর কালো দাগ পড়ে।
  • আলুর ভিতরে গর্ত হয়ে যায়।
  • প্রথম পচন যদিও ভিজা থাকে পরে তা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়।
  • আক্রান্ত অংশে গোলাকার ভাঁজ পড়ে ও কখনো ঘোলাটে সাদা ছত্রাক জালিকা দেখা যায়।

প্রতিকারঃ
  • আলু ভালভাবে বাছাই করে সংরক্ষণ করা।
  • ডাইথেন এম ৪৫ দ্রবণ ০.২% দ্বারা বীজ শোধন করা।
  • প্রতি কেজিতে ২ গ্রাম টেটো গুাড়া দিয়ে আলু বীজ শোধন করা।
  • বস্তা, ঝুড়ি ও গুদাম ঘর ইত্যাদি ৫% ফরমালিন দ্বারা শোধন করা।

৪। আলুর ভাইরাস জনিত রোগ

আলুর ভাইরাস জনিত রোগ আলুর প্রজাতি, গাছের বয়স আর পরিবেশের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন হয়। পত্রফলকের উপরে হলুদ অথবা গাঢ় সবুজ রঙের বিচিত্র ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায় এবং পাতার শীর্ষভাগ থেকে শুরু করে পাতার আকার বিকৃত হয়ে যায়। শিরা অথবা কাণ্ডে মরা কোষকলা সমন্বিত বাদামী বা কালো বর্ণের রেখা এবং গোলাকার চিহ্ন দেখা যায়। কুঁড়ি এবং ফুলের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। আক্রান্ত গাছের কন্দ আকারে ছোট হয় এবং তার গায়ে ছোট গোলাকার মরা দাগ দেখা যায়। গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং আলুর ফলন অনেক কমে যায়।

রোগের কারণঃ
Potato Leaf Roll Virus (PLRV), Potato Virus Y (PVY), Potato Virus X (PVX) এবং Potato virus S (PVS) দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। ভাইরাসসমূহ জাব পোকা এবং স্পর্শের মাধ্যমে গাছ থেকে গাছে ছড়ায়।

রোগের লক্ষণঃ
  • পাতায় বিভিন্ন ধরনের ছিটে দাগ পড়ে, পাতা বিকৃত ও ছোট হয়।
  • আলুর জাতের উপর নির্ভর করে লক্ষন ভিন্নতর হয়।
  • লতা ঝুলে পড়ে এবং পরবর্তীতে গাছ মারা যায়।
  • এই সমস্ত ভাইরাস এককভাবে অথবা যৌথভাবে আলু গাছ আক্রমণ করে।
  • সাধারণভাবে ভাইরাস আক্রান্ত আলু গাছ আকারে ছোট, পাতা কোঁকড়ানো, হলুদ অথবা মোজাইকের রং হয় এবং খসখসে হয় যা সহজেই নিবিড় পর্যবেক্ষণ করলে কৃষক সুস্থ গাছ থেকে ভাইরাস আক্রান্ত আলু গাছ আলাদা করতে পারবে।
  • ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হলে আলুর আকার ছোট হয় এবং আলুর উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।

প্রতিকারঃ
  • সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
  • রোগমুাক্ত গাছ আলু সহ রোগিং করা।
  • ভাইরাসের বাহক পোকা (জাব) দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
  • ভাইরাস মুক্ত প্রত্যায়িত বীজ আলু ব্যবহার করা।
  • আগাম জাতের আলু চাষ যা নভেম্বরের ২৫ তারিখের (১১ কার্তিক) মধ্যে করা এবং আগাম সংগ্রহ করা।
  • জমি আগাছা মুক্ত করা।
  • জমির আশে পাশের বিকল্প পোষক গাছ যেমন-টমেটো, তামাক, মরিচ, ধুতরা, বথুয়া, ফোসকা বেগুন ইত্যাদি থাকলে তা পরিষ্কার করা।
  • সারিতে ভালভাবে মাটি উঁচু করে দেয়া।
  • আলু গজানোর সাথে সাথে (২০-২৫ দিন বয়স হতে) নিয়মিতভাবে ভাইরাস আক্রান্ত গাছ রোগিং অর্থাৎ আলু সহ তুলে মাটির নীচে পুঁতে ফেলা।
  • জাব পোকা দমনে ইমডাক্লোরোপি গোত্রের কীটনাশক যেমন-এডমায়ার (১ মিলি/লিটার পানিতে) অথবা ম্যালাথিয়ন (২ মিলি/লিটার পানিতে) ১০-১৫ দিন পর পর জমিতে নিয়মিত ভাবে স্প্রে করা।
  • গাছের বয়স ৮০ দিন হলে আলু গাছ শিকড়সহ তুলে ফেলা এবং এরপর কমপক্ষে ৮-১০ দিন আলু জমিতে মাটির নীচে রেখে দেয়া।

৫। আলুর পাতা মোড়ানো রোগ

আলুর পাতা মোড়ানো রোগ একটি ভাইরাসজনিত রোগ। আক্রান্ত গাছের পাতা খসখসে, খাড়া ও উপরের দিকে মুড়ে যায়৷ আগার পাতার রং হালকা সবুজ হয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়৷ কখনো আক্রান্ত পাতার কিনারা লালচে বেগুনি রংয়ের হয়৷ গাছ খাটো হয় এবং সোজা হয়ে উপরের দিকে দাঁড়িয়ে থাকে৷ আলুর সংখ্যা কমে যায় এবং আলু অনেক ছোট হয়।

রোগের লক্ষণঃ
  • আক্রান্ত গাছের পাতা খসখসে, খাড়া ও উপরের দিকে যায়।
  • আগার পাতার রং হালকা সবুজ হয়ে যায়।
  • গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, গাছ খাটো হয় এবং সোজা হয়ে উপরে দিকে দাঁড়িয়ে থাকে।
  • কখনও আক্রান্ত পাতার কিনারা লালচে বেগুনি ছোট রঙয়ের হয়।
  • আলুর সংখ্যা কম হয় এবং আলু ছোট ছোট হয়।

প্রতিকারঃ
  • রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা।
  • আক্রান্ত গাছ টিউবার সহ তুলে ফেলা (রোগিং)।
  • ভাইরাস রোগের বাহক জাবপোকা দমনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেমন ডায়াজিনন, এসাটাফ, ডায়মেথোয়েট, এডমায়ার, টিডো ইত্যাদি।

৬। আলুর ঢলে পড়া রোগ

Ralstonia solanacearum নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে ।

রোগের কারণঃ
  • গাছের যে কোন বয়সে এ রোগ দেখা যায়।
  • গাছ হঠাৎ ঢলে পড়ে। সবুজ অবস্থায় চুপসে ঢলে পড়ে।
  • গোড়ার দিকে গাছের কান্ড ফেড়ে দেখলে বাদামী আক্রান্ত এলাকা দেখা যায়।
  • আক্রান্ত আলুর কাটলে ভিতরে বাদামী দাগ দেখা যায়।
  • আলুরে চোখে সাদা পুঁজের মত দেখা যায় এবং আলু অল্প দিনের মধ্যেই পচে যায়।
  • এ রোগে গাছ সাধারণত সবুজ অবস্থায়ই ঢলে পড়ে।
  • কান্ডের নিম্নাংশ ও শিকড় অক্ষত থাকে। কা-ের ভিতরে পরিবহন কলায় বাদামী বর্ণের উপস্থিতি, ঢলে পড়া রোগের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ যা কা- চিরলে স্পষ্ট দেখা যায়।
  • আক্রান্ত গাছের কা- কেটে পরিষ্কার পানিতে খাড়া করে রাখলে কিছুক্ষণ পর দুধের মত সাদা পুঁজ বের হয়।
  • সংগৃহীত আলুর চোখে সাদা পুঁজের মত দেখা যায় এবং আলু অল্প দিনের মধ্যেই পচে যায়।
  • বীজ আলুর ক্ষেত্রে একর প্রতি যদি ১ টি গাছ আক্রান্ত হয় তাহলে সেই মাঠ হতে বীজ আলু কখনই সংগ্রহ করা যাবে না।
  • আলুর ঢলে পড়া রোগ প্রধানত তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা দ্বারা প্রভাবিত হয়। সাধারনতঃ ২৮-৩০০ সে তাপমাত্রা এ রোগের জন্য সবচেয়ে অনুকূল।

প্রতিকারঃ
  • রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা।
  • আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়ে বা পুতে ফেলা।
  • আলু লাগানোর ২০-২৫ দিন আগে জমিতে ব্লিচিং পাউডার বিঘা প্রতি ২.৬ কেজি ব্যবহার করা।
  • পরিমিত সেচ প্রয়োগ করা।
  • রোগ দেখা দিলে পানি সেচ বন্ধ করতে হবে।
  • প্রত্যায়িত অথবা রোগমুক্ত এলাকা থেকে সুস্থ ও রোগমুক্ত বীজ সংগ্রহ করা।
  • কাটা বীজ লাগানো পরিহার করা।
  • আলু লাগানোর সময় জমিতে সর্বশেষ চাষের পূর্বে প্রতি হেক্টরে ২০-২৫ কেজি হারে ষ্ট্যাবল ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করা।
  • বপনের পর যত শীঘ্র সম্ভব গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেওয়া।
  • পরিমিত মাত্রায় সেচ প্রয়োগ করা।
  • আক্রান্ত গাছ আলুসহ আশেপাশের মাটি দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নষ্ট করা এবং আক্রান্ত জায়গায় ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করা। সেচের প্রয়োজন হলে আক্রান্ত অংশ বাদ দিয়ে সেচ দেওয়া।
  • আক্রান্ত জমিতে পরবর্তীতে আলু, টমেটো, বেগুন, মরিচ, তামাক ইত্যাদি জাতীয় ফসল চাষ না করা।
  • গম, ধান, ভুট্টা, কাউন, বার্লি, সরগাম, পেয়াজ, রসুন, কপি, গাজর ইত্যাদি ফসল দিয়ে শস্য পর্যায় অবলম্বন করা। বীজ আলু জমিতে ভুট্টা দ্বারা আন্তঃফসল চাষ করলে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ কম হয়।
  • গ্রীষ্মকালে কয়েকবার জমি চাষ করে প্রখর রৌদ্রে মাটি শুকিয়ে নিতে হবে এতে মাটিতে অবস্থিত রোগ জীবাণু অনেক কমে যায়।
  • এ রোগ দেখা মাত্র আক্রান্ত জমিতে সেচ প্রদান, নিড়ানী দেওয়া, মালচিং ইত্যাদি বন্ধ করা।
  • আলু লাগানোর পূর্বে জমিতে ধান থাকলে সে ধানের নাড়া শুকিয়ে মাটিতে বিছিয়ে পুড়িয়ে ফেলা।
  • যে জমি সব সময় ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে থাকে সে জমিতে বীজ আলু কখনই চাষ না করা।
৭। আলুর দাদ বা স্ক্যাব রোগ

Streptomyces scabies নামক ছত্রাকের অক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। দাঁদ রোগে আলুর টিউবারের উপরে উঁচু অমসৃণ, এবং ভাসা বিভিন্ন আকারের বাদামি খসখসে দাগ পড়ে। আক্রমন বেশী হলে পুরো টিউবারই দাগে ভরে যায়।

রোগের কারণঃ
  • হালকা দাদ হলে উিউবারের উপরে উঁচু এবং ভাসা বিভিন্ন আকারের বাদামী দাগ পড়ে।
  • রোগের গভীর দাদে গোলাকার গর্ত বা ডাবা দাগ পড়ে।
  • দাঁদ রোগে আলুর উপরে উঁচু অমসৃণ বিভিন্ন আকারের বাদামী খস্খসে দাগ পড়ে। আক্রমণ বেশী হলে পুরো আলু দাগে ভরে যায় এবং অনেক সময় দাগগুলো ডেবে যায়।
  • রোগের আক্রমণ সাধারণত ত্বকেই সীমাবদ্ধ থাকে। উচ্চ তাপমাত্রা এবং উচ্চ আর্দ্রতা এ রোগ বিস্তারে সহায়ক।
  • এ রোগটি বীজ ও মাটি বাহিত। কোন পোষক গাছ ছাড়াই এ রোগের জীবাণু মাটিতে পাঁচ (৫) বছরের অধিক কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
  • সাধারণত গাছে আলু আসার সময় কম পক্ষে ৩০ দিন পর্যন্ত যদি জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকে অথবা আলু গাছের বয়স ৬৫ দিন পর যদি জমিতে অতিরিক্ত রস থাকে তাহলে এ রোগটি বেশী হয়।
  • বিভিন্ন প্রকার ফসল যেমন-মুলা, গাজর, শালগমে এ রোগের জীবাণু বহুদিন বেঁচে থাকে।
প্রতিকারঃ
  • রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা।
  • জমিতে বেশী মাত্রায় ইউরিয়া ব্যবহার কমানো।
  • বরিক এসিড ৩ গ্রাম + ১ লিটার পানি মিশিয়ে বীজ শোধন করা বা বীজের গায়ে ¯েপ্র করা।
  • ১ লিটার পানি মিশিয়ে বীজ শোধন করজমিতে হেক্ট প্রতি ১২০ কেজি জিপসাম সার ব্যবহার করা।
  • এ রোগে আক্রান্ত আলু কখনই বীজ আলু হিসেবে ব্যবহার না করা।
  • রোগ প্রতিরোধী বা সহনশীল জাত যেমন-বারি আলু-২৫, বারি আলু-২৮, বারি আলু-৩১, বারি আলু-৩৪, বারি আলু-৩৭, বারি আলু-৪০, বারি আলু-৪১, বারি আলু-৪৮, বারি আলু-৫০, বারি আলু-৫৩, বারি আলু-৫৬, বারি আলু-৫৭ এর চাষ করা।
  • রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা ও কন্দক রোপণের পূর্বে বীজআলু কোল্ড স্টোরেজ থেকে সংগ্রহের পর স্প্রাউটিং এর পূর্বে প্রোভে ২০০ (০.৩%) বা ডাইথেন এম-৪৫ (০.৩%) দিয়ে শোধন করে বপন করা।
  • সুষম সার ব্যবহার করা।
  • সেচের তারতম্যের কারণে অনেক সময় দাঁদ রোগের সূচনা হয়। দাঁদ রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আলু লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পর্যন্ত কোন অবস্থাতেই মাটিতে রসের যেন ঘাটতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
  • আলুর টিউবার ধারণের সময় ৩৫-৫৫ দিন পর্যন্ত পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা করা।
  • আলু উত্তোলনের আগে মাটিতে বেশী রস থাকলে আলু দাঁদ রোগে আক্রান্ত হতে পারে, এ জন্য গাছের বয়স ৭০ দিনের পর সেচ বন্ধ করা।
  • বীজ আলু চাষের পূর্বে জমিতে সরিষা, কাউন, সয়াবিন দ্বারা সবুজ সারে চাষ করা।
  • শষ্য পর্যায়ে জমিতে গম বা ডাল জাতীয় ফসল চাষ করা।

৮। আলুর কান্ড পচা রোগ

আলুর কান্ড পচা রোগ ছত্রাকজনিত রোগ। গাছের গোড়ায় কালো দাগ পড়লে তাকে কালো পা এবং গাছ ও টিউবার আক্রান্ত হলে নরম পচা রোগ বলে। আক্রান্ত গাছের টিউবার পচে যায়। সংরক্ষিত আলুতে এ রোগে আক্রান্ত আলু পচে যায় এবং পচা আলুতে এক ধরণের উগ্র গন্ধের সৃষ্টি হয়। চাপ দিলে আলু থেকে রস বেরিয়ে আসে যা অন্য সুস্থ আলুকে আক্রমন করে।

রোগের  লক্ষণঃ
  • এ রোগের আক্রমণের ফলে বাদামী দাগ কান্ডের গোড়া ছেয়ে ফেলে।
  • গাছ ঢলে পড়ে এবং নিচের পাতা হলদে হয়ে যায়া।
  • আক্রান্ত অংশে বা আশেপাশে মাটিতে ছত্রাকের সাদা সাদা জালিকা দেখা যায়।
  • আলুর গা থেকে পানি বের হয় এবং পচন ধরে।
  • আক্রান্ত অংশ বাদামি রংয়ের ও নরম হয় যা সহজেই সুস্থ অংশ থেকে আলাদা করা যায়।

প্রতিকারঃ 
  • আক্রান্ত গাছ কিছুটা মাটি সহ সরিয়ে ফেলতে হবে।
  • জমি গভীর ভাবে চাষ করে কয়েক দিন ফেলে রাখা।
  • জমিতে পচা জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • বীজ বপনের পূর্বে আলু বীজ শোধন করা (ম্যানকোজের ২ গ্রাম + ১ লিটার পানি)।
  • ট্রাইকোডারমা ভিড়িডি ৩-৪ গ্রাম + ১ লিটার পানি মিশিয়ে বীজ শোধন করা।

৯। আলুর আগাম ধ্বসা রোগ

আলুর আগাম ধ্বসা রোগ ছত্রাকজনিত রোগ। প্রথমে নিচের পাতায় ছোট ছোট কাল থেকে বাদামি চক্রাকার দাগ দেখা যায়। দাগের চারিদিক হলুদ সবুজ বলয় দেখা যায়। যা দেখতে আনেকটা গো- চোখের মত। আক্রমন বেশি হলে অনেকগুলো দাগ একত্রে মিশে যায়।

রোগের  লক্ষণঃ
  • নিচের পাতা ছোট ছোট বাদামী রংয়ের অল্প বসে যাওয়া কৌনিক দাগ পড়ে।
  • আক্রান্ত অংশে সামন্য বাদামী কালার সাথে পর্যায়ক্রমে কালচে রংয়ের চক্রাকার দাগ পড়ে।
  • পাতার বোটা ও কান্ডের দাগ অপেক্ষাকৃত লম্বা ধরনের হয়।
  • গাছ হলদে হয়, পাতা ঝরে পড়ে। অকালে গাছ মারা যেতে পারে।

প্রতিকারঃ 
  • সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত বীজ বপন করা।
  • রোগ মুক্ত বীজ সংগ্রহ করা।
  • প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাতের চাষ করা।
  • সুষম সার প্রয়োগ এবং সময়মত ও পরিমিত সেচ প্রয়োগ করা।
  • রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতি লিটার পানিতে রোভরাল ২ গ্রাম ও ডায়থেন এম- ৪৫, নেমিসপোর ২ গ্রাম মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর স্প্রে করা (পাওয়ার স্পেয়ার দিয়ে)।

১০। আলুর নাবী ধ্বসা বা লেট ব্লাইট রোগ

Phytophthora infestans নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। গাছের কান্ড এবং টিউবারে রোগের আক্রমন দেখা যায়। এসময় মনে হয় যেন জমির ফসল পুড়ে গেছে। কম তাপমাত্রা এবং কুয়াশাযুক্ত আবহাওয়ায় আক্রান্ত গাছের পুরো লতাপাতা ও কান্ড পচে যায় এবং ২-৩ দিনের মধ্যেই সমস্ত গাছই মেরে ফেলতে পারে । আক্রান্ত ক্ষেতে পাতা পচার পোড়া গন্ধ পাওয়া যায় ।

রোগের কারণঃ
  • এ রোগের আক্রমণে প্রথমে পাতায় ছোপ ছোপ ভেজা হালকা সবুজ গোলাকার বা এলোমেলো দাগ দেখা দেয়, যা দ্রুত কালো হয়ে পচে যায়।
  • গাছের কান্ড এবং টিউবারেও এ রোগের আক্রমণ দেখা যায়।
  • সকাল বেলা মাঠে গেলে পাতার নীচে সাদা সাদা পাউডারের মত ছত্রাক দেখা যায়।
  • তীব্র আক্রমণে সম্পূর্ণ জমির ফসল পুড়ে যায়। যদি রাতে নিম্ন তাপমাত্রা ও উচ্চ জলীয় বাষ্প এবং তার সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, কুয়াশা এবং পাতায় শিশির জমে থাকে তাহলে এ রোগ কয়েক দিনের মধ্যে মহামারী রূপ ধারণ করে। আক্রান্ত গাছ দ্রুত পাতা ও কা-সহ পচে যায় এবং ২-৩ দিনের মধ্যেই মাঠের সমস্ত গাছই মরে যেতে পারে।
  • আক্রান্ত আলুর গায়ে ও ভিতরের অংশে গাঢ় বাদামী থেকে কালচে বর্ণের দাগ পড়ে।
  • বাতাস, বৃষ্টিপাত, সেচের পানি ইত্যাদির সাহায্যে এ রোগের জীবাণু আক্রান্ত গাছ থেকে সুস্থ গাছে বিস্তার লাভ করে। বিকল্প পোষক যেমন টমেটো গাছ থেকেও এ রোগ বিস্তার লাভ করতে পারে।
প্রতিকারঃ
  • রোগ প্রতিরোধী বা সহনশীল জাত যেমন-বারি আলু-৪৬, বারি আলু-৫৩, বারি আলু-৭৭ চাষ করা।
  • রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা।
  • আক্রান্ত জমিতে সেচ বন্ধ করে দেওয়া।
  • সারিতে ভালভাবে মাটি উঁচু করে দেওয়া।
  • আগাম জাতের আলু চাষ করা এবং আগাম সংগ্রহ করা।
  • নিম্ন তাপমাত্রা, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া ও বৃষ্টির পূর্বাভাস পাওয়ার সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধের জন্য ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন- ডাইথেন এম-৪৫/ ইন্ডোফিল/ হেম্যানকোজেব/ ফরমোকোজেব ৮০ ডব্লিওপি/মাইকোজেব ৮০ ডব্লিওপি ইত্যাদি প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করা।
  • জমিতে রোগ দেখা দেওয়া মাত্রই সিকিউর (২ গ্রাম/লিটার) অথবা এক্রোভেট এম জেড (২ গ্রাম/লিটার) অথবা মনা ২৮ এসসি (১ গ্রাম/লিটার) অথবা মেলোডি ডিও ৪ গ্রাম + সিকিউর ২ গ্রাম (প্রতি লিটার পানিতে) অথবা এক্রোভেট এম জেড ২ গ্রাম + সিকিউর ১ গ্রাম (প্রতি লিটার পানিতে) অথবা মেলোডিডিও ১ গ্রাম + এক্রোভেট এম জেড ২ গ্রাম (প্রতি লিটার পানিতে), ৭ দিন অন্তর উপরোক্ত যে কোন একটি ছত্রাকনাশক বা ছত্রাকনাশকের মিশ্রণ স্প্রে করা।
  • এখানে উল্লেখ্য যে রোগের প্রাদুর্ভাব বেশী হলে আরো ঘন ঘন ঔষধ ছিটানোর প্রয়োজন পড়তে পারে। ভেজা অবস্থায় জমিতে ছত্রাকনাশক না দেয়াই ভাল। আর যদি দিতেই হয় তাহরে প্রতি লিটার পানিতে ২-৩ গ্রাম সাবানের গুঁড়া পাউডার যোগ করে নিতে হবে। ছত্রাকনাশক ভালভাবে ছিটাতে হবে যাতে পাতার নীচে ও উপরে ভালভাবে ভিজে যায়। এ ক্ষেত্রে সাধারন স্প্রেয়ারের পরিবর্তে পাওয়ার স্প্রেয়ার ভাল ফল দেয়।
  • মাটি ভেজা অবস্থায় কিংবা বৃষ্টির পর পর আলু না তুলে শুকনা অবস্থায় মাটিতে ‘জো’ এলে আলু তোলা।
  • হিমাগারে আলু রাখার আগে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বীজ বাছাই করতে হবে, যাতে কোনভাবে রোগাক্রান্ত আলু সুস্থ্য বীজের সাথে না থাকে।
  • রোগাক্রান্ত গাছ দিয়ে আলুর স্তুপ বা সংগৃহীত আলু ঢেকে রাখা যাবে না।
  • আলুর মৌসুমে নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করা।
  • মেটালেক্সিল গ্রুপের ছত্রাকনাশকের বিরুদ্ধে ফাইটোপথোরা ইনফেসট্যান্স এর নতুন রেস তৈরি হওয়ায় এখন থেকে ঐ গোত্রের ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যাবে না।
  • আক্রান্ত জমি হতে বীজ আলু সংগ্রহ করা যাবে না।

শীতে আলুর সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা

শীতের তিব্রতা দিন দিন বেড়েই চলে। মূলত শীতকালেই বেশীরভাগ আলু চাষ করা হয়। আবহাওয়া পরির্বতনের কারনে আলুতে নানা ধরনের রোগের প্রবণতা দেখা যায়। এই রোগগুলি মূলত ছত্রাক, শুক্রাণু ও ভাইরাস দ্বারা গঠিত তাই এখন আলুতে একটু বাড়তি সময় দিতে হবে। এবং সঙ্গে ভালো ফলনের জন্য পরিমিত সার প্রয়োগ করতে হবে।

সার প্রয়োগঃ চারা গাছের উচ্চতা ১০-১৫ সেন্টিমিটার হলে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। দুই সারের মাঝে সার দিয়ে কোদালের সাহায্যে মাটি কুপিয়ে সারির মাঝের মাটি গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে। ১০-১২ দিন পরপর এভাবে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে না দিলে গাছ হেলে পড়রে এবং ফলন কমে যাবে।

পরিচর্যাঃ আলু ফসলে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। সে কারণে স্প্রেয়িং শিডিউল মেনে চলতে হবে। তবে বালাইনাশক প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা দরকার। এছাড়া বালাইনাশক কেনার আগে তা ভালোমানের কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে। মড়ক রোগ দমনে দেরি না করে ২ গ্রাম ডায়থেন এম ৪৫ অথবা সিকিউর অথবা ইন্ডোফিল প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।

মড়ক লাগা জমিতে সেচ দেয়া বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া আলু ফসলে মালচিং, সেচ প্রয়োগ, আগাছা দমনের কাজগুলোও করতে হবে। আলু গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটির সমান করে গাছ কেটে দিতে হবে এবং ১০ দিন পর আলু তুলে ফেলতে হবে। আলু তোলার পর ভালো করে শুকিয়ে বাছাই করতে হবে এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

আলুর রোগের কারণ ও লক্ষণ

আলুর রোগ আলুর ফলন ও গুণমানের জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে। সাধারণ আলু রোগের কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিরোধের কৌশলগুলি বোঝার মাধ্যমে, চাষীরা তাদের ফসল রক্ষা করতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর ফসল নিশ্চিত করতে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে পারে। দুর্ভাগ্যক্রমে, এই বহুমুখী বিভিন্ন রোগের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে ফলন এবং গুণমান হ্রাস করতে পারে। জেনে নিন আলুর সবচেয়ে সাধারণ কিছু রোগ এবং কীভাবে সেগুলি প্রতিরোধ করা যায়।

রোগের কারণঃ ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং নেমাটোড সহ বিভিন্ন কারণের কারণে আলুর রোগ হতে পারে। আলু রোগের কিছু সাধারণ কারণের মধ্যে রয়েছে দুর্বল মাটির স্বাস্থ্য, অনুপযুক্ত স্টোরেজ পরিস্থিতি এবং দূষিত রোপণ উপাদান। অনেক ক্ষেত্রে এই রোগগুলো মাটি, পানি বা পোকামাকড়ের মাধ্যমে এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছড়াতে পারে।

রোগের লক্ষণঃ আলু রোগের লক্ষণগুলি নির্দিষ্ট রোগ এবং সংক্রমণের পর্যায়ের উপর নির্ভর করে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। আলু রোগের কিছু সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে বৃদ্ধি থেমে যাওয়া, পাতা হলুদ বা বাদামী হয়ে যাওয়া, কান্ড বা কন্দে ক্ষত এবং কন্দ পচা বা নরম হয়ে যাওয়া। আলু রোগের লক্ষণগুলি তাড়াতাড়ি চিনতে সক্ষম হওয়া গুরুত্বপূর্ণ যাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

আলুর ভাইরাস জনিত রোগ

আলুর ভাইরাস জনিত রোগ আলুর ফলন কম হওয়ার অন্যতম কারণ। আমাদের বাংলাদেশের কৃষকরা এই রোগ সম্পর্কে সচেতন নয় বিধায় ভাইরাস আক্রান্ত আলু বছরের পর বছর ব্যবহার করে। ফলে কৃষক দ্বারা উৎপাদিত আলুর ফলন অত্যন্ত কম। আলুর ভাইরাস রোগসমূহের মধ্যে আলুর পাতা মোড়ানো (PLRV), আলুর ভাইরাস ওয়াই (PYV), আলুর ভাইরাস এক্স (PVX) এবং আলুর ভাইরাস এস (PVS) এ দেশের জন্য প্রধান। এই সমস্ত ভাইরাস এককভাবে অথবা যৌথভাবে আলু গাছ আক্রমণ করে।

সাধারণভাবে ভাইরাস আক্রান্ত আলু গাছ আকারে ছোট, পাতা কোঁকড়ানো, হলুদ অথবা মোজাইকের রং হয় এবং খসখসে হয় যা সহজেই নিবিড় পর্যবেক্ষণ করলে কৃষক সুস্থ গাছ থেকে ভাইরাস আক্রান্ত আলু গাছ আলাদা করতে পারবে। ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হলে আলুর আকার ছোট হয় এবং আলুর উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।

ভাইরাসসমূহ জাব পোকা এবং স্পর্শের মাধ্যমে গাছ থেকে গাছে ছড়ায়। বাংলাদেশের আবহাওয়া আলুর এই ভাইরাস রোগসমূহের বাহক জাব পোকা (Aphids) বংশ বিস্তারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। রোগমুক্ত বীজ আলু উৎপাদনের জন্য আলুর ভাইরাস রোগসমূহ চেনা কৃষকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে প্রধান কয়েকটি ভাইরাস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সন্বন্ধে আলোচনা করা হলো।

১। আলুর পাতা মোড়ানো ভাইরাস রোগ

লক্ষণঃ

  • জাব পোকার মাধ্যমে আলুর এই ভাইরাস গাছ থেকে গাছে ছড়ায়।
  • এ রোগের প্রধান লক্ষণ হলো আক্রান্ত গাছের পাতা উর্ধ্বমুখী হয়ে উপরের দিকে গুটিয়ে যায়।
  • দ্বিতীয় পর্যায়ের আক্রমণ হলে নিচের পাতা খসখসে, খাড়া ও উপরের দিকে গুটানো হয়।
  • কখনও কখনও পাতার কিনারা শুকিয়ে সুস্থ আলুর গাছ পাতা মোড়ানো ভাইরাস রোগে আক্রান্ত গাছ যায়।
  • গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় ফলে গাছ খাটো ও খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
  • এ রোগে আক্রান্ত হলে শতকরা ৪০-৮০% উৎপাদন হ্রাস পায় এবং আলুর আকার ছোট হয়।

অনুকূল আবহাওয়া ও রোগের উৎসঃ
এ রোগটি আক্রান্ত বীজ আলু ও জাব পোকার সাহায্যে ছড়ায়।
সাধারণত জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে জাব পোকার দ্রুত বংশ বৃদ্ধির সাথে সাথে এ রোগটি দ্রুত বিস্তার লাভ করে।

২। আলুর ওয়াই ভাইরাস রোগ

লক্ষণঃ

  • পাতা মোড়ানো ভাইরাসের পরই আলুর ওয়াই ভাইরাস এর স্থান।
  • এ রোগে ক্ষতির পরিমাণ ৯৫% পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং আলুর আকার অত্যন্ত ছোট হয়।
  • এ রোগ জাব পোকা এবং স্পর্শ দুই ভাবেই বিস্তার লাভ করে।
  • আক্রান্ত গাছের পাতার শিরায় কালচে দাগ, পাতা মরে যেয়ে গাছে ঝুলে থাকা, গাছ বেটে ও কুঁকড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ।
  • আবার অনেক সময় পাতায় মৃদু মোজাইক লক্ষণও দেখা যায়।

রোগের বিস্তারঃ প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত বীজ আলু এবং পরবর্তীতে জাবপোকা, জমিতে কাজ করার কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদির স্পর্শের মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।

৩। আলুর এক্স ভাইরাস রোগ

লক্ষণঃ

  • আলুর ওয়াই ভাইরাসের পরই আলুর এক্স ভাইরাসের স্থান।
  • এ রোগে ৫-১৫% ফলন কমতে পারে। যা একটি মারাত্মক স্পর্শক রোগ।
  • গাছে এ রোগের লক্ষণ কদাচিৎ মোজাইক, হলদেভাব, ছোট পাতা, মরা বা থুবড়ে যাওয়া পাতা দেখা যায়।
  • এ রোগের ফলে গাছ ও টিউবার ছোট হয়ে যায়।
৪। আলুর এস ভাইরাস

লক্ষণঃ

  • আলুর এস ভাইরাসের লক্ষণ বোঝা বেশ কঠিন।
  • কোন কোন জাতে এ রোগে পাতার উপরে শিরা গভীর হয়ে যায়, পাতা তামাটে বর্ণ ধারণ করে ঝরে যেতে পারে, এক্স ভাইরাস আক্রান্ত আলু গাছ অনেক সময় পাতা খসখসে হয় এবং পাতায় মরা দাগ পড়ে।
  • এ ভাইরাসের আক্রমণেও আলুর আকার ছোট হয়ে যায়।

রোগের উৎস ও বিস্তারঃ আক্রান্ত বীজ আলু, জাব পোকা এবং স্পর্শের সহায্যে এ রোগের বিস্তার ঘটে।

৫। মিশ্র ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত আলু গাছের বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ

আলু গাছ যখন পরিপক্কতার দিকে যায় তখন সাধারণত একই গাছে একাধিক ভাইরাস আক্রমণ করে। মিশ্র/যৌথ ভাইরাস আক্রান্ত পাতাও কোঁকড়ানো ও খসখসে হয় এবং এতে কাল দাগ পড়ে জটিল লক্ষণ দেখা যায়। একাধিক ভাইরাস আক্রান্ত গাছেও আলু আকারে ছোট হয় এবং ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়।

লক্ষণঃ
  • আলু গাছ যখন পরিপক্কতার দিকে যায় তখন সাধারণত একই গাছে একাধিক ভাইরাস আক্রমণ এস ভাইরাসে আক্রান্ত আলু গাছ করে।
  • যৌথ ভাইরাস আক্রান্ত পাতাও কোঁকড়ানো ও খসখসে হয় এবং এতে কাল দাগ পড়ে জটিল লক্ষণ দেখা যায়।
  • একাধিক ভাইরাস আক্রান্ত গাছেও আলু আকারে ছোট হয় এবং ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
৬। আলুর ভাইরাস জনিত রোগের প্রতিকার 
  • ভাইরাসমুক্ত প্রত্যায়িত বীজ আলু ব্যবহার করতে হবে।
  • আগাম জাতের আলু চাষ যা নভেম্বরের ২৫ তারিখের (১১ কার্তিক) মধ্যে করতে হবে এবং আগাম সংগ্রহ করতে হবে।
  • জমি আগাছা মুক্ত করতে হবে। জমির আশে পাশের বিকল্প পোষক গাছ যেমনটমেটো, তামাক, মরিচ, ধুতুরা, বথুয়া, ফোসকা বেগুন ইত্যাদি থাকলে তা পরিষ্কার করতে হবে।
  • সারিতে ভালোভাবে মাটি উঁচু করে দিতে হবে।
  • আলু গজানোর সাথে সাথে (২০-২৫ দিন বয়স হতে) নিয়মিতভাবে ভাইরাস আক্রান্ত গাছ রোগিং অর্থাৎ আলু সহ তুলে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।
  • জাব পোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপিড গোত্রের কীটনাশক যেমন- এডমায়ার (০.৫ মি.লি./লিটার পানিতে) অথবা, ম্যালাথিয়ন (২ মি.লি./লিটার পানিতে) ১০-১৫ দিন পর পর জমিতে নিয়মিত ভাবে স্প্রে করতে হবে।
  • আলু গাছের বয়স ৮০ দিন হলে হামপুলিং (আলু গাছ শিকড়সহ তুলে ফেলা) করতে হবে এবং এরপর কমপক্ষে ৮-১০ দিন আলু জমিতে মাটির নিচে রেখে দিতে হবে।

আলুর পোকামাকোড় আক্রোমনের লক্ষন ও দমন ব্যবস্থ্যা

আলুর পোকামাকোড় আক্রোমনের লক্ষন ও দমন ব্যবস্থ্যা জানতে আর্টিকেলের এই অংশটুকু উপকৃত হতে পারেন। আলুর পোকামাকড়ের মধ্যে কাটুই পোকা, জাব পোকা, সুতলি পোকাই প্রধান।

১. আলুর কাটুই পোকা 

কাটুই পোকার কীড়া চারা গাছ কেটে দেয় এবং কন্দ ছিদ্র করে আলু ফসলের ক্ষতি করে থাকে। পোকার কীড়া দিনের বেলা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে। আলুর কাটা গাছ অনেক সময় কাটা গোড়ার পাশেই পড়ে থাকতে দেখা যায়।

লক্ষণঃ

  • আলু লাগানোর ২০-২৫ দিন পর চারা অবস্থা থেকেই কাটুই পোকা আক্রমন করে।
  • দিনের বেলায় এ পোকা মাটির নীচে বা আর্বজনার ভিতরে লুকিয়ে থাকে এবং রাতে চারা গাছের কান্ড মাটি বরাবর কেটে দেয় ও পাতা খেয়ে ফেলে।
  • এছাড়া বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিন পর আলু গজানোর পরও কাটুই পোকা আলুর ক্ষতি করতে পারে এমন কি আলু তোলার আগ পর্যন্ত এ পোকার আক্রমণ হতে পারে।
  • অনেক সময় কাটুই পোকা পুরো গাছ না কেটে আংশিকভাবে কাটার ফলে আলু গাছ নিস্তেজ হয়ে ঢলে পড়ে এবং শেষে মারা যায়।
  • একটি কীড়া (Larva) একই রাতে একাধিক চারা নষ্ট করতে পারে।
  • মাটির নীচে আলু বড় হলে কাটুই পোকা ছিদ্র করে খায় এবং ছিদ্রের মাধ্যমে পানি প্রবেশ করায় আলু পচে যায়।

দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • প্রতিদিন সকালে আলু ক্ষেত পরিদর্শন করে কাটা চারার চারপাশের মাটি থেকে কীড়া সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে।
  • আক্রান্ত জমিতে ডাল পুঁতে সেচ বিশেষ করে কেরোসিন যুক্ত পানি দিয়ে সেচ দিলে কাটুই পোকার কীড়া(Larva) উপরে উঠে আসে ফলে পাখিরা সহজেই খেয়ে ফেলতে পারে।
  • বিকেল বেলা আক্রামত ক্ষেতে ঘাস, শুকনা আগাছা, খড়কুটো ইত্যাদি জড়ো করে রাখলে তার নীচে কাটুই পোকা আশ্রয় গ্রহণ করে। সকাল বেলায় গাদার নীচ থেকে কাটুই পোকা সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে।
  • প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি ক্লোরোপাইরিফস মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
  • কাটুই পোকার উপদ্রব খুব বেশি না হলে কাটা আলু গাছ দেখে তার কাছাকাছি মাটি উল্টেপাল্টে কীড়া খুঁজে সংগ্রহ করে মেরে ফেলা উচিত। 
  • কাটুই পোকার উপদ্রব খুব বেশি হলে প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ৫ মিলি হারে ডারসবান ২০ ইসি মিশিয়ে গাছের গোড়া ও মাটিতে স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে হবে। আলু লাগানোর ৩০ থেকে ৪০ দিন পর স্প্রে করতে হবে।
২. আলুর জাব পোকা 

পূর্ণবয়স্ক জাব পোকা ও বাচ্চা উভয় অবস্থায় ক্ষতি করে। পোকা পাতা, কা- ও ডগা থেকে রস চুষে খায়। এ পোকা আলুর বিভিন্ন ভাইরাস রোগ ছড়ায়।

লক্ষণঃ

  • জাব পোকা পূর্ন বয়স্ক (Adult) ও বাচ্চা (Nymph) উভয়ই অবস্থাতেই আলু গাছের ক্ষতি করতে পারে।
  • জাব পোকা আক্রান্ত গাছের পাতা, কান্ড ও ডগা থেকে রস চুষে খায় এবং বিভিন্ন ভাইরাস জনিত রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে।
  • মারাত্মকভাবে আক্রান্ত গাছের পাতা কুকড়ে যায় এবং হলুদ বর্ণ ধারন করে অথবা পাতা বিভিন্ন আকৃতি ও বর্ণের হতে পারে।
  • মেঘলা ও কুয়াশাছন্ন আবহাওয়ায় জাব পোকার বংশ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • আলু ক্ষেতের আশেপাশে সোলানেসী (Solanaceae) গোত্রভুক্ত ফসল যেমন টমেটো, বেগুন, মরিচ
  • ইত্যাদি চাষ করা যাবে না এবং সুষম সার ও সময়মত সেচ দিতে হবে।
  • জাব পোকার প্রাকৃতিক শত্রু যেমন লেডিবার্ড বিটল, বোলতা ইত্যাদি সংরক্ষণ করে আক্রমণের ব্যাপকতা কমানো যায়।
  • পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে তিন থেকে চার মিলি নিমবিসিডিন মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। বালাইনাশক হিসেবে প্রতি লিটার পানিতে দুই মিলি হারে ম্যালাথিয়ন বা এসাটাফ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
  • নিরপেক্ষ ও দৈবচয়ন (Random) পদ্ধতিতে কোনাকুনিভাবে ২৫টি গাছ থেকে ১০০টি পাতা পরীক্ষা করলে যদি ২৫টি পোকা পাওয়া যায় তাহলে অনুমোদিত কীটনাশক নিদিষ্ট মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
  • পরিপক্ক গাছে অর্থাৎ আলু উত্তোলনের অল্প আগে পোকার আক্রমণ হলে আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলতে হবে।
  • প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ মিলি হারে ইমিডাক্লোরোপিড অথবা ২ মিলি হারে ডায়মেথয়েট ভালভাবে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
৩. আলুর সুতলি পোকা

পোকার কীড়া মাঠের ফসল ও গুদামজাত আলুর ক্ষতি করে থাকে। এরা আলু গাছের পাতা, বোঁটা ও কা-ে আক্রমণ করে। গুদামে সংরক্ষিত আলুতে পোকার কীড়া সুড়ঙ্গ করে খায় এবং আলু পচে নষ্ট হয়ে যায়।

লক্ষণঃ

  • সুতলী পোকা আলু গাছের পাতা, কান্ড ও কন্দ (Tuber) আক্রমণ করে।
  • কীড়া (Larva) পাতার সবুজ অংশ খেয়ে বোঁটা (Petiole) দিয়ে কান্ডে প্রবেশ করে সুড়ঙ্গ তৈরী করলে কান্ডের অগ্রভাগ মরে যায় এবং ভেঙ্গে পড়ে।
  • মৌসুম শেষে পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী মথ গাছ থেকে ক্ষেতের উন্মুক্ত আলুর চোখের কাচাকাছি সাদা বা বাদামী রংয়ের দাগ তৈরী করে।
  • সুতলী পোকার আক্রমণ ফসল উত্তোলন থেকে সংরক্ষণ পর্যন্ত হতে পারে।

দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • সুতলী পোকার আক্রমণ রোধ করতে প্রতি মৌসুমে অমত্মত দুবার ভেলীতে মাটি তুলে দিতে হবে এবং
  • জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে যাতে মাটি শুকিয়ে না যায়।
  • ক্ষেত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। আলু সংরক্ষণের আগে আক্রান্ত আলু বেছে ফেলা। বাড়িতে সংরক্ষিত আলু শুকনা বালি, ছাই, তুষ অথবা কাঠের গুঁড়ার একটি পাতলা স্তর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  • আলু সংগ্রহের পর গাদা করে ক্ষেতে একরাতও ফেলে রাখা উচিৎ নয় কারণ তাতে সুতলী পোকা ডিম পাড়ে। যদি রাখতেই হয় তবে পলিথিন, কাপড় বা শুকনো খড় দিয়ে ভালভাবে ঢেকে রাখতে হবে।
  • একর প্রতি ২০টি সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে এ পোকার মথ ধ্বংস করা যায়।
  • গুদামে ফেনথয়েট অথবা কার্বারিল অথবা ভিটাব্রিল ৭ কেজি/টন ছিটিয়ে বীজ আলুর উপর এ পোকার আক্রমন রহিত করা যায়।

আলুর রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে শেষকথা

কুয়াশা ও মেঘোচ্ছন্ন আবহাওয়া ফসলের রোগ বিস্তারের জন্য অনুকুল পরিবেশ। এমতাবস্থায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় আলু ক্ষেত। আলু বাংলাদেশের একটি অর্থকারী ফসল। আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে আলু চাষ করা হয়। বর্তমানে আমাদের দেশের চাষীরা আলু চাষ করে ব্যপকহারে লাভবান হচ্ছে। কিন্তু এই আলু চাষ করার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে আলু বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়। যদি আলু গাছ বা আলুকে এই সমস্ত রোগবালাই থেকে দূরে না রাখা যায় তাহলে আলুর কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যাবে না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url