ব্লকচেইন টেকনোলজি কি ব্লকচেইন কিভাবে কাজ করে


ব্লকচেইন টেকনোলজি কি ব্লকচেইন কিভাবে কাজ করে এটাই হলো আজকের আলোচনার মূল বিষয়। ব্লকচেইন টেকনোলজিটি অনেক আগে থেকেই আছে এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহারও হয়ে আসছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের এই টেকনোলজিটির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় মূলত ২০০৯ সালে বিটকয়েন নামের ক্রিপটোকারেন্সিটি উদ্ভাবন হওয়ার পরে।
ব্লকচেইন-টেকনোলজি
টেকনিক্যালি বলতে হলে ব্লকচেইন হচ্ছে একটি ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার যেটি সকলের জন্য উন্মুক্ত। ব্লকচেইনের ব্লকগুলোর মধ্যে যখন একটি ডেটা ইন্টার করা হয়, তখন ওই ডেটাটিকে ডিলিট করা বা ডেটাটির কোন ধরনের পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। ব্লকচেইন টেকনোলজি কি ব্লকচেইন কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

পেইজ সূচিপত্রঃ ব্লকচেইন টেকনোলজি কি ব্লকচেইন কিভাবে কাজ করে

ব্লকচেইন টেকনোলজি কি

ব্লকচেইন টেকনোলজি কি ব্লকচেইন একটি অত্যাধুনিক তথ্য ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি যেখানে তথ্য সমুহ একাধিক ব্লকে সংরক্ষিত থাকে। আবার ব্লকগুলো একটির সাথে আরেকটি চেইন আকারে যুক্ত থাকে। মূলত এই দুইয়ের সমন্বয়কে ব্লক চেইন বলে। ব্লক চেইন তথ্য আদান প্রদানের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। তাই ডিজিটাল কোনো বস্তু বা তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে ব্লক চেইনের ব্যবহার লক্ষনীয়।
ব্লকচেইন = ব্লক + চেইন এই সিস্টেমে প্রতিটি ব্লক এক একটি একাউন্ট যার প্রতিটি লেনদেন ব্যবস্থাপনা চেইন আকারে পরিচালিত হয়। প্রত্যেকটি ব্লক হ্যাশিং (Hashing) এর মাধ্যমে উচ্চ মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যার ফলে কেউই এখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

ব্লকচেইন (Blockchain) একটি ইংরেজি শব্দ, যার বাংলা অর্থ হলো ‘ব্লকের তৈরি শিকল’। এই পদ্ধতি/ প্রযুক্তি মূলত একটি লেনদেনের প্রযুক্তি যেখানে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে অর্থ সরাসরি স্থানান্তর করা যায়। এই ব্লকচেইন প্রযুক্তি সবচাইতে গতিশীল এবং সুরক্ষিত একটি প্রযুক্তি, যেখানে কেউ চাইলে লেনদেনে কোনো গড়মিল তৈরি করতে পারবে না।

যেহেতু ব্লকচেইন এর যাত্রা সফলভাবে শুরু হয়েছে বিটকয়েন ব্যবহারের মাধ্যমে, তাই সহজেই ব্লকচেইনকে বুঝতে হলে বিটকয়েন কিভাবে ট্রান্জেকশন হয় তা বুঝা গেলে বিষয়টি সহজে বুঝা যায়। কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করে না। ব্লকচেইন প্রযুক্তি সম্পূর্ণ ডিসেন্ট্রালাইজড সিস্টেম, এককভাবে কেউ নিয়ন্ত্রণ করে না, এই চেইনের মধ্যে সকলে মিলে এর নিয়ন্ত্রক।

এই প্রযুক্তি একেবারেই অপরিবর্তনীয়। এই প্রযুক্তিতের একটি লেনদেন হলে ব্লকচেইনে একটা ব্লক যোগ হয় এবং সেটা আর পরিবর্তন করা যায় না। ব্লকগুলো পাশাপাশি তাদের সৃষ্টির ক্রমানুসারে বসে। প্রত্যেকটা ব্লক তার আগে কোন ব্লক আছে সেটা জানে। এভাবে একটা ব্লকের সঙ্গে আরেকটা কানেক্টেড। কাজেই একটা বা শ-খানেক সার্ভার বা কম্পিউটার একসঙ্গে নষ্ট হয়ে গেলেও ব্লকচেইনের কিছুই হবে না।

ব্লকচেইন (Blockchain) প্রযুক্তি হচ্ছে তথ্য সংরক্ষণ করার একটি নিরাপদ এবং উন্মুক্ত পদ্ধতি। এ প্রযুক্তিতে তথ্য বিভিন্ন ব্লকে একটির পর একটি চেইন আকারে সংরক্ষণ করা হয়। এটি একটি অপরিবর্তনযোগ্য ডিজিটাল লেনদেন যা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক লেনদেনের জন্যই প্রযোজ্য নয়, এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেকোনো কার্য-পরিচালনা রেকর্ড করা যেতে পারে।

ব্লকচেইন (Blockchain) এমন একটি বণ্টনযোগ্য ডাটাবেজ যাতে অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলোর মধ্যকার সব লেনদেনের নথিবদ্ধ করে রাখা যায়। প্রতিটি লেনদেন আবার সিস্টেমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা যাচাই করা হয়।

ব্লকচেইন টেকনোলজি কিভাবে কাজ করে

ব্লকচেইন টেকনোলজি কাজ করে একটি বিতরণকৃত লেজারের (distributed ledger) মাধ্যমে, যেখানে লেনদেন বা তথ্যের রেকর্ডগুলো “ব্লক” আকারে সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিটি ব্লক একটি নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন হওয়া লেনদেনের তথ্য ধারণ করে এবং প্রতিটি ব্লক পূর্ববর্তী ব্লকের সাথে সংযুক্ত থাকে, ফলে একটি চেইনের মতো তৈরি হয় এটাই ব্লকচেইন। যখন কেউ একটি লেনদেন করে, তা নেটওয়ার্কের সকল কম্পিউটারে (নোড) ব্রডকাস্ট হয়।

নোডগুলো লেনদেনটি যাচাই করে এবং তা একটি নতুন ব্লকে গঠন করে। নতুন ব্লকটি চেইনের সাথে যুক্ত হয় এবং একবার যোগ হলে তা পরিবর্তন করা যায় না। লেনদেনটি নিশ্চিত হলে তা ব্লকচেইনে স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত হয়, এবং এই লেজারটি প্রতিটি নোডে আপডেট হয়। এই প্রক্রিয়াটি লেনদেনের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে, কারণ ব্লকচেইনে সংরক্ষিত তথ্য পরিবর্তন বা মুছে ফেলা সম্ভব নয়। এটি তিনটি প্রধান উপাদানের সাথে কাজ করে:

  • ক্রিপ্টোগ্রাফিক কী
  • একটি শেয়ার্ড লেজার সহ একটি পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক
  • ডেটা সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটিং সংস্থান।

ক্রিপ্টোগ্রাফিক কীঃ ব্লকচেইনে লেনদেন রক্ষা করতে একটি বিশেষ কী ব্যবহার করে। একটি ব্যক্তিগত কী যা গোপনীয়তা রক্ষা করে এবং অপরটি সর্বজনীন কী যেখানে সকলে তথ্য সর্ম্পকে ধারণা নিতে পারে এই কীগুলি একটি বিশেষ ডিজিটাল চিহ্ন তৈরি করতে একসঙ্গে কাজ করে যা লেনদেনগুলিকে আরো নিরাপদ এবং বাস্তব রাখে।

পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করেঃ পিয়ার-টু-পিয়ার এর মাধ্যমে প্রতিটি ব্লকে ডাটা প্রদান ও ‍ডিজাইন করা হয় যা একে অন্যান্য লেজার এবং ডাটাবেস থেকে আলাদা করে। যার ফলে কোনো ব্লকে একবার ডাটা রের্কড করা হলে তা আর পরিবর্তন করা কষ্টদায়ক হয়ে পরে।

লেনদেন সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটিং সিস্টেমঃ লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণ করতে কম্পিউটিং সিস্টেম বা “নোড” এর মাধ্যমে একটি নতুন ব্লক তৈরি করে। নোডগুলো মিলে এই ব্লকটি সঠিক কিনা তা যাচাই করে। এর পর ব্লকটি চেইনে যুক্ত হয়। এই সিস্টেম মাধ্যমে প্রতিটি লেনদেন সম্পন্ন করে এবং তা রেকর্ড করে রাখা হয় যাতে নিশ্চিত করা যায় যে সমস্ত নেটওয়ার্কে ডেটা সঠিকভাবে এবং নিরাপদে সংরক্ষিত করা হয়েছে।

ব্লকচেইন টেকনোলজির ইতিহাস

ব্লকচেইন টেকনোলজির সর্বপ্রথম স্টুয়ার্ট হ্যাবার এবং ডব্লিউ স্কট স্টর্নেটা ধারনা দিয়েছিলেন। ব্লকচেইন প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল যাতে কেউ কোনো ডকুমেন্ট পরিবর্তন করতে না পারে। কিন্তু, তখন ব্লকচেইন প্রযুক্তি ততটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। ক্রিপ্টোগ্রাফিক টেকনোলজি ব্যবহার করে (Blockchain)নিয়ে সর্বপ্রথম কাজ করা হয় ১৯৯১ সালের দিকে। যদিও তা সফলতার মুখ দেখতে না পাওয়ার ফলে তার ব্যবহার বিস্তার লাভ করতে পারেনি।

এর প্রকৃত ব্যবহারকে কাজে লাগান ২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো নামে এক পরিচয় বিহীন ব্যক্তি। যিনি ক্রিপ্টোকারেন্সি তথা বিটকয়েনের (Bitcoin) লেনদেনের জন্য ব্লকচেইন টেকনোলজির (Blockchain Technology) ব্যবহার শুরু করেন। বর্তমানে যার ফলে এর ব্যবহার সম্পর্কে আজ বিশ্বব্যাপি সচেতনতা বাড়তেই আছে। যেহেতু এর যাত্রা সফলভাবে শুরু হয়েছে বিটকয়েন ব্যবহারের মাধ্যমে, তাই সহজেই এই টেকনোলজি বুঝতে হলে বিটকয়েন (Bitcoin) কীভাবে ট্রান্জেকশন হয় তা দেখা গেলে বিষয়টি সহজে বুঝা যায়।

ব্লকচেইন টেকনোলজির জনপ্রিয়তা

ব্লকচেইন টেকনোলজির জনপ্রিয়তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, এর স্বচ্ছতা এবং অপরিবর্তনীয়তা। এটি একটি বিকেন্দ্রীভূত পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক সিস্টেম যার দায়িত্বে কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তি নেই যে অন্যান্য কেন্দ্রীভূত, ঐতিহ্যবাহী লেনদেনের মতো লেনদেন পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণ করবে। এই প্রযুক্তি যারা তৈরি করেছে এবং যারা ব্যবহার করছে তাদের পারস্পরিক বোঝাপড়ার উপর কাজ করে। এটাই ব্লকচেইন প্রযুক্তিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে।

পুরনো পদ্ধতিতে একজনের সঙ্গে অন্যজনের লেনদেন প্রক্রিয়া চালাতে সর্বদা মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন হয়। এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হল, অর্থের জন্য ব্যাঙ্ক। যখন কেউ তাঁর বন্ধু বা পরিবারের কাছে টাকা পাঠায় তখন ব্যাঙ্ক গোটা প্রক্রিয়াটার সঙ্গে জড়িত থাকে। তারা সমস্ত রেকর্ড নথিভুক্ত করে, নিরীক্ষণ করে এবং সহজেই এতে হস্তক্ষেপও করতে পারে। এটা গোটা প্রক্রিয়াটাকে দুর্বল করে তোলে।
 
যাইহোক, ব্লকচেইন টেকনোলজিতে মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন নেই কারণ এটা এন্ড টু এন্ড প্রযুক্তি। তাই এটা এমনই ডিজিটাল লেজার যার রেকর্ডগুলো সহজে ট্যাম্পার করা বা মুছে ফেলা যায় না। শুধু তাই নয়, এটা লেনদেনকে দ্রুত এবং নিরাপদ করে তোলে। এই কারণেই বিটকয়েনের মতো ব্লকচেইন পণ্য ফিনান্স, সাপ্লাই চেইন, হেলথকেয়ার, উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ব্লকচেইন টেকনোলজি কত প্রকার ও কি কি

ব্লকচেইন টেকনোলজি হলো একটি অবিচ্ছিন্ন, ক্রমবর্ধমান তথ্যের রেকর্ড বা ডেটাবেস, যেখানে তথ্যগুলোকে ছোট ছোট ব্লকের মধ্যে ভাগ করে রাখা হয়। এই ব্লকগুলো একের পর এক যুক্ত হয়ে একটি শৃঙ্খল তৈরি করে, যাকে ব্লকচেইন বলা হয়। প্রতিটি ব্লকের মধ্যে আগের ব্লকের একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশ ভ্যালু থাকে, যা একটি অনন্য আইডি যা ব্লকের সমস্ত তথ্যের উপর নির্ভর করে।

এই হ্যাশ ভ্যালুটি একটি ডিজিটাল আঙুলের ছাপের মতো কাজ করে এবং এটি নিশ্চিত করে যে ব্লকের তথ্য পরিবর্তন করা যাবে না। বর্তমানে চার ধরনের ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক রয়েছে, পাবলিক ব্লকচেইন, প্রাইভেট ব্লকচেইন, কনসোর্টিয়াম ব্লকচেইন এবং হাইব্রিড ব্লকচেইন। নিচে ব্লকচেইন টেকনোলজির প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

১। পাবলিক ব্লকচেইন (Public Blockchain): এটি একটি উন্মুক্ত ব্লকচেইন, যেখানে যেকোনো ব্যক্তি অংশ নিতে পারে, লেনদেন করতে পারে এবং নেটওয়ার্কের রেকর্ড দেখতে পারে। উদাহরণ: বিটকয়েন, ইথেরিয়াম।

২। প্রাইভেট ব্লকচেইন (Private Blockchain): এই ধরনের ব্লকচেইনে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তিরা বা প্রতিষ্ঠানেরা অংশ নিতে পারে এবং লেনদেন করতে পারে। এটি একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা বা একটি নির্দিষ্ট গ্রুপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। উদাহরণ: বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক।

৩। কনসোর্টিয়াম ব্লকচেইন (Consortium Blockchain): এটি প্রাইভেট এবং পাবলিক ব্লকচেইনের মিশ্রণ। এখানে একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের মধ্যে ব্লকচেইনের নিয়ন্ত্রণ ভাগাভাগি করা হয়। উদাহরণ: ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যবহৃত ব্লকচেইন।

৪। হাইব্রিড ব্লকচেইন (Hybrid Blockchain): এই ধরনের ব্লকচেইন পাবলিক এবং প্রাইভেট ব্লকচেইনের বৈশিষ্ট্য উভয়কেই ধারণ করে। কিছু অংশ পাবলিক হতে পারে এবং কিছু অংশ প্রাইভেট। উভয় ধরনের ব্লকচেইনের সুবিধা একসাথে পাওয়া যায়।

ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্ট কি

ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্ট হলো ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অ্যাপ্লিকেশন, প্ল্যাটফর্ম, বা সমাধান তৈরি করার প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে ডেভেলপাররা ব্লকচেইনের নিরাপত্তা, বিকেন্দ্রীকরণ, এবং স্বচ্ছতার সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের ডিস্ট্রিবিউটেড অ্যাপ্লিকেশন (dApps), স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট, এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করে। ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্টের ধাপগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১। প্রয়োজন নির্ধারণঃ প্রথমে প্রয়োজন অনুযায়ী, কি ধরনের ব্লকচেইন প্রজেক্ট তৈরি করা হবে তা নির্ধারণ করতে হয় (পাবলিক, প্রাইভেট, বা কনসোর্টিয়াম ব্লকচেইন)।

৩। প্ল্যাটফর্ম নির্বাচনঃ ইথেরিয়াম, হাইপারলেজার, বা অন্যান্য ব্লকচেইন প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করা হয়, যা ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয়।

৪। আর্কিটেকচার ডিজাইনঃ ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের আর্কিটেকচার ডিজাইন করা হয়, যেখানে নোডের বিন্যাস, ব্লকের আকার, এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি অ্যালগরিদম নির্ধারণ করা হয়।

৫। ডেভেলপমেন্টঃ স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট এবং ডিস্ট্রিবিউটেড অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়। প্রোগ্রামিং ভাষা হিসেবে Solidity (ইথেরিয়ামের জন্য), Go, Rust, Python প্রভৃতি ভাষা ব্যবহার করা হয়।

৬। টেস্টিংঃ তৈরি করা ব্লকচেইন বা dApps বিভিন্ন টেস্টিং পরিবেশে পরীক্ষা করা হয়, যাতে বাগ এবং ত্রুটি দূর করা যায়।

৭। ডেপ্লয়মেন্টঃ সফল টেস্টিংয়ের পর প্রজেক্টটি লাইভ নেটওয়ার্কে চালু করা হয় এবং ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

৮। মেইনটেনেন্স ও আপডেটঃ ডেপ্লয়মেন্টের পর ব্লকচেইন সিস্টেমের মেইনটেনেন্স, আপডেট, এবং নতুন ফিচার সংযোজন করা হয়। এভাবে ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্ট সম্পন্ন হয়, যা নিরাপদ এবং স্বচ্ছ ডিজিটাল সমাধান তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ব্লকচেইনে টাকা কিভাবে চলে

ব্লকচেইনে টাকা বা ডিজিটাল মুদ্রা (যেমন বিটকয়েন) লেনদেন হয় একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যেখানে লেনদেনগুলো সুরক্ষিতভাবে এবং বিকেন্দ্রীকৃতভাবে সম্পন্ন হয়।ব্লকচেইনে টাকার লেনদেনের প্রক্রিয়াগুলো হলো-

ওয়ালেট তৈরিঃ প্রথমে একটি ক্রিপ্টো ওয়ালেট তৈরি করতে হয়, যা একটি ডিজিটাল ঠিকানা (Public Key) এবং একটি প্রাইভেট কি (Private Key) দিয়ে সুরক্ষিত থাকে। এই ওয়ালেটের মাধ্যমে আপনি টাকা পাঠাতে এবং গ্রহণ করতে পারবেন।

লেনদেনের প্রক্রিয়াঃ যখন আপনি অন্য কাউকে টাকা পাঠাতে চান, তখন আপনার ওয়ালেট থেকে তার ওয়ালেটের ঠিকানায় একটি লেনদেন শুরু করেন। এই লেনদেনটি একটি ব্লকে রেকর্ড হয়।

মাইনিংঃ এই লেনদেনটি ব্লকচেইনে যোগ করার আগে, এটি নেটওয়ার্কের মাইনারদের দ্বারা যাচাই করা হয়। মাইনাররা কঠিন গণিত সমস্যার সমাধান করে লেনদেনটি যাচাই করে এবং ব্লকে যোগ করে।

ব্লকের সংযোজনঃ যাচাইকৃত ব্লকটি ব্লকচেইনে চেইনের সাথে যুক্ত হয়। এটি সম্পন্ন হলে, লেনদেনটি স্থায়ীভাবে ব্লকচেইনে রেকর্ড হয়ে যায় এবং পরিবর্তন করা যায় না।

লেনদেনের সমাপ্তিঃ যখন ব্লকটি চেইনে যুক্ত হয়, তখন আপনার পাঠানো টাকা প্রাপকের ওয়ালেটে জমা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়া কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে সম্পন্ন হতে পারে, যা ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের নির্দিষ্ট গতি এবং মাইনিং প্রসেসের উপর নির্ভর করে। এভাবে ব্লকচেইনে টাকা বা ডিজিটাল মুদ্রা লেনদেন সম্পন্ন হয়, যা সুরক্ষিত এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত।

ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড কি

ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড একটি প্রতিযোগিতা যা ব্লকচেইন প্রযুক্তি, ক্রিপ্টোগ্রাফি, এবং স্মার্ট কন্ট্রাক্টস সহ বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিষয়ের উপর কেন্দ্রিত। এই অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীরা তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা, উদ্ভাবনী ধারণা, এবং সমাধান তৈরির ক্ষমতা প্রদর্শন করে। সাধারণত, ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ বা সমস্যার সমাধান করতে হয়, 

যেমন: নতুন ব্লকচেইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা বা বিদ্যমান প্ল্যাটফর্মে নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করা। নিরাপত্তা প্রোটোকল তৈরি বা উন্নত করা। স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ডিজাইন করা যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চুক্তি পূরণ করে। এই প্রতিযোগিতার লক্ষ্য হলো ব্লকচেইন প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং নতুন ধারণার উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা। এটি প্রযুক্তি প্রেমীদের, ডেভেলপারদের, এবং উদ্ভাবকদের জন্য একটি সুযোগ যেখানে তারা তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে এবং সারা বিশ্বের সঙ্গে তাদের কাজ শেয়ার করতে পারে।

ব্লকচেইন টেকনোলজির সুবিধা ও অসুবিধা

ব্লকচেইন এমন একটি টেকনোলজি যা খুবই নিরাপদ এবং দ্রুতগামী। নিরাপদ এই কারনে যে, আপনি ব্লকচেইন ব্যবহার করে যে ট্রান্জেকশন করবেন তা হ্যাক করে এর মাঝে গড়মিল তৈরি করা অসম্ভব। মনে করেন আপনি ব্লকচেইন ব্যবহার করে কাউকে কোন পেমেন্ট করলেন, তখন সাথে সাথেই আপনার এই তথ্যটি এই সিষ্টেমের সাথে জড়িত সকল কম্পিউটারে পৌছে যায়।

আর তথ্যটিকে ভ্যলিডিটি দেওয়ার জন্য আপনার ট্রান্জেকশনের সাথে পুর্বের ট্রান্জেকশনের হ্যাস যোগ হয়ে যাবে। এইভাবে আপনার ট্রান্জেকশনের হ্যাসটি পরবর্তী ট্রান্জেকশনের হ্যাসের পূর্ব হ্যাস হিসেবে লিংক হয়ে যাবে। এই ভাবে চেইন সিষ্টেম চলতেই থাকে। যদি কেউ ব্লকচেইন টেকনোলজিকে হ্যাক করে এর তথ্যের মাঝে কোন গরমিল করতে চাই তবে তা করা অসম্ভব।

কারন তা করতে হলে, তাকে একই সময়ে হাজার হাজার কম্পিউটার হ্যাক করতে হবে। কারন আগেই বলেছি প্রতিটি ট্রান্জেকশন তৈরি হওয়া মাত্রই তার তথ্য হাজার হাজার কম্পিউটারে পৌছে যায়। আর ততোধিক ট্রান্জেকশন মিলে একটি ব্লক তৈরি হতে প্রায় সময় লাগে কমবেশি ১০ মিনিট মত। আর তাই একটি ব্লকের সম্পূর্ণ তথ্য পরিবর্তন করতে; হ্যাকারের হাতে ১০ মিনিটের কম সময় থাকবে। আর এই সময়েরে মধ্যে হাজার হাজার কম্পিউটার হ্যাক করা কাল্পনিক।

ব্লকচেইন টেকনোলজির সুবিধাঃ

  • নিরাপত্তাঃ ব্লকচেইনে তথ্য ক্রিপ্টোগ্রাফিক্যালি সুরক্ষিত থাকে, যা হ্যাকিং বা ডেটা ম্যানিপুলেশন কঠিন করে তোলে।
  • বিকেন্দ্রীকরণঃ এটি একটি কেন্দ্রীয় অথরিটি ছাড়া কাজ করে, যা সিস্টেমের রেজিলিয়েন্স বাড়ায় এবং একক পয়েন্ট অফ ফেইলিউর সরিয়ে দেয়।
  • স্বচ্ছতাঃ ব্লকচেইনে লেনদেনের সকল তথ্য পাবলিকলি উপলব্ধ থাকে (পাবলিক ব্লকচেইনে), যা ট্রান্সপারেন্সি নিশ্চিত করে।
  • অপরিবর্তনীয়তাঃ একবার লেনদেন ব্লকচেইনে যুক্ত হলে, তা পরিবর্তন বা মুছে ফেলা যায় না, যা ডেটার অখণ্ডতা নিশ্চিত করে।
  • দ্রুত লেনদেনঃ ব্লকচেইন প্রযুক্তি লেনদেন প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করতে পারে, বিশেষ করে আন্তঃদেশীয় লেনদেনের ক্ষেত্রে।

ব্লকচেইন টেকনোলজির অসুবিধাঃ

  • বিভিন্নতাঃ ব্লকচেইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এবং প্রোটোকল থাকায়, এর ব্যবহার এবং টেকনোলজি কিছুটা বিভ্রান্তিকর হতে পারে।
  • বিদ্যুৎ খরচঃ বিশেষ করে বিটকয়েন মাইনিংয়ের ক্ষেত্রে, ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যাপক পরিমাণে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
  • স্কেলেবিলিটিঃ ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের পরিমাণ বাড়ালে ট্রান্সাকশনের গতি কমে যেতে পারে এবং লেনদেনের ফি বাড়তে পারে।
  • আইনি ও নিয়ন্ত্রক চ্যালেঞ্জঃ বিভিন্ন দেশের আইনি ও নিয়ন্ত্রক ফ্রেমওয়ার্কের অভাব ব্লকচেইন প্রযুক্তির বিস্তার এবং গ্রহণযোগ্যতা প্রভাবিত করতে পারে।
  • ডেটা স্টোরেজঃ ব্লকচেইনে সব লেনদেনের রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়, যা ডেটা স্টোরেজের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

ব্লকচেইন টেকনোলজি সম্পর্কে শেষকথা

ব্লকচেইন প্রযুক্তি আধুনিক ডিজিটাল যুগে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন, যা নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা এবং বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে লেনদেনের প্রক্রিয়া উন্নত করেছে। এর মজবুত ক্রিপ্টোগ্রাফি এবং অপরিবর্তনীয়তার কারণে এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন ফিনান্স, লজিস্টিক্স, এবং ডাটা ম্যানেজমেন্টে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। যদিও ব্লকচেইনের কিছু অসুবিধা যেমন বিদ্যুৎ খরচ, স্কেলেবিলিটি সমস্যা, এবং আইনি চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

ব্লকচেইন টেকনোলজি কি ব্লকচেইন কিভাবে কাজ করে এ সম্পর্কে আশা করছি বুঝতে পেরেছেন। এটি প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং সমস্যার সমাধানের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। ভবিষ্যতে ব্লকচেইন প্রযুক্তির আরো উন্নয়ন এবং নির্ভরযোগ্যতার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করা সম্ভব হতে পারে, যা এটি আরও বিস্তৃতভাবে গ্রহণযোগ্য এবং কার্যকরী করে তুলবে।

ব্লকচেইন হ্যাক করা সত্যিই অসম্ভব যা উপরের লেখা থেকে হয়তো স্পষ্ট ধারনা পেয়েছেন। এছাড়া খুব কম সময়ের মাধ্যে আপনি আপনার লেনদেন সম্পনন করতে পারছেন। ব্লকচেইনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ক্রিপ্টো কারেন্সির সফলতা দেখে অনেক ধরনের ব্যাংক ব্লকচেইনের মাধ্যমে লেনদেনের পরিকল্পনা নিয়েছে। কিছু কিছু ব্যাংক পরিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ, মানুষ যে কর্মই করুকনা কেন টাকা পয়সার সিকিউরিটি না থাকলে উপার্জন করে শান্তিতে ঘুমানো কঠিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url