খালি পায়ে মাটিতে হাটার ২০টি উপকারিতা
খালি পায়ে মাটিতে হাঁটার উপকারিতা রয়েছে অনেক। আপনি যখন খালি পায়ে মাটিতে হাটেন
তখন আপনার পায়ের পাতার স্নায়ুকোষ আপনার মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়। এতে আপনার
শরীরের গতিবিধির সামঞ্জস্য ও ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। হাঁটার মতো সহজ
ব্যায়াম আপনি আর একটাও পাবেন না।
মাটিতে খালি পায়ে হাঁটলে প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে মস্তিষ্ক শিথিল, শান্ত এবং নিরাপদ বোধ করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। দেহে পুষ্টি জোগায়। ঘাসের ওপর খালি পায়ে হাঁটলে পায়ের নিচের নার্ভগুলো সক্রিয় হয়ে শরীরে ইতিবাচক শক্তি তৈরি করে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। জেনে নিন খালি পায়ে মাটিতে হাটার উপকারিতা সম্পর্কে।
পেইজ সূচিপত্রঃ খালি পায়ে মাটিতে হাটার উপকারিতা জেনে নিন
- খালি পায়ে মাটিতে হাটার উপকারিতা
- সকালে খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটার উপকারিতা
- ওজন কমাতে হাঁটার উপকারিতা
- নিয়মিত হাটার উপকারিতা
- দৈনিক কতো কলোমিটার হাটা উচিৎ
- খাওয়ার পর হাটার উপকারিতা
- খাওয়ার কতক্ষণ পর হাঁটা উচিত
- সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর
- হাটার সঠিক নিয়ম
- হাটার সঠিক সময়
- খালি পায়ে মাটিতে হাটার উপকারিতা সম্পর্কে শেষকথা
খালি পায়ে মাটিতে হাটার উপকারিতা
খালি পায়ে মাটিতে হাটার উপকারিতা অনেকেরই জানা এটা নতুন করে বলার কিছু নয়। সকালে খালি পায়ে মাটিতে হাটলে শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, মানসিক চাপ কমে, হাড়ের নানা ব্যথা থেকে শুরু করে অস্থির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, ডায়াবেটিসে ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা রাখে। খালি পায়ে হাঁটলে রক্তচাপ কমে পায়ের নিচের স্নায়ুগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। জেনে নিন খালি পায়ে মাটিতে হাটার ২০ উপকারিতা কি কিঃ
দেহের ভারসাম্যের উন্নতি ঘটেঃ খালি পায়ে মটিতে হাটলে পায়ের পেশি
শক্তিশালি হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহের ভারসাম্য বজায় রাখাটা খুব চাপ হয়ে
দাঁড়ায়। এমনকী অনেকের ক্ষেত্রেই দেহের ভারসাম্য বিগড়ে যেতে পারে। তবে ঘাবড়ে
গিয়ে লাভ নেই। বরং এই সমস্যার সহজ সমাধান হলো খালি পায়ে হাঁটা। আপনি খালি পায়ে
হাঁটতে পারলেই অনায়াসে ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারবেন। হোঁচট খাওয়া, পড়ে যাওয়ার
মতো দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কমবে। তাই এখন থেকেই জুতো খুলে মাঠে হাঁটা চালু করে
দিন।পায়ের পেশি শক্তিশালি হওয়ার কারণে দেহের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টা বৃদ্ধি
পায়। পাশাপাশি দেহভঙ্গির উন্নতি ঘটে।
শরীরে গতি আনেঃ নিয়মিত প্রতিদিন খালি পায়ে হাটতে পারলে মানবদেহের
চালিকার অন্যতম শক্তি ইলেকট্রনের বিস্তার ও কর্মক্ষমতা বাড়ে। এই ইলেকট্রনগুলো
পায়ের তলায় নির্দিষ্ট আকু পয়েন্ট এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ
করে। আমাদের মানবদেহের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো ইলেকট্রন দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে,
যা শরীরে জন্মানো ফ্রি রেডিক্যাল ধ্বংস করে। শরীরের অভ্যন্তরে নানা কারণে
ইনফ্লামেশন তৈরি হয়, সেটিকে রোধ করতে আমাদের শরীরে ইলেকট্রনের উপস্থিতি খুবই
জরুরি, যা বিভিন্ন প্রদাহের সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে।
মানসিক শক্তি বাড়েঃ আধুনিক জীবনযাপনে হতাশা একটি বড় দুর্যোগ, সেই থেকে
বাঁচতে খালি পায়ে হাঁটলে উদ্বেগ এবং হতাশা দূর হয়। আমাদের শরীরের প্রায় ৭০
শতাংশই পানি দিয়ে গঠিত। তাই মাটির সঙ্গে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের এই
সম্পর্ক যত নিবিড় হবে, ততই শরীরের নানাবিধ তরলের উপাদানের ভারসাম্য ঠিক থাকবে।
খাদ্য থেকে আমরা যেমন ফাইট্রোনিউট্রেন্ট নিয়ে থাকি, তেমনি মাটি থেকে ইলেকট্রন
মানসিক শক্তিতে প্রভাব বিস্তার করে মানসিক অবসাদ কমায়। সেই সঙ্গে ইনসোমেনিয়া
প্রতিরোধ করে। যারা অনিদ্রায় ভুগে থাকেন, তারা নিয়মিত কিছু সময়ের জন্য খালি
পায়ে হাঁটলে উপকার পাবেন।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়ঃ খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি করলে মস্তিষ্কের
কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্যে করে। বয়সজনিত কারণে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, ভুল
লাইফস্টাইলের কারণে মেমোরি লস হওয়াসহ নানা কারণে স্মৃতিশক্তির ঘাটতিজনিত সমস্যা
থাকলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে থাকা নিউরনগুলো সকালে খালি পায়ে হাঁটার
ফলে সক্রিয় হয়ে ওঠে । নিউরনগুলো সক্রিয় থাকলে স্বাভাবিকভাবেই বুদ্ধিও বাড়ে,
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা
রাখে।
পায়ের পেশির জোর বাড়েঃ নরম জায়গায় খালি পায়ে হাঁটলে, পায়ের নানান ধরনের
পেশির বিভিন্ন উপকার হয়। পায়ের প্রধান পেশিসহ, গোড়ালির গাঁট, গোড়ালি থেকে পায়ের
আঙ্গুল পর্যন্ত পেশিগুচ্ছোগুলো শক্তিশালি হয়। জুতা পরে হাঁটলে পায়ের পেশির ওপর
তেমন একটা চাপ পড়ে না। তবে আপনি খালি পায়ে হাঁটলে পা ও কোমরের পেশির ওপর চাপ
বাড়ে। ফলে এই অংশের পেশির জোর বাড়ে।
তাই পায়ের ও কোমরের পেশি শক্ত করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই দিনে অন্তত কিছুটা সময়
খালি পায়ে হাঁটতে হবে। বয়স বাড়ার সঙ্গে পায়ের পেশি দুর্বল হওয়ার মাত্রা বৃদ্ধি
পায়। ফলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তবে খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস থেকে পায়ের
পেশিগুলো শক্তিশালি হয়। যে কারণে বয়স বাড়লেও পা দুর্বল হওয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পায়
না।
ব্যথা কমাতে সাহায্য করেঃ খালি পায়ে হাঁটলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা
কমাতে সাহায্য করে। এমনকি শরীরের তাপ, ফোলাভাব কমাতেও সাহায্য করে। আমাদের
শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ চাপ নিয়ে থাকি, সেটি হচ্ছে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির
প্রভাব আমাদের শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। যদিও আমাদের
মাঝে এটি নিয়ে বেশি আলোচনা হয় না। খালি পায়ে হাঁটলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির
প্রভাবে শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে।
শরীরের ভেতরে ভারসাম্য ঠিক থাকে, নানা ধরনের ব্যথা নিয়ে যারা জীবন যাপন
করছেন, তারা নিয়মিত খালি পায়ে মাটিতে হাঁটতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে
শরীরের অভ্যন্তরে আর্থিংয়ের দ্বারা ব্যথা কমানোর হরমোনগুলো সচল হয়ে ওঠে। ফলে
নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে, শরীরের ব্যথা কমে যায়। কিছু
গবেষণায় দেখা যায়, খালি পায়ে হাঁটলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
পেশি ও হাড় মজবুত করতে খালি পায়ে হাঁটার বিকল্প নেই।
মানসিক চাপ কমেঃ গ্রাউন্ডিং যেটাকে মাটির সাথে পায়ের স্পর্শ করাকে
বোঝায়। শরীরের সাথে পৃথিবীর সরাসরি যোগাযোগ, যেমন- ঘাস বা বালুর ওপর খালি পায়ে
হাঁটলে দেহে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। মাটিতে খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাসে ঘুমের উন্নতি
হয়, কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাক, ব্যথা ও মানসিক চাপ কমে, আঘাত সারে
দ্রুত।
হার্ট ভালো রাখেঃ যারা নিয়মিত হাঁটতে সাহস করেন না, কিছু দূর হাঁটলেই
হাপিয়ে যান, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হয়, তাদের জন্য খালি পায়ে হাঁটলে
স্বাস্থ্যের কার্ডিও ভাসকুলার উন্নতি ঘটবে। এ সময় ভেনাস রিটার্ন বেড়ে যায়,
অর্থাৎ বেশি বেশি করে রক্ত পৌঁছে যেতে শুরু করে হার্টে। সেই সঙ্গে হৃদরোগের
আশঙ্কাও কমে।
হাঁটু ও কোমরের জয়েন্ট ঠিকমতো কাজ করেঃ হাঁটু ও কোমরের ব্যথায়
আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অনেকেই এই রোগে ভুগে থাকেন। দেখা গেছে,
বেশিরভাগ সময়ই এই দুই জয়েন্টের কাজকর্মের ব্যাঘাত হওয়ায় বাতের ব্যথা হয়। তবে
সমস্যা এই স্তরে পৌঁছানোর আগেই আপনি খালি পায়ে হাঁটা শুরু করে দিন। এতে এই
দুই জয়েন্ট ঠিকমতো কাজ করতে পারে। ফলে বাতের ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি
কমে।
ফুট পজিশনিং ঠিকঠাক থাকেঃ সেই ছোটবেলায় আমরা হাঁটতে শিখেছি। তবে হাঁটা
শেখা হয়ে গেছে মানেই যে একদম সঠিক ভঙ্গিতে পা মাটিতে পড়ছে, এমন নয়। দেখা
গেছে, বড় বয়সেও অনেকের হাঁটার সময় ফুট পজিশন ঠিক থাকে না। তবে নো চিন্তা, এই
সমস্যার মুশকিল আসান করতে পারে বেয়ার ফুট ওয়াকিং। আপনি যদি সকাল বেলা খালি
পায়ে হাঁটতে পারেন, তাহলেই দেখবেন ফুট পজিশন ঠিকঠাক হয়েছে। এতে পায়ের পেশি ও
জয়েন্টের নমনীয়তা বাড়ে। ফলে পায়ে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ পায়ের তলায় থাকে একাধিক সেন্সর নার্ভের
সুইচ পয়েন্ট, যা খালি পায়ে হাঁটার সময় অ্যাকটিভ হয়ে গিয়ে শরীরের ভেতরে পজেটিভ
এনার্জি তৈরি করে। খালি পায়ে হাঁটলেই পায়ের তলার সুইচগুলো অ্যাকটিভ হয়ে রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়ে ওঠে, শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়ে
ওঠে, যার ফলে সহজেই রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
দেহের ইলেকট্রনের বিস্তার বাড়েঃ খালি পায়ে হাঁটলে মানব দেহের
ইলেকট্রনের বিস্তার বাড়ে। এই ইলেকট্রনগুলো নির্দিষ্ট আকুপাংচার পয়েন্ট এবং
শ্লেষ্মা ঝিল্লির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। মানব দেহের অ্যান্টি
অক্সিডেন্টগুলো ইলেক্ট্রন দিয়ে তৈরি, যা ফ্রি রেডিকেল ধ্বংস করে। বিভিন্ন
প্রদাহের সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়েঃ মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্যে
করে খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি। এর ফলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের অন্দরে থাকা
নিউরনগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে একদিকে যেমন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, তেমনই
বুদ্ধিও বাড়ে।
কার্ডিওভাসকুলার উন্নতি ঘটেঃ খালি পায়ে হাঁটলে স্বাস্থ্যের
কার্ডিওভাসকুলার উন্নতি ঘটে। যা উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করে। হৃদরোগের সম্ভাবনাও
কমে যায় নিয়মিত খালি পায়ে হাঁটলে।
দেহে পজেটিভ এনার্জি তৈরি করেঃ পায়ের তলায় থাকা একাধিক সেন্সারি
নার্ভ, খালি পায়ে হাঁটার সময় অ্যাকটিভ হয়ে গিয়ে শরীরের ভিতরে পজেটিভ এনার্জি
তৈরি করতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী
হয়ে ওঠে যে নানাবিধ সংক্রমণের আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
দৃষ্টিশক্তি উন্নতি করেঃ দৈনিক ভোরে খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে পায়ের
তলায় থাকা একাধিক প্রেশার পয়েন্টে চাপ পড়ে। এসব প্রেশার পয়েন্টের সঙ্গে
চোখের সরাসরি যোগসূত্র আছে। ফলে পায়ের তলায় যত চাপ পরে,ততেই দৃষ্টিশক্তির
উন্নতি ঘটতে শুরু করে।
উদ্বেগ এবং হতাশা দূর হয়ঃ খালি পায়ে হাঁটলে উদ্বেগ এবং হতাশা দূর হয়।
শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশই পানি দিয়ে গঠিত। তাই মাটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যত
নিবিড় হবে, ততই শরীরের অন্দরে নানাবিধ তরলের উপাদানের ভারসাম্য ঠিক থাকবে।
মাইগ্রেইনের ব্যাথা কমেঃ সাধারণত মাইগ্রেইনের মাথা ব্যাথা বিভিন্ন
ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাবে বাড়তে পারে। তাই যদি তখন খালি পায়ে হাঁটা যায় বা
শরীরকে মাটির সংস্পর্শে আনা যায় তাহলে তা দেহকে ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব থেকে
অনেকটা মুক্ত করতে পারে। আর এভাবেই মাইগ্রেইনের মাথা ব্যাথা দূর হতে পারে।
শরীরে রক্তচলাচল বাড়েঃ খালি পায়ে হাঁটলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে
শরীরে রক্তচলাচল বাড়ে। ফলে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ফলে
স্বাভাবিকভাবেই নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
খারাপ অণুজীব দূর করেঃ আমাদের ত্বকে ভালো এবং মন্দ দুই ধরনের অণুজীব
থাকে। যদি খারাপ অণুজীব ভালো অণুজীবের চেয়ে বেশি হয় তবে পা থেকে দুর্গন্ধ
ছড়াতে থাকে। তাই সবার উচিত দৈনিক কিছুটা সময় খালি পায়ে মাটিতে হাঁটা। কেননা
তখন ত্বকে ভালো অণুগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
সকালে খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটার উপকারিতা
সকালে খালি পায়ে ঘাসের উপর দিয়ে হাঁটলে দেহের উপকার হয় এবং শরীর ও মন দুটোই
ভালো থাকে। প্রতিদিন সকালে কিছুক্ষণ খালি পায়ে হাঁটতে পারেন ঘাসে। সুস্থ
থাকার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রয়েছে এই প্রক্রিয়ার। সিমেন্টের ওপর হাঁটার বদলে
মাটি ও ঘাসের ওপর হাঁটা আমাদের মনকে প্রশান্ত করতে পারে। জেনে নিন ঘাসের ওপর
খালি পায়ে হাঁটার উপকারিতাগুলোঃ
১। ঘাসের ওপর খালি পায়ে হাঁটার সময় শরীর পৃথিবীপৃষ্ঠ মানে মাটি থেকে
নেগেটিভ চার্জ বা ঋণাত্মক আয়ন শোষণ করতে পারে। যা মুঠোফোনের মতো
বৈদ্যুতিক যন্ত্র থেকে জমে থাকা পজেটিভ চার্জ বা ধনাত্মক আয়ন নিষ্ক্রিয়
করে দিতে পারে। এর ফলে শরীরের প্রদাহজনিত সমস্যা যেমন কমে, ঘুমের মান
বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক সুস্থতা বাড়ায়। এটি শরীরের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক
(তড়িৎ চৌম্বকীয়) ভারসাম্য ঠিক রাখতেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
২। রাতে ঠিক মতো ঘুম না হলে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরিবর্তে হাঁটার অভ্যাস
করুন। ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটলে দূর হয় অনিদ্রার সমস্যা। তাই প্রতিদিন
সকালে অন্তত ৩০ মিনিট ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটার চেষ্টা করুন। তাছাড়া,
ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটলে শারীরিক অঙ্গগুলোর কার্যকারিতা বাড়াতে
সহায়তা করে।
৩। মাটিতে পাওয়া শক্তিশালী জীবাণু প্রাকৃতিকভাবে অনাক্রম্যতা গড়ে তুলতে
সাহায্য করে। জীবাণুগুলো ত্বকের মাধ্যমে আমাদের নখের নীচ থেকে আমাদের শরীরে
প্রবেশ করে এবং আমাদের অন্ত্রের মাইক্রোফ্লোরাতে ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে
সাহায্য করে। এতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৪। ঘাসের ওপর দিয়ে খালি পায়ে হাঁটলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া
চোখের স্বাস্থ্যের জন্য সবুজ রং খুব উপকারী। তাই চোখের সুস্থতার জন্য
প্রতিদিন সকালে ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটা উচিত।
৫। খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে এনডরফিন হরমোন ক্ষরণের পরিমাণ বেড়ে যেতে
পারে। এই হরমোনটি ‘হ্যাপি’ হরমোন নামে পরিচিত। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে এই
হরমোন থাকলে মনমেজাজ ফুরফুরে থাকে।
৬। পায়ের জন্য খুব ভালো ব্যায়াম হচ্ছে খালি পায়ে হাঁটা। এরফলে পায়ে শক্তি
বৃদ্ধি পায়, পেশী মজবুত হয়, পায়ের রগ ও লিগামেন্টস, পায়ের গোড়ালি এবং পায়ের
পাতায় শক্তি বৃদ্ধি পায়। খালি পায়ে ঘাসে হাঁটলে কোনো কোনো আঘাত নিরাময় হয়,
হাঁটুর সমস্যা ভালো হয়, পিঠের সমস্যাও ভালো হয়ে যায়।
৭। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি শুরু করা উচিত
বলে জানিয়েছেন রোগ বিশেষজ্ঞরা। এতে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
৮। ভোরবেলা খালি পায়ে ঘাসের উপর দিয়ে হাঁটলে মন খুব শান্ত থাকে । সকালে
হাঁটার মাধ্যমে আমরা ফ্রেশ অক্সিজেন গ্রহণ করি। সকালের শান্ত পরিবেশ আমাদের
মন ভালো রাখে।
৯। সকালে খালি পায়ে ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটলে সূর্যের রশ্মি আমাদের দেহে ভিটামিন
ডি যোগায়, ভিটামিন ডি আমাদের দেহের হাড় মজবুত করে এবং হাড়ের যে কোন সমস্যা
রোধ করতে সাহায্য করে। তাই সুস্থ থাকতে সকালের অথবা বিকেলের মৃদু রোদে খালি
পায়ে ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটা সকলের উচিত।
১০। স্ট্রেসের কারণে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই স্ট্রেস মুক্ত
থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটলে হ্যাপি হরমোন নির্গত
হয়। যার ফলে স্ট্রেস কমে এবং মন শান্ত থাকে।
১১। খালি পায়ে হাঁটলে পায়ের পাতার নীচ থেকে টক্সিন দূর হয় এবং ত্বকের
পৃষ্ঠে স্বাস্থ্যকর অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। যা পায়ের জন্য খুবই ভালো। এ
ছাড়াও, খালি পায়ে হাঁটা গোড়ালি, লিগামেন্ট এবং পায়ের পেশিকে প্রসারিত ও
শক্তিশালী করে। পায়ের ও কোমরের পেশির উপর চাপ বাড়ে। ফলে এই অংশের পেশির জোর
বাড়ে এবং শক্তিশালী হয়।
১২। আপনি যখন খালি পায়ে হাঁটেন, আপনার পায়ের পাতার স্নায়ুকোষ আপনার
মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়। আপনার শরীরের গতিবিধির সামঞ্জস্য ও ভারসাম্য বজায়
রাখতে সাহায্য করে। এই সংবেদনশীল স্নায়ু উদ্দীপনা মানসিক সুস্থতা এবং নিজের
সম্পর্কে আরও ভালো বোধ তৈরি করতে ভূমিকা রাখে।
১৩। ঘাসের ওপর খালি পায়ে হাঁটার সময় যে প্রশান্তি আমরা পাই, তা মানসিক চাপ
উপশমের প্রাকৃতিক দাওয়াই হিসেবে কাজ করে। পায়ের নিচের নরম, প্রাকৃতিক
টেক্সচার প্রেশার পয়েন্টগুলোকে উদ্দীপিত করে, শিথিলতা এবং সুস্থতার বোধকেও
চাঙা করে এই প্রক্রিয়া। কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে হতাশা,
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
১৪। ঘাসের ওপর খালি পায়ে হাঁটলে শরীরের ব্যথা কমায়। মাটির নেগেটিভ চার্জ
শরীরের পজেটিভ চার্জ নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে। তাই প্রদাহ বা ব্যথাজনিত
দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানে রোজ সকালে খালি পায়ে সবুজ ঘাসের ওপর হাঁটুন।
১৫। ঘাসের ওপর খালি পায়ে হাঁটা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে
বহুগুণে। এতে পায়ের স্নায়ুর উদ্দীপনা শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা
শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। রক্তপ্রবাহের বৃদ্ধি মানে আরও বেশি
অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করে পুরো শরীরে।
১৬। পৃথিবীপৃষ্ঠ নেগেটিভ চার্জ ইলেকট্রনসমৃদ্ধ, যাকে প্রাকৃতিক
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও বলা হয়ে। ফলে খালি পায়ে ঘাসের ওপর বা মাটি স্পর্শ করে
হাঁটলে শরীর মাটি থেকে সরাসরি নেগেটিভ ইলেকট্রন চার্জ শোষণ করতে পারে। এতে
শরীরের হাইড্রোক্সিল চার্জের মতো ফ্রি রেডিক্যাল ধ্বংস হয় বলে এর কারণে
ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যায় শরীরের প্রতিটি কোষ।
ওজন কমাতে হাঁটার উপকারিতা
ওজন কমাতে হাঁটার উপকারিতা আমাদের সবারই জানা। ওজন কমানোর জন্য সকালের সময়কে
সবচেয়ে ভাল মনে করা হয়। সকালে হাটলে পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে, হাড়ের
জয়েন্ট ঠিক রাখতেও হাঁটার উপকারিতা অপরিসীম। আপনি যদি দ্রুত ওজন কমাতে চান,
তাহলে সকালের সময়টা একটু বেশি উপকারী হতে পারে। কারণ সকালে খালি পেটে হাঁটলে
মেটাবলিজম বাড়ে এবং বেশি ক্যালরি বার্ণ হয়।
শারীরিক সুস্থতা বা শরীরকে ফিট রাখতে সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম হলো হাঁটা।
প্রতিদিন নিয়ম মেনে হাঁটলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমার পাশাপাশি মানসিক
স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। হাঁটার ফলে শরীরে যে পরিমানে ক্যালরি খরচ হয় তা ওজন
কমাতে সহায়তা করে। ওজন কমানোর জন্য যখন হাঁটা শুরু করা হয় তখন মনে রাখতে হবে
শুধু শারীরিক কর্মকাণ্ডই নয়, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন না করলে কাঙ্ক্ষিত ফল
পাওয়া যাবে না।
প্রতিদিন অন্তত ২১ মিনিট হাঁটলে ওজন কমার পাশাপাশি হৃদরোগ, টাইপ-২
ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি কমে। সেসঙ্গে হাড়ও ভালো থাকে। দিনের অন্য যেকোনো
সময়ের ৩০ মিনিট হাঁটার থেকেও খাবারের পর ১০ মিনিট হাঁটলে সুফল বেশি পাওয়া
যাবে। সেইসঙ্গে বৃদ্ধি করে হজমশক্তি। এটি হাড় এবং পেশীকেও শক্তিশালী করে।
নিয়মিত হাঁটলে তা স্ট্রেস দূর করতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক হাঁটার
উপকারিতা
মন ভালো রাখেঃ এক গ্লাস ওয়াইন বা তিনটি ডার্ক চকলেট মন খারাপের দিনে
যেভাবে কাজ করে ঠিক একইভাবে কাজ করে হাঁটার অভ্যাসও। তফাত শুধু এটি আপনার
কোনো ক্যালোরি বৃদ্ধি করে না। চাইলে সবুজ প্রকৃতির মধ্যেও হাঁটাহাঁটি করতে
পারেন। গবেষণা বলছে, প্রতিদিন হাঁটলে তা স্নায়ু প্রক্রিয়া ঠিক রাখে, যা আপনার
রাগ এবং আক্রমণাত্মক আচরণকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। শীতকালে রোদে হাঁটা মনের জন্য
আরো ভালো যা আপনাকে বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি দেয়। সর্বোপরি হাঁটতে বের হলে আপনি
আশেপাশের মানুষের সাথেও দেখা, সাক্ষাৎ ও গল্প করতে পারেন; যা মনের জন্য অনেক
ভালো।
ক্যালোরি ঝরায় ও ওজন কমায়ঃ নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস চর্বি কমাতে সাহায্য
করে। ফলস্বরূপ, ইনসুলিনের সঙ্গে শরীর সমন্বয় ভালো থাকে। প্রতিদিন হাঁটলে
অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়ানোর মাধ্যমে পেশীর ক্ষতি রোধ হয় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি
পায়, যা আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’ হাঁটার
সবথেকে ভালো দিক হলো, এর জন্য আলাদা করে কিছু করতে হয় না। চাইলে অফিস, স্কুল,
কলেজে হেঁটে যাওয়া দিয়েই এটি শুরু করতে পারেন।
দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়ঃ আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন-এর
মতে, রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সামগ্রিক ঝুঁকি
কমাতে হাঁটা উপকারী। কিছু গবেষণা বলছে, প্রতি ১,০০০ স্টেপ হেঁটে আপনার
সিস্টোলিক রক্তচাপ .৪৫ পয়েন্ট কমিয়ে আনা সম্ভব। দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল
অফ মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত হাঁটেন না তাদের
তুলনায় যারা পর্যাপ্ত হাঁটা-চলা করেন তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি
৩০% কম। তাই রোগ প্রতিরোধের জন্য হাঁটা ভালো।
জীবনীশক্তি বাড়ায়ঃ হাঁটা-চলা আপনার জীবনীশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
কারণ এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে,
যারা প্রতি সপ্তাহে মাত্র ১০ থেকে ৫৯ মিনিট হাঁটাহাঁটি করেন, অলস ব্যক্তিদের
তুলনায় তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ১৮% কম। এর মাধ্যমে হার্টও ভালো থাকে।
মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি করেঃ যারা সপ্তাহে তিনবার এক ঘণ্টা দ্রুত
হাঁটেন তাদের মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যারা শিক্ষা সেমিনারে অংশ
নেয় তাদের তুলনায় ভালো। অন্যান্য গবেষণা দেখায় যে শারীরিক ব্যায়াম, যেমন
হাঁটা, বয়স্ক নারীর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, নিয়মিত হাঁটার ফলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধির
কারণে এই সুবিধাগুলো পাওয়া যায়। তাই যখন হাঁটা-চলা করবেন, তখন আপনার
মস্তিষ্কও ভালোভাবে কাজ করতে শুরু করবে।
মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকেঃ নিয়মিত হাঁটলে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে।
নিষ্ক্রিয় থাকার অর্থ শরীরে পেশিশক্তি কমে যাওয়া। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা–
এর ফলে মস্তিষ্কও শুকিয়ে মরে যেতে শুরু করে। আমরা যখন হাঁটি, তখন পেশিতে তৈরি
হওয়া মলিকিউল বা অণু আমাদের মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সাহায্য করে।
নিয়মিত হাটার উপকারিতা
নিয়মিত হাটার উপকারিতা হলো হাটলে শরীর সুস্থ থাকে এজন্য আমাদের বেশি বেশি হাটা
প্রয়োজন। অনেকেই হাটেন তবে কম মানুষই আছেন যারা যথেষ্ট হাঁটেন। এই হাঁটার
রয়েছে অনেক উপকারিতা। হজমে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্ককেও সতেজ রেখে বার্ধক্য
প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া চিন্তার সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়, মেজাজ ভালো থাকে এবং
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে। আসুন জেনে নিই নিয়মিত হাটলে কি কি
উপকারিতা পাওয়া যায়।
১. নিয়মিত হাটলে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে। নিষ্ক্রিয় থাকার অর্থ শরীরে পেশিশক্তি
কমে যাওয়া। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা এর ফলে মস্তিষ্কও শুকিয়ে মরে যেতে শুরু
করে। আমরা যখন হাঁটি, তখন পেশিতে তৈরি হওয়া মলিকিউল বা অণু আমাদের মস্তিষ্ককে
সচল রাখতে সাহায্য করে। তার মধ্যে একটি বিশেষ অণু মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে
সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের ব্রেনের কোষগুলো বিকশিত হয়। ফলে হাঁটলে মস্তিষ্ক
আরো শক্তিশালী হয়।
২. নিয়মিত হাটলে হার্ট ভালো থাকে। হৃৎপিণ্ড ভালো থাকার জন্য হাঁটা খুবই উপকারী।
আমাদের পূর্ব-পুরুষরা, যারা শিকার করে জীবন ধারণ করতেন, তারা দিনে ১৫ থেকে ১৭
মাইল হাঁটতেন। এখনকার মানুষের হার্টের তুলনায় তাঁদের হার্ট সত্যিই অনেক ভাল
ছিল।
৩. নিয়মিত হাটার অভ্যাসের মাধ্যমে রক্তে ভালো কলেস্টেরল (হাই ডেনসিটি
লিপোপ্রোটিন) এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় , যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে
এথেরোস্ক্লেরোসিস বা হার্ট ব্লকের ঝুঁকি কমায়। সপ্তাহে সাত দিন ৩০ মিনিট হাঁটা
আপনার এল.ডি.এল. কোলেস্টেরল ১৫% পর্যন্ত কমাতে পারে এবং আপনার এইচ.ডি.এল.
মাত্রা ২০% পর্যন্ত বাড়াতে পারে।
৪. যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে ডাক্তারের পরামর্শে তারা নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন। এতে
অবশ্য তারা উপকার পান। মজার কথা এতে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমে যায়।
নিয়মিত হাঁটলে ৬০ ভাগ পর্যন্ত কোলন ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
এটা স্বাস্থ্যের জন্যও খুব ভালো।
৫. আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত হাঁটা হলো সর্বোত্তম
ব্যায়াম। এটি আপনার জয়েন্টগুলির চারপাশের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে এবং
জয়েন্টের নমনীয়তা বাড়ায়, এর পাশাপাশি জয়েন্টের ব্যথা কমায় এবং ক্লান্তি
মোকাবেলায় সহায়তা করে।
৬. নিয়মিত হাটা মানুষের পরিপাকতন্ত্রের জন্যেও বন্ধুর মতো কাজ করে। "মানুষ যখন
অনেক হাঁটা-চলা করে তখন তার খাবারও বেশি হজম হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য কাটাতে ওষুধ না
খেয়ে আপনি যদি হাঁটতে বের হন, সেটা অনেক ভাল। এর সাহায্যে আপনি খুব সহজেই
হজমের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
৭. নিয়মিত হাটা বিষণ্ণতা কাটাতে সাহায্য করে। বিষণ্ণতার সঙ্গে বসে থাকার
সম্পর্ক রয়েছে। নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের বেলাতে বিষণ্ণতা দেখা যায় বেশি।
অন্যভাবে বললে সহজ করে বলা যায়, যতোই সক্রিয় থাকা যায় ততোই ভালো। রক্ত
প্রবাহের সমস্যা থেকেও বিষণ্ণতা তৈরি হয় বলে ধারণা রয়েছে। আপনি যদি প্রচুর
হাঁটেন, রক্ত প্রবাহের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে সেগুলো কমে যায়।কোন কোন ক্ষেত্রে
হাঁটাহাঁটি করা এক ধরনের ভ্যাকসিন বা টীকার মতো কাজ করে। সাহায্য করে বিষণ্ণতা
কমাতে।
৮. আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিত্বে কতগুলো বিষয় আছে এবং সক্রিয় থাকার সঙ্গে
এগুলোর সম্পর্ক আছে। যেমন অকপটতা, বিবেক দিয়ে পরিচালিত হওয়া, বহির্মুখী
হওয়া, কোনো কিছুর ব্যাপারে সম্মত হওয়া। যারা নিষ্ক্রিয় থাকেন, তারা কম খোলা
মনের হয়, কম বহির্মুখী হয় এবং তাদের স্নায়ুজনিত অনেক সমস্যাও দেখা দেয়।
৯. যারা নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন তাদের হার্টের অসুখ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে
কমে যায়। এছাড়া হাঁটার সময় শরীর থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এলডিআর কমে যায় ও ভালো
কোলেস্টেরল এইচডিআর-এর মাত্রা বেড়ে যায়। এছাড়া শরীরের রক্তচলাচল স্বাভাবিক
থাকে। যারা প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটেন, তাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি
অনেকাংশে কমে যায়।
যাদের উচ্চরক্তচাপ রয়েছে, তাদের নিয়মিত হাটার কারনে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হয়।
এছাড়া নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করলে শতকরা ২৭ ভাগ পর্যন্ত উচ্চরক্তচাপজনিত সমস্যা
কমে। ফলে হার্টের বিভিন্ন রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস
করলে করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। নিয়মিত হাটলে রক্তে চিনির
মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে ও স্থূলতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
১০. বিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে হাঁটা। আমরা যে খাদ্যগ্রহণ করি, সেটি
বিভিন্ন শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। হাঁটাহাঁটি করা এই রূপান্তর প্রক্রিয়ায়
সহায়তা করে। সারা দিন ধরে যদি অল্প মাত্রাতেও সক্রিয় থাকা যায় সেটা জিমে
গিয়ে শরীর চর্চা করার চাইতেও অনেক বেশি উপকারী। অনেকে এই জিমে যাওয়াকে অনেক
বড় করে দেখেন। সারা দিন শুয়ে বসে কাটিয়ে তারা মনে করেন ওই এক ঘণ্টায় জিম
করেই তারা সুস্থ থাকবেন। আসলে এধরনের ব্যায়াম মানুষকে নিষ্ক্রিয় থাকার
ব্যাপারে উৎসাহিত করতে পারে। কারণ শরীর তখন বলতে থাকে তুমি তো তোমার কাজটা করেই
ফেলেছ, সুতরাং তুমি এখন বসে থাকতে পারো, খেতে পারো। তখন আসলে বিপাক প্রক্রিয়া
শ্লথ হয়ে যায়।
১১. নিয়মিত হাটলে শারীরিক গঠন অটুট রাখতে সাহায্য করে। অনেকেই আছেন যাদের
সারাদিন চেয়ারে, সোফায় কিংবা গাড়িতে বসে কাজ করতে হয়। ফলে শারীরিক গঠনে,
বিশেষ করে পিঠে- ব্যথা হতে পারে। তাই বেশি করে হাঁটা জরুরি। মানুষের দেহ
এমনভাবে তৈরি নয় যা সারাদিন একটি অবস্থানে থাকতে পারে। এটা আপনার জন্যে খুবই
খারাপ। চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা আপনাকে পিঠের ব্যথা থেকে
মুক্তি দিতে পারে।
১২. ইদানিং অনেকে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন রকম ব্যায়াম করতে দেখা যায়। যদি
ওজন কমাতে চান, তবে প্রতিদিন ৬০০ ক্যালরি পুড়িয়ে ফেলতে হবে। যেটা একদিনের খাবার
থেকে প্রাপ্ত ক্যালরির চেয়ে বেশি। যার ওজন ৬০ কেজি তিনি যদি প্রতিদিন ঘণ্টায় ২
মাইল গতিতে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করেন, তবে ৭৫ ক্যালরি শক্তি ক্ষয় করতে
পারেন। যদি ঘণ্টায় ৩ মাইল গতিতে হাঁটতে অভ্যস্ত হন তবে, ৯৯ ক্যালরি পুড়িয়ে
ফেলতে পারেন। ঘন্টায় ৪ মাইল গতিতে হাঁটলে আরও বেশি ক্যালরি ক্ষয় করতে পারবেন।
এতে ক্যালরি ক্ষয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫০। হাঁটলে দেহের পেশীগুলো আরও প্রাণবন্ত
হয়ে ওঠে।
১৩. বয়স বাড়ার সঙ্গে সাধারণত মানুষের স্মৃতিশক্তি কমে যায়। ৬৫ বা এর বেশি
বয়সীদের মধ্যে প্রতি ১৪ জনের মধ্যে ১ জনের স্মৃতিভ্রম হয়। আর ৮০ বা এর বেশি
বয়সীদের ৬ জনের মধ্যে ১ জনের দেখা দেয় স্মৃতি হারানোর রোগ। নিয়মিত বিভিন্ন
ব্যায়াম অনুশীলনে মস্তিষ্কে রক্তচলাচল বাড়ে। এতে স্মৃতিহানি হওয়ার ঝুঁকি ৪০ ভাগ
পর্যন্ত কমে যায়। বয়স্কদের মধ্যে যারা সপ্তাহে অন্তত ৬ মাইল পথ হাঁটেন তাদের
স্মৃতিশক্তি অটুট থাকে।
১৪. নিয়মিত হাটাচলা করলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথার ঝুঁকি কমে যায়। সাধারণত
বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিলাদের শরীরের বিভিন্ন হাড় ও সংযোগস্থলে ব্যথা
করে। শরীরের জয়েন্টগুলোকে সুস্থ রাখতে হাঁটা নিঃসন্দেহে খুবই কার্যকর ব্যায়াম।
১৫. সকালের প্রকৃতি এমনিতেই থাকে স্নিগ্ধ। এ সময় হাঁটার মজাই আলাদা। প্রকৃতির
সৌন্দর্য উপভোগের সময় মন স্বাভাবিকভাবেই ফুরফুরে থাকে, শরীর ও মন সতেজ হয়।
শরীরের প্রতিটি জয়েন্টে অক্সিজেনের প্রাণপ্রবাহে মাংসপেশীগুলো শিথিল ও রিলাক্সড
হয়।
১৬. হাটলে শুধু পায়ের শক্তিই বাড়ে না পায়ের আঙুল দুহাতও সমান তালে চলে। এতে
শরীরের প্রতিটি অঙ্গ, জয়েন্ট, ঘাড় ও কাঁধের ব্যায়াম হয়। এছাড়া কোমর এবং শরীরের
অন্যান্য অঙ্গ নড়াচড়ার কারণে শরীর স্বাভাবিকভাবেই সুস্থ থাকে। ব্যাকপেইনের
সমস্যা কমে যেতে পারে নিয়মিত ব্যয়ামের মাধ্যমে।
১৭. যাদের নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস রয়েছে তাদের সঙ্গীর অভাব হয় না। একজন আরেকজনের
সঙ্গে ভাগাভাগি করেন আনন্দের মুহূর্তগুলো। সামাজিক পরিমণ্ডলে প্রভাব বাড়ার
পাশাপাশি মানসিকচাপ ও টেনশন কমতে শুরু করে। নিয়মিত হাঁটাচলা করলে একাকিত্বের
অনুভূতি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়। এছাড়া নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করলে মেজাজ
নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এতে মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
দৈনিক কতো কলোমিটার হাটা উচিৎ
দৈনিক কতো কলোমিটার হাটা উচিৎ সে বিষয়ে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। নিয়মিত জিমে গিয়ে
শরীরচর্চা করার মতো সময় সুযোগ আজকালকার ব্যস্ত জীবনে অনেকেরই থাকে না। কিন্তু
ভালো থাকার জন্য নিয়মিত একটু হলেও শারীরিক পরিশ্রম করা জরুরি। হাঁটা এমন একটা
উপায়, যার মাধ্যমে কষ্টসাধ্য পরিশ্রম ছাড়াও সহজেই সুস্থ থাকা যায়। হাঁটা এমন
একটি ব্যায়াম যা সব বয়সের জন্যই চলে। এর উপকারিতাও অনেক। নিয়মিত হেঁটেই নিজেকে
সুস্থ রাখতে পারেন।
দৈনিক কমপক্ষে ৮ কিলোমিটার হাটা উচিত। সপ্তাহে একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির অন্তত
দেড় ঘণ্টা মাঝারি মাত্রার অ্যারোবিক ব্যায়াম করা উচিত। অ্যারোবিক ব্যায়াম হলো
সেই ধরনের ব্যায়াম, যার ফলে হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয় এবং শরীর ঘামতে শুরু করে। যেমন
জোরে হাঁটা, সাইকেল চালানো, জগিং, দড়িলাফ, দৌড়ানো, অ্যারোবিক ড্যান্স, সাঁতার
ইত্যাদি। সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন আধা ঘণ্টা করে জোরে হাঁটলেই নিয়মটা মানা হয়।
সে হিসাবে পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিদের দিনে ৪-৫ কিলোমিটার হাটার লক্ষ্য নির্ধারণ
করতে হবে। তবে একটি গবেষণা বলছে, যাঁরা হাঁটার মাধ্যমে ওজন কমাতে এবং ফিটনেস
ধরে রাখতে চান, তাঁরা দৈনিক ৬-৮ কিলোমিটার হাঁটলে ভালো উপকার পাবেন। প্রবীণদের
হাঁটতে হবে ধীরেসুস্থে। কিশোরদের মতো বয়সীরাও দেড় ঘণ্টা হাঁটার লক্ষ্য নির্ধারণ
করতে পারেন। সপ্তাহজুড়ে দৈনিক ৩-৪ কিলোমিটার হাঁটলে দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন
শারীরিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে; শারীরিক ভারসাম্য ও মানসিক স্বাস্থ্য থাকে
ভালো।
কতক্ষণ হাটবেনঃ প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা উচিত। তবে আপনি চাইলে সপ্তাহে
প্রতিদিন নাও হাঁটতে পারেন। পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে ১৫০ মিনিট হাঁটলেও আপনি
সুস্থ থাকবেন। মানে একজন মানুষের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটা জরুরি।শারীরিক অবস্থা
ভালো থাকলে আরও বেশি সময় ধরে আপনি হাঁটতে পারেন। তবে কখনোই ৩০ মিনিটের কম
হাঁটা উচিত হবে না।একবারে ৩০ মিনিট হাঁটার শারীরিক ক্ষমতা না থাকলে তিনবার ১০
মিনিট করে ৩০ মিনিট হাঁটতে পারেন। অথবা একবার ২০ মিনিট, অন্যবার ১০ মিনিট করে
মোট ৩০ মিনিট করে নিতে পারেন।
খাওয়ার পর হাটার উপকারিতা
খাওয়ার পর হাটার উপকারিতা কি জানতে চেয়ে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন। শরীরের
রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতে হাঁটাহাঁটির মতো ভালো ব্যায়াম কমই আছে। কিন্তু
হাঁটারও আছে কিছু নিয়মকানুন ও নির্দিষ্ট সময়। খাওয়ার পর সামান্য হাঁটাহাঁটির
বেশ কিছু উপকার আছে। বিশেষ করে যাঁদের উচ্চরক্তচাপ বা হজমে সমস্যা আছে, তাদের
জন্য বেশ নিরাপদ ও উপকারী। তবে পুরোটাই নির্ভর করে সময় ও হাঁটার ধরনের ওপর।
হজমে সাহায্য করেঃ খাওয়ার পরপর সামান্য হাঁটাচলা হজমে বেশ সাহায্য
করে। হাঁটাচলার কারণে শরীরের রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে খাবার
দ্রুত হজম হয়। এ ছাড়া খাওয়ার পর বসে থাকলে কিংবা ঘুমালে অনেক ক্ষেত্রেই
পাকস্থলির গ্যাস্ট্রিক রস ধীরগতিতে কাজ করে। ফলে হজমও খুব ধীরগতিতে হয়।
নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, শরীরের রক্ত সঞ্চালন ঠিক
থাকে।
হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়ঃ নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করার সবচেয়ে বড় সুবিধা
হলো, শরীরের রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে। খাবারের পর বিশ্রাম নিলে শরীরের রক্ত
সঞ্চালনের গতি কমে যায়। তখন সামান্য হাঁটাহাঁটি শরীরের রক্তপ্রবাহের গতি ঠিক
রাখতে সহায়তা করে যা হৃদয়কে সুস্থ রাখে।
রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ খাওয়ার ঠিক পরপর
ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। সামান্য
হাঁটাহাঁটি এই মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের এই
ব্যায়াম করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকেঃ শরীরে মেদের বহর বাড়লেই ডায়াবিটিস,
কোলেস্টেরল, ব্লাড প্রেশার থেকে শুরু করে একাধিক জটিল রোগের ফাঁদে পড়ার
আশঙ্কা বাড়ে। তাই যেভাবেই হোক ওজন কমাতে হবে। আর এই কাজে সাফল্য পেতে চাইলে
খাওয়ার পরপর কিছুটা সময় হেঁটে নিন। তাতেই বাড়বে ফ্যাট মেটাবোলিজম রেট। ফলে
দ্রুত গতিতে কমবে ওজন। তাই ওজন কমাতে চাইলে আজ থেকেই খাওয়ার পর হাঁটুন।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকেঃ খাওয়ার পর ১০ মিনিট হাঁটলে উচ্চ
রক্তচাপের মাত্রাও কমে। রক্তচাপের সমস্যায় যারা ভুগছেন, খাওয়ার পর হাঁটাহাঁটি
করলে সুস্থ থাকা সম্ভব। অনেক সময়ে নিয়ম করে হাঁটার অভ্যাসেও রক্তচাপের মাত্রা
নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
তাৎক্ষণিক ঘুম কাটাতে সহায়তা করেঃ ভারী খাবার খাওয়ার পর শরীরে
ক্লান্তি ভর করা স্বাভাবিক। খাবার হজম করতে গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কমে
যায়। ফলে ক্লান্তিবোধ থেকে ঘুম আসে। তবে সামান্য হাঁটাহাঁটি করলে শরীরের রক্ত
চলাচল ত্বরান্বিত হয়, যা ঘুম কাটাতে সহায়তা করে।
ভালো ঘুম হয়ঃ রাতে খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে তা খাবার হজমে
সাহায্য করে। ফলে রাতে বিছানায় যাওয়ার পর আর পাকস্থলিতে হজমপ্রক্তিয়া চলতে
থাকে না। দ্রুত ঘুম আসে। এ ছাড়া শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়লে তা মানসিক চাপ
কমাতে সাহায্য করে, যা ভালো ঘুমের সহায়ক।
রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখেঃ খাওয়ার পর হাঁটলে রক্তে শর্করার
মাত্রা সঠিক থাকে বলেও জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, যারা টাইপ ওয়ান এবং
টাইপ টু ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তারা যদি নিয়মিত খাবার খাওয়ার পর কিছুক্ষণ
হাঁটেন, তাহলে রক্তে শর্করা তৈরিতে তার প্রভাব পড়ে। তাদের ভাষায়, খাবার
রক্তে শর্করা তৈরি করে। কিন্তু খাবার খাওয়ার পর হাঁটার অভ্যাস থাকলে রক্তে
শর্করা তৈরি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। ফলে ডায়াবেটিস রোগও প্রতিরোধ করা যায়।
রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক রাখতে প্রত্যেক বার খাওয়ার পর অন্তত ১০ মিনিট
হালকা হাঁটার প্রয়োজন।
খাওয়ার কতক্ষণ পর হাঁটা উচিত
খাওয়ার কতক্ষণ পর হাঁটা উচিত এ সম্পর্কে অনেকেই সঠিক নিয়ম জানেন না। হাঁটা
সবচেয়ে সহজ ব্যায়ামের মধ্যে একটি এবং এর উপকারিতা অনেক। কিন্তু হাঁটারও আছে
কিছু নিয়মকানুন, আছে নির্দিষ্ট সময়। সকালের মৃদু রোদে হাঁটার উপকার ভরদুপুরের
প্রখর রোদে হেঁটে পাওয়া যাবে না। খাওয়ার পর সামান্য হাঁটাহাঁটির বেশ কিছু
উপকার আছে। বিশেষ করে যাঁদের উচ্চরক্তচাপ বা হজমে সমস্যা আছে, তাদের জন্য বেশ
নিরাপদ ও উপকারী।
খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শোয়া বা ঘুমানো ঠিক না-এ বিষয়ে আমরা কমবেশি সবাই
জানি। খাওয়ার পর হাঁটাহাঁটি করা শরীর ও স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব ভালো। খাওয়া
শেষে ৩০ মিনিট হাঁটতে পারলে ভালো। তা না পারলে অন্তত কিছুক্ষণ বসে
থাকুন। বিশেষ করে রাতের খাবার খাওয়ার পর। এতে করে হজমের কোনো সমস্যা হয়
না। কিন্তু আসলেই খাওয়ার পর হাঁটা কি আসল সমাধান চলুন জেনে নেওয়া যাক।
খাবার সব সময় ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া উচিত। এতে করে খাবার টুকরো হওয়ার পর
লালারসের সঙ্গে মিশে হজম উপযোগী হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পেয়ে
থাকে শরীর। আর খাবার ছোট ছোট টুকরো হয়ে লালারসের সঙ্গে মিশে শরীরের বিভিন্ন
অন্ত্রে আসে। সেখান থেকেই হজম প্রক্রিয়া চলে। আর এই খাবার স্থানান্তর যত
দ্রুত হবে ততই হজম ভালো হয়। স্থানান্তর প্রক্রিয়া যত দেরিতে হবে ততই গ্যাসের
সমস্যা বাড়বে। এজন্য খাবারের পর ৩০ মিনিট হাটলে অনেক সমস্যা দূরে থাকবে। এ
ছাড়াও যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে, তারা যদি নিয়মিত খাওয়ার পর হাঁটেন,
তাহলেও তাদের সমস্যার সমাধান হবে।
খাওয়ার পর হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে যে শুধু হজম ভালো হয় তাই
নয় যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্যেও খুব উপকারী। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে
তাদেরও প্রতিদিন খাওয়ার পর হাঁটার অভ্যাস করা উচিত। যাদের ডায়াবিটিস রয়েছে
তারা যদি রাতে খাওয়ার পর ৪০ মিনিট হাঁটতে পারেন তাহলে ডায়াবেটিস থাকবে
নিয়ন্ত্রণে। সেই সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার কম খেতে হবে। গ্লুকোজ
ভেঙেই কিন্তু শরীরে শক্তি আসে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়লে নানা রকম
শারীরিক সমস্যা আসে আর যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জন্য রক্তে গ্লুকোজের
মাত্রা বাড়তে দেওয়া একেবারেই ঠিক নয়।
তবে একদম খাবার খেয়েই হাঁটতে বেরিয়ে পড়বেন, এমন কিন্তু নয়। এতে বদহজম,
অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেবে। এজন্য খাওয়ার পর ৫ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে
তারপর হাঁটতে যান। তবে খুব বেশি জোরে হাঁটবেন না। মাঝারি গতিতে হাঁটুন।
খালি পায়ে মাটিতে হাটার উপকারিতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর
আপনারা যারা খালি পায়ে মাটিতে হাটার উপকারিতা সম্পর্কিত সচোরাচর যে
প্রশ্নগুলা গুগলে কিংবা কোনো ওয়েব সাইটে এসে সার্চ করে থাকেন তার সংক্ষেপে
কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর নিচে তুলে ধরা হলো। যা খালি পায়ে মাটিতে হাটা ও
উপকারিতা সম্পর্কে আশা করছি আপনারা সংক্ষিপ্ত কিছু ধারনা লাভ করতে পারবেনঃ
প্রশ্নঃ খালি পায়ে হাটা কি সুন্নাত?
উত্তরঃ হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলা হয়েছে, 'মাঝে মাঝে খালি
পায়ে হাঁটলে বিনয় আসে, অহমিকা দূর হয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। '
কিন্তু এক পায়ে জুতা পরিধান করে অন্য পা খালি রেখে হাঁটতে নিষেধ করা হয়েছে
হাদিসে
প্রশ্নঃ সকালে খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটবেন কেন?
উত্তরঃ ঘাসের ওপর খালি পায়ে হাঁটা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়িয়ে তোলে বহুগুণে। এতে পায়ের স্নায়ুর উদ্দীপনা শরীরের রক্ত সঞ্চালন
বাড়ায়, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। রক্তপ্রবাহের বৃদ্ধি মানে
আরও বেশি অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করে পুরো শরীরে।
প্রশ্নঃ সকালে হাঁটার উপকারিতা কি কি?
উত্তরঃ সকালের হাটা হলো সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি। শারীরিক কোনও
সমস্যা থাক কিংবা না থাক সকালে হাঁটলে অনেক রোগবালাই থেকেই দূরে থাকা যায়।
ওজন কমানো, ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এমনকি হৃদ্রোগের মতো সমস্যার
ক্ষেত্রেও সকালে হাঁটার অভ্যাস থাকলে অনেকটাই সুস্থ থাকা যায়।
প্রশ্নঃ সকালে কতক্ষণ হাঁটা উচিত?
উত্তরঃ সকাল বেলা হাঁটার জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। কর্মব্যস্ত
জীবনে প্রত্যেকের যার যার সময় সুযোগ বের করে হাঁটার অভ্যাস করা উচিত।
সাধারণত সুস্থ থাকার জন্য প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা
উচিত। সেই হিসেবে প্রতি দিন ২৫ থেকে ৩০ মিনিটে দ্রুতগতিতে হাঁটা উচিত।
প্রশ্নঃ সকালে হাঁটার পর কি খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ হাঁটার পর যতটা সম্ভব জল খাওয়া উচিত। সকাল বেলা
ব্যায়ামের পর শরীরে ক্লান্তি বেড়ে যায়। এই কারণেই হাঁটার পর প্রচুর জল পান
করা উচিত। সেই সঙ্গে শরীরে জলের পরিমাণ ঠিক রাখতে ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়
ব্যবহার করা যেতে পারে
হাটার সঠিক নিয়ম
আমাদের অনেকেরই সঠিকভাবে হাঁটা কিংবা দাঁড়ানোর অভ্যাস নেই। যদিও একটু লক্ষ্য
করলেই এ ভুলগুলো দূর করা যায়। এ লেখায় তুলে ধরা হলো সঠিক ও ভুল কিছু বিষয়। এক
প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। হাঁটার বিষয়টিকে অনেকেই সাধারণ
একটি কাজ হিসেবে ধরেন। যদিও সঠিকভাবে হাঁটার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে
কয়েকটি নিয়ম মেনে চলা উচিত সবারই। এগুলো হলো-
১. সোজা হয়ে হাঁটুনঃ সামনে কিংবা পেছনে ঝুঁকে হাঁটা উচিত নয়। সঠিকভাবে
সোজা হয়ে হাঁটুন। একটি গাছকে কল্পনা করুন। পেছনে কিংবা সামনে নয়, উঁচু হয়ে
দাঁড়ান।
২. মাথা উপরেঃ আপনার চোখের দৃষ্টি রাখুন ১৫ ফুট সামনে। সোজা হয়ে
দাঁড়ানোর জন্য মাথা কোনো পাশে ঝুঁকবেন না। এতে আপনার মাংসপেশির কার্যকারিতা
ঠিক থাকবে।
৩. বুক সামনে কাঁধ পেছনেঃ বুক সামনে এবং কাঁধ পেছনে রাখুন। হাঁটার সময়
আপনার কাঁধ যেন অন্য কোনো দিকে না থাকে। এতে আপনার স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হবে।
৪. বাহুঃ আপনার বাহু থাকবে দুই পাশে সুবিন্যস্তভাবে। হাঁটার সময় এগুলো
সামনে ও পেছনে সমানভাবে নড়াচড়া করবে। এতে আপনার দেহের ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ
হবে।
৫. হাতের তালুঃ হাতের তালু শক্ত করে ধরা উচিত নয়। আবার ডানে-বায়ে রাখা
উচিত নয়। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো এটি আলতো করে অর্ধখোলা অবস্থায় রাখা। অনেকটা
একটি ডিম হাতে ধরে রাখার মতো। জোরে ধরলে তা ভেঙে যাবে। আবার অসতর্ক হলে হাত
থেকে পড়েও যেতে পারে।
৬. পেটঃ পেটের মাংসপেশি দেহের ভারসাম্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাই সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি পেটের মাংসপেশি যেন টাইট থাকে সেজন্য মনোযোগী
হোন।
৭. টাইট থাইঃ হাঁটার সময় থাই কিছুটা শক্ত করে নিন। দেহ ছেড়ে দিয়ে নয়
বরং টাইট করে রাখুন।
৮. হাত নড়াঃ হাঁটার সময় হাত বেশি সামনের দিকে নেবেন না। এক্ষেত্রে
পেছনের দিকে নিতে কোনো অসুবিধা নেই।
৯. পাঃ হাঁটার সময় পায়ের পাতার সম্মুখের অংশ আগে মাটিতে ফেলবেন না।
এক্ষেত্রে আগে পায়ের গোড়ালি ফেলুন এরপর বাকি অংশ। তবে পা উঠিয়ে নেওয়ার সময়
পায়ের পাতা সবার শেষে ওঠান।
হাটার সঠিক সময়
হাটার সঠিক সময় দিনের যেকোনো সময় হাঁটা যায় তবে সকাল বেলা হাঁটা সবচেয়ে
স্বাস্থ্যে জন্য ভালো সময়। কর্মব্যস্ত জীবনে প্রত্যেকের যার যার সময় সুযোগ
বের করে হাঁটার অভ্যাস করা উচিত। সকাল ও বিকেলসহ দিনের যে কোনো সময়েই হাঁটা
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সাধারণত সুস্থ থাকার জন্য প্রতি
সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। সেই হিসেবে প্রতি দিন ২৫ থেকে
৩০ মিনিটে দ্রুতগতিতে হাঁটা উচিত।
সকাল বেলার হাটা সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। শারীরিক কোনও সমস্যা থাক কিংবা না
থাক, সকালে হাঁটলে অনেক রোগ-বালাই থেকেই দূরে থাকা যায়। নিয়মিত সকালে হাঁটলে
ওজন কমানো, ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি মেলে। এমনকী হৃদরোগের মতো
সমস্যার ক্ষেত্রেও সকালে হাঁটার অভ্যাস থাকলে অনেকটাই সুস্থ থাকা যায়।
পাশাপাশি সকালে হাঁটলে শরীরে সূর্যালোক থেকে ভিটামিন D শরীরে প্রাপ্ত হয়।
সকালে হাঁটলে শরীরে গতি আসে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সারাদিনের
ক্লান্তির পর শরীরে নানা ব্যথা কমায়। সকালে হাঁটার কারণে মস্তিকে রক্তচলাচল
সচল থাকে, স্বাভাবিক ভাবে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। সকালে হাঁটলে হার্ট
ভাল থাকে এবং মানসিক শক্তি বাড়ে।
আপনি যদি অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তাহলে খাওয়ার পরে হাঁটতে পারেন। এছাড়া
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতেও খাওয়ার পরে হাঁটা ভালো। হার্টের রোগীরা কখনও
সকালে হাঁটা উচিত নয়। কারণ হার্টের রোগীরা সকালে হাঁটলে হার্ট অ্যাটক হওয়ার
সম্ভবনা থাকে।
খালি পায়ে মাটিতে হাটার উপকারিতা সম্পর্কে শেষকথা
ঘাসের ওপর কিনবা মাটিতে খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস শরীরের পক্ষে ভীষণ ভালো।
কথায় আছে মানুষ মাটির তৈরী। আর সেই মাটিতে খালি পায়ে হাঁটা কিংবা ঘাসের উপর
হাঁটার অভ্যাস কিন্তু শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এর ফলে শরীরের সচল ক্ষমতা
ক্রমশই বাড়তে পারে এবং মানসিক উৎফুল্লতা সক্রিয় হয়। পায়ের তলায় থাকে
একাধিক সেন্সর নার্ভের সুইচ পয়েন্ট, যা খালি পায়ে হাঁটার সময় অ্যাকটিভ হয়ে
গিয়ে শরীরের ভেতরে পজেটিভ এনার্জি তৈরি করে।
আধুনিক জীবনযাপনে হতাশা একটি বড় দুর্যোগ। খালি পায়ে হাঁটলে উদ্বেগ এবং হতাশা
দূর হয়। আমাদের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশই পানি দিয়ে গঠিত। তাই মাটির সঙ্গে একটি
গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের এই সম্পর্ক যত নিবিড় হবে, ততই শরীরের নানাবিধ
তরলের উপাদানের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। খাদ্য থেকে আমরা যেমন ফাইট্রোনিউট্রেন্ট
নিয়ে থাকি, তেমনি মাটি থেকে ইলেকট্রন মানসিক শক্তিতে প্রভাব বিস্তার করে
মানসিক অবসাদ কমায়। সেই সঙ্গে ইনসোমেনিয়া প্রতিরোধ করে। যারা অনিদ্রায় ভুগে
থাকেন, তারা নিয়মিত কিছু সময়ের জন্য খালি পায়ে হাঁটলে উপকার পাবেন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url