অনলাইনে যেভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন
অনলাইনে যেভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা
করবো আজকের আর্টিকেলে। এছাড়াও অনলাইনে আয়কর রিটার্ন
দাখিল করতে যা লাগবে, কর দেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ইত্যাদি বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরব। তাই আর্টিকেলটি শুরু থেকেই মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত
পড়তে থাকুন।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যাদের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা টিআইএন রয়েছে
তাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। তবে রিটার্ন দাখিল করলেই যে
আয়কর দিতে হবে তা নয়। কারো আয় যদি করযোগ্য না হয় তাহলে কর দেওয়ার প্রয়োজন
নেই, শুধু রিটার্ন জমা দিলেই হবে।
সাধারণত প্রতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই পাঁচ মাস জরিমানা ছাড়া
বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যায়। ৩০ নভেম্বর দেশে আয়কর দিবস হিসেবে পালিত হয়।
এদিনই ব্যক্তি করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমার শেষ তারিখ। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন
স্থানে অনুষ্ঠিত আয়কর মেলায় করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। নিচে অনলাইনে
যেভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন সে বিষয়ে বর্ণনা করা হলোঃ
পেইজ সূচিপত্রঃ অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল
- অনলাইনে যেভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন
- আয়কর যাদের জন্য প্রযোজ্য
- অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে যা লাগবে
- কর দেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- যেভাবে ধাপে ধাপে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করবেন
- আয়কর রিটার্ন জমা না দেয়ার শাস্তি
- কর নির্ধারণ পদ্ধতি ও রিটার্নের প্রকারভেদ
- আয়কর রিটার্ন দাখিল সম্পর্কিত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর
- আফলাইনে যেভাবে আয়কর রিটার্ন জমা দিবেন
- অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার নিয়ম
- আয়কর রিটার্ন দাখিল সম্পর্কে শেষকথা
অনলাইনে যেভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন
অনলাইনে যেভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন দেশে আগে থেকেই অনলাইনে আয়কর দেওয়ার সুযোগ থাকলেও এবারই প্রথমবারের মতো কয়েকটি এলাকা ও খাতের জন্য অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত ২২ অক্টোবর এ সংক্রান্ত এক বিশেষ আদেশ জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এই আদেশের ফলে এখন থেকে ঢাকার দুটি এবং গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আয়কর সার্কেলগুলোর সব সরকারি কর্মচারী এবং দেশের সকল তফসিলি ব্যাংকের কর্মীদের ইলেকট্রনিক মাধ্যমেই তাদের রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এছাড়া টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মীদেরও বাধ্যতামূলকভাবে আসতে হবে এই প্রক্রিয়ার অধীনে।
সম্মানিত করদাতারবৃন্দ এখন থেকে ঘরে বসেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার জন্য সম্মানিত করদাতাবৃন্দকে etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে। তারপর উক্ত ওয়েবসাইটে খুব সহজেই অনলাইন রিটার্ন পূরণ করে দাখিল করা যাবে। অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, ওয়েবসাইটের রিটার্ন পূরণের সেকশনে আয় ও সম্পদের যাবতীয় তথ্য লিপিবদ্ধ করার পরে সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়করের হিসাব সম্পন্ন করে দেয়। শুধু তাই নয়, সাথে সাথে অনলাইন থেকেই প্রাপ্তিস্বীকারপত্র এবং আয়কর প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করা যায়।
আয়কর যাদের জন্য প্রযোজ্য
আয়কর যাদের জন্য প্রযোজ্য তা হলো এনবিআরের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বার্ষিক
আয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে তাকে আয়কর দিতে হবে। তবে নারী ও ৬৫-ঊর্ধ্ব
নাগরিকদের করমুক্ত আয়ের সীমা চার লাখ টাকা। আর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য
এটি পাঁচ লাখ টাকা। এছাড়াও পূর্ববর্তী কর মূল্যায়ন, শহরে বাসস্থান, গাড়ির
মালিকানা, নির্দিষ্ট কিছু পেশার সদস্যপদ, ব্যবসা পরিচালনা এবং দরপত্র বা
নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্যও আয়কর পরিশোধ করতে হয়। এটি নিবন্ধিত কোম্পানি ও
এনজিওগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
করদাতা সনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকলে করযোগ্য আয় থাকুক বা না থাকুক, আয়কর
রিটার্ন দাখিল করতেই হবে। করযোগ্য আয় না থাকলে শূন্য রিটার্ন দাখিল করা যাবে।
সেটা না করলে আইনে শাস্তি ও জরিমানার বিধান আছে।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে যা লাগবে
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে বা ই-রিটার্ন দিতে করদাতাকে কোনো কাগজপত্র জমা
বা আপলোড করতে হয় না। শুধু প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো দাখিল করলেই হয়। তবে, সকল
কাগজপত্র সংগ্রহে থাকা উচিত, কর অফিস থেকে যাচাই করতে চাইলে যেন দেখানো যায়।
তাহলে তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার ঝুঁকি কমবে। তবে অফলাইনে কর দেওয়ার সময়
বেশ কিছু কাগজপত্র সরবরাহ করতে হয়। যেমন- ইটিআইএন, জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি,
আগের রিটার্নের কপি ইত্যাদি।
- অনলাইন রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হয়। এর জন্য প্রয়োজন ট্যাক্সপেয়ার ইনডেক্স নাম্বার বা টিআইএন এবং ‘বায়োমেট্রিক ভেরিফাইড’ মোবাইল ফোন নম্বর।
- আইন অনুযায়ী, টিআইএন থাকলেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। সেটি না করলে জরিমানা করার বিধান রয়েছে।
- তবে, রিটার্ন দাখিল করলেই যে আয়কর দিতে হবে তা নয়। কারো আয় যদি করযোগ্য না হয় তার কর দেবার প্রয়োজন নেই, শুধু রিটার্ন জমা দিলেই হবে।
- নিবন্ধনের পর সাইন ইন করে ড্যাশবোর্ডের 'সাবমিশন' অপশনে যেতে হবে। এই অপশনে ‘রেগুলার ই-রিটার্ন’ ও ‘সিঙ্গেল পেজ রিটার্ন’ ক্যাটাগরি বেছে নিতে হয়।
- করযোগ্য আয় পাঁচ লাখ টাকার বেশি না হওয়া, গণকর্মচারী না হওয়ার মতো সাতটি শর্ত মিলে গেলে সিঙ্গেল পেজ বা এক পাতার রিটার্ন পূরণ করার প্রক্রিয়ায় এগোতে হবে।
- সেখান থেকে 'অ্যাসেসমেন্ট ইনফরমেশন'-এ গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পূরণ করতে হবে।
- আয়ের সময় এবং উৎস উল্লেখ করতে হবে এখানে। সেই সাথে যত ধরনের খাত থেকে আয় হয় সেগুলোও উল্লেখ করতে হবে।
- এরপর ধাপে ধাপে পূরণ করতে হবে আয়ের বিবরণ, কর রেয়াতের তথ্য, ব্যয়, সম্পদ ও দায়, কর ও পরিশোধ।
- আয়ের বিবরণ অংশে আয়ের ধরন নির্ধারণ করতে হবে।
- যেমন - চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে সরকারি না বেসরকারি, প্রতিষ্ঠানের নাম, বেতনকাঠামো বাছাই করা।
- কর রেয়াত পাওয়ার ক্ষেত্রে বিনিয়োগের তথ্য প্রদান করতে হবে। সেজন্য বেছে নিতে হবে ইন্সুরেন্স, ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র বা অন্যান্য বিনিয়োগের সংশ্লিষ্ট খাত।
- অন্যান্য ধাপগুলোও একইভাবে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে পার করার পর ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফর্ম প্রস্তুত হবে।
- আগে এই কাজগুলো পেশাদার ব্যক্তিদের দিয়ে করানো হতো বলে অনেকের কাছেই, বিস্তারিত তথ্য দেয়ার বিষয়টি নতুন বলে গণ্য হবে,” বলছিলেন ইনকাম ট্যাক্স কনসালটেন্ট ও আইনজীবী তারিক রিভী।
- তাই, প্রথমবার যারা অনলাইনে সাবমিট করবেন তাদের হয় এক্সপার্ট, না হয় কোনো অভিজ্ঞ ট্যাক্সপেয়ারকে দেখিয়ে নেয়া উচিত,” যোগ করেন তিনি।
- রিটার্ন ফর্ম তৈরির পর সেটি ডাউনলোড করে অনলাইনেই সাবমিট করা যাবে।
কর দেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
কর দেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ইটিআইএন, জাতীয় পরিচয় পত্রের (এনআইডি)
ফটোকপি, বিস্তারিত ঠিকানা এবং আগের বছরের রিটার্নের নথি প্রয়োজন হবে। একাধিক
আয়ের উৎস থাকলে তার কাগজপত্র, বিনিয়োগের বিবরণ, সম্পত্তির তথ্য এবং করমুক্ত
আয়ের সার্টিফিকেট অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নাম্বার)
সনদধারী প্রতিটি বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করা
বাধ্যতামূলক।
বয়স ১৮ অতিক্রম করলে টিআইএন সদন নেওয়াও বাধ্যতামূলক। আপনি যখন টিআইএন-এর জন্য
আবেদন করবেন, আপনাকে কর দাখিলের জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকা বরাদ্দ করা হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে তখন আপনাকে আয় বিবরণী জমা দিতে হবে। এরপর নিজে
গিয়ে অথবা কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কর অফিসে আয়কর রিটার্ন
দাখিল করতে হবে।
যেভাবে ধাপে ধাপে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করবেন
টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নাম্বার) সনদধারী প্রতিটি বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য
প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। বয়স ১৮ অতিক্রম করলে টিআইএন সদন
নেওয়াও বাধ্যতামূলক। কেউ যখন টিআইএন-এর জন্য আবেদন করবে,তখন কর দাখিলের জন্য
একটি নির্দিষ্ট এলাকা বরাদ্দ করা হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আয় বিবরণী জমা
দিতে হবে। এরপর নিজে গিয়ে অথবা কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কর
অফিসে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে চাইলে প্রথমে এনবিআরের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন
করতে হবে। নিবন্ধন করতে, ওয়েবসাইটের ই-রিটার্ন শাখায় ক্লিক করুন।
সেখানে ‘সাইন আপ’ অপশনে গিয়ে প্রথম বক্সে আপনার টিআইএন নাম্বার লিখুন। দ্বিতীয়
বক্সে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত মোবাইল
নাম্বারটি লিখুন (প্রথম শূন্য বাদ দিয়ে)। এরপর ক্যাপচা কোড দিয়ে ‘ভেরিফাই’
বাটনে ক্লিক করুন। ফোনে আসা ওটিপি ব্যবহার করে আপনার ফোন নাম্বারটি নিশ্চিত
করুন। সবশেষে ই-রিটার্ন সিস্টেমে লগ ইন করতে একটি পাসওয়ার্ড ঠিক করুন।
ধাপ ১ঃ ই-রিটার্ন সিস্টেমে প্রবেশঃ একবার নিবন্ধন করা হয়ে গেলে এরপর আপনি ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার টিআইএন, পাসওয়ার্ড এবং ক্যাপচা দিয়ে সাইন ইন করতে পারবেন। এরপর একটি ড্যাশবোর্ড পাবেন। এর বাম দিকে থাকা ‘রিটার্ন সাবমিশন’ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ ২ঃ কর যাচাইয়ের তথ্যঃ ই-রিটার্ন ফরমের শুরুতেই থাকবে ‘ট্যাক্স
অ্যাসেসমেন্ট ইনফরমেশন’। সেখানে আয়কর সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য– রিটার্ন স্কিম,
আয়ের সাল ও উৎস দিতে হবে। আয় যদি করমুক্ত হয়, তাহলে আয়ের পরিমাণের পাশাপাশি
'রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস' দিতে হবে।
ধাপ ৩ঃ আয়ের বিবরণঃ এই পর্যায়ে, ‘হেডস অফ ইনকাম’-এ গিয়ে আপনার বিভিন্ন
আয়ের উৎস দিন। এখানে আপনার বেতন, নিরাপত্তা সুদ, বাড়ি-সম্পত্তি থেকে আয়, কৃষি
আয়, ব্যবসা থেকে আয়, মূলধন লাভ এবং অন্যান্য উৎস থেকে আয় অন্তর্ভুক্ত করতে
পারবেন।
যদি আপনার বেতন আপনার আয়ের একমাত্র উৎস হয়, তাহলে ‘স্যালারি’ অপশনে ক্লিক
করুন। এর বাইরে আয় থেকে থাকলে ‘ইনকাম ফ্রম আদার সোর্সেস’ অপশনে ক্লিক করুন।
সেখানে অন্যান্য যেসব উৎস থেকে আয় করে থাকেন, তাতে ক্লিক করুন।
এরপর সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।
ধাপ ৪ঃ অতিরিক্ত তথ্যঃ এই ধাপে একটি ড্রপডাউন মেনু থেকে আপনার প্রাথমিক
আয়ের উৎসের স্থান ঠিক করবেন। সেখানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ
সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মতো অনেকগুলো অপশন থাকবে।
আপনি যদি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির আইনি
অভিভাবক হয়ে থাকেন, সেটিও এখানে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এছাড়া, বিনিয়োগের
জন্য আপনি করমুক্তির দাবিদার কি না এবং আপনি কোনো সংস্থার শেয়ারহোল্ডার
পরিচালক কি না, তা 'হ্যাঁ' বা 'না'-এর মাধ্যমে উত্তর দেবেন।
ধাপ ৫ঃ আইটি ১০বি পূরণঃ যদি আপনার সম্পূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ৪০ লাখ টাকা
বা তারচেয়ে বেশি হয়, তাহলে আপনাকে অবশ্যই স্টেটমেন্ট ফর্মের ব্যয় বিভাগটি
পূরণ করতে হবে। এজন্য আইটি ১০বি ফর্ম পূরণ করতে হবে। সম্পদের পরিমাণ ৪০ লাখের
কম হলে তা পূরণ করতে হবে না। এক্ষেত্রে, আপনার ও আপনার পরিবারের বার্ষিক খরচের
হিসেব দিতে হবে।
এরপর সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ' অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।
ধাপ ৬ঃ আয়ের বিবরণঃ অন্যান্য উৎস থেকে আসা আয়, বৈদেশিক আয় বা
কর-অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয়ের বিবরণ দিন। বেতন বা করযোগ্য বিনিয়োগ ছাড়া অন্যান্য
উৎস থেকে আসা আয়ের তথ্য দিতে আপনি ড্রপডাউন মেনুতে বিভিন্ন অপশন পাবেন।
এনি আদার ইনকাম' অপশনে ক্লিক করলে সেখানে আপনার অন্য আয়ের উৎস, অর্থ
প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ, প্রাপ্ত সর্বশেষ আয়ের তারিখ ও পরিমাণ, এবং সংশ্লিষ্ট
ব্যয়ের হিসেব দিতে হবে। এসব তথ্য দেওয়ার পর আপনার নেট আয়ের হিসেব দেখানো হবে।
আবার 'সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ' অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।
ধাপ ৭ঃ বিনিয়োগ বিভাগঃ আপনি যদি বর্তমানে জীবন বীমা প্রিমিয়াম,
ডিপোজিট প্রিমিয়াম সার্ভিস (ডিপিএস), অনুমোদিত সঞ্চয়পত্র, সাধারণ প্রভিডেন্ট
ফান্ড, বেনেভোলেন্ট ফান্ড, গ্রুপ বীমা প্রিমিয়াম, অনুমোদিত স্টক বা শেয়ার,
কিংবা অন্যান্য ক্যাটাগরিতে বিনিয়োগ করে থাকেন, সেগুলো এখানে উল্লেখ করবেন।
ধরুন আপনি যদি 'ডিপিএস' অপশনে ক্লিক করেন, তাহলে সেখানে ব্যাংকের নাম,
অ্যাকাউন্ট নাম্বার এবং জমাকৃত অর্থের পরিমাণ দিতে হবে। এভাবে অন্যান্য অপশনে
গেলেও আপনাকে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।
আবার 'সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ' অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।
ধাপ ৮ঃ ব্যয়ঃ এই বিভাগে, মোট আয়ের বিপরীতে আপনার মোট ব্যয় পর্যালোচনা
করতে পারবেন। এখানে বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের বিভাগ থাকবে। খাদ্য, পোশাক, বাসস্থান
(পরিবহন, গৃহস্থালি, ইউটিলিটিসহ), বাচ্চাদের শিক্ষা এবং অন্য কোনো ব্যয়ের খাত
থাকলে তা অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। এই বিবরণগুলো পূরণ করলে আপনার বকেয়া করের
হিসেব দেওয়া হবে।
ধাপ ৯ঃ কর এবং পেমেন্টঃ এখানে আপনি ইতোমধ্যে কোনো উৎস কর এবং অগ্রিম কর
প্রদান করে থাকলে তার হিসেব দিতে পারবেন। এই হিসেব দেওয়ার পর আপনার মোট প্রদেয়
করের পরিমাণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে। আপনার আয়ের উপর কোনো কর বকেয়া না থাকলে
আপনার প্রদেয় করের পরিমাণ হবে শূন্য। একে 'শূন্য রিটার্ন' বলা হয়।
ধাপ ১০ঃ রিটার্ন ভিউঃ 'অনলাইন রিটার্ন' অপশনে ক্লিক করলে আপনি রিটার্ন
ফর্মটি দেখতে পাবেন। তার নিচে 'ইয়েস' অপশনে ক্লিক করলেই আপনার রিটার্ন চলে
যাবে। কোনো তথ্য নিয়ে সন্দেহ থাকলে আপনি 'নো' অপশনে ক্লিক করতে পারেন এবং আবার
সব তথ্য দেখে নিতে পারেন।
ধাপ ১১ঃ রসিদ ডাউনলোড করুনঃ আয়কর রিটার্ন সফলভাবে জমা হয়, তাহলে আপনাকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি বার্তা লেখা দেখবেন। সেখানে আপনি একটি রেফারেন্স আইডি ডাউনলোড করার অপশন পাবেন। সেটি ডাউনলোড করে অনলাইনেই আপনি আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। অথবা সেটি প্রিন্ট করে আয়কর অফিসে পাঠাতে পারেন।
এই প্রক্রিয়াটি জটিল মনে হলে এখান থেকে ডান পাশে নিড হেল্প অপশনে চাপ দিন। এছাড়া বিডিটেক্স এবং শাপলা ট্যাক্সের মতো অনেক অনলাইন প্লাটফর্ম ও অ্যাপ্লিকেশন আছে, যেগুলো আপনাকে আয়কর রিটার্ন দাখিলে সাহায্য করবে।
আয়কর রিটার্ন জমা না দেয়ার শাস্তি
করদাতাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে আবশ্যিকভাবে ধারা-১৩০ মোতাবেক
নোটিশ প্রদান সাপেক্ষে খেলাপী করদাতার সর্বশেষ আরোপিত আয়করের ১০% অথবা কমপক্ষে
১,০০০.০০ টাকা ও পরবর্তী প্রতি খেলাপী দিবসের জন্য ৫০.০০ টাকা, উপ-কর কমিশনার
জরিমানা আরোপ করতে পারবেন। তবে অর্থ আইন ২০১৫ এর মাধ্যমে সংযোজিত প্রভাইসো
মোতাবেক-
(১)কোন ব্যক্তি-করদাতা, যাহার আয়ের উপর ইতোপূর্বে কখনো করারোপিত হয় নাই, তাঁহার
ক্ষেত্রে আরোপযোগ্য মোট জরিমানা পরিমান ৫,০০০/- টকার বেশি হবে না।
(২)কোন ব্যক্তি-করদাতা, যাহার আয়ের উপর ইতোপূর্বে করারোপিত হইয়াছে এমন কোন পুরোনো
ব্যক্তি-করদাতার ক্ষেত্রে এইরূপ জরিমানার পরিমাণ তাঁহার সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর
ধার্যকৃত করের ৫০% বা ১,০০০/- টাকা, দু’টির মধ্যে যেটি বেশি, তার বেশি হবে না।
কর নির্ধারণ পদ্ধতি ও রিটার্নের প্রকারভেদ
বর্তমানে কর নির্ধারণ পদ্ধতি ও রিটার্নের প্রকারভেদ দু’টি পদ্ধতি
প্রচলিত আছে- সাধারণ পদ্ধতি ও সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতি। করদাতা সার্বজনীন
স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করতে চাইলে রিটার্ন ফরমে বিষয়টি চিহ্নিত
করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যারা ২০২৪-২৫ কর বছরে নতুন প্রবর্তিত ফরমে রিটার্ন দাখিল
করবেন তারা রিটার্নের প্রথম পৃষ্ঠার ক্রমিক নং-২ এর 82BB ধারার অধীনে রিটার্ন
দাখিল করা হয়েছে কিনা এ সংক্রান্ত তথ্যের বিপরীতে “হ্যাঁ” এর ঘরে (Ö) চিহ্ন
দিবেন।
ক্রমিক নং-২ এর “না” এর ঘরে (Ö) চিহ্ন প্রদান করলে বা কোন ঘরে (Ö) চিহ্ন প্রদান
না করলে রিটার্নটি সাধারণ পদ্ধতির আওতায় দাখিলকৃত বলে গণ্য হবে। তবে এক পৃষ্ঠার
আয়কর রিটার্ন ফরম IT-GHA2020 সরাসরি সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিলযোগ্য
রিটার্ন।
সার্বজনীন স্বনির্ধারনী পদ্ধতিঃ সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন
দাখিলের ক্ষেত্রে করদাতা তার নিজের আয় নিজে নিরূপণ করে প্রযোজ্য আয়কর পরিশোধ
করেন। ২০২৪-২০২৫ কর বছরে কোনো ১২-ডিজিট টিআইএনধারী ব্যক্তি-করদাতা রিটার্নে
প্রদর্শিত মোট আয়ের উপর প্রযোজ্য সমুদয় আয়কর ও সারচার্জ পরিশোধ পূর্বক ১
জুলাই ২০২৪ হইতে ৩০ জুন ২০২৫ তারিখের মধ্যে বা উপ কর কমিশনার কর্তৃক মঞ্জুরকৃত
বর্ধিত সময়ের মধ্যে সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।
করদাতার ১২-ডিজিট টিআইএন না থাকলে করদাতা সার্বজনীন স্বনির্ধারনী পদ্ধতিতে
রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন না। তাছাড়া, মোট আয়ের প্রযোজ্য সমুদয় আয়কর ও সারচার্জ
পরিশোধ করা না হলে অথবা ৩০ জুন ২০২৫ তারিখের মধ্যে বা উপ কর কমিশনার কর্তৃক
মঞ্জুরকৃত বর্ধিত সময়ের মধ্যে দাখিলকৃত না হলে করদাতার রিটার্ন সার্বজনীন
স্বনির্ধারণী পদ্ধতির আওতায় পড়বে না।
বর্ণিত সকল শর্ত পূরণ করে সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতির আওতায় রিটার্ন দাখিল
করা হলে আয়কর বিভাগ থেকে করদাতাকে যে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র প্রদান করা হয় তা-ই কর
নির্ধারণী আদেশ (assessment order) বলে গণ্য হয়।
পরবর্তীতে উপ কর কমিশনার কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিতকরণের
লক্ষ্যে রিটার্নটি process করেন। রিটার্ন process এর ফলশ্রুতিতে যদি দেখা যায়
করদাতা প্রদেয় অংকের চেয়ে কম বা বেশি আয়কর ও প্রযোজ্য অন্যান্য অংক পরিশোধ
করেছেন, তাহলে উপকর কমিশনার করদাতাকে তা অবহিত করে এ বিষয়ে পরবর্র্তী কার্যক্রম
গ্রহণ করবেন।
সকল শর্ত পূরণ করে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে
রিটার্ন দাখিলের পর কোন করদাতা যদি দেখেন যে অনিচ্ছাকৃত ভুলে কম আয় প্রদর্শন অথবা
বেশি রেয়াত, কর অব্যাহতি বা ক্রেডিট দাবী/প্রদর্শন, অথবা অন্য কোন কারণে কর বা
প্রযোজ্য অন্য কোন অংক কম পরিশোধ বা পরিগণনা করা হয়েছে তাহলে করদাতা নিজে থেকে
একটি ভুল-সংশোধনী রিটার্ন উপ কর কমিশনারের বিবেচনার জন্য তার নিকট দাখিল করতে
পারবেন। এরূপ ভুল-সংশোধনী রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত শর্ত পরিপালন করতে
হবে।
▪ ভুল-সংশোধনী রিটার্নে সাথে ভুলের ধরন ও কারণ উল্লেখপূর্বক লিখিত বিবরণী দাখিল
করতে হবে।
▪ যে পরিমাণ কর বা প্রযোজ্য অন্য কোন অংক কম পরিশোধ করা হয়েছে সে পরিমাণ অংক এবং
তার অতিরিক্ত হিসেবে উক্তরূপ অংকের উপর মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ভুল-সংশোধনী
রিটার্ন দাখিলের আগে বা দাখিলের সময় পরিশোধ করতে হবে।
ভুল-সংশোধনী রিটার্নে ৮২ বিবি (৫) ধারায় দাখিলকৃত বা Filed under section 82BB(5)
কথাটি উল্লেখ থাকতে হবে।
ভুল-সংশোধনী রিটার্ন দাখিল করার পর উপ কর কমিশনার যদি সন্তুষ্ট হন যে এ সংক্রান্ত
সকল শর্ত যথাযথভাবে পূরণ হয়েছে তাহলে তিনি রিটার্নটি জমাগ্রহণ (allow) করবেন।
রিটার্নটি জমাগ্রহণের উপযুক্ত হলে উপ কর কমিশনার প্রাপ্তি স্বীকারপত্র ইস্যু
করবেন। প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে “82বিবি(5) ধারায় জমাগ্রহণ করা হলো বা Allowed
under section 82BB(5) কথাটি উল্লেখ থাকবে।
তবে স্বনির্ধারণী রিটার্ন দাখিলের পর ১৮০ দিন অতিক্রান্ত হলে বা মূল রিটার্নটি
অডিটের জন্য নির্বাচিত হলে এরূপ ভুল-সংশোধনী রিটার্ন দাখিল করা যাবে না। এরূপ
ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিল করলেও তা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নির্ধারিত criterion এর ভিত্তিতে সার্বজনীন স্বনির্ধারণী
পদ্ধতিতে দাখিলকৃত কোন রিটার্ন বা ভুল-সংশোধনী রিটার্ন অডিটের জন্য নির্বাচন করে
তা উপ কর কমিশনারের নিকট প্রেরণ করতে পারবে।
অডিটের জন্য নির্বাচিত রিটার্নের অডিট পরিচালনার পর উপকর কমিশনার করদাতার আয়,
সম্পদ, দায়, ব্যয় ইত্যাদি বিষয়ে রিটার্নে বা ভুল-সংশোধনী রিটার্নে প্রদর্শিত
তথ্যের বাইরে নতুন কিছু না পেলে অডিট কার্যক্রম নিষ্পত্তিকৃত বলে করদাতাকে
লিখিতভাবে অবহিত করবেন।
আর যদি অডিট পরিচালনার ফলশ্রুতিতে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় করদাতার রিটার্নে বা
ভুল-সংশোধনী রিটার্নে তার আয়, সম্পদ, দায়, ব্যয় ইত্যাদির তথ্য যথাযথভাবে
প্রতিফলিত হয়নি তাহলে উপ কর কমিশনার অডিটে প্রাপ্ত তথ্য অবহিত করে করদাতাকে নোটিশ
প্রদান করবেন। এতে, নোটিশে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে অডিটে প্রাপ্ত তথ্যের প্রতিফলন
ঘটিয়ে সংশোধিত রিটার্ন (revised return) দাখিলের জন্য এবং উক্তরূপ সংশোধিত
রিটার্নের ভিত্তিতে প্রযোজ্য কর ও অন্যান্য প্রদেয় অংক রিটার্ন দাখিলের আগে বা
দাখিলের সময় পরিশোধের জন্য বলা থাকবে।
নোটিশের প্রেক্ষিতে যদি করদাতা কর্তৃক সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করা হয় এবং উপ কর
কমিশনার যদি এ মর্মে সন্তুষ্ট হন যে রিটার্নটিতে অডিটে প্রাপ্ত তথ্যের যথাযথ
প্রতিফলন রয়েছে এবং সংশোধিত রিটার্নের ভিত্তিতে প্রযোজ্য কর ও অন্যান্য প্রদেয়
অংক রিটার্ন দাখিলের আগে বা দাখিলের সময় সম্পূর্ণরূপে পরিশোধিত হয়েছে তাহলে উপ কর
কমিশনার সংশোধিত রিটার্নটি গ্রহণ করে করদাতাকে একটি গ্রহণপত্র (letter of
acceptance) প্রদান করবেন।
আর যদি নোটিশে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে বা উপকর কমিশনার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে
মঞ্জুরীকৃত বর্ধিত সময়ের মধ্যে করদাতা সংশোধিত রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হন, অথবা
করদাতা সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করলেও রিটার্নটিতে অডিটে প্রাপ্ত তথ্যের যথাযথ
প্রতিফলন না থাকে অথবা সংশোধিত রিটার্নের ভিত্তিতে প্রযোজ্য কর ও অন্যান্য প্রদেয়
অংক রিটার্ন দাখিলের আগে বা দাখিলের সময় সম্পূর্ণরূপে পরিশোধিত না হয়, তাহলে উপ
কর কমিশনার ৮৩ বা ৮৪ ধারা অনুযায়ী (যেটি প্রযোজ্য) কর নির্ধারণ কার্যক্রম গ্রহণ
করবেন।
উল্লেখ্য, এ ধারায় দাখিলকৃত কোন ভুল-সংশোধনী রিটার্ন বা সংশোধিত রিটার্নে যদি
করমুক্ত আয় বা হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য আয় প্রদর্শন করা হয় তাহলে উক্ত রিটার্নে মূল
রিটার্ন অপেক্ষা যে পরিমাণ অতিরিক্ত করমুক্ত আয় বা হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য আয়
প্রদর্শন করা হবে তা করদাতার অন্যান্য সূত্রের আয় হিসাবে গণ্য হবে।
সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে ২০২৪-২০২৫ কর বছরে দাখিলকৃত কোন রিটার্ন বা
সংশোধিত রিটার্নে অব্যবহিত পূর্ববর্তী কর বছরের নিরূপিত আয় অপেক্ষা ন্যূনতম ১৫%
বেশি আয় প্রদর্শন করা হলে এবং করদাতা আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা 75A, 108 এবং
108A এ বর্ণিত শর্ত পরিপালন করলে এবং নিম্নোক্ত সকল শর্ত পূরণ হলে সে রিটার্ন
অডিট কার্যক্রমের আওতা বহির্ভূত থাকবে।
(১) কর-অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয় প্রদর্শন করা হয়েছে এরূপ রিটার্নের ক্ষেত্রে
কর-অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয়ের সপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণাদি সংযুক্ত করা হলে
(২) যে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আয়বছরে এক বা একাধিক উৎস হতে ৫ লক্ষ টাকার অধিক ঋণ
গ্রহণ প্রদর্শিত হয় সে ক্ষেত্রে উক্ত ঋণের সপক্ষে ব্যাংক বিবরণী বা হিসাব বিবরণী
দাখিল করা হলে, অর্থাৎ এরূপ ঋণ ব্যাংকিং (আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ) চ্যানেল গৃহীত
হলে।
(৩) সংশ্লিষ্ট আয়বছরে কোন দান গ্রহণ করা না হলে।
(৪) ধারা ৪৪ অনুযায়ী কর-অব্যাহতিপ্রাপ্ত বা হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য কোন আয়
প্রদর্শন করা না হলে।
(৫) রিটার্নে কোন কর ফেরৎ দাবী প্রদর্শন করা না হলে বা কর ফেরৎ সৃষ্টি না হলে।
২০২৪-২০২৫ কর বছরে আয়কর অধ্যাদেশের 82BB ধারায় সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে
দাখিলকৃত নতুন রিটার্নে ব্যবসা ও পেশা খাতে প্রদর্শিত আয়ের ৫ গুণ পর্যন্ত
প্রারম্ভিক পুঁজি প্রদর্শন করা হলে পুঁজির উৎস ব্যাখ্যা না করলেও চলবে। তবে এরূপ
ক্ষেত্রে প্রদর্শিত আয় করমুক্ত সীমার উর্ধ্বে হতে হবে, নিয়মিত হার প্রযোজ্য কর
পরিশোধ করতে হবে (অর্থাৎ কোন করমুক্ত আয় বা হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য আয় প্রদর্শন
করা যাবে না) এবং দাখিলকৃত রিটার্নের সাথে প্রারম্ভিক পুঁজি সুবিধা গ্রহণ করেছেন
মর্মে লিখিত ঘোষণা প্রদান করতে হবে। উক্ত প্রারম্ভিক পুঁজি ঐ আয়বছর এবং পরবর্তী
আরো চারটি আয়বছর সংশ্লিষ্ট ব্যবসা বা পেশায় ধরে রাখতে হবে। এ সময়ের কোন আয় বছরের
শেষে যদি দেখা যায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় বা পেশার পুঁজির পরিমাণ প্রারম্ভিক মূলধনের
পুঁজি অপেক্ষা কমে গেছে, তাহলে যে পরিমাণ পুঁজি কম হবে তা ঐ আয় বছরের “ব্যবসায়
খাতের আয়” হিসেবে করদাতার মোট আয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে।
সাধারণ পদ্ধতিঃ সাধারণ পদ্ধতির আওতায় দাখিলকৃত রিটার্নের ক্ষেত্রে
প্রাপ্তি স্বীকারপত্রটি কর নির্ধারণী আদেশ (assessment order) বলে গণ্য হয় না।
রিটার্ন দাখিলের পর উপ কর কমিশনার কর নির্ধারণ করেন। করদাতা কর্তৃক রিটার্নে
প্রদর্শিত তথ্য উপ কর কমিশনারের নিকট সঠিক মনে হলে তিনি করদাতাকে শুনানীতে না
ডেকেই কর নির্ধারণ করতে পারেন। আবার প্রদর্শিত আয়ের সমর্থনে যথোপযুক্ত তথ্য ও
প্রমাণাদি না থাকলে বা উপ কর কমিশনার প্রয়োজন মনে করলে করদাতাকে শুনানীতে উপস্থিত
হতে অনুরোধ করে করদাতার বক্তব্য, তথ্য, প্রমাণাদি বিবেচনায় নিয়ে কর নির্ধারণ করতে
পারেন।
উল্লেখ্য যে, নিরীক্ষার আওতায় না পড়লেও কোন রিটার্নে আয় গোপন করা হলে বা কর ফাঁকি
থাকলে, সংশ্লিষ্ট করবছরের রিটার্নের ক্ষেত্রে অধ্যাদেশের ৯৩ ধারা অনুযায়ী
প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। একই সাথে উক্ত রিটার্ন process ও করা
যাবে।
আয়কর রিটার্ন দাখিল সম্পর্কিত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর
আপনারা যারা আয়কর রিটার্ন দাখিল সম্পর্কিত সচোরাচর যে প্রশ্নগুলা গুগলে কিংবা কোনো ওয়েব সাইটে এসে সার্চ করে থাকেন তার সংক্ষেপে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর নিচে তুলে ধরা হলো। যা আয়কর রিটার্ন দাখিল সম্পর্কে আশা করছি আপনারা সংক্ষিপ্ত কিছু ধারনা লাভ করতে পারবেনঃ
প্রশ্নঃ কিভাবে অনলাইনে আয়কর দিতে হয়?
উত্তরঃ ই-রিটার্ন দিতে হলে www.etaxnbr.gov.bd/ ঠিকানায় গিয়ে
প্রথমে করদাতাকে নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন নিতে করদাতার নিজের কর শনাক্তকরণ
নম্বর (টিআইএন) ও বায়োমেট্রিক করা মোবাইল নম্বর লাগবে। এ দুটি দিয়ে নিবন্ধন
করে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে।
প্রশ্নঃ কোন সময়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়?
উত্তরঃ কোম্পানী ব্যতীত অন্যান্য সকল শ্রেণীর করদাতার ক্ষেত্রে
প্রতি বছর ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর এই ৩ মাস সময়সীমার মধ্যে আয়কর রিটার্ন
দাখিল করতে হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করা সম্বব না হলে একজন
করদাতা রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত কারণ উল্লেখ করে উপ কর
কমিশনারের কাছে সময়ের আবেদন করতে পারেন। সময় মঞ্জুর হলে বর্ধিত সময়ের মধ্যে
সাধারণ অথবা সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতির আওতায় রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব।
প্রশ্নঃ কোন ব্যক্তি আয়কর প্রদানের জন্য উপযুক্ত?
উত্তরঃ র্অথ আইন ২০১৫ এর আওতায় প্রত্যেক ব্যক্তি করদাতা (অনিবাসী
বাংলাদেশী সহ), হিন্দু যৌথ পরিবার, অংশীদারী ফার্ম, ব্যক্তি সংঘ এবং আইনের
দ্বারা সৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তির আয়ের সীমা ২,৫০,০০০/= টাকার উপরে হলে আয়কর
প্রদানের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন। তবে
(১) মহিলা এবং ৬৫ বৎসর বা তদুর্ধ বয়সের ব্যক্তি করদাতা আয় ৩,০০,০০০/= টাকা এর
উপরে হলে তিনি আয়কর প্রদানের উপযুক্ত হবনে।
(২) প্রতিবন্ধি করদাতা আয় ৩,৭৫,০০০/= টাকা এর উপরে হলে তিনি আয়কর প্রদানের
উপযুক্ত হবেন।
(৩) গেজেট ভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় সীমা ৪,২৫,০০০/= টাকা এর
উপরে হলে তিনি আয়কর প্রদানের উপযুক্ত হবেন।
প্রশ্নঃ আয়কর প্রদানের জন্য কোন বয়স সীমা আছে কি?
উত্তরঃ অর্থ আইন ২০১৫ এর আওতায় প্রত্যেক ব্যক্তি করদাতা উল্লেখ
থাকলেও করদাতার সুনির্দিষ্ট বয়সসীমা উল্লেখ নেই। তবে মহিলা এবং ৬৫ বছর বা
তদুর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তি, প্রতিবন্ধীদের এবং গেজেট ভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তি
যোদ্ধাদের কর মুক্তির সীমা ভিন্ন ভাবে উল্লেখ রয়েছে। তাই আয়সীমা ২,৫০,০০০/=
টাকা অতিক্রম করলে উক্ত আয়ের উপর কর প্রযোজ্য, সে ক্ষেত্রে বয়স বিবেচ্চ্য নয়।
প্রশ্নঃ রিটার্ন দাখিল না করলে কি হয়?
উত্তরঃ যারা করযোগ্য হওয়ার পরও একেবারেই কর দেন না, তাদের
ক্ষেত্রে, তিন ধরনের জরিমানা করা যায়। একটি হল যে পরিমাণ কর বকেয়া হয়েছে
সেটি ছাড়াও আরও ২৫ শতাংশ বাড়তি জরিমানা করার বিধান রয়েছে। যে পরিমাণ কর
বকেয়া হয়েছে তার উপর ২ শতাংশ হারে মাসিক সরল সুদ। যে পরিমাণ কর বকেয়া
হয়েছে তার সমপরিমাণ জরিমানা।
প্রশ্নঃ আয়কর রিটার্ন কোথায় জমা দিব ?
উত্তরঃ প্রত্যেক শ্রেণীর করদাতার রিটার্ন দাখিলের জন্য আয়কর সার্কেল নিধারণ করা আছে। সকল বেসামরিক সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারী ও পেনশনভূক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীর নাম শুরু হয়েছে তাঁদের কে নির্দিষ্ট অঞ্চলের নির্দিষ্ট সার্কেলে রিটার্ন্ জমা দিতে হবে। পুরনো করদাতারা তাঁদের বর্তমান সার্কেলে রিটার্ন্ জমা দিবেন। নতুন করদাতারা তাঁদের নাম, চাকুরীস্থল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানার ভিত্তিতে নির্ধারিত সার্কেলে ১২ সংখ্যার ই-টিআইএন উল্লেখ করে আয়কর রিটার্ন্ দাখিল করতে পারবেন।
করদাতারা প্রয়োজনে কাছাকাছি আয়কর অফিস বা কর পরামর্শ কেন্দ্র থেকে আয়র রিটার্ন্
দাখিল করার সার্কেল সম্পকেৃ জানতে পারবেন। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে
অনুষ্ঠিত আয়কর মেলায় করদাতাগণ আয়কর রিটার্ন্ দাখিল করতে পারেন। রিটার্ন্
দাখিলের সময় করদাতা বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাসেও রিটার্ন্ দাখিল করতে
পারেন।
অফলাইনে যেভাবে আয়কর রিটার্ন জমা দিবেন
সাধারণত প্রতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত—এই পাঁচ মাস
জরিমানা ছাড়া বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যায়। বর্তমানে দেশে প্রায় ৯০
লাখ টিআইএনধারী আছেন। তাদের মধ্যে প্রতিবছর ৩০ লাখের মতো লোক নিজেদের
আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত জানিয়ে রিটার্ন জমা দেয়। আয়কর রিটার্ন দাখিল করার
কাজটি মূলত আয়কর অফিসে গিয়ে করতে হয়। তবে এখন অনলাইনেও করা যায়।
যদি অফলাইনে করতে চান তাহলে আয়কর অফিস থেকে নির্দিষ্ট ফরম নিয়ে পূরণ করে
জমা দিলেই কাজ শেষ। তবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার জন্য নির্দিষ্ট ফরমের
সঙ্গে বেশ কিছু কাগজপত্রও যুক্ত করতে হয়। এই কাগজপত্রগুলো মূলত করদাতার
আয়ের উৎস ও পরিমাণের প্রমাণ হিসেবে প্রয়োজন হয়। করদাতাকে রিটার্ন দাখিলের
সময় ভিন্ন ভিন্ন খাত অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কাগজপত্র প্রদর্শন করতে হতে
পারে। যেমনঃ
বেতন খাতঃ করদাতা যদি সরকারি বা বেসরকারি বেতনভুক্ত কর্মকর্তা হন
তাহলে তাঁকে যেসব নথিপত্র সংযুক্ত করতে হবে তা হলো বেতন বিবরণী, ব্যাংক
হিসাব থাকলে কিংবা ব্যাংক সুদ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী বা ব্যাংক
সার্টিফিকেট, বিনিয়োগ ভাতা দাবি থাকলে তার সপক্ষে প্রমাণাদি। যেমন—জীবন
বীমার পলিসি থাকলে প্রিমিয়াম পরিশোধের প্রমাণ।
নিরাপত্তা জামানতের সুদ খাতঃ বন্ড বা ডিবেঞ্চার যে বছরে কেনা হয় সে
বন্ড বা ডিবেঞ্চারের ফটোকপি, সুদ আয় থাকলে সুদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের
প্রত্যয়নপত্র, প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ নিয়ে বন্ড বা ডিবেঞ্চার কেনা হয়ে থাকলে
ঋণের সুদের সমর্থনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সার্টিফিকেট বা ব্যাংক
বিবরণী বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রত্যয়নপত্র রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
গৃহ-সম্পত্তি খাতঃ বাড়িভাড়ার সমর্থনে ভাড়ার চুক্তিনামা বা ভাড়ার
রসিদের কপি, মাসভিত্তিক বাড়িভাড়া প্রাপ্তির বিবরণ এবং প্রাপ্ত বাড়িভাড়া
জমাসংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব বিবরণী, পৌর কর, সিটি করপোরেশন কর, ভূমি রাজস্ব
প্রদানের সমর্থনে রসিদের কপি, ব্যাংকঋণের মাধ্যমে বাড়ি কেনা বা নির্মাণ করা
হয়ে থাকলে ঋণের সুদের সমর্থনে ব্যাংক বিবরণী ও সার্টিফিকেট ও গৃহ-সম্পত্তি
বীমাকৃত হলে বীমা প্রিমিয়ামের রসিদের কপি রিটার্নের সঙ্গে সংযুক্ত করতে
হবে।
ব্যবসা বা অন্যান্য পেশা খাতঃ ব্যবসা বা অন্যান্য পেশার আয়-ব্যয়ের
বিবরণী ও স্থিতিপত্র আয়কর রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
অংশীদারি ফার্মের আয়ঃ অংশীদারি ফার্মের ব্যবসা থাকলে ফার্মের
আয়-ব্যয়ের বিবরণী ও স্থিতিপত্র জমা দিতে হবে। অন্যান্য উৎসের আয়ের খাত, নগদ
লভ্যাংশ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী, ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্টের কপি বা
সার্টিফিকেট, সঞ্চয়পত্র হতে সুদ আয় থাকলে সঞ্চয়পত্র নগদায়নের সময় বা
সুদপ্রাপ্তির সময় নেওয়া সার্টিফিকেটের কপি, ব্যাংক সুদ আয় থাকলে ব্যাংক
বিবরণী কিংবা সার্টিফিকেট ও অন্য যেকোনো আয়ের উৎসের জন্য প্রাসঙ্গিক
কাগজপত্র।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার নিয়ম
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার নিয়ম সাধারণত প্রতি অর্থবছরের জুলাই থেকে
নভেম্বর পর্যন্ত এই পাঁচ মাস জরিমানা ছাড়া বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যায়।
৩০ নভেম্বর দেশে আয়কর দিবস হিসেবে পালিত হয়। এদিনই ব্যক্তি করদাতাদের আয়কর
রিটার্ন জমার শেষ তারিখ। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত আয়কর মেলায়
করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।
চাইলেই আপনি ঘরে বসে সহজেই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। আয়কর অফিসে গিয়ে
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার ঝামেলায় পড়তে হবে না। এছাড়াও ই-রিটার্ন থাকার অনেক সুবিধা
রয়েছে। এটা দিয়ে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন, ই-পেমেন্ট করতে পারবেন। এমনকি ঘরে
বসেই সনদ, আয়কর রিটার্নের কপি নেওয়া যাবে এবং রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ানোর
আবেদন করার সুযোগ রয়েছে অনলাইনে। চলুন দেখে নেওয়া যাক অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা
দেওয়ার নিয়মঃ
১. অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য প্রথমে etaxnbr.gov.bd লিঙ্ক বা জাতীয়
রাজস্ব বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান।
২. এবার এখান থেকে ই-রিটার্ন অপশন সিলেক্ট করুন।
৩. এবার ‘গাইডলাইন’ অপশনে গিয়ে গাইডলাইনগুলো ভালোভাবে পড়ে নিন।
৪. আগে থেকেই অ্যাকাউন্ট করা থাকলে সেটি লগ ইন করুন। না থাকলে রেজিস্ট্রেশন
অপশনে ক্লিক করে অ্যাকাউন্ট করে নিন।
৫. আপনার টিন নম্বর, মোবাইল নম্বর ও একটি ক্যাপচা থাকবে সঠিকভাবে দিয়ে ভেরিফাই
অপশনে ক্লিক করে দিন।
৬. আপনার দেওয়া ফোন নম্বরে যে ওটিপি কোড যাবে সেটি এবার বসিয়ে একটি নতুন
পাসওয়ার্ড দিয়ে দিন। নতুন পাসওয়ার্ডটি আবার দিয়ে সাবমিট করুন।
৭. এরপর লগইন করলেই একটি ইন্টারফেস পাবেন। যেখানে আপনার নাম ঠিকানাসহ বিভিন্ন
তথ্য দিয়ে পূরণ করে সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ দিলেই একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে।
৮. এখন নিজের টিআইএন এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে যে কোনো সময় যে কোনো জায়গা থেকে
অ্যাকাউন্ট সাইন ইন করতে পারবেন।
৯. নিবন্ধন হয়ে গেলে সাইন-ইন করুন এবং বামে উপরে থাকা রিটার্ন সাবমিশন অপশনে
গেলেই একটি ফরম আসবে। আপনার সব তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করুন।
১০. এভাবে পরের স্টেপগুলোতে আসা ফরমগুলো পূরণ করুন। আপনার ইনকাম সোর্সগুলো
সঠিকভাবে বাছাই করুন বা লিখে দিন। তাহলে পরের স্টেপে পাবেন ট্যাক্স অ্যান্ড
পেমেন্ট নামের একটি পেজ। সেখানে আপনাকে কত টাকা ট্যাক্স দিতে হবে সেটিও দেখতে
পাবেন।
১১. যাদের করযোগ্য আয় নেই তাদের ‘জিরো ট্যাক্স’ আসবে। তারা প্রসিট টু অনলাইন
রিটার্ন অপশনে ক্লিক করে দিন। তাহলে আপনার রিটার্ন ফ্রম আপনার সামনে আসবে। এখান
থেকে ভালোভাবে আবার তথ্য যাচাই করার সুযোগ পাবেন। এরপর সাবমিশন রিটার্ন অপশনে
ক্লিক করে দিন। ইয়েস এবং নো দুইটি বার আসবে ইয়েস ক্লিক করলেই আপনার রিটার্ন
সাবমিট হয়ে যাবে। আপনাকে একটি রেফারেন্স নম্বর দেওয়া হবে।
১২. যাদের ট্যাক্স দিতে হবে তারা পে নাও অপশনে যান। এখানে আপনি কীভাবে
ট্যাক্সের টাকা পরিশোধ করতে চান তার বিভিন্ন অপশন পাবেন। এরপর সেখানে গিয়ে
পেমেন্ট করে দিন।
১৩. সবশেষে আপনার রিটার্ন ও ট্যাক্স জমা দেওয়ার স্লিপ ও সার্টিফিকেট ডাউনলোড
করে সংরক্ষণ করুন। আপনার হোম পেজের উপরের বামেই সার্টিফিকেট, রিটার্ন ফরম
সবকিছু পেয়ে যাবেন।
আয়কর রিটার্ন দাখিল সম্পর্কে শেষকথা
অনলাইনে যেভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন সে বিষয়ে মোটামোটি ধারনা পয়েছেন।
ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে করদাতারা নিজের রিটার্ন তৈরি, অনলাইনে
রিটার্ন দাখিল অথবা অফলাইনে রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রিন্ট গ্রহণ, অনলাইন
ব্যাংকিং, ক্রেডিট, ডেবিট কার্ড বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (নগদ,
বিকাশ, রকেট ইত্যাদি) এর মাধ্যমে কর পরিশোধ, রিটার্ন দাখিলের তাৎক্ষণিক
প্রমাণ প্রাপ্তি, আয়কর পরিশোধ সনদ ও টিআইএন সনদ প্রাপ্তি, পূর্ববর্তী কর
বছরের দাখিল করা ই-রিটার্নের কপি ও রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ ডাউনলোডের
সুবিধা পাবেন।
এই সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করতে টিআইএন ও করদাতার নিজ নামে বায়োমেট্রিক
ভেরিফায়েড মোবাইল নম্বর প্রয়োজন হবে। আয়কর কর্তৃপক্ষের নিকট বাৎসরিক আয়ের
সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আযকর রিটার্ন। আয়কর রিটানের
কাঠামে আয়কর বিধি দ্বারা নির্দিষ্ট করা আছে। আয়কর আইন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব
বোর্ড কতৃর্ক নির্ধারিত ফরমে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। আশা করছি অনলাইনে
যেভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন সে বিষয় সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url