শীতকালীন রোগ ও তার প্রতিকারের উপায়


শীতকালীন রোগ ও তার প্রতিকারের উপায় জানা থাকলে শীতের শুরুতেই আপনার পক্ষে শীতকালীন বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হবে। শীতের এই সময়টায় ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাগুলোই বেশি দেখা যায়। যেমন কাশি, অ্যাজমার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া, সাময়িক জ্বর, কোল্ড অ্যালার্জি হয়ে থাকে।
শীতকালীন-রোগ-ও-তার-প্রতিকারের-উপায়
এ সময় বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকায় অনেকে অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা যায়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষদের কাশি, কোল্ড অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যা প্রতিরোধ-প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে আজকের এই আর্টিকেলে।

পেইজ সূচিপত্রঃ শীতকালীন রোগ ও প্রতিকারের উপায়

শীতকালীন রোগ সমূহ

শীতকালীন রোগ সমূহ কি কি জানতে চেয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন। শীতের শুরুতে হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে অনেকেই সহজে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেন না। অনেকেই নানা অসুখে আক্রান্ত হন। ঠান্ডাজনিত নানা অসুখ-বিসুখ মানুষকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দেয়। যেমন সর্দি-জ্বর, কাশি-হাঁচি ও শ্বাসকষ্ট। এ সময় কারো ঠান্ডাজনিত সমস্যা হলে তা সহজে না সারার প্রবণতা থাকে।
এসময় বিভিন্ন শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ বেশী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ আমাদের শরীর কোন পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনের জন্য সময় নেয়। তাই হঠাৎ এই আবহাওয়ার পরিবর্তনে মানুষ নানা অসুখে আক্রান্ত হয়। কিন্তু কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে সহজেই এগুলোকে দূরে রাখা বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ বিষয়ে নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

ভাইরাস জ্বরঃ আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ বেশ দেখা যায়। শীতকালে ভাইরাস জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী থাকে। বিভিন্ন ভাইরাস যেমন- অ্যাডিনোভাইরাস, রাইনোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি মূলত ভাইরাস জ্বরের জন্য দায়ী। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও যাদের শরীরে অন্য রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস আছে, তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম, প্রচুর তরল জাতীয় খাবার, বিশেষত খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, লেবু-চিনির শরবত এ সময়টায় বেশ উপকারী।

অ্যালার্জি ও অ্যাজমাঃ শীতকালের বেশ পরিচিত সমস্যা হচ্ছে অ্যালার্জি ও অ্যাজমা। শীতকালে অ্যালার্জি ও অ্যাজমা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। অ্যালার্জি ও অ্যাজমা রোগ দুটি অনেক ক্ষেত্রে একসঙ্গে হয়, যদিও কোনটির প্রকাশ আগে হতে পারে। বারবার সর্দি-হাঁচি-কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বুকে চাপ সৃষ্টি করে ও আওয়াজ হয়। এ সময় ঠান্ডা লাগার প্রবণতা বেড়ে যায়। যেসব কারণে অ্যালার্জি হয়, সেসব থেকে দূরে থাকা জরুরী। প্রয়োজনে অ্যালার্জির ওষুধ, নাকের স্প্রে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে ইনহেলারও ব্যবহার করতে হতে পারে।

শীতের সময় অনেকে আবার সাইনোসাইটিসের সমস্যায় ভোগেন। সাইনোসাইটিসের লক্ষণ হতে পারে বারবার মাথা ধরা, সর্দি-কাশির প্রবণতা, কাশতে কাশতে বমি হওয়া, জ্বর ইত্যাদি। কোন কিছুতে অ্যালার্জি থাকলে সেদিকে নযর দিতে হবে। অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিকস খাওয়াও যরূরী। তবে তা যেন অতিরিক্ত পর্যায়ের না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জাঃ শীত কিংবা উষ্ঞ আবহাওয়া, বছরের যে কোনো সময় সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। তবে শীতকাল আসলে এর তীব্রতা বেড়ে যায় বহুগুণে। শিশু, প্রাপ্ত বয়স্ক কিংবা বৃদ্ধ, সবাই আক্রান্ত হয় এতে। প্রায় ২০০ রকমের ভাইরাসের কারণে সর্দি-কাশি হয়। আক্রান্ত রোগীদের নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা, শরীর ব্যথা, হাঁচি-কাশি ও জ্বর থাকতে পারে।

পরিমিত পরিমাণে তরল খাবার, কুসুম গরম লবণ পানি দিয়ে গড়গড়া, মধু খাওয়া এবং ঠাণ্ডা পানি ও খাবার পরিহার করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো ওষুধের সাহায্য ছাড়াই কয়েকদিনের মধ্যে িসর্দি-কাশিতে আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে যায়। তবে শিশু, বৃদ্ধ এবং বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজন হতে পারে।
সর্দি-কাশির তীব্রতর উপসর্গ থাকলে ইনফ্লুয়েঞ্জা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি ও নিঃসরিত লালার মাধ্যমে রোগ সংক্রমিত হয়। সাধারণ সর্দি-কাশির অতিরিক্ত উপসর্গ হিসাবে বমি, পাতলা পায়খানা হতে পারে। কয়েকদিনের মধ্যে বেশিরভাগ উপসর্গের উপশম হলেও কাশি ভালো হতে দুসপ্তাহের বেশিও লেগে যেতে পারে।

এ ভাইরাস বছরে বছরে তার ধরন বদলায়। তাই বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক এবং বিভিন্ন জটিল রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের এ রোগ প্রতিরোধে প্রচলিত টিকা প্রতি বছরই নেয়া উচিত। এক্ষেত্রে অনেক সময় এন্টিভাইরাল ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। তাই উপসর্গের তীব্রতা বেশি হলে শিশু, বৃদ্ধ ও জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ প্রতিরোধে বারবার হাত ধোয়া, নাকে-মুখে হাত না দেওয়া এবং আক্রান্ত ব্যক্তির নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যবহার না করা উচিত।

ফুসফুসের সংক্রমণঃ শীতের সময় অনেকে আবার ফুসফুসের সংক্রমণের সমস্যায় ভোগেন। ফুসফুসের সংক্রমণকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক সংক্রমণ, যা সাধারণত ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। আর লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক সংক্রমণ যা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। তবে ভাইরাল নিউমোনিয়াও হ’তে পারে। জ্বর, কাশি, কফ, শরীর ব্যথা ও বমি বমি ভাব হ’ল ফুসফুস সংক্রমণের লক্ষণ। তবে ভাইরাল নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে সর্দি-হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়ার লক্ষণও দেখা দিতে পারে। সাধারণত শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এগুলো বেশী দেখা যায়। শীতে এসব রোগের হাত থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

নিউমোনিয়াঃ দেশে ঠাণ্ডাজনিত অন্যতম জটিল রোগ নিউমোনিয়া। বেশিরভাগ নিউমোনিয়া হয়ে থাকে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে। বাংলাদেশে শিশুরা সব থেকে বেশি আক্রান্ত হয় এই রোগে। অনেক শিশুর জীবন সংশয়ও দেখা দেয় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। তবে এতে প্রাপ্ত বয়স্ক ও বৃদ্ধের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও কম নয়। এ রোগ হলে ঠাণ্ডা ও কাঁপুনি দিয়ে তীব্র জ্বরের সঙ্গে কফযুক্ত কাশি, শ্বাসকষ্ট, দ্রুত পালস, প্রেসার কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা হতে পারে। নিউমোনিয়া সন্দেহ করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কিছু পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এছাড়া নিউমোনিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বেশ কিছু টিকা নিতে হয়।

সাইনোসাইটিস ও হাঁপানিঃ সাইনোসাইটিস হলে নাক বন্ধ থাকা, অল্পবিস্তর শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা থাকে। এর প্রতিকারে তেমন এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না তবে কিছু অ্যালার্জির ওষুধ, ন্যাজাল স্প্রে এবং গরম পানির ভাপেই আরাম পাওয়া যায়। অন্যদিকে হাঁপানি বা অ্যাজমা সারা বছর হলেও শীতকালে এর তীব্রতা বেশি লক্ষ্য করা যায়।

মূলত শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়া এবং ঠাণ্ডা বাতাস ও বিভিন্ন অ্যালার্জির জন্য এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। অ্যাজমার জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিকার হলো চিকিৎসকের পরামর্শে ইনহেলার ব্যবহার করা। তবে যাদের শুধু ইনহেলারে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ হয় না, তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের মুখে খাবার ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এ জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যাবশ্যক। এছাড়া এসকল রোগ প্রতিরোধের জন্য পরিষ্কার পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন।

হাইপোথার্মিয়াঃ শীতের আরেকটি মারাত্মক সমস্যা হাইপোথার্মিয়া, অর্থাৎ শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত কমে যাওয়া, যা মৃত্যুও ঘটাতে পারে। মূলত যারা পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র ব্যবহার করে না এবং শিশু বয়োবৃদ্ধ যারা নিজেদের যত্ন নিতে অপারগ, তারাই এর শিকার। হাইপোথার্মিয়া প্রতিরোধে পর্যাপ্ত গরম কাপড়সহ হাত মোজা, পায়ের মোজা পরতে হবে। সব ক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। গরম পানি পান ও গরম খাবার খেতে হবে। রুম গরম রাখতে রুম হিটারের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

বাত ব্যথা ও কানের ইনফেকশনঃ শীতকাল আসলেই বিভিন্ন ধরনের বাতের ব্যথা বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ব্যায়াম করা প্রয়োজন। তবে ব্যথার ওষুধ সেবনে হার্ট, কিডনি, লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এ রোগের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে হবে।

এছাড়া শীত আসলেই ঠাণ্ডা আবহাওয়ার জন্য কান ব্যথা, মাথা ঘোরানো, কান দিয়ে পুঁজ পড়া ইত্যাদি থাকতে পারে। ঠিক মতো চিকিৎসা না করালে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্রবণযন্ত্রের স্থায়ী সমস্যা হয়ে যেতে পারে। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া বাঞ্চনীয়।

ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুঃ শীতকাল আসলেই বিভিন্ন মশাবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা যায়। বিশেষ করে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু রোগসহ নানা ভাইরাস জ্বরের রোগের প্রকোপ দেখা যায়। যদিও ডেঙ্গু বর্ষাকালীন রোগ তবে শীতকালেও এর বিস্তার লক্ষ্য করা যায়। এ রোগ হলে কাঁপুনি দিয়ে উচ্চ তাপমাত্রায় বারবার জ্বর আসে। গিঁটে ব্যথাও হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা গেলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া মশার কামড় থেকে বাঁচতে সতর্ক থাকতে হবে। নিয়মিত মশারি টাঙাতে হবে।

চর্মরোগঃ শীতে ত্বক সবচেয়ে বেশি সংকটের মুখে পড়ে। শীতের শুষ্ক বাতাস ত্বক থেকে তরল পদার্থ শুষে নেয়। তখন ত্বক হয় রুক্ষ। ত্বকের ধরন-ভেদে তখন নানা সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে শুষ্ক ত্বকের সমস্যাই হয় বেশি। ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে ত্বকের ঘর্মগ্রন্থি এবং তেলগ্রন্থি ত্বকের জন্য উপযোগী প্রাকৃতিক তেল উৎপাদন করতে পারে না। ফলশ্রুতিতে ত্বক অনেক শুষ্ক হয়ে যায় এবং ফাটল দেখা দেয়।

পর্যাপ্ত পরিচর্যা না নিলে ত্বকে জ্বালাপোড়া ও ফাটল থেকে রক্ত ঝরার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। শুষ্ক ত্বকে নানাবিধ চর্মরোগও হয়। হাত, পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানি দেখা দিতে শুরু করে। পাশাপাশি চিলাইটিস, ইকথায়োসিস, একজিমা, সোরিয়াসিস, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, খুসকি, স্ক্যাবিস, টোপিক ডার্মাটাইটিস, ঠোঁট ফাটা, ক্র্যাক হিল বা পা ফাটা চর্মরোগসহ চুলের খুসকিও বাড়ে। এক্ষেত্রে শীতের আগমনেই প্রতিরোধমূলক প্রস্তুতি রাখতে হবে।

ডায়রিয়াঃ শীত এলেই ঠাণ্ডাসহ অ্যালার্জিজনিত সমস্যার সঙ্গে ভাইরাসঘটিত শ্বাসযন্ত্রের নানা রোগও আক্রমণ করে। আবার গরম বা বর্ষাকালের রোগ ডায়রিয়া বা উদরাময়ও হতে পারে ভোগান্তির কারণ। এ সময় শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের ডায়রিয়া বেশি হতে দেখা যায়, তবে অন্য বয়সের মানুষও আক্রান্ত হতে পারেন। নবজাতকদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া এবং জ্বরও দেখা দিতে পারে। শীতকালে ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের ভাইরাল ডায়রিয়া হয় যাকে রোটা ডায়রিয়া বলে।

ভাইরাসঘটিত ডায়রিয়ায় সাধারণত বিশেষ কোনো ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে যান। কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে অ্যান্টিবায়োটিক বা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজন হতে পারে। তবে, নিরাপদ পানি পান, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা বজায় রাখা, বাসি খাবার বা বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা, খাবার আগে হাত ধোয়া ইত্যাদি ব্যবস্থা নেওয়া হলে এই সময়ের পেটের সমস্যা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

আর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথাঃ শীতের সময় বয়স্কদের বাতের ব্যথা বেড়ে যায়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা এনকাইলোজিং স্পন্ডিওলাইটিস, স্পন্ডাইলো আর্থ্রাইটিস, রি-অ্যাকটিভ আর্থ্রাইটিস, সোরিয়াসিটিস, অস্টিও আর্থ্রাইটিসে আক্রান্তদের সমস্যা হয় বেশি। কারণ শীতে সবাই কম নড়াচড়া করে। পর্যাপ্ত মাসল মুভমেন্ট না থাকায় ও ভিটামিন ডি’র সংস্পর্শে না আসায় বাতের ব্যথা বেড়ে যায়। বাতের ব্যথা যেহেতু অনেকের সারাবছরই থাকে তাই লক্ষণগুলো একই ধরনের হয়ে থাকে। তবে শীতের সময় এই ব্যথা অনেককে কাবু করে ফেলে। শীতে যেন এই ব্যথায় সমস্যা না হয় সেক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো নজরে রাখা জরুরি।

টনসিলাইটিসঃ গলা ব্যথা, স্বরভঙ্গ, কণ্ঠনালির নানা সমস্যাসহ টনসিলের প্রদাহ বা টনসিলাইটিস বেশি হয় শীতে। সাধারণত ভাইরাসজনিত কারণে এই রোগ বেশি হয়।এ ক্ষেত্রে ওষুধ সেবনের খুব একটা দরকার পড়ে না। টনসিলাইটিসের সমস্যা যাঁদের রয়েছে, তাঁরা লবণ মেশানো হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করলে আরাম পাবেন। ঠাণ্ডা পানি পরিহার করে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন এবং গলায় গরম কাপড় বা মাফলার জড়িয়ে রাখুন। সেই সঙ্গে মাউথওয়াশ দিয়ে কুলি করলে ভালো থাকা যায়। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল ও সর্দি-কাশি থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন করা উচিত।

চামড়ার শুষ্কতাঃ শীতের সময় শুষ্কতার কারণে শরীরের ত্বকও শুষ্ক হয়ে ওঠে। ফলে অনেক সময় চুলকানি বা ব্যথা অনুভব হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ধুলাবালিতে অ্যালার্জি আছে তাদের অনেক সময় অ্যালার্জির কারণেও হতে পারে এটি। এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত লোশন বা অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলে চামড়া স্বাভাবিক থাকবে। এছাড়া চুলকানি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শুরু থেকেই এ ব্যাপারে সতর্ক হলে চুলকানি বা অ্যালার্জি ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ থাকবে না।

শীতে শিশুদের ভাইরাসজনিত রোগ

শীতে শিশুদের ভাইরাসজনিত রোগ থেকে বাঁচতে শিশুদের অন্যের হাঁচি-কাশি থেকে দূরে রাখতে হবে। কারণ হাঁচি-কাশিতে থাকা লক্ষ লক্ষ জীবাণু শিশুর শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। এছাড়া বাইরের বিভিন্ন ধরনের খাবার ও পানিতে শীতকালে প্রচুর পরিমাণে জীবাণু থাকায় এসব খাদ্যে বিষক্রিয়া দেখা দেয়।শীতের সময় বিশেষ করে শিশুদের পোশাক ঠিক মতো না পড়া, বাতাসে ঘনীভূত হওয়া বাতাস শ্বাস নালীর মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করা।

ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করা ও পরিষ্কার না থাকাসহ নানা কারণে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ হয়ে থাকে। শীতে বাড়ে সর্দি-জ্বর, ব্রঙ্কিওলাইটিস(শ্বাসকষ্ট), নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া। শীতে নবজাতক শিশুর (১ থেকে ২৮ দিন বয়সী শিশু) জন্য আরও বেশি যত্নবান হতে হয়। তাই শীতে শিশুদের ভাইরাসজনিত রোগ কি কি সে  সম্পর্কে জেনে নিন।

সাধারণ ঠাণ্ডাঃ শীতকালে ঠাণ্ডা লাগা বা সর্দি-কাশিতে সবাই আক্রান্ত হতে পারে।এ অবস্থায় আক্রান্ত শিশুর নাক দিয়ে অনর্গল পানি পড়া, শরীরের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পাওয়া বা হালকা জ্বরজ্বর ভাব, অরুচি বা খেতে অনিচ্ছা এবং সামান্য গলা ব্যথা থাকতে পারে। ঠাণ্ডার কারণে শিশুর নাক বন্ধ থাকলে নাকে ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত লবণ পানির ড্রপ (নরসল ড্রপ) ব্যবহার নিরাপদ। বাল্ব সাকার বা পাম্প দিয়ে নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। মধু মিশ্রিত কুসুম গরম পানি ও স্যুপ খাওয়ালে কিছুটা উপকার মেলে। অ্যান্টিহিস্টামিন সিরাপও ব্যবহার করা যেতে পারে।

সর্দি-কাশিঃ শীতে সবচেয়ে বেশি যে রোগ হয় তা হল সর্দি-কাশি, কমন কোল্ড বা ঠাণ্ডা জ্বর। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস বিশেষত ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জার মাধ্যমে এ রোগের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস, লালা, কাশি বা হাঁচি থেকে নিঃসরিত ভাইরাসের মাধ্যমে এই রোগের সংক্রমণ হয়। এর ফলে শিশুর জ্বর, গলাব্যথা, চুষে্ খাবার খেতে অনিহা বা সমস্যা, নাক বন্ধ, নাক দিয়ে অনবরত সর্দি নিঃসৃত হওয়া, খুসখুসে কাশি অনুভূত হয়। কোনও কোনও সময় খাবারে অরুচি, পাতলা পায়খানা হতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত শিশুকে বিশ্রাম দিতে হবে। হালকা খাবার, পানীয়, দুই বছরের কম বয়সীদের মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে। জ্বর বেশি হলে প্যারাসিটামল সিরাপ দিতে পারেন খেতে পারেন। খুব বেশি জ্বর, গলাব্যথা, কাশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ঔষধ, কাশির সিরাপ দিতে পারেন।

সাধারণ সর্দি-জ্বর বা ভাইরাল ফ্লুঃ শীতে শুধু ঠান্ডা লাগার কারণেই যে শিশু অসুস্থ হবে তা নয়। যেহেতু শীতকালীন অসুখের মূল কারণ বায়ুবাহিত রোগজীবাণু যা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে ও শিশুদের আক্রমণ করে। একই সঙ্গে থাকে প্রচুর ধুলাবালি, যা শ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে নাক দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে। ফলে গলায় কিংবা নাকে প্রদাহ, সর্দি, কাশি’সহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।

মাত্রাতিরিক্ত দূষিত ধোঁয়া ও ধুলা শিশুদের নিউমোনিয়া কিংবা ব্রঙ্কাইটিসের মতো সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। শীতের শুরুতে সাধারণত সর্দি জ্বর বা ভাইরাল ফ্লু হতে পারে। এটি ভাইরাসজনিত একটি ছোঁয়াচে রোগ। যা ৫-৭ দিনে ভালো হয়ে যায়। এ সময় ছোট ছোট সমস্যায় পড়ে শিশুরা। নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া, শরীরের চুলকানি, খাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া, বুকে আওয়াজ হওয়া, হালকা বা শুষ্ক কাশি ও সঙ্গে থাকে জ্বর।

এক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের সাধারণত প্রয়োজন হয় না, কফ সিরাপ ও অ্যান্টি সিস্টামিনজাতীয় ওষুধ সেবনে শিশু সুস্থ হয়ে যায়। এ সময় শিশুকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত গোসল করানো, পুষ্টিকর খাবার বিশেষ করে শীতকালীন সবুজ শাকসবজি খাওয়াতে হবে, লেবু পানিও খাওয়াতে পারেন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করতে। হাঁচি-কাশি বা সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে। শিশুর সুরক্ষায় ঘরে সবাই এ সময় মাস্ক পরুন। কোন জিনিস স্পর্শ করলে হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার করুন ও শিশুকেও শেখান।

নিউমোনিয়াঃ ফুসফুসের অ্যালভিওলিতে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা প্রদাহ হলে নিউমোনিয়ার লক্ষণ চলে আসে। নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে দ্রুতগতির শ্বাস-প্রশ্বাস বা ফার্স্ট ব্রিদিং দেখা যায়। ২ মাসের কমবয়সী শিশুদের শ্বাস নেওয়ার হার প্রতি মিনিটে ৬০ বারের বেশি, ২ মাস থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুদের প্রতি মিনিটে ৫০ বারের বেশি ও বারো মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুর প্রতি মিনিটে ৪০ বারের বেশি শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে তাকে শ্বাসকষ্ট বলা হয়। কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, দ্রুত নিঃশ্বাস, পাঁজরের নিচের অংশ ভেতরের দিকে দেবে যাওয়া, শিশু খেতে না পারলে, বুকের ভেতর শব্দ হলে, নিস্তেজ হয়ে গেলে বুঝতে হবে শিশুটি মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।

ব্রঙ্কিওলাইটিসঃ নিম্ন শ্বাসতন্ত্রের একটি সংক্রমণ এটি। ফুসফুসের ক্ষুদ্রনালি ব্রঙ্কিউলে ভাইরাসের কারণে প্রদাহ হলে সাধারণত ব্রঙ্কিওলাইটিস হয়। দুই বছরের কম বয়সের শিশুদের মধ্যে নাক দিয়ে পানি পড়া সঙ্গে শ্বাসকষ্ট ও কাশি থাকে। এই শ্বাসকষ্টকে নিউমোনিয়া ভেবে অনেক চিকিৎসকই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করেন শিশুর। ফলে ছোটবেলা থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে যায় শিশুর। তাই ব্রঙ্কিওলাইটিস শনাক্তকরণ খুব জরুরি।

সাধারণত ৩-৫ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যায় ও ৭-১০ দিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও শ্বাসকষ্টের রেজুলেশন দেখা যায়। অনেক সময় কাশি থাকে প্রায় ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত। অবস্থা গুরুতর হলে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হয় শিশুর। নিউমোনিয়া থেকে ব্রঙ্কিওলাইটিস খুব সহজেই পার্থক্য করা যায়। নিউমোনিয়া সাধারণত যে কোনো বয়সে হতে পারে। সঙ্গে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট থাকবে। এক্স-রে করলে কালো ফুসফুসে সাদা সাদা দাগ দেখা যাবে। আর রক্ত পরীক্ষায় সাধারণত শ্বেত কণিকার পরিমাণ অনেক বেশি থাকবে।

হাঁপানিঃ শিশুর হাঁপানি সাধারণত ১২-১৮ মাস বয়সীদের মধ্যে দেখা যায়। ফলে অভিভাবকরা এই সমস্যা শনাক্ত করতে পারেন না সহজে। অ্যাজমা শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। এতে আক্রান্ত হলে শিশুর শ্বাসনালিতে প্রদাহ ও সংকীর্ণতার সৃষ্টি হয়। ফলে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় শিশুর। আবহাওয়া পরিবর্তনে বা শীতের শুরুতে এর প্রকোপ বেড়ে যায়। অ্যালার্জির সমস্যার কারণেও অনেক সময় অ্যাজমা দেখা দেয়। ডাক্তারের পরামর্শ মত চললে একে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব খুব সহজেই।

এর লক্ষণগুলো হলো- দম বন্ধভাব, শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট হওয়া, শোঁ শোঁ শব্দ, ঘুম থেকে উঠে বসা, এসব লক্ষণই প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করতে সাহায্য করে অ্যাজমা। এ সমস্যা থেকে শিশুকে বাঁচাতে ঠান্ডা লাগানো যাবে না। হাঁপানি আক্রান্ত শিশুদের সামনে ধূমপান নিষিদ্ধ। কোনো খাবারে অ্যালার্জি থাকলে সেগুলো শিশুকে খাওয়াবেন না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে শিশুকে। এছাড়া ধুলাবালি থেকে শিশুকে সুরক্ষিত রাখুন।

ডায়রিয়াঃ শীতের শুরুতে ডায়রিয়াও দেখা যায় শিশুদের মধ্যে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারাদিনে তিনবার বা তার বেশিবার পানির মতো পায়খানা হলে ডায়রিয়া বলা যেতে পারে। এটি ভাইরাস (রোটা, এডিনো ভাইরাস), ব্যাকটেরিয়া (সালমনেলা, সিগেলা, ইকোলাই) ও পরজীবী (জিয়ারডিয়া) দ্বারা সংঘটিত হয়। ভালোভাবে হাত না ধুলে এর মাধ্যমে ডায়রিয়ার জীবাণু সবখানে ছড়াতে পারে। যা পরবর্তী সময়ে কঠিন ব্যাধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শীতে গরম পানিতে শিশুকে হাত ধোওয়ানোর অভ্যাস করুন। শীতে শিশুদের বেশি বেশি হালকা গরম পানি পান করতে দিন। এতে শিশুর পানিশুন্যতা পূরণ হবে আর গরম পানি তাকে ঠান্ডা লাগা থেকে দূরে রাখবে।

চর্মরোগঃ শীতে সবার ত্বকই শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। এ কারণে চর্মরোগের ঝুঁকি বাড়ে। শীতে ত্বকের পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজার দরকার হয়। এ সময় ত্বকের যত্ন না নিলে শিশুরা ছোঁয়াচে চর্মরোগে আক্রান্ত হতে পারে। শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন নিতে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত লোশন লাগাতে হবে যেন ত্বক শুষ্ক হয়ে না যায়। শীতকালের ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে শিশুকে সুরক্ষা দিতে খোলামেলা পরিবেশে খুব বেশি খেলাধুলা করতে না দেওয়াই ভালো। বিশেষ করে শৈতপ্রবাহের সময়।

খুব বেশি ঠান্ডা আবহাওয়া শিশুদের অনেক ক্ষতি করে আর কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। লক্ষ্য রাখতে হবে শিশু যেন মেঝেতে খালি পায়ে না হাঁটে। ঘরের মেঝেতেও মাদুর বা মোটা কাপড় বিছিয়ে দিতে পারেন। তাহলে মেঝেতে বসে খেলা করলেও ঠান্ডা লাগবে না। শিশুকে শীতকালে বেশি বেশি ফল-মূল, শাকসবজি ও সুষম খাদ্য খাওয়ানো উচিত। এতে বাড়বে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। মোটকথা, শিশুর ভিটামিন প্রাকৃতিকভাবেই পূরণ করতে হবে।

এছাড়া দৈনিক এক চামচ মধু খাওয়ালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে ও সর্দি-কাশি কিংবা ঠান্ডা লাগা কমবে। এ সময় শিশুকে আইসক্রিম, ঠান্ডা পানি বা ফ্রিজের কোনো খাবার খাওয়াবেন না। আর ফ্যান ছেড়ে ঘুমাবেন না, এতে শিশুর টনসিল বা গলায় ব্যথা হতে পারে। শিশুকে সুস্থ রাখতে ঠান্ডা আবহাওয়ায় দুপুর ১২টার আগেই গোসলের পর্ব সেরে ফেলুন। গোসলের পর শিশুর মাথা ও শরীর ভালো করে মুছে তারপর জামা কাপড় পরাতে হবে। ত্বক ভালো রাখতে অবশ্যই বেবি লোশন বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করবেন।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য শিশুর শরীর হালকা গরম পানি দিয়ে ধোয়ালেও মাথা ধোয়ানোর সময় অবশ্যই স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করতে হবে। বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে সপ্তাহে এক বা দুদিন। শীতে শিশুকে আরামদায়ক ও কিছু বাড়তি গরম কাপড় পরাবেন। তার মাথা, ঘাড়, হাত ও পা ভালোভাবে গরম কাপড়ে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করুন। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুদের এক লেয়ার বেশি কাপড় নিশ্চিত করতে হবে। তবে অতিরিক্ত গরম কাপড় পরাবেন না। এতে শিশু ঘেমে আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।

অ্যালার্জিক রাইনাটিসঃ শিশু বয়সে তো বটেই, বড়দের মধ্যেও এই সমস্যা বেশ প্রকট। অ্যালার্জিক রাইনাটিসে আক্রান্ত শিশুর প্রায় ৩০ শতাংশ পরবর্তীকালে অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়। এটা মৌসুমি একটা রোগ। অ্যালার্জিক রাইনাটিসে আক্রান্তদের সঙ্গে কোল্ড অ্যালার্জি বা শীতকালীন সংবেদনশীলতার খুব বড় পার্থক্য করা সম্ভব হয় না। তবে অ্যালার্জিক রাইনাটিসের লক্ষণ শীতকাল ছাড়াও বসন্ত, গ্রীষ্ম ও শরতের প্রথম দিকে হতে পারে। যদি হঠাৎ এই সমস্যা ঘটে বা প্রতিবছর একই সময়ে এমন সর্দি হয়, তাহলে মৌসুমি অ্যালার্জি থাকতে পারে। সর্দি ও মৌসুমি অ্যালার্জির লক্ষণ একই হলেও এগুলো আলাদা রোগ।

এ রোগে সাধারণত নাক চুলকানো ও সর্দি, চোখ, মুখ বা ত্বকের চুলকানি, হাঁচি, নাক বন্ধ (ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে) ও ক্লান্তি বা অবসাদ বোধ হয়। অ্যালার্জির কারণে কনজানটিভাইটিস, গলা ব্যথা, সাইনোসাইটিস, অ্যাজমা, অ্যাকজিমা, কান পাকা অসুখ ও গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। এসব রোগীর দুই নাসারন্ধ্রের মধ্যবর্তী প্রাচীর অনেক ক্ষেত্রেই বাঁকা থাকে, নাকে পলিপ বা নাকের সম্মুখভাগের ওপর সমান্তরাল খাঁজ থাকে। শিশুরা অনবরত হাতের তালু দিয়ে নাক ঘষতে থাকে এবং সারাক্ষণ নাক-মুখ কুঁচকায়, চোখের পাতার নিচে নীলচে কালো রঙের ছোপ দাগ দেখা দেয়।

এই রোগ প্রতিরোধে ধুলাবালি, পশু-পাখি, তেলাপোকা, ঠাণ্ডা বাতাস, সিগারেটের ধোঁয়া ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হবে। কারো সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিহিস্টামিন (সিট্রিজিন, ফেক্সোফিনাডিন), ইন্ট্রা-ন্যাজেল স্টেরয়েডস (বাডিসোনাইডস, ফ্লুকর্টিসোন প্রোপাইয়োনেটস), অ্যান্টি-লিউকেট্রিনস (মনিটিলুকাস) ইত্যাদি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

শীতকালে মা ও শিশুর যত্ন

শীতকালে মা ও শিশুর যত্ন নিতে হবে বেশি বেশি। নবজাতকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই দুর্বল থাকে। তার উপর শীতকালে বাচ্চাদের সর্দি-কাশির সমস্যা লেগেই থাকে। এই অবস্থায় শীতকালে আপনার সন্তান জন্মালে তার অতিরিক্ত খেয়াল রাখা জরুরি। সঙ্গে নতুন মায়েদেরও শরীরের যত্ন নিতে হবে। শীতকালে বাচ্চাদের সর্দি-কাশির মতো নানান স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়।
শীতকালে-মা-ও-শিশুর-যত্ন
এ সময় সতর্ক না-থাকলে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। আবার করোনার বাড়বাড়ন্তের কারণে শিশুর যত্ন নেওয়া এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা আরও জরুরি হয়ে উঠেছে। এমন পরস্থিতিতে সদ্য প্রসূতি মা এবং নবজাতক সন্তান বাড়িতে থাকলে তাঁদের যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শীতকালে মা ও শিশুর যত্ন নেওয়ার কয়েকটি উপায় এখানে জানানো হল।

সঠিক পোশাক পরুনঃ শীতকালে বাইরে যেতে হলে সঠিক ও উপযুক্ত পোশাক নির্বাচন করুন। শিশুকে টুপি, মোজা, মিটেনস পরান, এমনকি রাতেও এই পোশাকেই রাখুন। তবে শীত থেকে বাঁচাতে গিয়ে অতিরিক্ত জামা কাপড় পরিয়ে ফেলবেন না। এর ফলে হীতে বিপরীত হতে পারে। কক্ষের তাপমাত্রা অনুযায়ী পোশাক পরানো উচিত। আবার এমন কিছু পরিয়ে ফেলবেন না, যা শিশুর হাঁটাচলাকে আটকে দেয় বা যা পরে তারা হাত পা ছুড়ে খেলতে না-পারে। অন্য দিকে মায়েরা এমন পোশাক পরুন, যা শিশুর ত্বকের সঙ্গে ঘষা খেয়ে কোনও ক্ষতি করবে না।

নিয়মিত গোসল করানোঃ শীতের ঠান্ডা আবহাওয়ায় শিশুদের গোসল করাতে চান না অনেকেই। কিন্তু গোসল না করলে শরীর আর চুলে ধুলো লেগে থাকবে যা শিশুর জন্য মোটেই ভালো নয়। এক্ষেত্রে গোসলের সময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। সঙ্গে রাখতে হবে বেবি সোপ। কারণ এ ধরনের সাবানে ক্ষারের পরিমাণ খুবই কম থাকে। অ্যালার্জির চিন্তা থেকে অনেকটাই নিশ্চিন্ত থাকা যায়। শিশুদের মাথার ত্বক খুবই সেনসিটিভ বলে ভালো মানের ও কম ক্ষারের বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। বেবি শ্যাম্পুগুলো বানানো হয় ‘No More Tears’ ফর্মুলা দিয়ে। এ ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহারে শিশুর চোখ জ্বালা করবে না, সঙ্গে মাথার ত্বক পরিষ্কার হবে এবং চুল ভালো থাকবে।

ত্বকের যত্ন নেয়াঃ শিশুদের রোগের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে নজর রাখতে হবে শিশুর ত্বকের দিকেও। ত্বক শুষ্ক, ঠোঁট ফাটা বা হাতে-পায়ে-আঙুলের ফাঁকে চুলকানির মতো সমস্যা হচ্ছে কিনা এসব দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের ত্বক কোমল রাখার জন্য দুধ, অলিভ অয়েল ও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ বেবি লোশন ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো। এতে তাদের ত্বকে কোনো অ্যালার্জিও হবে না।

ভিটামিন-ডিঃ শীতের সকালের রোদ বেশ নরম ও মিষ্টি হয়।এ সময় মা ও শিশু সবারই শরীরের রোধ লাগানো উচিত। এই রোদে আছে ভিটামিন ডি, যা আমাদের হাড় মজবুত হতে সাহায্য করে। বর্তমান জীবনযাত্রার ধরণের কারণে ভিটামিন ডি’র অভাব বর্তমানে বৈশ্বিক মহামরির পর্যায়ে চলে গেছে। আমাদের শরীরে নানাবিধ সমস্যার সাথে এই ভিটামিনের অভাবের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগ আছে এবং সাধারণত খাবার দিয়ে এর চাহিদা পূরণ হয়না। তাই আমাদের সবারই উচিত দিনে ৩০ মিনিট রোদে থাকা।

গরম তেলে ম্যাসাজ করুনঃ মা ও শিশুর জন্য এই ম্যাসাজ স্বস্তি দায়ক। সরসের তেল, অলিভ তেল বা আমন্ড এবং অলিভ তেল মিশিয়ে মালিশ করা যায়। এটি ত্বকের জন্যও ভালো। স্নানের পর বা ঘুমানোর আগে ঈষদুষ্ণ তেলে ম্যাসাজ করার ফলে তারা স্বস্তি পাবে এবং ভালো ঘুম আসবে।

সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখুনঃ যে কক্ষে শিশু থাকবে, সেই কক্ষের সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। আবার পর্যাপ্ত আলো ও বায়ু যাতে আসে, সে বিষয়ও লক্ষ্য রাখতে হবে।

সুষম খাবারঃ  সুপ, স্যালাড, সবুজ শাকসবজি, বাজরা, ভুট্টার আটা নতুন মায়েদের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। আবার শিশুকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর স্তন্যদুগ্ধ পান করান। কারণ এটি তাদের পুষ্টির আসল উৎস। স্তন্যদুগ্ধ পান শিশুকে নানান সংক্রমণ ও রোগ থেকে রক্ষা করে। আবার এর ফলে বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। অন্য দিকে মায়ের সংস্পর্শ শিশুকে উষ্ণতা প্রদান করে।

সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুনঃ শিশু যেহেতু অধিকাংশ সময় মায়ের সংস্পর্শে থাকে, তাই মা-কে নিজের ব্যক্তিগত হাইজিনের বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে। তা না-হলে মা ও শিশু উভয়েরই সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যায়। শিশুকে ধরার আগে হাত ধুয়ে নিতে হবে। আবার যে-ই বাচ্চার কাছে আসুক না-কেন, তাঁদের মাস্ক পরে থাকার নির্দেশ দিন। এ ছাড়াও শিশুর পোশাক, বিছানা, কক্ষকে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বাড়ির প্রতিটি সদস্যকেও এ সময় সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

প্রতিষেধকঃ মা ও শিশুকে সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক গ্রহণ করতে হবে। নবজাতককে যে সমস্ত প্রতিষেধক দেওয়া উচিত, সে বিষয় চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন। মায়েরা নিজের কোভিড টিকা নিতে ভুলবেন না।

করোনা বিধি মেনে চলুনঃ বাইরে বেরোনোর সময় বা বাড়িতে কোনও অতিথি এলে করোনা থেকে বাঁচতে সমস্ত নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। সকাল বা সন্ধেবেলা বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে বেরোবেন না। বাচ্চাকে নিয়ে রোদে বসার পরিকল্পনা করে থাকলে, উপযুক্ত পোশাক পরিয়ে নিয়ে যান। বাচ্চার কান, হাত, পা এবং বুক যাতে ভালো ভবে ঢাকা থাকে, সে দিকে লক্ষ্য রাখুন। রাতে বেরোনো অত্যাবশ্যকীয় হলে, শিশুকে ভালোভাবে ঢেকে নিয়ে যান। বাচ্চাকে নিজের শরীরের সংস্পর্শে রাখুন।

মায়ের যত্নঃ

১. শীতকালে স্তন্যদানকারী মায়েদের বেশ সতর্ক থাকা উচিত। তারা এমনভাবে কাজ করবেন যাতে তাদের ঠান্ডা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে।

২. থালাবাসন ধোয়া ধুয়ি কাজ করার সময় তারা যদি হাতে গ্লাভস পরে কাজ করতে পারেন তবে উপকার পাবেন। জামা কাপড় ধোয়ার জন্য ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করতে পারেন। যদি এভাবে সম্ভব না হয় তবে ধোয়াধুয়ির জন্য তারা সাহায্যকারী নিয়োগ করতে পারেন। অথবা দিনের উষ্ণ সময়ে ধোয়ার কাজ সেরে ফেলতে পারেন।

৩. পানি পানের ক্ষেত্রে হালকা গরম পানি পান করুন। স্তন্যদায়ী মায়েদের পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা উচিত। ঠান্ডার কারণে পানি পানের প্রবণতা অনেকেরই কমে যায়। তাই ফ্লাক্সে গরম পানি রাখলে সেটা মিশিয়ে সহজেই কুসুম গরম পানি বারবার খাওয়া যায়।

৪. সকালে ঘুম থেকে উঠে আদা মধু গরম পানি একসাথে মিশিয়ে খেলে তাদের জন্য বেশ উপকারী হবে।আর যদি হালকা ঠান্ডা লেগে যায়, সেক্ষেত্রে আদা- রং চা, মশলা চা বেশ ভালো কাজে দেয়।

৫. আদা মধুর পাশাপাশি এলাচ, দারচিনিও উপকারী। পুরো শীতকাল জুড়ে, বিশেষ করে ঠান্ডা লাগলে কালিজিরা অবশ্যই খাওয়া উচিত৷ সেটা হতে পারে খাবারের সাথে মিশিয়ে যেমন ডাল রান্নার সময় কিছু কালিজিরা দিয়ে দেওয়া৷

৬. পরিষ্কার পরিছন্নতা মায়েদের জন্য খুব জরুরী। মায়েদের গোসলের সময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করে গোসল করা উচিত। এতে তাদের ঠান্ডা লেগে যাবার আশঙ্কা কমে যায়। গোসলের পর যদি তারা রোদে যেতে পারেন, তবে এটি তাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী।

৭. সদ্য প্রসূতি মা সহ ছোট বাচ্চাদের মায়েদের পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম দরকার হয়। সে ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। মা যদি সুস্থ থাকেন, তবে পুরো পরিবার সুস্থতা ও শান্তি বিরাজ করবে। শীতে মা ও শিশু দুজনের শরীরে বেশ নাজুক অবস্থায় থাকে।

তাই আগে থেকে যদি সতর্ক থাকা যায় তবে রোগে আক্রান্ত হবার আশংকা অনেকখানি কমে যায়। ঠান্ডা জ্বর সর্দি-কাশি যদি অনেকদিন ধরে হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

শীতকালে শিশুদের রোগ প্রতিরোধে করনীয়

শীতকালে শিশুদের রোগ প্রতিরোধে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। শীতের মৌসুমে সকল বয়সের শিশুদের সাধারনত সর্দি, ঠান্ডা, কানের সমস্যা, নাকে পানি পড়া, হাঁচি-কাশি, বমি, পেটের সমস্যাসহ ভাইরাস জনিত নানান রোগ বেশি দেখা দেয়। নবজাতকদের ক্ষেত্রে এসময় ডায়রিয়া ও জ্বর দেখা দিতে পারে। শীতকালে ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে রোটা ভাইরাস জণিত ডায়রিয়ার প্রবণতা বেশি দেখা দেয়।

এই সময়ে শিশুদেরকে রোগ থেকে দূরে রাখতে হলে অভিভাবকদের সচেতনতাই বেশী দরকার। বাবা-মা বা স্বজনদের খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশু কোনভাবেই ঠান্ডা না লাগিয়ে ফেলে। এ বিষয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। নিচে শীতকালে শিশুদের রোগ প্রতিরোধে করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

১. শিশুদের শরীর সবসময় গরম রাখতে হবে। ঘরের পরিবেশ যেন গরম থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

২. শিশুদেরকে অসুস্থ রোগীর সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখা জরুরি। বড়দের মতো নিয়মিত শিশুদেরও ঘন ঘন হাত ধোয়ার অভ্যাস করাতে হবে। বারবার যেন তারা নাকে ও মুখে হাত না দেয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন-সি (লেবু, মাল্টা, কমলার রস) জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে।

৩. শিশুদের নিয়মিত টিকাদান নিশ্চিত করতে হবে। ভিটামিন-এ ক্যাম্পেইনের সময় ভিটামিন-এ খাওয়াতে হবে। এগুলো শ্বাসতন্ত্রের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শিশুদের শরীরে সরিষার তেল ব্যবহার না করাই ভালো।

৪. এতে শিশুর ত্বকের ক্ষতি হয় ও ঠান্ডা লাগার প্রবণতা বেড়ে যায়। শীতে একদিন পরপর গোসল করানো যায় তবে নিয়মিত গা মুছে দেওয়াটা জরুরি। ধুলাবালি থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। শিশুর সামনে ধূমপান না করা ও মাটির চুলার ধোঁয়া যাতে শ্বাসের সঙ্গে না ঢুকে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৫. শিশুদের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শিশুদের ঠান্ডা লেগে গেলে অনেক সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এসময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন নাক বন্ধ হয়ে না থাকে। তাই সর্বদা নাক মুখ ভালভাবে পরিস্কার রাখতে হবে।

৬. একটি বাচ্চা অসুস্থ হলে তার থেকে যেন অন্য বাচ্চাদের মাঝে জীবানু না ছড়ায় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

৭. এছাড়া পরিবারের অন্যরা আক্রান্ত হলে শিশুদের সামনে আসার সময় অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে অথবা শিশুদের থেকে দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। শিশুদের গোসলের সময় উষ্ণ গরম পানি ব্যবহার করতে হবে।

৮.বাচ্চারা বাইরে বের হলে পুরো শরীরের সাথে সাথে কানও ঢাকতে হবে। মাথায় গরমটুপি, হাত ও পা মোজা মাস্ক পড়তে হবে যাতে বাতাস না লাগে।

৯. বাইরের অস্বাস্থ্যকর খোলা খাবার খাওয়ানো যাবেনা।

১০.বাচ্চাদের সামনে ধুমপান করা উটিত নয়। এতে অ্যাজমার সহিত শ্বাসকষ্ট জণিত সমস্যা বেড়ে যাওয়ার আশংকা বেশী থাকে।

১১. ঠান্ডা জাতীয় খাবার যেমন আইসক্রিম, কোমল পানীয় এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

শীতকালীন রোগ থেকে বাঁচতে করনীয়

শীতকালীন রোগ থেকে বাঁচতে করনীয় কি সে সম্পর্কে জানাবো। তীব্রতা বেশি হোক বা কম, শীত মানেই অনেকের কাছে নানাবিধ অসুখ-বিসুখ ও ভোগান্তির নামান্তর। অথচ শীত নয়, কমন কোল্ড তথা ঠান্ডাজনিত রোগের মূল কারণ হলো দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। শীত মৌসুমে সুস্থ থাকতে তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করুন। জেনে নিন সহজ কিছু টিপস যা অনুসরণে মুক্তি মিলবে শীতকালীন রোগবালাই থেকেঃ

মুখে মাস্ক পড়ুনঃ শীতের সময়ে অনেকের সর্দি-কাশি, অ্যাজমা বা হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি বাড়ে। আর্দ্রতা পরিবর্তন, বাতাসে ধুলা-বালির আধিক্য- শীতকালে এসব রোগের প্রকোপ বেশি হওয়ার কারণ মূলত এগুলোই৷ তাই এসময় বাইরে বেরোলে মুখে মাস্ক পড়ুন। ধুলাবালি থেকে নাক ও মুখ সুরক্ষিত থাকবে, মুক্তি পাবেন অল্পতেই ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থেকে।

পায়ে মোজা রাখুনঃ আমাদের পায়ের পাতার রক্তনালীগুলো সাইনাসের সাথে সংযুক্ত। পা ঠান্ডা থাকলে সাইনাসের মিউকাস মেমব্রেনে শ্বেত রক্ত ​​কণিকার প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। গবেষকরা বলেন, পা উষ্ণ থাকলে তা রক্তনালীগুলোকে প্রসারিত করে এবং ইমিউন কোষগুলোকে অবাধে চলাচল করতে দেয়। তাই শীতের সময়ে আরামদায়ক মোজা পড়ে থাকুন।

হাত সবসময় পরিষ্কার রাখুনঃ আমাদের হাতে নানান ধরণের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের আনাগোনা লেগেই থাকে। আপনার অজান্তেই যখন এই হাত নাক বা মুখে যায় তখন হাতে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস নাকমুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে এবং রোগ সংক্রমণ ঘটায়। তাই বিশেষত শীতকালে নিয়মিত হাত ধোয়া একেবারেই অপরিহার্য। বাহির থেকে ঘরে ঢুকলেই আগে হাত ধুয়ে নিন। টাকা বা এমন জিনিস, যা অনেকের হাত ঘুরে এসেছে, তা ধরার পর হাত ধুতে ভুলবেন না।

স্বাভাবিক চলাফেরা করুনঃ শীতে মাংসপেশীগুলো শক্ত হয়ে যায় বলে বাড়ে ব্যথাবেদনা৷ তাই দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরে শুয়েবসে না থেকে হাঁটাচলা ও ব্যায়াম করুন। বাইরে বের হোন, বুকভরে শ্বাস নিন। গায়ে লাগান মিষ্টি রোদ। ঠান্ডা বা ফ্লুর মূল কারণ যেহেতু ভাইরাস সংক্রমণ, তাই বাইরে বেরোলেই আপনি এগুলোতে আক্রান্ত হবেন না। তবে বাইরে যাবার আগে পর্যাপ্ত গরম কাপড় পড়তে ভুলবেন না।

গরম পানি পান করুনঃ শীতপ্রধান দেশ চীনে একটা সময় ফ্লুর প্রাদুর্ভাব ছিল বেশ। অবস্থার উত্তরণে মাও সেতুং নিলেন এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। স্টেশনে স্টেশনে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে তিনি ব্যবস্থা করলেন ফ্রি গরম পানির। এমনকি গ্রামের সাধারণ কৃষকও পেতেন এই সুবিধা। ফলে চীনাদের মধ্যে গরম পানি পানের অভ্যাস গড়ে উঠল, তারা মুক্ত হলো ফ্লু থেকে। শীতে ফ্লু প্রতিরোধে আপনিও গরম পানির দ্বারস্থ হোন।

দিনে যতটা পারেন কুসুম কুসুম গরম পানি পান করেন। এজন্যে হাতের কাছে রাখুন গরম পানির ফ্লাস্ক। পুরোপুরি বর্জন করুন ফ্রিজের ঠান্ডা পানি। আর সাইনুসাইটিসের সমস্যা মোকাবেলায় রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে সহনীয় গরম পানি দিয়ে কয়েকবার গার্গল বা গড়গড়া করুন একনাগাড়ে ৪০ দিন।

গোসল করুন স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়েঃ শীত এলে কেউ নিয়মিত গোসল করেন গরম পানি দিয়ে; কেউ কেউ তো গোসল করাই ছেড়ে দেন! অভ্যাস হিসেবে দুটোই অস্বাস্থ্যকর। গরম পানি দিয়ে গোসল করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আর গোসল না করলে শরীরে ময়লা জমে রোগজীবাণু বাসা বাধে। তাই শীতে প্রতিদিন গোসল করুন, এবং তা অবশ্যই স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে। পানি বেশি ঠান্ডা হলে কিছু গরম পানি মেশাতে পারেন। তবে খেয়াল রাখুন গোসলের পানির তাপমাত্রা যেন শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে কম হয়।

যেসব খাবার ঠান্ডা থেকে দেবে সুরক্ষাঃ ঠান্ডা লাগার প্রবণতা কমাতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সকালে নাশতার সাথে এককোষ কাঁচা রসুন ও ২৫-৩০ দানা কালোজিরা খান। কালোজিরা ভর্তা উপাদেয় হলেও কাঁচা কালোজিরা চিবিয়ে খেলে পুষ্টি পাবেন বেশি।

যে অঞ্চলে যে মৌসুমে যে ফল জন্মে সেই ফলে থাকে সেই মৌসুমের রোগ প্রতিষেধক। তাই কমলা মাল্টা ডালিম সফেদাসহ শীতকালীন দেশজ ফল এবং গাজর বিট ব্রকলি টমেটো ক্যাপসিকাম শিম ফুলকপি ইত্যাদি সব ধরণের সিজনাল শাকসবজি খান। রসনা বিলাসের পাশাপাশি বাড়বে আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। আর শীতের আগেই যদি প্রতিদিন আনারস, জাম্বুরা খান তাহলে রেহাই পাবেন ঠান্ডা-সর্দি থেকে।

দমচর্চা ও ইয়োগা করুনঃ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট রাখতে দমচর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দিনে কয়েকবার প্রাণায়াম অনুশীলন যারা করেন তাদের দেহের অক্সিজেন গ্রহণ ক্ষমতা ৩৭% পর্যন্ত বেড়ে যায়। তাই বুক ফুলিয়ে দম নেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দমের চর্চা করুন দিনে কমপক্ষে ছয় দফা। সেই সাথে নিয়মিত কোয়ান্টাম ইয়োগা করুন। আধুনিক জীবনের জন্যে এর চেয়ে সহজ ও কার্যকরী ব্যায়াম আর হয় না। দিনে ৩০ মিনিট কোয়ান্টাম ইয়োগা চর্চা আপনাকে ঝরঝরে প্রাণবন্ততার অনুভূতি এনে দেবে, বাড়াবে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও।

শীতকালে অ্যালার্জি থেকে মুক্তির উপায়

শীতকালে অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই অনেক রকম পন্থা অবলম্বন করেন। কিন্তু সঠিক নিয়ম বা চিকিৎসা সম্পর্কে না জানার কারণে অনেক সময় ব্যর্থ হতে হয়। তবে রোগীর সামগ্রিক অবস্থা পরীক্ষার পর কিছু জিনিস চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। যেমন আবহাওয়ার অবস্থা দ্রুত পরিবর্তন, তাপমাত্রা ও বায়ু চাপের পরিবর্তন, বেশি আর্দ্রতা ও মোল্ড ও মাইটের বংশবিস্তারের জন্য উপযোগী যা শীতকালে রোগের কারণসমূহের মধ্যে অন্যতম।

শীত আসলেই অনেকের অ্যালার্জির সমস্যা থেকে শুরু করে সর্দিকাশি বাড়তে থাকে। শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও ভুগতে থাকেন এ সমস্যায়। আপনার যদি সিজনাল অ্যালার্জি থাকে তাহলে শীতের শুরুতেই সচেতন থাকতে হবে। তাই শীত আসলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু উপায় জেনে নিন।

ভিটামিন সিঃ শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা সব সময়ই পাতে রাখা চায় ভিটামিন সি। সবারই জানা ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অ্যালার্জি সাধারণত ইমিউন সিস্টেমের গোলযোগের কারণে ঘটে। তাই প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ভিটামিন সি গ্রহণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের হিস্টামিনের মাত্রা কমাতে দৈনিক অবশ্যই ২০০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করা উচিত।

পেপারমিন্ট অয়েলঃ পেপারমিন্ট অয়েলে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য। যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও শ্বাসনালীর সমস্যা, হাঁপানি ও অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের লক্ষণগুলোও কমায়। অ্যালার্জির কারণে ত্বক লালচে হয়ে ফুলে ওঠা বা র‌্যাশ বের হলে এই তেল ব্যবহার করতে পারেন।

ফ্লুর টিকা নিনঃ অ্যাজমা থাকলে আপনার জন্য এ পরামর্শটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হচ্ছে, অ্যাজমা ও ফ্লু উভয়েই শ্বাসতন্ত্রের রোগ। অ্যাজমা রোগীদের ফ্লু হলে তারা ঘনঘন তীব্র অ্যাজমা অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারেন, এমনকি জীবননাশক জটিলতাও তৈরি হতে পারে।

নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করুনঃ শীতকালে বাইরের চেয়ে ঘরের অ্যালার্জেন দ্বারা অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। এ কারণে আপনার অথবা পরিবারের কোনও সদস্যের অ্যালার্জি থাকলে প্রতিদিন ঘর পরিষ্কার করার ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। ডাস্ট মাইটের (ধুলোর কীট) মতো অ্যালার্জেন দূর করতে নিয়মিত ম্যাট্রেস ও বিছানা পরিষ্কার করতে হবে। ঘরের বেসমেন্ট ও বাথরুমের স্যাঁতস্যাতে জায়গায় ছত্রাকের বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পোষা প্রাণীর শরীর থেকে খসে পড়া আঁইশ, লালা ও মূত্রের একটি প্রোটিন অ্যালার্জিতে ভোগায় বলে শীতকালে এগুলোর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।

হাত ধোয়ার প্রবণতা বজায় রাখুনঃ আপনার নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস থাকলে ভালো। কিন্তু না থাকলে বাইরে থেকে ঘরে আসামাত্র হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এ অভ্যাসে কোল্ড ও ফ্লুর ভাইরাস দূর হয়ে যায়। এসব ভাইরাস অ্যাজমা ও অ্যালার্জির উপসর্গকে আরও খারাপ করে। নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি, যা আপনাকে বিভিন্ন মারাত্মক ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।

ফার্নেস ফিল্টার ব্যবহার করুনঃ ফার্নেস ফিল্টার ঘরের বাতাসের মান নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। ডিভাইসটি ঘরের ভেতরের অনাকাঙ্ক্ষিত নোংরা বা ধুলো দূর করে এগুলোর রিসার্কুলেটিং প্রতিরোধ করে। ঘরের বাতাস থেকে নোংরা বা ধুলোর পরিমাণ কমলে অ্যালার্জির প্রবণতাও কমে যায়। আপনার ঘরের বাতাস থেকে অ্যালার্জেন দূর করতে এমইআরভি-১১ বা ১২ ফিল্টার বেছে নিন। প্রতি এক থেকে তিন মাসে ফার্নেস ফিল্টার পরিবর্তন করা ভালো।

ফায়ারপ্লেস থেকে দূরে থাকুনঃ শীতকালে ঠাণ্ডা তাড়াতে অনেকে বাইরের উন্মুক্ত স্থানে বিভিন্ন জিনিস বা আবর্জনা একত্রিত করে আগুন জ্বালিয়ে থাকেন। কিন্তু এ ধরনের ফায়ারপ্লেস অ্যাজমা রোগীদের জন্য ভালো নয়। অগ্নিকূণ্ডের ধোঁয়া অ্যাজমা অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।

শীতে ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা

শীতে ডাবের পানি খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। গরমে সুস্থ থাকার অন্যতম দাওয়াই হলেও, শীতে রোগবালাই থেকে দূরে থাকতেও এই পানীয়ের বিকল্প নেই। বিশেষ করে পেটের জন্য ডাবের পানি খুবই উপকারী। ডাবের পানিতে আছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, মিনারেলস, ফাইবারের মতো উপাদান। শীতের মৌসুমে ফিট থাকতে ডাবের পানির ভূমিকা সত্যিই অনবদ্য। গরমে ডাবের পানির জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া হলেও শীতে সেই জনপ্রিয়তা কিছুটা কমে যায়।

১. গরমের তুলনায় শীত আরামদায়ক হলেও প্রতিবছর এই সময়ে বেশ কিছু বাড়তি রোগব্যাধি দেখা যায়। তার জন্য রোগের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি চাই। ডাবের পানি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। মৌসুমি কোনো রোগ সহজে বাসা বাঁধতে পারে না শরীরে। খুব ভালো হয়, যদি শীতে খালিপেটে রোজ এক গ্লাস করে ডাবের পানি খেতে পারেন। ডাবের পানিতে রয়েছে রাইবোফ্লবিন, নিয়াসিন, থিয়ামিনের মতো উপাদান। সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ডাবের পানিতে ভরসা রাখা যায়।

২. শীতে শরীরচর্চা করতে ইচ্ছা করে না একেবারেই। তার উপর উৎসবের এমন মৌসুমে খাওয়াদাওয়া তো আছেই। ফলে ওজন তো কমেই না, উল্টো বাড়তে থাকা ওজন বশে রাখতে ডাবের পানি হাতিয়ার হতে পারে। ডাবের পানিতে থাকা এনজাইম হজমশক্তি উন্নত করে। হজম ঠিকঠাক হলে মেদ ঝরানো সহজ হয়ে যায়।

৩. শীতে হাড়ের নানা সমস্যা লেগেই থাকে। গাঁটে গাঁটে ব্যথা, পেশিতে যন্ত্রণা, হাঁটুতে ব্যথা— গোটা শীতকাল জুড়ে সঙ্গী হয় এগুলোই। ডাবের পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় শক্তিশালী করে তোলে। হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। ডাবের পানিতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়ামও। হাড় এবং পেশির খেয়াল রাখতেও এই দুই উপাদানের জুড়ি মেলা ভার।

৪. শীতেও ডাবের পানি খাওয়ার অনেক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গরমের তুলনায় শীতে হজমশক্তি কম থাকে। তাই এসময় হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য খেতে পারেন ডাবের পানি। এ পানি ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

৫. শীতের প্রভাবে ত্বক প্রতিনিয়ত শুষ্ক হয়ে ওঠে। রুক্ষ ত্বকের যত্নে ডাবের পানির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শুষ্ক ত্বকে ব্রণের পরিমাণও বেশি হতে দেখা যায়। তাই শীতের আবহাওয়ায় ব্রণের সমস্যা কমাতে ব্যবহার করতে হবে ডাবের পানি। সারাদিনে অন্তত একবার ডাবের পানির সাথে তুলো ভিজিয়ে সারা মুখে আলতো করে ঘষে নিন। এই নিয়মটি রোজ না করলেও একদিন পরপর করতে পারেন। তাতে উপকার মিলবে।

৬. গরমের সময়ের পাশাপাশি শীতেও ডাবের পানি খাওয়ার অভ্যাস জরুরী। কারণ ডাবের পানিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও জিংক। যা শীত কিংবা গরম দুই ঋতুতেই প্রয়োজনীয়।

শীতকালীন রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর

আপনারা যারা শীতকালীন রোগ ও তার প্রতিকারের উপায় সম্পর্কিত সচোরাচর যে প্রশ্নগুলা গুগলে কিংবা কোনো ওয়েব সাইটে এসে সার্চ করে থাকেন তার সংক্ষেপে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর নিচে তুলে ধরা হলো। যা শীতকালীন রোগ ও তার প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে আশা করছি আপনারা সংক্ষিপ্ত কিছু ধারনা লাভ করতে পারবেনঃ

প্রশ্নঃ শীতকালে মানুষের কি কি রোগ হয়?

উত্তরঃ শীতে অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, খুশকি, খোসপাঁচড়া, হাড়ের রোগ, ডায়বেটিসসহ নানা ধরনের শারীরিক সংকট দেখা দিতে শুরু করে। শীত আসার শুরু থেকেই মূলত সমস্যাগুলো দেখা দেয়। এগুলো সংকেত। প্রকৃতি আপনাকে প্রারম্ভিকভাবে সতর্ক করে দিচ্ছে।

প্রশ্নঃ শীতকালে ত্বক শুষ্ক হয় কেন?

উত্তরঃ ঠান্ডা বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে । যখন আপনার চারপাশের পরিবেশ শুষ্ক হয়, তখন আপনার ত্বকও শুষ্ক হয়ে যায়। এবং বাইরের উপাদানগুলিই একমাত্র কারণ নয়, তাপমাত্রা কমে গেলে আমরা যে হিটারগুলি চালু করি তা ঘরের বাতাসকেও শুকিয়ে দিতে পারে। এর ফলাফল হল শুষ্ক ত্বক যা ঘামাচি এবং বিরক্তিকর থেকে চুলকানি এবং অস্বস্তিকর হতে পারে।

প্রশ্নঃ শীতকালে সর্দি বেশি হয় কেন?

উত্তরঃ শীতকালে আপনার অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হওয়ার অনেকগুলি কারণ রয়েছে: কিছু ভাইরাস ঠান্ডা অবস্থায় আরও সহজে বেঁচে থাকতে পারে । ঠান্ডা আপনার ইমিউন সিস্টেমের জন্য অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করা আরও কঠিন করে তুলতে পারে। অসুস্থতাগুলি আরও সহজে ছড়িয়ে পড়ে কারণ আমরা বাড়ির ভিতরে লোকেদের সাথে বেশি সময় কাটাই।

প্রশ্নঃ ঠান্ডা লাগলে কি পাতলা পায়খানা হয়?

উত্তরঃ হঠাৎ করে ঠাণ্ডার কারণে শিশুদের, অনেক সময় বড়দেরও পাতলা পায়খানা হতে দেখা যায়। বিশেষ করে যখন বেশি ঠাণ্ডা পড়ে, তখন বয়স্কদেরও পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে।'' বলছেন চিকিৎসক হাসিনাতুন জান্নাত। এই সমস্যা এড়াতে তিনি বাইরের খাবার একেবারে না খাওয়া, খাবারের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন।

প্রশ্নঃ ঠান্ডায় কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়?

উত্তরঃ নিম্ন তাপমাত্রা অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে । ঠান্ডা বাতাস নাক এবং উপরের শ্বাসনালীতে প্রবেশ করলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীর ততটা কার্যকর হয় না, তাই সাধারণ সর্দি, ফ্লু এবং COVID-19 এর মতো ভাইরাসগুলি প্রায়শই শীতকালে আরও সহজে ছড়িয়ে পড়ে।

শীতকালীন রোগ প্রতিকারের উপায়

শীতকালীন রোগ প্রতিকারের উপায় শীতের শুরুতেই আপনার পক্ষে শীতকালীন বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হবে। শীতের সময়টাতে অসুখে পড়ার ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি। তাই এসময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা বেশি প্রয়োজন। কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হলে সুস্থ থাকা অনেক বেশি সহজ হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে এমন কিছু সুপারফুড রয়েছে।
শীতকালীন-রোগ-প্রতিকারের-উপায়
যেমন আমলকি, খেজুর, মাখন, গুড়, তুলসি পাতা, হলুদ, আদা, দারুচিনি, আদা, লবঙ্গ, হলুদ, গিলয় এবং গোলমরিচ। এই খাবারগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত সাহায্য করে। অস্বাস্থ্যকর, খুব বেশি বা খুব কম খাবার খাওয়ার অভ্যাস, খাবারের ভুল সংমিশ্রণ ইত্যাদি আমাদের হজম ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যার প্রভাব পড়ে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর। তাই সবার আগে হজম ক্ষমতা শক্তিশালী করা জরুরি। জেনে নিন শীতকালীন রোগ প্রতিকারের উপায়ঃ

সুষম খাবার খাওয়াঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে সঠিক পুষ্টি। ভিটামিন এ, বি৬, বি১২, সি এবং ডি ছাড়াও কপার, ফোলেইট, লৌহ, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। সুষম খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে ফল, সবজি, চর্বিহীন মাংস, দুগ্ধজাতীয় খাবার, গোটা শস্য, বাদাম এবং বীজ গ্রহণ করার মাধ্যমে পুষ্টি গ্রহণ করা যায়।

ভিটামিন ডি’র মাত্রা বাড়ানোঃ হাড়, দাঁত এবং পেশি সুস্থ রাখতে ভিটামিন ডি উপকারী। ভিটামিন ডি সাধারণত আমরা সূর্যালোক ও কিছু খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করে থাকি। শীতকালে দেহে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি দেখা যায়। তাই এই সময় ১০ মাইক্রো গ্রামের সম্পূরক ভিটামিন ডি গ্রহণ দেহে এর ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। সাধারণত যারা দিনের অধিকাংশ সময় ঘরে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে বেশি প্রয়োজন। কেন-না তারা পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় না।

শাক সবজি খাওয়াঃ শাকসবজি মানুষের শরীরে পুষ্টি যোগায়। শীতকালীন রোগেরে মহৌষধ হলো শাকসবজি। শিশুদের মতো অনেক সময় বড়রাও শাকসবজি খেতে চান না। কিন্তু তাদের বুঝতে হবে, শাকসবজি খেলে শীতকালীন রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। লালশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ঢেঁড়স, মুলা, ওলকপি, পালংশাক, মুলাশাক প্রভৃতি খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

শক্তির মাত্রা বৃদ্ধিঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে শক্তি বৃদ্ধি করা দরকার অর্থাৎ পর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। শ্বেতসার ধরনের কার্বোহাইড্রেইট যেমন- বাদামি চাল এবং আলু, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- মাংস, মাছ, মটর ও সামান্য পরিমাণ তেল থেকে পাওয়া চর্বি খাওয়ার মাধ্যমে দেহে শক্তির চাহিদা পূরণ করা যায়।

ঘুমের গুরুত্বঃ কোনোভাবে ঘুমের ঘাটতি সৃষ্টি করা উচিত নয়। কারণ ঘুমের ঘাটতি হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে। শীতকাল ছুটির মৌসুম। এই সময় অনেক ক্ষেত্রেই ঘুমচক্রের অনিয়ম ঘটে থাকে তাই সচেতন থাকা প্রয়োজন।

আর্দ্র থাকাঃ অনেকেই উষ্ণ থাকতে অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ করে থাকেন। তবে এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। শরীর আর্দ্র রাখে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা প্রয়োজন এটা, সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে।

ধুলাবালি থেকে সতর্কতাঃ শীতের সময় বাতাসে ধুলাবালি বেড়ে যায়। আর এতে নানা ধরণের ধাতুর উপস্থিতিও থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ থেকে বাঁচতে মুখে মাস্ক পড়ে চলাচল করা উত্তম।

ডায়াবেটিক রোগীদের করণীয়ঃ যাদের ডায়াবেটিক বা দীর্ঘমেয়াদি আছে শীত তাদের রোগের প্রকটতা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। এজন্য নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে হবে।

নিজেকে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষাঃ শীতের সময় নিজেকে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য গরম কাপড় পরীধান করতে হবে, কান ও হাত ঠেকে রাখতে হবে, গলায় নরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে। শিশুরা অনেক সময় শরীরে গরম কাপড় রাখে না বা খুলে ফেলে। তাই তাদের দিকে সতর্ক নজর রাখা উচিত। গোসল, হাতমুখ ধোয়া ও পানি পানসহ সকল ক্ষেত্রে সবসময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। এ সময় ঠাণ্ডা খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।

প্রচুর পানি পান ও ব্যায়াম করাঃ শীতের সময়েও প্রচুর পরিমাণে খাবার পানি পান করতে হবে বলে পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এ সময় রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে এবং শরীর সুস্থ্য রাখতে শীতকালেও নিয়মিতভাবে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করতে হবে। শীতকাল জুড়ে ফিট থাকার জন্য শারীরিক ক্রিয়াকলাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রতিদিন শারীরিক ব্যায়াম বা যোগ ব্যায়াম উষ্ণ রাখতে সাহায্য করবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে, যা ফ্লু এবং সর্দি-কাশির মতো মৌসুমি রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা দিবে।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণঃ ভিটামিন সি অধিকাংশ রোগের জন্য এক প্রকার প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। তাই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন জলপাই, কমলা, লেবু ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে।

ধূমপান বর্জনঃ ধূমপান রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলে। এতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। ধূমপানের ফলে উৎপন্ন নিকোটিন, ফর্মালডিহাইড, অ্যামোনিয়া, কার্বন মনোক্সাইড, টার, এসিটোন ইত্যাদি যৌগ জীবাণুর বিরুদ্ধে শ্বেতরক্তকণিকার কার্যক্রম ব্যাহত করে।

শীতকালীন রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে শেষকথা

শীতের তীব্রতায় শারীরিক সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে আতঙ্কিত না হয়ে প্রয়োজন একটু বাড়তি সতর্কতা। এ সময় সবার উচিত কুসুম কুসুম গরম পানি পান করা। এতে শ্বাসনালিতে মিউকাস তৈরি হয়ে রোগজীবাণু বের হয়ে যায়। এ ছাড়া গোসল ও অন্যান্য কাজে গরম পানি ব্যবহার করাই উত্তম। পরিবারের কেউ ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হলে অন্যদেরও সাবধান থাকতে হবে। বিশেষ করে হাঁচি-কাশির সময় মুখে রুমাল ব্যবহার করতে হবে।

শীতে অসুস্থতা এড়াতে হিস্টামিনযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এ ধরনের খাবারের মধ্যে ডিম, মাশরুম, টমেটো, শুকনো ফল, দই উল্লেখযোগ্য। এসব খাবার শীতের দিনে অতিরিক্ত কফ তৈরি করে।বুকে কফ জমলে, গলা ব্যথা, সর্দি-কাশি হলে শীতের সময় চিকিৎসকরা দুগ্ধ জাতীয় খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ এসব খাবার খেলে বুকে কফ জমার প্রবণতা আরও বেড়ে যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url