তিল খাওয়ার উপকারিতা ও খাওয়ার সঠিক নিয়ম

তিল খাওয়ার উপকারিতা ও খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে পারবেন আজকের এই আর্টিকেলে। তিলে একাধিক ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। ক্যালশিয়াম ও ফসফরাসের মতো খনিজ এবং প্রয়োজনীয় বেশ কয়েকটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও রয়েছে তিলের মধ্যে।
তিল-খাওয়ার-উপকারিতা
এসব খনিজ সামগ্রিকভাবে শরীরের জন্য ভালো উপকারী। তিলের বীজ প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং অন্যান্য পুষ্টিতে সমৃদ্ধ যা নিয়মিত খাওয়া হলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। আপনি আপনার খাবারে বিভিন্ন উপায়ে তিলের বীজ অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

পেইজ সূচিপত্রঃ তিলের উপকারিতা ও খাওয়ার সঠিক নিয়ম

তিল খাওয়ার উপকারিতা 

তিল খাওয়ার উপকারিতা ও তিলের পুষ্টিগুণ ব্যাপক। তিল শুধু শরীরকে সুস্থই রাখে তা নয়, এটি খেলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন বি ও ই, ক্যালসিয়াম ও আয়রনের মতো নানা পুষ্টিকর উপাদান পায়। প্রতিদিন এক চামচ তিল খাওয়া উচিত, কারন তিল খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাহলে জেনে নিন নিচে তিলের উপকারিতাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

পুষ্টির যোগান দেয়ঃ তিলের বীজে রয়েছে নানা ধরনের স্বাস্থ্যকর পুষ্টি উপাদান। প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস হিসাবে। এগুলি নিরামিষ এবং নিরামিষ খাবারের একটি দুর্দান্ত সংযোজন। তাছাড়া লাল রক্তকণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে এবং আপনার ইমিউন সিস্টেম ফাংশনকেও সমর্থন করে। প্রকৃতপক্ষে, মাত্র এক কাপ শুকনো তিল শরীরে তামার দৈনিক মূল্যের ১৬৩% দেয়। তিলের বীজ ম্যাঙ্গানিজ এবং ক্যালসিয়ামের একটি চমৎকার উৎস, উভয়ই আপনার হাড়কে সুস্থ ও শক্তিশালী হতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম স্নায়ু সংকেত সংক্রমণ, পেশী আন্দোলন, রক্তনালীর কার্যকারিতা এবং হরমোন নিঃসরণেও ভূমিকা পালন করে।

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধঃ কালো হোক বা সাদা, দুই ধরনের তিলেই সিস্যামোলিন্‌স এবং সেসামিন নামক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। এই দু’টি উপাদান অক্সিডেটিভ স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করেঃ রক্তের উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রভূত কার্যকরী সাদা তিল কারণ এই তিলে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা রক্তচাপ হ্রাস করে। প্রতিদিন ভোরে এক টেবিল চামচ কালো তিল অল্প অল্প করে মুখে দিয়ে মিহি করে চিবিয়ে যখন একেবারে রসের মতো হয়ে যাবে তখন গিলে ফেলতে হবে। এই ভাবে সব তিল চিবিয়ে খাওয়া হয়ে গেলে ঠাণ্ডা জল খেতে হবে। এই তিল খাওয়ার পর তিন ঘন্টা পর্যন্ত আর কিছু খাবেন না। সাদা তিলে একাধিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলস রয়েছে। তাই প্রতিদিনের খাবারে এই উপকরণটি ব্যবহার করলে শরীরের ক্যানসার প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণেও অত্যন্ত কার্যকরী এই তিল। সাদা তিলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস যা হাড় মজবুত করে এবং অস্টিওপোরোসিসের সম্ভাবনা কমায়। তিলের তেল কিন্তু খুবই উপকারি। তিলের তের গোড়ালি ফাটা, ঠোঁট ফাটা দারুণ কাজ করে। তিল তেল একটু গরম করে রোজ মালিশ করলে এক মাসের মধ্যেই নিষ্প্রাণ ত্বকে উজ্জ্বলতা এসে যায়, সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। খিদে বাড়ায় তিলের তেল। নানা রকমের, ক্ষত, আঘাত, পুড়ে যাওয়া, মাড়িয়ে যাওয়া, ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদিতে তিলের তেল অত্যন্ত উপকারি।

কোলেস্টেরল কমায়ঃ নিয়মিত তিল বীজ গ্রহণে উচ্চ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড হ্রাস পায়। এটি ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) এর বৃদ্ধি তে সহায়তা করে এবং খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) হ্রাস করে। তিলের বীজে ১৫% স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ৪১% পলিআনস্যাচুরেটড এবং ৩৯% মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এতে স্যাচুরেটড ফ্যাট এর তুলনায় বেশি পরিমাণে পলিআনস্যাচুরেটেড ও মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ।

কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমায়ঃ তিলের বীজে রয়েছে স্বাস্থ্যকর প্রোটিন। আর প্রোটিন সমৃদ্ধ এই তিলবীজ রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এর আরও একটি গুণ রয়েছে। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমাতে সাহায্য করে এটি।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ তিলে ভাল মাত্রায় ফাইবার থাকে। তিলের তেল দিয়ে রান্না করা খাবার খেলে বিপাকহার বাড়ে। ডায়াবেটিকদের জন্যেও বেশ উপকারী তিল। যে কোনও মরসুমি সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সতর্ক থাকতে হয় ডায়াবেটিকদের। ফলে ডায়াবিটিস রোগীদের জন্যেও উপকারী তিলের তেল।

লিভার ভালো রাখেঃ লিভার বা যকৃতের কার্যকারিতা ঠিক থাকলে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ঠিক থাকে। তিলের বীজে রয়েছে Methionine ও Tryptophan নামের দুটি পদার্থ। এই উপাদানগুলো লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ঘুমের সমস্যাও দূর করে। তাই যারা অনিদ্রা সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য তিলবীজ উপকারি।

কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করেঃ তিলের বীজে লিগনান এবং ফাইটোস্টেরল থাকে, যা উদ্ভিদ যৌগ যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে। ফাইটোস্টেরলগুলি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং নির্দিষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে বলেও বিশ্বাস করা হয়।গবেষকরা দেখেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণভাবে খাওয়া সমস্ত বাদাম এবং বীজের মধ্যে, তিলের বীজে সর্বাধিক মোট ফাইটোস্টেরল উপাদান রয়েছে যার পরিমাণ প্রতি ১০০ গ্রামে ৪০০ থেকে ৪১৩ মিলিগ্রাম। তিলের বীজের অন্যান্য পদার্থগুলি উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করতেও পরিচিত।

হাড়ের জন্য ভালঃ যেহেতু তিলের মধ্যে ক্যালশিয়ামের পরিমাণ বেশি, তাই এই খাবার হাড়ের জন্যও ভাল। এ ছাড়া তিলের মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস। ক্যালশিয়ামের পাশাপাশি এই দু’টি খনিজও হাড়ের জোর বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। বয়সকালে হাড়ের ঘনত্ব স্বাভাবিক থাকলে অস্টিয়োপোরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ভয় কমে।

সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করেঃ তিলের বীজে থাকা সেসামিন এবং সেসামোলিন তাদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা কোষের ক্ষতি কমিয়ে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে আপনার শরীরকে রক্ষা করে। তিলের বীজের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল কার্যকলাপ স্ট্যাফ ইনফেকশন এবং স্ট্রেপ থ্রোটের পাশাপাশি অ্যাথলিটের পায়ের মতো সাধারণ ত্বকের ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রমাণিত।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করেঃ তিল বীজ বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়৷ এর ডায়াটারি ফাইবার হজমে সহায়তা করে। এতে স্বাস্থ্যকর চর্বি আছে, যা অন্ত্রের দেয়াল লুব্রিকেট করে হজম ও বিপাকে সাহায্য করে। এটি ওজন কমাতেও সহায়ক। তিল বীজের প্রোটিন(লাইসিন) হজমশক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

স্মৃতিশক্তি বাড়ায়ঃ স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখতেও তিল উপকারি একটি উপাদান। তিলে রয়েছে Lecithin নামক উপাদান। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া মাতৃদুগ্ধের মান ভাল করতে সাহায্য করে তিল।

অ্যানিমিয়া রোধ করেঃ বাজারে সাধারণত লাল, কালো ও সাদা তিল পাওয়া যায়। কালো ও লাল তিল আয়রন সমৃদ্ধ। অন্যদিকে সাদা তিলে রয়েছে ক্যালসিয়াম। তাই, তিলবীজ অ্যানিমিয়া রোধ করতেও সাহায্য করে।

পুষ্টির যোগান দেয়ঃ অনেকেই পুষ্টির জন্য ডায়েটে সূর্যমুখীর বীজ, কুমড়োর বীজ, চিয়া বীজ মিশিয়ে খান। সেখানে জায়গা করে নিতে পারে তিলের বীজও। এটি পুষ্টির যোগান দেয়।

গাঁটের ব্যথা উপশমে কার্যকরীঃ ফাইবার-যুক্ত হওয়ার ফলে হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য-সংক্রান্ত সমস্যাও দূর করে। সাদা তিলে রয়েছে কপার বা তামা যা গাঁটের ব্যথা, ফুলে যাওয়া, মাসল পেইন বা বাতের ব্যথার উপশমে কার্যকরী। তেজস্ক্রিয়তার হাত থেকে ডিএনএ-কে রক্ষা করার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে সাদা তিলের। তাই যাদের কেমোথেরাপি নিতে হয় তাদের খাদ্যতালিকায় এই উপাদান রাখা খুব প্রয়োজনীয়।

অনেকেই জানেন না যে ওরাল হেলথের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ এই উপকরণ। মুখের ভিতরের ব্যাকটেরিয়া নিধনের জন্য মুখের ভিতর স্প্রে করা হয় সাদা তিলের তেল। এই পদ্ধতিকে বলা হয় অয়েল পুলিং। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করে সাদা তিল ৷ সাদা তিলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার তন্তু পাওয়া যায় যা পাচন ক্রিয়াকে মজবুত করে।

রূপ লাবণ্যেঃ সাদা তিলে রূপ লাবণ্যের জন্যও পরিচিত ৷ মুখের অবাঞ্ছিত দাগ মিটিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক করে তোলে ৷ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাদা তিলের কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। সাদা তিলে এমন সমস্ত উপাদান আছে যা খেলে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে ৷ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস থাকায় হাড়ও মজবুত করে৷ শরীরের পুড়ে যাওয়া জায়গায় তিল পিষে নিয়ে, জলে ধোওয়া ঘি ও কর্পূর মিশিয়ে প্রলেপ দিলে সুফল পাওয়া যায়। তিলের তেল গরম করে লাগালেও আশ্চর্য সুফল পাওয়া যায়।

যদি শরীরের কোনো অংশ খুব জ্বালা করতে থাকে তাহলে তিল দুধ দিয়ে পিষে প্রলেপ লাগালে দাহ বা জ্বালা দূর হয়। যদি টাটকা ক্ষত বা ঘা না সারে তাহলে তিল পিষে নিয়ে মধু আর ঘি মিশিয়ে লাগালে অনেক ওষুধ বা মলমের চেয়ে বেশি কাজ দেয়। অনেকেরই অকালে চুল পেকে যায় এবং দুর্বল হয়ে চুল পড়ে যায়। তাদের এই সমস্যা নিরসনে কালো তিলের প্রয়োজন। এই তিলের তেল প্রয়োগ করলে খুব উপকার পাওয়া যায়। এমনকি চুল গজাতেও সাহায্য করে।

চুল সুস্থ রাখতে সহায়কঃ কালো তিল চুলের জন্য উপকারী হতে পারে। একটি গবেষণা পত্রে বলা হয়েছে, ভিটামিন বি এবং আয়রনের অভাবে চুল অকালে পেকে যায় ও ঝরে পড়তে শুরু করে। একই সময়ে, কালো তিলে উপস্থিত এই দুটি পুষ্টি চুল পড়া এবং চুল পাকা হওয়া উভয়ই কমাতে পারে। এই ক্ষেত্রে, কালো তিল চুলের জন্যও উপকারী।

কানের ব্যথা উপশম হয়ঃ খাদ্য হিসেবে তিল খুবই জনপ্রিয়। নাড়ু, মোয়া ইত্যাদি মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় তিল। এছাড়া তিলের তেল আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী। তিলের তেল ব্যবহার করা হয় রূপচর্চার ক্ষেত্রেও। পুষ্টির সমস্যা নিরসনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দাঁত ব্যথা করলে হিং বা কালোজিরে পিষে নিয়ে তিলের তেল মিশিয়ে তেল গরম করে কুলকুচো করলে আরাম পাওয়া যায়। এই তেল তুলোয় লাগিয়ে মুখে রাখাও যেতে পারে। হিং, কালো নুন মিশিয়ে গরম করা তিলের তেল পেটে মালিশ করলে বা সেঁক দিলে পেটের ব্যথা সারে এবং গ্যাস কমে যায়।

ক্যানসার বিরোধী বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধঃ কালো তিল সেবন ক্যানসারের সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক। NCBI ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, কালো তিলে উপস্থিত লিগনান যৌগটির ক্যান্সার প্রতিরোধী প্রভাব রয়েছে । এটি ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায়, তিলের এই ক্যানসার-বিরোধী বৈশিষ্ট্য ফুসফুসের ক্যানসার, স্তন ক্যানসার, প্রোস্টেট ক্যানসার, কোলন ক্যানসার, লিভার ক্যানসার এবং রক্তের ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক বলে বিবেচিত হয়েছে।

তিল খাওয়ার সঠিক নিয়ম 

তিল খাওয়ার সঠিক নিয়ম অনেকেই জানেন না।তিল শুধু শরীরকে সুস্থই রাখে তা নয়, এটি খেলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন বি ও ই, ক্যালসিয়াম ও আয়রনের মতো নানা পুষ্টিকর উপাদান পায়। তিল নানা ভাবে খাওয়া যায়। তিলের উপকারিতা পেতে আপনাকে সঠিক নিয়ম মেনে এটি খেতে হবে। এবার চলুন আপনাকে জানিয়ে দেই তিল খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে-

১. তিল খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনি তিল গুলোকে শুকনো প্যানে কিছুটা ভেজে নিতে পারেন। এতে তিলের স্বাদ বৃদ্ধি পাবে। দুধে বা পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যায়।

২. তিল খাওয়ার আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন। ধরুন আপনি সকালে তিল খাবেন। সে হিসেবে রাতের বেলা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তবেই খাবেন। কারণ, তিল ভিজিয়ে খেলে হজম সহজ হয় এবং এর পুষ্টিগুণও বাড়ে।

৩. তিলের সাথে আপনি বিভিন্ন ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল এবং সবজি মিশিয়ে একসাথে খেতে পারেন। এতে তিলের পুষ্টিগুণ আরো বেড়ে যাবে।

৪. আপনি যদি তিলের বীজ খেতে অভ্যস্ত না হন তাহলে তিল ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিয়ে সেটি রুটি বা পাউরুটি দিয়ে খেতে পারেন।

৫. তিল দিয়ে বিভিন্ন মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার যেমন- তিলের নাড়ু, তিলের মোদক ইত্যাদি তৈরি করেও খেতে পারেন।

৬. আপনি চাইলে মধুর সাথে মিশিয়েও তিল খেতে পারেন।

৭. তিল পেস্ট করে নিয়ে তাতে রসুন, লেবুর রস, লুল মিশিয়ে সেটা রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন। সস হিসেবেও খাওয়া যায়।

৮. আপনি চাইলে তিল দিয়ে ভর্তা তৈরি করেও খেতে পারেন। তিল দিয়ে তৈরি ভর্তা যেমন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ তেমনি স্বাস্থ্যসম্মত হয়।

৯. অনেকেই আছেন যারা সালাদ ও স্মুদির সাথে সাদা তিল খেতে পছন্দ করেন। এতে সালাদের স্বাদ যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি পুষ্টিগুন ও উপকার পাওয়া যায়।

খাওয়ার পরিমানঃ অতিরিক্ত তিল খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আর তাই পিল খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার পরিমাণ বুঝে খাওয়া উচিত। সাধারণত একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ২-৩ টেবিল চামচ তিল খাওয়াই যথেষ্ট।

তিলের তেলের উপকারিতা

তিলের তেলের উপকারিতা প্রচুর। তিলের বীজে প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ভিটামিন ই, বি কমপ্লেক্স ভিটামিন এবং ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ দিয়ে ভরা থাকে।এটি স্বাস্থ্যকর ভোজ্যতেলগুলোর মধ্যে একটি। এই তেলটি কেবল রান্নার জন্যই নয়, চিকিৎসার জন্যও ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদিক ওষুধে সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হয়। পুষ্টি উপাদানগুলোর কারণে এটি ‘তেলের রানি’ হিসেবে পরিচিত। তিলের তেল ব্যবহারের বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা কথা

ত্বকের যত্নঃ তিলের তেল ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে ভিটামিন ই, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ত্বককে নরম, কোমল এবং আর্দ্র রাখে। তিল এর তেল ত্বকে সহজেই শোষিত হয় এবং এটি ত্বককে গভীরভাবে পুষ্টি জোগায়। শুষ্ক ত্বকের সমস্যা, ব্রণ এবং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা করতে এটি কার্যকর। তিল এর তেলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণও রয়েছে, যা ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

চুলের যত্নঃ এই তেল চুলের জন্য একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। এতে ভিটামিন ই এবং ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা চুলের শুষ্কতা এবং খুশকির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত তিলের তেল ম্যাসাজ চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়, চুলকে মজবুত করে এবং চুল পড়া রোধ করে। তিল এর তেল চুলের প্রাকৃতিক রং বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং অকালে চুল পাকা প্রতিরোধে কার্যকর।

হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষায়ঃ তিলের তেলে মোনো-আনস্যাচুরেটেড এবং পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড প্রচুর পরিমাণে থাকে। এই উপাদানগুলো কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। তিল এর তেলে থাকা সিসামোল এবং সিসামিনোল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলো রক্তনালীকে শক্তিশালী করে এবং প্রদাহ কমায়, যা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত এই তেল গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

প্রদাহ প্রতিরোধ ও ব্যথা উপশমঃ তিলের তেলে উপস্থিত সিসামোল এবং সিসামিনোল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলো প্রদাহ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি আর্থ্রাইটিসের মতো প্রদাহজনিত সমস্যা এবং পেশী ব্যথা উপশমে কার্যকর। তিল এর তেল গরম করে আক্রান্ত স্থানে ম্যাসাজ করলে ব্যথা এবং প্রদাহ কমে যায়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এই তেল বিভিন্ন শারীরিক ব্যথা উপশমে বহুল ব্যবহৃত।

হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নয়নঃ তিলের তেলে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিঙ্কের মতো খনিজ পদার্থ রয়েছে, যা হাড়ের ঘনত্ব ও শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য তিল এর তেল হাড়ের ক্ষয় রোধ এবং অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে সহায়ক। নিয়মিত তিল এর তেল গ্রহণ হাড়ের ক্ষয়প্রক্রিয়া ধীর করতে সাহায্য করে।

রক্তচাপ হ্রাস করেঃ তিলের তেল অন্যান্য রান্নার তেলের স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সহায়তা করেঃ এটি মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মাত্রা মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে। তিলের তেলে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড মানসিক অস্বস্তি ও দুশ্চিন্তা দূর করে।

হার্ট ভালো রাখেঃ তিলের তেলে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা হার্ট ভালো রাখে। তেলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো সেসামল এবং সিসামিন, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে শক্তিশালী রাখতে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রাখতে সহায়তা করে।

ব্লাড সুগার কমায়ঃ এই তেলে আছে ম্যাগনেসিয়াম, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও তিলের তেলে ভিটামিন ই রয়েছে এবং এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর সমৃদ্ধ উৎস, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন গবেষণায়, ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকায় তিল তেল অন্তর্ভুক্ত করার কথাও প্রকাশ পেয়েছে।

পাচনতন্ত্রের জন্য উপকারীঃ তিলের তেল পাচনতন্ত্রের জন্য উপকারী, কারণ এটি অন্ত্রের মসৃণতা বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। এটি গ্যাস, বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যার উপশমে কার্যকর। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ তিল এর তেল খেলে অন্ত্র পরিষ্কার থাকে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।

দাঁতের যত্নঃ তিলের তেল মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় একটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা অয়েল পুলিং নামে পরিচিত। এই পদ্ধতিতে তেল মুখে নিয়ে কুলকুচি করলে মুখের জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া দূর হয়। এটি দাঁতের মাড়ি মজবুত করে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। এই তেলে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণাবলী মুখের সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। মুখগহ্বর ও ক্ষুদ্রান্ত্র পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি দাঁত ঝকঝকে করতেও তিলের তেল অত্যন্ত উপকারি।

মানসিক চাপ কমায়ঃ তিল এর তেলে ট্রিপটোফ্যান নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা সেরোটোনিন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। সেরোটোনিন একটি নিউরোট্রান্সমিটার, যা মানসিক চাপ কমাতে এবং মস্তিষ্ককে শিথিল করতে সাহায্য করে। এই তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক প্রশান্তি আসে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ তিলের তেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানের উপস্থিতি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং ফ্রি র‌্যাডিকাল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি প্রতিরোধ করে। নিয়মিত এই তেল গ্রহণ শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখে।

তিল বীজের পুষ্টিগুণ

তিল বীজের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। প্রচুর ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা ৬, কপার ও ম্যাঙ্গানিজের উৎস এই তিল। মেনোপজ হয়েছে এমন নারীরা প্রতিদিন ৫০ গ্রাম পরিমাণ তিল খেলে হট ফ্লাশ কমে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এটি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে বাড়ায় ও হজমে সাহায্য করে। প্রদাহ, আর্থরাইটিস কমাতেও উপকারী। এ ছাড়াও আরো অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে তিলের যা নিচে দেখানো হলোঃ

পুষ্টি উপাদান পরিমান
ক্যালরি ৫৮৬ কিলোক্যালরি
শর্করা ২৪.০৫ গ্রাম
প্রোটিন ১৮.০৮ গ্রাম
ফ্যাট ৫০ গ্রাম
লিপিড ৫০.৮৭ গ্রাম
ফাইবার ৫.৫ গ্রাম
পটাশিয়াম ৫৮২ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ৯৬০ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ৩৬২ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ১২ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ৬৫৯ মিলিগ্রাম
জিঙ্ক ৭.২৯ মিলিগ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ ২.৫৮ মিলিগ্রাম
সেলেনিয়াম ৩৫.৫ মাইক্রোগ্রাম
কপার ৪.২১৪ মিলিগ্রাম
থায়ামিন ২৪০ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন ৬.৭০ মিলিগ্রা

চুলের যত্নে তিলের তেলের উপকারিতা

চুলের যত্নে তিলের তেলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ অনেক। তিলের তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই ও বি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও প্রোটিন রয়েছে; যা চুল সুস্থ রাখতে খুবই জরুরি। নিয়মিত মাথার ত্বকে ও চুলে তিলের তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে চুল পড়া কমে, খুশকি দূর হয়, নতুন চুল গজায়, চুলের গোড়া শক্ত হয়, চুলের রুক্ষতা ও মাথার ত্বকের সংক্রমণ জাতীয় সমস্যা দূর হয়। তিলের তেল চুলে কীভাবে ব্যবহার করবেন সে সম্বন্ধে কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হলোঃ
চুলের যত্নে-তিলের-তেলের-উপকারিতা
চুল পড়া কমায়ঃ তিলের তেলে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা থ্রি এবং ওমেগা সিক্স। এই উপাদানগুলো আপনার চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এসব ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি হলে চুল পড়া বাড়তে পারে। এছাড়া তিলের তেল আপনার স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। এটি আপনার চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। কেমিকাল ড্যামেজ থেকে আপনার চুলকে রক্ষা করে। দুশ্চিন্তার কারণে অনেক সময় চুল পড়ে যায়। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে মাথায় তিলের তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন। দেখবেন, দুশ্চিন্তা দূর হবে, ঘুম ভালো হবে ও চুল পড়া অনেকটা কমে যাবে।

আরামদায়ক অনুভূতি তৈরি করেঃ তিলের তেলে রয়েছে আরামদায়ক ও প্রশান্তি তৈরিকারী উপাদান। অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া ও স্ট্রেইটনারের উষ্ণতা চুলের জন্য ক্ষতিকর তিলের তেলের আরামদায়ক উপাদান চুলের জন্য উপকারিতার পাশাপাশি মাথায় আরামদায়ক প্রশান্তিভাবও নিয়ে আসে। এমনটা হওয়ার কারণ, তিলের তেলে মাথার ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে দারুণ কার্যকর একটি উপাদান।

খুশকি দূর করেঃ তিলের তেলের অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য খুশকি এবং অন্যান্য মাথার ত্বকের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। হালকা গরম তিলের তেল দিয়ে কয়েক মিনিট মাথার ত্বক ম্যাসাজ করুন। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এক সপ্তাহ এভাবে নিয়মিত মাথায় এই তেল ব্যবহার করুন।তিলের তেল স্ক্যাল্প এবং ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি আপনার স্ক্যাল্পের শুষ্কভাব কমায়। খুশকি নিয়ন্ত্রণ করে।

অকালপক্কতা রোধ করেঃ স্ক্যাল্পে তিলের তেল মালিশ করলে উপকার পাবেন। অকালপক্কতাও রোধ করা যায় এই তেলের গুণেই। তিলের তেল চুল-এর হারিয়ে যাওয়া রং ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।তিলের তেলে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট চুলে অসময়ে পাক ধরতে দেয় না।

প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসাবে কাজ করেঃ তিলের তেল চুলে প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করে। প্রথমে তিলের তেল হালকা গরম করে মাথার ত্বকে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এবার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

চুলের রুক্ষতা দূর করেঃ নিয়মিত তিলের তেল দিয়ে চুল ও মাথার ত্বক ম্যাসাজ করুন। এবার শ্যাম্পু করে বেশি করে চুল কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এটি আপনার চুলের রুক্ষতা দূর করে চুল নরম ও মসৃণ করবে।

নতুন চুল গজাতে সাহায্য করেঃ তিলের তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। এর ফলে নতুন চুল গজায়। এই তেল চুলকে গভীর থেকে সুস্থ রাখে এবং নিয়মিত ব্যবহারে চুলের ভেঙে যাওয়া সমস্যা দূর হয়।

মাথার ত্বকের চুলকানি কমায়ঃ তিলের তেলে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অনেক সময় মাথার ত্বকের সংক্রমণের কারণে মাথায় চুলকানির সমস্যা হয়। তিলের তেল সহজেই এই সংক্রমণ দূর করে। এই তেল হালকা গরম করে মাথার ত্বকের ম্যাসাজ করুন। দেখবেন, ধীরে ধীরে মাথার তালুর সংক্রমণ দূর হবে।

ফাঙ্গাল ও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন প্রতিরোধ করেঃ তিলের তেলে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত সমস্যা থাকলে চুলে রোজ তিলের তেল ম্যাসাজ করলে উপকার পাওয়া যায়। উকুন ও চুলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণজনিত যেকোনো সমস্যার সমাধান হিসেবে বেছে নিতে পারেন এই তেল।

চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখেঃ শুষ্ক আবহাওয়া ও রৌদ্রতাপে চুল হারায় স্বাভাবিক জৌলুশ। আর্দ্রতা হারিয়ে চুল একেবারেই ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এ সমস্যা এড়াতে চুলের গোড়া ও ডগায় তিলের তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।

ইউভি রশ্মি থেকে সুরক্ষিত রাখেঃ তিলের তেলের সবচেয়ে চমৎকার উপকারিতাটি হল, প্রাকৃতিক এই তেলটি সান- ব্লকিং উপাদান হিসেবে কাজ করে। ফলে তিলের তেলের ব্যবহার চুলের গোড়া থেকে সম্পূর্ণ চুলকে প্রখর রোদের মাঝে সুরক্ষিত রাখতে কাজ করে। রোদের আলোর পাশাপাশি বাইরের দূষণের ভেতরেও চুলকে সুরক্ষিত রাখতে তিলের তেল কার্যকরি।

হেয়ার ড্যামাজ থেকে বাঁচতেঃ নানারকম স্টাইলিং-এর কারণে চুল ড্যামেজ হয়ে থাকলে, একটা পাকা অ্যাভোকাডো ম্যাশ করে নিয়ে তাতে মেশান ৫ চামচ তিলের তেল (চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী এই পরিমাণ বাড়িয়ে নিতে পারেন)। এবার পুরো চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে দু’বার করলে ভালো উপকার পাবেন।

উকুন দূর করতেঃ উকুন দূর করতে অনেকেই বিশেষ সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করেন যেগুলো উকুন দূর করার পাশাপাশি চুলকে ফ্রি-ভাবে রুক্ষ করে দেয়। ঘরোয়া রেমেডি হিসেবে, প্রয়োজন অনুযায়ী তিলের তেলের মধ্যে নিম পাতা নিয়ে, একটু মাইক্রোওভেন এ গরম করে স্ক্যাল্প এ লাগান। পুরো চুলে ভালো করে লাগাতে হবে নইলে উকুন দূর হবে না। দু ঘণ্টা পরে শ্যাম্পু করে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে উকুন দূর হবে প্লাস চুলে শাইন আসবে।

চুলে তিলের তেল ব্যবহার করার নিয়ম

চুলে তিলের তেল ব্যবহার করার নিয়ম অনেকেই জানেন না। তিলের তেল চুলের যত্নের অন্যতম গোপন রহস্য। যদিও নারকেল এবং ক্যাস্টর অয়েল বছরের পর বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে,তবুও তিলের তেল এখন পর্যন্ত তাদের পাশেই রয়ে গেছে। আপনার চুলের যত্নের পদ্ধতিতে তিলের তেল ব্যবহার করার জন্য নিচে কিছু নির্দেশনা দেয়া হলো। আসুন সেগুলো দেখে নিইঃ

স্ক্যাল্প ক্লিনার হিসেবেঃ তিলের তেল একটি ক্যারিয়ার তেল যা প্রায়শই নিম তেলের সাথে ব্যবহার করা হয়। মাত্র কয়েকবার প্রয়োগের পরে, আপনার চুল সিল্কি ও মসৃণ হবে এবং আপনার চুলকানিযুক্ত মাথার ত্বক প্রশমিত হবে।

কিভাবে এটি ব্যবহার করবেন

  • সমান অংশ (৫০/৫০)নিয়ে মিশিয়ে পাতলা করে নিন এবং মাথার ত্বকে আলতো করে ম্যাসাজ করুন।
  • এটি ৩০ মিনিটের জন্য মাথায় ছেড়ে দিয়ে রাখুন।
  • হালকা হেয়ার ক্লিনজার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ডিপ কন্ডিশনার হিসেবেঃ তিল এবং মিষ্টি বাদাম তেলের মিশ্রণে আপনার চুলে প্রয়োগ করুন। এই তেলটি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ হয়। ফলে,এটি একটি গভীর কন্ডিশনার চিকিৎসার জন্য একটি চমৎকার বিকল্প তৈরি করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন
  • আপনার প্রিয় ডিপ কন্ডিশনারে উভয় তেলই যোগ করুন এবং মাথার ত্বকে আলতো করে ম্যাসাজ করুন।
  • ৩০ মিনিটের জন্য এটি চুলে ছেড়ে দিন।
  • এবার হালকা হেয়ার ক্লিনজার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ময়েশ্চারাইজার হিসেবেঃ নারকেল এবং তিলের তেল দিয়ে আপনার চুলকে পুষ্ট করুন এবং এর স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করুন। নারকেল তেল সমৃদ্ধ, ফ্যাটি অ্যাসিড সহ চুলের খাদকে গভীরভাবে পুষ্ট করতে সহায়তা করে। এগুলো তেল একত্রিত হলে, তেলগুলি চুলের জন্য ক্ষতি থেকে বাঁচিয়ে রাখে এবং ক্ষতিগ্রস্ত স্ট্র্যান্ডগুলি নিরাময় করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন

  • একটি পরিষ্কার বোতলে দুই তেলেরই সমান অংশ নিয়ে একত্রিত করুন।
  • মাথার ত্বকে তেল লাগান এবং এটি আপনার চুলের পুরো অংশে লাগিয়ে রাখুন।
  • ৩০ মিনিটের জন্য একটি গরম তোয়ালে দিয়ে চুল মুড়িয়ে রাখুন।
  • এরপর একটি হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।


তিলের তেল এবং অ্যালোভেরার প্যাকঃ চুলে হোক বা ত্বকে, অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর শাঁস রূপচর্চায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তিলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে পারেন অ্যালোভেরা।

কিভাবে ব্যবহার করবেন

একটি পাত্রে সমপরিমাণ তিলের তেল এবং অ্যালোভেরার শাঁস বা জেল মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মাথার ত্বকে লাগিয়ে হালকা হাতে মালিশ করুন। ৩০ মিনিট পর কুসুম গরম পানিতে চুল ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।

তিলের তেল, মধু এবং দইয়ের প্যাকঃ একটি পাত্রে ৪ টেবিল চামচ টক দইয়ের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ তিলের তেল এবং ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে নিন।

কিভাবে ব্যবহার করবেন

চিরুনির সাহায্যে চুল আঁচড়ে, হাত অথবা ব্রাশের সাহায্যে মাথার ত্বকে মিশ্রণটি লাগিয়ে নিন। আধা ঘণ্টা রেখে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। পানি দিয়ে ধোয়ার পর শ্যাম্পু করে নিন। তারপর ব্যবহার করুন কন্ডিশনার।

সৌন্দর্যচর্চায় তিলের তেলের উপকারিতা

সৌন্দর্যচর্চায় তিলের তেলের উপকারিতা ব্যাপক। ত্বকের ব্ল্যাক হেড, ব্রণ আর কালো দাগ দূর করতে তিলের তেল ব্যবহার করতে পারেন। তিলের তেল যেমন সারা রাত ত্বকে লাগিয়ে রাখা যায়, তেমনি ক্লিনজিং ক্রিম হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। পায়ের গোড়ালি ফাটার সমস্যাতেও কাজে লাগবে তিলের তেল।

তিলের তেলে থাকা ভিটামিন এবং মিনারেলস শরীরের জন্য যেমন ভালো, তেমনি চুল আর ত্বকের যত্নে এর অনেক ধরনের উপকারিতা রয়েছে। তিলের তেলে আছে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, প্রোটিন, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর হওয়ায় এটা প্রাকৃতিকভাবেই আপনার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সল্যুশনে দারুন কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কিন্তু এর বেনিফিটস আমরা অনেকেই জানি না

স্কিনটোন ইভেন করতেঃ তিলের তেলে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকায়, যাদের প্যাচি স্কিন বা ত্বকে দাগ ছোপ আছে, তারা দিনে দুই বার এই অয়েল হালকা করে ম্যাসাজ করে ১৫ মিনিট রেখে দিয়ে, গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে মুছে নিলে, স্কিনটোন অনেকটাই ইভেন হয়ে যাবে।

ময়শ্চারাইজারঃ এই তেলে থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলি অসাধারণ ময়শ্চারাইজারের কাজ করে। তাই প্রতিদিন স্নানের আগে এই তেল সারা শরীরে ভালোভাবে ম্যাসেজ করে নেবেন। এভাবে নিয়মিত করলে শীতকালীন রুক্ষতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে নরম ও মসৃণ। বিশেষ করে মৃত কোষ দূর করতে তিল তেল চমৎকার কাজ করে।

শুষ্ক ত্বকের যত্নেঃ এই তেল একটি অসাধারণ ময়েশচারাইজার। পাশাপাশি এতে ডিটক্সিফাইং উপাদান থাকায় শুষ্ক ডেড সেল দূর করে ত্বককে সফট ও হাইড্রেটেড করে তোলে। রাতে ঘুমানোর আগে দু ফোঁটা তিলের তেল যেকোনো ক্রিমের সাথে মিশিয়ে ফেইসে অ্যাপ্লাই করবেন। চাইলে এই তেল আপনি আপনার পছন্দের ফেইস প্যাকেও লাগাতে পারেন, তবে খুব বেশি না, দুই থেকে তিন ফোঁটা পরিমাণে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখেঃ ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতেও তিলের তেলের বিকল্প নেই। নিয়মিত তিলের তেল মাখলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। যাদের ত্বক শুষ্ক, তাদের শীতকালে ভোগান্তি বাড়ে। তবে শীত আসার আগে থেকে যদি তিলের তেল মাখতে শুরু করেন তাহলে কোনো সমস্যা হবে না।

ত্বকের রিংকেলস দূর করতেঃ বয়স বিশের পরে তিলের তেল ব্যবহার শুরু করা উচিত। আর যদি আপনি আমার মতো ২৫+ হয়ে থাকেন, তাহলে আজকে থেকেই এই তেল ব্যবহার শুরু করা উচিত। কেননা এই তেলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে বলে এটি অসাধারণভাবে অ্যান্টি-এজিং এর কাজ করে। মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে এই তেল কয়েক ফোঁটা ভালোভাবে অ্যান্টিক্লক ওয়াইজ ম্যাসাজ করবেন। এরপরে গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে মুখের ওপর এক মিনিট পেতে রেখে মুছে ফেলুন।

একনে সমাধান করতেঃ অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় তিলের তেল একনে সমস্যাতেও দারুণ কাজ দেয়। একটা কথা মনে রাখবেন- যেকোনো তেলই কিন্তু বিভিন্নভাবে আমাদের উপকার করে, কিন্তু তেল লাগিয়ে মুখে কখনোই রেখে দেয়া ঠিক না, কেননা তেল ধুলাবালি টেনে নেয়, তাই প্রয়োজনমত ব্যবহার করে মুছে ফেলতে হবে। তিলের তেল অ্যালভেরা জেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে বেশ ভালো রেজাল্ট পাবেন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলবেন।

সানবার্ন ও ক্লোরিন বার্ন কমাতেঃ সানবার্ন দূর করতে, গোসলের আগে ভালোভাবে তিলের তেল সারা শরীরে, যেমন হাত, পা, মুখ, গলা, ঘাড় যেসব জায়গায় বেশি সানবার্ন হয়েছে, সেখানে ভালোভাবে মালিশ করে, এরপরে গরম পানি দিয়ে গোসল করে নিন। এভাবে বেশ কয়েকদিন করলে ভালো উপকার পাবেন। এছাড়াও যারা নিয়মিত সুইমিং পুলে যান, তাদেরও ক্লোরিন পানিতে স্কিন-এর বেশ সমস্যা হয়। তাই সুইমিং পুলে নামার আগে এই তেল মেখে নিলে ক্লোরিন আপনার ত্বকের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না।

অ্যান্টি এজিংঃ তিরিশের পর নিয়ম করে তিলের তেল মুখে মাখুন কারণ এতে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের মুখে রিংকেলস বা কোনও কারণে চামড়া কুঁচকে গেলে তা সমান করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন স্নানের পরে এবং রাতে শুতে যাওয়ার আগে অল্প তিলের তেল নিয়ে অ্যান্টি ক্লকওয়াইজ ম্যাসাজ করুন।

গর্ভাবস্থায় তিল খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় তিল খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য এটি উপকারী উপাদান হিসেবে পরিচিত। তিলে থাকা প্রোটিন, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম, আয়রন, মিনারেল ইত্যাদি উপাদান গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এগুলো হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সহায়ক। গর্ভাবস্থায় অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি দূর করতে তিল সাহায্য করে থাকে। তিলে থাকা ফাইবার গর্ব অবস্থায় পাচন প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও তিলে থাকা আয়রন মা ও শিশু উভয়ের রক্ত তৈরিতে সহায়ক। গর্ভাবস্থায় অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিলে থাকা ভিটামিন ই তো ও প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সহায়ক। এটির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গর্ভবতী মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।গর্ভাবস্থায় মায়েদের হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা জরুরী যা তিলের মাধ্যমে সম্ভব।

নিয়মঃ গর্ভাবস্থায়ী তিল খাওয়ার নিয়ম হলো দিনে ১ থেকে ২ চামচ। এর চেয়ে বেশি না খাওয়াই ভালো। এই সময় তিল চাইলে কাঁচাও খাওয়া যেতে আবার ভেজে কিংবা ভিজিয়ে রেখেও খাওয়া যাবে। তিল ভেজানোর ফলে এটির স্বাদ এবং পুষ্টি গুণাগুণ আরও বৃদ্ধি পায়। আবার বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায় যেমন সালাদ, দই বা রুটির মধ্যে। নাস্তা হিসেবে তিলের শরবত খাওয়াও উপকারী।

তিল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর

আপনারা যারা তিল খাওয়ার উপকারিতা ও খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কিত সচোরাচর যে প্রশ্নগুলা গুগলে কিংবা কোনো ওয়েব সাইটে এসে সার্চ করে থাকেন তার সংক্ষেপে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর নিচে তুলে ধরা হলো। যা তিল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আশা করছি আপনারা সংক্ষিপ্ত কিছু ধারনা লাভ করতে পারবেনঃ

প্রশ্নঃ চুল গজানোর জন্য তিলের ব্যবহার?

উত্তরঃ তিলের বীজ একটি সূক্ষ্ম পাউডারে পিষে নিন। এটিকে দই, মধু বা অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। আপনার মাথার ত্বক এবং চুলে মাস্কটি প্রয়োগ করুন, শিকড়গুলিতে ফোকাস করুন। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ধুয়ে ফেলার আগে এটি 20-30 মিনিটের জন্য বসতে দিন।

প্রশ্নঃ তিলে কি কি উপাদান আছে?

উত্তরঃ তিলে সিসেমিন নামে একটি উপাদান থাকে যা দীর্ঘায়ু হতে সাহায্য করে। সিসেমিন রক্তচাপ কমায় এবং ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল এবং টোটাল কোলেস্টেরল কমায়। তিলের প্রোটিন কমায় হৃদরোগের ঝুঁকি। তিলে ক্যালসিয়াম ছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম, কপার, জিঙ্ক, আয়রন, থায়মিন ও ভিটামিন 'ই' থাকে।

প্রশ্নঃ তিলের বীজে কি পুষ্টি আছে?

উত্তরঃ তিলের বীজে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর পুষ্টি উপাদান। প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উত্স হিসাবে, এগুলি নিরামিষ এবং নিরামিষ খাবারের একটি দুর্দান্ত সংযোজন। এগুলিতে তামাও রয়েছে, যা লাল রক্তকণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে এবং আপনার ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতাও সমর্থন করে।

প্রশ্নঃ তিল বেশি খাওয়া কি ক্ষতিকর?

উত্তরঃ কিছু খাবার তিলের তেল বা মাখন দিয়ে তৈরি করা হয়, অন্যগুলো তিলের বীজ দিয়ে শীর্ষে থাকে। উপরন্তু, তিল বীজের অত্যধিক ব্যবহার গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল বিপর্যস্ত বা অস্বস্তির কারণ হতে পারে । এটি শরীরে এন্ডোক্রাইন ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

প্রশ্নঃ কাদের তিল খাওয়া উচিত নয়?

উত্তরঃ তিলের বীজ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরিবর্তন করতে পারে। রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করা নিশ্চিত করুন এবং অস্ত্রোপচারের দুই সপ্তাহ আগে তিলের বীজ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। বুকের দুধ খাওয়ানো এবং গর্ভাবস্থায় তিলের বীজ খাওয়ার পরিমাণ সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

তিল বীজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

তিল সেবন প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। আসলে যে কোনও কিছুই বেশি পরিমাণে খেলে যেমন শরীরের ক্ষতি হয়, তেমনই তিলের অত্যধিক সেবনও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে। তাই সর্বদা যথোপযুক্ত পরিমাণে তিল খাওয়া উচিত। বিবিধ পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ তিল স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। কিন্তু এই তিলেরও রয়েছে বেশকিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর।
তিল-বীজের-পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
১। ওজন বৃদ্ধিতেঃ আপনি যদি ডায়েট করে থাকেন, তবে তিল খাওয়ার আগে একবার ভেবে নিন। ১০০ গ্রাম তিলে যা এক মুঠোর সমান তাতে ৫৯০ ক্যালরি আছে। যা থেকে আপনি ৮ গ্রাম সম্পৃক্ত চর্বি পেয়ে থাকবেন। যা আপনার প্রাত্যহিক খাবারের ৪০%! প্রতিদিন তিল গ্রহণের ফলে আপনার ওজন অনেক বেড়ে যেতে পারে।

২। কোলন ক্যানসারঃ নিয়মিত তিল গ্রহণে কোলনে প্রবাহিত করে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ১৫ ন্যানোগ্রাম তিল খেলে কোলনে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়, যা কোলন ক্যানসার উদ্ভব করে থাকে।

৩। উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেশনঃ তিলে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম আছে (১১ মিলিগ্রাম সোডিয়াম ১০০ গ্রাম তিলে)। অতিরিক্ত তিল খাওয়ার ফলে রক্তনালীর মধ্যে পানির প্রবাহ বেড়ে যায়। যা রক্তচাপ বৃদ্ধি করে থাকে। হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়া রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।

৪। অ্যালার্জির ঝুঁকিঃ অনেকের বিভিন্ন বাদাম যেমন কাজুবাদাম, চিনাবাদামে অ্যালার্জি থাকে। তারা তিল খাওয়া এড়িয়ে যাবেন। তিল তাদের অ্যালার্জির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা কারণে চোখ, নাক লাল হওয়া, অ্যাজমা, হজমের সমস্যা হতে পারে।

৫। ডায়রিয়াঃ তিলে প্রচুর পরিমাণে ল্যাকসাটিভ আছে। নিয়মিত গ্রহণে বিশেষত যাদের ফুড অ্যালার্জি আছে তারদের তিলের খাবার গ্রহণ করলে ডায়ারিয়া দেখা দিতে পারে। তাই যাদের ফুড অ্যালার্জি আছে তারা তিলের খাবার খুব বেশি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেন।

৬। স্কিন র‍্যাশঃ অতিরিক্ত তিল গ্রহণ ত্বকের জন্য বেশ ক্ষতিকর হতে পারে। আপনি যদি অতিরিক্ত তিল খেলে বা অতিরিক্ত তিলের পণ্য ব্যবহার করলে ত্বকে র‍্যাশ দেখা দিতে পারে।

৭। গর্ভপাতঃ গর্ভকালীন প্রথম কয়েক মাসে তিল বা তিল জাতীয় খাবার বেশি খেলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে থাকে। তাই এইসময় তিল বা তিল জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।তিল বা তিল জাতীয় খাবার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে তিল বা তিলের খাবার খাওয়া উচিত।

তিল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে শেষকথা

তিলের তেল শুধুমাত্র একটি রান্নার উপাদান নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য একটি প্রাকৃতিক উপহার। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চমানের পুষ্টি, শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহ প্রতিরোধী গুণাবলী যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়ক। এটি ত্বক ও চুলের যত্নে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো, হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং পেটের সমস্যায় এই তেল অত্যন্ত কার্যকর।

এই তেল প্রকৃতির এক অপার উপহার, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে উপকার করে। আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং রূপচর্চায় তিলের তেলকে অন্তর্ভুক্ত করে আমরা সহজেই একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অর্জন করতে পারি। তিলের তেল তার ঔষধি গুণাবলী এবং পুষ্টিগুণের কারণে সুপরিচিত। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য নানাভাবে উপকারী। আশা করছি তিল সম্পর্কে জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url