আপেল সিডার ভিনেগারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আপেল সিডার ভিনেগারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে
জানতে আর্টিকেলটি শুরু থেকে মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। আপেল সিডার ভিনেগারের
সাথে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত। নাম শুনে পরিচিত কিন্তু এর কাজ বা উপকারিতা ও এর
গনাগুণ কি আমরা অনেকেই জানিনা।
বহুকাল ধরেই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বিভিন্ন কাজে ব্যাবহার করা হয়। বিভিন্ন
স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে এর ব্যাবহার রয়েছে অনেক। যারা
অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা নিয়ে ভুগছেন এবং ডায়াবেটিস সহ নানা রকম রোগে আক্রান্ত,
তাদের জন্য এই পানীয় অনেক উপকারী।
পেইজ সূচিপত্রঃ আপেল সিডার ভিনেগারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- আপেল সিডার ভিনেগার কি
- আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা
- আপেল সিডার ভিনেগারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- আপেল সিডার ভিনেগার কি হারাম
- অ্যাপল সিডার ভিনিগারের পুষ্টিগুণ
- আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম
- আপেল সিডার ভিনেগার বানানোর নিয়ম
- গর্ভাবস্থায় আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার উপকারিতা
- আপেল সিডার ভিনেগারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে শেষকথা
আপেল সিডার ভিনেগার কি
আপেল সিডার ভিনেগার হলো আপেল থেকে তৈরি এক ধরনের ভিনেগার। আপেল সিডার ভিনেগার একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক উপাদান যাতে রয়েছে অ্যাসিটিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড এবং
ম্যালিক অ্যাসিড। এছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন, এনজাইম, মিনারেল সল্ট এবং অ্যামিনো
অ্যাসিড, যা সাধারণ ঠাণ্ডা-কাশি, পেশীতে ব্যথা, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলসহ নানা
স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করে থাকে। স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি সৌন্দর্য রক্ষার্থে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আপেল সিডার ভিনেগার কি জেনে নিন এই অংশে- আপেল থেকে গাঁজন বা ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি করা হয়।
আপেলের রসে ইস্ট ও ব্যাকটেরিয়া মিশিয়ে ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়
আপেল সিডার ভিনেগার যা আপেল জুসকে অ্যালকোহলে পরিনত করে। ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ার
দ্বিতীয় ধাপে অ্যালকোহল এসিটিক অ্যাসিডে পরিনত হয়ে অ্যাসিটো ব্যাকটেরিয়া জন্ম
দেয়।
এ ভিনেগারে ৯৪% পানি, ১% কার্বোহাইড্রেট ৫% অ্যাসেটিক এসিড থাকে এবং কোনও ফ্যাট
বা প্রোটিন নেই। ইহা ২২ ক্যালোরি সরবরাহ করে। এটি শরীরের জন্য উপকারী। এতে থাকা
ব্যাকটেরিয়া শরীরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। এসিটিক অ্যাসিড থাকার
জন্য আপেল সিডার ভিনেগারের স্বাদ সাধারণত টক হয় এবং রঙ হয় হালকা বাদামি। এতে খনিজ
লবণ, ভিটামিনস, মিনারেলস, অ্যামিনো অ্যাসিডস, অর্গানিক অ্যাসিডস, পলিফেনল
কম্পাউন্ডস রয়েছে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যও রয়েছে এর মধ্যে। যখন
Apple Cider Vinegar প্রস্তুতির ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়াটির মেয়াদকাল আরো
বাড়ানো হয়, তখন এতে বেশকিছু উপকারী এনজাইম, ইস্ট এবং এসিটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া
রয়ে যায়। এই উপকারী উপাদানসমূহকে একত্রে “মাদার” বলা হয়। আপেল সিডার ভিনেগার
উইথ মাদার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং উপকারী। আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার দেখতে
ঘোলাটে ও তুলনামূলকভাবে ঘন হয়ে থাকে।
আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা
আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা রয়েছে ব্যপক। কয়েক বছর ধরে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার। ওজন কমানো থেকে সুগার, পেটের জমে থাকা মেদ কমানো, একাধিক রোগের দাওয়াই এটি। শুধু শরীর নয় ত্বক ও চুলের যত্নেও কার্যকরী এই উপাদানটি। বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া শুরু করলে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে শর্করার মাত্রা প্রায় ৩১ শতাংশ কমে যায়। যারা
ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা যদি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ২৫০ মিলি জলে ২ টেবিল চামচ
আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খান, তাহলে উপকার পাবেন। সকালে খালি পেটে শরীরচর্চার
আগেও খেতে পারেন। চলুন জেনে নেয়া যাক আপেল সিডার ভিনেগারের কি কি উপকারিতা রয়েছে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণাবলীঃ ভিনিগার প্যাথোজেন এবং ক্ষতিকারক
ব্যাক্টিরিয়া বিনাশে সাহায্য করে।ক্ষতস্থান পরিষ্কার এবং সংক্রমণ
প্রতিরোধে, কানের সংক্রমণ, আঁচিল, উকুন প্রতিরোধ এবং নখের
ফাঙ্গাস নির্মূল করার কাজে ব্যবহিত হয়। খাদ্য সংরক্ষণের কাজেও ভিনিগার কাজে লাগে।
খাদ্যে ব্যাক্টিরিয়া জন্মানো এবং খাদ্য নষ্ট হওয়া প্রতিরোধ করে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিটিক
অ্যাসিড, ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা শরীরে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। প্রতিদিন খাবারের সাথে
১ থেকে ২ চামচ আপেল সিডার ভিনেগার খেলে ইমিউনিটি বৃদ্ধি
পাবে।অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল সমৃদ্ধ আপেল সিডার ভিনেগার শরীরের খারাপ
ব্যাকটেরিয়া এবং প্যাথোজেন মেরে ফেলে। যে কারণে আমাদের শরীর নানা সংক্রমণ ও
রোগভোগ থেকে মুক্তি পায়।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ আপেল সিডার ভিনেগার ট্রাইগ্লিসারাইড এবং
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা খুব বেশি হলে হৃদরোগের
ঝুঁকি বাড়ায় বলে জানা যায়। আপেল সিডার ভিনেগারে প্রচুর আলফা-লিনোলিক
অ্যাসিড রয়েছে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও আবিষ্কৃত হয়েছে। আপনি যদি আপনার
হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত হন তবে আপনি আপনার ডায়েটে অ্যাপল সিডার
ভিনেগার অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে চিন্তা করতে পারেন।
ওজন কমায়ঃ এখন প্রায় সবাই জানেন অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেলে ওজন কমে।
অ্যাপল সিডার ভিনিগারের মূল উপাদান হলো অ্যাসেটিক অ্যাসিড (AcOH), যেটা শরীরে
স্নেহ পদার্থ সঞ্চিত হওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করে। নিয়মিত ভিনিগার গ্রহণ করলে
শরীরের মধ্যে সঞ্চিত চর্বি এবং স্থূলত্ব কমাতে সাহায্য করে। অ্যাপল
সিডার ভিনিগার গ্রহণে পেট ভর্তি থাকার অনুভব হয় বলে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কম করতে
সাহায্য করে, ফলত ওজন কম হয়।
তবে সেজন্য অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করতে হবে। সুষম খাবার, ব্যায়াম,
পর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি বিষয় মেনে চলার পাশাপাশি অ্যাপল সিডার ভিনেগার গ্রহণ করলে
এটি বিএমআর (বডি মেটাবলিক রেট) বাড়িয়ে ওজন কমাতে ভূমিকা রাখবে। তবে এগুলো না
মেনে চলে শুধু অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাওয়ার মাধ্যমে ওজন কমানো কখনোই সম্ভব নয়।
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বিএমআরের মাত্রা বাড়াতে পারলে ওজন দ্রুত কমে। আর এই বিএমআর
বাড়াতে লেবু পানি, গ্রিন টি, ডিটক্স ওয়াটারের মতো অ্যাপল সিডার ভিনেগার
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ডায়বিটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ এখনও পর্যন্ত টাইপ-২ ডায়বিটিস রোগীদের
ক্ষেত্রে ভিনিগারের ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। টাইপ-২ ডায়বিটিস
এমন একটি সমস্যা যা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা সাধারণ মাত্রার চেয়ে বেশি করে
দেয়। দুপুরের বা রাত্রের খাবারের পর ভিনিগারের ব্যবহারে রক্তে শর্করার মাত্রা
উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। এছাড়া শোয়ার সময় ভিনিগার ব্যাবহার খাওয়া হলে খালি পেটে
থাকার সময় ডায়বিটিস রোগীদের গ্লুকোজের মাত্রা ৪% কমে। রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের
সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে পরিশ্রুত কার্বোহাইড্রেট এবং চিনি এড়িয়ে যাওয়া, কিন্তু
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অ্যাপল সিডার ভিনিগারের ব্যবহারে খুব
ভাল ফল হয়।
সুগার নিয়ন্ত্রণ করেঃ অ্যাপল সিডার ভিনেগার শরীরের ইনসুলিন সেনসিটিভিটি
বাড়ানোর মাধ্যমে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ইনসুলিনের কারণে
গ্লুকোজ দেহের কোষে প্রবেশ করে এবং কোষে প্রবেশ করে বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে ব্যবহৃত
হয়। ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বেশি হলে গ্লুকোজ রক্তে মিশ্রিত অবস্থায় না থেকে
বিপাকীয় কাজে ব্যবহার হয়ে যাবে।
কোলেস্টেরল কমায়ঃ বিশ্বে অকালমৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদরোগ। রক্তে
কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে আপেল সিডার ভিনেগার
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। ভিনেগারের
অ্যাসিটিক অ্যাসিড দ্রুত রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
হৃদযন্ত্র ভালো রাখেঃ অ্যাপল সিডার ভিনেগার রক্তের কোলেস্টেরল এবং
উচ্চরক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। হাই কোলেস্টেরল বা হাই
ব্লাডপ্রেশার থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকলে
হৃদযন্ত্র ভালো থাকে।
হজমে সাহায্য করেঃ যাদের হজমের সমস্যা আছে তারা খাবার খাওয়ার আগে বা পরে
কুসুম গরম পানিতে এক চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেলে উপকার পাবেন। খাবার হজমের
জন্য যে এনজাইম বা এসিড প্রয়োজন হয় এটি সেসব এনজাইম এবং এসিডের নিঃসরণ বাড়িয়ে
দেয়। ফলে খাবার দ্রুত ও ভালোভাবে হজম হয়। উজ্জীবিত এনজাইম সমৃদ্ধ এই পানীয়
খাদ্যকে তার মৌলিক উপাদানে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে, যার ফলে বিপাকীয় প্রক্রিয়া
সহজ হয়। অ্যাপল সিডার ভিনিগারের মূল উপাদান হল অ্যাসেটিক অ্যাসিড যা বিপাকীয়
প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ কার্যকরী করে দেয়। বিপাকীয় প্রক্রিয়ার জন্য নিঃসৃত রস
উজ্জীবিত হয় বলে বিপাকীয় প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করেঃ ফার্মেন্টেড প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়ার কারণে
এটির অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি
বৈশিষ্ট্য। এ কারণে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের পরিমাণ কমায় এটি।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করেঃ আপেল সাইডার ভিনেগার মুখ পরিষ্কার করার জন্য
কার্যকরী উপাদান হিসেবে মনে করা হয়। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান মুখের
শ্বাসের গন্ধ দূর করে। যদি আপনি এটা করতে চান তাহলে অবশ্যই তা পানির সাথে মিশিয়ে
নিবেন। এক কাপ বা ২৪০ মিলি পানির সাথে এক টেবিল চামচ ভিনেগার নিতে পারেন। সরাসরি
ভিনেগার মুখের ভিতর ব্যবহার করলে দাঁত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গলাব্যথা দূর করেঃ গলা ব্যাথা নিরাময়ের একটি ভালো টোটকা আপেল সিডার
ভিনেগার। গলা ব্যাথা হলে কাপের এক-চতুর্থাংশ কুসুম গরম পানিতে সমপরিমাণ ভিনেগার
মিশিয়ে এক ঘণ্টা পর পর কুলকুচা করলে উপশম পাওয়া যায়। কারণ অ্যাসিডযুক্ত পরিবেশে
জীবাণু টিকতে পারে না।
বন্ধ নাক পরিষ্কার করেঃ আপেল সিডার ভিনেগারে থাকে পটাশিয়াম ও অ্যাসিটিক
অ্যাসিড। পটাশিয়াম মিউকাসকে পাতলা করতে সাহায্য করে আর অ্যাসিটিক অ্যাসিড
জীবাণু ধ্বংস করে, যা নাক বন্ধ হওয়া সমস্যা দূর করে। এছাড়া সাইনাস সমস্যাজনিত
নাক দিয়ে পানি পড়াও বন্ধ করতে পারে এই ভিনেগার।
পেটের সমস্যা নিরাময় করেঃ আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে নানা
অ্যান্টিবায়োটিক গুণ, যার ফলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণজনিত ডায়রিয়া নিরাময়ে সাহায্য
করে এটি। এছাড়া আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে পেকটিন, যা শরীরের ভিতরের নানা
সমস্যা দূর করে।
দাঁতের জন্য উপকারীঃ আপেল সিডার ভিনেগার সাধারণত ব্লিচিং এজেন্ট হিসাবে
কাজ করে। এটি মাউথওয়াশ হিসেবেও কাজ করে। তাই আপেল সিডার ভিনেগার দাঁত সাদা ও
দাঁতের রং ভালো করে এবং মুখে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। দাঁতের
হলদেটে ভাব দূর করার জন্য এর কোন তুলনা নেই। তবে আপেল সিডার ভিনেগার অত্যধিক
ব্যবহারে দাঁতের ক্ষতি হয়। তাই অতিরিক্ত ভিনেগার ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকতে
হবে।
ত্বকের জন্যঃ আপেল সিডার ভিনেগার ত্বকের টনিক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
অল্প পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে পানির সাথে বা গোলাপজল মিশিয়ে ত্বকে
যেখানে ব্রণ সৃষ্টি হয়েছে, সেই স্থানে নিয়মিত লাগালে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই
ব্রণ চলে যাবে। পেডি-কিউর করতে কুসুম গরম পানিতে কিছু পরিমাণ আপেল সিডার
ভিনেগার মিশিয়ে পায়ের যত্নে সপ্তাহে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও সান ট্যান
রিমুভ করতে অলিভ অয়েল বা পানির সাথে অল্প পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে
স্কিনে এপ্লাই করলে সান ট্যান দূর হবে।
ব্রণের সমস্যা দূর করেঃ যৌবনের একটি অতি সাধারণ সমস্যা
হল ব্রণ।অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিব্যাক্টিরিয়াল গুণের জন্য
ভিনিগার পরিচিত। অ্যাপল সিডার ভিনিগারে অ্যাসেটিক অ্যসিড, সাকসিনিক অ্যাসিড এবং
সাইট্রিক অ্যাসিড আছে। সাকসিনিক অ্যাসিড কার্যকরভাবে ত্বকের ব্যাক্টিরিয়া,
প্রোপিওনিব্যাকটিরিয়াম অ্যাকনি যা ব্রণর সঙ্গে সম্পর্কিত, তা বিনষ্ট করে। এই সব
পরীক্ষার ফলের উপর ভিত্তি করে বলা যায়, ত্বকের ওপর অ্যাপল সিডার ভিনিগার
ব্যবহার করলে ব্রণ বা অ্যাকনির জন্য দায়ী ব্যাক্টিরিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
চুলের জন্য উপকারীঃ বিভিন্ন শ্যাম্পুর pH মাত্রা মেপে প্রমাণ হয়েছে
অতিরিক্ত ক্ষারীয় শ্যাম্পু চুলের আর্দ্রতা কমায়, এবং চুলের ডগা ভেঙে ফেলে, ফলে
চুলের কোশ বা ফলিকল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শ্যাম্পু সাধারণত ক্ষারীয় হয়ে থাকে বিপরীতে
অ্যাপল সিডার ভিনিগার pH হারে সমতা আনতে সাহায্য করে এবং তাতে চুলের ক্ষতি হয় না।
আপেল সিডার ভিনেগার চুলে ব্যবহার করলে চুল স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বল ও লম্বা হয়।
পাত্রে পরিমাণ মতো আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে সম পরিমাণে পানি মিশিয়ে শ্যাম্পু
করার পর মিশ্রণটি দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে চুলে কন্ডিশনিং
হবে, তাছাড়া চুলের খুশকি যাবে এবং চুল নতুন করে গজাবে। অ্যাপল সিডার ভিনিগারের
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান আছে এটি মাথার ত্বক ব্যাক্টিরিয়া এবং ফাঙ্গাস মুক্ত
করতে সাহায্য করে, তাতে চুলকানি বন্ধ হয়।
আপেল সিডার ভিনেগারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আপেল সিডার ভিনেগারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছেন অনেকেই। দ্রুত ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার পানের বিকল্প নেই। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ দীর্ঘমেয়াদি নানা সমস্যার সমাধান রয়েছে ভিনেগারে। জানেন কি দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত আপেল সাইডার ভিনেগার পান করলে শারীরিক নানা সমস্যা হতে পারে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক আপেল সিডার ভিনেগারের কি কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছেঃ
১. আপেল সাইডার ভিনেগার অ্যাসিডযুক্ত পানীয়। নিয়মিত আপেল সাইডার ভিনেগার পান করলে
দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এ ছাড়াও অতিরিক্ত আপেল সাইডার ভিনেগার পান করলে
জিহ্বায় ক্ষত হতে পারে। প্রচুর পরিমাণে আপেল সিডার ভিনেগার পান করলে আপনার দাঁত
এবং মাড়ির ক্ষতি হতে পারে, আপনার গলা ব্যথা হতে পারে এবং উচ্চ অ্যাসিডিটির কারণে
আপনার পেট খারাপ হতে পারে।
২. অ্যাপল সিডার ভিনিগার এর অম্লতার জন্য সহজেই কিছু ওষূধ যেমন জোলাপ
(কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে), ডায়রেটিকস (শরীর থেকে অতিরিক্ত জল এবং নুন বার করে দেয়),
এবং ইনসুলিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। যেহেতু অ্যাপল সিডার ভিনিগার সরাসরি ইনসুলিন
এবং রক্তে শর্করার মাত্রার ওপরে প্রভাব ফেলে, যদি রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করা
নিয়ন্ত্রণের ওষুধের সঙ্গে যুগ্মভাবে খাওয়া হয় তাহলে তার ফল খুব খারাপ হতে পারে।
ডায়বিটিস আক্রান্ত রোগীদের সতর্কতার সঙ্গে এটি বাবহার করতে হবে কারণ এর মধ্যে
ক্রোমিয়াম থাকতে পারে যা ইনসুলিনের হার প্রভাবিত করতে পারে।
৩. অপরিশোধিত আপেল সাইডার ভিনেগার পান করলে হজমজনিত সমস্যা হতে পারে। যার ফলে
পরবর্তীতে আলসারের ঝুঁকি বাড়ে। অনেকেই খাবারের পর আপেল সাইডার ভিনেগার পান করতে
গিয়ে বমি ও বদহজমের শিকার হয়েছেন বলে এক গবেষণায় জানা যায়। তাই অবশ্যই খাওয়ার
অন্তত আধা ঘণ্টা আগে ভিনেগার পান করুন।
৪. আপেল সাইডার ভিনেগার শরীরের পটাশিয়ামের মাত্রা কমিয়ে ফেলে। শরীরের পটাসিয়াম
লেভেল কমে গেলে হয় হাইকোক্লেমিয়া। দীর্ঘদিন এ সমস্যায় ভুগলে পেশী দুর্বল হয় এবং
পক্ষাঘাত হতে পারে। যদি কোনো ব্যক্তি পেশীর সমস্যা বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন তবে
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫. আপেল সাইডার ভিনেগার গ্রহণের ফলে কিছু ওষুধের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া ঘটতে পারে।
বিশেষ করে ডায়ুরিটিকস, রেবেস্টিকস এবং ইনসুলিন গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক
হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীরা ইনসুলিনের পাশাপাশি যদি ভিনেগার গ্রহণ করেন, তবে
হাইপোগ্লাইসেমিয়া (ব্লাড সুগার কমে যায়) হতে পারে। এজন্য আপেল সাইডার ভিনেগার
খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৬. অ্যাপল সিডার ভিনিগারে উচ্চ মাত্রায় অ্যাসেটিক অ্যসিড থাকার কারণে রক্তে
পটাসিয়ামের মাত্রা কমে যায়। এই অবস্থাকে বলা হয় হাইপোক্যালেমিয়া। এই
পরিস্থিতিতে দুর্বলতা, খিঁচ ধরা, বমিভাব, বহুমূত্রতা, রক্তচাপ কমে যাওয়া, হৃদস্পন্দনে পরিবর্তন এবং পক্ষাঘাতের মতো উপসর্গ দেখা যায়।
৭. অতিরিক্ত অ্যাপল সিডার ভিনিগার গ্রহণে হাড়ের আকরিক ঘনত্ব বা মিনারেল ডেনসিটি
কমিয়ে দিতে পারে, যার ফলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। কাজেই, যে সব
ব্যক্তি অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত তাঁদের কখনও অ্যাপল সিডার ভিনিগার
নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা উচিত হবে না।
মনে রাখতে হবেঃ অনেকেই যে অ্যাপল সিডার ভিনিগার থেকে দূরে থাকেন তার প্রধান কারণ
এর স্বাদ। তবে এর স্বাদ পাল্টানো যেতে পারে যদি জল আর মধু মেশানো হয়। এবং সরাসরি
অ্যাপল সিডার ভিনিগার পান করা ক্ষতিকর কারণ এর মধ্যে থাকা অ্যসিড আপনার
খাদ্যনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। নিয়মিত অ্যাপল সিডার ভিনিগার খেলে রোগবালাই
দূরে থাকে। কিন্তু কোনও খাদ্যই নিখুঁত হয় না এবং অতিরিক্ত ব্যবহারে
পার্শ্বপ্রতিক্রয়া দেখা দেয়। কাজেই, স্বাস্থ্যের উন্নতি পরিপূর্ণভাবে পেতে গেলে
পরিমিত হারে অ্যাপল সিডার ভিনিগার খাওয়া উচিত।
আপেল সিডার ভিনেগার কি হারাম
আপেল সিডার ভিনেগার ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণ হালাল। এটি এমন একটি
ভিনেগার যা আপেলের রস থেকে তৈরি হয়। এর প্রস্তুতপ্রণালিতে প্রাথমিকভাবে
অ্যালকোহল তৈরি হলেও ভিনেগার হওয়ার প্রক্রিয়ায় এই অ্যালকোহল অক্সিডেশন
প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসিটিক এসিডে রূপান্তরিত হয়। ভিনেগার একটি অম্লীয় পদার্থ,
যা হালাল খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি মদ নয় এবং এতে নেশা সৃষ্টিকারী
অ্যালকোহল থাকে না।
আপেল সিডার ভিনেগারের প্রস্তুত প্রক্রিয়ায় আপেলের রস প্রথমে ফারমেন্টেশনের
মাধ্যমে অ্যালকোহলে রূপান্তরিত হয়। তবে এই অ্যালকোহল পরবর্তীতে অক্সিডাইজ হয়ে
এসিটিক এসিডে পরিণত হয়। যেহেতু এতে নেশা সৃষ্টিকারী কোনো পদার্থ থাকে না তাই
এটি হালাল হিসাবে গণ্য করা হয়। আপেল সিডার ভিনেগার সম্পূর্ণ হালাল। এর প্রস্তুত
প্রক্রিয়ায় অ্যালকোহল শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে অক্সিডাইজ হয়ে এসিটিক এসিডে
পরিণত হয়। শরীয়াহ অনুযায়ী নেশা সৃষ্টিকারী পদার্থ হারাম, কিন্তু ভিনেগারে এমন
কোনো নেশা সৃষ্টিকারী পদার্থ থাকে না। তাই আপেল সিডার ভিনেগার ইসলামিক
দৃষ্টিকোণ থেকে হারাম নয়, বরং এটি হালাল এবং এটি স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত
উপকারী।
আপল সিডার ভিনিগারের পুষ্টিগুণ
অ্যাপল সিডার ভিনিগারে প্রায় ২১ ক্যালরি শক্তি আছে। এটিতে কোনও স্নেহ পদার্থ,
কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন বা ফাইবার (তন্তু) নেই। এটি ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম,
ক্যালসিয়াম, এবং পটাসিয়ামের মতো আকরিক সমৃদ্ধ পানীয়। ক্যালরি না বাড়িয়ে আপনার খাদ্যে নতুন
স্বাদ এনে দিতে এর জুড়ি নেই।
প্রতি ১০০ গ্রাম আপল সিডার ভিনিগারে নিম্নলিখিত উপাদান থাকে:
জল 93.81 g
শক্তি 21 কিলোক্যলোরি
ছাই 0.17 g
কার্বোহাইড্রেট 0.93 g
শর্করা 0.4 g
গ্লুকোজ 0.1 g
ফ্রাকটোজ 0.3 g
খনিজ পদার্থ
ক্যালসিয়াম 7 mg
লোহা 0.2 mg
ম্যাগনেসিয়াম 5 mg
ফসফরাস 8 mg
পটাসিয়াম 73 mg
সোডিয়াম 5 mg
জিঙ্ক 0.04 mg
তামা 0.008 mg
ম্যাঙ্গানিজ 0.249 mg
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম হলো একজন ব্যক্তি কীভাবে খাবেন সেটা নির্ভর করে তিনি কোন উদ্দেশ্যে খাচ্ছেন তার উপর। অনেকেই আছেন সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে আপেল সিডার ভিনেগার খেয়ে থাকেন। যার কারণ ওজন কমানো, এটা ওজন কমাবে ঠিকই কিন্তু দীর্ঘদিন খেলে শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই খাওয়ার ২০ মিনিট আগেই খেতে হবে এটি। এতে হজমশক্তিও বাড়বে এবং শরীর ভালো থাকবে।
সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস পানির সাথে দেড় চা চামচ (৭.৫ মিলি) আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করতে হবে। পানির সাথে না মিশিয়ে সরাসরি পান করা যাবে না। পান করার পর অবশ্যেই দেড় ঘন্টা দ্রুত হাটা ও দেড় ঘন্টা ব্যায়াম করতে হবে। আপেল সিডার ভিনেগার সবসময়ই হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে খাবেন। তাছাড়া আপনি দারুচিনির গুঁড়া ও লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারে। কখনও পানি ছাড়া এই ভিনেগার খাবেন না।
যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তাদের প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগে ২৫০ মিলি পানিতে দেড় চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করতে হবে। আপেল সিডার ভিনেগার পান করার ২০-৩০ মিনিট পর অবশ্যই কিছু খাওয়া উচিৎ। আপেল সিডার ভিনেগার ১ চা চামচ ১ গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিবার খাবার খাওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগে দিনে ২-৩ বার পান করতে হবে।
ওজন কমানোর জন্য আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করলে ঘুম থেকে উঠে সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ইসবগুল বা চিয়াসিডের সঙ্গে মিশিয়ে এটি খেলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। দীর্ঘ দিন ধরে আপেল সিডার ভিনেগার না খেয়ে মাঝে মধ্যে বিরতি দিয়ে পান করলে ভাল। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় আপেল সিডার খেলে এর অম্ল গুণ শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
অনেকেই অ্যাপেল সিডার ভিনিগারের সঙ্গে লেবু যোগ করেন, যা একদমই উচিত নয়। লেবুতে সাইট্রিক এসিড এবং অ্যাপেল সিডার ভিনিগারে অ্যাসিটিক অ্যাসিড আছে। দুই ধরনের এসিডযুক্ত খাবার একসঙ্গে খাওয়া ঠিক নয়।
যারা ডায়াবেটিস রোগী, ওষুধ খাচ্ছেন এবং সুগার লেভেল আরেকটু নিয়ন্ত্রণে আনতে চান তারা খাওয়ার আগে বা খাওয়ার ৩০ মিনিট পরে এটি খেতে পারেন।
একজন ব্যাক্তি সারাদিনে সর্বোচ্চ দুই টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেতে পারবেন। প্রথমে এক টেবিল চামচ দিয়ে শুরু করে দেখবেন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না। পরে ধীরে ধীরে দুই টেবিল চামচ খাবেন। তবে সারা দিনে এক টেবিল চামচ পরিমাণ খাওয়াই যথেষ্ট। আর যাদের খেতে অসুবিধা হয় তারা আরও কম পরিমাণে এক চা চামচ করে খেতে পারেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা অ্যাপল সিডার ভিনেগার পর্যাপ্ত পরিমাণ পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। অন্তত ২০০ মিলিলিটার পানিতে ১ টেবিল চামচ নিতে হবে। শুধু পানিতে না নিয়ে একটু ইসবগুল, চিয়াসিড বা তোকমার সঙ্গে নিলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
আপেল সিডার ভিনেগার বানানোর নিয়ম
আপেল সিডার ভিনেগার বানানোর নিয়ম হয়তো অনেই জানেন না। আপেল সিডার ভিনেগার ভেজানো আপেলের রস থেকে
তৈরি করা হয়। আপেল থেকে গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় আপেল সিডার ভিনেগার।
এতে ৫-৬ শতাংশ অ্যাসেটিক এসিড থাকে। এছাড়া এ ভিনেগারে থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও
খনিজ লবণ। আপেল সিডার ভিনেগার অনেক রোগের একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া প্রতিকার। চলুন
জেনে নেওয়া যাক আপেল সিডার ভিনেগার কিভাবে বানাবেন সে সম্পর্কেঃ
১০টি আপেল ভালো করে ধুয়ে প্রতিটি চার টুকরা করে কেটে নিন। বাদামি রং হওয়া
পর্যন্ত রেখে দিন আপেল গুলো। বাদামি হয়ে গেলে একটি বড় কাঁচের জারে আপেলের
টুকরা রাখুন। ১ কাপ পানিতে ১ চা চামচ চিনি মিশিয়ে জারে ঢালুন। যতক্ষণ পর্যন্ত
আপেলের টুকরাগুলো পুরোপুরি ডুবে না যাচ্ছে, পানি ঢালতে থাকুন। প্রতি কাপে
চিনি মেশাতে ভুলবেন না। পানিতে আপেল পুরোপুরি ডুবে গেলে ২ টেবিল চামচ সাদা
ভিনেগার দিন।
এবার টিস্যু দিয়ে জারের মুখ ঢেকে দিন। ভেতরে যেন বাতাস চলাচল করতে পারে
সেদিকে লক্ষ রাখবেন। জারটি রান্নাঘরের ক্যাবিনেটে রেখে দিন। ৩ সপ্তাহ পর জার
বের করে আপেলের টুকরাগুলো উঠিয়ে ফেলুন। ভালো করে নেড়ে আবারও আগের জায়গায় রেখে
দিন। প্রতিদিন একবার চামচ দিয়ে নাড়তে হবে। ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ পর বের করে দেখুন
টক স্বাদ এসেছে কিনা, চলে আসলে আপনার আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি হয়ে যাবে।
গর্ভাবস্থায় আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় আপল সিডার ভিনেগার খাওয়ার পরামর্শ সর্বদা দেওয়া হয় না।
গর্ভবতী মহিলারা তাদের ডায়েটে অ্যাপল সিডার ভিনেগার যুক্ত করার আগে
চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন, নীচে দেওয়া স্বাস্থ্যকর উপকারগুলি অর্জন
করতে। দয়া করে মনে রাখবেন যে গর্ভাবস্থায় আপেল সিডার ভিনেগার সেবন করার
উপকারিতাগুলি প্রমাণ করার জন্য খুব কমই গবেষণা রয়েছে। অতএব, আমরা পাঠকদের
তাদের চিকিৎসকের কাছ থেকে গাইডেন্স এবং পরামর্শ চাইতে অনুরোধ করছি।
মূত্রনালীর সংক্রমণ রোধ করেঃ অ্যাপল সিডার ভিনেগারে ইউটিআই-এর
প্রতিরোধ এবং চিকিত্সাতে সহায়তার জন্য এনজাইম ও খনিজ রয়েছে বলে পরিচিত।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার (এসিভি) পাতলা করে গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়,
আদর্শ অনুপাতটি হলো ১ গ্লাস জলে ১ চা চামচ এসিভি। এটি পরামর্শ দেওয়া হয়
যে আপনি এসিভি গ্রহণের পরিমাণ এবং ফ্রিকোয়েন্সি সম্পর্কে আপনার
চিকিত্সাবিদের সাথে কথা বলুন। তবে, পর্যাপ্ত অধ্যয়নের অভাবের কারণে ইউটিআই
প্রতিরোধের এর কার্যকারিতা অপ্রত্যাশিত।
বুকজ্বালা নিয়ন্ত্রণ করেঃ গর্ভবতী মহিলারা সাধারণত
গর্ভাবস্থার ১২তম সপ্তাহে আশেপাশে অম্বল ও বুকজ্বালায় বেশি আক্রান্ত হন।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার প্রায়শই অম্বল বুকজ্বালার দ্রুততম প্রাকৃতিক
প্রতিকারগুলির একটি হিসাবে বিবেচিত হয়; তবে, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত অম্বলের
ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা এখনও প্রমাণিত হয়নি।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করেঃ এসিভিতে থাকা এনজাইমগুলি রক্তে
শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে বলে বিশ্বাস করা হয়। আবার এমন
কোনও চিকিৎসাগত গবেষণা নেই যা প্রমাণ করে যে রক্তে শর্করার সমস্যা রয়েছে
এমন গর্ভবতী মহিলারা এসিভি সেবন করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে
পারেন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ আপল সিডার ভিনেগারে এমন খনিজ
রয়েছে যা এনজাইমগুলির সাথে একসাথে কাজ করে রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে
সাহায্য করে এবং রক্তচাপকে হ্রাস করতে সহায়তা করে বলে বিশ্বাস করা হয়। এর
বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার জন্য কোনো গবেষণা নেই। অতএব,
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সাধারণত যে রক্তচাপের
সমস্যাগুলি দেখা দেয় সেগুলি থেকে এসিভি ত্রাণ সরবরাহ করে এমন খুব বেশি
সম্ভাবনা নেই।
ঠাণ্ডা-সর্দির সাথে লড়াইয়ে সহায়তা করেঃ গর্ভাবস্থায়
ঠান্ডা-সর্দি এবং বন্ধ নাক খুব সাধারণ ঘটনা। উষ্ণ জলের সাথে মেশানো এসিভি
বন্ধ নাক পরিষ্কার করতে, সাইনাসের সংক্রমণ এবং সাধারণ ফ্লু-র মতো ভাইরাসের
বিরুদ্ধে লড়াই রোধ করতে পারে। তবে এর কোনো কিছুই এখনো প্রমাণিত হয়নি। এ
সম্পর্কে আরো গাইডেন্সের জন্য আপনাকে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা
করতে হবে।
রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করেঃ আপেল সিডার ভিনেগার রক্ত
সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে এবং সক্রিয় ও শক্তিশালী থাকতে সহায়তা করে।
ভারীভাব ও অলসতা বোধের সাথে মোকাবিলা করার জন্য এটি সর্বোত্তম
প্রতিকারগুলির মতো মনে করা হয়, বিশেষত দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে, তবে
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এর কার্যকারিতা নিশ্চিত করার মতো পর্যাপ্ত গবেষণা
নেই।
ফোলাভাব এবং পেট ফাঁপা কম করেঃ আপেল সিডার
ভিনেগারে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং হজমে সহায়ক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা
ফোলাভাব রোধ করতে, পরিচালনা করতে এবং পেট ফাঁপা থেকে মুক্তি পেতে ও ফোলাভাব
কমাতে সহায়তা করতে পারে, তবে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এটির কার্যকারিতা
খুব বেশি প্রমাণিত হয়নি। যদি আপনার জন্য ফোলাভাব এবং পেট ফাঁপা গুরুতর
সমস্যা হয়ে থাকে তবে আপনাকে অবশ্যই আপনার চিকিত্সকের সাথে পরামর্শ করতে
হবে।
ব্রণের সাথে লড়াই করেঃ গর্ভাবস্থায় আর একটি সাধারণ সমস্যা হল
অতিরিক্ত ব্রণ, বিশেষত যদি আপনার আগে থেকেই ব্রণ হয়। আপেল সিডার
ভিনেগার ত্বককে সুস্থ রাখতে এবং ব্রণ-র বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা
করে বলে মনে করা হয়, এটিও চিকিৎসাগতভাবে প্রমাণিত নয়। এছাড়াও, মনে
রাখবেন যে এভিসিতে থাকা অ্যাসিডগুলি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণে বুকজ্বালার
কারণ হতে পারে এবং ত্বকে দাগ ফেলে। অতএব, আপনার ব্রণর জন্য উপযুক্ত
চিকিত্সার জন্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা ভাল।
বিঃ দ্রঃ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আপনার দেহের জন্য উপকারী, তবে
গর্ভাবস্থায় এর ব্যবহার পৃথক হতে পারে। এটির একাধিক স্বাস্থ্যকর বেনিফিট
থাকতে পারে তবে এটি গর্ভাবস্থায় অন্যান্য স্বাস্থ্যের সমস্যার সম্ভাব্য
কারণ হতে পারে। সুতরাং, গর্ভবতী মায়েদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই
তাদের চিকিৎসকের সাথে কথা বলতে হবে।
আপেল সিডার ভিনেগারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে শেষকথা
আপেল সিডার ভিনেগারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে শুরুতে অবশ্যই অল্প পরিমাণ
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া উচিত। খুব বেশি পরিমাণ ভিনেগার খেলে গলা জ্বলতে পারে।
ক্ষয় হতে পারে দাঁতের এনামেল। পানিতে না মিশিয়ে সরাসরি ভিনেগার খাওয়া কখনোই
উচিত নয়। এ ভিনেগার রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে, এটা ঠিক। কিন্তু
অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে খাবার হজম হতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে।
ফলে দেখা দিতে পারে ক্ষুধামন্দা। ডায়াবেটিস ও অন্য বেশকিছু রোগের ওষুধের সঙ্গে
ভিনেগার খেলে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ভালো করে
জেনেশুনে নিশ্চিত হয়ে ভিনেগার ব্যবহার করা উচিত। ত্বক সংবেদনশীল হলে পানির
সঙ্গে মিশিয়ে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে হবে। দাগ দূর করে দাঁত সাদা করতে
আপেল সিডার ভিনেগার বেশ কাজে দেয়।
কিন্তু ভিনেগারের অ্যাসিড দাঁতের গোড়ায় লাগলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তুলার বলে ভিনেগার নিয়ে দাঁতে হালকা করে লাগাতে হবে। খাওয়ার আগে না পরে আপেল
সিডার ভিনেগার পান করবেন এটা অনেকেই বুঝতে পারেন না। খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে বা
পরে এটি পান করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url