ব্রাক্ষ্মী শাকের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন


ব্রাক্ষ্মী শাকের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম জানেন না অনেকে। অনেকেই মনে করেন ব্রাহ্মী শাক খেলে নাকি বুদ্ধি বাড়ে। এই কথাটা কতটা সত্যি বা মিথ্যা সেই সম্পর্কে জানতে পারবেন আজকের আর্টিকেলে। তাই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
ব্রাক্ষ্মী-শাকের-উপকারিতা
ব্রাক্ষ্মী একটি শক্তিশালী ঔষধি ভেষজ যা বহু শতাব্দী ধরে আয়ুর্বেদিক ওষুধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই শাকে রয়েছে নানা উপকারী গুণ। তাই নিয়মিত এই শাক খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ব্রেন ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে স্মৃতি বাড়ানো, মনোযোগ ক্ষমতা বৃদ্ধির কাজটি করে ব্রাহ্মী শাক।

পেইজ সূচিপত্রঃ ব্রাক্ষ্মী শাকের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

ব্রাক্ষ্মী শাকের উপকারিতা

ব্রাক্ষ্মী শাকের উপকারিতা রয়েছে প্রচুর। ব্রাহ্মী মস্তিষ্কে নিউরোকেমিক্যাল বৃদ্ধিতে কাজ করে। এটি সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের মাত্রা উন্নত করে, যা ফোকাস এবং মানসিক স্বচ্ছতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি অ্যাডাপটোজেন হিসাবেও কাজ করে, যার অর্থ এটি চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি রক্তচাপ কমাতে পারে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের রোগ যেমন হতাশা এবং উদ্বেগের সাথে যুক্ত।

সবচেয়ে প্রাচীন আর্য়ুবেদ হিসেবে পরিচিত এই ব্রাহ্মী। মনকে শান্ত রাখতেও ভূমিকা রয়েছে এই শাকের। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে, যৌন শক্তি বাড়াতে এবং সুস্বাস্থ্যের জন্যও কিন্তু উপকারী ব্রাহ্মী শাক। ব্রাহ্মী শাক থেকে টনিকও তৈরি করা হয়। রক্ত শুদ্ধ করতে, ত্বক আর চুলের স্বাস্থ্য রক্ষাতেও ভূমিকা রয়েছে এই শাকের। এছাড়াও আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে ব্রাহ্মী শাকের চলুন জেনে নেওয়া যাক।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ ব্রাক্ষ্মী শাকের মধ্যে রোগ প্রতিরোধকারী প্রচুর বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ব্রাহ্মী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিকেলগুলিকে নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে, এটি ইমিউন কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে এবং সামগ্রিক ইমিউন স্বাস্থ্যকে উন্নীত করতে পারে। এর প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি শরীরের ইমিউন প্রতিক্রিয়াকে সংশোধন করতে সাহায্য করতে পারে, অত্যধিক প্রদাহ কমাতে পারে যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইমিউন সিস্টেমের ক্ষমতাকে আপস করতে পারে।

স্মৃতিশক্তি বাড়ায়ঃ মনের সাথে জড়িত বিভিন্ন অবস্থার নিরাময়ের ক্ষেত্রে এই ভেষজ খুবই কার্যকারী। এইসব অবস্থার অন্তর্গত হলো অ্যালজাইমাইরস রোগ, স্মৃতিশক্তির সাথে যুক্ত অন্য বিষয় এবং মনঃসংযোগের খামতির সমস্যা। মস্তিষ্কের গ্লুটামেট ও গামা-অ্যামিনোবিউটিরিক অ্যাসিড (জিএবিএ) রাসায়নিকের সামঞ্জস্য বজায় রেখে, এই শাক বুদ্ধিমত্তা তৈরি করে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করেঃ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্রাহ্মীর সুবিধাগুলির মধ্যে একটি হলো মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উপর এর ইতিবাচক প্রভাব। পরিমিত পরিমাণে ব্রাহ্মী সেবন স্মৃতিশক্তি, একাগ্রতা এবং মনোযোগ বাড়াতে পারে।এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলি মস্তিষ্কের কোষগুলিকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে, সম্ভাব্যভাবে অ্যালঝাইমার এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

হাঁপানির বা শ্বাসকষ্ট দূর করেঃ যাদের হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস বা শ্বাসকষ্টের মতো শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ রয়েছে তাদের ব্রক্ষ্মীর নির্যাস বা রস খুব উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং অ্যাডাপ্টোজেনিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ফুসফুসগুলি শক্তিশালী। এটি শ্বাস নালীর প্রদাহ এবং প্রদাহজনিত সমস্যাও সরিয়ে দেয়। এছাড়াও, সাইনোসাইটিস, কনজেশন এবং আরও অনেক কিছুর জন্যও ব্রাহ্মী পাতা উপকারী। ব্রাহ্মী পাতার মিশ্রণ শ্বাসনালী থেকে শ্লেষ্মা এবং কফ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে কফের ওষুধ হিসেবে কাজ করে।

দুশ্চিন্তা দূর করেঃ উদ্বেগ এবং চাপ ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যান্য প্রধান উদ্বেগ, যা প্যানিক অ্যাটাকের মতো অন্যান্য বিভিন্ন স্বাস্থ্য ব্যাধি তৈরি করে। তবে নিয়মিত ব্রাহ্মী সেবন করলে সহজেই এড়ানো যায়। এটি একটি স্নায়ু টনিক বলে মনে করা হয় যা মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে এবং চাপ এবং উদ্বেগ থেকে মুক্তি দেয়। ব্রাহ্মী সিরাপ মস্তিষ্কে কর্টিসলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং মেজাজ উন্নত করে।

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ ব্রাহ্মী পাতায় অ্যান্টিহাইপারগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে জানা যায় এই কারণে, তারা ব্যাপকভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের ওষুধে ব্যবহৃত হয়। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণগুলি কমাতে বা উপশম করতেও সহায়তা করে। উপরন্তু, এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাবগুলি এই প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে, ভাল গ্লুকোজ বিপাক প্রচার করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ ব্রাহ্মী শাক ক্যান্সার প্রতিরোধেও কাজ করে। ব্রাহ্মী শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি কোষ থেকে ক্ষতিকর দূষিত বের করে দেয়। ফলে ক্যানসারের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে, এটি মস্তিষ্কের টিউমার কোষগুলিকে মেরে ফেলার পাশাপাশি স্তন ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সারের ক্ষতিকারক কোষগুলির বৃদ্ধিকে কমাতে সহায়তা করে। তাই ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়মিত ব্রাহ্মী শাক পাতে রাখাতে পারেন।

লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ায়ঃ লিভার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে আনতে সাহায্য করে এবং পিত্ত শক্তি পরিচালনার জন্য দায়ী। ব্রাহ্মী প্রাকৃতিক ডিটক্সিফিকেশনকে সমর্থন করে এবং লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। ব্রাহ্মী একটি ভেষজ সম্পূরক যা আপনার দোষ বা প্রধান শক্তির ভারসাম্য ব্যাহত না করে প্রাকৃতিকভাবে লিভারের কার্যকারিতাকে উৎসাহিত করে।

চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করেঃ ব্রাহ্মী চুলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি যেমন স্যাপোনিন, ভিটামিন সি, ফ্ল্যাভোনয়েড ইত্যাদিতে ভরপুর, যা চুল পড়া কমাতে এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ব্রাহ্মী তেলে একটি অ্যালকালয়েড পদার্থ রয়েছে যা প্রয়োজনীয় প্রোটিন সরবরাহ করে চুলের ফলিকলগুলিকে শক্তিশালী করে। এটি মাথার ত্বকে একটি শীতল প্রভাব ফেলে, যা মাথার ত্বকে চুলকানি আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য উপকারী।

ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়ঃ ব্রাহ্মীতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ফ্রি র‌্যাডিক্যাল এবং পরিবেশগত চাপের কারণে ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তদ্ব্যতীত, এটিতে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা লালভাব এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে, এটি বিরক্তিকর ত্বককে শান্ত করার জন্য দরকারী করে তোলে। এটি ত্বকের হাইড্রেশন এবং ভারসাম্য বজায় রাখে, যা আরও তরুণ এবং নমনীয় চেহারাতে অবদান রাখতে পারে।

বাতের ব্যথা কমাতেঃ বাত এবং প্রদাহ জনিত, ব্যথা, জ্বালা কমাতেও উপকারী এই ব্রাক্ষ্মী শাক। যাঁদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাঁরাও রোজ খেলে উপকার পাবেন। আলসারের চিকিৎসাতেও ব্যবহার করা হয় এই শাক।

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ ব্রাক্ষ্মী শাক ডায়াবেটিসের রোগীদের শরীরে রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে। যাঁদের মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার সমস্যা রয়েছে তাঁদের জন্য খুব ভাল এই ব্রাহ্মী শাক। যাঁদের ডায়াবিটিস রয়েছে তাঁরা গরম ভাতে সামান্য ঘি দিয়ে এই শাক খেলে উপকার পাবেন।

রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধিতে সহায়কঃ ব্রাহ্মী শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমানে নাইট্রিক অক্সাইড, যা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি হ্রাস করে। ব্রাহ্মী শাক রক্ত ​​পাতলা করতেও সহায়তা করে, যার কারণে শিরাগুলিতে রক্ত ​​প্রবাহ সহজেই ঘটতে পারে।

স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করেঃ মনে করা হয় ব্রাক্ষ্মী শাক স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। ব্রাহ্মী শাকে ভেষজটিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি স্ট্রেস কমাতে সহায়ক। এটি একটি অ্যাডাপ্টোজেন ভেষজ হিসাবে বিবেচিত হয়।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারিঃ ব্রাহ্মী শাকের এন্টিডিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই শাক নিয়মিত গ্রহণের মাধ্যমে ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ ছাড়া ব্রাহ্মীতে অ্যান্টি-হাইপারগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্যও পাওয়া যায়, যার কারণে ব্রাহ্মীর প্রভাবে টাইপ -২ ডায়াবেটিসেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

মৃগী রোগের জন্য অত্যন্ত কার্যকরঃ আয়ুর্বেদের মতে ব্রাহ্মী শাকের সাহায্যে দেহের সমস্ত স্নায়ু শক্তিশালী হতে পারে এবং সমস্ত ব্যাধি কাটিয়ে উঠতে পারে। মৃএই শাকের মেন্টাতে এন্টিপাইলপটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা মৃগী নিরাময়ে সহায়তা করে।

ব্যথায় উপশমে ব্রহ্মীর তেলঃ ব্রহ্মী শাকের তেল ব্যথা উপশম করতে ব্যবহৃত হয়। এতে থাকা অ্যান্টি-নোকিসেপটিভ বৈশিষ্ট ব্যথার উপশম করে। এই ওষুধের তেল ব্যবহার শরীরের জয়েন্টগুলি এবং পেশী সম্পর্কিত সমস্ত ব্যথায় খুব উপকারী।

শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়কঃ মনে করা হয় বাচ্চাদের মস্তিষ্ক বিকাশে এই শাক যথেষ্ট সাহায্য করে। এই সময়ে, যদি বাচ্চাদের ব্রাহ্মী শাক খাওয়ানো যায় তবে এটি শিশুদের শারীরিক ও মস্তিষ্কের বিকাশে দারুণ প্রভাব ফেলে।

অ্যালজাইমার রোগের লক্ষণ কমায়ঃ ব্রাক্ষ্মীর পাতা অ্যালজাইমার রোগের উপসর্গ কমাতে সক্ষম। কারণ এর নিউরোন মস্তিষ্কের ক্ষতির জন্য দায়ী অ্যামলয়েড যৌগ দিয়ে তৈরি। ব্রাক্ষ্মী শাকের ভেতরের ব্যাকোসাইড নামক বায়োকেমিক্যাল, মস্তিষ্কের কোষদের নিয়ন্ত্রণ করে ও মস্তিষ্কের টিস্যুদের নতুন করে বানায়।

গাঁটের ব্যথা কমায়ঃ ব্রাক্ষ্মীর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি গুণাবলীর কারণে, পিঠে ব্যথা সহ গাঁটের ব্যথা, পেশীর যন্ত্রণা ও মাথাব্যথায় এটা ব্যবহার করা হয়। শরীরের ওপর অ্যানালজেসিক প্রভাবের কারণে, ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় ব্রাক্ষ্মী অয়েল লাগালে কিছুক্ষনের জন্য রেহাই পাওয়া যায়।

ফুসফুসের সমস্যাঃ নানান কারণে আমাদের ফুসফুসে বিভিন্ন রোগ আক্রমণ করে ফলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যায়।ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যায় ব্রাহ্মী শাক খুবি উপকারী ভূমিকা পালন করে তাই ব্রাহ্মী শাক খেলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সমস্যা গুলিও ভালো হয়ে যায়।

ক্ষতস্থান নিরময়ঃ ক্ষতোস্থান নিরাময়ে এই শাকের গুরুত্ত্ব অনেক। দেহের কোথাও কেটে গেলে বা কোনো কারণে ব্যাথা পেলে সেই স্থানে কিছুপরিমান ব্রাহ্মী শাক থেঁতো করে লাগিয়ে দিলে ব্যথা কমে যায় ও ক্ষতোস্থান নিরময় হয়।

ব্রাহ্মী শাক খাওয়ার নিয়ম

ব্রাহ্মী শাক একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ যা সাধারণত স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে, মানসিক চাপ কমাতে এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি সঠিকভাবে গ্রহণ করার জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করা উচিত।

১. কাঁচা অবস্থায় খাওয়াঃ তাজা ব্রাহ্মী শাক ভালো করে ধুয়ে কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে।এটি সকালে খালি পেটে খাওয়া বেশি উপকারী।যদি স্বাদ ভালো না লাগে, তবে এক গ্লাস পানির সঙ্গে ব্রাহ্মী শাক ব্লেন্ড করে পান করতে পারেন।

২. খালি পেটে খাওয়াঃ সকালে খালি পেটে ব্রাহ্মী শাক খাওয়া খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। এটি দ্রুত শোষিত হয় এবং উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়।

৩. রান্না করে খাওয়াঃ তেল ও মসলার সঙ্গে হালকা ভাজা করে ভর্তা বানিয়ে খাওয়া যায়।অন্যান্য শাকের মতো হালকা মসলায় ভাজি করে ভাতের সঙ্গে খাওয়া। সবজি বা চিকেন স্যুপে ব্রাহ্মী শাক মিশিয়ে নেওয়া যায়।

৪. শুকনো গুঁড়ো খাওয়াঃ ব্রাহ্মী শাক শুকিয়ে সূক্ষ্ম গুঁড়ো করে এটি সংরক্ষণ করা যায়। এক চামচ গুঁড়ো দুধ বা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে দিনে ১-২ বার খাওয়া যেতে পারে। গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে চা বা পানীয় হিসেবেও সেবন করা যায়।

৫. চা হিসেবে ব্যবহারঃ ২-৩টি তাজা ব্রাহ্মী পাতা বা ১ চামচ শুকনো গুঁড়ো গরম পানিতে দিয়ে ৫-৭ মিনিট ফোটান। এতে এক চামচ মধু মিশিয়ে দিনে একবার খেতে পারেন। এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

৬. জুস বা স্মুদিঃ ব্রাহ্মী শাকের সঙ্গে শসা, আপেল, লেবু এবং মধু মিশিয়ে জুস বানিয়ে পান করা যায়। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।

৭. মেডিসিন আকারেঃ ব্রাহ্মী শাকের নির্যাস দিয়ে তৈরি ক্যাপসুল বা সিরাপ বাজারে পাওয়া যায়। ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী এগুলো গ্রহণ করতে পারেন।

বিশেষ করে গর্ভবতী নারী, স্তন্যদানকারী মা, এবং যাঁরা কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করছেন, তাঁদের ব্রাহ্মী শাক খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।ব্রাহ্মী শাকের পূর্ণ উপকার পেতে নিয়মিত কিছুদিন খাওয়া প্রয়োজন। তবে একটানা অনেকদিন খেলে মাঝেমধ্যে বিরতি দেওয়া ভালো।

ব্রাহ্মী শাকের পুষ্টিগুণ ও উপাদান

এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যানালজেসিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য সহ, ব্রাহ্মী একটি বহুমুখী ভেষজ যা আপনার সামগ্রিক জীবনীশক্তি এবং স্বাস্থ্যে অবদান রাখতে পারে। ব্রাহ্মী বিভিন্ন ভেষজ ফর্মুলেশন এবং ওষুধের একটি সক্রিয় উপাদান। 100 গ্রাম ব্রাহ্মীর পুষ্টিগুণ পরীক্ষা করা যাক।

ব্রাহ্মী পুষ্টিপুষ্টির মান

ক্যালোরি 38 কিলোক্যালরি
প্রোটিন 2.1 গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট 5.9 গ্রাম
ছাই 1.9 গ্রাম
অপরিশোধিত ফাইবার 1.05 গ্রাম
মোটা 0.6 গ্রাম
আর্দ্রতা 88.4 গ্রাম
ফসফরাস 16 গ্রাম
নিকোটিনিক অ্যাসিড 0.3 গ্রাম
অ্যাসকরবিক অ্যাসিড 63 গ্রাম
আয়রন 7.8 মিলিগ্রাম

ব্রাহ্মী শাকের ভেষজ গুনাগুণ

১. উন্মাদ রোগেঃ ব্রাহ্মী শাকের পাতার রস ২০ মি.লি. কুড়-চূর্ণ ২ গ্রাম এবং মধু ২ চামচ এ তিনটি একসাথে মিশিয়ে দিনে একবার সকালের দিকে খাওয়ালে উন্মাদ রোগ প্রশমিত হয়।

২. স্বরভঙ্গ অথবা গলাভাঙ্গায়ঃ ব্রাহ্মীর শুকনা লতা ও পাতা, বট, হরীতকী, বাসকের শিকড় এবং পিপুল এ কয়টি এক থেকে দেড় গ্রাম পরিমাণ নিয়ে একসাথে গুড়া করে তিন থেকে চার চামচ মধুর সাথে খেলে অবশ্যই নিরাময় হয়। সারা দিনে মাত্র দু’বার খেলেই গলার স্বর অনেকটা স্বাভাবিক হবে। যদি না হয়, তবে পরের দিন একইভাবে ওষুধ তৈরি করে আর একবার খেলেই স্বর স্বাভাবিক হবে।

৩. বসন্তরোগেঃ গায়ে গুটি বের হলেই ব্রাহ্মী লতার পাতা ও কচি ডাটা বেটে তার। রস ৬ চামচ মধুর সাথে খেলে খুব তাড়াতাড়ি সেরে যায়।

৪. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেঃ ব্রাহ্মী লতার পাতা ও ডালের রস ৩০ মিলিলিটার এবং দেড় চামচ চিনি মিশিয়ে রোজ সকালে খেলে স্মৃতিশক্তি যথেষ্ট বেড়ে যায়। হাঁপানির টান উঠলে ও ব্রাহ্মী লতার শুকনা পাতা ও কাণ্ডের রস ৩০ মি.লি. তিন চামচ মধুর সাথে খাওয়ালে রোগীর শ্বাসকষ্ট অনেক কমে। এছাড়াও সকালে কিছু খাওয়ার পর ২ চা-চামচ বা ১ চা-চামচ ব্রাহ্মী শাকের রস আধ চা-চামচ গরম ঘি মিশিয়ে আধ কাপ দুধের সঙ্গে খাবেন। এইভাবে ১৫/২০ দিন খেলে যে অসুবিধে আসছিলো সেটা আর থাকবে না।

৫. পিত্ত বেশি হলেঃ ব্রাহ্মীর মূল দেড় থেকে দু’গ্রাম পরিমাণ সামান্য পানির সাথে খালিপেটে খেলে শরীরের অতিরিক্ত পিত্ত নাশ করে।

৬. শিশুদের কফ ও কাশিতেঃ ব্রাহ্মী লতার কচি ডাল ও পাতা বেটে সেটা সামান্য গরম করে শিশুদের বুকে প্রলেপ দিলে কাশি কমে যায় এবং বুকে জমে থাকা কফ বের হয়ে যায়।

৭. বাত রোগেঃ এ বাতটা এমন যে, ক্রমশ শরীরে অবসাদের ঝিমুনি আসে, এই অবস্থা চলতে থাকলে ব্রাহ্মীশাকের রস একটু গরম করে তা থেকে ২ চা-চামচ নিয়ে প্রত্যহ একবার অথবা ২ বার খেতে হবে এর দ্বারা শরীরটা ঝরঝরে হবে। এছাড়াও ব্রাহ্মী পাতার রস চার চামচ এবং তার অর্ধেক (দু’চামচ) তারপিন তেল একসাথে মিশিয়ে মালিশ করলে উপকার হয়।

৮. ছোটদের সর্দি ও বুকে শ্লেম্মা বসে গেলেঃ ছোট ছেলে মেয়েদের বুকে সর্দি গেলে এবং নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে, এক চামচ ব্রাহ্মী লতার রস খাওয়ালে সামান্য বমির সাথে সর্দি ও বুকের কষ্টকর শ্লেষ্ম সহজেই বের হয়ে যাবে।

৯. শিশুদের শ্লেমায় গলার কাছে কফ আটকে প্রায় দমবন্ধ করে দিচ্ছে অর্থাৎ প্রচুর শ্লেষ্মায় হাসফাস করছে, সেক্ষেত্রে ব্রাহ্মীশাকের রস গরম করে ঠাণ্ডা হলে ঐ রসটা ২৫/৩০ ফোঁটা এক চা-চামচ দুধ মিশিয়ে খেতে দিতে হবে। এব দ্বারা ওই শ্লেষ্মটা উঠে যাবে অথবা সরে যাবে, তারফলে ওই হাঁফটা কমে যাবে।

১০. মূত্রকৃচ্ছ্রতায়ঃ যাঁরা এর সঙ্গে কোষ্ঠবদ্ধতায় ভুগছেন, তাঁরা সকালে এবং বিকালে দু’বার করে ২/৩ চা-চামচ’ক’রে ব্রাহ্মী শাকের রস খাবেন; তবে খাওয়ার সময় ৫/৬ চা-চামচ দুধ মিশিয়ে নেবেন, এর দ্বারা মূত্রকৃচ্ছ্রতাটাও কমে যাবে, দাস্তটাও পরিষ্কার হবে।

১১. শূক্রতারল্যেঃ এটা অস্বস্তিকর ও দুঃখকর রোগ। এটি হ’য়ে পড়লে সামলানোর জন্যে প্রত্যহ সকালের দিকে ২ চা-চামচ করে ব্রাহ্মীশাকের রস এক কাপ দুধে মিশিয়ে সপ্তাহখানেক খেলে এটাতে নিশ্চয় উপকৃত হবেন।

১২.মৃগী রোগ সারাতেঃ এই রোগটি নারী-পুরুষ উভয়েরই হয়, যদি জন্মসূত্রে না হয়ে থাকে, তবে যে কোন বয়সেই এ রোগ আক্রমণ করুক না সেটা উপশমিত হতে পারে যদি ব্রাহ্মীশাকের রস ২ চা-চাম একটু, গরম করে আধ কাপ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে বেশ কিছুদিন খাওয়া যায়।

ব্রাহ্মী শাক যাদের খাওয়া উচিত নয়

ব্রাহ্মী শাক একটি স্বাস্থ্যকর ভেষজ শাক, তবে এটি সবার জন্য উপযুক্ত নয়। কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থা বা ওষুধের সাথে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যাদের ব্রাহ্মী শাক খাওয়া উচিত নয় তারা হলেন:

গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মাঃ ব্রাহ্মী শাক গর্ভাবস্থায় জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে, যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এছাড়াও, এর প্রভাব স্তন্যদানকারী শিশুদের ওপর জানা কম।
অতিরিক্ত শারীরিক দুর্বলতা বা কম রক্তচাপ: ব্রাহ্মী শাক রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে। যারা স্বাভাবিকের চেয়ে কম রক্তচাপ (Hypotension) সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে।

এলার্জি বা সংবেদনশীল ব্যক্তিরাঃ কিছু মানুষের শরীরে ব্রাহ্মী শাক অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি বা অন্য কোনো অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।

মানসিক ও স্নায়ুতন্ত্রজনিত ওষুধ সেবনকারীরাঃ ব্রাহ্মী শাক স্নায়ুকে শান্ত করে, কিন্তু সেডেটিভ বা অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধের সঙ্গে এটি মিশে অতিরিক্ত ঘুম বা অবসাদ সৃষ্টি করতে পারে।
এটি বিষণ্নতা বা মানসিক চাপের জন্য ব্যবহৃত ওষুধের প্রভাব বাড়িয়ে দেয়, যা বিপজ্জনক হতে পারে।

শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরাঃ শিশুদের শরীর তুলনামূলকভাবে সংবেদনশীল হওয়ায় তাদের ক্ষেত্রে ব্রাহ্মী শাকের অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতিকর হতে পারে। বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও লিভার বা কিডনির দুর্বলতার কারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীঃ ব্রাহ্মী শাক রক্তের গ্লুকোজ লেভেল কমাতে সাহায্য করে। তবে, যদি ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত ইনসুলিন বা অন্যান্য অ্যান্টি-ডায়াবেটিক ওষুধ সেবন করেন, তাহলে গ্লুকোজ লেভেল অতিরিক্ত কমে যেতে পারে (Hypoglycemia), যা বিপজ্জনক।

হরমোনজনিত সমস্যাঃ ব্রাহ্মী শাক শরীরের হরমোন ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই যাদের হরমোনজনিত অসুবিধা (যেমন: থাইরয়েড সমস্যা) রয়েছে, তাদের এটি এড়ানো উচিত।

লিভার বা কিডনির সমস্যাঃ ব্রাহ্মী শাক বেশি পরিমাণে খেলে লিভার বা কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে, বিশেষ করে যাদের এই অঙ্গগুলোর সমস্যা রয়েছে।

অস্ত্রোপচারের আগে বা পরের সময়ঃ ব্রাহ্মী শাক রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই অস্ত্রোপচারের আগে বা পরে এটি এড়িয়ে চলা উচিত।

যারা নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করেনঃ ব্রাহ্মী শাক কিছু স্নায়ুতন্ত্র সংক্রান্ত ওষুধের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন, অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট, সিডেটিভ, এবং অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধ।

চুলের যত্নে ব্রাক্ষ্মী তেলের উপকারিতা

ব্রাহ্মী তেল চুলের যত্নে অত্যন্ত কার্যকর একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এটি ব্রাহ্মী শাকের নির্যাস থেকে তৈরি, যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য বহুগুণ উপকারী।ব্রাহ্মীতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম, জিংক এবং ভিটামিন সি আছে। যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। রক্ত সঞ্চালন বাড়াতেও সাহায্য করে। ভিটামিন সি স্ক্যাল্প ভালো রাখে। চুলের গোড়া মজবুত করে। চুল ভালো রাখতে খুবই উপকারী এই উপাদান। অতিরিক্ত চুল পড়া নিয়ন্ত্রণও করে। নিচে ব্রাহ্মী তেলের প্রধান উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলো:

চুলের গোড়া মজবুত করেঃ ব্রাহ্মীর তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এছাড়াও আছে স্যাপোনিনের মতো উপকারী উপাদান। যা আপনার চুলের গোড়া মজবুত করে। চুল ঝরা কমায়। এই তেল পরিমাণ মতো হাতে নিয়ে স্ক্যাল্পে এবং চুলের ডগায় ভালো করে মালিশ করে নিন। উপকার পাবেন।

১. চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করেঃ ব্রাহ্মী তেলে থাকা বায়োঅ্যাক্টিভ যৌগ চুলের ফলিকলে পুষ্টি জোগায় এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুল দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে, যা চুলের দ্রুত বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। এতে থাকা প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান চুলের ফলিকলগুলোকে শক্তিশালী করে।

২. চুল পড়া প্রতিরোধ করেঃ চুল পড়ার অন্যতম কারণ হলো স্ট্রেস এবং পুষ্টির অভাব। ব্রাহ্মী তেল মাথার ত্বককে ঠাণ্ডা রাখে, মানসিক চাপ কমায় এবং চুল পড়া রোধ করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন চুল পড়া প্রতিরোধ করে এবং চুলের শিকড়কে মজবুত করে তোলে।

৩. খুশকির সমস্যা দূর করেঃ ব্রাহ্মী তেলের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ মাথার ত্বকের ইনফেকশন দূর করে এবং খুশকি কমাতে সাহায্য করে। এটি স্ক্যাল্পকে আর্দ্র রাখে এবং চুলকানির সমস্যা কমায়। ব্রাহ্মীর গুণে আপনার স্ক্যাল্পে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা বজায় থাকে। সেবাম উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে এই সমস্যা সহজেই কমানো যায়।

৪. চুলের শুষ্কতা ও ভঙ্গুরতা কমায়ঃ ব্রাহ্মী তেল স্ক্যাল্পে আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং চুলকে নরম ও মসৃণ করে। এটি চুল ভঙ্গুর হওয়া রোধে সহায়ক।

৫. অকালে চুল পাকা রোধ করেঃ ব্রাহ্মী তেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ চুলে মেলানিন উৎপাদন বাড়ায়, যা চুল পাকার প্রক্রিয়া ধীর করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ অকালে চুল পাকার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

৬. চুলের ঘনত্ব বাড়ায়ঃ নিয়মিত ব্যবহারে ব্রাহ্মী তেল চুলের ঘনত্ব বাড়ায় এবং পাতলা চুলের সমস্যার সমাধান করে।ব্রাহ্মী তেল নিয়মিত ব্যবহারে চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরে আসে। এটি চুলকে মসৃণ এবং নরম করে তোলে।

৭. স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ ব্রাহ্মী তেল স্ক্যাল্পকে পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর রাখে। এটি স্ক্যাল্পের শুকনো ভাব দূর করে এবং চুলকানি কমায়। ব্রাহ্মী তেল স্ক্যাল্পের ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে এবং ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। ফলে স্ক্যাল্প থাকে পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর।

ব্রাক্ষ্মী শাকের হেয়ার প্যাক

ছোট থেকেই আমাদের বলা হয়ে থাকে ব্রাহ্মী শাক খাবার জন্য। এতে নাকি আমাদের স্মৃতি শক্তির উন্নতি হয়। আমরা অনেকেই ব্রাহ্মী শাকের রস খেয়েছি ছোটবেলা ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও। কিন্তু আপনারা কি জানেন যে ব্রাহ্মী শাক আমাদের চুলের জন্যও খুব ভালো? জানতেন না তো? চুল পড়া, চুলের গ্রোথ কমে যাওয়া এই সব সমস্যা থেকে ব্রাহ্মী আপনাদের খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি দেবে আর চুলের বৃদ্ধিতে অসাধারণ কাজ দেবে।

আজ আপনাদের জানাবো ব্রাহ্মী শাকের ৪টি হেয়ার প্যাকের কথা যা আপনাদের বানাতেও সুবিধে হবে আর ব্যবহার করাও খুব সহজ হবে। আসুন দেখে নিই চটপট।

১. ব্রাহ্মী শাক ও মেথির হেয়ার প্যাকঃ ব্রাহ্মী নিজে তো চুলের জন্য ভালোই, এর পাশাপাশি সঙ্গে যদি মেথি থাকে তাহলে তো সোনায় সোহাগা। চুলে এই দুটি উপাদানের প্যাক ব্যবহার করলে চুল কালো থাকবে আর চুলের বৃদ্ধিও ভালো হবে।

উপকরণঃ পরিমাণ মতো ব্রাহ্মী শাক, ২ চামচ মেথি, ক্যাস্টর অয়েল।

ব্যবহার পদ্ধতিঃ ব্রাহ্মী শাক নিয়ে আগে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন। আগে থেকে মেথি গুঁড়ো করে নিন। এবার একটি পাত্রে ব্রাহ্মীর পেস্ট, মেথি গুঁড়ো আর ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন আর চুলে অ্যাপ্লাই করুন। ২ ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর কোনও মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এটি পারলে সপ্তাহে এক দিন করুন।

২. ব্রাহ্মী আর অ্যালোভেরার হেয়ার প্যাকঃ অ্যালোভেরা চুলের জন্য ঠিক কতটা কাজ দেয় এটা যারা ব্যবহার করেছেন তারাই জানেন। এবার ব্রাহ্মীর সঙ্গে এটি ব্যবহার করুন আর দেখুন কামাল।

উপকরণঃ ব্রাহ্মী শাক পরিমাণ মতো, অ্যালোভেরা জেল।

ব্যবহার পদ্ধতিঃ ব্রাহ্মী শাক আগে পেস্ট করে নিন। অ্যালোভেরা গাছ বাড়িতে থাকলে তার পাতা থেকে রস বের করতে পারেন। তা না হলেও দোকান থেকে অ্যালোভেরা জেল কিনতে পারেন। এবার ব্রাহ্মী আর এই অ্যালোভেরার জেল একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। তারপর চুলে ব্যবহার করে এক ঘণ্টা রাখুন। এক ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে নিন মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে। আপনি সঙ্গে সঙ্গেই একটা পার্থক্য বুঝতে পারবেন। এটি সপ্তাহে দু দিন করুন। তাহলেই দেখবেন আপনার চুল কি সুন্দর ভাবে বেড়ে যাচ্ছে।

৩. ব্রাহ্মী আর আমলার হেয়ার প্যাকঃ আমলা বা আমলকিতে খুব ভালো পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। এই ভিটামিন চুলের জন্য খুব দরকারি, বিশেষ করে চুলের বৃদ্ধির জন্য। তাই ব্রাহ্মীর সঙ্গে আমলা ব্যবহার করুন।

উপকরণঃ পরিমাণ মতো ব্রাহ্মী শাক, ১টি আমলকি।

ব্যবহার পদ্ধতিঃ ব্রাহ্মী শাক নিয়ে তার পেস্ট বানিয়ে নিন। আলাদা করে আমলকি মিক্সিতে বেটে নিন। এবার এই দুটি পেস্ট একসঙ্গে নিয়ে একটা পেস্ট বানান। আপনি চাইলে দোকান থেকে ভালো ব্র্যান্ডের ব্রাহ্মী আর আমলা পাউডার কিনে তা মিশিয়েও পেস্ট বানাতে পারেন। এই পেস্ট এবার চুলে ব্যবহার করুন আর রেখে দিন ১ ঘণ্টা। তারপর কোনও মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। মাসে দু থেকে তিন বার করুন, দেখবেন ফল পাবেন।

৪. ব্রাহ্মী আর নিমপাতার হেয়ার প্যাকঃ নিমপাতা মুখে তো ব্যবহার করেছেন। কিন্তু চুলের জন্য ব্যবহার করতে হবে শুনে কি চমকে যাচ্ছেন! তাহলে না চমকে এবার ব্যবহার করুন। নিমের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান স্ক্যাল্পের তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, খুশকি কমায়, চুলের গ্রোথ ভালো রাখে।

উপকরণঃ নিমপাতা ১৫টা, ব্রাহ্মী শাক পরিমাণ মতো।

ব্যবহার পদ্ধতিঃ নিমপাতা আগের দিন রাতে জলে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সেই নিমপাতা বেটে পেস্ট করে নিন। এই পেস্টের সঙ্গে এবার ব্রাহ্মী শাকের পেস্টও মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে রেখে দিন ৩০ মিনিট মতো। তারপর শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে দু বার অন্তত এটি করুন।

ব্রাহ্মী শাক এভাবে ব্যবহার করলে আপনি খুব ভালো ফল পাবেন। তবে অবশ্যই নিয়ম করে করতে হবে। আর তাহলেই আপনি উপকার পাবেন।

ব্রাক্ষ্মী শাক সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর

ব্রহ্মী কি গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে?

ব্রাহ্মি সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হয় যখন প্রস্তাবিত মাত্রায় ব্যবহার করা হয়। এটি গর্ভবতী মহিলাদের দ্বারা এড়ানো উচিত , কারণ এটি জরায়ু-উত্তেজক প্রভাব ফেলতে পারে। যে কোনও সম্পূরক হিসাবে, এটি খাওয়ার আগে একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলা ভাল।

ব্রাহ্মী শাক খেলে কি বুদ্ধি বাড়ে?

বর্তমানে বিভিন্ন দেশের একাধিক গবেষকরাও বলছেন, ব্রাহ্মীশাক ব্রেনের বিশেষ কিছু রাসায়নিকের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয় যা মেধা, স্মৃতিশক্তি এবং বুদ্ধি বাড়ায়। কমায় উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা। এমনকী নিয়মিত পাতে ব্রাহ্মী শাক থাকলে তা ডিমেনশিয়ার মতো স্মৃতিভ্রমের সমস্যাও প্রতিরোধ করতে পারে।

ব্রাহ্মী কাদের খাওয়া উচিত নয়?

গর্ভবতী বা স্তন্যপান করান মহিলা এবং থাইরয়েড ব্যাধি, পাকস্থলীর আলসার এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এবং মূত্রনালীর বাধা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের সাবধানে ব্রাহ্মী ব্যবহার করা উচিত নয়।

খালি পেটে ব্রাহ্মী খাওয়া যাবে কি?

যাইহোক, খালি পেটে ব্রাহ্মী গ্রহণ আপনার নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যের প্রয়োজন এবং অন্যান্য ওষুধ বা অবস্থার সাথে সম্ভাব্য মিথস্ক্রিয়াগুলির জন্য উপযুক্ত কিনা তা নিশ্চিত করতে সর্বদা একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার বা আয়ুর্বেদিক অনুশীলনকারীর সাথে পরামর্শ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ব্রাহ্মী পাতা কি কাঁচা খাওয়া যাবে?

ব্রাহ্মীর পাতা ব্যাপকভাবে সালাদে ব্যবহৃত হয় এবং এমনকি ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার উপায় হিসেবে কাঁচা চিবিয়েও ব্যবহার করা হয় । এটি স্বাদে তেতো, মিষ্টি এবং চিবানোর সময় ঠাণ্ডা অনুভূতি দেয়।

ব্রাহ্মী শাকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ব্রাহ্মী সাধারণত সেবন করা নিরাপদ যদি এটি পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। যাইহোক, ব্রাহ্মীর অত্যধিক সেবনের ফলে কিছু স্বাস্থ্যগত জটিলতা হতে পারে, যেগুলো নিচে উল্লেখ করা হল
পেটে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারেঃ সম্ভাব্য ব্রাহ্মী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে একটি হল এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হলে পেটে অস্বস্তি হতে পারে। পেটের অস্বস্তির মধ্যে বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এটি এড়াতে, প্রস্তাবিত মাত্রায় ব্রাহ্মী খাওয়া ভাল।

শুষ্ক মুখের কারণ হতে পারেঃ ব্রাহ্মীর আরেকটি জনপ্রিয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল এটি কিছু ব্যক্তির মুখ শুষ্ক হতে পারে। লালা গ্রন্থিগুলির উপর প্রভাবের কারণে এটি ঘটে, যার ফলে লালা উৎপাদন হ্রাস পায়। ব্রাহ্মি গ্রহণ করার সময় আপনি যদি শুষ্ক মুখ অনুভব করেন, তাহলে হাইড্রেটেড থাকার পরামর্শ দেওয়া হয় এবং একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করা হয়।

কিছু ওষুধের সাথে যোগাযোগ করতে পারেঃ অনেক লোক ব্রাহ্মি সেবন করে কারণ এর স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, কিন্তু চলমান চিকিৎসার সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ব্রাহ্মি ব্যবহার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঔষধি ভেষজ থাইরয়েড ব্যাধি, রক্তচাপ বা উপশমকারীর সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

ধীর হৃদস্পন্দনের কারণ হতে পারেঃ আরেকটি পরিচিত ব্রাহ্মী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে ধীর হৃদস্পন্দন। এটি কিছু লোকের ব্র্যাডিকার্ডিয়া হতে পারে, বিশেষ করে যাদের হার্টের পূর্ব-বিদ্যমান অবস্থা রয়েছে। এর নিরাময়কারী বৈশিষ্ট্যগুলি হৃৎস্পন্দন সহ শারীরিক ক্রিয়াকলাপকে মন্থর করতে অবদান রাখতে পারে।

ব্রাক্ষ্মী শাকের উপকারিতা সম্পর্কে শেষকথা

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url