শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী
দিবস বাংলাদেশের একটি উদযাপিত বিশেষ দিবস। অন্যান্য দিবসের মতো এই দিবসটি ও
জাতীয় জীবনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অন্যান্য সকল দিবসের সাথেই শহীদ
বুদ্ধিজীবী দিবস ও শ্রদ্ধার সাথে পালন করা হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর বিশেষ একটি দিবস।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রায় শেষের দিকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীরা চেয়েছিল
বাংলাদেশ মেধাশূন্য করার জন্য তারই পরিপ্রেক্ষিতে তারা এ দেশের শ্রেষ্ঠ
সন্তানদের ধরে নিয়ে গিয়ে বিজয় ঠিক দুই দিন আগে তাদেরকে হত্যা করে। শহীদ
বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালিত হয় তা হয়তো আমরা সঠিক জানি না। মূলত তাদের
সুবিধার কথা ভেবেই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে।
আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানি এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
সম্পর্কে অবগত রয়েছি। কারণ বাচ্চাদের ছোট থেকেই এগুলো শিক্ষা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের দুইদিন আগে পাকহানাদার বাহিনী পরিকল্পনা করে এবং
বাংলাদেশে যত বুদ্ধিজীবী ছিল তারা সকলকেই হত্যা করেছিল। জেনে নিন শহীদ
বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালিত হয়।
পাক হানাদার বাহিনীরা বাংলাদেশকে সম্পূর্ণরূপে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল। তারা
বাংলাদেশকে যতদিন শাসন করেছিল বাংলাদেশের ধন-সম্পদ সবকিছু তাদের দেশে নিয়ে
গিয়ে তাদের সোনার এই দেশকে উন্নত করেছিল। বাংলাদেশকে একেবারে মেধাশূন্য করার
জন্য ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করার পরে বুদ্ধিজীবীদের
হত্যা করেছিল।
তাই প্রতিবছর বাংলাদেশের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ
বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। এ দিনটিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ
করা হয় তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে
আপনাদের কাংখিত প্রশ্ন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে তার উত্তর জানতে পেরেছেন। এবার
চলুন, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড
শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড বলতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের
মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টুকুতেই পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী কর্তৃক
পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের জ্ঞানী-গুণী ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন
মানুষদের হত্যা করাকে বুঝায়। ১৯৭১ এর ডিসেম্বর মাসে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ
পর্যায়ে এসে পাকিস্তানী বাহিনী যখন বুঝতে শুরু করে যে তাদের পক্ষে যুদ্ধে
জেতা সম্ভব না, তখন তারা নবগঠিত দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক
থেকে দুর্বল এবং পঙ্গু করে দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে।
সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দেশীয়
দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সহায়তায়
দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিজ নিজ গৃহ হতে তুলে এনে নির্মম নির্যাতনের পর
হত্যা করে। এই পরিকল্পিত গণহত্যাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড
নামে পরিচিত। বন্দী অবস্থায় বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে হত্যা করা
হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের ক্ষত-বিক্ষত ও বিকৃত লাশ রায়েরবাজার এবং
মিরপুর বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়।
অনেকের লাশ শনাক্তও করা যায়নি, পাওয়াও যায়নি বহু লাশ। ১৯৭১ এর ১৪
ডিসেম্বরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর
বাংলাদেশে পালিত হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বুদ্ধিজীবী হত্যার স্মরণে
বাংলাদেশের ঢাকায় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ ডাকবিভাগ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে একটি স্মারক ডাকটিকিটের সিরিজ
বের করেছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যার কারণ
শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যার কারণ হলো পাকিস্তান নামক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের
পর থেকেই বাঙালিদের বা পূর্ব-পাকিস্তানিদের সাথে পশ্চিম-পাকিস্তানের
রাষ্ট্র-যন্ত্র বৈষম্যমূলক আচরণ করতে থাকে। তারা বাঙালিদের ভাষা ও সংস্কৃতির
উপর আঘাত হানে। এরই ফলশ্রুতিতে বাঙালির মনে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে থাকে এবং
বাঙালিরা এই অবিচারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরু করে।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয় ২৫ মার্চ রাতে, অপারেশন
সার্চলাইটের পরিকল্পনার সাথে একসাথেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা করা
হয়। পাকিস্তানি সেনারা অপারেশন চলাকালে খুঁজে-খুঁজে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা
করতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষককে ২৫শে মার্চের রাতেই হত্যা
করা হয়। তবে, পরিকল্পিত হত্যার ব্যাপক অংশটি ঘটে যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র
কয়েকদিন আগে।
এ সকল আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকতেন সমাজের সর্বস্তরের বুদ্ধিজীবীরা। তাঁরা
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক-ভাবে বাঙালিদের বাঙালি জাতীয়তা-বোধে উদ্বুদ্ধ করতেন।
তাঁদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ফলেই জনগণ ধীরে ধীরে নিজেদের দাবি ও অধিকার
সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে থাকে যা পরবর্তীতে তাদের রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকে
ধাবিত করে। এজন্য শুরু থেকেই বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের
লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন।
তাই যুদ্ধের শুরু থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী বাছাই করে করে বুদ্ধিজীবীদের
হত্যা করতে থাকে। এছাড়া যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে যখন পাকিস্তানের পরাজয় যখন
শুধু সময়ের ব্যাপার তখন বাঙালি জাতি যেন শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিকভাবে
দুর্বল হয়ে পড়ে তাই তারা বাঙালি জাতিকে মেধা-শূন্য করে দেবার লক্ষ্যে
তালিকা তৈরি করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। এ প্রসঙ্গে শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ
গ্রন্থে যে যুক্তিটি দেয়া হয়েছে তা প্রাসঙ্গিক ও যুক্তিযুক্ত।
এটা অবধারিত হয়, বুদ্ধিজীবীরাই জাগিয়ে রাখেন জাতির বিবেক, জাগিয়ে রাখেন
তাদের রচনাবলির মাধ্যমে, সাংবাদিকদের কলমের মাধ্যমে, গানের সুরে,
শিক্ষালয়ে পাঠদানে, চিকিৎসা, প্রকৌশল, রাজনীতি ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের
সান্নিধ্যে এসে। একটি জাতিকে নির্বীজ করে দেবার প্রথম উপায়
বুদ্ধিজীবীশূন্য করে দেয়া। ২৫ মার্চ রাতে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল
অতর্কিতে, তারপর ধীরে ধীরে, শেষে পরাজয় অনিবার্য জেনে ডিসেম্বর ১০ তারিখ
হতে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দ্রুতগতিতে।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা
যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের প্রশিক্ষিত আধা-সামরিক
বাহিনী আল-বদর এবং আল-শামস বাহিনী একটি তালিকা তৈরি করে, যেখানে এই সব
স্বাধীনতাকামী বুদ্ধিজীবীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ধারণা করা হয়
পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে এ কাজের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন মেজর জেনারেল
রাও ফরমান আলি। কারণ স্বাধীনতার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত বঙ্গভবন থেকে তাঁর
স্বহস্তে লিখিত ডায়েরি পাওয়া যায় যাতে অনেক নিহত ও জীবিত বুদ্ধিজীবীর
নাম পাওয়া যায়।
এছাড়া আইয়ুব শাসনামলের তথ্য সচিব আলতাফ গওহরের এক সাক্ষাৎকার হতে জানা
যায় যে, ফরমান আলীর তালিকায় তাঁর বন্ধু কবি সানাউল হকের নাম ছিল। আলতাফ
গওহরের অনুরোধক্রমে রাও ফরমান আলি তার ডায়েরির তালিকা থেকে সানাউল হকের
নাম কেটে দেন। এছাড়া আল-বদরদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা তিনিই করেছিলেন বলে
তার ডায়েরিতে একটি নোট পাওয়া যায়।
এছাড়া তার ডায়েরিতে হেইট ও ডুসপিক নামে দুজন মার্কিন নাগরিকের কথা পাওয়া
যায়। এদের নামের পাশে ইউএসএ এবং ডিজিআইএস লেখা ছিল। এর মধ্যে হেইট ১৯৫৩
সাল থেকে সামরিক গোয়েন্দা-বাহিনীতে যুক্ত ছিলেন এবং ডুসপিক ছিলেন সিআইএ
এজেন্ট। এ কারণে সন্দেহ করা হয়ে থাকে, পুরো ঘটনার পরিকল্পনায় সিআইএ'র
ভূমিকা ছিল।
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ১৯৭১ সালে ঢাকার মিরপুরে প্রথম নির্মাণ করেছিল এই
দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে। মোস্তফা হারুন কুদ্দুস হিলি
ছিলেন স্মৃতিসৌধ টি স্থাপতি। ১৯৯১ সালে ঢাকার রায়ের বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী
স্মৃতিসৌধ নামে আরও একটি স্মৃতিসৌধ বানান শুরু হয়। যেটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন।
আল সাফি ও ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এর একটি প্রিস্কার নকশা করেছিলেন। তারপর একটি
স্মারক ডাকটিকেট সিরিজ প্রকাশ করা হয়েছিল বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করার জন্য। তো
আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নিয়ে বিস্তারিত তথ্যাদি
জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জেনে
নেওয়া যাক।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রেক্ষাপট
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের ১৪ ই
ডিসেম্বর এর সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সাথে রাজাকার থেকে শুরু করে
আলবদর, আল সামস সহ এই দেশের অনেক সাংবাদিক, কবি, শিক্ষাবিদ, গবেষক
সাহিত্যিকদের তাদের নির্যাতনের পর হত্যা করে। চূড়ান্ত বিজয়ের প্রক্কালে থাকায় স্বাধীন
বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়।
পরবর্তীতে ঢাকার মিরপুরে, রায়বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে গণকবরের তাদের মৃতদেহ
পাওয়া যায়। ১৬ ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের পর নিকটাত্মীয়রা
মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে স্বজনের মৃতদেহ সনাক্ত করেন। অনেককে হত্যা করা
হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে। এছারা অনেকের দেহে আঘাতের চিহ্ন, কারও
চোখ বাধা, কারও কারু হাত-পা বাঁধা, আবার কারপো দেহে একাধিক গুলি। এগুলো তাদের
মেরে ফেলার আগে নির্যাতন করা হয়েছিল। আর এই তথ্যগুলি পরে বের হয়ে আসে।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা যায় যে
বুদ্ধিজীবী সংখ্যা ছিলেন মোট ১ হাজার ৭০ জন। সেই প্রত্রিকার নাম ছিল মূলত
পত্রিকা প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক। আর এটি জাতীয়
ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শহীদ বুদ্ধিজীবী দের সংজ্ঞা
চূড়ান্ত করা হয়।
কিন্তু আসলে এ পরিকল্পনা অনুযায়ী ততখন হত্যাযজ্ঞ হয়নি। আর অপরদিকে কার্বন ফরমান
আলী যেটা লক্ষ্য সেটা হচ্ছে ছিল গভর্নর হাউসে শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের কে নিমন্ত্রণ
করার পরে সেখানে হত্যা করা। তবে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান নিখোঁজ
হন। তাজউদ্দিন আহমেদ একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেন ১৯৭১ সালের ৩১ শে
ডিসেম্বর । কিন্তু তার এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। আর এতে সহায়তা করে
জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ও ছাত্র সংঘ।
এ হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে সক্রিয় ছিলেন বি.জে আসলাম, ডক্টর মোহর আলী, ভিসি
প্রফেসর ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, এবিএম খালেক মজুমদার, ক্যাপ্টেন তারেক, কর্নেল
তাজ, কর্নেল তাহের, আশরাফুজ্জামান খান ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী আর এদের
নেতৃত্ব দেন চৌধুরী মাঈনুদ্দীন। বুদ্ধিজীবী হত্যা ঘটনায় ১৯৯৭ সালের ২৪
সেপ্টেম্বর রমনা থানায় প্রথম মামলা দায়ের করা হয়। এতে করে চৌধুরী মাঈনুদ্দীন
ও আশরাফুজ্জামান কে আলবদর বাহিনীর চৌধুরী আসামি করা হয়। আর এই মামলাটি ফরিদা
বানু দায়ের করেন। তিনি ছিলেন অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিনের বোন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিবরণ
শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিবরণ সম্পর্কে এই অংশে আলোচনা করবো।
ডিসেম্বরের ৪ তারিখ হতে ঢাকায় নতুন করে কারফিউ জারি করা হয়। ডিসেম্বরের ১০
তারিখ হতে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রস্তুতি নেওয়া হতে থাকে। মূলত ১৪
ডিসেম্বর পরিকল্পনার মূল অংশ বাস্তবায়ন হয়। অধ্যাপক, সাংবাদিক, শিল্পী,
প্রকৌশলী, লেখক-সহ চিহ্নিত বুদ্ধিজীবীদের পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের
দোসরেরা অপহরণ করে নিয়ে যায়।
সেদিন প্রায় ২০০ জনের মতো বুদ্ধিজীবীদের তাদের বাসা হতে ধরে নিয়ে যাওয়া
হয়। তাঁদের চোখে কাপড় বেঁধে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগসহ
অন্যান্য আরও অনেক স্থানে অবস্থিত নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে তাদের উপর বীভৎস নির্যাতন চালানো হয়। পরে তাদের নৃশংসভাবে
রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়।
এমনকি, আত্মসমর্পণ ও যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির পরেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী
এবং তার সহযোগীদের গোলাগুলির অভিযোগ পাওয়া যায়। এমনই একটি ঘটনায়, ১৯৭২
সালের জানুয়ারি মাসের ৩০ তারিখ স্বনামধন্য চলচ্চিত্র-নির্মাতা জহির রায়হান
প্রাণ হারান। এর পেছনে সশস্ত্র বিহারীদের হাত রয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়।
নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে প্রতি বছর ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ "শহীদ বুদ্ধিজীবী
দিবস" হিসেবে পালন করা হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিবর্গ
শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিবর্গ করা সে সম্পর্কে অনেকেরই
জানার আগ্রহ রয়েছে।পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পক্ষে এ হত্যাকাণ্ডের মূল
পরিকল্পনাকারী ছিল মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। আর তাকে তালিকা প্রস্তুতিতে
সহযোগিতা ও হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের পেছনে ছিল মূলত জামায়াতে ইসলামী
কর্তৃক গঠিত কুখ্যাত আল বদর বাহিনী। বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান ঘাতক ছিল বদর
বাহিনীর চৌধুরী মঈনুদ্দীন (অপারেশন ইন-চার্জ) ও আশরাফুজ্জামান খান (প্রধান
জল্লাদ)।
১৬ ডিসেম্বরের পর আশরাফুজ্জামান খানের নাখালপাড়ার বাড়ি থেকে তার একটি
ব্যক্তিগত ডায়েরি উদ্ধার করা হয়, যার দুটি পৃষ্ঠায় প্রায় ২০ জন
বুদ্ধিজীবীর নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কোয়ার্টার নম্বরসহ লেখা ছিল। তার
গাড়ির ড্রাইভার মফিজুদ্দিনের দেয়া সাক্ষ্য অনুযায়ী রায়ের বাজারের বিল ও
মিরপুরের শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি হতে বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর গলিত লাশ
পাওয়া যায়, যাদের সে নিজ হাতে গুলি করে মেরেছিল।
আর চৌধুরী মঈনুদ্দীন ৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য
ছিল। সে অবজারভার ভবন হতে বুদ্ধিজীবীদের নাম ঠিকানা রাও ফরমান আলী ও
ব্রিগেডিয়ার বশীর আহমেদকে পৌঁছে দিত। এছাড়া আরও ছিলেন এ বি এম খালেক
মজুমদার (শহীদুল্লাহ কায়সারের হত্যাকারী), মাওলানা আবদুল
মান্নান (ডাঃ আলীম চৌধুরীর হত্যাকারী) আবদুল কাদের
মোল্লা (কবি মেহেরুন্নেসার হত্যাকারী) প্রমুখ। চট্টগ্রামে প্রধান
হত্যাকারী ছিলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী ও তার দুই
ছেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং গিয়াস কাদের চৌধুরী।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ঘোষণা
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ঘোষণা করেছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ যিনি আমাদের বাংলাদেশের
প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মূলত ১৯৭১ সালে
সারা বছরব্যাপী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। এমনকি তারা ১৪ই ডিসেম্বর সবচেয়ে
বেশি সংখ্যক বুদ্ধিজীবীদের অতি নির্মম ভাবে হত্যা করেছিলেন। আর এই হত্যা অবশ্য
পরিকল্পিতভাবে করেছিলেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে পালিত হয় বা হবে এটা নিয়ে ইতিমধ্যে আগে প্রশ্ন
হয়েছিল যা স্বীকৃতি হিসেবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে ১৪ ই ডিসেম্বর পালিত
হয়। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে বুদ্ধিজীবী দিবস ঘোষণা নিয়ে বিস্তারিত
তথ্যাদি জানতে পেরেছেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে শেষকথা
সম্মানিত পাঠক আশা করছি আমার লেখা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে এই আর্টিকেলটি
আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেলটিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে আলোচনা
করার পাশাপাশি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রেক্ষাপট
এবং বুদ্ধিজীবী দিবস ঘোষণা ইত্যাদি সহ আরও প্রয়োজনীয় বিষয়ে সঠিক তথ্য তুলে
ধরেছি।
আপনাদের যদি এই ব্লগ পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে কিংবা আপনাদের মাঝে কোন মতামত
থাকে, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং চাইলে শেয়ার করে অন্যদের জানানোর
সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকে আমি আপনাদের মাঝে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে ও শহীদ
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নিয়ে বিস্তারিত অনেক তথ্য আলোচনা করলাম। আশা করি আজকের এই
আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url