কারি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা


কারি পাতার উপকারিতা প্রচুর কারি পাতা একটি উপকারি পাতা, যার মধ্যে রয়েছে অনেক উপকারী গুন। তবে এ পাতার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকের সঠিক ধারনা নেই। তাই কারি পাতার কি কি উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন আজকের এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে।
কারি-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কারিপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা। পুরো আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবেন, কারি পাতা কিভাবে উপকার করে সে সম্পর্কে। এছাড়াও কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম, কারি পাতা চেনার উপায়, কারি পাতার ব্যবহার সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য।

কারি পাতা শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, এতে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, প্রোটিন, আয়রন, ফলিক এসিড, ভিটামিন সি, বি, এ, ই। এসব কারণে এ পাতা ব্যবহার করে খাবারের পুষ্টিগুণ বাড়ায় এবং এর মাধ্যমে রূপচর্চাতেও বহু উপকার পাওয়া যায়। চকচকে সবুজ কারি পাতা কোলেস্টেরল এবং রক্তের গ্লুকোজের মাত্রার পরিমাণ ঠিক রাখে। লিভারের জন্য কারি পাতা বেশ উপকারি।

পেইজ সূচিপত্রঃ কারি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

কারি পাতার উপকারিতা

কারি পাতার উপকারিতা হলো এটি শারিরিক সুস্থতায় ব্যপক কাজ করে। কারি পাতার মধ্যে প্রচুর স্বাস্থ উপকারী গুন রয়েছে। যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে। কারি পাতার মধ্য থেকে ভিটামিন-এ, বি, ই, সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেনিসয়ামসহ আরও বেশ কিছু পুষ্টিউপাদান রয়েছে। এছাড়াও রয়েছেঅ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যার ফলে এ পাতা আমাদের স্বাস্থ সুরক্ষায় সহায়তা করে থাকে। জেনে নিন কারি পাতা কিভাবে উপকার করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি পূরণ করেঃ এই উপাদানটির মাত্রা শরীরে যত বাড়তে শুরু করে, তত একাধিক রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়। তাই সুস্থ শরীরের স্বপ্ন পূরণ করতে নিয়মিত কারি পাতা খাওয়া শুরু করতে হবে। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটির ভিতরে প্রচুর মাত্রায় মজুত রয়েছে এই উপাদানটি, যা নিমেষে দেহের ভিতরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

লিভার চাঙ্গা হয়ে ওঠেঃ প্রায় প্রতিদিনই কি অ্যালকোহল সেবন করেন? তাহলে তো নিয়মিত কারি পাতা খাওয়াও মাস্ট! কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ক্ষতিকর টক্সিনের হাত থেকে লিভারকে রক্ষা করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে লিভারের উপর অ্যালকোহলের কুপ্রভাবও পরে কম। এখন প্রশ্ন হল, লিভারের উপকারে কিভাবে খেতে হবে কারি পাতা? এ ক্ষেত্রে এক কাপ কারি পাতার রসে এক চামচ ঘি, অল্প পরিমাণে চিনি এবং গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন।

দৃষ্টি শক্তির উন্নতি ঘটেঃ কারি পাতায় উপস্থিত আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ এবং আরও নানাবিধ মিনারেল এবং ভিটামিন শরীরে প্রবেশ করার পর দেহের ভিতরে এমন কিছু রদবদল ঘটায় যে তার প্রভাবে চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে ড্রাই আই এবং দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যাও দূর হয়। প্রসঙ্গত, দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটাতে কারি পাতা খাওয়ার পাশাপাশি আরও একভাবে এই প্রাকৃতিক উপাদানটিকে কাজে লাগাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পরিমাণ মতো কারি পাতা নিয়ে চোখের উপর রাখতে হবে। তবে এই সময় চোখটা যেন বন্ধ থাকে। এভাবে দশ মিনিট থাকার পর পাতাগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। এভাবে প্রতিদিন চোখের পরিচর্যা করলে দেখবেন উপকার পাবেন একেবারে হাতে-নাতে।

হার্টের ক্ষমতা বাড়েঃ কারি পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা রক্তে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার খারপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে চলে এলে হার্টের ক্ষতি হওয়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না। কারি পাতা সেবন হৃদরোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়ক হতে পারে। কার্ডিওভাসকুলার রোগের চিকিত্সার জন্য একটি কার্যকর আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসাবে কারি পাতা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কারি পাতা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কাজ করে, যা হার্টকে সুস্থ রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ত্বকের সংক্রমণের প্রকোপ কমায়ঃ শুনে অবাক হচ্ছেন? হবেন না! কারণ কারি পাতায় উপস্থিত শক্তাশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল প্রপাটিজ যে কোনও ধরনের স্কিন ইনফেকশন কামতে দারুন কাজে লাগে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকেঃ খাবারে দিয়ে প্রতিদিন কারি পাতা খেলে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক লেভেলের উপরে যাওয়ার সুযোগ পায় না। এখানেই শেষ নয়, কারি পাতায় উপস্থিত ফাইবারও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

পেট খারাপের চিকিৎসায় কাজে লাগেঃ সকাল-বিকাল বাইরে খাওয়ার অভ্যাস আছে নাকি? তাহলে পেটকে ঠাণ্ডা রাখতে নিয়মিত কারি পাতাও থাওয়া উচিত। কেন এমন উপদেশ দেওয়া হচ্ছে, তাই ভাবছেন নিশ্চয়? আসলে নিয়মিত কারি পাতা খাওয়া শুরু করলে পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে ডায়ারিয়ার প্রকোপ কমাতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে কারি পাতার ভিতরে উপস্থিত কার্বেজল অ্যালকালয়েড নামক উপাদান এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

কোলেস্টেরল ঠিক রাখেঃ কারি পাতার এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই গুল্মগুলি কোলেস্টেরলের অক্সিডেশন প্রতিরোধ করে, যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরলকে বাড়ায়।

হজম শক্তি বাড়ায়ঃ প্রাচীনকাল থেকে কারি পাতার অন্যতম সুবিধা হল এটি হজমে সাহায্য করে। এটা মনে করা হয় যে কড়ি পাতার আয়ুর্বেদে হালকা রেচক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পেটকে অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য থেকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করে।

লিভারের জন্য কারি পাতাঃ কারি পাতায় উপস্থিত ট্যানিন এবং কার্বাজোল অ্যালকালয়েডগুলির শক্তিশালী হেপাটো-প্রতিরক্ষামূলক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এছাড়াও, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি এর সাথে একত্রিত হলে, এর অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেটিভ সম্পত্তি শুধুমাত্র প্রতিরোধ করে না বরং অঙ্গটিকে আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্রিয় করে।

কারি পাতা চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করেঃ চিকিৎসায় দূর্বল চুল, কারি পাতা খুব সফল, লম্পট চুলে বাউন্স যোগ করে, পাতলা চুলের খাদকে শক্তিশালী করে এবং চুল পড়ে যায়। তা ছাড়া, পাতার নির্যাস ম্যালাসেজিয়া ফারফারের ছত্রাকের স্কাল্প সংক্রমণের বিরুদ্ধে অ্যান্টিফাঙ্গাল কার্যকলাপ প্রদর্শন করেছে, তাই এটি চিকিত্সার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

চুল পড়া কমায়ঃ এতে উপস্থিত অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং ভিটামিন এ ও সি চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। শুধু তাই নয় ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষাতেও কারি পাতার কোনও তুলনা হয় না।কারিপাতা বেটে বা তেলে গরম করে মাথার তালুতে হালকা করে মাসাজ করলে তা পুষ্টি পায়। কারিপাতা বাটা এবং দইয়ের মিশ্রণ চুলে মাখলে দারুণ কন্ডিশনারের কাজ দেয়। নারকেল তেল গরম করে তাতে কারি পাতা দিয়ে ফুটিয়ে মাথায় মাখুন। চুল পড়া বন্ধ হবেই। কারি পাতার রস কিংবা কাঁচা কারিপাতা খেলেও চুলের দারুণ উপকার হয়।

চোখের স্বাস্থ্যের জন্য কারি পাতাঃ কারি পাতা ক্যারোটিনয়েডযুক্ত ভিটামিন এ সমৃদ্ধ, যার ফলে কর্নিয়ার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। ভিটামিন এ এর ​​অভাবে চোখের রোগ হতে পারে রাতকানা, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস। যা কারি পাতা রেটিনাকে নিরাপদ রাখে এবং দৃষ্টিশক্তি হ্রাস থেকে রক্ষা করে।

ব্যাকটেরিয়া দূর করেঃ কারবাজোল অ্যালকালয়েড, যৌগ যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, কারি পাতায় ভরা এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সক্ষম এবং কোষ-ক্ষতিকারী ফ্রি র‌্যাডিকেলগুলি হল যৌগ লিনালুল, যা এই গুল্মগুলির ফুলের গন্ধের জন্য দায়ী।

ত্বকের জন্য কারি পাতাঃ ত্বক সুস্থ রাখতেও কারি পাতার রয়েছে ব্যপক উপকারিতা। প্রকৃতপক্ষে, এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি অনেক সৌন্দর্য পণ্যে ব্যবহৃত হয়। এটি শুষ্ক ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি ত্বকের টোন উন্নত করে। কারি পাতা যুক্ত ক্রিম সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেই। এর ব্যবহার প্রাকৃতিক রঙ্গকতা বজায় রাখতেও উপকারী। নিয়মিত ত্বকে কারি পাতার তেল লাগালে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারি পাতার মধ্যে থাকা ভিটামিন ই’ ত্বকের ব্রন ও পিম্পল প্রতিরোধ করে এবং ত্বকের স্বাস্থ ভালো রাখে।

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ ডাইক্লোরোমেথেন, ইথাইল অ্যাসিটেট এবং মহানিম্বিনের মতো বিশেষ উপাদান কারি পাতায় পাওয়া যায়। এই উপাদানগুলিতে ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কারি পাতা একটি ভালো ভেষজ। এটি শরীরের একত্রিত চর্বি পরিত্রাণ পেতে সেরা প্রতিকারক। গবেষণায় দেখা গেছে যে কারি পাতা ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে।
ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করেঃ কারি পাতা অ্যান্টিসেপ্টিকের ন্যায় কাজ করে থাকে। তাই কোনো কাটা স্থানে কারি পাতা বেটে লাগালে ক্ষত স্থান দ্রুত সেরে উঠে। কারি পাতার পেস্ট লাগালে ক্ষত নিরাময়কারী প্রভাব রয়েছে, লাল লাল ফুসকুড়ি, ফোঁড়া, এবং হালকা পোড়া। পাতার একটি পেস্ট যেকোনো ধরনের ক্ষতিকর সংক্রমণ প্রতিরোধ ও দূর করতে সাহায্য করে। কারি পাতায় আছে উপকারী অ্যালকালয়েড। যে কোনও আঘাত বা জখম অনায়াসে নির্মূল করতে সাহায্য করে এটি। কারি পাতা সেদ্ধ পানি চুলকানি, অল্প পোড়া, ইত্যাদি সারাতে ভালো কাজ দেয়।

হজম ক্ষমতা উন্নত করেঃ প্রাচীন আয়ুর্বেদে রয়েছে, কারি পাতায় উপস্থিত ল্যাক্সেটিভ প্রপাটিজ শুধু যে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়, তা নয়, পাশাপাশি শরীরে উপস্থিত টক্সিক উপাদনও বার করে দেয়। ফলে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে। তাই যাঁরা বদহজমের সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের কারি পাতা খাওয়া উচিত।

অ্যানিমিয়া নিরাময় করেঃ ফলিক এবং আয়রনে ভরপুর এই প্রকৃতিক উপাদানটি শরীরে প্রবেশ করার পর লোহিত রক্ত কনিকার মাত্রাক বাড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে একটা খেজুরের সঙ্গে ২ টো কারি পাতা খেলে উপকার পাওয়া যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ কারি পাতায় হাইপোগ্লাইসেমিক অর্থাৎ চিনির মাত্রা কমানোর বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রতিদিন কারি পাতা খেলে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক লেভেলের উপরে যাওয়ার সুযোগ পায় না। এখানেই শেষ নয়, কারি পাতায় উপস্থিত ফাইবারও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

কারি পাতার পুষ্টিগুণ

কারি পাতার পুষ্টিগুণ এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন-এ, বি, সি এবং ই। কারি পাতা প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ যা স্বাস্থ্যের উপকারে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে। কারি পাতা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এগুলি ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজগুলির একটি ভাল উত্স, যা হাড়ের স্বাস্থ্য, রক্ত ​​​​সঞ্চালন এবং আরও অনেক কিছুর জন্য প্রয়োজনীয়।

উপরন্তু, কারি পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরকে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।  কারি পাতায় অ্যালকালয়েড, গ্লাইকোসাইড এবং ফেনোলিক যৌগের উপস্থিতি তাদের ঔষধি গুণকে বাড়িয়ে তোলে। এই যৌগগুলি তাদের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য পরিচিত। নিচে কারি পাতার পুষ্টিগুণ বর্ণনা করা হলো।

প্রতি ১০০ গ্রাম তাজা কারি পাতায় রয়েছেঃ
পুষ্টি উপাদান পরিমান
প্রোটিন ৬ গ্রাম
ভিটামিন-সি ৪ মিলিগ্রাম
শর্করা ১৮.৬ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ৮৩০ মিলিগ্রাম
বিটা-ক্যারোটিন ৭৫০ মিলিগ্রাম
আয়রন ১ মিলিগ্রাম
শক্তি ৭৬৬ গ্রাম
ভিটামিন-বি৬ ৬.০৪ মিলিগ্রাম

কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম

কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম রয়েছে অনেক। কারি পাতা শরীরের জন্য উপকারি একটি ভেষজ উপাদান। এ পাতার রয়েছে একাধিক গুন। তাই চিকিৎসকেরা এটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে প্রশ্ন হলো কারি পাতার উপকার পেতে, এ পাতা খাওয়ার নিয়ম কি। কোন কোন নিয়মে কারি পাতা খাওয়া স্বাস্থের জন্য উপকারী অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন। তো চলুন নিচের আলোচনা থেকে জেনে নিন কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
কারি-পাতা-খাওয়ার-নিয়ম
১. স্বাস্থ উপকারিতা পেতে কয়েকটি কচি কারি পাতা প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে শুধু পানিটুকু ছেঁকে পান করুন। এ নিয়মে কারি পাতা খেলে ইমিউনিটি বাড়বে, কোলেস্টেরল ঠিক থাকবে, পেটের সমস্যা কমবে, দুশ্চিন্তা কমবে এবং বিভিন্ন রোগ দূরে যাবে।
২. কারি পাতার উপকার পেতে ৩ থেকে ৪ টি কচি পাতা নিয়ে সকালে চিবিয়ে খাবেন। এ পদ্ধতিতে কারি পাতা খেলে রয়েছে বেশ কিছু উপকার। যেমন-ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করে, হজমে ভালো কাজ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, ওজন কমায়, দাঁতের ব্যাকটেরিয়া দূর করে ইত্যাদি।

৩. কারি পাতা পরিমানমতো জলের সাথে দিয়ে সেদ্ধ করে, ছেঁকে নিন। এরপর পানি ঠান্ডা হলে সে পানির সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খাবেন বিভিন্ন উপকার পাবেন।

৪. বিভিন্ন রান্নায় কারি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এ পাতা শুধু রান্নায় স্বাদ বাড়ায় না, বরং এ থেকে বেশ কিছু স্বাস্থ উপকারিতাও পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে এ পাতা শাকসবজি, ওটসের সাথে যোগ করে এবং সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন।

যারা কারি পাতা খেতে চাইছেন, তারা স্বাস্থের সঠিক উপকার পেতে উপরের নিয়মগুলো ফলো করে কারি পাতা খাবেন। সঠিক নিয়মে কারি পাতা খান, আপনার শরীরে কারিপতার উপস্থিতি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করবে বলে আশা করা যায়।

সকালে কারি পাতা ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারীতা

সকালে কারি পাতা ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারীতা রয়েছে প্রচুর। কারিপাতার গুণের শেষ নেই। এতে রয়েছে অত্যন্ত উপকারী কিছু ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাভানয়েডসের ভাণ্ডার। তবে এই পাতার সমস্ত গুণ পেতে চাইলে রোজ রাতে কয়েকটি কচি কারি পাতা জলে ভিজিয়ে রাখুন। আর পরেরদিন জল ছেঁকে নিয়ে তা পান করুন। নিচে কারি পাতা ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারীতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কারিপাতা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। যার ফলে নানা রোগবালাইয়ের হাত থেকে শরীর সুরক্ষিত থাকে। তাছাড়া, প্রতিদিন কারিপাতার জল পান করলে হজমশক্তিও বাড়ে।

২. বাড়বে ইমিউনিটিঃ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্য়বস্থা চাঙ্গা থাকলে একাধিক ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাসের আক্রমণ রুখে দেওয়া সম্ভব। আর এই কাজে আপনার সহযোদ্ধা হতে পারে কারিপাতা ভেজানো জল। আসলে এই পানীয়ে মজুত রয়েছে অত্যন্ত উপকারী কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কিনা একাধিক ছোট-বড় সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করার কাজে সিদ্ধহস্ত। তাই নীরোগ জীবন কাটানোর ইচ্ছে থাকলে এই পানীয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিতে দেরি করবেন না যেন।

৩. সব ক্রনিক রোগ থাকবে দূরেঃ জানলে অবাক হবেন, এই পানীয় হল অত্যন্ত উপকারী কিছু অ্যালকালয়েড, গ্লাইকোসাইডস এবং ফেনোলিক কম্পাউন্ডের ভাণ্ডার। আর এইসব উপাদান কিন্তু দেহের প্রদাহ প্রশমিত করার কাজে সিদ্ধহস্ত। তাই তো নিয়মিত এই পাতা ভেজানো জল গলায় ঢাললে ক্যানসার সহ একাধিক জটিল ক্রনিক রোগের ফাঁদ এড়ানো যাবে। আর এই কারণেই বিশেষজ্ঞদের একাংশ প্রতিদিন কারিপাতা ভেজানো জলপান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

৪. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে থাকেঃ রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে বশে রাখতে চাইলে নিয়মিত কারিপাতা ভেজানো জল সেবন করতেই হবে। কারণ এই পাতায় রয়েছে এমন কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কিনা লিপিডকে স্বাভাবিকের গণ্ডিতে টেনে আনতে একাই একশো।। আর কোলেস্টেরল কন্ট্রোলে থাকলে যে খুব সহজেই হার্টের রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে, তা তো বলাই বাহুল্য! তাই এবার থেকে রোজ সকালে এই পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিন। আশা করছি, তাতেই শুধরে যাবে হার্টের স্বাস্থ্যের হাল।

৫. লিভারকে সুস্থ রাখেঃ সুস্থ-সবলভাবে বাঁচতে গেলে লিভার সুস্থ থাকা খুবই জরুরি। তবে অত্যধিক বাইরের খাবার খাওয়া, অনিয়মিত জীবনযাপন এবং আরও অনেক কারণে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লিভার ভালো রাখতে কারিপাতার জুড়ি মেলা ভার। কারিপাতায় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে ভরপুর পরিমাণে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট লিভারের ক্ষতি হতে দেয় না। এ ছাড়া, লিভারকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকেও বাঁচায় কারিপাতা।

৬. পেটের সমস্যা দূর করেঃ কারিপাতা ভেজানো জল খেলে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ফিরতে সময় লাগবে না। এমনকী এই পানীয়ের গুণেই পাকস্থলীতে হজমে সাহায্যকারী উৎসেচকের ক্ষরণও বাড়বে। তাই নিয়মিত গ্যাস, অ্যাসিডিটি, বদহজম বা অন্য কোনও ধরনের পেটের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা আর দেরি না করে কাল সকাল থেকেই এই পানীয়ের শরণাপন্ন হন। হলফ করে বলতে পারি, কিছুদিনের মধ্যেই আপনি একদম চাঙ্গা হয়ে উঠবেন।

​৭. দুশ্চিন্তা দূর করেঃ সারাদিন ধরে দুশ্চিন্তা করার খারাপ অভ্যেস রয়েছে নাকি? তাহলে রোজ সকালে উঠে কারিপাতা ভেজানো জলের গ্লাসে চুমুক দিন। এতেই চটজলদি পাবেন উপকার। এইটুকু কাজ করলেই স্ট্রেস তো দূরে থাকবেই, সেই সঙ্গে ভয়, উৎকণ্ঠার মতো মানসিক সমস্যারও ফাঁদ কাটিয়েও চলতে পারবেন। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই পানীয়কে আপনার ডায়েটে জায়গা করে দিতেই হবে। আর তাতেই আপনি হেসে-খেলে জীবন কাটানোর পথে আরও এক পা এগিয়ে যাবেন।

কারি পাতা চেনার উপায়

কারি পাতা চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন অনেকে। মানবস্বাস্থেও জন্য দারুন উপকারী কারি পাতা। খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যপক ভাবে পরিচিত এ পাতা।  রান্নায় ব্যবহৃত অপরিহার্য একটি উপাদান। ভারতে এ পাতা খুবই পরিচিত হলেও বাংলাদেশে প্রায় অনেকের এ পাতার সম্পর্কে জানা নেই। তাই অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন কারি পাতা চেনার উপায় কি। তো চলুন নিচের আলোচনা থেকে জেনে নিন কারি পাতা চেনার উপায় সম্পর্কে।

কারি পাতা সাধারনত রান্নার রুচি বাড়াতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে এ পাতার অনেক স্বাস্থ উপকারী গুন থাকার কারনে অনেকেই এ পাতা খেতে চাই। অনেকেই নিম পাতাকে কারি পাতা ভাবে, তবে নিম পাতা এবং কারি পাতা একই নয়। তবে কারি পাতা অনেকটাই দেখতে নিম পাতার মতোই। কারি পাতা স্বাদে মিষ্টি ও এর ঝাঁঝালো গন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে নিম পাতা স্বাদে তেতো।

কারি গাছের উচ্চতা মাঝারি, প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মিটার উঁচু হয়ে থাকে। কারি পাতার আকার অনেকটাই নিম পাতার মতোই, তবে নিম পাতার থেকে কিছুটা ছোট এবং ঘন হয়ে থাকে এ পাতা। এ গাছের ফুল সাদা এবং ফল নিম ফলের মতোই দেখতে। তবে নিম ফল পরিপক্ক হলে এর রঙ সবুজ রয়ে যায়, অন্যদিকে কারি ফল পরিপক্ক হলে সবুজ থেকে লাল অথবা কালো হতে দেখায়।

চুলের যত্নে কারি পাতার উপকারিতা

চুলের যত্নে কারি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। কারি পাতা চুলের রঙের উন্নতিতে সাহায্য করে। চুলের তেলে কয়েকটি কারি পাতা যোগ করুন তারপর তেল ফুটিয়ে নিন এবং মাথার খুলির উপর এটি লাগান। এটি চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে। কারি পাতা চুলের অকালপক্বতা প্রতিরোধ করে। কারি পাতা চুলের যত্নের জন্য ভাল কাজ করে। সকালে প্রাতরাশে ক্যারি পাতার পাউডার খেতে পারেন।
এছাড়া আমলকি, শিকাকাই এবং মেথি ও কারি পাতা চুলের জন্য বেশ উপকারি। কচি-কারি পাতার পেস্ট আপনার চুলের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভাল কাজ করে। মেথি বা মেথি বীজ চুলের উপকারী । এটি আপনার চুলকে একটি দর্শনীয় উজ্জ্বল করে। জেনে নিন চুলের যত্নে কারি পাতা কি কি উপকার করে সে সম্পর্কেঃ

চুলের ফলিকল উদ্দীপকঃ কারি পাতা চুলের ফলিকলকে উদ্দীপিত করার জন্য এবং এর ফলে চুলের বৃদ্ধির জন্য বিখ্যাত। এগুলিতে অত্যাবশ্যক পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা মাথার ত্বকে প্রবেশ করে এবং ভিতরে থেকে চুলের ফলিকলগুলিকে শক্তিশালী করে। কারি পাতায় বিটা-ক্যারোটিন এবং প্রোটিনের উপস্থিতি চুল পাতলা হওয়া কমাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া রোধ করে।

চুলের বৃদ্ধিতেঃ কারি পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, বি, প্রোটিন এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা মাথার ত্বকে লাগালে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। এর ফলে নতুন চুল গজায়। আমলকি, মেথি এবং কারি পাতা সমপরিমাণে বেটে মাথার তালুতে লাগিয়ে রাখুন প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট। এরপর অল্প গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন এই হেয়ার প্যাক ব্যবহার করলে নতুন চুল গজাবে।

মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেঃ স্বাস্থ্যকর চুলের বৃদ্ধি একটি স্বাস্থ্যকর মাথার ত্বক দিয়ে শুরু হয়। কারি পাতা অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি প্রদর্শন করে যা একটি পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর মাথার ত্বকের পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করে। ত্বকের মৃত কোষ অপসারণ করে, লোমকূপগুলিকে বন্ধ করে এবং রক্ত ​​সঞ্চালনের উন্নতি করে, কারি পাতা চুলের বৃদ্ধির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।

চুলের ঘনত্ব বাড়ায়ঃ কারি পাতার অ্যামিনো অ্যাসিড এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি কেরাটিনের জন্য প্রয়োজনীয় বিল্ডিং ব্লক সরবরাহ করে, প্রোটিন যা চুল তৈরি করে। কারি পাতার নিয়মিত ব্যবহারের ফলে চুল ঘন, মজবুত এবং আরও স্থিতিস্থাপক হতে পারে।

অকাল পক্কতার বিরুদ্ধে লড়াই করেঃ চুলের অকাল পাকা হওয়া একটি সাধারণ উদ্বেগ যা কারি পাতা দিয়ে প্রশমিত করা যায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বি ভিটামিন সমৃদ্ধ, কারি পাতা চুলের প্রাকৃতিক রঙ্গক পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। তারা চুলের শিকড়কে শক্তিশালী করে এবং চুলের রঙের জন্য দায়ী মেলানিনের ক্ষয় রোধ করে কাজ করে।

চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়ঃ কারি পাতায় প্রয়োজনীয় তেল এবং পুষ্টির উচ্চ ঘনত্ব চুলের কিউটিকল সিল করতে সাহায্য করে, যার ফলে চুল মসৃণ এবং ঝলমলে হয়। কারি পাতার পেস্ট বা তেলের নিয়মিত প্রয়োগ চুলের সামগ্রিক দীপ্তি এবং চেহারা বাড়াতে পারে।

চুল ভেঙ্গে যাওয়া রোধেঃ কারি পাতা পুষ্টির একটি চমৎকার উৎস যা চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত মজবুত করে। কারি পাতার প্রোটিন এবং বিটা-ক্যারোটিন চুলের ভাঙ্গা এবং বিভক্ত হওয়া কমাতে সাহায্য করে, স্বাস্থ্যকর এবং আরও স্থিতিস্থাপক চুল নিশ্চিত করে।

চুলে পুষ্টি যোগায়ঃ কারি পাতা একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ চুলের চিকিৎসা। তাদের উচ্চ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান চুল এবং মাথার ত্বকে পুষ্টি যোগায়, চুলের সমস্যা হতে পারে এমন ঘাটতিগুলি পূরণ করে। কারি পাতার নিয়মিত ব্যবহার চুলকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দিয়ে পূরণ করতে পারে, চুলের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের প্রচার করে।

স্ক্যাল্পে পিএইচ ব্যালেন্স করেঃ মাথার ত্বকের সঠিক pH ভারসাম্য বজায় রাখা স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারি পাতা মাথার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, খুশকি, চুলকানি এবং মাথার ত্বকের অন্যান্য অবস্থার ঝুঁকি কমায়। একটি সুষম মাথার ত্বকের পরিবেশ চুলের যত্নের পণ্যগুলির আরও ভাল শোষণ নিশ্চিত করে।

চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনারঃ কারি পাতা প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে চুলকে নরম ও জটমুক্ত করতে। তাদের ময়শ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্যগুলি চুলকে হাইড্রেট করতে সাহায্য করে, এটিকে আরও পরিচালনাযোগ্য করে তোলে এবং জট ও ঝাপসা হওয়ার ঝুঁকি কম করে।

চুলের গোড়া মজবুত করেঃ চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল দুর্বল চুলের গোড়া। কারি পাতা প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং মাথার ত্বকে রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত করে চুলের গোড়াকে মজবুত করে। এর ফলে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুল পড়া কমে যায়।

হরমোনের ভারসাম্যহীনতা মোকাবেলা করেঃ হরমোন ভারসাম্যহীনতা চুল পড়া এবং অন্যান্য চুল সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে। কারি পাতায় এমন যৌগ রয়েছে যা হরমোন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যার ফলে চুল পড়ার মূল কারণগুলির মধ্যে একটি।

খুশকি দূর করেঃ কারি পাতাতে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে, যা কিনা খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। কারি পাতা বেটে তার সাথে সমপরিমাণ টক দই মিশান। এবার এই মাস্কটি মাথার তালুতে লাগিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসেজ করুন। এরপর অন্তত পক্ষে ত্রিশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি দূর করতে যাদুর মত কাজ করবে এই মাস্কটি।

অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যঃ মাথার ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ প্রায়শই খুশকির কারণ হয়। কারি পাতার শক্তিশালী অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা খুশকি-সৃষ্টিকারী ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে, যার ফলে চটকানো এবং চুলকানি কম হয়।
মাথার ত্বকের জ্বালা

কারি পাতার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা মাথার ত্বকের জ্বালা প্রশমিত করে এবং লালভাব এবং চুলকানি কমায়। এটি তাদের সংবেদনশীল এবং স্ফীত মাথার ত্বকের জন্য একটি কার্যকর প্রতিকার করে তোলে।

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার খুবই কার্যকারী। শরীর স্বাস্থ ভালো রাখার জন্য আমাদের যেমন শরীরের যত্ন নিতে হয়, তেমনি চুল ভালো রাখতে চাইলে নিতে হবে চুলের সঠিক যত্ন। কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা, চুলের স্বাস্থকে ভালো রাখতে সাহায্য করে, তার মধ্যে একটি হলো কারি পাতা। কারি পাতার মধ্যে অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান প্রচুর পরিমাণে রয়েছে যা চুল পড়া, চুলে খুশকি প্রতিরোধ ও চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে।
এছারাও চুলকে একাধিক সমস্যার হাত থেকে বাঁচায়। তাই চুলের সঠিক যত্ন নিতে ব্যবহার করতে পারেন কারি পাতা। চুলের যত্নে কারি পাতা খুবই কার্যকারী একটি পাতা। এ পাতা চুলের স্বাস্থ ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে। কারি পাতা চুলের যত্নে কি কি উপকার করে এবং কিভাবে এ পাতা ব্যবহার করতে হয় অনেকের সঠিক নিয়ম জানা নেই। তো চলুন জেনে নিন চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে।
  • মেথি, আমলকি ও কারি পাতা একসাথে তিনটি উপাদান পরিমাণমতো নিয়ে একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এরপর মিশ্রনটি চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট মতো অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
  • চুলের যত্নে ব্যবহৃত উপাদানের মধ্যে কারিপাতা আর টক দইয়ের ব্যবহার সবচেয়ে অন্যতম। কারি পাতা এবং দইয়ের একটি পেস্ট তৈরি করতে পারেন (আপনি যদি চান তবে কয়েকটি নীম পাতা যোগ করুন), তেলের কয়েকটি ড্রপ এবং এটি একটি মাস্ক হিসাবে প্রয়োগ করুন। এই মিশ্রণ ১ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় মাথায় লাগিয়ে রেখে তারপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • উচ্চ মাত্রায় অ্যামিনো অ্যাসিড থাকায় চুল শক্ত করতে ও সিল্কি করতে কারি পাতার কোনো তুলনা নেই। একটি প্যানে নারিকেল তেল দিয়ে তাতে কারি পাতা মিশান। এরপর তা গরম হলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন। এবার মিশ্রণটি হেয়ার টনিক হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
  • কারি পাতা ভালো ভাবে ব্লেন্ড করে তা নারিকেলের তেলের সাথে মিশিয়ে চুলায় ফুটিয়ে, ঠান্ডা হয়ে গেলে তা চুলে ও স্ক্যাল্পে মালিশ করুন। এ পদ্ধতিতে নিয়মিত কারি পাতা ব্যবহার করলে চুল পড়া অনেকটাই কমে যাবে।
  • কারি পাতা ও পেঁয়াজ দুটি উপাদান একসাথে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর সেটা চুলে ও স্ক্যাল্পে ভালোভাবে লাগিয়ে ১ ঘন্টা মতো রেখে ধুয়ে নিন। চুল পড়া কমবে এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটবে।
  • কারি পাতা ব্লেন্ড করে তার সাথে অ্যালোভেরার জেল মিশিয়ে ভালোভাবে মিশ্রন তৈরি করে নিন। এরপর মিশ্রনটি ভালোভাবে চুলে লাগিয়ে ১ ঘন্টা মতো রেখে ধুয়ে ফেলুন। নতুন চুল গজাতে এ পদ্ধতি অনেক উপকারী।
  • চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধ করতে শুধু কারি পাতা ব্লেন্ড করে লাগাবেন উপকার পাবেন।
কারি পাতার মধ্যে থাকা গুনাগুন আপনার চুলের স্বাস্থকে ভালো রাখতে সহায়তা করবে। তাই চুলের যত্ন নিতে কারি পাতা উপরের নিয়মে ব্যবহার করতে পারেন। এছারাও চুলের স্বাস্থ ভালো রাখতে বেছে নিতে পারেন কারি পাতার তেল।

কারি পাতা খাওয়ার অপকারিতা

কারি পাতা খাওয়ার অপকারিতা জানতে অনেকেই ইউটিউব কিংবাগুগলে সার্চ করে থাকেন। স্বাস্থ সুরক্ষায় কারি পাতা খুবই উপকারি, তা আমরা জেনে গেছি। তবে এ পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম রয়েছে। এ পাতা উপকারি বলে, যতটুকু ইচ্ছা এ পাতা খাওয়া ঠিক নয়। অতিরিক্ত এ পাতা খাওয়া স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। জেনে নিন কারি পাতা অতিরিক্ত খেলে কি কি অপকারিতা দেখা দেয়।
কারি-পাতা-খাওয়ার-অপকারিতা
এসিডিটিঃ পরিমিত কারি পাতা খাওয়া এসিডির সমস্যার সমাধান করে থাকে। তবে অতিরিক্ত এ পাতা খেলে এসিডিটির সমস্যা বেড়ে যায়।

পেটে ব্যাথাঃ অতিরিক্ত কারি পাতা খেলে পেটে ব্যাথা হতে পারে। কারি পাতার মধ্যে রয়েছে ফাইবার, যার ফলে অতিরিক্ত ফাইবার আমাদের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করলে পেটে ব্যাথার সমস্যা হয়ে থাকে।

রক্ত জমাট বাধার সমস্যায়ঃ আপনার যদি রক্ত জমাট বাধার সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে এ পাতা খাওয়া আপনার জন্য ক্ষতিকারক। কারি পাতায় থাকা কুমারিন এ সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে।

গর্ভাবস্থায়ঃ গর্ভবতী মায়ের কারি পাতা খাওয়া স্বাস্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ন। কারি পাতার মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে যা গর্ভবতী মায়ের গর্ভপাতের ও অকাল প্রসবের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দেয়।

উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, কারি পাতা স্বাস্থের জন্য উপকারি। তবে এ পাতা খেতে হবে পরিমিত। কারন অতিরিক্ত কারি পাতা বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই আপনার স্বাস্থ সুরক্ষায় কারি পাতা পরিমিত এবং সঠিক সময়, সঠিক নিয়মে খেতে হবে।

কারি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের শেষ মন্তব্য

বিশ্বাস করা হয় এতে বহুমূত্র রোগ (ডায়াবেটিস) নিরোধক গুনাগুণ আছে। এ গাছের শেকড় অর্শ রোগে বেশ উপকারি। আমাশয় ও ডায়রিয়া সারাতেও কারি পাতা ওস্তাদ। কয়েকটা সবুজ পাতা চিবিয়ে খেলে এটা সেরে যেতে পারে। পাতা সেঁকে ও তা থেকে ক্বাথ তৈরি করে খেলে বমিভাব দূর হয়। শরীরের কোথাও কোনো বিষাক্ত পোকা কামড়ালে কাঁচা কারি পাতা হলে সেখানে লাগালে দ্রুত উপশম হয়। এছাড়াও এর বীজ হতে যে তেল পাওয়া যায় তার গন্ধ অনেকটা নারিকেল তেলের মতো আর স্বাদ মরিচের মতো ঝাঁঝালো।
কারি পাতা, গাছ, শেকড় সবই ভেষজ গুণসম্পন্ন। আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় কারি পাতা। কারি পাতা সাধারণত সব এলাকায় পাওয়া যায় না। আমাদের দেশের বিভিন্ন বাজারে মসলা বা সবজির দোকানগুলোতে এটি পাওয়া যায়। ত‌বে যে‌কোনও বড় নার্সা‌রি থে‌কে কা‌রি পাতার চারা কি‌নে ট‌বে লা‌গি‌য়েও নিজের রান্নায় ব্যবহারের জন্য এই গাছ চাষ করা যেতে পারে। কারণ সব রকম আবহাওয়াতেই কারি পাতা জন্ম নিতে পারে।

এই পাতা পুষ্টিগুণে অনন্য একটি উপাদান। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ এবং অন্যান্য বিভিন্ন উপাদানে পরিপূর্ণ কারি পাতা যা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। কারি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করছি কারি পাতার কি কি উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url