এলাচ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা


এলাচ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেরই তেমন কোনো ধারনা নেই। কিন্তু এই এলাচ আমরা সাধারণত বিভিন্ন খাবারের সাথে মশলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। এলাচের উপকারিতা ও এর গুণ সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হবেন। এলাচ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।
এলাচ-খাওয়ার-উপকারিতা
এটি বিশ্বের একটি দামী মশলা হিসেবেও পরিচিত। এলাচে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য পরিপোষক ভিটামিন ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট উপাদান রয়েছে। ভিটামিন-এ, বি ও সি। প্রচুর প্রোটিন, স্বল্প মাত্রায় ফ্যাট, ভোলাটাইল অয়েল প্রভৃতি। আরো আছে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস আরও অনেক।

পেইজ সূচিপত্রঃ এলাচ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

এলাচ খাওয়ার উপকারিতা

এলাচ খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। এলাচ নানা রকমের খাবারে বিশেষ সুগন্ধ ও স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। তবে এলাচের ব্যবহার কেবল মাত্র রান্নাতেই সীমাবদ্ধ নয়। নানা ঔষধি গুণাবলী ও স্বাস্থ্য উপকারিতায় ভূমিকা রয়েছে এলাচের। এলাচ বিভিন্ন রকমের সমস্যা যেমন সর্দি, কাশি, ফুসফুসের সমস্যা, রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা ইত্যাদি থেকে মুক্তি দেয়। চলুন তাহলে জেনে নিন এলাচের উপকারিতা সম্পর্কেঃ

হজমশক্তি বাড়ায়ঃ এলাচের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হলো এর হজম সহায়ক গুণ। এলাচের মধ্যে থাকা ভোলাটাইল অয়েলগুলি হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। এটি পাকস্থলীতে বাইল উৎপাদনকে উৎসাহিত করে, যা খাবারের মেটাবলিজম প্রক্রিয়া দ্রুত করে। এছাড়া, এলাচ পাকস্থলীতে অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, যা অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়। যারা হজমের সমস্যা, পেট ফাঁপা বা অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভোগেন তারা এলাচ খেলে উপকার পেতে পারেন।
ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া উন্নত করেঃ এলাচের ডাইইউরেটিক গুণাগুণ শরীরের অতিরিক্ত তরল ও বর্জ্য পদার্থ নির্গত করতে সাহায্য করে। এটি কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্ত থেকে টক্সিন অপসারণে সহায়ক। এলাচের মধ্যে থাকা মেটাবলিক বুস্টিং উপাদানগুলি শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং শরীরকে সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন রাখে। যারা প্রায়ই ডিটক্সিফিকেশন ডায়েট অনুসরণ করেন, তারা তাদের ডায়েটে এলাচ অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

সর্দি-কাশি নিরাময় করেঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এলাচ। তবে এটি সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে- সবুজ এবং কালো। কালো এলাচ সর্দি-কাশি এবং শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এ জন্য মধুর সঙ্গে কিছু এলাচ গুঁড়ো পানিতে ভালো করে মিশিয়ে নিন। প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে এই এলাচ চা অনেক উপকারে আসে। শরীরে উষ্ণতা প্রদান করে।

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা প্রতিরোধ করেঃ এলাচ গ্যাস্ট্রিক সমস্যা প্রতিরোধ করে, অ্যাসিডিটি দূর করতে চিবাতে পারেন একটি এলাচ। এটি ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে সক্রিয় রাখে এবং হজমে সাহায্য করে। পেটের যে কোনও সমস্যা যেমন বদহজম (digestive system) নিরাময়ে সহায়তা করে। এক কাপ গরম জলে একটি এলাচ থেঁতো করে পান করুন। দেখবেন হজমের সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে।

বুক জ্বালাপোড়া কমায়ঃ এলাচ বুক জ্বালাপোড়া সমস্যা নিরসনে কার্যকরী। এর মধ্যে থাকা এনজাইমগুলি পাকস্থলীর গ্যাসের উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং বুক জ্বালা ও অস্বস্তি কমায়। এলাচের গুণাগুণ গ্যাসের ফলে উদ্ভূত অস্বস্তি ও ব্যথা দূর করে এবং পাকস্থলীতে আরাম দেয়। তাই যারা প্রায়ই বুক জ্বালাপোড়ায় ভোগেন, তারা প্রতিদিন এলাচ খেতে পারেন।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করেঃ মুখের দুর্গন্ধ সকলের জন্যই একটা বিব্রতকর সমস্যা। এলাচের সুগন্ধি গুণের কারণে এটি প্রাকৃতিক মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে কাজ করে। এলাচের ভোলাটাইল অয়েলগুলি মুখের দুর্গন্ধ দূর করে এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। এছাড়াও, এলাচ মুখের লালাগ্রন্থি উদ্দীপিত করে, যা মুখের ভেতরে নিঃসৃত এনজাইমগুলির মাধ্যমে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। যারা মুখের দুর্গন্ধে ভোগেন, তারা খাওয়ার পর একটি এলাচ চিবিয়ে খেতে পারেন।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ এলাচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। পটাসিয়াম রক্তচাপ কমায় এবং রক্তনালী শিথিল করে, যা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। এলাচের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী রক্তনালীর সংকোচন কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিয়মিত এলাচ খাওয়া উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।

শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির সমস্যা কমায়ঃ এলাচের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ শ্বাসনালী শিথিল করে এবং শ্বাসকষ্ট কমাতে সহায়ক। এটি ফুসফুসের কফ অপসারণে সাহায্য করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। হাঁপানি রোগীরা এলাচের গুণাগুণ থেকে উপকৃত হতে পারেন, কারণ এটি শ্বাসনালীর প্রদাহ কমিয়ে শ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করে। এলাচের তেলে সেঁকা নিলে বা এলাচ চা খেলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমে।

মানসিক চাপ কমায়ঃ এলাচে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভোলাটাইল অয়েলগুলি মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। এটি নার্ভস সিস্টেমকে প্রশান্তি দেয় এবং মানসিক উদ্বেগ কমায়। এলাচের নিয়মিত ব্যবহার মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের উৎপাদন বাড়িয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এলাচ চা বা এলাচ দুধ মানসিক চাপ কমাতে ও ঘুমের সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে।

চুলকানি প্রতিরোধ করেঃ চুলকানির সমস্যা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বাজারে পাওয়া সাধারণ মলম ব্যবহারেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বড় এলাচি চন্দনের মতো ঘষে লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

মাথা ব্যাথা দূর করেঃ প্রায় কম-বেশি সবাই মাথা ব্যথা সমস্যায় ভূগেন। গরম জলেতে এলাচ গুঁড়ো ও মধু দিয়ে ফুটিয়ে তৈরি করে নিন এলাচ চা। মাথা ব্যথায় ভুগে থাকলে এক কাপ গরম এলাচ চা খেয়ে দেখুন। দেখবেন মাথা ব্যাথা নিমেষেই দূর হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও এলাচ চা মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে।

রুপ চর্চাঃ এলাচে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। তাই ত্বকের সমস্যায় এলাচ খুব উপকারি। কারণ ভিটামিন সি (vitamin c) রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। কারো ত্বকে কালো ছোপ ছোপ দাগ থাকলে তা দূর করতে এলাচ বেটে দাগে নিয়মিত লাগালে দাগ চলে যাবে।

ত্বকের জন্য উপকারীঃ এলাচের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ করে। এলাচ ত্বকের দাগ, ফুসকুড়ি এবং ব্রণের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এলাচের তেল ব্যবহার করলে ত্বকের জ্বালা ও প্রদাহ কমে এবং ত্বক সজীব থাকে। এলাচের ভেতরের বীজগুলির পেস্ট ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধান করেঃ কোষ্ঠকাঠিন্য ও জ্বরে উভয় সমস্যায় এলাচ খুব কাজের। এলাচ, বেল ও দুধ জলের সঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে গরম করুন। দুধ যখন ঘন হয়ে আসবে তখন তা একটু ঠাণ্ডা করে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও জ্বর কমে যাবে।

পেশি টান উপশম করেঃ কখনও কোনও ভারী জিনিস তুলতে গেলে শরীরের টান ধরে। এ ক্ষেত্রে ছোট বা বড় এলাচ গরম জলে গুলে ছেঁকে খাওয়ালে তত্‍ক্ষণাত্‍ উপশম হয়। সপ্তাহখানেক প্রতিদিন খেলে ঐ উপসর্গ আর দেখা দেবে না।

গায়ের দুর্গন্ধ দূর করেঃ বড় এলাচ বেটে গায়ে মেখে কিছুক্ষণ পর স্নাম করে ফেললে গায়ের দুর্গন্ধের মতো অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। দুএকটি দানা মুখে পুরে রাখলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে।

এলাচ খাওয়ার নিয়ম ও ব্যবহার

এলাচ খাওয়ার নিয়ম ও ব্যবহার করার কিছু বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। এলাচ এর বহু গুণাগুণ ও উপকারিতা রয়েছে, যা উপরে আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের এলাচ খাওয়ার নিয়ম সঠিকভাব জানতে হবে। বিভিন্ন তরকারি, ডাল, মিষ্টি জাতীয় কোনো খাদ্যে বা অন্য যে কোনো পদে এটি ব্যবহার করে রান্না করা হয়। এলাচের খোসা ছাড়িয়ে অথবা খোসা সমেতও ব্যবহার করতে পারবেন। এলাচ খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও ব্যবহার নিচে আলোচনা করা হলো।
  • এলাচ সাধারণত আমরা বিভিন্ন রান্নায় মসলার সঙ্গেই বেশি খেয়ে থাকি। তবে আপনি এলাচ যে কোন উপায়েই খেতে পারেন।
  • আমিষ ও নিরামিষ যে কোনো রান্নায় এলাচ ব্যবহার করা যায়। আবার নানারকম তরকারি বা সবজি রান্নার সময় এলাচ ব্যবহার করা হয়। রান্নার প্রয়োজন অনুযায়ী এলাচ ব্যবহার করা হয়।
  • চা বা কফি বানানোর সময়ও এলাচ ব্যবহার করা হয়। এটি চা বা কফিতে ব্যবহার করলে দারুন সুগন্ধ ফুটে ওঠে। আবার মেজাজও বেশ ফুরফুরে থাকে।
  • পোলাও, কাবাব বা বিরিয়ানি বানানোর সময় এলাচ একটি অতি আবশ্যক মশলা। এছাড়াও ক্ষির, পায়েস, , হালুয়া মিষ্টি, বা যেকোনো মিষ্টান্ন পদের জন্যে এলাচ দারুন একটি মশলা।
  • আপনি লেবুর রস মধু এবং গরম পানির সঙ্গে এলাচ ভালো করে মিশিয়ে পান করতে পারেন। এতে করে আপনার যদি শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে এবং কাশি এবং ফুসফুস জনিত সমস্যা থাকে। তাহলে তার দ্রুত সমাধান মিলবে।
  • এছাড়াও আপনি এক কাপ গরম পানিতে এলাচ থেতো করে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর পানি পান করুন। এতে করে আপনার বদহজক সমস্যা দূর হবে এবং পেটের নানান রকম সমস্যা দূর হবে।
  • মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য চিবিয়েও খেতে পারেন এলাচ।
  • অনেকেই বাড়িতে আইস ক্রিম, পুডিং বা কাস্টার্ড বানানোর সময়ও এলাচ ব্যবহার করে থাকেন।
  • মাংস রান্না করার পূর্বে এলাচ, মধু ও লবঙ্গ দিয়ে মাখিয়ে রাখলে তার একটি বিশেষ স্বাদ ফুটে ওঠে।
  • সুস্বাদু ফলের স্যালাডে এলাচ যোগ করলে স্বাদ ও পুষ্টি দুটোই বেড়ে যায়।
  • এলাচের সাহায্যে লেবু সংরক্ষণ করা যায়। এর জন্য লেবুকে টুকরো টুকরো করে কেটে তাতে একটু নুন, এলাচ গুঁড়ো ও তেজ পাতা দিয়ে মাখিয়ে একটি বয়ামে রেখে দিন। প্রতিদিন এই বয়ামটি একবার করে ভালো করে ঝাকিয়ে রেখে দেবেন। এভাবে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত লেবু টাটকা অবস্থায় রাখতে পারবেন।
  • লস্যি, দুধ বা দই-এর মধ্যে এলাচের গুঁড়ো মিশালে এর স্বাদ বেড়ে যায় বিশেষভাবে এতে এলাচের স্বাস্থ উপকারিতা পাওয়া যায়।
এছাড়াও এলাচ খাওয়ার আরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। তাই সবচেয়ে ভালো উপায় আপনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এলাচ খেতে পারেন।

এলাচের পুষ্টিগুণ

এলাচের পুষ্টিগুণ রয়েছে প্রচুর যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ শরীরের নানান পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণ করে থাকে। প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানে ভরা এক সুগন্ধি উপকরণ এলাচ। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই মসলা স্বাস্থ্য গুণাগুণ রয়েছে অনেক। এলাচে যেসকল পুষ্টিগুণ রয়েছে তার এক একটি উপাদান আলাদা আলাদা কাজ করে। চলুন তাহলে জেনে নিই এলাচের পুষ্টি উপাদানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত।

পুষ্টি উপাদান ও পরিমানঃ
পুষ্টি উপাদান পরিমান
ক্যালোরি ৩৩১ কিলোক্যালোরি
কার্বোহাইড্রেট ৬৮.৪৭ গ্রাম
প্রোটিন ১০.৭৬ গ্রাম
ফ্যাট ৬.৭ গ্রাম
ফাইবার ২৮ গ্রাম
নিয়াসিন ১.১০২ মিলিগ্রাম
পাইরিডক্সিন ০.২৩০ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লাভিন ০.১৮২ মিলিগ্রাম
থিয়ামিন ০.১৯৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন-সি ২১ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ১.১১৯ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ৩৮৩ মিলিগ্রাম
কপার ০.৩৮৩ মিলিগ্রাম
আয়রন ১৩.৯৭ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ২২৯ মিলিগ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ ২৮ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ১৭৮ মিলিগ্রাম
জিঙ্ক ৭.৪৭ মিলিগ্রাম

খালি পেটে এলাচ খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে এলাচ খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। খালি পেটে এলাচ খাওয়ার ফলে পেটের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়। যেমন এসিডিটির সমস্যা দূর করে। পরিপাকতন্ত্র সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। হজম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও বুক জ্বালাপোড়া বমি বমি ভাব ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে। এই অংশটি বিস্তারিত পড়ার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই জানতে পারবেন খালি পেটে এলাচ খাবার উপকারিতা সম্পর্কে।

১। নিয়মিত খালি পেটে এলাচ খাওয়ার ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত এলাচ খাওয়া্র ফলে ক্যান্সারের বিভিন্ন কোষ গঠনে বাধা প্রদান করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন কর।

২। নিয়মিত খালি পেটে এলাচ খাওয়ার ফলে যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তাদের সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। ছাড়াও নিয়মিত খালি পেটে এলাচ খাওয়ার ফলে কাশি ও ফুসফুস সংক্রান্ত জনিত বিভিন্ন রকম সমস্যার দ্রুত সমাধান মিলবে।

৩। হাঁপানি ও হৃদরোগ এ আক্রান্ত রোগীদের জন্য নিয়মিত এলাচ খাওয়া বেশ উপকারী হিসাবে কাজ করে। এটি হাঁপানি ও হৃদ রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিয়মিত খালি পেটে এলাচ খাওয়ার ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।

৪। নিয়মিত খালি পেটে এলাচ খাওয়ার ফলে পেশীতে টান ধরার সমস্যা সহ পেশি জনিত বিভিন্ন রকম সমস্যার দ্রুত সমাধান মেলে।

৫। নিয়মিত খালি পেটে এলাচ খাওয়ার ফলে মাথা ব্যথা , মানসিক চাপ , সহ মানসিক বিভিন্ন সমস্যার দ্রুত সমাধান মেলে।

৬। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত খালি পেটে এলাচ খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন রকম এন্টিঅক্সিডেন্ট তৈরি হয়। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শারীরিক নানান সমস্যার দ্রুত সমাধান করে।

নিয়মিত এলাচ খাওয়ার উপকারিতা

নিয়মিত এলাচ খাওয়ার উপকারিতা প্রচুর পরিমানে। খাবারের স্বাদ বাড়াতে এলাচের জুড়ি নেই। এটি খাবারে একটি সুন্দর ঘ্রাণ এনে দেয়। তবে খেতে বসে যদি কোনোভাবে মুখে এলাচ চলে যায় তবে হয় বিপত্তি। এটি মুখের পুরো স্বাদটাই নষ্ট করে দেয়। তবে জানলে অবাক হবেন, এলাচের রয়েছে অনেক গুণাগুণ। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মাত্র একটি এলাচ খেলে মিলবে দেহের নানান রোগ থেকে মুক্তি। চলুন জেনে নেয়া যাক নিয়মিত এলাচ খাওয়ার উপকারিতা কিঃ
নিয়মিত-এলাচ-খাওয়ার-উপকারিতা
১। রক্তনালীতে রক্ত জমে যাওয়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকেই। এলাচে রয়েছে রক্ত পাতলা করার দারুণ গুণ। প্রতিদিন এলাচ খেলে রক্তের ঘনত্ব সঠিক থাকে।
২। এলাচের ডিউরেটিক উপাদান উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমিয়ে আনতে সক্ষম। দেহের বাড়তি ফ্লুইড দূর করে এলাচ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে।

৩। রক্তনালীতে রক্ত জমে যাওয়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকেই। এলাচের রক্ত পাতলা করার দারুণ গুণটি এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে। প্রতিদিন এলাচ খেলে রক্তের ঘনত্ব সঠিক থাকে।

৪। নিয়মিত এলাচ খাওয়ার অভ্যাস ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এলাচ দেহে ক্যান্সারের কোষ গঠনে বাঁধা প্রদান করে থাকে।

৫। এলাচ এবং আদা সমগোত্রীয়। আদার মতোই পেটের নানা সমস্যা এবং হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে এলাচ অনেক কার্যকরী। বুক জ্বালাপোড়া, বমি ভাব, পেট ফাঁপা, অ্যাসিডিটির হাত থেকে মুক্তি পেতে এলাচ মুখে দিন।

৬। দেহের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে দিতে এলাচের জুড়ি নেই। এলাচের ডিউরেটিক উপাদান দেহের ক্ষতিকর টক্সিন পরিষ্কারে সহায়তা করে।

৭। নিয়মিত এলাচ খাওয়ার অভ্যাস ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এলাচ দেহে ক্যানসারের কোষ গঠনে বাঁধা প্রদান করে থাকে।

৮। এলাচের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকে বয়সের ছাপ, রিংকেল ইত্যাদি পড়তে বাঁধা প্রদান করে। এলাচ ত্বকের ক্ষতি পূরণেও বেশ সহায়ক।

৯। মুখে দুর্গন্ধ দূর করতে একটি এলাচ নিয়ে চুষতে থাকুন। এলাচ মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। 

১০। নিয়মিত এলাচ খাওয়ার অভ্যাস মুখের দুর্গন্ধের পাশাপাশি মাড়ির ইনফেকশন, মুখের ফোঁড়া সহ দাঁত ও মাড়ির নানা সমস্যা থেকে রক্ষা করে।

এলাচ যাদের জন্য ক্ষতিকর

এলাচ যাদের জন্য ক্ষতিকর তারা আর্টিকেলের এই অংশ থেকে জেনে নিতে পারেন। কারও কারও জন্য এটি যেমন অমৃত, আবার কারও কারও জন্য এটি বিষতুল্য হতে পারে।

গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েরাঃ গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য এলাচ খাওয়া নিয়ে মিশ্র মতামত রয়েছে। কিছু গবেষণায় এলাচকে নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও অতিরিক্ত এলাচ গ্রহণ গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এলাচের ভেতরের কিছু উপাদান জরায়ুর সংকোচন সৃষ্টি করতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীরাঃ এলাচ সাধারণত হজম সহায়ক হলেও, কিছু ক্ষেত্রে এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে, যারা অম্লতা বা গ্যাস্ট্রিক আলসারের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে এলাচ খাওয়া ক্ষতিকারক হতে পারে। এলাচ পাকস্থলীতে অ্যাসিডের নিঃসরণ বাড়াতে পারে, যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ রোগীঃ এলাচ সাধারণত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হলেও, কিছু ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য অতিরিক্ত এলাচ খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এলাচের মধ্যে রয়েছে কিছু উপাদান যা রক্তচাপের মাত্রা পরিবর্তন করতে পারে। যারা ইতিমধ্যে উচ্চ রক্তচাপের জন্য ওষুধ গ্রহণ করছেন, তাদের ক্ষেত্রে এলাচ খাওয়া রক্তচাপের মাত্রা অতিরিক্তভাবে কমিয়ে দিতে পারে, যা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।

যাদের এলার্জি রয়েছেঃ কিছু মানুষের এলাচের প্রতি এলার্জি থাকতে পারে। এলাচ খেলে তাদের ক্ষেত্রে ত্বকের ফুসকুড়ি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, বা মুখে ফোলা দেখা দিতে পারে। এমনকি, এলাচ খেলে গুরুতর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া হতে পারে যা এনাফাইল্যাক্সিসের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। যদি কেউ এলাচের প্রতি সংবেদনশীল হয়, তাহলে তাদের এলাচ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

পিত্তথলির পাথরঃ যাদের পিত্তথলির পাথর রয়েছে, তাদের জন্য এলাচ খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এলাচের মধ্যে থাকা শক্তিশালী উপাদানগুলি পিত্তথলির সংকোচন সৃষ্টি করতে পারে, যা পাথরকে সরানোর প্রচেষ্টা করতে পারে এবং এর ফলে তীব্র ব্যথা বা অসুবিধা হতে পারে। তাই পিত্তথলির পাথরের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের এলাচ খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

যাদের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বা হতে যাচ্ছেঃ অস্ত্রোপচার করার আগে বা পরে এলাচ খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। এলাচ রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে কারণ এটি রক্তের পাতলা হওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। বিশেষত, যারা অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বা সদ্য অস্ত্রোপচার করিয়েছেন, তাদের জন্য এলাচ খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

মেটাবলিক সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরাঃ এলাচের মেটাবলিজম বুস্টিং প্রভাব থাকার কারণে কিছু মানুষের জন্য এটি ক্ষতিকারক হতে পারে। বিশেষত, যারা মেটাবলিক বা থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে এলাচ খাওয়া শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যা স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

যদিও এলাচ সাধারণত নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর, তবুও যারা উপরে উল্লেখিত পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন, তাদের জন্য এলাচ খাওয়ার আগে সতর্ক থাকা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ত্বকের জন্য এলাচের উপকারিতা

স্বাস্থ ছাড়া ত্বকের ক্ষেত্রেও এলাচ বেশ উপকারী কারণ এতে রয়েছে এন্টি-ব্যাকটোরিয়াল ও এন্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। এর ফলে ত্বকের নানা রকমের এলার্জির সমস্যা দূর হয়ে যায় ওত্বকের উজ্জ্বল রং ফুটে ওঠে।

১. ত্বকেররংউজ্জ্বলকরে ত্বকের ফর্সা ভাব ওঔজ্জ্বল্যের জন্যে এলাচ দারুণ কাজ করে।ত্বকে ব্রণ ও কালচে ভাব দেখা গেলে এলাচের সাহায্যে তা দূর করা যায়। আজ কাল বাজারে নানা রকমের এলাচ সম্পন্ন ক্রিম বা লোশন পাওয়া যায়।এছাড়া বাড়িতে আপনি মধু ও এলাচের প্যাক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে ফল পেতে পারেন।
২. ত্বকেরএলার্জিদূরকরে এলাচের মধ্যে বিশেষ করে কালো এলাচ এন্টিব্যাক্টিরিয়াল উপাদান দ্বারাভরপুর। মধু এবং কালো এলাচের মিশ্রণ দিয়ে মাস্ক বানিয়ে এলার্জি হওয়া অংশ গুলিতে লাগান।খুব তাড়াতাড়ি ফল পাবেন।

৩. মাস্কেরকাজকরে ত্বকের জন্যে তৈরী বিভিন্ন কসমেটিক যেমন টোনার বা ক্লিন্সারে এলাচ থাকলে ত্বকে তা দারুন মাস্ক হিসেবে কাজ করে।এলাচের সুন্দর গন্ধ অনেক সময় পারফিউম বা সেন্টে ব্যবহারের ফলে ঘামের দুর্গন্ধ দূর হয়।

৪. রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এলাচে রয়েছে ভিটামিন সি যা এন্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর।এর ফলে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয় ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

৫. ত্বকেরজন্যেথেরাপিরকাজকরে এলাচ খুব ভালো এন্টিসেপ্টিক ও এন্টিইনফ্লেমেটরির কাজকরে যা ত্বক কে মোলায়েম বানিয়ে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।তাই এলাচকে ত্বকের জন্যে একটি থেরাপির ওষুধ বলে ধরা হয়।এলাচ দিয়ে নানা রকমের সাবান, তেল, পারফিউম, ইত্যাদি তৈরী হয় যা সুগন্ধ ও উপকার দুটিই প্রদান করে।

৬. ত্বকপরিষ্কারকরে কালো এলাচের সাহায্যে ত্বকের ময়লা ও বিষাক্ত যেকোনো পদার্থগুলিকে অনায়াসে পরিষ্কার করা যায়।প্রতিদিন রাতে ঘুমোনোর আগে এলাচের তৈরী প্যাক দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন।এই প্যাক তৈরী করতে লাগে এলাচের গুঁড়ো, মধু ও একটুখানি লেবুর রস।তবে লেবুর রোষে এলার্জি থাকলে সেটি দেবেন না। ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।অবশ্যই ফল পাবেন।

৭. ঠোঁটেরজন্যেভাল এলাচ দিয়ে ঠোঁটের নানা রকমের বাম, গ্লস বা তেল তৈরী হয় যা ঠোঁটের কোমলভাব ফুটিয়ে তুলে তার গোলাপি ভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে।আপনি ঘরে ওপ্যাক তৈরী করে সারারাত ঠোঁটে লাগিয়ে সকালে ধুয়ে ফলাফল পেতে পারেন।এই প্যাক তৈরী করতে লাগে এলাচের গুঁড়ো, অলিভ অথবা আমন্ড অয়েল এবং একটুখানি এলোভেরাজেল। প্রতিদিন এটি ঠোঁটে লাগিয়ে রেখে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

চুলের জন্য এলাচের উপকারিতা

আপনি ভাবতেও পারবেন না যে এলাচ স্বাস্থ্য ও ত্বকের পাশাপাশি চুলের জন্যও কত খানি উপকারী। চুল বাড়ানো ও মাথার ত্বকের নানা সমস্যার জন্যে এলাচ বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।
১. চুলের মজবুত করেঃ মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকলে চুলের গোড়া মজবুত হয় ও চুল পড়ার সমস্যা থেকেমুক্তি পাওয়া যায়। এলাচের মধ্যে থাকা পুষ্টিকর উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করে চুলকে ঝলমলে ও লম্বা করতে সাহায্য করে।কালো এলাচের গুঁড়ো, একটি ডিম ও নারকেল তেল মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরী করে স্নান করার ১ ঘন্টাআগে লাগিয়ে রাখুন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন।এটি প্রত্যেক সপ্তাহে ২-৩ বার প্রয়োগ করলে দারুন ফল পাবেন।

২. মাথার ত্বক বা স্কাল্পের জন্যে উপকারীঃ কালো এলাচে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকার ফলে স্কাল্প বা মাথার ত্বক ভাল থাকে। এলাচ চুলের ফলিকলগুলিকে মজবুত করে। এলাচ ভেজানো জল দিয়ে চুল ধুলে বা এলাচের গুঁড়ো চুলে লাগানোর পর শ্যাম্পু করলে সব থেকে ভালফল পাওয়া যায়।এছাড়া এলাচের এন্টিব্যাক্টিরিয়াল উপাদান স্কাল্পের যেকোনো রকম ইনফেকশনকে দ্রুত সারিয়ে তোলে।

এলাচ খাওয়ার অপকারিতা

এলাচের রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। এটি আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। মুখের দুর্গন্ধ, মাড়ি দিয়ে রক্তপাত অথবা দাঁত ক্ষয় হওয়ার মতো মারাত্মক সমস্যায় এলাচ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এমনকি এলাচের তেল মুখের সমস্যা দূর করতে কার্যকর একটি ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এলাচ ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। এছাড়া শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা হুপিংকাশি, ফুসফুস সংক্রমণ ও অ্যাজমার মতো সমস্যায় এলাচ খুবই উপকারী। 
এলাচ-খাওয়ার-অপকারিতা
এলাচ ডায়েটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তবে উপকারিতার পাশাপাশি এলাচ খাওয়ার কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এমন কয়েকটি সমস্যা রয়েছে যা কারো থাকলে তার জন্য এলাচ খাওয়া হতে পারে বিপদজ্জনক। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক সেই সমস্যাগুলো সম্পর্কে-

গর্ভবতীদের এলাচ খাওয়া যাবেনাঃ গর্ভাবস্থায় অনেক খাবার নিয়ম করে খেতে হয় এবং সচেতন ভাবে খেতে হয়। আর গর্ভবস্থায় এলাচ খাওয়া উচিত নয় কারণ গর্ভাবস্থায় অনেক কিছু নিয়ম মেনে খেতে হয়। অতিরিক্ত এলাচ খাওয়ার ফলে গর্ভপাত হতে পারে। তাই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যে কোন খাবার খাওয়া উচিত।

কাশি এবং বমি হতে পারেঃ তো এলাচ খাওয়ার ফলে কাশি এবং বমি বমি ভাব হতে পারে। তাই যাদের কাশি এবং বমি ভাব জনিত সমস্যা তাদের এলাচ খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।

কিডনি রোগীদের জন্য সমস্যাঃ যেসব ব্যক্তিগণ কিডনিতে পাথরজনিত সমস্যায় ভুগছেন। তাদের এলাচ না খাওয়াই ভালো। কিডনি রোগীদের এলাচ খাওয়ার ফলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ এলাচের বিচি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। তাই কিডনি রোগীদের এলাচ না খাওয়াই উত্তম।

নিম্ন রক্তচাপঃ এলাচে রয়েছে হাইপোটেনশিভ বৈশিষ্ট্য , যেটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অবশ্যই এলাচ খাওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

এলার্জির সমস্যাঃ যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এলাচ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে দেখা দিতে পারে। যেমন চুলকানি মুখ গলা ফুলে যাওয়া শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি এলার্জি জনিত রোগীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত।

গ্যাসের সমস্যাঃ অতিরিক্ত এলাচ খাওয়ার ফলে গ্যাসের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন পেট খারাপ , ডায়রিয়া , বদ হজম ইত্যাদি হতে পারে। তাই এ ধরনের সমস্যা হলে অবশ্যই এলাচ খাওয়া কমাতে হবে। এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী এলাচ খেতে হবে।

হরমোনের ওপরে প্রভাব পড়েঃ অতিরিক্ত এলাচ খাওয়ার ফলে শরীরে হরমোন এর মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। জরায়ুর ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারের রোগীদের জন্য সতর্কতার সঙ্গে এবং অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এলাচ খেতে হবে।

এলাচ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে শেষকথা

আজকের আর্টিকেলটি পড়ে অবশ্যই আপনারা এলাচের বিভিন্ন গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। প্রতিদিন এলাচ খাওয়া আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। এটি হজম স্বাস্থ্য, সঞ্চালন এবং শ্বাসযন্ত্রের সিস্টেমকে সহায়তা করতে পারে। এটি প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করতে পারে কারণ এলাচ অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলির একটি ভালো উৎস। এলাচে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট সহ নানান রকম উপাদান মানব শরীরের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

এলাচ চিবিয়ে খাওয়ারও অনেক উপকারিতা রয়েছে। বিশেষ করে যাদের মুখে দুর্গন্ধ রয়েছে তারা মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য নিয়মিত এলাচিপিয়া খেতে পারেন। তাহলে আপনার মুখের দুর্গন্ধ নিমিষেই দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও চায়ের সঙ্গে মিশেও পান করতে পারেন। বিশেষ করে রক্তচাপ এবং ওজন কমানোর জন্য এলাচ চিবিয়ে খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে অবশ্যই উপকৃত হয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url