গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা


গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। জাফরান একটি মশলা জাতীয় উদ্ভিদ। জাফরান বিশ্বের সবচেয়ে মুল্যবান মশলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। যা মূলত জাফরান ক্রোকাস নামে পরিচিত। জাফরান মূলত খাবারে বিশেষ করে বিরিয়ানি ও প্রসাধনীতে ব্যবহার করা হয়।
জাফরান কি
জাফরানে রয়েছে উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্যাফ্রানাল, ক্রোসিন, ক্রোসেটিন, কেইমফেরল। প্রদাহ প্রশমিত করে এসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও বিভিন্ন রোগ নিরাময়েও জাফরানের বিশেষ গুনাগুন রয়েছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে।

পেইজ সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

জাফরান কি

জাফরান হলো ক্রোকাস সেটিভাস ফুলের শুকনো শিস বা গর্ভমুন্ড। যেটাকে ইংরেজিতে স্যাফরন বলা হয় যা লাল সোনা হিসেবে আখ্যায়িত। এটি পৃথিবীর সব থেকে দামি মশলা যা খাবারের রং এবং স্বাদ বৃদ্ধি করে। ধারণা করা হয় জাফরানের আদি জন্মস্থল হলো ইরান তবে এ নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। কারণ সে সময়ে মিসরীয় ও মেসোপটেমীয় সভ্যতায় জাফরান ব্যবহার করার নজির পাওয়া যায়। স্যাফরনে একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। তবে জাফরান ফুল দিতে পারলেও এর থেকে কোনো ফল হয় না।

সে কারণে এই উদ্ভিদ উৎপাদন করতে সরাসরি মানুষের হস্তক্ষেপ লাগে। তো এই উদ্ভিদের ফুলের পাপড়ি বেগুনি রঙের হয় এবং ভিতরে থাকা লাল দণ্ড হলুদ ও কমলা রঙের মিশ্রণে লাল বর্ণ ধারণ করে।মূলত ফুলের ভেতরে থাকা এই লাল পরাগ দণ্ড যখন শুকানো হয় তখন তা জাফরান হিসেবে পরিচিতি পায়। বিশ্বব্যাপী এই মশলার কদর সব থেকে বেশি। বিশেষ করে বড় বড় অনুষ্ঠান এবং পার্টিতে খাবার রান্না ও পরিবেশন করার জন্য জাফরান ব্যবহার করা হয়।

অন্যদিকে স্যাফরন বা রেড গোল্ড খাবারের সৌন্দর্য এবং স্বাদ বৃদ্ধি করে। তবে প্রচলিত উপায়ে এটি উৎপাদন করা যায় না। এমনকি সব ধরনের মাটিতে এই উদ্ভিদ জন্মানো সম্ভব হয় না। অন্যদিকে এক কিলোগ্রাম জাফরান মশলা উৎপাদন করতে প্রয়োজন হয় প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার ফুলের যা তুলতে সময় লাগে প্রায় ৪০ ঘণ্টা। এই কারণে প্রতি কিলোগ্রাম জাফরানের দাম পরে প্রায় সারে তিন থেকে চার লক্ষ টাকা।

জাফরান ফুল মাটি থেকে প্রায় ৬ ইঞ্চি উচ্চতায় হয় এবং সূর্য উদয়ের সাথে সাথে এই ফুল সংগ্রহ করতে হয়। মোটকথা এই ফুল উৎপাদন করা থেকে মশলা তৈরি করার আগে পর্যন্ত অনেক পরিশ্রম করতে হয় এই কারণে এর দাম এত বেশি হয়ে থাকে। তাছার গোটা বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশে জাফরান চাষ হয় যাদের মধ্যে কাশ্মীর অন্যতম। আমরা মূলত জাফরান বলতে কাশ্মীর থেকে আশা জাফরান কেই বুঝি। তবে পৃথিবীর মধ্যে সরবরাহের দিক দিয়ে ইরান থেকেই প্রায় ৮০% উপর জাফরান বাজারজাত করা হয়।

গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন অনেকেই। জাফরান গর্ভাবস্থায় দুর্দান্ত, কারণ এটি ইতিবাচক আবেগকে উৎসাহ দেয় এবং কিছু ঔষধি গুণাবলী ধারণ করে যা গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলির সাথে মোকাবেলায় সহায়তা করে। জাফরান উদ্বেগ, স্ট্রেস ও পেট ব্যথার অনুভূতিগুলির মোকাবেলায় সহায়তা করে। তবে বেশিরভাগ জিনিসের মতোই জাফরানও যদি পরিমানমতো না খাওয়া হয় তবে সমস্যা হতে পারে। দেখে নিন গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম

  • গর্ভধারণের নয় মাস মহিলারা সবসময় নানারকম সাধারণ সমস্যার সম্মুখীন হোন। দ্রুত হরমোন পরিবর্তন ও গর্ভাবস্থায় শারীরিক অস্বস্তির জন্য ক্ষণে ক্ষণে মেজাজ পরিবর্তন হয়। জাফরনে রয়েছে সেরোটোনিন উপাদান, যা আপনার শরীরের রক্ত প্রবাহকে বৃদ্ধি করে মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করে।
  • এই সময় রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের খুব দরকার। তাই প্রতিরাতে এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে জাফরন মিশিয়ে পান করতে পারেন। এছাড়াও কুসুম গরম পানির সাথে এক চিমটি জাফরান মেশিয়েও খেতে পারেন। এতে আপনার উদ্বেগ, স্টেস ও মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
  • আপনার শিশুর বিকাশ এবং বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির মধ্যে একটি হলো ক্যালসিয়াম। চতুর্থ মাসের পরে, গর্ভবতী মায়েরা দুধের সাথে জাফরান যোগ করে খতে পারেন।
  • প্রতিদিন এক গ্লাস দুধের সঙ্গে এক চিমটি জাফরান ভালো করে মিশিয়ে গর্ভাবস্থায় খেতে পারেন। এতে আপনার ক্যালসিয়ামের ঘাটতি কমবে অপরদিকে শারীরিক সমস্যা দূর হবে।
  • সকালবেলায় উঠেই আপনি জাফরান ভেজানো পানি দিয়ে চা তৈরি করে গর্ভাবস্থায় খেতে পারেন। এতে করে আপনার মাথা ঘোরা বমি বমি ভাব এবং অলসতা দূর হবে।
  • গর্ভাবস্থায় যদি আপনি দুধের সঙ্গে বাদাম, পেস্তা ও বিভিন্ন ধরনের ড্রাই ফুডের সাথে জাফরানের সুতো ভিজিয়ে ভালো করে পিষে একটি ড্রিঙ্ক তৈরি করুন। এই ড্রিংকটি সকাল সন্ধ্যা খেলে শারীরিকভাবে অনেক উপকার পাবেন।
  • গর্ভাবস্থায় অনেক সময় জ্বর আসতে পারে। সে সময় যদি জাফরান ও চন্দন একসাথে পেস্ট করে কপালে লাগানো হয় তবে জ্বর নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • গর্ভাবস্থায় হজমে সমস্যা হলে সেক্ষেত্রে জাফরান ভিজিয়ে পিষে পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন এতে অনেক উপকার আসবে। আপনার হজমের সমস্যা দূর করবে।
  • আপনার যদি শরীরে ব্যথা থাকে তবে কুসুম গরম দুধের সাথে এক চিমটি জাফরান জন্য মিশিয়ে খেলে ব্যথা দূর হয়। মাংসপেশি যদি ব্যথা থাকে, দাঁতের মাড়ির ব্যথা এমনকি জয়েন্টে ব্যথা থাকলে সে ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন ১.৫ গ্রাম জাফরানের নির্যাস নিরাপদ হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে এর চেয়ে বেশি গ্রহণ করলে বিষাক্ত হতে পারে। বেশি জাফরান খেলে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। উচ্চ পরিমাণে জাফরান খেলে ভ্রূণের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। অনেক সময় গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়ায়। অতএব গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের অবশ্যই উচ্চ মাত্রায় জাফরান খাওয়া এড়ানো উচিত।

গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা প্রচুর। জাফরান গর্ভাবস্থায় হরমোনাল পরিবর্তনের কারনে সৃষ্ট মানসিক অস্থিরতা, অতিরিক্ত স্ট্রেস, বমি লাগা, ঘুমের অপর্যাপ্ততা, ঘন ঘন মুড সুয়িং এর সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। জাফরান গর্ভস্থ শিশুর ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও চুলের উন্নত গঠনেও অনেক অবদান রাখে। এছাড়াও গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন ও আয়রন এর সঠিক স্তর বজায় রাখায় জাফরানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

তাই গর্ভবতী মায়েরা ৫ মাস থেকে জাফরান খাওয়া শুরু করতে পারেন। গর্ভাবস্থার সমস্যা কম করতে এই সময় স্বাস্থ্যকর খাওয়া দাওয়ার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। এই কারণে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কেশর বা জাফরান অত্যন্ত জরুরি বলে আয়ুর্বেদে উল্লেখ রয়েছে। প্রতিদিন কিছু পরিমাণে জাফরান (৪-৫টা পাপড়ি) খেতে পারেন। জেনে নিন নিয়মিত জাফরান খেলে কী কী উপকার হয় গর্ভবতী মহিলাদের।

​মুড স্যুইং ঠিক রাখেঃ গর্ভাবস্থার বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে প্রথমেই আসে মুড স্যুইং। গর্ভবতী মহিলাদের মন মেজাজ হয় অনেকটা বর্ষার আকাশের মতো, এই রোদ ঝলমলে তো এই কালো মেঘে ঢাকা। কখনোও তাদেঁর মন খারাপ তো কখনও আবার হাসিখুশি। জাফরান নিয়মিত খেলে তা শরীরে সেরোটোনিন হরমোনের সৃষ্টি করে। এই সেরোটোনিন হরমোন শরীরে রক্ত সঞ্চালন সঠিক করে মুড স্যুইংকে নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে গর্ভবতীদের ইমোশনাল আপ ডাউন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে।

​ভালো ঘুমের সহায়কঃ এক গ্লাস দুধের সঙ্গে এক চিমটে জাফরান মিশিয়ে পান করলে তা গর্ভবতীদের ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। অনেক সময়ই গর্ভাবস্থায় মহিলাদের রাতে ঘুম ভালো হয় না। স্ফীত উদরের কারণে শারীরিক অস্বস্তি বোধ থেকে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয় অনেকের। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম এই অত্যন্ত জরুরি। কেশর উদ্বেগ ও মানসিক অস্বস্তি কমায়, মন শান্ত করে। এর ফলে সহজেই ভালো ঘুম হয় গর্ভবতীদের।

​ব্য়াথা সারায়ঃ হবু মায়েদের শরীরে অনেক সময় নানা ধরনের ব্যাথা বেদনা। কোমরে, হাঁটুতে ক্র্যাম্প লেগেই থাকে। হরমোনের তারতম্যই মূলত এর কারণ। কখনও কখনও এই ব্যাথা সহনশীল থাকলেও অনেক সময় তা সহ্যের বাইরে চলে যায়। গর্ভাবস্থার এই ব্যাথা বেদনা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে জাফরান। জাফরানের মধ্যে থাকা উপকরণ প্রাকৃতিক পেইন কিলার হিসেবে কাজ করে। মাসলকে আরাম দেয় জাফরান।

​রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ গর্ভাবস্থায় অনেক সময় মহিলাদের রক্তচাপ বেড়ে যায়। কারণ এই সময় শরীরে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি থাকে। জাফরান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের হৃদ স্পন্দন এর মাত্রা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে রক্তচাপ উঠা নামা লক্ষ্য করা যায়। জাফরান এ রয়েছে পটাশিয়াম এবং প্রসেটিন। যা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। এছাড়াও জাফরান বমি ভাব এবং মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। অল্প পরিমাণে জাফরান খেলে তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। হাই ব্লাড প্রেশার থেকে হাইপারটেনশন হয়, যা গর্ভাবস্থার অন্যতম সমস্যা। এর থেকে মুক্তি পেতে জাফরান সহায়ক হতে পারে।

​হৃদযন্ত্র ভালো রাখেঃ জাফরান হৃদরোগের সমস্যা থেকে রক্ষা করে এমনকি হার্টের রোগ থেকেও রক্ষা করতে পারে। গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলা প্রচন্ড পরিমাণে ফ্যাট জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করেন যা কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যার ফলে কোলেস্টরল বেড়ে গিয়ে হার্টের ক্ষতি করতে পারে। জাফরানে উপস্থিত ট্রাই গ্লিসারাইড কোলেস্টরল লেভেল ঠিক রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে জাফরান। হবু মা ও তাঁর গর্ভস্থ শিশুর হার্ট ভালো রাখে জাফরান। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রাকেও নিয়ন্তণে রাখতে এটি সহায়ক। এছাড়া গর্ভাবস্থার নানা রকম অ্যালার্জি ও সংক্রমণ থেকে মুক্তি দিতেও বিশেষ ভূমিকা আছে জাফরানের।

হজমে সহায়তা করেঃ গর্ভাবস্থায় বেশিরভাগ মহিলা পেটের ব্যথায় ভোগেন। গর্ভাবস্থায় হজমক্ষমতা হ্রাস হয় এবং একটি গর্ভবতী মায়ের এই প্রক্রিয়াটি সহজ করার জন্য কিছু উত্তেজক এজেন্টের প্রয়োজন হতে পারে। জাফরান আপনার পাচনতন্ত্রের রক্ত ​​প্রবাহকে বাড়িয়ে তুলতে পারবে বলে পরিচিত এবং এইভাবে আপনার বিপাককে বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। এটি, পরিবর্তে, আরও ভাল হজমে সহায়তা করে। জাফরান পাচনতন্ত্রের প্রতিরক্ষামূলক আবরণ গঠনের কারণ ঘটায়। এই অতিরিক্ত স্তরটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অ্যাসিডিটি প্রশমিত করে এবং ফোলাভাবকেও কমিয়ে দেয়।

শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা নিরাময় করেঃ জাফরান শ্বাস যন্ত্রের অসুস্থতা নিরাময় করে। জাফরানের এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নাকের শ্বাসনালীকে প্রসারিত করতে সহায়তা করে। এটি ফুসফুসে ফোলাভাব এবং প্রদাহ হ্রাস করে। ফলস্বরূপ, আপনি পরিষ্কারভাবে শ্বাস নিতে পারেন। জাফরান গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে হাঁপানিতে আক্রান্ত রোগীদের ফুসফুস এবং শ্বাসনালীতে উপস্থিত যেকোন প্রতিবন্ধকতা দূর করতে অত্যন্ত সহায়ক।

আয়রনের স্তর বৃদ্ধি করেঃ গর্ভাবস্থাকালীন, আপনি লোহা সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পক্ষে প্রস্তাব দেওয়া হয়, কারণ আপনার দেহের সুস্থ থাকতে লোহার প্রয়োজন। জাফরানের আয়রনের পরিমাণ বেশি এবং এটি আপনার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ও লাল রক্তকণিকা গঠনে সহায়তা করে।

ক্র্যাম্পস থেকে মুক্তি দেয়ঃ গর্ভবতী মহিলার প্রসবের আগে শুরুর দিকে হালকা থেকে শুরু করে মারাত্মক অবধি ক্র্যাম্পস বা খিঁচুনি ঘটে। গর্ভাবস্থার পুরো সময়কালে, হাড় ও পেশীগুলি ক্রমবর্ধমান শিশুকে উপস্থাপনের জন্য প্রসারিত এবং স্থানান্তরিত হয় এবং এটি পেট ও শ্রোণীর জয়েন্টগুলিতে ব্যথা এবং ক্র্যাম্পের কারণ হতে পারে। জাফরান একটি প্রাকৃতিক ব্যথানাশক। এটি পেশীগুলিকে শিথিল করে, যা পেটের ব্যথার উপশম করতে এবং খিঁচুনি প্রশমিত করতে সহায়তা করে।

জাফরানের পুষ্টিগুণ ও উপাদান

জাফরানের পুষ্টিগুণ ও উপাদান গুলো কি কি তা জানতে নিচের তালিকাটি দেখে নিতে পারেন। মুল্যবান এই মশলাটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ম্যাঙ্গানিজ, কপার, আয়রন, ভিটামিন সি সহ ১৫০ টি উপাদান যা কিনা মানব শরীরের অনেক উপকারে আসে। জাফরানে রয়েছে ক্রোসিন যা কিনা শুধুমাত্র খাবারের রংই পরিবর্তন করে না। এই ক্রোসিন মানব শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের কোষ যেমন- ওভারিয়ান, কাসিনোমা, লিউকেময়া প্রভৃতি ধবংস করতে সহয়তা করে থাকে।
 

ক্যালোরি ৩
মোট চর্বি ৬ গ্রাম
সোডিয়াম ১৪৮ মিলিগ্রাম 
মোট কার্বোহাইড্রেট ৬৫ গ্রাম 
ডায়েটারি ফাইবার ৩.৯ গ্রাম
চিনি ০.১ গ্রাম –
প্রোটিন ১১ গ্রাম 
ভিটামিন সি ১.৩ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম ১.৭২৪ মিলিগ্রাম
লোহা ১১.১ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ২৬.৫ মিলিগ্রাম 
ম্যাঙ্গানিজ ২৮.৪ মিলিগ্রাম 

জাফরান খাওয়ার উপকারিতা

জাফরান খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে প্রচুর। প্রাচীন কাল থেকেই জাফরানকে একটি ভেষজ মশলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জাফরান খাওয়ার সব থেকে উৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে রাতের বেলা। বিশেষ করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধের সাথে মধু ও কিশমিশ মিশিয়ে তাতে জাফরান দিয়ে খাওয়া সব থেকে বেশি উপকারী। এতে বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ ও মিনারেল সহ প্রায় ১২০ ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে। নিচে জাফরান এর উপকারিতা গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
জাফরান-খাওয়ার-উপকারিতা
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধঃ জাফরান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি ফ্রি র‍্যাডিকাল এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। জাফরানের অন্য স্বাস্থ্য উপকারিতার মধ্যে এটি একটি। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। জাফরানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্য উপকারী হতে পারে। এর নির্যাস থেকে ক্রোসিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যা স্মৃতিশক্তি এবং শেখার ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে। জাফরানের একটি স্বতন্ত্র স্বাদ এবং সুগন্ধ রয়েছে। জাফরান ফুলের পাপড়িতে কেম্পফেরল পাওয়া যায়। এটি প্রদাহ কমায়।

মন মেজাজ উন্নত করেঃ জাফরান আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। জাফরানের নির্যাস মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম জাফরান গ্রহণের ফলে এমন প্রভাব দেখা দিতে পারে যা ইমিপ্রামাইন এবং ফ্লুওক্সেটিন ড্রাগ চিকিত্সার অনুরূপ। মানুষ ড্রাগ চিকিত্সার তুলনায় জাফরান ব্যবহার করে কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনুভব করে। হতাশা দূর করার জন্য জাফরান কার্যকর।

ক্যানসার প্রতিরোধ করেঃ জাফরান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ। যা ফ্রি র‍্যাডিকালগুলোকে নিরপেক্ষ করতে সহায়তা করে। ফ্ল্যাভোনয়েডগুলো একটি রাসায়নিক। এটি উদ্ভিদকে রোগ এবং ছত্রাক থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। টেস্ট টিউব স্টাডিতে দেখা গেছে যে, জাফরান এবং এর যৌগগুলি কোলন ক্যানসার কোষগুলোকে মেরে ফেলে। এই প্রক্রিয়াতে স্বাস্থ্যকর কোষগুলো আমাদের দেহে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় ফুসফুস, স্তন, প্রোস্টেট, জরায়ু এবং অন্যান্য ক্যানসার প্রতিকার হয়।

পিএমএস লক্ষণগুলিতে সহায়তা করেঃ পিএমএস হল প্রাক মাসিক সিন্ড্রোম। মহিলাদের পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে মানসিক, শারীরিক এবং সংবেদনশীল লক্ষণগুলো পিএমএস । জাফরান পিএমএসের লক্ষণগুলো মোকাবেলায় কার্যকর হতে পারে। কিছু গবেষণা অনুসারে এটি পিএমএস সম্পর্কিত হতাশার লক্ষণগুলো কমাতে সাহায্য করে। ২০-৪৫ বছর বয়সী মহিলাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম জাফরানের নির্যাস গ্রহণ করলে তৃষ্ণা, মাথাব্যথা, এবং বিরক্তির মতো পিএমএস লক্ষণগুলি কমে যায়। ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে এটি একটি ভাল বিকল্প হতে পারে।

হার্টের জন্য ভালোঃ জাফরানে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। এরা রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে। যার ফলে আপনি হৃদরোগ থেকে সুরক্ষা পাবেন। জাফরান শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে থাকে। জাফরানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলো হৃদরোগের জন্য প্রতিরক্ষামূলক উপাদান হিসাবে কাজ করতে সহায়তা করতে পারে। গরম পানিতে কয়েকটি জাফরান ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এটি চা হিসাবে পান করতে পারেন। জাফরান মাংস, শাকসবজি বা বেকড পণ্য রান্না করার সময়ও ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো খাবারের স্বাদ আরও বাড়িয়ে তুলবে। খাবারে হলুদ-কমলা রঙ যুক্ত করবে।

যৌনাকাঙ্খা বাড়ায়ঃ যৌনতার ইচ্ছার অনুঘট হিসেবে কাজ করে জাফরান। এটি প্রাকৃতিক উপাদান বলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম। খাবারে জাফরান দিলে তা চাপ কমাতে সাহায্য করে, যৌনতার ইচ্ছাও বাড়ায়। এটি রক্তে ইস্ট্রোজেন, সেরোটোনিন এবং অন্যান্য ফিল-গুড হরমোন উৎপাদন বৃদ্ধি করে। জাফরান উদ্বেগ হ্রাসে সহায়তা করে।

হতাশা দূর করেঃ জাফরান আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। আচরণগত এবং মস্তিষ্ক বিজ্ঞানের জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, জাফরানের নির্যাস মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে ভূমিকা পালন করে। অন্য একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে, প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম জাফরান গ্রহণের ফলে এমন প্রভাব দেখা দিতে পারে। যা ইমিপ্রামাইন এবং ফ্লুওক্সেটিন ড্রাগ চিকিত্সার অনুরূপ। মানুষ ড্রাগ চিকিৎসার তুলনায় জাফরান ব্যবহার করে কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনুভব করে। হতাশা দূর করার জন্য জাফরান কার্যকর।

স্বাস্থ্যের উন্নত করেঃ নিয়মিত জাফরান খেলে তা হরমোন উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ আপনার শরীর যদি রোগা হয় বা সব সময় অসুখ লেগেই থাকে তাহলে জাফরান সেবন আপনার স্বাস্থ্য উন্নত করে। এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান দেহের সকল সমস্যা সমাধান করে এবং শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ যেহেতু জাফরান হরমোন উদীপ্ত করে এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে সেহেতু এটি মস্তিষ্কের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল তারা জাফরান খেলে তাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

অবসাদ দূর করেঃ অবসাদ দূর করার জন্য আমরা বিভিন্ন প্রকারের টোটকা ব্যবহার করে থাকি। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া তেমন আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। এই ক্ষেত্রে নিয়মিত জাফরান খেলে তা মস্তিষ্কের নিউরন সচল করে যা মানুষিক অবসাদ এবং দুশ্চিন্তা দূর করে দেয়।

রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করেঃ জাফরানে পরিমাণ মত পটাশিয়াম থাকে যা শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। এতে ব্লাড সার্কুলেশন কোনো ঝামেলা ছাড়াই সম্পন্ন হয়। এতে দেহের মরা কোষ উজ্জীবিত হয়। অন্যদিকে সঠিক মাত্রায় রক্ত চলাচল হওয়ায় তা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ জাফরান মশলায় ব্যাপক পরিমাণ আয়রন থাকে। এই খনিজ উপাদান রক্ত পরিশুদ্ধ করে এবং রক্ত তৈরি হওয়া বৃদ্ধি করে। এতে দেহের রক্তস্বল্পতা দূর হয় এবং রক্তের কারণে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা নিরসন হয়।

অনিদ্রা দূর করেঃ অনিদ্রা স্বাভাবিক জীবন যাপন বিঘ্নিত করে। কারণ যখন ঘুম হয় না তখন দুশ্চিন্তা অন্তরে বাসা বাঁধে। এতে শরীর এবং স্বাস্থ্য দুটোই খারাপ হতে থাকে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য জাফরান অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখেঃ আমরা জানি জাফরান দেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে এতে থাকা পটাশিয়াম হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে। তাছাড়া হৃৎপিণ্ডের পেশি এবং কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্য নিয়মিত জাফরান খাওয়া যেতে পারে। কারণ জাফরান যেমন রক্ত পরিষ্কার করে তেমনি এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে ব্লাড সার্কুলেশন নিয়ন্ত্রণ করে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করেঃ অন্যান্য প্রাকৃতিক উপকারী উদ্ভিদের মত জাফরান কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ করে এই মশলা দেহের জন্য ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল দূর করে এবং উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে।

শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করেঃ সর্দি এবং কাশির যে ধরনের সমস্যা হয় যেমন অ্যাজমা ও পারটুসিস দূর করতে জাফরান খাওয়া যেতে পারে। কারণ সর্দি-কাশির সমস্যা দূর করতে এই মশলা অনেক ভালো কাজ করে।

বিলম্বিত বয়ঃসন্ধিঃ যেসব কিশোরীর ঋতুস্রাব দেরিতে হয় অথবা এ ক্ষেত্রে সমস্যা হয়, তাদের মাসিক নিয়মিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে জাফরান। এ ক্ষেত্রে এক চিমটি গুঁড়ো জাফরান এক টেবিল চামচ দুধে মিশিয়ে খেলে হরমোন সচল হয়। এবং কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়।

মাসিকের ব্যথা উপশম করেঃ মেয়েদের মাসিকের ব্যথা উপশম করতে জাফরান ব্যবহার করা হয়। এটি মাসিকের পূর্ববর্তী সময়ে সেবন করলে তা সম্ভাব্য ব্যথা কমিয়ে দেয়।

চোখের ছানি রোধ করেঃ জাফরান নিয়মিত খেলে তা চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ছানি পরা ও দুর্বল দৃষ্টি শক্তি নিরাময় করতে সহায়তা করে।

আসিডিটি দূর করেঃ এই মশলা হজম সমস্যা দূর করে এবং পেটের পিরা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত গাস দূর করে। এতে আসিডিটি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার

রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। জাফরান ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার সাথে সাথে বলিরেখা, ব্রণের দাগ, রোদে পোড়া দাগ দূর করে থাকে। খেয়াল করলে দেখবেন, আজকাল অনেক ভালো ব্রান্ডের ক্রিমেও জাফরানের নাম উল্লেখ থাকে। আসুন, আজ তাহলে জেনে নিই জাফরনের কিছু ফেসপ্যাকের কথা।

জাফরান ও কাঁচা দুধের প্যাকঃ জাফরানে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে যা ব্রণ দূর করে ত্বকের কালো দাগ দূর করে থাকে। জাফরান এবং কাঁচা দুধের ফেসপ্যাক বানাতে লাগবে ৫-৬ টা জাফরান দানা, ১/২ কাপ কাঁচা  জাফরান দুধ এবং কাঁচা দুধ। এই উপাদানগুলো একত্রে মিশিয়ে ২-৩ ঘন্টা রাখুন। এই প্যাক ভাল করে মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।এই ফেসপ্যাক সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বক ভিতর থেকে উজ্জ্বল করে থাকে।

জাফরান এবং চন্দনের প্যাকঃ এই ফেসপ্যাকটি তৈলাক্ত এবং সেনসিটিভ ত্বকের জন্য অনেক বেশি কার্যকরী। এটি রোদে পোড়া দাগ, ব্রণের দাগ দূর করে থাকে। এছাড়া ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে থাকে। নিয়মিত ব্যবহারে এটি ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে থাকে। জাফরান এবং চন্দনের ফেসপ্যাক তৈরি করতে লাগবে- ২-৩ টা জাফরান , ১ চা চামচ চন্দনের গুঁড়া, ২ টেবিল চামচ কাঁচা দুধ চন্দন, কাঁচা দুধ। এই উপাদান গুলো ভাল করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। পেষ্ট যেন ঘন হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। এই প্যাকটি মুখে ভাল করে ম্যাসাজ করে লাগান। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন ব্যবহার করুন ভাল ফলাফল পাওয়ার জন্য।

জাফরান এবং মধুর প্যাকঃ মধু ও জাফরানের প্যাক ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি বলিরেখা পড়া থেকে ত্বককে রক্ষা করে। মধু ও জাফরানের প্যাক বানাতে লাগবে- ৪-৫ দানা জাফরান, ২-৩ টেবিল চামচ মধু জাফরান এবং মধু ভাল করে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। মুখে ভাল করে লাগান। শুকিয়ে গেলে ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

জাফরান ও আমন্ড মাস্কঃ আমন্ড এর ন্যাচারাল অয়েল আর জাফরানের এন্টি অক্সিডেন্ট মিলে স্কিনের ডেড সেলস, ডার্ক সার্কেল, ব্ল্যাক স্পট দূর করে স্কিনকে সফট আর হেলদি করে। জাফরান ও আমন্ড এর ফেসপ্যাক বানাতে প্রথমে আমন্ড এবং জাফরান একসাথে ব্লেন্ড করে নিন। এবার এতে অল্প একটু মধু মিশিয়ে ফেইসে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

জাফরান ও গোলাপজলঃ প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন গোলাপজল ও জাফরানের মিশ্রণ। টোনার ত্বকের মরা চামড়া ও অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব দূর করতে পারে। ২ টেবিল চামচ গোলাপজলে দুই চিমটি জাফরান ভিজিয়ে রাখুন ১ ঘণ্টা। তুলা ডুবিয়ে চেপে চেপে মুছে নিন ত্বক। চাইলে এই টোনার ফ্রিজে রেখেও ব্যবহার করতে পারবেন।

জাফরান দুধের উপকারিতা

জাফরানের সাথে দুধ মিশিয়ে পান করলে বেশ কিছু সম্ভাব্য উপকার পাওয়া যায়। জাফরান একটি মশলা জাতীয় উপাদান যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এটি ফ্রি র‌্যাডিকেল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। মশলাটিতে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যও রয়েছে এবং এটি কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে।

উপরন্তু, জাফরান হজম উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে এবং মেজাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। দুধ-জাফরান পুরুষের যৌনক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যা মেটাতেও ভাল কাজ করে। শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়াতেও দুধ-জাফরান সাহায্য করে। দুধের মধ্যে ক্যালশিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন এ, ডি, কে এবং ই সহ ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, আয়োডিন এবং অনেক খনিজ পদার্থ থাকে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ জাফরান দুধ ত্বকের রং উন্নত করতে এবং একটি প্রাকৃতিক আভা প্রদানের ক্ষমতার জন্য বিখ্যাত। জাফরানে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ত্বকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলিকে নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে। উপরন্তু, জাফরানের প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং লালভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে।

উর্বরতা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য বাড়ায়ঃ জাফরান দুধ ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। জাফরানের অ্যাফ্রোডিসিয়াক বৈশিষ্ট্যগুলি লিবিডো এবং যৌন ক্রিয়াকে উন্নত করতে পারে। অধিকন্তু, জাফরানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি পুরুষদের মধ্যে শুক্রাণুর গুণমান এবং গতিশীলতা উন্নত করতে পারে, যখন মহিলাদের ক্ষেত্রে, এটি হরমোনের ভারসাম্যহীনতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, সম্ভাব্য গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।

শিথিলতা এবং ভাল ঘুমের প্রচারঃ জাফরানের মতো যৌগ রয়েছে ক্রোসিন এবং safranal যা প্রশমক প্রভাব দেখায়, শিথিলতা এবং ভাল ঘুমের প্রচার করে। ঘুমানোর আগে জাফরান দুধ পান করা মনকে শান্ত করতে এবং প্রশান্তি আনতে সাহায্য করে, ঘুমিয়ে পড়া সহজ করে তোলে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ একটুতেই ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশির সমস্যায় যারা ভোগেন নিয়মিত জাফরান মেশানো দুধ খেয়ে দেখতে পারেন। ভাইরাল কিংবা ব্যাক্টেরিয়াল রোগ ঠেকিয়ে রাখতেও সাহায্য করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এই দুধ।

ওজন কমানোর জন্য মেটাবলিজম বাড়ায়ঃ জাফরান দুধ বিপাক বৃদ্ধি এবং ক্ষুধা হ্রাস করে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। জাফরানের সক্রিয় যৌগগুলি শরীরের বিপাকীয় হার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, যার ফলে ওজন কমানোর প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা সমর্থন করেঃ জাফরান দুধ প্রায়ই গর্ভাবস্থায় তার সম্ভাব্য সুবিধার জন্য সুপারিশ করা হয়। এটি মেজাজের পরিবর্তন, সকালের অসুস্থতা কমাতে এবং হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। যাইহোক, গর্ভাবস্থায় জাফরান দুধ খাওয়ার আগে একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করা অপরিহার্য যাতে এটি মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই নিরাপদ।

হজম স্বাস্থ্যের উন্নতিঃ জাফরান দুধ হজমের এনজাইমের নিঃসরণ প্রচার করে এবং হ্রাস করে হজমের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে পারে।. এর প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টকে প্রশমিত করতে পারে, যা বদহজম এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো অবস্থা থেকে ত্রাণ প্রদান করে।

সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য উপকারীঃ গোল্ডেন মিল্ক, একটি শব্দ যা প্রায়ই জাফরান এবং হলুদের মতো অন্যান্য মশলা দিয়ে মিশ্রিত দুধকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়, এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে। এটি অনাক্রম্যতা বাড়াতে পারে, জ্ঞানীয় কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকে সমর্থন করতে পারে। জাফরান এবং হলুদের সম্মিলিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলি সোনার দুধকে সামগ্রিক সুস্থতার জন্য একটি শক্তিশালী অমৃত করে তোলে।

জাফরান সম্পর্কিত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর

প্রশ্নঃ গর্ভবতী মহিলা জাফরান খেলে কি হয়?

উত্তরঃ
 জাফরান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় হৃদযন্ত্রের উপর চাপ বেড়ে যায়। জাফরান হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় পিঠ ব্যথা, পেট ব্যথা ইত্যাদি ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা।

প্রশ্নঃ জাফরান খেলে কি ত্বক ফর্সা হয়?

উত্তরঃ
 জাফরানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। যা ত্বক উজ্জ্বল করতে ও লাবণ্য ফেরাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ত্বকের বলিরেখা দূর করতেও সাহায্য করে কেশর দুধ। নিয়মিত জাফরান দুধ খেলে ত্বকের কালচে ভাব দূর হয়ে, লাবণ্য ফিরবে।

জাফরানের অপকারিতা

জাফরান সাধারণত ব্যবহারের জন্য নিরাপদ, কিন্তু সঠিক উপায়ে ব্যবহার না করলে এটি কিছু সমস্যা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। জাফরান ওষুধ হিসাবে গ্রহণ করলে নিরাপদ হতে পারে তবে কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন শুষ্ক মুখ, অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া, মাথাব্যথা, পেটের সমস্যা, বমি বমি ভাব, ইত্যাদি হতে পারে। চলুন আর দেরি না করে জাফরানের অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
জাফরানের-অপকারিতা
  • অতিরিক্ত জাফরানযুক্ত খাবার খেলে পেটের সমস্যা, মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাব হয়ে থাকে।
  • জাফরান ত্বকে ব্যবহার করার আগে সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ জাফরান ব্যবহারের ফলে অনেকের এলার্জি হতে পারে।
  • আপনার যদি অ্যালার্জি থাকে তবে জাফরান না খাওয়াই ভালো। এতে আপনার চোখ, নাক, ঠোঁট দিয়ে রক্তপাত হতে পারে।
  • অতিরিক্ত জাফরান খেলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে জরায়ুর সংকোচন সমস্যা হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় জাফরান খেতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে গর্ভাবস্থায় কোন মাস থেকে জাফরান খাওয়া সঠিক হবে।
  • গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে জাফরান খেলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে কারণে গর্ভাবস্থায় পঞ্চম মাসের পর থেকে জাফরান খাওয়া শুরু করতে পারেন।
  • মাত্রাতিরিক্ত জাফরান খাওয়ার ফলে গর্ভাবস্থায় মহিলাদের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। যার ফলে জন্ডিস,ডায়রিয়া, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় মাত্রা অতিরিক্ত জাফরান খেলে জরায়ু উদ্দীপিত করে অকাল প্রসব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে শেষকথা

গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে আশাকরছি জানতে পেরেছেন। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের জন্য জাফরান খুবই উপকারী। কেননা জাফরানে রয়েছে ঔষধি গুণাবলী। তাই জাফরান খাওয়া শরীরের জন্য ও মানসিক দিক দিয়েও উপকার রয়েছে। এবং জাফরান শুধু উপকারী নয় অপকারও রয়েছে। কেননা গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মাত্রায় জাফরান খাওয়া ফলে শারীরিক ও মানসিক উভয়ের বিভিন্ন সমস্যার হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় জাফরান খেতে হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url