রূপচর্চায় মুলতানি মাটি ব্যবহারের নিয়ম
রূপচর্চায় মুলতানি মাটি ব্যবহারের নিয়ম ও ত্বকের যত্নে মুলতানি মাটির উপকারিতা
সহ আরও অনেক কিছু জানতে পারবেন এই আর্টিকেলে। রূপচর্চায় অর্গানিক উপাদানগুলোর
তুলনা অপরিসীম। মুলতানি মাটি এমনই একটি অর্গানিক উপাদান যা বহু যুগ ধরে সৌন্দর্য
চর্চায় ব্যবহার হয়ে আসছে।
অর্গানিক উপাদানগুলো এখনো বাজারজাত পণ্য বা প্রোডাক্ট এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি
কার্যকরী। তাই রূপচর্চায় এর ভূমিকাও অনন্য। মুলতানি মাটি ত্বকের গভীর থেকে ময়লা
শোষণ করে আপনার ত্বককে করে উজ্জ্বল ও সজিব। ত্বকের পরিচ্ছন্নতার কাজে মুলতানি
মাটি হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই নির্দ্বিধায় ব্যবহার করুন।
পেইজ সূচিপত্রঃ রূপচর্চায় মুলতানি মাটি ব্যবহারের নিয়ম
রূপচর্চায় মুলতানি মাটি ব্যবহারের নিয়ম
রূপচর্চায় মুলতানি মাটি ব্যবহারের নিয়ম জানতে চান অনেকেই প্রাচীনকাল থেকেই
রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে মুলতানি মাটি। ত্বকের দাগ ও তেলতেলে ভাব দূর করতে
এটি দারুণ কার্যকর। শুষ্ক কিংবা তৈলাক্ত ত্বক যে কোনও ধরনের ত্বকের জন্যই
মুলতানি মাটি সেরা। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিয়ে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর
করতে সাহায্য করে। ত্বকের পাশাপাশি চুলের যত্নেও মুলতানি মাটি ব্যবহার করতে
পারেন। জেনে নিন রূপচর্চায় এটি ব্যবহারের কিছু উপায় সম্পর্কে।
আরও পড়ুনঃ চন্দন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
- উজ্জ্বল ও পরিষ্কার ত্বকের জন্য ১ চা চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে প্রয়োজন মতো দুধ মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। মুখ ও গলার ত্বকে মিশ্রণটি মেখে অপেক্ষা করুন ১০ মিনিট। কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।দুধের সঙ্গে মুলতানি মাটি মিশিয়ে লাগালে মুখে গোলাপি আভা আসে। এই দুটির মিশ্রণ আপনার শুষ্ক ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। এটি পিএইচ স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে ।
- ব্ল্যাক হেডস ও হোয়াইট হেডস দূর করতে কাজুবাদাম বাটা ও গ্লিসারিন এর সাথে মুলতানি মাটি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখের ত্বকে স্ক্রাব করতে পারেন।
- ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে মুলতানি মাটির সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে দিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এবং শুষ্ক ত্বকের জন্য মুলতানি মাটির সঙ্গে সামান্য দুধ যুক্ত করতে পারেন।
- আপনার ত্বক যদি অতিরিক্ত শুষ্ক হয়, সে ক্ষেত্রে মুলতানি মাটি ও গ্লিসারিন কার্যকর হবে। ১ চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন দিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে ১০ মিনিট। তার পর ভাল করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেললেই ত্বক আর্দ্র ও নরম হবে।
- আপানার মুখের ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে নিম পাতার পেস্ট এর সাথে মুলতানি মাটি মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ৪ দিন চাইলে প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন।
- হাত এবং পায়ের রং উজ্জ্বল করতে মুলতানি মাটির সাথে বেসন ও কাঁচা হলুদের পেস্ট মিশিয়ে হাত এবং পায়ে লাগিয়ে দিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
- চোখের চারপাশের কালো ছোপ দূর করতে মুলতানি মাটির সঙ্গে হলুদ ও টমেটোর রস মিশিয়ে চোখের চারপাশে লাগান।
- পানির সাথে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করতে পারেন এতে চুল পরিষ্কার হবে এবং চুল থাকবে ঝলমলে।
- এছাড়াও নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে হেয়ার প্যাক হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।
- চুলের গোড়া মজবুত করে ও মাথার তালুর যত্ন নেয় মুলতানি মাটি। আধা কাপ রিঠা গুঁড়ার সঙ্গে আধা কাপ মুলতানি মাটি, ১ চা চামচ লেবুর রস ও পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। ৩০ মিনিট রেখে দিন হেয়ার প্যাকটি যেন মুলতানি মাটি পানিতে গলে যায়। মাথার তালুতে ঘষে ঘষে লাগান মুলতানি মাটির মিশ্রণ। ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন চুল। সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলে চুল হবে মজবুত ও ঝলমলে।
- রুক্ষ এবং প্রাণহীন চুলের জন্য ৪ চা চামচ মুলতানি মাটি, আধা কাপ টক দই, অর্ধেক লেবুর রস এবং ২ চা চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে সারা চুলে ভালো মত লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে চুল শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করুন।
- প্রাকৃতিক ভাবে সোজা চুল পেতে এক কাপ মুলতানি মাটির সাথে ৫ চা চামচ চালের গুঁড়া এবং একটি ডিমের সাদা অংশ ভালো মত মেশান। প্রয়োজনে একটু পানি দিন পেস্ট তৈরি করার জন্য। এবার এই মিশ্রণটি চুলের গোঁড়ায় এবং চুলে ভালো মত লাগান এবং লাগানোর সময় একটি মোটা চিরুনি দিয়ে চুল নীচের দিকে আঁচড়াতে থাকুন। শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং এরপর শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে চুল সিল্কি এবং সোজা হবে।
ত্বকের যত্নে মুলতানি মাটির উপকারিতা
ত্বকের যত্নে মুলতানি মাটির উপকারিতা ব্যপক। মুলতানি মাটি জাতীয় পদার্থ এবং এর
বিভিন্ন গুণাগুনের জন্য রূপচর্চায় বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ম্যাগনেসিয়াম
ক্লোরাইডে সমৃদ্ধ এই মুলতানি মাটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা প্রাকৃতিকভাবে দূর করে
ত্বককে ভিতর থেকে সুন্দর করে তোলে। মুলতানি মাটির ব্যবহার ত্বককে উজ্জ্বল করার
সাথে সাথে ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে। ত্বকের যত্নের পাশাপাশি এটি চুলের
যত্নেও সমানভাবে কার্যকরী।
ত্বকের যত্নে মুলতানি মাটির কিছু গুণাগুন সম্পর্কে জানাবো। মুলতানি মাটি ত্বকের যত্নের জন্য একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে অসাধারণ কাজ
করে। এর সঠিক ব্যবহার আপনার ত্বকে স্বাভাবিক জেল্লা ফেরত আনতে সাহায্য করবে।
তবে, সব সময় মনে রাখবেন যে ত্বকের ধরন অনুযায়ী উপকরণ ব্যবহার করাই শ্রেয়।
জেনে নিন ত্বকের যত্নে মুলতানি মাটির কি কি উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কেঃ
১. মুলতানি মাটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিতে সাহায্য করে। ফলে তৈলাক্ত
ত্বকের যত্নে এর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। যাদের ত্বক অয়েলি তারা মুলতানি মাটি এবং
গোলাপ জল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে লাগান। এই প্যাকটি তেল নিয়ন্ত্রণে খুব
ভালো কাজ করে আর যাদের ত্বক শুষ্ক তারা মুলতানি মাটির সাথে কাঁচা দুধ এবং আমন্ড
পেস্ট মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। তবে ত্বক বেশি শুষ্ক হলে মুলতানি মাটি ব্যবহার
না করাই ভালো।
২. মুলতানি মাটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং রক্তপ্রবাহ বাড়ায়। এটি
প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। ২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি, ১
টেবিল চামচ ওটস এবং ২ টেবিল চামচ দুধ মিশিয়ে একটি স্ক্রাব তৈরি করুন। এটি
ত্বকে প্রয়োগ করে হালকাভাবে ম্যাসাজ করুন। এরপর সাধারণ ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ
ধুয়ে ফেলুন।
৩. মুলতানি মাটি চোখের চারপাশের কালো ছোপ দূর করতে সাহায্য করে। ১ টেবিল চামচ
মুলতানি মাটি, ১/২ টেবিল চামচ হলুদ এবং ১ টেবিল চামচ টমেটোর রস মিশিয়ে একটি
পেস্ট তৈরি করুন। এটি চোখের চারপাশে প্রয়োগ করুন। শুকানোর পর একটি নরম সুতির
কাপড় দিয়ে হালকা হাতে মুছে ফেলুন ও মুখ ধুয়ে নিন।
৪. যাদের তৈলাক্ত ত্বক, তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী। এটি ব্ল্যাকহেডস,
হোয়াইটহেডস এবং ব্রণের দাগ কমাতে সাহায্য করে। ২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি
এবং ২ টেবিল চামচ গোলাপজল মিশিয়ে একটি ফেসিয়াল মাস্ক তৈরি করুন। সপ্তাহে
২-৩ বার এটি ব্যবহার করলে ব্রণের দাগ এবং ওপেন পোর কমে আসবে।
৫. শুষ্ক ত্বকেও মুলতানি মাটি ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এতে কিছু তেল যোগ
করা উচিত। ২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি এবং ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল বা জোজবা
অয়েল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এটি ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে
ফেলুন।
৬. ব্রণের দাগ দূর করতে পরিমাণ মত মুলতানি মাটি, টমেটোর রস, কাঁচা হলুদ
এবং স্যানডালউড পাউডার মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এটি মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট
রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি খুব ভালো ক্লিনজার হিসেবেও কাজ করে। সপ্তাহে
২-৩ দিন এটি ব্যবহার করুন। ধীরে ধীরে মুখের দাগ দূর হয়ে ত্বক উজ্জ্বল এবং
সুন্দর হবে।
৭. মুখে সূর্যের পোড়া দাগ বা পিগমেনটেশন দূর করতেও মুলতানি মাটি সমানভাবে
কার্যকরী। আমন্ড অয়েল বা ক্যাস্টর অয়েল এর সাথে মুলতানি মাটি মিশিয়ে মুখে
লাগান। এটি ত্বকের পিগমেনটেশন দূর করার সাথে সাথে ত্বক নরম করতেও সাহায্য করে।
৮. মুলতানি মাটি স্ক্রাব হিসেবেও খুব ভালো কাজ করে। আমন্ড কিছুটা গুঁড়া করে এর
সাথে গ্লিসারিন এবং এক চা চামচ মুলতানি মাটি মিশিয়ে স্ক্রাব হিসেবে হালকাভাবে
ঘষুন। এই স্ক্রাবটি কনুই বা ঘাড় থেকে কালো দাগ তুলে ফেলতে হেল্প করতে। সামান্য
চিনি দিয়ে নাকের দুইপাশে ঘষলে ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইট হেডস দূর করতে কার্যকরী
ভুমিকা পালন করবে।
৯. এটি মুখের রোমকূপের ময়লা ভিতর থেকে পরিষ্কার করে যার ফলে ব্রণের সংক্রমণ
কমে যায়। এছাড়াও এর ফলে ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে আরও
কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
১০. ত্বককে বার্ধক্যের ছাপ থেকে রক্ষা করতে এক চা চামচ মুলতানি মাটির সাথে এক
চা চামচ টক দই এবং একটি ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এবার এটি সারা
মুখে ভালো মত লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ত্বক টানটান করে
এবং স্কিন টোন সমান করতে সাহায্য করে।
১১. ব্রণের সমস্যা যদি খুব বেশি হয়ে থাকে তাহলে কিছু নিম পাতা বেটে মুলতানি
মাটির সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। ১০-১৫ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে
ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের সমস্যা কমে যাবে।
১২.অনেকেরই একটা কমন সমস্যা হল যে হাত পায়ের রঙ মুখের রঙ থেকে কালো হয়। এই
সমস্যা সমাধানে পরিমাণ মত মুলতানি মাটি, বেসন এবং কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে প্যাক
তৈরি করুন। এবার এই মিশ্রণটি হাত পায়ে ভালো মত লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট বা শুকানো
পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন
গোসলের আগে এটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি হাত পায়ের ত্বক উজ্জ্বল এবং নরম করে।
রূপচর্চায় মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক
রূপচর্চায় মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক এর সাথে অন্য কিছুর তুলনা হয় না। ত্বকের
উপরের অংশে জমে থাকা তেল, ময়লা এবং টক্সিন দূর করতে মুলতানি মাটির তুলনা নেই।
এছাড়া ত্বকের কালচে দাগ ও ব্রণ দূর করতে মুলতানি মাটির ফেস প্যাক নিয়মিত
ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালুমিনিয়াম সিলিকেট, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড সমৃদ্ধ এই
মাটি ত্বকে নিয়ে আসে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা। কিভাবে ব্যবহার করবেন মুলতানি মাটির
ফেসপ্যাক জেনে নিনঃ
আরও পড়ুনঃ শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়
প্রথমে মুখ ক্লিনজিং করে নিন। তারপরে নীচে উল্লিখিত পছন্দের ফেসপ্যাক ধীরে
ধীরে মুখে লাগান। দশ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপরে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে মাত্র
১ দিন এই ফেসপ্যাক লাগালেই উপকার পাবেন। আজকে জানবো ব্রণ এবং ব্রণের দাগ দূর
করতে মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক ব্যবহারের নিয়ম।
মুলতানি মাটি, নিমের গুঁড়া মধু ও গোলাপজলঃ প্রথমে ২ টেবিল
চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু ও ১ টেবিল চামচ নিমের গুঁড়া
মেশান। কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিন। পরিমাণ মতো গোলাপজল দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
ফেসপ্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে ২/৩ বার ব্যবহার করলে দ্রুত ফল পাবেন।
মুলতানি মাটি, শশা, গোলাপ জলের প্যাকঃ শশা খোসা ছাড়িয়ে রস বার
করে নিন। এর সঙ্গে দুই চা চামচ মুলতানি মাটি ও এক চা চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে
ঘন মিশ্রণ তৈরি করে মুখ ও গলায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে
ধুয়ে নিন। এই প্যকটি ব্যবহার করলে ত্বকের ট্যান দূর হয়, জেল্লাও বাড়ে।
মুলতানি মাটি, গোলাপ জল ও দুধঃ মুলতানি মাটি ত্বককে
এক্সফোলিয়েট করতে সাহায্য করে। দুধ ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে। ব্রণ, ফুসকুড়ির
সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এই ফেসপ্যাক। ২ চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে ১
চামচ দুধ ও ১ চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। এই ফেসপ্যাক ত্বকে মেখে ১৫ মিনিট
অপেক্ষা করুন। তার পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাক ত্বকের আর্দ্রতা ফেরাতে
সাহায্য করবে।
মুলতানি মাটি, কমলালেবুর খোসা ও দুধের ফেস প্যাকঃ এই ফেস প্যাকটি
তৈরি করতে এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটি, এক টেবিল চামচ কমলালেবুর খোসা গুঁড়া
ও দুই টেবিল চামচ দুধ প্রয়োজন হবে। সকল উপাদান মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে,
গলায় ও হাতে ম্যাসাজ করে লাগিয়ে নিতে হবে। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানিতে
মুখ-হাত ধুয়ে নিতে হবে। এই ফেস প্যাকটি রোদেপোড়া ভাব দূর করার পাশাপাশি
এক্সফলিয়েশনের কাজও করবে। তাই সপ্তাহে একদিন ব্যবহারই যথেষ্ট।
মুলতানি মাটি, টোম্যাটো, বেসনের প্যাকঃ অতিরিক্ত তেল শুষে
ত্বকের উজ্জ্বল ভাব ফিরিয়ে আনতে এই প্যাকটি ভীষণ উপকারী। দুই চা চামচ
মুলতানি মাটি, এক চা চামচ বেসন ও একটি টোম্যাটোর রস একসঙ্গে মিশিয়ে নিন।
মুখে গলায় এই প্যাক ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ঠান্ডা জলে ধুয়ে নিন।
মুলতানি মাটি, টোম্যাটো, টক দইঃ অতিরিক্ত তেল শুষে ত্বকের
উজ্জ্বল ভাব ফিরিয়ে আনতে এই প্যাকটি ভীষণ উপকারী। দুই চা চামচ মুলতানি
মাটি, এক চা চামচ টক দই এবং এক টেবিল চামচ টোম্যাটোর রস একসঙ্গে মিশিয়ে
নিন। মুখে গলায় এই প্যাক ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ঠান্ডা জলে ধুয়ে নিন।
মুলতানি মাটি, অ্যালো ভেরা জেলের প্যাকঃ দুই চা চামচ মুলতানি
মাটির সঙ্গে এক চামচ টেবিল চামচ অ্যালো ভেরা জেল আর এক চামচ গোলাপ জল
মিশিয়ে নিন। এই প্যাক মুখে, গলায় ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ব্রণর সমস্যা থেকে ত্বকে কালচে ছোপ— সব সমস্যায় দারুণ কাজ দেয় এই
ফেসপ্যাকটি।
মুলতানি মাটি, শসা ও মধুর ফেস প্যাকঃ ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য
মুলতানি মাটি ও শসার ফেস প্যাক সবচেয়ে উপকারী। এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটি,
মাঝারি আকৃতির একটি শসার রস ও এক চা চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে।
তৈরিকৃত পেস্টটি মুখে ও গলায় ম্যাসাজ করে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর
স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে একদিন এই ফেস প্যাক
ব্যবহার করতে হবে।
আসল মুলতানি মাটি চেনার উপায়
অনেক অসাধু ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় লাভ করার জন্য নকল মুলতানি মাটি বিক্রি
করে থাকেন। যেগুলো অনেক ক্যামিকেল দিয়ে বানানো হয় এবং না বুঝে কিনে
ব্যবহার করার ফলে আমরা ধরে নেই যে মুলতানি মাটি আমাদের ত্বকে স্যুট করছেনা
বা এটি আপনার ত্বকে আরো খারাপ রিয়েক্ট করছে। তাহলে বুঝাই যাচ্ছে আসল
মুলতানি মাটি চিনে কিনা টা কতটা জরুরি।
মুলতানি মাটির প্রকারঃ মুলতানি মাটি দুই প্রকারেই পাওয়া যায়
বাজারে। আস্তো মাটি এবং মাটির গুড়ো হিসেবে। মুলতানি মাটি অনেক নরম, ছোট
ছোট দানাদার একটি মাটি। এটি হাতে নিলে কিছুটা গুড়ো হাতের সাথে লেগে যায়
যা ঝেড়ে ফেলে দিলে উড়ে যায় ঠিকই কিন্তু এর হালকা হোয়াইট কাস্ট হাতে
লেগে থাকে। এবং এর কিছুটা আঠালো ভাব ও হাতে লেগে থাকে।
মুলতানি মাটির রংঃ সাধারণত আমরা রূপচর্চায় যে মুলতানি মাটি ব্যবহার
করি সেটি হলুদ রঙের হয়ে থাকে। তবে কিছু মুলতানি মাটি আছে যেগুলো কালচে বা
ধূসর রংয়ের হয়ে থাকে। তবে এই মুলতানি মাটি গুলো ত্বকের জন্য তেমন উপকারী
না হওয়ায় রূপচর্চায় হলুদ রঙের মুলতানি মাটি ব্যবহার করা হয়।
মুলতানি মাটির ঘ্রাণঃ এর সুন্দর কিছুটা মৃদু একটি গন্ধ আছে এবং এটি
যথেষ্ট ভারী।সাধারণত মুলতানি মাটির তেমন কোন ঘ্রাণ থাকে না। তবে
বাণিজ্যিকভাবে প্যাকেটজাত করার সময় কিছু এক্সট্রা ঘ্রাণ যোগ করা হয়ে
থাকে। তবে আসল মুলতানি মাটির ক্রয় করার সময় খেয়াল রাখবেন এটা যেন কোন
স্ট্রং ফ্লেভারের না হয়। যেসব মুলতানি মাটি মানুষ বানিয়ে থাকেন সেসব হাতে
নেয়ার সাথে সাথে গুড়ো গুড়ো আকারে পড়তে থাকে এবং উৎকট ক্যামিকেল এর গন্ধ
আসে।
মুলতানি মাটির কার্যক্ষমতাঃ সাধারণত আসল মুলতানি মাটি ত্বকের
বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এক সপ্তাহের মধ্যেই দূর করতে সমর্থ্য হয়। তবে আপনার
ব্যবহৃত মুলতানি মাটি যদি নকল হয় তাহলে উল্টো আপনার ত্বক আরো শুষ্ক এবং
রুক্ষ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে এটি ব্যবহার সাথে সাথে বন্ধ করুন।
মুলতানি মাটি দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
মুলতানি মাটির সাথে আরো কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ফেসপ্যাক
তৈরি করা যেতে পারে। নিচে আমরা মুলতানি মাটি দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব:
মুলতানি মাটি, হলুদ গুঁড়ো ও টমেটোর রসঃ চোখের ডার্ক সার্কেল
এবং রোদে পোড়া দাগ দূর করার জন্য পরিমাণমতো মুলতানি মাটির সাথে সামান্য
পরিমাণ হলুদ গুঁড়া এবং কিছুটা টমেটোর রস যোগ করুন। এই মিশ্রণটি সপ্তাহে
অন্তত দুইদিন লাগিয়ে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুতে হবে।
মুলতানি মাটি, পাকা কলা ও মধুঃ পরিমাণ মতো মুলতানি মাটির
সাথে অর্ধেক পরিমাণ পাকা কলা চটকে নিয়ে এর সাথে কয়েক ফোঁটা মধু যোগ
করুন। কয়েকদিন ব্যবহারেই আপনার ত্বকের রং দ্বিগুণ ফর্সা হবে।
মুলতানি মাটি, ওটস, কাঁচা দুধঃ ভেজানো ওটস চটকে নিয়ে তার
সাথে পরিমাণ মতো মুলতানি মাটি এবং সামান্য পরিমাণ কাঁচা দুধ যোগ করুন।
এটি স্ক্রাব হিসেবে সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করতে পারবেন।
মুলতানি মাটি, হলুদ গুঁড়া ও টক দইঃ এক টেবিল চামচ মুলতানি
মাটি এর সাথে সমপরিমাণ টক দই এবং কিছুটা হলুদের গুড়া যোগ করুন। এই
মিশ্রণটি সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে।
মুলতানি মাটি, চন্দনের গুঁড়া, স্যান্ডাল উড অয়েলঃ এক টেবিল
চামচ মুলতানি মাটি এর সাথে হাফ টেবিল চামচ চন্দনের গুঁড়ো এবং কয়েক ফোটা
স্যান্ডাল উড অয়েল যোগ করুন। এই মিশ্রণটি ত্বকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে
উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
মুলতানি মাটি, লেবুর রস, গোলাপ জল ও মধুঃ এক চামচ মুলতানি
মাটি, হাফ চামচ লেবুর রস, ২ চামচ গোলাপ জল এর সাথে কয়েক ফোঁটা মধু যোগ
করে মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে
ত্বক হবে দুধের মত সাদা।
মুলতানি মাটি ও গোলাপজলঃ মুলতানি মাটির সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে
ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। এরপর ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের অতিরিক্ত তেল ও
ব্রণ দূর হবে। মুলতানি মাটি এর সাথে কয়েক ফোটা গোলাপ জল মিশিয়ে সপ্তাহে
তিন দিন মুখে লাগালে মুখে কোন প্রকার ব্রণ অথবা ফুসকুড়ি জাতীয় সমস্যা
থাকে না।
চুলের যত্নে মুলতানি মাটির উপকারিতা
সবাই কম বেশি চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন। চুলের ডগা ফাটা থেকে শুরু করে চুল
পড়ে যাওয়া, চুলের ঠিকমতো বৃদ্ধি না হওয়া এ সব সমস্যায় প্রায়ই নাজেহাল হতে
হয় অনেককে। এ সব কিছুরই প্রতিকার রয়েছে মুলতানি মাটিতে।ত্বকের পাশাপাশি
চুলের যত্নেও মুলতানি মাটি বেশ উপকারী। ত্বকের যত্নের পাশাপাশি চুলের যত্নে
মুলতানি মাটির ব্যবহার চলুন জেনে নেওয়া যাক।
চুল সিল্কি করতেঃ প্রাকৃতিক ভাবে সোজা চুল পেতে এক কাপ মুলতানি মাটির সাথে ৫ চা চামচ
চালের গুঁড়া এবং একটি ডিমের সাদা অংশ ভালো মত মেশান। প্রয়োজনে একটু পানি
দিন পেস্ট তৈরি করার জন্য। এবার এই মিশ্রণটি চুলের গোঁড়ায় এবং চুলে ভালো
মত লাগান এবং লাগানোর সময় একটি মোটা চিরুনি দিয়ে চুল নীচের দিকে আঁচড়াতে
থাকুন। শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং এরপর শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার
দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে চুল সিল্কি এবং সোজা হবে।
অতিরিক্ত চুল পড়া কমাতেঃ পরিবেশ দূষণ, আয়রনযুক্ত পানি ও বেশি
তেলমশলার খাবার খেলে চুল পড়ে যায়। এই অতিরিক্ত চুল পড়া কমাতে ব্যবহার
করুন মুলতানি মাটি। টক দই ও মুলতানি মাটির সঙ্গে গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে
একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার মাথার ত্বকে মিশ্রণটি লাগিয়ে আধঘণ্টা রেখে
শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
চুলের গোড়া মজবুত করতেঃ চুলের গোড়া মজবুত করে ও মাথার তালুর
যত্ন নেয় মুলতানি মাটি। আধা কাপ রিঠা গুঁড়ার সঙ্গে আধা কাপ মুলতানি মাটি,
১ চা চামচ লেবুর রস ও পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। ৩০ মিনিট রেখে দিন
হেয়ার প্যাকটি যেন মুলতানি মাটি পানিতে গলে যায়। মাথার তালুতে ঘষে ঘষে
লাগান মুলতানি মাটির মিশ্রণ। ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন চুল।
সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলে চুল হবে মজবুত ও ঝলমলে।
চুলের আগা ফাটা কমাতেঃ চুলের আগা ফাটলে দেখা যায় চুল বাড়ে না। এ
সমস্যাও কমাবে মুলতানি মাটি। টক দই ও মুলতানি মাটির মিশ্রণ চুলে ভালো করে
লাগান। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
চুলের বৃদ্ধির জন্যঃ চুল কেটেছেন অনেক আগে কিন্তু চুল বাড়ছে না?
সমাধান আছে মুলতানি মাটিতে। অ্যালোভেরা জেল, লেবুর রস ও মুলতানি মাটি
মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে হালকা
শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
রুক্ষ চুলের সমস্যা থেকে বাঁচতেঃ রুক্ষ এবং প্রাণহীন চুলের
জন্য ৪ চা চামচ মুলতানি মাটি, আধা কাপ টক দই, অর্ধেক লেবুর রস এবং ২ চা
চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে সারা চুলে ভালো মত লাগান। ১৫-২০ মিনিট
রেখে চুল শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২ দিন
ব্যবহার করুন।
খুশকির সমস্যা কমাতেঃ শীতকালে খুশকির সমস্যা এমনিতে বেড়ে যায়।
আবার অনেকের সারা বছরই খুশকির সমস্যা থাকে। মুলতানি মাটি ব্যবহার করলে
কমবে খুশকি। ১ টেবিল চামচ মেথি গুঁড়ো ঘণ্টাখানেক পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
তার পরে সেই মেথি বেটে নিয়ে তাতে ৫ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি ও সামান্য
লেবুর রস মেশান। মাথার ত্বকে এ মিশ্রণটি আধঘণ্টা রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে
ধুয়ে ফেলুন।
মুলতানি মাটির অপকারিতা
উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে অনেকে অনেক ধরণের প্রসাধনী সামগ্রী
ব্যবহার করেন। আবার অনেকে কিছু ঘরোয়া উপাদানেই ভরসা রাখেন। এরকমই একটি
উপদান হল, মুলতানি মাটি। ত্বক পরিষ্কার করতে মুলতানি মাটির কার্যকারিতার
কথা সকলেই জানেন। তবে এটা সকলের ত্বকের জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। আবার
ভুলভাবে ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। অনেকেই মুখের ত্বক টানটান ও
উজ্জ্বল করতে সপ্তাহে তিন থেকে চারবার বা প্রতিদিন নিয়মিত মুলতানি মাটি
ব্যবহার করেন।
যার ফলে অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বকে ফুসকুড়ি বা ত্বকের কোষ নিস্তেজ হওয়ার
মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আপনার ত্বক তৈলাক্ত হোক বা শুষ্ক, নিয়মিত
ব্যবহার করা উচিত নয়। মূলত, ত্বকের ধরন ও ঋতু অনুযায়ী প্রসাধনী ব্যবহার
করা উচিত। না হলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হতে পারে। অনেকের কিছু জিনিসে
অ্যালার্জি রয়েছে। সেগুলি জেনে এড়িয়ে চলা উচিত। মুলতানি মাটি কাদের
ব্যবহার করা উচিত নয় জেনে নিনঃ
১। যাদের ত্বক খুব সংবেদনশীল তাদের মুলতানি মাটির ব্যবহার এড়িয়ে চলা
উচিত। কারণ সংবেদনশীল ত্বকে মুলতানি মাটির ব্যবহার বেশি করলে মুখে ফুসকুড়ি
বা ত্বক নিস্তেজ হওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। এছাড়া ত্বকে লালচে ভাব
এবং জ্বালা হওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
২। যাদের ত্বক চটচটে এবং তৈলাক্ত তাদের জন্য মুলতানি মাটির পেস্ট লাগানো
ভালো। কিন্তু, যাদের ত্বক খুব শুষ্ক তাদের এটা বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।
আর এটা ত্বকে লাগালেও তার সঙ্গে এমন কিছু যোগ করতে হবে যা ত্বকে আর্দ্রতা
দেবে। যেমন- মুলতানি মাটির পেস্টে বাদাম তেল, অ্যালোভেরা জেল বা মধুর মতো
জিনিস মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে শুষ্ক ত্বকে লাগাতে পারেন। তবে ত্বকের কোনও
চিকিৎসা চললে মুলতানি মাটি লাগানোর আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
৩। অনেকেই মুখের ত্বক টানটান ও উজ্জ্বল করতে সপ্তাহে তিন থেকে চারবার বা
প্রতিদিন নিয়মিত মুলতানি মাটি ব্যবহার করেন। কিন্তু এর প্রকৃতি গরম। যার
ফলে অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বকে ফুসকুড়ি বা ত্বকের কোষ নিস্তেজ হওয়ার মতো
সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আপনার ত্বক তৈলাক্ত হোক বা শুষ্ক, নিয়মিত
ব্যবহার করা উচিত নয়।
৪। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা ত্বক সুস্থ রাখতে মুলতানি মাটির পেস্ট লাগান।
তবে মুলতানি মাটি প্রয়োগের আগে আবহাওয়া ও তাপমাত্রার দিকে খেয়াল রাখা
উচিত। খুব ঠাণ্ডা জায়গায় শুধুমাত্র জলে ভিজিয়ে মুলতানি মাটি লাগালে
ত্বকের শুষ্কতা বাড়ে এবং শীতকালে ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে যায়।
৫। যাদের ত্বক শুষ্ক তাদের মনে রাখতে হবে যে মুলতানি মাটির পেস্ট লাগানোর
সময় প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার যেমন অ্যালোভেরা, বাদাম তেল বা মধু মিশিয়ে
নিতে হবে। কারণ শুধুমাত্র মুলতানি মাটি লাগালে ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে যায়,
যার কারণে ত্বক টানটান হয়ে যায় এবং ত্বক সময়ের আগেই বুড়ো দেখাতে শুরু
করে।
৬। যাদের ত্বক সংবেদনশীল তাদের মুলতানি মাটি ব্যবহার করা এড়িয়ে চলা উচিত
কারণ এটি প্রয়োগ করলে মুখে পিম্পল হতে পারে এবং ফুসকুড়ি হওয়ার সম্ভাবনা
থাকতে পারে। সেজন্য সংবেদনশীল ত্বকের মানুষদের মুলতানি মাটির ব্যবহার
এড়িয়ে চলা উচিত।
রূপচর্চায় মুলতানি মাটি ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে শেষকথা
রূপচর্চায় মুলতানি মাটি ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে শেষকথা রুপচর্চায় মুলতানি
মাটির ব্যবহার সম্পূর্ণ নিরাপদ ও কার্যকরী। যারা প্রতিনিয়ত সৌন্দর্য্য চর্চা
করে থাকেন বা এর সাথে জড়িত তাদের কাছে মুলতানি মাটি নতুন কিছু নয়। এর
বহুবিধ উপকার ও গুণাবলির জন্য এটি সৌন্দর্য প্রিয় মানুষের কাছে অতি পরিচিত
একটি নাম। পাকিস্তানের মুলতান প্রদেশে এই মাটি পাওয়া যায় বলে এর নাম
মুলতানি মাটি। ইংরেজিতে Fuller’s Earth নামে পরিচিত এই মাটি ম্যাগনেশিয়াম
ক্লোরাইড সমৃদ্ধ।
স্কিন ভালো রাখার জন্য যতগুলো প্রাকৃতিক উপাদান আছে তার মধ্যে মুলতানি মাটি
বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। কোমল ও সতেজ ত্বক পাওয়া থেকে শুরু করে মুখের
অবাঞ্চিত কালো দাগ এবং রোদে পোড়া ত্বক ঠিক করতে দারূন কার্যকরী এই মুলতানি
মাটি। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। যার কারণে
আমাদের মুখে ব্রণের প্রাদুর্ভাব অনেক কমে যায়। এছাড়াও ব্রণের দাগ বা যে
কোনো কালো দাগ সারিয়ে তুলতে মুলতানি মাটির জুড়ি নেই। ত্বকের ইলাস্টিসিটি
ধরে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এই মুলতানি মাটি। সেই সাথে ত্বকে হেলদি
গ্লো নিয়ে আসে এবং ত্বকের রং উজ্জ্বল করে।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url