রক্ত দানের উপকারিতা ও অপকারিতা


রক্ত দানের উপকারিতা হলো নিয়মিত রক্তদান করলে ক্যান্সার, হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। যারা নিঃস্বার্থভাবে রক্তদান করেন তাদের সম্মান জানাতে প্রতি বছর জুন মাসের ১৪ তারিখ বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালন করা হয়। ইভেন্টটি নিরাপদ রক্ত ​​এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ারও কাজ করে।
রক্ত-দানের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
রক্তদানের মতো নিঃস্বার্থ কাজ অনেকের জীবন বাঁচাতে পারে এবং অনেক গ্রহীতাকে উপকৃত করতে পারে।রক্ত দানে অনেকেই ভয় পান, ভাবেন অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তবে ভয়ের কিছু নেয় বরং রক্ত দান স্বাস্থের জন্য উপকারি। কিন্তু রক্ত দান সবার করা উচিত নয় এমন অনেক ব্যক্তি আছে যাদের জন্য রক্ত দানে ক্ষতি ও অপকার হয়।

পৃথিবীতে যত ভালো কাজ আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো রক্তদান করা। আপনি যদি রক্ত দান করে থাকেন বা রক্তদান করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে রক্ত দানের উপকারিতা, অপকারিতা ও রক্ত দানের নিয়ম সম্পর্কে। চলুন তবে দেরি না করে বিস্তারিতভাবে এসব বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

পেইজ সূচিপত্রঃ রক্ত দানের উপকারিতা ও অপকারিতা

রক্ত দানের উপকারিতা

রক্ত দানের উপকারিতার সবচেয়ে সুন্দর দিক হচ্ছে মানসিক তৃপ্তি। নিজের মনের ভিতরে এমন একটি অনুভূতি আসে যে আমি মানুষকে রক্ত দিয়েছি এবং সে বেঁচে আছে। রক্তদান করলে লিভার এবং হার্টের জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তার মানে এটাই দাঁড়াচ্ছে রক্তদানের মাধ্যমে আমি অন্য একজনকে বাঁচাতে পারি এবং নিজেও সুস্থভাবে বাঁচতে পারি। রক্তদান কেন্দ্রে গেলে খুব সহজেই আমরা শরীরের কিছু পরীক্ষা করে নিতে পারি। 

এবং সেগুলো বিনামূল্যে যেমনঃ এইচআইভি-এইডস, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস। তাছাড়া রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা যায়। রক্ত দানে রক্ত গ্রহীতা যেমন উপকার পায় তেমনি রক্তদাতারও বিভিন্ন উপকার হয়। রক্ত দান নিয়ে আমাদের অনেকের ভুল ধারনা আছে যে রক্তদান করলে রক্তদাতা অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়বে। তবে রক্ত দান, দাতার স্বাস্থের জন্য উপকারি, সেটা আপনারা জানেন কি? জানা না থাকলে নিচের আলোচনা থেকে জেনে নিন, রক্ত দানের উপকারিতাগুলো কি।

  • নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে বিনা খরচে জানা যায় নিজের শরীরে বড় কোন রোগ আছে কিনা। যেমনঃ হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, সিফিলিস এইচ আই ভি ( এইডস) ইত্যাদি।
  • রক্ত দানের মধ্য দিয়ে জটিল রোগ থেকে বাঁচা যায়। ক্যান্সারের মতো মরনব্যাধি রোগের ঝুঁকি কমায় নিয়মিত রক্তদান করলে। শরীরে অতিরিক্ত লৌহ উপাদান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর, অতিরিক্ত জমে থাকা লৌহ ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। আর নিয়মিত রক্ত দানের করলে রক্তের মধ্য দিয়ে সেই লৌহ বেরিয়ে আসে ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
  • শরীরে রক্তকণিকা তৈরির কারখানা হলো অস্থিমজ্জা। নিয়মিত রক্তদান করলে অস্থিমজ্জা থেকে নতুন কণিকা তৈরি হয়, ফলে অস্থিমজ্জা সক্রিয় থাকে। এতে যে কোন দুর্ঘটনা বা অন্য কোন কারণে হঠাৎ রক্তক্ষরণ হলেও শরীর খুব সহজেই তা পূরণ করতে পারে।
  • নিয়মিত রক্তদানকারীর হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি একেবারেই কম হয়। নিয়মিত রক্ত দান করলে রক্ত দানকারীর হার্ট ও লিভার সুস্থ থাকে।
  • নিয়মিত রক্ত দিলে রক্তে জমে থাকা কোলেস্টরেলের মাত্রা কমে যায়। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরল স্বাস্থের বিভিন্ন ক্ষতি করে। আর এসব ক্ষতিকর কোলেস্টেরল রক্তদানের মধ্য দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসে। নিয়মিত রক্ত দান করলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে থাকে। এতে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।
  • শরীরে যদি অতিরিক্ত আয়রন জমে যায়। যেটাকে বলা হয়ে থাকে হিমো ক্রমাটাইটিস যা আমাদের শরীরে ক্ষতি করে থাকে অথবা একটি রোগ। নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অতএব রক্তদান আমাদের শরীরে সুফল আনে ।
  • উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী ওজন মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। নিয়মিত রক্ত দান করলে মানুষের অতিরিক্ত ওজন কমিয় মানবদেহকে সুস্থ রাখে।
  • নিয়মিত রক্তদান করলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে ফলে স্ট্রোকসহ বিভিন্ন মারত্মক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • মানবদেহের অস্থিমজ্জা সবসময় সক্রিয় রাখা প্রয়োজন। নিয়মিত রক্তদান করলে অস্থিমজ্জা থেকে নতুন কনিকা তৈরি হয়ে অস্থিমজ্জাকে সক্রিয় রাখে।
  • রক্ত দানের মধ্য দিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
  • শারিরিক ও মানসিক স্ট্রেস কমাতে কার্যকারী ভুমিকা রাখে নিয়মিত রক্ত দান।
  • যাদের শরীর খুব বেশি মোটা এবং ওজন কমে না তাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে ওজন কমানো সম্ভব এবং মোটা থেকে চিকন হওয়া সম্ভব। নিয়মিত রক্তদান শরীরের কোন ক্ষতি করে না।
উপরের আলোচনা থেকে নিশ্চয় আমরা বুঝলাম রক্তদানে কোনো ক্ষতি নেয় বরং উপকার পাওয়া যায় । সবথেকে বড় কথা হলো রক্ত দানের মধ্য দিয়ে একজন মানুষকে বাঁচানো যায়। তাই নিয়মিত রক্ত দানের অভ্যস গড়ে তুলুন।

রক্ত দানের নিয়ম

রক্ত দানের নিয়ম হলো একবার রক্ত দেয়ার পর পরবর্তী ছয় থেকে ১২ সপ্তাহ পর আপনি আবার রক্ত দিতে পারবেন। এ সময়ের মধ্যে সাধারণত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা আগের অবস্থায় ফিরে যায়। প্রশ্ন হলো, কেন এ সময়টা লাগে? আসলে শ্বেতকণিকা বা অনুচক্রিকার ক্ষয়টা পূরণ হয়ে গেলেও লোহিতকণিকার ক্ষয় পূরণ হতে কিছুটা সময় লাগে। আর লোহিত কণিকার সাথে সুস্থতার একটা সম্পর্ক আছে। 

কারণ লোহিত কণিকায় থাকে হিমোগ্লোবিন অণু, যার প্রধান কাজই হলো সারাদেহে অক্সিজেন বয়ে নিয়ে যাওয়া। আর হিমোগ্লোবিনে থাকে আয়রন, রক্ত দেয়ার সময় যা কিছুটা হারায়। এটা পূরণ করার জন্যে তখন একদিকে দেহের লৌহভাণ্ডার বেশি বেশি ব্যবহৃত হয়, অন্যদিকে খাবার এবং পানীয় থেকে তৈরি হতে থাকে বেশি বেশি আয়রন। একজন মানুষের শরীরের মোট ওজনের ৮% রক্ত দেহে থাকে। শরীরের রক্ত সাধারণত দুই ধরনের উপাদান দ্বারা গঠিত।

১. রক্ত কোষ (Blood Cell)
২. রক্তরস (Plasma)

রক্তকোষ আবার তিন ধরণের উপাদানে গঠিত যেমনঃ

১. লোহিত রক্ত কণিকা (Red Blood Cell – RBC)
২. শ্বেত রক্ত কণিকা (White Blood Cell)
৩. অণুচক্রিকা (Platelet)

এছাড়া রক্তে হিমোগ্লোবিন থাকার ফলে রক্ত লাল রঙের দেখায়। হিমোগ্লোবিনের কাজ রক্তের মাধ্যমে কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করা।

* লোহিত রক্ত কণিকা (RBC) বাঁচে ৯০-১২০ দিন।
* শ্বেত রক্ত কণিকা (WBC) বাঁচে ১৩-২০ দিন।
* অণুচক্রিকা (Platelet) বাঁচে ৮-৯ দিন।

এই নির্দিষ্ট সময় পর রক্তের কোষগুলো মরে গিয়ে নতুন করে আবার তৈরি হয়। এজন্য একবার রক্তদান করার পর শরীরে যে পরিমাণ কোষ এর ঘাটতি দেখা দেয়, তার সবগুলো পূরণ হতে সময় লাগে প্রায় ৩-৪ মাস।

যার ফলে একজন রক্তদাতা ৪ মাস পর পর রক্তদান করা উচিত। রক্তের কোষগুলো পরিপক্ক না হওয়া অবস্থায় রক্তদান করলে ডোনারের শরীরে যেমন কোষের ঘাটতি দেখা দেয়, ঠিক তেমনি রক্ত গ্রহীতাও পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্তের উপাদান পায় না। ফলে অপরিপক্ক রক্ত রোগির শরীরে ১০০% উপকারে আসে না এবং রোগীকে দ্রুতই আরোও রক্ত নিতে হয়। এতে অর্থেরও অপচয় ঘটে। ৪ মাস আগে রক্ত দিলে রোগী ১ ব্যাগ রক্ত পেলো ঠিকই কিন্তু রোগীর পুরোপুরি উপকার হলো না। উপরন্তু এটা রক্তদাতার জন্যও ক্ষতির কারণ হতে পারে।

৩ মাসের কম সময়ে রক্ত দিলে ডোনারেরও ক্ষতি হয়ে যেতে পারে এমনকি রক্তদাতা স্থায়ী ভাবে রক্তদানে অক্ষম হয়ে যেতে পারেন। ব্যাঘাত ঘটলে রক্তদাতা হয়ে যেতে পারেন নিজেও একজন রক্তশূন্যতার রোগী! তখন উল্টো তারই রক্ত নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। রক্তদান হোক নিয়ম মেনে। এমনিতেই আমাদের দেশে রক্তদাতা কম। অনেকে রক্তদান করতে চায় না, অনেকে ভয় পায়।

অনিয়ম করে রক্তদান করে রক্তদাতা অসুস্থ হলে রক্তদানের দেখাদেখি উৎসাহিত না হয়ে বরং ভয়ে অনেকে রক্তদান থেকে পিছিয়ে যাবে। এজন্য একজন ডোনারের নিয়ম মেনে কমপক্ষে ১২০ দিন পর অর্থাৎ ৪ মাস পরপর রক্তদান করা উচিত। এতে রোগী এবং রক্তদাতা উভয়েরই মঙ্গল। রোগীও সার্বিকভাবে উপকৃৃত হলো, রক্তদাতাও রক্তদানের অনেক উপকার পেলো।

রক্ত দেওয়ার আগে করণীয়

রক্তদান খুবই সুন্দর একটি বিষয় বলতে পারেন ভালো একটি অভ্যাসও বটে। রক্ত দান আপনার শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ন নয় বরং আপনার শরীরকে বিভিন্ন ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা করে। মানবিক অথবা সামাজিক এছারাও ধর্মীয় দিক থেকেও রক্তদানের গুরত্ব এবং মর্যাদা রয়েছে। আপনার ইচ্ছা হলে আপনিও রক্তদান করতে পারবেন। তবে রক্ত দানের আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি।

রক্ত দান করার ফলে আপনার এবং যাকে রক্ত দিবেন দুজনের যেন ক্ষতি না হয় সেজন্য সচেতন থাকতে হবে, জানতে হবে রক্ত দানের আগে করণীয় বিষয়গুলো কি। রক্ত দেওয়ার আগে করণীয় বিষয়গুলো জেনে নিন রক্ত আপনি কখন দিতে পারবেন না-

  • রক্ত দানের ২৪ ঘন্টা আগে রক্তদাতা অ্যালকোহল জাতীয় কোনো কিছু খেতে পারবেন না।
  • রক্ত দেওয়ার আগে অবশ্যই রক্ত দাতা এবং গ্রহীতার রক্তের গ্রুপ মিলিয়ে নিতে হবে।
  • রক্ত দেওয়ার আগে বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার খাবেন এবং তরল খাবার বেশি করে খাবেন।
  • শ্বাসপ্রসাসজনিত রোগ থাকলে রক্ত দিতে পারবেন না।
  • ৩৭.৫ ডিগ্রির ওপরে শরীরের তাপমাত্রা হলে রক্ত দান করতে পারবেন না।
  • শরীরের ওজন তুলনামূলক ভাবে কম হলে রক্ত দান করতে পারবেন না।
  • পুরষের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সর্বনি¤œ ১২ গ্রাম এবং নারীদের সর্বনি¤œ ১১ গ্রাম থাকলে রক্ত দিতে পারবেন না।
  • রক্তচাপ স্বাভাবিক না থাকলে রক্ত দেওয়া ঠিক নয়।
  • গর্ভবতী নারীরা এবং যে মহিলাদের সন্তানের বয়স ১ বছর এবং ১ বছরের কম থাকলে রক্ত দান করতে পারবেন না।
  • যাদের ঋতুস্রাব চলছে তাদের ক্ষেত্রে রক্ত দেওয়া ঠিক নয়।
  • জন্ডিস, এইডস, ক্যান্সার, কিডনির অসুখ, গনোরিয়া, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া এসব রোগিরা রক্ত দান করতে পারবেন না।
  • যাদেরে টাইফয়েড, চর্মরোগ, ডায়াবেটিস, বাতজ¦র হৃদরোগ রয়েছে তারা রক্ত দিতে পারবেন না।
  • যারা বড় কোনো দুর্ঘনায় পড়েছিলেন বা অস্ত্রপাচার হয়েছে এবং দুর্ঘটনা ৬ মাসের মধ্যে হয়েছে তারা রক্ত দিতে পারবেন না।
উপরের বিষয়গুলো রক্ত দানের আগে জেনে নিবেন। রক্ত দান স্বাস্থের জন্য খুবই উপকারি তবে সঠিক শর্ত, সঠিক নিয়ম না মেনে রক্ত দিলে রক্ত দাতা এবং গ্রহীতা দুজনের স্বাস্থের বিরাট ঝুঁকি হতে পারে।

রক্ত দানে ‍সাবধানতা

রক্ত দানে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। কাছের কারো জন্য রক্তের প্রয়োজন হলেই বোঝা যায়, রক্তের বন্ধন যে অমূল্য। আজকাল রক্ত পাওয়া আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গেছে। বিশেষ করে তরুণরা, খুব আগ্রহ নিয়ে অপরিচিতদেরকে রক্ত দিয়ে থাকেন। রক্তদানের ফলে রক্তদাতার শারীরিক কোনো ক্ষতি হয় না। রক্তের লোহিত কণিকার আয়ু ১২০ দিন। অর্থাৎ আপনি রক্ত দিন বা না দিন ১২০ দিন পর লোহিত কণিকা আপনা আপনিই মরে যায়।

সেখানে জায়গা করে নেয় নতুন লোহিত কণিকা। রক্তের আর উপাদানগুলোর আয়ুষ্কাল আরও কম। সুস্থ, সবল, নিরোগ একজন মানুষ প্রতি চার মাস অন্তর রক্ত দিতে পারেন। রক্ত দেওয়া মহৎকাজ তবে সে রক্ত দেওয়ার আগে বা রক্তদানের ক্ষেত্রে রক্তদাতার কিছু শারীরিক বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন এবং যে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে তা নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলোঃ

  • রক্ত দাতাকে শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে।
  • রক্ত দাতার বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
  • রক্ত দাতার ওজন হতে হবে কমপক্ষে ১১০ পাউন্ড।
  • রক্ত দাতার রক্তচাপের দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। খুব বেশি বা খুব কম কোনটিই রক্তদানের ক্ষেত্রে সহায়ক নয়।
  • কোনো রোগের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক সেবনরত থাকলে সেক্ষেত্রে রক্তদান করা উচিত নয়।
  • নারীরা মাসিক চলাকালীন বা গর্ভাবস্থায় রক্তদান করতে পারবেন না।
  • রক্তদানের কাছাকাছি সময়ে কোনও বড় দুর্ঘটনা বা অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে রক্তদান না করা বাঞ্ছনীয়।
  • রক্তের হিমোগ্লোবিন ১১-এর নিচে হলে রক্ত দেওয়া ঠিক নয়। এতে করে হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, ক্লান্ত লাগা, চোখে ঝাঁপসা দেখা, মাথা ঘোরাসহ অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন।
এছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে যে, এক ব্যাগ রক্তদানের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়া দরকার। রক্তদানের পর দুই গ্লাস পানি বা জুস খেলে রক্তের জলীয় অংশটুকু পূরণ হয়ে যায়। এরপর পর্যাপ্ত পানি ও জুস পান করতে হবে, সেই সঙ্গে ৮ঘণ্টা ঘুম। খাবারে কলিজা, বিভিন্ন ধরনের কচু, ডিম, দুধ রাখতে হবে।

রক্ত দানের পর জ্ঞান হারালে করণীয়

রক্তদানের পর কাউকে কাউকে অজ্ঞান হয়ে যেতে দেখি আমরা। এটা হয় সাধারণত লো ব্লাড প্রেশারের কারণে। ঘাড়ের ধমনীতে ব্যারোরিসিপটর নামে বিশেষ একধরনের নার্ভসেলের কারণে রক্ত দেয়ার পর পরই দেহে খবর হয়ে যায় যে, রক্তচাপ কমে গেছে। এই শূন্যতা পূরণের জন্যে রক্তকণিকাগুলো তখন সংকুচিত হয় এবং রক্তচাপকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। আর রক্ত দেয়ার পর পরই কেউ যদি দ্রুত উঠে যান বা হাঁটতে শুরু করেন, তখন আকস্মিক রক্তচাপ নেমে যাওয়ার ফলে কারো কারো শরীরটাকে হালকা মনে হতে পারে, অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে ইত্যাদি।
রক্ত-দানের-পর-জ্ঞান-হারালে-করণীয়
এটাকে এড়ানোর জন্যে যা করতে পারেন তাহলো, রক্ত দেয়ার পর পরই না উঠে কিছুক্ষণ সটান হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে, এসময় মাথার নিচে যেন কোনো বালিশ বা উঁচু কিছু না থাকে। কারণ মাথাটাকে রাখতে হবে হার্টের লেভেলে, যাতে হার্ট থেকে ব্রেনে পর্যাপ্ত রক্ত যেতে পারে। আর নামার আগে কিছুক্ষণ পা ঝুলিয়ে বিছানায় বসে থাকতে পারেন। আর তারপরও যদি আপনার কোনো অসুবিধা হয়, সেটা দেখার জন্যে আমাদের রয়েছেন উপস্থিত চিকিৎসকগণ।

কাদের রক্ত নেওয়া যাবে না

কাদের রক্ত নেওয়া যাবে না রক্ত নেওয়ার আগে দেখে নিতে হবে, যে রক্ত দিচ্ছে তার রক্ত রোগীর জন্য উপযোগি কি-না। কারন অনেক সময় দেখা যায় রক্ত দাতার শরীরের ভেতরে গোপনে কোনো জটিল রোগ হয়ে থাকে আবার রক্তের মধ্যে জীবানু থাকে যা রক্তগ্রহীতার বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এমন অনেক ধরনের ব্যাক্তি আছে যাদের রক্ত নেওয়া যাবে না। জীবন নতুন ভাবে ফিরে আসে রক্ত দানের মধ্য দিয়ে।

রক্ত দানের থেকে উত্তম বা ভালো কাজ খুব কম আছে বলা চলে। রক্ত শুধু দেওয়া নেওয়া করলেই হবে না, পাশাপাশি কঠোরভাবে সচেতন থাকতে হবে। নিরাপদ ভাবে রক্ত সঞ্চালন করতে হবে। রক্ত দেওয়ার আগে অবশ্যই রক্ত দাতাকে সাবধান থাকতে হবে পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয় হলো চিকিৎসকের রক্ত নেওয়ার আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেওয়া।জেনে নিন কাদের রক্ত নেওয়া যাবে না-
  • শারিরিক ভাবে সুস্থ নয় এমন ব্যক্তির রক্ত নেওয়া যাবে না।
  • মানসিক ভাবে সুস্থ নয় এমন ব্যক্তির রক্ত নেওয়া যাবে না।
  • হেপাটাইটিস সি’ এবং হেপাটাইটিস বি’ রোগ যাদের আছে তাদের রক্ত নেওয়া যাবে না।
  • মাদকাসক্ত ব্যক্তির রক্ত নেওয়া যাবে না।
  • ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত নেওয়া যাবে না।
  • হিমেফেলিয়াতে যারা ভুগছে তাদের রক্ত নেওয়া যাবে না।
  • এইডস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত নেওয়া যাবে না।
  • গর্ভবতী নারী এবং মাসিক চলছে এমন নারীর রক্ত নেওয়া যাবে না।
  • যাদের ওজন তুলনামূলকভাবে কম এবং ক্রমাগত ভাবে কমতেই থাকছে এমন ব্যক্তির রক্ত নেওয়া যাবে না।
  • অতিরিক্ত যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে তাদের রক্ত নেওয়া যাবে না।
  • উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ থাকলে তাদের রক্ত নেওয়া ঠিক নয়। চিকিৎসকের মতে এসব রোগির রক্ত নেওয়ার ফলে রক্ত দাতার সমস্যা হতে পারে।
  • সম্প্রতি রক্ত দিয়েছে এমন ব্যক্তির রক্ত নেওয়া ঠিক নয়।
রক্ত দানের আগে রক্তদাতা, রক্ত দানে উপযুক্ত কি-না এমন কিছু পরীক্ষা ডাক্তাররা করে থাকেন। সে পরীক্ষার মাধ্যমেই সঠিকভাবে জানা যায় কাদের রক্ত নেওয়া যাবে না। এছারাও উপরের বিষয়গুলো কোনো ব্যক্তির মধ্যে থেকে থাকলে সে ব্যক্তির রক্তদানে ইচ্ছা থাকলেও রক্ত দিতে পারবে না।

রক্ত দানের পর কি কি খেতে হবে

রক্ত দানের পর রক্ত দাতার খাবারের দিকে খেয়াল রাখা দরকার। তবে রক্ত দান করে দুর্বল হয়ে গেছেন, অসুস্থ হয়ে গেছেন এমন কোনো কারনে নয়। রক্ত দান করার পর আবার আপনি যেন রক্ত দিতে পারেন সে জন্য খাবারের দিকে নজর দেওয়া ভালো। রক্ত আমাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন অংশগুলো ঠিক রাখে। রক্তের মধ্যে বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। আর সুস্থ ভাবে বাঁচতে, শরীররকে ঠিক রাখতে দেহে রক্তের সকল উপাদান ঠিক রাখতে হবে।

শরীরের রক্ত, রক্তের বিভিন্ন উপাদান ও রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে খাবারের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আপনার শরীরের রক্ত এবং রক্তের উপাদান ঠিক থাকলে রক্ত দানের জন্য আপনি উপযোগি হতে পারবেন। তাই যে খাবারগুলো খেলে রক্ত ও রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পায় সে খাবারগুলো আপনাকে রক্ত দানের পর খেতে হবে। জেনে নিন রক্তদানের পর কি কি খেতে হবে।

পানিঃ রক্ত দানের পর আপনাকে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। দেহের মোট ওজনের আট ভাগই রক্ত। আর রক্তের ৫৫ ভাগই হলো রক্তরস বা প্লাজমা, যার ৯০ ভাগই আসলে পানি। সুতরাং আপনি যে রক্ত দেন তার ওজন এক পাইন্টের কম হলেও আসলে এর অর্ধেকটাই পানি। এ জন্যই রক্ত দেওয়ার আগে এবং পরে পর্যাপ্ত পানি খেতে বলা হয় (অন্তত ৫০০ মিলিলিটার)। তাহলেই রক্ত দেওয়ার পর ক্ষয়টা দ্রুত পুষিয়ে যায়। চাইলে সাধারণ পানির পাশাপাশি স্যালাইন পানিও খেতে পারেন।

ডাবের পানিঃ রক্ত দানের পর পর ডাবের পানি খেয়ে নেওয়া ভালো। রক্তদাতা যদি ঘামতে থাকেন এবং শরীরে অস্থিরতা অনুভব করেন, তবে তাকে স্যালাইন এবং ডাবের পানি খেতে বলা হয়। এছাড়াও, রক্ত দেওয়ার পর লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে অন্তত এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে। এর ক্ষয়পূরণে আয়রন ও প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণে।

ডার্ক চকলেটঃ ডাক্তাররা রক্ত দেয়ার পর ডার্ক চকলেটে খাওয়ার জন্য বলে থাকেন। আয়রনযুক্ত খাবার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। আর ডার্কচকলেটে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে, তাই রক্তদানের পর ডার্ক চকলেট খাবেন।

ফলঃ বিভিন্ন ফল যেমন- লেবু, কমলা, আম, তরমুজ, আপেল, বেদানা, যেগুলোতে রস বেশি পরিমাণে থাকে এবং আয়রন, ভিটামিন সি জাতীয় ফল খাবেন।

মাংসঃ রক্ত দানের পর প্রোটিন জাতীয় খাবার খাবেন। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুত বাড়াতে প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। যেগুলো থাকে প্রাণীর লাল মাংস যেমনঃ গরুর মাংস, খাসির মাংস, মহিষের মাংস এবং কলিজা আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎসগুলোর মধ্যে একটি। আয়রন হিমোগ্লোবিনের জন্য খুবই জরুরী। মুরগির মাংস লাল না হলেও কিন্তু তাও শরীরে প্রোটিনের কাজ করে এবং দেহকে বিশাল পরিমাণে আয়রন সরবরাহ করতে পারে।

শস্য জাতীয় খাবারঃ এ জাতীয় খাবারের মধ্যে চাল, ওটস, গম, বার্লি রক্ত দানের পর খাবেন। এগুলো আয়রনের ভালো উৎস যা রক্ত দানের পর খাওয়া ভালো।

সামুদ্রিক মাছঃ রক্ত দানের পর বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ খাবেন। সামুদ্রিক মাছের প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ পুষ্টি উপাদান আছে। সুতরাং রক্ত দাতাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন সামুদ্রিক মাছ রাখা প্রয়োজন।

শুকনো ফলঃ শুকনো ফলের মধ্যে খেজুর, কিসমিস, যেকোনো বাদাম এসব রক্তদানের পর খাবেন। খেজুর, কিসমিস এবং বাদামে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন এবং আস এসব খাবার খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় । শুকনো খেজুর আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। এসব খাবারে প্রচুর আয়রন, ফাইবার এবং বিভিন্ন ভিটামিন আছে যা রক্তদানের পর খাওয়া ভালো। 

ডালঃ রক্ত দানের পর দৈনিক এক বাটি করে ডাল খাবেন, মসুর ডাল হলে ভালো হয়।

ডিমঃ ডিমে উচ্চ মাত্রায় আয়রন থাকে, তাই রক্তদানের পর ডিম খাবেন। ডিমে আছে উচ্চমাত্রায় আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। ডিমের হলুদ কুসুমে আছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পুষ্টি এবং ভিটামিন যা আমাদের লোহিত কণিকাকে বৃদ্ধি করে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। ডিমের সাদা অংশে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। তাই যারা রক্ত দান করে থাকেন তাদের নিয়মিত ডিম খাওয়া উচিত।

সুবজ ও তাজা শাক-সবজিঃ রক্তদানের পর প্রতিদিন খাবারের তালিকায় সবুজ শাক-সবজি রাখবেন। সবুজ ও তাজা শাক-সবজির মধ্যে টমেটো, আলু, ব্রকোলি, গাজর, পালংশাক প্রভৃতি খেতে পারেন।তাজা সবজি খেলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন , আয়রন এবং খনিজ পুষ্টি ঘাটতি মিটবে। আলু, ব্রকলি , টমেটো এবং কুমড়ো আয়রনের ঘাটতি মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লাল শাক খেলে শরীরের দ্রুত হিমোগ্লোবিন বাড়ে। তাছাড়া আমরা সকলেই জানি শাকসবজিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন তাই রক্তদানের পর প্রতিদিন আমাদের শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন।

বাদামঃ যেকোনো ধরনের বাদাম মানবদেহে উপকারী বলে গণ্য করা হয়। যার ফলে রক্ত দানকরীদেরকে বেশি করে বাদাম খেতে বলা হয় কারণ বাদাম শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। চিনা বাদাম, কাঠবাদাম , পেস্তা বাদাম এবং কাজুবাদাম যেকোনো ধরনের বাদামেই আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং আয়রনের ঘাটতি মিটিয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায় খুব দ্রুত গতিতে।

রক্ত দানের পর এসব খাবার খাওয়া শরীরের জন্য বেশ উপকারি। খাবার ছাড়াও রক্ত দেওয়ার দিন শারিরিক পরিশ্রম করবেন না, ভারি কিছু উঠাবেন না, হাঁটা চলা কম করবেন অর্থ্যাৎ রিল্যাক্স থাকার চেষ্টা করবেন।

কারা রক্তদান করতে পারবেন

কারা রক্তদান করতে পারবেন এই প্রশ্নের উত্তর হলো ১৮ থেকে ৬০ বছরের যে কোন শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও সক্ষম ব্যক্তি, যার শরীরের ওজন ৪৫ কেজির উপরে, তারা ৪ মাস পর পর নিয়মিত রক্তদান করতে পারেন। তবে রক্ত দিতে হলে কিছু রোগ হতে মুক্ত থাকতে হবে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুযায়ী, নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের জন্য রক্তদাতার শরীরে কমপক্ষে ৫টি রক্তবাহিত রোগের অনুপস্থিতি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে।

এ রোগগুলো হলো- হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইচআইভি বা এইডসের ভাইরাস, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস। রোগের স্ক্রিনিং করার পর এসব রোগ থেকে মুক্ত থাকলেই সেই রক্ত রোগীর শরীরে দেয়া যাবে। অবশ্য একই সঙ্গে রোগীর এবং রক্তদাতার রক্তের গ্রুপিং ও ক্রসম্যাচিং করাটাও জরুরি। এ ছাড়া রক্তদাতা শারীরিকভাবে রক্তদানে উপযুক্ত কিনা, তা জানার জন্য তার শরীরের ওজন, তাপমাত্রা, নাড়ির গতি, রক্তচাপ ও রক্তস্বল্পতার উপস্থিতি ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখা হয়।

রক্ত দান সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর

প্রশ্নঃ এক ফোটা রক্ত তৈরি হতে কত সময় লাগে?

উত্তরঃ আমাদের দেহে এক ফোটা রক্ত তৈরি হতে প্রায় ৭০ দিন সময় লাগে। রক্তের প্রধান উপাদান হলো লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা, প্লেটলেট এবং প্লাজমা। লোহিত রক্তকণিকা আমাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুতে অক্সিজেন পরিবহন করে।

প্রশ্নঃ AB+ পজেটিভ রক্ত ​​কি অপ্রয়োজনীয়?

উত্তরঃ জনসংখ্যার মাত্র ৩% মানুষের AB+ রক্ত ​​রয়েছে, যা এটিকে বিরলতম রক্তের গ্রুপগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে। AB+ দাতারা হলেন সার্বজনীন প্লাজমা দাতা কারণ এই উপাদানটি প্রাপকের রক্তের ধরন নির্বিশেষে যেকোনো রোগীর মধ্যে স্থানান্তরিত হতে পারে। আপনার প্লেটলেট এবং প্লাজমা হল আপনার AB+ রক্তের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ।

প্রশ্নঃ রক্ত দেয়ার পর কি কি সমস্যা হতে পারে?

উত্তরঃ রক্ত দেয়ার পরে শরীর তরল ও অক্সিজেন পরিবহণে সাময়িক ভারসাম্যহীন হতে পারে। ধূমপান বা মদ্যপান করলে রক্তচাপের সমস্যা এবং আরও বেশি শারীরিক দুর্বলতা তৈরি হতে পারে। রক্তদানের আগে এবং পরে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা এসব এড়িয়ে চলুন। রক্ত দেয়ার ফলে শরীর থেকে কিছু তরল হারায়, যা পূরণ করা জরুরি।

প্রশ্নঃ রক্তদানের পর কি কি খাবার খাওয়া উচিত?

উত্তরঃ বেশি পরিমাণ প্রোটিন এবং শর্করা আছে এমন খাবার ও পানীয় খেতে পারেন। যেমন— গ্লুকোজ, জুস বা শরবত। এগুলো খুবই উপযোগী। ব্যায়াম ও শারীরিক কসরত : রক্তদানের পর পরই যেকোনো ধরনের ব্যায়াম, যেমন— জিমন্যাসিয়াম এবং নাচ বা দৌড়ের মতো শারীরিক কসরতের কাজ করবেন না।

প্রশ্নঃ রক্তদানের পর কি করা উচিত ?

উত্তরঃ রক্ত দানের পর পর্যাপ্ত তরল পান করুন অন্তত ৪ গ্লাস (স্যালাইন, ফলের রস)। ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত ভারী কাজ করবেন না। মাথা ঘুরলে শুয়ে পড়ুন এবং (পায়ের নীচে একটি বালিশ দিয়ে) পা মাথার চেয়ে উচুতে রাখুন। দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুন। ধুমপান করবেন না অন্তত ৫ ঘণ্টা।

রক্ত দানের অপকারিতা

রক্ত দানের অপকারিতা বা ক্ষতিকর কোন দিক আছে কি-না, রক্ত দান করা আগে সবার মনে এই একাটাই প্রশ্ন আসে। এর সঠিক উত্তর হলো রক্তদান করে আপনার শারিরিক কোনো ক্ষতি হবে না । রক্ত দানের কোনো ক্ষতিকর বা অপকারি দিক নেই। তবে অনেকের মনে ভয় কাজ করে রক্ত দিলে শরীরের ক্ষতি হবে, শরীরের শক্তি কমে যাবে এমন ধারনা করে থাকে অনেকেই। তবে রক্ত দেওয়া স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং স্বাস্থের জন্য নানাবিধ উপকার বয়ে আনে।
রক্ত-দানের-অপকারিতা
বিভিন্ন কারনে একজন মানুষের রক্তের প্রয়োজন হয়। মানবদেহে বিভিন্ন রোগ যেমন থ্যালাসেমিয়া, ক্যান্সার, অপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া এসব থাকলে রোগিদের রোক্তের প্রয়োজন হয়। এছারাও কোনো দূর্ঘনায় ব্যাপক হারে রক্ত বের হলে, নারীদের সন্তান প্রসাবের সময় রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্ত দান করে মানুষের পাশে দাড়ানোর মতো মহৎ কোনো কাজ হয় না। তাই একজন সুস্থ মানুষ হিসেবে সবার রক্ত দান করা উচিত।

কিন্তু রক্ত দানের কিছু শর্ত আছে, সবাই রক্ত দান করতে পারবেন না। কাদের জন্য রক্ত দান করা উচিত নয় এবং কারা রক্ত দান করতে পারবেন সেদিকে খেয়াল রেখে রক্তদান করতে হবে। এসব বিষয় খেয়াল না করলে রক্ত দাতা এবং গ্রহীতা দুজনের মারত্বক ক্ষতি হবে। এছারাও রক্ত দানের আগে এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো মেনে চলতে হবে। এসব দিক ঠিক থাকার পর আপনি যদি রক্ত দান করেন তাহলে রক্ত দানে কোনো প্রকার ক্ষতি হবে না। আপনি কখন রক্ত দান করতে পারবেন জেনে নিন।

  • শারিরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ এমন মানুষ যাদের বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছর তারা রক্ত দিতে পারবেন।
  • যেসব মানুষের শারিরিক ওজন ৫০ কেজি অথবা তার থেকে বেশি এবং সর্বনিম্ন ৪৫ হতে হবে তারা রক্ত দিতে পারবেন।
  • একবার রক্ত দেওয়া হয়ে গেলে আবার ৪ মাস পর রক্ত দিতে পারবেন।
এসব শর্তগুলো আপনার মধ্যে থাকলে আপনি রক্ত দান করতে পারবেন। এছারাও আপনি কখন রক্ত দান করতে পারবেন না এবং রক্ত দানের আগে কি করতে হবে। সেগুলো পরবর্তীতে আলোচনা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পড়লে জানতে পারবেন রক্ত দান আপনি করতে পারবেন কি পারবেন না। এসব সম্পূর্ন বিষয় জানা থাকলে রক্ত দানের কোনো ক্ষতি হবে না।

রক্ত দানের উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের শেষ মন্তব্য

রক্ত দানের উপকারিতা ও অপকারিতা, রক্ত দানের নিয়ম সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি রক্ত দানের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। রক্ত দান অবশ্যই ভালো, মনে রাখবেন আপনার দেওয়া রক্ত অন্য একজনের জীবন রক্ষা করে। রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকে পুণ্যের ও মহৎ কাজ। এছারাও রক্তদানে কোনো প্রকার ক্ষতি নেয় বরং রক্ত দাতার স্বাস্থের জন্য উপকারি। তাই আসুন নিজ ইচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে যাই এবং অপরকে রক্তদানে উৎসাহিত করি।

সরকারি ও বেসরকারিভাবে যারা এই রক্ত সংগ্রহের কাজে জড়িত তারা কিছু বিষয়ে রক্তদাতাদের উৎসাহিত করতে পারেন। যেমন- তাদের সঠিক মূল্যায়ন করা, পুরস্কারের ব্যবস্থা করা বা অন্য কোনভাবে সম্মানিত করা ইত্যাদি। এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রক্তদাতার সংখ্যা বেড়ে যাবে, মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে। গণমাধ্যম, রাজনীতিবিদ ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ধর্মীয় নেতারা এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

নিরাপদ রক্তের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় কেবল বিনামূল্যে স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে। এ জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যাতে পৃথিবীর সব দেশে বিনামূল্যে স্বেচ্ছায় রক্তদান নিশ্চিত করার মাধ্যমে মুমূর্ষু রোগীর জীবন নিরাপদ রক্ত দিয়ে বাঁচানো যায়। তবে মনে রাখতে হবে, রক্ত সঞ্চালন যেন নিরাপদ হয়। আর যদি দূষিত, রোগাক্রান্ত রক্ত দেয়া হয়, তাহলে জীবন রক্ষার পরিবর্তে অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালনে জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

মনে রাখতে হবে, আমার শরীরের রক্তে আরেকটি জীবন রক্ষা করছে। পৃথিবীর আলো, বাতাস উপভোগের অপার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তাই পরোপকারই হোক আমাদের জীবনের ব্রত। একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন। রক্ত দিন জীবন বাঁচান, এক ব্যাগ রক্তদানে বাঁচবে একটি প্রাণ। "হাসিমুখে রক্তদান, হাসবে রোগী বাঁচবে প্রাণ। যখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে অশান্তি, সংঘাত আর বিদ্বেষের বাষ্প, ঠিক তখনই আমরা এক বাক্যে বলতে চাই, "রক্ত দিয়ে যুদ্ধ নয়, রক্ত দিয়ে জীবন জয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url