তালমাখনার উপকারিতা ও অপকারিতা


তালমাখনার উপকারিতা ও এর পুষ্টিগুণ অনেক। এটি একটি উৎকৃষ্ট ঔষধিগুণ সম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদ। তালমাখনা ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন হওয়ায় এর ব্যাপক ব্যবহার করা হয়। তালমাখনা এক ধরণের বর্ষজীবি ভেষজ উদ্ভিদ তালমাখনা। এর পাতা, শিকড় ও বীজ সবকিছুই ঔষুধের কাজে ব্যবহৃত হয়।
তালমাখনার-উপকারিতা
এটি বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক উপাদানে ভরপুর যেমন, ডাইয়াসটেস, অ্যালকাডএডস, লিপেস, ফাইটোস্টেরোল, এনজাইম ইত্যাদি। তালমাখনা গাছের ব্যবহার্য অংশ হলো এর তালমাখনা বীজ। তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন এই আর্টিকেলে।

পেইজ সূচিপত্রঃ তালমাখনার উপকারিতা ও অপকারিতা

তালমাখনা কি

তালমাখনা একটি পুষ্টিকর, শুক্রবর্ধক, প্রফুল্লতা আনয়নকারক খাদ্যউপাদান হিসেবে বিবেচিত। এটি একটি উৎকৃষ্ট ঔষধিগুণ সম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদ। তালমাখনা শব্দটির সাথে আমরা সাধারণভাবে তেমন পরিচিত না। তবে ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন হওয়ায় এর ব্যাপক ব্যবহার করা হয়। এক ধরণের বর্ষজীবি ভেষজ উদ্ভিদ তালমাখনা। এর পাতা, শিকড় ও বীজ সবকিছুই ঔষুধের কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক উপাদানে ভরপুর। 
যেমন ডাইয়াসটেস, অ্যালকাডএডস, লিপেস, ফাইটোস্টেরোল, এনজাইম ইত্যাদি। লতাগুল্ম জাতীয় বর্ষজীবী উদ্ভিদের বীজ। এর গাছও বেশ শক্ত। গাছ প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়, তবে বেশির ভাগ গাছই ৩০ সেন্টিমিটারের মধ্যে থাকে। গাছের কাণ্ড শাখায়িত। কাণ্ডের প্রতিটি গিঁট থেকে পাতা আর কাঁটা বের হয়।কাঁটার রঙ হালকা হলদে বাদামি, পাতার রঙ তামাটে সবুজ। গিঁট থেকে বের হওয়া বাইরের দিকের পাতাগুলো হয় লম্বা আর ভেতরের দিকের পাতাগুলো হয় খাটো।

পাতা আর কাঁটা উভয়ই ওপরের দিকে খাড়াভাবে থাকে। ফুলগুলোও ফোটে গিঁট থেকে। এর পাতা শিকড় ও বীজ সবই উপকারী রাসায়নিক উপাদানে ভরপুর। যেমন-এলকালয়েড্‌স, ফাইটোস্টেরোল, ও সুগন্ধের তৈলাক্ত পদার্থ। আর আছে এনজাইম ডাইয়াসটেস ও লিপেস। ফলে এর রস প্রস্রাববর্ধক,মূত্রনালির নানা রকম রোগ্র উপকারী।এমনকি মূত্রনালির পাথর দূর করতেও বেশ সাহায্য করে থাকে। এ সব ছাড়াও জন্ডিস ও বাতজনিত রোগেও এর বীজের তেল বেশ কার্যকরী।

তালমাখনার উপকারিতা

তালমাখনার উপকারিতা অনেক। ভেষজ এই ওষুধ সেবনে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই তালমাখনাকে বিভিন্ন রোগের মহৌষধও বলা হয়। সঠিক নিয়মে যদি খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীর তালমাখনার সর্বোচ্চ উপকারিতাটা পাবে। তালমাখনা সকালের দিকে খেলে আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকার। এক্ষেত্রে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস পানিতে এক চামচ তালমাখনা ভিজিয়ে রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে খেয়ে হবে। তালমাখনার উপকারিতাগুলো নিচে দেওয়া হলো।

শরীরিক দুর্বলতা কমায়ঃ বর্তমানে অনেকে আছেন যারা খাবার খেয়েও সঠিক পুষ্টি পান না এর ফলে শরীরে দুর্বলতা অনুভব করে। আবার অনেকেই শরীর দুর্বলতার কারণে কোনো কাজ করতে পারেন না এর ফলে ঘরে বসে থেকে শরীর আরো দুর্বল হয়ে যায়। শরীর দুর্বল ব্যক্তিরা তালমাখনা খেয়ে দেখতে পারেন শরীরের দুর্বলতা কমে যাবে। তালমাখনা সাধারণত সকালে খেতে হয়।

যৌবন শক্তি বৃদ্ধি করেঃ যৌবন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে তালমাখনার ব্যবহার করা অত্যন্ত উপকারী। কেননা এটার কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। এক থেকে দেড় চামচ তালমাখনা বীজ এক গ্লাস শীতল দুধের সাথে মিশিয়ে রেখে দিতে হবে কিছুক্ষণ। হলে তালমাখনা বীজ পানি শোষণ করে কিছুটা ফুলে উঠবে এবং এটা হজম তাড়াতাড়ি হবে। প্রতিদিন প্রতিদিন যদি এভাবে পান করেন— তাহলে আপনার বল বৃদ্ধি, যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং যৌন উদ্দীপনা বৃদ্ধিতে খুবই সাহায্য করবে।

যৌন সমস্যা দূর করেঃ অনেকের গুরুতর যৌন সমস্যা থাকে। তাদের জন্য তালমাখনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হিসেবে কাজ করতে পারে। দুই চামচ তালমাখনা বীজের গুঁড়া, অশ্বমূল চূর্ণ এক চামচ, এক চিমটি শিলাজিৎ একত্রে করে কুসুম গরম দুধের সাথে মিশিয়ে রোজ পান করলে সমস্যা দূর হবে।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানেঃ অনেকেই আছেন বাইরের খাবার খেয়ে বা বর্তমান সময়ের ফাস্টফুড খেয়ে গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন এর ফলে বুকে জ্বালাপোড়া হয়। অনেকেই আছেন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে ঔষধ খেয়ে দ্রুত সমাধান করে ফেলেন। কিন্তু ঔষধ খেয়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দ্রুত সমাধান হলেও একই গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খেতেখেতে এটি আর কাজ করে না। তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে তালমাখনা খেয়ে দেখতে পারেন। এটি বুকের জ্বালাপোড়া, পেট ফোলা ভাব ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে। তালমাখনার ভালো ফলাফল পেতে এটি সকালে ১৫-২০মিনিট পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে এরপর খেয়ে ফেলতে হবে।

কিডনির সমস্যা সমাধানেঃ বেশি বেশি বাইরের খাবার, বাইরের ভাজাপোড়া খাবার এবং জাঙ্ক ফুড খাওয়ার ফলে অনেকেই অল্প বয়সে কিডনি সমস্যায় ভোগেন। আবার ব্যথার ওষুধ বেশি খেলে কিডনির সমস্যা হতে পারে। যাদের এখনও কিডনির সমস্যা হয়নি তারা তালমাখনা খেয়ে দেখতে পারেন তালমাখনা খাওয়ার ফলে আপনার হজম শক্তি অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে একই সাথে কিডনির সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে।

হরমোনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেঃ অনেক মেয়ে আছে যারা হরমোনের সমস্যায় ভুগে থাকেন। হরমোনের সমস্যার ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা যায়।আবার হরমোনের সমস্যার কারণে শরীর দুর্বল থাকে। অনেক মেয়ে আছে যাদের হরমোনের সমস্যার কারণে সহবাসের ইচ্ছা কমে যায়। সহবাসের পর মেয়েরা অনেক দুর্বল অনুভব করেন এসব সমস্যা সমাধানে তালমাখনা খেতে পারেন। তালমাখনা হরমোনের সমস্যা সহ শরীরের দুর্বলতা সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।

হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতেঃ যারা হজমের সমস্যায় ভুগছেন অথবা যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আগের মতন সমস্যা আছে তারা তালমাখনা বীজ খেলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়াও তালমাখনা পাকস্থলী সমস্যা সমাধানে এবং বায়ুঃ নিশ্বরক হিসেবে কাজ করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জন্য তালমাখনা অনেক উপকারী একটি জিনিস। ডায়াবেটিস রোগী যদি তালমাখনা দিয়ে মেডিসিন তৈরি করে খেতে পারে তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা তালমাখনা খেতে পারেন।

কিডনি এবং লিভার ভালো রাখেঃ আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো লিভার এবং কিডনি এই দুটি যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে মানুষ মারা যাবে। তাই আপনার লিভার এবং কিডনি ভালো রাখার জন্য তালমাখনা অনেক উপকারী একটি জিনিস। সেজন্য তালমাখানা খেতে পারেন।

দেহের পুষ্টি বৃদ্ধি করেঃ আমাদের ভেতর অনেক মানুষ রয়েছে যারা পুষ্টি হিনতায় ভুগে থাকেন। সেজন্য যারা পুষ্টি হিনতায় ভুগে থাকেন তারা পুষ্টি বৃদ্ধি করার জন্য দুধের সাথে তালমাখনা সকাল এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খাবেন।

বাত ব্যথা দূর করেঃ বাতের ব্যথা হলে প্রচুর কষ্ট হয় আর এই বাতের ব্যথা বিশেষ করে বয়স্ক লোকদের হয়ে থাকে। তাই যাদের বাতের ব্যথা রয়েছে তারা যদি তালমাখনার পাতা পিষে পেস্ট তৈরি করে ব্যথা যায়গায় লাগাতে পারে তাহলে বাত ব্যথা কম হবে।

তালমাখনার পুষ্টি উপাদান

তালমাখনার বীজে রয়েছে অধিক পরিমাণে ফাইবার যা আপনার হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। তালমাখনার লো-ফ্যাটযুক্ত বীজ ডায়াবেটিকস রোগের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও হার্টের অসুখ, পিত্তথলির পাথর, দুর্বলতা, গ্লডারের সমস্যা, যৌন সমস্যা এবং মানসিক অবসাদ সমাধানে এটি আশীর্বাদ স্বরূপ। ত্বকে বয়সের ছাপ, মলিনতা এবং ব্রণের সমস্যা দূর করতেও আপনি রোজ তালমাখনা ব্যবহার করতে পারেন। নিচে তালমাখনার পুষ্টির তালিকা দেওয়া হলো।

তালমাখনা পুষ্টি উপাদান ও পরিমাণঃ
পুষ্টি উপাদান পরিমান
ক্যালোরি ১০৬ গ্রাম
চর্বি ০.৯ গ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাট ০.১ গ্রাম
সোডিয়াম ৮ মিলিগ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ২১ গ্রাম
ডায়েটরি ফাইবার ১ গ্রাম
চিনি ৩ গ্রাম
প্রোটিন ৪ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ৩৯ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.৮ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ১৭৬ মিলিগ্রাম

যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে তালমাখনার উপকারিতা

যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে তালমাখনার উপকারিতা ব্যপক। যেভাবে ইসুবগুলের ভূষি খাত্তয়া হয় ঠিক, সেই ভাবেই এটি পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেতে হয়। এভাবে প্রতিদিন পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে ব্যপক উপকার পাত্তয়া যায় । শুধু তাই নয়, যৌবন শক্তি বৃদ্ধিতে তালমাখনার ভূমিকা সবচাইতে বেশী। জেনে নিন যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে তালমাখনার কি কি উপকারিতা রয়েছেঃ
  • মানবদেহের নানা রোগের মহৌষধ হিসাবে কাজ করে তালমাখনা। এর বীজ, পাতা ও শিকড় অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণসম্পন্ন। এর বীজ শুক্র প্রফুল্লতা আনে দেহে ও যৌবনশক্তি বৃদ্ধিতে তালমাখনার ভূমিকা ম্যাজিকের মতো। এক কথায় এটি শুক্রবর্ধক, যৌনশক্তি বর্ধক, বীর্য গাঢ়কারক ও স্বপ্নদোষ নিবারক। এছাড়া লিউকোরিয়া, শুক্রমেহ, যৌন দুর্বলতা ও স্নায়বিক দুর্বলতায় কার্যকর।
  • ডায়াবেটিসসহ যে কোনো কারণে যদি যৌন দুর্বলতা আসে তালমাখনা দিয়ে তৈরি ওষুধে তা দ্রুত সেরে যায়। এর পাতা ও শাখার জোসান্দা লিভার এবং কিডনি সমস্যা দূর করে। পাশাপাশি কোষ্ঠ পরিষ্কারক, মূত্র ও ঘর্ম প্রবাহক। এর পাতার প্রলেপ বাত ও সন্ধি ব্যথা উপশমেও ব্যাপক কার্যকর।
  • শরীরের পুষ্টিসাধন ও সাধারণ দুর্বলতায় ৩ গ্রাম বীজচূর্ণ, ১ গ্রাম পরিমাণ শতমূলীচূর্ণ মিশিয়ে দুধসহ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ও রাতে শোবার আগে খেতে হবে। শুক্রমেহ ও লিউকোরিয়ায় ৩ গ্রাম বীজচূর্ণ ও ১ গ্রাম পরিমাণ তেঁতুলবীজচূর্ণ মিশিয়ে প্রতিদিন দু’বার দুধসহ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • স্নায়বিক দুর্বলতায় ৩ গ্রাম পরিমাণ বীজচূর্ণের সঙ্গে ১ গ্রাম পরিমাণ অশ্বগন্ধাচূর্ণ ও ৩ চা চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন দু’বার খেলে উপশম হবে। তবে নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি সেবন সমীচীন নয়। এটি খাওয়ার আগে ১ থেকে ২ চামচ তালমাখনা এক গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে আর সকালে ভিজিয়ে রাতে খেলে ব্যাপক উপকার পাওয়া যায়।
  • যৌন সমস্যার জন্য আরেকটি সাধারণ ব্যবহার হচ্ছে ৫-৭ গ্রাম তালমাখনা ,সমপরিমাণ তালমিছরি এবং এক গ্লাস দুধ এক সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন একবার পান করুন। এতে আপনার বল বৃদ্ধি, যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি ,বীর্য গাঢ় ,দ্রুত বীর্যপাত রোধ,বীর্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং যৌন আগ্রহের উন্নতি ইত্যাদি উপকার হবে।

তালমাখনা খাওয়ার সঠিক নিয়ম

তালমাখনা সঠিক নিয়মে খেলে খুবই ভালো কাজ করে। তালমাখনা একটি উপকারী ভেষজ ঔষধ। সাধারণভাবে তালমাখনা বা তালমাখনা পাউডার ভিজিয়ে শরবত তৈরী করে প্রতিদিন ৫-৭ পরিমান খেতে পারেন। স্বাদে বৈচিত্র আনার জন্য সাথে ইসবগুলের ভুষি মিক্স করতে পারেন। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা তালমাখনা খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে অবগত নয় তাদের সুবিধার্থে এখন দেখে নিবো তালমাখনা খাওয়ার সঠিক নিয়ম গুলো।

১। তালমাখনা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন রোগের সমস্যা সমাধানে তালমাখনা দুধের সাথে অথবা মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। আরো একটি তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম হলো বীজ ছাড়াও এটি পাউডার করে খেতে পারেন।

২। তালমাখনা বীজ সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর সেটি ধীরে ধীরে ফুলে উঠবে। তারপর এটি সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেলে তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা পাবেন।

৩। শারীরিক দূর্বলতা কাটাতে প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ৩ গ্রাম পরিমাণ তালমাখনা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পরে খেতে পারেন।

৪। যৌন দুর্বলতার জন্য প্রতি রাতে এক গ্লাস দুধে ৩ গ্রাম পরিমাণ তালমাখনা ভিজিয়ে রেখে পান করবেন। ঘুমানোর পূর্বে ৩ গ্রাম পরিমাণে তালমাখনা দুই/তিন চা চামচ মধুর সাথে ভিজিয়ে রাখবেন এবং সকালে খালি পেটে পান করবেন। এইভাবে যদি নিয়মিত তালমাখনা সেবন করেন তাহলে খুব ভাল ফলাফল দেখতে পাবেন। এছাড়াও যদি মধুর পাশাপাশি ১ গ্রাম পরিমাণ অশ্বগন্ধা চূর্ণ মিশিয়ে পান করেন তাহলে আরো ভালো ফল পাবেন।

৫। প্রসাবের জ্বলাপোড়া দূর করার জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এবং দুপুরে বাহির থেকে আসার পর বিশ্রামের সময় খাবেন। এক্ষেত্রে আখের গুড়ের সাথে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে পান করবেন, এতে জ্বলাপোড়া কয়েক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

৬। তালমাখনা যে শুধু দুধ বা মধুর সাথে মিশিয়ে খেলেই উপকার হবে তা মোটেও না। যদি খালি পানিতে ভিজিয়ে সেবন করেন, সেক্ষেত্রেও উপকৃত হবেন।

৭। তাছাড়া তালমাখনার পাশাপাশি কাতিলা গাম খেতে পারেন। এতে আরো ভাল এবং দ্রুত ফল পাবেন।

তালমাখনা চেনার সহজ উপায়

তালমাখনা চেনার সহজ উপায় কি তা অনেকেই জানেন না। তালমাখনার উপকারিতা পেতে আসল তালমাখনা চেনা ভীষণ জরুরী। তালমাখনা এক ধরনের বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। বর্ষজীবী উদ্ভিদ হলেও এর ফুল আসে সাধারণত ডিসেম্বর মাসে। এর ফুল লালচে বা বেগুনি রং ধারণ করে। তবে কিছু ফুল আবার সাদা রঙেরও হয়ে থাকে। তালমাখনার এই ফুলের মধ্যে তৈরি হয় বীজ। তালমাখনা চেনার সহজ উপায় কি জেনে নিন।
তালমাখনা চেনার সব থেকে সহজ উপায় হলো তালমাখানা বীজ গুলো ছোট ছোট সরিষা দানার মতো হয়ে থাকে এবং কালো রঙ্গের হয়। তালমাখনার ইংরেজি নাম Marsh Barbel। তাছাড়া তালমাখনা একটি পুষ্টিকর শুক্র বর্ধক, প্রফুল্লতা আনয়ন কারক ও খাদ্য হিসেবেও বিবেচিত। তালমাখনার মূল ব্যবহার্য অংশ হলো এর বীজ, যা নিয়মিত সেবনের ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শারীরিক দুর্বলতা দূর হয়।

তাছাড়া তালমাখনা বীজ মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান যেমন- ডাইয়াসটেস, অ্যালকালয়েডস, লিপেস, ফাইটোস্টেরল এবং এনজাইমে ভরপুর। তালমাখনা বীজ অনেক ধরনের রোগের উপশমে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এর পাতা ও শিকড় গনোরিয়া, জন্ডিস, বাত সহ অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তালমাখনার বীজগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখলে চটচটে আঠালো হয়।

এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন নিম্নভূমি অঞ্চলে যেখানে বছরে কিছু সময়ের জন্য পানি থাকে সেখানে পাওয়া যায়। তালমাখনার ফুলের মৌসুম সাধারণত হেমন্ত থেকে শীতকাল পর্যন্ত বিস্তৃত এবং নদী এলাকায় এটি বেশি পাওয়া যায়। তালমাখনা শব্দটির সাথে আমরা তেমন একটা পরিচিত না। তবে ঔষধি গুনাগুন সম্পূর্ণ হওয়ায় এর ব্যাপক ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি ইতিপূর্বেই জেনেছেন।

বিশেষ রোগ অনুযায়ী তালমাখনার ব্যবহার পদ্ধতি

বিশেষ রোগ অনুযায়ী তালমাখনার ব্যবহার পদ্ধতি ও নিয়ম জেনে সেবন করা উচিত। তালমাখনার ঔষধীগুনের কথা বলে শেষ করা যাবেনা । এর পাতা, শিকড় ও বীজ সবই উপকারী এবং রাসায়নিক উপাদানে ভরপুর। এতে আছে এলকালয়েড্‌স, ফাইটোস্টেরোল, ও সুগন্ধের তৈলাক্ত পদার্থ। এছাড়া আছে এনজাইম, ডাইয়াসটেস ও লিপেস। যা প্রস্রাবসহ মূত্রনালির নানা রকম রোগে উপকারী। এমনকি মূত্রনালির পাথর মুক্ত করতেও এটি বেশ সাহায্য করে থাকে। জেনে নিন তালমাখনার ব্যবহার পদ্ধতিঃ

১. লিউকোমিয়া ও শুক্রমেহঃ এক্ষেত্রে ৩ গ্রাম তালমাখনা বীজ চূর্ণের সাথে ১ গ্রাম তেঁতুলের বীজ চূর্ণ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে ২ বার সেবন করুন।

২. যৌন ও স্নায়ুবিক দুর্বলতায় ব্যবহারঃ তালমাখনা বীজ চূর্ণ ৩ গ্রাম, ১ গ্রাম পরিমাণ অশ্বগন্ধা ও ৩ চা চামচ মধু একত্রে মিশিয়ে প্রতিদিন ২ বার সেবন করুন।

৩. দেহের পুষ্টি সাধন ও দুর্বলতায়ঃ ৩ গ্রাম তালমাখনা বীজের চূর্ণের সাথে ১ গ্রাম শতমূলী চূর্ণ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এবং রাতে শোয়ার পূর্বে সেবন করুন।

৪. বাত ও সন্ধির ব্যথায় তালমাখনাঃ বাত ও সন্ধির ব্যথায় তালমাখনা পাতার প্রলেপ দিলে ব্যথা উপশমে কার্যকর ভুমিকা পালন করে। এছাড়াও ১ থেকে ৩ গ্রাম তালমাখনার বীজ চূর্ণ এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতি দিন রাতে খাবার পর সেবন করুন।

৫. ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যঃ ডায়াবেটিস রোগ ছাড়াও অন্য কারণে যদি যৌন দুর্বলতা আসে, সেক্ষেত্রে তালমাখনা দিয়ে তৈরি ওষুধ সেবনে তা খুব সহজেই দূর করা যায়।

৬. লিভার ও কিডনির প্রতিবন্ধকতা দূর করতেঃ তালমাখনার পাতা ও শাখার জোসান্দা লিভার ও কিডনির প্রতিবন্ধকতা দূর করতে যথেষ্ট কার্যকর।

৭. যৌবন শক্তি বৃদ্ধি করতেঃ যৌবন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে তালমাখনা অত্যন্ত৷ উপকারী। পরিমাণ মতো তালমাখনা বীজ এক গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন পান করুণ। এতে আপনার বল বৃদ্ধি, যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং যৌন উদ্দীপনা ইত্যাদি উপকার হবে।

৮. যৌন সমস্যা দূর করতেঃ যৌন সমস্যা দূর করতে ৫ থেকে ৭ গ্রাম তালমাখনার সাথে সমপরিমাণ তালমিছরি ও এক গ্লাস দুধ একত্রে মিশিয়ে দৈনিক একবার করে পান করুণ।

৯. কোষ্ঠ্য পরিষ্কারক ও হজমকারক হিসেবেঃ তালমাখনার বীজ হজমকারক ও কোষ্ঠ পরিস্কারক হিসেবে বেশ কার্যকর। এছাড়াও বায়ুঃনিসারক এবং পাকস্থলীর ব্যথা নিবারক হিসেবেও তালমাখনা অত্যন্ত উপকারী।

১০. ত্বকের সমস্যায়ঃ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ত্বকের মলিনতা, ব্রনের দাগ, বলিরেখা, বয়সের ছাপ ইত্যাদি দূর করতে তালমাখনা বীজের তেল ব্যবহার করতে পারেন।

১১. বলকারক হিসেবেঃ তালমাখনা বলকারক হিসেবে বেশ কার্যকর। যাদের শারীরিক দুর্বলতা বা অক্ষমা রয়েছে, তালমাখনা খাওয়ার মাধ্যমে এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারেন।

তালমাখনার অপকারিতা

তালমাখনা একটি উপকারী ভেষজ ওষুধ। তালমাখনা বীজ, পাতা ও শিকড় ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তালমাখনা গনোরিয়া, জন্ডিস, বাতব্যথা ও মূত্রাশয়ের প্রদাহ সারাতে ব্যবহৃত হয়। তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম মেনে খেলে হজমের গন্ডগোল থেকেও খুব সহজে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে তালমাখনা নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি সেবন করা উচিৎ না, এতে তালমাখনা অপকারিতা হবে বেশি। তালমাখনার অপকারিতা গুলো কি কি সেগুলো দেখে নিনঃ

  • তালমাখনা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধান করলেও, অতিরিক্ত সেবনের ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা উল্টো আরো বেড়ে যেতে পারে।
  • অনেকের শুকনো তালমাখনা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। এভাবে সবসময় খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
  • তালমাখনা হরমন ও যৌনশক্তি বর্ধোক হওয়ার ফলে এটি পরিমানের চেয়ে বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলে হরমনের অধিক বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে। সুতরাং পরিমাণের চেয়ে বেশি খেয়ে নিলে হরমোনজনিত আরো নতুন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • তাললমাখনা আঠালো জাতীয় পদার্থ হওয়ার কারণে এটি কমপক্ষে ২০ মিনিট বা তার চেয়ে বেশি সময় ভিজিয়ে রেখে খেতে হবে নয়তো পেটে অন্তক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • যেকোনো খাবার বা ঔষধ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে আমাদের দেহের জন্য উপকারী তবে এর চেয়ে বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে উপকারের পরিবর্তে অনেক সময় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
  • ঠিক তেমনি তালমাখনাও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে গ্রহণ করা সমীচীন। তালমাখনার অপকারিতা তেমন খুব বেশি নয় তবে বেশি পরিমাণে খেয়ে নিলে পেটে বায়ু হতে পারে।

তালমাখনার উপকারিতা সম্পর্কে শেষকথা

তালমাখনার ঔষধীগুনের কথা বলে শেষ করা যাবেনা। এর পাতা, শিকড় ও বীজ সবই উপকারী এবং রাসায়নিক উপাদানে ভরপুর। এতে আছে এলকালয়েড্‌স, ফাইটোস্টেরোল, ও সুগন্ধের তৈলাক্ত পদার্থ। এছাড়া আছে এনজাইম, ডাইয়াসটেস ও লিপেস। যা প্রস্রাবসহ মূত্রনালির নানা রকম রোগে উপকারী। এমনকি মূত্রনালির পাথর মুক্ত করতেও এটি বেশ সাহায্য করে থাকে। এ সব ছাড়াও এর বীজের তেল জন্ডিস ও বাতজনিত রোগেও বেশ কার্যকরী।

তালমাখনার বীজ উপকারিতার দিক থেকে সব থেকে কার্যকরী। এটি একই সাথে মিষ্টি ও তিক্ত স্বাদযুক্ত এবং বীজে রয়েছে অধিক পরিমাণে ফাইবার যা আপনার হজম বৃদ্ধিতে সহায়ক। তালমাখনার লো ফ্যাটযুক্ত বীজ ডায়াবেটিকস রোগের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। হার্টের পীড়া, পিত্তথলির পাথর, দুর্বলতা, গ্লডারের সমস্যা, যৌন সমস্যা এবং মানসিক অবসাদ সমাধানে এটি আশীর্বাদ স্বরূপ। সৌন্দর্য বিকাশেও তালমাখনার জুড়ি নেই। ত্বকে বয়সের ছাপ, মলিনতা এবং ব্রণের সমস্যা দূর করতেও আপনি রোজ তালমাখনা ব্যবহার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url