তেজপাতার ২০টি উপকারিতা তেজপাতা খাওয়ার নিয়ম
তেজপাতার উপকারিতা ও তেজপাতা খাওয়ার নিয়ম জানতে আর্টিকেলটি মনযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
আমাদের সকলের কাছে খুবই পরিচিত একটি গাছ হচ্ছে তেজপাতা গাছ। আমরা মূলত এই গাছের
পাতা মসলা হিসেবে ও বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে থাকি। এই পাতার রয়েছে বিভিন্ন ভেষজ
গুণাগুণ।
প্রায় প্রতিটি রান্নার অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হচ্ছে তেজপাতা। খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বৃদ্ধিতে এর তুলনা হয়না। শুধু কি তাই, তেজপাতায় রয়েছে আরো অনেকে উপকারীতা। এর ভেষজ গুণ শরীর ও স্বাস্থ্যে জন্য অত্যন্ত উপকারী। চলুন জেনে নেওয়া যাক তেজপাতার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে।
পেইজ সূচিপত্রঃ তেজপাতার উপকারিতা ও তেজপাতা খাওয়ার নিয়ম
- তেজপাতার উপকারিতা
- তেজপাতা খাওয়ার নিয়ম
- তেজপাতার পুষ্টিগুন
- সকালে তেজপাতা ফোটানো জল খাওয়ার উপকারিতা
- তেজপাতার ধোয়ার উপকারিতা
- তেজপাতা কখন ও কিভাবে খেলে উপকার পাবেন
- তেজপাতার চা এর উপকারিতা
- রূপচর্চায় তেজপাতার উপকারিতা
- ত্বকের যত্নে তেজপাতা ব্যবহারের উপকারিতা
- চুলের যত্নে তেজপাতার উপকারিতা
- তেজপাতার অপকারিতা
- তেজপাতার উপকারিতা সম্পর্কে শেষকথা
তেজপাতার উপকারিতা
তেজপাতার উপকারিতা ও এর গুণ সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হবেন। মসলা হিসেবে এর
বহুল ব্যবহার রয়েছে। এটি খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এগুলি
ছাড়াও এটি অনেকে আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। অনেকেই জানবেন না যে
তেজপাতা কেবল একটি মশলাই নয়, এটি স্বাস্থ্য সমস্যা ঠিক করতেও সহায়তা করে।
আসুন তাহলে তেজপাতার ঔষধি গুণ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়কঃ তেজপাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল,
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষ
ভূমিকা পালন করে। এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ যেমন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ,
ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) এবং ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকরী।
তেজপাতার নির্যাস বা তেল ত্বকের ক্ষতস্থানে লাগালে তা দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ হয়। তেজপাতার মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলো
শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ
থেকে শরীরকে সুরক্ষিত রাখে। ঠান্ডা, সর্দি বা ফ্লু হলে তেজপাতার পানি খেলে বা
ইনহেল করলে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ দ্রুত কমে যায়।
কোলেস্টেরল ও হার্ট অ্যাটাকে উপকারীঃ তেজপাতা আমাদের শরীরের খারাপ
কোলেস্টেরল কমিয়ে, হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থেকে দূরে সরিয়ে আমাদের সুস্থ
রাখে। তেজপাতার মধ্যে প্রাপ্ত ইথানল নির্যাস কোলেস্টেরলের সিরাম স্তর কমাতে
সাহায্য করে। তেজপাতার মধ্যে থাকা এই নির্যাসটি আমাদের খারাপ কোলেস্টেরল
কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে আমাদের শরীরকে নানা রকম রোগের হাত থেকে
রক্ষা করে।
আরও পড়ুনঃ কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এমনকি হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা আমাদের শরীর থেকে দূরীভূত করে। তেজপাতার
মধ্যে ক্যাফেইক এসিড থাকে যা আমাদের হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রিত হলেই আমাদের হৃদপিণ্ড ঠিক ভাবে কাজ করে এবং আমাদের
শরীর সুস্থ থাকে। প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা এক গ্লাস গরম জলে তেজপাতা 5 মিনিট
ভিজিয়ে রাখুন এবং হাব উষ্ণ গরম থাকতে থাকতে এই তেজপাতা জলটি খেয়ে নিন।
তাহলে আপনার হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে যাবে।
শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা দূর করেঃ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে
তেজপাতার ভূমিকা অপরিসীম। শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, বহুদিনের পুরনো কাশি ইত্যাদি
সারাতে এই তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার। তেজপাতার মধ্যে বিশেষ ধরনের যৌগ থাকে, যা
ব্যথা বেদনা কমাতে সাহায্য করে ও শরীরকে সুস্থ রাখে।তেজপাতা নির্যাস এর তেল
বুকে ভালো করে আলতো হাতে মালিশ করবেন। তাহলে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা অনেকাংশেই
দূর হবে।
হজমশক্তি বাড়ায়ঃ মানবদেহের পরিপাকতন্ত্র ব্যবস্থায় বেশ প্রভাব ফেলে
তেজপাতা। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয় এবং শরীরকে আরও ভালোভাবে
কাজ করতে সহায়তা করে। তেজপাতায় রয়েছে এমন জৈব যৌগ, যা পেটের অসুখ সারাতে
সাহায্য করে। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) বা অন্ত্রের স্বাভাবিক
কার্যকারিতার ত্রুটিজনিত সমস্যায় তেজপাতা খুব কার্যকর। অনেক সময় শরীর জটিল
প্রোটিন সহজে হজম করতে পারে না, তেজপাতা তা হজমে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ তেজপাতার পানি শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
সরবরাহ করে; যা আমাদের শরীরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইনসুলিন তৈরি করতে সাহায্য
করে। ভালো ফলাফলের জন্যে একটানা ৩০ দিন তেজপাতার পানি খেতে হবে। এর জন্য ১৫টি
তেজপাতার সাথে ৩ গ্লাস পানি গরম করে ১ গ্লাস করতে হবে। তারপর ঠান্ডা করে
খাবার গ্রহণের পূর্বে পান করতে হবে দিনে ২ বার করে।
মানসিক রোগ নিরাময়ে সহায়কঃ দীর্ঘদিন মনের অশান্তি থাকায় মানুষের
মনে শান্তি থাকে না। তাই বর্তমান যুগে মানুষ নানা সমস্যার কারণে মানসিকভাবে
ভেঙে পড়েন। মানসিক সমস্যার কারণে আমরা নানা ধরনের ঔষধ সেবন করি। আপনি যদি
মানসিক সমস্যার প্রথম ধাপে তেজপাতা ব্যবহার করেন তাহলে আপনার মানসিক সমস্যা
অতি সহজেই নিরাময় হবে। তেজপাতা কে তিন চার দিন রোদে শুকনো করে নিতে
হবে।তারপর মিক্সিতে তেজপাতা কে ভালো করে গুঁড়ো করে নিতে হবে। এই গুঁড়ো করা
তেজপাতা তরকারিতে দিয়ে কিংবা জলে সিদ্ধ করে করে খেলে আপনার নানা রকম মানসিক
রোগ দূর হবে।
ওজন কমাতে সহায়তা করেঃ তেজপাতা ওজন কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
তেজপাতা এমন একটি ভেষজ উপাদান যা খিদে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তেজপাতা
খেলে আমাদের শরীরের ক্যালরি ক্ষয় হয় এবং শরীর সতেজ থাকে এর ফলে আমাদের ওজন
শরীরের তুলনায় ঠিক থাকে। সকালে ১ কাপ গরম জলে একটি তেজপাতা দিয়ে ২ থেকে
৩মিনিট ভালো করে ঢাকা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। ফোটানো এই জলটি সকালে সেবন করুন। এক
সপ্তাহের মধ্যেই দেখবেন আপনার শরীরের মেদ এবং ক্যালরি ক্ষয় হয়েছে এবং
শরীরটা আগের থেকে অনেক সতেজ হয়ে উঠেছে।
চুলের বৃদ্ধি ও খুশকি তাড়ায়ঃ খুশকি ও চুল পড়ে যাওয়া নিয়ে বিপাকে
আছেন? চুলের যত্নে তেজপাতায় রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কয়েকটি তেজপাতা
গরম পানিতে সিদ্ধ করুন। কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা হতে দিন। এবার এ পানি দিয়ে চুল ও
স্কাল্প ধুয়ে ফেলুন। অবশ্যই শ্যাম্পু করার পর এটি করবেন। মাথার ত্বক
চুলকাচ্ছে? তেজপাতা বেটে নারিকেল তেলের সঙ্গে মেশান। স্কাল্পে লাগিয়ে ৩০ মিনিট
রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়ঃ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও বলিরেখা দূর করতে
তেজপাতার জল খুব উপকারী। ৫টি তেজপাতার সাথে ২ গ্লাস পানি গরম করে নিতে হবে।
তারপর পানিটা একটি বড় পাত্রে নিয়ে তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে ভাপটা নিতে হবে। এটি
ত্বকের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়।
চুলের যত্নেঃ চুলের সব রকম সমস্যা দূর করতে তেজপাতা বিশেষ কার্যকরী একটি
উপাদান।nচুলের গোড়াকে শক্ত ও মজবুত করতে তেজপাতায় থাকা ভেষজ উপাদান যেমন
আন্টি ব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টি ছত্রাক বিশেষ সাহায্য করে। চুলের গোড়াকে একদিকে
যেমন শক্ত করে অন্যদিকে চুলকে বিভিন্ন ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, পোকার হাত থেকে
রক্ষা করে এই তেজপাতা। মাথায় খুশকি হলে তেজপাতা ভেজানো জল মাথায় ঢালুন, এই জল
দিয়ে চুলের গোড়া ভালো করে ধুয়ে নিন। মুহূর্তের মধ্যে চলে যাবে খুশকি এবং
চুলের গোড়া মজবুত হবে চুল মসৃণ ও উজ্জ্বল ঝলমলে হয়ে উঠবে।
ত্বকের যত্নেঃ তেজপাতা ত্বকের যত্নের জন্য বিশেষ উপকারী একটি উপাদান।
তেজপাতার অপরিহার্য তেল প্রসাধনী শিল্পে, ক্রিম এবং সাবান তৈরিতে ব্যবহার করা
হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধ জাত প্রসাধনী তৈরি করতেও তেজপাতা ব্যবহার করা
হয়। এটি ত্বকে গভীরভাবে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। কারণ এর মধ্যে আছে
অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট বৈশিষ্ট্য। এছাড়াও তেজপাতাকে ত্বকের ফুসুরি, কালো দাগ ছোপ,
ত্বকের চুলকানি নানা ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এই তেজপাতা।
সাত থেকে আটটা কাঁচা তেজ পাতা নিন। খানিক পরিমান জল নিয়ে ভালো করে তেজপাতা
ধুয়ে নিন। ধুয়ে রাখা তেজপাতা মিক্সি কিংবা সিলে বেটে নিন। বাটা এই তেজপাতা
যেখানে কালো ছোপ হয়েছে কিংবা ফুসকুড়ি,ব্রণ বা উজ্জ্বলতা হারিয়ে গেছে সেখানে
এই পেস্টটি লাগান। ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে দিন। তারপর উষ্ণ গরম জল দিয়ে
ভালো করে ধুয়ে নিন হাফ। এইভাবে সপ্তাহে তিন দিন কিংবা চার দিন ব্যবহার করলেই
আপনার ত্বক উজ্জ্বল ফর্সা হয়ে উঠবে।
অনিদ্রা দূর করতেঃ বর্তমান যুগে একটি সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। এই সমস্যাটি
হলো নানা কাজের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ঠিক করে ঘুম হয় না| এমনকি সারাদিন
শেষেও আমাদের কাজ শেষ না হওয়ার কারণে চারিপাশের নানা রকম প্রেসার আমাদের
মাথায় থাকে। এই প্রেসারের কিংবা দুশ্চিন্তার কারণেও আমাদের দীর্ঘদিন ধরে ঘুম
হয় না। আর এই অনিদ্রার কারণে আমাদের শরীরে নানা রকম হরমোন ক্ষরণের সমতা
ঠিকভাবে বজায় থাকে না।
আর হরমোন ক্ষরণই যেহেতু আমাদের শরীরকে নিয়ন্ত্রিত করে তাই ঠিকভাবে হরমোন ক্ষরণ
না হলে আমাদের শরীরের নানা রোগ দেখা দেয়। তেজপাতা অনিদ্রা কিংবা মানসিক অবসাদ
দূর করতে সাহায্য করে।বাড়ির যে রুমে আপনি ঘুমোন সেই রুমে ঘুমানোর পাঁচ থেকে দশ
মিনিট আগে একটা পাত্রে তেজপাতা নিয়ে আগুন ধরিয়ে ধোঁয়া করে নিন। ৫-৬ মিনিট
এইভাবে ধোঁয়া দিন। তারপরে ঘুমোন। সারারাত আপনার ঘুম খুব ভালো হবে।
দাঁতের জন্যঃ তেজপাতা দাঁতের জন্য বিশেষ কার্যকারী একটি উপাদান। তেজপাতা
গাছের ডালে ও পাতায় উদ্বায়ী তেল থাকে। যেটা আমাদের শরীরের রক্ত প্রবাহকে
উন্নত করতে সাহায্য করে এবং ঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন করতে সাহায্য করে। এছাড়াও
তেজপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, যা মাড়িকে শক্ত করতে সাহায্য করে।
তেজপাতার ছাই দিয়ে ব্রাশ করলে মাড়ী শক্ত হয়।
তেজপাতা মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বিনাশ করতে সাহায্য করে। তেজ পাতার অপরিহার্য
তেল মুখের মধ্যে থাকা বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে, দাঁতকে শক্ত ও
মজবুত রাখে। তেজপাতা পুড়িয়ে ছাই তৈরি করুন। সেই ছাই দিয়ে দাঁত মাজুন দাঁতে
ব্যথা থাকলে সেই ব্যথা দূর হবে।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ তেজপাতায় রয়েছে রুটিন ও ক্যাফেক
অ্যাসিড। এ উপাদানগুলো হার্টের দেয়ালকে মজবুত করে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা
কমিয়ে দেয়। উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
ব্যথা উপশম করেঃ তেজপাতা প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি যেকোনো ধরনের
মাথা ব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা এমনকি বাতের ব্যথা উপশমে কার্যকরী। তেজপাতা ও
রেড়ির পাতার ক্যাস্টর পেস্ট আক্রান্ত স্থানে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখলেই ব্যথা
কমে যাবে। এছাড়া পাতার তেল কপালে ম্যাসাজ করলে মাথা ব্যথা থাকবে না।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করেঃ তেজপাতা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে। এতে
ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন উপাদান থাকায় এটি ক্যান্সার কোষকে নিয়ন্ত্রণ
করতে পারে। একটি গবেষণা অনুযায়ী তেজপাতা ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কাজ
করে।
ক্ষত নিরাময় করেঃ তেজপাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও
মাইক্রোব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটি ক্ষত সারাতে দারুণভাবে কাজ করে। এটি
ক্যান্ডিডার মত ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।
গলা খুশখুশ ও কাঁশিঃ আপনি যদি ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হন ও কাঁশির সমস্যায়
ভোগেন তাহলে ব্যাকটেরিয়া তাড়াতে এটি আপনাকে চমৎকারভাবে সাহায্য করবে। ৪-৫টি
তেজপাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করুন। পানি কুসুম ঠাণ্ডা করে নিন। একটি পরিষ্কার
কাপড় পানিতে ভিজিয়ে বুক মুছুন। কয়েকবার এটি করুন। আর খেয়াল রাখবেন পানি
যেনো খুব বেশি গরম না হয়।
কিডনির পাথরের চিকিৎসায়ঃ তেজপাতা শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ কমাতে সাহায্য
করে। শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে এটি কিডনির সমস্যা করে ও অন্যান্য
গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে।
উদ্বিগ্নতা ও চাপ কমায়ঃ যদি দিনের শেষে আপনার মনমেজাজ ভালো না লাগে
তাহলে এক কাপ তেজপাতার চা খেয়ে দেখতে পারেন। এটি আপনার স্নায়ু শান্ত করে ও
উদ্বিগ্নতা কমায় এমনকি ভালো ঘুমের জন্যেও উপকারী।
তেজপাতা খাওয়ার নিয়ম
তেজপাতা খাওয়ার নিয়ম রয়েছে অনেক। এটি সাধারণত রান্না করা খাবারের সাথে খাওয়া হয়। তেজপাতাকে পুরো বা গুঁড়া করে ব্যবহার করা যেতে পারে। পুরো তেজপাতা রান্নার শুরুতে যোগ করা উচিত যাতে তারা তাদের স্বাদ এবং সুগন্ধটি খাবারে ছাড়তে পারে। গুঁড়া তেজপাতা রান্নার শেষে যোগ করা যেতে পারে। তেজপাতা অরুচি দূর করে। চলুন জেনে নিই কি কি নিয়মে তেজপাতা খাওয়া যায়।
রান্নায় ব্যবহারঃ তেজপাতা রান্নার সময় খাবারে সুগন্ধ ও স্বাদ
যুক্ত করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি বিভিন্ন ধরণের খাবারে ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন বিরিয়ানী,
খিচুড়ি, স্যুপ, ডাল, মাংস এবং সবজির সাথে। এটি সাধারণত পুরো অবস্থায় রান্নায় যোগ করা হয় এবং পরে তুলে নেওয়া হয়।
তেজপাতার চাঃ ৩-৪টি তেজপাতা নিয়ে প্যানে দিন। এবার তাতে ১ কাপ জল
দিয়ে পাঁচ মিনিট কম আঁচে ফুটিয়ে নিন। এবার তা নামিয়ে ঠান্ডা অথবা গরম
দু’ভাবেই পান করতে পারেন। রোজের বানানো দুধ চায়েও তেজপাতা যোগ করতে পারেন।
তেজপাতার পানিঃ প্রথমে একটি প্যানে পানি দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে
নিন। এরপর এতে কিছু তেজপাতা দিন। এবার কয়েক মিনিট সেদ্ধ করুন। জল ভালোভাবে
ফুটে উঠলে গ্যাস বন্ধ করে তাতে দারুচিনি গুঁড়ো দিন। কিছুক্ষণ পর জল কিছুটা
ঠান্ডা হলে কাপে ফিল্টার করে কফির মতো পান করুন। এতে আপনি অনেক উপকার
পাবেন।
তেজপাতার পুষ্টিগুন
তেজপাতার পুষ্টিগুণ রয়েছে ব্যপক। তেজপাতায় রয়েছে ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান।
এতে আছে ক্যালশিয়াম, কপার, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ,
ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, রাইবোফ্লাভিন এবং জিঙ্কের মতো অত্যন্ত উপকারী
কিছু উপাদান। আর এই সমস্ত উপাদান একত্রে মিলেই কিন্তু তেজপাতাকে এক অনন্য
মশলায় পরিণত করেছে। তাই আর দেরি না করে তেজপাতার অনন্য পুষ্টিগুণ সম্পর্কে
জেনে নিন।
খাদ্য শক্তি ৩১৩ ক্যালোরি
জল ৫.৪৪ গ্রাম
প্রোটিন ৭.৬১ গ্রাম
ফ্যাট ৮.৩৬ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ৭৪.৯৭ গ্রাম
ফাইবার ২৬.৩ গ্রাম
আয়রন ৪৩.০ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ৮৩৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ৪৬.৫ মিলিগ্রাম
সকালে তেজপাতা ফোটানো জল খাওয়ার উপকারিতা
সকালে তেজপাতা ফোটানো জল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হবেন। ৫
থেকে ১০ মিনিটের জন্য জলে তেজপাতা দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। এর পর আঁচ বন্ধ করে
জলটা ঠান্ডা হতে দিন। এ বার এই জল ফিল্টার করে কাপে নিয়ে গরম গরম পান করুন।
আপনি চাইলে এতে সামান্য আদা বা লেবুর রস মেশাতে পারেন। সকালে তেজপাতা ফোটানো
জল খেলে মিলবে দারুণ উপকার। জানুন এই জল খেলে কী-কী উপকার পাবেন।
- শরীরে জমা টক্সিন দূর করে তেজপাতা। ফলে লিভারের কার্যক্ষমতা উন্নত হয়। রক্তে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেজপাতার ভূমিকা রয়েছে।
- তেজপাতায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। যা উপাদান শারীরবৃত্তীয় নানা কাজকর্ম সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। আবার, তেজপাতার মধ্যে থাকা ভিটামিন-সি ত্বক এবং চুলের নানা সমস্যার সমাধান করে।
- সিনেয়োল এবং ইউজেনল নামক দুটি উপাদান রয়েছে তেজপাতায়। হজমের সমস্যায় দারুণ কাজ করে এই দুই উপাদান।
- ফাইবারের অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস হল তেজপাতা। জলের সঙ্গে মিশলে তা আরও সহজপাচ্য হয়ে ওঠে। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ফাইবারের প্রয়োজন রয়েছে।
- রক্তে ইনসুলিন হরমোনের উৎপাদন এবং ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে তেজপাতা। রক্তে শর্করা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে সকালে তেজপাতা ভেজানো জল খেতেই পারেন।
- তেজ পাতায় রয়েছে ভরপুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এই পাতা।
- পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা মেটাতে সাহায্য করে এটি। এ ছাড়া বদহজমের সমস্যা মেটাতেও সাহায্য করে এই পাতা।
- শরীরের ক্লান্তি দূর করতে জুড়ি নেই তেজপাতার জলের। শরীরে দারুণ শক্তি জোগায় এটি। তাই রোজ খেতে পারেন এই জল।
- এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাডা়তে সাহায্য করে। এ ছাড়া ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডকেও সুরক্ষিত রাখে।
- এ বার আসা যাক কীভাবে খেলে কাজ হবে এই জল। প্রথমে তেজপাতা নিন। এ বার পাতাগুলো ভালো করে ধুয়ে নিন। এক গ্লাস জল ফুটিয়ে নিন। জল ফুটে উঠলে তাতে কিছু তেজপাতা দিন।
তেজপাতার ধোয়ার উপকারিতা
তেজপাতার ধোয়ার উপকারিতা জানতে চেয়ে গুগল কিংবা ইউটিউবে সার্চ করে থাকে
অনেকে।তেজপাতার গুণের শেষ নেই। এর কিছু উপকার পেতে হলে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ
করে একটি তেজপাতা পুড়িয়ে ফেলুন দেখবেন মিষ্টি গন্ধে ঘর ভরে গেছে। এই সুগন্ধ
শরীরও মনের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও তেজপাতা পোড়ার গন্ধ শারীরিক ক্লান্তি
দূর করবে, গাটের ব্যথা, ভাইরাল ইনফেকশন ইত্যাদি থেকেও মুক্তি দিবে।
অন্যদিকে আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে ও এই সুগন্ধ বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। যার ফলে
মনে আসে মানসিক শান্তি। তাই খুব সহজেই শরীরের এবং মনের প্রশান্তির জন্য আপনি একটি
তেজপাতা পুড়িয়ে তেজপাতা ধোয়ার নিতে পারেন। চলুন তাহলে দেরী না করে এবার জেনে
নেওয়া যাক তেজপাতার ধোয়ার কি কি উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে।
আরও পড়ুনঃ থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
১। যাদের বুকে কফ জমে থাকে, তাদের জন্য তেজপাতা পোড়ানো ধোয়া বেশ উপকারী। যারা
সর্দি কাশিতে ভুগছেন তারা তেজপাতা জ্বালিয়ে তার ধোঁয়া হাঁ করে মুখ দিয়ে
টানলে বেশ আরাম পাবেন। তেজপাতার ধোয়া প্রাকৃতিক এয়ার পিউরিফায়ার।
২। আমাদের প্রত্যেকের শরীরেই কোনো না কোনো রোগ থাকে। কেউই শতভাগ নিরোগ নই।
এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরি। আপনি যদি প্রতিদিন একটি
তেজপাতা পুড়িয়ে তার গন্ধ নেন তবে শরীর অনেকটাই সুস্থ থাকবে। সেইসঙ্গে বাড়বে রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা।
৩। আপনি যদি ডায়াবেটিসের লক্ষণ বুঝতে পারেন তবে ঘরোয়া উপায়ে এর প্রতিকার সম্ভব।
অবাক করা বিষয় হলেও সত্যি যে, তেজপাতা পোড়ানো ধোঁয়া নাকে গেলে শরীরে ইনসুলিনের
মাত্র বাড়ে। এর ফলে কমে ডায়াবেটিসের মাত্রা। ডায়াবেটিসের পাশাপাশি অন্যান্য
রোগও দূরে রাখে এই তেজপাতা পোড়ানো ধোঁয়া।
৪। দিনশেষে সবার শরীরেই ক্লান্তি ভর করে। কোনো কাজে আর মন সায় দেয় না যেন। তখন
শরীর চায় অলসতা, বিশ্রাম। এই ক্লান্তিবোধ কাটাতে সাহায্য করতে পারে তেজপাতা।
এছাড়াও এটি স্নায়ুর কার্যক্ষমতা বাড়ায়, সেইসঙ্গে শক্তিশালী করে স্মৃতিশক্তিও।
ক্লান্তি দূর করে আপনাকে সতেজ হতে সাহায্য করবে তেজপাতা।
৫। বাড়িতে কীটপতঙ্গের উপদ্রব বেড়ে গেলে কাজে লাগাতে পারেন তেজপাতা। তেজপাতা
পোড়ানোর পরে যে ধোঁয়ার সৃষ্টি হয় তা পোকামাকড় দূর করে। বাড়ি থেকে মশা-মাছি
তাড়াতে ব্যবহার করতে পারেন এই প্রাকৃতিক পদ্ধতি। এতে কোনোরকম
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় নেই।
৬। এটি নিয়মিত ঘরে জালালে ঘরের বাতাস পরিশুদ্ধ হবে এবং পোকামাকড়ের উপদ্রব
কমবে। মানসিক ক্লান্তির হাত থেকে মুক্তি পেতে তেজপাতার ধোয়া বেশ উপকারী।
তেজপাতা কখন ও কিভাবে খেলে উপকার পাবেন
তেজপাতা কখন ও কিভাবে খেলে উপকার পাবেন তা জানতে চান অনেকে। তেজপাতা তার ঔষধি
গুণাগুণের জন্য বহুল পরিচিত, তবে এর সঠিক ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া
সম্ভব। তেজপাতা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়—চা, রান্নায় মসলা, তেলের রূপে,
অথবা সরাসরি পেস্ট হিসেবে। এটি কেবল খাবারে স্বাদ এবং সুগন্ধ বাড়ায় না,
শরীরের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমের উন্নতিতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও
ভূমিকা রাখে। নিচে তেজপাতা কখন এবং কীভাবে খাওয়া উচিত তা সংক্ষেপে তুলে ধরা
হলো।
সকালে তেজপাতার চা খাওয়ার উপকারিতাঃ তেজপাতা দিয়ে তৈরি চা হজম শক্তি
উন্নত করতে এবং শরীরের প্রদাহ কমাতে সহায়ক। সকালে খালি পেটে এক কাপ তেজপাতা
চা পান করলে এটি শরীরকে ডিটক্স করতে সহায়তা করে, লিভারকে সক্রিয় করে এবং
হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। তেজপাতা চা তৈরি করতে, ২-৩টি শুকনো তেজপাতা ১০
মিনিট ধরে পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানি পান করুন। এটি শরীরের ইনফ্লেমেশন
কমায়, মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য
করে।
রাতে তেজপাতার রস খাওয়ার উপকারিতাঃ রাতে ঘুমানোর আগে তেজপাতার রস পান
করলে এটি শরীরকে শিথিল করে এবং একটি ভালো ঘুম নিশ্চিত করতে সহায়ক। তেজপাতার
মধ্যে থাকা সাইনিয়োল নামক যৌগ নার্ভকে শান্ত করে এবং স্ট্রেস কমাতে সহায়ক।
এটি শরীরকে প্রশান্তি দেয়, যা রাতের ভালো ঘুমের জন্য উপকারী। তেজপাতার রস
তৈরি করতে কয়েকটি তেজপাতা গরম পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি পান করুন। এটি শরীরের
অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে শিথিল করে এবং সঠিক ঘুমের চক্র তৈরি করে, যা
সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
খাওয়ার আগে বা পরে তেজপাতা পেস্ট খাওয়ার উপকারিতাঃ তেজপাতার
পেস্ট খাওয়ার আগে বা পরে গ্রহণ করলে পাকস্থলীর সমস্যা এবং বদহজমের সমস্যা
থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি বিশেষভাবে উপকারী যারা হজমের সমস্যা বা গ্যাসের
সমস্যায় ভুগছেন। তেজপাতা গুঁড়ো করে পানি বা মধুর সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি
করুন এবং তা খাওয়ার আগে বা পরে গ্রহণ করুন। এটি পেটের গ্যাস এবং অম্লতা
কমাতে দ্রুত কাজ করে এবং বদহজম দূর করে। যাদের দীর্ঘমেয়াদী পেটের সমস্যা
রয়েছে, তাদের জন্য এটি নিয়মিত গ্রহণে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
তেজপাতার তেলের উপকারিতাঃ তেজপাতা তেল সরাসরি খাওয়া না গেলেও
এটি বিভিন্ন ত্বক ও চুলের সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা যেতে পারে। তেজপাতার
তেল ত্বকে ম্যাসাজ করলে এটি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের সজীবতা বজায়
রাখে। তেল চুলের গোড়ায় প্রয়োগ করলে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং চুল
পড়ার সমস্যা কমে। তেজপাতার তেল ব্যবহারের সময় মাথার ত্বক এবং ত্বকের
অন্যান্য স্থানে আলতো করে ম্যাসাজ করলে এটি দ্রুত শোষিত হয় এবং কার্যকরীভাবে
কাজ করে।
তেজপাতা দিয়ে বাষ্প গ্রহণের উপকারিতাঃ শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা,
সর্দি, কাশি বা ঠান্ডা লাগার ক্ষেত্রে তেজপাতা বাষ্প নেওয়া অত্যন্ত কার্যকর।
এক পাত্র পানিতে কয়েকটি তেজপাতা ফুটিয়ে সেই বাষ্প শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ
করলে শ্বাসনালী পরিষ্কার হয় এবং নাক বন্ধ হওয়া সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া
যায়। এই পদ্ধতিটি রাতে শোয়ার আগে ব্যবহার করা হলে এটি ঘুমের সময়
শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এবং ভালো ঘুম নিশ্চিত করে।
তেজপাতার চা এর উপকারিতা
তেজপাতার চা এর উপকারিতা শরীরের জন্য ভালো। তেজপাতার অসীম গুণের অধিকারী ভেষজ
পাতা। স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এই জাদুকরী পাতায় রয়েছে কপার, সেলেনিয়াম,
আয়রন, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মতো বিভিন্ন
উপকারী উপাদান। এছাড়া রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ও ফলিক অ্যাসিডও। ফলে
তেজপাতা চা স্বাভাবিকভাবেই স্বাস্থ্যগুণে অনন্য। দেখে নিন তেজপাতা চা পান
করার কিছু উপকারী দিক
আরও পড়ুনঃ বথুয়া শাকের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
- প্রথমত টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর ইনসুলিন সেনসিটিভিটি উন্নত করতে সাহায্য করে।
- ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও এর প্রভাব রয়েছে।
- তেজপাতা চা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্যে প্রতিরোধে কার্যকর। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় যেহেতু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও আয়রন আছে।
- তেজপাতায় আছে ভিটামিন সি যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- তেজপাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান সংক্রমণ থেকে দূরে রাখে।
- স্ট্রেস কমাতে তেজপাতা কার্যকর।
- ক্যান্সারের চিকিৎসায় এর ব্যবহার আছে। প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতেও কার্যকর।
- তেজপাতার চায়ে থাকা প্রদাহরোধকারী উপাদান আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে উপকারী।
- সিজন চেঞ্জের এই সময় অনেকেই ঠান্ডা লাগার সমস্যায় ভোগেন। তেজ পাতার অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল গুণ ঠান্ডা লাগতে দেয় না। সঙ্গে এটি বুকে জমা কফ বের করতেও সাহায্য করে।
- তেজপাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যও এই চা বিশেষ উপকারি।
- উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ও শরীর থেকে ব্যাড কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে তেজপাতার চা।
- তেজপাতার চা হজমক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই যারা বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন তারাও এই চা অবশ্যই খান।
কীভাবে বানাবেনঃ
তেজপাতার চা বানানোর জন্য প্রয়োজন তিনটি তেজ পাতা, তার সঙ্গে একটি
দারুচিনি বা এক চামচ দারুচিনির গুঁড়ো এবং পরিমাণ মত লেবুর রস ও মধু। দু
কাপ জলে তেজ পাতা ও দারুচিনি দিয়ে ৫ থেকে ৬ মিনিট ফুটিয়ে নিন। গরম হয়ে
গেলে কিছুক্ষণ রেখে দিন ঠাণ্ডা হওয়া অবধি। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে স্বাদ অনুযায়ী
লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে নিন। এই চা-টি খেয়ে আপনি আপনার দিন শুরু করতে
পারেন। প্রতিদিনের বানানো দুধ চায়েও তেজপাতা যোগ করতে পারেন।
রূপচর্চায় তেজপাতার উপকারিতা
রূপচর্চায় তেজপাতার উপকারিতা ও সৌন্দর্য চর্চায় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে যুগ
যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে তেজপাতা। কিন্তু আপনি কি জানেন নিজেকে সুন্দর
আর অতুলনীয় করে তুলতে তেজপাতার রয়েছে অতুলনীয় গুণ। অনেকেই জেনে অবাক হবেন
মশলা হিসেবে পরিচিতি থাকলেও সৌন্দর্য চর্চায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে
আসছে এই তেজপাতা। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন
করে এটি। জেনে নিন রূপচর্চায় তেজপাতার কি কি উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে।
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখেঃ তেজপাতার উদ্ভিজ্জ উপাদান ত্বকে বলিরেখা
সৃষ্টির জন্য দায়ী ফ্রি র্যাডিক্যাল নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এর জন্য মুখে
তেজপাতা সেদ্ধ করা পানির ভাপ নেয়া যেতে পারে। তেজপাতা সেদ্ধ করা পানির
ভাপ অ্যান্টি এইজিং সলিউশন হিসেবে কাজ করে।
ত্বক উজ্জ্বল করেঃ বিউটি ক্রিমের দৌরাত্ম্য শেষ হয়নি আমাদের
জীবনে। কিন্তু ইতিমধ্যেই আমরা সৌন্দর্য চর্চায় ভেষজ উপাদানের সহায়তা
নিচ্ছি ত্বক উজ্জ্বল করতে। তেজপাতা ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করতে পারে।
বেশি পানিতে তেজপাতা সেদ্ধ করুন। সেদ্ধ পানি ঠাণ্ডা করুন। তারপর সে পানি
দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তেজপাতা সেদ্ধ ঠাণ্ডা পানি দিয়ে নিয়মিত মুখ
ধোয়ায় ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ার পাশাপাশি ব্রণের জন্যও এটি উপকার করবে।
শরীরের দুর্গন্ধ কমায়ঃ তেজপাতার গুঁড়ো গরম পানিতে ভিজিয়ে স্নান
করলে শরীরের দুর্গন্ধ কমে। কত কিছুই তো আমরা ব্যবহার করি শরীর থেকে
দুর্গন্ধ তাড়াতে। এবার শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে প্রায় বিনা পয়সার একটি
টিপস দেওয়া যাক আপনাদের। রান্নার জন্য কেনা শুকনো তেজপাতা গুঁড়ো করে
নিন।
পরিষ্কার এক টুকরো কাপড়ে গুঁড়ো তেজপাতা দিয়ে পুঁটলি বাঁধুন। গুঁড়ো
তেজপাতার সেই পুঁটলি কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন কুসুম গরম পানিতে। তারপর সে
পানি দিয়ে স্নান সেরে নিন। শীতে গরম পানিতে স্নান করার অভ্যাস আমাদের
আছে। এ সময় এই টিপসটি কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন। একদিন তেজপাতা গুঁড়ো
দিয়ে স্নান করলেই হবে না। এটা চালিয়ে যেতে হবে এক নাগাড়ে কিছুদিন।
খুশকি দূর করেঃ আপনার প্রিয় ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ব্যবহার করুন,
তাতে কোনো সমস্যা নেই। শুধু মাঝে মাঝে শ্যাম্পুর জায়গায় তেজপাতা সেদ্ধ
করা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মাথা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এতে খুশকি দূর হওয়ার
পাশাপাশি চুল পড়াও কমে যাবে। চুল পড়ে যাওয়া জায়গাগুলোতে তেজপাতার
এসেনশিয়াল ওয়েল ব্যবহার করুন। তাতে চুল আর উঠবে না।
দাঁত উজ্জ্বল করেঃ দাঁত উজ্জ্বল করতে মাঝে মাঝে দাঁতে কাচা
তেজপাতা ঘষে নিলে দাঁত উজ্জ্বল হয়। ব্রাশ তো প্রতিদিন করেনই। সেটা
অব্যাহত রাখুন। নিয়ম করে মাঝে মাঝে দাঁতে কাচা তেজপাতা ঘষে নিন। কাচা
তেজপাতা মাউথওয়াশ হিসেবেও কাজ করবে আপনার মুখে।
ত্বকের যত্নে তেজপাতা ব্যবহারের উপকারিতা
ত্বকের যত্নে তেজপাতা ব্যবহারের উপকারিতা রয়েছে প্রচুর। তেজপাতা ত্বকের
বলিরেখা দূর করে তারুণ্য ধরে রাখেতে সহায়তা করে। তেজপাতার উদ্ভিজ্জ উপাদান
ত্বকে বলিরেখা সৃষ্টির জন্য দায়ী ফ্রি র্যাডিক্যাল নিষ্ক্রিয় করে দেয়।
এজন্য মুখে তেজপাতা সেদ্ধ করা পানির ভাপ দিতে পারেন। তেজপাতা সেদ্ধ করা
পানির ভাপ অ্যান্টি এইজিং সলিউশন হিসেবে কাজ করে। হাতের কাছে থাকা আস্ত
তেজপাতা কীভাবে ব্যবহার করবেন সৌন্দর্য চর্চায় সে বিষয়ে কিছু টিপস জেনে
নিন।
ব্রণের সমস্যায়ঃ মুখে যদি প্রায়শই ব্রণর সমস্যা হয়, তাহলে সেই
সমস্যাও মেটাতে পারে তেজপাতা। পানিতে কয়েকটি তেজপাতা ফুটিয়ে মিনিট দশেক
রাখার পর পানিটা ছেঁকে নিন। এবার এ পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। নিয়মিত এই পানি
দিয়ে মুখ ধুলে ব্রণর সমস্যা কমবে।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নেঃ তেজপাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস উপাদান ত্বকের
অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব দূর করে এবং দূষিত পদার্থ দূর করে ত্বককে ব্রণমুক্ত
রাখে। প্রথমে এক কাপ পানির মধ্যে পাঁচটি তেজপাতা সেদ্ধ করুন। এবার রুমের
তাপমাত্রায় ঠান্ডা করুন। এবার এর মধ্যে মুলতানি মাটি দিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি
করুন। এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে পানি
দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তৈলাক্ত ত্বক ব্রণমুক্ত রাখতে চাইলে এই প্যাক সপ্তাহে
অন্তত একদিন ব্যবহার করুন।
ত্বক সতেজ রাখতেঃ দুই কাপ পানির মধ্যে পাঁচটি তেজপাতা গরম করুন।
এবার পাঁচ মিনিটের জন্য ঠান্ডা করুন। বড় একটি বাটিতে এই পানি নিয়ে তোয়ালে
দিয়ে মুখ ঢেকে পাঁচ মিনিট স্টিম নিন। দেখবেন, এক নিমেষেই আপনার ত্বকের
ক্লান্তি দূর হয়ে সতেজ হয়ে যাবে।
ত্বকে যত্নে তেজপাতার টোনারঃ এক কাপ পানির মধ্যে চারটি তেজপাতা
সেদ্ধ করুন। এই পানি ঠান্ডা করে এর মধ্যে দুই টেবিল চামচ গোলাপজল দিন। এবার
এই মিশ্রণ বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। দিনে দুবার এই মিশ্রণ দিয়ে মুখ মুছে
নিন। এটি ত্বকে প্রাকৃতিক টোনারের কাজ করবে।
চুলের যত্নে তেজপাতার উপকারিতা
চুলের যত্নে তেজপাতার উপকারিতা রয়েছে ব্যপক। শীতকাল আসার সাথে সাথে অনেকেই
খুশকি এবং চুল পড়ার সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে
তেজপাতা, একটি কার্যকরী সমাধান হতে পারে। তেজপাতা সাধারণত রান্নার কাজে ব্যবহৃত
হয়, তবে এটি চুলের যত্নেও অত্যন্ত কার্যকর। তেজপাতার গুণাগুণ চুলের সুরক্ষায়
অপরিসীম। মাথার ত্বক সুস্থ ও খুশকিমুক্ত রাখার মাধ্যমে চুলের স্বাস্থ্য ও
সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
তেজপাতা ব্যবহারের জন্য প্রথমে ১০-১৫টি ভালো মানের তেজপাতা বাছাই করে ১ লিটার
পানিতে মৃদু আঁচে ফুটিয়ে নিতে হবে। যখন পানির রং পরিবর্তিত হবে এবং পরিমাণ ৫০০
মিলি হবে, তখন এটি ঠান্ডা করে একটি স্প্রে বোতলে ঢেলে নিতে হবে। এই স্প্রে
মাথার ত্বক ও চুলের যে কোনো সমস্যা সমাধানে সহায়ক। ১ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক পানিতে
গোসল করলে ফলাফল পাওয়া যাবে। জেনে নিন চুলের যত্নে তেজপাতার বিভিন্ন উপকারিতাগুলো।
মাথার খুশকি দূর করতেঃ বিভিন্ন কারণে আমাদের মাথায় খুশকির আক্রমণ হয়।
খুশকিতে চুলের স্বাস্থ্যহানি হয়। এবং চুল তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারায়।
তেজপাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান খুশকি দূর করতে
সাহায্য করে। তিন থেকে চারটি তেজপাতা ভালো করে গ্রাইন্ডার দিয়ে গুঁড়ো করে নিতে
হবে। গ্রাইন্ডার না থাকলে শিলপাটাতেও বেটে নিতে পারেন। এরপর পরিমাণমতো নারকেল
তেলের সঙ্গে মিশিয়ে হালকা গরম করে মাথার তালুতে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে।
এরপর একটি তোয়ালে গরম পানিতে ডুবিয়ে পানি নিংড়ে নিয়ে তা দিয়ে মাথা ভালো করে
পেঁচিয়ে নিতে হবে। এভাবে ৩০মিনিট রেখে তারপর মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি সপ্তাহে
একবার করে নিয়মিত করলে মাথা থাকবে খুশকিমুক্ত।
প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবেঃ রুক্ষ চুলে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে প্রাকৃতিক
কন্ডিশনার হিসেবে তেজপাতার জুড়ি নেই। আধা লিটার পানিতে চার থেকে পাঁচটি তেজপাতা
দিয়ে ফুটিয়ে নিন। ফুটানো হয়ে গেলে একটি পাত্রে ঢেলে ঠান্ডা করে নিন এবং
তেজপাতাগুলো ছেকে আলাদা করে ফেলে দিন। চুলে শ্যাম্পু করার পর এই পানি চুলে
মাখিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এতে চুল প্রাকৃতিকভাবেই কন্ডিশনিং হয়। রুক্ষতা দূর করে চুল হয় ঝলমলে ও মসৃণ।
চুল পড়া বন্ধ করতেঃ তেজপাতার নির্যাস মাথার তালুর অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ
নিয়ন্ত্রণ করে এবং চুলের গ্রন্থিকোষগুলোতে বাড়তি শক্তির জোগান দেয়। ফলে, চুলের
বৃদ্ধি আরও দ্রুত হয়। এ জন্য তেজপাতা পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে তা দিয়ে চুল
ধুতে পারেন। তেজপাতার পানি ব্যবহারের কিছুক্ষণ পর অবশ্যই পরিষ্কার পানি দিয়ে
চুল ধুয়ে নিতে হবে। চুল পড়া বন্ধ করতে প্রতিদিন এই তেজপাতার পানির ব্যবহার করা
যেতে পারে।
মাথার চুলকানি কমাতেঃ অনেক সময় মাথার তালুতে বিভিন্ন রকম ফাঙ্গাল বা
ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন দেখা দেয়। এতে মাথার ত্বকে চুলকানি, খুশকি বা র্যাশের
মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় নিয়মিত তেজপাতার পানি ব্যবহার করলে
উপকার পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে আধা লিটার পানি তেজপাতাসহ তিন থেকে চার মিনিট
ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এ পানি নিয়মিত মাথার তালুতে ব্যবহার করলে ফাঙ্গাল
বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন দূর হয়। তবে এই সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করলে বা
দীর্ঘদিনব্যাপী হলে ঘরোয়া চিকিৎসার ওপর নির্ভর না করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের
পরামর্শ নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
তেজপাতার অপকারিতা
তেজপাতার অপকারিতা রয়েছে নানা ধরনের। আমাদের সকলের কাছে খুবই পরিচিত এই
তেজপাতা। আমরা মূলত এই পাতা মসলা হিসেবে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে থাকি। এর
রয়েছে বিভিন্ন ভেষজ গুণাগুণ। তেজপাতার গুণাগুণ অনেক হলেও তা ব্যবহারে হতে হবে
সতর্ক, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তেজপাতার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। চলুন দেখে নেই তেজপাতার কি কি অপকারিতা
রয়েছে।
- গর্ভবস্থায় তেজপাতা বা এর সম্পূরক গ্রহণ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই তাই গর্ভাবস্থায় তেজপাতা ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করবেন।
- তেজপাতা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র কে ধীর করার জন্য অ্যানেস্থেশিয়া ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে। তাই অস্ত্রোপচারের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে এবং পরে এর যে কোন পরিপূরক খাওয়া বন্ধ করা সঠিক সিদ্ধান্ত।
- তেজপাতা গর্ভবতী মা ও সদ্য মায়েদের প্রস্রাবের ইনফেকশন ঘটাতে পারে।
- তেজপাতার অনেক গুণাগুণ থাকা সত্ত্বেও তেজপাতায় এলার্জি জাতীয় উপাদান রয়েছে। তাই যাদের অ্যালার্জি আছে তারা তেজপাতা ব্যবহার করা থেকে রত থাকুন।
- যাদের চোখের বেশি সমস্যা আছে তারা নিকটবর্তী চোখের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তেজপাতা ব্যবহার করবেন।
- এছাড়া সার্জারি রোগীদের দুই সপ্তাহ তেজপাতা খেতে নিষেধ করা হয় কারণ এটি স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
- তেজপাতা সরাসরি স্কিনে বা শরীরে ব্যবহার করলে তেমন ক্ষতি নাই, তবে তা বাজারি কসমেটিক্সে ব্যবহারের ফলে তা এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ডাইবেটিক্স রোগীদের তেজপাতার ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। তেজপাতা রক্তের চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে ব্যঘাত সৃষ্টি করে থাকে।
তেজপাতার উপকারিতা সম্পর্কে শেষকথা
তেজপাতা শুধুমাত্র একটি খাবারের মসলা নয়, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি
গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি উদ্ভিদ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তেজপাতার ঔষধি গুণ আমাদের
হজম শক্তি থেকে শুরু করে সংক্রমণ প্রতিরোধ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং
হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তবে, তেজপাতার কার্যকরী
উপকারিতা পাওয়ার জন্য এর সঠিক ব্যবহার এবং নিয়মিত গ্রহণ করা প্রয়োজন।
তেজপাতা নিয়মিতভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা প্রাকৃতিকভাবে আমাদের
স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারি, তবে যে কোনো প্রাকৃতিক উপাদানের মতোই, এটি
ব্যবহারের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি আজকের এই
আর্টিকেলটি পড়ে তেজপাতার ২০টি উপকারিতা তেজপাতা খাওয়ার নিয়ম ও এর
গুনাগুণ সম্পর্কে জেনে উপকৃত হয়েছেন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url