ত্বীন ফলের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
ত্বীন ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণের কারণে গোটা বিশ্বে পরিচিত। ত্বীন একটি অনন্য
এবং পুষ্টিকর ফল যা বহু শতাব্দী ধরে উপভোগ করা হচ্ছে। ত্বীন শুক্রাণু এবং যৌন
স্বাস্থ্যের সুবিধা সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে। ত্বীন ভিটামিন, খনিজ
এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর যা সুস্থ শুক্রাণু উৎপাদনে সহায়তা করে এবং যৌন
কার্যকারিতা উন্নত করে।
উপরন্তু, ডুমুর ফাইবারের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
করতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। আপনি ত্বীন ফল তাজা বা শুকনো
যেভাবেই উপভোগ করুন না কেন, যে কোনও ডায়েটে একটি দুর্দান্ত সংযোজন এবং আপনার
সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য প্রচুর সুবিধা সরবরাহ করতে পারে।
পেইজ সূচিপত্রঃ ত্বীন ফল খাওয়ার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
- ত্বীন ফলের উপকারিতা
- ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম
- ত্বীন ফলের পুষ্টিগুণ
- পুরুষদের জন্য ত্বীন ফল খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় ত্বীন ফল খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভাবস্থায় ত্বীনফল খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- ত্বকের যত্নে ত্বীন ফলের উপকারিতা
- ত্বীন ফল সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত সাধারণ প্রশ্নোত্তর
- ত্বীন ফলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- ত্বীন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে শেষ কথা
ত্বীন ফলের উপকারিতা
ত্বীন ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন রয়েছে প্রচুর। এই ফলটি দেখতে অনেকটা দেশীয় ডুমুরের
মতো। কিন্তু দেশীয় ডুমুরের তুলনায় এই ফলটি আকারে বড় হয়। এটি অত্যাধিক
সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও রসালো একটি ফল এবং স্বাদে, গন্ধে ও পুষ্টি গুনে তিন বা
ত্বীন ফল অতুলনীয়। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদেশি ফলের মধ্যে খেজুরের পরে ত্বীন ফলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নিচে এই ফলের উপকারিতা সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ক্যানসার প্রতিরোধ করেঃ মরণব্যাধি ক্যানসার দিন দিন বেড়েই চলেছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সচেতন রোগীর প্রাথমিক অবস্থায়
রোগ ধরা পড়লে যথাযথ চিকিৎসায় ক্যানসার পুরোপুরি সেরে যেতে পারে অথবা নিয়ন্ত্রণে
রাখা অনেক সহজ হয়। এজন্য আপনি প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি ত্বীন ফল খেতে পারেন।
ত্বীন ফল ক্যানসারের জন্য খুবই উপকারী। যেসকল নারীরা তাদের ডায়েটের অংশ হিসেবে
রোজ ত্বীন গ্রহন করেন তাদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কম। মূলত ত্বীন -এ রয়েছে
প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কোলন
ক্যানসার রোধেও ত্বীন ফল বেশ কার্যকর।
যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম,আয়রন ও জিংক সমৃদ্ধ
ত্বীন-কে যৌন পরিপূরক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম,যা
সেক্স হরমোন ও এস্ট্রোজেন ও এন্ড্রোজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। এই ফল নারী ও
পুরুষের বিভিন্ন ধরনের যৌন সমস্যা সমাধান করে এবং যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে। এর সুফল
পেতে সারারাত দুধের মধ্যে ত্বীন ফল ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করুন। ত্বীন ফল
পুরুষদের যৌন স্বাস্থ্যের উপকার করতে পারে। এগুলি জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়ামের
মতো প্রয়োজনীয় খনিজগুলিতে সমৃদ্ধ, যা শুক্রাণু উত্পাদন এবং উর্বরতার মতো
প্রজনন কার্যে সহায়তা করে। এছাড়াও, ডুমুর অ্যামিনো অ্যাসিডের একটি সমৃদ্ধ উৎস
যা লিবিডো এবং যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যদি পুরুষরা তাদের
খাদ্যতালিকায় ডুমুর অন্তর্ভুক্ত করে তবে তারা এই ফলের সাধারণ উপকারগুলি উপভোগ
করতে পারে এবং যৌন সুস্থতার নির্দিষ্ট সুবিধাগুলি পেতে পারে।
মহিলাদের জন্য ত্বীন ফলের উপকারিতাঃ ত্বীন ফল মহিলাদের
স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা
গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় শুকনো
ডুমুর খাওয়া মা এবং শিশু উভয়ের মঙ্গলকে সমর্থন করে। এছাড়াও, ত্বীন ফলে
উচ্চ ফাইবার উপাদান রয়েছে যা হজমে সাহায্য করে এবং গর্ভাবস্থায় সাধারণ
হজম সংক্রান্ত সমস্যাগুলিকে সহজ করে দেয়। ত্বীন ফল মহিলাদের যৌন
স্বাস্থ্যকেও উন্নত করে, তারা প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজগুলির
উপস্থিতির মাধ্যমে সামগ্রিক জীবনীশক্তিতে অবদান রাখে। উপরন্তু, ডুমুরের
পটাসিয়াম উপাদান মহিলাদের হৃদরোগকে সমর্থন করে। এটি মহিলাদের মধ্যে
সর্বোত্তম সঞ্চালন এবং সামগ্রিক প্রজনন সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
ত্বীন ফল ত্বকের জন্য উপকারীঃ ত্বীন ফল ত্বকের জন্য অনেক উপকার
দেয়। এই ফলটিতে ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মিশ্রণ রয়েছে। এটি
ভিটামিন এ এবং ই এর একটি ভাল উৎস, যা ত্বকের পুনরুজ্জীবনে সহায়তা করে এবং
পরিবেশগত ক্ষতির বিরুদ্ধে ত্বককে রক্ষা করে। ত্বীন ফলে রয়েছে পটাসিয়াম
এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ উপাদান যা ত্বকের হাইড্রেশন বজায় রাখতে এবং
ত্বকের শুষ্কতা রোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ত্বীন ফলের প্রদাহ-বিরোধী
বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ত্বককে প্রশমিত করতে পারে। এই ফলটিকে আপনার নিয়মিত
খাদ্যের অংশ করুন এবং শুকনো ত্বীন ফলের উপকারিতা উপভোগ করুন। প্রতিদিন এই
ফলটি খান এবং এটি আপনাকে প্রাণবন্ত এবং উজ্জ্বল ত্বক পেতে সাহায্য করবে।
চুলের জন্য ত্বীন ফলের উপকারিতাঃ ত্বীন ফল চুলের জন্য অনেক উপকার
দেয়। এতে ভিটামিন সি, ই এবং বায়োটিনের মতো ভিটামিন রয়েছে। এই
প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলি চুলকে মজবুত করতে এবং এর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি
মাথার ত্বকের ভাল স্বাস্থ্যও প্রচার করে। ত্বীন ফলে রয়েছে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চুলের মুক্ত র্যাডিক্যাল ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই
করতে সাহায্য করে। চুলের ক্ষতির সম্ভাবনা কমায় এবং অকালে চুল পাকা হওয়ার
গতি কমায়। ত্বীন ফল প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হিসেবেও কাজ করে। এটি শুষ্কতা
প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং সামগ্রিক চুলের হাইড্রেশন প্রচার করে। ত্বীন ফল
খাওয়া প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করবে এবং আপনাকে উজ্জ্বল এবং
স্থিতিস্থাপক চুল দেখাতে সাহায্য করবে।
গর্ভাবস্থায় ত্বীন ফলের উপকারিতাঃ গর্ভবতী মহিলাদের নিজেদের এবং
তাদের বাচ্চাদের সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত পুষ্টি প্রয়োজন। ত্বীন ফল খাওয়া
শরীরে প্রয়োজনীয় কিছু পুষ্টি পাওয়ার একটি সুস্বাদু উপায়। ত্বীন ফল
ফোলেটে ভরপুর, যা শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের বিকাশে সাহায্য করে। ডুমুর
এছাড়াও ত্বীন ফল ফাইবার সমৃদ্ধ, যা গর্ভবতী মহিলাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের
সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ত্বীন ফলে রয়েছে আয়রন, যা শরীরকে
আরও রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে, যা গর্ভাবস্থায় অপরিহার্য।
এমনকি ত্বীন ফলে পটাসিয়াম আছে, যা গর্ভবতী মহিলাদের রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সুতরাং, পরিমিতভাবে এবং একটি সুষম উপায়ে
ডুমুর খাওয়া গর্ভবতী মহিলাদের উপকার পেতে সাহায্য করবে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করেঃ রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান বেশি মানে
হৃদপিণ্ডের ঝুঁকি। তাই রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। ত্বীন
ফলের ফাইবার শরীরে দ্রুত শোষিত হয়। এর ফাইবার দ্রুত দ্রবীভূত হয়ে করতে
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়াও ত্বীন ফলে বিদ্যমান পেকটিন
কোলেস্টেরল কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ আপনি যদি উচ্চরক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন
তবে নিয়মিত ত্বীন ফল গ্রহন আপনার রক্তচাপ আশানুরূপভাবে কমতে শুরু করবে। ত্বীন
ফলে প্রচুর পরিমাণ পটাসিয়াম বিদ্যমান। এটি উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
হার্ট সুস্থ রাখেঃ ত্বীন ফলে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণ করে শরীর থেকে ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করতে সাহায্য করে। ফলস্বরূপ
করোনারি ধমনীতে বাধা রোধ করে হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। ত্বীন ফল শরীরের লাল ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে যা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার একটি
প্রধান কারণ।
হজমে সাহায্য করেঃ এতে বিদ্যমান উচ্চ ফাইবার আপনার হজমকে উন্নত করবে।
এটি বিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রেহাই দেয়। ত্বীন ফল ডায়ারিয়া
নিরায়মেও কাজ করে এবং সম্পূর্ণ হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। আপনার হজমকে উন্নত
করতে নিয়মিত ২-৩টি ত্বীন পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করুন। এর সাথে চাইলে
মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ ত্বীন ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার কথা যদি
বলি, তাহলে এটি জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রনের মতো খনিজ পদার্থের
পাওয়ার হাউস। ত্বীন ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, তাই তো বিশেষজ্ঞরা
কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাইলসের রোগীদের ডুমুর খাওয়ার পরামর্শ দেন। এটি মলত্যাগ
স্বাভাবিক করে শিথিল করে। অন্ত্রকে সুস্থ রাখতে ডুমুর খাওয়া উচিত।
রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ ত্বীন ফলে আয়রনের প্রাচুর্য্য আপনার শরীরের
রক্তস্বল্পতা ও আয়রনের ঘাটতি পূরন করবে। নারীদের দেহে আয়রনের পরিমান সঠিক রাখা
একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায়ও মায়ের দেহে আয়রনের পরিমান নিশ্চিত করতে পারে
ত্বীন ফল। এতে উপস্থিত আয়রনের কার্যকারিতা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ ও দূর করতে
সাহায্য করে।
হাড় মজবুত করেঃ হাড়ের সুস্থতায় ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। কিন্তু এই
গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানটি আমাদের দেহে উৎপাদন হয় না। তাই একমাত্র খাদ্যাভাসের
মাধ্যমেই শরীরে এর চাহিদা পূরন করতে হয়। ত্বীনে মজুত ক্যালসিয়াম আপনার দেহে
ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরন করে হাড়কে করে তুলবে মজবুত ও শক্তিশালী। এছাড়াও এটি
পটাসিয়ামের ভাল উৎস হওয়ায় হাড়ের ক্ষয় রোধেও উপকারী।
ওজন কমাতে ও বাড়াতে সাহায্য করেঃ বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে, এই অসাধারণ
ফলটি ওজন কমাতে যেমন সাহায্য করবে তেমনি চর্মসার ব্যক্তির জন্যও বয়ে আনবে
সুসংবাদ। ত্বীন ফলের উচ্চ ফাইবার দেহের অতিরিক্ত ক্যালোরি হ্রাস করতে সক্ষম।
আবার এই ফল বেশি পরিমানে খেলে এর উন্নত পুষ্টি উপাদান ওজন বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা
পালন করবে। তাই স্থুল ও রোগা উভয়ের জন্যই এটি আশীর্বাদ স্বরূপ।
অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট গুণসম্পন্নঃ ত্বীন ফলের রয়েছে অসাধারণ
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষমতা। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্রিয়া আপনার শরীরকে
জীবাণু মুক্ত রাখবে এবং রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও প্লাজমার
লিপোপ্রোটিন বৃদ্ধিতেও এর বেশ সুনাম রয়েছে।
গলা ব্যাথা উপশম করেঃ গলা ব্যাথা কমাতে সহায়তা করবে ত্বীন ফল। এটি গলা
ব্যাথা কেবল উপশমই করেনা, তা প্রতিরোধেও কাজ করে। এটি ভোকাল কর্ডের জন্যও বেশ
উপযোগী। টনসিলের নিরাময়েও ব্যবহার করা হয় ত্বীন ফল।
দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়ঃ বরকতময় এই ফলটি নিয়মিত গ্রহনের মাধ্যমে আপনার দৃষ্টি
ক্ষমতাকে উন্নত করতে পারেন। ম্যাকুলার অবক্ষয়ের কারনে বয়স্কদের দর্শন শক্তি লোপ
পায়। এতে উপস্থিত ভিটামিন এ ম্যাকুলার অবক্ষয় রোধ করে এবং দৃষ্টি ক্ষমতাকে
উন্নত করে। এছাড়াও রেটিনাল ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সক্ষম এই ফল।
ত্বকের বলিরেখা দূর করেঃ বাড়তি বয়সের ছাপ হিসেবে মুখে ফুটে উঠে বলিরেখার
মত যত সমস্যা। ত্বীন ত্বকের বলিরেখা দূর করতে বেশ কার্যকর। এটি ত্বকে গভীর থেকে
কাজ করে ফলে ব্রণ ও ব্রনের দাগ দূর করতেও এর জুরি নেই। ভিটামিন সি এবং এর
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্রিয়া ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ত্বককে সুন্দর ও কোমল
করে তুলে।
চুল পড়া কমায়ঃ কেবল সুস্বাস্থ্যেই নয়, চুলের যত্নেও ত্বীন এর
বিকল্প নেই। চুল পড়া কমাতে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে এটি। কারন এতে আছে
চুলের জন্য উপকারী ভিটামিন সি,ই ও ম্যাগনেসিয়াম। চুলের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে এর
খ্যাতি বেশ পুরোনো। এটি স্ক্যাল্পের ময়েশ্চার ধরে রাখে।
ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম
ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম জানত চেয়েছেন অনেকে। ত্বীন ফল কিভাবে খায় বা খাওয়ার
নিয়ম অনেকেই জানেন না বা বুঝে উঠতে পারেন না কিভাবে খাবেন। আজকের এই
পোষ্টটিতে আপনাদের সুবিধার জন্য ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। ত্বীন
ফল আপনি বিভিন্ন উপায়ে খেতে পারেন যা নিচে ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম বর্ণনা করেছি। চলুন জেনে নেওয়া যাক ত্বীন ফল কিভাবে খাবেন সে সম্পর্কেঃ
আরও পড়ুনঃ পুরুষের জন্য আলকুশি বীজের উপকারিতা
১। সাধারণত ত্বীন ফল অন্যান্য ফলের মতোই খাওয়া যায় যেমন আপনি পেয়ারা, আপেল,
কমলা ইত্যাদি এসব যেভাবে খান সেভাবেই খেতে পারবেন। তবে আপনি যদি একটু বেশি
উপকারিতা পেতে চান বা যে কোন সমস্যার যেমন শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রে
পূর্ণাঙ্গ উপকার পেতে চাইলে এই ফলটি কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তারপর সামান্য
পরিমাণ দুধের সাথে খেতে পারলে সবচেয়ে উপকার বেশি পাওয়া যায়।
২। এছাড়াও আপনি চাইলে সালাত হিসেবে এই ফল খেতে পারেন। কারণ অনেকেই বিভিন্ন
সালাত খেতে পছন্দ করেন। সুতরাং যারা সালাদ খেতে পছন্দ করেন তারা চাইলে ত্বীন
ফল সালাদ হিসেবে সেবন করবেন এটাও আপনি পরিপূর্ণ উপকার পাবেন। আবার আপনি যদি
নিয়মিত তিন ফলের জুস তৈরি করে খেতে পারেন তাহলেও ভালো উপকারিতা পাবেন।
মোটকথা হচ্ছে আপনি এই ফল যে নিয়মেই খাবেন আপনি অবশ্যই উপকারিতা পাবেন।
৩। ত্বীন ফলের বিশেষ উপকার পেতে কিছু নিয়ম অবলম্বণ করে খাওয়া যায়। যেমন- যৌন
শক্তি বৃদ্ধির জন্য দুধে ভিজে রেখে দুধসহ ফলটি খেতে পারেন। ত্বীন মিষ্টি
খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।এটি ত্বীন ফলকে আরো সুস্বাদু করে তোলে। বরফী,
পায়েসের মত আরো কিছু মিষ্টি জাতীয় খাদ্যের সাথে ত্বীন মিশিয়ে খাওয়া যায়।
৪। তিন ফল কাঁচা অবস্থায় রান্না করে খেতে পারেন। ভাতের সাথে সালাদ করেও খেতে
পারেন। আবার চাইলে জুস তৈরি করেও খেতে পারেন। তিন ফল শুকিয়ে শুকনো ফল দুধে
ভিজিয়ে রেখে দুধ সহ ফলটি খেতে পারেন। লিচু, আঙ্গুর বা আপেল যেভাবে খান সেভাবে
খেতে পারেন। তিন ফলটি খোসা ও বিচি সহ খাওয়া উপযোগী।
ত্বীন ফলের পুষ্টিগুণ
ত্বীন ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে থাকা পুষ্টিকর উপাদানগুলো আমাদের শরীরকে
সুস্থ ও সজীব রাখতে সাহায্য করে। মধ্যপ্রাচ্য ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের উষ্ণ
জলবায়ুতে প্রাচীনকাল থেকে এ ফল চাষ হয়ে আসছে। তবে আজ এটি বিশ্বের বিভিন্ন
প্রান্তে জনপ্রিয় একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে বিবেচিত। এটি শরীরে
প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে
কার্যকর। প্রতি ১০০ গ্রাম তাজা ত্বীন ফলে যে পুষ্টিউপাদান পাওয়া যায় তার
নিম্নরুপঃ
আশ (১০.১৪ মিলিগ্রাম)
ফ্যাট (১.৫৫ গ্রাম)
প্রোটিন (৪.৬৬ গ্রাম)
থায়ামিন (১.৬৫ গ্রাম)
নিয়াসিন (১.৬৫ গ্রাম)
আইরন (৩.০১ গ্রাম)
ফোটেল (১০.৬৫ মিলিগ্রাম)
জিংক (১.৬৯ মিলিগ্রাম)
ভিটামিন এ (৭.৬৫ মিলিগ্রাম)
ক্যালসিয়াম (২৭৮ মিলিগ্রাম)
পটাশিয়াম (৭৮৬ মিলিগ্রাম)
ফসফরাস (৭৭ মিলিগ্রাম)
ম্যাগনেসিয়াম (৭৬ মিলিগ্রাম)
পেনটো থেনিক অ্যাসিড (১.৬৫ মিলিগ্রাম)
কার্বোহাইড্রেট (৭৮.৯৮ মিলিগ্রাম)
পুরুষদের জন্য ত্বীন ফল খাওয়ার উপকারিতা
পুরুষদের জন্য ত্বীন ফল খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে প্রচুর। রোগ জ্বালা সারাতে তো
বটেই, এমনকি যৌন ক্ষমতাকে ধরে রাখতেও ত্বীন ফলের গুণাগুণ ব্যাপক। সে অর্থে
ত্বীন ফলের ফুল না দেখতে পেলেও ত্বীন ফলের গাছের ফল এক বিশেষ উপায়ে খেলে যৌন
সুখ উপভোগে পাবেন বাড়তি আনন্দ। এছাড়াও ত্বীন ফলের একাধিক উপকার রয়েছে। চলুন
তাহলে জেনে নিন পুরুষদের জন্য ত্বীন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে।
শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করেঃ ত্বীন ফলে অত্যাবশ্যকিয় পুষ্টি উপাদান
জিঙ্ক সমৃদ্ধ, যা টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি করে এবং শুক্রাণুর গুণমান উন্নত করে।
এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে যা
শুক্রাণুর গতিশীলতা, শুক্রাণুর সংখ্যা এবং সামগ্রিক পুরুষ স্বাস্থ্যের আরও
উন্নত করে। শুক্রাণুর স্বাস্থ্যের জন্য শুকনো ডুমুর ব্যবহার করা আপনার
খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। শুকনো ত্বীন ফল, দই বা স্মুদিতে যোগ
করুন। ত্বীন পুষ্টিসমৃদ্ধ প্রোফাইল, বিশেষ করে জিঙ্ক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
আপনার খাবারে নিয়মিত যোগ করলে শুক্রাণুর স্বাস্থ্যে ইতিবাচক অবদান রাখতে
পারে।
পুরুষ বন্ধ্যাত্বের উন্নতি করেঃ পুরুষ বন্ধ্যাত্ব একটি সাধারণ সমস্যা
যা অনেক দম্পতি গর্ভধারণের চেষ্টা করার সময় সম্মুখীন হয়। যদিও অনেকগুলি
কারণ পুরুষ বন্ধ্যাত্বের জন্য অবদান রাখে, একটি সমাধান আপনার ডায়েটে ত্বীন
ফল অন্তর্ভুক্ত করার মতো সহজ হতে পারে। ত্বীন ফল, যা আনজির নামেও পরিচিত,
পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং পুরুষের উর্বরতা বৃদ্ধি সহ প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা
রয়েছে। নিয়মিত ত্বীন ফল খাওয়া শুক্রাণুর সংখ্যা, গতিশীলতা এবং সামগ্রিক
স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। ত্বীন ফল শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু এবং
পুষ্টিকর খাবার নয়, এটি পুরুষ বন্ধ্যাত্বের সাথে লড়াই করা দম্পতিদের জন্য
উত্তর হতে পারে।
কামশক্তি বৃদ্ধি করেঃ পুরুষ স্বাস্থ্যের জন্য আনজিরের অন্যতম
উল্লেখযোগ্য সুবিধা হল যৌন কর্মক্ষমতা এবং কামশক্তি বৃদ্ধির সম্ভাবনা। ত্বীন
ফলে অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ, বিশেষ করে আরজিনিন, যা রক্ত সঞ্চালন উন্নত
করতে পরিচিত। যৌন উত্তেজনা এবং ক্রিয়াকলাপের জন্য উন্নত রক্ত প্রবাহ
অত্যাবশ্যক, ত্বীন ফলকে একটি প্রাকৃতিক অ্যাফ্রোডিসিয়াক করে তোলে।
পুরুষদের যৌনস্বাস্থ্যের উপকার করেঃ ডুমুরে থাকা জিঙ্ক পুরুষদের যৌন
স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। এতে পুরুষদের দেহে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা
বাড়ে। ত্বীন ফলের কামোদ্দীপক সম্পত্তি জীবনীশক্তি এবং কামশক্তি বৃদ্ধি করে
যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে।
যৌন সমস্যার সমাধান করেঃ পুরুষদের জন্য ত্বীন ফলের একটি প্রধান সুবিধা
হলো যে এটি বিভিন্ন যৌন কর্মহীনতার যেমন বন্ধ্যাত্ব, কম স্থিতিশীলতা এবং
ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের চিকিৎসায় সাহায্য করে। এটি বীর্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যও
উপকারী হতে পারে।
যৌন ক্ষমতা বাড়াতে কীভাবে খাবেন ত্বীনঃ যাঁরা পুরুষত্বহীনতায় ভুগছেন,
তাঁরা শুকনো ত্বীন ফল দুধে ভিজিয়ে খেলে পাবেন কাঙ্খিত উপকার। এতে
পুরুষদের যৌন ক্ষমতাও বাড়ে। এছাড়াও স্যালাডে খেতে পারেন শুকনো ত্বীন ফল।
এতে বাড়বে প্রজনন ক্ষমতা।
গর্ভাবস্থায় ত্বীন ফল খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ত্বীন ফল খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে কতোটুকু জানতে চেয়েছেন অনেকে।
একজন মহিলা হওয়ার কারণে গর্ভাবস্থা হলো আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
একটা সময় এবং এই পৃথিবীতে একটি নতুন জীবন আনয়নের জন্য আপনার স্বাস্থ্যের
পরম যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এই সাথে এই সময় আপনার গর্ভের সঠিক পরিচর্যা
সরবরাহের জন্য আপনার কেবল স্বাস্থ্যকর খাবারগুলিই গ্রহণ করা ভীষণ মাত্রায়
প্রয়োজন।
আপনার দেহের পাশাপাশি আপনার ভ্রূণের সঠিক অনাক্রম্যতা নিশ্চিত করতে আপনার
পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজগুলি খাওয়া উচিত। ত্বীন ফলে অসংখ্য
পুষ্টিকর উপাদান আছে, যেগুলি একজন গর্ভবতী মহিলার পাশাপাশি তার গর্ভস্থ
শিশুটিরও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে ভাল স্বাস্থ্য বজায় রাখাকে নিশ্চিত করতে
পারে। গর্ভাবস্থায় ত্বীন খাওয়ার কয়েকটি উপকারিতা নিচে বর্ণনা করা হলোঃ
আরও পড়ুনঃ কালমেঘ পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
১. ক্যালসিয়াম গ্রহণে সহায়তা করেঃ মায়ের দেহের পাশাপাশি ভ্রূণের
হাড় এবং দাঁতের বিকাশের ক্ষেত্রেও ক্যালসিয়াম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান। এটি মায়ের দেহের হাড়গুলিকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে তার
গর্ভাবস্থায় এবং এমনকি গর্ভাবস্থার পরবর্তীতেও ,যা তাকে তার নিয়মিত
কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য সুস্থ এবং শক্তিশালী রাখে।
২. ওমেগা-৩ এবং ফোলেটের সমৃদ্ধ উৎসঃ ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশের
ক্ষেত্রে ত্বীন সেবনের একটি প্রশংসনীয় অবদান আছে। ত্বীন ওমেগা-৩ এবং
ফোলেটে সমৃদ্ধ যা মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৩. স্বাস্থ্যকর ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাসঃ গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই
অনেক গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট খাদ্যের বা স্পেশাল ডিশগুলি
খাওয়ার আকাঙ্খা বেড়ে ওঠে। আর খাওয়ার এই তীব্র বাসনার পরিণতিতে
গর্ভাবস্থাকালীন ডায়বেটিস এবং স্থূলতার মত আরও অন্যান্য গুরুতর
অবস্থাগুলি দেখা দিতে পারে। ত্বীন মধ্যস্থ ক্ষারীয় বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি
এই ধরনের শর্তগুলি প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি আপনার ক্ষুধাকে বাধা দেয়
এবং খাওয়ার তীব্র বাসনাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
৪. অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা দূর করেঃ আয়রণের ঘাটতি ভ্রূণে রক্ত
সরবরাহের পরিমাণ হ্রাস করে। আর ত্বীন দেহে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ উপাদানটি
সরবরাহ করে থাকে, অতএব ত্বীন অবসাদ এবং রক্তাল্পতা দেখা দেওয়ার ক্ষেত্রে
বাধা দান করে।
৫. হজমে সহায়তা করেঃ ত্বীন খাদ্যগত তন্তুতে সমৃদ্ধ ,যা আপনার
অন্ত্রের গতিবিধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ
করে। তদুপরি, ত্বীন মধ্যস্থ প্রোবায়োটিকগুলি আপনার অন্ত্রের মধ্যে ভাল
ব্যাকটেরিয়াগুলিকে সমর্থন করে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
৬. একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুন্দর ত্বক প্রদান করেঃ ত্বীনের মধ্যে
সোরালেন নামক একটি রাসায়নিক থাকে,যা ত্বকের পিগমেন্টেশন বা রঞ্জক
সমস্যাগুলি এবং এমনকি মেলাজমার (গর্ভাবস্থার মুখোশ) চিকিৎসার জন্য বেশ
কার্যকরী বলে জনা যায়।
৭. মর্নিং সিকনেস থেকে মুক্তি আনেঃ ত্বীনের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন
B-6 যা মর্নিং সিকনেসের প্রকোপ হ্রাসের ক্ষেত্রে উপকারী হিসেবে বিবেচিত।
৮. রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেঃ ত্বীন আপনার হার্ট
ভাল রাখতে সহায়তা করে।এর মধ্যস্থ কম মাত্রার সোডিয়াম এবং উচ্চ মাত্রার
পটাসিয়ামের সমন্বয়টির গুণে এটি রক্ত শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য
করে। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি
যা অ্যাথেরোসক্লেরোসিস প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।
৯. রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেঃ গর্ভাবস্থায়
অনেক মহিলাই উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন। ত্বীনের মধ্যে ওমেগা-3,ওমেগা-6
ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি এবং ফাইটোস্টেরলের মত স্বাস্থ্যকর উপাদানগুলি বর্তমান
থাকে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। অতিরিক্তভাবে,
ত্বীনের উপস্থিত পেক্টিন উপাদানটিও দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাসে
সহায়তা করে থাকে।
১০. সর্বাধিক আয়রণ শোষণ ক্ষমতাঃ ত্বীনগুলি ভিটামিন C সমৃদ্ধ,যা
দেহের মধ্যে আয়রণ শোষণে সহায়ক হিসেবে পরিচিত।এই কারণে এটি মায়ের দেহে
অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে।
১১. শর্করার প্রাকৃতিক উৎসঃ ত্বীনগুলি মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে
এবং গর্ভবতী মহিলাদের প্রয়োজনীয় গ্লুকোজের চাহিদা পূরণ করার এটি একটি সহজ
উপায়।
গর্ভাবস্থায় ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম রয়েছে বিভিন্ন্ রকম। ত্বীনকে অন্যতম একটি
স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে যা পুষ্টিতে ভরপুর এবং গর্ভবতী
মহিলাদের জন্য উচ্চমাত্রায় সুপারিশ করা হয়। এর পাশাপাশি, এটি আবার আপনার
গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকের প্রথম দিকে মর্নিং সিকনেসের সহিত মোকাবিলা
করতেও আপনাকে সহায়তা করবে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় এটি আপনার দেহের প্রয়োজনীয়
পুষ্টির চাহিদা পরিপূর্ণ করে। জেনে নিন নিয়মগুলোঃ
১. তাজা ত্বীনঃ তাজা ত্বীনফল গুলি খাওয়া এক্ষেত্রে একটি শ্রেষ্ঠ
বিকল্প। ত্বীনফল গুলিকে আবার কিছুটা ফ্রেশ ক্রীম সহযোগে একটি ফলের
স্যালাডের সাথে যোগ করা যেতে পারে।
২. শুকনো ত্বীনফলঃ শুকনো ত্বীনফল বহন করা সহজ। আপনি কিছুটা শুকনো
ত্বীনকে নিয়ে আবার অন্যান্য কিছু শুকনো ফলের সাথে আপনার হাতের ব্যাগের
মধ্যে অসময়ের কিছু খুচখাচ খাবার হিসেবে মজুত করে রাখতে পারেন।
৩. মিল্কশেকঃ ৪-৫ টি তাজা ত্বীনফল একটি ব্লেন্ডারের মধ্যে নিয়ে তার
সাথে 2 কাপ দুধ এবং বড় 3-4 চামচ চিনি অথবা আপনার প্রয়োজন মত যোগ করুন।এবার
এর সাথে সামান্য ভ্যানিলার নির্যাস যোগ করুন।সকল উপকরণগুলি একত্রে ব্লেন্ড
করে নিন। ত্বীনফল খাওয়ার একটি চমৎকার উপায় হল ত্বীনফল মিল্কশেক পান করা যা
আপনার প্রত্যহ দুগ্ধ চাহিদাকেও পূরণ করে।
৪. ত্বীনের স্মুদিঃ একটি ব্লেন্ডারের মধ্যে এক কাপ দইয়ের সাথে
অর্ধেক কলা এবং ৪-৫ টি ত্বীনের, বড় এক চামচ মধু এবং এক চিমটে লবণ যোগ
করুন।এবার সবকিছু একসাথে ব্লেন্ড করুন এবং আপনি যদি একটি পাতলা ঘনত্ব পেতে
চান তবে এর সাথে কিছুটা দুধ যোগ করুন।এটি হল একটি শক্তিশালী,সমৃদ্ধ রেসিপি
যেটি আপনার জলখাবারের মেনুতে সংযুক্ত করা যেতে পারে।
ত্বীন কেবল খাওয়ার জন্যই সুখকর নয়, এটি আবার গর্ভাবস্থার কিছু খারাপ
প্রভাবকে প্রতিহত করতেও সহায়তা করতে পারে। তবে মাথায় রাখবেন যে,অতিরিক্ত
পরিমাণে কোনও কিছুই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে আর ত্বীনও তার
ব্যাতিক্রম নয়।
গর্ভাবস্থায় ত্বীনফল খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
গর্ভাবস্থায় ত্বীনফল খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। ত্বীন ফল উচ্চ
মাত্রায় উপকারী যা আমরা আগেই জেনেছি এবং একজন গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে
সেগুলি অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত। যদিও এটি স্বাস্থ্যের জন্য ভাল তবে
গর্ভাবস্থায় ত্বীনফল শুকনো ফলটিকে পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার জন্যই পরামর্শ
দিয়ে থাকা হয়। গর্ভাবস্থায় ত্বীনের শুকনো ফল খাওয়ার কিছু
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি নিম্নে তালিকাবদ্ধ করা হলঃ
আরও পড়ুনঃ বিটরুটের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
১. গর্ভাবস্থায় ত্বকের রঞ্জকতার চিকিৎসায় ত্বীনের উপকারিতার প্রমাণ পাওয়া
যায়। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে,যদি উচ্চ পরিমাণে সোরালেনস(ত্বীনের মধ্যে
থাকে)শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে,তবে সেটি ফটোডার্মাটাইটিস নামক গুরুতর একটি
ত্বকজনিত সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
২. মাঝারি পরিমাণে ত্বীন দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে,তবে
খুব বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলার ক্ষেত্রে এর একটি বিপরীত প্রভাব রয়েছে।এটি
রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
৩. অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়াগুলি অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত এবং যেকোনও সময় এটি
দেখা দেতে পারে। এমনকি মায়ের মধ্যে অ্যালার্জির ইতিহাসের অনুপস্থিতিতেও,
একাধিকবার গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ত্বীন খাওয়ার ফলে
অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়াগুলি দেখা দিতে পারে
ত্বকের যত্নে ত্বীন ফলের উপকারিতা
ত্বকের যত্নে ত্বীন ফলের উপকারিতা ব্যপক। মেয়েদের স্বাস্থ্যকর এবং
উজ্জ্বল ত্বকের প্রচারের জন্য বিশেষভাবে কাজ করে। ত্বীন ফল ভিটামিন-সি এর
সমৃদ্ধ উৎস অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ফ্রি র্যাডিক্যালগুলির সাথে লড়াই
করে যা ত্বকের বার্ধক্যের প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করে। ত্বীন ফলের
উপস্থিত প্রাকৃতিক শর্করা ত্বকের হাইড্রেশন বজায় রাখে। ত্বীন ফল নিয়মিত
সেবনে আপনার ত্বককে নরম, মসৃণ এবং কোমল রাখতে সাহায্য করে। জেনে নিন
উপকারিতাগুলো।
১। ত্বীন ফলের নির্যাস কুঁচকে যাওয়া ত্বকের উপর অ্যান্টিঅক্সিডেটিভ এবং
এন্টি কোলাজেনাস প্রভাব তৈরী করে যা কুঁচকে যাওয়া ত্বকের গভীরতার শতাংশ
হ্রাস করে। ত্বীন ফলের নির্যাসযুক্ত একটি গঠন ত্বকের মেলানিন,
ট্রান্স-এপিডার্মাল পানির ক্ষতি এবং ত্বকের সিবাম উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস
পায়। এবং এটি ত্বকের হাইড্রেশনও বাড়িয়ে তোলে। সুতরাং, ত্বীন ফল হাইপার
পিগমেন্টেশন, ব্রণ, ফ্রিকেলস এবং রিঙ্কেলস এর প্রতিকার হিসাবে ব্যবহার
করা যেতে পারে।
০২। ত্বীন আপনার ত্বকের জন্য দুর্দান্ত ফলাফল বয়ে আনবে। আপনি ত্বীন ফল
ভক্ষণ বা মাস্ক হিসাবে যেটাই প্রয়োগ করেননা কেন ত্বীন আপনার ত্বককে
সুন্দর করে তুলবে। একটি বড় ত্বীন অথবা দুটি ছোট ত্বীন ফল নিন। ফলটিকে
অর্ধেক কেটে তার মাংস বের করে পুরোপুরি ত্বকে ম্যাসেজ করুন। আপনি যদি
আপনার ত্বকের টেক্সচার (গঠন) বাড়াতে চান তবে এটিতে এক চা চামচ মধু বা দই
যোগ করুন।তৈরী করা মাস্কটি মুখে লাগান এবং ৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এবার
জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
০৩। ফোড়া জাতীয় বিভিন্ন ধরণের ত্বকের প্রদাহকে হ্রাস করতে আপনি সরাসরি
ত্বকে একটি ত্বীন ফল প্রয়োগ করতে পারেন। ত্বীন ফলে ল্যাটেক্স আছে, যার
অ্যান্টি-ওয়ার্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ফোঁড়া এবং আঁচিলের উপর ডুমুর
প্রয়োগ তাদের নিরাময়ে এবং ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
৪। ত্বীনের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, একটি শক্তিশালী
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা ত্বকের স্টোনকে হালকা করতে এবং এমনকি বাইরে
বেরিয়ে যেতে সহায়তা করে। একটি মসৃণ পেস্ট পেতে পাঁচটি ত্বীন ফল মিশ্রণ
করুন। এতে প্রতিটি গুঁড়ো ওটমিল এবং দুধ এবং আধা চা চামচ শুকনো আদা
গুঁড়ো দিন। একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করতে ভালভাবে মিশ্রিত করুন। নরম ও মসৃণ
ত্বক পেতে সপ্তাহে দু'বার এই ফেস প্যাকটি ব্যবহার করুন।
৫। ডুমুরে থাকা ভিটামিন সি ত্বকে পুষ্টি জোগায় এবং একটি প্রাকৃতিক আভা যোগ করে। নিয়মিত ত্বীন ফল খেলে উজ্জ্বল এবং সমান-টোনযুক্ত ত্বক অর্জনে সহায়তা করে। ত্বীন ফল ত্বকের দাগ এবং হাইপারপিগমেন্টেশনকে হালকা করে।
৬। ত্বীন ফল ত্বকের মেলানিনের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং এপিডার্মাল জলের ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করে যা আপনার ত্বক হাইড্রেটেড এবং বলি মুক্ত থাকে। এছাড়াও এটি ত্বকের অকাল বার্ধক্য এবং এ জাতীয় অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধ করে।
ত্বীন ফল সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত সাধারণ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কয়টি করে ত্বীন ফল খেতে পারবেন?
উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় ত্বীন ফল খাওয়া উপকারী তবে সেটি সীমিত পরিমাণে
খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে তা রক্তে শর্করার মাত্রাকে বাড়িয়ে
তুলতে পারে। আপনি সারাদিনের বিভিন্ন সময় জুড়ে এগুলির ৫-৬ টি খাওয়ার
পরিকল্পনা করতে পারেন।
প্রশ্নঃ ত্বীন ফল কি ওজন কমানোর জন্য ভাল?
উত্তরঃ ত্বীন ফল খাওয়া ওজন কমানোর জন্য ভালো। এই ফল
ফাইবার সমৃদ্ধ, যা আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ বোধ করতে সাহায্য করে
এবং এটি ঘন ঘন নাস্তা করার প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে।
প্রশ্নঃ ত্বীন ফল কি কোষ্ঠকাঠিন্যে সাহায্য করতে পারে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ত্বীন ফল তার রেচক বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত।
এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য
করতে পারে।
প্রশ্নঃ ত্বীন ফল কি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য
উপযুক্ত?
উত্তরঃ ডুমুর ফোলেট, আয়রন এবং ফাইবারের একটি ভাল উৎস। এই ফলটি
গর্ভবতী মহিলার প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে এবং গর্ভের ভিতরে
সন্তানের বিকাশে সহায়তা করতে পারে। ত্বীন ফল খাওয়া গর্ভবতী মহিলার
ডায়েটে পুষ্টি যোগ করার একটি ভাল উপায়।
প্রশ্নঃ ত্বীন ফল খাওয়ার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে
কি?
উত্তরঃ যদিও ত্বীন ফল সাধারণত খাওয়ার জন্য নিরাপদ, কিছু লোক
অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারে। উপরন্তু, ত্বীন ফলগুলিতে
চিনির পরিমাণ এবং ক্যালোরি বেশি থাকে, তাই আপনাকে অবশ্যই সেগুলি
পরিমিতভাবে গ্রহণ করতে হবে, বিশেষ করে যদি আপনার চিনি খাওয়ার দিকে নজর
রাখতে হয়।
ত্বীন ফলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ত্বীন ফলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতাও রয়েছে কিছু কিছু
ক্ষেত্রে। ত্বীন ফলে স্বাস্থ্যকর ফলগুলির মধ্যে একটি এবং এর অনেক
উপকারিতা রয়েছে, তবে এটি অবশ্যই পরিমিতভাবে খেতে হবে। এটি অতিরিক্ত
খাওয়ার ফলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। ত্বীন ফল একটি
স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প এবং আপনার শরীরে প্রচুর উপকারিতা প্রদান
করে। কিন্তু অতিরিক্ত ত্বীন ফল খাওয়ার ফলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
হতে পারে যেমনঃ
পেট ব্যাথা এবং ফোলাঃ ত্বীন ফল অতিরিক্ত সেবন আপনার পেটকে
ভারী করে তোলে এবং পেটে ব্যথা হতে পারে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধক
বৈশিষ্ট্য থাকায় এটি ডায়রিয়াও হতে পারে। ত্বীন ফল খাওয়ার পর
যদি আপনি পেটে ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনার
ঠান্ডা জল পান করা উচিত। ব্যথা ছাড়াও, এটি ফুলে যায়। পেট ফাঁপা
সারাতে আপনি মৌরির জল পান করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
সংবেদনশীলতাঃ ত্বীন ফল বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী চর্মরোগ এবং ত্বকের
টিউমারের চিকিৎসায় সহায়ক, কিন্তু এগুলো অতিরিক্ত খাওয়া সূর্যের
রশ্মির প্রতি আপনার ত্বকের সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং আপনার ত্বকের ক্ষতি
করতে পারে। আপনি যদি নিয়মিত ত্বীন ফল খান, তবে ত্বকের ফুসকুড়ির মতো
ত্বক-সম্পর্কিত সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করতে আপনাকে অবশ্যই সূর্যের দীর্ঘ
এক্সপোজার এড়াতে হবে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি অকালে বার্ধক্য,
মেলানোমা এবং ত্বকের ক্যান্সারের মতো ত্বকের অনেক সমস্যা সৃষ্টি করতে
পারে।
লিভার এবং অন্ত্রের সমস্যাঃ ত্বীন ফল ফাইবারে পূর্ণ এবং এর
বেশি খেলে বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। অতিরিক্ত সেবন অন্ত্র এবং
লিভারের ক্ষতি করতে পারে। ত্বীন ফলের বীজ অন্ত্রের স্বাভাবিক
কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বীজ হজম করাও কঠিন তাই, ত্বীন ফল
অতিরিক্ত সেবনের ফলে হজমের সমস্যা হতে পারে।
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণঃ ত্বীন ফলে অক্সালেট
থাকে যা শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণকে প্রভাবিত করে। ত্বীন ফল বেশি
খাওয়ার ফলে এই ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়, যা ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণ
হয়ে দাঁড়ায়। শরীরে কম ক্যালসিয়ামের মাত্রা হাড়কে দুর্বল করতে
পারে এবং হাইপোক্যালসেমিয়া এবং অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগের কারণ হতে
পারে। ত্বীন ফলের অক্সালেটগুলি কিডনি বা পিত্তথলির সমস্যা এবং রোগে
আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকারক। ডুমুর খাওয়া তাদের
অবস্থা খারাপ করতে পারে। ত্বীন ফল প্লীহাকেও ক্ষতি করতে পারে, যা
শরীরে শ্বেত রক্তকণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে।
রক্তপাতের সমস্যাঃ ত্বীন ফল গরম প্রকৃতির তাই এটি
বেশি পরিমাণে খেলে রেটিনাল রক্তপাত হয়। রেকটাল রক্তপাত, বা
সামান্য যোনি রক্তপাত ঘটতে পারে। রক্তপাতের ক্ষেত্রে ডুমুর খাওয়া
বন্ধ করুন। যদি রক্তপাত অব্যাহত থাকে তবে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের
কাছে যান। এটি হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়াও হতে পারে (একটি ব্যাধি যাতে
আপনার শরীরের লোহিত রক্তকণিকাগুলি তৈরি হওয়ার চেয়ে দ্রুত ধ্বংস
হয়ে যায়)।
রক্তে শর্করার মাত্রা কমাঃ ত্বীন ফল অতিরিক্ত সেবনের
ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের
জন্য উপকারী। তবে কম রক্তে শর্করার সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের
জন্য এটি ক্ষতিকর।
এলার্জির সমস্যাঃ কিছু লোকেরা ত্বীন ফল খাওয়ার সময়
অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারে। এই ক্ষেত্রে এনজির
এড়িয়ে চলুন কারণ এর সেবনে কনজেক্টিভাইটিস, অ্যাজমা, রাইনাইটিস
এবং অ্যানাফিল্যাকটিক শক হতে পারে।
ত্বীন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে শেষ কথা
ত্বীন ফল শুধু পুষ্টিগুণের জন্য নয়, এর ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্বের
জন্যও একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এর স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং বহুবিধ
ব্যবহার এটিকে একটি আদর্শ সুপারফুডে পরিণত করেছে। নিয়মিত খাদ্য তালিকায়
ত্বীন ফল যুক্ত করলে স্বাস্থ্যকর জীবনের পথে একটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ত্বীন ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা গ্রহনের পাশাপাশি সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য
যৌনতার গুরুত্ব সম্পর্কে পুরুষদের সচেতন হতে হবে।
ত্বীন ফল সেবন এবং যৌন কার্যকলাপ ও শুক্রাণুর গতিশীলতার সমস্যা কমাতে,
সামগ্রিক মানসিক সুস্থতাকে সমর্থন করতে এবং স্বাস্থ্যকর হরমোনের ভারসাম্যকে
উন্নীত করতে প্রমাণিত হয়েছে।ভিটামিন এবং খনিজগুলির অনন্য সমন্বয়ের
মাধ্যমে, ডুমুর পুরুষদের জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সুবিধা
প্রদান করতে পারে। এই সমস্ত কিছু মাথায় রেখে, এটা স্পষ্ট যে কেন ডুমুর এবং
নিয়মিত যৌন ক্রিয়াকলাপ উভয়ের সুবিধা নেওয়া যে কোনও মানুষের জীবনে একটি
গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url