ত্রিফলার উপকারিতা ও অপকারিতা


ত্রিফলার উপকারিতা ও এর গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমলকী হরিতকী, বহেড়া এই তিনটি ফলের মিশ্রণে তৈরি হয় ত্রিফলা। ত্রিফলা একটি ভেষজ প্রতিকারক হিসাবে কয়েক শতাব্দী ধরে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে। কারণ এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
ত্রিফলার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
ভিটামিন সি এর রাজা আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি। এছাড়াও আমিষ, চর্বি, ক্যালসিয়াম, লৌহ, খনিজ, শর্করা, মিনারেলস কি নেই আমলকিতে। হরিতকীতে রয়েছে ট্যানিন,অ্যামিনো অ্যাসিড। বহেড়ার মধ্যে অনেক যৌগ ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা মানব দেহের জন্য খুবই কার্যকর।

রয়েছে ভিটামিন, মিনারেলসহ অসংখ্য উপকারী উপাদান। একসাথে ব্যবহারে এদের গুণাগুণ হাজার গুণ বেড়ে যায় এই ধারণা থেকেই ত্রিফলার উৎপত্তি। হাজারো পুষ্টি উপাদানে ঠাসা ত্রিফলার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে সংক্ষেপে  আলোচনা করলাম যা জানলে আপনরাদের অনেক উপকারে আসবে।

পেইজ সূচিপত্রঃ ত্রিফলার উপকারিতা ও অপকারিতা

ত্রিফলা কি

ত্রিফলা হলো আমলকী, হরিতকী ও বহেড়া এই ৩টি ফলের মিশ্রণকে একত্রে ত্রিফলা বলা হয়। বস্তুত ত্রিফলা শব্দের আক্ষরিক অনুবাদ করলে দাঁড়ায় তিনটি ফল। আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ত্রিফলা স্বাস্থ্যের জন্য বহুমাত্রিক উপকারী। আমলকি, হরিতকি এবং বহেড়া এই তিন ফল শুকিয়ে তাদের চূর্ণ একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয় ত্রিফলার মিশ্রণ। চলুন জেনে নেওয়া ভাল এই তিনটি ফল পৃথকভাবে আমাদের শরীরের পক্ষে আদৌ কতটা উপকারী।

১। আমলকীঃ আমলকি ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ এবং এটি ভিটামিন সি-এর উৎকৃষ্টতম উৎস। সাধারণত এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে, কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে এবং বার্ধক্যপ্রতিরোধী একটি ফল হিসেবে। ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর এই ফল পেটের সমস্যা দূর করে। শরীরে জমে থাকা টক্সিন পদার্থ বার করে দিতেও আমলকি বেশ উপকারী।
তাছাড়া রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতেও আমলকির জবাব নেই। এই ফল ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ এবং এটি ভিটামিন ‘সি’র উত্কৃষ্টতম উৎস। সাধারণত এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে এবং বার্ধক্যপ্রতিরোধী একটি ফল হিসেবে।

২। হরিতকীঃ হরিতকী আয়ুর্বেদে বর্ণিত ভেষজ উদ্ভিদগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।এটির স্বাস্থ্যোপকারিতা অপরিসীম। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, প্রদাহবিরোধী ও বার্ধক্যবিরোধী হওয়ার পাশাপাশি চমৎকার ক্ষয় প্রশমনকারী হিসেবেও এর সুখ্যাতি আছে। যকৃৎ, পাকস্থলী, হৃদ ও মূত্রাশয়ের স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধার ও বজায় রাখার ক্ষেত্রেও আয়ুর্বেদে এর সুখ্যাতি আছে।

হরিতকী চূর্ণ ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে, পিত্তশূল দূর হয়। পাইলস, হাঁপানি, চর্ম রোগ, ক্ষত রোগ, কনজাংটিভাইটিস রোগে হরীতকী ব্যবহৃত হয় বিশেষভাবে পরিশোধনের মাধ্যমে। হরিতকী রক্ত চাপ এবং অন্ত্রের খিঁচুনি হ্রাস করে। হৃৎপিণ্ড ও অন্ত্রের অনিয়ম দূর করে। ইহা রেচক, কষাকারক, পিচ্ছিলকারক, পরজীবীনাশক, পরিবর্তনসাধক, অন্ত্রের খিঁচুনি রোধক এবং স্নায়বিক শক্তিবর্ধক। হরিতকী নতুন ও পুরাতন কোষ্ঠকাঠিন্য, স্নায়বিক দুর্বলতা, অবসাদ এবং অধিক ওজন এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। হরিতকীতে এ্যানথ্রাকুইনোন থাকার কারণে ইহা রেচক বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ।

৩। বহেড়াঃ বহেড়া আয়ুর্বেদ ও অন্যান্য চিকিৎসায় জায়গা করে নিয়েছে জ্বর প্রতিরোধকারী, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও যকৃৎ সুরক্ষাকারী হিসেবে। শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার সাধনকারী হিসেবে এবং ডায়াবেটিসবিরোধী মহৌষধ হিসেবে। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী গ্লুকোসাইড, ট্যানিন, গ্যালিক এসিড, ইথাইল গ্যালেটের মতো একগুচ্ছ জৈব উপাদানে সমৃদ্ধ এই বহেড়া ফল। এ ক্ষেত্রে এসব উপাদানই হলো বহেড়ার স্বাস্থ্যোপকারী বৈশিষ্ট্য।

ত্রিফলার উপকারিতা

ত্রিফলার উপকারিতা অসংখ্য ত্রিফলা একটি ভেষজ প্রতিকারক। অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা এটি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় কয়েক শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তিনটি ফল আমলকি, হরিতকি বহেরার সমন্বয়ে ত্রিফলা তৈরি করা হয়। এগুলো আমাদের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য কাজ করে। ত্রিফলা খাওয়ার অসংখ্য উপকারিতার মধ্যে কয়েকটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা রয়েছে। চলুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
ক্ষত সারাতেঃ অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদানে টাসা হওয়ার কারণে এই মিশ্রনটি খাওয়া শুরু করলে শরীরের এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে ক্ষত সারতে সময় লাগে না। এই কারণেই তো চোট বাচ্চাদের নিয়মিত এই আয়ুর্বেদিক মিশ্রনটি খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসেঃ রক্তচাপ কি ওঠানামা করে? তাহলে নিয়মিত ত্রফলা খাওয়া শুরু করুন।দেখবেন ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগবে না। এই মিশ্রনটিতে লাইনোলিক অ্যাসিড, শরীরে প্রবেশ করা মাত্র এমন খেল দেখায় যে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা কমে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটেঃ নিয়মিত ত্রিফলা খাওয়া শুরু করলে দেহের পুষ্টিকর উপাদানের মাত্রা এতটা বেড়ে যায় যে তার প্রভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। ফলে ছোট-বড় রোগব্যাধির প্রকোপ কমে চোখের নিমেষে।

রক্তসংবহন তন্ত্রের জন্য উপকারীঃ এটি আমাদের রক্তসংবহনতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকলাপ সাধনের খুবই উপকারী ভূমিকা পালন করে। এটি রক্ত শোধনের পাশাপাশি হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতাও বাড়ায়। এটি রক্তে ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবীর পরিমাণ কমায় এবং এদের মাধ্যমে সৃষ্ট সম্ভাব্য রোগ প্রতিরোধ করে। এটি আমাদের দেহে কোলেস্টেরল, এলডিএল (LDL) এবং ক্ষতিকর লিপিডের পরিমাণ কমায় এবং আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকিমুক্ত রাখে। এটি আমাদের সব শরীরে রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করে, দেহের সব কোষ ও কলায় প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে।

যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ প্রজননতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে ত্রিফলা খুবই উপকারী। এটি প্রজনন অঙ্গগুলোর pH লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে, প্রজনন অঙ্গকে শক্তিশালী করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ত্রিফলা পুরুষের শুক্রাণু বৃদ্ধি করে এবং মহিলাদের মাসিক চক্র নিয়মিত করে। তাই প্রজননতন্ত্রের সমস্যায় ত্রিফলার ব্যবহার খুবই ফলপ্রসূ।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ নিয়মিত খালি পেটে এই আয়ুর্বেদিক চূর্ণটি খাওয়া শুরু করলে শরীরের এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে ক্যান্সার সেল জন্মে নেওয়ার কোনও সুযোগই পায় না। আর একবার যদি জন্ম নিয়েও ফেলে তাহলেও তার বৃদ্ধি আটকে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।

খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়ঃ শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে হার্টে রক্ত সরবরাহকারী আর্টারিগুলি বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করে। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত না পাওয়ার কারণে হার্ট দুর্বল হয়ে পরে। সেই সঙ্গে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। ত্রিফলায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একদিকে যেমন এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। তেমনি হার্টের ভিতরে যাতে কোন ভাবেই প্রদাহ সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যেকোন ধরণের করনারি আর্টারি ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহুলাংশে হ্রাস পায়।

কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রকোপ কমায়ঃ সকালটা যদি আপনার কাছে অভিশাপের সমান হয়, তাহলে আজ থেকেই ত্রিফলা চুর্ন খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। যে বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে কনস্টিপেশনের মতো রোগের চিকিৎসায় এই হার্বাল মিশ্রনটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কোলোনকে পরিশুদ্ধ করার মধ্যে দিয়ে আরও নানা ধরনের রোগের আশঙ্কা কমাতেও ত্রিফলার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

পাইলস সমস্যা সমাধান করেঃ বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে কনস্টিপেশনের মতো রোগের চিকিৎসায় এই হার্বাল মিশ্রনটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত সেবনে ত্রিফলা কোষ্টকাঠিন্য দূর করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সৃষ্ট রোগ পাইলস বা ফিস্টুলার ঝুঁকি কমায়। শুধু তাই নয়, কোলোনকে পরিশুদ্ধ করার মধ্যে দিয়ে আরও নানা ধরনের রোগের আশঙ্কা কমাতেও ত্রিফলার বিকল্প হয় না বললেই চলে।

ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকেঃ অতিরিক্ত ওজনরে কারণে যদি চিন্তায় থাকেন, তাহলে ডায়েট কন্ট্রোলের পাশাপাশি আপনার প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত ত্রফলা চুর্ণ। কারণ নিয়মিত এই প্রাকৃতিক উপাদানটি গ্রহণ করলে বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটার কারণে শরীরে মেদ জমার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমতে শুরু করে।

দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটেঃ এক গ্লাস গরম পানিতে ১-২ চামচ ত্রিফলা গুঁড়ো মিশিয়ে সারা রাত রেখে দিন। পরদিন সকালে উঠে পানিটা ছেঁকে নিয়ে ভালো করে চোখ পরিষ্কার করুন। এইভাবে নিয়মিত চোখের পরিচর্যা করতে পারলে দেখবেন দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে সময় লাগবে না। সেই সঙ্গে চোখের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও যাবে কমে।

অ্যাংজাইটি এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে আসেঃ নিয়মিত খালি পেটে ত্রিফলা খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরের অন্দরে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যা ব্রেন পাওয়ার বাড়ানোর পাশাপাশি মানসিক ক্লান্তি এবং স্ট্রেস কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।

শ্বাসকষ্ট দূর করেঃ ত্রিফলা আমাদের শ্বাসনালী থেকে শ্লেষ্মা নিঃসরণ করে এবং আমাদের শ্বাসনালীর কর্মক্ষমতা স্বাভাবিক রাখে। এটি দেহে ও শ্বাসনালীতে অ্যালার্জির প্রকোপ কমায়, ফলে অ্যাজমা রোগে খুবই উপকারী ভূমিকা পালন করে। এটি আমাদের সাইনাস থেকে শ্লেষ্মা বের করে দেয়, ফলে সাইনোসাইটিসজনিত মাথাব্যথা প্রতিহত করে।

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখেঃ আমলকির রস দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছড়াও চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের প্রদাহ, চোখ চুলকানি বা পানি পড়ার সমস্যা থেকে রেহাই দেয়। আমলকি চোখ ভাল রাখার জন্য উপকারী। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িত ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। গরম পানিতে সারা রাত রাখা ভিজিয়ে ১-২ চামচ ত্রিফলা গুঁড়ো, পরদিন সকালে পানিটা ছেঁকে নিয়ে ভালো করে চোখ পরিষ্কার করুন। এইভাবে নিয়মিত চোখের পরিচর্যা করতে পারলে দেখবেন দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে সময় লাগবে না। সেই সঙ্গে চোখের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও যাবে কমে। ত্রিফলার পেস্ট চোখের ফোলা কমাতে খুবই কার্যকর।

বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করেঃ ত্রিফলা সমগ্র শরীরে রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে সারাদেহে ‍পুষ্টি যোগায়। ত্রিফলায় থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট, বুড়িয়ে যাওয়া ও সেল ডিজেনারেশনের অন্যতম কারন ফ্রি- র‌্যাগডক্যালস ধ্বংশ করে, মৃত কোষ কমায়। ত্রিফলার নিয়মিত ব্যবহার ত্বকের বলিরেখা,বাধ্যর্কের ছাপ, মলিনতা দূর করে চেহারায় লাবণ্য ধরে রেখে আপনাকে করে তোলে আকর্ষণীয় ও তারুণ্যদীপ্ত।

চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়ঃ নিয়মিত ত্রিফলা সেবনে দেহ বিষমুক্ত হয়, হালকা ও প্রাণবন্ত হয়। ত্রিফলায় থাকা ভিটামিন সি চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়। চুলের অকাল পক্কতা দূর করে। ত্রিফলার পেস্ট বানিয়ে হেয়ার প্যাক হিসেবে নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনি পাবেন মেঘ কালো লম্বা চুল।

দাঁতের সমস্যা দূর করেঃ অ্যান্টিঅক্সিডান্ট, প্রদাহবিরোধী ও অ্যান্টিমাইক্রবিয়াল প্রভাবের কারণে দাঁতের সাধারণ সমস্যা দূরীকরণে ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ত্রিফলা একটি দুর্দান্ত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। ত্রিফলা ওক্লোরহেক্সিডাইন মাউথওয়াশ প্লাক জমার গতিরোধ করতে সক্ষম। ত্রিফলা ও 0.2% ক্লোরহেক্সিডাইন দিয়ে তৈরি মাউথওয়াশও মারী জ্বলে যাওয়া ও প্লাক জমার সমস্যা সমাধানে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পেরিওডোন্টাল রুগীদের ক্ষেত্রেও কার্যকর।

বাত ব্যাথার প্রকোপ কমায়ঃ ত্রিফলায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পলিফেনল শরীরে প্রবেশ করার পর প্রদাহ কমাতে শুরু করে। আর একবার ইনফ্লেমেশন কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই জয়েন্ট পেন কমতে থাকে। সেই সঙ্গে শরীররে সচলতাও বৃদ্ধি পায়। তাই এমন ধরনের কোনও রোগে যদি ভুগতে থাকেন, তাহলে নিশ্চিন্তে একবার এই প্রাকৃতিক উপাদানকে কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন।

ত্রিফলা খাওয়ার সঠিক নিয়ম

ত্রিফলা খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণে সেবন করলেই ত্রিফলা চূর্ণ খাওয়ার উপকারিতা পাওয়া যায়। ত্রিফলা চূর্ণের ডোজ নির্ভর করে যে স্বাস্থ্য উপকারের জন্য এটি খাওয়া হচ্ছে তার উপর। উদাহরণস্বরূপ, ত্রিফলার ঔষধি গুণের কারণে ডায়াবেটিসের জন্য পাঁচ গ্রাম ত্রিফলা ৪৫ দিন খাওয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে ৫-৫ গ্রাম ত্রিফলা খাওয়ার আগে দুবার খেলে ত্বক সংক্রান্ত সমস্যা কম হয়। জেনে নিন ত্রিফলা খাওয়ার সঠিক নিয়মঃ
১। ত্রিফলার গুঁড়ো জলে মিশিয়ে পান করতে পারেন। আপনি যদি এর স্বাদ পছন্দ না করেন তবে আপনি এটির রস তৈরি করে পান করতে পারেন। ত্রিফলার রসের উপকারিতা গুড়ার মতোই। ত্রিফলার রস তৈরি করতে জলে ত্রিফলার গুঁড়ো, কিছু মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে নিন। মনে রাখবেন, যে এই উপাদানগুলি হালকাভাবে ব্যবহার করুন, যাতে ত্রিফলার স্বাদ কিছুটা পরিবর্তন হয়। এটি রাতে ঘুমানোর আগে সেবন করা যেতে পারে।

২। ত্রিফলার গুঁড়ো চায়ের সাথেও ব্যবহার করা যেতে পারে। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী ভালো ফলাফলের জন্য ত্রিফলা গুঁড়োর সাথে ঘি এবং মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। সকালে খালি পেটে ত্রিফলা ভেজানো পানি খেতে পারলে হজম শক্তি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। ত্রিফলা গুঁড়ো জলে সিদ্ধ করে তাতে মধু যোগ করুন। এটি সকালে এবং সন্ধ্যায় নিয়মিত চায়ের পরিবর্তে খাওয়া যেতে পারে।

৩। নিয়মিত সেবনের জন্য ত্রিফলার গুঁড়া ব্যবহার করাই ভালো। রোজ রাতে এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ ত্রিফলা গুঁড়া ভিজিয়ে রাখুন আর সকালে উঠে খালি পেটে পানিটা খেয়ে নিন। এর আধা ঘণ্টা পর সাধারণ খাওয়া দাওয়া শুরু করুন। এছাড়াও ত্রিফলার সাপ্লিমেনট পাওয়া যায় বাজারে। গুঁড়া ত্রিফলা না পেলে সাপ্লিমেনট ব্যবহার করতে পারেন। 

৪। আগেই বলে রাখি, জিনিসটা খেতে কিন্তু ভয়ঙ্কর! প্রথম দিকে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করবেন। পরে নিজে থেকেই অভ্যাস হয়ে যাবে। আপনি যদি ত্রিফলা চূর্ণের স্বাদ পছন্দ না করেন তবে এটি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আকারেও নেওয়া যেতে পারে। এটি বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। এটি খাওয়ার সময় অবশ্যই ত্রিফলা ক্যাপসুল বাক্সে দেওয়া পরামর্শ অনুসরণ করুন বা আপনি চাইলে বিশেষজ্ঞ বা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।

ত্রিফলার জলের উপকারিতা 

ত্রিফলার জলের উপকারিতা পেতে অনেকেই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ত্রিফলা ভেজানো জল খান। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এমনিতেও বলা হয় যে ত্রিফলার মধ্যে রয়েছে হাজার গুণ। তিন ফলের মিশ্রণ হওয়ায় একে ত্রিফলা বলে। আমলকি, বহেড়া এবং হরিতকি রয়েছে এই ত্রিফলার মধ্যে। প্রতিটি ফলের মধ্যেই আলাদা করে রয়েছে অনেক পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য গুণ। ফলে তিনটি ফলের মিশ্রণে ত্রিফলা তৈরি হওয়ায় তার গুণ যে আরও বেশি, সেটা স্পষ্ট।

মূলত মানবশরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সুদৃঢ় করতে ত্রিফলা কাজে লাগে। এছাড়াও হজমশক্তি ভাল করতেও এই ফল কাজ করে। সেই সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে ত্রিফলা। গুঁড়ো হোক বা রস সেভাবে ইচ্ছে খেতে পারেন এই ফল। আজকাল বাজারে ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট আকারেও ত্রিফলা বিক্রি হয়। জেনে নিন ত্রিফলার জলের কি কি উপকারিতা রয়েছে

১। হজমশক্তি বাড়াতে কাজে লাগে ত্রিফলা। নিয়ম করে ত্রিফলা ভেজানো জল খেলে হজমজনিত সমস্যায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

২। মানবশরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সুদৃঢ় করতে সাহায্য করে ত্রিফলার জল । বিভিন্ন ইনফেকশনে সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে ত্রিফলা। অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করতে এবং বিভিন্ন অ্যালার্জির নিয়ন্ত্রণেও কাজে লাগে এই ফল।

৩। দাঁতের সু-স্বাস্থ্য বজায় থাকে ত্রিফলার প্রভাবে। দাঁতের হলদে ছোপ দূর করা থেকে, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করা, মুখের দুর্গন্ধ দূর করা, দাঁত এবং মাড়ী শক্ত করতে দারুণ ভাবে কাজ দেয় ত্রিফলার জল।

৪। অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে ত্রিফলা ভেজানো জল। কারণ ত্রিফলা খেলে মেটাবলিজমের হার ঠিক থাকে। শরীরে যাবতীয় দূষিত পদার্থও বের করে দেয় এই ত্রিফলার ভেজানো জল।

৫। চোখের কোনো সমস্যা থাকলে সেটা দূর করে ত্রিফলার পানি। আবার দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতেও ভালো ভূমিকা নেয়। এক গ্লাস গরম পানিতে ১-২ চামচ ত্রিফলা গুঁড়া মিশিয়ে সারা রাত রেখে দিন। পরদিন সকালে উঠে সেই পানিটা ছেঁকে নিয়ে ভালো করে চোখ পরিষ্কার করুন।

ত্রিফলা কাদের খাওয়া উচিত নয়

ত্রিফলা কাদের খাওয়া উচিত নয় এটা হয়তো অনেকেই জানেন না। ত্রিফলার নাম শোনেননি এমন মানুষ বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেননা, এই ভেষজকে বলা হয় সর্বরোগের ওষুধ। ত্রিফলা মূলত আমলকি, হরিতকি ও বহেরার সমন্বয়ে তিনটি শুকনা ফল। যা ভিজিয়ে কিংবা পাউডার করে খাওয়া যায়। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের ত্রিফলা এড়িয়ে চলাই ভালো। কেননা, এদের ত্রিফলা খেলে উপকারের বদলে ক্ষতিই বেশি হতে পারে। জানুন কারা ত্রিফলা থেকে দূরে থাকবেন।
  • যারা মৃগীরোগ নিরোধক ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের ভুলে গেলে চলবে না। মৃগীর সমস্যা রয়েছে বা নিয়মিত ভাবে মৃগীর ওষুধ খান তাঁদের একেবারেই খাওয়া ঠিক নয়।
  • যাদের জিন মিউটেশনের সমস্যা আছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই এটি সেবন করা উচিত।যদি আপনার এই সমস্যাগুলির মধ্যে কোনটি না থাকে তবে আপনি এটিকে আপনার জীবনধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। কিন্তু তারপর ৩-৪ দিন অপেক্ষা করুন এবং ফলাফল দেখুন।
  • গ্যাস, ডায়রিয়ার মতো কিছু সমস্যা আছে যা ত্রিফলা খেলে হতে পারে। এটি শরীরকে ডিটক্সিফাইড হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। কিন্তু যদি উপসর্গগুলি অব্যাহত থাকে, তাহলে অবিলম্বে এর ব্যবহার বন্ধ করা উচিত।
  • এই আয়ুর্বেদ ওষুধটি প্রাকৃতিকভাবে রেচক। তাই ডায়রিয়া হলে কখনই খাবেন না। এটি খেলে পেটে গ্যাস, ব্যথা এবং ডায়রিয়া, ক্র্যাম্প এবং বিভিন্ন গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল প্রভাব তৈরি করতে পারে। আপনি যে ত্রিফলা খাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে, এর লক্ষণগুলো হালকা থেকে গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে।
  • গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নারীদের ত্রিফলা খাওয়া উচিত নয়। ত্রিফলার মধ্যে যে হরিতকি রয়েছে তা গর্ভপাত ঘটাতে পারে। তবে এর কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, অনেকে বলেন এটি খেলে রক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে তারও কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

    কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ত্রিফলার ব্যবহার 

    কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ত্রিফলার ব্যবহার আয়ুর্বেদে অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে।কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকের কাছেই পরিচিত। কারণ বেশিরভাগ মানুষই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। কোষ্ঠকাঠিন্য যদি দীর্ঘ সময় ধরে থাকে তবে তা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। প্রতিবার মলত্যাগের সময় কষ্ট এমনকী হতে পারে রক্তপাতও। জেনে নিন কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় কিভাবে ব্যবহার করবেন ত্রিফলাঃ

    কোষ্ঠকাঠিন্যে ত্রিফলা কেন ব্যবহার করা হয়ঃ
    ত্রিফলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং ওজন কমাতে সহায়তাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা দিয়ে থাকে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্যও পরিচিত। ত্রিফলা গুঁড়া হলো তিনটি ভেষজ- আমলকি, হরিতকী এবং বহেরার মিশ্রণ। এই ভেষজগুলো দীর্ঘকাল ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য সর্বোত্তম আয়ুর্বেদিক প্রতিকার হলো ত্রিফলা চূর্ণ। তিনটি যৌগ পাচনতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত এবং শক্তিশালী করতে কাজ করে, একটি মৃদু রেচক হিসেবে কাজ করে।’
    হরিতকীঃ ত্রিফলার মধ্যে হরিতকী একটি শক্তিশালী রেচক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি পাকস্থলীর মধ্যে একটি অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট এবং লুব্রিকেন্ট উভয়ই কাজ করে, কার্যকরভাবে মলকে আলগা করে এবং জটিলতার ঝুঁকি কমায়।

    আমলকিঃ আমলকিতে পেট ঠান্ডা করার বৈশিষ্ট্য থাকে। এটি পেটের ভেতরের আস্তরণকে প্রশান্তি দেয় এবং শান্ত করে। আমলকি প্রদাহ হ্রাস করে এবং জ্বালা উপশম করে, ফলে এটি পেটে স্বস্তি দেয়। সেইসঙ্গে আমলকি সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও কাজ করে।

    বহেড়াঃ ত্রিফলার আরেকটি অত্যাবশ্যক উপাদান হলো বহেরা। এর আছে প্রাকৃতিক রেচক বৈশিষ্ট্য এবং এতে প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার। যা কার্যকরভাবে কোষ্ঠকাঠিন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এর পরিপাক এজেন্ট নিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধি সহজ করে, যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

    কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ত্রিফলা খাওয়ার নিয়মঃ
    দৈনন্দিন রুটিনে ত্রিফলা যোগ করলে তা হজমের স্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ত্রিফলা গুঁড়া তৈরি করার জন্য যথাক্রমে বহেরা, হরিতকী এবং আমলকির ১:২:৩ অনুপাতে নিতে হবে। ত্রিফলা খেতে পারেন এই নিয়মগুলো মেনে-

    সরাসরি সেবনঃ এক চা চামচ ত্রিফলা চূর্ণ নিন এবং সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য ঘুমানোর আগে হালকা গরম পানি দিয়ে পান করুন।

    ত্রিফলা পানিঃ যদি ত্রিফলার মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্যগুলি আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, তাহলে ত্রিফলা গুঁড়া সারারাত কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে এটি পান করুন, বিশেষ করে ভোর ৪:০০ থেকে ৫:০০ এর মধ্যে।

    মধু যোগ করুনঃ আপনার যদি ত্রিফলা এবং পানির স্বাদ ভালো না লাগে, তবে প্রাকৃতিক মিষ্টতা ছড়িয়ে দিতে এক চামচ মধু যোগ করুন।

    আদা মেশানঃ দ্রুত উপশমের জন্য আপনার ত্রিফলা মিশ্রণে কুচি করা আদা যোগ করতে পারেন। এটি পেটের ফোলাভাব প্রতিরোধ করে। ত্রিফলা কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য একটি অসাধারণ ঘরোয়া প্রতিকার।

    তবে এটি মনে রাখা অপরিহার্য যে, সমস্যা স্থায়ী হলে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। যদি ঘরোয়া উপায়ে প্রতিকার না মেলে তাহলে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আগেই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

    রূপচর্চায় ত্রিফলা ব্যবহারের উপকারিতা

    রূপচর্চায় ত্রিফলা ব্যবহারের উপকারিতা জানতে চেয়েছেন অনেকে। যুগ যুগ ধরেই সৌন্দর্যচর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে ত্রিফলা। তিনটি ফলের মিশ্রণকেই বলা হয় ত্রিফলা। এই তিন ফল হচ্ছে আমলকী, হরিতকী ও বহেরা। এই তিন ফল একসঙ্গে শুকিয়ে গুঁড়া করে বানানো হয় ত্রিফলা পাউডার। ত্বক ও চুলের যত্নে এর রয়েছে নানা ব্যবহার। চলুন জেনে নেওয়া যাক কেন রূপচর্চায় ত্রিফলা ব্যবহার করবেনঃ

    ১। ত্রিফলার মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা ত্বকের জন্য উপকারী। এই উপাদান ফ্রি র‍্যাডিকেলের সঙ্গে লড়াই করে। ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং ব্রণ, চুলকানির হাত থেকে মুক্তি দেবে। ত্বককে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে ত্রিফলা।

    ২। ত্রিফলায় থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের মৃত কোষ কমায়। ত্রিফলার নিয়মিত ব্যবহার ত্বকের বলিরেখা, বার্ধক্যের ছাপ, মলিনতা দূর করে চেহারায় লাবণ্য ধরে রেখে আপনাকে করে তোলে আকর্ষনীয় ও তারুণ্যদীপ্ত।

    ৩। ত্রিফলা গুঁড়ো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা ত্বককে নরম, মসৃণ এবং হাইড্রেটেড করে। এটি কোলাজেন উপাদানের সাথে ভালভাবে আবদ্ধ হয়ে ত্বকের বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। এটি ব্রণ এবং ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া কমিয়ে ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করতে কাজ করে।

    ৪। ত্রিফলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এর ফলে এটি চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। অকালে চুল পাকা রোধে সাহায্য করে ত্রিফলা। এ ছাড়া ত্রিফলার পেস্ট বানিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনি পাবেন মেঘ কালো লম্বা চুল।

    ৫। ত্রিফলায় প্রচুর পরিমাণে ট্যানিন থাকে, যা আপনার চুলের প্রাকৃতিক রং ধরে রাখতে সাহায্য করে। তার পাশাপাশি এতে রয়েছে কপার। এই উপাদান স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং মেলানিন উৎপাদনও বৃদ্ধি করে। ফলে চুলের কালো রং অটুট থাকে।

    ৬। ত্রিফলায় ফেনলিক কম্পাউন্ড এবং ফ্ল্যাভনয়েডস রয়েছে। আর এই দুই উপাদান অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের ভূমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত ত্রিফলার তেল চুলে মালিশ করলে স্ক্যাল্পের অন্দরে জমে থাকা টক্সিন বেরিয়ে যায়। তাছাড়া এই উপাদান ফ্রি ব়্যাডিকালসের বিরুদ্ধে লড়াই চালায়। তাই অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রাও কমে।

    ৭। ত্রিফলায় রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা আপনার স্ক্যাল্পের প্রদাহ কমায়। তাই স্ক্যাল্পের জ্বালা-চুলকানির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এমনকী এটি আপনার চুলের উপরে একটি সুরক্ষাস্তর তৈরি করে। তাই আবহাওয়ার পরিবর্তন, দূষণ এবং ধুলোর প্রভাবে চুলের সেরকম কোনও ক্ষতি হয় না।

    ত্বক ও চুলের যত্নে যেভাবে ব্যবহার করবেন ত্রিফলা

    • ত্রিফলা ও মেহেদির গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োজন মতো পানি দিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করবে এই প্যাক।
    • ত্রিফলার চূর্ণ নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগান। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। ক্ষতিগ্রস্ত চুলের যত্নে এটি অতুলনীয়। পাশাপাশি চুলের ভলিউম বাড়াতেও কার্যকর।
    • চুলায় নারিকেল তেল গরম করে ত্রিফলার গুঁড়া দিন। ঘন পেস্ট হয়ে গেলে নামিয়ে ঠান্ডা করে ত্বকে ম্যাসাজ করুন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।

    ত্রিফলার অপকারিতা

    ত্রিফলার অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো হজমের বিপর্যয়। এতে ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস এবং ফোলাভাব অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। আপনি যদি এই লক্ষণগুলি অনুভব করেন তবে একটি ছোট ডোজ দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে এটি বাড়ান।যদিও ত্রিফলা নিরাপদ বলে বিবেচিত এবং গবেষণায় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নগণ্য উল্লেখ করা হয়েছে, সেই সঙ্গে ত্রিফলা গুঁড়ো মাত্রাতিরিক্ত সেবনে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হতে পারে।

    • ত্রিফলা লিভারের কোষে পাওয়া এনজাইমের-সাইটোক্রোম পি৪৫০ কার্যকলাপকে বাধা দিতে পারে। এই এনজাইমটি অনেক ওষুধের বিপাকের জন্য অপরিহার্য। এই কারণে, একটি এনজাইম সম্পর্কিত ওষুধের সাথে ত্রিফলা খাওয়ার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন।
    • ত্রিফলার উপাদানে কারো কারো অ্যালার্জি হতে পারে। আপনি যদি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া অনুভব করেন, যেমন ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি বা ফোলাভাব, তাহলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করুন এবং অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করুন।
    • হতাশার ওষুধের প্রভাব কমাতে পারে। ত্রিফলায় উপস্থিত হরিতকীকে এর জন্য দায়ী করা যেতে পারে ।
    • ত্রিফলায় উপস্থিত ভেষজ গর্ভাবস্থায় নিরাপদ বলে মনে করা হয় না।
    • যেমনটি আমরা উল্লেখ করেছি যে ত্রিফলা চূর্ণের ডায়াবেটিস প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কম সুগারের রোগীদের ক্ষেত্রে এর বেশি সেবন সুগারের মাত্রা আরও কমিয়ে দিতে পারে।
    • ত্রিফলায় উপস্থিত মাইরোবালানের পরিমাণ বেশি হলে ডায়রিয়াও হতে পারে।
    • ত্রিফলা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমানোর সাথে যুক্ত। আপনার যদি রক্তে শর্করার মাত্রা কম হয় তবে এটি সেবন করবেন না কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি কমিয়ে দিতে পারে।
    • অতিরিক্ত ত্রিফলা চুর্ণ খেলে ডায়রিয়ার মতো পেটের সমস্যা হতে পারে। প্যাকেজিং অনুযায়ী বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ত্রিফলা চুর্ণ খান।
    • বেশি পরিমাণে এবং দীর্ঘ সময় ধরে ত্রিফলা চূর্ণ সেবন করলে উল্লেখযোগ্য ওজন কমে যায়। ওজন কমানোর জন্য, সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে ত্রিফলা চুর্ণ খান।
    • যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ত্রিফলা চুর্ণ খান।
    • গর্ভবতী মহিলারা ত্রিফলা চূর্ণ না খেলে ভালো হয় কারণ ত্রিফলা চুর্ণ খুব গরম যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
    • 6 বছরের কম বয়সী শিশুদের ত্রিফলা সেবন করাবেন না।
    • অতিরিক্ত ত্রিফলা চুর্ণ খেলেও ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

    ত্রিফলার উপকারিতা সম্পর্কে শেষকথা

    ত্রিফলা একটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক প্রতিকারক যা প্রায় ১,০০০ বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। এর উপাদানগুলি তিনটি ঔষধি গাছ থেকে প্রস্তুত করা হয়। ত্রিফলা ভিটামিন সি, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং পলিফেনলসহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে, যা বার্ধক্য এবং বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের সঙ্গে যুক্ত। তাই নিয়মিত ত্রিফলা খেলে সুস্থ থাকা সহজ হয়।

    যে তিনটি ফল ত্রিফলা তৈরি করে তাদের প্রত্যেকটিরই রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা। আমলকি একটি টক ফল যা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। হরিতকি একটি তিক্ত ফল যা শরীরকে পরিষ্কার এবং ডিটক্সিফাই করার ক্ষমতার জন্য পরিচিত। বিভিটাকি একটি মিষ্টি ফল যা শ্বাসকষ্টের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ত্রিফলা হল একটি নিরাপদ এবং কার্যকর ভেষজ সম্পূরক যা আপনি প্রতিদিন গ্রহণ করতে পারেন পরিপাক স্বাস্থ্য এবং ডিটক্সিফিকেশনের জন্য।

    ত্রিফলার সঠিক গঠন নির্ভর করে ব্যবহৃত তিনটি মাইরোবালান ফলের অনুপাতের উপর। যাইহোক, তিনটি ফলতেই ট্যানিন, গ্যালিক অ্যাসিড, ইলাজিক অ্যাসিড, চেবুলিনিক অ্যাসিড এবং তাদের নিজ নিজ গ্যালোটানিন সহ বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় যৌগ রয়েছে। আশা করছি ত্রিফলার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এটি কিভাবে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পেয়ে গেছেন।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url