জিকা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ ও প্রতিরোধ
জিকা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ ও প্রতিকার এর উপায় জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে
পড়ুন। জিকা ভাইরাস প্রধানত সংক্রামিত এডিস প্রজাতির মশার (এডিস অ্যাজিপ্টাই এবং
এডিস অ্যালবোপিকটাস) কামড়ে হয়। এডিস মশা প্রাথমিকভাবে দিনের বেলায় বিশেষ করে
ভোরে এবং বিকেল বা সন্ধ্যায় কামড়ায়।
যদি একজন গর্ভবতী মহিলাকে একটি সংক্রামিত মশা কামড়ায়, তাহলে জিকা ভাইরাস
প্লাসেন্টায় প্রবেশ করে ভ্রূণকে প্রভাবিত করে। গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত এবং
জন্মগত অস্বাভাবিকতা যেমন ভ্রূণের মাইক্রোসেফালি এবং অন্যান্য স্নায়বিক
অস্বাভাবিকতার ফলে জিকা ভাইরাস শিশুর সম্ভাবনার জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
একজন ব্যক্তিকে সংক্রমিত করার জন্য জিকা ভাইরাসের সবচেয়ে সাধারণ উপায় হলো
সংক্রামিত এডিস মশার কামড়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ালে জিকা ভাইরাস
মশাতে প্রবেশ করে। সংক্রামিত মশা অন্য একজন সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে ভাইরাসটি
সেই ব্যক্তির রক্তে প্রবেশ করে এবং অসুস্থত হয়ে পড়ে। নীচে জিকা ভাইরাস
সংক্রমণের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
পেইজ সূচিপত্রঃ জিকা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ ও প্রতিকার
- জিকা ভাইরাস কি
- জিকা ভাইরাস সংক্রমণের মাধ্যম
- জিকা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ
- জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
- জিকা ভাইরাস কিসের মাধ্যমে ছড়ায়
- গর্ভবতী মহিলারা জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে করনীয়
- জিকা ভাইরাস সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর
- শিশুরা জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে করনীয়
- জিকা ভাইরাস সম্পর্কে শেষকথা
জিকা ভাইরাস কী
জিকা ভাইরাস একটি ফ্ল্যাভিভাইরাস (Flavivirus) যা প্রধানত মশার কামড়ের
মাধ্যমে ছড়ায়। এটি প্রথম ১৯৪৭ সালে উগান্ডার জিকা বনাঞ্চলে আবিষ্কৃত হয়,
সেখান থেকেই এর নামকরণ করা হয়েছে। ভাইরাসটি প্রধানত এডিস মশা (Aedes
mosquito), বিশেষ করে এডিস ইজিপ্টাই এবং এডিস অ্যালবোপিক্টাস প্রজাতির
মাধ্যমে ছড়ায়। জিকা ভাইরাস ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মতোই মশাবাহিত একটি ভাইরাস
জনিত রোগ।
আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ
এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া প্রভৃতি রোগ ছড়ায়, সেই এডিস মশাই জিকা
ভাইরাস বহন করে। এক ধরনের মশাবাহিত রোগ হলো জিকা ভাইরাস ডিজিজ। এডিস মশা
থেকেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই রোগ অতটা মারাত্মক
নয় ঠিকই। তবে প্রেগনেন্ট মহিলারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা
থেকে যায়। যেখানে সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশ ঠিক হয় না। ফলে সন্তানের
মস্তিষ্কও হয় তুলনামূলক ছোট।
জিকা ভাইরাস সংক্রমণের মাধ্যম
জিকা ভাইরাস ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। এই মশা দিনে বেশি কামড়ায়। আর এই মশা
দিয়েই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও পীতজ্বরও ছড়ায়। রক্ত পরিসঞ্চালন এবং অনিরাপদ যৌন
সম্পর্কের মাধ্যমেও ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের মধ্যে জিকা ভাইরাসের
সংক্রমণ হলে তা গর্ভের শিশুতেও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গর্ভস্থ শিশুর
জন্য বিষয়টি মারাত্মক জটিলতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
মূলত ২ ধরনের এডিস মশা দিয়ে এই ভাইরাস ছড়ায়। গ্রীষ্মমণ্ডল ও এর নিকটবর্তী
অঞ্চলে Aedes aegypti মশার মাধ্যমে ছড়ায় কারণ শীতপ্রধান অঞ্চলে এরা টিকে
থাকতে পারেনা। Aedes albopictus মশাও এই রোগ ছড়াতে পারে। এরা শীতপ্রধান
অঞ্চলে টিকে থাকতে পারে। শুধু স্ত্রী মশা দিনের বেলা কামড়ায়। এরা একবারে
একের অধিক ব্যক্তিকে কামড়াতে পছন্দ করে। একবার রক্ত খাওয়া শেষে ডিম পাড়ার
পূর্বে তিন দিনের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়।
এদের ডিমগুলো পানিতে এক বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। অল্প পরিমাণ জমে থাকা পানিও
ডিম পরিস্ফুটনের জন্য যথেষ্ট। জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে কামড়ালে উক্ত
মশাও ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। জিকা ভাইরাস শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমেও
ছড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি আমেরিকাতে এরকম ব্যক্তির সন্ধান
পাওয়া গিয়েছে।
জিকা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ
জিকা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ সাধারণত জ্বর হালকা থেকে মাঝারি ধরনের হয় এবং ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার কয়েক দিনের
মধ্যে দেখা দিতে পারে। বর্তমানে সারা বিশ্বেই জিকা এক আতঙ্কের নাম। এই
ভাইরাসের কারণে মারাত্মক জটিলতা হয় গর্ভস্থ শিশুর। এরা ছোট মাথা নিয়ে জন্মায়।
রোগটি ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। ১৯৪৭ সালে উগান্ডার জিকা অরণ্যে এটি প্রথম
শনাক্ত করা হয়। তাই এই ভাইরাসের নাম জিকা ভাইরাস।
জিকা ভাইরাসের চিকিৎসায় এখনো কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। রোগ প্রতিরোধে মশা
নিধনে ব্যবস্থা নিতে হবে। জিকা ভাইরাসের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। লক্ষণ
উপশমের জন্য প্রচুর বিশ্রাম, পানীয় গ্রহণ, এবং প্রয়োজন হলে প্যারাসিটামল
ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে গর্ভবতী নারীদের বিশেষ যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
জিকা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ গুলো হলোঃ
- জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রচলিত লক্ষণ হলো জ্বর হওয়া। জ্বর সাধারণত মৃদু প্রকৃতির হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
- ত্বকে লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি হতে পারে, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
- গায়ে র্যাশ ওঠা, গাঁটে ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া। মাথাব্যথার পাশাপাশি অনেকেই দুর্বলতা বা অবসাদ অনুভব করেন।
- সাধারণত জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে যাওয়ার মতো অসুবিধা হয় না। আর এ রোগে মৃত্যু হয় না।
- গর্ভস্থ শিশুর ওপর বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে। এটি শিশুর জন্মগত ত্রুটি যেমন মাইক্রোসেফালি (ছোট মাথা ও মস্তিষ্কের গঠনগত সমস্যা) ঘটাতে পারে।
- সাধারণত পাঁচজন আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে একজনের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
- এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে।
- লক্ষণগুলো সাধারণত এক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে।
জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় বা জিকা ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার একমাত্র
উপায় মশার উৎপাত কমানো। এর জন্য বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। বর্ষার
জল জমতে দেওয়া যাবে না। নয়তো সেখানেই বাসা বাঁধবে মশা। আর এডিস মশার
কামড়েই ছড়িয়ে পড়বে জিকা ভাইরাস। তাই ঘরে মশারি টাঙিয়ে ঘুমোতে হবে।
বিশেষত প্রেগনেন্ট মহিলাদের সাবধানে রাখতে হবে।
আরও পড়ুনঃ শীতকালীন রোগ ও তার প্রতিকারের উপায়
জিকা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে বরং সতর্কতা অনুসরণ করা উচিত। যদি উপরের
কোনো উপসর্গ যদি পরিলক্ষিত হয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তবে নিজ থেকে কোনো ওষুধ গ্রহণ করবেন না। বরং সুরক্ষিত থাকতে প্রাসঙ্গিক
ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক জিকা
ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় কি ব্যবস্থা নিবেন সে সম্পর্কে।
১. ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে, যতটা সম্ভব বিশ্রাম
নিতে হবে ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
২. গর্ভবতী নারীদের ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে, বিশেষ করে সংক্রমিত
এলাকায়।
৩. জিকা ভাইরাস থেকে সংক্রমণ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো মশার কামড়ের
ঝুঁকি কমানো। যেহেতু মশা প্রধানত দিনের বেলায় কামড়ায়, তাই ঘরের আশপাশ
পরিষ্কার রাখুন।
৪. যেসব পাত্র ও বালতি খালি আছে, তাতে পানি জমে মশা বংশবৃদ্ধি করছে কি না
তা পরীক্ষা করুন।
৫. ফুলহাতা জামাকাপড় পরুন, বিশেষ করে বাইরে যাওয়ার সময়।
৬. যদি আপনি এমন এলাকায় থাকেন যেখানে মশার প্রকোপ বেশি সেখানে ঘরের দরজা ও
জানালা বন্ধ রাখুন ও মশা-মাছি তাড়ানোর জন্য ওষুধ প্রয়োগ করুন।
৭. ফোটানো/বিশুদ্ধ পানি পান করুন, ঘরে তৈরি তাজা খাবার খান ও বাইরের খাবার
এড়িয়ে চলুন।
৮. জ্বরের চিকিত্সার জন্য অ্যাসপিরিন ব্যবহার করবে না। যদি উপসর্গগুলো
দু’দিনের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৯. জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে এমন ঘরে
থাকতে হবে, যেখানে বায়ু চলাচল করতে পারে।
১০. হাত দিয়ে নাক ও মুখ স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি
বজায় রাখুন।
১১. যতটা সম্ভব ঘন ঘন হাত ধুতে হবে।
১২. দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের, তারা ভাইরাল সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে
বেশি ভিড়ের মধ্যে না যাওয়াই ভালো।
জিকা ভাইরাস কিসের মাধ্যমে ছড়ায়
জিকা ভাইরাস কিসের মাধ্যমে ছড়ায় তা আনেকেই জানেন না। জিকা ভাইরাস সাধারণত সংক্রামিত এডিস প্রজাতির মশার কামড়ে মানুষের মধ্যে
ছড়িয়ে পড়ে। কোনও সংক্রমিত এডিস মশা সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে তিনি
জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক
ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমেও এই রোগ ছড়াতে পারে। এমনকী প্রেগনেন্সির সময় মায়ের
শরীর থেকে ভ্রূণেও সংক্রমিত হতে পারে এই ভাইরাস।
মশার কামড়ের মাধ্যমেঃ জিকা ভাইরাস প্রাথমিকভাবে সংক্রামিত এডিস
প্রজাতির মশার ( এডিস ইজিপ্টি এবং এডিস অ্যালবোপিকটাস ) কামড়ের মাধ্যমে
মানুষের মধ্যে ছড়ায়। এই মশাগুলি একই মশা যা ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া
ভাইরাস ছড়ায়। এই মশারা সাধারণত বালতি, বাটি, পশুর থালা, ফুলের পাত্র এবং
ফুলদানির মতো পাত্রে স্থায়ী জলে ডিম পাড়ে। তারা মানুষকে কামড়াতে পছন্দ
করে এবং ঘরে এবং বাইরে উভয়ই বাস করতে পছন্দ করে। তারা দিনে এবং রাতে উভয়
সময় কামড়ায়।
একটি মশা জিকা ভাইরাসে সংক্রামিত হয় যখন এটি একটি সংক্রামিত ব্যক্তিকে
কামড় দেয় এমন সময়কালে যখন ভাইরাসটি ব্যক্তির রক্তে পাওয়া যায়, সাধারণত
সংক্রমণের প্রথম সপ্তাহে। সংক্রামিত মশা কামড়ের মাধ্যমে অন্য মানুষের
মধ্যে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
যৌনতার মাধ্যমেঃ জিকা ভাইরাস জিকা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে
যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে তাদের সঙ্গীদের কাছে যেতে পারে , এমনকি সেই সময়ে
আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণ না থাকলেও। এর মধ্যে রয়েছে যোনি, পায়ুপথ এবং
ওরাল সেক্স এবং সেক্স টয় শেয়ার করা। পুরুষ এবং মহিলারা যে সময়সীমা
যৌনতার মাধ্যমে জিকা ভাইরাস পাস করতে পারে তা আলাদা কারণ জিকা ভাইরাস
শরীরের অন্যান্য তরলের তুলনায় বীর্যে বেশিক্ষণ থাকতে পারে।
গর্ভবতী মা থেকে তাদের ভ্রূণ পর্যন্তঃ গর্ভবতী মায়ের থেকেও তার
সন্তানের জিকা ভাইরাস ছড়াতে পারে। যে ব্যক্তি গর্ভবতী এবং জিকা ভাইরাসে
আক্রান্ত, গর্ভাবস্থায় বা জন্মের সময় তাদের ভ্রূণে ভাইরাস প্রেরণ করতে
পারে যদিও তাদের লক্ষণ না থাকে। গর্ভাবস্থায় জিকা সংক্রমণ গুরুতর জন্মগত
ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি অন্যান্য গর্ভাবস্থার সমস্যার সাথে যুক্ত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য এবং অঞ্চলগুলিতে গর্ভাবস্থায় নিশ্চিত বা
সম্ভাব্য জিকা সংক্রমণের লোকদের মধ্যে, প্রায় 5% শিশুর মধ্যে
জিকা-সম্পর্কিত জন্মগত ত্রুটি ঘটেছে।
বুকের দুধ খাওয়ানোঃ মায়ের দুধে জিকা ভাইরাস পাওয়া গেছে।
স্তন্যপান করানো শিশুদের মধ্যে সম্ভাব্য জিকা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত করা
হয়েছে, তবে বুকের দুধের মাধ্যমে জিকা ভাইরাস ছড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত
হওয়া যায়নি। যেহেতু বর্তমান প্রমাণগুলি পরামর্শ দেয় যে বুকের দুধ
খাওয়ানোর সুবিধাগুলি বুকের দুধের মাধ্যমে জিকা ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকিকে
ছাড়িয়ে যায়, সিডিসি লোকেদের বুকের দুধ খাওয়াতে উত্সাহিত করে , এমনকি
যদি তারা সংক্রামিত হয় বা বসবাস করে বা জিকার ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে ভ্রমণ করে
থাকে।
গর্ভবতী মহিলারা জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে করনীয়
গর্ভবতী মহিলারা জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার গর্ভের সন্তানের
মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে এই সময় সতর্কতা অবলম্বন
করা জরুরি, কারণ এই ভাইরাস গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে জটিলতা সৃষ্টি করতে
পারে, যেমন মাইক্রোসেফালি (মস্তিষ্কের আকার ছোট হওয়া) এবং অন্যান্য
স্নায়বিক সমস্যার ঝুঁকি। নিচে গর্ভবতী মহিলারা জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত
হলে করণীয় কিছু পদক্ষেপ দেওয়া হলোঃ
আরও পড়ুনঃ খালি পায়ে মাটিতে হাটার ২০টি উপকারিতা
১. ডাক্তার দেখানোঃ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রথমেই একজন
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আপনার চিকিৎসক
প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করবেন যে ভ্রূণের কোনো
সমস্যা আছে কি না।
২. পরীক্ষা করানোঃ রক্ত এবং মূত্র পরীক্ষা করে জিকা ভাইরাস
সংক্রমণ নিশ্চিত হন। আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে শিশুর বিকাশ পর্যবেক্ষণ করা
জরুরি।
৩. বিশ্রাম এবং হাইড্রেশনঃ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর
জন্য প্রচুর বিশ্রাম নিন এবং পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করুন।
৪. মশার কামড় এড়ানোঃ জিকা ভাইরাস সাধারণত মশার মাধ্যমে ছড়ায়। মশার
কামড় এড়ানোর জন্য মশা নিরোধক ব্যবহার করুন। লম্বা পোশাক পরুন। দিনে ও
রাতে ঘুমানোর আগে মশারী ব্যবহার করুন। যেখানে মশা বেশি থাকে, সেইসব এলাকা
এড়িয়ে চলুন।
৫. পরিবার পরিকল্পনাঃ গর্ভধারণের সময় এবং পরবর্তী সময়ের জন্য সঠিক
পারিবারিক পরিকল্পনা নিশ্চিত করুন। সংক্রমণের প্রভাব নিয়ে চিকিৎসকের
সঙ্গে আলোচনা করুন।
৬. সতর্কতা অবলম্বনঃ জিকা ভাইরাস যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও ছড়াতে
পারে। তাই সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের
অন্যান্য সদস্যদেরও সুরক্ষার ব্যবস্থা করুন।
৮. ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে চলাঃ
আপনার এলাকার স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর নির্দেশনা মেনে চলুন। জিকা সংক্রমণের
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং এসব এলাকায় ভ্রমণ এড়িয়ে
চলুন।
৯. ভ্রূণের বিকাশ পর্যবেক্ষণঃ নিয়মিত আল্ট্রাসাউন্ড এবং অন্যান্য
প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান।চিকিৎসক যদি নির্দেশ দেন, তাহলে
অ্যামনিওসেন্টেসিসের মতো বিশেষ পরীক্ষা করানোর পরামর্শ নিতে পারেন। এটি
শিশুর সঠিক বিকাশ পর্যবেক্ষণে সাহায্য করবে।
১০. জ্বর বা অন্যান্য উপসর্গ নিয়ন্ত্রণঃ জিকা ভাইরাসের কারণে
জ্বর, গাঁটে ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, বা ত্বকে র্যাশ দেখা দিলে
প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া
ওষুধ সেবন করবেন না। আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসপিরিন এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো
কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
১১. খাদ্যাভ্যাস উন্নত করাঃ সংক্রমণের সময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পুষ্টি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়ায়। ভিটামিন সি, আয়রন, এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
১২. সঙ্গীর স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ যদি সঙ্গীর মধ্যে জিকা ভাইরাসের
লক্ষণ দেখা দেয়, তবে স্বামীও পরীক্ষা করান। যৌন সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর
জন্য প্রয়োজন হলে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিন। সঙ্গীর সংক্রমণ থাকলে
চিকিৎসক সঠিক পরামর্শ দেবেন।
১৩. অতিরিক্ত সুরক্ষাঃ ঘরের আশেপাশে পানি জমতে দেবেন না, কারণ এতে
মশার জন্ম হতে পারে।
মশা তাড়ানোর জন্য স্প্রে বা মশারি ব্যবহার করুন। দিনের বেলায়, বিশেষত
সকালের দিকে এবং সন্ধ্যায় মশার কামড় থেকে সুরক্ষিত থাকুন।
১৪. অন্যান্য গর্ভাবস্থা জনিত সমস্যা এড়ানোঃ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস,
এবং অন্যান্য গর্ভাবস্থাজনিত সমস্যা আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকের
নিয়মিত পরামর্শ নিন। জিকা ভাইরাসের পাশাপাশি এই সমস্যাগুলোও শিশুর ওপর
প্রভাব ফেলতে পারে।
১৫. ভ্রমণ পরিকল্পনাঃ যেসব এলাকায় জিকা ভাইরাসের প্রকোপ বেশি,
সেখানে যাওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ভ্রমণের সময়
সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করুন।
জিকা ভাইরাস সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর
প্রশ্নঃ জিকা ভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য গর্ভবতী
মহিলাদের কি করা উচিত?
উত্তরঃ গর্ভবতী মহিলাদের মশার কামড় এড়াতে অতিরিক্ত সতর্কতা
অবলম্বন করা উচিত যদি তারা জিকা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাস
করে বা ভ্রমণ করে। যদি তাদের সঙ্গী এই ধরনের এলাকায় ভ্রমণ করে থাকে,
তাহলে তাদেরও কনডম ব্যবহার করা উচিত বা যৌন যোগাযোগের মাধ্যমে সম্ভাব্য
সংক্রমণ রোধ করতে গর্ভাবস্থায় যৌনতা থেকে বিরত থাকা উচিত।
প্রশ্নঃ কোন মশা জিকা ভাইরাস ছড়ায়?
উত্তরঃ এডিস মশা, বিশেষ করে এডিস অ্যাজিপ্টাই এবং এডিস
অ্যালবোপিকটাস এর মাধ্যমে জিকা ভাইরাস ছড়ায়। এরা সাধারণত দিনের বেলায়
কামড়ায়, বিশেষ করে সকাল এবং সন্ধ্যার সময়।
প্রশ্নঃ জিকা ভাইরাস কি বিপজ্জনক?
উত্তরঃ সাধারণত জিকা ভাইরাস মৃদু অসুস্থতার কারণ হয়। তবে গর্ভবতী
নারীদের ক্ষেত্রে এটি খুবই বিপজ্জনক, কারণ এটি গর্ভের শিশুর মস্তিষ্কের
বিকাশে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যার ফলে মাইক্রোসেফালি (অস্বাভাবিকভাবে ছোট
মাথা) এবং অন্যান্য নিউরোলজিক্যাল সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্নঃ গর্ভবতী নারীদের জন্য জিকা ভাইরাস কেন বিপজ্জনক?
উত্তরঃ জিকা ভাইরাস গর্ভবতী নারীর শরীরে সংক্রমিত হলে এটি
প্লাসেন্টার মাধ্যমে ভ্রূণের মধ্যে ছড়াতে পারে। এর ফলে হতে পারে
মাইক্রোসেফালি ও গিলিয়ান-বারি সিনড্রোম। মাইক্রোসেফালির করনে শিশুর মাথা
ও মস্তিষ্ক অস্বাভাবিকভাবে ছোট হয়ে যায়। গিলিয়ান-বারি সিনড্রোম এর
প্রভাবে শিশুর বিরল নার্ভজনিত সমস্যা যেমন, শিশুর জন্মগত ত্রুটি এবং
বিকাশজনিত সমস্যা দেখা দেয়।
প্রশ্নঃ জিকা ভাইরাস প্রথম কোথায় শনাক্ত হয়?
উত্তরঃ জিকা ভাইরাস প্রথম ১৯৪৭ সালে উগান্ডার জিকা জঙ্গলে একটি
বানরের শরীরে শনাক্ত করা হয়। এরপর ১৯৫২ সালে এটি মানুষের মধ্যে শনাক্ত
হয়।
শিশুরা জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে করনীয়
শিশুরা জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে করনীয় কি বা কি করবেন এ সময় অনেক মা বুঝে
উঠতে পারেন না। শিশুরা যদি জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তবে সঠিক যত্ন এবং
চিকিৎসা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করলে শিশুর সুস্থতা
দ্রুত ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে এবং জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা
যাবে। এখানে, শিশুরা জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কি করবেন সেই পদক্ষেপ
গুলো আলোচনা করা হলোঃ
১. চিকিৎসকের পরামর্শ নিনঃ শিশুর শরীরে জিকা ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে
(যেমন, জ্বর, শরীরে ফুসকুড়ি, চোখ লাল হওয়া, পেশী ও জয়েন্টে ব্যথা),
দ্রুত একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করবেন এবং পরবর্তী
পদক্ষেপ সম্পর্কে নির্দেশনা দেবেন।
আরও পড়ুনঃ শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টিঃ শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দিন। সুষম
খাদ্য এবং প্রচুর তরল পান করতে দিন যাতে শরীর সুস্থ থাকে এবং ডিহাইড্রেশন
এড়ানো যায়।
৩. জ্বর এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করুনঃ জ্বর বা ব্যথা কমানোর জন্য চিকিৎসকের
পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে। তবে অ্যাসপিরিন বা অন্য
কোনও সেলিসিলেট ওষুধ এড়ানো উচিত, কারণ এটি রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৪. মশা প্রতিরোধ করুনঃ শিশুকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করুন। মশারি ব্যবহার
করুন এবং মশা প্রতিরোধক স্প্রে প্রয়োগ করুন। শিশুর আশপাশের এলাকায় পানি
জমতে দেবেন না, কারণ এটি এডিস মশার বংশবৃদ্ধি রোধে সাহায্য করবে।
৫. নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুনঃ শিশুর অবস্থার পরিবর্তন হলে চিকিৎসকের সঙ্গে
দ্রুত যোগাযোগ করুন।
জিকা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে যদি জটিলতা দেখা দেয়, তবে দ্রুত ব্যবস্থা
গ্রহণ করুন।
৬. অন্যদের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করুনঃ জিকা ভাইরাস মশার মাধ্যমে ছড়ায়, তাই
মশার সংখ্যা কমাতে বাড়ির আশপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন।
৭. লক্ষণগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করুনঃ সাধারণত জিকা ভাইরাস সংক্রমণের
লক্ষণ ২-৭ দিন স্থায়ী হয়। তবে কোনো জটিলতা দেখা দিলে দীর্ঘস্থায়ী হতে
পারে। নিউরোলজিকাল সমস্যা বা শিশু খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়লে
তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা নিন।
৮. শিশুকে আর্দ্র রাখুনঃ জ্বরের সময় শিশুর শরীর থেকে প্রচুর তরল বেরিয়ে
যেতে পারে। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে শিশুকে প্রচুর পানি, ফলের রস বা ওআরএস
খাওয়ান। মায়ের দুধ পান করলে শিশুকে আরও বেশি করে দুধ খাওয়াতে উৎসাহিত
করুন।
৯. পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করুনঃ শিশুর চারপাশে মশারোধক ব্যবস্থাপনা
(যেমন, মশারি ব্যবহার, জানালায় নেট লাগানো) নিশ্চিত করুন। শিশুর গায়ে
হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরান, যাতে ত্বক ঢেকে থাকে। মশার কামড় রোধে
বাচ্চার জন্য নিরাপদ মশা নিরোধক ক্রিম ব্যবহার করুন। বাড়ির ভেতর ও বাইরে
জমে থাকা পানি পরিষ্কার করুন। ফুলের টব, বালতি, পুরোনো টায়ার বা অন্য
যেকোনো জায়গা যেখানে পানি জমে থাকতে পারে তা নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
১০. অন্য সংক্রমণ থেকে রক্ষা করুনঃ জিকা ভাইরাসের পাশাপাশি ডেঙ্গু বা
চিকুনগুনিয়ার মতো রোগও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। তাই এই মশার বিস্তার
রোধে সঠিক পদক্ষেপ নিন।
১১. শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখুনশিশুর অসুস্থতায় সে
উদ্বিগ্ন বা অস্বস্তিতে থাকতে পারে। তাকে সান্ত্বনা দিন এবং শান্ত থাকার
পরিবেশ তৈরি করুন।
১২. রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানঃ পরিবার ও সমাজের অন্যান্য সদস্যদের জিকা
ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করুন। স্কুল বা স্থানীয় শিশুদের জন্য সচেতনতামূলক
কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে।
১৩. গর্ভবতী মায়েদের সতর্কতাঃ যদি গর্ভবতী মা কোনোভাবে জিকা ভাইরাস সংক্রমিত
এলাকায় থাকেন বা শিশুর সংস্পর্শে আসেন, তাহলে তিনি অবিলম্বে চিকিৎসকের
পরামর্শ নিন। জিকা ভাইরাস ভ্রূণের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
১৪. দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার চিকিৎসাঃ জিকা ভাইরাস শিশুদের মধ্যে সাধারণত
গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে গুইলিয়ান-বারে সিনড্রোম
(GBS) বা অন্য স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী কোনো সমস্যা দেখা দিলে সঠিকভাবে ফলো-আপ নিশ্চিত করুন।
১৫. টিকা এবং গবেষণার আপডেট জানুনঃ বর্তমানে জিকা ভাইরাসের কোনো অনুমোদিত
টিকা নেই। তবে বিজ্ঞানীরা টিকা উদ্ভাবনে কাজ করছেন। আপনার অঞ্চলে স্বাস্থ্য
বিভাগের নতুন নির্দেশিকা সম্পর্কে অবগত থাকুন।
এই সব পদক্ষেপ অনুসরণ করলে শিশুর সুস্থতা দ্রুত ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে এবং
জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
জিকা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ সম্পর্কে শেষকথা
জিকা ভাইরাস একটি ফ্ল্যাভিভাইরাস (Flavivirus) যা প্রধানত মশার কামড়ের
মাধ্যমে ছড়ায়। এটি প্রথম ১৯৪৭ সালে উগান্ডার জিকা বনাঞ্চলে আবিষ্কৃত হয়,
সেখান থেকেই এর নামকরণ করা হয়েছে। ভাইরাসটি প্রধানত এডিস মশা (Aedes
mosquito), বিশেষ করে এডিস ইজিপ্টাই এবং এডিস অ্যালবোপিক্টাস প্রজাতির
মাধ্যমে ছড়ায়। জিকা ভাইরাস গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক। এটি
মাইক্রোসেফালি (Microcephaly) নামক জন্মগত ত্রুটি ঘটাতে পারে, যার ফলে
নবজাতকের মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
আরও পড়ুনঃ অটিজমের প্রাথমিক লক্ষণ ও চিকিৎসা
ভাইরাসটি যৌন সম্পর্ক, রক্ত সঞ্চালন এবং মায়ের দুধের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে
পারে। জিকা ভাইরাসের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা নেই।
প্রতিরোধের জন্য মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা সবচেয়ে কার্যকর উপায়
যেমন, মশারির ব্যবহার করা, মশা তাড়ানোর স্প্রে ব্যবহার করা, জল জমে থাকতে
পারে এমন স্থান পরিষ্কার রাখা। যদি আপনি এমন কোনো অঞ্চলে ভ্রমণ করেন যেখানে
জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রয়েছে, তাহলে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url