স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কি-স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে


স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কি এ সম্পর্কে অনেকের ধারনা নেই। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট হলো আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি মাইলফলক, যা বিশেষ করে অনুন্নত ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব। বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলেই মানুষ ক্যাবল ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করে থাকে। 
স্যাটেলাইট ইন্টারনেট
ক্যাবল ইন্টারনেট সাধারণত সাবমেরিন ক্যাবল বা অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কোনো তার ছাড়াই সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে সেবা দেয়া হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চল বা গ্রামে যেখানে ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন করা কঠিন, সেখানে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা পাওয়া সম্ভব।

পেইজ সূচিপত্রঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কি এবং কিভাবে কাজ করে

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কি

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কি তা অনেকেই জানেন না। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট হলো এমন একটি প্রযুক্তি যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করে। এটি পৃথিবীর নির্দিষ্ট স্থানে থাকা গ্রাউন্ড স্টেশন (ভূমিভিত্তিক স্টেশন) থেকে সিগন্যাল পাঠিয়ে স্যাটেলাইটে পৌঁছে দেয়, যা পরে সেই সিগন্যাল ব্যবহারকারীর ডিভাইসে প্রেরণ করে। একই প্রক্রিয়ায় ব্যবহারকারীর ডিভাইস থেকে তথ্য স্যাটেলাইটে যায় এবং সেখান থেকে আবার গ্রাউন্ড স্টেশনে ফিরে আসে।
বাংলাদেশে এখন সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে। যা মূলত ক্যাবল বা তারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের সংযুক্ত করে। ফলে যেসব এলাকায় ক্যাবল নেয়া সম্ভব হয় না সেখানে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া যায় না। দেশের জল, স্থল ও আকাশ সীমায় যেখানে ক্যাবল নেওয়া সম্ভব নয় সেখানে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া যাবে। অনেকে যেমন বিমানে বসেও এখন ব্রাউজিংয়ের সুবিধা পাচ্ছেন।

মূলত সহজে বিদেশি চ্যানেল দেখার জন্য যেমন অনেকে আকাশ এন্টেনা ব্যবহার করেন তেমনি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার জন্য একটি এন্টেনা বা ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে, যা কৃত্রিম উপগ্রহের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করবে। বাংলাদেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ১৩ কোটি ১০ লাখ। তবে এর মধ্যে ১১ কোটি ৮৪ লাখ ৯০ হাজার মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে এসম্পর্কে জানার আগ্রহ রয়েছে অনেকের মাঝে। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট হলো একটি প্রযুক্তি যা ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করার জন্য ভূস্থির (geostationary) বা নিম্ন-কক্ষপথের (low Earth orbit) স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয়। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সাধারণত সেইসব এলাকায় ব্যবহৃত হয় যেখানে ব্রডব্যান্ড বা ফাইবার অপটিক ক্যাবল সহজলভ্য নয় বা সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হয় না। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।

১. স্যাটেলাইট ডাটা ট্রান্সমিশনঃ স্যাটেলাইটটি পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। এটি গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে সিগন্যাল গ্রহণ করে এবং তা পৃথিবীর নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রেরণ করে। ব্যবহারকারীর ডিভাইস (যেমন কম্পিউটার বা রাউটার) একটি স্যাটেলাইট ডিশ বা অ্যান্টেনার মাধ্যমে সিগনাল পাঠায়। এই সিগনালগুলি সরাসরি মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইটে পৌঁছে যায়। বর্তমানে দুটি বড় ধরনের স্যাটেলাইট ব্যবহৃত হয় যেমনঃ
১. (GEO) Geostationary Orbit যা নির্দিষ্ট একটি স্থানে অবস্থান করে।
২. (LEO) Low Earth Orbit এটি পৃথিবীর কাছাকাছি অরবিটে থাকে এবং ঘুরতে থাকে, যেমনঃ Starlink, OneWeb।

২. স্যাটেলাইট থেকে গ্রাউন্ড স্টেশনঃ স্যাটেলাইট সিগনাল গ্রহণ করে এবং তা গ্রাউন্ড স্টেশন বা গেটওয়ে-তে পাঠায়। এই গ্রাউন্ড স্টেশন ইন্টারনেট ব্যাকবোনের (backbone) সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।এটি একটি বড় এন্টেনা বা ডিশ যা ইন্টারনেট ডেটা স্যাটেলাইটে পাঠায় এবং সেখান থেকে ডেটা সংগ্রহ করে। গ্রাউন্ড স্টেশনটি মূলত ইন্টারনেট সরবরাহকারীর ডেটা সেন্টারের সাথে সংযুক্ত।

৩. ডেটা প্রসেসিং এবং রিটার্নঃ ইন্টারনেট সার্ভার থেকে ডেটা সংগ্রহ করার পর, সেই ডেটা পুনরায় স্যাটেলাইটে পাঠানো হয়। স্যাটেলাইট এই ডেটা ব্যবহারকারীর স্যাটেলাইট ডিশে পুনরায় প্রেরণ করে।

৪. ব্যবহারকারীর কাছে ডেটা পৌঁছানোঃ গ্রাহকের বাড়ি বা স্থানে ছোট একটি ডিশ বা এন্টেনা স্থাপন করা হয়, যা স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল গ্রহণ ও প্রেরণ করে। স্যাটেলাইট ডিশ সিগনাল গ্রহণ করে, এবং তা ব্যবহারকারীর ডিভাইসে স্থানান্তরিত করে।

বর্তমান স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাদাতা কোম্পানি

বর্তমান স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাদাতা কোম্পানি রয়েছে অনেক। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রধান প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)। বিসিএসসিএল তাদের নিজস্ব বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের দুর্গম ও উপকূলীয় অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে। উদাহরণস্বরূপ, ৩১টি দ্বীপে ভি-স্যাটের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে।

এছাড়া, ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সরকার তাদেরকে লাইসেন্স প্রদানের জন্য গাইডলাইন তৈরি করছে, তবে সেবার খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন। বিসিএসসিএল বর্তমানে প্রধান স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হলেও, স্টারলিংক বাংলাদেশে তাদের সেবা চালু করতে আগ্রহী, যা ভবিষ্যতে ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

বর্তমান স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাদানকারী কোম্পানিগুলো হলোঃ

1. SpaceX Starlink

  • Elon Musk এর SpaceX কোম্পানি বিশ্বব্যাপী উচ্চ গতির ইন্টারনেট সরবরাহের জন্য LEO স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে।
  • এটি ১ গিগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত গতির প্রতিশ্রুতি দেয়।
  • উচ্চ গতির LEO স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক।
  • ডেটা ক্যাপ ছাড়া সেবা।
2. HughesNet

  • GEO স্যাটেলাইট পরিষেবা প্রদানকারী।
  • গ্রামীণ অঞ্চলে জনপ্রিয়।
3. OneWeb

  • LEO স্যাটেলাইটের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ইন্টারনেট সরবরাহের জন্য কাজ করছে।
  • LEO ভিত্তিক স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক।
  • উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বিশেষভাবে কার্যকর।
4. Viasat

  • গ্লোবাল কভারেজ সহ GEO স্যাটেলাইট পরিষেবা।
  • উচ্চ ব্যান্ডউইথের প্রতিশ্রুতি।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের প্রকারভেদ

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট বিভিন্ন প্রকারভেদে ভাগ করা যায়, মূলত ব্যবহারের পদ্ধতি, প্রযুক্তি, এবং ব্যান্ডউইডথ অনুযায়ী। প্রতিটি সিস্টেমের নিজস্ব সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নির্দিষ্ট প্রয়োজন অনুযায়ী স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের ধরন নির্বাচন করা হয়। স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের কয়েক ধরণের বৈচিত্র এবং এর ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে নীচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

১. জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট (Geostationary Satellite Internet)

জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট হলো একটি ইন্টারনেট সেবা যা জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট ব্যবহার করে পৃথিবী থেকে প্রাপ্ত সংকেতের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে। এটি সাধারণত উচ্চতর ভূ-অঞ্চল বা গ্রামীণ এলাকায় ব্যবহৃত হয় যেখানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছানোর জন্য ফাইবার অপটিক বা অন্যান্য স্থলভিত্তিক সংযোগের সুবিধা নেই। জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৬,০০০ কিলোমিটার উপরে একটি স্থির অবস্থানে অবস্থান করে, তাই এটি সর্বদা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের উপর ইন্টারনেট সংকেত প্রদান করতে সক্ষম।

GEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের কাজের পদ্ধতি

  • সংকেত প্রেরণঃ পৃথিবী থেকে ইনপুট সংকেত (যেমন, ইন্টারনেট সংযোগের জন্য ডেটা) স্যাটেলাইটে পাঠানো হয়।
  • সংকেত গ্রহণ এবং পুনঃপ্রচারঃ স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার সংকেত গ্রহণ করে এবং এটি শক্তিশালী করে পৃথিবীতে গ্রাহকদের কাছে পাঠায়।
  • গ্রাহক সেবাঃ গ্রাহকরা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন, যা তাদের নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত থাকে।
GEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সুবিধা

  • বিশ্বব্যাপী কাভারেজঃ GEO স্যাটেলাইট পৃথিবীজুড়ে বিস্তৃত এলাকায় কাভারেজ প্রদান করতে সক্ষম, বিশেষ করে এমন স্থানগুলোতে যেখানে অন্যান্য ইন্টারনেট সেবা পৌঁছাতে পারে না (যেমন, গ্রামীণ বা দুর্বোধ্য স্থান)।
  • স্থির অবস্থানঃ GEO স্যাটেলাইটের স্থির অবস্থান মানে এটি এক স্থানে স্যাটেলাইট ডিশ বা অ্যান্টেনার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ প্রদান করতে পারে। ফলে সেবা প্রাপ্তি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।
  • উচ্চ গতিঃ GEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেট উচ্চ গতি সরবরাহ করতে সক্ষম, তবে সেগুলির জন্য লেটেন্সি বা দেরি কিছুটা বেশি হতে পারে (কারণ স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে ৩৫,৭৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত)।
GEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সীমাবদ্ধতা

  • লেটেন্সিঃ GEO স্যাটেলাইটের উচ্চ অবস্থান থেকে সংকেত পাঠানোর সময় কিছুটা দেরি হয়, যার ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা কিছুটা উচ্চ লেটেন্সি (দেরি) অনুভব করতে পারেন। এটি বিশেষত গেমিং, ভিডিও কনফারেন্সিং, বা লাইভ স্ট্রিমিংয়ে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • বৃষ্টি এবং আবহাওয়াঃ GEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেট আবহাওয়া দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে, যেমন বৃষ্টি বা মেঘলা আবহাওয়া সংকেতের গুণগত মান কমিয়ে দিতে পারে (যাকে "রেইন ফেড" বলা হয়)।
  • ইনস্টলেশন ব্যয়ঃ GEO স্যাটেলাইটের জন্য বিশেষ অ্যান্টেনা বা ডিসের প্রয়োজন, যা কিছু ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল হতে পারে।
GEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের ব্যবহার

GEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেট অনেক সময় টিভি সম্প্রচার, রেডিও সম্প্রচার, বা অন্যান্য ডেটা ট্রান্সফার ব্যবস্থায় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া এটি গ্রামীণ এলাকায় যেখানে স্থলভিত্তিক ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছানো সম্ভব নয়, সেখানে ইন্টারনেট সেবা সরবরাহ করতে সাহায্য করে।

এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডাটা সংকেত প্রেরণ এবং গ্রহণ করা হয়, তবে এর একটি উল্লেখযোগ্য অসুবিধা হল সিগন্যাল বিলম্ব বা "ল্যাটেন্সি", যেহেতু সংকেত পৃথিবী থেকে স্যাটেলাইট এবং আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে সময় নেয়। ল্যাটেন্সি তুলনামূলক বেশি (৫০০-৭০০ মিলিসেকেন্ড)।কভারেজ এলাকা অনেক বড়। তবে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এই বিলম্বের পরিমাণ কমানো হয়েছে এবং এটি গ্রামাঞ্চলসহ অনেক এলাকায় কার্যকরী ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে।

জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে, বিশেষ করে এমন এলাকায় যেখানে অন্যান্য ইন্টারনেট প্রযুক্তি (যেমন, ফাইবার অপটিক বা মোবাইল নেটওয়ার্ক) পৌঁছানো কঠিন বা সম্ভব নয়। তবে, GEO স্যাটেলাইটগুলির লেটেন্সি এবং আবহাওয়ার প্রভাব কিছু সীমাবদ্ধতা তৈরি করতে পারে।

২. মিডিয়াম আর্থ অরবিট স্যাটেলাইট ইন্টারনেট (Medium Earth Orbit - MEO)

মিডিয়াম আর্থ অরবিট (MEO) স্যাটেলাইট ইন্টারনেট হলো একটি ইন্টারনেট সেবা যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রদান করা হয়, যেগুলি পৃথিবী থেকে ২,০০০ কিলোমিটার থেকে ৩৫,৮০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অরবিট করে। এই স্যাটেলাইটগুলো সাধারণত মাঝারি উচ্চতায় অবস্থান করে এবং পৃথিবীর অরবিটের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে চলাচল করে, যেখানে তারা দ্রুত ইন্টারনেট সেবা প্রদান করতে সক্ষম হয়।

MEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের কাজের পদ্ধতি

  • সংকেত প্রেরণঃ পৃথিবী থেকে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য ডেটা বা সংকেত পাঠানো হয়। সেগুলি MEO স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রেরিত হয়।
  • সংকেত গ্রহণ এবং পুনঃপ্রচারঃ স্যাটেলাইটগুলি সংকেত গ্রহণ করে এবং সেগুলি পুনরায় পৃথিবীতে প্রেরণ করে। এটি গ্রাহকের কাছে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছায়।
  • সংযোগ স্থাপনঃ গ্রাহকরা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন, যা স্থলভিত্তিক ইন্টারনেট সার্ভিসের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
MEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সুবিধা

  • কম লেটেন্সিঃ MEO স্যাটেলাইটগুলি তুলনামূলকভাবে কম উচ্চতায় অবস্থান করে, যার ফলে GEO স্যাটেলাইটের তুলনায় তাদের লেটেন্সি (সংকেতের দেরি) কম হয়। এটি গেমিং, ভিডিও কলিং বা স্ট্রিমিং এর জন্য একটি বড় সুবিধা।
  • উন্নত গতিঃ MEO স্যাটেলাইটগুলি দ্রুতগতিতে ডেটা ট্রান্সফার করতে সক্ষম। এটি ব্যবহারকারীদের জন্য দ্রুত ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে, বিশেষত যেখানে দ্রুত ইন্টারনেট প্রয়োজন।
  • বিশাল কাভারেজঃ MEO স্যাটেলাইটগুলি পৃথিবীর অনেক বড় অংশ কাভার করতে সক্ষম, বিশেষত শহরগুলির বাইরে গ্রামীণ এবং দুর্বোধ্য এলাকায়, যেখানে অন্য কোনো ইন্টারনেট সেবা পৌঁছাতে পারে না।
  • স্টেবল কানেকশনঃ MEO স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগগুলি অনেক সময় অত্যন্ত স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য হতে পারে, কারণ সেগুলি উচ্চতর অরবিট স্যাটেলাইটের তুলনায় অধিক নিয়ন্ত্রণে থাকে।
MEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সীমাবদ্ধতা

  • ব্যবহারের কমনতাঃ MEO স্যাটেলাইট প্রযুক্তি এখনও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না, যদিও বেশ কিছু কোম্পানি (যেমন, OneWeb বা O3b) এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে। ফলে এটি কম পরিচিত হতে পারে।
  • উচ্চ স্থাপন ব্যয়ঃ MEO স্যাটেলাইটগুলি স্থাপন এবং পরিচালনা করতে উচ্চ প্রযুক্তি এবং ব্যয় দরকার, যা সেবা প্রদানকারীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
  • সংকেতের কিছু সীমাবদ্ধতাঃ যদিও MEO স্যাটেলাইটগুলো কম লেটেন্সি প্রদান করে, তবে LEO স্যাটেলাইটের তুলনায় তাদের সংকেত পাঠানোর গতি কিছুটা ধীর হতে পারে।
MEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের ব্যবহার

  • দূরবর্তী এবং গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সেবাঃ MEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে এমন এলাকায় যেখানে স্থলভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা (ফাইবার অপটিক, ব্রডব্যান্ড) পৌঁছানো কঠিন বা ব্যয়বহুল।
  • ব্যবসায়িক যোগাযোগ এবং ডেটা সেবাঃ মেরিন, আকাশপথ বা দূরবর্তী অফিসগুলির জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে MEO স্যাটেলাইট ব্যবহৃত হতে পারে।
  • গতি ও সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সেবাঃ কিছু কোম্পানি MEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে যা দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে, কম খরচে, বিশেষ করে ব্যবসায়িক এবং গ্রামীণ এলাকায়।
MEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পৃথিবীজুড়ে দ্রুত, উন্নত গতি এবং কম লেটেন্সি সেবা প্রদান করতে সক্ষম, এবং এটি গ্রামীণ বা দুর্দান্ত এলাকায় বিশেষভাবে উপকারী। এটি GEO স্যাটেলাইট এবং LEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সিস্টেমের মধ্যকার একটি ভালো সমাধান, যা স্টেবল সংযোগ এবং ভাল গতি নিশ্চিত করে।

৩. লো আর্থ অরবিট স্যাটেলাইট ইন্টারনেট (Low Earth Orbit - LEO)

লো আর্থ অরবিট (LEO) স্যাটেলাইট ইন্টারনেট হলো এমন একটি ইন্টারনেট সেবা যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রদান করা হয়, যেগুলি পৃথিবীর বেধে মাত্র ৫০০ কিলোমিটার থেকে ২,০০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অরবিট করে। LEO স্যাটেলাইটগুলি পৃথিবীকে ঘিরে খুব কাছ থেকে চলে এবং দ্রুত ইন্টারনেট সেবা প্রদান করতে পারে, কারণ তাদের সিগন্যাল পৃথিবীতে পৌঁছাতে খুব কম সময় লাগে।

LEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সুবিধাসমূহ

  • নিম্ন লেটেন্সিঃ LEO স্যাটেলাইটগুলি পৃথিবীর কাছাকাছি অবস্থান করে, তাই তারা কম সময়ে সিগন্যাল পাঠাতে পারে, যার ফলে লেটেন্সি বা দেরি অনেক কম হয়। এটি স্ট্রিমিং, গেমিং বা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্য খুবই উপযোগী।
  • বিশাল কাভারেজঃ LEO স্যাটেলাইটগুলি পৃথিবীজুড়ে বিস্তৃত এলাকা কাভার করতে সক্ষম, বিশেষ করে দূরবর্তী এবং গ্রামীণ এলাকায় যেখানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছানো কঠিন।
  • গতিঃ LEO স্যাটেলাইটগুলির মাধ্যমে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়া সম্ভব, যা নেটফ্লিক্স স্ট্রিমিং বা অন্যান্য হাই-ব্যান্ডউইথ কার্যক্রমে সহায়ক।

এই স্যাটেলাইটগুলো সাধারণত একটি নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করে, যেখানে একাধিক স্যাটেলাইট একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে চলাচল করে এবং একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখে, যাতে সংকেতের স্থায়িত্ব এবং গতি নিশ্চিত হয়। LEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা যেমন স্পেসএক্সের স্টারলিংক, তারা সারা পৃথিবীজুড়ে ইন্টারনেট সেবা সরবরাহ করতে চায়, বিশেষ করে এমন এলাকায় যেখানে স্থলভিত্তিক ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছানো কঠিন বা ব্যয়বহুল।

৪. হাইব্রিড সিস্টেম স্যাটেলাইট ইন্টারনেট (Hybrid Satellite Internet)

হাইব্রিড সিস্টেম স্যাটেলাইট ইন্টারনেট হলো এমন একটি প্রযুক্তি, যেখানে একাধিক স্যাটেলাইট অরবিটের সিস্টেম (যেমন, জিওস্টেশনরি (GEO), মিডিয়াম আর্থ অরবিট (MEO), এবং লো আর্থ অরবিট (LEO)) একসাথে ব্যবহার করা হয় ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য। এই সিস্টেমে, বিভিন্ন অরবিটের স্যাটেলাইট একে অপরের সাথে সমন্বয় সাধন করে কাজ করে, এবং এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা উন্নত ইন্টারনেট গতি, কম লেটেন্সি এবং বিশ্বব্যাপী কাভারেজ পায়।

হাইব্রিড সিস্টেম স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সুবিধা

  • বিভিন্ন অরবিটের স্যাটেলাইটের সংমিশ্রণঃ GEO, MEO, এবং LEO স্যাটেলাইট একসাথে কাজ করার ফলে একটি নির্ভরযোগ্য ও শক্তিশালী সিস্টেম তৈরি হয়, যা বিভিন্ন এলাকার জন্য উপযুক্ত ইন্টারনেট সেবা প্রদান করতে সক্ষম।
  • উন্নত গতি ও কম লেটেন্সিঃ LEO স্যাটেলাইটগুলি কম লেটেন্সি প্রদান করতে পারে, তবে GEO স্যাটেলাইটগুলি বেশি কাভারেজ এবং বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের সুবিধা দেয়। এই দুই ধরনের স্যাটেলাইট একত্রে ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত গতি এবং কম লেটেন্সির সেবা পাওয়া যায়।
  • বিশ্বব্যাপী কাভারেজঃ হাইব্রিড সিস্টেমে বিভিন্ন অরবিটের স্যাটেলাইট একত্রে কাজ করে, ফলে পৃথিবীর দূরবর্তী বা অবকাঠামোগত দুর্বল এলাকাতেও ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানো সম্ভব।
  • বিকল্প পথ ও স্থিতিশীলতাঃ একাধিক স্যাটেলাইটের সংমিশ্রণ সিস্টেমকে বেশি স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য করে তোলে। যদি কোনো একটি স্যাটেলাইটে সমস্যা হয়, অন্য স্যাটেলাইটটি তা পূর্ণ করতে পারে।

হাইব্রিড সিস্টেম স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের ব্যবহার 

এই সিস্টেমের মাধ্যমে বিশেষ করে গ্রামীণ, দুর্গম বা আন্ডারসার্ভড এলাকায় উন্নত ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, স্পেসএক্সের স্টারলিংক এবং অন্যান্য স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক, যারা এই হাইব্রিড সিস্টেম ব্যবহার করতে পারে, বিভিন্ন অরবিটের স্যাটেলাইটকে একত্রে কাজে লাগায়, যাতে তারা দ্রুত, স্থিতিশীল এবং বিশ্বব্যাপী সেবা প্রদান করতে পারে।

৫. ট্রান্সপন্ডার ভিত্তিক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট (Transponder-Based Satellite Internet)

ট্রান্সপন্ডার ভিত্তিক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট একটি সিস্টেম যেখানে স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার (যেটি একটি উপগ্রহের মূল উপাদান) সংকেত গ্রহণ এবং প্রেরণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ট্রান্সপন্ডার হলো একটি ডিভাইস যা স্যাটেলাইটে সংকেত গ্রহণ করে, তা পুনঃপ্রচার করে এবং পৃথিবীতে নির্দিষ্ট অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়। এই প্রক্রিয়া স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ট্রান্সপন্ডার ভিত্তিক স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের কাজের পদ্ধতি

  • সিগন্যাল রিসিভ করাঃ স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার পৃথিবী থেকে পাঠানো সংকেত গ্রহণ করে।
  • সিগন্যাল শক্তিশালীকরণঃ ট্রান্সপন্ডার সংকেতকে শক্তিশালী করে এবং প্রয়োজনীয় ফ্রিকোয়েন্সিতে রূপান্তরিত করে।
  • পুনঃপ্রচার করাঃ শক্তিশালী সংকেত পুনরায় পৃথিবীতে পাঠানো হয়, যেখানে গ্রাহকরা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন।
ট্রান্সপন্ডার সিস্টেমের সুবিধা

  • বিস্তৃত কাভারেজঃ ট্রান্সপন্ডারগুলি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবীজুড়ে বিস্তৃত এলাকা কাভার করতে সক্ষম। এতে গ্রামীণ বা দূরবর্তী এলাকায় ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানো সহজ হয়।
  • উন্নত সিগন্যালঃ ট্রান্সপন্ডার সিগন্যালকে শক্তিশালী এবং পরিষ্কার করে, যাতে ব্যবহারকারীরা ভাল গতি এবং মানসম্পন্ন পরিষেবা পায়।
  • কম লেটেন্সিঃ যদিও GEO স্যাটেলাইটে লেটেন্সি কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে ট্রান্সপন্ডার সিস্টেম সংকেতটি পৃথিবীতে দ্রুত পৌঁছে দেয়, যার ফলে সেবার গুণগত মান উন্নত হয়।
ট্রান্সপন্ডার ভিত্তিক সিস্টেমের উদাহরণ

  • গণমাধ্যম সম্প্রচারঃ স্যাটেলাইট টিভি এবং রেডিও সম্প্রচারেও ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার হয়।
  • ব্যবসায়িক ইন্টারনেট সেবাঃ বিশেষত ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ট্রান্সপন্ডার ভিত্তিক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করা হয়, যেখানে দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ প্রয়োজন।
  • ডাটা ট্রান্সফারঃ ট্রান্সপন্ডার সিস্টেম ডাটা, ভয়েস, ভিডিও যোগাযোগ সহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য আদান-প্রদান নিশ্চিত করে।
ট্রান্সপন্ডার ভিত্তিক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সিস্টেম বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সেবা প্রদান করার জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এটি গ্রামীণ এবং দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেটের প্রাপ্যতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন ধরনের তথ্য আদান-প্রদান সহজ করে।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মূল বৈশিষ্ট্য

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ইন্টারনেট পরিষেবা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এমন একটি প্রযুক্তি যা পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সাধারণত প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং বৈশ্বিক সংযোগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান। স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের প্রধান কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা নিচে তুলে ধরা হলো।

১. বিস্তৃত কভারেজঃ জস্যাটেলাইট ইন্টারনেট পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি কোণায় পৌঁছাতে সক্ষম, বিশেষ করে যেখানে ভূগর্ভস্থ ব্রডব্যান্ড বা মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই।

২. উচ্চগতির ডেটা ট্রান্সফারঃ আধুনিক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা, যেমন স্টারলিংকের মতো, উচ্চ গতির ইন্টারনেট প্রদান করে, যা ভিডিও স্ট্রিমিং, গেমিং এবং ভারী ডেটা ব্যবহার উপযোগী।

৩. স্বাধীনতা ভূ-অবস্থানের সীমাবদ্ধতা থেকেঃ ভূ-ভিত্তিক নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর না করায় স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পাহাড়ি এলাকা, মরুভূমি, বা সাগরে জাহাজেও কাজ করে।

৪. কম সময়ের মধ্যে স্থাপনাঃ অন্যান্য ইন্টারনেট সেবার তুলনায় এটি দ্রুত স্থাপন করা যায়, কারণ কেবল সংযোগ বা বড় অবকাঠামোর প্রয়োজন হয় না।

৫. হাইব্রিড সংযোগের সম্ভাবনাঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটকে অন্যান্য নেটওয়ার্ক, যেমন ফাইবার অপটিক বা মোবাইল নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করে একটি হাইব্রিড সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব।

৬. ল্যাটেন্সি,সংযোগের বিলম্বঃ স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল পাঠানোর এবং ফেরত আসার সময় বেশি লাগে, যা কিছু ক্ষেত্রে ল্যাটেন্সি বাড়ায়। তবে আধুনিক LEO (Low Earth Orbit) স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এটি অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে।

৭. দাম এবং সরঞ্জামঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবার খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে, এবং এর জন্য একটি স্যাটেলাইট ডিশ এবং রিসিভার প্রয়োজন।

৮. প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতি সংবেদনশীলতাঃ মেঘলা আকাশ, ভারী বৃষ্টি বা ঝড় স্যাটেলাইট সিগন্যালে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।

৯. মাল্টি-ইউজার সাপোর্টঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট একই সময়ে বহু ব্যবহারকারীকে সংযোগ সরবরাহ করতে সক্ষম।

১০. ডেটা ক্যাপ, ব্যবহারের সীমাবদ্ধতাঃ অনেক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাদাতা নির্দিষ্ট ডেটা ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করে দেয়। সীমা অতিক্রম করলে গতি কমে যেতে পারে বা অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয়।

১১. সিগন্যাল বিলম্বঃ GEO স্যাটেলাইটের জন্য ল্যাটেন্সি তুলনামূলকভাবে বেশি (~500ms)।
LEO স্যাটেলাইট (যেমন: স্টারলিংক) ল্যাটেন্সি কম (~20-40ms), যা গেমিং বা লাইভ কমিউনিকেশনের জন্য উপযোগী।

১২. গতি এবং ব্যান্ডউইথঃ আধুনিক সেবা উচ্চ গতির ডাউনলোড (100 Mbps বা তার বেশি) এবং আপলোড সুবিধা প্রদান করে। ব্যান্ডউইথ স্থানের ওপর নির্ভরশীল, যেমন শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে কম হতে পারে।

১৩. ডেটা রাউটিং এবং নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনাঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট রাউটিংয়ের মাধ্যমে ডেটা সিগন্যালকে স্যাটেলাইট থেকে গ্রাউন্ড স্টেশনে এবং তারপর গন্তব্যে পৌঁছায়।

১৪. ব্যবহারযোগ্যতা এবং স্থায়িত্বঃ এটি এককালীন দূরবর্তী স্থানে দীর্ঘমেয়াদি ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী পুনরুদ্ধার কাজেও স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কার্যকর।

১৫. সার্ভিসের গুণগত মানে পার্থক্যঃ বিভিন্ন স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রোভাইডার, যেমন:স্টারলিংক: উচ্চ গতির ব্রডব্যান্ড পরিষেবা। মূলত গ্রামীণ এলাকার জন্য।বেশি কভারেজের জন্য বিখ্যাত।

১৬. গ্রিনফিল্ড অপশনঃ যেসব এলাকায় কোনো ইন্টারনেট কাঠামো নেই, সেখানে এটি দ্রুত সংযোগ স্থাপন করতে পারে।

১৭. মোবাইল স্যাটেলাইট সেবাঃ যানবাহন, নৌকা, বা বিমানে ব্যবহৃত মোবাইল স্যাটেলাইট সংযোগের জন্য এটি জনপ্রিয়। এটি সামরিক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাতেও কার্যকর।

১৮. ক্লাউড এবং IoT সংযোগের জন্য সহায়তাঃ IoT ডিভাইস এবং ক্লাউড সেবার জন্য স্যাটেলাইট ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি, স্মার্ট সিটি এবং পরিবেশগত পর্যবেক্ষণে এর ব্যবহার বাড়ছে।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সীমাবদ্ধতা

 স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট দূরবর্তী এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেখানে অন্যান্য ইন্টারনেট অপশন সহজলভ্য নয়। স্যাটেলাইট সেবা বিভিন্ন সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য নির্দিষ্ট প্রযুক্তি ও ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ওপর নির্ভর করে, যা কখনো কখনো কনজেশন বা সেবা সম্পর্কিত সমস্যা তৈরি করতে পারে। নিচে প্রধান সীমাবদ্ধতাগুলো তুলে ধরা হলো।

Latency-লো-ব্যান্ডউইথঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো উচ্চ লেটেন্সি বা বিলম্ব। স্যাটেলাইটের সিগন্যাল পৃথিবী থেকে স্যাটেলাইটে এবং সেখান থেকে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে সময় নেয়, যা ইন্টারনেটের গতি ও প্রতিক্রিয়া সময়কে প্রভাবিত করে। এই বিলম্ব ভিডিও কনফারেন্সিং, গেমিং এবং রিয়েল-টাইম অ্যাপ্লিকেশনের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

ব্যান্ডউইথ সীমাবদ্ধতাঃ অনেক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা সীমিত ব্যান্ডউইথ প্রদান করে। এর মানে হল যে উচ্চ ট্র্যাফিকের সময় বা কনজেশন পরিস্থিতিতে স্পিড কমে যেতে পারে। কিছু পরিষেবা সিমেন্টাল ডেটা প্ল্যান প্রস্তাব করে, যা এক মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডেটা ব্যবহার করার সুযোগ দেয়।

আবহাওয়ার প্রভাবঃ স্যাটেলাইট সিগন্যাল আবহাওয়ার কারণে যেমন তীব্র বৃষ্টি, তুষারপাত, বা মেঘের কারণে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এটি সিগন্যালের মান এবং ইন্টারনেট কানেকশনকে কমিয়ে দেয়।

কভারেজ সীমাবদ্ধতাঃ যদিও স্যাটেলাইট ইন্টারনেট অনেক অঞ্চলে উপলব্ধ, তবে এটি কিছু দুর্বল এলাকায় বা উচ্চতর অরবিটের স্যাটেলাইটগুলির কভারেজ এলাকার বাইরে সীমাবদ্ধ হতে পারে।

ব্যয়বহুলঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবার প্রাথমিক খরচ এবং মাসিক সাবস্ক্রিপশন খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে।

নেটওয়ার্কের সুরক্ষাঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডেটা পাঠানো এবং গ্রহণ করার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন, কারণ এটি উন্মুক্ত আকাশে পাঠানো হয়। হ্যাকাররা স্যাটেলাইট সিস্টেমে আক্রমণ করে ডেটা চুরি বা ক্ষতি করতে পারে। তাই, সুরক্ষা প্রোটোকল প্রয়োজন এবং কিছু পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করতে হতে পারে।

ফিজিক্যাল অবকাঠামোর প্রয়োজনঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে, গ্রাহকদের একটি প্যারাবলিক ডিস হেড (প্যানেল) এবং রিসিভার ইনস্টল করতে হয়, যা আকাশে সিগন্যাল পাঠানোর জন্য প্রয়োজন। এই ধরনের অবকাঠামো বাড়ির বাইরে স্থাপন করা প্রয়োজন, যা কখনো কখনো কঠিন বা ব্যয়বহুল হতে পারে।

প্রতিযোগিতার অভাবঃ অনেক এলাকায় স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা সীমিত এবং প্রতিযোগিতার অভাব থাকতে পারে, যার ফলে সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি তাদের পরিষেবার গুণগত মান এবং খরচ নিয়ে কোনো কম্পিটিশন রাখে না।

টেকনোলজির উন্নতি এবং আপগ্রেডঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং কিছু পুরনো স্যাটেলাইট সিস্টেম নতুন প্রযুক্তির সাথে তুলনা করলে ততটা দক্ষ হতে পারে না। তাই এটি সরবরাহকারীদের জন্য আপগ্রেড এবং পরিবর্তন নিয়ে আসতে হতে পারে, যা সময় এবং খরচের দিকে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

গ্লোবাল আচ্ছাদনঃ যদিও স্যাটেলাইট ইন্টারনেট গ্লোবাল আচ্ছাদন প্রদান করে, তবে কিছু বিশেষ এলাকায় যেমন মেরু অঞ্চলে বা গভীর জঙ্গলে, সিগন্যালের গুণমান এবং পাওয়া সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

অপারেটিং খরচঃ স্যাটেলাইটের অবকাঠামো পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যয় সত্ত্বেও, অপারেটিং খরচ অনেক উচ্চ হতে পারে। তাই এটি গ্রাহকদের জন্য কিছু ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল হতে পারে, বিশেষ করে উন্নত প্রযুক্তি ও কম্প্লেক্স সেবা পাওয়ার সময়।

এই সীমাবদ্ধতাগুলি সত্ত্বেও, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট মূলত গ্রামীণ বা এমন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ যেখানে তারযুক্ত বা মোবাইল ব্রডব্যান্ড পরিষেবা পাওয়া সম্ভব নয়। নতুন প্রযুক্তি এবং স্যাটেলাইট কনস্টেলেশনগুলি অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, কিন্তু এখনও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব বেশ ব্যাপক এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা যেতে পারে। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নয়, এটি একটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনও বয়ে আনে, যা বিশ্বজুড়ে নতুন দৃষ্টিকোণ তৈরি করে এবং উন্নতির পথ প্রসারিত করে। এর মধ্যে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কিছু প্রধান প্রভাব নিম্নরূপঃ
স্যাটেলাইট-ইন্টারনেটের-অর্থনৈতিক-ও-সামাজিক-প্রভাব
১. অর্থনৈতিক প্রভাব
 
  • নতুন ব্যবসার সুযোগঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার সম্ভব হয়, যা নতুন ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরি করে। বিশেষ করে, দূরবর্তী অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে অনলাইন ব্যবসা এবং ডিজিটাল সার্ভিসের বাজার বিস্তার লাভ করে।
  • গ্লোবাল মার্কেটে প্রবেশঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহজে সংযোগের সুযোগ দেয়, ফলে ব্যবসাগুলি গ্লোবাল মার্কেটে প্রবেশ করতে পারে এবং নতুন আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে।
  • কৃষি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়নঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে উন্নত কৃষি প্রযুক্তি, ডিজিটাল শিক্ষার সুযোগ, এবং টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় উন্নতি সাধিত হয়, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
  • নতুন কর্মসংস্থানঃ ইন্টারনেট অবকাঠামো নির্মাণ, সেবা প্রদান এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে টেলিকমিউনিকেশন, আইটি, এবং প্রযুক্তি শিল্পে।
 
২. সামাজিক প্রভাব


  • শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট দূরবর্তী বা গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার সুযোগ বাড়ায়। অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে পাঠ নিতে পারে, যা সমতা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়ক।
  • সামাজিক অন্তর্ভুক্তিঃ এটি সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষকে একত্রিত করে, বিশেষ করে যারা প্রথাগত ইন্টারনেট সংযোগের সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল, তাদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে। এতে সামাজিক ন্যায়বিচার বৃদ্ধি পায়।
  • সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার জন্য একটি শক্তিশালী টুল। এটি বিশ্বের নানা অংশের সংবাদ দ্রুত প্রচারের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং জনগণের মধ্যে তথ্যের প্রবাহ সহজ করে।
  • স্বাস্থ্যসেবাঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে টেলিমেডিসিনের সুবিধা তৈরি হয়, যার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের মানুষও উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতে পারে, বিশেষ করে জরুরি সেবা এবং পরামর্শ প্রদান ক্ষেত্রে।
৩. প্রযুক্তিগত প্রভাব

  • প্রযুক্তিগত অগ্রগতিঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রযুক্তির উন্নতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্যান্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যেমন, ইন্টারনেট অব থিংস (IoT), ব্লকচেইন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার।
  • পাইরেটি ও নিরাপত্তাঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাইরেটি ও হ্যাকারদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে, যা সাইবার নিরাপত্তা এবং ডাটা প্রাইভেসি নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করে।
৪. দূরবর্তী অঞ্চলে উন্নয়ন

  • স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগের সুযোগ বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে যেখানে ফাইবার অপটিক বা মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌছায় না। এটি সেইসব অঞ্চলে সামাজিক, শিক্ষা, ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে সহায়তা করে। 
৫. অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান
 
  • বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট গ্লোবাল অর্থনীতিকে আরও সংযুক্ত এবং গতিশীল করে তোলে। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, আর্থিক লেনদেন, এবং যোগাযোগের গতিকে ত্বরান্বিত করে। উদাহরণস্বরূপ, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ই-কমার্স এবং ফিনটেক (ফাইনান্সিয়াল টেকনোলজি) সেক্টরে উল্লেখযোগ্য প্রসার ঘটায়।
  • সরকারি সেবা প্রসারঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরকারী সেবা আরও কার্যকরভাবে প্রদান করা যায়। বিশেষ করে কর সংগ্রহ, ট্যাক্স পরিশোধ, নাগরিক সেবা এবং দাতা সংস্থার সাথে যোগাযোগ সহজ হয়। এটি সরকারি ব্যয়ের কার্যকারিতা বাড়ায়।
৬. গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D)
 
  • গবেষণা ক্ষেত্রঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট উন্নত গবেষণার জন্য একটি কার্যকর মাধ্যম। যেমন, পৃথিবী পর্যবেক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিঃ বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন দ্রুত সম্প্রচারিত হতে পারে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে, যা সারা বিশ্বে বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির হার বাড়ায়।
৭. ভূগোলগত বৈষম্য দূরীকরণ
 
  • প্রান্তিক অঞ্চলে সেবাঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য কমাতে সাহায্য করে। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে সংযোগ প্রতিষ্ঠা করে, যা গ্রামাঞ্চলে এবং দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলে বিশেষভাবে উপকারী।
  • বৈশ্বিক সংযোগের সুবিধাঃ উন্নয়নশীল দেশগুলি উন্নত দেশের সাথে একীভূত হতে পারে এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিতে তাদের অবদান আরও দৃশ্যমান হয়। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে এদের সুযোগ আরও ব্যাপক হয়।
৮. বন্যা, ভূমিকম্প এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে সাহায্য
 
  • দূরবর্তী উদ্ধারকাজঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে দুর্যোগকালীন সময়ে দ্রুত এবং নির্ভুল তথ্য প্রাপ্তি সম্ভব হয়, যা উদ্ধারকার্য এবং মানবিক সাহায্য প্রদান সহজ করে। এটি জরুরি পরিষেবা, উদ্ধার টিম এবং ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করে।
  • দূরদর্শী পর্যবেক্ষণঃ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস প্রদান এবং তার প্রভাব কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।
৯. বিভিন্ন শিল্পে পরিবর্তন
 
  • শিল্প, উত্পাদন এবং খনির ক্ষেত্রঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্প উৎপাদন কার্যক্রমে উন্নতি হতে পারে। যেমন, খনি শিল্পে দূরবর্তীভাবে পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং রিয়েল-টাইম মনিটরিং করা সম্ভব।
  • পরিবহণ ও লজিস্টিকসঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিবহণের ব্যবস্থাপনাকে আরও সঠিক এবং দক্ষ করা যায়। যানবাহন ট্র্যাকিং, সাপ্লাই চেইন মনিটরিং, এবং লোকেশন বেসড সেবা সহজতর হয়।
১০. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
 
  • সংস্কৃতির আদান-প্রদানঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির মধ্যে আদান-প্রদান তৈরি করে, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করে। সাংস্কৃতিক উপকরণ, চলচ্চিত্র, গান, এবং খবর দ্রুত বিশ্বের নানা প্রান্তে পৌঁছায়।
  • ভাষাগত সমন্বয়ঃ এটি বিভিন্ন ভাষার মধ্যে সমন্বয় এবং যোগাযোগের উন্নতি ঘটায়, কারণ ভাষাগত বাধা কমিয়ে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা সহজতর করে।
১১. পরিবেশগত প্রভাব
 
  • নির্ভরতা কমানোঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্থলভিত্তিক ইন্টারনেট সংযোগের উপর নির্ভরতা কমে, যা পরিবেশের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • উন্নত পর্যবেক্ষণঃ এটি পরিবেশগত প্রভাব যেমন বায়ু, জল, এবং ভূমির মান পরিবীক্ষণ করতে সাহায্য করে, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কেবল একটি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়, এটি একটি বিস্তৃত পরিবর্তন যা সারা পৃথিবীকে একত্রিত করার ক্ষমতা রাখে। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র যোগাযোগের সুযোগই বৃদ্ধি পায় না, বরং সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং পরিবেশগত ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে। এর ফলে বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী এবং সহায়ক হয়ে ওঠে, যা ভবিষ্যতের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এবং প্রচলিত ইন্টারনেটের মধ্যে পার্থক্য

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এবং প্রচলিত ইন্টারনেটের মধ্যে বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। প্রচলিত ইন্টারনেট সাধারণত শহরের এলাকায় দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য সংযোগ প্রদান করে, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট দূরবর্তী অঞ্চল এবং গ্রামীণ এলাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হতে পারে। তবে, স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের খরচ, ল্যাটেন্সি এবং আবহাওয়া পরিস্থিতির প্রভাবের কারণে এটি সব ক্ষেত্রেই উপযুক্ত নাও হতে পারে। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এবং প্রচলিত ইন্টারনেটের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলো হল।

১. প্রযুক্তি

  • স্যাটেলাইট ইন্টারনেটঃ এই ধরনের ইন্টারনেটে সিগন্যাল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে স্যাটেলাইটে পাঠানো হয় এবং সেখান থেকে আবার সিগন্যাল পৃথিবীতে ফিরে আসে। এটি সাধারণত পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলির মাধ্যমে কাজ করে।
  • প্রচলিত ইন্টারনেটঃ এটি সাধারণত কেবল বা ডিএসএল (ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার লাইন) প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করা হয়, যেখানে সিগন্যাল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তার বা কেবল মাধ্যমে প্রেরিত হয়।
২. গতি

  • স্যাটেলাইট ইন্টারনেটঃ এই ইন্টারনেটে সাধারণত উচ্চ ল্যাটেন্সি বা দেরি থাকে, কারণ সিগন্যাল পৃথিবী থেকে স্যাটেলাইটে এবং আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে। তবে, গতির কিছু উন্নতি হয়েছে, বিশেষ করে Starlink-এর মতো প্রকল্পের মাধ্যমে।
  • প্রচলিত ইন্টারনেটঃ এর ল্যাটেন্সি সাধারণত কম থাকে এবং গতি তুলনামূলকভাবে আরও দ্রুত। তবে, এটি নির্ভর করে কেবলের বা সংযোগের মান এবং স্থানীয় নেটওয়ার্কের উপর।
৩. কভারেজ

  • স্যাটেলাইট ইন্টারনেটঃ এটি পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল এবং দুর্গম এলাকায় যেখানে মাটির নিচে কেবল পৌঁছানো কঠিন।
  • প্রচলিত ইন্টারনেটঃ এই ধরনের ইন্টারনেট সাধারণত শহর ও জনবহুল এলাকায় সহজলভ্য, তবে গ্রামাঞ্চলে এবং কিছু দুর্দান্ত এলাকায় সীমিত হতে পারে।
৪. খরচ

  • স্যাটেলাইট ইন্টারনেটঃ সাধারণত স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের প্রাথমিক খরচ বেশি, কারণ উপগ্রহ প্রযুক্তি স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়বহুল হতে পারে। এছাড়া, ডেটা ব্যবহারের জন্য কিছু সেবা কোম্পানি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করতে পারে, যা অতিরিক্ত খরচের কারণ হতে পারে।
  • প্রচলিত ইন্টারনেটঃ সাধারণত এটি সস্তা হতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী সাবস্ক্রিপশন ফি-এর ক্ষেত্রে। তবে এটি নির্ভর করে সেবা প্রদানকারীর উপর এবং কোনো অঞ্চলে কেবল স্থাপন বা রক্ষণাবেক্ষণের খরচের উপর।
৫. নির্ভরযোগ্যতা

  • স্যাটেলাইট ইন্টারনেটঃ আবহাওয়া বা জলবায়ু পরিস্থিতি (যেমন, মেঘলা বা বৃষ্টির দিন) সিগন্যালের গুণমানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা এর নির্ভরযোগ্যতাকে কমাতে পারে।
  • প্রচলিত ইন্টারনেটঃ এর নির্ভরযোগ্যতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভালো থাকে, তবে সিগন্যাল বাধাগ্রস্ত হতে পারে যদি তার বা কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৬. প্রযুক্তির ভবিষ্যত

  • স্যাটেলাইট ইন্টারনেটঃ ভবিষ্যতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের গতি এবং নির্ভরযোগ্যতা আরও উন্নত হতে পারে, বিশেষ করে নতুন প্রযুক্তি যেমন Starlink, OneWeb ইত্যাদির মাধ্যমে।
  • প্রচলিত ইন্টারনেটঃ এটি এখনও সর্বাধিক ব্যবহৃত প্রযুক্তি, তবে ফাইবার অপটিক প্রযুক্তি যেমন ৫জি এবং ভবিষ্যতের উন্নত প্রযুক্তি দ্বারা এর গতি ও ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
৭. ব্যান্ডউইথ এবং ডেটা সীমা

  • স্যাটেলাইট ইন্টারনেটঃ অনেক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা প্রোভাইডার ডেটা সীমা (data caps) নির্ধারণ করে থাকে, অর্থাৎ প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন। অতিরিক্ত ডেটা ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত চার্জ নেওয়া হতে পারে। কিছু সেবা প্রোভাইডার এই সীমা উচ্চ রাখতে পারে, তবে এটি শহরের ইন্টারনেটের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।
  • প্রচলিত ইন্টারনেটঃ শহরে বা কেবল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে সাধারণত অধিক ব্যান্ডউইথ এবং ডেটা ব্যবহারের সুযোগ থাকে। অনেক সার্ভিস প্রোভাইডার আনলিমিটেড ডেটা অফার করে থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, বিশেষ করে লিমিটেড প্ল্যানগুলিতে।
৮. ইনস্টলেশন এবং সেটআপ

  • স্যাটেলাইট ইন্টারনেটঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ইনস্টলেশন কিছুটা জটিল হতে পারে। ব্যবহারকারীকে একটি স্যাটেলাইট ডিশ এবং একটি মডেম সেটআপ করতে হবে, যা সঠিকভাবে স্যাটেলাইট সিগন্যাল গ্রহন করার জন্য যথাযথ স্থানে স্থাপন করতে হয়। এটির জন্য কিছুটা স্থান এবং বিশেষজ্ঞ ইনস্টলার প্রয়োজন হতে পারে।
  • প্রচলিত ইন্টারনেটঃ কেবল বা ডিএসএল ইন্টারনেট সাধারণত দ্রুত এবং সহজে ইনস্টল করা যায়, বিশেষ করে শহর এলাকায়। এটি সাধারণত বাসা বা অফিসে মডেম এবং রাউটার সংযোগ করে কাজ করে, এবং সাধারণত কোনও বিশেষ ইনস্টলেশনের প্রয়োজন হয় না।
৯. নিরাপত্তা

  • স্যাটেলাইট ইন্টারনেটঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটে কিছু সুরক্ষা চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে, যেমন সিগন্যালের দুর্বলতা বা হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি, কারণ সিগন্যাল বাতাসে প্রেরিত হয়। তবে, সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার সাথে সাথে এ ধরনের ঝুঁকি কমে এসেছে।
  • প্রচলিত ইন্টারনেটঃ কেবল ইন্টারনেট সাধারণত সুরক্ষিত থাকে, কারণ এটি তারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তবে, নিরাপত্তা বিপদ যেমন হ্যাকিং, ফিশিং ইত্যাদির ঝুঁকি এ ক্ষেত্রে থাকে, তবে এটি সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা (যেমন, এনক্রিপশন) ব্যবহার করে কমানো যায়।
১০. পরিবেশগত প্রভাব

  • স্যাটেলাইট ইন্টারনেটঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সুবিধা হল এটি দূরবর্তী বা অর্গানিকভাবে বিচ্ছিন্ন এলাকা থেকে সংযোগ প্রাপ্ত করার একটি পথ। তবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং তার পরিবহন একটি বড় পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করতে পারে, যা পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • প্রচলিত ইন্টারনেটঃ প্রচলিত ইন্টারনেটের জন্য তার বা কেবল স্থাপনের সময় পরিবেশগত প্রভাব কম হতে পারে, তবে কেবল বা সার্ভারগুলির শক্তি ব্যবহারের কারণে কিছু পরিবেশগত প্রভাব দেখা দিতে পারে।
১১. পরিষেবা স্তর (Service Level)

  • স্যাটেলাইট ইন্টারনেটঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা সাধারণত গ্রাহকের জন্য নির্দিষ্ট মান বজায় রাখে না, কারণ এটা স্যাটেলাইট কভারেজের উপর নির্ভরশীল। পরিষেবা কখনও কখনও উপগ্রহের অবস্থান, আবহাওয়া, বা সিগন্যালের অন্যান্য বাধার কারণে স্থগিত বা বন্ধ হতে পারে।
  • প্রচলিত ইন্টারনেটঃ কেবল বা ফাইবার ইন্টারনেট পরিষেবা প্রোভাইডারগুলি সাধারণত নির্ভরযোগ্য এবং স্থিতিশীল পরিষেবা প্রদান করতে পারে, কারণ এই পরিষেবাগুলি মাটির নিচে বা তারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়, যা খুব কম পরিমাণে পরিবেশগত বাধা সম্মুখীন হয়।
১২. এক্সপানশন এবং স্কেলেবিলিটি

  • স্যাটেলাইট ইন্টারনেটঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের স্কেলেবিলিটি বেশ ভাল, বিশেষ করে যে অঞ্চলে কোন মাটির তার বা কেবল পৌঁছানো সম্ভব নয়। একাধিক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে একসাথে বিপুল সংখ্যক গ্রাহককে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব। তবে, স্যাটেলাইট সেবা সম্প্রসারণের জন্য বিশাল উপগ্রহ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়।
  • প্রচলিত ইন্টারনেটঃ শহরের বা ডেনসেলি জনবহুল এলাকায় কেবল বা ফাইবার ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা সহজ এবং দ্রুত হতে পারে, তবে গ্রামাঞ্চলে নতুন কেবল ইনস্টল করা কঠিন হতে পারে। তবে, ফাইবার নেটওয়ার্কগুলির স্কেলেবিলিটি উচ্চ এবং একাধিক সংযোগের জন্য একে দ্রুত সম্প্রসারণ করা যায়।
১৩. ব্যবহারকারী অভিজ্ঞতা

  • স্যাটেলাইট ইন্টারনেটঃ যদিও স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের গতি এবং স্থিতিশীলতা কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে উচ্চ ল্যাটেন্সি বা দেরি এবং প্রান্তিক অবস্থানে সংযোগের সমস্যা এখনও কিছুটা অসুবিধা তৈরি করতে পারে। তবে, Starlink-এর মতো সেবা এই অভিজ্ঞতা উন্নত করার চেষ্টা করছে।
  • প্রচলিত ইন্টারনেটঃ এটি দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য সংযোগ প্রদান করে, এবং বিশেষ করে ফাইবার ইন্টারনেটের গতি অনেক বেশি। ব্যবহারকারীরা এই ধরনের ইন্টারনেটে তুলনামূলকভাবে কম ল্যাটেন্সি অনুভব করে এবং সর্বোচ্চ গতিতে ব্রাউজিং, স্ট্রিমিং, এবং অন্যান্য অনলাইন কার্যক্রম করতে পারেন।
অতএব, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এবং প্রচলিত ইন্টারনেটের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট গ্রামীণ বা দুর্গম এলাকায় একটি উপযুক্ত বিকল্প হতে পারে, যেখানে প্রচলিত ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস নেই, তবে শহরে বা আধুনিক এলাকায় প্রচলিত ইন্টারনেট দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য। তবে, ভবিষ্যতে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে উভয় ধরনের ইন্টারনেটের গুণগত মান এবং সুবিধা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সম্ভাবনা

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং এর সম্ভাবনাগুলি প্রযুক্তিগত, অর্থনৈতিক, এবং সামাজিক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করা যায়। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ইন্টারনেট অব থিংস (IoT), এবং ৬জি প্রযুক্তির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ডিজিটাল রূপান্তরে এটি এক বিশাল প্রভাব ফেলবে। নিম্নে এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করা হলো।

গ্লোবাল কানেক্টিভিটিঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পৃথিবীর প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষত, স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কগুলো যেমন স্টারলিংক (SpaceX) বা ওয়ানওয়েব (OneWeb) ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করছে যেখানে স্থলভিত্তিক অপটিক্যাল ফাইবার বা টেলিকম ব্যবস্থা পৌঁছানো সম্ভব নয়।

ব্যান্ডউইথ এবং গতির উন্নতিঃ নতুন প্রযুক্তি, যেমন Low Earth Orbit (LEO) স্যাটেলাইট কনস্টেলেশন, স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের গতি এবং ব্যান্ডউইথ সীমা উন্নত করতে সক্ষম হবে। LEO স্যাটেলাইটগুলোর দ্বারা কম লেটেন্সি এবং দ্রুত ডেটা ট্রান্সফার সম্ভব হবে, যা ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করবে।

ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) সংযোগঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ভবিষ্যতে IoT ডিভাইসগুলোকে সংযুক্ত করতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে যেখানে অন্যান্য নেটওয়ার্কের পৌঁছানো কঠিন, যেমন সমুদ্রপথ, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল বা উঁচু পাহাড়ি অঞ্চলে।

কম খরচে সেবাঃ উন্নত স্যাটেলাইট প্রযুক্তি এবং প্রতিযোগিতার ফলে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের খরচ কমে যাবে, যা বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষের জন্য ইন্টারনেট অ্যাক্সেসকে সহজ এবং সাশ্রয়ী করে তুলবে।

গবেষণা এবং উন্নয়নঃ স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে আরও গবেষণা এবং উন্নয়ন পরিচালিত হবে, যার মাধ্যমে স্যাটেলাইটের আকার কমিয়ে, খরচ আরও কমানো এবং তাদের শক্তি দক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল বিভাজন দূরীকরণঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং বিশ্বের এমন অঞ্চলে ডিজিটাল বিভাজন কমাতে সাহায্য করবে যেখানে স্থলভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া সম্ভব নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলো, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল, এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা সহ এমন জায়গায় স্যাটেলাইট ইন্টারনেট মানুষের জন্য একমাত্র সংযোগ মাধ্যম হতে পারে। এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং অন্যান্য জরুরি সেবা প্রদানেও সহায়ক হবে।

ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের সাথে একত্রীকরণঃ আগামীতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের সাথে আরো গভীরভাবে সংযুক্ত হতে পারে। এটি আরও দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য সংযোগ প্রদান করবে। স্যাটেলাইট সংযোগ মূলত রিমোট বা লিমিটেড আঞ্চলিক এলাকাগুলোর জন্য থাকবে, তবে ফাইবার নেটওয়ার্ক সেসব অঞ্চলে পৌঁছাতে পারলে একত্রিত ব্যবস্থাপনা অধিক কার্যকরী হবে।

5G ও পরবর্তী প্রজন্মের নেটওয়ার্কে সহযোগিতাঃ 5G এবং ভবিষ্যতের 6G নেটওয়ার্কের জন্য স্যাটেলাইট ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ডিভাইস এবং সার্ভিস প্রোভাইডারদের জন্য ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক সংযোগের প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য 5G কভারেজের সাথে সংযুক্ত হতে পারে। 5G এবং স্যাটেলাইট একত্রিতভাবে পৃথিবীজুড়ে দ্রুত এবং স্থিতিশীল যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।

অটোনোমাস যানবাহনঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্বচালিত (অটোনোমাস) যানবাহনগুলোর জন্য ক্রমাগত ডেটা সংযোগ সম্ভব হবে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সঠিক নেভিগেশন, রিয়েল-টাইম ট্রাফিক ইনফরমেশন এবং যোগাযোগ বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

এআই এবং মেশিন লার্নিংয়ের সংযোগঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সাথে এআই এবং মেশিন লার্নিং সংযুক্ত হয়ে বিশাল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের কার্যকারিতা বাড়ানো, ব্যান্ডউইথ ব্যবস্থাপনা এবং নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ আরও দক্ষতার সাথে করা সম্ভব হবে।

নতুন কৌশল ও স্যাটেলাইট ডিজাইনঃ স্যাটেলাইট নির্মাণের ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি, যেমন ছোট স্যাটেলাইট (nano-satellites) বা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন হাই-থ্রুপুট স্যাটেলাইট (HTS) ব্যবহার করা হবে। এসব নতুন স্যাটেলাইটগুলি কম খরচে বৃহৎ পরিসরে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জরুরি সেবাঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। যখন স্থলভিত্তিক নেটওয়ার্ক ভেঙে যায়, তখন স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পুনরুদ্ধারের একটি কার্যকর মাধ্যম হয়ে দাঁড়াবে, যাতে উদ্ধার কার্যক্রম এবং সাহায্য তৎপরতা সহজে চালানো যায়।

সিকিউরিটি এবং ডেটা প্রাইভেসিঃ সর্বশেষ প্রযুক্তির সঙ্গে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করা হবে, যাতে ডেটা চুরির ঘটনা কমানো যায়। বিশেষত, সেন্সিটিভ এবং গোপনীয় ডেটার ট্রান্সফার নিরাপদ রাখতে নতুন এনক্রিপশন পদ্ধতি এবং সিকিউরিটি প্রোটোকল উন্নয়ন করা হবে।

এসব উন্নয়ন স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের ভবিষ্যতকে আরও শক্তিশালী করবে এবং এটি পৃথিবীজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ এবং ডিজিটাল পরিষেবা সম্প্রসারণে একটি মূলধারার প্রযুক্তি হয়ে উঠবে।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের প্রযুক্তিগত কাঠামো

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের প্রযুক্তিগত কাঠামো বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি হয় যা মাটির স্টেশন, স্যাটেলাইট, এবং গ্রাহকের ডিভাইসের মধ্যে কার্যকরী যোগাযোগ তৈরি করে। নতুন প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং LEO স্যাটেলাইটের সুবিধা এ ধরণের সেবাকে আরও উন্নত এবং জনপ্রিয় করে তুলবে। স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের প্রযুক্তিগত কাঠামো মূলত দুটি প্রধান উপাদান নিয়ে গঠিত যেমন, স্যাটেলাইট এবং গ্রাউন্ড স্টেশন। এই কাঠামোটি পৃথিবী এবং মহাকাশের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদান নিশ্চিত করে। স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের প্রযুক্তিগত কাঠামো সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হলো।

১. স্যাটেলাইটঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবায় ব্যবহৃত স্যাটেলাইটগুলি সাধারণত জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট (GEO), লিও স্যাটেলাইট (LEO) বা MEO স্যাটেলাইট (Medium Earth Orbit) হতে পারে। স্যাটেলাইটটি মহাকাশে বিভিন্ন উচ্চতায় অবস্থান করে এবং পৃথিবী থেকে সিগন্যাল গ্রহন ও প্রেরণ করে।

  • GEO স্যাটেলাইটঃ সাধারণত 35,786 কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থান করে এবং পৃথিবীকে সম্পূর্ণ আচ্ছাদিত করতে সক্ষম।
  • LEO স্যাটেলাইটঃ কম উচ্চতায় (অথবা 500–2000 কিলোমিটার) স্থাপন করা হয় এবং পৃথিবীর চারপাশে দ্রুত গতিতে ঘোরে, যার ফলে কম লেটেন্সি বা দেরি হয়।
  • MEO স্যাটেলাইটঃ GEO এবং LEO এর মধ্যে অবস্থান করে (5,000–12,000 কিলোমিটার) এবং একটি নির্দিষ্ট আচ্ছাদন অঞ্চলে ভালো কভারেজ প্রদান করে।
২. অর্থনৈতিক কাঠামোঃ ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সাধারণত গ্রাউন্ড স্টেশন এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে। গ্রাউন্ড স্টেশনগুলি স্যাটেলাইটের সাথে সংযুক্ত থেকে ডেটা গ্রহণ এবং প্রেরণ করতে সক্ষম।

  • এন্টেনা/ডিশঃ এই ডিভাইসটি গ্রাহকের অবস্থানে থাকে (এটা প্রায়শই বাড়ি বা অফিসে স্থাপন করা হয়), যা স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে।
  • ট্রান্সপন্ডারঃ স্যাটেলাইটের ভিতরে একটি ট্রান্সপন্ডার থাকে, যা পৃথিবী থেকে আসা সিগন্যাল গ্রহণ করে এবং সেগুলি পুনঃপ্রচার করে।
৩. ডেটা ট্রান্সমিশনঃ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডেটা পৃথিবীতে পৌঁছানোর জন্য ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি যেমন C-band, Ku-band এবং Ka-band ব্যবহার হয়। এই ফ্রিকোয়েন্সিগুলি নির্ধারণ করে ডেটার গতি, কভারেজ, এবং ব্যান্ডউইথ কনজেশন। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ট্রান্সমিশন কাজ করে উপযুক্ত প্রটোকল এবং ডেটা কম্প্রেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে যাতে সিগন্যালের মান বজায় থাকে এবং উচ্চ গতি পাওয়া যায়।

৪. টেকনিক্যাল চ্যালেঞ্জ

  • লেটেন্সিঃ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডেটা প্রেরণের সময়ের দেরি (লেটেন্সি) বেশি হতে পারে, বিশেষ করে GEO স্যাটেলাইটে, কারণ সেগুলি উচ্চতায় অবস্থান করে এবং ডেটার মধ্যে দেরি হতে পারে।
  • ওয়েদার অবস্থাঃ বৃষ্টির কারণে স্যাটেলাইট সিগন্যাল ব্যাহত হতে পারে (যেমন, রেইন ফেড)। তবে LEO স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে এটি কম সমস্যা সৃষ্টি করে।
  • ব্যান্ডউইথঃ স্যাটেলাইট সিস্টেমের ব্যান্ডউইথ সীমিত থাকে, যা ইন্টারনেট গতি এবং সংযোগের খরচের উপর প্রভাব ফেলে।
৫. স্যাটেলাইট সেবা প্রদানকারী কোম্পানি

বিসিএসসিএল, বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডঃ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে।
স্টারলিংকঃ ইলন মাস্কের কোম্পানি, যা LEO স্যাটেলাইট ব্যবহার করে দ্রুত ইন্টারনেট সেবা প্রদান করার চেষ্টা করছে।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সুবিধা ও অসুবিধা

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, যা প্রত্যন্ত বা দূরবর্তী অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করতে সহায়ক। যারা শহর বা উন্নত নেটওয়ার্ক কাভারেজের বাইরে বাস করেন তাদের জন্য স্যাটেলাইট ইন্টারনেট একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হতে পারে। তবে এটি ব্যয় এবং কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য সর্বদা সেরা পছন্দ নাও হতে পারে। এর কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে, যেগুলো নীচে আলোচনা করা হলো।
  

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সুবিধাঃ

প্রত্যন্ত অঞ্চলে অ্যাক্সেসঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে সংযোগ প্রদান করতে পারে, যেখানে অন্যান্য ইন্টারনেট অবকাঠামো পৌঁছায় না।

দ্রুত স্থাপনঃ স্থলভিত্তিক সংযোগ স্থাপনের তুলনায় স্যাটেলাইট ইন্টারনেট দ্রুত স্থাপন করা সম্ভব।

বিপর্যয়কালীন সংযোগঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যখন স্থলভিত্তিক নেটওয়ার্ক ব্যাহত হয়, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নির্ভরযোগ্য সংযোগ প্রদান করতে পারে।

গ্লোবাল কাভারেজঃ এটি একই প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরো পৃথিবী জুড়ে সংযোগ সরবরাহ করতে সক্ষম।

উন্নত যোগাযোগঃ দূরবর্তী এলাকা বা সমুদ্রের মাঝখানে থাকা জাহাজ, বিমানের যাত্রী, বা মরুভূমি অঞ্চলের লোকদের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করা সম্ভব।

উন্নয়নশীল দেশের জন্য সুযোগঃ যেসব দেশে স্থলভিত্তিক ইন্টারনেট অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি, সেসব দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রযুক্তি দ্রুত উন্নয়ন আনতে পারে।

দ্রুত সম্প্রসারণঃ একটি নতুন স্যাটেলাইট লঞ্চের মাধ্যমে একটি বড় এলাকা দ্রুত কাভারেজের আওতায় আনা যায়।

বহুমুখী ব্যবহারঃ এটি শুধু ইন্টারনেটের জন্য নয়, টিভি সম্প্রচার, ভয়েস যোগাযোগ (VoIP), এবং জরুরি সেবা প্রদানে ব্যবহৃত হয়।

উন্নত নিরাপত্তাঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ডেডিকেটেড লিঙ্কে কাজ করে, যা অনেক ক্ষেত্রে হ্যাকিং বা ডেটা চুরি থেকে নিরাপদ।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের অসুবিধাঃ

উচ্চ খরচঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা এবং সরঞ্জামগুলি বেশ ব্যয়বহুল।

উচ্চ ল্যাটেন্সিঃ তথ্য স্যাটেলাইটে পাঠানো এবং ফিরে আসার সময় বেশি লাগে, ফলে ল্যাটেন্সি বেশি হয়। এটি অনলাইন গেমিং বা ভিডিও কনফারেন্সের মতো রিয়েল-টাইম অ্যাপ্লিকেশনের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে।

আবহাওয়ার প্রভাবঃ বৃষ্টি, ঝড় বা মেঘলা আবহাওয়া সিগন্যালকে প্রভাবিত করতে পারে, যা সংযোগের মান কমিয়ে দিতে পারে।

ডেটা ক্যাপঃ অনেক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবাদাতা ডেটা ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে।

গতির সীমাবদ্ধতাঃ উচ্চ গতির ফাইবার অপটিক ইন্টারনেটের তুলনায় স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের গতি কম।

সিগন্যাল বিলম্বঃ স্যাটেলাইট থেকে ডেটা ট্রান্সমিশনে সময় লাগে, যা ভিডিও স্ট্রিমিং বা লাইভ ব্রডকাস্টে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

সরঞ্জামের সীমাবদ্ধতাঃ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য বিশেষ অ্যান্টেনা ও রিসিভার প্রয়োজন, যা বেশ ব্যয়বহুল এবং ভারী হতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী খরচঃ স্যাটেলাইট পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনেক বেশি, যা ব্যবহারকারীদের মাসিক বিল বাড়িয়ে দেয়।

সীমিত ব্যান্ডউইথঃ একই সময়ে অনেক ব্যবহারকারী সংযুক্ত হলে ব্যান্ডউইথ সংকুচিত হয়, ফলে গতি কমে যায়।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকিঃ মহাকাশে স্যাটেলাইটগুলোর ক্ষতি হলে পরিষেবা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

ক্লান্তিকর আপগ্রেডঃ পুরানো স্যাটেলাইটের বদলে নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে বড় আর্থিক ও প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ প্রয়োজন।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সম্পর্কে শেষকথা

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এর মাধ্যমে দূরবর্তী এলাকা বা সমুদ্রের মাঝখানে থাকা জাহাজ, বিমানের যাত্রী, বা মরুভূমি অঞ্চলের লোকদের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করা সম্ভব। যেসব দেশে স্থলভিত্তিক ইন্টারনেট অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি, সেসব দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রযুক্তি দ্রুত উন্নয়ন আনতে পারে। একটি নতুন স্যাটেলাইট লঞ্চের মাধ্যমে একটি বড় এলাকা দ্রুত কাভারেজের আওতায় আনা যায়।

এটি শুধু ইন্টারনেটের জন্য নয়, টিভি সম্প্রচার, ভয়েস যোগাযোগ (VoIP), এবং জরুরি সেবা প্রদানে ব্যবহৃত হয়।স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ডেডিকেটেড লিঙ্কে কাজ করে, যা অনেক ক্ষেত্রে হ্যাকিং বা ডেটা চুরি থেকে নিরাপদ। অতএব, আশা করছি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কি-স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এছাড়াও আরও কিছু উল্ল্যেখযোগ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি যেগুলো জেনে উপকৃত হবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url