অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করার উপায়


অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করা বর্তমানে একটি জনপ্রিয় ও লাভজনক উপায়। বর্তমানে এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে ছবি তুলতে ভালোবাসেন অনেকেই। কেমন হবে যদি আপনার এই ভালোলাগা আপনার উপার্জনের মাধ্যম হয়। হ্যাঁ, অনলাইনে ছবি বিক্রি করে ইনকাম বর্তমানে একটি লাভজনক ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনলাইনে-ছবি-বিক্রি-করে-আয়-করার-উপায়
ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ, ফটোগ্রাফি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা, ভালো ক্যামেরা কিংবা ভালো মোবাইল ফোন আপনার হাতে থাকলে এখন থেকেই শুরু করতে পারেন (Stock Image Website) ছবি বিক্রি করে আয়। বর্তমানে অনেকেই উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে ছবি বিক্রিকে বাছাই করে প্রতিমাসে ১-৫ লক্ষ বা তারও বেশি ইনকাম করছে।

পেইজ সূচিপত্রঃ অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয়ের উপায়

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করার উপায়

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করা একটি চমৎকার উপায়, বিশেষ করে যদি আপনি ফটোগ্রাফি, ডিজাইন, বা আর্টে দক্ষ হন। আপনি যদি ফটোগ্রাফি পছন্দ করেন এবং ভালো মানের ছবি তুলতে পারেন, তাহলে বিভিন্ন স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার তোলা ছবি বিক্রি করে আয় করতে পারেন। বিভিন্ন ফটোগ্রাফাররা অনলাইনে তাদের নিজের তোলা ছবি বিভিন্ন (Stock Image Website)- এর পার্টনার হিসেবে আপলোড করে রাখে।
এই ছবিগুলোকে স্টক ইমেজ (Stock Image) বলা হয়। স্টক ইমেজ গুলো অনেকেই তাদের বিভিন্ন প্রজেক্ট এর প্রয়োজনে ছবিগুলো সংগ্রহ করতে চায়। আর কাঙ্খিত ছবিগুলো সংগ্রহ করতে তাদের অর্থ প্রদান করতে হয়। যখন ফটোগ্রাফারদের কোন ছবি ওয়েবসাইট থেকে বিক্রি হয় তখন সেই ছবির প্রাপ্ত মূল্য থেকে ফটোগ্রাফার পার্টনারদের নির্ধারিত পরিমাণ কমিশন দেওয়া হয়। নিচে কিছু কার্যকরী উপায় এবং প্ল্যাটফর্ম উল্লেখ করা হলো যেখানে আপনি আপনার কাজ বিক্রি করে আয় করতে পারেনঃ
 

১. প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও দক্ষতাঃ

  • ক্যামেরাঃ উচ্চ মানের ছবি তোলার জন্য একটি ভালো ক্যামেরা বা স্মার্টফোনের ক্যামেরা প্রয়োজন। উন্নত ক্যামেরা না থাকলেও, ভালো মানের মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিও বিক্রি করা সম্ভব। অনেকেই শুধুমাত্র মোবাইল ক্যামেরা ব্যবহার করে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন।

  • ফটো এডিটিংও দক্ষতাঃ ছবির মান উন্নত করতে ফটোশপ বা লাইটরুমের মতো এডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য ফটো এডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহারের দক্ষতা থাকা উচিত। ছবির কম্পোজিশন, আলো, রঙ ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

২. স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট নির্বাচনঃ বিভিন্ন স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে আপনি আপনার ছবি আপলোড করে বিক্রি করতে পারেন। কিছু জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হলোঃ

  • শাটারস্টক (Shutterstock): এখানে প্রতিটি ছবি ডাউনলোডের জন্য ২০% থেকে ৩০% পর্যন্ত কমিশন পাওয়া যায়।

  • অ্যালামি (Alamy): এক্সক্লুসিভ ছবির জন্য ৫০% এবং নন-এক্সক্লুসিভ ছবির জন্য ৪০% পর্যন্ত কমিশন প্রদান করে।

  • এডোবি স্টক (Adobe Stock): ছবি বিক্রির জন্য ৩৩% এবং ভিডিওর জন্য ৩৫% কমিশন দেয়।

৩. আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইটঃ নিজেই ওয়েবসাইট তৈরি করে অনলাইনে ছবি বিক্রি করতে পারেন। অর্থাৎ আপনি নিজেই একটা এজেন্সির মালিক হবেন নিজের ছবি বিক্রি করতে। তবে এর কিছু ভালো ও কিছু কঠিন দিক আছে। ভালো দিক হলো আপনি নিজেই আপনার ছবির অ্যাডমিন। নিজের ইচ্ছে মতো টাকার মূল্য নির্ধারণ করতে পারবেন, মূল্যের পুরোটাই আপনার, কোনো রকম কমিশন কাটা যাবে না।

কঠিন দিক হলো আপনাকে একটা ফুল ফিচার্ড ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে, সেজন্য প্রাথমিকভাবে টাকার বিনিয়োগ করতে হবে। প্রথমে ডোমেইন ও হোস্টিং কিনতে হবে, ওয়েবসাইটে ছবি আপোলোডের পর SEO ও মার্কেটিং করতে হবে ক্রেতা আনতে। পেমেন্ট সিস্টেম তৈরি করতে হবে। সব ধরনের ফটোগ্রাফারের জন্য উপযুক্ত হলেও অভিজ্ঞ ও সুপরিচিত ফটোগ্রাফাররা এই পদ্ধতিতে বেশ সাফল্য পেতে পারেন।

৪. সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করাঃ ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, বা Pinterest-এ আপনার কাজ শেয়ার করুন এবং সেখানে থেকে ক্লায়েন্ট খুঁজে পান। আপনি সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল থেকে সরাসরি ছবি বিক্রি করতে পারেন।

৫. আয় ও পেমেন্টঃ আপনার আয় ছবির মান, সংখ্যা এবং বিক্রয়ের উপর নির্ভর করবে। প্রতিটি ছবি বারবার বিক্রি হতে পারে, যা আপনার আয় বাড়াতে সহায়তা করবে। পেমেন্ট পদ্ধতি ওয়েবসাইটভেদে ভিন্ন হতে পারে, সাধারণত পেপাল বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে পেমেন্ট করা হয়।

৬. কর সংক্রান্ত বিষয়ঃ আপনার আয় নির্দিষ্ট সীমার বেশি হলে কর প্রদান করতে হতে পারে। তাই, স্থানীয় কর নিয়মাবলী সম্পর্কে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করতে কি কি লাগে

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করার জন্য প্রথমেই ভালো মানের ছবি তোলার দক্ষতা থাকতে হবে। স্মার্টফোন দিয়েও ভালো ছবি তোলা সম্ভব, তবে ছবি সম্পাদনার দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন। অনলাইনে ছবি বিক্রি করে ইনকাম করতে হলে আপনাকে কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে এবং নির্দিষ্ট ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে। নিচে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো এবং প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হলো চলুন দেখে নেওয়া যাক।

১. ফটোগ্রাফি দক্ষতা ও সরঞ্জাম

  • ফটোগ্রাফি দক্ষতাঃ উচ্চমানের ছবি তোলার জন্য ফটোগ্রাফির মৌলিক ধারণা ও দক্ষতা থাকা জরুরি। সুন্দর, আকর্ষণীয় ও উচ্চ-মানের ছবি তোলা শিখুন। বিভিন্ন ধরণের ছবি (প্রকৃতি, পোর্ট্রেট, প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি) তোলার অভ্যাস করুন।
  • সরঞ্জামঃ উন্নত মানের ক্যামেরা বা উচ্চ রেজুলেশনের ক্যামেরাযুক্ত স্মার্টফোন প্রয়োজন। ফটো এডিটিং সফটওয়্যার (যেমন Adobe Lightroom, Photoshop)। ট্রাইপড, লাইটিং ইত্যাদি প্রয়োজন হতে পারে।
২. ছবি সম্পাদনা ও মানোন্নয়নঃ ছবির গঠন, লাইটিং, কালার, রেজুলেশন, সাইজ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকতে হবে। তোলা ছবি এডিট করে মান উন্নত করুন। ছবি ঝকঝকে এবং পেশাদার দেখানোর জন্য কালার, লাইটিং, এবং শার্পনেস ঠিক করুন।

৩. স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্টঃ ছবি আপলোড ও বিক্রির জন্য শাটারস্টক, আইস্টক, আলামি ইত্যাদি স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটে কন্ট্রিবিউটর হিসেবে নিবন্ধন করতে হবে। আপনার ছবি বিক্রির জন্য বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। কিছু জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মঃ

Stock Photography সাইটঃ

  • Shutterstock
  • Adobe Stock
  • iStock
  • Alamy
Dreamstimeপ্রিন্ট ও ডিজিটাল সেল প্ল্যাটফর্মঃ

  • Etsy
  • Redbubble
  • Fine Art America
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসঃ

  • Fiverr
  • Upwork
৪. পোর্টফোলিও তৈরিঃ একটি পোর্টফোলিও বা অনলাইন গ্যালারি তৈরি করুন যেখানে আপনি আপনার কাজ প্রদর্শন করতে পারবেন। আপনি নিজের ওয়েবসাইট (Wix, Squarespace) বা সোশ্যাল মিডিয়া (Instagram, Behance) ব্যবহার করতে পারেন।

৫. মার্কেটিং ও প্রচারঃ সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খুলে নিয়মিত ছবি শেয়ার করুন। প্রাসঙ্গিক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে আপনার কাজ প্রচার করুন। ক্লায়েন্টদের রিভিউ ও ফিডব্যাক নিন এবং তা শেয়ার করুন।

৬. কপিরাইট ও লাইসেন্সিংঃ আপনার ছবি সুরক্ষার জন্য কপিরাইট করুন। স্টক ফটোগ্রাফির জন্য লাইসেন্সিং পদ্ধতি শিখুন (যেমন Royalty-Free বা Rights-Managed)।

৭. ধৈর্য ধারনঃ ফটোগ্রাফি থেকে আয় করতে সময় লাগে। নিয়মিত ভালো মানের কাজ করুন এবং ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ছবি তৈরি করুন।

অনলাইন থেকে ছবি কারা ক্রয় করে

অনলাইন থেকে ছবি কেনার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। আপনি যেকোনো ধরণের ছবি যেমন ফটোগ্রাফ, ডিজিটাল আর্ট, ইলাস্ট্রেশন, অথবা আইকন কিনতে পারেন। বর্তমান মানুষের জীবনধারা ইন্টারনেট ভিত্তিক হয়ে পড়ছে। লক্ষ-কোটি টাকার প্রজেক্ট এখন অনলাইনকে ঘিরে হয়। কিছু ছবি শুধু ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়, আবার কিছু ছবি বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য। অনলাইনে ছবি ক্রয় করে থাকেন বিভিন্ন পেশার মানুষ ও প্রতিষ্ঠান, যেমন:

ব্লগার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরঃ তাঁদের ব্লগ পোস্ট বা অন্যান্য কনটেন্টে মানসম্পন্ন ছবির প্রয়োজন হয় বিজ্ঞাপন, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, ব্যানার, বা প্রমোশনাল কনটেন্ট তৈরির জন্য। তারা চিত্র ব্যবহার করেন ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা উন্নত করার জন্য।

বিজনেস ও মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানঃ বিভিন্ন প্রমোশনাল ম্যাটেরিয়াল, যেমন বিজ্ঞাপন, ব্রোশার, ওয়েবসাইট কনটেন্ট ইত্যাদির জন্য পেশাদার ছবির চাহিদা থাকে।

গ্রাফিক ডিজাইনার ও ভিডিও এডিটরঃ তাঁদের ডিজাইন ও ভিডিও প্রজেক্টে বিভিন্ন ধরনের ছবির প্রয়োজন হয়।

বিজ্ঞাপন এজেন্সিঃ বিজ্ঞাপন তৈরি বা ক্যাম্পেইনে ব্যবহারের জন্য উচ্চ মানের ছবি কিনে থাকেন। প্রিন্ট, ডিজিটাল, এবং টিভি বিজ্ঞাপনের জন্য প্রয়োজন হয়।

প্রকাশনা সংস্থাঃ ম্যাগাজিন, বই, এবং অন্যান্য প্রকাশনার জন্য উপযুক্ত ছবির প্রয়োজন হয়। বই, ম্যাগাজিন, এবং সংবাদপত্রের জন্য কভার ছবি বা আর্টিকেলের সঙ্গে ছবি সংযুক্ত করা।

ই-কমার্স ব্যবসায়ীঃ প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি বা ওয়েবসাইটের জন্য আকর্ষণীয় চিত্র যোগ করা। কাস্টমারকে প্রোডাক্ট সম্পর্কে আরও ভালভাবে বোঝাতে চিত্র প্রয়োজন হয়।

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানঃ শিক্ষামূলক উপকরণ তৈরির জন্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর ছবির চাহিদা থাকে। প্রেজেন্টেশন, শিক্ষামূলক কন্টেন্ট, বা স্লাইড তৈরির জন্য।

নানা প্রয়োজনে আমরা নানান ছবি ব্যবহার করে থাকি। তবে চাহিদা সম্পন্ন ও মান সম্পন্ন ছবি পেতে এ ধরনের প্রজেক্ট গুলোতে বিভিন্ন ফটোগ্রাফার (Photographer) ভাড়া করতে হয়, যা অনেকটা ব্যয়বহুল। তখন প্রজেক্ট ম্যানেজাররা (Project Manager) অনলাইন স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট থেকে স্বল্পমূল্যে তাদের কাঙ্ক্ষিত ছবি পেয়ে থাকে। বিশেষ করে উন্নত রাষ্ট্র, যেমন- আমেরিকা, ইতালি, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, গ্রীনল্যান্ড এ ধরনের দেশগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি স্টক ইমেজ ক্রয় করে থাকে।

স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটে কিভাবে ছবি বিক্রি করে

স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটে ছবি বিক্রি করতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে একজন ওয়েবসাইটের কন্ট্রিবিউটর (Contributor) বা পার্টনার (Partner) হতে হবে। বর্তমানে বহু স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট অনলাইনে পাওয়া যায়। সেখান থেকে আপনার পছন্দমত ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ছবি বিক্রি করে আয় করতে চাইলে নিম্নোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
উপযুক্ত স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট নির্বাচনঃ আপনার ছবি বিক্রির জন্য ভালো প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বস্ত ও জনপ্রিয় স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট যেমন Shutterstock, Getty Images, Adobe Stock, Alamy, এবং Depositphotos-এ আপনার ছবি আপলোড করতে পারেন। প্রতিটি ওয়েবসাইটের নিজস্ব নিয়মাবলী ও কমিশন হার রয়েছে, এবং কী ধরনের কনটেন্ট জনপ্রিয় তা আগে থেকে জেনে নিন।

অ্যাকাউন্ট তৈরি ও প্রোফাইল সম্পূর্ণ করাঃ নির্বাচিত ওয়েবসাইটে কনট্রিবিউটর হিসেবে সাইন আপ করুন এবং আপনার প্রোফাইল সম্পূর্ণ করুন। কিছু ওয়েবসাইটে পরিচয় যাচাইয়ের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের কপি জমা দিতে হতে পারে। সাধারণত অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আপনার কিছু স্যাম্পল ফটোগ্রাফ জমা দিতে হবে। তারা আপনার কাজ যাচাই করবে এবং আপনার অ্যাকাউন্ট অনুমোদন করলে ছবি আপলোড করতে পারবেন।

উচ্চ মানের ছবি আপলোড করাঃ আপনার তোলা উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি আপলোড করুন। সাধারণত, ছবির রেজোলিউশন কমপক্ষে ৪ মেগাপিক্সেল হতে হবে এবং ফাইল সাইজ ৪০ মেগাবাইটের কম হতে হবে। ছবিতে কোনো লোগো, ওয়াটারমার্ক বা কপিরাইটযুক্ত উপাদান থাকা উচিত নয়। স্টক ইমেজ সাইটগুলোতে সাধারণত এই ধরনের কন্টেন্ট ভালো বিক্রি হয়ঃ

  • বিজনেস এবং অফিস সম্পর্কিত ছবি
  • প্রকৃতি ও ল্যান্ডস্কেপ
  • লাইফস্টাইল ফটোগ্রাফি
  • প্রযুক্তি এবং গ্যাজেট সম্পর্কিত ছবি
  • উৎসব বা কালচারাল ইভেন্ট

কীওয়ার্ড ও বিবরণ প্রদান করাঃ প্রতিটি ছবির সাথে সঠিক কীওয়ার্ড ও বিবরণ যুক্ত করুন, যাতে ক্রেতারা সহজে আপনার ছবি খুঁজে পেতে পারেন। স্টক ইমেজ সাইটে আপনার ছবি সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্য সঠিক ট্যাগ (keywords) খুব গুরুত্বপূর্ণ।

  • ছবি সম্পর্কিত নির্ভুল কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
  • লোকেশন, ফটোগ্রাফির ধরন, এবং সাবজেক্ট উল্লেখ করুন।
  • প্রতিটি ছবির জন্য ভালো ক্যাপশন লিখুন।
নিয়মিত ছবি আপলোড ও আপডেট করাঃ নিয়মিতভাবে নতুন ছবি আপলোড করুন এবং আপনার পোর্টফোলিও আপডেট করুন, যাতে ক্রেতাদের কাছে আপনার কাজের বৈচিত্র্য প্রদর্শিত হয়। স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটে নিয়মিত ছবি আপলোড করলে আপনার সম্ভাবনা বাড়বে। বাজারের ট্রেন্ড অনুযায়ী ছবি তোলার চেষ্টা করুন।

আইনগত বিষয় নিশ্চিত করুনঃ ছবিতে যদি কোনো মানুষ থাকে, তাহলে তাদের অনুমতি নিতে হবে (Model Release Form)। যদি কোনো ব্র্যান্ডের লোগো বা কপিরাইটেড কন্টেন্ট থাকে, তাহলে সেটি সরিয়ে ফেলুন। শুধুমাত্র নিজের তোলা বা তৈরি করা ছবি/ডিজাইন আপলোড করুন।

মার্কেটিং এবং বিশ্লেষণঃ আপনার ছবি কোনগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে তা বিশ্লেষণ করুন। ভবিষ্যতে কী ধরনের ছবি তুললে বিক্রির সম্ভাবনা বেশি থাকবে, তা নিয়ে পরিকল্পনা করুন। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া বা পোর্টফোলিওর মাধ্যমে ছবিগুলোর প্রচারণা করতে পারেন।

আয় উত্তোলন করাঃ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আয় উত্তোলনের জন্য নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। সাধারণত, আপনি PayPal, Payoneer বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে আপনার আয় উত্তোলন করতে পারেন। প্রতিটি সাইটে আপনার আয় এবং কমিশন রেট ভিন্ন হবে। উদাহরণস্বরূপ, Shutterstock ১৫%-৪০% পর্যন্ত কমিশন দেয়।

ছবি বিক্রির সাইট গুলোতে কিভাবে একাউন্ট তৈরি করবেন

ছবি বিক্রির সাইট গুলোতে যদি আপনি আপনার Photo গুলো বিক্রি করতে চান, তাহলে এর জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম এক বা একাধিক ছবি বিক্রি করার ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের একাউন্ট তৈরি করতে হবে। একবার একাউন্ট তৈরি করে এপ্রুভাল নিতে পারলে আপনি এই ওয়েবসাইট গুলোতে ছবি বিক্রি করতে পারবেন। এমনিতে অনলাইনে উপলব্ধ প্রায় প্রতিটি Image Selling Website-এ একাউন্ট তৈরি করার প্রক্রিয়া একি ধরণের। নিচে সাধারণত অনুসরণীয় ধাপগুলো উল্লেখ করা হলো।
ছবি-বিক্রির-সাইট-গুলোতে-একাউন্ট-তৈরি-করার-নিয়ম
১. ওয়েবসাইট নির্বাচনঃ প্রথমে একটি স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট নির্বাচন করুন যেখানে আপনি ছবি বিক্রি করতে চান। জনপ্রিয় সাইটগুলোর মধ্যে রয়েছে Shutterstock, Alamy, iStockPhoto ইত্যাদি।

২. রেজিস্ট্রেশন পেজে যানঃ নির্বাচিত ওয়েবসাইটের হোমপেজে "Become a Contributor", "Sell Your Images" বা অনুরূপ কোনো অপশন খুঁজে বের করুন এবং সেখানে ক্লিক করুন।

৩. রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণ করুনঃ নাম, ইমেইল ঠিকানা, পাসওয়ার্ড, জন্মতারিখ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণ করুন।

৪. ইমেইল ভেরিফিকেশনঃ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার পর আপনার ইমেইলে একটি ভেরিফিকেশন লিঙ্ক পাঠানো হবে। সেটি ক্লিক করে আপনার ইমেইল ঠিকানা নিশ্চিত করুন।

৫. প্রোফাইল সম্পূর্ণ করুনঃ লগইন করার পর আপনার প্রোফাইল তথ্য সম্পূর্ণ করুন, যেমন পেমেন্ট তথ্য, ব্যক্তিগত বিবরণ যেমন পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বা জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান আপলোড করতে হতে পারে। কিছু সাইটে ফোন নম্বরও ভেরিফাই করতে হয়।

৬. ছবি আপলোড করুনঃ ওয়েবসাইটের নির্দেশনা অনুযায়ী উচ্চমানের ছবি আপলোড করুন। ছবি JPEG/JPG এবং ভিডিও MP4 ফরম্যাটে আপলোড করতে হয়। ছবি বা ভিডিওর মান ভালো হতে হবে (সাধারণত ৪ মেগাপিক্সেল বা তার বেশি)। প্রতিটি ছবির সাথে সঠিক শিরোনাম, বিবরণ এবং কীওয়ার্ড যুক্ত করুন যাতে ক্রেতারা সহজে আপনার ছবি খুঁজে পায়।

৭. রিভিউ প্রক্রিয়াঃ আপলোড করা ছবিগুলো ওয়েবসাইটের রিভিউ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাবে। ছবি বা কনটেন্ট আপলোড করার পর সাইট কর্তৃপক্ষ রিভিউ করবে। কনটেন্ট অনুমোদিত হলে তা সাইটে প্রকাশিত হবে। অনুমোদিত না হলে, সংশোধনের জন্য সঠিক কারণ জানানো হবে। আর অনুমোদিত হলে সেগুলো বিক্রয়ের জন্য উপলব্ধ হবে।

৮. কিছু টিপসঃ 

  • ছবি আপলোড করার আগে সাইটের কনটেন্ট গাইডলাইন পড়ুন।
  • কপিরাইট বা ট্রেডমার্ক লঙ্ঘন করবেন না।
  • নিয়মিত নতুন ছবি আপলোড করুন এবং ট্রেন্ড অনুসরণ করুন।
  • মডেল রিলিজ বা প্রপার্টি রিলিজ প্রয়োজন হলে তা সংগ্রহ করুন।
মনে রাখবেন, বেশিরভাগ ইমেজ সেলিং ওয়েবসাইট গুলোতে আপনাকে কিছু স্যাম্পল ইমেজ আপলোড করতে বলা হতে পারে। মানে, ওয়েবসাইট গুলোতে একাউন্ট তৈরি করার সময় আপনাকে আপনার দ্বারা তোলা কিছু ছবি আপলোড করতে বলা হবে। এবার, দিয়ে দেওয়া আপনার ছবির কোয়ালিটি যদি তাদের পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে আপনার Image Selling Account সম্পূর্ণভাবে এপ্রুভ/এক্টিভেট করে দেওয়া হয়।

শেষে আপনার একাউন্ট তৈরি ও এপ্রুভ হয়ে যাওয়ার পর আপনি নিজের পছন্দমতো ছবি গুলোকে আপলোড করে সেগুলোকে ইমেজ সেলিং ওয়েবসাইটের দ্বারা বিক্রি করিয়ে নিয়মিত অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। আশা করছি ছবি বিক্রির সাইট গুলোতে কিভাবে একাউন্ট তৈরি করবেন তা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।

স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট মার্কেটপ্লেসে কিভাবে প্রোফাইল এপ্রুভ হবে

স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট মার্কেটপ্লেস গুলোতে একাউন্ট রেজিস্টার করার পর সাধারণত প্রোফাইল এপ্রুভ হবেনা। প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত কিছু ছবি আপলোড করতে হবে। আপনার আপলোড করার সকল ছবি ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ রিভিউ করে পাবলিশ করবে। প্রোফাইল এপ্রুভ করার জন্য অবশ্যই ছবিগুলো স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটে প্রোফাইল অনুমোদনের প্রক্রিয়া সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে সম্পন্ন হয় যেমনঃ

  • আপনার প্রোফাইলে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিখুন যাতে ক্রেতারা আপনার কাজ সম্পর্কে ধারণা পায়।
  • নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু নির্বাচন করুন।
  • প্রথম ধাপেই ভালো মানের কয়েকটি ছবি বা কাজ আপলোড করতে হবে। ইমেজের রেজোলিউশন কমপক্ষে ৪ মেগাপিক্সেল বা তার বেশি হওয়া উচিত।
  • ডিজিটাল আর্ট, ভেক্টর, বা মোশন গ্রাফিক্সের ক্ষেত্রে ফাইল ফরম্যাট (যেমন AI, EPS) সঠিকভাবে সাবমিট করতে হবে।
  • কপিরাইট আইন মেনে ছবি আপলোড করুন। আপনার কাজ যেন কোনো কপিরাইট লঙ্ঘন না করে। শুধুমাত্র আপনার নিজের তৈরি ফটোগ্রাফি বা ডিজাইন ব্যবহার করুন।
  • জনপ্রিয় এবং বিক্রয়যোগ্য বিষয়বস্তু (যেমন প্রকৃতি, প্রযুক্তি, মানুষ, ব্যবসায়িক ফটো) বেছে নিন।
  • মডেল ফটোগ্রাফি হলে মডেলের Model Release Form প্রদান করতে হবে।
  • স্টক মার্কেটপ্লেসে ছবি বা ভেক্টর আপলোড করার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ গুণগত মান বজায় রাখতে হয়। ছবির ফরম্যাট JPEG (উচ্চ মানের) বা PNG ফরম্যাট হতে হবে। sRGB কালার প্রোফাইল ব্যবহার করুন। ছবি যেন ফোকাসড এবং শার্প হয়। ছবিতে বেশি গ্রেইন বা নয়েজ থাকলে তা রিজেক্ট হতে পারে।
  • আপনার আপলোডকৃত ফাইলগুলো সঠিকভাবে ট্যাগ এবং ক্যাটাগরাইজ করুন। এমন শব্দ লিখুন যা ক্রেতারা সার্চ করতে পারে (যেমন "nature", "business meeting", "sunset")। ছবিটি কোন বিষয়বস্তুর অন্তর্গত তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করুন।
  • নিয়মিত নতুন কাজ আপলোড করুন।
  • লাইটিং, কালার, এডজাস্টমেন্ট এর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
  • নন-এডাল্ট ও ওয়েবসাইটের নীতিমালা পূরণ করতে হবে।
যা এড়িয়ে চলবেনঃ

  • লো-কোয়ালিটি বা ফোকাসহীন ছবি।
  • বেশি ফিল্টার ব্যবহার করা।
  • একই ধরনের ছবি বারবার আপলোড করা।
  • কপিরাইটেড উপাদান ব্যবহৃত ছবি।
প্রাথমিকভাবে অল্প কিছু ছবি আপলোড করে প্রোফাইল এপ্রুভ করা হলে আনলিমিটেড ছবি বিক্রি করতে পারবেন। কাজ জমা দেওয়ার পর সাইটের রিভিউ টিম আপনার কাজ পর্যালোচনা করবে। এতে ১-৭ দিন সময় লাগতে পারে। যদি কোনো ত্রুটি থাকে, তারা তা জানাবে এবং আপনি পুনরায় জমা দিতে পারবেন।

অনলাইনে কোন ধরনের ছবির চাহিদা বেশি

অনলাইনে কোন ধরনের ছবির চাহিদা বেশি আপনি হয়তো জানেন না। অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের ছবির চাহিদা রয়েছে, তবে কিছু নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির ছবির চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি। বিশেষ করে অ্যাবস্ট্রাক্ট ছবি, যা কোনো বস্তুর খুবই নিকট থেকে সূক্ষ্ম এবং স্পষ্টভাবে তোলা হয়, যেমন কোনো পাতার উপর কীটপতঙ্গের ছবি, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন। তবে নির্দিষ্ট কিছু ক্যাটাগরির ছবি অনেক বেশি বিক্রি হয়। সেগুলো হলো-
প্রকৃতিঃ বর্তমানে ইন্টারনেটে সবচেয়ে চাহিদা সম্পন্ন ছবি হলো প্রকৃতির ছবি। প্রকৃতির নিবিড়তা মানুষকে মুগ্ধ করে। তাই বিভিন্ন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টে অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য ও দর্শনীয় স্থানের ছবির চাহিদা বেশি।

পশুপাখিঃ আমরা প্রায়ই অনলাইনে বিভিন্ন পাখি, মাছ, সিংহ, বন্যপ্রাণী ও পোষা প্রাণীর মনমুগ্ধকর ছবি দেখতে পাই। কিছু কিছু ছবি খুবই আকস্মিক হয়। এসকল ছবি তুলতে প্রয়োজন হয় উন্নত ক্যামেরা ও অনেক বেশি দক্ষতার। খুব কাছ থেকে তোলা এ ধরনের পশুপাখির স্টক ইমেজের চাহিদা অনেক বেশি।

আর্টঃ বিভিন্ন জাদুঘরের আকর্ষণীয় চিত্র বা চারুকলার বিভিন্ন চিত্র খুবই আকর্ষণীয় হয় এবং এর চাহিদা বেশি।

ফ্যাশনঃ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বেশিরভাগ পণ্যই ফ্যাশন ভিত্তিক হয়। তাই ফ্যাশন রিলেটেড বিভিন্ন স্টক ইমেজের চাহিদাও অনেক বেশি। বড় বড় ফ্যাশন ডিজাইনার ও কোম্পানীগুলো এ ধরনের ছবি চেয়ে থাকে।

টেকনোলজিঃ ব্লগিং, কনটেন্ট ক্রিয়েটিং, অ্যাডভার্টাইজিং এর জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তির বা যন্ত্রের কোয়ালিটি সম্পন্ন ছবির চাহিদা অনেক বেশি।

ট্রাভেলঃ কোথাও ভ্রমণ করতে গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি ও দর্শনীয় স্থানগুলোর পাশাপাশি অপূর্ব রাস্তাঘাটের ছবির চাহিদাও অনেক বাড়ছে দিন দিন। বিশেষ করে ট্রাভেল এজেন্সি গুলো এ ধরনের ছবি চেয়ে থাকে।

ফুডঃ ফুড ব্লগার, রেস্টুরেন্ট ওয়েবসাইট, রেস্টুরেন্টের আইটেম মেন্যুর প্রয়োজনে বিভিন্ন খাবারের আকর্ষণীয় ছবি প্রয়োজন হয়। এছাড়াও প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের কিছু বিশেষ খাদ্য তালিকা থাকে, যা তাদের ঐতিহ্যকে বহন করে। এ ধরনের খাবারের ছবি তুলে অনলাইনে ছবি বিক্রি করে ইনকাম করার উপায় রয়েছে।

ব্যবসাঃ বিভিন্ন বিজনেস ম্যাগাজিনে সাফল্যের ছবি থাকা আবশ্যক। এ ধরনের ফটোগ্রাফিতে পারদর্শী হলে সরাসরি প্রতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করে কিংবা ছবি বিক্রি করে আয় করার উপায় ব্যাপক।

লাইফস্টাইল ও ঐতিহ্যঃ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের জীবনযাত্রা ও ঐতিহ্য ভিন্ন। আপনি একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষ হলে তাদের সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষ্ঠান-আয়োজন ও জীবন যত ছবি তুলে অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন।

এবস্ট্রাক্টঃ কোন বিষয়কে খুব কাছ থেকে ছবি তুলে তার অভ্যন্তরীণ সূক্ষতার ছবি তোলা হলো এবস্ট্রাক্ট ফটোগ্রাফি যেমন পাতার উপর কীটপতঙ্গের ছবি। এসকল ছবি তুলতে উন্নত ক্যামেরা এবং দক্ষতা দরকার হয়।

আপনি যদি অনলাইনে ছবি বিক্রি করতে চান, তাহলে এই ক্যাটাগরিগুলোর উপর ফোকাস করতে পারেন। তবে সর্বোপরি, ছবির মান ও ইউনিকনেস নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উচ্চমানের ও আকর্ষণীয় ছবি ক্রেতাদের বেশি আকৃষ্ট করে।

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে কত টাকা আয় করা যায়

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আপনার আয়ের পরিমাণ নির্ভর করে ছবির কোয়ালিটি, স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটে ছবির পরিমাণ, নিয়মিত আপলোড করা হয় কিনা, ওয়েবসাইটে বিক্রি কেমন হয়, ছবি প্রতি কত টাকা দেওয়া হয় এসকল বিষয়ের উপর। সাধারণত আপনি যখন কোন সুপরিচিত (Famous) স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটে নিয়মিত কোয়ালিটি সম্পন্ন ছবি আপলোড করেন তখন, প্রতিটি ছবি বিক্রয়ের জন্য $০.২৫ থেকে $০.৪০ পর্যন্ত আয় করা যেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার ২,০০০-২,৫০০ ছবি স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটে আপলোড করা থাকে এবং প্রতিদিন ৫০টি ছবি বিক্রি হয়, তাহলে দৈনিক আয় হতে পারে $১৫ বা প্রায় ১,৫০০ টাকা। এভাবে, মাসিক আয় হতে পারে প্রায় ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা। তবে, এই পর্যায়ে পৌঁছাতে সময় ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন। প্রথমে, উচ্চমানের ছবি নিয়মিত আপলোড করতে হবে এবং ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
 
কারণ প্রাথমিকভাবে আয় কম হতে পারে। নিয়মিত মানসম্পন্ন ছবি আপলোড করলে ৫-৬ মাসের মধ্যে ভালো ফলাফল আশা করা যায়। সুতরাং, অনলাইনে ছবি বিক্রি করে ইনকামকরা সম্ভব, তবে এটি ধৈর্য, নিয়মিততা এবং উচ্চমানের কাজের ওপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে, প্রোফাইলে ছবি যত বাড়বে বিক্রিও তত বাড়বে। এছাড়াও একটি ছবি বার বার বিক্রি করা যায়। তাই দীর্ঘদিন অনলাইনে ছবি বিক্রি করে টাকা আয় করার উপায় অবলম্বন করলে এটি অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা হবে।

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করার ওয়েবসাইট

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করার অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে। বর্তমানে ফটোগ্রাফারদের চাহিদা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেই সাথে এই সেক্টরে প্রতিযোগীদের সংখ্যা তো বাড়ছেই। তাই ফটোগ্রাফাররা নতুন নতুন আয়ের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশের ফটোগ্রাফারদের মধ্যে অনেকেই হয়তো স্টক ফটো ওয়েবসাইট এর সাথে তেমন একটা পরিচিত নয়। তাই তাদের আয়ের পরিধি এখনও সীমিত বললেই চলে।

আপনি চাইলেই ফটোগ্রাফির মাধ্যমে পারমানেন্ট একটি আয়ের উপায় বের করে নিতে পারেন। অর্থাৎ ছবি বিক্রির ওয়েবসাইটগুলোতে নিজের ছবি বিক্রি করে আয় করতে পারবেন। আপনি যদি একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার হয়ে থাকেন তাহলে যে কোনো ইন্টারন্যাশনাল স্টক ফটো ওয়েবসাইট থেকে খুব সহজেই আয় করতে পারবেন। আপনি যদি আপনার তোলা ছবি অনলাইনে বিক্রি করে আয় করতে চান, তবে নিচের ওয়েবসাইটগুলোতে আপনার ছবি আপলোড করে আয় করতে পারেন।

(১) অ্যালামি.কমঃ অ্যালামি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় একটি ক্রিয়েটিভ ওয়েবসাইট। বর্তমানে এই ওয়েবসাইটে প্রায় ২৩৭ মিলিয়নেরও বেশি ছবি রয়েছে। প্রতিদিন এখানে ৩০০০ এর বেশি ছবি আপলোড ও বিক্রয় হয়। প্রতিটি ছবি বিক্রয়ের জন্য কন্ট্রিবিউটর (Contributor) কে এক্সক্লুসিভ ইমেজ গুলোর জন্য ৫০% পর্যন্ত কমিশন এবং নন এক্সক্লুসিভ ইমেজ গুলোর জন্য ৪০% পর্যন্ত কমিশন দেওয়া হয়।মাসিক ইনকাম করা টাকা $৫০ এর বেশি হলে পরবর্তী মাসের প্রথম কার্যদিবসে পেপাল (PayPal) বা ব্যাংক ফান্ড ট্রান্সফারের (Bank Fund Transfer) মাধ্যমে পেমেন্ট দেওয়া হয়।

(২) শাটারস্টকঃ Shutterstock অনলাইনে ছবি বিক্রি করে ইনকাম করার আরেকটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। প্রতিদিন অসংখ্য কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ডিজিটাল মার্কেটার ও অন্যান্য প্রজেক্ট ম্যানেজার এখান থেকে হাই কোয়ালিটির ছবি নিয়ে থাকে। প্রত্যেক ছবি ডাউনলোডের উপরে সর্বোচ্চ $১২০ পর্যন্ত ইনকাম করা যায়। এছাড়াও কন্ট্রিবিউটর হিসেবে ২০%-৩০% কমিশন দেওয়া হয়। এছাড়াও ক্লায়েন্ট সাবস্ক্রিপশন (Client Subscription) এর উপর অর্থ প্রদান করা হয়।

(৩) এডোবি‌ স্টকঃ Adobe stock এ হাই কোয়ালিটি প্রিমিয়াম ইমেজ (Premium Image) ক্রয় করতে প্রতিদিন হাজারো ভিজিটর আসে। নিজের মোবাইল বা ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবির পাশাপাশি ভিডিও বিক্রি করা যায় এই সাইটে। একটি ফ্রি একাউন্ট খুলে নিয়মিত ছবি ও ভিডিও আপলোড করলে প্রতিবার তা বিক্রি হলে কন্ট্রিবিউটর (Contributor) কে ছবির জন্য ৩৩%, ভিডিওর জন্য ৩৫% কমিশন দেওয়া হয়। মাসিকভাবে ২৫ ডলার হলেই পেপাল (PayPal) এর মাধ্যমে অনলাইনে ছবি বিক্রি করে ইনকাম করা অর্থ উত্তোলন করা যায়।

(৪) আইস্টক ফটোঃ Istock Photo একটি বিখ্যাত মাইক্রো স্টক চ্যানেল (Micro Stock Channel), যা ছবি বিক্রির জন্য বিখ্যাত। তবে এখানে কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করতে হলে, প্রথমে আপনার বাছাইকৃত ৩ টি ছবি আপলোড করতে হবে। আইস্টক ফটোর ম্যানেজমেন্ট টিম সেই ছবিগুলোর কোয়ালিটি, রেজুলেশন, কপিরাইট চেক করবে। ছবিগুলো তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে আপনাকে কন্ট্রিবিউটর হিসেবে অফুরন্ত ছবি আপলোড করার সুযোগ দেওয়া হবে।

(৫) ফটোলিয়াঃ Fotolia এডোবি স্টকেরই একটি আলাদা সার্ভিস। এখানে, ভালো মানের ছবি বিক্রি করে অধিক কমিশন পাওয়া যায়। সাধারণত ফটোলিয়াতে একটি ছবি বিক্রির বিনিময়ে কন্ট্রিবিউটর কে ২০% থেকে ৬০% পর্যন্ত কমিশন দেওয়া হয়। দক্ষ ফটোগ্রাফারদের জন্য এটি অনলাইনে ছবি বিক্রি করে ইনকামের বড় ক্ষেত্র।

(৬) বিগ স্টকঃ Big stock সাইটে কন্ট্রিবিউটর একাউন্ট খোলা তুলনামূলক সহজ। কন্ট্রিবিউটর একাউন্ট খোলার পর ছবি আপলোড করলে বিগ স্টক ওয়েবসাইট তা রিভিউ করবে। রিভিউ করা ছবি বিগ স্টক ওয়েবসাইটের ইমেজ কালেকশনস (Image Collections) এ যুক্ত হলে ছবিগুলো ক্রয় বিক্রয় করা যাবে। এখানে টাইপ অব পেমেন্ট প্ল্যান (type of payment plan) এবং ইমেজ সাইজ (image size) এর ওপরেও আপনার ইনকাম নির্ভর করবে। অনলাইনে ছবি বিক্রি করে ইনকাম করার এই সাইটে প্রতিটি ছবি বিক্রয় হলে $০.২৫-$৩.০০ পর্যন্ত প্রায় ২৫%- ৪০% হারে কমিশন প্রদান করা হয়।

(৭) গেটি ইমেজেসঃ Getty images ওয়েবসাইটে প্রাকৃতিক, রোমান্টিক, ইমোশনাল টাইপের ছবির চাহিদা বেশি। ওয়েবসাইটের মাসিক ডিজিটর ৫০ মিলিয়নেরও বেশি। বিপুল পরিমাণ জনরাশির কাছে ওয়েবসাইটটি উচ্চ মূল্যে ছবি বিক্রি করে। কন্ট্রিবিউটর কে বিক্রয় প্রতি ২০% কমিশন দেয়।

(৮) পিক্সেলসঃ Pexels ফ্রিতে ছবি ও ভিডিও ডাউনলোড করার জন্য বিখ্যাত। তবে এখানে ছবি বিক্রয় করতে না পারলেও সাইটের পক্ষ থেকে থ্যাংকস গিভিং অপশন রয়েছে। আপনার ছবি খুব বেশি ডাউনলোড হলে তার জন্য আর্থিক প্রাইজ দেওয়া হবে। এছাড়াও ড্রিমসটাইম (Dreams time), পিক্সাবে (Pixabay), ডিপোজিট ফটোস (Depositphotos), স্টকসি.কম (Stocksy.com) ইত্যাদি ওয়েবসাইটে অনলাইনে ছবি বিক্রি করে ইনকাম করার উপায় রয়েছে।

মোবাইল দিয়ে ফটোগ্রাফি করে আয় করার উপায়

মোবাইল দিয়ে ফটোগ্রাফি করে আয় করার উপায় রয়েছে এর জন্য যে ভালো ক্যামেরার প্রয়োজন হয়, তা নয়। আপনার হাতে থাকা মোবাইল ফোনের ক্যামেরার সঠিক ব্যবহার করে ছবি তুলেও বিক্রি করতে পারেন। এক্ষেত্রে ফটোগ্রাফি সম্পর্কে আপনার আগ্রহ ও দক্ষতাই মুখ্য বিষয়। উপরোক্ত ওয়েবসাইট গুলো ছাড়াও মোবাইল ফটোগ্রাফির জন্য- ফোপ (Foap), আইম (Eyeem), মিপিক (Mipic) সাইটগুলো জনপ্রিয়।
মোবাইল-দিয়ে-ফটোগ্রাফি-করে-আয়-করার-উপায়
যদি আপনার কাছে এমন একটি স্মার্টফোন আছে যার ক্যামেরা কোয়ালিটি অনেকটা ভালো পাশাপাশি আপনার মধ্যেও কিছুটা হলেও বেসিক ফটোগ্রাফির জ্ঞান আছে, সেক্ষেত্রে আপনিও মোবাইল দিয়ে ফোটোগ্রাফি করে টাকা রোজগার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি কাজে লাগাতে পারবেন কিছু স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট গুলোর। এমন প্রচুর ফটোগ্রাফাররা এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটররা আছেন যারা নিজের মোবাইল দিয়েই হাই কোয়ালিটি ছবি গুলো তুলে থাকেন।

Shutterstock, Adobe Stock, iStock (Getty Images), Foap, এই ধরণের নানান স্টক ইমেজ সাইট গুলো রয়েছে যেখানে মোবাইল দিয়ে তোলা ছবি গুলিও বিক্রি করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে নিজের মোবাইল ক্যামেরা সেটিং নিয়ে খানিকটা ঘাটাঘাটি করতে হতে পারে। মোবাইল দিয়ে ছবি তোলার ক্ষেত্রেও কিন্তু আপনার মোবাইলের Camera Setting, Lighting, Focus/Composition, Noise, Editing, এই সাধারণ বিষয় গুলি নিয়ে আপনার জ্ঞান অবশই থাকতে হবে।

ব্যাস, এবার একটি ভালো স্টক ফোটোগ্রাফি ওয়েবসাইটে নিজের একটি ফ্রি একাউন্ট তৈরি করুন। একাউন্ট তৈরির পর নিয়মিত ছবি তুলে সেগুলিকে আপলোড করুন। আপনার আপলোড করা ছবিগুলো ওয়েবসাইট দ্বারা এপ্রুভ করে দেওয়া হলে এবার সেগুলোকে সেই ওয়েবসাইট থেকে যে কেউ কিনে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। যখনই কোনো ব্যক্তি আপনার আপলোড করা ছবি গুলো কিনবেন, আপনিও প্রতিটি ইমেজ ডাউনলোড/বিক্রির বিপরীতে আয় করবেন টাকা। মোবাইল ফটোগ্রাফি করে আয় করার এটা অনেক দারুন এবং কার্যকর একটি উপায়।

শেষকথা

অনলাইনে ছবি বিক্রি করে ইনকাম একটি দীর্ঘমেয়াদী আয়ের উৎস হতে পারে। বর্তমানে এই কাজের প্রতি অনেকের আগ্রহ বাড়ছে। স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করার জন্য অনেকটা সময় এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। পাশাপাশি ফটোগ্রাফি সম্পর্কিত দক্ষতা অপরিহার্য। তবে ধৈর্য ধারণ করলে এখান থেকে লক্ষ টাকা ইনকাম করার সুযোগ রয়েছে। প্রতিটি ছবি একাধিকবার বিক্রি হতে পারে, যা আয়ের পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করে। 

তবে, আয় নির্ভর করে ছবির মান, চাহিদা এবং আপলোডের নিয়মিততার উপর। প্রতিটি ছবির জন্য কমিশন হার ওয়েবসাইটভেদে ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আইস্টক ফটোতে প্রতিটি ডাউনলোডের জন্য ১৫% থেকে ৪৫% পর্যন্ত রয়্যালটি প্রদান করা হয়। সুতরাং, ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ ও দক্ষতা থাকলে, অনলাইনে ছবি বিক্রি করে ইনকাম করা একটি লাভজনক উপায় হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url