রুপচর্চায় গোলাপ জলের ব্যবহার ও ২০টি উপকারিতা


রুপচর্চায় গোলাপ জলের ব্যবহার ও এর উপকারিতা রয়েছে প্রচুর। এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গোলাপ জল ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে। আর এই প্রাকৃতিক উপাদান টোনার এবং ময়শ্চারাইজার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
রুপচর্চায়-গোলাপ-জলের-ব্যবহার
গোলাপ জলের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ব্রণের ফুসকুড়ি প্রতিরোধে সাহায্য করে। গোলাপ জলের সুগন্ধি ত্বককে শান্ত করে এবং মানসিকভাবে প্রশান্তি দেয়, তাই এটি অ্যারোমাথেরাপিতেও ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, গোলাপ জল রূপচর্চার বিভিন্ন পণ্য যেমন মাস্ক, স্ক্রাব, এবং ক্রিমের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

পেইজ সূচিপত্রঃ রুপচর্চায় গোলাপ জলের ব্যবহার ও উপকারিতা

রুপচর্চায় গোলাপ জলের ব্যবহার

রুপচর্চায় গোলাপ জলের ব্যবহার অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি ত্বকের জন্য অনেক উপকারি। গোলাপ জল ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে। আর এই প্রাকৃতিক উপাদান টোনার এবং ময়শ্চারাইজার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া গোলাপে উপস্থিত উপকারী ভিটামিন ও মিনারেল ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না সহজে। রুপচর্চায় গোলাপ জলের কিছু ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিন।

১. গরমে ত্বক ভালো রাখার জন্যে গোলাপ জলকে টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। গোলাপ জল একটি কটন প্যাডে নিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। এতে ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য ঠিক থাকবে। বাড়বে ত্বকের উজ্জ্বলতাও।

২. গরমকালে গোলাপ জলের ফেসপ্যাকও ব্যবহার করতে পারেন। গোলাপের পাপড়ির গুঁড়োর সঙ্গে কয়েক চামচ গোলাপ জল মেশান। সেই সঙ্গে পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। সেটি আপনার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পরে মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন। শেষে টোনার লাগিয়ে নিন।

৩. ফ্রিজে আইস ট্রেতে গোলাপ জল এবং অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে রাখুন। প্রতিটি কিউবে সম পরিমাণ অ্যালোভেরা জেল এবং গোলাপ জল মেশান। তারপর তা ফ্রিজে জমিয়ে নিন। ​রোদে ত্বক জ্বালা করলে কিংবা সানবার্নের উপর এই আইস কিউব প্রাথমিক অবস্থায় লাগালে আরাম পাবেন। এতে ত্বকের প্রদাহ সাময়িকভাবে কমবে।

৪. কমলালেবুর খোসা রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিন ৷ এটির পাউডার গোলাপজলের সঙ্গে মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করুন। এবার এটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এরপর হালকা গরম জল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। কমলার খোসার গুঁড়ো ত্বক উজ্জ্বল করতে ব্যবহার করা হয়। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়, যা ব্রণের সমস্যা দূর করতে সহায়ক।

৫. চন্দন পাউডারের সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে লাগালে শুধু মুখ উজ্জ্বল হয় না, ব্রণের সমস্যাও দূর হয়। চন্দন পাউডারে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে, যার কারণে ব্যাকটেরিয়া থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে ৷

৬. বহু শতাব্দী ধরে মুলতানি মাটির ব্যবহার হয়ে আসছে ত্বককে উজ্জ্বল করতে। গোলাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে লাগালে শুধু ত্বকের উন্নতি হয় না, ত্বক সংক্রান্ত অনেক সমস্যাও দূর হয়।

৭. আদার মধ্যে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। এটি ব্রণের সমস্যার জন্য খুবই কার্যকরী একটি সমাধান। ব্রণের সমস্যা দূর করতে আদা ও গোলাপ জলের এই মিশ্রণটি ব্যবহার করা খুবই উপকারী।

ত্বকে গোলাপ জল ব্যবহারের নিয়ম

ত্বকে গোলাপ জল ব্যবহারের নিয়ম অনেকেই জানেন না। ত্বকের যত্নে গোলাপ জলের তুলনা নেই। বিশেষ করে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য গোলাপ জল বেশ ভালো। এটি ত্বককে ভিতর থেকে সুন্দর করে তোলে। পাশাপাশি ত্বককে যেকোনও ধরেনর সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। এটি ব্রণের সমস্যাও কমায়। শুধু গোলাপ জল ব্যবহার করলেই হবে না। এজন্য ব্যবহারের সঠিক কিছু নিয়ম জানা জরুরি। কোন সময়ে আপনি গোলাপ জল ব্যবহার করবেন জেনে নিন।

রাতে গোলাপ জল ব্যবহার করা উচিত। এই সময় ত্বক বিশ্রাম পায়। ফলে গোলাপ জল ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করে ভালো কাজ করে। এ ছাড়া রাতে দূষণের হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পায় ত্বক। ফলে এই সময় গোলাপ জল ব্যবহার করলে ভালো ফল মেলে। দিনের বেলায় গোলাপ জল একেবারেই ব্যবহার করা যায় না এমনটা নয়। তবে গোলাপ জল লাগিয়ে রোদে বের হওয়া ঠিক নয়।

ফেসপ্যাকে গোলাপ জল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ভালো ফল পাবেন। ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরবে। দিনে দু'বারের বেশি গোলাপ জল ব্যবহার করা ঠিক নয়। সকালে গোসলের পর একবার আর রাত ঘুমোতে যাওয়ার আগে ব্যবহার করলেই ত্বক ভালো থাকবে।

গোলাপ জলের উপকারিতা

গোলাপ জলের উপকারিতা হলো এর জনপ্রিয়তার প্রাথমিক কারণ। গোলাপ জল প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে অনেক উপকারিতা প্রদান করে। এটি প্রসাধনী, স্বাস্থ্য, এবং দৈনন্দিন যত্নে বহুল ব্যবহৃত হয়। এই বহুমুখী উপাদানটি বেশিরভাগ ত্বকের ধরণের জন্য উপযুক্ত। স্কিন টোনার হওয়ার পাশাপাশি, এই জলটি একটি DIY ফেস মাস্কের জন্য আদর্শ। এখানে ত্বকের জন্য গোলাপ জলের ব্যবহার এবং এর উপকারিতাগুলি গভীরভাবে আলোচনা করা হলো।

ত্বককে ময়শ্চারাইজ করেঃ যৌবন এবং উজ্জ্বল ত্বকের জন্য সঠিক ত্বকের হাইড্রেশন অত্যাবশ্যক। এই গোলাপ জল ত্বকের হাইড্রেশনের জন্য এটি প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে হাইড্রেট করে। সুতরাং, এটি ব্যবহার করে আপনার মুখের উল্লেখযোগ্য উপকার হতে পারে।

ত্বকের pH ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করেঃ ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য এটিকে স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। গোলাপ জল ত্বকের পিএইচ স্তর বজায় রাখতে সাহায্য করে কারণ এতে অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

ত্বককে প্রশমিত করেঃ শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি গোলাপ জলের উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ অসুস্থতার চিকিত্সা করতে সহায়তা করে, যার মধ্যে প্রশান্তিদায়ক রোসেসিয়া বা একজিমা জ্বালা সহ।

বলিরেখা কমাতে সাহায্য করেঃ গোলাপ জলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলি এটিকে বলিরেখা এবং সূক্ষ্ম রেখার উপস্থিতি কমাতে সক্ষম করে। এইভাবে, এটি নিয়মিত ব্যবহার করা আপনাকে একটি তারুণ্যময়, উজ্জ্বল মুখ দেবে।

সানবার্ন দূর করেঃ আমরা অনেকেই সানবার্ন বা ত্বকের রোদে পোড়া সমস্যায় ভুগি। ত্বকের সানবার্ন বা রোদে পোড়া ভাব দাগ দূর করতে গোলাপ জল খুবই উপকারী। ঠাণ্ডা গোলাপ জল এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস কটন বলে ভিজিয়ে নিয়ে ত্বকের দাগের ওপর ব্যবহার করুন। বাহির থেকে এসে ত্বকে সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের রোদে পোড়া ভাব বা ত্বকের সানবার্ন দূর হবে।

অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্যঃ গোলাপ জল একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-এজিং হিসেবে কাজ করে। অকাল বার্ধক্যের জন্য দায়ী ফ্রি র‍্যাডিকালগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে। ত্বক থেকে সূক্ষ্ম রেখা, বলিরেখা এবং বয়সের দাগ কমাতে পারে। ত্বকের দৃঢ়তা বাড়িয়ে প্রাণবন্ত করে তুলে। রাসায়নিক অ্যান্টি-এজিং ক্রিম এবং সিরামের বদলে গোলাপ জল ব্যবহার করতে পারেন।

ব্রণ এবং পিম্পল কমাতে সাহায্য করেঃ ত্বকের লালভাব দূর করার জন্য অনেকেই গোলাপ জল ব্যবহার করেন কারণ এর প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি প্রশমিত করার সময় ত্বকের ফোলাভাব এবং ব্রণ কমায়।

প্রাকৃতিক টোনার হিসাবে কাজ করেঃ গোলাপ জলের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি ত্বককে পরিষ্কার এবং টানটান থাকতে সাহায্য করে, যা বর্ধিত ছিদ্রগুলির উপস্থিতি হ্রাস করে। এটি মুখকে মসৃণ, উজ্জ্বল এবং তারুণ্যময় রাখতে সাহায্য করে।

চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করেঃ সারারাত মুখে গোলাপজল লাগালে চোখের নিচের কালো দাগ ও ফোলাভাব কমে মুখের উপকার হয়। আপনি যখন এটি প্রতিদিন ব্যবহার করেন, তখন এটি চোখের অঞ্চলটিকে সতেজ এবং পুনরুজ্জীবিত দেখাবে।

মেকআপ রিমুভার হিসাবেঃ গোলাপ জল এবং নারকেল তেল চূড়ান্ত ফেসিয়াল ক্লিনজার তৈরি করে। আপনার মেকআপ অপসারণ ছাড়াও, এই সংমিশ্রণটি ত্বককে হাইড্রেট করবে।

ত্বককে সতেজ রাখেঃ ফেসিয়াল মিস্ট স্প্রে হিসাবে, গোলাপ জল ত্বককে ক্রিম এবং সিরামের জন্য প্রস্তুত করতে পারে। এছাড়াও, এটি ত্বককে সতেজ করার সময় মেকআপের জন্য একটি আদর্শ সেটিং তৈরি করে।

ত্বকের জ্বালা কমাতে সাহায্য করেঃ একজিমা এবং রোসেসিয়া থেকে ত্বকের জ্বালা কমানো মুখের উপর গোলাপ জল প্রয়োগের শীর্ষ সুবিধাগুলির মধ্যে একটি। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি এটিকে এই অসুস্থতার চিকিত্সা করতে এবং তাদের চুলকানি প্রশমিত করতে সক্ষম করে।

অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যঃ গোলাপ জলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এটি ব্রণ এবং ব্রেকআউট সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। এটি ত্বকের এই অবস্থা থেকে উদ্ভূত প্রদাহ এবং লালভাব কমাতেও সাহায্য করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়ঃ প্রাকৃতিক আভা এবং তেজ বাড়ানোর জন্য শীর্ষ গোলাপ জল ব্যবহার করা হয়। এর হাইড্রেটিং এবং পুষ্টিকর বৈশিষ্ট্য ত্বককে একটি প্রাকৃতিক আলো দেয়। এটি নিয়মিত ব্যবহার করা আপনার মুখকে একটি সুন্দর, স্বাস্থ্যকর চেহারার উজ্জ্বলতা দেবে।

ত্বকের গঠন উন্নত করতে সাহায্য করেঃ গোলাপ জলে প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ত্বকের গঠন উন্নত করতে এবং এটিকে নরম ও মসৃণ করতে সাহায্য করে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য লোকেরা গোলাপ জল ব্যবহার করার প্রাথমিক কারণও এই বৈশিষ্ট্যগুলি এবং এটি ব্রণ এবং ত্বকের প্রদাহ কমাতে গোলাপ জলের প্রভাব।

ত্বকের দাগ কমাতে সাহায্য করেঃ গোলাপ জলের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যের কারণে, অনেক লোক দাগ, পোড়া, কাটা এবং অন্যান্য দাগ নিরাময়ের জন্য গোলাপ জল ব্যবহার করে। এটি নিয়মিত ব্যবহার করে ক্ষত নিরাময় করতে পারে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে, দাগের উপস্থিতি হ্রাস করতে পারে।

তৈলাক্ত ত্বকের ভারসাম্য বজায় রাখেঃ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য গোলাপ জল ব্যবহার আশীর্বাদস্বরূপ। এটি তৈলাক্ত এবং ব্রণ-প্রবণ ত্বকের জন্য উপযুক্ত। সিবাম উত্পাদন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। গোলাপ জল ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা রোধ করে। গোলাপ জলে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটিরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে।

প্রাকৃতিক ত্বক রিফ্রেশার হিসাবে কাজ করেঃ গরমের দিনে বা তীব্র ব্যায়ামের পরে গোলাপ জলের ব্যবহার ত্বককে সতেজ করে। ত্বকে শীতল সংবেদন সরবরাহ করে। ত্বকের রঙকে পুনরুজ্জীবিত করে। মুখে নিয়মিত গোলাপ জল স্প্রে করুন। এটি প্রাকৃতিক ত্বক রিফ্রেশনার হিসেবে কাজ করবে।

হাত পায়ের রুক্ষতা কমাতেঃ হাত-পায়ের রুক্ষতা কমাতেও গোলাপ জল বেশ কার্যকরী। শীতে যাদের হাত পায়ের চামড়া উঠে তারা রাতে ত্বকে গোলাপ জল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া পায়ের গোড়ালি ফাটা সমস্যা সমাধানে গ্লিসারিনের সাথে কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন। এতে এ সমস্যা দূর হবে এবং ত্বক হবে মসৃণ।

ব্রণ দূর করতে গোলাপ জলের ব্যবহার

ব্রণ দূর করতে গোলাপ জলের ব্যবহার অনেক উপকারি। চেহারা থেকে ব্রণের দাগ দূর করতে এবং ব্রণ কমাতে গোলাপ জল বেশ কার্যকারি।রূপচর্চার করার জন্য গোলাপ জল অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্য। গোলাপ জল চেহারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার পাশাপাশি চেহারায় ন্যাচারাল ভাব নিয়ে আসে এবং চেহারা লাবণ্য বৃদ্ধি করে তোলে। শুধু চেহারা সুন্দর করে গোলাপ জল খ্যান্ত হয় না বরং চেহারা থেকে মৃত কোষ,তৈলাক্ত ভাব এবং ময়লা দূর করে দেয়।

গোলাপ জল ব্যবহার করার ফলে ত্বক আদ্র থাকে এবং ত্বক হতে শুষ্ক ভাব দূর হয়ে যায় যার ফলে ত্বক কোমল হয়। যাদের মুখে ব্রণ আছে তাদের জন্য গোলাপ জল অনেক উপকারি। মেকআপ করার আগে টোনার হিসেবেও আপনি গোলাপ জল ব্যবহার করতে পারবেন এবং মেকআপ করার পরেও সেটিং স্প্রে হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন। ব্রণ দূর করতে গোলাপ জলের কিছু ব্যবহার নিচে তুলে ধরা হলো।

১. প্রথমে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিবেন এরপর শুধু গোলাপজল স্প্রে করে ভালোভাবে চেহারার উপরে মাসাজ করবেন। এভাবে দিনে এক থেকে দুই বার করলেও ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গোলাপ জল এবং মশ্চারাইজার ক্রিম একসাথে ত্বকে ব্যবহার করলেও ব্রণ আস্তে আস্তে দূর হতে থাকে।

২. আপেল সিডার ভিনেগার এবং গোলাপজল একসাথে মিক্স করে মুখের উপরে দিনে এক থেকে দুইবার ব্যবহার করবেন। মুখের উপর দেয়ার পরে যতক্ষণ পর্যন্ত না শুকিয়ে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। এরপরে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবেন।

৩. বেকিং সোডা এবং গোলাপ জল একসাথে করে প্রথমে একটি ফেসপ্যাক বানাবেন। এরপরে ফেসওয়াশ বা কোন কিছুর মাধ্যমে মুখকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিবেন। তারপর সেই ফেসপ্যাকটি মুখের উপরে ব্যবহার করবেন। মুখের ওপরে দেয়ার পরে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করবেন। তারপরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন এভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করবেন।

৪. মুলতানি মাটি এবং গোলাপ জল দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে ব্যবহার করার ফলেও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি হওয়ার পাশাপাশি ব্রণ দূর হয়ে যায়।

৫. লেবুর রস এবং গোলাপ জল একসাথে করে ফেসপ্যাক বানিয়ে চেহারায় ব্যবহার করুন। এরপরে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপরে ধুয়ে ফেলবেন। এভাবে সপ্তাহে তিন থেকে চারবার ব্যবহার করলে খুব তাড়াতাড়ি ব্রণ কমে যায়।

৬. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ট্যাবলেট এর গুড়ো এবং গোলাপ জল একসাথে মিক্স করে চেহারার উপরে ভালোভাবে ব্যবহার করুন। এরপরে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দেন। তারপরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৭. গ্লিসারিন এবং গোলাপজল একসাথে করে চেহারায় ব্যবহার করলে চেহারা আর্দ্র থাকে এবং ব্রণের দাগ দূর হওয়ার পাশাপাশি ব্রণও দূর হয়।

৮. বেসন এবং গোলাপ জল একসাথে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করবেন। এরপরের চেহারার উপর দিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করবেন। তারপরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। ধুয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়ে লক্ষ্য রাখবেন যেন তা চেহারার উপরে একেবারে শুকিয়ে যায়। একেবারে শুকানোর আগে ধুবেন না। এভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করবেন।

৯. চন্দন কাঠের গুড়ো এবং গোলাপজল একসাথে করে আপনি ফেসওয়াশ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন। এভাবে ব্যবহার করলে চেহারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি হওয়ার পাশাপাশি ব্রণের সমস্যাও দূর হয়।

১০. শশা, মধু এবং গোলাপজল একসাথে করে ব্লেন্ড করে নিবেন। তারপরে চেহারার উপরে ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন অথবা শসা কিউব করে কেটে নেওয়ার পরে সেখানে গোলাপ জল এবং মধু মিশিয়ে চেহারার উপরে ঘষাঘষি করলেও ব্রণের দাগ দূর হওয়ার সাথে সাথে ব্রণ দূর হয়।

১১. এলোভেরা জেল অথবা এলোভেরা ও গোলাপ জল একসাথে করে প্রথমে পেস্ট বানিয়ে নিবেন। এরপরে চেহারার উপরে ব্যবহার করবেন। চেহারায় দিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন তারপরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। এভাবে সপ্তাহে এক থেকে দুইবার ব্যবহার করবেন।

বাড়িতে গোলাপ জল বানানোর সহজ নিয়ম

বাড়িতে গোলাপ জল বানানোর সহজ নিয়ম জানতে চেয়েছেন অনেকে। ত্বক ভালো রাখতে গোলাপ জল খুবই উপকারী। গোলাপের পাপড়িতে উপস্থিত ভিটামিন ও মিনারেল শুধুই ত্বকের জেল্লা বাড়াতে সাহায্য করে না, ত্বকের আর্দ্রতাও ধরে রাখে। এই প্রাকৃতিক উপাদান যেমন ত্বকের জেল্লা বাড়ায়, তেমনই আর্দ্রতার মাত্রাও ধরে রাখে। এদিকে গোলাপের পাপড়িতে উপস্থিত ভিটামিন সি ত্বকের অন্দরে কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। 

তাই আপনিই বা এর সুফল থেকে বাঞ্চিত থাকবেন কেন বরং গোলাপের ছোঁয়ায় বাড়িয়ে তুলুন ত্বকের জেল্লা। এক্ষেত্রে বাজারচলতি গোলাপ জল ব্যবহার করতে পারেন। তবে সেই প্রসাধনীতে সামান্য পরিমাণে রাসায়নিক মেশানো থাকে। তাই ত্বকে একান্তই যদি কোনও রাসায়নিক ব্যবহার করতে না চান, তাহলে বাড়িতে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন গোলাপ জল। কিন্তু কীভাবে বানাবেন গোলাপ জল সেই পদ্ধতিই ধাপে ধাপে নীচে আলোচনা করা হলোঃ

বাড়িতে গোলাপ জল বানানোর জন্যে যা প্রয়োজন

  • ৬টি গোলাপ ফুল
  • ২ কাপ ডিসটিলড ওয়াটার
  • ১টি সসপ্যান
  • রোজ এসেনশিয়াল অয়েল

প্রথম ধাপঃ গোলাপ ফুল থেকে পাপড়িগুলি ধীরে ধীরে ছাড়িয়ে নিন। তারপর একটি পাত্রে রাখুন এবং জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। গোলাপের পাপড়িগুলিতে যেন কোনও ধুলো-ময়লা না লেগে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। গোলাপের পাপড়িগুলি ধুয়ে নেওয়ার পরে একটি কাগজের উপরে সেগুলি মেলে রাখুন। জল ঝরিয়ে শুকিয়ে নিন। এবার পরের কাজটি করুন।

দ্বিতীয় ধাপঃ একটি সসপ্যানে ২ কাপ ডিসটিলড ওয়াটার নিন। হালকা আঁচে এই পাত্রটি বসিয়ে দিন। জল গরম হয়ে ফুটতে শুরু করলে গোলাপের পাপড়িগুলি জলে দিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে ফোটাতে শুরু করুন। জল ফুটতে ফুটতে অর্ধেক হয়ে এলে রং বদলাবে। এই সময়ে আঁচ বন্ধ করে ঢাকা দিন। পাত্রটি ঠন্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

তৃতীয় ধাপঃ পাত্রের জল ঠান্ডা হওয়ার পরে একটি সাদা সুতির কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিন। এতে গোলাপের পাপড়ি আলাদা হয়ে যাবে। ছেঁকে নেওয়া জল একটি কাচের বোতলে ঢেলে রাখুন। এর মধ্যে ২-৩ ফোঁটা গোলাপের এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে দিন। তৈরি হয়ে গেলো আপনার ঘরোয়া পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক গোলাপ জল। এবার প্রয়োজনমতো ব্য়বহার করলেই পাবেন কাঙ্খিত ফলাফল।

চুলেরর যত্নে গোলাপ জলের উপকারিতা

চুলের যত্নে গোলাপ জলের উপকারিতা রয়েছে প্রচুর। একটি প্রাকৃতিক ও উপকারী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ত্বকের যত্নে গোলাপজলের কার্যকারিতার কথা অনেকেরই হয়তো জানা। এদিকে আপনার চুল সুন্দর রাখতেও যে গোলাপজল সমান কার্যকরী। এটি চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি অনেক ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। মাথার ত্বকে জ্বালা বা চুলকানি হলে তা কমাতে কাজ করে গোলাপ জল।

গোলাপ জলে আছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। এই উপাদান প্রাকৃতিক উপায়ে প্রদাহ কমাতে কাজ করে। চুল যদি প্রাণহীন হয়ে পড়ে তবে সেই চলে প্রাণ ফেরাতে দারুণভাবে কাজ করে গোলাপজল। সেইসঙ্গে চুল কোমল রেশমের মতো করে এবং চুল পড়া কমাতেও কাজ করে। নিয়মিত গোলাপজল ব্যবহার করলে চুলের উজ্জ্বলতা তো বাড়েই, পাশাপাশি ভালো থাকে স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্যও। নিচে গোলাপজলের কয়েকটি উপকারিতা উল্লেখ করা হলো।

চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতেঃ গোলাপ জলে থাকে ১০-৫০ শতাংশ রোজ অয়েল বা গোলাপের এসেনশিয়াল অয়েল। উপকারী এই উপাদানে থাকে ভিটামিন এ, সি, ই এবং বি। এসব ভিটামিন মাথার ত্বক ভালো রাখার পাশাপাশি চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। গোলাপজলে আরও থাকে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। এই উপাদান মাথার ত্বকে সৃষ্ট প্রদাহ কমাতে দারুণ কাজ করে।

চুলের বৃদ্ধিতে সাহায‍্য করেঃ গোলাপের পাপড়িতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি৩, সি এবং ই, যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায‍্য করে। ফলিকল উৎপাদনেও গোলাপের পাপড়ি বেশ কার্যকরী। সপ্তাহে দু’দিন ব‍্যবহার করা যেতে পারে। বেশি ব‍্যবহার করলে আবার মাথার ত্বকের পিএইচ মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। গোলাপজল সরাসরি মাথায় ব‍্যবহার করতে পারেন। কিংবা শ‍্যাম্পুর সঙ্গে মিশিয়ে ব‍্যবহার করা যেতে পারে।
 
পিএইচ-এর মাত্রা ধরে রাখেঃ চুলে নিয়মিত গোলাপ জল ব্যবহার করলে তা ​চুলের পিএইচ-এর মাত্রা ধরে রাখতে কাজ করে। স্ক্যাল্প বা চুলের পিএইচ মাত্রা এলোমেলো হলেই চুল নষ্ট হতে শুরু করে। যে কারণে বাড়তে পারে চুল ঝরার পরিমাণ। তাই পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখা দরকার। আর এই কাজেই সাহায্য করে গোলাপ জল।

চুলের রুক্ষতা দূর করেঃ ত্বকের রুক্ষতা দূর করে উজ্জ্বলতা বাড়াতে যেমন কার্যকরী, তেমনই চুলের ক্ষেত্রেও সমানভাবে কাজ করে গোলাপ জল। চুলের রুক্ষভাব দূর করে রেশমের মতো করে তোলে এই উপকারী উপাদান। এই গোলাপজল ব্যবহারে চুলের অনেকগুলো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়।

খুশকি প্রতিরোধ করেঃ শীতকালে খুশকির প্রকোপ খুব বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে চুল অতিরিক্ত তৈলাক্ত বা শুষ্ক হয়ে গেলেও খুশকির সমস্যা দেখা দিতে পারে। চুলের খুশকি দূর করতে গোলাপজল কাজে আসতে পারে। গোলাপজলের মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে মাথার ত্বকে মালিশ করে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিন। খুশকি দূর হবে নিমেষে।

গোলাপ জলের ফেসপ্যাক

গোলাপ জলের ফেসপ্যাক নানা ভাবে ত্বকের উপকারে লাগে। গোলাপ জল একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। এটি ত্বককে তাজা এবং কোমল রাখে, পাশাপাশি ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। গোলাপে ভিটামিন সি এবং ফেনোলিকস পাওয়া যায়। ফেনোলিকস অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে। তাই সহজেই আপনার ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
গোলাপ-জলের-ফেসপ্যাক
বিভিন্নভাবে আপনি গোলাপ জল আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এই উপাদান আপনার ত্বকের জন্যে সত্যিই খুব উপকারী। ত্বকের জ্বালাভাব কমাতে গোলাপ জল কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এর অ্যান্টি-সেপটিক এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের সমস্য়ার সমাধানে নানা ভাবে কাজে আসে। গোলাপ জলের ফেস প্যাক তৈরির কিছু সহজ পদ্ধতি এখানে দেওয়া হলো:

১. গোলাপ জল ও মধুর ফেস প্যাক

উপকরণঃ

  • ২ টেবিল চামচ গোলাপ জল
  • ১ টেবিল চামচ মধু
প্রস্তুত প্রণালীঃ একটি পাত্রে গোলাপ জল ও মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মুখে এবং গলায় এই মিশ্রণটি লাগান। ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে ময়শ্চারাইজ করবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে।

২. গোলাপ জল, দই ও হলুদের ফেস প্যাক

উপকরণঃ

  • ১ টেবিল চামচ গোলাপ জল
  • ১ টেবিল চামচ দই
  • এক চিমটি হলুদ
প্রস্তুত প্রণালীঃগোলাপ জল, দই এবং হলুদ ভালোভাবে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই ফেস প্যাক ত্বককে উজ্জ্বল ও সতেজ করবে এবং ব্লেমিশ কমাবে।

৩. গোলাপ জল ও মুলতানি মাটি ফেস প্যাক

উপকরণঃ

  • ২ টেবিল চামচ গোলাপ জল
  • ২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি
প্রস্তুত প্রণালীঃ গোলাপ জল এবং মুলতানি মাটি একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল শুষে নেয় এবং ত্বককে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিষ্কার করে।

৪. গোলাপ জল ও বেসন ফেস প্যাক

উপকরণঃ

  • ২ টেবিল চামচ গোলাপ জল
  • ১ টেবিল চামচ বেসন (ছোলা ডালের ময়দা)
  • ১/২ চা চামচ হলুদ
প্রস্তুত প্রণালীঃ গোলাপ জল, বেসন এবং হলুদ একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
এই পেস্টটি মুখে ও গলায় লাগান। ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের মৃত কোষগুলি পরিষ্কার করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে।

৫. গোলাপ জল ও আলমন্ড অয়েল ফেস প্যাক

উপকরণঃ

  • ১ টেবিল চামচ গোলাপ জল
  • ১ টেবিল চামচ আলমন্ড অয়েল (বাদামের তেল)
প্রস্তুত প্রণালীঃ গোলাপ জল ও আলমন্ড অয়েল একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।
মিশ্রণটি মুখে লাগান এবং ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই ফেস প্যাক ত্বকের ময়শ্চার লক করে, ত্বককে নরম ও কোমল রাখে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

৬. গোলাপ জল ও ত্বক পরিচর্যা তেল

উপকরণঃ

  • ২ টেবিল চামচ গোলাপ জল
  • ১ টেবিল চামচ সেভেজ অয়েল (Tea Tree Oil অথবা Lavender Oil)
প্রস্তুত প্রণালীঃ গোলাপ জল ও ত্বক পরিচর্যা তেল একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ত্বককে সান্ত্বনা দেয় এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানের কারণে ত্বকের ইনফেকশন বা ফুসকুড়ি কমাতে সাহায্য করে।

৭. গোলাপ জল ও শসার রস ফেস প্যাক

উপকরণঃ

  • ২ টেবিল চামচ গোলাপ জল
  • ২ টেবিল চামচ শসার রস
প্রস্তুত প্রণালীঃ গোলাপ জল এবং শসার রস একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ত্বককে শীতল এবং তাজা করে, ত্বকের পোরগুলি পরিষ্কার করে এবং অতিরিক্ত তেল কমাতে সাহায্য করে।

৮. গোলাপ জল ও লেবুর রস ফেস প্যাক

উপকরণঃ
  • ২ টেবিল চামচ গোলাপ জল
  • ১ টেবিল চামচ লেবুর রস
  • ১/২ চা চামচ মধু
প্রস্তুত প্রণালীঃ গোলাপ জল, লেবুর রস এবং মধু একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মুখে এবং গলায় এই মিশ্রণটি লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেস প্যাক ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বকের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রোপার্টি বজায় রাখে।

৯. গোলাপ জল এবং চন্দন

উপকরণঃ

  • ২ টেবিল চামচ গোলাপ জল
  • ২ টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়ো
  • ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
প্রস্তুত প্রণালীঃ গোলাপ জল, চামচ চন্দন ও  হলুদ গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মুখে এবং গলায় এই মিশ্রণটি লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। গরমকালে তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা বাড়ে। এই সময়ে এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন আপনি। গোলাপ জলের এই ফেসপ্যাক আপনার তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যাকে সমাধান করে।

১০. গোলাপ জল এবং অ্যালোভেরা

উপকরণঃ

  • ২ টেবিল চামচ গোলাপ জল
  • ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল
  • ১টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল
প্রস্তুত প্রণালীঃ একটি পাত্রে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোর সাথে একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের নির্যাস বের করে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর মিশ্রনটি মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।অ্যালোভেরা আপনার ত্বকের জন্যে সত্যিই খুব উপকারী। অ্যালোভেরার একাধিক উপকারী উপাদান ত্বকের নানা সমস্যা সমাধান করে। এই প্রাকৃতিক উপাদানটি অ্যান্টি-সেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে।

গোলাপ জলের হেয়ারমাস্ক

গোলাপ জলের হেয়ারমাস্ক একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয়। এটি চুলে আর্দ্রতা প্রদান করে এবং চুলকে মোলায়েম ও সজীব রাখে। গোলাপজল থেকে তৈরি হেয়ার মাস্কে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানগুলি চুলের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে, স্ক্যাল্পে শান্তি আনে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। গোলাপজল ত্বক এবং চুলের জন্য উপকারি, কারণ এটি প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা এবং প্রশান্তি প্রদান করে।

১. গোলাপজল ও মধুর হেয়ার মাস্ক

উপকরণঃ 

  • ২ টেবিল চামচ গোলাপজল
  • ১ টেবিল চামচ মধু
  • ১ টেবিল চামচ নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল
প্রস্তুত প্রনালীঃ এই উপকরণগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন, তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলকে মোলায়েম এবং স্বাস্থ্যবান রাখতে সাহায্য করবে।

২. গোলাপজল ও দইয়ের হেয়ার মাস্ক

উপকরণঃ

  • ২ টেবিল চামচ গোলাপজল
  • ২ টেবিল চামচ দই
  • ১ টেবিল চামচ মধু
প্রস্তুত প্রনালীঃ এই উপাদানগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। চুলে ও স্ক্যাল্পে এই মাস্কটি ভালোভাবে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট রাখুন, তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দই চুলে আর্দ্রতা যোগ করে এবং গোলাপজল স্ক্যাল্পকে ঠান্ডা ও শান্ত করে।

৩. গোলাপজল ও এলোভেরা হেয়ার মাস্ক

উপকরণঃ

  • ২ টেবিল চামচ গোলাপজল
  • ২ টেবিল চামচ এলোভেরা জেল
প্রস্তুত প্রনালীঃ গোলাপজল এবং এলোভেরা জেল একসাথে মিশিয়ে চুলে লাগান। এটি চুলের শুষ্কতা দূর করে এবং চুলকে মসৃণ ও সজীব রাখে। এলোভেরা চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

৪. গোলাপজল ও কলার হেয়ার মাস্ক

উপকরণঃ

  • ১টি পাকা কলা
  • ২ টেবিল চামচ গোলাপজল
  • ১ টেবিল চামচ মধু
প্রস্তুত প্রনালীঃ কলাটি ভালোভাবে মথে নিন এবং গোলাপজল ও মধু মিশিয়ে একটি মাস্ক তৈরি করুন। এটি চুলে পুষ্টি যোগ করে, বিশেষ করে ভঙ্গুর এবং শুষ্ক চুলের জন্য এটি আদর্শ। এটি চুলকে সিল্কি ও মোলায়েম করে।

৫. গোলাপজল ও মেথি হেয়ার মাস্ক

উপকরণঃ

  • ২ টেবিল চামচ গোলাপজল
  • ১ টেবিল চামচ মেথির পেস্ট
প্রস্তুত প্রনালীঃ মেথির পেস্ট এবং গোলাপজল মিশিয়ে চুলে লাগান। এটি চুলের পড়ে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে এবং স্ক্যাল্পে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।

৬. গোলাপজল ও শসার হেয়ার মাস্ক

উপকরণঃ

  • ২ টেবিল চামচ গোলাপজল
  • ২ টেবিল চামচ শসার রস
  • ১ টেবিল চামচ মধু
প্রস্তুত প্রনালীঃ শসা কাটিয়ে রস বের করে গোলাপজল ও মধু দিয়ে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এটি চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। শসার রসে থাকা পুষ্টি চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং গোলাপজল চুলের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

৭. গোলাপজল ও আমন্ড অয়েল হেয়ার মাস্ক

উপকরণঃ

  • ২ টেবিল চামচ গোলাপজল
  • ১ টেবিল চামচ আমন্ড অয়েল (আখরোট তেল)
  • ১ টেবিল চামচ মধু
প্রস্তুত প্রনালীঃ এটি একটি খুব কার্যকরী মাস্ক যা চুলের শুষ্কতা এবং ভঙ্গুরতা দূর করে। গোলাপজল ও আমন্ড অয়েল মিশিয়ে চুলে লাগান এবং ২০-৩০ মিনিট রাখুন, তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আমন্ড অয়েল চুলে পুষ্টি যোগ করে এবং গোলাপজল চুলের সজীবতা ফিরিয়ে আনে।

৮. গোলাপজল ও চালের মাড় হেয়ার মাস্ক

উপকরণঃ

  • ২ টেবিল চামচ গোলাপজল
  • ২ টেবিল চামচ চালের মাড় (rice water)
প্রস্তুত প্রনালীঃ চালের মাড় (rice water) চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী, কারণ এতে ভিটামিন B, E এবং প্রোটিন থাকে। গোলাপজলের সঙ্গে চালের মাড় মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং চুলের শিকড় শক্তিশালী করে।

৯. গোলাপজল ও তিল তেল হেয়ার মাস্ক

উপকরণঃ

  • ২ টেবিল চামচ গোলাপজল
  • ১ টেবিল চামচ তিল তেল
প্রস্তুত প্রনালীঃ গোলাপজল এবং তিল তেল একসাথে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে কিছু সময় রেখে ধুয়ে ফেলুন। তিল তেল চুলের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং গোলাপজল চুলের মোলায়েমতা নিশ্চিত করে।

১০. গোলাপজল ও লেবুর রস হেয়ার মাস্ক

উপকরণঃ

  • ২ টেবিল চামচ গোলাপজল
  • ১ টেবিল চামচ লেবুর রস
প্রস্তুত প্রনালীঃ লেবুর রস ও গোলাপজল একসাথে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং চুলকে আরো সুস্থ ও সজীব রাখে।

গোলাপ জল ব্যবহারের সঠিক সময়

গোলাপ জল ব্যবহারের সঠিক সময় কখন বাএটি কখন ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। এমন কিছু কিছু প্রসাধনী পণ্য রয়েছে, যার কোনও বিকল্প হয় না। এমনই একটি উপাদান হল গোলাপ জল। ত্বক যেমনই হোক গোলাপ জল আপনি সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু গোলাপ জল কখন ব্যবহার করলে ভাল ফল পাবেন, তা কি জানেন? যদি না জেনে থাকেন তাহলে নিচে আলোচনা করা হলো দেখে নিন।

গোলাপ জল সাধারণত ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়। এটি ত্বককে শীতল, সুস্থ এবং উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। গরমকালের সেরা প্রসাধনী পণ্যগুলির মধ্যে একটি হলো গোলাপ জল। বিশেষত তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে এই উপাদানটির কোনও তুলনা হয় না। ত্বককে পরিষ্কার রাখতে টোনার হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন গোলাপ জল। বাইরে থেকে এসে যদি ত্বক গরম বা ক্লান্ত মনে হয়, তখনও গোলাপ জল ব্যবহার করে ত্বককে শীতল করা যায়।

রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে গোলাপ জল ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়। রাতে ত্বক 'হিল' হওয়ার অনেকটা সময় পায়। দূষণ থেকে দূরে থাকে ত্বক। তাই রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ব্যবহার করুন গোলাপ জলকে। তবে এমন নয় যে আপনি দিনের আলোয় গোলাপ জল ব্যবহার করতে পারবেন না। গরমে ত্বকের পরিচর্চা‌ করার সময় তুলোর বলে গোলাপ জল নিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। এতে ত্বকের মধ্যে সতেজতা পাবেন আর ত্বক শীতল হবে।

এছাড়াও আপনি ফেসপ্যাকে গোলাপ জল মিশিয়ে ত্বকের ওপর ব্যবহার করতে পারেন। এতেও অনেক উপকার পাবেন ত্বকের। এতে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমে যাবে। এর পাশাপাশি ব্রণর সমস্যাও কমে যাবে এবং ত্বক উজ্জ্বল হবে। তবে দিনে দু' বারের বেশি গোলাপ জল ব্যবহার করবেন না। স্কিন কেয়ার রুটিনে গোলাপ জল অবশ্যই রাখুন। একবার সকালে ব্যবহার করুন আর একবার রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মুখে লাগিয়ে নিন গোলাপ জল। এতেই কাজ হবে।

গোলাপ জলের অপকারিতা

গোলাপ জল সাধারণত ত্বকের জন্য উপকারী এবং প্রাকৃতিক পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি অপকারিতাও সৃষ্টি করতে পারে। গোলাপ জল সাধারণত উপকারী হলেও এটি ব্যবহারের সময় মান ও ত্বকের ধরন অনুযায়ী সতর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পণ্য এবং ব্যবহারের উপায় বেছে নিলে এর অপকারিতা কমিয়ে উপকারিতা বাড়ানো সম্ভব। নিচে গোলাপ জলের সম্ভাব্য অপকারিতাগুলো উল্লেখ করা হলো।
গোলাপ-জলের-অপকারিতা
১. ত্বকের সংবেদনশীলতা বা অ্যালার্জিঃ গোলাপ জলে থাকা কিছু প্রাকৃতিক উপাদান বা সংরক্ষণকারী রাসায়নিক সংবেদনশীল ত্বকের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে ত্বকে র‌্যাশ, চুলকানি বা লালচে ভাব দেখা দিতে পারে।

২. চোখে জ্বালাঃ গোলাপ জল চোখে লাগলে হালকা জ্বালা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। এটি বিশেষ করে যদি নিম্নমানের বা কৃত্রিম রাসায়নিক মিশ্রিত গোলাপ জল ব্যবহার করা হয়।

৩. ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়াঃ গোলাপ জল অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল শুষে নিতে পারে, যা ত্বক শুষ্ক করে তুলতে পারে।

৪. নিম্নমানের পণ্য থেকে সমস্যাঃ যদি বাজারে থাকা নিম্নমানের বা রাসায়নিক মিশ্রিত গোলাপ জল ব্যবহার করা হয়, তাহলে ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

৫. অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রতিক্রিয়াঃ গোলাপ জলের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকলেও, কিছু ক্ষেত্রে এটি ত্বকের ভালো ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

৬. পিএইচ ভারসাম্যের বিঘ্ন ঘটানোঃ গোলাপ জল ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এটি অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ত্বক শুষ্ক বা অতিরিক্ত তৈলাক্ত হতে পারে।

৭. সানসেনসিটিভিটি বা সূর্যের প্রতি সংবেদনশীলতাঃ কিছু গোলাপ জলে অতিরিক্ত সুগন্ধি বা রাসায়নিক উপাদান মেশানো থাকে, যা ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তুলতে পারে। ফলে ত্বকে পিগমেন্টেশন বা কালো দাগের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৮. ব্রণ বৃদ্ধিঃ যাদের ত্বক তৈলাক্ত এবং ব্রণপ্রবণ, তাদের জন্য গোলাপ জল কখনও কখনও ব্রণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে দিতে পারে, যা ব্রণ তৈরি করে।

৯. গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে সতর্কতাঃ গর্ভবতী নারীরা গোলাপ জল ব্যবহার করলে ত্বকের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যদি এটি কৃত্রিম রাসায়নিকযুক্ত হয়।

১০. শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাঃ গোলাপ জল ব্যবহারে কিছু মানুষের শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যদি তারা সুগন্ধি বা অ্যালার্জির প্রতি সংবেদনশীল হন।

১১. সংরক্ষণ পদ্ধতির কারণে ক্ষতিঃ বেশিরভাগ বাণিজ্যিক গোলাপ জলে সংরক্ষণকারী পদার্থ (preservatives) মেশানো থাকে। এগুলো দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করার মতো গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

১২. সংক্রমণের ঝুঁকিঃ যদি গোলাপ জল ব্যবহারের পর ত্বকে খোলা ক্ষত বা কাটা অংশে লেগে যায়, তাহলে এটি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

১৩. অতিরিক্ত সুগন্ধির সমস্যাঃ অনেক গোলাপ জলে কৃত্রিম সুগন্ধি মেশানো থাকে, যা ত্বক ও নাকের সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং দীর্ঘমেয়াদে মাথাব্যথা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।

রুপচর্চায় গোলাপ জলের ব্যবহার সম্পর্কে শেষকথা

রুপচর্চায় গোলাপ জলের ব্যবহার অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি ত্বকের জন্য অনেক উপকারি। গোলাপ জল ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং শুকিয়ে যাওয়া ত্বককে নরম করে। এটি ত্বকে প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বকের লালচেভাব বা র্যাশের সমস্যা দূর করতে সহায়ক। এছাড়া, গোলাপ জল রূপচর্চার অন্যান্য বিভিন্ন পণ্য যেমন মাস্ক, স্ক্রাব, এবং ক্রিমের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

রুপচর্চায় গোলাপ জলের ব্যবহার যা ত্বকের জন্য অনেক উপকারি। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে এবং ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স ঠিক রাখতে সহায়তা করে। গোলাপ জল ব্যবহারের জন্য সাধারণত একটি তুলোর পালক দিয়ে মুখে হালকাভাবে মুছে নিতে হয় অথবা ফেস মাস্কের অংশ হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। আশা করছি গোলাপ জলের ব্যবহার ও এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url