- কেন গুরুত্বপূর্ণঃ রাউটারের অবস্থান সঠিকভাবে নির্বাচন না করলে সিগন্যাল দুর্বল হতে পারে, যা ইন্টারনেট স্পিড কমিয়ে দেয়। আপনি যদি রাউটারটি একটি কোণায় বা দেয়ালের পেছনে রাখেন, তবে সিগন্যাল দুর্বল হয়ে যাবে।
- কোথায় রাখবেনঃ রাউটারটি ঘরের কেন্দ্রে, উঁচু স্থানে এবং বাধাহীনভাবে রাখুন, যাতে প্রতিটি কক্ষে ভালো সিগন্যাল পৌঁছাতে পারে।
- রেডিও তরঙ্গ থেকে দূরে রাখুনঃ মাইক্রোওভেন, রেডিও বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে রাউটারটি দূরে রাখুন, কারণ তারা সিগন্যালের বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
কিভাবে রাউটার সেটআপ দিতে হয় জেনে নিন
কিভাবে রাউটার সেটআপ দিতে হয় তা হয়তো অনেকেই জানেন না। রাউটার বা ওয়াইফাই
অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন কিন্তু যারা রাউটার সেটআপ করতে জানেন না তাদের জন্যই
মূলত আমার এই আর্টিকেলটি লিখা। বর্তমানে ইন্টারনেট ছাড়া এক মিনিটও এই পৃথিবীতে
কাটানো সম্ভব নয় মানব জাতির পক্ষে।
তাই আপনাদের সকলেরই রাউটার কিভাবে কাজ করে এবং এই রাউটার সম্পর্কে বিস্তারিত
তথ্য জানা অনেক জরুরী। আমার আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে কিভাবে রাউটার সেটআপ
দিতে হয়, রাউটার কিভাবে কাজ করে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
জানানো হবে। আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
পেইজ সূচিপত্রঃ কিভাবে রাউটার সেটআপ দিতে হয়
- রাউটার কি
- কিভাবে রাউটার সেটআপ দিতে হয়
- রাউটার কিভাবে কাজ করে
- রাউটার কত প্রকার ও কি কি
- রাউটার ব্যবহার করার নিয়ম
- ভালো রাউটার চেনার উপায়
- রাউটার কিনার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি
- ওয়াইফাই রাউটারের প্রকারভেদ
- রাউটার ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা
- রাউটার সম্পর্কে শেষকথা
রাউটার কি
রাউটার কি এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর হলো, রাউটার (Router) একটি নেটওয়ার্ক
ডিভাইস যা বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যে ডেটা প্যাকেট পাঠানো এবং গ্রহণ করার
জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ইন্টারনেট প্রটোকল (IP) ব্যবহার করে ডেটা প্যাকেটের
উৎস এবং গন্তব্য ঠিকানার ভিত্তিতে সঠিক পথ নির্ধারণ করে। আমরা যখন কোন
ডিভাইসকে ইন্টারনেটে সংযোগ করতে চাই তখন ডিভাইস ও ইন্টারনেট এর মধ্যে একটি
সংযোগকারী প্রয়োজন যা সংযোগের পথ তৈরি করবে, রাউটার মূলত এই কাজটিই করে।
রাউটার এর সাথে তার দিয়ে ওয়াইফাই সংযোগ করা হয়। ওয়াইফাই থেকে প্রাপ্ত
নেটওয়ার্ক সিগন্যাল ডিভাইসের সাথে তারবিহীন সংযোগে ডিভাইসকে ইন্টারনেটের
রাজ্যে প্রবেশ করায়। এক্ষেত্রে প্রতিটি রাউটারের একটি স্বতন্ত আইপি এড্রেস
থাকে এবং ঐ রাউটারের সাথে যুক্ত ডিভাইস গুলো একটি মাত্র আইপি এড্রেস ব্যাবহার
করে এবং অভিন্ন নেটওয়ার্ক ব্যাবস্থা গড়ে তোলে।
সহজভাবে বলতে গেলে, রাউটার একটি নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্কে ডেটা
পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনার বাড়ির ওয়াইফাই রাউটার,
ইন্টারনেট সংযোগকে আপনার ফোন, ল্যাপটপ, টিভি ইত্যাদির মধ্যে ভাগ করে। রাউটার
একটি অপরিহার্য নেটওয়ার্কিং ডিভাইস যা আপনার দৈনন্দিন ইন্টারনেট ব্যবহারের
অবিচ্ছেদ্য অংশ। যার মাধ্যমে ইনকামিং নেটওয়ার্ককে সক্রিয়ভাবে অ্যাকসেস দেয়
এবং সেটিকে অ্যানালাইস করে, অন্য নেটওয়ার্কে ফরোয়ার্ড করে।
কিভাবে রাউটার সেটআপ দিতে হয়
কিভাবে রাউটার সেটআপ দিতে হয় তা হয়তো অনেকেই জানেন না। রাউটার বা ওয়াইফাই
অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন কিন্তু যারা রাউটার সেটআপ করতে জানেন না তাদের
জন্যই মূলত আমার এই আর্টিকেলটি লিখা। এটি সাধারণত নতুন রাউটার ইনস্টল করার
সময় প্রযোজ্য হয়। রাউটার সেটআপ দেওয়ার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে
পারেন। তো চলুন রাউটার সেটআপ দেওয়ার নিয়ম কানুন জেনে নেওয়া যাক।
১. রাউটার সংযোগ দিন
- পাওয়ার কানেকশনঃ রাউটার সেটআপ দেওয়ার সর্বপ্রথম ধাপ হলো রাউটারটি পাওয়ার আউটলেটে প্লাগ ইন করে রাউটার অন করে নিতে হবে।
- ইন্টারনেট সংযোগঃ আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP) থেকে পাওয়া ইথারনেট কেবলটি রাউটারের WAN/Internet পোর্টে সংযুক্ত করুন। যদি DSL সংযোগ হয়, তবে রাউটারের সাথে DSL কেবল সংযুক্ত করুন।
- ওয়াইফাই ব্যবহার করুনঃ রাউটারের নিচে বা পিছনে প্রিন্ট করা ডিফল্ট SSID (ওয়াইফাই নাম) এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে সংযুক্ত হন।
- কেবল ব্যবহার করুনঃ আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপকে ইথারনেট ক্যাবল দিয়ে রাউটারের LAN পোর্টে সংযুক্ত করুন।
-
ব্রাউজার ব্যবহার করুনঃ যেকোন একটি ব্রাউজারে
প্রবেশ করুন এবং রাউটারের IP অ্যাড্রেস
(সাধারণত
192.168.0.1
বা192.168.1.1
) টাইপ করুন। এই IP Address ব্র্যান্ডভেদে আলাদা হতে পারে। - লগইন করুনঃ ডিফল্ট ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। ডিফল্ট ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড সাধারণত admin/admin বা admin/password হয়। এটি রাউটারের পিছন পাশে স্টিকারে লেখা থাকে। লগইন করার পর নিরাপত্তার জন্য ডিফল্ট পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারেন।
- ISP-এর তথ্য প্রবেশ করানঃ ইন্টারনেট সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য (যেমন PPPoE ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড) আপনার ISP থেকে পাওয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী দিন। DHCP বা Static IP কনফিগারেশন প্রয়োজন হলে সেগুলোও দিন।
- সেটিংস সেভ করুনঃ সঠিকভাবে তথ্য ইনপুট করার পর সেটিংস সেভ করুন এবং রাউটার রিস্টার্ট দিন।
৫. ওয়াইফাই কনফিগার করুন
- SSID এবং পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুনঃ রাউটারের সেটিংসে গিয়ে আপনার পছন্দমতো ওয়াইফাই নাম (SSID) এবং একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট করুন।
- সিকিউরিটি মড সেট করুনঃ WPA3 বা WPA2-PSK নিরাপত্তা মোড নির্বাচন করুন। একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিন (অক্ষর, সংখ্যা, এবং চিহ্ন ব্যবহার করে)।
৬. পরীক্ষা করুন
- আপনার স্মার্টফোন বা অন্য ডিভাইস দিয়ে নতুন ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক খুঁজে কানেক্ট করুন এবং ইন্টারনেট কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করুন।
- পাসওয়ার্ড ইনপুট করুন এবং নিশ্চিত করুন যে ইন্টারনেট কাজ করছে।
- পারেন্টাল কন্ট্রোলঃ যদি প্রয়োজন হয়, শিশুদের জন্য ইন্টারনেট অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
- গেস্ট নেটওয়ার্কঃ অতিথিদের জন্য আলাদা নেটওয়ার্ক চালু করুন।
- ফার্মওয়্যার আপডেট করুনঃ রাউটারের ফার্মওয়্যার সর্বশেষ ভার্সনে আপডেট করুন।
এই প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করলে আপনি সহজেই একটি নতুন রাউটার সেটআপ দিতে
পারবেন। যদি কোনো সমস্যা হয়, তবে রাউটারের ম্যানুয়াল অথবা আপনার ISP-র
সাথে যোগাযোগ করুন। আশা করছি কিভাবে রাউটার সেটআপ দিতে হয় তা সহজেই
বুঝতে পেরেছে।
রাউটার কিভাবে কাজ করে
রাউটার কিভাবে কাজ করে আমরা অনেকেই জানিনা। রাউটার একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস
যা ডেটা প্যাকেটগুলোকে বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যে সঠিক গন্তব্যে পাঠানোর
কাজ করে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্কিং ডিভাইস যা ইন্টারনেট এবং
স্থানীয় নেটওয়ার্কে ডেটা ট্রান্সফারকে সহজ করে। রাউটার এর মূল কাজ হলো
ISP থেকে গ্রহণ করা ইন্টারনেট কানেকশন, ভিন্ন ভিন্ন আধুনিক ইলেক্ট্রনিক
ডিভাইসগুলোর মধ্যে শেয়ার করা।
রাউটার মূলত ইন্টারনেট সংযোগের মূল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে থাকে এবং
বিভিন্ন ডিভাইস গুলোর মধ্যে সে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক পৌঁছাতে সহযোগিতা করে
এবং যোগাযোগ স্থাপন করে দেয়। তবে প্রতিটি রাউটারের আলাদা আলাদা ধরন রয়েছে
এবং এ সকল রাউটার গুলো ব্যবহার করে ইন্টারনেট পাঠানোর একটি নির্দিষ্ট
সীমানা রয়েছে। সেই সীমানা অবধি একটি রাউটার সাধারণত ইন্টারনেট ডাটা
পৌঁছাতে পারে। নিচে রাউটারের কাজ করার প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হলোঃ
১. ডেটা প্যাকেট গ্রহণ করাঃ রাউটার একটি নেটওয়ার্ক থেকে ডেটা
প্যাকেট গ্রহণ করে। প্রতিটি প্যাকেটে একটি উৎস (source) এবং গন্তব্য
(destination) IP ঠিকানা থাকে। কোনো ডিভাইস যখন ইন্টারনেট বা নেটওয়ার্কের
মাধ্যমে ডাটা পাঠায়, তখন সেই ডাটা ছোট ছোট প্যাকেট আকারে ভেঙে যায়।
রাউটার প্রথমে এই ডাটা প্যাকেটগুলি গ্রহণ করে।
২. রাউটিং টেবিল ব্যবহারঃ রাউটারের ভেতরে একটি “রাউটিং টেবিল” থাকে,
যেখানে বিভিন্ন আইপি ঠিকানার তালিকা এবং কোন পথে সেই ঠিকানায় পৌঁছানো যাবে
তা সংরক্ষিত থাকে। রাউটার এই টেবিল ব্যবহার করে ডাটার সঠিক পথ নির্ধারণ করে।
রাউটিং টেবিল হলো এমন একটি ডেটাবেস যেখানে নেটওয়ার্কের পথ এবং সংশ্লিষ্ট
গন্তব্য তথ্য সঞ্চিত থাকে।
৩. ডেটা প্যাকেট ফরোয়ার্ড করাঃ রাউটার সঠিক গন্তব্য নির্ধারণ করার পর
সেই ডাটা প্যাকেট নির্দিষ্ট ডিভাইস বা নেটওয়ার্কে পাঠিয়ে দেয়। এটি
ওয়াই-ফাই বা ইথারনেট কেবলের মাধ্যমে হতে পারে। এটি সাধারণত বিভিন্ন প্রোটোকল
(যেমন OSPF, BGP) ব্যবহার করে।
৪. নেটওয়ার্ক ঠিকানা অনুবাদঃ অনেক রাউটার NAT (Network Address
Translation) ফিচার ব্যবহার করে। প্রত্যেক ডাটা প্যাকেটে একটি নির্দিষ্ট
গন্তব্য আইপি ঠিকানা (IP Address) থাকে। এটি ব্যক্তিগত IP ঠিকানাকে একটি
পাবলিক IP ঠিকানায় রূপান্তরিত করে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস প্রদান করে।
৫. ডেটা ফিল্টারিং এবং নিরাপত্তাঃ রাউটার সাধারণত ফায়ারওয়াল ও
নিরাপত্তা প্রটোকল ব্যবহার করে ডিভাইসগুলোর মধ্যে অবাঞ্ছিত প্রবেশ ও সাইবার
আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
রাউটার কত প্রকার ও কি কি
রাউটার কত প্রকার ও কি কি তা আমরা অনেকেই জানিনা। রাউটার বিভিন্ন ধরনের হয়ে
থাকে এবং প্রত্যেকটি রাউটারের আলাদা আলাদা কার্যকারিতা রয়েছে। Router একটি
বুদ্ধিমান ইন্টারনেট ওয়ার্ক কানেকটিভিটি ডিভাইস যা লজিক্যাল এবং ফিজিক্যাল
অ্যাড্রেস ব্যবহার করে দুই বা ততােধিক নেটওয়ার্ক সেগমেন্টের মধ্যে ডেটা
আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করে। রাঊটার সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা
হলো।
১. ওয়ারলেস রাউটারঃ আপনারা যেই wi-fi ব্যবহার করে নিজেদের মোবাইল
ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা গ্রহণ করছেন সেই ওয়াইফাইটি বেসিকালি
ওয়ারলেস রাউটারের সহায়তায় সংযুক্ত থাকে। এবং ওয়ারলেস রাউটার ব্যতীত আপনি
ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারবেন না। এই ওয়ারলেস রাউটারটি ওয়াইফাই প্রযুক্তির
মাধ্যমে বিভিন্ন ডিভাইস গুলোকে ইন্টারনেট নেটওয়ারক এর সাথে সংযুক্ত করে
ইন্টারনেট আধান প্রদান করতে সহায়তা করে।
ওয়ারলেস রাউটারের সঙ্গে বেশ কিছু অ্যান্টেনা থাকে যে সকল এন্টেনারে
সহায়তায় বেতার সিগন্যাল প্রেরণ করে এবং গ্রহণ করে থাকে। এছাড়া ওয়ারলেস
রাউটারে ফায়ারওয়াল এবং নিরাপত্তার জন্য এনক্রিপশন ব্যবহার করা হয়ে থাকে
যাতে করে খুব সহজেই নিরাপত্তা প্রোটকলের সহায়তায় ডাটা সুরক্ষিত থাকে। কারণ
গ্রাহকের ডাটা সুরক্ষিত রাখাটাই হচ্ছে এমন একটি কাজ যেটা সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ। যা সহজেই করতে পারে ওয়ারলেস রাউটার।
ওয়ারলেস রাউটারের প্রধান সুবিধাই হচ্ছে এই রাউটারের সহায়তায় অনেকগুলো
ডিভাইস একসঙ্গে যুক্ত হতে পারে ইন্টারনেটে। একটি ওয়ারলেস রাউটার সাধারণ
ক্ষেত্রে 30 থেকে 50 মিটার পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ বা সিগন্যাল প্রদান করতে
পারে। তাছাড়া ওয়ারলেস রাউটার এর মূল সুবিধাটি হচ্ছে এটি সহজে সেটআপ করা
যায় এবং যে কেউ চাইলে খুব সহজে কোন জটিলতা বিহীনভাবে ব্যবহার করতে পারবে।
ওয়ারলেস রাউটারের অনেকগুলো অসুবিধা রয়েছে বটে। যার মধ্যে অন্যতম অসুবিধাটি
হচ্ছে যদি কোন বড় ইমারত থাকে কিংবা দেয়াল থাকে সেক্ষেত্রে এই ওয়ারলেস
রাউটারের সহায়তায় ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না। এছাড়া এই নেটওয়ার্কের
মধ্যে নিরাপত্তা জনিত কিছু ত্রুটি লক্ষ্য করা গেছে। আপনি যদি সঠিক ভাবে আপনার
ওয়ারলেস রাউটারটিকে নিরাপদ না রাখতে পারেন।
অর্থাৎ নিরাপত্তা হীনতার মধ্যে ভোগে, সেক্ষেত্রে হ্যাকিং হওয়ার সুযোগ
রয়েছে। তাছাড়া বেশিদূর পর্যন্ত সিগন্যাল প্রেরণ করতে পারেনা যার ফলে আপনি
শুধুমাত্র বাসা বাড়িতে কিংবা অফিসে ছোটখাটো জায়গাগুলোতেই ব্যবহার করতে
পারবেন।
কিন্তু পরিশেষে ওআরজেস রাউটার এমন একটি রাউটার যেটি কিনা খুবই স্বল্প মূল্যে
পাওয়া যায় এবং এটি একটি অপরিহার্য ডিভাইস। আর এই ডিভাইসে ছাড়া কখনোই
ইন্টারনেটের কথা কল্পনাও করা যাবে না। কারণ স্বল্পমূল্যে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক
যদি ব্যবহার করতে হয় তাহলে অবশ্যই আপনার ওয়ারলেস রাউটারের প্রয়োজন পড়বে।
আর তার বিহীনভাবে ইন্টারনেট চালানোর জন্য আপনার ডিভাইসের কানেকশন পাওয়ার
জন্য অবশ্যই ওয়ারলেস রাউটার একটি জরুরী ডিভাইস। এই ওয়ারলেস রাউটার আমাদের
জীবনকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
২. ক্যাবল রাউটারঃ ক্যাবল রাউটার হচ্ছে রাউটারের এমন একটি ডিভাইস যেই
ডিভাইসটি শুধুমাত্র ক্যাবল কিংবা তারের সঙ্গে যুক্ত করে ইন্টারনেট সেবা
ব্যবহার করার যোগ্য হয়। যদি আপনি ক্যাবল রাউটার ব্যবহার করতে চান
সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার তারের প্রয়োজন হবে যে তারের সহায়তায় আপনার
ডিভাইসের মধ্যে ইন্টারনেট সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।
সেক্ষেত্রে অনেকের জন্যই ক্যাবল রাউটার হতে পারে একটি অসুবিধাজনক
রাউটার। তবে জেনে রাখা ভালো যে কেবল রাউটার হচ্ছে এমন একটি রাউটার যে রাউটার
খুব হাই স্পিড ইন্টারনেট সুবিধা প্রেরণ করতে পারে। কারণ এটি সরাসরি আপনার
ডিভাইসের সঙ্গে ক্যাবলের সহায়তাই সংযুক্ত থাকে যার ফলে ইন্টারনেট সুবিধা
আপনার ডিভাইজে অনেকটাই বেশি দেয় অন্যান্য রাউটারের তুলনায়।
তবে জেনে রাখুন ক্যাবল রাউটার যদি আপনি ব্যবহার করতে চান সেক্ষেত্রে
আপনার অবশ্যই অনেক বেশি ব্যয় করতে হবে। এছাড়া কোন ধরনের এক্সপার্ট ব্যতীত
আপনি নিজে নিজে ঘরে বসে কখনোই কেবল রাউটার অনায়াসে সেটআপ করতে পারবেন না।
যার ফলে অনেকের কাছেই ক্যাবল রাউটার মনে হতে পারে একটি অনেক বেশি
বিরক্তকর কিংবা ও দরকারি।
তবে ক্যাবল রাউটারের গতিশক্তি অনেক বেশি থাকে। যার ফলে সহজে আপনার
ডিভাইসে অনেক বেশি পরিমাণে ইন্টারনেট সুবিধা দিতে পারে এবং উচ্চ গতির হয়ে
থাকে। এছাড়া নির্ভরযোগ্য একটি সংযোগ দিতে পারবে ক্যাবল রাউটার তাছাড়াও
ইন্টারনেটের নিরাপত্তা থাকে অনেকটাই বেশি অন্যান্য রাউটারের তুলনায়। যত
নিরাপত্তা টাই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাই যাদের কাছে নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ
মনে হতে পারে তারা অবশ্যই ক্যাবল রাউটার ব্যবহার করবে।
৩. কর্পোরেট রাউটারঃ কর্পোরেট রাউটার হল একটি উন্নতমানের নেটওয়ার্ক
ডিভাইস যা মূলত বড় বড় কর্পোরেট অফিসগুলো এবং প্রতিষ্ঠানের জন্যই শুধুমাত্র
ডিজাইন করা হয়েছে। সাধারণ ক্ষেত্রে আপনি কখনোই বাসা বাড়িতে এই সকল
রাউটারগুলো দেখতে পাবেন না। কারণ বাসা বাড়িতে এতটা হাই স্পিড এর ইন্টারনেটের
কখনোই প্রয়োজন পড়ে না। বড় বড় কর্পোরেট অফিসগুলোতে অনেক বেশি হাই স্পিডের
ইন্টারনেট সুবিধার প্রয়োজন পরে বলেই এ সকল কর্পোরেট রাউটার ব্যবহার করা হয়।
আর কর্পোরেট রাউটার এর গতিসীমা না অনেক বেশি এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে
থাকে। এছাড়া কর্পোরেট রাউটার বহুমুখী কানেক্টিভিটি প্রদান করে থাকে এবং
ব্যান্ডউইথ ম্যানেজমেন্ট খুব সহজেই অপটিমাইজ করা যায়। যেহেতু এই রাউটার
ডিজাইন করা হয়েছে কর্পোরেট অফিসগুলোর জন্য যার ফলে এখানে এডভান্স সিকিউরিটি
রয়েছে। যার ফলে যে কেউ সহজেই চাইলে এই সকল কর্পোরেট রাউটার হ্যাকিং করতে
পারবে না এবং আক্রমণ করতেও পারবেনা।
আগেই বলেছি এখানে রয়েছে এডভান্স কিছু সিকিউরিটি যার ফলে এখানে শেয়ারিং
সিস্টেমটাও রয়েছে এডভান্স। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের এডভান্স সিস্টেম থাকার
কারণে এখানে ইনস্টলেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ এর ক্ষেত্রেও আপনাকে বেশ কিছু
জটিলতাই পড়তে হবে।
৪. ভার্চুয়াল রাউটারঃ ভার্চুয়াল রাউটারটি শুধুই মাত্র তৈরি করা হয়ে
থাকে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ এর খরচ কম করতে। এটি সম্পূর্ণ একটি ভার্চুয়াল
রাউটার যা কিনা সরাসরি উপস্থিত থাকে না তবুও ফিজিক্যাল রাউটারের মতই কাজ করে।
সম্পূর্ণ সফটওয়্যার ভিত্তিক হওয়ার কারণে এখানে কোন ধরনের হ্যাকিং এর সুযোগ
নেই এবং বেশ কিছু ধরনের এখানে সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
৫. এজ রাউটারঃ সাধারণত আইএসপি বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা যে
রাউটারগুলো ব্যবহার করে তাকে এজ রাউটার বলা হয়। ইংরেজি ‘Edge’ – শব্দের অর্থ
প্রান্ত। মূলত একটি নেটওয়ার্কের প্রান্তে অপর একটি নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ
স্থাপনের জন্যই এজ রাউটার ব্যবহৃত হয়। এদেরকে প্রান্তিক রাউটারও বলা হয়ে
থাকে।
এই ধরনের রাউটার কিছু স্মার্ট ডিভাইস গুলোর সাথে সংযুক্ত হয়ে নেটওয়ার্ক
স্থাপন করে না। বরং একটি আইএসপিও থেকে ব্রডব্যান্ড সেবা গ্রহণকারী সকল
গ্রাহকদের রাউটার নিয়ে একটি বড় নেটওয়ার্ক স্থাপন করে। ইন্টারনেট সার্ভিস
প্রোভাইডারদের কাছ থেকে গ্রাহকদের কাছে নেটওয়ার্ক সংযোগ পৌঁছে দিতে দুইটি
নেটওয়ার্কের মধ্যে যেই যন্ত্রটির প্রয়োজন হয় সেটিই এডজ রাউটার নামে
পরিচিত। এ ধরনের রাউটার উচ্চহারে ইন্টারনেট কানেকশন আদান-প্রদান করতে পারে।
৬. কোর রাউটারঃ সাধারণত গৃহ, অফিস-আদালত, বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগ
আদান প্রদানের জন্য এই রাউটার ব্যবহার করা হয় না। বরং ইন্টারনেট সার্ভিস
প্রদানকারীরাই তাদের সেবার গতি অব্যাহত রাখার জন্য এটি ব্যবহার করে। উপরোক্ত
এডজ রাউটার দুটি নেটওয়ার্কের মধ্যে উচ্চমাত্রায় ইন্টারনেট কানেকশন
আদান-প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে কোর রাউটার একটি নেটওয়ার্কের মধ্যেই
তার কাজ সম্পাদন করে। বিশেষভাবে কোন বড় নেটওয়ার্কের তথ্য আদান প্রদানের
গতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করে।
যেমন- আঞ্চলিক সংযোগ, বৃহৎ কোন প্রতিষ্ঠানের আন্তঃসংযোগ কিংবা কোন আইএসপি এর
মধ্যে আইপি সংযোগ স্থাপন, এন্টারপ্রাইজ রাউটার, বড় ব্যবসা বা আইএসপি
নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় রাউটারের সাথে সংযুক্ত করতে কেন্দ্রীয়
রাউটার ডাটাকে অপটিক্যাল ফাইবার লাইনের মধ্য দিয়ে দ্রুতগতিতে ইন্টারনেটে
প্রেরণ করে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবহৃত এরকম রাউটারের সংযোগ আদান-প্রদানের
গতি অনেক বেশি থাকে।
রাউটার ব্যবহার করার নিয়ম
রাউটার ব্যবহার করার নিয়ম এবং এর কার্যকারিতা বুঝতে হলে আপনাকে কিছু
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে হবে। প্রত্যেকটা রাউটার ব্যবহারের জন্য কিছু নিয়ম
কানুন মেনে চলতে হবে। রাউটার ব্যবহারের নিয়ম অনুসরণ করলে আপনি একটি সঠিক এবং
নিরাপদ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবেন। রাউটার ব্যবহারের নিয়ম
বিস্তারিতভাবে বুঝতে এখানে কিছু মূল দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. রাউটার অবস্থান সঠিকভাবে নির্বাচন করুন
- পাসওয়ার্ড শক্তিশালী হওয়া উচিতঃ সহজ পাসওয়ার্ড (যেমন "123456" বা "password") ব্যবহার করা নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াতে পারে। শক্তিশালী পাসওয়ার্ডের মধ্যে বড় ছোট অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন থাকতে হবে।
- পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুনঃ রাউটারটি প্রথমবার ব্যবহার করার সময় ডিফল্ট পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন, কারণ ডিফল্ট পাসওয়ার্ডটি জানা থাকলে আক্রমণকারীরা সহজেই অ্যাক্সেস পেতে পারে।
- ওয়াইফাই পাসওয়ার্ডঃ ওয়াইফাই পাসওয়ার্ডও শক্তিশালী হওয়া উচিত, এবং যেকোনো অপরিচিত ব্যক্তিকে তা জানানো উচিত নয়।
৩. ওয়াইফাই এনক্রিপশন সক্রিয় করুন
- WPA2 বা WPA3 এনক্রিপশন ব্যবহার করুনঃ আপনার রাউটার সেটিংসে যান এবং WPA2 বা WPA3 (যা সবচেয়ে নিরাপদ) এনক্রিপশন ব্যবহার করুন। এটি আপনার রাউটার এবং সংযুক্ত ডিভাইসের মধ্যে ডেটা ট্রান্সমিশন সুরক্ষিত রাখে।
- WEP থেকে দূরে থাকুনঃ WEP (Wired Equivalent Privacy) পুরনো এবং দুর্বল এনক্রিপশন প্রোটোকল। এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি সহজেই হ্যাক করা যায়।
- কেন প্রয়োজনঃ রাউটারের নির্মাতা নতুন আপডেট প্রকাশ করে যা নিরাপত্তা দুর্বলতা এবং বাগ মেরামত করে। আপডেট না করলে, আপনার রাউটার হ্যাকারদের আক্রমণের শিকার হতে পারে।
- আপডেট প্রক্রিয়াঃ রাউটার মডেলের জন্য নির্মাতার ওয়েবসাইট বা রাউটারের অ্যাডমিন প্যানেল থেকে আপডেট ডাউনলোড করুন এবং ইনস্টল করুন। সাধারণত, রাউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফার্মওয়্যার আপডেট চেক করে, কিন্তু এটি ম্যানুয়ালি চেক করাও ভাল।
- কেনঃ পোর্ট ফরওয়ার্ডিং বিশেষ ডিভাইস বা অ্যাপ্লিকেশনকে আপনার নেটওয়ার্কের বাইরে থেকে অ্যাক্সেস করার অনুমতি দেয়। তবে অতিরিক্ত পোর্ট খোলা রাখলে আপনার নেটওয়ার্কে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
- এটা কখন ব্যবহার করবেনঃ যদি আপনি কোনো সার্ভার বা ডিভাইসকে রিমোটলি অ্যাক্সেস করতে চান, যেমন গেম সার্ভার বা IP ক্যামেরা, তখন পোর্ট ফরওয়ার্ডিং করতে হবে। তবে, অপ্রয়োজনীয় পোর্ট ফরওয়ার্ডিং থেকে বিরত থাকুন।
- কেন রিসেট করবেন নাঃ রাউটার রিসেট করলে সেটিংস এবং কনফিগারেশন সব কিছু মুছে যাবে এবং এটি আপনাকে আবার সমস্ত সেটিংস কনফিগার করতে বাধ্য করবে। তাই, শুধুমাত্র তখনই রিসেট করুন যখন আপনার অন্যান্য সমাধান কার্যকর না হয়।
- প্রথমে সমাধান করুনঃ রাউটারের সমস্যা হলে, প্রথমে রিস্টার্ট বা পাওয়ার সাইকেল করার চেষ্টা করুন। কখনো কখনো শুধু রাউটার পুনরায় চালু করলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।
৭. ওয়াইফাই চ্যানেল পরিবর্তন করুন
- কেন দরকারঃ রাউটারগুলোর মধ্যে অনেকেই একই চ্যানেল ব্যবহার করে, বিশেষ করে ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায়। এতে সিগন্যালের হস্তক্ষেপ হতে পারে এবং ইন্টারনেট স্পিড ধীর হয়ে যেতে পারে।
- কিভাবে চ্যানেল পরিবর্তন করবেনঃ রাউটারের অ্যাডমিন প্যানেলে লগ ইন করে, "ওয়াইফাই চ্যানেল" সেটিংস থেকে চ্যানেল পরিবর্তন করুন। সাধারণত, চ্যানেল ১, ৬ এবং ১১ সবচেয়ে কম জ্যাম থাকে।
৮. অন্যান্য ডিভাইস থেকে দূরে রাখুন
- রেডিও তরঙ্গ ও ইলেকট্রনিক হস্তক্ষেপঃ মাইক্রোওভেন, থার্মোমিটার, ব্লুটুথ ডিভাইস এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্র থেকে রাউটারকে দূরে রাখুন, কারণ এগুলো রাউটারের সিগন্যালকে দুর্বল করতে পারে।
- যতটা সম্ভব পরিস্কার স্থান নির্বাচন করুনঃ রাউটারটি কোনও ইলেকট্রনিক ডিভাইস, দেয়াল বা বড় মেটাল অবজেক্টের কাছাকাছি রাখবেন না, যাতে সিগন্যাল বিঘ্নিত না হয়।
ভালো রাউটার চিনার উপায়
ভালো রাউটার চিনার উপায় রয়েছে অনেক আপনি যখন রাউটার ক্রয় করবেন তখন
আপনাকে কিছু বিষয় বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে রাউটার ক্রয় করতে
হবে। আপনার প্রয়োজন এবং বাজেট অনুযায়ী রাউটার নির্বাচন করুন।
সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো রাউটার পাওয়া যায়, তবে উচ্চ ক্ষমতার রাউটার
বেশি দামি হতে পারে। একটি ভালো রাউটার চিনতে নিচের দিকগুলো খেয়াল করতে
পারেন।
গতি বা স্পিডঃ আপনার ইন্টারনেট প্যাকেজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ
রাউটার নির্বাচন করুন। রাউটারের গতি সাধারণত Mbps বা Gbps-এ মাপা হয়।
AC1200, AC1750, AC3200 ইত্যাদি মান রাউটারের গতি নির্দেশ করে। যেমন
AC1200 রাউটার সাধারণত ৩০০ Mbps (2.4GHz) এবং ৮৬৭ Mbps (5GHz) পর্যন্ত
গতি প্রদান করে।
ডিভাইসের সংখ্যাঃ ভালো রাউটার চেনার জন্য কিছু বিষয় জানা উচিত
সে সকল বিষয়ের মধ্য পড়ে কভারেজ এরিয়া, ডিভাইস সংখ্য , রোম সংখ্যা,
রেঞ্জ সংখ্যা, এন্টেনা সংখ্যা ইত্যাদি এই সকল জানা অত্যন্ত জরুরী। যেমন
ডিভাইসের সংখ্যা নেটওয়ার্ক সংযোগ দেওয়ার জন্য রাউটারের গতিও অনেক
বেশি হতে হবে এবং ডিভাইসের সংখ্যা অনুযায়ী রাউটার নির্বাচন করতে হবে।
সাধারণত হোম রাউটারের গতি হতে হবে ১৫০ এমবিপিএস এর থেকে ৩০০ এমবিবিএস
পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে দেশ যত উন্নতি লাভ করছে, তত সবকিছুই উন্নত
হচ্ছে যেমন বর্তমানে বাজারের ১৯০০ এমবিপিএস গতির রাউটার পাওয়া যাচ্ছে
আগে তা পাওয়া যেত না তাই দেশের উন্নতির সঙ্গে সবকিছুই উন্নত হচ্ছে।
কভারেজ এরিয়াঃ কভারেজ এরিয়া বলতে বোঝানো হয় যতটুকু জায়গায়
আপনি রাউটারের সার্ভিস নিতে চাইছেন ততটুকু জায়গাকে কভারেজ এরিয়া বলা
হয়। আপনার কভারেজ এরিয়া যদি ও হয়ে থাকে এক থেকে দুইটি রুম এবং দুই
থেকে তিনটি ডিভাইস, তাহলে ব্যবহার করতে পারেন সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার
আপনার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।
আবার কভারেজ এরিয়া যদি হয়ে থাকে তিন থেকে চারটি রুম এবং চার থেকে
ছয়টি ডিভাইস তবে সেক্ষেত্রে ডুয়েল ব্যান্ড রাউটার আপনার জন্য
কার্যকরী রাউটার হিসেবে গণ্য করা হবে। এর থেকে যদি বেশি জায়গার জন্য
নিয়ে থাকেন, তাহলে আরো ভালো মানের বা উন্নত মানের রাউটারের পাশাপাশি
রিপিটার ব্যবহার করতে হবে তাহলে এতে সঠিক মাত্রায় নেট দিবে।
রেঞ্জ সংখ্যাঃ রাউটারের রেঞ্জের দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে,
কারণ রাউটারের রেঞ্জ যত বড় হবে তত বেশি এরিয়া নিয়ে নেটওয়ার্ক দিতে
পারবে। একটি ওয়ার্ড রাউটারের রেঞ্জ মূলত হয়ে থাকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত।
আর ওয়ারলেস রাউটারের রেঞ্জ ইনডোর ১৫০ ফুট এবং আউটডোরের ৩০০ ফুট হয়ে
থাকে। এর চাইতে বেশি নিতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন রিপিটার অথবা
ম্যাস।
রাউটার অ্যান্টেনাঃ রাউটার নেওয়ার সময় এন্টেনার দিয়ে খেয়াল
রাখতে হবে। কারণ এন্টেনা যত বেশি হবে তত সার্ভিস ভালো দেবে এবং নেট
দিবে বেশি নেটের কাজে অনেক গুলো ডিভাইস ব্যবহারের জন্য আমি সাজেস্ট করব
বেশি এন্টেনাযুক্ত রাউটার নেওয়ার। এতে নেট দিবে দ্রুত এবং যেকোনো নেটের
প্রবলেম থেকে মুক্তি দেবে।
রাউটার কিনার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি
রাউটার কিনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা উচিত, যাতে আপনার
প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ডিভাইসটি নির্বাচন করা যায়। ওয়াই-ফাই এখন আমাদের
প্রতিটি কাজের সাথে আছে মিশে। সেই ওয়াই-ফাই এক্সপেরিয়েন্স স্মুথ রাখার জন্যে
চাই ভালো একটি রাউটার। কিন্তু শুধু ভালো রাউটার হলেই হবেনা, সাথে জানতে হবে
গুরত্বপূর্ন কয়েকটি বিষয়। নিচে রাউটার কেনার আগে জানা জরুরি কিছু বিষয় তুলে
ধরা হলোঃ
১. ইন্টারনেট স্পিড ও ব্যান্ডউইথ সমর্থনঃ আপনার ইন্টারনেট প্যাকেজের
স্পিড অনুযায়ী রাউটার বাছাই করুন। যদি আপনার ইন্টারনেট স্পিড বেশি হয়, তবে
উচ্চ ব্যান্ডউইথ সমর্থন করে এমন রাউটার বেছে নিন।
২. রাউটারের প্রকারঃ রাউটারের প্রকার নির্ধারণ করুন—ওয়্যারলেস,
ওয়্যার্ড, মেশ রাউটার। বড় বাড়ি বা অফিসের জন্য মেশ রাউটার ভালো, যা বিস্তৃত
এলাকায় সিগনাল নিশ্চিত করে।
৩. ওয়াই-ফাই স্ট্যান্ডার্ডঃ নতুন প্রযুক্তি সমর্থন করে এমন রাউটার বেছে
নিন, যেমন Wi-Fi 5 (802.11ac) বা Wi-Fi 6 (802.11ax)। এগুলো উচ্চ গতি ও উন্নত
পারফরম্যান্স প্রদান করে।
৪. ব্যান্ড সংখ্যাঃ ডুয়াল-ব্যান্ড বা ট্রাই-ব্যান্ড রাউটার বেছে নিন,
যা একাধিক ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে। এটি নেটওয়ার্ক কনজেশন কমায় এবং দ্রুত
সংযোগ দেয়।
৫. কভারেজ এলাকাঃ রাউটারের কভারেজ এলাকা বিবেচনা করে কিনুন। বড় বাড়ি
বা অফিসের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রাউটার বা মেশ সিস্টেম বেছে নিন, যা বৃহৎ
এলাকায় সিগনাল পৌঁছাতে পারে।
৬. ইথারনেট পোর্ট ও ইউএসবি পোর্টঃ কতটি ইথারনেট পোর্ট প্রয়োজন তা
নির্ধারণ করুন। এছাড়া, প্রিন্টার বা স্টোরেজ ডিভাইস সংযোগের জন্য ইউএসবি পোর্ট
রয়েছে কিনা সেটাও দেখুন।
৭. নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি ফিচারঃ নিরাপত্তার জন্য WPA3 এনক্রিপশন,
ফায়ারওয়াল, এবং প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সুবিধা রয়েছে কিনা তা যাচাই করুন।
এগুলো আপনার নেটওয়ার্ককে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে।
৮. MU-MIMO এবং QoS প্রযুক্তিঃ MU-MIMO (Multi-User, Multiple-Input,
Multiple-Output) সুবিধা থাকলে একাধিক ডিভাইস একসাথে সংযোগে ভালো পারফরম্যান্স
পাবে। QoS (Quality of Service) ফিচার থাকলে নির্দিষ্ট ডিভাইসে বেশি ব্যান্ডউইথ
বরাদ্দ করা যায়।
৯. রাউটারের ফার্মওয়্যার আপডেটঃ নিয়মিত ফার্মওয়্যার আপডেট সমর্থন করে
এমন রাউটার কিনুন। এতে নিরাপত্তা ঝুঁকি কমবে এবং নতুন ফিচার পেতে সহজ হবে।
১০. বাজেটঃ আপনার বাজেট অনুযায়ী সেরা পারফরম্যান্স ও ফিচার সমৃদ্ধ
রাউটার বেছে নিন। কম দামে বেসিক ফিচার পেতে পারেন, তবে উচ্চমানের রাউটারের জন্য
কিছুটা বেশি খরচ করতে হতে পারে।
ওয়াইফাই রাউটারের প্রকারভেদ
সাধারণত ওয়াইফাই ব্যবহার করার জন্য আমরা বিভিন্ন প্রকারের রাউটার ব্যবহার করে
থাকি যার জন্য ওয়াইফাই রাউটারকেও আবার অনেক আলাদা আলাদা ভাগে ভাগ করা হয়ে
থাকে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে মাত্র বেশ কয়েকটি ভাগই ওয়াইফাই রাউটারকে ভাগ করা
হয়। আমরা নিচে আপনাদের সুবিধার্থে বেশ কয়েকটি ভাগে ওয়াইফাই রাউটার কে ভাগ
করে দিয়েছি যেগুলো উল্লেখ করা হলো।
১. সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটারঃ সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার হলো একটি সাধারণ
রাউটার যা শুধুমাত্র একটি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে কাজ করে, সাধারণত 2.4 GHz
ব্যান্ডে। এটি প্রাথমিক এবং বেসিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য উপযুক্ত, যারা
সাধারণ ব্রাউজিং, ইমেইল চেক করা এবং হালকা স্ট্রিমিংয়ের জন্য ইন্টারনেট
ব্যবহার করেন। তবে বহুল পরিসরের ডিভাইস ব্যবহার করার জন্য এই রাউটার মোটেও ভালো
নয়।
সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটারের বৈশিষ্ট্য
- একক ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডঃ শুধুমাত্র 2.4 GHz ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে কাজ করে। এই ব্যান্ডে ভালো রেঞ্জ পাওয়া যায় এবং এটি দেয়াল বা বাধা সহজে অতিক্রম করতে পারে।
- সীমিত গতিঃ 2.4 GHz ব্যান্ডের গতি তুলনামূলক কম (সাধারণত 50-300 Mbps)। ভারী কাজ যেমন 4K স্ট্রিমিং, বড় ফাইল ডাউনলোড বা অনলাইন গেমিংয়ের জন্য উপযুক্ত নয়।
- ইন্টারফেয়ার সমস্যাঃ 2.4 GHz ব্যান্ডে কাজ করার কারণে ব্লুটুথ ডিভাইস, কর্ডলেস ফোন, এবং মাইক্রোওয়েভের মতো ডিভাইসের সঙ্গে ইন্টারফেয়ার বেশি হয়। এটি সংযোগের গুণমান এবং গতি প্রভাবিত করতে পারে।
- সীমিত ডিভাইস কানেকশনঃ একাধিক ডিভাইস সংযুক্ত হলে ব্যান্ডউইথ ভাগ করতে হয়, যা সংযোগের গতি কমিয়ে দেয়। সাধারণত ছোট পরিবার বা কম ডিভাইস ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
- কম দামীঃ সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার সাধারণত কম দামে পাওয়া যায়। এটি একটি বাজেট-ফ্রেন্ডলি বিকল্প, যা সাধারণ ব্যবহারের জন্য কার্যকর।
- সহজ সেটআপ এবং ব্যবহারঃ সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার সহজে সেটআপ করা যায় এবং ব্যবহারের জন্য জটিলতা কম। সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য এটি সুবিধাজনক।
- ছোট পরিসরে কার্যক্ষমতাঃ ছোট বা মাঝারি আকারের ঘর বা অফিসের জন্য ভালো কাজ করে। বড় এলাকা কভার করার জন্য এটি উপযুক্ত নয়।
- পুরনো প্রযুক্তি সমর্থনঃ পুরনো ডিভাইস এবং প্রযুক্তির সঙ্গে ভালোভাবে কাজ করে। অনেক আধুনিক ফিচার (যেমন MU-MIMO, বিটার স্ট্রিমিং) সাধারণত এতে অনুপস্থিত।
ডুয়াল-ব্যান্ড রাউটারের সুবিধা
- দুটি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডের সুবিধা
2.4 GHz ব্যান্ডঃ এটি দীর্ঘ দূরত্বে ভালো কাজ করে এবং
দেয়াল বা অন্যান্য বাধা সহজেই অতিক্রম করতে পারে। তবে, এটি তুলনামূলক
ধীরগতির এবং অন্যান্য ডিভাইসের (যেমন ব্লুটুথ, মাইক্রোওয়েভ) সাথে বেশি
ইন্টারফেয়ার করে।
5 GHz ব্যান্ডঃ এটি উচ্চ গতি সরবরাহ করে এবং ইন্টারফেয়ার কম হয়।
তবে, এর রেঞ্জ তুলনামূলক কম এবং দেয়াল বা বাধা সহজে অতিক্রম করতে পারে না।
- উচ্চ গতির ইন্টারনেটঃ 5 GHz ব্যান্ডে কম ইন্টারফেয়ার থাকায় এটি উচ্চ গতির ডেটা ট্রান্সফার নিশ্চিত করে, যা স্ট্রিমিং, অনলাইন গেমিং বা বড় ফাইল ডাউনলোড করার জন্য উপযুক্ত।
- কম ইন্টারফেয়ারঃ 5 GHz ব্যান্ডে কাজ করার কারণে অন্যান্য ডিভাইসের (যেমন ওয়াইফাই, ব্লুটুথ) থেকে আসা ইন্টারফেয়ার কম হয়, যা একটি স্থিতিশীল সংযোগ নিশ্চিত করে।
- বেশি ডিভাইস কানেক্ট করার সুবিধাঃ ডুয়াল-ব্যান্ড রাউটার একসঙ্গে একাধিক ডিভাইস সংযুক্ত করতে পারে এবং তাদের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে পারে। কম গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইসগুলোকে 2.4 GHz-এ এবং বেশি ব্যান্ডউইথ-প্রয়োজনীয় ডিভাইসগুলোকে 5 GHz-এ সংযুক্ত করা যায়।
- ভবিষ্যৎমুখী প্রযুক্তিঃ আধুনিক ডিভাইসগুলো (যেমন স্মার্টফোন, স্মার্ট টিভি, ল্যাপটপ) সাধারণত 5 GHz ব্যান্ড সমর্থন করে। ডুয়াল-ব্যান্ড রাউটার ব্যবহার করলে ভবিষ্যতের ডিভাইসগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা সহজ হয়।
- স্মার্ট ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্টঃ ডুয়াল-ব্যান্ড রাউটার সাধারণত স্মার্ট ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সমর্থন করে, যা ব্যান্ডউইথের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করে।
- স্ট্রিমিং এবং গেমিং-এর জন্য আদর্শঃ উচ্চগতির এবং কম লেটেন্সির কারণে ডুয়াল-ব্যান্ড রাউটার স্ট্রিমিং এবং অনলাইন গেমিং-এর জন্য আদর্শ।
৩. গিগাবাইট রাউটারঃ গিগাবাইট রাউটার হল এমন একটি রাউটার যা প্রতি
সেকেন্ডে ১ গিগাবিট (Gbps) বা তার বেশি গতির ডেটা ট্রান্সফার করতে সক্ষম।
এটি উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ এবং উন্নত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার জন্য
ব্যবহৃত হয়। গিগাবাইট রাউটার সাধারণত গিগাবিট ইথারনেট পোর্ট এবং উন্নত
Wi-Fi প্রযুক্তি সমর্থন করে। গেমিং করার জন্য সাধারণত মানুষ এই রাউটারটি
ব্যবহার করে থাকে। বেশি গতিশীলতার কারনে বিভিন্ন স্টিমারগণ লাইভ স্ট্রিমিং
করার জন্য এই রাউটার ব্যবহার করে। এছাড়াও যারা ইন্টারনেটের সহায়তায় অনেক
ভারী ভারী যেমন ভিডিও রেন্ডারিং কিংবা বিভিন্ন ধরনের অনলাইন স্ট্রিমিং করে
থাকে তারা ব্যবহার করে।
গিগাবাইট রাউটারের বৈশিষ্ট্য
- উচ্চ গতির ইন্টারনেটঃ প্রতি সেকেন্ডে ১০০০ মেগাবিট (১ গিগাবিট) পর্যন্ত ডেটা ট্রান্সফার করতে পারে। ভারী ডেটা স্ট্রিমিং, গেমিং, এবং ফাইল ডাউনলোডের জন্য আদর্শ।
- গিগাবিট ইথারনেট পোর্টঃ এতে LAN এবং WAN পোর্ট থাকে, যা গিগাবিট গতিতে ডেটা ট্রান্সফার করতে সক্ষম। দ্রুত ওয়্যার্ড কানেকশন নিশ্চিত করে।
- উন্নত Wi-Fi প্রযুক্তিঃ Wi-Fi 5 (802.11ac) বা Wi-Fi 6 (802.11ax) সমর্থন করে। মাল্টি-ডিভাইস কানেক্টিভিটির জন্য MU-MIMO এবং বিটরেট অপ্টিমাইজেশনের সুবিধা দেয়।
- ল্যাটেন্সি হ্রাসঃ গিগাবাইট রাউটারের লো ল্যাটেন্সি নেটওয়ার্ক গেমিং এবং ভিডিও স্ট্রিমিংয়ে দারুণ পারফরম্যান্স প্রদান করে।
- ব্যান্ডউইথ ব্যবস্থাপনাঃ স্মার্ট QoS (Quality of Service) ফিচারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ সঠিকভাবে বিতরণ করা যায়।
- উন্নত নিরাপত্তাঃ WPA3 এনক্রিপশন, ফায়ারওয়াল সাপোর্ট, এবং VPN পাস-থ্রু ফিচার।
- ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতঃ ৪কে বা ৮কে ভিডিও স্ট্রিমিং এবং স্মার্ট হোম ডিভাইস ব্যবস্থাপনার মতো কাজের জন্য তৈরি।
৪. স্মার্ট রাউটারঃ স্মার্ট রাউটার হলো একটি আধুনিক রাউটার যা উচ্চ
প্রযুক্তি এবং বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এটি শুধু ইন্টারনেট সংযোগ
প্রদানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা এবং
ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য উন্নত কার্যকারিতা সরবরাহ করে। স্মার্ট রাউটার
সাধারণত ওয়াইফাই এবং ল্যান কানেক্টিভিটি উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়। এ
রাউটারটি আপনি সকল ধরনের ফ্যাসালিটি গুলো নিজে নিজে কন্ট্রোল করতে পারবেন।
স্মার্ট রাউটারের বৈশিষ্ট্য
- উন্নত নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্টঃ স্মার্ট রাউটার অ্যাপ বা ওয়েব ইন্টারফেসের মাধ্যমে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল, ব্যান্ডউইথ ম্যানেজমেন্ট, এবং ডিভাইস প্রায়োরিটাইজেশনের মতো ফিচার থাকে।
- উচ্চ গতির ইন্টারনেটঃ এটি সাধারণ রাউটারের তুলনায় দ্রুত গতির ইন্টারনেট প্রদান করতে সক্ষম।
- নিরাপত্তাঃ স্মার্ট রাউটার এনক্রিপশন, অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার প্রটেকশন, এবং ফায়ারওয়াল সিস্টেমের মাধ্যমে নেটওয়ার্ককে নিরাপদ রাখে।
- IoT সাপোর্টঃ এটি ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) ডিভাইসের জন্য প্রস্তুত, যা স্মার্ট হোম সিস্টেমে ব্যবহার করা হয়।
- অটোমেটেড আপডেটঃ স্মার্ট রাউটার সফটওয়্যার নিজে থেকে আপডেট হতে পারে, যা নিরাপত্তা ও পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করে।
- মাল্টি-ব্যান্ড সাপোর্টঃ 2.4 GHz এবং 5 GHz ব্যান্ড সাপোর্ট করে, যা ইন্টারনেটের লোড অনুযায়ী কার্যকরভাবে কাজ করে।
- ক্লাউড ম্যানেজমেন্টঃ স্মার্ট রাউটার ক্লাউড থেকে পরিচালিত হতে পারে, যা দূর থেকেও সেটআপ এবং নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়।
রাউটার ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা
রাউটার ব্যবহারের সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে, যা জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। রাউটার ইন্টারনেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি ডিভাইস হিসেবে ব্যবহূত হয়। রাউটারের মাধ্যমে একাধিক নেটওয়ার্কের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা যায় এবং নেটওয়ার্ক সমপ্রসারণ করা যায়। রাউটার ব্যবহারের সময় সঠিক কনফিগারেশন ও সুরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে সংযুক্ত নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা নির্ভর করে। নিচে রাউটার ব্যবহারের সুবিধা এবং অসুবিধা বর্ণনা করা হলো।
রাউটার ব্যবহারের সুবিধা
একাধিক ডিভাইস সংযোগঃ রাউটার একই সাথে অনেক ডিভাইসকে ইন্টারনেট বা
স্থানীয় নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করতে পারে, যেমন কম্পিউটার, মোবাইল,
ট্যাবলেট, স্মার্ট টিভি ইত্যাদি।
ওয়্যারলেস ইন্টারনেটঃ ওয়াই-ফাই রাউটার ব্যবহার করে আপনি
তারবিহীনভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন, যা ডিভাইস ব্যবহারে
স্বাধীনতা দেয় এবং কেবল ব্যবহারের ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয়।
নেটওয়ার্ক সিকিউরিটিঃ আধুনিক রাউটারগুলোতে WPA3 এনক্রিপশন,
ফায়ারওয়াল, এবং প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে,
যা আপনার নেটওয়ার্ককে সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
ডাটা শেয়ারিংঃ রাউটার ব্যবহার করে নেটওয়ার্কের মধ্যে সহজেই
ডাটা, ফাইল, এবং প্রিন্টার শেয়ার করা যায়। এটি অফিস বা বাড়ির
নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য খুবই উপকারী।
ব্যান্ডউইথ ম্যানেজমেন্টঃ রাউটারের QoS (Quality of Service)
ফিচার ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ডিভাইসে বেশি ব্যান্ডউইথ বরাদ্দ করা যায়,
ফলে গেমিং, ভিডিও স্ট্রিমিং বা গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় ভালো সংযোগ
পাওয়া যায়।
নেটওয়ার্ক কনফিগারেশন সহজঃ রাউটার ব্যবহারে নেটওয়ার্ক সেটআপ,
আইপি অ্যাড্রেসিং এবং নেটওয়ার্ক ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সহজ হয়। এটি বাড়ি
বা অফিসের নেটওয়ার্ক পরিচালনা সহজ করে।
রাউটার ব্যবহারের অসুবিধা
নেটওয়ার্ক কভারেজ সমস্যাঃ অনেক সময় রাউটারের ওয়াই-ফাই সিগনাল
দূরবর্তী বা দেয়ালের পেছনে থাকা এলাকায় পৌঁছায় না। এটি কভারেজ সমস্যার
সৃষ্টি করে, বিশেষ করে বড় বাড়ি বা অফিসে।
নিরাপত্তা ঝুঁকিঃ রাউটারের সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে, এটি
হ্যাকিং বা সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। দুর্বল পাসওয়ার্ড,
পুরোনো ফার্মওয়্যার ইত্যাদি নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করতে পারে।
নেটওয়ার্ক জ্যামঃ অনেক ডিভাইস একই সাথে সংযোগ করলে ব্যান্ডউইথের
সমস্যা হতে পারে, যার ফলে ইন্টারনেটের গতি কমে যায় বা নেটওয়ার্কের
কার্যক্ষমতা কমে যায়।
ব্যবহার ও সেটআপ জটিলতাঃ কিছু রাউটারের সেটআপ এবং কনফিগারেশন জটিল
হতে পারে, বিশেষ করে যারা নেটওয়ার্কিংয়ে নতুন তাদের জন্য এটি
চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
দাম ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচঃ উচ্চমানের রাউটার কেনার খরচ বেশি হতে
পারে এবং সময়মতো ফার্মওয়্যার আপডেট বা সমস্যার সমাধান করতে অতিরিক্ত
খরচ হতে পারে।
ইন্টারনেট নির্ভরতাঃ রাউটারের কার্যকারিতা ইন্টারনেট কানেকশনের
উপর নির্ভর করে। ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যা হলে রাউটারের মাধ্যমে ডিভাইস
সংযোগ বা ডাটা ট্রান্সফার করা যাবে না।
রাউটার সম্পর্কে শেষকথা
রাউটার বিভিন্ন কেবল থেকে নেটওয়ার্ক রিসিভ করে সেই নেটওয়ার্ককে বিভিন্ন ডিভাইসে সঞ্চারিত করে। যার ফলে একই নেটওয়ার্ক বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে, বাকি ডিভাইস গুলোতে ইন্টারনেট সংযোগ ঘটায়। এই আর্টিকেলটির সহায়তায় আপনি খুব সহজেই কিভাবে রাউটার সেটআপ দিতে হয়, রাউটার কিভাবে কাজ করে ও রাউটার কত প্রকার ও কি কি সে সম্বন্ধে সম্পুর্ণ জ্ঞান অর্জন করেছেন।
রাউটার (Router) হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে তৈরি অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ একটি স্মার্ট যন্ত্র। রাউটার বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের
মধ্যে নেটওয়ার্ক স্থাপন করে এবং ইন্টারনেট সংযোগ পরিচালনা করে। বর্তমানে
আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারবিহীন রাউটার ব্যবহার করে থাকি। এই রাউটারগুলো
সাধারণত হার্ডওয়্যার ভিত্তিক হলেও সফটওয়্যার ভিত্তিক রাউটারের ব্যবহার
বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়তই। আশা করছি কিভাবে রাউটার সেটআপ দিতে হয় সে
সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url