আকিকা দেওয়ার সঠিক নিয়ম ও আকিকার দোয়া
আকিকা দেওয়ার সঠিক নিয়ম ও আকিকার দোয়া সহ বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনযোগ
দিয়ে পড়তে থাকুন। আকিকা (عقيقة) একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ- কাটা বা পৃথক
করা। ইসলামিক রীতি অনুসারে, শিশুর জন্মের পর সপ্তম দিনে তার আকিকা প্রদান করা হয়।
এটি একটি সুন্নাত বা পুণ্য কর্ম হিসেবে পালন করা হয়।
আকিকা হিসেবে সাধারণত একটি ছাগল বা ভেড়া বলি দেওয়া হয়, তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী
অন্য কোন পশু যেমন গরু, দুম্বা, উট-ও হতে পারে। আকিকা শিশুর জন্য কল্যাণ,
নিরাপত্তা এবং দৃষ্টিতে আসা বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য পালন করা হয়। আকিকা দেওয়ার
সঠিক নিয়ম ও আকিকার দোয়া সকলের জানা প্রয়োজন।
সূচিপত্রঃ আকিকা দেওয়ার সঠিক নিয়ম ও আকিকার দোয়া
- আকিকা কি
- আকিকা দেওয়ার সঠিক নিয়ম
- আকিকার দোয়া
- আকিকা কত দিনের মধ্যে করতে হয়
- আরবিতে আকিকার দোয়া
- আকিকার পশু জবাই করার নিয়ম
- আকিকার গোশত বন্টনের নিয়ম
- আকিকা দেওয়ার বিধান কি
- ৭ তারিখের আগে আকিকা করা যাবে কি
- গরু দিয়ে আকিকার নিয়ম
- সন্তানের আকিকা কে দিবে
- আকিকা দেওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে শেষকথা
আকিকা কি
আকিকা (আরবিঃ عقيقة) হলো ইসলামী প্রথা অনুযায়ী নবজাতক শিশুর জন্ম উপলক্ষে
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য পশু কুরবানি দেওয়া। এটি সুন্নাত
আল-মু'আক্কাদাহ (নিশ্চিত সুন্নত) হিসেবে বিবেচিত হয়। শরিয়তের পরিভাষায়, সন্তান
জন্মগ্রহণ করলে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট সংখ্যক পশু জবাই করাকে
আকিকা বলে। আকিকার মাধ্যমে নবজাতকের জন্য আল্লাহর নিকট কল্যাণ ও সুরক্ষা
প্রার্থনা করা হয়।
নবী মুহাম্মাদ (সা.) নিজে আকিকার গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন এবং এটি করতে উৎসাহিত
করেছেন। আকিকা হলো সুন্নাত আল মু'আক্কাদাহ সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করতে
হয়। আকিকা শিশু নামকরণের জন্য করতে হয়। আকিকা করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি
অর্জন করা যায়। এবং সকল ধরনের বিপদ থেকে সন্তান সুরক্ষিত থাকে। আকিকা দেওয়া
সুন্নত। আকিকা ছাগল, ভেড়া, গরু ইত্যাদি দেওয়া হয়।
আকিকা দেওয়ার সঠিক নিয়ম
আকিকা দেওয়ার সঠিক নিয়ম রয়েছে যা জানা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য
গুরুত্বপূর্ণ। আকিকা ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত যা নবজাতকের জন্ম
উপলক্ষে পালন করা হয়। আকিকা ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী নবজাতক শিশুর জন্য একটি
সুন্নত অনুষ্ঠান, যা শিশুর জন্মের পর সপ্তম দিনে পালন করা হয়। এতে শিশুর চুল
কেটে তার ওজনের সমপরিমাণ সোনা বা রূপা দরিদ্রদের দান করা হয় এবং একটি পশু
কুরবানি দেওয়া হয়।
আকিকার সঠিক নিয়মাবলীঃ
সময় নির্ধারণঃ আকিকা একটি সুন্নত আমল, যা নবজাতক শিশুর জন্য
কল্যাণ ও বরকতের কারণ হয়। আকিকা সাধারণত শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে করা
হয়। যদি সপ্তম দিনে সম্ভব না হয়, তবে ১৪তম বা ২১তম দিনে করা যেতে পারে।
অক্ষমতার কারণে বিলম্ব হলে, বয়ঃসন্ধিকালের পূর্বে যে কোনো সময় আকিকা করা যেতে
পারে। শিশুর বয়স ১২ বছর হওয়ার আগে আকিকা করা উত্তম।
পশু নির্বাচনঃ ছেলের জন্য দুটি ছাগল বা ভেড়া এবং মেয়ের জন্য একটি
ছাগল বা ভেড়া কুরবানি দেওয়া যায়। গরু বা উটের ক্ষেত্রে, একটি গরু বা উট সাত
ভাগে ভাগ করা যায়। ছেলে সন্তানের জন্য দুটি ভাগ এবং মেয়ে সন্তানের জন্য একটি
ভাগ নির্ধারণ করা যেতে পারে। পশুগুলো অবশ্যই সুস্থ ও নির্দিষ্ট বয়স কমপক্ষে এক
বছর হতে হবে (কোনো শারীরিক ত্রুটি নেই এমন)। কুরবানির পশুর মতোই আকিকার পশু
হওয়া উচিত।
পশু জবাই ওবন্টনের নিয়মঃ পশু জবাই করার সময় আল্লাহর নাম নিয়ে কুরবানি
করতে হবে। আকিকার গোশত কুরবানীর গোশতের ন্যায় তিন ভাগ করে একভাগ ফকির-মিসকিনকে
ছাদাক্বা দিবে ও এক ভাগ বাপ-মা ও পরিবার খাবে এবং এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও
প্রতিবেশীদের মধ্যে হাদিয়া হিসাবে বন্টন করবে। চামড়া বিক্রি করে তা কুরবানীর
পশুর চামড়ার ন্যায় ছাদাক্বা করে দিবে।
দোয়া ও নামকরণঃ আকিকার দিন শিশুর চুল মুণ্ডন করা হয় এবং সেই চুলের ওজন
অনুযায়ী সোনা বা রূপার মূল্য সদকা করা হয়। আকিকা দেওয়ার মাধ্যমে বাচ্চার
ইসলামিক নাম ও তার জন্য দোয়া করা হয়।। কারণ আকিকার মাধ্যমে যে নাম রাখা হয়
সেই নাম ধরে কিয়ামতের দিনে ডাকা হবে। এ কারণে নাম রাখার সময় অনেক সতর্কতা
অবলম্বন করতে হবে।
আকিকার দোয়া
আকিকা করার নির্দিষ্ট দোয়া রয়েছে। আকিকা আরবি শব্দ, এর আভিধানিক অর্থ
আল্লাহর দরবারে নজরানা পেশ করা, শুকরিয়া আদায় করা, জানের সদকা দেওয়া ও
আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আকিকা করতে হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির
উদ্দেশ্যে। এ কারণে আকিকার নিয়ম ও দোয়া রয়েছে। আকিকা করা হয় সন্তানের
মঙ্গলের জন্য। সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে সন্তানের নামকরণ ও কল্যাণের
উদ্দেশ্যে আকিকা দেওয়া হয়।
পশু জবাইয়ের সময় নিম্নোক্ত দোয়া পড়া হয়ঃ
اللَّهُمَّ هَذَا مِنْكَ وَلَكَ، هَذِهِ عَقِيقَةُ فُلَانٍ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা হা-জা মিনকা ওয়া লাকা, হাজিহি আকীকাতু
(শিশুর নাম)।
অর্থঃ হে আল্লাহ! এটি তোমার পক্ষ থেকে এবং তোমারই জন্য। এটি (শিশুর
নাম)-এর আকিকা।
এরপর পড়বেঃ ইন্নিওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি
অল আরদা মিল্লাতা ইবরাহিমা হানীফাও অমা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালাতি
ওয়া নুসুকি অমাহ ইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
লাশারিকালাহু ওয়াবিজালিকা ওমিরতু অ আনা আওয়ালুল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা
মিনকা ওয়ালাকা বিছমিল্লাহি আল্লহু আকবার বলে কোরবানির পশু জবাই করবে।
আকিকা কত দিনের মধ্যে করতে হয়
আকিকা কত দিনের মধ্যে করতে হয় তা অনেক নিয়ম রয়েছে। আকিকা সাধারণত শিশুর
জন্মের সপ্তম দিন বা তার পরের কোনো দিন করা হয়। তবে, কিছু হাদিসে বলা হয়েছে
যে, সপ্তম দিনেই আকিকা করা সবচেয়ে ভালো। রাসুল (সা.) হাদিসে সপ্তম দিনেই এসব
করার কথা বলেছেন। সুন্নাহ অনুযায়ী সপ্তম দিন করা উচিত। তবে আরেকটি হাদিস
অনুযায়ী, সপ্তম দিনে করতে না পারলে ১৪ দিনে কিংবা ২১ দিনের দিন করবেন।
এরপরও যদিও কেউ না পারেন, তাহলে পরে করে নেবেন। তবে, শিশুকালের মধ্যেই করে
নেবেন।ইসলামী শরিয়তের যেসব বিধান দিন-তারিখ, মাস-বছরের সঙ্গে সম্পৃক্ত,
সেগুলো চাঁদের হিসাবে গণনা করতে হয়। সুতরাং এই সাত দিন গণনা করতে হবে চাঁদের
হিসাবে। আর চাঁদের ক্ষেত্রে দিন বা তারিখ শুরু হয় সূর্যাস্তের পর থেকে।
সুতরাং সন্তান যদি শুক্রবার সূর্যাস্তের পর জন্ম নেয়—তার অর্থ সে শনিবারে
জন্ম নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে তার সাত দিন গণনা শুরু হবে শনিবার থেকে, শুক্রবার
থেকে নয়।
আরবিতে আকিকার দোয়া
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এর কারণে সকল কিছুর সুনির্দিষ্ট
নিয়মকানুন রয়েছে। এই কারণে আকিকা করার নির্দিষ্ট দোয়া রয়েছে। আকিকা হলো
সন্তান জন্মের পর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে একটি নির্দিষ্ট
নিয়মে পশু জবাই করা। জবাই করার সময় একটি নির্দিষ্ট দোয়া পড়া হয়, যা
সন্তানের মঙ্গল কামনা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
নিম্নে, আরবিতে আকিকার দোয়া উল্লেখ করা হলো।
আরবিঃ اللَّهُمَّ هَذِهِ عَقِيقَةُ ابْنِي (সন্তানের নাম)، دَمُهَا بِدَمِهِ، وَلَحْمُهَا بِلَحْمِهِ، وَعَظْمُهَا بِعَظْمِهِ،
وَجِلْدُهَا بِجِلْدِهِ، وَشَعْرُهَا بِشَعْرِهِ، اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا
فِدَاءً لِابْنِي مِنَ النَّارِ.
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা হাজিহি আকিকাতু ইবনি [সন্তানের নাম], দামুহা
বিদামিহি, ওয়া লাহমুহা বিলাহমিহি, ওয়া আজমুহা বিআযমিহি, ওয়া জিলদুহা
বিজিলদিহি, ওয়া শা'রুহা বিশা'রিহি, আল্লাহুম্মাজ'আলহা ফিদাআল্লি ইবনি
মিনান্নার।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! এটি আমার সন্তান [সন্তানের নাম]-এর আকিকা। এর
রক্ত তার রক্তের পরিবর্তে, এর মাংস তার মাংসের পরিবর্তে, এর হাড় তার হাড়ের
পরিবর্তে, এর চামড়া তার চামড়ার পরিবর্তে, এর চুল তার চুলের পরিবর্তে। হে
আল্লাহ! এটিকে আমার সন্তানকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির মাধ্যম বানিয়ে
দিন।
দোয়া পড়ার সময় সন্তানের নাম উল্লেখ করতে হবে। আকিকা সাধারণত সন্তান জন্মের
সপ্তম দিনে করা হয়, তবে প্রয়োজন অনুযায়ী ১৪তম বা ২১তম দিনেও করা যেতে
পারে। ছেলে সন্তানের জন্য দুটি এবং মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল জবাই করা
সুন্নত। আকিকার মাংস আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করা
হয়, এবং পরিবারও তা খেতে পারে। আল্লাহ আমাদের সকলের সন্তানদের নেক ও সৎ
বানান।
আকিকার পশু জবাই করার নিয়ম
আকিকার পশু জবাই করে বা আকিকা করার মাধ্যমে সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে
শোকরিয়া এবং দোয়া করা হয়। আকিকা একটি ইসলামিক রীতির মধ্যে পড়ে যা নবজাতক
সন্তানের জন্য বিশেষ উৎসবে পশু জবাই করার মাধ্যমে পালন করা হয়। এটি সাধারণত
শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে করা হয়, কিন্তু সময় নির্দিষ্ট নয়, এবং এটি মূলত একটি
সাদিকা বা সন্তানের জন্য দোয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের রীতি। আকিকার পশু জবাই
করার নিয়মগুলো নিচে দেওয়া হলো।
১. পশু নির্বাচনঃ সাধারণত দুটি পশু (যেমন: দুটি ভেড়া, বা দুটি ছাগল)
ছেলে সন্তানের জন্য জবাই করা হয়, আর একটি পশু (যেমন: একটি ভেড়া বা একটি ছাগল)
মেয়ে সন্তানের জন্য। পশু হালাল, সুস্থ এবং পূর্ণ বয়স্ক হওয়া উচিত। তাছাড়া
পশুর শারীরিক অবস্থা ভালো থাকতে হবে এবং জীবন্ত অবস্থায় তাতে কোনো ধরনের আঘাত
বা রোগ হওয়া উচিত নয়।
২. পশু জবাই করার সময়ঃ জবাইয়ের সময়, পবিত্র সূরা আল-ফাতিহা এবং
আল্লাহর নামে (বিসমিল্লাহ) বলে পশুকে জবাই করা উচিত। পশুর গলা কেটে রক্ত বের
করে দিতে হবে, যেন শরীর থেকে রক্ত পুরোপুরি বের হয়ে যায়। যদি সম্ভব হয়, পশু
মুখ মক্কা বা কাবার দিকে রেখে জবাই করা উত্তম, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।
জবাইকারী ব্যক্তির অবশ্যই শুদ্ধ এবং পবিত্র হতে হবে, যার হাতে পশু জবাই করা
হচ্ছে।
৩. পশু জবাই করার স্থানঃ পশু যেকোনো হালাল জায়গায়, যেমন পবিত্র স্থান
বা মাংস প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র ইত্যাদিতে জবাই করা যেতে পারে, তবে মসজিদ বা
অন্য কোনো ধর্মীয় স্থানে পশু জবাই করা উচিত নয়, যেহেতু এটি ধর্মীয়
কর্মকাণ্ডের ক্ষতি করতে পারে।
৪. সন্তান ও আকিকা সম্পর্কিত দোয়াঃ পশু জবাইয়ের পর সন্তানের জন্য
বিশেষ দোয়া করা উচিত। অনেক সময়, আকিকার পর সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে
কল্যাণ, সুস্থতা, নিরাপত্তা, এবং ঈমানের পূর্ণতা প্রার্থনা করা
হয়। আকিকা পালন সবার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি হিসেবে বিবেচিত হয়, যা
সন্তানের জন্য একটি শুভ মুহূর্ত তৈরিতে সাহায্য করে।
আকিকার গোশত বণ্টনের নিয়ম
আকিকা ইসলামী শরীয়তে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত, যা সন্তান জন্মের কৃতজ্ঞতা
স্বরূপ আদায় করা হয়। এটি নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বারা
সুপারিশকৃত একটি ইবাদত। আকিকা ও কুরবানীর মধ্যে কিছু মিল পাওয়া যায়। ঠিক একই ভাবে আকিকার গোস্ত
বন্টনের নিয়ম ও কোরবানির মতই। আকিকা করার পর আকিকার মাংস তিন ভাগের ভাগ
করতে হবে। আকিকার পশুর গোশত বণ্টনের নিয়ম ও আদায়ের বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত
ব্যাখ্যা নিচে দেওয়া হলো।
এক ভাগ আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের মধ্যে বিতরণ করাঃ আত্মীয়স্বজন ও
বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে আকিকার গোশত বিতরণ করা উত্তম। বিতরণের সময় আত্মীয়দের
মধ্যে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাইকে দেওয়া যেতে পারে।
এক ভাগ গরিব ও মিসকিনদের মাঝে দান করাঃ গরিব-দুঃস্থদের মাঝে বণ্টন
করাই উত্তম। বিশেষ করে যারা নিঃস্ব ও অভাবগ্রস্ত, তাদের প্রাধান্য দেওয়া
উচিত।
এক ভাগ নিজের ও পরিবারের জন্য রাখাঃ নিজের পরিবারের জন্য কিছু গোশত
রেখে খাওয়াও জায়েজ ও সুন্নত। চাইলে গোশত রান্না করে ঘরের লোকজন, আত্মীয়স্বজন
ও অতিথিদের খাওয়ানো যায়।
কেউ চাইলে তিন ভাগ না করে পুরো গোশত গরিবদের দান করতে পারেন, এটিও বৈধ। আবার
কেউ চাইলে পুরো গোশত নিজের পরিবার ও আত্মীয়দের মধ্যে খেতে পারেন, তবে গরিবদের
অংশ দেওয়া উত্তম।
আকিকা দেওয়ার বিধান কি
আকিকা হলো সুন্নাত আল মু'আক্কাদাহ। বাচ্চা হলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে আকিকা করতে
হয়। এই দিনেই বাচ্চার নাম রাখতে হয়। এবং আকিকা করতে হয় সপ্তম দিনে। ওই
দিনেই বাচ্চার মাথার চুল ফেলতে হয়। প্রতিটা মুসলমান সন্তানের আকিকা দিতে
হবে। যদি সপ্তম দিনে দিতে না পারে তাহলে ১৪ অথবা ২১তম দিনে দিতে হবে। যদি কোন
ব্যক্তির আকিকা দেওয়া না হয় তাহলে তাকে নিজে দিতে হবে।
হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রতিটি শিশু তার আকিকার সাথে বন্ধক
থাকে। সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু জবাই করা হবে, তার চুল কাটা হবে এবং নাম
রাখা হবে।" (আবু দাউদ, তিরমিজি) তাই অনেক আলেম আকিকাকে মুস্তাহাব (উত্তম)
বলেছেন এবং কেউ কেউ একে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ (প্রয়োজনীয় সুন্নাত) হিসেবে
গণ্য করেন।
৭ তারিখের আগে আকিকা করা যাবে কি
ইসলামিক বিধান অনুযায়ী, আকিকা সন্তানের জন্মের সপ্তম দিনে করা সুন্নত ।এ
কারণে আকিকার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। আকিকা সপ্তম দিনে করতে হয়। তবে
কোন কারণ ব্যতীত সপ্তম দিনে দিতে না পারলে অন্য দিনে দিতে পারবেন। কিন্তু সাত
দিনের আগে আকিকা দেওয়া যাবে না। বিশেষ কোনো কারণবশত (যেমন, আর্থিক অসুবিধা,
সময় স্বল্পতা ইত্যাদি) সপ্তম দিনের আগে আকিকা করা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে
কিনা, এ বিষয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে।
শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে সপ্তম দিনই উত্তম। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)
বলেছেন, প্রত্যেক শিশু তার আকিকার জন্য বন্ধক থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে
তার আকিকা করা হবে, নাম রাখা হবে এবং মাথার চুল মুন্ডানো হবে। (সুনান আবু
দাউদ: ২৮৩৮, তিরমিজি: ১৫২২)
সপ্তম দিনের পরেও করা যায়ঃ
- যদি কেউ সপ্তম দিনে আকিকা করতে না পারে, তাহলে ১৪তম বা ২১তম দিনে করাও সুন্নত বলে অনেক আলেম মত দিয়েছেন।
- যদি নির্দিষ্ট দিনে সম্ভব না হয়, তাহলে পরবর্তীতে সুবিধামতো সময়ে করলেও আকিকা শুদ্ধ হবে।
সপ্তম দিনের আগে করা উত্তম নয়ঃ
- অধিকাংশ আলেমের মতে, সপ্তম দিনের আগে আকিকা করা সুন্নত নয়, বরং সপ্তম দিনই উত্তম।
- তবে, যদি কেউ আগে করে ফেলে, তাহলে তা জায়েজ হলেও সুন্নত পরিপূর্ণ হবে না।
সারসংক্ষেপঃ
- সপ্তম দিনেই আকিকা করা সর্বোত্তম।
- যদি সম্ভব না হয়, তাহলে ১৪তম, ২১তম বা অন্য সুবিধাজনক দিনে করলেও চলবে।
- সপ্তম দিনের আগে করলে তা জায়েজ হলেও সুন্নত পরিপূর্ণ হবে না।
আপনি যদি নিশ্চিত হতে চান, তাহলে স্থানীয় কোনো আলেম বা মুফতির পরামর্শ
নেওয়া উত্তম হবে।
গরু দিয়ে আকিকার নিয়ম
গরু দিয়ে আকিকা করা যায়, তবে এর কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। আকিকা হলো
সন্তানের জন্মের পর ইসলামি নির্দেশনা অনুযায়ী কোরবানি করা একটি সুন্নত আমল।
বর্তমান সময়ে মানুষ আর্থিকভাবে সচ্ছল। এ কারণে অনেকেই গরু আকিকা দিয়ে থাকে।
তবে ছাগল আকিকা করা সুন্নত। ছাগল ছাড়াও যে কোন পশু কোরবানি করা যাবে। তবে
সেটা সুন্নত হবেনা। গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম নীচে আলোচনা করা হলো।
গরুর ভাগসংখ্যাঃ
- গরু সাতজন পর্যন্ত ভাগ করে আকিকা করা যায়। অর্থাৎ, একজন এক ভাগ, দুইজন দুই ভাগ, এভাবে সর্বোচ্চ সাতজন পর্যন্ত আকিকার জন্য শরিক হতে পারেন।
- ছেলের আকিকার জন্য দুটি অংশ উত্তম, তবে সামর্থ্য না থাকলে একটি দিলেও চলে।
- মেয়ের আকিকার জন্য একটি অংশ যথেষ্ট।
- আকিকার পশু জবাই করার সময় আকিকার নিয়ত করা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, মনে মনে বা মুখে বলতে পারেন— আমি আমার সন্তানের আকিকা হিসেবে এই পশু কুরবান করছি।
- আকিকার জন্য গরু কোরবানির মতোই হতে হবে—কমপক্ষে দুই বছর বয়সী হতে হবে।
- পশুটি সুস্থ ও ত্রুটিমুক্ত হতে হবে।
- কোরবানির মতোই আকিকার পশুর কোনো শারীরিক ত্রুটি থাকা যাবে না।
- আকিকার গোশত নিজেরা খেতে পারেন, আত্মীয়স্বজনকে খাওয়াতে পারেন এবং গরিবদের মাঝে বিতরণ করতে পারেন। তবে আকিকার গোশত সম্পূর্ণ রান্না করে পরিবেশন করাই উত্তম।
গরু দিয়ে আকিকা করলে একটি উদাহরণঃ ধরা যাক, একজন ব্যক্তি তার এক ছেলে ও এক মেয়ের আকিকা করতে চান। সে
ক্ষেত্রে তিনি গরুর তিন ভাগ নিবেন (ছেলের জন্য ২ ভাগ, মেয়ের জন্য ১ ভাগ)
এবং বাকি চার ভাগ অন্যদের সাথে ভাগ করে নিতে পারেন। আশা করি বিষয়টি
পরিষ্কার হয়েছে।
সন্তানের আকিকা কে দিবে
সন্তানের আকিকা আদায় করার দায়িত্ব সাধারণত তার পিতার উপর থাকে। তবে, যদি পিতা
উপস্থিত না থাকেন বা কোনো কারণে আকিকা দেওয়ার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে মাতা
বা অন্য কোনো কাছের আত্মীয় বা ব্যক্তি আকিকা দিতে পারেন। আকিকার মাধ্যমে
শিশুদের জন্য দোয়া এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। আকিকা দেওয়ার
জন্য সাধারণত দুটি পশু (যেমন: দুম্বা বা মোষ) কুরবানি দেওয়া হয়।
তবে ছেলে হলে দুটি এবং মেয়ে হলে একটি পশু কুরবানি দেওয়া হয়। আকিকা করার
মাধ্যমে বাচ্চার বিপদ আপদ দূর হয়ে যায়। বাচ্চা জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা
করতে হয়। বাচ্চার জন্মের পর থেকে সকল দায়িত্ব পড়ে পিতার ওপর। এ কারণে
আকিকার টাকা পিতাকে বহন করতে হয়। যদি পরিবারের সবাই একত্রে থাকে। তবে
পরিবারের টাকা দিয়ে আকিকা করতে পারবেন। তবে টাকা যেই প্রদান করুক না কারো
সপ্তম দিনে আকিকা দিতে হবে।
আকিকা দেওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে শেষকথা
আল্লাহর রাসুল (সা.)- কে আকিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি
সন্তানের আকিকা করার ইচ্ছা করে, সে যেন তা পালন করে। ছেলের জন্য সমমানের দুটি
ছাগল। আর মেয়ের জন্য একটি।আকিকা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, যা
নবজাতকের জন্য কল্যাণ ও শোকরিয়ার প্রতীক। এটি একদিকে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা
প্রকাশ, অন্যদিকে শিশুর সুস্থতা ও নিরাপত্তার জন্য করা হয়। ইসলামের বিধান
অনুযায়ী যথাসময়ে আকিকা আদায় করা হলে তা কল্যাণকর হয় এবং এটি ধর্মীয়ভাবে একটি
মহৎ কাজ।
স্বাভাবিকভাবে সন্তানের আকিকা করার দায়িত্ব তার জন্মদাতা বাবার। অবশ্য অন্য কেউ
বা নিজেও নিজের আকিকা করতে পারবেন। সন্তান হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত। এ
কারণে বাচ্চা হলে সপ্তম দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টি আকিকা করতে হয়। আকিকার কিছু
নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। ওপরে আকিকার নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
করা হয়েছে। প্রতিটা শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করতে হবে। আশা করছি, আকিকা
দেওয়ার সঠিক নিয়ম ও আকিকার দোয়া সহ বিস্তারিত বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে
সক্ষম হয়েছেন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url