ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা


ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। ডায়ালাইসিস হলো একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যা কিডনি বিকল হলে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ, অতিরিক্ত তরল এবং বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে ব্যবহৃত হয়। কিডনি স্বাভাবিকভাবে এই কাজগুলি সম্পাদন করে, কিন্তু যখন কিডনি সঠিকভাবে কাজ করে না, তখন ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়।

ডায়ালাইসিস-রোগীর-খাবার-তালিকা

ডায়ালাইসিস কোন রোগ না। এটা একটি চিকিৎসার প্রক্রিয়া। বর্তমান সময়ে অনেক মানুষের কিডনি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিডনি নষ্ট হলে শরীর থেকে বজ্র পদার্থ বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিডনির পরিবর্তে ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করা হয়। নিম্নে ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা

ডায়ালাইসিস কি

ডায়ালাইসিস হলো একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যা কিডনি বিকল হলে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ, অতিরিক্ত তরল এবং বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে ব্যবহৃত হয়। কিডনি স্বাভাবিকভাবে এই কাজগুলি সম্পাদন করে, কিন্তু যখন কিডনি সঠিকভাবে কাজ করে না, তখন ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। ডায়ালাইসিস সাধারণত কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের আগে একটি অস্থায়ী সমাধান হিসেবে ব্যবহৃত হয়, বা যখন ট্রান্সপ্লান্ট সম্ভব নয় তখন দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ডায়ালাইসিস সাধারণত তখনই প্রয়োজন হয় যখন কিডনি তাদের স্বাভাবিক কার্যকারিতার মাত্র ১০-১৫% হারায়। এটি কিডনি ব্যর্থতার বিভিন্ন কারণ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস ইত্যাদির ফলে হতে পারে। ডায়ালাইসিসের পর রোগীদের খাদ্যাভ্যাস এবং তরল গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অতিরিক্ত পানি জমে রক্তচাপ বৃদ্ধি, ফুলে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে।

এছাড়া, পটাসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাংস, মাছ, মটরশুটি এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যের গ্রহণ কমিয়ে আনতে হবে। ডায়ালাইসিসের কিছু ঝুঁকি রয়েছে, যেমন নিম্ন রক্তচাপ, পেশীর ক্র্যাম্প, চুলকানি, ঘুমের ব্যাঘাত, এবং অ্যানিমিয়া। তবে, সঠিক যত্ন এবং নিয়মিত চিকিৎসা পরামর্শের মাধ্যমে এই ঝুঁকিগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়।সর্বোপরি, ডায়ালাইসিস কিডনি ব্যর্থতার রোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন বজায় রাখতে সহায়তা করে।

ডায়ালাইসিস এর বিকল্প কি

ডায়ালাইসিস এর বিকল্প হল কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট। ডায়ালাইসিসের বিকল্প হিসেবে কিডনি প্রতিস্থাপন (কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট) একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। যখন রোগীর কিডনি সম্পূর্ণভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হয়। কিডনি প্রতিস্থাপনে, সুস্থ একটি কিডনি দাতা থেকে গ্রহণ করে রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়, যা কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে সহায়তা করে।

তবে, কিডনি প্রতিস্থাপন জটিল একটি প্রক্রিয়া এবং এটি সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। এছাড়া, প্রতিস্থাপনের পর রোগীকে আজীবন ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধ গ্রহণ করতে হয় যাতে শরীর নতুন কিডনি প্রত্যাখ্যান না করে। তাই, প্রতিস্থাপন বা ডায়ালাইসিসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, রোগীর শারীরিক অবস্থা, জীবনযাপন পদ্ধতি এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডায়ালাইসিস কত প্রকার ও কি কি

ডায়ালাইসিস কত প্রকার ও কি কি আমরা অনেকেই জানিনা। এটি সম্পূর্ণরূপে রোগীর শারীরিক অবস্থা, জীবনযাত্রা, এবং চিকিৎসকের পরামর্শের উপর নির্ভর করে। হেমোডায়ালাইসিস সাধারণত বেশি কার্যকর হলেও পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস ঘরে বসেই করা যায়, তাই অনেকে এটি পছন্দ করেন। ডায়ালাইসিস করতে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার মেডিকেলে যেতে হয়। ডায়ালাইসিস প্রধানত তিন প্রকারের হয়। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১. হেমোডায়ালাইসিসঃ এটি সবচেয়ে প্রচলিত ডায়ালাইসিস পদ্ধতি, যেখানে একটি কৃত্রিম কিডনি (হেমোডায়ালাইজার) ব্যবহার করে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল অপসারণ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায়, রক্তনালীতে একটি ভাস্কুলার অ্যাক্সেস তৈরি করা হয়, যা রক্তকে ডায়ালাইজারে প্রবাহিত করতে সহায়তা করে। সাধারণত, হেমোডায়ালাইসিস প্রতি সেশনে ৩-৫ ঘণ্টা সময় নেয় এবং সপ্তাহে ৩ বার করা হয়।

২. পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসঃ এই পদ্ধতিতে, পেটের অভ্যন্তরে পেরিটোনিয়াম নামক ঝিল্লি ব্যবহার করে রক্ত পরিশোধন করা হয়। একটি ক্যাথেটারের মাধ্যমে পেটের গহ্বরে ডায়ালিসেট নামক বিশেষ তরল প্রবেশ করানো হয়, যা বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল শোষণ করে। পরে এই তরলটি নিষ্কাশন করা হয়। পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে:

  • ক্রমাগত অ্যাম্বুলেটরি পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস (CAPD): রোগী নিজেই দিনে কয়েকবার এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন, যেখানে মেশিনের প্রয়োজন হয় না।
  • ক্রমাগত সাইক্লিক পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস (CCPD): এটি একটি মেশিনের সাহায্যে রাতে ঘুমের সময় সম্পন্ন করা হয়।
৩. ক্রমাগত রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিঃ এটি প্রধানত তীব্র কিডনি ব্যর্থতার রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (ICU) ব্যবহৃত হয়। এই প্রক্রিয়ায়, একটি মেশিনের মাধ্যমে রক্ত থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত জল অপসারণ করা হয় এবং প্রতিস্থাপন তরল সহ রক্ত শরীরে ফিরে আসে। সাধারণত, CRRT প্রতিদিন ১২-২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে পারে।

প্রতিটি পদ্ধতির নিজস্ব সুবিধা ও ঝুঁকি রয়েছে, এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা ও জীবনযাত্রার উপর ভিত্তি করে উপযুক্ত পদ্ধতি নির্বাচন করা হয়। আশা করি, ডায়ালাইসিসের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় এ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। কিডনির পয়েন্টের মান বা কিডনি ফাংশনের পর্যায়ের উপর ভিত্তি করে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত, কিডনির কার্যকারিতা নির্ধারণের জন্য গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেশন রেট (GFR) ব্যবহার করা হয়।GFR ১৫ মিলিলিটার/মিনিট/১.৭৩ ম² এর নিচে নেমে এলে কিডনি ব্যর্থতা ধরা হয়, এবং এই পর্যায়ে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হতে পারে।

এছাড়া, রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াও কিডনি সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। সাধারণত, পুরুষদের জন্য ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা ০.৬ থেকে ১.২ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার, এবং নারীদের জন্য ০.৫ থেকে ১.১ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার। যদি ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ৫.০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা তার বেশি হয়, তবে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হতে পারে। কিডনির রোগের স্টেজ ও ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানানো হলোঃ

কিডনি রোগের স্টেজঃ

পর্যায়-১ eGFR 90 বা তার বেশিঃ এই পর্যায়ে কিডনির কার্যকারিতা স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু কিছু ছোট সমস্যা বা ক্ষতি হতে পারে। সাধারণত রোগী কোনো উপসর্গ অনুভব করেন না। কিডনির রোগ নির্ণয় করা হয় যদি অন্যান্য উপসর্গ যেমন প্রোটিন বা মাইক্রোএলবিউমিন ইউরিনে দেখা যায়।

পর্যায়-২ eGFR ৬০-৮৯ঃ কিডনির কার্যকারিতা কিছুটা কমে আসে। এই পর্যায়ে কোনো বিশেষ উপসর্গ থাকতে নাও পারে, তবে কিডনির ক্ষতি হতে থাকে। জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

পর্যায়-৩ eGFR ৩০-৫৯ঃ এই পর্যায়ে কিডনি কার্যকারিতা আরও কমে যায়। কিছু সাধারণ উপসর্গ যেমন ক্লান্তি, শরীর ফুলে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসা নিয়ন্ত্রণে রাখলে কিডনি ফাংশন আরও খারাপ হওয়া আটকানো যেতে পারে।

পর্যায়-৪ eGFR ১৫-২৯ঃ কিডনির কার্যকারিতা গুরুতরভাবে কমে যায়। উপসর্গ যেমন প্রচণ্ড ক্লান্তি, শরীরের পানি জমা, এবং উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। এই পর্যায়ে রোগীর ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি নিতে হয়।

পর্যায়-৫ eGFR ১৫ এর নিচেঃ কিডনি কার্যকারিতা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, যা কিডনি ব্যর্থতা বা "এন্ড-স্টেজ রেনাল ডিজিজ" (ESRD) হিসেবে পরিচিত। শরীরের প্রয়োজনীয় টক্সিন এবং অতিরিক্ত তরল পরিষ্কার করতে কিডনি আর কাজ করতে পারে না। ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন।

ডায়ালাইসিস সাধারণত পর্যায়-৫-এ প্রয়োজন হয়, যেখানে কিডনি কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় এবং শরীরের টক্সিনগুলি পরিষ্কার করার জন্য কৃত্রিম পদ্ধতির প্রয়োজন পড়ে। তবে, এটি নির্ভর করে রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং অন্যান্য উপসর্গের উপরও।

ডায়ালাইসিস করলে কি কিডনি ভালো হয়

ডায়ালাইসিস করলে কি কিডনি ভালো হয় এ সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। ডায়ালাইসিস একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যা কিডনির কাজ হারানো বা গুরুতরভাবে কমে যাওয়া রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিডনির মূল কাজ হলো রক্ত থেকে বর্জ্য, অতিরিক্ত পানি এবং ইলেকট্রোলাইট (যেমন সোডিয়াম, পটাসিয়াম) বের করা, পাশাপাশি শরীরের অ্যাসিড-বেস ব্যালান্স রক্ষা করা। যখন কিডনি কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তখন এই কাজগুলি ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে করা হয়।

তবে, এটি কিডনির কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার বা চিকিৎসা নয়, বরং কিডনির ক্ষতিগ্রস্ত কার্যক্ষমতা সাময়িকভাবে সমর্থন করে। কিডনি যদি আর ঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে ডায়ালাইসিস শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি, বর্জ্য এবং ইলেকট্রোলাইটস দূর করতে সহায়ক হয়। তবে, এটি কিডনির কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে না এবং দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়। ডায়ালাইসিস না হলে কিডনি অকার্যকর হয়ে যাওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে, তাই এটি একটি জরুরি চিকিৎসা পদ্ধতি।

অনেকে মনে করে ডায়ালাইসিস করলে কিডনি ভালো হয়ে যায়। তবে এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ কিডনির কার্য ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে ডায়ালাইসিস করতে হয়। কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ বের হয় না। যার জন্য মানুষ মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হয়। সেই সময় কিডনির বিকল্প হিসেবে ডায়ালাইসিস করতে হয়। ডায়ালাইসিস করার মাধ্যমে রোগীর রক্ত পরিষ্কার থাকে। এবং শরীর থেকে বজ্র পদার্থ বের হয়ে যায়। কিন্তু কিডনির কোন ধরনের উপকার হয় না। কারণ ডায়ালাইসিস একটি প্রক্রিয়া মাত্র। কিডনির চিকিৎসা না।

কিডনি ডায়ালাইসিস কত দিন পর পর করতে হয়

কিডনি ডায়ালাইসিস কত দিন পর পর করতে হয় তা অনেকেই হয়তো জানেন না। কিডনি ডায়ালাইসিসের সময়কাল এবং ফ্রিকোয়েন্সি কিডনি রোগের গুরুতরতা এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত, ডায়ালাইসিস প্রতি সপ্তাহে ২-৩ দিন, এবং প্রতি দিন ৩-৫ ঘণ্টার জন্য করা হয়। তবে, এটি নির্ভর করে কিডনির অবস্থা ও চিকিৎসকের নির্দেশনার উপর। সাধারণভাবে ডায়ালাইসিসের প্রকার এবং সময়কাল হলোঃ

১. হেমোডায়ালাইসিসঃ এই ধরনের ডায়ালাইসিসে রোগীকে একটি মেশিনের সাথে সংযুক্ত করা হয়, যা রক্তকে পরিশোধিত করে। হেমোডায়ালাইসিস সাধারণত প্রতি সপ্তাহে ৩ দিন করা হয় এবং প্রতিটি সেশন ৩-৫ ঘণ্টা সময় নেয়।

  • ফ্রিকোয়েন্সি: প্রতি সপ্তাহে ৩ দিন (সোম, বুধ, শুক্র অথবা মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি)
  • সময়কাল: ৩-৫ ঘণ্টা প্রতিদিন
২. পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসঃ এই ধরনের ডায়ালাইসিসে রোগীর পেটের মধ্যে এক ধরনের তরল প্রবাহিত করা হয়, যা কিডনির কাজের মতো শরীর থেকে বর্জ্য এবং অতিরিক্ত তরল বের করে নেয়। পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস সাধারণত দৈনিক ৩-৫ বার করা হয়, তবে এটি রোগীর ব্যক্তিগত অবস্থা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।

  • ফ্রিকোয়েন্সি: প্রতিদিন ১-৩ বার (সাধারণত রাতে বা দিনে)
  • সময়কাল: প্রতিবার ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা (এটি প্রক্রিয়া এবং রোগীর অবস্থা অনুসারে ভিন্ন হতে পারে)
অন্যান্য ফ্যাক্টরঃ

  • রোগীর শারীরিক অবস্থাঃ যদি রোগী খুব দুর্বল বা অন্য কোনো জটিলতায় আক্রান্ত হন, তবে ডায়ালাইসিসের ফ্রিকোয়েন্সি বা সময়কাল পরিবর্তিত হতে পারে।
  • কিডনির কার্যক্ষমতাঃ কিডনির অবস্থা অনুযায়ী, কিছু রোগী কম ফ্রিকোয়েন্সি বা আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হতে পারে।
  • ডায়ালাইসিসের প্রতিক্রিয়াঃ কিছু রোগী ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে খুব ভালো ফলাফল পান, আবার কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এটি কম কার্যকর হতে পারে, যার ফলে তাদের ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীয়তা বা সময়কাল পরিবর্তিত হয়।
তবে, কিডনি ডায়ালাইসিসের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং ফ্রিকোয়েন্সি রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং চিকিৎসকের পরামর্শের উপর নির্ভর করে। ডায়ালাইসিস করার সময় এবং অন্যান্য উপসর্গ সম্পর্কিত যে কোনও প্রশ্ন বা শঙ্কা থাকলে, চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে 

ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে সঠিকভাবে হয়তো অনেকেই জানেন না। বাংলাদেশে কিডনি ডায়ালাইসিসের খরচ বিভিন্ন ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে, যেমন হাসপাতালের ধরণ (সরকারি বা বেসরকারি), ডায়ালাইসিসের ধরন (হেমোডায়ালাইসিস বা পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস), এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা। সরকারিতে ৫ শতাংশ ও বেসরকারিতে হাসপাতাল ভেদে প্রতি সেশনে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা বেড়েছে। নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো।

১. হেমোডায়ালাইসিস (Hemodialysis)

  • প্রতি সেশন খরচঃ সরকারি হাসপাতালে প্রতি সেশনের খরচ সাধারণত ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। বেসরকারি হাসপাতালে এই খরচ ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
  • মাসিক খরচঃ সপ্তাহে ৩ সেশন করে ডায়ালাইসিস করলে, মাসে মোট ১২ সেশন হয়। সরকারি হাসপাতালে মাসিক খরচ হবে ৬,০০০ থেকে ৮,৪০০ টাকা, এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৪৮,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা।
২. পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস (Peritoneal Dialysis)

  • পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের খরচ কিছুটা কম হতে পারে, তবে এটি রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং চিকিৎসার ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
মোট খরচের বিবরণঃ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, একজন কিডনি রোগীকে প্রতি মাসে ডায়ালাইসিসের জন্য গড়ে ৪৬,৪২৬ টাকা ব্যয় করতে হয়।

উল্লেখ্যঃ এই খরচের মধ্যে ডায়ালাইসিস ফি, ওষুধ, পরিবহন, এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ অন্তর্ভুক্ত। কিছু ক্ষেত্রে, সরকারি হাসপাতালে ভর্তুকি বা সহায়তা পাওয়া যেতে পারে, যা খরচ কমাতে সহায়ক হতে পারে।

সারসংক্ষেপে

  • সরকারি হাসপাতালেঃ প্রতি সেশন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা; মাসে ৬,০০০ থেকে ৮,৪০০ টাকা।
  • বেসরকারি হাসপাতালেঃ প্রতি সেশন ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা; মাসে ৪৮,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা।
  • গড় মাসিক খরচঃ ৪৬,৪২৬ টাকা।
সতর্কতাঃ খরচের পরিমাণ হাসপাতাল, চিকিৎসক, এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

কিডনি ফেইলিয়র হলে কি হয়

কিডনি ফেইলিয়র হলে শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ব্যাহত হতে শুরু করে, যা জীবন-ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। কিডনি আমাদের শরীরের ছাঁকনি হিসাবে কাজ করে। কিডনির প্রধান কাজ হলো শরীর থেকে বর্জ্য এবং অতিরিক্ত তরল বের করা, পাশাপাশি শরীরের ইলেকট্রোলাইট (যেমন: সোডিয়াম, পটাসিয়াম) এবং অ্যাসিড-বেজের ভারসাম্য বজায় রাখা। কিডনি ফেইলিয়র হলে এর ফলে যে সমস্যা হয় তা হলোঃ

১. বর্জ্য এবং অতিরিক্ত তরল জমা হওয়াঃ কিডনি কাজ না করলে শরীরের বর্জ্য (যেমন ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন) এবং অতিরিক্ত তরল বের হতে পারে না। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে জল জমে যায় (যেমন: পা, পেট, শ্বাসকষ্ট) এবং বর্জ্য পদার্থের উচ্চতর স্তরের কারণে "ক্রিয়েটিনিন" এবং "ইউরিয়া" বেড়ে যেতে পারে, যা কিডনি রোগের আরও জটিলতা সৃষ্টি করে।

২. ইলেকট্রোলাইট ও অ্যাসিড-বেজের ভারসাম্যহীনতাঃ কিডনি ফেইলিয়রের ফলে সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রোলাইটের স্তর অপর্যাপ্ত হয়ে যেতে পারে, যা শরীরের হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য অঙ্গের কার্যক্রমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। অতিরিক্ত পটাসিয়াম (Hyperkalemia) হৃদযন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এবং এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।

৩. রক্তচাপ বেড়ে যাওয়াঃ কিডনি ফেইলিয়র রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে, কারণ কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এর ফলে হাইপারটেনশন (উচ্চ রক্তচাপ) হতে পারে, যা হৃদযন্ত্রের সমস্যা, স্ট্রোক এবং অন্যান্য গুরুতর জটিলতার কারণ হতে পারে।

৪. অনেক সময় ডায়ালাইসিস বা ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রয়োজনঃ কিডনি ফেইলিয়রের ক্ষেত্রে, রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সাধারণত ডায়ালাইসিসের সাহায্য নেওয়া হয়। ডায়ালাইসিস শরীর থেকে বর্জ্য এবং অতিরিক্ত তরল পরিষ্কার করার জন্য কৃত্রিমভাবে কিডনির ভূমিকা পালন করে। কিছু রোগী কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টও করতে পারে, যেখানে একটি নতুন কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।

৫. অন্য অঙ্গের ক্ষতিঃ কিডনি ফেইলিয়র শুধুমাত্র কিডনিরই ক্ষতি করে না, এটি অন্যান্য অঙ্গ যেমন হৃদযন্ত্র, লিভার, মস্তিষ্ক এবং শ্বাসযন্ত্রকেও প্রভাবিত করতে পারে। কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে, শরীরের অন্যান্য অঙ্গও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

৬. শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াঃ কিডনি ফেইলিয়র শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়, ফলে রোগ প্রতিরোধে অক্ষম হয়ে পড়তে পারে এবং সংক্রমণ বা অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

৭. মৃত্যুর ঝুঁকিঃ অতীব গুরুতর কিডনি ফেইলিয়র, যদি তা যথাযথ চিকিৎসা না করা হয়, তবে মৃত্যু হতে পারে। এই জন্য কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

৮. চিকিৎসাঃ কিডনি ফেইলিয়র হলে, নিয়মিত চিকিৎসা এবং পর্যবেক্ষণের জন্য হাসপাতাল বা ডায়ালাইসিস সেন্টারে যেতে হতে পারে। এর মধ্যে রোগীকে ডায়ালাইসিস বা ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রয়োজন হতে পারে, এবং চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।

ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা

ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকায় বিশেষ নজর দেওয়া জরুরী। ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য একটি সঠিক খাবার তালিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং ডায়ালাইসিস চিকিত্সার কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। এই তালিকা শুধুমাত্র সাধারণ নির্দেশিকা এবং প্রতিটি রোগীর জন্য আলাদা হতে পারে। নিচে ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

ক্যালরিঃ কিডনি রোগীদের অন্যান্য রোগীদের তুলনায় ক্যালরি বাড়ানো হয়। প্রতি কেজি ওজনের জন্য ৩০ থেকে ৩৫ গ্রাম ক্যালরি পর্যন্ত খাবার দিতে হয়।

প্রোটিনঃ ডায়ালাইসিস রোগীদের প্রোটিনের চাহিদা সাধারণ মানুষের তুলনায় বেশি, কারণ ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়ায় প্রোটিনের কিছু অংশ হারিয়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জন্য ০.৫ থেকে ০.৮ গ্রাম প্রোটিন দেওয়া যেতে পারে। সাধারণত বাদাম, ডাল, কাঁঠালের বিচি, সিম পরিহার করতে হবে। ডিমের সাদা অংশ, মাছ, মুরগির মাংস তবে খুব বেশি না। দুধ ও দুধজাত খাবার (যেমন, পনির, দই)
এসব থেকে পরিমাণ মতো প্রোটিন নিতে পারেন।

কার্বোহাইড্রেটঃ কিডনি রোগীর ক্যালরি চাহিদা বেশিরভাগ পূরণ করে কার্বোহাইড্রেট। খাবারের অন্যান্য পুষ্টি উপাদান নিয়ন্ত্রণ থাকতেও কার্বোহাইড্রেট এর বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের দিকে লক্ষ্য রেখে খেতে হয়। ময়দা, রুটি, চিড়া, ফুজি, চালের গুঁড়ো, সাগু, আলু, মিষ্টি আলু ইত্যাদি কিডনি রোগীদের উত্তম কার্বোহাইড্রেট।

সোডিয়াম,লবণঃ কিডনি রোগীদের অবশ্যই লবণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া যাবে না। যেটুকু ছাড়া খাবার খাওয়া যাবে না ঠিক সেটুকু খেতে হবে, কারণ এটি তরল ধরে রাখে এবং রক্তচাপ বাড়ায়। প্রক্রিয়াজাত খাবার, টিনজাত খাবার, এবং লবণযুক্ত স্ন্যাকস এড়িয়ে চলতে হবে। এবং কাঁচা লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে।

পটাসিয়ামঃ পটাসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উচ্চ পটাসিয়াম হৃদস্পন্দনকে প্রভাবিত করতে পারে। কলা, কমলা, আলু, এবং টমেটোর মতো উচ্চ পটাসিয়ামযুক্ত খাবার সীমিত করতে হবে। পটাসিয়াম কমাতে সবজি কেটে জলে সিদ্ধ করে নেওয়া যেতে পারে।

চর্বিঃ বেশির ভাগ কিডনির রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ থাকে। এছাড়াও কিডনি রোগীদের কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং ওজন যেন ঠিক থাকে সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। এসব কারণে চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং কম তেলে রান্না করে খেতে হবে। স্লিম তেল (যেমন, অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল), মাখন, ঘি,বাদাম ও বীজ ইত্যাদি খেতে পারবেন।

শাকসবজিঃ রক্তে ইউরোনিয়াম এসিডের মাত্রা, পটাশিয়াম, ফরফরাস ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে সবজি হিসাব করা হয়। অতিরিক্ত পটাশিয়াম ও ইউরিন সমৃদ্ধ শাকসবজি পরিহার করতে হবে। পিচ্ছিল এবং গাড়ো লাল রঙের সব সবজি চলতে হবে। কিডনি রোগীদের জন্য গাজর, শসা, বাঁধাকপি, পালং শাক, টমেটো, মিষ্টি শাক উপকারী। অতিরিক্ত সোডিয়াম বা পটাশিয়ামযুক্ত শাক (যেমন, মিষ্টি আলু, টমেটো) থেকে বিরত থাকুন।

ফলঃ কিডনি রোগীদের ফল খাওয়ার সময় ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ ফলে এসিড, ইউরিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ইত্যাদি থাকে যেগুলো কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। কিডনি রোগীরা খেতে পারবে আপেল, পেয়ারা, আঙুর, পেয়ারা, কমলালেবু, আমলকি (যতটুকু সম্ভব) তবে কলা, তরমুজ, পেঁপে খুব কম পরিমাণে খাবেন।

তরল গ্রহণঃ ডায়ালাইসিস রোগীদের তরল গ্রহণ সীমিত করতে হবে, কারণ অতিরিক্ত তরল শরীরে জমে ফোলাভাব এবং উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করতে পারে। ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী পানির পরিমাণ সীমিত রাখা উচিত। তবে চা ও কফি এসব পানীয় থেকে দূরে থাকতে হবে।

ভিটামিন এবং মিনারেল সাপ্লিমেন্টঃ ডায়ালাইসিস রোগীদের ভিটামিন ডি, আয়রন, এবং বি ভিটামিনের মতো নির্দিষ্ট ভিটামিন এবং মিনারেল সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে। তবে কোনো সাপ্লিমেন্ট শুরু করার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

ভাজা খাবার কি কিডনির জন্য ভালো

ভাজা খাবার কি কিডনির জন্য ভালো তা জানতে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন। ভাজা খাবার সাধারণত কিডনির জন্য ভালো নয়, কারণ এতে তেল বা চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে, যা কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত চর্বি এবং তেলের কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, এবং কিডনি সমস্যা হতে পারে। এছাড়া, ভাজা খাবারে সোডিয়ামের পরিমাণও বেশি হতে পারে, যা কিডনির কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

তবে, মাঝেমধ্যে সুষম এবং স্বাস্থ্যকর উপায়ে প্রস্তুত ভাজা খাবার খাওয়া যেতে পারে, কিন্তু এটি সীমিত পরিমাণে হওয়া উচিত এবং পুষ্টিকর উপাদান বজায় রাখতে হবে। কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, সবজি, ফলমূল, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার এবং কম চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা ভালো। ভাজা খাবারের মধ্যে অতিরিক্ত তেল, চর্বি, সোডিয়াম এবং শর্করা থাকে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নিচে আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলোঃ

১. ভাজা খাবারে তেল এবং চর্বির পরিমাণ বেশিঃ ভাজা খাবারে সাধারণত তেল বা মাখন বেশি ব্যবহার করা হয়। তেল বা চর্বি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে তা কিডনির কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অধিক চর্বি কিডনিতে ফ্যাটের স্তর বাড়াতে পারে, যা কিডনির সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। উচ্চ চর্বি জাতীয় খাবার কিডনির ডায়ালিসিস (মেশিনের মাধ্যমে কিডনির কার্যক্রম চালানো) প্রক্রিয়ায় অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।

২. ভাজা খাবারে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশিঃ ভাজা খাবারে সোডিয়ামের পরিমাণও বেশি হতে পারে, যা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়ে উঠতে পারে। রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে কিডনিতে চাপ পড়ে এবং কিডনি তার কার্যক্ষমতা হারাতে পারে। বেশি সোডিয়াম কিডনি স্টোন বা পাথরের সৃষ্টি করতেও সাহায্য করতে পারে।

৩. অতিরিক্ত শর্করাঃ ভাজা খাবারে অতিরিক্ত শর্করা (যেমন চিনির পরিমাণ বেশি) থাকে, যা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যা কিডনির জন্য হুমকি হতে পারে। ডায়াবেটিস কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

৪. ভাজা খাবার কিডনি স্টোনের সৃষ্টি করতে পারেঃ কিছু ভাজা খাবারে বিশেষ কিছু উপাদান থাকে যা কিডনি স্টোন বা পাথরের সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অতিরিক্ত শর্করা বা সোডিয়াম ক্যালসিয়ামের সাথে প্রতিক্রিয়া করে কিডনি স্টোন গঠন করতে পারে।

৫. ভাজা খাবার পরিপাকতন্ত্রের উপরও চাপ সৃষ্টি করেঃ ভাজা খাবারে অতিরিক্ত তেল থাকে, যা পাচনতন্ত্রের উপরও চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপ কিডনির কাজের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

কিডনি রোগ হলে কি কি খাওয়া যাবে না

কিডনি রোগ হলে খাবারের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ এই সময় ভুলভাল খাবার খেলে অনেক ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে হয়। সঠিকভাবে সঠিক খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি কিডনি রোগীদের। কিডনি রোগ হলে, কিছু খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলা প্রয়োজন, কারণ তারা কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং রোগের পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। কিডনি রোগের ক্ষেত্রে যা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, তা হলোঃ

১. ভাল তেল বা চর্বিযুক্ত খাবারঃ অতিরিক্ত তেল বা মাখন দিয়ে তৈরি ভাজা খাবার কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। লাল মাংস, হ্যাম, সসেজের মতো খাবারে অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।

২. সোডিয়াম (লবণ) সমৃদ্ধ খাবারঃ প্যাকেটজাত খাবার খাবারে সোডিয়াম (লবণ) পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। উদাহরণস্বরূপঃ স্যান্ডউইচ, পিৎজা, চিপস, বিস্কুট, কনসারভড স্যুপ, ডিনার মিক্স, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার। অধিক লবণ এবং চর্বি থাকার কারণে ফাস্ট ফুড (যেমন: বার্গার, ফ্রাই) খাওয়া সীমিত করতে হবে।

৩. প্রোটিন অতিরিক্ত গ্রহণঃ লাল মাংসে অতিরিক্ত প্রোটিন এবং ফসফরাস থাকে, যা কিডনির কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ডিমের সাদা অংশ যদিও এটি প্রোটিনের একটি ভালো উৎস, কিডনির সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ কিডনির উপর চাপ ফেলতে পারে। দুগ্ধজাত পণ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে যদি তা বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়।

৪. পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবারঃ কিডনি রোগের কারণে পটাশিয়াম লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত পটাশিয়াম রক্তে জমে গিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার থেকে বিরত থাকুন, যেমনঃ কলা, কমলা, পেঁপে, টমেটো, আলু, বাদাম, আখরোট, সিডস ইত্যাদি।

৫. ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবারঃ কিডনি রোগে ফসফরাস নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কিডনি যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তবে ফসফরাস শরীর থেকে বের হতে পারে না, যা হাড়ের সমস্যা এবং অন্যান্য জটিলতা তৈরি করতে পারে। ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবারঃ সোডা, কোল্ড ড্রিঙ্কস, প্রসেসড মাংস (হ্যাম, সসেজ, বেকন), দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য।

৬. চিনি এবং শর্করাঃ কিডনি রোগ থাকলে অতিরিক্ত চিনি ও শর্করা খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগের অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে।

৭. এ্যালকোহল এবং ক্যাফিনঃ কিডনি রোগের প্রাথমিক অবস্থায় বা যাদের কিডনির কার্যক্রম অনেকটা দুর্বল, তাদের জন্য অ্যালকোহল ক্ষতিকর হতে পারে। ক্যাফিনও কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, তাই অতিরিক্ত কফি, চা, বা এনার্জি ড্রিংকস থেকে বিরত থাকা উচিত।

শেষ কথা ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা

ডায়ালাইসিসের সময় রোগীদের জন্য বিশেষ খাদ্য পরিকল্পনা প্রয়োজন হতে পারে, যা একজন ডায়েটিশিয়ানের সহায়তায় নির্ধারণ করা হয়। ডায়ালাইসিস কিডনি বিকল হলে শরীরের বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল অপসারণে সহায়তা করে। হেমোডায়ালাইসিস ও পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস প্রধান দুটি প্রকার, যা রোগীর অবস্থা ও প্রয়োজন অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়। ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীয়তা, ঝুঁকি ও খাদ্য পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে একজন নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কিডনি যখন তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম সম্পাদন করতে অক্ষম হয়, তখন শরীরে বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল জমা হতে থাকে, যা জীবন-হুমকি হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে শরীরের বর্জ্য ও তরল নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়, যা রোগীর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।বর্তমান সময়ে চিকিৎসা পদ্ধতির অনেক উন্নতি ঘটেছে। যার কারণে কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে ডায়ালাইসিস এর মাধ্যমে কিডনির কাজ করা যাচ্ছে। এতে করে কিডনির সমস্যা হলে খুব সহজে কিডনির চিকিৎসা করা যাচ্ছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url