এই কারণে এই দিনটি অনেকে বিশেষভাবে পালন করে থাকে। এই দিনে সরকারি ছুটি থাকে। তবে
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। ১২ রবিউল আউয়ালে ঈদে মিলাদ
উদযাপন করা শরিয়তবিরোধী কাজ। এ ধরনের কাজ হতে যেমন নিজেদের বাঁচাতে হবে তেমনি
অন্যকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ এই সম্পর্কে অনেকেই জানতে চাই। ইসলাম ধর্মের দলিল হচ্ছে কুরআন মাজীদ এবং মহানবী (সাঃ) এর বাণী। কোরআনে কোন জায়গায় জন্মদিন পালন করার কথা উল্লেখ নেই। এছাড়াও ঈদে মিলাদুন্নবী ১২ ই রবিউল। এই দিনে মহানবী (সাঃ) ইন্তেকাল করেন। এই কারণে এই দিনে আনন্দ করার কোন যৌক্তিকতা আসে না। এছাড়াও মহানবী (সাঃ) এর জন্ম ১২ রবিউল এই সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে।
অনেক ইতিহাস থেকে পাওয়া যায় রবিউল আউয়াল মাসের ৯, ১০, ১১, ১২ যেকোনো একদিনে মহানবীর জন্ম হয়। এছাড়াও ইসলাম ধর্মে কোন ব্যক্তির জন্ম দিন উদযাপনের কথা উল্লেখ নেই। এর থেকে বোঝা যায় ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা জায়েজ না। এটা সম্পূর্ণভাবেই হারাম। বিভিন্ন ইসলামিক স্কলার এই সম্পর্কে অনেক মতবাদ দিয়েছেন। ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা যাবে না।
ঈদে মিলাদুন্নবী (নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্মবার্ষিকী) পালন করা নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কিছু আলেমের মতে, এটি একটি বিদআত (ধর্মে নতুন প্রবর্তন), কারণ রাসূলুল্লাহ (সা.) বা তাঁর সাহাবীগণ এই দিনটি উদযাপন করেননি। তাদের মতে, ইসলামে নির্দিষ্ট দুটি ঈদ (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) রয়েছে, এবং এর বাইরে নতুন কোনো উৎসব প্রবর্তন করা উচিত নয়।
অন্যদিকে, কিছু আলেম মনে করেন যে, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা জায়েজ। তাদের যুক্তি হলো, আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, হে নবী, আপনি বলে দিন, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতের কারণে তারা যেন আনন্দ করে। এটি তাদের সঞ্চিত সম্পদের চেয়ে উত্তম।
তাদের মতে, রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর সর্বোচ্চ রহমত, তাই তাঁর জন্মদিনে আনন্দ প্রকাশ করা উচিত। তবে, এই আনন্দ প্রকাশের পদ্ধতি অবশ্যই ইসলামের সীমার মধ্যে থাকতে হবে এবং কোনো ধরনের অতিরঞ্জন বা বিদআত থেকে বিরত থাকতে হবে।
সুতরাং, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা জায়েজ কিনা, তা নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এক্ষেত্রে, প্রতিটি মুসলমানের উচিত কুরআন ও হাদিসের আলোকে এবং বিশ্বস্ত আলেমদের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া। আশা করছি ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
ঈদে মিলাদের দিন মুসলমানরা কি করে
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) মুসলমানদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, যা ইসলামী
ক্যালেন্ডারের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখে পালিত হয়। এই দিনে
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত স্মরণ করা হয়।ঈদ শব্দের অর্থ
আনন্দ, খুশি। মিলাদ শব্দের অর্থ জন্মদিন, জন্মকাল, জম্মোৎসব, জন্মস্থান
ইত্যাদি। ঈদে মিলাদুন্নবী বলতে বোঝানো হয়, মহানবী (সাঃ) এর জন্মদিন।
এই দিনে মুসলমানেরা রোজা রাখে ইবাদত করে। এবং হাদিয়া দিয়ে থাকে। এছাড়াও
অনেকে উৎসবের মতো পালন করে থাকে। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে মুসলমানরা বিভিন্ন
ধর্মীয় কার্যক্রম পালন করে থাকেন। তারা মসজিদে সমবেত হয়ে খুতবা শোনেন এবং
প্রার্থনা করেন। অনেকে বাড়িতে বা মসজিদে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং
নবীজীর জীবন ও শিক্ষার উপর আলোচনা করেন।
এছাড়া, নবীজীর প্রচারিত ন্যায়পরায়ণতার পথে চলার অঙ্গীকার করেন।
মিলাদুন্নবী প্রায় সব ইসলামি দেশেই পালিত হয় এবং অন্যান্য দেশে যেখানে
উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যা আছে, যেমন ইথিওপিয়া, ভারত, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক,
নাইজেরিয়া, ইরাক, ইরান, মরক্কো, জর্ডান, লিবিয়া, রাশিয়া ও কানাডায় পালিত
হয়।
তবে, যেহেতু এই দিনটি নবীজীর জন্ম ও ওফাতের সাথে সম্পর্কিত, তাই এটি মুসলিম
সমাজের জন্য একই সাথে আনন্দের এবং কষ্টদায়ক। এই কারণে, অনেকেই এই দিনে আনন্দ
উদযাপন করেন, আবার অনেকেই শোক প্রকাশ করেন। সার্বিকভাবে, ঈদে মিলাদুন্নবী
(সা.) উপলক্ষে মুসলমানরা প্রার্থনা, সমাবেশ এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুশীলনের
মাধ্যমে দিনটি পালন করেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে আলোচনা
হিজরী বর্ষের তৃতীয় মাস হচ্ছে রবিউল আউয়াল মাস। এ মাসের ১২ তারিখে মহানবী
(সাঃ) জন্মগ্রহণ করেন। মহানবী (সাঃ) এর জন্মদিন বলে মুসলিম ধর্মের ব্যক্তিদের
কাছে এটা একটি আনন্দের দিন। এ কারণে এই দিনকে ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন
করে থাকে। বিশেষ করে এই দিনটি পালন করে থাকে সুন্নি এবং শিয়া মুসলমান
গোষ্ঠীরা। তবে হাদিস অনুযায়ী ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা যাবে না।
কারণ কুরআন মাজীদের কোন জায়গায় কোন নবী রাসূলের জন্মদিন পালন করার
কথা উল্লেখ নাই। এই থেকে বোঝা যায় ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা যাবে
না। ঈদে মিলাদুন্নবী (عید میلاد النبی) ইসলামের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ
(সা.)-এর জন্ম ও ওফাতের দিন, যা আরবি বর্ষের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে
সংঘটিত হয়।
ঈদে মিলাদুন্নবীর তাৎপর্য:
-
মহানবী (সা.)-এর আগমন: হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম
মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত ও দয়া। তিনি মানবজাতির জন্য
হেদায়াত ও দিশারী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন।
-
ইমানের বৃদ্ধি: এই দিনে মহানবী (সা.)-এর জীবনী, শিক্ষা
ও আদর্শের আলোচনা করে মুসলিমরা নিজেদের ইমান ও আধ্যাত্মিকতা বৃদ্ধি করতে
পারেন।
-
দরুদ ও সালাম পাঠ: মিলাদুন্নবী উপলক্ষে দরুদ ও সালাম
পাঠের মাধ্যমে মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা
হয়।
ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের পদ্ধতি:
-
মিলাদ মাহফিল: মসজিদ, বাড়ি বা অন্যান্য স্থানে মিলাদ
মাহফিলের আয়োজন করে কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ পাঠ ও মহানবী (সা.)-এর জীবনী
আলোচনা করা হয়।
-
রোজা রাখা: মহানবী (সা.) প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন। এই
দিনে রোজা রাখা সুন্নত হিসেবে বিবেচিত হয়।
-
দোয়া ও মোনাজাত: মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আল্লাহর কাছে দোয়া
ও মোনাজাত করে মুসলিমরা নিজেদের ও উম্মাহর কল্যাণ কামনা করেন।
মিলাদুন্নবী সম্পর্কে হাদিসঃ মিলাদুন্নবী সম্পর্কে
সরাসরি কোনো হাদিস নেই, তবে মহানবী (সা.) প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন এবং এই
দিনটি তাঁর জন্ম ও নবুয়ত প্রাপ্তির দিন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া,
সাহাবিদের সময়েও মিলাদুন্নবী পালনের কোনো প্রমাণ নেই। তবে পরবর্তীতে মুসলিম
সমাজে এই দিবসটি পালন করা শুরু হয়।
মিলাদুন্নবী পালনের বিষয়ে মতামতঃ মিলাদুন্নবী পালনের
বিষয়ে ইসলামী স্কলারদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কিছু স্কলার এটিকে বেদআত
হিসেবে বিবেচনা করেন, কারণ এটি সাহাবিদের সময় পালিত হয়নি। অপরদিকে, কিছু
স্কলার এটিকে মুস্তাহাব বা নফল ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করেন, কারণ এতে মহানবী
(সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়।
ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মদিন উপলক্ষে। তবে
মহানবী (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর প্রথম যুগের সাহাবী, তাবেরি মহানবী (সাঃ) এর
জন্মদিন উদযাপন করেছে এমন কোন প্রমাণ নেই। মুহাদ্দিস, ফিকহ ও ঐতিহাসিকবিদ এই মত
দিয়েছেন। আলেমদের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। তবে সকল আলেমগণ
একমত যে কোন নবী রাসূলের জন্মদিন পালনের কথা উল্লেখ নেই।
এছাড়াও ১২ রবিউল মহানবী (সাঃ) ইন্তেকাল করেন। এ কারণে এই দিনটি সকল মুসলমানের
জন্য শোকের। ঈদে মিলাদুন্নবী (আরবি: مَوْلِدُ النَبِيِّ) ইসলামের শেষ নবী
মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিন উদযাপনের একটি ধর্মীয় উৎসব। এটি প্রতি বছর ইসলামি
ক্যালেন্ডারের তৃতীয় মাস, রবিউল আউয়াল-এর ১২ তারিখে পালন করা হয়। মুসলিমরা
এই দিনটিতে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি তাদের ভালবাসা, শ্রদ্ধা এবং অনুসরণ
করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে থাকে।
ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস
মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম: ১ম ঈদে মিলাদুন্নবী, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিন
হিসেবে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কায় ঘটে। তাঁর পিতা আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর, তিনি
তার মা আমিনার পেটে থাকা অবস্থায় পিতৃহীন হন। তাঁর জন্মের পরপরই মক্কায় বড়
ধরনের ঘটনা ঘটে, যা মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। মুহাম্মদ (সা.)
ছিলেন ইসলাম ধর্মের শেষ নবী, যার মাধ্যমে আল্লাহ মানবজাতিকে সঠিক পথ দেখানোর
জন্য কুরআন ও সুন্নাহ দিয়েছেন।
প্রথমদিকে উদযাপনঃ ইসলামি ইতিহাসের প্রথম কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত
মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিন কোনো বিশেষভাবে উদযাপন করা হতো না। এটি ছিল একটি
সাধারণ দিন, যেখানে মুসলিমরা ব্যক্তিগতভাবে তাঁর জীবন ও শিক্ষাকে স্মরণ
করতেন।
সুফি প্রভাব এবং উদযাপনঃ মুসলিম সমাজে মিলাদুন্নবী উদযাপনের প্রচলন
শুরু হয় মূলত সুফি সম্প্রদায়ের মাধ্যমে। মধ্যযুগে, বিশেষত মিসর, সিরিয়া
এবং ইরানে সুফিরা এই দিনটি বড় ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে পালন শুরু
করেন। তাঁরা এই দিনটি উপলক্ষে ধর্মীয় মেলায়, কুরআন তিলাওয়াত, নাশিদ গাওয়া
এবং বিশেষভাবে দরুদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে নবীজির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন।
ভিন্ন মতবাদঃ ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন নিয়ে ইসলামী পণ্ডিতদের মধ্যে
বিতর্ক রয়েছে। কিছু পণ্ডিত এটি উদযাপনকে "বিদআত" বা নতুন উদ্ভাবিত কার্য
হিসেবে বিবেচনা করেন, কারণ ইসলামে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শুধুমাত্র কুরআন ও
সুন্নাহতে নির্দেশিত বিষয়গুলো অনুসরণ করা উচিত বলে মনে করা হয়। তবে
অন্যদিকে কিছু পণ্ডিত ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনকে সমর্থন করে থাকেন, বিশেষ করে
যদি তা নবীজির প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার প্রকাশ হিসেবে হয়।
বিশ্বব্যাপী উদযাপনঃ ঈদে মিলাদুন্নবী এখন বিশ্বব্যাপী মুসলিম
সম্প্রদায়ের মধ্যে পালিত হয়। বিভিন্ন দেশ এবং অঞ্চলে এর উদযাপন একে অপরের
থেকে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত এই দিনে বিশেষ প্রার্থনা, ধর্মীয়
আলোচনা, দান-খয়রাত এবং মুসলিমদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়। মুসলিমরা
এই দিনটিকে মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন ও শিক্ষার পুনঃমূল্যায়ন এবং তাঁর
প্রদর্শিত পথে চলার প্রতিশ্রুতি হিসেবে উদযাপন করে।
উল্লেখযোগ্য পণ্ডিতদের রচনাঃ মিলাদুন্নবী সম্পর্কিত বিভিন্ন পণ্ডিত
তাদের গ্রন্থে এই উদযাপনের পদ্ধতি ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ, ইমাম আবু শামাহ 'আল-বায়িছ আলা ইনকারিল বিদায়ে ওয়াল
হাওয়াদিসি' গ্রন্থে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
উৎসবের সূচনাঃ ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিন পালন
করা হতো ব্যক্তিগতভাবে। পরবর্তীতে, বিশেষ করে সুফি প্রভাবের মাধ্যমে, এই
দিনটি গণহারে উদযাপনের রীতি চালু হয়। মিশরের কায়রোতে ১৯০৪ সালে বোলাক
এভিনিউতে মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়, যা এই উদযাপনের একটি
উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত।
উদযাপনের পদ্ধতিঃ ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় সভা,
কুরআন তিলাওয়াত, নাশিদ গাওয়া, মশাল মিছিল, দাতব্য কার্যক্রম এবং খাবার
বিতরণ করা হয়। বাংলাদেশে এই দিনটি 'ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী' নামে পরিচিত এবং
মুসলিমরা বিশেষভাবে এই দিনটি উদযাপন করে।
ঈদে মিলাদুন্নবীর তাৎপর্য
ঈদে মিলাদুন্নবীর তাৎপর্য অনেক। ঈদে মিলাদুন্নবী মুসলিমদের জন্য শুধুমাত্র
আনন্দের উপলক্ষ নয়, বরং এটি নবীর জীবন ও শিক্ষা সম্পর্কে পুনরায় সচেতন হওয়ার
দিন। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অসীম দয়ালুতা, শিক্ষণীয় জীবন, এবং ইসলামের সঠিক পথে
চলার নির্দেশনা এই দিনটি স্মরণ করতে সহায়তা করে। এটি ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ
দিন, যা পবিত্র নবী মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম এবং ইহজগত থেকে তাঁর বিদায়ের দিন
হিসেবে উদযাপিত হয়।
এছাড়া, ঈদে মিলাদুন্নবী দিনটি মুসলিম উম্মাহর একতা, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং শান্তির
বার্তা প্রচারের দিন হিসেবে পালন করা হয়। মুসলিমরা এই দিনটি বিভিন্ন ধর্মীয়
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনকথা পাঠ করে এবং তাঁর প্রতি
শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। ঈদে মিলাদুন্নবী মুসলিম বিশ্বে বিভিন্ন দেশে বিশেষ ধর্মীয়
অনুষ্ঠানে পালিত হয়, যেখানে মসজিদে মিলাদ মাহফিল, কোরআন তিলাওয়াত, নাত পাঠ,
দোয়া-এ-বিধাত এবং তবারক বিতরণ করা হয়।
ঈদে মিলাদুন্নবী ১২ ই রবিউল আউয়াল। এই দিনে মহানবী (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেন এবং
ইন্তেকাল করেন। এই কারণে মুসলমানদের এই দিনের তাৎপর্য অনেক। তবে এই দিন উদযাপন
করা যাবে না। কারণ ইসলাম ধর্মের কোন জায়গায় জন্মদিন এবং মৃত্যুবার্ষিকী
উদযাপনের কথা উল্লেখ নেই। এ কারণে এই দিনে বিশেষ ভাবে কোন কিছু করা যাবে না।
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করে থাকে শিয়া ও সুন্নি মুসলিমরা।
কেন ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয়
ঈদে মিলাদুন্নবী, যা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস হিসেবে
পরিচিত, ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে মুসলিমরা মহানবীর
আগমন ও তাঁর জীবন ও কর্মের স্মরণে বিভিন্ন কার্যক্রম পালন করে থাকেন। মহানবী
(সা.) নিজেই প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন এবং এই দিনটি তাঁর জন্ম ও নবুয়ত
প্রাপ্তির দিন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ
করেছি, এই দিনে আমি নবুয়ত প্রাপ্ত হয়েছি এবং এই দিনেই আমার উপর কুরআন নাজিল
হয়েছে।
তবে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয়নি। এটি হিজরি চতুর্থ
শতকের মাঝামাঝি সময়ে খলিফা আল-মু'ইজ লি-দীনিল্লাহর আমলে প্রথম প্রচলিত হয়।
বর্তমানে, মুসলিম সমাজে এই দিনটি পালন করার বিষয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কিছু
মুসলিমগণ এই দিনে আনন্দ ও উৎসব পালনকে ইসলামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মনে করেন,
তবে ইসলামের প্রাথমিক যুগে এটি পালন করা হয়নি। অন্যদিকে, কিছু মুসলিমগণ এই
দিনটি পালনকে বিদআত (নতুন উদ্ভাবিত কার্য) হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী, যা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস হিসেবে
পরিচিত, ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে মুসলিমরা মহানবীর
আগমন ও তাঁর জীবন ও কর্মের স্মরণে বিভিন্ন কার্যক্রম পালন করে থাকেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করার কারণসমূহঃ
১. হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্ম এবং আগমনঃ ঈদে মিলাদুন্নবী মুসলিমদের
জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন, কারণ এটি মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মদিন। ইসলামে
তিনি আল্লাহর সর্বশেষ রাসূল হিসেবে আযমে হবেন এবং মুসলমানদের জন্য সঠিক
পথপ্রদর্শক। তাঁর আগমন মানব জাতির জন্য এক নতুন আলোর সূচনা হিসেবে দেখা হয়।
ইসলাম প্রচারের জন্য তাঁর জীবন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাঁর মাধ্যমে
মানুষকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
২. ইসলামের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাঃ ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয়
ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা এবং নবীজীর মহিমার প্রতি গভীর সম্মান প্রদর্শনের
উদ্দেশ্যে। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন যে, তাঁর আগমন পৃথিবীকে অন্ধকার থেকে বের
করে আলোর দিকে নিয়ে এসেছে। নবীজী তার জীবনে শান্তি, ন্যায়, এবং সত্য
প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই দিনটি মুসলিমদের মধ্যে সেই আদর্শগুলোকে আবার মনে করিয়ে
দেয়।
৩. নবীজীর জীবন ও শিক্ষা উদযাপনঃ এটি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবন ও
শিক্ষাকে উদযাপনের দিন। নবীজীর জীবনযাপন ছিল সর্বদা মানুষের কল্যাণে নিবেদিত।
তাঁর চরিত্র, ধর্মীয় শিক্ষা, এবং নৈতিকতা মুসলিমদের জন্য অনুসরণের আদর্শ। এই
দিনটি মুসলিমরা তাঁর জীবনের মূল দিকগুলো যেমন, দয়া, সহনশীলতা, সত্যনিষ্ঠা,
এবং সঠিক পথ অনুসরণ করার গুরুত্ব পুনঃপ্রকাশ করে।
৪. অহিংসা ও শান্তির বার্তাঃ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবন ছিল এক
চিরন্তন শান্তির বার্তা। তিনি মানুষকে অহিংসা, সহানুভূতি, এবং শান্তিপূর্ণ
সম্পর্কের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তাঁর শিক্ষা ছিল, মানবজাতির প্রতি ভালোবাসা
এবং দয়া প্রদর্শন করা। এই দিনটি মুসলিমদের মধ্যে শান্তি এবং সংহতির বার্তা
ছড়ানোর একটি উপায় হিসেবে পালন করা হয়।
৫. আধ্যাত্মিক উপকারিতাঃ ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে অনেক মুসলিম দোয়া,
সালাত, এবং ইবাদত করেন, যা তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং আল্লাহর নিকট আরও
কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম। তারা আল্লাহর কাছে নবীজীর মাধ্যমেই তাদের জীবনের
সুখ-শান্তি এবং দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করেন। এই দিনের ইবাদত
মুসলিমদের ঈমান এবং মনোভাবকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
৬. সামাজিক ঐক্য ও সংহতিঃ ঈদে মিলাদুন্নবী মুসলিমদের মধ্যে সামাজিক
ঐক্য এবং সংহতি বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়। এ দিনটি সাধারণত একসঙ্গে মিলিত হয়ে
সালাত, বক্তৃতা, মাহফিল, এবং বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে পালন করা হয়। এতে
মুসলিমদের মধ্যে ভাইচারা এবং সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদার হয়। এটি একটি সামাজিক
সমাবেশে পরিণত হয় যেখানে সবাই একে অপরের খোঁজখবর নেয়, পরস্পরের সাথে
সম্পর্ক শক্তিশালী করে এবং একত্রে আনন্দে মিলিত হয়।
৭. মিলাদ মাহফিল ও দোয়াঃ মিলাদ মাহফিল একটি সাধারণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান
যেখানে মুসলিমরা নবীজীর জীবনের কাহিনী শোনেন, তাঁর শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা
জানিয়ে গান ও নাত পাঠ করেন। এর মাধ্যমে মুসলিমরা নবীজীর মহিমা এবং তার
জীবনদর্শন সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়। অনেক সময়, বিশেষ করে মসজিদগুলোতে
মিলাদ মাহফিল আয়োজন করা হয় এবং সেখানে নবীজীর ওপর দোয়া পাঠ করা হয়, যাতে
মুসলিমরা তাঁর সুন্নাহ অনুসরণ করতে সক্ষম হয়।
৮. শরীরিক ও মানসিক শান্তিঃ এদিনে বিশেষভাবে দোয়া পাঠ, তিলাওয়াত,
এবং সালাত পাঠ করা হয়, যা মুসলিমদের আধ্যাত্মিক শান্তি অর্জনে সহায়ক। এই
দিনটি একটি উপলক্ষ হয়ে ওঠে যেখানে মুসলিমরা নিজেদের জীবনে নবীজীর শিক্ষা এবং
তার আদর্শকে গ্রহণ করে। এই দিনটি তাদের মানসিক শান্তি এবং ভেতরের প্রশান্তি
অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন নিয়ে বিভিন্ন মতামতঃ
ইসলামের প্রাথমিক যুগে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয়নি। এটি হিজরি চতুর্থ
শতকের মাঝামাঝি সময়ে খলিফা আল-মু'ইজ লি-দীনিল্লাহর আমলে প্রথম প্রচলিত হয়।
বর্তমানে, মুসলিম সমাজে এই দিনটি পালন করার বিষয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কিছু
মুসলিমগণ এই দিনে আনন্দ ও উৎসব পালনকে ইসলামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মনে করেন,
তবে ইসলামের প্রাথমিক যুগে এটি পালন করা হয়নি। অন্যদিকে, কিছু মুসলিমগণ এই
দিনটি পালনকে বিদআত (নতুন উদ্ভাবিত কার্য) হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
সারসংক্ষেপে, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিল না,
তবে পরবর্তীতে মুসলিম সমাজে এটি বিভিন্নভাবে পালিত হতে থাকে। এই বিষয়ে
ইসলামের বিভিন্ন মতবাদ ও ঐতিহ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন সম্পর্কে আমাদের সমাজে অনেক মতভেদ রয়েছে। অনেকে ঈদে
মিলাদুন্নবী পালন করা বেদাআত মনে করেন আবার অনেকে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা
নাজায়েজ মনে করেন। ঈদে মিলাদুন্নবী (মাওলুদ) হলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ
(সা.)-এর জন্ম ও নবুয়ত প্রাপ্তির দিন, যা মুসলিম সমাজে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
তবে ইসলামের প্রাথমিক যুগে এই দিবসটি পালন করা হয়নি; এটি পরবর্তীতে মুসলিম
সমাজে প্রচলিত হয়েছে।
ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের দলিলঃ
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রোজা রাখার অভ্যাসঃ রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি
সোমবার রোজা রাখতেন। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হযরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে সোমবার রোজা রাখার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি
বলেন, 'এ দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এ দিনে আমার উপর ওহি নাজিল হয়েছে।
মিলাদুন্নবী পালনের বৈধতাঃ কিছু আলেম ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের পক্ষে দলিল
উপস্থাপন করেছেন। তাদের মতে, আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন: আল্লাহর অনুগ্রহ ও
রহমত প্রাপ্তিতে খুশি পালন কর, যা তোমাদের সমস্ত ধন-দৌলত অপেক্ষা শ্রেয়। (সূরা
ইউনুস: ৫৮)আমি নিশ্চয় আপনাকে পুরো বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।
(সূরা আম্বিয়া: ১০৭)
তাদের মতে, এই আয়াতসমূহ থেকে বোঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আগমন উপলক্ষে
আনন্দ প্রকাশ করা উচিত।
মিলাদুন্নবী পালনের বিধানঃ ইসলামের প্রাথমিক যুগে ঈদে মিলাদুন্নবী
পালনের কোনো প্রমাণ নেই। এটি পরবর্তীতে মুসলিম সমাজে প্রচলিত হয়েছে। তবে
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্মদিনে রোজা রাখা সুন্নত। তাহলে, এই দিনে রোজা রাখা এবং
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ও শিক্ষার উপর আলোচনা করা উত্তম।
ঈদে মিলাদুন্নবীতে করণীয় বিষয়
ঈদে মিলাদুন্নবী (صلى الله عليه وسلم) বা নবীর জন্ম দিবস মুসলিমদের জন্য একটি
মহিমান্বিত দিন, যা প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে পালিত হয়। এই দিনটি
শুধুমাত্র মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মদিন নয়, বরং তাঁর জীবনের অনেক
গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এবং শিক্ষাও মোমেন্টে উদযাপিত হয়। এটি মুসলিম উম্মাহর
জন্য এক বিশেষ দিন, যা আল্লাহর রহমত লাভের এবং তাঁর রাসুলের প্রতি ভালোবাসা ও
শ্রদ্ধা প্রদর্শনের এক শ্রেষ্ঠ সুযোগ।
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকঃ
১. নফল ইবাদত ও অতিরিক্ত নামাজঃ এই দিনটিতে মুসলিমরা সাধারণত অতিরিক্ত
নামাজ পড়েন এবং বিশেষত সূরা ইখলাস, সূরা ফাতিহা, এবং অন্য দোয়া-নামাজের
মাধ্যমে আল্লাহর কাছে মুনাজাত করেন। বিশেষ করে মাগরিব ও ইশা নামাজের পর নফল
নামাজ পড়া ও জিকির করার রেওয়াজ রয়েছে।
২. সালাতুন্নবী (নবীজির উপর দরুদ) পাঠঃ এদিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল
হলো হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উপর সালাতুন্নবী পাঠ করা। সালাতুন্নবী বা দরুদ
শরিফ পাঠের মাধ্যমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা জানানো হয়। এতে অনেক
বারকাহ (বরকত) এবং আল্লাহর রহমত লাভ হয়। এর মাধ্যমে নবী (সা.) এর সান্নিধ্য
লাভের প্রার্থনা করা হয়।
৩. মিলাদ মাহফিল বা আলোচনা সভাঃ এদিনে মুসলিম সমাজে মিলাদ মাহফিল বা
সভা আয়োজনের প্রচলন রয়েছে, যেখানে নবী (সা.) এর জীবন, শিক্ষা, চরিত্র এবং
ইসলামের বার্তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এসব মাহফিলের মাধ্যমে মুসলিমরা নবীর জীবন
সম্পর্কে আরও জানার সুযোগ পায় এবং তাঁকে অনুসরণ করার উৎসাহ পায়। পাশাপাশি
এসময় বিশেষ দোয়া-মুনাজাতও করা হয়।
৪. গরিবদের সাহায্য করাঃ হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু,
দরদি, ও সহানুভূতিশীল। এই দিনটিতে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে গরিব, অসহায়, এতিম,
ও পীড়িত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসা উচিত। আর্থিক সাহায্য, খাবার বিতরণ, বা
অসহায়দের সেবা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল।
৫. রোজা রাখাঃ যদি কেউ ১২ রবিউল আউয়াল রোজা রাখতে সক্ষম হন, তবে তা
অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। যদিও এটি ফরজ নয়, তবে এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং
মহানবী (সা.) এর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন।
৬. শান্তি ও সহানুভূতির প্রচারঃ ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে মুসলিমরা
নিজেদের মধ্যে শান্তি এবং সহানুভূতি প্রচার করতে পারেন। নবীর জীবনে শান্তি
প্রতিষ্ঠা, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি ও দয়া-দাক্ষিণ্য প্রদর্শন ছিল অন্যতম
মূলনীতি। এই দিনটি একটি ভালো সুযোগ একে অপরের সাথে সম্পর্ক মজবুত করার এবং
সমাজে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার।
৭. বিশেষ দোয়াঃ ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বিশেষ দোয়া করা উচিত, যাতে
আল্লাহ তা'আলা সবার জন্য রহমত, মাগফিরাত, ও বরকত প্রদান করেন। নবীর প্রতি
ভালোবাসা, তাঁর আদর্শে জীবন পরিচালনা, এবং ইসলাম ধর্মের শিক্ষাগুলো মানুষের
মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দোয়া করা জরুরি।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও আমলঃ
-
দোয়া আল-ফাতিহাঃ নবী (সা.) এর জন্য দোয়া ও মাগফিরাত প্রার্থনা।
- দোয়া সালাতুন্নবীঃ "اللهم صل على محمد وعلى آل محمد"
-
নফল নামাজঃ বিশেষ করে মাগরিব ও ইশা নামাজের পরে নফল নামাজ পড়া।
- জিকিরঃ আল্লাহর নাম ও নবীর প্রশংসায় লিপ্ত থাকা।
-
সালাত-উন-নাবীঃ এক বিশেষ সালাত যা নবী (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা ও
শ্রদ্ধা প্রদর্শন হিসেবে পাঠ করা হয়।
এভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী মুসলিমদের জন্য এক অমূল্য সময়, যাতে তারা আল্লাহর রহমত
লাভের পাশাপাশি মহানবী (সা.) এর জীবন ও আদর্শ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে।
ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে ইসলাম কি বলে
ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ হলো মহানবী সাঃ এর জন্মদিন। এই দিনে মহানবী (সাঃ)
জন্মগ্রহণ করেন এবং ইন্তেকাল করেন। এই কারণে এই দিনে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা
ঠিক না। কারণ এই দিনে মহানবী (সাঃ) ইন্তেকাল করেছেন। তাই এই দিনটি অনেক কষ্টের।
আর এই দিনেই আনন্দ করা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ভাবে নাজায়েজ। তাই একজন
মুসলমান হিসেবে এই দিনটি পালন করা ঠিক না। ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে কোন হাদিস
উল্লেখ নেই।
এছাড়াও কোরআনে কোন জায়গায় জন্মদিন বা মৃত্যুবার্ষিকী পালনের কথা উল্লেখ নেই।
তাই ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করার উচিত না। ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে ইসলামি
দৃষ্টিকোণটি বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করা যায়, যেমনঃ
১. ইসলামের মূল দৃষ্টিকোণ (ধর্মীয় ভিত্তি)
ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন সম্পর্কে ইসলামে বিভিন্ন মতামত রয়েছে, তবে ইসলামের মূল
শিক্ষাগুলি হল রাসুল (সা.)-এর জীবনের আদর্শ অনুসরণ করা এবং আল্লাহর বিধান মেনে
চলা। কিছু মুসলিম ঈদে মিলাদুন্নবীকে একে অপরকে ভালোবাসা এবং রাসুল (সা.)-এর
প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ হিসেবে দেখে, কিন্তু এটি ইসলামি মৌলিক উৎসব হিসেবে
স্বীকৃত নয়।
ঈদে মিলাদুন্নবী বিদআত কেন
ঈদে মিলাদুন্নবী বিদআত কেন এ সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। কারণ ১২ ই রবিউল
জন্মগ্রহণ এই বিষয় নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। তবে এই দিনে মহানবী (সাঃ)
ইন্তেকাল করেছেন এটা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। তাই এই দিনে আনন্দ করার কোনোভাবেই
উচিত না। এছাড়াও মহানবী (সাঃ) তার জন্মদিন কোন সময় পালন করেনি। কোন নবীর
রাসুলের তাদের জন্মদিন পালন করেনি। তাই ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা বিদআত।
ঈদে মিলাদুন্নবী (মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম দিবস) উদযাপন ইসলামের মধ্যে একটি
বিতর্কিত বিষয়। বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায় এবং আলেমদের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে
বিভিন্ন মতামত রয়েছে। ইসলামের প্রথম যুগে এই দিবস উদযাপন করা হয়নি, কিন্তু
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু মুসলিম সম্প্রদায় এটি উদযাপন করতে শুরু করেছে। ঈদে
মিলাদুন্নবী উদযাপনকে বিদআত হিসেবে বিবেচনা করার মূল কারণগুলো হলো:
১. নবী (সা.) এবং সাহাবীদের সময়ে এটি উদযাপন হয়নিঃ নবী (সা.) নিজে, তার
সাহাবীরা এবং তার পরবর্তী কিছু যুগেও ঈদে মিলাদ উদযাপন করার কোনো চর্চা ছিল না।
তাই, অনেক আলেম এটিকে বিদআত বা নতুন উদ্ভাবিত কর্ম হিসেবে গণ্য করেছেন। কুরআনে
এবং হাদীসে ঈদে মিলাদ উদযাপনের ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। ইসলামের
প্রথম যুগের মুসলিমরা ঐ দিনটি বিশেষভাবে পালন করেনি।
২. কোনো ধর্মীয় ভিত্তি নেইঃ ঈদ, রোজা, হজ্জ, সালাত ইত্যাদি যে ধর্মীয়
কর্মকাণ্ডগুলো ইসলামের মধ্যে স্থির করা হয়েছে, সেগুলি কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা
নির্ধারিত। কিন্তু মিলাদ উদযাপন এর কোন সুন্নাহ বা কোরআন ভিত্তিক নির্দেশনা
নেই। অতএব, কিছু আলেম মনে করেন যে এটি ইসলামের মূল ধর্মীয় প্রথা বা শিক্ষা থেকে
আলাদা একটি নতুন ধারণা যা ইসলামের আসল উদ্দেশ্যকে বিকৃত করতে পারে।
৩. বিদআতের বিপরীতে সতর্কতাঃ ইসলামে বিদআতকে নিন্দা করা হয়েছে। রাসুল
(সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি আমাদের (ইসলামিক) ধর্মে নতুন কিছু সৃষ্টি করবে, তা
মেনে নেওয়া হবে না" (সহীহ মুসলিম)। এই হাদীসের আলোকে অনেক আলেম মনে করেন, ঈদে
মিলাদ একটি নতুন কর্ম এবং এটি ইসলামের শিক্ষা বা সুন্নাহর বিপরীতে।
কিছু মুসলিম মিলাদ উদযাপন কেন করেনঃ
তবে কিছু মুসলিম সম্প্রদায় ঈদে মিলাদ উদযাপন করেন এবং এটি তাদের কাছে একটি
বিশেষ অনুষ্ঠান। তাদের যুক্তি হলঃ
১. নবী (সা.) এর প্রতি ভালোবাসাঃ তারা বিশ্বাস করেন যে, নবী (সা.) এর
জন্ম দিনকে স্মরণ করা তার প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রকাশের একটি উপায়।
মুসলিমরা নবী (সা.) এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করতে চান,
বিশেষত তার বাণী ও আদর্শ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য।
২. নবীর (সা.) জীবন ও শিক্ষা প্রচারঃ মিলাদ উদযাপন মাধ্যমে মুসলিমরা নবী
(সা.) এর জীবন, শিক্ষা ও তার আদর্শ সম্পর্কে মানুষকে জানাতে চান। এটি তাদের মতে
একটি সম্মান প্রদর্শন এবং একটি শিক্ষামূলক উপলক্ষ হতে পারে।
৩. সমাজে ধর্মীয় ঐক্য ও উত্সাহঃ মুসলিমরা বিশ্বাস করেন যে মিলাদ উদযাপন
তাদের মধ্যে ধর্মীয় ঐক্য এবং সম্মান বৃদ্ধি করে, কারণ এটি তাদের একত্রিত হওয়ার
এবং নবী (সা.) এর জীবন ও শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ দেয়।
মিলাদ উদযাপন ও বিদআতের বিতর্কঃ এই বিষয়টি ইসলামিক সমাজে অনেক বিতর্কের
সৃষ্টি করেছে। কিছু মুসলিম মনে করেন যে মিলাদ উদযাপন একটি সুন্নাহ হিসেবে
গ্রহণযোগ্য, কারণ তারা এতে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য বা ইসলামের মূল শিক্ষার
বিরুদ্ধে কিছু দেখেন না। তারা একে নবী (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার
বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখেন।
অন্যদিকে, বিদআত বিরোধী আলেমরা মিলাদ উদযাপনকে ধর্মীয় আচার হিসেবে মেনে নিতে
অস্বীকার করেন, কারণ এটি ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিল না এবং তারা মনে করেন যে,
এটি মুসলিমদের ধর্মীয় আচরণে একটি অবাঞ্ছিত নবপ্রবর্তনা।
মিলাদ উদযাপন এবং ইসলামের মূল উদ্দেশ্যঃ ইসলামিক মৌলিক ধারণাগুলি হল
একত্ববাদ, কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ, এবং নবী (সা.) এর প্রদর্শিত জীবনপদ্ধতি।
ঈদে মিলাদ উদযাপন উল্লিখিত মৌলিক বিষয়গুলির বাইরে একটি নতুন আচার হতে পারে যা
ইসলামিক মূল্যবোধের সঙ্গে খাপ খায় না, এমনকি কোনো দোষও থাকতে পারে না, তবে
ইসলামের শুদ্ধ ভিত্তি অনুসরণ করাই সঠিক।
সুতরাং, ঈদে মিলাদুন্নবী একটি বিতর্কিত বিষয়, এবং মুসলিম সমাজের মধ্যে এটি নিয়ে
যে পরিমাণ মতবিরোধ রয়েছে, তা ইসলামের মধ্যে ঐক্য এবং একতার ব্যাপারে কিছুটা
চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে।
বর্তমান সময়ে ইসলাম ধর্মের মধ্যে অনেক মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান
সময়ে অনেক জাল হাদিস বের হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ মুসলিমগণ অনেক সমস্যায় পড়ছে। কি
করতে হবে এবং কি করতে হবে না সেই সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাচ্ছে না। ঈদে মিলাদুন্নবী
পালনের বিষয়ে ইসলামী জগতে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কিছু আলেম এই দিবসটি পালনের পক্ষে
দলিল উপস্থাপন করেছেন,
তবে ইসলামের প্রাথমিক যুগে এর কোনো প্রমাণ নেই। তবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর
জন্মদিনে রোজা রাখা এবং তাঁর জীবন ও শিক্ষার উপর আলোচনা করা সুন্নত। সুতরাং, এই
দিনে রোজা রাখা এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ও শিক্ষার উপর আলোচনা করা উত্তম।
আশা করছি, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ কি না সে সম্পর্কে বিস্তারিত
তথ্য পেয়েছেন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url