ব্যাংক লোন পাওয়ার সহজ উপায় সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি। প্রয়োজন অনুযায়ী
লোনের ধরন নির্বাচন করে, সঠিক ব্যাংক ও সুবিধা যাচাই করে, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
প্রস্তুত করে সহজেই লোন পাওয়া সম্ভব। অনলাইন লোনের সুবিধা ব্যবহার করে আরও দ্রুত
ও সহজে লোন পাওয়া যায়। তবে যে কেউ চাইলেই ব্যাংক লোন পেতে পারেনা।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ব্যাংক লোন পাওয়ার সহজ উপায়
ব্যাংক লোন কী
লোন (loan) শব্দটির অর্থ ধার করা, কর্য বা ঋণ নেওয়া। ব্যাংক লোন হলো একটি
আর্থিক সুবিধা যেখানে একটি ব্যাংক নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কোনো ব্যক্তি বা
প্রতিষ্ঠানকে ধার দেয় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এই ঋণের বিপরীতে ঋণগ্রহীতা
ব্যাংককে একটি নির্দিষ্ট হারে সুদসহ মূল টাকা পরিশোধ করে। এটি বিভিন্ন
উদ্দেশ্যে নেওয়া যেতে পারে, যেমনঃ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে, ব্যবসা সম্প্রসারণ,
গাড়ি ও বাড়ি কেনা বা নির্মাণের জন্য, শিক্ষা খরচ মেটানো ইত্যাদি।
আমরা বিভিন্ন সময় অন্যদের কাছ থেকে আর্থিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য ধার নিয়ে
থাকি। একইভাবে, ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গ্রাহকদের অর্থ ঋণ দিয়ে
থাকে। একেই সাধাণত ব্যাংক লোন বলা হয়। সাধারণভাবে পাওনা টাকা পরিশোধের সময়
কিছুটা বেশি দিতে হয়। তেমনি ব্যাংক লোনের শর্ত হিসেবে, গ্রাহকদের ঋণ
পরিশোধের সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ দিতে হয়। প্রতি মাসে বা প্রতি বছরে
নির্দিষ্ট পরিমাণ কিস্তি আকারে ব্যাংক লোনের অর্থ পরিশোধ করতে হয়।
ব্যাংক লোন পাওয়ার সহজ উপায়
ব্যাংক লোন পাওয়ার সহজ উপায় সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি। প্রয়োজন অনুযায়ী
লোনের ধরন নির্বাচন করে, সঠিক ব্যাংক ও সুবিধা যাচাই করে, প্রয়োজনীয়
ডকুমেন্টস প্রস্তুত করে সহজেই লোন পাওয়া সম্ভব। অনলাইন লোনের সুবিধা ব্যবহার
করে আরও দ্রুত ও সহজে লোন পাওয়া যায়। সহজে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়
সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেওয়া
যাক।
১. প্রয়োজন নির্ধারণ করুনঃ প্রথমে আপনার লোনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করুন।
যেমনঃ ব্যক্তিগত খরচ, ব্যবসা, গাড়ি কেনা, বাড়ি নির্মাণ, বা শিক্ষা খরচ
ইত্যাদি। লোনের ধরন অনুযায়ী ব্যাংক বিভিন্ন শর্ত ও সুবিধা প্রদান করে থাকে।
২. সঠিক ব্যাংক নির্বাচন করুনঃ সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক ও
নন-ব্যাংকিং ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন (NBFI) থেকে লোন নেওয়া যায়। কম সুদ
ও সহজ শর্তের জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের অফার তুলনা করুন। বাংলাদেশে বিভিন্ন
ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের লোন সুবিধা প্রদান করে। যেমনঃ
-
ডাচ-বাংলা ব্যাংকঃ ছোট ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত লোনের জন্য জনপ্রিয়।
- ইসলামী ব্যাংকঃ শরিয়াহ-সম্মত লোন সুবিধা প্রদান করে।
-
বিকাশ ও সিটি ব্যাংকঃ ডিজিটাল ন্যানো লোন সুবিধা প্রদান করে, যা খুব সহজে
অনলাইনে পাওয়া যায়।
- ঢাকা ব্যাংকঃ eRin অ্যাপের মাধ্যমে সহজ শর্তে লোন প্রদান করে।
৩. ডকুমেন্ট প্রস্তুত করুনঃ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান লোন
অনুমোদনের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নথিপত্র চায়। ব্যাংক লোনের জন্য
সাধারণত নিম্নলিখিত ডকুমেন্টস প্রয়োজন, যেমনঃ
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট
- আয়ের প্রমাণপত্র (ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা বেতনের স্লিপ)
- ঠিকানার প্রমাণপত্র
- টিআইএন সার্টিফিকেট (প্রয়োজন হলে)।
৪. সুদের হার ও শর্তাবলী যাচাই করুনঃ প্রতিটি ব্যাংকের সুদের হার ও
শর্ত ভিন্ন হতে পারে। তাই বিভিন্ন ব্যাংকের অফার তুলনা করে সবচেয়ে কম সুদের
হার ও অনুকূল শর্ত নির্বাচন করুন।
৫. অনলাইন লোনের সুবিধা নিনঃ বর্তমানে অনেক ব্যাংক অনলাইনে লোন প্রদান
করে, যা খুব সহজ ও দ্রুত প্রক্রিয়াকরণের সুবিধা দেয়। যেমনঃ
- বিকাশঃ ৫০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়া যায়।
-
ঢাকা ব্যাংকের eRin অ্যাপঃ ১০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়া
যায়।
-
ব্র্যাক ব্যাংকের সুবিধা অ্যাপঃ ১০,০০০ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন
সুবিধা।
৬. ক্রেডিট স্কোর যাচাই করুনঃ ব্যাংক আপনার ক্রেডিট স্কোর ও আর্থিক
ইতিহাস যাচাই করবে। ভালো ক্রেডিট স্কোর থাকলে লোন পাওয়া সহজ হয়।
৭. লোনের আবেদন জমা দিনঃ লোনের জন্য নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সহ ব্যাংকে জমা দিন। অনলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে অ্যাপ বা
ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন।
৮. লোন অনুমোদন ও টাকা গ্রহণঃ ব্যাংক আপনার আবেদন যাচাই করে লোন
অনুমোদন করলে, টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে জমা হবে। অনলাইন লোনের ক্ষেত্রে টাকা
সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে আসে।
৯. লোন পরিশোধের পরিকল্পনা করুনঃ লোন নেওয়ার আগে পরিশোধের সময়সীমা ও
কিস্তির পরিমাণ আপনার আর্থিক সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত
করুন। সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করলে ভবিষ্যতে আরও লোন পাওয়া সহজ হবে।
১০. বিকল্প উৎস বিবেচনা করুনঃ ব্যাংক ছাড়াও এনজিও বা
মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান থেকে সহজ শর্তে লোন পাওয়া যায়। যেমনঃ গ্রামীণ
ব্যাংক, ব্র্যাক এনজিও। আশা করি, ব্যাংক লোন পাওয়ার সহজ উপায় সম্পর্কে
জানতে পেরেছেন।
ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ
ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যা ঋণগ্রহীতার প্রয়োজন ও
উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে। লোন গ্রাহকের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে ব্যাংকের
বিভিন্ন ধরনের লোন কার্যক্রম রয়েছে। ব্যাংক লোন নেওয়ার আগে সঠিক পরিকল্পনা
এবং আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংক লোন পাওয়ার
উপায় বহু কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, তবে এটি প্রধানত ৩ প্রকার। চলুন
জেনে নেওয়া যাক সেগুলো কি কিঃ
স্বল্প মেয়াদী লোনঃ যে সকল লোনের মেয়াদকাল ১ বছর থেকে ২ বছরের কম
হয়ে থাকে, সেগুলোকে স্বল্প মেয়াদী লোন বলে। এই ধরনের লোন ব্যবসায়িক বা
ব্যক্তিগত প্রয়োজনে নেওয়া হয়, যেমন যেমন- ব্যবসার প্রয়োজনে, কৃষি ঋণ,
প্রবাসী লোন, জরুরি খরচ মেটানো বা স্বল্প সময়ের জন্য অর্থের প্রয়োজন
মেটানো। স্বল্প মেয়াদী লোনের সুদের হার তুলনামূলকভাবে কম হয়, তবে এটি ঋণদাতা
এবং ঋণের শর্তাবলীর উপর নির্ভর করে। লোনের মেয়াদ কাল সংক্ষিপ্ত হওয়ায়
সাপ্তাহিক পরিশোধেরও সুযোগ রয়েছে।
মধ্য মেয়াদী লোনঃ মধ্য মেয়াদী লোন হলো এমন একটি ঋণ যা সাধারণত ১
থেকে ৫ বছর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। এই ধরনের ঋণ সাধারণত
মাঝারি সময়ের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহৃত হয়, যেমন ব্যবসায়িক
সম্প্রসারণ, যন্ত্রপাতি ক্রয়, বা অন্যান্য বিনিয়োগমূলক খরচ। মধ্য মেয়াদী
লোনের সুদের হার স্বল্প মেয়াদী লোনের তুলনায় কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে
দীর্ঘ মেয়াদী লোনের তুলনায় কম হয়। এই ঋণের শর্তাবলী ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এবং
ঋণগ্রহীতার চুক্তির উপর নির্ভর করে। মধ্যমেয়াদি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়
তুলনামূলক সহজ।
দীর্ঘমেয়াদী লোনঃ যে সকল লোনের মেয়াদকাল ৫ বছরের বেশি হয়, সেগুলোকে
দীর্ঘমেয়াদী লোন বলে। এই ধরনের ঋণ সাধারণত বড় আকারের বিনিয়োগ বা দীর্ঘ
সময়ের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন- হাউজ বিল্ডিং লোন (House
Building Loan), ব্যবসায়িক লোন (Business Loan), ব্যক্তিগত লোন(Personal
Loan), শিক্ষার্থী লোন (Student Loan) ইত্যাদি। দীর্ঘমেয়াদী লোনের সুদের হার
সাধারণত স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী লোনের তুলনায় বেশি হয়। দীর্ঘমেয়াদী লোন
নেওয়ার আগে সঠিক পরিকল্পনা এবং আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যাংক লোনের বিভিন্ন ধরন ও কর্মসূচি
ব্যাংক লোনের বিভিন্ন ধরন রয়েছে যা এর কর্মসূচির উপর নির্ভর করে। ব্যাংক লোন
নেওয়ার আগে ঋণের শর্তাবলী, সুদের হার, প্রক্রিয়াজাতকরণ ফি এবং পরিশোধের
মেয়াদ ভালোভাবে বুঝে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, ঋণগ্রহীতার আর্থিক
সক্ষমতা এবং ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য যাচাই করা উচিত। ব্যাংক লোন বিভিন্ন ধরনের
হয়, যা ঋণগ্রহীতার প্রয়োজন, উদ্দেশ্য এবং পরিশোধের মেয়াদ অনুযায়ী
শ্রেণিবদ্ধ করা যায়, যেমনঃ
১. ব্যক্তিগত লোনঃ ব্যক্তিগত লোন সাধারণত জামানতবিহীন (Unsecured) হয়
এবং এটি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়, যেমন চিকিৎসা, বিবাহ, ভ্রমণ,
বা ঋণ একত্রীকরণ। ব্যক্তিগত লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি হতে
পারে, বিশেষ করে খারাপ ক্রেডিট স্কোরের ক্ষেত্রে। মেয়াদ সাধারণত ১ থেকে ৭
বছর পর্যন্ত।
২. হোম লোনঃ বাড়ি কেনা বা নির্মাণের জন্য এই ঋণ নেওয়া হয়। এটি
জামানতভিত্তিক (Secured) ঋণ, যেখানে বাড়িটি জামানত হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হোম
লোনের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম সুদের হার এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিশোধের সুযোগ
(১৫ থেকে ৩০ বছর) রয়েছে। কিছু দেশে গৃহ ঋণের সুদ করযোগ্য আয় থেকে কাটা যায়।
৩. অটো লোনঃ গাড়ি কেনার জন্য এই ঋণ নেওয়া হয়। গাড়িটি জামানত
হিসেবে ব্যবহৃত হয়। লোন পরিশোধের মেয়াদ সাধারণত ৩ থেকে ৭ বছর। সুদের হার
নির্ভর করে ক্রেডিট স্কোর এবং গাড়ির মূল্যের উপর।
৪. শিক্ষা ঋণঃ শিক্ষার খরচ মেটানোর জন্য এই ঋণ নেওয়া হয়। এটি
সাধারণত সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া যায়। এতে সুদের হার
তুলনামূলকভাবে কম এবং কিছু ক্ষেত্রে সুদ মওকুফের সুবিধা রয়েছে। লোন পরিশোধের
মেয়াদ শিক্ষা শেষ হওয়ার পর পরিশোধ শুরু হয়।
৫. ব্যবসায়িক ঋণঃ ব্যবসার প্রসার বা নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য এই
ঋণ নেওয়া হয়। এটি জামানতভিত্তিক বা জামানতবিহীন হতে পারে। সুদের হার
ব্যবসার ধরন এবং ঋণগ্রহীতার আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। লোন পরিশোধের
মেয়াদ সাধারণত স্বল্পমেয়াদি থেকে দীর্ঘমেয়াদি পর্যন্ত হতে পারে।
৬. কৃষি ঋণঃ কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, বীজ, সার ইত্যাদি
ক্রয়ের জন্য এই ঋণ নেওয়া হয়। সুদের হার সাধারণত কম এবং এতে সরকারি
ভর্তুকির সুবিধা রয়েছে। লোন পরিশোধের মেয়াদ ফসল উৎপাদনের সময়সীমার উপর
নির্ভর করে।
৭. ক্ষুদ্র ঋণঃ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ছোট
অঙ্কের ঋণ প্রদান করা হয়। সুদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে, তবে সহজ
শর্তে প্রদান করা হয়। স্বল্পমেয়াদি লোনের ক্ষেত্রে লোন পরিশোধের মেয়াদ
সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ বছর।
৮. ক্রেডিট কার্ড ঋণঃ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নেওয়া যায় এবং এটি
একটি রিভলভিং লাইন অব ক্রেডিট। সাধারণত উচ্চ সুদের হার এবং দ্রুত পরিশোধের
প্রয়োজন। লোন মাসিকভাবে পরিশোধের সুযোগ রয়েছে।
৯. প্রবাসী ঋণঃ প্রবাসী কর্মীদের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা, যা দেশের
বাইরে কাজ করার সময় নেওয়া যায়। সুদের হার তুলনামূলকভাবে কম এবং সহজ শর্তে
প্রদান করা হয়। লোন পরিশোধেরমেয়াদ সাধারণত মধ্যমেয়াদি যমন-২ থেকে ৫ বছর।
১০. হোম ইক্যুইটি লোনঃ বাড়ির ইক্যুইটির বিপরীতে ঋণ নেওয়া যায়, যা বাড়ির মূল্য এবং বাকি ঋণের পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। সুদের হার তুলনামূলকভাবে কম এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিশোধের সুযোগ। লোন পরিশোধের মেয়াদ সাধারণত ৫ থেকে ৩০ বছর।
ব্যাংক লোন কারা পাবেন
ব্যাংক লোন পাওয়ার জন্য কিছু সাধারণ শর্ত ও যোগ্যতা প্রয়োজন, যা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি ঋণ প্রদানের আগে ঋণগ্রহীতার আর্থিক অবস্থা, ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে। সাধারণত নিম্নলিখিত ব্যক্তিরা ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন। নিচে ব্যাংক লোন পাওয়ার জন্য সাধারণ যোগ্যতা ও শর্তাবলী উল্লেখ করা হলো।
১. বয়সঃ সাধারণত ঋণগ্রহীতার বয়স ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
তবে কিছু ব্যাংকে সর্বনিম্ন বয়স ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স ৬০ বছর পর্যন্ত
নির্ধারণ করা হতে পারে।
২. আয়ের উৎসঃ ঋণগ্রহীতার একটি স্থিতিশীল আয়ের উৎস থাকতে হবে। এটি
চাকরি, ব্যবসা, বা অন্য কোনো বৈধ আয়ের উৎস হতে পারে। স্ব-নিযুক্ত ব্যক্তিদের
ক্ষেত্রে আয়ের প্রমাণ হিসেবে ব্যবসার লেনদেনের বিবরণী, ট্যাক্স রিটার্ন
ইত্যাদি জমা দিতে হতে পারে।
৩. ক্রেডিট স্কোরঃ ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট স্কোর ভালো থাকতে হবে। ক্রেডিট
স্কোর ঋণ পরিশোধের ইতিহাস এবং আর্থিক দায়বদ্ধতা নির্দেশ করে। খারাপ ক্রেডিট
স্কোর থাকলে ঋণ পাওয়া কঠিন হতে পারে বা উচ্চ সুদের হার প্রযোজ্য হতে পারে।
৪. জামানত, যদি প্রয়োজন হয়ঃ কিছু ঋণ, যেমন গৃহ ঋণ বা অটো লোন,
জামানতভিত্তিক (Secured Loan)। এই ধরনের ঋণের জন্য জামানত হিসেবে সম্পদ (যেমন
বাড়ি, গাড়ি) প্রদান করতে হতে পারে।ব্যক্তিগত ঋণ বা অন্যান্য জামানতবিহীন
ঋণের (Unsecured Loan) ক্ষেত্রে জামানতের প্রয়োজন হয় না, তবে সুদের হার
বেশি হতে পারে।
৫. কর্মসংস্থানের স্থিতিশীলতাঃ চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের
স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ।সাধারণত কমপক্ষে ৬ মাস থেকে ১ বছর একই প্রতিষ্ঠানে
চাকরি করার শর্ত থাকতে পারে। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ব্যবসার স্থিতিশীলতা এবং
লাভজনকতা বিবেচনা করা হয়।
৬. নাগরিকত্ব বা বসবাসের স্থিতিঃ সাধারণত ঋণগ্রহীতাকে দেশের নাগরিক বা
স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। তবে কিছু ব্যাংকে প্রবাসী কর্মীদের জন্য বিশেষ ঋণ
সুবিধা রয়েছে।
৭. দস্তাবেজঃ ঋণের জন্য প্রয়োজনীয় দস্তাবেজ জমা দিতে হবে, যেমন:
- পরিচয় প্রমাণ (জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট)
-
আয়ের প্রমাণ (স্যালারি স্লিপ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ট্যাক্স রিটার্ন)
- ঠিকানার প্রমাণ (ইউটিলিটি বিল, ভোটার আইডি কার্ড)
-
ব্যবসায়িক দস্তাবেজ (ব্যবসায়িক লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স
সার্টিফিকেট)
৮. ঋণের উদ্দেশ্যঃ ঋণের উদ্দেশ্য বৈধ এবং স্পষ্ট হতে হবে। যেমন, গৃহ
ঋণের জন্য বাড়ি কেনা, শিক্ষা ঋণের জন্য পড়াশোনার খরচ ইত্যাদি।
৯. ঋণ পরিশোধের ক্ষমতাঃ ব্যাংক ঋণগ্রহীতার মাসিক আয় এবং ব্যয়ের
অনুপাত বিবেচনা করে ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা যাচাই করে। সাধারণত ঋণগ্রহীতার মাসিক
আয়ের ৪০-৫০% এর বেশি ঋণ পরিশোধের বোঝা থাকলে ঋণ অনুমোদন করা হয় না।
১০. ঋণের ইতিহাসঃ পূর্বে নেওয়া ঋণের ইতিহাস এবং তা সময়মতো পরিশোধ
করা হয়েছে কিনা তা ব্যাংক বিবেচনা করে। খারাপ ঋণ ইতিহাস থাকলে ঋণ পাওয়া
কঠিন হতে পারে।
ব্যাংক লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে সিআইবি রিপোর্ট
বাংলাদেশে ব্যাংক লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো)
রিপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সিআইবি হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের
একটি বিশেষ বিভাগ, যা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহীতাদের তথ্য
সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে। এটি ঋণগ্রহীতার পূর্ববর্তী ঋণ গ্রহণের ইতিহাস, ঋণ
পরিশোধের অবস্থা, এবং ঋণ খেলাপি সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করে। নিচে সিআইবি
রিপোর্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. সিআইবি রিপোর্ট কেন দরকারঃ যখন আপনি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চান, তখন
ব্যাংক আপনার সিআইবি রিপোর্ট পর্যালোচনা করে আপনার ক্রেডিট ইতিহাস
মূল্যায়ন করে। এটি ব্যাংককে নিম্নলিখিত বিষয়ে সহায়তা করেঃ
-
ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা মূল্যায়নঃ আপনি পূর্বে নেওয়া ঋণ সময়মতো
পরিশোধ করেছেন কিনা তা যাচাই করা।
-
ঋণ খেলাপি ঝুঁকি নির্ধারণঃ আপনি ঋণ খেলাপি কিনা বা ঋণ পরিশোধে
অনিয়ম করেছেন কিনা তা জানা।
-
ঋণের পরিমাণ ও শর্তাবলী নির্ধারণঃ আপনার ক্রেডিট ইতিহাসের
ভিত্তিতে ঋণের পরিমাণ, সুদের হার, এবং অন্যান্য শর্তাবলী নির্ধারণ করা।
২. সিআইবি রিপোর্টে কী তথ্য থাকেঃ সিআইবি রিপোর্টে সাধারণত নিম্নলিখিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেমনঃ
-
ঋণগ্রহীতার ব্যক্তিগত তথ্য (যেমন: নাম, ঠিকানা, পরিচয়পত্র নম্বর)
- পূর্ববর্তী ও বর্তমান ঋণের বিবরণ
- ঋণের পরিমাণ, সুদের হার, এবং মেয়াদ
- ঋণ পরিশোধের সময়সূচী ও অবস্থা
- ঋণ খেলাপি সম্পর্কিত তথ্য
৩. সিআইবি রিপোর্ট কীভাবে প্রভাবিত করেঃ আপনার সিআইবি রিপোর্ট যদি
ইতিবাচক হয়, অর্থাৎ আপনি পূর্বের ঋণসমূহ সময়মতো পরিশোধ করে থাকেন, তাহলে
ব্যাংক আপনার ঋণ আবেদন অনুমোদনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
অন্যদিকে, যদি আপনার সিআইবি রিপোর্টে ঋণ খেলাপি বা ঋণ পরিশোধে অনিয়মের
তথ্য থাকে, তাহলে ব্যাংক আপনার ঋণ আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারে বা কঠোর
শর্ত আরোপ করতে পারে।
৪. সিআইবি রিপোর্ট উন্নত করার উপায়ঃ
- সময়মতো ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা।
- ঋণের অতিরিক্ত বোঝা এড়ানো।
- ক্রেডিট কার্ডের বিল সময়মতো পরিশোধ করা।
- ঋণ সম্পর্কিত যেকোনো বিরোধ দ্রুত সমাধান করা।
সিআইবি রিপোর্টের গুরুত্ব বিবেচনা করে, ঋণ গ্রহণের পূর্বে আপনার ক্রেডিট ইতিহাস সঠিক ও ইতিবাচক রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যাংক লোন পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ব্যাংক লোন পেতে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (ডকুমেন্টস) জমা দিতে হয়।
বাংলাদেশে ব্যাংক লোন পেতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস লোনের ধরন, আবেদনকারীর পেশা,
এবং ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। এই ডকুমেন্টসগুলি ব্যাংক
ঋণগ্রহীতার পরিচয়, আয়, ঠিকানা এবং ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা যাচাই করার জন্য
ব্যবহার করে। নিচে ব্যাংক লোনের জন্য সাধারণভাবে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের
তালিকা দেওয়া হলোঃ
- ঋণের আবেদন করার জন্য গ্রাহকের স্বাক্ষরসহ আবেদন ফরম পূরণ।
- আবেদনকারীর ছবি।
-
এনআইডি কার্ডের ফটোকপি। প্রয়োজন হলে পাসপোর্ট/ ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি
ইত্যাদি।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট (কমপক্ষে বিগত ৬ মাসের)
- আয়ের উৎসের প্রমাণপত্র।
- যেকোনো ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদি)
- গ্যারানটারের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
-
গ্যারানটারের অফিস আইডি কার্ড/ ভিজিটিং কার্ড (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
-
পেশার ক্ষেত্রে অফিস আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, বিজনেস কার্ড ইত্যাদি।
-
ব্যবসায়ী কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে টিআইএন সার্টিফিকেট (TIN Certificate)।
- ট্রেড লাইসেন্স/ সে আর মূলধনের, অংশীদারিত্বের স্মারকলিপি।
-
সরকারি কর্মচারীদের স্যালারি সার্টিফিকেট বা পে স্কেল (Pay Scale) এর
কপি।
- ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক চলতি হিসাবের তথ্য।
- চেকবুক পেজ।
এছাড়াও ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় সম্পর্কিত অন্যান্য কিছু ডকুমেন্টস, যেমন-
- ঔষধ ব্যবসার ক্ষেত্রে- ড্রাগ লাইসেন্স।
-
খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে- বিএসটিআই (BSTI) সার্টিফিকেট।
- ডিজেল ও এসিড ব্যবসার জন্য- ডিসির অনুমোদন।
অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে-
- মজুদ মাল ও তার বর্তমান মূল্যের তালিকা, আর্থিক বিবরণী।
- স্থায়ী সম্পদের তালিকা ও মূল্য।
- দেনাদার ও পাওনাদারের তালিকা।
ব্যাংক ঋণের বিপরীতে জামানত
ব্যাংক ঋণের বিপরীতে জামানত হলো একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যেখানে ঋণগ্রহীতা
ব্যাংককে কোনো মূল্যবান সম্পদ বা গ্যারান্টি প্রদান করে। এই জামানতের
উদ্দেশ্য হলো ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রদান করা। যদি ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে
ব্যর্থ হয়, তাহলে ব্যাংক জামানতকৃত সম্পত্তি বিক্রি করে বা গ্যারান্টি
প্রদানকারীর কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায় করতে পারে। ব্যাংক ঋণের জামানত বিভিন্ন
ধরনের হতে পারে সেগুলো হলোঃ
ব্যক্তিগত জামানতঃ ঋণগ্রহীতার পক্ষে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের
গ্যারান্টি প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যক্তি ঋণগ্রহীতার জামিনদার
হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারে।
অব্যক্তিক জামানতঃ এতে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি জামানত হিসেবে রাখা
হয়। যেমন জমি, ভবন, যন্ত্রপাতি, পণ্যদ্রব্য, সিকিউরিটি ইত্যাদি।
পূর্বস্বত্বঃ ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংক জামানতকৃত সম্পত্তির
দখল রাখে। এটি সাধারণ বা বিশেষ পূর্বস্বত্ব হতে পারে।
স্থাবর সম্পত্তি বন্ধকঃ জমি বা ভবনের মতো স্থাবর সম্পত্তি জামানত
হিসেবে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সম্পত্তির মালিকানা বা দখল ব্যাংকের কাছে
স্থানান্তরিত হতে পারে।
জামানতের গুরুত্বঃ
ঝুঁকি হ্রাসঃ জামানত ব্যাংকের জন্য ঋণের ঝুঁকি কমায়, কারণ ঋণগ্রহীতা
ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক জামানতকৃত সম্পত্তি বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে
নিতে পারে।
ঋণের শর্ত সহজীকরণঃ জামানত থাকলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতে পারে
এবং ঋণের পরিমাণ বাড়াতে পারে।
ঋণগ্রহীতার দায়বদ্ধতাঃ জামানত থাকলে ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে আরও সচেতন
হয়, কারণ জামানত হারানোর ঝুঁকি থাকে।
জামানতের উদাহরণঃ
-
ভূমি, দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী,
পণ্যদ্রব্য ও মালিকানার গুরুত্বপূর্ণ দলিল পত্র।
- ব্যাংক একাউন্টের সেভিংস সার্টিফিকেট।
-
ব্যক্তিগত গ্যারান্টি, অর্থ প্রদানে ব্যর্থ হলে আইনি ব্যবস্থা প্রয়োগে
সম্মতি।
-
ঋণ গ্যারান্টার বা সাক্ষী প্রদানকারী/জামানতকারীর ব্যক্তিগত গ্যারান্টি।
ঋণ প্রদানে ব্যর্থ হলে জামানত দেওয়া বিষয়বস্তুর উপর আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনি
ব্যবস্থা নিতে পারবে। প্রয়োজনে সম্পত্তি বিক্রয় করে অর্থ আদায় করবে। ঋণ
গ্রাহক এবং গ্যারান্টারের বিরুদ্ধে আদালতে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে।
জামানতবিহীন ঋণঃ কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক জামানত ছাড়াই গ্রাহককে সহজ
শর্তে ঋণ সুবিধা দেয়, বিশেষত ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক ঋণ বা ব্যক্তিগত ঋণের
ক্ষেত্রে। তবে এ ধরনের ঋণের সুদের হার সাধারণত বেশি হয় এবং ঋণের পরিমাণ
সীমিত থাকে।
ব্যাংক লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়
ব্যাংক লোন নেওয়ার সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন,
যাতে ঋণগ্রহীতা আর্থিকভাবে সুরক্ষিত থাকেন এবং ঋণ পরিশোধে কোনো সমস্যা না
হয়। ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়ে লোন পেতে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় ব্যাংক
নির্বাচন। ব্যাংক লোন নেওয়ার আগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা
প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা না হয়। এক্ষেত্রে কোন ব্যাংক থেকে লোন
নিবেন তা বাছাই করতে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন।
১. লোন প্রসেসিং ফিঃ লোন নিষ্পত্তি করার জন্য ব্যাংক থেকে কোন বাড়তেই
চায় কিনা খেয়াল রাখুন। বর্তমানে প্রায় সকল ব্যাংকই লোন প্রসেসিং করতে
আবেদন ফরম, কিস্তি বই ও অন্যান্য কাগজপত্রের ফি নেয়। এছাড়াও লোন নেওয়ার
সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যাংকেই কর্তন করে রাখে (সাধারণত ১০% জমা রাখে)।
এ সকল বিষয় বিবেচনায় রেখে কোন তৃতীয় পক্ষের সাহায্য ছাড়া ব্যাংক নির্বাচন
করুন।
২. ঋণের বিপরীতে সুদের হারঃ বিভিন্ন ব্যাংক ও ঋণের প্রকারভেদ
অনুযায়ী সুদের হার ভিন্ন হতে পারে। আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সুদের হার
নির্ধারণ করতে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রস্তাবনা তুলনা করুন। কর্মসূচি অনুযায়ী
কিছু ব্যাংক ৯%-১০% সুদ ধার্য করে। তবে কর্মসংস্থান ব্যাংক ও অন্যান্য কিছু
ব্যাংক ৭%-৮% হারে সুদ নেয়। এক্ষেত্রে কম সুদের হার এমন ব্যাংক নির্বাচন
করুন।
৩. ইনস্টলমেন্ট পদ্ধতি/ ব্যাংক লোনের কিস্তিঃ লোন পরিশোধের
সময়সীমা ও কিস্তির পরিমাণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখুন, যাতে আপনার আর্থিক
পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিশোধ করতে পারেন। লোনপরিশোধের ধরন, প্রতি
কিস্তিতে কত টাকা পরিশোধ করতে হবে তা জেনে নিন। আপনার সুবিধা অনুযায়ী
সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক বা বাৎসরিক পদ্ধতিতে কিস্তির সুবিধা
জেনে নিন।
৪. মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের সুদের হারঃ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে অতিরিক্ত সুদ প্রযোজ্য হতে
পারে।ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়ে ঋণ নিয়ে মেয়াদকালের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে না
পারলে কত টাকা বাড়তি পরিশোধ করতে হবে তা খেয়াল রাখুন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন
ব্যাংকের সুদের হার ১%-২% বৃদ্ধি পায়।
৫. মেয়াদ পূর্তির পূর্বে ঋণ পরিশোধ করার নীতিমালাঃ লোনের
মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করতে চাইলে কোনো অতিরিক্ত ফি বা
শর্ত প্রযোজ্য হবে কিনা, তা জেনে নেওয়া উচিত।সাধারণত মেয়াদ পূর্তির পূর্বে
ঋণ পরিশোধ করলে সুদের হার কম থাকে।
৬. অন্যান্য বাড়তি ফিঃ ব্যাংক থেকে কোন বাড়তি ফি চাইলে, সংশ্লিষ্ট
কর্মকর্তার কাছে ব্যাংক নীতিমালা জেনে নিন। প্রসেসিং ফি ছাড়াও অন্যান্য
লুকায়িত খরচ থাকতে পারে, যেমন সার্ভিস চার্জ, স্ট্যাম্প ডিউটি ইত্যাদি। এইসব
খরচ সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত থাকুন।
ব্যাংক লোন এর জন্য আবেদন করার নিয়ম
ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন করার নিয়ম সাধারণত ব্যাংকের নীতি ও লোনের ধরণ
অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। আপনার প্রয়োজন ও সুবিধা অনুযায়ী একটি ব্যাংক
নির্বাচন করুন। বিভিন্ন ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ঋণ প্রদান করে থাকে, যেমন
ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ, শিক্ষা ঋণ ইত্যাদি। প্রতিটি ব্যাংকের ঋণের জন্য
নির্দিষ্ট যোগ্যতার মানদণ্ড থাকে। সাধারণত ঋণগ্রহীতার বয়স ২১ থেকে ৬০ বছরের
মধ্যে হতে হয় এবং স্থায়ী আয়ের উৎস থাকতে হয়।
ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন করতে নিম্নলিখিত নথিপত্র প্রয়োজন হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
-
সর্বশেষ ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- বেতন স্লিপ বা আয়ের প্রমাণপত্র
-
বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র
আপনাকে কাঙ্খিত ব্যাংকের শাখা অফিসে উপস্থিত হয়ে লোনের আবেদন ফরম সংগ্রহ
করতে হবে। ব্যাংকের নির্দিষ্ট আবেদনপত্র সঠিকভাবে পূরণ করুন এবং
প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংযুক্ত করুন। লোন আবেদন ফরমে- ঋণ নেওয়ার কারণ,
কত টাকা ঋণ নিতে চান, আপনার ব্যক্তিগত ও অন্যান্য তথ্য সঠিকভাবে তুলে ধরুন।
এরপর সম্পূর্ণ আবেদনপত্র ও নথিপত্র ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা
দিন।
ব্যাংক আপনার আবেদন মূল্যায়ন করবে এবং প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত তথ্য বা
সাক্ষাৎকারের জন্য আপনাকে ডাকতে পারে। সবকিছু ঠিক থাকলে, ব্যাংক ঋণ অনুমোদন
করবে। সঠিক ডকুমেন্ট/ কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করে থাকলে সহজেই ভেরিফিকেশন করে
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারপর ব্যাংক তার নিজস্ব নিয়মে কার্যক্রম পরিচালনা
করে গ্রাহকের একাউন্টে লোনের অর্থ বিতরণ করে।
বর্তমানে কিছু ব্যাংক অনলাইনেও ঋণের আবেদন গ্রহণ করে থাকে। যেমন, ঢাকা
ব্যাংকের eRin অ্যাপের মাধ্যমে আপনি সহজেই ১,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত
ব্যক্তিগত ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। এর জন্য আপনার বয়স কমপক্ষে ২১ বছর
হতে হবে, মাসিক আয় ন্যূনতম ১০,০০০ টাকা হতে হবে, এবং জাতীয় পরিচয়পত্র,
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও আয়ের প্রমাণপত্র থাকতে হবে।
ব্যাংক লোনের জন্য দেশের সেরা কিছু ব্যাংক
ব্যাংক লোনের জন্য দেশের সেরা কিছু ব্যাংক রয়েছে যেগুলো থেকে অপনি সহজেই
ব্যাংক লোন নিতে পারবেন। বাংলাদেশে ব্যাংক লোনের জন্য বেশ কিছু ব্যাংক জনপ্রিয় এবং তাদের সুবিধা ও
সুদের হার বিবেচনায় সেরা হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে মোট ৬১ টি তালিকাভুক্ত এবং ৫টি অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক রয়েছে।
এছাড়াও বহু এনজিও ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দিয়ে থাকে। বিভিন্ন
ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ও পরিমাণের ঋণ সুবিধা দেয় যেমনঃ
১. ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডঃ ডাচ-বাংলা ব্যাংক ব্যক্তিগত ঋণ, শিক্ষা
ঋণ, গৃহ ঋণ এবং ব্যবসায়িক ঋণ প্রদান করে। এছাড়াও, এটি দেশের প্রথম মোবাইল
ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী ব্যাংক। সুদের হার ৯% থেকে ১৩% পর্যন্ত। ডাচ-বাংলা
ব্যাংক দ্রুত অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া এবং নমনীয় কিস্তি পরিশোধের সুবিধা
দিয়ে থাকে।
২. ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডঃ ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক লোন
সুবিধা প্রদান করে। গৃহ ঋণ, শিক্ষা ঋণ এবং ব্যবসায়িক ঋণ এর মধ্যে অন্যতম।
শরীয়াহ ভিত্তিক লোনের জন্য সুদের হার ভিন্ন হতে পারে, সাধারণত ৯% থেকে ১২%।
ইসলামী ব্যাংকে শরীয়াহ ভিত্তিক লোন ব্যবস্থা এবং দীর্ঘমেয়াদী ঋণের সুবিধা
রয়েছে।
৩. ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডঃ ব্র্যাক ব্যাংক ক্ষুদ্র ও মাঝারি
উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই লোন, ব্যক্তিগত ঋণ এবং শিক্ষা ঋণ প্রদান করে।
ব্র্যাক ব্যাংকে সুদের হার ১০.৫% থেকে ১২% পর্যন্ত। দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়া
এবং নমনীয় কিস্তি পরিশোধের সুবিধা দিয়ে থাকে।
৪. স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকঃ গৃহ ঋণ, ব্যক্তিগত ঋণ এবং
ব্যবসায়িক ঋণ প্রদান করে। বিদেশি মালিকানাধীন এই ব্যাংক উচ্চমানের সেবা
প্রদান করে। সুদের হার সাধারণত ৮.৭% থেকে ৯.১% পর্যন্ত। স্ট্যান্ডার্ড
চার্টার্ড ব্যাংক উচ্চমানের গ্রাহক সেবা এবং দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়া প্রদান
করে থাকে ।
৫. সোনালী ব্যাংক লিমিটেডঃ সরকারি মালিকানাধীন এই ব্যাংক গৃহ ঋণ,
শিক্ষা ঋণ এবং কৃষি ঋণ প্রদান করে।এখানে সুদের হার ৯% থেকে ১২% পর্যন্ত।
সোনালী ব্যাংকের দেশব্যাপী ব্যাপক শাখা নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং সহজ শর্তে ঋণ
প্রদান করে থাকে।
৬. গ্রামীণ ব্যাংকঃ ক্ষুদ্রঋণ এবং কৃষি ঋণ প্রদানে বিশেষায়িত। এটি
দরিদ্র ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য ঋণ সুবিধা প্রদান করে।সুদের হার ১০% থেকে
১৫% পর্যন্ত। গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখে।
৭. ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডঃ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহ ঋণ এবং ব্যবসায়িক ঋণ
প্রদান করে। এছাড়াও, অনলাইন লোন সুবিধা প্রদান করে। সুদের হার ৯% থেকে ১২%
পর্যন্ত। ঢাকা ব্যাংকে অনলাইন লোন আবেদনের সুবিধা এবং দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ
ব্যবস্থা রয়েছে।
৮. প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডঃ গাড়ি ঋণ, গৃহ ঋণ এবং ব্যবসায়িক ঋণ প্রদান
করে। এছাড়াও, শিক্ষা ঋণ এবং প্রবাসী ঋণ সুবিধা রয়েছে। সুদের হার ১১% থেকে
১৩% পর্যন্ত। প্রাইম ব্যাংকে নমনীয় কিস্তি পরিশোধের সুবিধা এবং দ্রুত
অনুমোদন প্রক্রিয়া রয়েছে।
৯. ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডঃ এসএমই লোন, গৃহ ঋণ এবং ব্যক্তিগত ঋণ
প্রদান করে। এছাড়াও, গ্রিন ব্যাংকিং সুবিধা রয়েছে।সুদের হার ১১% থেকে ১২%
পর্যন্ত। এখানে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ঋণ প্রদান এবং দ্রুত অনুমোদন
প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
১০. জনতা ব্যাংক লিমিটেডঃ সরকারি মালিকানাধীন এই ব্যাংক গৃহ ঋণ,
শিক্ষা ঋণ এবং কৃষি ঋণ প্রদান করে। সুদের হার: ৯% থেকে ১২% পর্যন্ত। জনতা
ব্যাংকের দেশব্যাপী ব্যাপক শাখা নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং সহজ শর্তে ঋণ প্রদান
করে থাকে।
উপরোক্ত ব্যাংকগুলো বাংলাদেশে লোন প্রদানের ক্ষেত্রে সেরা হিসেবে বিবেচিত।
প্রতিটি ব্যাংকের সুবিধা, সুদের হার এবং আবেদন প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে,
তাই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ব্যাংক নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। আরও
বিস্তারিত জানতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইট বা শাখায় যোগাযোগ করতে পারেন।
ব্যাংক লোনের সুবিধা ও অসুবিধা
ব্যাংক লোনের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। ব্যাংক লোন নেওয়া অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় ও উপকারী হতে পারে, তবে এতে কিছু
ঝুঁকিও থাকে।ব্যাংক লোন নেওয়ার আগে অবশ্যই সুদের হার, শর্তাবলী, পরিশোধের
সামর্থ্য ও বিকল্প উৎস বিবেচনা করা উচিত। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া লোন নেওয়া
ভবিষ্যতে আর্থিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। নিচে ব্যাংক লোনের সুবিধা ও অসুবিধা
বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলোঃ
ব্যাংক লোনের সুবিধাঃ
-
ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে সহজেই বড় অঙ্কের অর্থ পাওয়া যায়, যা ব্যবসা বা
ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কাজে লাগে।
-
বেশিরভাগ ব্যাংক দীর্ঘমেয়াদী কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সুবিধা দেয়, যা
মাসিক বাজেটে চাপ কমাতে সাহায্য করে।
-
সরকারি ও নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির লোনে সুদের হার তুলনামূলক কম হতে পারে।
-
উদ্যোক্তারা সহজেই ব্যবসার মূলধন সংগ্রহ করতে পারেন, যা ব্যবসা বড় করতে
সাহায্য করে।
- কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক লোনের সুদের ওপর কর রেয়াত পাওয়া যেতে পারে।
-
ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের লোন সুবিধা প্রদান করে, যেমন: গৃহ ঋণ, শিক্ষা ঋণ,
ব্যবসায়িক ঋণ, ব্যক্তিগত ঋণ ইত্যাদি।
ব্যাংক লোনের অসুবিধাঃ আর্থিক চাহিদা পূরণে ব্যাংক সুবিধাজনক হওয়ার
পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমনঃ
- ব্যাংক লোন পেতে জামানত ও অন্যান্য অনেক ডকুমেন্টস জমা দিতে হয়।
- যেকেউ চাইলেই ব্যাংক ঋণ নিতে পারেনা।
-
ব্যাংক ঋণ পেতে চাকরিজীবীদের মাসিক আয় সর্বনিম্ন ৩০,০০০ টাকা এবং
ব্যবসায়ীদের মাসিক আয় সর্বনিম্ন ৫০,০০০ টাকা হতে হয়।
-
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ
হলে বাড়তি সুদ প্রদান এমনকি জামানত দেওয়া সম্পদের ক্ষতি হতে পারে।
- ইসলামিক শরীয়াহ অনুযায়ী সুদি ব্যাংকের ঋণ নেওয়া হারাম।
-
প্রয়োজন মেটাতে বারবার ব্যাংক ঋণের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পরে অনেকেই। যা
পরবর্তীতে দেউলিয়ার কারণ।
-
অনেক ক্ষেত্রে লোনের সঙ্গে লুকানো চার্জ (প্রসেসিং ফি, সার্ভিস চার্জ
ইত্যাদি) থাকে, যা পরবর্তীতে বাড়তি খরচের কারণ হতে পারে।
ব্যাংক লোন পাওয়ার সহজ উপায় সম্পর্কে শেষকথা
ব্যাংক লোন পাওয়ার সহজ উপায় সম্পর্কে শেষকথা হলো, সঠিক প্রস্তুতি, সঠিক
তথ্য এবং সঠিক পন্থা অনুসরণ করলে ঋণ পাওয়া সহজ হয়। সহজে লোন পাওয়া অনেকের
জন্য জরুরি। এটি হঠাৎ জরুরি প্রয়োজনে অর্থসংস্থান করে এবং দীর্ঘ মেয়াদে
কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেয়। মানুষ নিত্যদিন বিভিন্ন আর্থিক সমস্যায়
পরিত্রাণ পেতে ব্যাংক ঋণ বেছে নেয়। বর্তমানে অসংখ্য ব্যাংক থাকায় ব্যাংক
লোন পাওয়ার উপায়ও সহজ হয়ে উঠেছে।
লোন নেওয়ার আগে সঠিক পরিকল্পনা এবং আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ব্যাংকের ঋণের শর্তাবলী ও সুদের হার ভিন্ন হতে
পারে। তাই, আবেদন করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত
তথ্য জেনে নেওয়া উচিত। তবে অতিরিক্তি ঋণ নিলে আর্থিক সমস্যার বৃদ্ধির
পাশাপাশি দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও ইসলামিক শরিয়াহ অনুযায়ী
সুদের ভিত্তিতে লোন দেওয়া ও নেওয়া দুটোই হারাম। তাই ব্যাংক ঋণ থেকে বিরত
থাকাই উত্তম।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url