জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে আগ্রহ প্রকাশ
করেছেন। সাধারণত অনেক সময় আমাদের জাতীয় পরিচয়পথে ভুল থাকে যার ফলে এই ভুল
সংশোধন করার প্রয়োজন হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র কিভাবে সংশোধন করবেন এ বিষয়ে জানা
সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে যদি ভুল থাকে তাহলে এই জাতীয় পরিচয় পত্র কোথাও
ব্যবহার করতে পারবেন না। আপনার চাকরি থেকে শুরু করে যেকোন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
তৈরি করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম সমস্যায় পড়ে যাবেন। তাই জাতীয় পরিচয়পত্র
কিভাবে সংশোধন করবেন এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম
- জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম
- অনলাইনে এনআইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম
- জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম
- জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন আবেদন ফরম
- জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন হতে কতদিন সময় লাগে
- জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন ফি কত
- জাতীয় পরিচয় পত্রে পিতা-মাতার নাম সংশোধন করতে কি কি লাগে
- জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্ম তারিখ সংশোধন প্রক্রিয়া
- শেষকথাঃ জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন অনেকেই। জাতীয়
পরিচয়পত্র কিভাবে সংশোধন করবেন এ বিষয়টি জানা সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ
আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে যদি ভুল থাকে তাহলে এই জাতীয় পরিচয় পত্র কোথাও
ব্যবহার করতে পারবেন না। আপনার চাকরি অথবা কোন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট তৈরি করার
ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম সমস্যায় পড়ে যাবেন।
বিশেষ করে পূর্বে যারা জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহ করেছেন তাদের এই ভুলগুলো বেশি
দেখা যায়। বর্তমান সময়ের মানুষ যেহেতু সচেতন তাই এই ভুলগুলো কম দেখা যায়।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
যেহেতু বর্তমান সময়ে প্রতিটি কাজ অনলাইন এর মাধ্যমে করা হয় তাই অনলাইন ছাড়া
অফলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করা যায় না।
তাই অনলাইনের সাহায্যে আপনি ঘরে বসে থেকেই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের মধ্যে
থাকা ভুলগুলো সংশোধন করে নিতে পারবেন। এখন বিষয় হচ্ছে আপনি আপনার জাতীয়
পরিচয় পত্রের সংশোধন কিভাবে করবেন সাধারণত এই বিষয় নিয়ে পুরো আর্টিকেলে
আলোচনা করবো। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে জেনে নিন জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন
করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
অনলাইনে এনআইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম
অনলাইনে এনআইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম খুবই সহজ এবং সুবিধাজনক। বর্তমানে যে
সকল কাজ করা হয় সাধারণত সবগুলোই অনলাইনে করা হয়ে থাকে যার ফলে একটু দীর্ঘ
সময়ের প্রয়োজন হয়। অনেক সময় দেখা যায় যে আমাদের এনআইডি কার্ডের নাম অথবা
পিতা মাতার নামের ভুল হয়ে যায়। এই ভুলগুলো সংশোধন করার জন্য অনলাইন হচ্ছে
শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। নিচে অনলাইনে এনআইডি কার্ড সংশোধনের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা
হলোঃ
সাধারণত জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার জন্য বেশ কিছু ডকুমেন্ট স্ক্যান করে
জমা দিতে হবে তাই প্লে স্টোরে গিয়ে NID WALLET নামের অ্যাপসটি ডাউনলোড করে
নিন। এর পরে আপনাকে গুগলে গিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন লিখে সার্চ করলেই যে
ওয়েবসাইট প্রথম অবস্থানে থাকবে তার ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। এরপরে আপনাকে
অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করার জন্য services.nidw.gov.bd
ওয়েবসাইটে যান। রেজিস্টার করুন' অপশনে ক্লিক করুন।
এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্মতারিখ এবং ঠিকানা প্রদান করে নিবন্ধন সম্পন্ন
করুন। আপনার মোবাইল নম্বর যাচাই করুন। একটি ওটিপি (OTP) কোড আপনার মোবাইলে
পাঠানো হবে, যা দিয়ে যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের
পর, ফেস ভেরিফিকেশন করতে হবে। এজন্য 'NID Wallet' অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন,
যা গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যায়। অ্যাপটি দিয়ে ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত কিউআর (QR)
কোড স্ক্যান করে মুখমণ্ডল যাচাই সম্পন্ন করুন।
রেজিস্ট্রেশন সফল হওয়ার পর, আপনার প্রোফাইলে লগইন করুন। প্রোফাইল অপশনে গিয়ে
সংশোধন করতে চান এমন তথ্যের পাশে 'এডিট' বাটনে ক্লিক করুন। সঠিক তথ্য প্রদান
করে 'পরবর্তী' বাটনে ক্লিক করুন। এরপরে যেখানে ভুল ছিল সাধারণত সেই ভুলটিকে
সংশোধন করে নিতে হবে। যে বিষয়গুলো সংশোধন করবেন সাধারণত ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ
করে নেবেন। এরপরে আপনাকে তথ্য সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে।
বিকাশ, রকেট বা অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ফি পরিশোধ করা যায়। ফি
প্রদানের বিস্তারিত প্রক্রিয়া ও পরিমাণ সম্পর্কে
eServicesbd
সাইটে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র
আপলোড করুন এবং আবেদনটি সাবমিট করুন। আবেদন জমা দেওয়ার পর, একটি ডাউনলোডযোগ্য
আবেদন ফরম পাবেন, যা সংরক্ষণ করুন। আশা করছি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন আবেদন করার জন্য প্রথমে আপনাকে services.nidw.gov.bd
এই ওয়েবসাইটের মধ্যে প্রবেশ করতে হবে। যদি আপনি নতুন ব্যবহারকারী হন, তাহলে
'রেজিস্ট্রেশন' অপশনে ক্লিক করে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম তারিখ,
মোবাইল নম্বর এবং ঠিকানা দিয়ে নিবন্ধন করুন।আপনি একটি ওটিপি (OTP) পাবেন আপনার
মোবাইলে, যা দিয়ে আপনার অ্যাকাউন্টটি সক্রিয় করতে হবে।
লগইন করার পর আপনার প্রোফাইলে প্রবেশ করুন এবং 'এডিট' অপশনে ক্লিক করুন যেখানে
আপনি সংশোধন করতে চান। আপনি যে তথ্য সংশোধন করতে চান (যেমন নাম, জন্ম তারিখ,
পিতার নাম ইত্যাদি), তা সংশোধন করুন। সংশোধন করা তথ্যের জন্য প্রয়োজনীয়
প্রমাণপত্র স্ক্যান করে আপলোড করুন। এই প্রমাণপত্রগুলি যেমনঃ জন্ম সনদ পত্র,
শিক্ষাগত সনদ পত্র, পাসপোর্ট ইত্যাদি। সঠিক ও প্রামাণিক তথ্য দিন, যাতে
সংশোধনের প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।
সংশোধন করার জন্য নির্দিষ্ট ফি প্রদান করুন। ফি আপনি মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ,
রকেট, ইত্যাদি) বা অন্য কোনো অনলাইন মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন। সব তথ্য
সঠিকভাবে প্রদান ও ফি পরিশোধ করার পর, আবেদনটি জমা দিন। একটি আবেদন ফরম তৈরি
হবে, যা আপনি ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করতে পারবেন।
অনলাইন ছাড়া আবেদন প্রক্রিয়াঃ যদি আপনি অনলাইনে আবেদন করতে না পারেন,
তাহলে আপনাকে আপনার নিকটস্থ নির্বাচন অফিস অথবা ইউনিয়ন পরিষদ এ গিয়ে সংশোধনের
জন্য আবেদন করতে হবে। অফিসে গিয়ে আপনার সংশোধন করতে চাওয়া তথ্য ও প্রয়োজনীয়
প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। অফিস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদন প্রক্রিয়া
করবে। আবেদন জমা দেওয়ার পর কিছুদিনের মধ্যে আপনার সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র
আপনার ঠিকানায় পাঠানো হবে।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন আবেদন ফরম
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন আবেদন ফরম কোথায় পাবেন এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত
আছেন, চিন্তার কোন কারণ নেই। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন আবেদন ফরমটি
সাধারণত ই-সেবা ওয়েবসাইট বা স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকে পাওয়া যায়। অনলাইনে
আবেদন করার ক্ষেত্রে, আপনাকে একটি আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে, তবে ফরমটি সাইটে
জমা দেওয়ার পর ডাউনলোডযোগ্য হয়ে থাকে। নিচে বিস্তারিত দেখে নিনঃ
১. অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণঃ
- প্রথমে services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
- ওয়েবসাইটে লগইন করার পর, আপনার প্রোফাইলের পেজে গিয়ে সংশোধন করতে চাওয়া তথ্য (যেমন নাম, জন্ম তারিখ, পিতা/মাতা/স্বামী/স্ত্রীর নাম) সংশোধন করুন।
- সংশোধনের জন্য প্রমাণপত্র আপলোড করুন।
- সংশোধন ফি প্রদান করার পর আবেদনটি জমা দিন।
- আবেদনের পর, আপনি একটি আবেদন ফরম ডাউনলোড করতে পারবেন যা আপনার আবেদন সংশোধন করার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার হবে।
২. স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকে আবেদন ফরমঃ যদি আপনি অনলাইনে আবেদন না করেন, তবে স্থানীয় নির্বাচন অফিসে গিয়ে জাতীয়
পরিচয়পত্র সংশোধন সংক্রান্ত আবেদন ফরম পেতে পারেন। সেখানে সংশোধন করার জন্য
প্রয়োজনীয় তথ্য ও ডকুমেন্ট প্রদান করে আবেদন করতে হবে। আবেদন ফরমের মধ্যে
সাধারণত এইসব তথ্য থাকতে পারেঃ
- আবেদনকারীর নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ।
- সংশোধন করতে চাওয়া তথ্য (যেমন নাম, পিতা/মাতা/স্বামী/স্ত্রীর নাম, জন্ম তারিখ)।
- সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র।
- ফি পরিশোধের তথ্য (যেমন মোবাইল ব্যাংকিং, ব্যাংক ডিপোজিট ইত্যাদি মাধ্যমে পরিশোধ)।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আবেদন ফরম পূরণের সময় সঠিক তথ্য প্রদান করুন, যাতে কোনো প্রকার ভুল সংশোধন না
হয়। ফরম জমা দেওয়ার পর সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হবে, এবং সংশোধিত জাতীয়
পরিচয়পত্র কিছুদিনের মধ্যে আপনার ঠিকানায় পাঠানো হবে।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুরুত্বপূর্ণ একটি
বিষয়। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য সংশোধনের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন
ডকুমেন্টসে প্রয়োজন হয়। ভূল তথ্য দেওয়ার কারণে আমাদের জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের প্রয়োজন
হয়ে থাকে। কিন্তু জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার সময় কোন ধরনের ডকুমেন্টসের
প্রয়োজন হয় এ বিষয়ে আমাদের তেমন কোন ধারণা নেই।
সাধারণত আপনি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের কোন বিষয়টি সংশোধন করতে চাচ্ছেন
তার ওপর নির্ভর করে ডকুমেন্ট এর পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাই জাতীয় পরিচয় পত্র
সংশোধন করতে হলে কোন ধরনের ডকুমেন্টগুলো লাগবে তা প্রয়োজন। জাতীয় পরিচয়পত্র
সংশোধন একটি সহজ প্রক্রিয়া, যা সঠিক নিয়ম মেনে করলে দ্রুত সম্পন্ন করা
যায়। নিচে সংশোধনের ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের তালিকা দেওয়া
হলোঃ
১. নাম সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- এসএসসি/এইচএসসি বা সমমানের সনদ
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
- পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি থাকে)
- বিবাহের কাবিননামা (যদি নাম পরিবর্তনের কারণ বিবাহ হয়)
- কমপক্ষে ২ সন্তানের NID কার্ডের কপি (যেখানে পিতা/মাতার নাম সঠিক আছে)
- গেজেট কপি (যদি নাম পরিবর্তন গেজেটভুক্ত হয়)
২. জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- জন্ম নিবন্ধন সনদ
- এসএসসি/এইচএসসি সনদ
- পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি থাকে)
- মেডিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট (বয়স প্রমাণের জন্য)
- স্কুলের জন্ম তারিখ সংশোধনের অনুমতিপত্র (যদি প্রযোজ্য হয়)
৩. ঠিকানা সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল বা পানি বিল (সর্বশেষ ৩ মাসের মধ্যে)
- ভাড়া চুক্তি (যদি ভাড়া বাসায় থাকেন)
- জমির পর্চা বা খাজনার রশিদ (যদি নিজের জমি হয়)
- ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন থেকে ঠিকানা সার্টিফিকেট
৪. পিতা-মাতার নাম সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র
- জন্ম নিবন্ধন সনদ
- বিবাহের কাবিননামা (যদি প্রযোজ্য হয়)
- ভাই-বোনের NID কার্ডের কপি (যেখানে পিতা-মাতার নাম সঠিক আছে)
- এসএসসি/এইচএসসি সনদ
৫. স্বামী/স্ত্রীর নাম সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- বিবাহের কাবিননামা
- স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র
- জন্ম নিবন্ধন সনদ
৬. ছবি সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড)
- পুরাতন NID কার্ডের কপি
৭. স্বাক্ষর সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- নতুন স্বাক্ষরের নমুনা
- পুরাতন NID কার্ডের কপি
সাধারণ নোটঃ সকল ডকুমেন্ট স্ক্যান করে অনলাইনে আপলোড করতে
হবে।ডকুমেন্টগুলো অবশ্যই স্পষ্ট এবং বৈধ হতে হবে। সংশোধনের আবেদন করার সময়
প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করতে হবে।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন হতে কতোদিন সময় লাগে
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন হতে কতোদিন সময় লাগে, আমাদের মধ্যে অনেকেই এই
বিষয়টি জানতে চান। জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে
সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগে। আমাদের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র খুবই
গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্ট। বিভিন্ন কাজের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র প্রয়োজন
হয়। অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন কারণে আমাদের জাতীয় পরিচয় পত্রে ভুল
থাকে।
আপনি যদি অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য আবেদন করে থাকেন তাহলে
এটি সংশোধন হতে ৭ থেকে ১৪ দিন সময় লাগতে পারে। যদি সরকারি ছুটি অনেকদিন
থাকে তাহলে সময় একটু বেশি লাগতে পারে। সবার ক্ষেত্রেই যে একই রকম সময়
লাগবে বিষয়টা এরকম নয়। তবে জেনে রাখুন যে সর্বনিম্ন ১৫ দিন এবং সর্বোচ্চ
৩০ দিনের মতো সময় লাগে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন হতে।
ক্যাটাগরি | সংশোধনের ধরন | সময়সীমা |
---|---|---|
(ক) | নামের বানান সংশোধন, আংশিক নাম পরিবর্তন, বাংলা ও ইংরেজি নামের মিল, জন্ম তারিখ সংশোধন (সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত), লিঙ্গ পরিবর্তন, বৈবাহিক অবস্থা, ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ, মোবাইল নম্বর। | ৭ দিন |
(খ) | স্বামী/স্ত্রীর নাম সংযোজন বা বিয়োজন, জন্ম তারিখ সংশোধন (সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত), শিক্ষাগত যোগ্যতা, ছবি, স্বাক্ষর, আঙ্গুলের ছাপ, আইরিশ আপডেট, প্রতিবন্ধিতা, ধর্ম পরিবর্তন | ১৫ দিন |
(গ) | সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তন (পাবলিক পরীক্ষার সনদের ভিত্তিতে), জন্ম তারিখ সংশোধন (৫ বছরের বেশি; চাকরির বয়সসীমা, মুক্তিযোদ্ধা, ভোটার যোগ্যতা, নির্বাচনে প্রার্থিতা, বয়স্ক ভাতা ইত্যাদি ব্যতীত) | ৩০ দিন |
(ঘ) | সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তন (অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তিতে), জন্ম তারিখ সংশোধন (৫ বছরের বেশি; চাকরির বয়সসীমা, মুক্তিযোদ্ধা, ভোটার যোগ্যতা, নির্বাচনে প্রার্থিতা, বয়স্ক ভাতা ইত্যাদি সহ সকল ক্ষেত্রে) | ৪৫ দিন |
উল্লেখিত সময়সীমা কার্যদিবস অনুযায়ী গণনা করা হয় এবং সরকারি ছুটি বা সাপ্তাহিক ছুটির কারণে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। সঠিক ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণপত্রসহ আবেদন করলে প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়। আবেদন অনুমোদনের পর সংশোধিত জাতীয় পরিচয় পত্র অনলাইনে ডাউনলোড করতে পারবেন। এছাড়া, স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকেও সংগ্রহ করা যেতে পারে। সঠিক প্রমাণপত্র ও তথ্য প্রদান করলে প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়। তবে, সরকারি ছুটি বা বিশেষ পরিস্থিতির কারণে সময়সীমা পরিবর্তিত হতে পারে।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন ফি কতো
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য ফি নির্ধারিত হয় সংশোধনের ধরন এবং আবেদন
প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে। ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে এই
প্রশ্নের জবাবে অনেকেই বিভ্রান্ত হন। একটি আইডি কার্ড রি-ইস্যু ডেলিভারি
ধরন সাধারন নাকি জরুরী তার উপর ভিত্তি করে পরিশোধেও টাকার পরিমান ভিন্ন
ভিন্ন হয়। নিচে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের ফি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
করা হলোঃ
জাতীয় পরিচয় পত্রের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন- নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম
তারিখ ইত্যাদি সংশোধন করতে ২৩০ টাকা ফি দিতে হয়। ঠিকানা সংশোধন ১১৫ টাকা,
ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানা উভয় সংশোধন ৩৪৫ টাকা, আইডি কার্ড রিইস্যু
যেমন-পুরাতন কার্ড হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে ২৩০ টাকা, আইডি কার্ড
রিইস্যুতে দ্রুত কার্ড পেতে চাইলে ৩৭৫ ফি প্রদান করতে হয়, সাধারণত এই ফি
সরকার দ্বারা নির্ধারিত।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের এই ফি বিকাশ, নগদ, রকেট বা অন্যান্য মোবাইল
ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন। ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড বা ইন্টারনেট
ব্যাংকিং এর মাধ্যমেও ফি প্রদান করা যায়। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে
নগদ বা ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে ফি প্রদান করা যায়। ফি প্রদানের পর আবেদনের
রশিদ সংরক্ষণ করুন, যাতে ভবিষ্যতে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
জাতীয় পরিচয় পত্রে পিতা-মাতার নাম সংশোধন করতে কি কি লাগে
জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা বা মাতার নাম সংশোধন করার জন্য আপনাকে কিছু
নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে। অনলাইনে বা সরাসরি নির্বাচন অফিসের
মাধ্যমে এই আবেদন করা যায়। জাতীয় পরিচয় পত্রে নিজের পিতা-মাতার নাম ও
তথ্য সংশোধনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। যদি পিতা-মাতার
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে চান তাহলে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হয়
জেনে নিন।
১. প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
- সংশোধনের জন্য নির্ধারিত আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
- বর্তমান জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- জন্ম নিবন্ধন সনদ যেখানে পিতা-মাতার নাম সঠিকভাবে উল্লেখ আছে।
- সাম্প্রতিক সময়ে তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- যদি নামের বানান বা তথ্য ভুল থাকে, তাহলে সংশোধনের প্রমাণ হিসেবে প্রাসঙ্গিক দলিল (যেমন: জন্ম নিবন্ধন সনদ, স্কুল সার্টিফিকেট, বা অন্যান্য সরকারি দলিল) জমা দিতে হবে।
- সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে।
- প্রথমে services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে লগইন করুন।
- আপনার প্রোফাইল পেজে গিয়ে সংশোধন করতে চান এমন পিতা/মাতার নামের পাশের এডিট অপশন নির্বাচন করুন।
- সংশোধনের জন্য উপযুক্ত প্রমাণপত্র (যেমন জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, বা অন্য কোনো আইনি ডকুমেন্ট) স্ক্যান করে আপলোড করুন।
- সংশোধনের জন্য নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করুন। ফি পরিশোধের জন্য বিকাশ, রকেট বা অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করা যেতে পারে।
- সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ এবং ফি পরিশোধ করার পর, আপনার আবেদনটি জমা দিন। আবেদন জমা দেওয়ার পর, একটি আবেদন ফরম তৈরি হবে, যা আপনি ডাউনলোড এবং সংরক্ষণ করতে পারবেন।
আবেদন জমা দেওয়ার পর, আপনার তথ্য যাচাই করা হবে এবং কিছুদিনের মধ্যে
সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র আপনার ঠিকানায় পাঠানো হবে।
৩. অফলাইন আবেদন প্রক্রিয়াঃ যদি আপনি অনলাইনে আবেদন না
করতে চান বা করতে না পারেন, তবে আপনার নিকটস্থ নির্বাচন অফিস এ গিয়ে
সরাসরি আবেদন করতে পারবেন। সেখানে পিতা/মাতার নাম সংশোধন করার জন্য
আবেদন ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে, যেমনঃ
- সংশোধনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মূল কপি এবং ফটোকপি নিয়ে যান।
- জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফরম পূরণ করুন (স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকে পাওয়া যাবে)।
- সংশোধনের কারণ ব্যাখ্যা করুন এবং সঠিক তথ্য লিখুন।
- ফি পরিশোধ করুন এবং রসিদ সংগ্রহ করুন।
- আপনার আবেদন জমা দিন এবং একটি রিসিভ কপি নিন।
- নির্দিষ্ট সময় পর সংশোধিত এনআইডি সংগ্রহ করুন।
জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্ম তারিখ সংশোধন প্রক্রিয়া
জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ সংশোধন করতে হলে আপনাকে অনলাইনে বা সরাসরি
নির্বাচন অফিসে গিয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। জাতীয় পরিচয়
পত্রে জন্ম তারিখ সংশোধন করতে চাইলে আপনাকে বিস্তারিতভাবে কোন কোন
ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে সাধারণত এই বিষয়গুলো জেনে নিতে হবে। যদি আপনার
জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ ভুল থাকে এবং এটি সংশোধন করতে চান তাহলে
কোন ধরনের ডকুমেন্ট প্রয়োজন তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
১. জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- জন্ম নিবন্ধন সনদ (অনলাইনে যাচাইযোগ্য)
- শিক্ষাগত সনদ (যদি জন্ম তারিখ সেখানে উল্লেখ থাকে)
- পাসপোর্ট (যদি থাকে)
- পিতা/মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
- SSC বা HSC সনদপত্র (শিক্ষা বোর্ডের যাচাইকৃত কপি)
- সরকারি/আদালতের ঘোষণাপত্র (যদি নাম বা জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য আইনি অনুমোদন থাকে)
২. অনলাইনে জন্ম তারিখ সংশোধন করার পদ্ধতি
- services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে যান।
- যদি আপনার অ্যাকাউন্ট না থাকে, তাহলে NID নম্বর, জন্ম তারিখ ও মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন।
- মোবাইলে পাওয়া OTP (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) দিয়ে অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করুন।
- লগইন করার পর "তথ্য সংশোধন" অপশনে যান।
- জন্ম তারিখ সংশোধন অপশন নির্বাচন করুন।
- সঠিক জন্ম তারিখ লিখুন এবং প্রমাণপত্র আপলোড করুন (যেমন জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, বা SSC সনদ)।
- সাধারণ সংশোধন ফি: ২৩০ টাকা
- জরুরি সংশোধন ফি: ৩৪৫ টাকা
৩. সরাসরি নির্বাচন অফিসে গিয়ে আবেদনঃ যদি আপনি অনলাইনে আবেদন
করতে না পারেন, তবে স্থানীয় নির্বাচন অফিসে গিয়ে সরাসরি আবেদন করতে
হবে। কীভাবে নির্বাচন অফিসে আবেদন করবেনঃ
- সংশোধনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মূল কপি ও ফটোকপি নিন।
- জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফরম পূরণ করুন (স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকে পাওয়া যাবে)।
- সংশোধনের কারণ ব্যাখ্যা করুন এবং সঠিক তথ্য লিখুন।
- ফি পরিশোধ করুন এবং রসিদ সংগ্রহ করুন।
- আবেদন জমা দিন এবং একটি রিসিভ কপি নিন।
- নির্দিষ্ট সময় পর সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করুন।
শেষকথাঃ জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম
ভোট দেওয়া ছাড়াও পাসপোর্ট তৈরি ও নবায়ন, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, চাকরির
আবেদন, বিমা স্কিমে অংশগ্রহণ, স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, বিয়ে ও তালাক
রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক একাউন্ট খোলা, এমন বহু কাজে জাতীয় পরিচয়পত্রের
(এনআইডি) প্রয়োজন পড়ে। সেই এনআইডি কার্ডে যদি তথ্যগত ভুল থাকে, তাহলে তো
পদে পদে বিপদ। কারও হয়তো নিজের নামের বানান ভুল, কারও জন্মতারিখে গড়মিল।
জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন করতে গিয়েও সঠিক তথ্যের অভাবে অনেকে
এখানে-ওখানে ঘুরপাক খান। কেউ কেউ পড়েন দালালের খপ্পড়ে। তবে সরকার
বলছে, নির্ধারিত ওয়েবসাইট ও অ্যাপ থেকে আপনি এনআইডির তথ্য
সংশোধন করতে পারবেন এ সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।আশা করছি
আপনারা আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার
নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url